
বিশ্ববিদ্যালয়ে নিবিড় পাঠ ও গবেষণার পরিবেশের সঙ্গে আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণাটি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। আমাদের দেশে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংখ্যাবৃদ্ধি এবং দেশের নানাপ্রান্তে সেগুলোর অবস্থানগত বিস্তারের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনের সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আবাসনের সুবিধা না পেলে শিক্ষার্থীদের পাঠ ও গবেষণায় তা বিরূপ প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটকে কেন্দ্র করে চলছে ছাত্ররাজনীতির নামে নির্মম দখলদারিত্ব আর ক্ষমতার সন্ত্রাস। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনগুলো যেমন এ বিষয়ে পরিকল্পনাহীন তেমনি উচ্চশিক্ষার নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয় নিশ্চুপ। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট কতটা প্রবল তা জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে। এতে জানা গেছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আবাসিক হল না থাকায় ৬৪ শতাংশ শিক্ষার্থীই আবাসিক সুবিধা পান না। প্রতিবেদনে উল্লিখিত বাস্তবতার এক নির্মম চিত্র দেখা যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।
রবিবার দেশ রূপান্তরে ‘আন্দোলন করে হলে উঠে ছাত্রীরা পেল চৌকি’ শিরোনামের প্রতিবেদন জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের ‘চৌকি নিবাস’-এর তথ্য উঠে এসেছে। জানা গেছে, তারিখ দিয়েও দফায় দফায় পেছানোর পর অবশেষে আন্দোলনের মুখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ছাত্রীদের জন্য তৈরি হলে শিক্ষার্থী ওঠানো শুরু হয়েছে। আসন বরাদ্দসহ চার দফা দাবিতে গত শুক্রবার রাতভর বিক্ষোভ করার পর গতকাল শনিবার নতুন ওই আবাসিক হলটিতে আসন পেয়েছেন জরাজীর্ণ ফজিলাতুন্নেছা হলের ছাত্রীরা। এ ছাড়া কয়েকদিনের মধ্যেই ছাত্রদের আরেকটি হল চালু করা হবে বলে জানা গেছে। তবে এসব হলে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সব সুবিধা নিশ্চিত করা হয়নি। শুধুমাত্র মাথাপিছু একটি করে চৌকি এবং পানি ও বিদ্যুৎ সুবিধা দিয়ে শিক্ষার্থী ওঠানো হচ্ছে। অথচ ২০১৮ সালে এই হলগুলোর নির্মাণকাজ উদ্বোধনের সময় বলা হয়েছিল, ২০২০ সালের ডিসেম্বরেই কাজ শেষ হবে। দীর্ঘ আশ্বাসের পরেও আবাসিক হল দুটিতে পূর্ণাঙ্গ সুযোগ-সুবিধা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি। হলের মধ্যে খাবারের ব্যবস্থা নেই। প্রত্যেককে একটি চৌকি দেওয়া হয়েছে। পানি এবং বিদ্যুৎ সংযোগ আছে। তবে নেই গ্যাস সংযোগ। প্রত্যেক তলায় গ্যাসের চুলা থাকার কথা থাকলেও নেই। এ ছাড়া প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য একটি করে উন্নতমানের চেয়ার, শেলফসহ টেবিল ও লকার থাকার কথা। পাশাপাশি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগও দেওয়া হয়নি। কমনরুম, ব্যায়ামাগার এবং গ্রন্থাগারও প্রস্তুত হয়নি। পুরোদমে চালু হয়নি লিফট। নবীন শিক্ষার্থীদের নবনির্মিত হলে আসন দেওয়ার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণরুম বিলুপ্ত হবে বলেও আশ্বাস এসেছিল। আর সেই আশ্বাসের বাস্তবায়ন করতে গিয়ে গত বছরের ৯ মার্চ ৫০তম ব্যাচের ক্লাস অনলাইনে শুরু করা হয়েছিল। তবে হলের কাজ শেষ না হওয়ায় ওই বছরের ২৩ মে গণরুমে তুলেই তাদের সশরীরে ক্লাস শুরু করা হয়। উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন গেল বছরের জুনের মধ্যেই নির্মাণকাজ শেষ করার কথা বলেছিলেন। পরে জুন মাসে এসে সে বছরের অক্টোবরে ৬টি হল উদ্বোধন করা যাবে বলে সাংবাদিকদের তিনি জানান। তবে কাজ শেষ করতে না পারায় ছয়টির মধ্যে দুটি হল নভেম্বরের মধ্যে উদ্বোধন করতে পারবেন বলে জানিয়েছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম। কিন্তু হল উদ্বোধন করতে না পারায় ইতিমধ্যে কয়েক দফায় নতুন শিক্ষাবর্ষের (৫১তম ব্যাচ) ক্লাস শুরুর সময়সূচি পিছিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ৩১ জানুয়ারি শুরু হতে যাওয়া ৫১তম ব্যাচের ক্লাস শুরুর আগেই ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য একটি করে হল চালুর ঘোষণা বাস্তবায়ন করছে প্রশাসন। তারই অংশ হিসেবে ছাত্রীদের নতুন হলটিতে শিক্ষার্থী ওঠানো হয়েছে।
শিক্ষাবিদ ও উচ্চশিক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পূর্বপরিকল্পনা ছাড়া আসন সংখ্যা বাড়ানোয় এই সংকট তৈরি হচ্ছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরিকল্পিত নীতিই দায়ী। অন্যদিকে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচ্য ঘটনায় প্রশাসনের অদক্ষতা এবং দায়িত্বহীনতার বিষয়টি স্পষ্ট। যে কারণে দফায় দফায় সময় বেঁধে দিয়েও শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলে তোলা যাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যত বেশি সংখ্যক সম্ভব শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের আবাসন সুবিধা সৃষ্টি করা এবং মানসম্মত পাঠ ও গবেষণার পরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়টি একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত। অন্যদিকে, শিক্ষায় বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র হওয়া উচিত গবেষণায়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আবাসন সুবিধার মতো মৌলিক অবকাঠামো গড়ে তোলাতেই আমরা এখনো পিছিয়ে আছি। নীতিনির্ধারকদের উচিত হবে, ধাপে ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবাসন সংকট নিরসনের একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে সে লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া।
সিনেমাতে ও বাংলাদেশের এনআইডিতে মায়ের চেয়ে ছেলে বড় অবশ্যই সম্ভব।
১০৬টি অ্যাপিসোডে সমাপ্ত আমেরিকার এনবিসি টেলিভিশনের ফ্যামিলি ড্রামা ‘দিস ইজ আস’। পিয়ারসন পরিবারের বড় বড় তিনটি সন্তান কেভিন, কেইট এবং র্যান্ডেল; তাদের বাবা জ্যাক পিয়ারসন এবং মা রেবেকা পিয়ারসন। রেবেকা আসলে অভিনয় এবং সংগীতে খ্যাত ম্যান্ডি মুর। তার জন্ম ১০ এপ্রিল ১৯৮৪। তার ব্যক্তি জীবনে দুটি ছেলে। ছোটটির জন্ম হয়েছে ২১ অক্টোবর ২০২২। আর সিনেমার ছেলে কেভিন আসলে জাস্টিন হার্টলে, তার জন্ম ২৯ জানুয়ারি ১৯৭৭, মায়ের চেয়ে সাত বছরের বড়। কেইট একটু মোটাসোটা। বাস্তব জীবনে অভিনেত্রী ও গায়ক ক্রিস্টিন মিশেলের জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৮০, ক্রিস্টিনও মায়ের চেয়ে ৪ বছরের বড়। আর র্যান্ডেলের প্রকৃত নাম র্যান্ডেল হিল, কালো আমেরিকান, জন্ম ৩০ আগস্ট ১৯৮০; পিয়ার্সন পরিবার তাকে দত্তক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করে। র্যান্ডেলও মায়ের চেয়ে ৪ বছরের বড়।
জন্ম-তারিখ ধরে হিসাব করে দেখুন সিনেমার কেভিন কেইট ও র্যান্ডেল, রেবেকার গর্ভজাত পুত্র, গর্ভজাত কন্যা এবং দত্তক গৃহীত পুত্র তিনজনই মায়ের চেয়ে বয়সে বড়। সোজা কথা সিনেমায়, নাটকে সন্তান মায়ের চেয়ে বেশি বয়স্ক হতেই পারে। সিনেমার মায়ের বা বাবার সঙ্গে সন্তানের বয়সের হাস্যকর ব্যবধান থাকতেই পারে। এজন্যই তো সিনেমা আর নাটক।
‘রাইডিং ইন কারস উইথ বয়স’ সিনেমার মা ড্রু ব্যারিমুরের বয়স ২৬ বছর আর ছেলে অ্যাডাম গার্সিয়ার ২৮। ‘ব্লো’ সিনেমায় অভিনয়ের সময় মা র্যাচেল গ্রিফিথ ৩২ বছর বয়সী ছিলেন আর তার ছেলে জনি ডেপ তখন ৩৭। যখন বিখ্যাত সিনেমা হ্যামলেট মুক্তি পায় তখন হ্যামলেটের ভূমিকায় অভিনয় করা লরেন্স অলিভিয়ার ছিলেন ৪১ আর তার মা ডেনমার্কের রানি এইলিন হার্লের বয়স তখন ৩০ বছর। মাকে ছেলের চেয়ে বড় হতেই হবে সিনেমাতে এই বাধ্যবাধকতা নেই। আর একটি উদাহরণ না দিলেই নয়। ডাক ফাটানো সিনেমা আলেকজান্ডারে মা অ্যাঞ্জেলিনা জোলির ২৯ বছর। এখানে জীববিজ্ঞানের আইন মেনে তার পুত্র কলিন ফ্যারেন মাকে ডিঙাতে চেষ্টা করেননি। তার বয়স ২৮ বছর। মা ও ছেলের বয়সের ব্যবধান ১ বছর। সিনেমায় যতটুকু খোঁজ করেছি তাতে ছেলে মায়ের চেয়ে সর্বোচ্চ ১১ বছরের বড়। গঞ্জিকা সেবন করেই মাকে ছেলের চেয়ে কতটা বড় করা সম্ভব?
