
চলচ্চিত্র নির্মাতা, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক জহির রায়হান ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট বর্তমান ফেনীর অন্তর্গত মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সক্রিয়ভাবে ভাষা আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। খাপছাড়া পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে তার সাংবাদিকতা জীবনের শুরু। পরে তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। ১৯৫৭ সালে তিনি চলচ্চিত্রে যুক্ত হন ‘জাগো হুয়া সাবেরা’ সিনেমার সহকারী পরিচালক হিসেবে। ১৯৬৪ সালে তিনি নির্মাণ করেন উর্দুতে পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র ‘সঙ্গম’। ‘বরফ গলা নদী’, ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’, ‘আর কত দিন’, ‘তৃষ্ণা, ‘হাজার বছর ধরে’ প্রভৃতি তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। তার পরিচালিত ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘কাঁচের দেয়াল’, ‘স্টপ জেনোসাইড’ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। জহির রায়হান ছিলেন যুগপৎ শিল্পী ও যোদ্ধা। একাত্তরের যুদ্ধকালে তার নির্মিত বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাড়া ফেলে। এরপর অনেক কাজের পরিকল্পনা থাকলেও করতে পারেননি। বড় ভাই সাহিত্যিক, সাংবাদিক শহীদুল্লা কায়সারকে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের আগ মুহূর্তে আলবদর বাহিনী অপহরণ করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নিখোঁজ ভাইকে খুঁজতে ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি জহির রায়হান মিরপুরে বিহারি-রাজাকার অধ্যুষিত এলাকায় যাওয়ার পর আর তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয় সেদিনই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সিনেমাতে ও বাংলাদেশের এনআইডিতে মায়ের চেয়ে ছেলে বড় অবশ্যই সম্ভব।
১০৬টি অ্যাপিসোডে সমাপ্ত আমেরিকার এনবিসি টেলিভিশনের ফ্যামিলি ড্রামা ‘দিস ইজ আস’। পিয়ারসন পরিবারের বড় বড় তিনটি সন্তান কেভিন, কেইট এবং র্যান্ডেল; তাদের বাবা জ্যাক পিয়ারসন এবং মা রেবেকা পিয়ারসন। রেবেকা আসলে অভিনয় এবং সংগীতে খ্যাত ম্যান্ডি মুর। তার জন্ম ১০ এপ্রিল ১৯৮৪। তার ব্যক্তি জীবনে দুটি ছেলে। ছোটটির জন্ম হয়েছে ২১ অক্টোবর ২০২২। আর সিনেমার ছেলে কেভিন আসলে জাস্টিন হার্টলে, তার জন্ম ২৯ জানুয়ারি ১৯৭৭, মায়ের চেয়ে সাত বছরের বড়। কেইট একটু মোটাসোটা। বাস্তব জীবনে অভিনেত্রী ও গায়ক ক্রিস্টিন মিশেলের জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৮০, ক্রিস্টিনও মায়ের চেয়ে ৪ বছরের বড়। আর র্যান্ডেলের প্রকৃত নাম র্যান্ডেল হিল, কালো আমেরিকান, জন্ম ৩০ আগস্ট ১৯৮০; পিয়ার্সন পরিবার তাকে দত্তক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করে। র্যান্ডেলও মায়ের চেয়ে ৪ বছরের বড়।
জন্ম-তারিখ ধরে হিসাব করে দেখুন সিনেমার কেভিন কেইট ও র্যান্ডেল, রেবেকার গর্ভজাত পুত্র, গর্ভজাত কন্যা এবং দত্তক গৃহীত পুত্র তিনজনই মায়ের চেয়ে বয়সে বড়। সোজা কথা সিনেমায়, নাটকে সন্তান মায়ের চেয়ে বেশি বয়স্ক হতেই পারে। সিনেমার মায়ের বা বাবার সঙ্গে সন্তানের বয়সের হাস্যকর ব্যবধান থাকতেই পারে। এজন্যই তো সিনেমা আর নাটক।
‘রাইডিং ইন কারস উইথ বয়স’ সিনেমার মা ড্রু ব্যারিমুরের বয়স ২৬ বছর আর ছেলে অ্যাডাম গার্সিয়ার ২৮। ‘ব্লো’ সিনেমায় অভিনয়ের সময় মা র্যাচেল গ্রিফিথ ৩২ বছর বয়সী ছিলেন আর তার ছেলে জনি ডেপ তখন ৩৭। যখন বিখ্যাত সিনেমা হ্যামলেট মুক্তি পায় তখন হ্যামলেটের ভূমিকায় অভিনয় করা লরেন্স অলিভিয়ার ছিলেন ৪১ আর তার মা ডেনমার্কের রানি এইলিন হার্লের বয়স তখন ৩০ বছর। মাকে ছেলের চেয়ে বড় হতেই হবে সিনেমাতে এই বাধ্যবাধকতা নেই। আর একটি উদাহরণ না দিলেই নয়। ডাক ফাটানো সিনেমা আলেকজান্ডারে মা অ্যাঞ্জেলিনা জোলির ২৯ বছর। এখানে জীববিজ্ঞানের আইন মেনে তার পুত্র কলিন ফ্যারেন মাকে ডিঙাতে চেষ্টা করেননি। তার বয়স ২৮ বছর। মা ও ছেলের বয়সের ব্যবধান ১ বছর। সিনেমায় যতটুকু খোঁজ করেছি তাতে ছেলে মায়ের চেয়ে সর্বোচ্চ ১১ বছরের বড়। গঞ্জিকা সেবন করেই মাকে ছেলের চেয়ে কতটা বড় করা সম্ভব?
শিঙাড়া-সমুচা-চা-চপ সূচকে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় যেমন পৃথিবীকে হারিয়ে দিয়েছে, তেমনি হারিয়েছে বয়সের মহামারপ্যাঁচে। রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে তৈরি করা জাতীয় পরিচয়পত্র ন্যাশনাল আইডেন্টিটি কার্ডে (এনআইডি) ছেলে তার মায়ের চেয়ে ১৩ বছরের বড়। শৈশবে পাকামি করার কারণেই হোক কি অতি স্নেহপ্রবণ হয়ে হোক বাবা-মা ছেলের নাম রেখেছেন পাকু। প্রকৃত বয়স এবং বেশি আই কিউজনিত মানসিক বয়সের কিছু তারতম্য হয়েই থাকে। নিজের প্রকৃত বয়স ৫ বছর বুদ্ধিমত্তা তাকে ১০-এর সমকক্ষ করে দিতে পারে। কোনো বিশেষ গুণের কারণে পাকু নিজেকে ছাড়িয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ ভাইবোনদের ছাড়িয়ে এমনকি গর্ভদাত্রী মাকেও ছাড়িয়ে তার চেয়ে ১৩ বছর ৪ মাস এগিয়ে গেলেনতার জবাব দিতে পারে শুধু এনআইডি কর্তৃপক্ষ।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, পাকু দাসের মা রাধারানী দাশের জন্ম ৩ আগস্ট ১৯৬৮। আর তার গর্ভজাত পুত্র পাকু দাশের জন্ম ন্যাশনাল আইডেন্টিটি কার্ড অনুযায়ী ২০ এপ্রিল ১৯৫৫, মায়ের জন্মেরও ১৩ বছর ৩ মাস ১৪ দিন আগে। শুধু যোগাযোগ করা হয়ে ওঠেনি বলে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে বাংলাদেশের নাম ওঠার আর একটি সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেল। পাকু দাশ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী। ২০২২-এর ৩০ অক্টোবর আরও কিছুসংখ্যক কর্মচারীর সঙ্গে তিনি চাকরি হারান। তার চাকরি হারানোর কারণ সরকার বিরোধিতা বা ভিন্ন মতাবলম্বী হওয়া নয়, এমনকি অবৈধ অনুপস্থিতি বা ডিপার্টমেন্টাল প্রসিডিংসের সুপারিশের কারণেও নয়। চাকরি হারানোর কারণটি অত্যন্ত ন্যায়সংগত সুপার অ্যানুয়েশন। সময়মতো তার এনআইডি চেক করা হলে আরও আগেই তাকে বিদায় হতে হতো। চাকরি করার বিধিবদ্ধ যে চূড়ান্ত বয়স অর্থাৎ ৫৯ তিনি তা পেরিয়ে গেছেন। সুতরাং আর কত! এবার বিদায় নিন। কিন্তু ৫৯ হলোই বা, বিদায় নিতে হবে কেন? বাংলাদেশে কোনো কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে চাকরিকাল তো ৬৭ বছর। পাকু দাশ যদি সে রকম পদে অধিষ্ঠিত থাকতেন তাহলেও তাকে আরও আগে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হতো। মায়ের আগে জন্ম নেওয়া পাকু দাশের বেলায় চাকরিচ্যুতি মানে শুধু বেতন হারানো নয়, চাকরির কারণে পাওয়া বাসাটিও হারানো। কিন্তু তাকে দেখলে কি ঊনষাট মানে ষাট ছুঁই ছুঁই মনে হয়। দেখে যা মনে হয় সেটা মেনে নিলেই ঝামেলা চুকে যেত। কিন্তু তা হওয়ার নয়।
এনআইডি পাওয়ার মতো মহাসম্মানজনক ঘটনা তখনো ভারতে ঘটেনি। ভারতে নিম্ন আদালতের একটি মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত পৌঁছায়। শ্যাম কিশোর ঘোষ ভারত কয়লা লিমিটেডের কর্মচারী। শ্যাম কিশোরের দাবি, তার সার্ভিস বইতে বয়স বেশি লেখা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট অনেক বিচার বিবেচনার পর রায় দিয়েছে বানান ভুল সংশোধন করার সুযোগ আছে, কিন্তু চাকরি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সার্ভিস রেকর্ডে লিখিত বয়স এমনকি যদি ভুলও হয়ে থাকে সংশোধনের আর সুযোগ নেই। আবেদনকারীকে যত তরুণই মনে হোক না কেন সার্ভিস রেকর্ডের বয়সই তার স্বীকৃত বয়স। বাংলাদেশে অবশ্য কোনো সচিবও নির্ধারিত মেয়াদের চেয়ে বছর দু-এক বেশি চাকরি করার সময় ধরা পড়ে যান। পাকু দাশ ভাগ্যবান, তার ওপর মিডিয়ার আলো পড়েছিল বলে এনআইডি কর্তৃপক্ষ তার বয়স কমিয়ে সংশোধিত এনআইডি ইস্যু করে দিয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনও পাকু দাশকে পূর্ব পদে বহাল করেছে। কিন্তু কোন অবস্থায় তাকে মায়ের চেয়ে বড় বানানো হলো, আবার কেমন করে মায়ের চেয়ে ছোট হয়ে গেলেন এ নিয়ে কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি, পেলে ভালো হতো। পাকু দাশের কর্মজীবনে প্রত্যাবর্তনকে অবশ্যই স্বাগত। এ ধরনের পাকু দাশ কেইস আরও থাকার কথা। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও স্থানীয় সরকার সংস্থায় যারা চাকরি করছেন নিঃসন্দেহে সবাই এনআইডিধারী। এনআইডির ভুল সংশোধনেরও সুযোগ রয়েছে। যদি পাকু দাশের বিষয়টি বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে তো ১৯৫৫ সালের জন্ম-তারিখ নিয়ে তার চাকরিই পাওয়ার কথা নয়। তিনি কবে চাকরিতে ঢুকেছেন? ২০০০ সালেই তো তার বয়স ৪৫ বছর পেরিয়ে যাওয়ার কথা। এনআইডি এসেছে আরও অনেক পরে সন্দেহ নেই। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের রুলিং অনুসরণ করলে চাকরিজীবীর বেলায় আদালতের আদেশ ছাড়া বয়স বাড়ানো কিংবা কমানো কিংবা সংশোধনের সুযোগ নেই। জন্মের প্রকৃত তারিখ যাই হোক বয়সটাকে কমিয়ে রাখার প্রবণতাই বেশি। আমি বাড়িয়ে নেওয়ার বেশ কটা ঘটনার সঙ্গেও পরিচিত। যেসব প্রতিষ্ঠানে পৌষ্যের চাকরি পাওয়ার অগ্রাধিকার রয়েছে, সেখানে পড়াশোনায় অনাগ্রহী ১৬ বছরের ছেলে বা মেয়েকে ১৮ দেখিয়ে বাবার অফিসে ঢুকিয়ে দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টির জন্য স্কুল রেজিস্টারে বয়সটা বেশিই লেখা হয়। আবার দুবছর কম লেখা হলে সরকারি চাকরিতে দুবছর বেশি চাকরি করার সুযোগটাও নেওয়া যায়। দুটোরই কিছু লাভজনক দিক রয়েছে। ভারতে বয়স নিয়ে বেশ কটা মামলার সুনির্দিষ্ট রুলিং রয়েছে। একটি মামলা সুনীল কুমার বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া নামের বানান সংশোধন বিষয়ে, এতে সংশোধিত বানান গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বয়সের কারণে সুনির্দিষ্ট কোনো সুযোগ না পাওয়ার ক্ষোভ থেকে জন্ম নেয় বর্ণবাদের মতো বয়সবাদ (এজিজম)। ১৯৬৯ সালে রবাট নিল বাটলার বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি বৈষম্য বোঝাতে ‘এজিজম’ টার্মটি ব্যবহার করেন। বয়স্করা তরুণদের যে নিপীড়ন করে থাকে তাকেও এজিজম বলা হয়েছে। বয়সের কারণে পক্ষপাত বোঝাতে সর্বদাই যে তরুণ পছন্দনীয় তা নয়, বয়স্কের প্রাধিকার মেলে তবে তা তুলনামূলকভাবে কম। বয়স্করা এখন এমনকি ইউরোপ-আমেরিকাতেও ডিজিটাল এজিজমের শিকার। তরুণরা দক্ষতার সঙ্গে ডিজিটাল যুগে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছে, বুড়োরা পারেনি। সুতরাং তারা মার খেয়ে যাচ্ছে। বয়স-বৈষম্যের কথা বেশি শোনা যায় হলিউডেসুন্দরী নায়িকা কিংবা স্মার্ট নায়কের বয়স বেড়ে গেছে, তাদের আর নায়িকা নায়ক ভূমিকায় রাখা যায় না। তিন ধরনের এজিজমের কথা বলা হয়; প্রাতিষ্ঠানিক বয়স-বৈষম্যবাদ নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে প্রতিষ্ঠান থেকে দূরে রাখা; আন্তব্যক্তিক বয়স-বৈষম্যবাদ : সমাজ জীবনে বয়স্করা প্রায়ই বৈষম্যের শিকার হন; আত্মীকৃত বয়স-বৈষম্যবাদ : এতে ব্যক্তি নিজেই বয়স-বৈষম্যবাদে বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন এবং নিজের ওপর তা প্রয়োগ করতে থাকেন।
একাত্তরে পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বনের জন্য বিতর্কিত হেনরি কিসিঞ্জার ২৭ মে ২০২৩ শতবর্ষ পূর্ণ করবেন। ৯৯ বছর বয়সে প্রকাশ করেছেন একটি বহুলালোচিত গ্রন্থ : লিডারশিপ : সিক্স স্টাডিজ ইন ওয়ার্ল্ড লিডারশিপ। বয়স-বৈষম্যবাদ তিনি অবলীলায় ডিঙিয়ে গেছেন। ৮৯ বছর বয়সে সোপোক্লেস রচনা করেছেন ইডিপাস অ্যাট কোলোনাস। ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুর দিনই ভোরে গ্যালিলিও নতুন বৈজ্ঞানিক প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। বেনিয়ামিন ফ্রাঙ্কলিন পাবলিক সার্ভিস থেকে অবসর নেন ৮২ বছর বয়সে। রোলান্ড রেগান ৭০ বছর বয়সে যখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন, পত্রিকা শিরোনাম করেছিল লাইফ বিগিনস অ্যাট সেভিন্টি। তিনি আরও ৮ বছর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তিনি সবচেয়ে সফল প্রেসিডেন্টদের একজন। হেনরিক ইবসেন ৭১ বছর বয়সে নাটক লিখেছেন : যখন আমরা মৃতেরা জেগে উঠব; অলিভার ওয়েন্ডেল হোমস ৯২ বছর বয়সে গ্রিক ভাষা শিখে প্লেটোর রচনাবলি পড়তে শুরু করেন। হোয়াট শি শুড নট জর্জ বার্নার্ড শ লিখেছেন ৯৪ বছর বয়সে। বয়স যখন প্রায় পঁচাশি আইজ্যাক নিউটন রয়াল মিন্টের ওয়ার্ডেনের দায়িত্ব পালন করছেন।
তাদের সবাই নিজ গুণে বয়স-বৈষম্যবাদকে ডিঙ্গিয়ে যেতে পেরেছেন। ব্রাজিলের ওয়াল্টার অর্থমান একই কোম্পানিতে ৮৪ বছর ৯ দিন চাকরি করে বিশ^রেকর্ড করেছেন, গিনেসের রেকর্ড বইতে তার নাম উঠেছে। তিনি শতবর্ষী। ১৫ বছর বয়সে চাকরিতে ঢুকেছিলেন। বুড়ো বয়স নিয়ে অস্বস্তি বোধ করার কারণ নেই। সিনিয়র সিটিজেনের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ২০২৫-এ পৃথিবীর ১৮ ভাগ মানুষ সিনিয়র সিটিজেন (৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব)। ২০৩০ নাগাদ এই সংখ্যা ৯৭৪ মিলিয়নে পৌঁছাবে। ওল্ড বয়স এবং ওল্ড গার্লস ক্লাবই হয়ে উঠবে গুরুত্বপূর্ণ ক্লাব।
গৌরবের ওল্ড বয়েস ক্লাব মায়ের চেয়ে বয়সে বড় একজন পাকু দাশকে ধরে রাখতে পারল না।
লেখক: সরকারের সাবেক কর্মকর্তা ও কলামিস্ট
প্রযুক্তির উৎকর্ষের কারণে দ্রুত পরিবর্তনশীল এই বিশ্বে খাপ খাইয়ে নেওয়ার বিকল্প নেই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ আমাদের কর্মসংস্থান ও জীবনপ্রণালীতে ব্যাপক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আবার বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ বৃদ্ধি, অভিবাসন ও জাতিগত সংঘাতের মতো বিষয় পৃথিবীর সমস্যাকে আরও ত্বরানিত করছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জনমিতিক সম্ভাবনাকে সম্পদে রূপান্তর করতে প্রয়োজন জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও ইতিবাচক দৃষ্টিসম্পন্ন দূরদর্শী, সংবেদনশীল, অভিযোজনে সক্ষম, মানবিক, বৈশ্বিক এবং দেশপ্রেমিক নাগরিক।
ওপরের এসব ভাবনা বিবেচনায় নিয়েই বহুল প্রতীক্ষিত নতুন শিক্ষাক্রম এ বছর থেকে দেশব্যাপী পরীক্ষামূলক সংস্করণ বাস্তবায়ন (প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে) শুরু হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে আগামীতে সব শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয় সর্বশেষ ২০১২ সালে। ফলে যুগোপযোগী নতুন শিক্ষাক্রমের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল।
নতুন শিক্ষাক্রমে প্রধানত তিনটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। ১. পাঠ্যবই পরিবর্তন ২. শিখন-শেখানো কৌশল পরিবর্তন ৩. মূল্যায়ন পদ্ধতি পরিবর্তন। নতুন শিক্ষাক্রমের দার্শনিক ভিত্তি হলো ডেভিড কোব-এর অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন। মূলত শিক্ষার্থীরা চারটি ধাপের মাধ্যমে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিখবে। ডেভিড কোব-Learning is the process whereby knowledge is created through the transformation of experience (1984). ডেভিড কোব-এর শিখন-শেখানো কৌশলের চারটি ধাপ হলো যথাক্রমে: ১. প্রেক্ষাপটনির্ভর অভিজ্ঞতা ২. প্রতিফলনমূলক পর্যবেক্ষণ ৩. বিমূর্ত ধারণায়ন এবং ৪. সক্রিয় পরীক্ষণ। ডেভিড কোব-এর অভিজ্ঞতানির্ভর শিখন মূলত আরেক দার্শনিক পেঁয়াজের তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। যেখানে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীরা চারপাশের পরিবেশের সঙ্গে পারস্পরিক মিথস্ত্রিয়ার মাধ্যমে জ্ঞানলাভ করবে।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ও বিশে^র সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে এই নতুন শিক্ষাক্রম খুবই কার্যকর ও সময়োপযোগী। মূল্যায়ন পদ্ধতিতে অভিনব পদ্ধতি সংযোজন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হবে তিনভাবে। যথা: ১. শিখনকালীন মূল্যায়ন (সারা বছর ধরে চলবে) ২. সামষ্টিক মূল্যায়ন (বছরে দুইবার) ৩. আচরণিক মূল্যায়ন। নতুন শিক্ষাক্রমের ১০টি বিষয়ের মধ্যে ৫টি বিষয়ের (বাংলা, গণিত, ইংরেজি, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান) মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন ও সামষ্টিকভাবে। বাকি ৫টি বিষয়ের মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন (বিদ্যালয় পর্যায়ে)।
নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের কোচিং বা প্রাইভেট পড়ার কোনো দরকার নেই। অবশ্যই নতুন বই হাতে পেয়ে শিক্ষার্থীরা এরই মধ্যে বুঝে গেছে কোচিং বা প্রাইভেট পড়ার কোনো প্রয়োজন নেই। গাইড বই বা অন্য কোনো সহায়ক বইয়েরও দরকার নেই। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ও নতুন শিক্ষাক্রমের উপজেলা পর্যায়ের মাস্টার ট্রেনার (ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান) হিসেবে বলতে পারি, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির পাঠ চলাকালীন শিক্ষার্থীদের এত স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও আনন্দঘন পরিবেশ আগে কখনো লক্ষ করা যায়নি।
