
ইংরেজি সাহিত্যের পুরনো একটি ক্ল্যাসিক উপন্যাস চার্লস ডিকেন্সের গ্রেট এক্সপেক্টেশন থেকে মিস হাভিশামের একটি স্থির দৃশ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাইবেদিতে পড়ে থাকা এক নববধূকে দেখা গেল তার বাকি বছরগুলোর জন্য স্থির সময়ের মধ্যে আটকে থাকতে, সেই থেকে তিনি সব সময় বিয়ের পোশাক পরা, একটি স্থিরদৃশ্যে আটকা পড়ে আছেন, যখন কি না তার পৃথিবী ভেঙে পড়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওপর বিবিসির দুই পর্বের তথ্যচিত্রটিও আমার ওপর একই ধরনের প্রভাব ফেলেছিল। মনে হলো পুরনো লেস আর সাদা জামা পরা সেই নববধূর দিকে তাকিয়ে আছি আমি, সময়ের সঙ্গে যা বড় বেমানান। আমি তা-ই ব্যাখ্যা করব এ লেখায়।
আমার মতো কাক্সিক্ষত ও বিধ্বংসী দর্শকদের কাছে তথ্যচিত্রটি নতুন তদন্ত প্রতিবেদন হিসেবে আগাম বেচা হয়েছিল, যা নতুন তথ্য সামনে আনবে এবং এমন কিছু দেখাবে, যা আমরা আগে দেখিনি। উদার বামপন্থি বেশ কিছু মানুষের চমকপ্রদ অংশগ্রহণ ছিল, যাদের আমি সব সময়ই প্রশংসা করে থাকি এবং ভবিষ্যতেও করব, এবং আমার নায়ক হিসেবেই থাকবেন তারা। অরুন্ধতী রায়, যে লেখিকা কখনো তার কথার বরখেলাপ করেননি। আকার প্যাটেল, একজন অ্যাক্টিভিস্ট এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভারতীয় প্রধান। তিনি বেশ ভালোভাবেই তার নিরলস লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। সিদ্ধার্থ ভারদারাজন, আমার প্রিয় সাংবাদিকদের একজন এবং তিনি সর্বশেষ স্বাধীনভাবে দাঁড়িয়ে থাকা প্রেস স্পেসের প্রতিষ্ঠাতা। এ ছাড়া দ্য ক্যারাভান ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতা হর্তোষ বল। ক্রিস্টোফ জাফরেলট, হিন্দু অধিকার নিয়ে প্রচুর গবেষণা ও লেখালেখি করা একজন সুপরিচিত শিক্ষাবিদ। এমন সেরা ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেওয়া সত্ত্বেও, বিবিসি ওই তথ্যচিত্রে তাদের এমনভাবেই তুলে ধরেছে যে নতুন কিছুই বলা হয়নি।
তথ্যচিত্রটির জন্য ক্ষমতায় থাকা শাসকরা নিজেরাই দুর্ভোগের শিকার বলে আরও একবার অপপ্রচার চালানোর সুযোগ পাবে। এতে যুক্ত বামপন্থিদের সমালোচনাকেও তারা নিজস্ব প্রয়োজনে কাজে খাটানোর সুযোগ পাবে। বিবিসি কার্যত ভারতের সেরা অ্যাক্টিভিস্ট, লেখক ও সাংবাদিকদের যারা তেজি, সজীব ও গতিশীল তথ্যচিত্রটিতে তাদেরই নিয়েছে। তাদের পুনরাবৃত্তিমূলক ও গৎবাঁধাভাবে একসঙ্গে এমনভাবে গেঁথে দিয়েছে যে দেখে মনে হয় যেন তারা স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, বিবিসি মিস হাভিশামের ছবিটির পুনরাবৃত্তি করেছে।
তথ্যচিত্রটির প্রথম পর্বের কথা বলা যাক। মোদি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সেই ২০০২ সালে ফিরে যায় ক্যামেরা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে সে সময়েই গণহত্যার ঘটনাটি ঘটে। অশুভ সংগীত বাজতে থাকে এবং এ সময় একটি অন্ধকার কম্পিউটার স্ক্রিন সামনে আসে। বড় ধরনের একটি তথ্য উদঘাটন হয় তাতেএখন আর গোপন নয় এমন একটি কূটনৈতিক বার্তা এটি, যেখানে একজন ব্রিটিশ কূটনীতিক অনুমান করেছেন, মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতার জন্য মোদি দায়ী এবং তিনিই পুলিশকে পিছিয়ে যেতে বলেছেন এবং জনতাকে তাদের কাজ করতে দেওয়ার আহ্বান জানান। একজন অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক এবং সাবেক ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিব জ্যাক স্ট্রের মতামত ছাড়া এই দাবির সমর্থনে কোনো নতুন প্রমাণ উপস্থাপন না করে বিবিসি ভারতে বিজেপি এবং তার মুখপাত্রদের প্রশ্ন তোলার সুযোগ করে দিয়েছে যে, ২০ বছর আগের একজন অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিকের কণ্ঠস্বর কেন সর্বজ্ঞ ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে? বিবিসি যদি কূটনৈতিক বার্তা ব্যবহার করে দেখাতে পারত যে, যেই ব্রিটেন এবং ইউরোপ মোদিকে রক্তপাতের জন্য দায়ী করেছিল সেই তারাই কীভাবে পাঁচ বছর না যেতেই তার গলা থেকে বড়শির এই আংটা খুলে নিয়েছিল, তাহলে তারা গল্পের নতুন মোচড় দেখাতে পারত।
গোঁধরা-উত্তরহীন প্রশ্ন
২০০২ সালের সহিংসতার বিষয়টি যখনই আলোচনায় এসেছে, বিজেপি সব সময় বলতে চেয়েছে যে, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আগের দিন একটি ট্রেনের বগি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, যেখানে ভিএইচপির ৫৯ জন হিন্দু কর সেবককে পুড়িয়ে ছাই করা হয়েছিল। বিবিসি এ বিষয়ে আরও কিছু কাজ করতে পারত, যা বিজেপিকে কঠিন কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি করত। প্রথমত, ৫৯ জন করসেবক বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণ করছিলেন। ট্রেনে আরও অনেকে ছিলেন যারা টিকিট কেটে উঠেছিলেন এবং জীবিত নামার সুযোগ পেয়েছিলেন। তারা আসলে কি দেখতে পেয়েছিলেন? তাদের কথা কেন ধামাচাপা দেওয়া হয়? যদি মুসলমানরাই আসলে ওই বগিতে আগুন দিয়ে থাকে, তবে সেই জীবিতদের কথা শোনার ক্ষেত্রে তো ভয়ের কিছু থাকার কথা নয়।
তথ্যচিত্রে পুড়ে যাওয়া ট্রেনের বগিতে বেশি মনোযোগ দিয়ে বিজেপির অস্বস্তি আরও বাড়ানো যেত। পুড়িয়ে ফেলার একটি তদন্ত সেদিনের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার করেছিল। আরও একটি তদন্ত হয়েছিল কয়েক বছর পরে, বিরোধী নেতা লালু যাদব যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন। উভয় তদন্তকে পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে দেখা হয়ে থাকে। বিবিসি কি এখানে কিছু মৌলিক প্রশ্ন ছুড়ে দিতে পারত না? নির্ধারিত স্টেশনের আগেই চেইন টেনে কেন ট্রেন থামানো হলো? মুসলমান এক মেয়ের শ্লীলতাহানি কি আসলেই করা হয়েছিল? এই গল্পগুলোর কী হয়েছিল এবং কেন এসব বিষয় হারিয়ে গেল?