শিঙাড়া-সমুচা-চা-চপ সূচকে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় যেমন পৃথিবীকে হারিয়ে দিয়েছে, তেমনি হারিয়েছে বয়সের মহামারপ্যাঁচে। রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে তৈরি করা জাতীয় পরিচয়পত্র ন্যাশনাল আইডেন্টিটি কার্ডে (এনআইডি) ছেলে তার মায়ের চেয়ে ১৩ বছরের বড়। শৈশবে পাকামি করার কারণেই হোক কি অতি স্নেহপ্রবণ হয়ে হোক বাবা-মা ছেলের নাম রেখেছেন পাকু। প্রকৃত বয়স এবং বেশি আই কিউজনিত মানসিক বয়সের কিছু তারতম্য হয়েই থাকে। নিজের প্রকৃত বয়স ৫ বছর বুদ্ধিমত্তা তাকে ১০-এর সমকক্ষ করে দিতে পারে। কোনো বিশেষ গুণের কারণে পাকু নিজেকে ছাড়িয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ ভাইবোনদের ছাড়িয়ে এমনকি গর্ভদাত্রী মাকেও ছাড়িয়ে তার চেয়ে ১৩ বছর ৪ মাস এগিয়ে গেলেনতার জবাব দিতে পারে শুধু এনআইডি কর্তৃপক্ষ।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, পাকু দাসের মা রাধারানী দাশের জন্ম ৩ আগস্ট ১৯৬৮। আর তার গর্ভজাত পুত্র পাকু দাশের জন্ম ন্যাশনাল আইডেন্টিটি কার্ড অনুযায়ী ২০ এপ্রিল ১৯৫৫, মায়ের জন্মেরও ১৩ বছর ৩ মাস ১৪ দিন আগে। শুধু যোগাযোগ করা হয়ে ওঠেনি বলে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে বাংলাদেশের নাম ওঠার আর একটি সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেল। পাকু দাশ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী। ২০২২-এর ৩০ অক্টোবর আরও কিছুসংখ্যক কর্মচারীর সঙ্গে তিনি চাকরি হারান। তার চাকরি হারানোর কারণ সরকার বিরোধিতা বা ভিন্ন মতাবলম্বী হওয়া নয়, এমনকি অবৈধ অনুপস্থিতি বা ডিপার্টমেন্টাল প্রসিডিংসের সুপারিশের কারণেও নয়। চাকরি হারানোর কারণটি অত্যন্ত ন্যায়সংগত সুপার অ্যানুয়েশন। সময়মতো তার এনআইডি চেক করা হলে আরও আগেই তাকে বিদায় হতে হতো। চাকরি করার বিধিবদ্ধ যে চূড়ান্ত বয়স অর্থাৎ ৫৯ তিনি তা পেরিয়ে গেছেন। সুতরাং আর কত! এবার বিদায় নিন। কিন্তু ৫৯ হলোই বা, বিদায় নিতে হবে কেন? বাংলাদেশে কোনো কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে চাকরিকাল তো ৬৭ বছর। পাকু দাশ যদি সে রকম পদে অধিষ্ঠিত থাকতেন তাহলেও তাকে আরও আগে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হতো। মায়ের আগে জন্ম নেওয়া পাকু দাশের বেলায় চাকরিচ্যুতি মানে শুধু বেতন হারানো নয়, চাকরির কারণে পাওয়া বাসাটিও হারানো। কিন্তু তাকে দেখলে কি ঊনষাট মানে ষাট ছুঁই ছুঁই মনে হয়। দেখে যা মনে হয় সেটা মেনে নিলেই ঝামেলা চুকে যেত। কিন্তু তা হওয়ার নয়।
এনআইডি পাওয়ার মতো মহাসম্মানজনক ঘটনা তখনো ভারতে ঘটেনি। ভারতে নিম্ন আদালতের একটি মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত পৌঁছায়। শ্যাম কিশোর ঘোষ ভারত কয়লা লিমিটেডের কর্মচারী। শ্যাম কিশোরের দাবি, তার সার্ভিস বইতে বয়স বেশি লেখা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট অনেক বিচার বিবেচনার পর রায় দিয়েছে বানান ভুল সংশোধন করার সুযোগ আছে, কিন্তু চাকরি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সার্ভিস রেকর্ডে লিখিত বয়স এমনকি যদি ভুলও হয়ে থাকে সংশোধনের আর সুযোগ নেই। আবেদনকারীকে যত তরুণই মনে হোক না কেন সার্ভিস রেকর্ডের বয়সই তার স্বীকৃত বয়স। বাংলাদেশে অবশ্য কোনো সচিবও নির্ধারিত মেয়াদের চেয়ে বছর দু-এক বেশি চাকরি করার সময় ধরা পড়ে যান। পাকু দাশ ভাগ্যবান, তার ওপর মিডিয়ার আলো পড়েছিল বলে এনআইডি কর্তৃপক্ষ তার বয়স কমিয়ে সংশোধিত এনআইডি ইস্যু করে দিয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনও পাকু দাশকে পূর্ব পদে বহাল করেছে। কিন্তু কোন অবস্থায় তাকে মায়ের চেয়ে বড় বানানো হলো, আবার কেমন করে মায়ের চেয়ে ছোট হয়ে গেলেন এ নিয়ে কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি, পেলে ভালো হতো। পাকু দাশের কর্মজীবনে প্রত্যাবর্তনকে অবশ্যই স্বাগত। এ ধরনের পাকু দাশ কেইস আরও থাকার কথা। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও স্থানীয় সরকার সংস্থায় যারা চাকরি করছেন নিঃসন্দেহে সবাই এনআইডিধারী। এনআইডির ভুল সংশোধনেরও সুযোগ রয়েছে। যদি পাকু দাশের বিষয়টি বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে তো ১৯৫৫ সালের জন্ম-তারিখ নিয়ে তার চাকরিই পাওয়ার কথা নয়। তিনি কবে চাকরিতে ঢুকেছেন? ২০০০ সালেই তো তার বয়স ৪৫ বছর পেরিয়ে যাওয়ার কথা। এনআইডি এসেছে আরও অনেক পরে সন্দেহ নেই। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের রুলিং অনুসরণ করলে চাকরিজীবীর বেলায় আদালতের আদেশ ছাড়া বয়স বাড়ানো কিংবা কমানো কিংবা সংশোধনের সুযোগ নেই। জন্মের প্রকৃত তারিখ যাই হোক বয়সটাকে কমিয়ে রাখার প্রবণতাই বেশি। আমি বাড়িয়ে নেওয়ার বেশ কটা ঘটনার সঙ্গেও পরিচিত। যেসব প্রতিষ্ঠানে পৌষ্যের চাকরি পাওয়ার অগ্রাধিকার রয়েছে, সেখানে পড়াশোনায় অনাগ্রহী ১৬ বছরের ছেলে বা মেয়েকে ১৮ দেখিয়ে বাবার অফিসে ঢুকিয়ে দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টির জন্য স্কুল রেজিস্টারে বয়সটা বেশিই লেখা হয়। আবার দুবছর কম লেখা হলে সরকারি চাকরিতে দুবছর বেশি চাকরি করার সুযোগটাও নেওয়া যায়। দুটোরই কিছু লাভজনক দিক রয়েছে। ভারতে বয়স নিয়ে বেশ কটা মামলার সুনির্দিষ্ট রুলিং রয়েছে। একটি মামলা সুনীল কুমার বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া নামের বানান সংশোধন বিষয়ে, এতে সংশোধিত বানান গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বয়সের কারণে সুনির্দিষ্ট কোনো সুযোগ না পাওয়ার ক্ষোভ থেকে জন্ম নেয় বর্ণবাদের মতো বয়সবাদ (এজিজম)। ১৯৬৯ সালে রবাট নিল বাটলার বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি বৈষম্য বোঝাতে ‘এজিজম’ টার্মটি ব্যবহার করেন। বয়স্করা তরুণদের যে নিপীড়ন করে থাকে তাকেও এজিজম বলা হয়েছে। বয়সের কারণে পক্ষপাত বোঝাতে সর্বদাই যে তরুণ পছন্দনীয় তা নয়, বয়স্কের প্রাধিকার মেলে তবে তা তুলনামূলকভাবে কম। বয়স্করা এখন এমনকি ইউরোপ-আমেরিকাতেও ডিজিটাল এজিজমের শিকার। তরুণরা দক্ষতার সঙ্গে ডিজিটাল যুগে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছে, বুড়োরা পারেনি। সুতরাং তারা মার খেয়ে যাচ্ছে। বয়স-বৈষম্যের কথা বেশি শোনা যায় হলিউডেসুন্দরী নায়িকা কিংবা স্মার্ট নায়কের বয়স বেড়ে গেছে, তাদের আর নায়িকা নায়ক ভূমিকায় রাখা যায় না। তিন ধরনের এজিজমের কথা বলা হয়; প্রাতিষ্ঠানিক বয়স-বৈষম্যবাদ নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে প্রতিষ্ঠান থেকে দূরে রাখা; আন্তব্যক্তিক বয়স-বৈষম্যবাদ : সমাজ জীবনে বয়স্করা প্রায়ই বৈষম্যের শিকার হন; আত্মীকৃত বয়স-বৈষম্যবাদ : এতে ব্যক্তি নিজেই বয়স-বৈষম্যবাদে বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন এবং নিজের ওপর তা প্রয়োগ করতে থাকেন।
একাত্তরে পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বনের জন্য বিতর্কিত হেনরি কিসিঞ্জার ২৭ মে ২০২৩ শতবর্ষ পূর্ণ করবেন। ৯৯ বছর বয়সে প্রকাশ করেছেন একটি বহুলালোচিত গ্রন্থ : লিডারশিপ : সিক্স স্টাডিজ ইন ওয়ার্ল্ড লিডারশিপ। বয়স-বৈষম্যবাদ তিনি অবলীলায় ডিঙিয়ে গেছেন। ৮৯ বছর বয়সে সোপোক্লেস রচনা করেছেন ইডিপাস অ্যাট কোলোনাস। ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুর দিনই ভোরে গ্যালিলিও নতুন বৈজ্ঞানিক প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। বেনিয়ামিন ফ্রাঙ্কলিন পাবলিক সার্ভিস থেকে অবসর নেন ৮২ বছর বয়সে। রোলান্ড রেগান ৭০ বছর বয়সে যখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন, পত্রিকা শিরোনাম করেছিল লাইফ বিগিনস অ্যাট সেভিন্টি। তিনি আরও ৮ বছর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তিনি সবচেয়ে সফল প্রেসিডেন্টদের একজন। হেনরিক ইবসেন ৭১ বছর বয়সে নাটক লিখেছেন : যখন আমরা মৃতেরা জেগে উঠব; অলিভার ওয়েন্ডেল হোমস ৯২ বছর বয়সে গ্রিক ভাষা শিখে প্লেটোর রচনাবলি পড়তে শুরু করেন। হোয়াট শি শুড নট জর্জ বার্নার্ড শ লিখেছেন ৯৪ বছর বয়সে। বয়স যখন প্রায় পঁচাশি আইজ্যাক নিউটন রয়াল মিন্টের ওয়ার্ডেনের দায়িত্ব পালন করছেন।
তাদের সবাই নিজ গুণে বয়স-বৈষম্যবাদকে ডিঙ্গিয়ে যেতে পেরেছেন। ব্রাজিলের ওয়াল্টার অর্থমান একই কোম্পানিতে ৮৪ বছর ৯ দিন চাকরি করে বিশ^রেকর্ড করেছেন, গিনেসের রেকর্ড বইতে তার নাম উঠেছে। তিনি শতবর্ষী। ১৫ বছর বয়সে চাকরিতে ঢুকেছিলেন। বুড়ো বয়স নিয়ে অস্বস্তি বোধ করার কারণ নেই। সিনিয়র সিটিজেনের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ২০২৫-এ পৃথিবীর ১৮ ভাগ মানুষ সিনিয়র সিটিজেন (৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব)। ২০৩০ নাগাদ এই সংখ্যা ৯৭৪ মিলিয়নে পৌঁছাবে। ওল্ড বয়স এবং ওল্ড গার্লস ক্লাবই হয়ে উঠবে গুরুত্বপূর্ণ ক্লাব।
গৌরবের ওল্ড বয়েস ক্লাব মায়ের চেয়ে বয়সে বড় একজন পাকু দাশকে ধরে রাখতে পারল না।
লেখক: সরকারের সাবেক কর্মকর্তা ও কলামিস্ট
প্রযুক্তির উৎকর্ষের কারণে দ্রুত পরিবর্তনশীল এই বিশ্বে খাপ খাইয়ে নেওয়ার বিকল্প নেই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ আমাদের কর্মসংস্থান ও জীবনপ্রণালীতে ব্যাপক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আবার বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ বৃদ্ধি, অভিবাসন ও জাতিগত সংঘাতের মতো বিষয় পৃথিবীর সমস্যাকে আরও ত্বরানিত করছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জনমিতিক সম্ভাবনাকে সম্পদে রূপান্তর করতে প্রয়োজন জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও ইতিবাচক দৃষ্টিসম্পন্ন দূরদর্শী, সংবেদনশীল, অভিযোজনে সক্ষম, মানবিক, বৈশ্বিক এবং দেশপ্রেমিক নাগরিক।