নতুন শিক্ষাক্রমের পড়াশোনা পুরোপুরি শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক। শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে বিভিন্ন শিখন কৌশল ও শিখন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যোগ্যতা অর্জন করবে। যোগ্যতাভিত্তিক এই শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই বিভিন্ন সেশন অনুযায়ী পরিচালিত হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকদের জন্য বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক সহায়িকা (ঞএ) রাখা হয়েছে। শিক্ষকমন্ডলী এই শিক্ষক সহায়িকা দেখে পড়াবেন। শিক্ষক সহায়িকার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
আশা করা হচ্ছে শিক্ষার্থীরা এই নতুন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে বিশ^নাগরিক হয়ে গড়ে উঠবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই শিক্ষকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাস্তবতা বলছে যে, শিক্ষকদের গুরুত্ব প্রদানের বিষয়টি এখনো হয়তো সবার মনোযোগের কেন্দ্রে নেই। তাই হয়তো আমার এক সহকর্মী কৌতুক করে বলছিলেন ‘বুঝলাম, নতুন শিক্ষাক্রম বিশ^মানের। তবে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা কোন মানের?’
সে যাই হোক, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন মহলে নানা আলোচনা-পর্যালোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে কিছু ভুলত্রুটি (বানান, তত্ত্ব ও লাইনের অসংগতি) চোখে পড়েছে। আমি ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে বলতে পারি ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির নতুন বইয়ে বেশ কিছু পৃষ্ঠায় বানান ভুল চোখে পড়েছে। যা গ্রহণযোগ্য ছিল না। কেননা মাধ্যমিক পর্যায়ের লাখ লাখ শিক্ষার্থী এই ভুল দেখছে ও পড়ছে (যদিও শিক্ষকরা নিজে থেকে ক্লাসে ভুল সংশোধন করে দিচ্ছেন)। এটা ঠিক, নতুন বই মূলত ‘পরীক্ষামূলক সংস্করণ’।
পাঠ্যবইয়ের ভুলত্রুটি অবশ্যই সংশোধনযোগ্য। নতুন পাঠ্যবইয়ের সামান্য ভুলত্রুটি বা অসংগতি নিয়ে যারা বা যেসব মহল তিলকে তাল করছে তারা সঠিক কাজ করছে না। গঠনমূলক সমালোচনা সব পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য। নতুন শিক্ষাক্রম মূলত পুরো জাতির জন্য। সামান্য ভুলত্রুটি থাকলে সেটা গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে অবশ্যই সংশোধনযোগ্য। কেননা শিক্ষাক্রমের নতুন প্রতিটি বইয়ের শুরুতে ‘প্রসঙ্গ কথা’য় লেখা রয়েছে পরীক্ষামূলক এই সংস্করণের কোনো ভুল বা অসংগতি কারও চোখে পড়লে এবং এর মান উন্নয়নের লক্ষ্যে কোনো পরামর্শ থাকলে তা জানানোর জন্য সবার প্রতি বিনীত অনুরোধ রইল।
আশা করি, নতুন শিক্ষাক্রমের ভুলত্রুটি নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি কর্তৃপক্ষ থেকে সংশোধনী আসবে। নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হলে পরিবর্তনশীল বাস্তবতায় জীবন-জীবিকার যেমন সংকট থাকবে না তেমনি অভিযোজনের মাধ্যমে টেকসই ও নিরাপদ পৃথিবী গড়া সম্ভব হবে।
লেখক : শিক্ষক ও পরিবেশকর্মী
‘দুর্নীতির ব্যাপারে কোনো কম্প্রোমাইজ করব না’অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে গত বছরের শুরুতে দায়িত্বে অভিষেক প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর। এক বছরের মাথায় এসে ঘোষণা : ‘দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারকরা ক্যানসারের মতো, ক্যানসার আক্রান্ত অঙ্গ যেমন কেটে ফেলা হয়, তেমনি দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারকদের ছেঁটে ফেলা হবে’।
অভিষেকের সময় প্রধান বিচারপতির করা আশাজাগানিয়া ওই অঙ্গীকারের কোনো খেলাপ এখনো হয়নি। অথবা চেষ্টায় কমতি ঘটেছে বা হাল ছেড়ে দিয়েছেন এমনও নয়। অবিরাম তার নানা নির্দেশনা-আহ্বানের কিছু কিছু গণমাধ্যমেও আসছে। কোনো অনুষ্ঠানে রাখা বক্তব্যের খবরগুলোই সচরাচর প্রকাশ পায়। এ ছাড়া ইনডোরেও সুষ্ঠু বিচারের তাগিদ দিচ্ছেন নিয়মিত। বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় বলা কথাবার্তার মধ্যে স্বল্প খরচ ও সময়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, আইনজীবীদের সপ্তাহে অন্তত এক দিন বিনাপয়সায় মামলায় লড়ার আহ্বান মানুষকে আশাবাদী করেছে। বিবেকবানদের দৃষ্টি কেড়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির শত বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের কয়েকটি বক্তব্য আরও তাৎপর্যপূর্ণ।
দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিতের তাগিদ দিতে গিয়ে তিনি কিছু উষ্মার কথা বলেছেন। বছরের পর বছর মাসের পর মাস মানুষ আদালতে ঘুরতে থাকলে আদালতের প্রতি অনাস্থার জন্য দায়ী হবে কে? প্রশ্নটি ছুড়ে জবাবে বলেছেন, দায়ী হবে সিস্টেম, দায়ী হবেন আইনজীবী, দায়ী থাকবেন বিচারক। কিছুদিন আগেও এক বক্তৃতায় তার প্রশ্ন ছিলএকটি কেইস ৩০ বছর ধরে চললে মানুষের কেন আস্থা থাকবে? চাঁপাইনবাবগঞ্জের বক্তৃতায় কোনো বিচারকের প্রতি অভিযোগ থাকলে সরাসরি তার কাছে অভিযোগ জানাতে বলেছেন। একপর্যায়ে বলেছেন সবচেয়ে কঠিন কথাটি‘দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারকরা ক্যানসারের মতো, ক্যানসার আক্রান্ত অঙ্গ যেমন কেটে ফেলা হয়, তেমনি দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারকদের ছেঁটে ফেলা হবে।... যেকোনো দুর্নীতি ক্যানসারের মতো। যদি কোনো আঙুলে ক্যানসার হয় উচিত হবে চট করে সেই আঙুল কেটে ফেলা।’ একেবারে মেদহীন কথা। যদি-কিন্তু-তবের ফাঁক নেই। বিচার বিভাগকে মহান সংবিধানের ‘শেষ রক্ষাকবচ’ উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘আইনজীবীরা সেই বিচার বিভাগেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। বার ও বেঞ্চ পরস্পরের পরিপূরক। একটি পাখির দুটি ডানা। পারস্পরিক শ্রদ্ধাহীনতা দুই পক্ষকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে পুরো বিচার বিভাগ।’
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর কথাগুলোকে বলার জন্য বলা বা কথার কথা মনে করার জো নেই। কথা আর অবশিষ্ট রাখেননি তিনি। দায় নয়, প্রকারান্তরে দায়িত্ব নিয়েছেন। শুরু থেকেই চলমান অর্থ পাচার, মানি লন্ডারিং, ঘুষসহ বিভিন্ন দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ-কষ্টের কথা জানিয়ে আসছিলেন তিনি। যেগুলোর দায় এবং দায়িত্ব সরকারি মহলের। কিন্তু, এবার নিজস্ব আঙিনার দুর্নীতির দিকে আঙুল তুলে প্রধান বিচারপতি অতিরিক্ত দায়িত্ব নিজের ওপর নিয়েছেন। কোনো তথ্য বা অভিযোগ ছাড়া তিনি ‘দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারক ও ক্যানসার’ প্রসঙ্গটি আনেননি। এ ছাড়া এমন একসময় তিনি তীরটি ছুড়লেন যখন আমাদের সামনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিন্ড্রোম। তাও তার আদালতে বিচারাধীন। সচরাচর সাধারণ মানুষ বিচার, বিচারালয়, বিচারপতি নিয়ে কথা বলতে ভয়ে থাকে। বিষয়গুলো স্পর্শকাতর। আড়ালে-আবডালে কিছু বললেও এদিক-ওদিক তাকায়। কারও কাছে আইন-আদালত ভীষণ ভয়ের। কারও কাছে শ্রদ্ধার। আর লেখালেখির ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের মধ্যে কাজ করে সর্বোচ্চ সতর্কতা। একটু এদিক-সেদিক হয়ে গেলেই আদালত অবমাননার মতো মহাবিপদের শঙ্কা তাড়া করে। আবার তথ্যসহ প্রযুক্তিগত নানা কল্যাণে কেউ না বললেও সব কথাই বলা হয়ে যায়। জানাজানির বাকি থাকে না। সোশ্যাল মিডিয়া মাড়িয়ে মূলধারার গণমাধ্যমেও চলে আসে। তার ওপর আইন-বিচারাঙ্গনে কর্মরতদের কাণ্ডকীর্তির খবর হালে মাত্রাগতভাবে বেশি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতের ঘটনার ফুটেজ প্রথমে ঘুরছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। পরে মেইন স্ট্রিমের মিডিয়ায়। একপর্যায়ে উচ্চ আদালতের বিচার্য বিষয়ে। আইন-আদালত-বিচার নিয়ে সাধারণ মানুষ ভয়ে বা শ্রদ্ধায় সংযত থাকলেও সংশ্লিষ্টরা দেখিয়েছেন উল্টোটা। হাইকোর্টের বিচারপতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালত কক্ষের ওই ভিডিও ফুটেজ দেখে বলেই বসেছেন, কমলাপুরের কুলিরাও এ ভাষায় কথা বলে?