এমনকি বিবিসি যদি দ্রুত গুগল সার্চও করতে চাইত, তাহলে ভিএইচপি সদস্যদের গল্প জানা যেত, যারা ট্রেনে অযোধ্যা (উত্তর প্রদেশে) থেকে গুজরাটে ফিরছিলেন। সেই দিন থেকে, ভিএইচপির এই সদস্যরা হয় তাদের সাংগঠনিক লোকদের আচরণে হতাশ কিংবা ভিএইচপি পরিবারে তাদের অবস্থান সম্পর্কে অসন্তুষ্ট ও বিভ্রান্ত বোধ করছে। কেন তাদের বিবেচনায় আনা হবে না?
ভারসাম্যের কর্মকাণ্ড
এবার আসি তথ্যচিত্রটির দ্বিতীয় পর্বে। এটি ভারতের গণপিটুনি দিয়ে শুরু২০১৫ সালে উত্তর প্রদেশের দাদরিতে, আখলাকের, এবং ২০১৭ সালে ঝাড়খণ্ডে, আলিমুদ্দিন আনসারির। এ তথ্যচিত্র মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক অপরাধের বিষয়ে মোদির নীরবতার সঙ্গে ২০১৯ সালে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরকে বিকল ও বিভক্ত করা, হিন্দুদের প্রতি পক্ষপাতমূলক নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) তৈরি, সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভকে হিংসাত্মকভাবে দমনকে সম্পর্কযুক্ত করে। যথেষ্ট মজাদারভাবে এই তথ্যচিত্রের বিরুদ্ধ সমালোচনাও যুক্ত করা হয়েছে অরুন্ধতী রায়ের কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘কেন আমি আপনার সঙ্গে এই তথ্যচিত্রে কথা বলব, শুধু যাতে কোথাও একটি রেকর্ড থাকে যে আমরা সবাই এর সঙ্গে একমত নই। তবে এ কোনোভাবেই সাহায্যের আহ্বান নয়, কারণ কোথাও থেকে কোনো সাহায্যই আসবে না।’
হিন্দু চরমপন্থিদের সহিংসতা ও ধর্ষণের আহ্বান এবং দিল্লির দাঙ্গায় পুলিশ সদস্যের লাথিতে মুসলমান হত্যার ভিডিওফিল্মটির সবচেয়ে জঘন্য এবং দেখা অসম্ভব অংশটি বিরোধী-তথ্য ও বাইট দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করা হয়েছে। আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের সাক্ষ্য এবং নিহত ফাইজানের মায়ের কথার পাশাপাশি বিজেপি নেতা স্বপন দাশগুপ্তের বিদ্বেষপূর্ণ এবং আত্মতুষ্ট কথাবার্তা যুক্ত করা হয়েছে। সেখানে তিনি আসলে দিল্লি দাঙ্গায় যে সহিংসতা হয়েছে তাকেই অস্বীকারের অপচেষ্টা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বড় পরিসরে ভাবলে, দিল্লির দাঙ্গা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। তবে মিডিয়ার কাছে তা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ এর অর্থ হচ্ছে কম পরিশ্রমেই আপনি হাতের নাগালে ভালো ফুটেজ পেয়ে যাচ্ছেন।’ এখন আমি যদি এই ফিল্ম তৈরি করতাম, আমি দাশগুপ্তের বক্তব্যর ফাঁপা দিকটি ফুটিয়ে তুলতে এর সঙ্গে সহিংসতার ফুটেজও সমান্তরালে তুলে ধরতাম। পুলিশ কর্র্তৃক মুসলিম পুরুষদের লাথি মেরে হত্যা এবং তাদের জাতীয় সংগীত গাইতে বলার ফুটেজ ব্যবহার করতাম। এরপর দর্শকরা মুখোমুখি হতেন দাশগুপ্তের ভয়াবহ সব অহংকারী কথাবার্তার, যা এই প্রশ্নকে সামনে আনেবিবিসি কি রুয়ান্ডা কিংবা আউশভিৎসের গণহত্যার ওপর তথ্যচিত্র বানানোর ক্ষেত্রে কুখ্যাত এসএসের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহার করে একই রকম ‘ভারসাম্য’ ধরে রাখার চেষ্টা করত?