ওপরের এসব ভাবনা বিবেচনায় নিয়েই বহুল প্রতীক্ষিত নতুন শিক্ষাক্রম এ বছর থেকে দেশব্যাপী পরীক্ষামূলক সংস্করণ বাস্তবায়ন (প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে) শুরু হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে আগামীতে সব শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয় সর্বশেষ ২০১২ সালে। ফলে যুগোপযোগী নতুন শিক্ষাক্রমের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল।
নতুন শিক্ষাক্রমে প্রধানত তিনটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। ১. পাঠ্যবই পরিবর্তন ২. শিখন-শেখানো কৌশল পরিবর্তন ৩. মূল্যায়ন পদ্ধতি পরিবর্তন। নতুন শিক্ষাক্রমের দার্শনিক ভিত্তি হলো ডেভিড কোব-এর অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন। মূলত শিক্ষার্থীরা চারটি ধাপের মাধ্যমে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিখবে। ডেভিড কোব-Learning is the process whereby knowledge is created through the transformation of experience (1984). ডেভিড কোব-এর শিখন-শেখানো কৌশলের চারটি ধাপ হলো যথাক্রমে: ১. প্রেক্ষাপটনির্ভর অভিজ্ঞতা ২. প্রতিফলনমূলক পর্যবেক্ষণ ৩. বিমূর্ত ধারণায়ন এবং ৪. সক্রিয় পরীক্ষণ। ডেভিড কোব-এর অভিজ্ঞতানির্ভর শিখন মূলত আরেক দার্শনিক পেঁয়াজের তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। যেখানে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীরা চারপাশের পরিবেশের সঙ্গে পারস্পরিক মিথস্ত্রিয়ার মাধ্যমে জ্ঞানলাভ করবে।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ও বিশে^র সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে এই নতুন শিক্ষাক্রম খুবই কার্যকর ও সময়োপযোগী। মূল্যায়ন পদ্ধতিতে অভিনব পদ্ধতি সংযোজন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হবে তিনভাবে। যথা: ১. শিখনকালীন মূল্যায়ন (সারা বছর ধরে চলবে) ২. সামষ্টিক মূল্যায়ন (বছরে দুইবার) ৩. আচরণিক মূল্যায়ন। নতুন শিক্ষাক্রমের ১০টি বিষয়ের মধ্যে ৫টি বিষয়ের (বাংলা, গণিত, ইংরেজি, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান) মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন ও সামষ্টিকভাবে। বাকি ৫টি বিষয়ের মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন (বিদ্যালয় পর্যায়ে)।
নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের কোচিং বা প্রাইভেট পড়ার কোনো দরকার নেই। অবশ্যই নতুন বই হাতে পেয়ে শিক্ষার্থীরা এরই মধ্যে বুঝে গেছে কোচিং বা প্রাইভেট পড়ার কোনো প্রয়োজন নেই। গাইড বই বা অন্য কোনো সহায়ক বইয়েরও দরকার নেই। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ও নতুন শিক্ষাক্রমের উপজেলা পর্যায়ের মাস্টার ট্রেনার (ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান) হিসেবে বলতে পারি, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির পাঠ চলাকালীন শিক্ষার্থীদের এত স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও আনন্দঘন পরিবেশ আগে কখনো লক্ষ করা যায়নি।
নতুন শিক্ষাক্রমের পড়াশোনা পুরোপুরি শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক। শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে বিভিন্ন শিখন কৌশল ও শিখন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যোগ্যতা অর্জন করবে। যোগ্যতাভিত্তিক এই শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই বিভিন্ন সেশন অনুযায়ী পরিচালিত হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকদের জন্য বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক সহায়িকা (ঞএ) রাখা হয়েছে। শিক্ষকমন্ডলী এই শিক্ষক সহায়িকা দেখে পড়াবেন। শিক্ষক সহায়িকার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
আশা করা হচ্ছে শিক্ষার্থীরা এই নতুন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে বিশ^নাগরিক হয়ে গড়ে উঠবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই শিক্ষকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাস্তবতা বলছে যে, শিক্ষকদের গুরুত্ব প্রদানের বিষয়টি এখনো হয়তো সবার মনোযোগের কেন্দ্রে নেই। তাই হয়তো আমার এক সহকর্মী কৌতুক করে বলছিলেন ‘বুঝলাম, নতুন শিক্ষাক্রম বিশ^মানের। তবে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা কোন মানের?’
সে যাই হোক, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন মহলে নানা আলোচনা-পর্যালোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে কিছু ভুলত্রুটি (বানান, তত্ত্ব ও লাইনের অসংগতি) চোখে পড়েছে। আমি ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে বলতে পারি ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির নতুন বইয়ে বেশ কিছু পৃষ্ঠায় বানান ভুল চোখে পড়েছে। যা গ্রহণযোগ্য ছিল না। কেননা মাধ্যমিক পর্যায়ের লাখ লাখ শিক্ষার্থী এই ভুল দেখছে ও পড়ছে (যদিও শিক্ষকরা নিজে থেকে ক্লাসে ভুল সংশোধন করে দিচ্ছেন)। এটা ঠিক, নতুন বই মূলত ‘পরীক্ষামূলক সংস্করণ’।
পাঠ্যবইয়ের ভুলত্রুটি অবশ্যই সংশোধনযোগ্য। নতুন পাঠ্যবইয়ের সামান্য ভুলত্রুটি বা অসংগতি নিয়ে যারা বা যেসব মহল তিলকে তাল করছে তারা সঠিক কাজ করছে না। গঠনমূলক সমালোচনা সব পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য। নতুন শিক্ষাক্রম মূলত পুরো জাতির জন্য। সামান্য ভুলত্রুটি থাকলে সেটা গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে অবশ্যই সংশোধনযোগ্য। কেননা শিক্ষাক্রমের নতুন প্রতিটি বইয়ের শুরুতে ‘প্রসঙ্গ কথা’য় লেখা রয়েছে পরীক্ষামূলক এই সংস্করণের কোনো ভুল বা অসংগতি কারও চোখে পড়লে এবং এর মান উন্নয়নের লক্ষ্যে কোনো পরামর্শ থাকলে তা জানানোর জন্য সবার প্রতি বিনীত অনুরোধ রইল।
আশা করি, নতুন শিক্ষাক্রমের ভুলত্রুটি নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি কর্তৃপক্ষ থেকে সংশোধনী আসবে। নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হলে পরিবর্তনশীল বাস্তবতায় জীবন-জীবিকার যেমন সংকট থাকবে না তেমনি অভিযোজনের মাধ্যমে টেকসই ও নিরাপদ পৃথিবী গড়া সম্ভব হবে।
লেখক : শিক্ষক ও পরিবেশকর্মী
‘দুর্নীতির ব্যাপারে কোনো কম্প্রোমাইজ করব না’অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে গত বছরের শুরুতে দায়িত্বে অভিষেক প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর। এক বছরের মাথায় এসে ঘোষণা : ‘দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারকরা ক্যানসারের মতো, ক্যানসার আক্রান্ত অঙ্গ যেমন কেটে ফেলা হয়, তেমনি দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারকদের ছেঁটে ফেলা হবে’।
অভিষেকের সময় প্রধান বিচারপতির করা আশাজাগানিয়া ওই অঙ্গীকারের কোনো খেলাপ এখনো হয়নি। অথবা চেষ্টায় কমতি ঘটেছে বা হাল ছেড়ে দিয়েছেন এমনও নয়। অবিরাম তার নানা নির্দেশনা-আহ্বানের কিছু কিছু গণমাধ্যমেও আসছে। কোনো অনুষ্ঠানে রাখা বক্তব্যের খবরগুলোই সচরাচর প্রকাশ পায়। এ ছাড়া ইনডোরেও সুষ্ঠু বিচারের তাগিদ দিচ্ছেন নিয়মিত। বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় বলা কথাবার্তার মধ্যে স্বল্প খরচ ও সময়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, আইনজীবীদের সপ্তাহে অন্তত এক দিন বিনাপয়সায় মামলায় লড়ার আহ্বান মানুষকে আশাবাদী করেছে। বিবেকবানদের দৃষ্টি কেড়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির শত বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের কয়েকটি বক্তব্য আরও তাৎপর্যপূর্ণ।
দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিতের তাগিদ দিতে গিয়ে তিনি কিছু উষ্মার কথা বলেছেন। বছরের পর বছর মাসের পর মাস মানুষ আদালতে ঘুরতে থাকলে আদালতের প্রতি অনাস্থার জন্য দায়ী হবে কে? প্রশ্নটি ছুড়ে জবাবে বলেছেন, দায়ী হবে সিস্টেম, দায়ী হবেন আইনজীবী, দায়ী থাকবেন বিচারক। কিছুদিন আগেও এক বক্তৃতায় তার প্রশ্ন ছিলএকটি কেইস ৩০ বছর ধরে চললে মানুষের কেন আস্থা থাকবে? চাঁপাইনবাবগঞ্জের বক্তৃতায় কোনো বিচারকের প্রতি অভিযোগ থাকলে সরাসরি তার কাছে অভিযোগ জানাতে বলেছেন। একপর্যায়ে বলেছেন সবচেয়ে কঠিন কথাটি‘দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারকরা ক্যানসারের মতো, ক্যানসার আক্রান্ত অঙ্গ যেমন কেটে ফেলা হয়, তেমনি দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারকদের ছেঁটে ফেলা হবে।... যেকোনো দুর্নীতি ক্যানসারের মতো। যদি কোনো আঙুলে ক্যানসার হয় উচিত হবে চট করে সেই আঙুল কেটে ফেলা।’ একেবারে মেদহীন কথা। যদি-কিন্তু-তবের ফাঁক নেই। বিচার বিভাগকে মহান সংবিধানের ‘শেষ রক্ষাকবচ’ উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘আইনজীবীরা সেই বিচার বিভাগেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। বার ও বেঞ্চ পরস্পরের পরিপূরক। একটি পাখির দুটি ডানা। পারস্পরিক শ্রদ্ধাহীনতা দুই পক্ষকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে পুরো বিচার বিভাগ।’
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর কথাগুলোকে বলার জন্য বলা বা কথার কথা মনে করার জো নেই। কথা আর অবশিষ্ট রাখেননি তিনি। দায় নয়, প্রকারান্তরে দায়িত্ব নিয়েছেন। শুরু থেকেই চলমান অর্থ পাচার, মানি লন্ডারিং, ঘুষসহ বিভিন্ন দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ-কষ্টের কথা জানিয়ে আসছিলেন তিনি। যেগুলোর দায় এবং দায়িত্ব সরকারি মহলের। কিন্তু, এবার নিজস্ব আঙিনার দুর্নীতির দিকে আঙুল তুলে প্রধান বিচারপতি অতিরিক্ত দায়িত্ব নিজের ওপর নিয়েছেন। কোনো তথ্য বা অভিযোগ ছাড়া তিনি ‘দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারক ও ক্যানসার’ প্রসঙ্গটি আনেননি। এ ছাড়া এমন একসময় তিনি তীরটি ছুড়লেন যখন আমাদের সামনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিন্ড্রোম। তাও তার আদালতে বিচারাধীন। সচরাচর সাধারণ মানুষ বিচার, বিচারালয়, বিচারপতি নিয়ে কথা বলতে ভয়ে থাকে। বিষয়গুলো স্পর্শকাতর। আড়ালে-আবডালে কিছু বললেও এদিক-ওদিক তাকায়। কারও কাছে আইন-আদালত ভীষণ ভয়ের। কারও কাছে শ্রদ্ধার। আর লেখালেখির ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের মধ্যে কাজ করে সর্বোচ্চ সতর্কতা। একটু এদিক-সেদিক হয়ে গেলেই আদালত অবমাননার মতো মহাবিপদের শঙ্কা তাড়া করে। আবার তথ্যসহ প্রযুক্তিগত নানা কল্যাণে কেউ না বললেও সব কথাই বলা হয়ে যায়। জানাজানির বাকি থাকে না। সোশ্যাল মিডিয়া মাড়িয়ে মূলধারার গণমাধ্যমেও চলে আসে। তার ওপর আইন-বিচারাঙ্গনে কর্মরতদের কাণ্ডকীর্তির খবর হালে মাত্রাগতভাবে বেশি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতের ঘটনার ফুটেজ প্রথমে ঘুরছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। পরে মেইন স্ট্রিমের মিডিয়ায়। একপর্যায়ে উচ্চ আদালতের বিচার্য বিষয়ে। আইন-আদালত-বিচার নিয়ে সাধারণ মানুষ ভয়ে বা শ্রদ্ধায় সংযত থাকলেও সংশ্লিষ্টরা দেখিয়েছেন উল্টোটা। হাইকোর্টের বিচারপতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালত কক্ষের ওই ভিডিও ফুটেজ দেখে বলেই বসেছেন, কমলাপুরের কুলিরাও এ ভাষায় কথা বলে?