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুই বিচারকের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ ও আইনজীবীদের কর্মবিরতির কারণে আদালতপাড়ায় টানা কয়েক দিন যে অচলাবস্থা চলেছে একে শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি বিচ্ছিন্ন বা আঞ্চলিক ঘটনা বলার অবস্থা নেই। সেখানকার জেলা জজসহ দুই বিচারকের অপসারণ ও নাজিরের শাস্তির দাবিতে আইনজীবীরা কর্মবিরতিসহ কি না করেছেন? কীসব ভাষা ও আচরণ না করেছেন? এজলাস চলাকালে বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের সঙ্গে আইনজীবীদের আচরণ ও ভাষার কয়েক মিনিট সারা দেশের মানুষের দেখা হয়েছে।
এ রকম সময় প্রধান বিচারপতি ‘চাঁপাই’তে প্রকাশ্য অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় যে মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, তা উপলব্ধির মূল দায়িত্ব আইনজীবী-বিচারপতি দুপক্ষেরই। তার ‘একটি পাখির দুটি ডানা’ মন্তব্যের মধ্যে রয়েছে মোটা দাগের একটি সতর্কবার্তা। অথচ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইনজীবী আর বিচারকসহ আইনাঙ্গন সংশ্লিষ্টদের কদাকার ঘটনাকে জাস্ট ভাই-বোনের বিরোধের মতো বিষয় বলে ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আচানক কাণ্ডের পর উচ্চাদালতেও কম যাননি আইনজীবীরা। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সম্পাদকসহ তিন আইনজীবীকে আদালত অবমাননার রুল দেওয়ার পর ১৭ জানুয়ারি হাইকোর্টে হাজিরা ছিল তাদের। দিনটিতে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ থেকে উচ্চারিত প্রতিটি শব্দ ও বাক্য বাংলাদেশের বিচারালয়ের ইতিহাসে রেকর্ড হয়ে থাকবে। আদালত বলেছে, ওই বিচারকের সঙ্গে আইনজীবীরা যে আচরণ করেছেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এ ধরনের ঘটনা অব্যাহত থাকলে বিচার বিভাগ ও আইন-আদালত বলে কিছু থাকবে না। সবাই মিলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আগুন না থামালে আমাদের সবাইকে জ্বলতে হবে।
বিচারপতির উপরোক্ত তিনটি বাক্যের মধ্যে লুকানো বেদনা ও শঙ্কার মধ্যে বিবেকমান যে কারও জন্য ভাবনার অনেক উপাদান। ঘটনা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার। সেখানকার এমপি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি আবার একজন আইনজীবীও। তার বাবা প্রয়াত অ্যাডভোকেট সিরাজুল হকও ছিলেন বাংলাদেশের আইন ও বিচার অঙ্গনের তারকা ব্যক্তিত্ব। মহল্লার মেলদরবারের মতো দুই কথার বাড়িতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এজলাসে হট্টগোল, বিচারক ও আদালতের কর্মচারীদের ‘গালাগাল ও অশালীন আচরণকে ‘ভাইবোনের ঝগড়ার মতো’ বলে উল্লেখ করেছেন আইনমন্ত্রী। বিচারক-আইনজীবী-আদালত-বিচার তথা আইন ভাইবোনের কাইজ্জার বিষয় নয়? স্বামী-স্ত্রী বা ভাই-বোন মিলে দল চালানো যায়। জোট গঠন করা যায়। বড় বড় কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা যায়। দেশও চালানো যায়। তা আইন, বিচার বা বিচারালয়ে কি খাটে? সাফাই বা এ ধরনের আশকারা দেশের বিচারব্যবস্থাকে কোন তলানিতে নিয়ে যেতে পারেসেই শঙ্কার বার্তা রয়েছে প্রধান বিচারপতির বক্তব্যেও। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ ফারুক আহমেদের সঙ্গে অশালীন আচরণের ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে অপসারণের নির্দেশও দিয়েছে হাইকোর্ট। যেই লাখো-কোটি মানুষ ওই ভিডিও ফুটেজ দেখেছেন, গালমন্দগুলো শুনেছেন তাদের মনের হার্ডডিস্কে কিন্তু গেঁথে আছে। শুনানিতে হাইকোর্ট কেন শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবীদের তলব করল, বিচারকদের প্রতি কেন আদালত অবমাননার রুল জারি করল নাএ ক্ষোভ ছোড়া হয়েছে। বিচারকদের আচরণ ও ক্রিয়াকলাপ বলতেও ছাড়েননি আইনজীবীরা। এ সময় আদালতে উপস্থিত আইনজীবীরা উচ্চৈঃস্বরে ‘ঠিক-ঠিক’ বলে ওঠেন। এত ঠিকের মধ্যে আইন-বিচার ও আদালতের ভবিষ্যৎ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিচারক বিচার চেয়েছেন। আগে অসদাচরণের শিকার বিচারকরাও বিচার চেয়েছিলেন। আদালতে তলব করে দুর্বিনীত আইনজীবীকে সমঝে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আদালতে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চেয়ে তারা হাসিমুখে বের হয়ে বেপরোয়া আচরণের স্বীকৃতি হিসেবে ‘বিখ্যাত’ হয়েছেন। ঝালকাঠি, বরিশাল, বরগুনা, পিরোজপুর বা খুলনার ঘটনা অনেকের মনে আছে, যা আইন পেশার মানের নিম্নগামিতার সঙ্গে আরও নানান কিছু নির্দেশ করে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল টিআইবি একবার তাদের খানা জরিপ প্রতিবেদন দিয়ে ঝামেলায় পড়ে গিয়েছিল। টিআইবির রিপোর্টে বলা হয়েছিল, বিচার বিভাগ ‘সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সার্ভিস সেক্টর’। সুপ্রিম কোর্ট ক্ষুব্ধ এতে হয়। বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহাব মিয়ার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি বলেছিল, এই জরিপ উপকারী নয়। টিআইবি বলেছিল, এটা দৃষ্টিভঙ্গিগত একটি বিষয়। তবে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী লিখেছেন, ‘বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের মনোভাব কী, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। সমগ্র বিচার বিভাগের বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক সময় অল্পসংখ্যক বিচারকদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’ বিভিন্ন সেক্টরে অল্পরাই বেশি ক্ষমতাধর। এরাই উদাহরণ। প্রধান বিচারপতিও নিশ্চয়ই অনেক সংখ্যকের কথা বলেননি। অন্তত টোকেন বা প্রতীকী হলেও অল্পেরও অল্প কিছু দৃষ্টান্ত রাখার দায়িত্ব এখন প্রধান বিচারপতির। ক্যানসার মেডিসিনে না সারলে সার্জিক্যালে যেতে হয়, ক্যানসার আক্রান্ত অঙ্গ কেটে ফেলার সেই আভাস তিনি দিয়েছেন প্রকাশ্যে অনুষ্ঠানে। কথা বলেছেন অ্যাকটিভ ভয়েসে। এর মধ্য দিয়ে সার্জনের থিয়েটারে তিনি নিজেই। শনিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে এটি গুরুত্ব পেয়েছে দিনের টপ নিউজ হিসেবে। আরেক টপ নিউজ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিচারকের সঙ্গে অশালীন আচরণের ঘটনায় আদালত অবমাননার ব্যাখ্যার পরবর্তী তারিখ সামনের ১৪ ফেব্রুয়ারিতে। ওইদিন তিন আইনজীবীর সশরীরে লিখিত ব্যাখ্যার তারিখ। এর আগে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রধান বিচারপতির বক্তব্যটি রুলিংয়ের চেয়ে কম নয়। যদি বিচারক, আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টরা তা উপলব্ধি করেন। এটি অন্য কারও বুঝিয়ে-শুনিয়ে আরোপের বিষয় নয়।
লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন
বিশ্ববিদ্যালয়ে নিবিড় পাঠ ও গবেষণার পরিবেশের সঙ্গে আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণাটি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। আমাদের দেশে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংখ্যাবৃদ্ধি এবং দেশের নানাপ্রান্তে সেগুলোর অবস্থানগত বিস্তারের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসনের সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আবাসনের সুবিধা না পেলে শিক্ষার্থীদের পাঠ ও গবেষণায় তা বিরূপ প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটকে কেন্দ্র করে চলছে ছাত্ররাজনীতির নামে নির্মম দখলদারিত্ব আর ক্ষমতার সন্ত্রাস। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনগুলো যেমন এ বিষয়ে পরিকল্পনাহীন তেমনি উচ্চশিক্ষার নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয় নিশ্চুপ। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট কতটা প্রবল তা জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে। এতে জানা গেছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আবাসিক হল না থাকায় ৬৪ শতাংশ শিক্ষার্থীই আবাসিক সুবিধা পান না। প্রতিবেদনে উল্লিখিত বাস্তবতার এক নির্মম চিত্র দেখা যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।
