
অতীতেও জানুয়ারি মাস এলেই পাঠ্যপুস্তক নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু সেই সমালোচনাগুলোর মোটাদাগে বিষয় ছিলঅশুদ্ধ বানান, ছাপার মান, টুকটাক তথ্যগত ভুল, প্রধানমন্ত্রীর বাণী ও ছবি ব্যবহার, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে নির্দিষ্ট কিছু লেখকের লেখা বাদ দেওয়া প্রভৃতি। ২৩ সালে নতুন ও পুরাতন শিক্ষাক্রমে আগের সব সমালোচনা করার মতো বিষয় বর্তমান আছে। কিন্তু এবার সব আলোচনা আর সমালোচনা গিয়ে ঠেকেছে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুশীলন ও ইতিহাস এবং সামাজিক বিজ্ঞান বই দুটি নিয়ে। বিশেষ করে বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ে ‘চৌর্যবৃত্তি’ এবং ‘বিবর্তন তত্ত্ব’কে কেন্দ্র করে। আর এদিকে, চৌর্যবৃত্তি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, মূলধারার গণমাধ্যম সরগরম আলোচনায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও হাসিনা খান ভুল স্বীকার করে বিবৃতি পর্যন্ত দেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের দেশে পাঠ্যপুস্তক ‘রচনার’ এযাবৎকালের প্রক্রিয়া কেমন ছিল? পাঠ্যপুস্তক কি সম্পূর্ণ লেখকরা রচনা করে থাকেন? পাঠ্যপুস্তক কতটুকু রচনা আর কতটুকু সংকলিত ও সম্পাদিত ছিল, তা আমরা কখনোই ভেবে দেখিনি। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণির বাংলা বই পুরোটাই সংকলিত ও সম্পাদিত। বইয়ের শুরুতে যে ‘লেখক’দের নাম দেওয়া থাকে তাদের কারও কবিতা, গদ্য, গল্প লেখা থাকে না। যাদের লেখা থাকে তারা হলেন বাংলা ভাষাসহ অন্য ভাষার প্রধানতম কবি, সাহিত্যিকের। কিন্তু কবিতা-গদ্য-গল্প-নাটক না লিখেই এসব লেখক পাঠ্যপুস্তক রচয়িতার মর্যাদা ভোগ করছেন দিনের পর দিন! কই স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে কাউকেই তো এ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেখিনি! কেউ তো বলেনি তারা সংকলনকারী ও সম্পাদক, রচয়িতা নন! আর আমাদের সংকলনকারী সম্পাদকদেরও নৈতিকতা বা সততার বালাই নেই। তারা নিজেরাও সংকলনকারী-সম্পাদক পরিচয় না দিয়ে রচনাকারী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে থাকেন। অনেকে তো পাঠ্যপুস্তকে নিজের নাম লেখা পৃষ্ঠা বা লেখক হিসেবে সরকারি চিঠির ছবি তুলে ফেইসবুকে দিয়ে আত্মশ্লাঘা প্রকাশ করেন।
বছরের পর বছর ধরে যেখানে সংকলিত বিষয় চলছে সেখানে, নতুন শিক্ষাক্রমে হুট করে বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের কিছু অংশ ‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ডট ওআরজি’ থেকে নিয়ে গুগল ট্রান্সলেটরে ভাষান্তর করে হুবহু ছাপিয়ে দেওয়াকে চৌর্যবৃত্তি বলা যায় কি? আমরা সদ্য শেখা প্লেইজারিজম শব্দটির যত্রতত্র ব্যবহার করছি না তো? প্রশ্ন দুটি উত্থাপন করার কারণ হচ্ছেআমরা আসলে রচনা, সংকলন ও সম্পাদনাকে এক করে দেখছি।
ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলোর স্থানিক রূপ থাকে। প্রতিটি জনপদের ভিন্ন ভিন্ন গল্পগাথা, জন্মের ইতিহাস, নৃ-তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য আলাদা। এগুলো প্রতিনিয়ত নির্মাণ হতে থাকে। বাংলাদেশে তো সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাস নতুন করে লেখা হতে থাকে! কিন্তু প্রকৃতি বিজ্ঞান বা ন্যাচারাল সায়েন্সের ইতিহাস সাহিত্য বা সমাজবিজ্ঞানের পথে হাঁটে না। এদের থেকে উল্টো রথে চলে প্রকৃতি বিজ্ঞান। এর সৌন্দর্যই হলো এর কোনো স্থানিক রূপ নেই। মৌলিক পরমাণুর সংখ্যা, মাধ্যাকর্ষণ, জীবের বৃদ্ধি ও বংশগতি প্রভৃতি বিষয় দেশ, ব্যক্তিবিশেষ বা সময়ের হাতের ইশারায় চলে না। প্রকৃতি বিজ্ঞান চলে তার নিজস্ব নিয়মে। সমগ্র বিশ্বের বিদ্যালয়েই যুগ যুগ ধরে বিজ্ঞানে একই বিষয় পড়ানো হয়। চৌর্যবৃত্তি বলার আগে আর একটি বিষয় স্মরণ রাখা প্রয়োজন তা হলোপ্রতিটি মাধ্যমের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে, যা তাকে অন্য মাধ্যম থেকে পৃথক করে। গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা, গবেষণা নিবন্ধ, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন এসবে লেখক তার সৃষ্টিকে নিজের বলে দাবি করতে পারেন। কিন্তু পাঠ্যপুস্তক রচয়িতাদের সেই সুযোগ নেই। এখানে সম্পূর্ণটাই দলগত কাজ। আর তা ছাড়া গবেষণা নিবন্ধে যেমন তথ্যসূত্র উল্লেখ করার সুযোগ আছে এবং আর সে কারণেই গবেষণা নিবন্ধে তথ্যসূত্র উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু পাঠ্যপুস্তকে তথ্যসূত্র উল্লেখ করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু কেন তথ্যের উৎসের উল্লেখ করার সুযোগ নেই এবং তথ্যের উৎস প্রবর্তনের দাবি করার যৌক্তিকতা নেই সেই নিয়ে আলাপ জারি রাখা যায়। কিন্তু একে সরাসরি চৌর্যবৃত্তি কি বলার সুযোগ আছে?