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুই বিচারকের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ ও আইনজীবীদের কর্মবিরতির কারণে আদালতপাড়ায় টানা কয়েক দিন যে অচলাবস্থা চলেছে একে শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি বিচ্ছিন্ন বা আঞ্চলিক ঘটনা বলার অবস্থা নেই। সেখানকার জেলা জজসহ দুই বিচারকের অপসারণ ও নাজিরের শাস্তির দাবিতে আইনজীবীরা কর্মবিরতিসহ কি না করেছেন? কীসব ভাষা ও আচরণ না করেছেন? এজলাস চলাকালে বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের সঙ্গে আইনজীবীদের আচরণ ও ভাষার কয়েক মিনিট সারা দেশের মানুষের দেখা হয়েছে।
এ রকম সময় প্রধান বিচারপতি ‘চাঁপাই’তে প্রকাশ্য অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় যে মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, তা উপলব্ধির মূল দায়িত্ব আইনজীবী-বিচারপতি দুপক্ষেরই। তার ‘একটি পাখির দুটি ডানা’ মন্তব্যের মধ্যে রয়েছে মোটা দাগের একটি সতর্কবার্তা। অথচ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইনজীবী আর বিচারকসহ আইনাঙ্গন সংশ্লিষ্টদের কদাকার ঘটনাকে জাস্ট ভাই-বোনের বিরোধের মতো বিষয় বলে ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আচানক কাণ্ডের পর উচ্চাদালতেও কম যাননি আইনজীবীরা। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সম্পাদকসহ তিন আইনজীবীকে আদালত অবমাননার রুল দেওয়ার পর ১৭ জানুয়ারি হাইকোর্টে হাজিরা ছিল তাদের। দিনটিতে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ থেকে উচ্চারিত প্রতিটি শব্দ ও বাক্য বাংলাদেশের বিচারালয়ের ইতিহাসে রেকর্ড হয়ে থাকবে। আদালত বলেছে, ওই বিচারকের সঙ্গে আইনজীবীরা যে আচরণ করেছেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এ ধরনের ঘটনা অব্যাহত থাকলে বিচার বিভাগ ও আইন-আদালত বলে কিছু থাকবে না। সবাই মিলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আগুন না থামালে আমাদের সবাইকে জ্বলতে হবে।
বিচারপতির উপরোক্ত তিনটি বাক্যের মধ্যে লুকানো বেদনা ও শঙ্কার মধ্যে বিবেকমান যে কারও জন্য ভাবনার অনেক উপাদান। ঘটনা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার। সেখানকার এমপি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি আবার একজন আইনজীবীও। তার বাবা প্রয়াত অ্যাডভোকেট সিরাজুল হকও ছিলেন বাংলাদেশের আইন ও বিচার অঙ্গনের তারকা ব্যক্তিত্ব। মহল্লার মেলদরবারের মতো দুই কথার বাড়িতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এজলাসে হট্টগোল, বিচারক ও আদালতের কর্মচারীদের ‘গালাগাল ও অশালীন আচরণকে ‘ভাইবোনের ঝগড়ার মতো’ বলে উল্লেখ করেছেন আইনমন্ত্রী। বিচারক-আইনজীবী-আদালত-বিচার তথা আইন ভাইবোনের কাইজ্জার বিষয় নয়? স্বামী-স্ত্রী বা ভাই-বোন মিলে দল চালানো যায়। জোট গঠন করা যায়। বড় বড় কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা যায়। দেশও চালানো যায়। তা আইন, বিচার বা বিচারালয়ে কি খাটে? সাফাই বা এ ধরনের আশকারা দেশের বিচারব্যবস্থাকে কোন তলানিতে নিয়ে যেতে পারেসেই শঙ্কার বার্তা রয়েছে প্রধান বিচারপতির বক্তব্যেও। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ ফারুক আহমেদের সঙ্গে অশালীন আচরণের ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে অপসারণের নির্দেশও দিয়েছে হাইকোর্ট। যেই লাখো-কোটি মানুষ ওই ভিডিও ফুটেজ দেখেছেন, গালমন্দগুলো শুনেছেন তাদের মনের হার্ডডিস্কে কিন্তু গেঁথে আছে। শুনানিতে হাইকোর্ট কেন শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবীদের তলব করল, বিচারকদের প্রতি কেন আদালত অবমাননার রুল জারি করল নাএ ক্ষোভ ছোড়া হয়েছে। বিচারকদের আচরণ ও ক্রিয়াকলাপ বলতেও ছাড়েননি আইনজীবীরা। এ সময় আদালতে উপস্থিত আইনজীবীরা উচ্চৈঃস্বরে ‘ঠিক-ঠিক’ বলে ওঠেন। এত ঠিকের মধ্যে আইন-বিচার ও আদালতের ভবিষ্যৎ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিচারক বিচার চেয়েছেন। আগে অসদাচরণের শিকার বিচারকরাও বিচার চেয়েছিলেন। আদালতে তলব করে দুর্বিনীত আইনজীবীকে সমঝে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আদালতে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চেয়ে তারা হাসিমুখে বের হয়ে বেপরোয়া আচরণের স্বীকৃতি হিসেবে ‘বিখ্যাত’ হয়েছেন। ঝালকাঠি, বরিশাল, বরগুনা, পিরোজপুর বা খুলনার ঘটনা অনেকের মনে আছে, যা আইন পেশার মানের নিম্নগামিতার সঙ্গে আরও নানান কিছু নির্দেশ করে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল টিআইবি একবার তাদের খানা জরিপ প্রতিবেদন দিয়ে ঝামেলায় পড়ে গিয়েছিল। টিআইবির রিপোর্টে বলা হয়েছিল, বিচার বিভাগ ‘সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সার্ভিস সেক্টর’। সুপ্রিম কোর্ট ক্ষুব্ধ এতে হয়। বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহাব মিয়ার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি বলেছিল, এই জরিপ উপকারী নয়। টিআইবি বলেছিল, এটা দৃষ্টিভঙ্গিগত একটি বিষয়। তবে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী লিখেছেন, ‘বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের মনোভাব কী, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। সমগ্র বিচার বিভাগের বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক সময় অল্পসংখ্যক বিচারকদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’ বিভিন্ন সেক্টরে অল্পরাই বেশি ক্ষমতাধর। এরাই উদাহরণ। প্রধান বিচারপতিও নিশ্চয়ই অনেক সংখ্যকের কথা বলেননি। অন্তত টোকেন বা প্রতীকী হলেও অল্পেরও অল্প কিছু দৃষ্টান্ত রাখার দায়িত্ব এখন প্রধান বিচারপতির। ক্যানসার মেডিসিনে না সারলে সার্জিক্যালে যেতে হয়, ক্যানসার আক্রান্ত অঙ্গ কেটে ফেলার সেই আভাস তিনি দিয়েছেন প্রকাশ্যে অনুষ্ঠানে। কথা বলেছেন অ্যাকটিভ ভয়েসে। এর মধ্য দিয়ে সার্জনের থিয়েটারে তিনি নিজেই। শনিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে এটি গুরুত্ব পেয়েছে দিনের টপ নিউজ হিসেবে। আরেক টপ নিউজ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিচারকের সঙ্গে অশালীন আচরণের ঘটনায় আদালত অবমাননার ব্যাখ্যার পরবর্তী তারিখ সামনের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে। ওইদিন তিন আইনজীবীর সশরীরে লিখিত ব্যাখ্যার তারিখ। এর আগে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রধান বিচারপতির বক্তব্যটি রুলিংয়ের চেয়ে কম নয়। যদি বিচারক, আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টরা তা উপলব্ধি করেন। এটি অন্য কারও বুঝিয়ে-শুনিয়ে আরোপের বিষয় নয়।
লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন
চলচ্চিত্র নির্মাতা, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক জহির রায়হান ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট বর্তমান ফেনীর অন্তর্গত মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সক্রিয়ভাবে ভাষা আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। খাপছাড়া পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে তার সাংবাদিকতা জীবনের শুরু। পরে তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। ১৯৫৭ সালে তিনি চলচ্চিত্রে যুক্ত হন ‘জাগো হুয়া সাবেরা’ সিনেমার সহকারী পরিচালক হিসেবে। ১৯৬৪ সালে তিনি নির্মাণ করেন উর্দুতে পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র ‘সঙ্গম’। ‘বরফ গলা নদী’, ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’, ‘আর কত দিন’, ‘তৃষ্ণা, ‘হাজার বছর ধরে’ প্রভৃতি তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। তার পরিচালিত ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘কাঁচের দেয়াল’, ‘স্টপ জেনোসাইড’ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। জহির রায়হান ছিলেন যুগপৎ শিল্পী ও যোদ্ধা। একাত্তরের যুদ্ধকালে তার নির্মিত বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাড়া ফেলে। এরপর অনেক কাজের পরিকল্পনা থাকলেও করতে পারেননি। বড় ভাই সাহিত্যিক, সাংবাদিক শহীদুল্লা কায়সারকে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের আগ মুহূর্তে আলবদর বাহিনী অপহরণ করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নিখোঁজ ভাইকে খুঁজতে ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি জহির রায়হান মিরপুরে বিহারি-রাজাকার অধ্যুষিত এলাকায় যাওয়ার পর আর তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয় সেদিনই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতিতে এমন কিছু চরিত্র আছে, যারা সব সময়ই ক্ষমতার কাছাকাছি থাকে, ক্ষেত্র বিশেষে এরা নীতিনির্ধারকও হয়ে ওঠে। ক্ষমতার মধু আহরণে এরা সামনের কাতারে থাকলেও, পালাবদলের আগেই ওরা রূপ পাল্টাতে শুরু করে! ওদের কাছে কি কোনো বার্তা আছে বদলে যাওয়া বা বদলে ফেলার বার্তা?
বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে প্রবাসের মাটিতে কেমন যেন একটা তোড়জোড় শুরু হয়েছে। হতাশা, অনিশ্চয়তা নিয়ে যারা পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, এরাও যেন দৃশ্যপটে আসতে শুরু করেছে। রূপ পাল্টে যারা আওয়ামী সেজে এতদিন চারদিক দাবড়িয়ে বেড়িয়েছেন, খোলস পাল্টাতে এদের কেউ কেউ প্রস্তুতি শুরু করেছেন, প্রবাসের মাটিতে এরা রূপ পাল্টিয়ে ইতিমধ্যে নতুন রূপ ধারণ করতে শুরু করেছেন। এরা কি তাহলে নতুন কোনো আগমনী বার্তায় উজ্জীবিত হয়ে উঠছেন? কী সেই বার্তা? গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিবর্তনের বার্তা দেওয়ার মালিক জনগণ, আর তার একমাত্র উপায় গণভোট। এখনো সেই গণভোটের বাকি এক বছর, তাহলে বসন্তের কোকিলদের মাঝে এত দৌড়ঝাঁপ কেন?
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দাতা নামের লগ্নিকারকদের দারুণ প্রভাব। সরকার ও রাজনীতিতে আড়ালে-আবডালে এরা নানাভাবে কলকাঠি নাড়ে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, উন্নয়ন অংশীদার বা দাতা পরিচয়ে এরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির নানারকম কর্মকা- চালায়। সোজাসাপ্টা ভাষায়, আমরা যাদের ডিপ্লোমেট বা কূটনীতিক নামে চিনি, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী এদের কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ কর্মকা- নিয়ে সরব হওয়ার সুযোগ নেই। তবুও দরিদ্রতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের নীতিনির্ধারণী বিষয় নিয়েও এরা তৎপর হয়ে ওঠে। মাঝেমধ্যে মানবাধিকারের নামে চাপাচাপির বার্তা চালায়।
প্রকৃত অর্থে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে, নিষেধাজ্ঞার খড়্গ আসতেই পারে। পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট জাতির শ্রেষ্ঠসন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যখন সপরিবারে নির্মম-নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হলো, তাদের মানবাধিকার তখন জাগ্রত হলো না!
একুশে আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আইভী রহমানসহ যারা নিহত হলেন, তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্বকে বরণ করে নিতে হলো, পার্লামেন্টারিয়ান আহসান উল্লাহ মাস্টার, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কূটনীতিক, অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া নিহত হলেন, তখনো এদের মানবাধিকার জাগ্রত হলো না! সাঈদীকে চাঁদ দেখার গুজব রটিয়ে শত শত মানুষকে অগ্নিদগ্ধ করা হলো, ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে অঙ্গার হয়ে অসার দেহ পড়ে থাকল, তখনো তাদের মানবাধিকার জাগ্রত হলো না!
একুশ বছরে বিকৃত ইতিহাস জেনে গড়ে উঠে একটি প্রজন্ম। এই প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস-ই সত্যরূপে আবির্ভূত হয়। গত এক যুগে একাত্তরের পরাজিত আদর্শের অনুসারী একদল সুবিধাবাদী রঙ পাল্টিয়ে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। এই ধারাটি শুধু দেশে নয়, প্রবাসের মাটিতেও সক্রিয় ছিল। কূটনীতিকদের লম্ফঝম্ফ দেখে এরা আবারও রূপ পাল্টাতে শুরু করেছে। এতদিন ‘জয়বাংলা’ বলে যারা হুঙ্কার ছেড়েছিল, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানেও বঙ্গবন্ধুর নাম নিতে তাদের আপত্তি!
অগ্নিঝরা মার্চ আর বিজয়ের ডিসেম্বর! এ মাস দুটি বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম অর্জনের মাস। তবুও এ মাসগুলোতেই যেন কিছু মানুষের হৃদয়ের দহন বেড়ে যায়! যন্ত্রণায় এদের রক্ত টগবগিয়ে ওঠে। অন্তরাত্মাকে শীতল করতে এরা প্রচন্ড প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে। এর অন্তরালে কাজ করে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার এক সুদূরপ্রসারী হীন প্রচেষ্টা। এই ঘৃণ্য অপশক্তির প্রথম টার্গেট ছিল ১৫ আগস্ট।
একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস আমাদের জাতীয় জীবনের গৌরবোজ্জ্বল দিন। পনেরো আগস্ট, ৩ নভেম্বর বাঙালির ইতিহাসের কলঙ্কময় দিবস। প্রবাসে থাকলেও এসব দিবসে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারি না। ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ থেকেই নানা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করি। ২০২২-এর বিজয় দিবসে জাতির শ্রেষ্ঠসন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। আয়োজকদের মতে, প্রবাসের নতুন প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকশিত করাই তাদের লক্ষ্য ছিল। উপস্থিত বারোজন সংবর্ধিত মুক্তিযোদ্ধার একজন বাদে কেউই বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কথা বলেননি! এ মহান নেতার নামটিও উচ্চারণ করেননি। সুকৌশলে বঙ্গবন্ধুকে এড়িয়ে চলার এমন হীন চেষ্টা দেখে বিস্মিত হয়েছি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করেছেন, বিশ্বব্যাংককে অবজ্ঞা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করেছেন, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, ফ্লাইওভারের মতো বড় বড় প্রকল্পের মাধ্যমে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে রাত-দিন কাজ করছেন, তবুও চারদিকে এত ষড়যন্ত্র কেন?
ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির নায়ক শাসক দলের ব্যাপক ক্ষমতাবান নেতাদের মুহূর্তে কপর্দকহীন করে শেখ হাসিনা তাদের আইনের মুখোমুখি করেছেন, ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটালাইজেশনের প্রক্রিয়ায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে উঠছে দুর্নীতিবাজ চক্র, পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণে রেল আর সড়ক যোগাযোগে বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট, পৃথিবীর বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত অবধি বিস্তৃত হচ্ছে রেলওয়ে নেটওয়ার্ক, গড়ে উঠছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দৃষ্টিনন্দন রেলওয়ে স্টেশনসহ বড় বড় মেগা উন্নয়ন প্রকল্প। এতসবের পরও ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে নেই। আবারও বঙ্গবন্ধুর নামকে মুছে দিতে দেশি-বিদেশি লম্ফঝম্ফ দৃশ্যমান হচ্ছে! স্বাধীন বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে ধারণ করেই এই ষড়যন্ত্রকে রুখতে হবে। যারা বঙ্গবন্ধুকে বিসর্জন দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে, এরা দেশপ্রেমের ছদ্মাবরণে একাত্তরের পরাজিত শক্তির সোল এজেন্ট, এদের রুখতেই হবে।
লেখক : কলামিস্ট ও উন্নয়ন গবেষক
ক্যালগেরি, কানাডা
ভারতীয় পারিবারিক হিন্দি চলচ্চিত্র ‘অভিমান’। ১৯৭৩ সালের সাড়া জাগানো এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন প্রখ্যাত অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন ও জয়া ভাদুড়ি। অর্ধশত বছর পার করলেও অভিমানের আবেদন এখনো অটুট। লিখেছেন নাসরিন শওকত
অমিতাভ-জয়া জুটি
১৯৬৯ সালে ‘সাত হিন্দুস্থানি’ চলচ্চিত্র দিয়ে বলিউডে অভিষেক হয় অমিতাভ বচ্চনের। তখন একের পর এক চলচ্চিত্র মুখ থুবড়ে পড়ায় বলিউডে অস্তিত্ব¡ সংকটের মুখে পড়েন অভিনেতা। ঠিক তখনই মুক্তি পায় ‘দিওয়ার’। অমিতাভের সেই ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ ইমেজে মজেন ভারতীয়রা। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি বলিউডের আজকের ‘শাহেনশাহ’ এবং মেগাসুপারস্টার বিগ বি’কে। অন্যদিকে নায়িকা হিসেবে জয়ার ক্যারিয়ার শুরু হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের ‘গুড্ডি’ (১৯৭১ সালে) চলচ্চিত্র দিয়ে। অমিতাভের সঙ্গে একাধিক ছবিতে কাজ করেছেন তিনি, যার মধ্যে অন্যতম ‘জাঞ্জির’, ‘চুপকে চুপকে’, ‘অভিমান’, ‘মিলি’, ‘শোলে’, ‘সিলসিলা’।
একসময় বলিউডের চলচ্চিত্রশিল্পে অমিতাভ-জয়ার প্রেম ছিল চর্চিত বিষয়। অমিতাভ বচ্চন যখন ক্যারিয়ার শুরু করেন, ততদিনে জয়া ভাদুড়ি প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী। ১৯৭১ সালে যখন ‘গুড্ডি’ মুক্তি পায়, তখন থেকেই অমিতাভের সঙ্গে জয়ার প্রেমের সূত্রপাত। শোনা যায়, ওই চলচ্চিত্রের সেট থেকেই জয়ার প্রতি অনুরাগের শুরু তার। এরপর ‘এক নজর’ চলচ্চিত্রে কাজ করতে গিয়ে জয়াতে নিজেকে হারান অমিতাভ। পরে ‘জঞ্জির’ বক্স অফিসে সাফল্য পেলে লন্ডন বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন এই জুটি। পরিকল্পনা অনুযায়ী লন্ডনের টিকিট কেটে ফেলেন অমিতাভ ও জয়া। কিন্তু তাদের লন্ডন ভ্রমণে বাধা হয়ে দাঁড়ান স্বয়ং অমিতাভের বাবা হরিবংশ রাই বচ্চন। ছেলেকে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বিয়ে না করে একসঙ্গে বিদেশে বেড়াতে যাওয়া যাবে না কোনোভাবেই।
বাবার নির্দেশ অনুয়ায়ী, পরদিন সকালে পরিবার ও বন্ধুদের খবর দেওয়া হয়। ডেকে আনা হয় পুরোহিতকে। রাতে লন্ডনের বিমানে ওঠার কথা ছিল দুজনের। তাই ওই দিন সকালে একেবারে সাদাসিদেভাবে অমিতাভ-জয়ার বিয়ের আসর বসে। বরের পোশাক পরেই অমিতাভ গাড়ি চালিয়ে গিয়ে মালাবার হিলস থেকে তুলে আনেন জয়াকে। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই (১৯৭৩ সালের ৩ জুন ) বিয়ে হয়ে যায় তাদের। বিয়ের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নবদম্পতি রাতে লন্ডনের বিমানে ওঠেন। বিয়ের ১ বছর পর (১৯৭৪ সালে) প্রথম সন্তানের মা হন জয়া বচ্চন। মেয়ের নাম রাখেন শে^তা। এর দুবছর পর জন্ম হয় ছেলে অভিষেকের। বিয়ের পর একেবারে সংসারী হয়ে ওঠেন জয়া। অভিনয় জীবন থেকে লম্বা বিরতি নেন। মন দেন দুই সন্তান শ্বেতা ও অভিষেককে বড় করার দিকে।
অমিতাভ-জয়াকে বলিউডের অন্যতম আদর্শ দম্পতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দেখতে দেখতে দাম্পত্যেরও অর্ধশত বছর পার করেছেন তারা। বর্তমানে ৩ নাতি-নাতনি নিয়ে সুখের সংসার তাদের। অভিষেক-ঐশ্বর্যের মেয়ে আরাধ্য। অন্যদিকে শে^তা বচ্চন নন্দার দুই ছেলেমেয়ে অগাস্ত্য ও নভ্যা নভেলি নন্দা। দীর্ঘ এই দাম্পত্য জীবনে বহু চড়াই-উতরাইয়ের সাক্ষী থেকেছেন অমিতাভ-জয়া। তারপরও শক্ত করে ধরে রেখেছেন একে অপরের হাত ।
সুপারহিট ‘অভিমান’
বাঙালি পরিচালক হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘অভিমান’ নির্মিত হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। যেখানে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন অমিতাভ বচ্চন ও জয়া ভাদুড়ি। পরিচালক হৃষিকেশ অমিতাভকে তার স্ত্রী জয়ার সঙ্গে জুটি বাঁধিয়েছিলেন, যে জুটি চুটিয়ে প্রেম করছেন তখন । অভিমান মুক্তির এক মাস আগেই বিয়ে করেন তারা। কিন্তু এরই মধ্যে রুপালি পর্দার নবদম্পতির ব্যক্তিত্বের সংঘাত বাস্তব জীবনে সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে জয়া উমা চরিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে মর্যাদাপূর্ণ ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জেতেন।
‘অভিমান’-এর বাণিজ্যিক সাফল্যের কথা হয়তো পরিচালক হৃষিকেশের মাথায় আগে থেকেই ছিল (বাস্তবের অভিমান সব শ্রেণির দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়)। কিন্তু চলচ্চিত্রটিতে ঠুনকো অহংকার ও ভঙ্গুর মানসিকতার কারণে সৃষ্টি হয় দাম্পত্য কলহ, যার সহজাত কিন্তু গভীর উপলব্ধির পুঙ্খানুপঙ্খ চিত্রায়নের মধ্যেই মূলত লুকিয়ে ছিল এর স্থায়ী আবেদন ।
অভিমানে অমিতাভ ‘সুবির’ নামের এক গায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন, যিনি পপগানের জন্য সবার কাছে ভীষণ জনপ্রিয়। স্টেজে তাকে বিখ্যাত গায়ক কিশোর কুমার ও মোহাম্মদ রফির কণ্ঠে গাওয়া নানা সুপারহিট গান গাইতে দেখা যায়। মাঝরাতে উন্মত্ত নারী অনুরাগীদের টেলিফোন কলের জ¦ালাতন এবং চিত্রার মতো ধনী ও অভিজাত বান্ধবীর তার প্রতি গভীর অনুরাগ থাকা সত্ত্বেও ওই গানের নিঃসঙ্গতার মতোই সুবীর নিজেকে বড্ড একা অনুভব করে। এমন একসময়েই সুবীর তার প্রিয় মাসি দুর্গা মৌসির (দুর্গা খোটে) দূরের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যায়। যেখানে ঘটনাচক্রে এক শাস্ত্রীয় সংগীতকারের মেয়ে উমার (জয়া ভাদুরী) সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। সুবীর প্রথমে উমার শিববন্দনার প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং একসময় সে উমার প্রতিও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।
মজার বিয়ষ হলো, এই দম্পতি যে তখন বাস্তব জীবনেও একে অপরের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন, পরিচালক হৃষিকেশ সূক্ষ্মভাবে অভিমানের মধ্য দিয়েই ভিন্ন আঙ্গিকে তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। সুবীরের পরামর্শে উমা মঞ্চে তার সঙ্গে একটি দ্বৈত গান গাইতে রাজি হয়। পরে সে একক গানের প্রস্তাব পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়ে। কিন্তু ঘটনাচক্রে উমা যখন জনপ্রিয়তায় তাকে ছাড়িয়ে যায়, তখন সুবীর মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে ও স্ত্রীর প্রতি ঈর্ষাকাতর হয়ে ওঠে। এই কয়েক দৃশ্যে পরিচালক হৃষিকেশ এই দম্পতির মধ্যকার বৈপরীত্যকে গভীর মমতায় সেলুলয়েডে তুলে আনেন।
চলচ্চিত্রটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি দৃশ্যে অন্তজর্¦ালায় জ¦লতে থাকা সুবীরকে (যে কিনা এরই মধ্যে চিত্রার বাড়িতে সময় কাটানো শুরু করেছে) বলতে শোনা যায়, ‘প্রথমেও একাই ছিলাম, আজও একাই আছি।’ তখন চিত্রা উপলব্ধি করে, একাকিত্ব হলো নিজের সৃষ্ট এক ব্যথা, যার জন্ম ছোট ছোট অভিমান আর অহংকার থেকে।
এ সময় উমা স্বেচ্ছায় গান গাওয়া বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এরই মধ্যে সুবীরের ক্ষতবিক্ষত মন আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এমনই এক চরম মুহূর্তে উমাকে সে বলে বসে, তাকে আর তার প্রয়োজন নেই। সুবীরের সন্তানকে গর্ভে নিয়ে উমা তার গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসে। চরম এক বিপর্যয়ের মুহূর্তে উমা তার সন্তানকে হারায়। একপর্যায়ে অনুতপ্ত হয়ে উমাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনে সুবীর। কিন্তু শোকে কাতর উমা একেবারে স্তব্ধ হয়ে যায়। তখন উমার নীরবতা ভাঙার জন্য দিশেহারা হয়ে পড়ে সুবীর। শেষ পর্যন্ত স্টেজ শো করে তাদের দুজনের প্রিয় গান গায় (তেরে মেরে মিলন কি ইয়ে র্যায়না), যা উমাকে স্বামীর ভালোবাসায় ফিরিয়ে আনে আবার। সুবীর উমাকে আবার গান গাইতে অনুরোধ করে।
অমিতাভ-জয়ার দুর্দান্ত অভিনয়ই অভিমানের প্রাণশক্তি। প্রাথমিক অবস্থায় চলচ্চিত্রটির নাম রাখা হয় ‘রাগ রাগিনী’। কিন্তু পরবর্তী সময়ে পরিচালক হৃষিকেশ এর নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘অভিমান’। চলচ্চিত্রটি মুক্তির মাত্র এক মাস আগে অমিতাভ বচ্চন ও জয়া ভাদুড়ি বিয়ে করেন। তাই এর প্রথম দিকের দৃশ্যগুলোতে এই দম্পতিকে বিয়ের প্রাথমিক ঘনিষ্ঠতা উপভোগ করতে দেখা যায়, যা ছিল জীবনঘনিষ্ঠ। এর সংগীত পরিচালক ছিলেন এস ডি বর্মণ।
অভিমান-এর পোস্টমর্টেম