রবিবার দেশ রূপান্তরে ‘আন্দোলন করে হলে উঠে ছাত্রীরা পেল চৌকি’ শিরোনামের প্রতিবেদন জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের ‘চৌকি নিবাস’-এর তথ্য উঠে এসেছে। জানা গেছে, তারিখ দিয়েও দফায় দফায় পেছানোর পর অবশেষে আন্দোলনের মুখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ছাত্রীদের জন্য তৈরি হলে শিক্ষার্থী ওঠানো শুরু হয়েছে। আসন বরাদ্দসহ চার দফা দাবিতে গত শুক্রবার রাতভর বিক্ষোভ করার পর গতকাল শনিবার নতুন ওই আবাসিক হলটিতে আসন পেয়েছেন জরাজীর্ণ ফজিলাতুন্নেছা হলের ছাত্রীরা। এ ছাড়া কয়েকদিনের মধ্যেই ছাত্রদের আরেকটি হল চালু করা হবে বলে জানা গেছে। তবে এসব হলে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সব সুবিধা নিশ্চিত করা হয়নি। শুধুমাত্র মাথাপিছু একটি করে চৌকি এবং পানি ও বিদ্যুৎ সুবিধা দিয়ে শিক্ষার্থী ওঠানো হচ্ছে। অথচ ২০১৮ সালে এই হলগুলোর নির্মাণকাজ উদ্বোধনের সময় বলা হয়েছিল, ২০২০ সালের ডিসেম্বরেই কাজ শেষ হবে। দীর্ঘ আশ্বাসের পরেও আবাসিক হল দুটিতে পূর্ণাঙ্গ সুযোগ-সুবিধা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি। হলের মধ্যে খাবারের ব্যবস্থা নেই। প্রত্যেককে একটি চৌকি দেওয়া হয়েছে। পানি এবং বিদ্যুৎ সংযোগ আছে। তবে নেই গ্যাস সংযোগ। প্রত্যেক তলায় গ্যাসের চুলা থাকার কথা থাকলেও নেই। এ ছাড়া প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য একটি করে উন্নতমানের চেয়ার, শেলফসহ টেবিল ও লকার থাকার কথা। পাশাপাশি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগও দেওয়া হয়নি। কমনরুম, ব্যায়ামাগার এবং গ্রন্থাগারও প্রস্তুত হয়নি। পুরোদমে চালু হয়নি লিফট। নবীন শিক্ষার্থীদের নবনির্মিত হলে আসন দেওয়ার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণরুম বিলুপ্ত হবে বলেও আশ্বাস এসেছিল। আর সেই আশ্বাসের বাস্তবায়ন করতে গিয়ে গত বছরের ৯ মার্চ ৫০তম ব্যাচের ক্লাস অনলাইনে শুরু করা হয়েছিল। তবে হলের কাজ শেষ না হওয়ায় ওই বছরের ২৩ মে গণরুমে তুলেই তাদের সশরীরে ক্লাস শুরু করা হয়। উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন গেল বছরের জুনের মধ্যেই নির্মাণকাজ শেষ করার কথা বলেছিলেন। পরে জুন মাসে এসে সে বছরের অক্টোবরে ৬টি হল উদ্বোধন করা যাবে বলে সাংবাদিকদের তিনি জানান। তবে কাজ শেষ করতে না পারায় ছয়টির মধ্যে দুটি হল নভেম্বরের মধ্যে উদ্বোধন করতে পারবেন বলে জানিয়েছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম। কিন্তু হল উদ্বোধন করতে না পারায় ইতিমধ্যে কয়েক দফায় নতুন শিক্ষাবর্ষের (৫১তম ব্যাচ) ক্লাস শুরুর সময়সূচি পিছিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ৩১ জানুয়ারি শুরু হতে যাওয়া ৫১তম ব্যাচের ক্লাস শুরুর আগেই ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য একটি করে হল চালুর ঘোষণা বাস্তবায়ন করছে প্রশাসন। তারই অংশ হিসেবে ছাত্রীদের নতুন হলটিতে শিক্ষার্থী ওঠানো হয়েছে।
শিক্ষাবিদ ও উচ্চশিক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পূর্বপরিকল্পনা ছাড়া আসন সংখ্যা বাড়ানোয় এই সংকট তৈরি হচ্ছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরিকল্পিত নীতিই দায়ী। অন্যদিকে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচ্য ঘটনায় প্রশাসনের অদক্ষতা এবং দায়িত্বহীনতার বিষয়টি স্পষ্ট। যে কারণে দফায় দফায় সময় বেঁধে দিয়েও শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলে তোলা যাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যত বেশি সংখ্যক সম্ভব শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের আবাসন সুবিধা সৃষ্টি করা এবং মানসম্মত পাঠ ও গবেষণার পরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়টি একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত। অন্যদিকে, শিক্ষায় বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র হওয়া উচিত গবেষণায়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আবাসন সুবিধার মতো মৌলিক অবকাঠামো গড়ে তোলাতেই আমরা এখনো পিছিয়ে আছি। নীতিনির্ধারকদের উচিত হবে, ধাপে ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবাসন সংকট নিরসনের একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করে সে লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া।
রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন সুলতান মাহমুদ। ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে ধানমন্ডি এলাকায় ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন এ শিক্ষক। এখনো সেই ফ্ল্যাটের ঋণ পুরোপুরি পরিশোধ হয়নি। সুলতানের ব্যবহৃত ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা দুটি। একটি বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক আর অন্যটি প্রাইম ব্যাংকের।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা জানতে চাইলেন তিনি জানান, ফ্ল্যাটের কিস্তি পরিশোধ, সন্তানদের বেতন আর ফ্যামিলি খরচ পরিশোধ সব মিলিয়ে প্রায় প্রতি মাসের শেষেই আর্থিক সংকট তৈরি হয়। এ সংকট থেকে বাঁচতেই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন। তবে মাসের শুরুতে বেতন পেয়েই পরিশোধ করে দিচ্ছেন ক্রেডিট কার্ডের বিল। এতে অতিরিক্ত সুদও গুনতে হচ্ছে না তাকে।
সুলতান মাহমুদ বলেন, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার না করলে হয়তো প্রতি মাসেই আমার বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধার করে চলতে হতো। এতে সম্মানহানিরও ঝুঁকি থাকে। কিন্তু এখন ব্যাংক থেকে স্বল্প সময়ের জন্য ধার নিয়ে তা আবার ফেরত দিচ্ছি। এতে কারও কাছে হাত পাততে হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, একসময় মানুষ ক্রেডিট কার্ডের প্রতি কম আগ্রহী হলেও বর্তমানে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে দেশের ৩৯টি ব্যাংক কার্ড সেবা দিচ্ছে। গত মার্চ শেষে এসব ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ লাখ ৭৮ হাজারটি। ঠিক চার বছর আগে ২০১৯ সালে মার্চ শেষে এ কার্ডের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ৪৯ হাজারটি। অর্থাৎ মাত্র চার বছরের ক্রেডিট কার্ড বেড়েছে ৮ লাখ ২৮ হাজার বা ৬১ দশমিক ৪২ শতাংশ। এই একই সময়ে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। গত মার্চে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের মার্চে এ লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ চার বছরের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
শুধু সুলতানই নন, ব্যবসায়ী আমিরুল, সাংবাদিক আক্তার আর চাকরিজীবী তারিকুলও একই কারণে ব্যবহার করছেন দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ক্রেডিট কার্ড। তাদের মতে, ক্রেডিট কার্ডের কারণে সহজ হয়েছে তাদের জীবনযাত্রা। তবে উল্টো চিত্রও আছে। করোনা মহামারীর সময় চাকরি হারানো আজাদুল ইসলাম ক্রেডিট কার্ডে ধার নিয়ে এখন বিপাকে রয়েছেন। তিনি বলেন, করোনার সময় প্রথম দিকে আমাদের বেতন কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়। সে সময় সংসারের খরচ বহন করতে ক্রেডিট কার্ডের সহায়তা নিয়েছেন। যে ঋণ এখন পর্যন্ত টানতে হচ্ছে তাকে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ হবে বলে আশাবাদী এ গ্রাহক।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ক্রেডিট কার্ড জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে এর ‘ধার’ নেওয়ার পদ্ধতির জন্য। পাশাপাশি পণ্যের দামে ডিসকাউন্টের পাশাপাশি কিস্তিতে পরিশোধের পদ্ধতিও এ ব্যাপ্তি বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। যেটি গ্রাহককে এককালীন বেশি দামের পণ্য কিনতে সহায়তা করে। এবার জেনে নেওয়া যাক ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা-অসুবিধাগুলো।
পণ্য কিনতে কিস্তি সুবিধা : ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কিস্তিতে পণ্য কিনতে একসঙ্গে সব টাকা পরিশোধ করতে হবে না। বিনা সুদে বা নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদে গ্রাহক কয়েক মাসের সমান কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। যদিও গ্রাহক তার ক্রেডিট লিমিটের চেয়ে বেশি দামি পণ্য কিনতে পারবেন না। আর কিস্তির টাকাও পরিশোধ করতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। এতে কারও কাছে টাকা ধার করার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে পরিশোধের ক্ষেত্রে সময়সীমা পার হয়ে গেলে জরিমানা গুনতে হতে পারে।
ঋণের সুবিধা : কিছু ক্রেডিট কার্ড, বিশেষ করে বিদেশে শূন্য শতাংশ সুদে ঋণ দেয়। এসব ক্ষেত্রে মাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ মূল্য পরিশোধ করতে হয়, যা বেশ সুবিধাজনক। আবার কোনো কোনো কার্ডে ঋণে সুদের হার অনেক থাকে। এ ক্ষেত্রেও একটা সুবিধা আছে। বোঝা এড়াতে দ্রুত ঋণ পরিশোধ করা হয়। নিজস্ব ঋণ থাকে না।