বিগত বছরগুলোতে আমাদের দেশে বিশেষ করে বাংলা, সমাজ, বিজ্ঞান বইগুলো কতটুকু লেখক রচনা করেন? প্রায় সবই তো সংকলন করা। বরং ২০২৩ সালের নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ্যপুস্তক রচয়িতাদের খানিকটা খাটাখাটুনি গেছে। কিছু অংশ তারা নিজেরা মাথা খাঁটিয়ে লিখেছেন। এর আগ পর্যন্ত শিক্ষার ‘মান’ বাড়ানো বলতে আমাদের শিক্ষাবিদরা বুঝেছেন, উঁচু শ্রেণির বিষয়বস্তুকে খানিকটা আকারে ছোট করে নিচের শ্রেণিতে ঢুকিয়ে দেওয়া। গরুর সাইজ ছোট করে আঁকলেই বাছুর হয়ে যায় না, এটা তারা এত দিন বোঝেননি। বাছুরের অবয়ব স্পষ্ট করতে গেলে অপরিপক্ব দৈহিক গঠন, চকিত চাহনি, চপলতা সবকিছুই ফুটিয়ে তুলতে হয়; অনেক বিলম্বে হলেও শিক্ষাবিদরা তা বিবেচনায় নিয়েছেন। নতুন শিক্ষাক্রমে দেখলাম শিক্ষাবিদরা শিক্ষার্থীদের ধারণ ক্ষমতাকে বুঝতে আন্তরিক হচ্ছেন। আমার কাছে মনে হচ্ছে, সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগকারীরা নিজেদের অজান্তেই লেখকদের পুরস্কৃত করে ফেলছে! কারণ, আমাদের দেশের পাঠ্যপুস্তক সংকলনকারী ও সম্পাদনকারীকে যদি পাঠ্যপুস্তক রচনাকারীর মর্যাদা দেওয়া হয় তবে; রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বা তলস্তয়কে কোথায় ঠাঁই দেব? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বভারতীর ছাত্রদের জন্য নিজে পাঠ্যপুস্তক রচনা করেছেন এবং অন্য সহযোগীদের দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর একের পর এক পাঠ্যপুস্তক রচনা করেছেন। এই পাঠ্যপুস্তক রচনার জন্য তাকে তৎকালীন সাহিত্যসমাজ থেকে কম তিরস্কার শুনতে হয়নি! বঙ্কিমচন্দ্র ঈশ্বরচন্দ্রকে নিছক জ্ঞান করতেন পাঠ্যপুস্তক প্রণেতা হিসেবে। আর আমাদের পাঠ্যপুস্তক সংকলনকারীরা কোনো কিছু রচনা না করেই রচনাকারীর মর্যাদা পায়! সৌভাগ্যবান আমাদের লেখকরা আর দুর্ভাগা দেশের শিক্ষার্থীরা।
লেখক : পিএইচডি গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরোভিচ পুতিন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। গর্বাচেভ এবং ভদকাবন্দনাপীর ইয়েলেৎসিনের চেয়ে খারাপ লোক। সম্ভবত স্তালিনের চেয়েও খারাপ লোক। তাকে ইভান দ্য টেরিবেল বলতে পারলে ভালো হতো। গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই তার আচরণে এবং রাশিয়ায় অর্থাৎ রুশ ফেডারেশনে। তার সবচেয়ে বড় মিত্র গণপ্রজাতন্ত্রী চীনেও গণতন্ত্র নেই। দুই অগণতন্ত্র (একটা সাবেক ও একটা বর্তমান কমিউনিস্ট দেশ) এবং সর্বাত্মকবাদ (টোটালিটারিয়ানিজম) এখন বাণিজ্যিক-রাসায়নিক হালুয়া পাকাচ্ছে, ডলারকে নাকচ করে দেওয়ার জন্য। পুতিন জঘন্য; কমরেড ইয়েলেৎসিনের মতো ভালো লোক নয় ভদকার রাজ্যে বসে ভদকা খায় না। এটাই পুতিনবিষয়ক পাশ্চাত্য ভাষ্য। অল্টারনেট ভার্সন অব দ্য হলি স্ক্রিপচার।
রাশিয়া ও চীনের আরেক মিত্র উত্তর কোরিয়া। সেখানেও গণতন্ত্র নেই। কী বিতিকিচ্ছিরি দোস্তালি রে বাবা! ব্রুটস অ্যান্ড ব্রুটাস! চীন তো করোনাময়ীর রাসলীলা। পুতিন বরং রাসপুতিন হলে খুব ভালো হতো। রাশিয়া হলো স্ল্যাভাসুরের দেশ, আর চীন হলো কিরাতাসুর। উত্তর কোরিয়াও অসুর। সবাই মিলে অসুরবনীপাল! বাংলাদেশও অসুরের দেশ বঙ্গাসুর। তবে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ এখন থাক। জিওপলিটিক্যাল ডাইসে বাংলাদেশকে নিয়ে খেলা করা যাবে না, আণ্ডা-গণ্ডা দেশও পশ্চিমা পলিসিতে এখন গুরুত্বপূর্ণ। সাবধানে কথা বলা পাশ্চাত্য ভদ্রলোকের লক্ষণ। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের পাশের দেশ ভারত। আবার চীনের সঙ্গেও তার ভাবসাব ইদানীং ভালো। ভারতকে নিয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক রসায়নের বিক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশকেও এই বলয়ে- গোবলয়ে না হলেও রাখতে হবে। অতএব বাংলা হেজিমনিক ডিসকোর্স থেকে আপাতত বাদ থাক। ঘুঘু ফসকে গেলে সমস্যা। ফাঁদে পড়বে কে? তাহলে চীনের বিরুদ্ধে তাকে কাজে লাগানো যাবে কি! চীনকে চেকে রাখতে না পারলে আবার রাশিয়া এসে হাজির হবে। শি-পুতিন সমীকরণটা বেশ জটিল। দে আর জেন্টিলস অর গোয়িমস। লং লিভ গর্বি, লং লিভ ইলি। ইউ আর দ্য প্রফেটস, হু কেম বিফোর দ্য জাজমেন্ট ডে। ইউ আর দ্য টার্মিনেটরস অব ইভিল। ডাউন উইথ পুতিন, রাদার সে রাসপুতিন।