এসব তথ্যচিত্র দিয়ে বিবিসি কী করতে চায়? তাৎক্ষণিকভাবে মনে আসে ১৯৬৫ সালে ইন্দোনেশিয়ায় গণহত্যার ওপর জোশুয়া ওপেনহাইমার নির্মিত দুই তথ্যচিত্রের কথা। যারা অপরাধী এবং তাদের কৃতকর্মের জন্য উল্লাস প্রকাশ করে থাকে, তাদেরই তিনি ক্যামেরায় তুলে ধরেছেন। তাদের ভাবনাকে ‘ভারসাম্য’ দেওয়ার কোনো চেষ্টা ছাড়াই তারা কারা তা দেখিয়ে দেয় তার তথ্যচিত্র দুটি। অ্যাক্ট অব কিলিং এবং দ্য লুক অব সাইলেন্সএই দুই তথ্যচিত্র ইন্দোনেশিয়ার রাজনীতিকে বেশ নাড়া দিয়েছিল। তথ্যচিত্র দুটি তৈরি ও প্রকাশের ক্ষেত্রেও দেশটির রাজনৈতিক মহল অংশীদার হয়েছিল। ভালো তথ্যচিত্র নির্মাণই শুধু এমন ভূমিকা রাখতে পারে।
যেখানে আঘাত লাগে সেখানে আঘাত করার উদ্দেশ্য নিয়েই এগোতে হবে। এজন্য অরুন্ধতী রায়, আকার প্যাটেল এবং সাফুরা জারগারদুই পর্বেও বিবিসির এ তথ্যচিত্রের নায়কদের মতোই আমাদের অবশ্যই সর্বব্যাপীভাবে অনুসন্ধিৎসু, সতেজ ও সাহসী হতে হবে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনটি মুসলমানদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট ছিল বলে সাফুরা জারগারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। এজন্য তাকে গর্ভবতী অবস্থায় ৭৪ দিনের জন্য কারাগারে কাটাতে হয়। আর বিবিসি কি না এ ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষায় ব্যস্ত।
লেখকঃ সাংবাদিক এবং ‘দ্য অ্যানাটমি অব হেইট’র লেখক। ভারতের উত্তর প্রদেশে বসবাস ও কর্মরত। ‘দ্য এআইডিইএম’ থেকে অনুবাদ : রথো রাফি
অতীতেও জানুয়ারি মাস এলেই পাঠ্যপুস্তক নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু সেই সমালোচনাগুলোর মোটাদাগে বিষয় ছিলঅশুদ্ধ বানান, ছাপার মান, টুকটাক তথ্যগত ভুল, প্রধানমন্ত্রীর বাণী ও ছবি ব্যবহার, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে নির্দিষ্ট কিছু লেখকের লেখা বাদ দেওয়া প্রভৃতি। ২৩ সালে নতুন ও পুরাতন শিক্ষাক্রমে আগের সব সমালোচনা করার মতো বিষয় বর্তমান আছে। কিন্তু এবার সব আলোচনা আর সমালোচনা গিয়ে ঠেকেছে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুশীলন ও ইতিহাস এবং সামাজিক বিজ্ঞান বই দুটি নিয়ে। বিশেষ করে বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ে ‘চৌর্যবৃত্তি’ এবং ‘বিবর্তন তত্ত্ব’কে কেন্দ্র করে। আর এদিকে, চৌর্যবৃত্তি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, মূলধারার গণমাধ্যম সরগরম আলোচনায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও হাসিনা খান ভুল স্বীকার করে বিবৃতি পর্যন্ত দেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের দেশে পাঠ্যপুস্তক ‘রচনার’ এযাবৎকালের প্রক্রিয়া কেমন ছিল? পাঠ্যপুস্তক কি সম্পূর্ণ লেখকরা রচনা করে থাকেন? পাঠ্যপুস্তক কতটুকু রচনা আর কতটুকু সংকলিত ও সম্পাদিত ছিল, তা আমরা কখনোই ভেবে দেখিনি। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণির বাংলা বই পুরোটাই সংকলিত ও সম্পাদিত। বইয়ের শুরুতে যে ‘লেখক’দের নাম দেওয়া থাকে তাদের কারও কবিতা, গদ্য, গল্প লেখা থাকে না। যাদের লেখা থাকে তারা হলেন বাংলা ভাষাসহ অন্য ভাষার প্রধানতম কবি, সাহিত্যিকের। কিন্তু কবিতা-গদ্য-গল্প-নাটক না লিখেই এসব লেখক পাঠ্যপুস্তক রচয়িতার মর্যাদা ভোগ করছেন দিনের পর দিন! কই স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে কাউকেই তো এ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেখিনি! কেউ তো বলেনি তারা সংকলনকারী ও সম্পাদক, রচয়িতা নন! আর আমাদের সংকলনকারী সম্পাদকদেরও নৈতিকতা বা সততার বালাই নেই। তারা নিজেরাও সংকলনকারী-সম্পাদক পরিচয় না দিয়ে রচনাকারী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে থাকেন। অনেকে তো পাঠ্যপুস্তকে নিজের নাম লেখা পৃষ্ঠা বা লেখক হিসেবে সরকারি চিঠির ছবি তুলে ফেইসবুকে দিয়ে আত্মশ্লাঘা প্রকাশ করেন।