পরিবর্তনযোগ্য : এসব ক্ষেত্রে সঠিক কার্ডটি বেছে নিতে পারা জরুরি। একটি ভুল কার্ড দিনের পর দিন ব্যবহার করলে ঋণের বোঝা শুধু বাড়তেই থাকবে। তবে এটা বুঝতে ব্যাংকের পুরো শর্তাবলি মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। যদিও কার্ডের ধরন পরিবর্তন করা যায় খুব সহজে। কারণ প্রতিটি ব্যাংকে বিভিন্ন প্রকারের ক্রেডিট থাকে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী কার্ড যেমন নিতে পারবেন তেমনি পরবর্তী সময়ে সেটির ধরন পরিবর্তনও করতে পারবেন। আবার নির্দিষ্ট পরিমাণ লেনদেন করলে বাৎসরিক ফি এড়ানো যায়। যেমন অনেক ব্যাংকের কার্ডে অন্তত ১৮ বার কেনাকাটা করলে বাৎসরিক ফি দিতে হয় না। ব্যাংকভেদে এ নিয়মের ভিন্নতা রয়েছে। দেশের বাইরেও ব্যবহার করা যায় : ক্রেডিট কার্ড ইন্টারন্যাশনাল হলে সেটি ব্যবহার করা যাবে বিশ্বের অনেক দেশেই। টাকার পাশাপাশি ডলারও ধার করে ব্যবহার করা যায়। হোটেল বুকিং, বিমানভাড়া, রেস্টুরেন্ট ও কেনাকাটায় মেলে নানা ছাড় ও পয়েন্ট জেতার সুযোগ। বিদেশে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে যা খরচ করবেন, মাস শেষে আপনার সেই পরিমাণ বিল হিসেবে ইস্যু করবে ব্যাংক। তারপর সুদ বা জরিমানা এড়াতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই বিল পরিশোধ করতে হবে।
অফারের ছড়াছড়ি
বিভিন্ন সময়ে ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন অফার দেওয়া হয়। যেমন ‘ক্যাশ ব্যাক অফার’, ‘স্পেশাল ডিসকাউন্ট’। দেশের বাইরে বেড়াতে গেলে, হোটেলে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারে অনেক সময়ই মূল্যছাড় দেওয়া হয়। প্লেনের টিকিট কাটতেও অনেক সময় পাওয়া যায় বিশেষ মূল্যছাড়। আর অনলাইন কেনাকাটার জন্যও এখন ক্রেডিট কার্ড বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন সময়ে দেখা যায়, নামিদামি হোটেল ও রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়ায় ছাড় এবং অফার দিয়ে থাকে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আবাসিক হোটেলগুলোও ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে থাকে। একটি কিনলে একটি ফ্রি (বাই ওয়ান গেট ওয়ান) অফারও দেওয়া হয়। এ ছাড়া রয়েছে মূল্যছাড়সহ নানা অফার। অনেকেই পরিবার নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে ঘুরতে যান। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও হোটেলের নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হোটেল বুক করা যায়। এ ক্ষেত্রেও আপনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারেন। তবে বিদেশে হোটেল বুকিংয়ের টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রে ডুয়েল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড প্রয়োজন হবে।
অসুবিধা
ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনি অসুবিধাও কম নয়। এজন্য বেশ সতর্ক হতে হবে গ্রাহককে। একটু বেখেয়ালি হলেই পড়তে পারেন ঋণের ফাঁদে।
ঋণের ফাঁদ
ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার সবসময়ই একটি ঋণ নেওয়ার মাধ্যম। মনে রাখতে হবে অর্থ খরচের ৪৫ দিনের মধ্যে সেটি পরিশোধ করতেই হবে। অন্যথায় ঋণের ওপর সুদ শুরু হবে। যা ঋণের পরিমাণ প্রতিদিন বাড়িয়ে দেবে। তাই কিছুটা ঝুঁকি থেকেই যায়।
লুক্কায়িত ব্যয়
সুদের হার পরিশোধই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের একমাত্র ব্যয় নয়। সময়মতো মাসিক বিল পরিশোধ না করলে গ্রাহককে জরিমানা গুনতে হতে পারে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে নগদ অর্থ তুলতে এর জন্য নির্দিষ্ট হারে ফি দিতে হতে পারে। সরাসরি বুথ থেকে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে নগদ অর্থ উত্তোলন করতে গেলে বাড়তি ফি এবং ওইদিন থেকেই (এ ক্ষেত্রে ৪৫ দিন সময় দেওয়া হয় না) সুদ গণনা শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে চেক দিয়ে টাকা সঞ্চয় হিসেবে স্থানান্তর করে তারপর সেটি নগদায়ন করলে ৪৫ দিন সময় পাওয়া যাবে।
মহামারী করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বের প্রায় সব দেশই অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি থেকে জনসাধারণকে কিছুটা স্বস্তি দিতে ঋণের সুদের হার বাড়িয়ে দেওয়াসহ নীতিনির্ধারণী নানা ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। বাংলাদেশও এমন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। বিদেশি মুদ্রার সংকটসহ মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে শর্তসাপেক্ষে ধার নেওয়া ছাড়াও আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এখনো এর সুফল মেলেনি। এমন সংকটের মধ্যেই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ বাজেট উপস্থাপন হতে যাচ্ছে।
এবারের বাজেট সব দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে সামনে নির্বাচন, অন্যদিকে বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক চাপে চিড়েচেপ্টা দেশের অর্থনীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম, আইএমএফের শর্তের জাল নানান বাস্তবতার মধ্যে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বিশাল বাজেট প্রস্তাব পেশ করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য বরাদ্দ করা অর্থ পুরোপুরি খরচ করতে না পারার শঙ্কার মধ্যেই আরও বড় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বেশি। যদিও অর্থনীতিবিদরা এ বাজেটকে বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে মনে করছেন।
এবারের বাজেটের স্লোগান ‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’। এটি মুস্তফা কামালের দায়িত্বকালে পঞ্চম, আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম ও বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট। ১ জুন সংসদে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার কথা রয়েছে অর্থমন্ত্রীর। আজ বুধবার থেকে বাজেট অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে।
দেশের অর্থনীতি যখন চাপের মুখে, তখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে ঋণ চেয়েছিল বাংলাদেশ। নানান চড়াই-উতরাই শেষে গত ৩০ জানুয়ারি ৪৭ কোটি ডলার ছাড়ও করে ঋণদাতা সংস্থাটি। কিন্তু ঋণ দেওয়ার আগে নানান শর্ত জুড়ে দেয় তারা। এর মধ্যে ‘দুর্বল’ এনবিআরকে সবল করার বিশেষ শর্ত ছিল। জিডিপির তুলনায় বাংলাদেশের কর আদায়ের হার ৯ শতাংশের মধ্যে। ৩৮টি শর্তের মধ্যে কর আদায় বাড়ানোর অন্যতম শর্ত ছিল তাদের। এবারের বাজেটেও কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই কর আদায়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আদতে কতটুকু বাস্তবসম্মত তা নিয়েও সন্দিহান তারা।
বাজেটের আয়ের খাত বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজস্ব থেকে আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদানসহ এর আকার দাঁড়াবে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। রাজস্ব বোর্ডের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রতি বছরের মতো এবারও বাড়ছে। এবারের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআরবহির্র্ভূত কর ২০ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কর ব্যতীত অন্য আয় হবে ৫০ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদানের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাজেটের যে লক্ষ্যমাত্রার হিসাব ধারা হয়েছে তা বাস্তবসম্মত নয়। গত বছরের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল সেটি থেকে বাড়িয়ে তারা বাজেট ধরছে। তবে আমি মনে করি, বাজেটে পাস হওয়ার পর তা কতটুকু কার্যকর হয়েছে সেই হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা হওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রার কতটা আদায় হয়েছে তা বিবেচনা করে নতুন করে বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা বাস্তবসম্মত নয়। সম্পদ আছে মনে করে যদি ব্যয় কাঠামো তৈরি করা হয়, তাহলে যে অর্থ নেই তাকে ব্যয় মনে করে দেখানো হবে। তার মানে হলো, সম্পদ না থাকলে ব্যয়ও হবে না।’
ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘এই মুহূর্তে লোক দেখানোর মতো একটা হিসাব দেখা যায়। আয়ও হবে না, ব্যয়ও হবে না। আমার ভাষায় এটি পরাবাস্তব বাজেট।’
ব্যয়ের খাত : অন্যান্য বারের মতো এবারও আয়ের তুলনায় ব্যয়ের খাত বেশি হচ্ছে। এবারের ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বাজেটে পরিচালন ব্যয় অর্থাৎ আবর্তক ব্যয়, মূলধন ব্যয়, অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ও বৈদেশিক ঋণের সুদসহ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। তাছাড়া এবারের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের (এডিপি) ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এডিপিবহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পগুলোর ব্যয় ৭ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হওয়ায় অনুদানসহ ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।