ইউক্রেনের ওপর আশীর্বাদ বর্ষিত হোক। লং লিভ প্রিন্স ভলোদিমির জেলেনস্কি হু উইল লিড আস টু হেভেন, হোয়ার অলরেডি ইলি (কমরেড ইয়েলেৎসিন) হ্যাজ গন। প্রিন্স ভলোদিমিরস ইউক্রেন অ্যান্ড ইটস লিবারেটর ফোর্সেস আর ডুয়িং ওয়েল, ফাইটিং দ্য রাশান ডেমনস হিরোয়িকেলি। দে আর অ’সাম ইন প্লেয়িং পিয়ানো এরোটিকেলি এজ প্রিন্স ভলোদিমির জেলেনস্কি প্লেজ। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের বীরত্ব দেখার মতো। তারা বালাকলিয়া দখল করেছে, ইজিয়ুম দখল করেছে, ক্রাসনি লিমান দখল করেছে, কুপিয়ানস্ক দখল করেছে। মাঝেমাঝেই তারা রাশিয়ার ভেতরে হামলা চালাচ্ছে। রাশিয়া দখলকৃত এসব জায়গা আবার দখল করতে পারেনি। বরং রাশিয়া খেরসনে দিনিয়েপার নদীর পশ্চিম পাশ অর্থাৎ খেরসন শহর ছেড়ে এসেছে ইউক্রেন বাহিনীর হাতে। কী লজ্জার বিষয়। একদিন ইউক্রেন ক্রিমিয়া দখল করবে। দনবাস তো দখল করবেই। গড ইজ উইথ দেম। স্বর্গোদ্যান রক্ষায় নিয়োজিত চেরাবগণ (চেরুবিম, বাইবেল) ঘূর্ণায়মান বিদ্যুত্তলোয়ার নিয়ে তাদের সঙ্গে শামিল হয়েছে, যেন একেকজন শামিল বাসায়েভ- ইউক্রেন শ্যাল ওভারকাম রাশিয়া সাম ডে। সারা বিশ^ এখন ইউক্রেনের পাশে শুধু ইউক্রেন ছাড়া!
পুতিন এবং তার জেনারেল স্টাফ হারছিলই এবং পাশ্চাত্যপুরাণের (যথা বিবিসি, সিএনএন প্রভৃতি) বিবরণ অনুযায়ী তার এবং তাদের জেতার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ বুচায় সব বুজায়া গেছে। কমেডিয়ান প্রিন্স ম্যাডিস্কি জেলেনস্কি এবং হেনস স্টলটেনবার্গের ডুমস ডে ফাইটারস অব ন্যাটো (নর্থ আটলান্টিক টেরোরিস্ট অর্গানাইজেশন) বীরত্বগাথা লিখছিল ভুন্ডারবাফেন দিয়ে, একদা হের গিৎলার যেমন লিখতে চেয়েছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নে। প্রসঙ্গত, রুশীরা হিটলারকে বলে গিৎলার। জার্মান ভুন্ডারবাফেনের আভিধানিক অর্থ আজবাস্ত্র (আজব-অস্ত্র) বা ওয়ান্ডার-উইপন; একে তাজ্জবাস্ত্র, বিস্ময়াস্ত্রও বলা চলে। ভারতীয় উপমহাদেশের (বিশেষ করে বাংলা) পরিভাষায় বলা যায় দিব্যাস্ত্র। অগণিত দিব্যাস্ত্র আসছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো থেকে। আর পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমে অ্যাংলো-জায়নিস্ট পাকাল মুসাবিদায় ইউক্রেনের ‘লাখে লাখে সৈন্য কাতারে কাতার, গুনিয়া দেখ মাত্র কয়েক হাজার’ অবস্থা। এমন দশাতেই ভুন্ডারলান্ডিশ্চে আলিসা (অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড) গিয়ে হাজির হলো ইউক্রেনের সবজিক্ষেতে, শশকের পিছে দৌড়াতে দৌড়াতে। আঁতিপাঁতি করে খুঁজছে সে সেই কন্দর, যাতে ঢুকে পড়ে সে পৌঁছেছিল ওয়ান্ডারল্যান্ডে। কিন্তু সবজিক্ষেত এখন মাইনফিল্ড। ফলে মাইন খুঁজতে সে ব্যস্ত হয়ে পড়বে এবং ঢুকে পড়বে ভুন্ডারল্যান্ডে আলিসার অদ্ভুত জগতে।
দিব্যাস্ত্র এখন এত বেশি যে এসব এখন- আফটার দ্য গ্র্যান্ড রিসেট- ডালভাত হয়ে গেছে। সুপারসনিক অস্ত্র বা ভুন্ডারভুন্ডারবাফেনও বিবেচনায় ঠিক আসতে চায় না। এখন আলোচিত বিষয় হলো হাইপারসনিক অস্ত্র- গাণ্ডিব। নইলে প্যানিকই সৃষ্টি করা যাবে না। এই যে গণ্ডায় গণ্ডায় অবসলিট তথা অচল ট্যাঙ্ক ইউক্রেনকে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করছে পশ্চাতিনারা (কালেকটিভ ওয়েস্ট) তাতে কার পশ্চাৎ তারা বুঁজাবে ঠাহর করা যাচ্ছে না। রাশিয়া, চীন ও উত্তর কোরিয়ার হাতে এখন সব মাখাস্ত্র, যেসব অস্ত্রের ক্যাপাসিটির তোলাদণ্ড হচ্ছে মাখ (১ মাখ সমান শব্দের গতিবেগ)। ওরা যথাক্রমে ২০, ১৯ ও ১৬ মাখের কারবারি। মাখীয় অস্ত্রের মু-ুতে থাকে এখন পরম ব্রহ্মাস্ত্র- ভুন্ডারভুন্ডারভুন্ডারবাফেন। তা ট্যাঙ্কজাতীয় এসব নন-সনিক অস্ত্রে কি কাজ হবে! ব্রহ্মাস্ত্রেও যখন কাজ হতে চায় না। আর ইউক্রেনের মতো গা-ু বাহিনীর হাতে পড়লে গাণ্ডিবের কী হবে?