বছরের পর বছর ধরে যেখানে সংকলিত বিষয় চলছে সেখানে, নতুন শিক্ষাক্রমে হুট করে বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের কিছু অংশ ‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ডট ওআরজি’ থেকে নিয়ে গুগল ট্রান্সলেটরে ভাষান্তর করে হুবহু ছাপিয়ে দেওয়াকে চৌর্যবৃত্তি বলা যায় কি? আমরা সদ্য শেখা প্লেইজারিজম শব্দটির যত্রতত্র ব্যবহার করছি না তো? প্রশ্ন দুটি উত্থাপন করার কারণ হচ্ছেআমরা আসলে রচনা, সংকলন ও সম্পাদনাকে এক করে দেখছি।
ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলোর স্থানিক রূপ থাকে। প্রতিটি জনপদের ভিন্ন ভিন্ন গল্পগাথা, জন্মের ইতিহাস, নৃ-তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য আলাদা। এগুলো প্রতিনিয়ত নির্মাণ হতে থাকে। বাংলাদেশে তো সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাস নতুন করে লেখা হতে থাকে! কিন্তু প্রকৃতি বিজ্ঞান বা ন্যাচারাল সায়েন্সের ইতিহাস সাহিত্য বা সমাজবিজ্ঞানের পথে হাঁটে না। এদের থেকে উল্টো রথে চলে প্রকৃতি বিজ্ঞান। এর সৌন্দর্যই হলো এর কোনো স্থানিক রূপ নেই। মৌলিক পরমাণুর সংখ্যা, মাধ্যাকর্ষণ, জীবের বৃদ্ধি ও বংশগতি প্রভৃতি বিষয় দেশ, ব্যক্তিবিশেষ বা সময়ের হাতের ইশারায় চলে না। প্রকৃতি বিজ্ঞান চলে তার নিজস্ব নিয়মে। সমগ্র বিশ্বের বিদ্যালয়েই যুগ যুগ ধরে বিজ্ঞানে একই বিষয় পড়ানো হয়। চৌর্যবৃত্তি বলার আগে আর একটি বিষয় স্মরণ রাখা প্রয়োজন তা হলোপ্রতিটি মাধ্যমের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে, যা তাকে অন্য মাধ্যম থেকে পৃথক করে। গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা, গবেষণা নিবন্ধ, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন এসবে লেখক তার সৃষ্টিকে নিজের বলে দাবি করতে পারেন। কিন্তু পাঠ্যপুস্তক রচয়িতাদের সেই সুযোগ নেই। এখানে সম্পূর্ণটাই দলগত কাজ। আর তা ছাড়া গবেষণা নিবন্ধে যেমন তথ্যসূত্র উল্লেখ করার সুযোগ আছে এবং আর সে কারণেই গবেষণা নিবন্ধে তথ্যসূত্র উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু পাঠ্যপুস্তকে তথ্যসূত্র উল্লেখ করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু কেন তথ্যের উৎসের উল্লেখ করার সুযোগ নেই এবং তথ্যের উৎস প্রবর্তনের দাবি করার যৌক্তিকতা নেই সেই নিয়ে আলাপ জারি রাখা যায়। কিন্তু একে সরাসরি চৌর্যবৃত্তি কি বলার সুযোগ আছে?
বিগত বছরগুলোতে আমাদের দেশে বিশেষ করে বাংলা, সমাজ, বিজ্ঞান বইগুলো কতটুকু লেখক রচনা করেন? প্রায় সবই তো সংকলন করা। বরং ২০২৩ সালের নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ্যপুস্তক রচয়িতাদের খানিকটা খাটাখাটুনি গেছে। কিছু অংশ তারা নিজেরা মাথা খাঁটিয়ে লিখেছেন। এর আগ পর্যন্ত শিক্ষার ‘মান’ বাড়ানো বলতে আমাদের শিক্ষাবিদরা বুঝেছেন, উঁচু শ্রেণির বিষয়বস্তুকে খানিকটা আকারে ছোট করে নিচের শ্রেণিতে ঢুকিয়ে দেওয়া। গরুর সাইজ ছোট করে আঁকলেই বাছুর হয়ে যায় না, এটা তারা এত দিন বোঝেননি। বাছুরের অবয়ব স্পষ্ট করতে গেলে অপরিপক্ব দৈহিক গঠন, চকিত চাহনি, চপলতা সবকিছুই ফুটিয়ে তুলতে হয়; অনেক বিলম্বে হলেও শিক্ষাবিদরা তা বিবেচনায় নিয়েছেন। নতুন শিক্ষাক্রমে দেখলাম শিক্ষাবিদরা শিক্ষার্থীদের ধারণ ক্ষমতাকে বুঝতে আন্তরিক হচ্ছেন। আমার কাছে মনে হচ্ছে, সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগকারীরা নিজেদের অজান্তেই লেখকদের পুরস্কৃত করে ফেলছে! কারণ, আমাদের দেশের পাঠ্যপুস্তক সংকলনকারী ও সম্পাদনকারীকে যদি পাঠ্যপুস্তক রচনাকারীর মর্যাদা দেওয়া হয় তবে; রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বা তলস্তয়কে কোথায় ঠাঁই দেব? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বভারতীর ছাত্রদের জন্য নিজে পাঠ্যপুস্তক রচনা করেছেন এবং অন্য সহযোগীদের দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর একের পর এক পাঠ্যপুস্তক রচনা করেছেন। এই পাঠ্যপুস্তক রচনার জন্য তাকে তৎকালীন সাহিত্যসমাজ থেকে কম তিরস্কার শুনতে হয়নি! বঙ্কিমচন্দ্র ঈশ্বরচন্দ্রকে নিছক জ্ঞান করতেন পাঠ্যপুস্তক প্রণেতা হিসেবে। আর আমাদের পাঠ্যপুস্তক সংকলনকারীরা কোনো কিছু রচনা না করেই রচনাকারীর মর্যাদা পায়! সৌভাগ্যবান আমাদের লেখকরা আর দুর্ভাগা দেশের শিক্ষার্থীরা।