ঘাটতি মেটানো হবে যেভাবে : বাজেটের ঘাটতি মেটানো হবে মূলত অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে। এবারের বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা প্রথমবারের মতো ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বিদেশিক ঋণদাতাদের কাছ থেকে ঋণ আনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের ভরসা এবারও ব্যাংক খাত। বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকেই নেওয়া হবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার ঋণ। ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেবে ৮৬ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেবে ৪৫ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা।
তাছাড়া ব্যাংক থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলেও এবারের বাজেটে ব্যাংকবহির্ভূত ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে। এবারের ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে সরকার ঋণ নেবে ২৩ হাজার কোটি টাকা। গত বছরও এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা। এবারের সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নেবে ১৮ হাজার কোটি টাকা, আগের অর্থবছরে যা ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা।
জিডিপি : আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের বাজেটে সংশোধিত জিডিপির চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপির আকার ৪৪ লাখ ৩৯ কোটি ২৭৩ কোটি টাকা। এবারের বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ আর ভোক্তা মূল্যসূচক বা মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমান পরিস্থিতিতে জিডিপি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
আগামী অর্থবছরের বাজেট সরকারের জন্য সব দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফের যে ৩৮টি শর্ত রয়েছে, অর্ধেকের বেশিই বাস্তবায়ন করতে হবে এ অর্থবছরে। সরকারকে বেঁধে দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রিজার্ভের যথাযথ গণনা পদ্ধতি প্রণয়ন, প্রতি তিন মাস অন্তর জিডিপির হার নির্ধারণ, সুদের হারে করিডোর পদ্ধতি তৈরি, মুদ্রা বিনিময় হারের একটি দর রাখাসহ কয়েকটি শর্ত পূরণের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কিত। এগুলোর কিছু বাস্তবায়নের ঘোষণা আসবে আগামী জুন মাসে মুদ্রানীতি ঘোষণার সময়, কিছু আসবে জুলাইয়ে। আইএমএফের চাওয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ।
ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়েই চলছে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান। নেতৃত্ব পরিবর্তন হয়েছে, তারপরও যেন ভাগ্যটা ফেরানো যাচ্ছিল না। পরাশক্তির তকমাটা খসে যায় গেল এক যুগে। লিগ শিরোপা তাদের কাছে শুধুই মরীচিকা। সাদা-কালোদের কাছে টুর্নামেন্টের শিরোপাও দূর আকাশের তারায় রূপ নিয়েছিল। সেখান থেকে মোহামেডানকে বলতে গেলে একাই শিরোপার স্বাদ দিয়েছেন ‘ঘরের ছেলে’ সুলেমান দিয়াবাতে। মালির এই স্ট্রাইকার টানা পাঁচ মৌসুম ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন মাঝারি মানের মোহামেডানকে। তার জাদুতে গতকাল ফেডারেশন কাপের মহা-ফাইনালে আবাহনীকে হারিয়েছে সাদা-কালোরা। এই অর্জন এসেছে অনেক অপেক্ষার পর। তাই তো এই শিরোপাকে মোহামেডানের ঘুরে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখছেন দিয়াবাতেও। বিশ্বাস করেন, এই শিরোপা বদলে দেবে মোহামেডানের চিন্তাধারাকে।
টাইব্রেকারে শিরোপা জয়ের পর ড্রেসিং রুমে সতীর্থদের হুল্লোড়ের মধ্যে ম্যাচসেরা, টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার নিয়ে এক কোনায় বসে দেশে পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন দিয়াবাতে। সেই ফাঁকেই সাংবাদিকদের কাছে জানালেন প্রতিক্রিয়া, ‘পেনাল্টি শুটআউটের আগ পর্যন্ত ম্যাচটা ভীষণ কঠিন ছিল আমাদের জন্য। আল্লাহ আমাদের সহায়তা করেছেন এই ট্রফিটি জিততে। তাই আমি অনেক খুশি। আমার ক্যারিয়ারে কোনো ফাইনালে প্রথমবারের মতো চার গোল করলাম। তাই সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।’ দিয়াবাতে বলেন, ‘৯ বছর পর আমি একা নই, সব খেলোয়াড় মিলে মোহামেডানকে একটা শিরোপা এনে দিয়েছি। বিশ্বাস ছিল ম্যাচে ফিরতে পারলে আমরাই শিরোপা জিতব, সেটাই হয়েছে। আমি এই অর্জন মালিতে থাকা আমার পরিবার, বিশেষ করে আমার মাকে উৎসর্গ করছি।’ শিরোপাটা মোহামেডানের অন্তর্বর্তীকালীন কোচ আলফাজ আহমেদের জন্যও বিশেষ অর্জন। ফুটবল ক্যারিয়ারে অসংখ্য আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ খেলেছেন এবং জিতেছেন। তবে এই জয়টাকে আলাদা করে রাখছেন তিনি, ‘আজকের খেলাটা অনেক বড় অর্জন। ব্যাকফুটে থেকে ফিরে আসা, ম্যাচ দেখে বোঝা যাচ্ছিল না কে জিতবে। দিয়াবাতে আসাধারণ ফুটবল খেলেছে। মুজাফ্ফারভের হাত ভেঙে দিয়েছিল, ওই অবস্থায়ও সে খেলা চালিয়ে গেছে। খেলোয়াড়দের কমিটম্যান্ট ছিল অসাধারণ। খেলোয়াড় হিসেবে আমি শিরোপা জিতেছি, এবার কোচ হিসেবে শীর্ষ পর্যায়ে প্রথম শিরোপা জিতলাম। তাই শিরোপাটাকেই আমি এগিয়ে রাখব।’ প্রথমার্ধে ২ গোলে পিছিয়ে পড়ার পরও হাল ছাড়েননি আলফাজ। শিষ্যদের শিখিয়েছেন মাথা ঠান্ডা রেখে পাল্টা জবাব দেওয়ার মন্ত্র, ‘প্রথমার্ধের খেলা শেষে শিষ্যদের বলেছি, তোমরা মাথা ঠা-া রেখে খেলো। তারা সেটাই করেছে।’
চোটে পড়ে মাঠ ছাড়া গোলকিপার সুজন সতীর্থ বিপুকে টাইব্রেকারে দারুণ পারফরম্যান্সের জন্য প্রশংসায় ভাসিয়েছেন, ‘মাঠ ছাড়ার এক মিনিটের মধ্যে আবাহনী যখন গোল পরিশোধ করল, তখন ভীষণ খারাপ লাগছিল। মনে হচ্ছিল আমরা আর পারব না। তবে আমার ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে বিপু। আমি তাই অনেক বেশি খুশি।’
বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশের প্রয়োজনীয়তার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুসলিম উম্মাহকে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে তাদের সন্তানদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার ক্ষেত্রে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) ক্যাম্পাসে ৩৫তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমাদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য আরও বেশি পরিমাণে বিনিয়োগ করতে হবে।’
মুসলমানদের যথেষ্ট পরিমাণ সম্পদ রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নে যথাযথভাবে এই সম্পদ ব্যবহার করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আমরা এটা করতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, ‘যখনই আমি ওআইসি সদস্য দেশে যাই, তাদের আমি এই অনুরোধই করি।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘ইসলামের স্বর্ণযুগে বিশ^সভ্যতা, বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন, রসায়ন, গণিত, চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যা, ভূগোলসহ জ্ঞানের আরও অনেক শাখায় মুসলিম স্কলারদের ব্যাপক অবদান রয়েছে, যা আমাদের মুসলিমদের ঐতিহ্যের গৌরবময় ইতিহাস গড়েছে। সেই যুগের মুসলিম স্কলাররা সংস্কৃতি, জ্ঞান অর্জন, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং সমসাময়িক সাহিত্যে বিশে^ আধিপত্য বিস্তার করেছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘সেই অবস্থান থেকে বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর এই পিছিয়ে থাকার কারণগুলো আমাদের বিশ্লেষণ করা দরকার।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্প্রীতির অভাব, জ্ঞান-বিজ্ঞানের অভাব এবং অন্য অনেক বিষয় মুসলিম উম্মাহর পতনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি এই হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের মুসলিম উম্মাহকে মতভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোকে, বিশেষ করে তাদের নিজস্ব শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও বিজ্ঞান এবং আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আধুনিক যুগে মুসলিমরা মাত্র তিনটি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে এটাই এই আধুনিক যুগে গবেষণা, প্রযুক্তি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহর অবদানের প্রকৃত উদাহরণ। তিনি অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, ‘মুসলিম জাতির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে জোরালো প্রচেষ্টা প্রয়োজন, যাতে করে তারা এ ক্ষেত্রে আরও অবদান রাখতে পারেন।’