১৯৮০-র দশকের শুরুর দিককার কথা। তখন বলিউডে বারবার অ্যাকশন হিরোর চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক সফলতা পাওয়ায় ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ ইমেজ গড়ে ওঠে অমিতাভের। তখন ‘দিওয়ার’, ‘শোলে’ ও ‘জাঞ্জির’-এর মতো ব্যবসাসফল অ্যাকশন চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। কিন্তু অনেকেই মনে করেন, সে সময়ের সংগীতের নাটকীয়তাকে ঘিরে এক নবদম্পতির ঈর্ষাপরায়ণতা, ভালোবাসা ও মান-অভিমানের কাহিনি নিয়ে নির্মিত ‘অভিমান’ ছিল অমিতাভ অভিনীত সবচেয়ে ভালো চরিত্রগুলোর মধ্যে একটি।
‘অভিমান’ এবছর অর্ধশত বছর পূর্ণ করেছে। ১৯৭৩ সালে অমিতাভের কমপক্ষে অর্ধ ডজন চলচ্চিত্র মুক্তি পায়, যার মধ্যে ‘অভিমান’ একটি। এই তালিকায় রয়েছে ‘সওদাগর’, যেটি আনুষ্ঠানিকভাবে সে বছর ভারতীয় চলচ্চিত্র হিসেবে অস্কারে যায় এবং আরেকটি ছিল ‘জাঞ্জির’, ব্লকবাস্টার এই চলচ্চিত্রটি অমিতাভকে ভারতের শীর্ষ ‘অ্যাকশন হিরো’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা এনে দেয়। কিন্তু চলচ্চিত্র সমালোচক ও লেখক শৈবাল চট্টোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন, ‘‘অভিমান’ ছিল ওই বছরের সবচেয়ে আলোচিত চলচ্চিত্র এবং সে বছরে তার (অমিতাভ) সবচেয়ে বড় হিট চলচ্চিত্রও’’। ‘অভিমান’ দেখতে ভক্তরা দলে দলে ছুটে যান সিনেমা হলগুলোতে। বাবা-মা এবং ছোট বাচ্চাসহ পুরো পরিবারে ভরে যায় থিয়েটারগুলো। সমান তালে ভিড় থাকে ম্যাটিনি ও সান্ধ্য শোতে।
বছরের পর বছর ধরে চলচ্চিত্র শিল্পের ভক্ত, সমালোচক এবং বচ্চন দম্পতির সহকর্মীদের কাছ থেকে ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে ‘অভিমান’। অমিতাভ বচ্চন নিজেও সুযোগ পেলেই ‘অভিমান’-এর প্রতি তার ভালোবাসার কথা উল্লেখ করেন। একবার তিনি বলেছিলেন, ‘এটি সেই চলচ্চিত্র, যা আমাদের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে স্মরণীয় সৃজনশীল কাজ করাতে জয়া ও আমাকে একত্রিত করেছে এবং এর গানগুলো কোনোভাবেই ভোলার নয়। অনেকের কাছেই এখনো তা স্বপ্নের মতোই।’
লেখক শৈবাল চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘ ‘অভিমান’কে সব সময় বচ্চনের ক্যারিয়ারের ‘একটি শীর্ষ সময়’ হিসেবে আলোচনা করতে হবে। কারণ এটি ছিল এমন একটি চলচ্চিত্র, যেখানে তাকে গতানুগতিক পৌরুষদীপ্ত, তেজী বা রাগী যুবক হিসেবে তুলে ধরা হয়নি। এটি এমন একটি চরিত্র ছিল, যেখানে তার ভিন্ন এক রূপ দেখানো হয়েছে। সেখানে তিনি একজন সত্যিকারের নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন, একজন সত্যিকারের মানুষ যিনি নিরাপত্তাহীনতায় ঈর্ষাকাতর হয়ে ওঠেন এবং এখানেই তিনি একজন বহুমুখী অভিনেতার পারদর্শিতা দেখাতে সক্ষম হন। প্রমাণ করেন যে, পরিচালক তার জন্য যে চরিত্রই লেখেন না কেন, তিনি তাতে পারদর্শী।’ ”
সময় যত গড়িয়েছে, ‘অভিমান’-এর কাহিনিকে ঘিরে অনুমানের চর্চাও তত বেড়েছে। তখন ধারণা করা হতো যে, চলচ্চিত্রটি তার দুই প্রধান তারকার সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করেই নির্মাণ করা হয়েছিল। কেননা অমিতাভ তখন বলিউডে একজন নবাগত হলেও জয়া এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠিত একজন অভিনেত্রী ছিলেন। আবার কখনো সেতারবাদক রবিশঙ্কর ও তার প্রথম স্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবীর জীবনের সঙ্গেও এর তুলনা করা হয়েছে, যিনি নিজেও একজন প্রতিভাবান সেতারবাদক ছিলেন। কিন্তু পরিচালক হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় এসব তুলনা প্রত্যাখ্যান করেন।
এ ছাড়াও ‘অভিমান’কে হলিউডের চলচ্চিত্র ‘এ স্টার ইজ বর্ন’-এর সঙ্গেও তুলনা করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই একই কাহিনি নিয়ে হলিউডে মোট চারটি চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে। প্রথমটি নির্মিত হয়েছিল ১৯৭৩ সালে এবং এর সবশেষ সংস্করণটি ২০১৮ সালে নির্মাণ হয়। যেখানে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন বিশ্ববিখ্যাত গায়িকা লেডি গাগা ও অভিনেতা ব্রাডলি কুপার। যদিও এই তুলনাকে কখনোই স্বীকার করেননি ‘অভিমান’-র পরিচালক হৃষিকেশ। এর পরিবর্তে তিনি বলেছিলেন, তার চলচ্চিত্রটি বলিউডের কিংবদন্তি গায়ক কিশোর কুমার ও তার প্রথম স্ত্রী রুমা দেবীর জীবনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল, যিনি বাংলা চলচ্চিত্রশিল্পের একজন সফল অভিনেত্রী ও গায়িকা। এক সাক্ষাৎকারে পরিচালক হৃষিকেশ বলেন, ‘অভিনেত্রী রুমা কম প্রতিভাবান ছিলেন না। যেহেতু কিশোর তার ক্যারিয়ারের শুরুতে কিছুটা সংগ্রাম করছিলেন, তাই অভিনয়শিল্পী হিসেবে রুমার প্রতিভার বিষয়ে সব সময় সতর্ক থাকতেন তিনি।’
তবে আজকাল কিছু নারীবাদী ‘অভিমান’-এ জয়াকে নম্র ও পতিব্রতা স্ত্রী হিসেবে চিত্রিত করার জন্য চলচ্চিত্রটির সমালোচনা করেন। যিনি কখনোই নিজের অধিকারের জন্য লড়াই করেননি, যার কাছে তার স্বামীই মুখ্য।
রমজানের পঞ্চম দিনেও রাজধানী ছিল তীব্র যানজটের কবলে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত নগরীর প্রায় প্রতিটি এলাকায় ভোগান্তি পোহাতে হয় নগরবাসীকে। এবার রোজার শুরুতে সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে স্বাধীনতা দিবসের ছুটি মিলিয়ে তিন দিন বন্ধ থাকায় রোজার চতুর্থ দিন সোমবার তীব্র যানজটের কবলে পড়েছিল ঢাকা। গতকাল মঙ্গলবার সে তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। যাত্রী, পরিবহন শ্রমিক থেকে শুরু করে সবরাই অভিযোগ, সেবা সংস্থাগুলো তাদের কাজের জন্য বিভিন্ন জায়গার রাস্তা কাটায় যান চলাচাল ব্যাহত হচ্ছে, ভোগান্তি বেড়েছে পথাচারীদের।
গতকাল রাজধানীর সদরঘাট, গুলিস্তান, পল্টন, শাহবাগ, ফার্মগেট, রামপুরা ও মিরপুরসহ বেশ কটি এলাকা ঘুরে সকাল থেকে তীব্র যানজট দেখা যায়। যানজটে আটকা পড়ে অনেককে হাঁসফাঁস করতে দেখা যায়। কাউকে কাউকে আবার বাসে দীর্ঘ সময় বসে থেকে পরে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য হেঁটেই রওনা দিতে দেখা যায়। অনেক জায়গায় শুধু সড়ক নয়, ফ্লাইওভারে দেখা দেয় তীব্র যানজট।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর অনেক জায়গায় রাস্তাঘাটের সংস্কারকাজ চলায় বিকল্প পথ ব্যবহারের কারণে যানজটের শিকার বেশি হতে হচ্ছে ওইসব এলাকার যাত্রীদের। বিশেষ করে অফিসের শুরু ও শেষের দিকে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যায়।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী মো. জয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাস্তাঘাটের যানজট এখন সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো জায়গায় ঠিকমতো যাওয়া যায় না। তাছাড়া কোনো কিছুরই সঠিক পরিকল্পনা নেই। এক রাস্তা কয়েকবার কাটতে দেখা যায়। আর এজন্যই মূলত এত যানজট।’
যানজটের কারণে যাত্রীদের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ গণপরিবহনের চালক ও কর্মীরাও। দিশারী পরিবহনের চালক মো. সানোয়ার বলেন, ‘সকাল থেকেই রাস্তায় প্রচণ্ড যানজট ছিল। সোমবারের থেকে আজ (গতকাল) আরও যানজট বেড়েছে। কোনোভাবেই গাড়ি সামনে যাচ্ছে না।’
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি শহরের জন্য যতটুকু পরিমাণ রাস্তাঘাট দরকার তার কোনো কিছুই মানা হচ্ছে না এই নগরীতে। আর প্রতিদিন কী পরিমাণ যানবাহন সড়কে চলছে তার সঠিক সংখ্যাও জানা নেই বিআরটিএর। আর গণপরিবহন ব্যবস্থা খুব খারাপ হওয়ায় বিকল্প ব্যবস্থায় মানুষের যাতায়াত বাড়ছে। সে জন্য ছোট গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। যার জন্য সড়কে যানজট বাড়ছে।
বিদেশিদের সম্পত্তি কেনার অনুমতি দিয়ে নতুন একটি আইনের পরিকল্পনা করছে সৌদি আরব সরকার। নতুন এই আইন পাস হলে বিদেশিরা দেশটিতে যেকোনো এলাকায় সম্পত্তি কিনতে পারবেন। অন্যান্য দেশের নাগরিকদেরমতো বাংলাদেশিরাও এই সুযোগ পাবেন। অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনার কৌশলের অংশ হিসেবে আবাসন খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতেই এমন পরিকল্পনা বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো।
সৌদি আরবের রিয়েল এস্টেট জেনারেল অথরিটির (আরইজিএ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আব্দুল্লাহ আলহাম্মাদদের বরাতে সৌদি গেজেটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশিদের সম্পত্তি কেনা সম্পর্কিত নতুন একটি আইন পর্যালোচনাধীন রয়েছে। এই আইনের আওতায় সৌদি নাগরিক নন, এমন বিদেশিরা মক্কা, মদিনাসহ সৌদি আরবের যেকোনো এলাকায় সম্পত্তি কিনতে পারবেন।
আবদুল্লাহ আলহাম্মাদ বলেন, আইনটি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে আইনটির বিষয়ে সবাইকে জানানো হবে।
বিদেশিদের সম্পত্তি কেনার বিষয়ে ২০২১ সালে একটি নির্দেশনা জারি করেছিল সৌদি আরব। এই নির্দেশনায় সৌদির নাগরিক নন, এমন ব্যক্তিসহ দেশটিতে থাকা বৈধ বাসিন্দাদের শর্ত সাপেক্ষে একক সম্পত্তি কেনার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
আবদুল্লাহ আলহাম্মাদ বলেন, সৌদিতে রিয়েল এস্টেটের মালিকানার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনের চেয়ে নতুন আইনটি আরও বিস্তৃত ও ব্যাপক হবে। নতুন আইনের অধীন বিদেশিরা সৌদিতে বাণিজ্যিক, আবাসিক, কৃষিসহ যেকোনো ধরনের সম্পত্তি কিনতে পারবেন।
আগের আইনে সৌদির পবিত্র শহরগুলোতে বিদেশিদের সম্পত্তি কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে নতুন আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, পবিত্র মক্কা-মদিনাসহ সৌদি আরবের সব জায়গায় বিদেশিরা সম্পত্তির মালিক হতে পারবেন।