জার্মান সেনাবাহিনীর ব্রিগেড জেনারেল এরিক ভাডের ভাষ্য-
‘
‘as did the Inspector General of the German Armed Forces, General Eberhard Zorn, who, like me, warned against overestimating the Ukrainians’ regionally limited offensives in the summer months. Military experts – who know what’s going on among the secret services, what it’s like on the ground and what war really means – are largely excluded from the discourse. They don’t fit in with media opinion-forming. We are largely experiencing a media synchronization that I have never experienced in …Military operations must always be coupled with attempts to bring about political solutions. The one-dimensionality of current foreign policy is hard to bear. She is very heavily focused on weapons. The main task of foreign policy is and remains diplomacy, reconciliation of interests, understanding and conflict management. … again as to what should happen with the deliveries of the tanks at all. To take over the Crimea or the Donbass, the martens and leopards are not enough. In eastern Ukraine, in the Bakhmut area, the Russians are clearly advancing. They will probably have completely conquered the Donbass before long. One only has to consider the numerical superiority of the Russians over Ukraine. … . We expect that the outcome of this conflict will reshape Europe’s outdated security architecture and force a realignment that will mark the end of the unipolar era.
(Ukraine: Is the Hammer About to Fall?; MIKE WHITNEY , JANUARY 17, 2023; https://www.unz.com)
লোগানস্ক ও দনেৎস্কে ফ্রন্টলাইন-পরিস্থিতি রাশিয়ার অনুকূলে। একটু একটু করে এগুচ্ছে রুশ ও দনবাস মিলিশিয়ারা। বাখমুত ও সলেদারে তাদের অগ্রগতি ভালো। সলেদার এরই মধ্যে রাশিয়ার দখলে গেছে। বাখমুতও যাবে যাবে করছে। পুতিন কী যেন একটা করতে যাচ্ছেন। প্রতিদিন ইউক্রেনের ২৫০-৩০০ সেনা মারা যাচ্ছে বলে রাশিয়ার এবং কিছু বিদেশি সংবাদ মাধ্যমে বলা হচ্ছে। সোলেদার রুশ প্রাইভেট মিলিটারি বাহিনী ভাগনার পিএমসির দখলে। পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমে সেসব খবর অবশ্য নেই। পুতিনবাহিনী হারবে না এটাই মনে হচ্ছে। পাশ্চাত্যের কোনো সচেতন লেখক একথা বলছেন না যে, পুতিন উদ্যম হারিয়েছেন। তবে একথা ঠিক খেরসন সিটি এবং আরও কিছু এলাকা থেকে রুশ বাহিনী পিছু হটেছিল। পশ্চিমা প্রেস্টিটিউট বলছে, রাশিয়া পিছটান দিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক অভিযান বলছে অন্য কথা- এটা তাদের কৌশল। যেমন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একি ভাড বলেছেন। রাশিয়ার বাহিনীর শীতকালীন ভুন্ডারঅপারেশনে কী যে হয়! কেয়ামতের লক্ষণ দেখছেন অনেকেই- যেন আজবদেশে গিয়ে অ্যালিস খরগোশের গর্তে বসে ওয়ার ভিডিও দেখছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লেনিনগ্রাদ, স্তালিনগ্রাদে কী ঘটেছিল তার কথা আমরা ইতিহাসের পাতা থেকে জানি। এবার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় তেমন কিছু ঘটতে যাচ্ছে। ইউক্রেনের পাল্টা হামলায় ক্রিমিয়া কী হবে তা না হয় ড্রিমস্লিপের মধ্যেই থাকুক। কিংবদন্তির রাশিয়ান মাইটের সামনে ছায়ার যুদ্ধে (প্রক্সি যুদ্ধে) যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো ও ইইউ জিততে পারবে কি?
মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল মাইক মিলির ভাষ্য, চলমান যুদ্ধে জেতা ইউক্রেনের জন্য আসলেই কঠিন। আর যুদ্ধটা হয়তো এ বছর শেষ হবে না। রাশিয়া হয়তো জিতবে কিন্তু এ জেতাতেও বর্তমান বৈশ্বিক দ্বন্দ্বের অবসান সম্ভবত হবে না। মার্কিন আধিপত্যের ম্যাট্রিক্স ফিল্ডে অনেকগুলো সমীকরণ থেকে যাচ্ছে। সবগুলোর সমাধান হওয়া দরকার। ইউক্রেনের যুদ্ধের অভিঘাত ডাইনে-বায়ে অনেক অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে। জেলেনস্কির সাবেক উপদেষ্টা আলেক্সি অরেস্তোভিচ বলেছেন, এ যুদ্ধে ইউক্রেন জিতবে না। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের (ওরফে বোজো) ভুল একটা হয়েছিল ২০১৪ সালেই, যার জের টানছে পশ্চিমা বিশ্ব। ইউক্রেন যখন গত মার্চে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে পৌঁছাতে যাচ্ছিল তখন বোজো প্রায় গোপনে ইউক্রেনে এসেছিলেন। এবং ধারণা করা চলে তিনিই ওয়ান্ডারল্যান্ডের অ্যালিস। খরগোশের গর্তে বসে কী যেন কী করলেন, আর বুচায় হত্যাকাণ্ড ঘটে গেল। ইউক্রেনের শান্তি প্রক্রিয়াও থেমে গেল। নোয়াম চমস্কিকে এখন বলতে হচ্ছে- লেখক :
World moving closer to ‘irreversible’ disaster – The world is teetering on the brink of the abyss due to an increased risk of nuclear war, failure to address environmental challenges, and diminished ability to tackle problems rationally, world-renowned philosopher and linguist Noam Chomsky told RT. (https://www.rt.com)
লেখক: সাংবাদিক
সাম্প্রতিককালে দেশের অর্থনীতিতে বিদ্যমান সংকটগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান বিপুল পরিমাণে অর্থ পাচার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ^জুড়ে যখন চলছে ডলার সংকট, সেই মুহূর্তে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে আর অন্যদিকে চলছে অর্থ পাচার। বছরের পর বছর ধরে দেশের রাজনীতিতে বহুল উচ্চারিত এক প্রপঞ্চ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, জনপ্রশাসন থেকে শুরু করে সরকারের নানামুখী উন্নয়ন কর্মকান্ডের সবখানেই যেন অনিয়ম ও দুর্নীতি দিন দিন আরও বেশি কাঠামোগতভাবে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। গত বছর ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় বাধা ছিল দুর্নীতি। রবিবার প্রকাশিত বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ ২০২২ শীর্ষক উদ্যোক্তা-জরিপ বলছে, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ব্যবসার পরিবেশের অবনতি হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা সংকট মেটাতে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার জন্য সংস্থাটির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সমঝোতা হয়েছে। মোট সাত কিস্তিতে তারা বাংলাদেশকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে। তবে জ্বালানি-বিদ্যুতের মতো বেশ কিছু সেবা খাতে ভর্তুকি কমানোসহ আইএমএফের নানা ধরনের শর্ত ও আলোচনার কথা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। আইএমএফের ঋণের বিষয়ে সিপিডি বলেছে, দেশের প্রয়োজনকে বিসর্জন দিয়ে চাপ ঘাড়ে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছিলেন, ‘আইএমএফ নিজস্ব নীতি বিশেষ করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি ও অর্থ পাচার প্রতিরোধে কার্যকর কৌশলগত বিষয়ে মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং বিভিন্ন শর্ত পূরণ করতে গিয়ে ইতিমধ্যে অতিরিক্ত চাপে থাকা দেশের সাধারণ মানুষের ওপর বৈষম্যমূলক প্রভাবের বাড়তি বোঝা তৈরি হবে।’
দুর্নীতির পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের সামনে মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতির মতো যেসব নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ যুক্ত হচ্ছে। পুঁজিবাজারের দুর্বলতা ‘ওপেন সিক্রেট’ বিষয়। সিপিডির জরিপে অংশ নেওয়া ৪৪ দশমিক ১ শতাংশ বলেছেন, বিভিন্ন মাধ্যমে মুদ্রাপাচারের ঘটনা বেড়েছে। টাকা পাচারের কারণে ব্যবসা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে মুদ্রাপাচার রোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। অর্থ পাচার ও হুন্ডি সবসময় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ (৬৪ দশমিক ৬ শতাংশ) দুর্নীতিকে ব্যবসায় বড় বাধা উল্লেখ করেন। কোন কোন জায়গায় দুর্নীতি হচ্ছে সেটিও জরিপে উঠে এসেছে। ৬৪ শতাংশ কর্মকর্তা কর প্রদানে, ৫৪ শতাংশ ব্যবসায়িক লাইসেন্স নিতে, ৪৯ শতাংশ গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ নিতে এবং ৭৫ শতাংশ কর্মকর্তা আমদানি-রপ্তানিতে দুর্নীতির কথা বলেছেন। ৪৪.৬ শতাংশ কর্মকর্তা দুর্নীতির পাশাপাশি ব্যবসার জন্য দুর্বল অবকাঠামো, ৪৩.১ শতাংশ ব্যাংকঋণের অপর্যাপ্ততা ও অদক্ষ প্রশাসন, ৩৮.৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিরতা, ৩৫.৪ শতাংশ নীতির ধারাবাহিকতার অভাব, ২৬.২ শতাংশ জটিল করব্যবস্থা ও উচ্চ করহার, ১৬.৯ শতাংশ দুর্বল নীতিবোধ ও সরকারে স্থিতির অভাব, ১৫.৪ শতাংশ অপরাধ ও উদ্ভাবনে অপর্যাপ্ত সক্ষমতা এবং ১০.৮ শতাংশ কর্মকর্তা শ্রম-সংক্রান্ত নিয়মনীতির সীমাবদ্ধতাকে সমস্যা বলেছেন।