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব দ্বারা উপস্থাপিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মুসলিম সম্প্রদায়ের পিছিয়ে পড়া উচিত নয়; বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিকস, ইন্টারনেট অব থিংস, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও অন্যান্য খাতে।
ওআইসির মহাসচিব ও ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) চ্যান্সেলর হিসেন ব্রাহিম তাহার সভাপতিত্বে এতে স্বাগত বক্তব্য দেন আইইউটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। এ ছাড়া এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনিও বক্তব্য দেন।
সমাবর্তনে ২০২১ এবং ২০২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের স্নাতক, মাস্টার্স, পিএইচডি এবং ডিপ্লোমা ডিগ্রি দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অসামান্য ফলাফলের জন্য দুই ধরনের স্বর্ণপদক আইইউটি স্বর্ণপদক এবং ওআইসি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আইইউটির ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তার অর্থায়নে আইইউটির নবনির্মিত মহিলা হলেরও উদ্বোধন করেন।।
ক্রেডিট কার্ড একটি লাইফস্টাইল পণ্য। বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্যাংক এখন ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করছে। বাংলাদেশে ইস্যুকৃত মোট ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা ২২ লাখ কিন্তু একক (ইউনিক) গ্রাহক সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। ক্রেডিট কার্ড পুরোপুরি জামানতবিহীন পার্সোনাল ঋণ হলেও ঋণ পরিশোধের হার খুব সন্তোষজনক। গ্রাহক পর্যায়ে একটি ক্রেডিট কার্ড দিতে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী বেশ কিছু অত্যাবশ্যক কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়। এটিকে ঋণ হিসেবে না দেখে লাইফস্টাইল পণ্য হিসেবে দেখে এর আবশ্যকীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা কিছুটা শিথিল করা হলে ক্রেডিট কার্ড ব্যাপ্তি অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। তখন নিম্ন আয়ের মানুষরাও ক্রেডিট কার্ড নিতে পারবেন, যা ক্যাশলেস সোসাইটি গঠনের মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করবে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা দ্রুতগতিতে ডিজিটাল আর্থিক লেনদেনে রূপান্তরিত হচ্ছে। ক্যাশলেস বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেনে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে যেমন পিওএস, এটিএম, সিআরএম, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কিউআর কোড ইত্যাদি। বিগত বছরগুলোতে ডিজিটাল লেনদেনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২১ সালের মার্চ মাসে ইন্টারনেট ব্যাংকিং এবং ই-কমার্সের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার কোটি টাকা, ২০২২ সালে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩১ হাজার কোটি টাকা এবং ২০২৩ সালের মার্চ মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। তাই বলা যায়, প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুতগতিতে অত্যন্ত শক্তিশালীভাবে প্রথাগত আর্থিক লেনদেনের পাশাপাশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থা।
তুলনামূলক কম ব্যবহারকারী
আমাদের দেশে তুলনামূলকভাবে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক কম। দেশে ইস্যুকৃত ডেবিট কার্ডের সংখ্যা ৩ কোটি ১০ লাখ যেখানে ইস্যুকৃত ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ। ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যার মধ্যে যে বড় ব্যবধান, এর প্রধান এবং অন্যতম কারণ হলো ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে কাগজপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা। এছাড়া রয়েছে ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে গ্রাহকদের প্রচলিত বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণা।
ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে হলে আগে কার্ড ব্যবহারের ইকোসিস্টেম প্রসারিত করতে হবে। কিউ-আরকোড এবং অ্যাপসভিত্তিক লেনদেন বৃদ্ধি পেলে পুরো দেশে ক্রেডিট কার্ড তথা সামগ্রিকভাবে কার্ডের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়বে।
ব্যবহারকারী কারা
ব্যাংকগুলো চাকরিজীবী এবং ব্যবসায়ী উভয় শ্রেণির গ্রাহকদের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করছে, তবে এক্ষেত্রে চাকরিজীবীদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। ক্রেডিট কার্ডের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ঋণের সহজলভ্যতা এবং সুবিধাজনক পরিশোধ ব্যবস্থা। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রমোশনাল অফার যেমন ইএমআই, ক্যাশব্যাক ডিসকাউন্টসহ বাই ওয়ান গেট ওয়ান, ইন্স্যুরেন্স, রিওয়ার্ড পয়েন্ট, মিট অ্যান্ড গ্রিট, লাউঞ্জ সুবিধা ইত্যাদি।
ঋণ শোধের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়
ক্রেডিট কার্ড আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য পণ্য হয়ে উঠেছে। এটি নিতে হলে ঋণ পরিশোধের যোগ্যতার প্রমাণের সঙ্গে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণও দাখিল করতে হয়। দেশে এখন রিটার্ন জমা দেওয়ার হার বেড়েছে। সবাই প্রতি বছর তার আয়কর রিটার্ন জমা দেয়। কিন্তু অনেকে অসাবধানতাবশত আয়কর রিটার্ন জমা দেয় না। তাছাড়া অনেকের করযোগ্য আয় না থাকায় তারাও রিটার্ন জমা দেয় না। যা ক্রেডিট ইস্যু করার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও প্রভাব বিস্তার করছে বলে মনে করি।
জীবন সহজ করছে ক্রেডিট কার্ড
ক্রেডিট কার্ড আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। এটির ব্যবহারও অত্যন্ত সহজ। ক্রেডিট কার্ড বিলম্বিত বিল পরিশোধের ভিত্তিতে কাজ করে, যার অর্থ আপনি এখন আপনার প্রয়োজনে কার্ড ব্যবহার করে অর্থ ব্যয় করতে পারেন এবং পরে তা সুবিধামতো সময়ে পরিশোধ করতে পারেন। ব্যবহৃত অর্থ গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে ডেবিট হয় না। এভাবে গ্রাহক প্রতিবার তার প্রয়োজনে কার্ড ব্যবহার করতে পারেন, যা আমাদের জীবনযাত্রাকে অত্যন্ত সহজ ও সাবলীল করে তুলেছে। একজন গ্রাহক যদি নিয়মিত সঠিক সময়ে তার ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করেন তাহলে কখনোই সেই গ্রাহক ঋণগ্রস্ত হবেন না। ব্যাংকগুলোর শক্তিশালী মনিটরিং ও রিকভারি ব্যবস্থা থাকার কারণে এই সেক্টরের খেলাপি ঋণের হার তুলনামূলক অনেক কম।
নিরাপত্তায় প্রয়োজন সচেতনতা
ডিজিটাল পেমেন্টগুলো সাধারণত বিভিন্ন ব্যবহারিক কারণে অফলাইন পেমেন্টের চেয়ে বেশি নিরাপদ। যেমন নগদ অর্থ বহনের ঝুঁকি না থাকা, চুরি, জালিয়াতির আশঙ্কা কম থাকা। ডিজিটাল লেনদেনে গ্রাহকের যে ধরনের সচেতনতা প্রয়োজন
কার্ড নম্বর, কার্ডের পেছনের ৩ সংখ্যার কার্ড ভেরিফিকেশন ভ্যালু (CVV2), ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (OTP), মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ এবং নিরাপত্তা পিন কারও সঙ্গে বিনিময় না করা।
সন্দেহজনক কোনো ওয়েবসাইটে ই-কমার্স লেনদেন থেকে বিরত থাকা ও কার্ডের তথ্য সংরক্ষণ থেকে বিরত থাকা।
সন্দেহজনক কোনো ই-মেইল অথবা এসএমএসে থাকা লিঙ্কে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকা।
সাইবার সংক্রান্ত ঝুঁকি বিবেচনায় ডিজিটাল ডিভাইসের সব সফটওয়্যার হালনাগাদ রাখা এবং নিরাপত্তা সফটওয়্যার ব্যবহার করা।
যেকোনো সন্দেহজনক লেনদেন অতিসত্বর ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ব্রাঞ্চ অথবা ব্যাংকের কল সেন্টারে অবহিত করা।
কার্ড হারানোর পরপরই ব্যাংকের কল সেন্টারে অবহিত করা।
সাধারণত, অধিকাংশ ব্যাংকই নির্দিষ্ট লেনদেনের পরিমাণের ভিত্তিতে ক্রেডিট কার্ডের বার্ষিক ফি সম্পূর্ণ বা আংশিক মওকুফ করে দিয়ে থাকে, যার ফলে এটি গ্রাহকের ওপর বাড়তি কোনো চাপ সৃষ্টি করে না। ক্রেডিট কার্ড একটি লাইফস্টাইল পণ্য, বিশ্বের অন্যান্য দেশের ক্রেডিট কার্ডের সুদের হারের তুলনায় বাংলাদেশে তা অপেক্ষাকৃত অনেক কম। তবে ব্যাংকগুলো সেটেলমেন্টের দিন থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ দিন পর্যন্ত বিনাসুদে বিল পরিশোধের সুযোগ দিয়ে থাকে। তাই যদি কোনো গ্রাহক বুঝে সচেতনভাবে নিয়মিত বিল পরিশোধ করে তবে এটা কিন্তু গ্রাহকদের জন্য একটি চমৎকার সুযোগ।
গ্রাহকদের বিভিন্ন চাহিদার কথা মাথায় রেখে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন উৎসবে নানা ধরনের অফার দিয়ে থাকে যার ফলে গ্রাহক বেশি বেশি লেনদেন করতে উদ্বুদ্ধ হয় যা ব্যবসায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।