নতুন আইনের মাধ্যমে সৌদি আরব তার আবাসন খাতে একটা রূপান্তর আনতে চাইছে। তারা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে এ খাতকে আকর্ষণীয় করে তুলতে চায়। সৌদি কর্র্তৃপক্ষ মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এ খাতের অবদান আরও বাড়াতে আগ্রহী।
সৌদির রিয়েল এস্টেট জেনারেল অথরিটি নতুন যে আইনটির কথা বলছে, তা কার্যকর হলে দেশটি প্রবাসী ও বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন বিনিয়োগের একটি গন্তব্য হয়ে উঠতে পারে।
সংলাপে নয়, আলোচনার জন্য বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, ‘মূল জিনিসটা হলো, আমরা কিন্তু সংলাপে আহ্বান করিনি। সংলাপ বিষয়টি আনুষ্ঠানিক। আমরা কোনোভাবেই উনাদের (বিএনপি) সংলাপে ডাকিনি। আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি আনুষ্ঠানিক না হলেও (আনুষ্ঠানিক মানে সংলাপ) অন্তত অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় আপনারা আসতে পারেন। অত্যন্ত বিনীতভাবে এ আহ্বানটা করেছি।’
বিএনপিকে চিঠি পাঠানোর পাঁচ দিন পর গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের নিজ কক্ষের সামনে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, “বিএনপিকে চিঠি দেওয়ায় ইসির কোনো ‘কূটকৌশল’ ছিল না, কোনো মহলের ‘চাপও নেই’। অনানুষ্ঠানিকপত্র দিয়েছি বিএনপি মহাসচিবকে। চিঠি বৃহস্পতিবার শেষবেলায় দেওয়া হয়েছে। আমার মনে হয় চিঠিটা উনারা পেয়েছেন। আমার কাছে কোনো জবাব আসেনি। ধরে নিচ্ছি উনারা পেয়েছেন। অনেকে বলতে চেয়েছেন এটা সরকারের একটি কূটকৌশল। আমি আপনাদের মাধ্যম পুরো জাতিকে অবহিত করতে চাই, আশ্বস্ত করতে চাই এ পত্রের সঙ্গে সরকারের কোনো সংস্রব নেই, সংশ্লিষ্টতা ছিল না।’
তিনি আরো বলেন, ‘যদি কেউ এটাকে কূটকৌশল হিসেবে মনে করতে চান তাহলে এটা নির্বাচন কমিশনের কূটকৌশল হতে পারে, সরকারের নয়। আর নির্বাচন কমিশন কখনো কূটকৌশল হিসেবে এ কাজটি করেনি।’
সিইসি বলেন, ‘ইসি একেবারে প্রথম থেকেই অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং কার্যকর প্রতিদ্বন্দ্বীমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করে আসছে। আমরা ব্যথিত হই যখন বলা হয় সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করি। আজ্ঞা বহন করিনি। আমরা নির্বাচন নিয়ে আলাপ করি, আমাদের চিন্তার মধ্যে ফুটে উঠেছে বিএনপির মতো দলকে নির্বাচনে আনতে পারলে ভালো হয়।’
বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় এখনো আগ্রহী জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি আপনাদের (বিএনপির) যদি কোনো কৌশল থাকে তার ওপর ইসির কোনো মন্তব্য থাকবে না। তার পরও আমরা আলোচনা করতে চাই আপনাদের সঙ্গে। ফল ইতিবাচক হতেও পারে, নাও হতে পারে। প্রয়াস থাকবে। প্রয়াস গ্রহণ করতে বাধা থাকা উচিত নয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমরা কোনো চিঠি পাইনি। আমি চিঠি দিয়েছি, যেকোনো রেসপন্স আমাদের চিঠির মাধ্যমে দিতে হবে। আমরা আশা করি, যেহেতু বিএনপি মহাসচিব মহোদয়কে চিঠি দিয়েছি। যেকোনো বক্তব্য আমাদের কাছে পত্রের মাধ্যমে আসে সেটাই কাক্সিক্ষত। এরপর আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত নেব। আগাম কোনো মন্তব্য নেই।’
বিএনপি যদি আসে তাদের সঙ্গে কী নিয়ে আলোচনা হবে সেই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘উনারা কী বলবেন, আমরা কী বলব আগাম কোনো বক্তব্য দিতে পারব না। বিএনপি যদি আলোচনার জন্য এজেন্ডা ঠিক করে দেয়, তার পরও বসা বিষয়ে ইতিবাচক’ বলে জানান সিইসি।
কূটনৈতিক মহলে সংলাপ আয়োজনের আলোচনার মধ্যে এমন চিঠি দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘এ ধরনের বিষয় আমাদের নলেজে নেই। আমাদের চিন্তা থেকে, উদ্ভূত সিদ্ধান্ত থেকে এ চিঠি দেওয়া হয়েছে। চাপের কথা যেটা বলেছেন এটা সম্পূর্ণ অমূলক ধারণা। কোনো আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর চাপে বিএনপিকে ডাকা হয়নি।’
বিএনপির জবাব পেতে কত দিন অপেক্ষা করবে কমিশন এমন প্রশ্ন করা হলে এড়িয়ে যান সিইসি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গাইবান্ধা ভোট বন্ধের ইস্যুতে ১৩৪ জনের মধ্যে ৪০ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আবারও পদক্ষেপ নেবে ইসি।
সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে চার নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান, মো. আলমগীর, রাশেদা সুলতানা ও আনিছুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
রাজধানীর মিরপুরের একটি মাধ্যমিক-সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে সিফাত। একই এলাকায় বসবাসকারী তার বন্ধু সিয়াম পড়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে। সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রোজার ছুটি। আর সরকারি প্রাথমিকে ছুটি ১৫ রোজা অর্থাৎ ৭ এপ্রিল থেকে।
এক দেশে একই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন নিয়মে ছুটি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে লেখাপড়ায় কেউ এগিয়ে যাবে, আবার কেউ পিছিয়ে পড়বে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ মামুনুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার বা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে ভেবেচিন্তেই নেয়। তবে সব ধরনের স্কুলে একটা কো-অর্ডিনেশন থাকলে ভালো হয়। আমরা ছুটির ব্যাপারে আরও আলাপ-আলোচনা করব।’
জানা গেছে, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে আগামী শুক্রবার শুরু হতে পারে রমজান মাস। বছরের শুরুতেই স্কুলগুলোর ছুটির তালিকা অনুমোদন করা হয়। সে অনুযায়ী পবিত্র রমজান, স্বাধীনতা দিবস, ইস্টার সানডে, বৈসাবি, নববর্ষ ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি, বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি কলেজ, আলিয়া মাদ্রাসা ও টিটি (টিচার্স ট্রেনিং) কলেজেও একই সময়ে ছুটির ঘোষণা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ছুটির তালিকা ভিন্ন। তারা পবিত্র রমজান, ইস্টার সানডে, চৈত্র-সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ৭ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ প্রায় ১৫ রমজান পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে।
রাজধানীসহ বড় বড় শহরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিকের মতোই তাদের ছুটি থাকবে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রোজার ছুটিও একই। তবে মাদ্রাসায় রোজার ছুটি শুরু এক দিন আগেই অর্থাৎ আজ বুধবার, ২২ মার্চ।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান। তাই বুধবার ক্লাস করে বৃহস্পতিবার রোজার ছুটি শুরু হবে। তবে সব স্কুলে একই ধরনের ছুটি থাকা জরুরি। এতে একই সময়ে সিলেবাস শেষ করা যাবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও সন্তুষ্ট থাকবে।’
রমজানে মাধ্যমিকে স্কুল বন্ধ আর প্রাথমিকে খোলা রাখায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার লাখ শিক্ষকের মধ্যে। তারা বলছেন, যেসব অভিভাবকের সন্তান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দুই স্কুলেই পড়ে তাদের সমস্যা হবে। রমজান মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। প্রাথমিকের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরাও রোজা রাখেন। তাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে মিল রেখে প্রাথমিকের ছুটি নির্ধারণ করা যৌক্তিক হবে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাংগাঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ বছর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরকারি ছুটি ৭৬ দিন, কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ৫৪ দিন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিন্ন ছুটি নির্ধারণের যুক্তি তুলে ধরে আমরা ইতিমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেছি। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো সাড়া পাইনি।’
'স্যার নয় আপা ডাকলেই চলবে' রংপুরের জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীনের এমন বক্তব্যের পর রাত ৯ টার দিকে আন্দোলন সমাপ্ত করে ক্যাম্পাসে ফিরে গেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুক ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এর আগে চিত্রলেখা নাজনীনের বিরুদ্ধে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে বুধবার (২২ মার্চ) বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে একাই অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন উমর ফারুক। এর পর তার সাথে একাত্মতা জানিয়ে আন্দোলনে যুক্ত হন বেরোবির বাংলা বিভাগের শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা।
তুহিন ওয়াদুদ তার ফেসবুক পোস্টে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।
জেলা প্রশাসক চিত্রলেখা নাজনীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, বেরোবির একটা অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র নিয়ে উমর ফারুক আমার কাছে এসেছিলেন। এ সময় আমি বাইরে যাওয়ার জন্য সিঁড়ি দিয়ে নামছিলাম। তখন ওই শিক্ষক আমাকে দেখে আপা বলে ডাক দেন। আমি তাকে স্যার না বলে আপা কেন ডাকছেন জানতে চাই। আমার জায়গায় একজন পুরুষ দায়িত্বে থাকলেও কি তিনি স্যার না বলে ভাই ডাকতেন?
জেলা প্রশাসক জানান, রাতে তিনি ওই শিক্ষক ও আন্দোলনকারীদের স্যার ডাকতে হবে না, আপা ডাকলেই চলবে বলে জানান। এরপর তারা আন্দোলন বন্ধ করে দেন এবং ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে চলে যান।