দুর্নীতির কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। সেবার মূল্যও বাড়ছে। এই ঘানি সাধারণ মানুষকেই টানতে হয়। নানা স্তরে দুর্নীতি ব্যবসার পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ করে নীতি, কৌশল ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বড় সংস্কার আনতে হবে; স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দক্ষতার মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; নাগরিক ও ব্যবসায়িক সেবা নিশ্চিত করতে হবে; ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; আর্থিক খাতে সংস্কার আনতে হবে এবং নির্বাচনী ইশতেহারে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করতে হবে। সুপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রক্রিয়ার আওতায় বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তথা অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটিয়ে দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর দক্ষতা কাজে লাগানো গেলে আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির স্বপ্ন বাস্তবে রূপলাভ করবে, এ কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়। তবে সমস্যা হলো, অবকাঠামোগত সমস্যা, দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা এবং অন্যান্য কারণে শিল্প তথা ব্যবসার বিকাশ ঘটছে মন্থরগতিতে। বিনিয়োগে হচ্ছে নিরুৎসাহিত। ফলে আমরা ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছি। বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি, আর্থিক খাতের নাজুক অবস্থান, সামাজিক অস্থিরতা, দেশ থেকে টাকা পাচার এসব বেড়েই চলেছে। এসব সমস্যার সমাধান না হলে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত হওয়ার যে স্বপ্ন দেখছে, তা অর্জন করা কঠিন হবে। আর্থিক খাতের ব্যাপক সংস্কার করে, সামাজিক অস্থিরতা নিরসন করে, বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটিয়ে, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রেখে এবং সর্বোপরি দুর্নীতি রোধ করে এ অবস্থার উত্তরণ ঘটানো সম্ভব।
১৯২১ সালের ৩১ জানুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার নাগবাড়ির এক জমিদার পরিবারে জন্ম হয় আবু সাঈদ চৌধুরীর। বাবা আবদুল হামিদ চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের স্পিকার ছিলেন। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ইংল্যান্ড থেকে ব্যারিস্টারি পাস করেন। ১৯৪৮ সালে ঢাকা হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬১ সালে হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন। ১৯৭১ সালে জেনেভায় অবস্থানকালে পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যার প্রতিবাদে উপাচার্য পদে ইস্তফা দেন। মুজিবনগরে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ দূত হিসেবে জেনেভা থেকে লন্ডন যান এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে সচেষ্ট হন। দেশে ফিরে ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালের ১০ এপ্রিল পুনরায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। পরে বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক বিশেষ দূত এবং বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায় বন্দর ও নৌপরিবহনমন্ত্রী হয়েছিলেন। এরপর খোন্দকার মোশতাক আহমদের মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি নির্বাচিত হন। আবু সাঈদ চৌধুরী ১৯৮৭ সালের ২ আগস্ট লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন।
ইংরেজি সাহিত্যের পুরনো একটি ক্ল্যাসিক উপন্যাস চার্লস ডিকেন্সের গ্রেট এক্সপেক্টেশন থেকে মিস হাভিশামের একটি স্থির দৃশ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাইবেদিতে পড়ে থাকা এক নববধূকে দেখা গেল তার বাকি বছরগুলোর জন্য স্থির সময়ের মধ্যে আটকে থাকতে, সেই থেকে তিনি সব সময় বিয়ের পোশাক পরা, একটি স্থিরদৃশ্যে আটকা পড়ে আছেন, যখন কি না তার পৃথিবী ভেঙে পড়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওপর বিবিসির দুই পর্বের তথ্যচিত্রটিও আমার ওপর একই ধরনের প্রভাব ফেলেছিল। মনে হলো পুরনো লেস আর সাদা জামা পরা সেই নববধূর দিকে তাকিয়ে আছি আমি, সময়ের সঙ্গে যা বড় বেমানান। আমি তা-ই ব্যাখ্যা করব এ লেখায়।
আমার মতো কাক্সিক্ষত ও বিধ্বংসী দর্শকদের কাছে তথ্যচিত্রটি নতুন তদন্ত প্রতিবেদন হিসেবে আগাম বেচা হয়েছিল, যা নতুন তথ্য সামনে আনবে এবং এমন কিছু দেখাবে, যা আমরা আগে দেখিনি। উদার বামপন্থি বেশ কিছু মানুষের চমকপ্রদ অংশগ্রহণ ছিল, যাদের আমি সব সময়ই প্রশংসা করে থাকি এবং ভবিষ্যতেও করব, এবং আমার নায়ক হিসেবেই থাকবেন তারা। অরুন্ধতী রায়, যে লেখিকা কখনো তার কথার বরখেলাপ করেননি। আকার প্যাটেল, একজন অ্যাক্টিভিস্ট এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভারতীয় প্রধান। তিনি বেশ ভালোভাবেই তার নিরলস লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। সিদ্ধার্থ ভারদারাজন, আমার প্রিয় সাংবাদিকদের একজন এবং তিনি সর্বশেষ স্বাধীনভাবে দাঁড়িয়ে থাকা প্রেস স্পেসের প্রতিষ্ঠাতা। এ ছাড়া দ্য ক্যারাভান ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতা হর্তোষ বল। ক্রিস্টোফ জাফরেলট, হিন্দু অধিকার নিয়ে প্রচুর গবেষণা ও লেখালেখি করা একজন সুপরিচিত শিক্ষাবিদ। এমন সেরা ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেওয়া সত্ত্বেও, বিবিসি ওই তথ্যচিত্রে তাদের এমনভাবেই তুলে ধরেছে যে নতুন কিছুই বলা হয়নি।
তথ্যচিত্রটির জন্য ক্ষমতায় থাকা শাসকরা নিজেরাই দুর্ভোগের শিকার বলে আরও একবার অপপ্রচার চালানোর সুযোগ পাবে। এতে যুক্ত বামপন্থিদের সমালোচনাকেও তারা নিজস্ব প্রয়োজনে কাজে খাটানোর সুযোগ পাবে। বিবিসি কার্যত ভারতের সেরা অ্যাক্টিভিস্ট, লেখক ও সাংবাদিকদের যারা তেজি, সজীব ও গতিশীল তথ্যচিত্রটিতে তাদেরই নিয়েছে। তাদের পুনরাবৃত্তিমূলক ও গৎবাঁধাভাবে একসঙ্গে এমনভাবে গেঁথে দিয়েছে যে দেখে মনে হয় যেন তারা স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, বিবিসি মিস হাভিশামের ছবিটির পুনরাবৃত্তি করেছে।