লেখক : পিএইচডি গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরোভিচ পুতিন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। গর্বাচেভ এবং ভদকাবন্দনাপীর ইয়েলেৎসিনের চেয়ে খারাপ লোক। সম্ভবত স্তালিনের চেয়েও খারাপ লোক। তাকে ইভান দ্য টেরিবেল বলতে পারলে ভালো হতো। গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই তার আচরণে এবং রাশিয়ায় অর্থাৎ রুশ ফেডারেশনে। তার সবচেয়ে বড় মিত্র গণপ্রজাতন্ত্রী চীনেও গণতন্ত্র নেই। দুই অগণতন্ত্র (একটা সাবেক ও একটা বর্তমান কমিউনিস্ট দেশ) এবং সর্বাত্মকবাদ (টোটালিটারিয়ানিজম) এখন বাণিজ্যিক-রাসায়নিক হালুয়া পাকাচ্ছে, ডলারকে নাকচ করে দেওয়ার জন্য। পুতিন জঘন্য; কমরেড ইয়েলেৎসিনের মতো ভালো লোক নয় ভদকার রাজ্যে বসে ভদকা খায় না। এটাই পুতিনবিষয়ক পাশ্চাত্য ভাষ্য। অল্টারনেট ভার্সন অব দ্য হলি স্ক্রিপচার।
রাশিয়া ও চীনের আরেক মিত্র উত্তর কোরিয়া। সেখানেও গণতন্ত্র নেই। কী বিতিকিচ্ছিরি দোস্তালি রে বাবা! ব্রুটস অ্যান্ড ব্রুটাস! চীন তো করোনাময়ীর রাসলীলা। পুতিন বরং রাসপুতিন হলে খুব ভালো হতো। রাশিয়া হলো স্ল্যাভাসুরের দেশ, আর চীন হলো কিরাতাসুর। উত্তর কোরিয়াও অসুর। সবাই মিলে অসুরবনীপাল! বাংলাদেশও অসুরের দেশ বঙ্গাসুর। তবে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ এখন থাক। জিওপলিটিক্যাল ডাইসে বাংলাদেশকে নিয়ে খেলা করা যাবে না, আণ্ডা-গণ্ডা দেশও পশ্চিমা পলিসিতে এখন গুরুত্বপূর্ণ। সাবধানে কথা বলা পাশ্চাত্য ভদ্রলোকের লক্ষণ। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের পাশের দেশ ভারত। আবার চীনের সঙ্গেও তার ভাবসাব ইদানীং ভালো। ভারতকে নিয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক রসায়নের বিক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশকেও এই বলয়ে- গোবলয়ে না হলেও রাখতে হবে। অতএব বাংলা হেজিমনিক ডিসকোর্স থেকে আপাতত বাদ থাক। ঘুঘু ফসকে গেলে সমস্যা। ফাঁদে পড়বে কে? তাহলে চীনের বিরুদ্ধে তাকে কাজে লাগানো যাবে কি! চীনকে চেকে রাখতে না পারলে আবার রাশিয়া এসে হাজির হবে। শি-পুতিন সমীকরণটা বেশ জটিল। দে আর জেন্টিলস অর গোয়িমস। লং লিভ গর্বি, লং লিভ ইলি। ইউ আর দ্য প্রফেটস, হু কেম বিফোর দ্য জাজমেন্ট ডে। ইউ আর দ্য টার্মিনেটরস অব ইভিল। ডাউন উইথ পুতিন, রাদার সে রাসপুতিন।
ইউক্রেনের ওপর আশীর্বাদ বর্ষিত হোক। লং লিভ প্রিন্স ভলোদিমির জেলেনস্কি হু উইল লিড আস টু হেভেন, হোয়ার অলরেডি ইলি (কমরেড ইয়েলেৎসিন) হ্যাজ গন। প্রিন্স ভলোদিমিরস ইউক্রেন অ্যান্ড ইটস লিবারেটর ফোর্সেস আর ডুয়িং ওয়েল, ফাইটিং দ্য রাশান ডেমনস হিরোয়িকেলি। দে আর অ’সাম ইন প্লেয়িং পিয়ানো এরোটিকেলি এজ প্রিন্স ভলোদিমির জেলেনস্কি প্লেজ। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের বীরত্ব দেখার মতো। তারা বালাকলিয়া দখল করেছে, ইজিয়ুম দখল করেছে, ক্রাসনি লিমান দখল করেছে, কুপিয়ানস্ক দখল করেছে। মাঝেমাঝেই তারা রাশিয়ার ভেতরে হামলা চালাচ্ছে। রাশিয়া দখলকৃত এসব জায়গা আবার দখল করতে পারেনি। বরং রাশিয়া খেরসনে দিনিয়েপার নদীর পশ্চিম পাশ অর্থাৎ খেরসন শহর ছেড়ে এসেছে ইউক্রেন বাহিনীর হাতে। কী লজ্জার বিষয়। একদিন ইউক্রেন ক্রিমিয়া দখল করবে। দনবাস তো দখল করবেই। গড ইজ উইথ দেম। স্বর্গোদ্যান রক্ষায় নিয়োজিত চেরাবগণ (চেরুবিম, বাইবেল) ঘূর্ণায়মান বিদ্যুত্তলোয়ার নিয়ে তাদের সঙ্গে শামিল হয়েছে, যেন একেকজন শামিল বাসায়েভ- ইউক্রেন শ্যাল ওভারকাম রাশিয়া সাম ডে। সারা বিশ^ এখন ইউক্রেনের পাশে শুধু ইউক্রেন ছাড়া!