তথ্যচিত্রটির প্রথম পর্বের কথা বলা যাক। মোদি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সেই ২০০২ সালে ফিরে যায় ক্যামেরা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে সে সময়েই গণহত্যার ঘটনাটি ঘটে। অশুভ সংগীত বাজতে থাকে এবং এ সময় একটি অন্ধকার কম্পিউটার স্ক্রিন সামনে আসে। বড় ধরনের একটি তথ্য উদঘাটন হয় তাতেএখন আর গোপন নয় এমন একটি কূটনৈতিক বার্তা এটি, যেখানে একজন ব্রিটিশ কূটনীতিক অনুমান করেছেন, মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতার জন্য মোদি দায়ী এবং তিনিই পুলিশকে পিছিয়ে যেতে বলেছেন এবং জনতাকে তাদের কাজ করতে দেওয়ার আহ্বান জানান। একজন অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক এবং সাবেক ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিব জ্যাক স্ট্রের মতামত ছাড়া এই দাবির সমর্থনে কোনো নতুন প্রমাণ উপস্থাপন না করে বিবিসি ভারতে বিজেপি এবং তার মুখপাত্রদের প্রশ্ন তোলার সুযোগ করে দিয়েছে যে, ২০ বছর আগের একজন অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিকের কণ্ঠস্বর কেন সর্বজ্ঞ ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে? বিবিসি যদি কূটনৈতিক বার্তা ব্যবহার করে দেখাতে পারত যে, যেই ব্রিটেন এবং ইউরোপ মোদিকে রক্তপাতের জন্য দায়ী করেছিল সেই তারাই কীভাবে পাঁচ বছর না যেতেই তার গলা থেকে বড়শির এই আংটা খুলে নিয়েছিল, তাহলে তারা গল্পের নতুন মোচড় দেখাতে পারত।
গোঁধরা-উত্তরহীন প্রশ্ন
২০০২ সালের সহিংসতার বিষয়টি যখনই আলোচনায় এসেছে, বিজেপি সব সময় বলতে চেয়েছে যে, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আগের দিন একটি ট্রেনের বগি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, যেখানে ভিএইচপির ৫৯ জন হিন্দু কর সেবককে পুড়িয়ে ছাই করা হয়েছিল। বিবিসি এ বিষয়ে আরও কিছু কাজ করতে পারত, যা বিজেপিকে কঠিন কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি করত। প্রথমত, ৫৯ জন করসেবক বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণ করছিলেন। ট্রেনে আরও অনেকে ছিলেন যারা টিকিট কেটে উঠেছিলেন এবং জীবিত নামার সুযোগ পেয়েছিলেন। তারা আসলে কি দেখতে পেয়েছিলেন? তাদের কথা কেন ধামাচাপা দেওয়া হয়? যদি মুসলমানরাই আসলে ওই বগিতে আগুন দিয়ে থাকে, তবে সেই জীবিতদের কথা শোনার ক্ষেত্রে তো ভয়ের কিছু থাকার কথা নয়।
তথ্যচিত্রে পুড়ে যাওয়া ট্রেনের বগিতে বেশি মনোযোগ দিয়ে বিজেপির অস্বস্তি আরও বাড়ানো যেত। পুড়িয়ে ফেলার একটি তদন্ত সেদিনের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার করেছিল। আরও একটি তদন্ত হয়েছিল কয়েক বছর পরে, বিরোধী নেতা লালু যাদব যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন। উভয় তদন্তকে পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে দেখা হয়ে থাকে। বিবিসি কি এখানে কিছু মৌলিক প্রশ্ন ছুড়ে দিতে পারত না? নির্ধারিত স্টেশনের আগেই চেইন টেনে কেন ট্রেন থামানো হলো? মুসলমান এক মেয়ের শ্লীলতাহানি কি আসলেই করা হয়েছিল? এই গল্পগুলোর কী হয়েছিল এবং কেন এসব বিষয় হারিয়ে গেল?
এমনকি বিবিসি যদি দ্রুত গুগল সার্চও করতে চাইত, তাহলে ভিএইচপি সদস্যদের গল্প জানা যেত, যারা ট্রেনে অযোধ্যা (উত্তর প্রদেশে) থেকে গুজরাটে ফিরছিলেন। সেই দিন থেকে, ভিএইচপির এই সদস্যরা হয় তাদের সাংগঠনিক লোকদের আচরণে হতাশ কিংবা ভিএইচপি পরিবারে তাদের অবস্থান সম্পর্কে অসন্তুষ্ট ও বিভ্রান্ত বোধ করছে। কেন তাদের বিবেচনায় আনা হবে না?
ভারসাম্যের কর্মকাণ্ড
এবার আসি তথ্যচিত্রটির দ্বিতীয় পর্বে। এটি ভারতের গণপিটুনি দিয়ে শুরু২০১৫ সালে উত্তর প্রদেশের দাদরিতে, আখলাকের, এবং ২০১৭ সালে ঝাড়খণ্ডে, আলিমুদ্দিন আনসারির। এ তথ্যচিত্র মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক অপরাধের বিষয়ে মোদির নীরবতার সঙ্গে ২০১৯ সালে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরকে বিকল ও বিভক্ত করা, হিন্দুদের প্রতি পক্ষপাতমূলক নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) তৈরি, সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভকে হিংসাত্মকভাবে দমনকে সম্পর্কযুক্ত করে। যথেষ্ট মজাদারভাবে এই তথ্যচিত্রের বিরুদ্ধ সমালোচনাও যুক্ত করা হয়েছে অরুন্ধতী রায়ের কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘কেন আমি আপনার সঙ্গে এই তথ্যচিত্রে কথা বলব, শুধু যাতে কোথাও একটি রেকর্ড থাকে যে আমরা সবাই এর সঙ্গে একমত নই। তবে এ কোনোভাবেই সাহায্যের আহ্বান নয়, কারণ কোথাও থেকে কোনো সাহায্যই আসবে না।’
হিন্দু চরমপন্থিদের সহিংসতা ও ধর্ষণের আহ্বান এবং দিল্লির দাঙ্গায় পুলিশ সদস্যের লাথিতে মুসলমান হত্যার ভিডিওফিল্মটির সবচেয়ে জঘন্য এবং দেখা অসম্ভব অংশটি বিরোধী-তথ্য ও বাইট দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করা হয়েছে। আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের সাক্ষ্য এবং নিহত ফাইজানের মায়ের কথার পাশাপাশি বিজেপি নেতা স্বপন দাশগুপ্তের বিদ্বেষপূর্ণ এবং আত্মতুষ্ট কথাবার্তা যুক্ত করা হয়েছে। সেখানে তিনি আসলে দিল্লি দাঙ্গায় যে সহিংসতা হয়েছে তাকেই অস্বীকারের অপচেষ্টা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বড় পরিসরে ভাবলে, দিল্লির দাঙ্গা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। তবে মিডিয়ার কাছে তা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ এর অর্থ হচ্ছে কম পরিশ্রমেই আপনি হাতের নাগালে ভালো ফুটেজ পেয়ে যাচ্ছেন।’ এখন আমি যদি এই ফিল্ম তৈরি করতাম, আমি দাশগুপ্তের বক্তব্যর ফাঁপা দিকটি ফুটিয়ে তুলতে এর সঙ্গে সহিংসতার ফুটেজও সমান্তরালে তুলে ধরতাম। পুলিশ কর্র্তৃক মুসলিম পুরুষদের লাথি মেরে হত্যা এবং তাদের জাতীয় সংগীত গাইতে বলার ফুটেজ ব্যবহার করতাম। এরপর দর্শকরা মুখোমুখি হতেন দাশগুপ্তের ভয়াবহ সব অহংকারী কথাবার্তার, যা এই প্রশ্নকে সামনে আনেবিবিসি কি রুয়ান্ডা কিংবা আউশভিৎসের গণহত্যার ওপর তথ্যচিত্র বানানোর ক্ষেত্রে কুখ্যাত এসএসের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহার করে একই রকম ‘ভারসাম্য’ ধরে রাখার চেষ্টা করত?