পুতিন এবং তার জেনারেল স্টাফ হারছিলই এবং পাশ্চাত্যপুরাণের (যথা বিবিসি, সিএনএন প্রভৃতি) বিবরণ অনুযায়ী তার এবং তাদের জেতার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ বুচায় সব বুজায়া গেছে। কমেডিয়ান প্রিন্স ম্যাডিস্কি জেলেনস্কি এবং হেনস স্টলটেনবার্গের ডুমস ডে ফাইটারস অব ন্যাটো (নর্থ আটলান্টিক টেরোরিস্ট অর্গানাইজেশন) বীরত্বগাথা লিখছিল ভুন্ডারবাফেন দিয়ে, একদা হের গিৎলার যেমন লিখতে চেয়েছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নে। প্রসঙ্গত, রুশীরা হিটলারকে বলে গিৎলার। জার্মান ভুন্ডারবাফেনের আভিধানিক অর্থ আজবাস্ত্র (আজব-অস্ত্র) বা ওয়ান্ডার-উইপন; একে তাজ্জবাস্ত্র, বিস্ময়াস্ত্রও বলা চলে। ভারতীয় উপমহাদেশের (বিশেষ করে বাংলা) পরিভাষায় বলা যায় দিব্যাস্ত্র। অগণিত দিব্যাস্ত্র আসছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো থেকে। আর পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমে অ্যাংলো-জায়নিস্ট পাকাল মুসাবিদায় ইউক্রেনের ‘লাখে লাখে সৈন্য কাতারে কাতার, গুনিয়া দেখ মাত্র কয়েক হাজার’ অবস্থা। এমন দশাতেই ভুন্ডারলান্ডিশ্চে আলিসা (অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড) গিয়ে হাজির হলো ইউক্রেনের সবজিক্ষেতে, শশকের পিছে দৌড়াতে দৌড়াতে। আঁতিপাঁতি করে খুঁজছে সে সেই কন্দর, যাতে ঢুকে পড়ে সে পৌঁছেছিল ওয়ান্ডারল্যান্ডে। কিন্তু সবজিক্ষেত এখন মাইনফিল্ড। ফলে মাইন খুঁজতে সে ব্যস্ত হয়ে পড়বে এবং ঢুকে পড়বে ভুন্ডারল্যান্ডে আলিসার অদ্ভুত জগতে।
দিব্যাস্ত্র এখন এত বেশি যে এসব এখন- আফটার দ্য গ্র্যান্ড রিসেট- ডালভাত হয়ে গেছে। সুপারসনিক অস্ত্র বা ভুন্ডারভুন্ডারবাফেনও বিবেচনায় ঠিক আসতে চায় না। এখন আলোচিত বিষয় হলো হাইপারসনিক অস্ত্র- গাণ্ডিব। নইলে প্যানিকই সৃষ্টি করা যাবে না। এই যে গণ্ডায় গণ্ডায় অবসলিট তথা অচল ট্যাঙ্ক ইউক্রেনকে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করছে পশ্চাতিনারা (কালেকটিভ ওয়েস্ট) তাতে কার পশ্চাৎ তারা বুঁজাবে ঠাহর করা যাচ্ছে না। রাশিয়া, চীন ও উত্তর কোরিয়ার হাতে এখন সব মাখাস্ত্র, যেসব অস্ত্রের ক্যাপাসিটির তোলাদণ্ড হচ্ছে মাখ (১ মাখ সমান শব্দের গতিবেগ)। ওরা যথাক্রমে ২০, ১৯ ও ১৬ মাখের কারবারি। মাখীয় অস্ত্রের মু-ুতে থাকে এখন পরম ব্রহ্মাস্ত্র- ভুন্ডারভুন্ডারভুন্ডারবাফেন। তা ট্যাঙ্কজাতীয় এসব নন-সনিক অস্ত্রে কি কাজ হবে! ব্রহ্মাস্ত্রেও যখন কাজ হতে চায় না। আর ইউক্রেনের মতো গা-ু বাহিনীর হাতে পড়লে গাণ্ডিবের কী হবে?
জার্মান সেনাবাহিনীর ব্রিগেড জেনারেল এরিক ভাডের ভাষ্য-
‘
‘as did the Inspector General of the German Armed Forces, General Eberhard Zorn, who, like me, warned against overestimating the Ukrainians’ regionally limited offensives in the summer months. Military experts – who know what’s going on among the secret services, what it’s like on the ground and what war really means – are largely excluded from the discourse. They don’t fit in with media opinion-forming. We are largely experiencing a media synchronization that I have never experienced in …Military operations must always be coupled with attempts to bring about political solutions. The one-dimensionality of current foreign policy is hard to bear. She is very heavily focused on weapons. The main task of foreign policy is and remains diplomacy, reconciliation of interests, understanding and conflict management. … again as to what should happen with the deliveries of the tanks at all. To take over the Crimea or the Donbass, the martens and leopards are not enough. In eastern Ukraine, in the Bakhmut area, the Russians are clearly advancing. They will probably have completely conquered the Donbass before long. One only has to consider the numerical superiority of the Russians over Ukraine. … . We expect that the outcome of this conflict will reshape Europe’s outdated security architecture and force a realignment that will mark the end of the unipolar era.
(Ukraine: Is the Hammer About to Fall?; MIKE WHITNEY , JANUARY 17, 2023; https://www.unz.com)
লোগানস্ক ও দনেৎস্কে ফ্রন্টলাইন-পরিস্থিতি রাশিয়ার অনুকূলে। একটু একটু করে এগুচ্ছে রুশ ও দনবাস মিলিশিয়ারা। বাখমুত ও সলেদারে তাদের অগ্রগতি ভালো। সলেদার এরই মধ্যে রাশিয়ার দখলে গেছে। বাখমুতও যাবে যাবে করছে। পুতিন কী যেন একটা করতে যাচ্ছেন। প্রতিদিন ইউক্রেনের ২৫০-৩০০ সেনা মারা যাচ্ছে বলে রাশিয়ার এবং কিছু বিদেশি সংবাদ মাধ্যমে বলা হচ্ছে। সোলেদার রুশ প্রাইভেট মিলিটারি বাহিনী ভাগনার পিএমসির দখলে। পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমে সেসব খবর অবশ্য নেই। পুতিনবাহিনী হারবে না এটাই মনে হচ্ছে। পাশ্চাত্যের কোনো সচেতন লেখক একথা বলছেন না যে, পুতিন উদ্যম হারিয়েছেন। তবে একথা ঠিক খেরসন সিটি এবং আরও কিছু এলাকা থেকে রুশ বাহিনী পিছু হটেছিল। পশ্চিমা প্রেস্টিটিউট বলছে, রাশিয়া পিছটান দিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক অভিযান বলছে অন্য কথা- এটা তাদের কৌশল। যেমন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একি ভাড বলেছেন। রাশিয়ার বাহিনীর শীতকালীন ভুন্ডারঅপারেশনে কী যে হয়! কেয়ামতের লক্ষণ দেখছেন অনেকেই- যেন আজবদেশে গিয়ে অ্যালিস খরগোশের গর্তে বসে ওয়ার ভিডিও দেখছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লেনিনগ্রাদ, স্তালিনগ্রাদে কী ঘটেছিল তার কথা আমরা ইতিহাসের পাতা থেকে জানি। এবার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় তেমন কিছু ঘটতে যাচ্ছে। ইউক্রেনের পাল্টা হামলায় ক্রিমিয়া কী হবে তা না হয় ড্রিমস্লিপের মধ্যেই থাকুক। কিংবদন্তির রাশিয়ান মাইটের সামনে ছায়ার যুদ্ধে (প্রক্সি যুদ্ধে) যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো ও ইইউ জিততে পারবে কি?
মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল মাইক মিলির ভাষ্য, চলমান যুদ্ধে জেতা ইউক্রেনের জন্য আসলেই কঠিন। আর যুদ্ধটা হয়তো এ বছর শেষ হবে না। রাশিয়া হয়তো জিতবে কিন্তু এ জেতাতেও বর্তমান বৈশ্বিক দ্বন্দ্বের অবসান সম্ভবত হবে না। মার্কিন আধিপত্যের ম্যাট্রিক্স ফিল্ডে অনেকগুলো সমীকরণ থেকে যাচ্ছে। সবগুলোর সমাধান হওয়া দরকার। ইউক্রেনের যুদ্ধের অভিঘাত ডাইনে-বায়ে অনেক অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে। জেলেনস্কির সাবেক উপদেষ্টা আলেক্সি অরেস্তোভিচ বলেছেন, এ যুদ্ধে ইউক্রেন জিতবে না। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের (ওরফে বোজো) ভুল একটা হয়েছিল ২০১৪ সালেই, যার জের টানছে পশ্চিমা বিশ্ব। ইউক্রেন যখন গত মার্চে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে পৌঁছাতে যাচ্ছিল তখন বোজো প্রায় গোপনে ইউক্রেনে এসেছিলেন। এবং ধারণা করা চলে তিনিই ওয়ান্ডারল্যান্ডের অ্যালিস। খরগোশের গর্তে বসে কী যেন কী করলেন, আর বুচায় হত্যাকাণ্ড ঘটে গেল। ইউক্রেনের শান্তি প্রক্রিয়াও থেমে গেল। নোয়াম চমস্কিকে এখন বলতে হচ্ছে- লেখক :
World moving closer to ‘irreversible’ disaster – The world is teetering on the brink of the abyss due to an increased risk of nuclear war, failure to address environmental challenges, and diminished ability to tackle problems rationally, world-renowned philosopher and linguist Noam Chomsky told RT. (https://www.rt.com)
লেখক: সাংবাদিক
সাম্প্রতিককালে দেশের অর্থনীতিতে বিদ্যমান সংকটগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান বিপুল পরিমাণে অর্থ পাচার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ^জুড়ে যখন চলছে ডলার সংকট, সেই মুহূর্তে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে আর অন্যদিকে চলছে অর্থ পাচার। বছরের পর বছর ধরে দেশের রাজনীতিতে বহুল উচ্চারিত এক প্রপঞ্চ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, জনপ্রশাসন থেকে শুরু করে সরকারের নানামুখী উন্নয়ন কর্মকান্ডের সবখানেই যেন অনিয়ম ও দুর্নীতি দিন দিন আরও বেশি কাঠামোগতভাবে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। গত বছর ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় বাধা ছিল দুর্নীতি। রবিবার প্রকাশিত বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ ২০২২ শীর্ষক উদ্যোক্তা-জরিপ বলছে, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ব্যবসার পরিবেশের অবনতি হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা সংকট মেটাতে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার জন্য সংস্থাটির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সমঝোতা হয়েছে। মোট সাত কিস্তিতে তারা বাংলাদেশকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে। তবে জ্বালানি-বিদ্যুতের মতো বেশ কিছু সেবা খাতে ভর্তুকি কমানোসহ আইএমএফের নানা ধরনের শর্ত ও আলোচনার কথা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। আইএমএফের ঋণের বিষয়ে সিপিডি বলেছে, দেশের প্রয়োজনকে বিসর্জন দিয়ে চাপ ঘাড়ে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছিলেন, ‘আইএমএফ নিজস্ব নীতি বিশেষ করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি ও অর্থ পাচার প্রতিরোধে কার্যকর কৌশলগত বিষয়ে মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং বিভিন্ন শর্ত পূরণ করতে গিয়ে ইতিমধ্যে অতিরিক্ত চাপে থাকা দেশের সাধারণ মানুষের ওপর বৈষম্যমূলক প্রভাবের বাড়তি বোঝা তৈরি হবে।’
দুর্নীতির পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের সামনে মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতির মতো যেসব নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ যুক্ত হচ্ছে। পুঁজিবাজারের দুর্বলতা ‘ওপেন সিক্রেট’ বিষয়। সিপিডির জরিপে অংশ নেওয়া ৪৪ দশমিক ১ শতাংশ বলেছেন, বিভিন্ন মাধ্যমে মুদ্রাপাচারের ঘটনা বেড়েছে। টাকা পাচারের কারণে ব্যবসা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে মুদ্রাপাচার রোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। অর্থ পাচার ও হুন্ডি সবসময় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ (৬৪ দশমিক ৬ শতাংশ) দুর্নীতিকে ব্যবসায় বড় বাধা উল্লেখ করেন। কোন কোন জায়গায় দুর্নীতি হচ্ছে সেটিও জরিপে উঠে এসেছে। ৬৪ শতাংশ কর্মকর্তা কর প্রদানে, ৫৪ শতাংশ ব্যবসায়িক লাইসেন্স নিতে, ৪৯ শতাংশ গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ নিতে এবং ৭৫ শতাংশ কর্মকর্তা আমদানি-রপ্তানিতে দুর্নীতির কথা বলেছেন। ৪৪.৬ শতাংশ কর্মকর্তা দুর্নীতির পাশাপাশি ব্যবসার জন্য দুর্বল অবকাঠামো, ৪৩.১ শতাংশ ব্যাংকঋণের অপর্যাপ্ততা ও অদক্ষ প্রশাসন, ৩৮.৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিরতা, ৩৫.৪ শতাংশ নীতির ধারাবাহিকতার অভাব, ২৬.২ শতাংশ জটিল করব্যবস্থা ও উচ্চ করহার, ১৬.৯ শতাংশ দুর্বল নীতিবোধ ও সরকারে স্থিতির অভাব, ১৫.৪ শতাংশ অপরাধ ও উদ্ভাবনে অপর্যাপ্ত সক্ষমতা এবং ১০.৮ শতাংশ কর্মকর্তা শ্রম-সংক্রান্ত নিয়মনীতির সীমাবদ্ধতাকে সমস্যা বলেছেন।
দুর্নীতির কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। সেবার মূল্যও বাড়ছে। এই ঘানি সাধারণ মানুষকেই টানতে হয়। নানা স্তরে দুর্নীতি ব্যবসার পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ করে নীতি, কৌশল ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বড় সংস্কার আনতে হবে; স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দক্ষতার মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; নাগরিক ও ব্যবসায়িক সেবা নিশ্চিত করতে হবে; ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; আর্থিক খাতে সংস্কার আনতে হবে এবং নির্বাচনী ইশতেহারে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করতে হবে। সুপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রক্রিয়ার আওতায় বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তথা অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটিয়ে দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর দক্ষতা কাজে লাগানো গেলে আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির স্বপ্ন বাস্তবে রূপলাভ করবে, এ কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়। তবে সমস্যা হলো, অবকাঠামোগত সমস্যা, দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা এবং অন্যান্য কারণে শিল্প তথা ব্যবসার বিকাশ ঘটছে মন্থরগতিতে। বিনিয়োগে হচ্ছে নিরুৎসাহিত। ফলে আমরা ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছি। বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি, আর্থিক খাতের নাজুক অবস্থান, সামাজিক অস্থিরতা, দেশ থেকে টাকা পাচার এসব বেড়েই চলেছে। এসব সমস্যার সমাধান না হলে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত হওয়ার যে স্বপ্ন দেখছে, তা অর্জন করা কঠিন হবে। আর্থিক খাতের ব্যাপক সংস্কার করে, সামাজিক অস্থিরতা নিরসন করে, বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটিয়ে, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রেখে এবং সর্বোপরি দুর্নীতি রোধ করে এ অবস্থার উত্তরণ ঘটানো সম্ভব।
১৯২১ সালের ৩১ জানুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার নাগবাড়ির এক জমিদার পরিবারে জন্ম হয় আবু সাঈদ চৌধুরীর। বাবা আবদুল হামিদ চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের স্পিকার ছিলেন। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ইংল্যান্ড থেকে ব্যারিস্টারি পাস করেন। ১৯৪৮ সালে ঢাকা হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬১ সালে হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন। ১৯৭১ সালে জেনেভায় অবস্থানকালে পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যার প্রতিবাদে উপাচার্য পদে ইস্তফা দেন। মুজিবনগরে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ দূত হিসেবে জেনেভা থেকে লন্ডন যান এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে সচেষ্ট হন। দেশে ফিরে ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালের ১০ এপ্রিল পুনরায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। পরে বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক বিশেষ দূত এবং বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায় বন্দর ও নৌপরিবহনমন্ত্রী হয়েছিলেন। এরপর খোন্দকার মোশতাক আহমদের মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি নির্বাচিত হন। আবু সাঈদ চৌধুরী ১৯৮৭ সালের ২ আগস্ট লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
অপারেশন ছাড়াই সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় আব্দুল মোতালেব হোসেন (৩৫) নামের এক মানসিক রোগীর পেট থেকে ১৫টি কলম বের করেছেন চিকিৎসক।
এ কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। তাদের এই সাফল্যে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে নেট দুনিয়ায়।
এ বিষয়ে আব্দুল মোতালেবের মা লাইলী খাতুন বলেন, তার ছেলে মোতালেব খুব ভাল ছাত্র ছিল। ২টি লেটার মার্ক নিয়ে এসএসসি পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এরপর খারাপ সঙ্গদোষে সে আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর সময় কুড়িয়ে পাওয়া কলমগুলি খাদ্য মনে করে খেয়ে ফেলে। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। গত এক বছর ধরে তার শরীরে জ্বর ও পেটে ব্যথা শুরু হয়। অনেক চিকিৎসার পরও তা ভালো হচ্ছিল না। অবশেষে গত ১৬ মে তাকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। এখানে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার অসুখের কারণ ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসকরা তার পেটের ভিতর থেকে বিনা অপারেশনে কলমগুলো বের করে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মোতালেব হোসেন প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও পেটে কি সমস্যা সেটা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। ফলে রোগীটিকে আমার কাছে রেফার্ড করেন। এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে তার পেটের ভেতর ১৫টি কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই। এটা কীভাবে সম্ভব। পরে এন্ডোস্কপির মাধ্যমেই অপারেশন ছাড়াই আমরা কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নেই। তিনি আরও বলেন, কাজটি আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। কলমগুলো বের করতে আমাদের প্রথমে মাথায় চিন্তা ছিল যেন, কলমগুলোর কারণে কোনোভাবেই শ্বাসনালিতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের একটা চিন্তাও মাথায় ছিল। অতঃপর প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা কলমগুলো বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এন্ডোস্কপি করা ব্যক্তি মানসিক অসুস্থ হওয়ায় তার কলম খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এভাবে খেতে খেতে সে অনেক কলম খেয়ে ফেলে। কলমগুলো তার পেটের মধ্যে জমা হয়েছিল। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তার পেটের ভিতর ১৫টি কলম থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এবং অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেটের ভেতর থেকে একে একে ১৫টি আস্ত কলম বের করে আনি। বর্তমানে রোগীটি সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ আছেন।
তিনি আরও বলেন, এন্ডোস্কপির মাধ্যমে মানুষের পেট থেকে কলম বের করার মতো ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তাও আবার একটি-দু‘টি নয় ১৫টি কলম। এর আগে ঢাকা মেডিকেলে এক ব্যক্তির পেট থেকে এন্ডোসকপির মাধ্যমে একটি মোবাইল বের করেছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও এন্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষ ডাক্তার দ্বারা অপারেশন ছাড়াই শুধু এন্ডোস্কপির মাধ্যমে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে ১৫টি কলম বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি। শুধু এটাই নয়, আমরা বিনা অপারেশনে পেটের পাথর, কিডনিতে পাথর থেকে শুরু করে অনেক কিছুই অপারেশন ছাড়াই সেগুলো অপসারণের কাজ করে যাচ্ছি।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।