এসব তথ্যচিত্র দিয়ে বিবিসি কী করতে চায়? তাৎক্ষণিকভাবে মনে আসে ১৯৬৫ সালে ইন্দোনেশিয়ায় গণহত্যার ওপর জোশুয়া ওপেনহাইমার নির্মিত দুই তথ্যচিত্রের কথা। যারা অপরাধী এবং তাদের কৃতকর্মের জন্য উল্লাস প্রকাশ করে থাকে, তাদেরই তিনি ক্যামেরায় তুলে ধরেছেন। তাদের ভাবনাকে ‘ভারসাম্য’ দেওয়ার কোনো চেষ্টা ছাড়াই তারা কারা তা দেখিয়ে দেয় তার তথ্যচিত্র দুটি। অ্যাক্ট অব কিলিং এবং দ্য লুক অব সাইলেন্সএই দুই তথ্যচিত্র ইন্দোনেশিয়ার রাজনীতিকে বেশ নাড়া দিয়েছিল। তথ্যচিত্র দুটি তৈরি ও প্রকাশের ক্ষেত্রেও দেশটির রাজনৈতিক মহল অংশীদার হয়েছিল। ভালো তথ্যচিত্র নির্মাণই শুধু এমন ভূমিকা রাখতে পারে।
যেখানে আঘাত লাগে সেখানে আঘাত করার উদ্দেশ্য নিয়েই এগোতে হবে। এজন্য অরুন্ধতী রায়, আকার প্যাটেল এবং সাফুরা জারগারদুই পর্বেও বিবিসির এ তথ্যচিত্রের নায়কদের মতোই আমাদের অবশ্যই সর্বব্যাপীভাবে অনুসন্ধিৎসু, সতেজ ও সাহসী হতে হবে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনটি মুসলমানদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট ছিল বলে সাফুরা জারগারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। এজন্য তাকে গর্ভবতী অবস্থায় ৭৪ দিনের জন্য কারাগারে কাটাতে হয়। আর বিবিসি কি না এ ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষায় ব্যস্ত।
লেখকঃ সাংবাদিক এবং ‘দ্য অ্যানাটমি অব হেইট’র লেখক। ভারতের উত্তর প্রদেশে বসবাস ও কর্মরত। ‘দ্য এআইডিইএম’ থেকে অনুবাদ : রথো রাফি
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের আলো ঝলমলে অডিটোরিয়ামে দেশি-বিদেশী মডেল ভাড়া করে এনে সাড়ম্বরে ঘোষণা করা হয়েছিল প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক নারী ফুটবল আসর ওমেন্স সুপার লিগের। সিনে জগতের তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে র্যাম্প করতে করতে প্রত্যাশার ঘুড়িটা দূর আকাশে উড়িয়েছিলেন সাবিনা-সানজিদারা। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন এখন তারা। ফুটবলপ্রেমীদের তাদের নিয়ে অসীম আগ্রহকে পুঁজি করে কে-স্পোর্টস আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করে ফায়দা লুটতে। তবে দিন যত গড়িয়েছে, মেয়েদের স্বপ্ন ধূসর হয়েছে। এখন তো তা মিলিয়ে গেছে বহুদূরে।
কে-স্পোর্টস-বাফুফের কর্তারা বুঝেছেন, তাদের লেখা চিত্রনাট্য আর বাস্তবতায় বড্ড ফাঁরাক। তাই তারা বারবার টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখ দিয়েও আলোচিত টুর্নামেন্টকে মাঠে নিয়ে যেতে পারেননি। সর্বশেষ ১০ জুন আসর শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সেটাও মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই হতাশা ছাঁপিয়ে নারী ফুটবলারদের মনে ভর করেছে রাজ্যের ক্ষোভ।
কে-স্পোর্টস আর বাফুফের কর্তারা ভেবেছিলেন এমন একটা টুর্নামেন্টের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হামলে পড়বে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর নেপালে সাফ শিরোপা জয়ের পর মেয়েদের নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই আসলে স্বপ্নবাজ করে তোলে সালাউদ্দিন-মাহফুজা আক্তার-ফাহাদ করিমদের। তবে হয়েছে উল্টো। সেটাই যে হওয়ার কথা! কে-স্পোর্টস কিংবা বাফুফে, দুটি প্রতিষ্ঠানই যে এখন ভীষণভাবে ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। এর মাঝে অগোচরে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যেটা কখনই প্রত্যাশিত ছিল না। কে-স্পোর্টস আর বাফুফের দেখানো স্বপ্নে বুদ হয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলাররা। এমন একটা টুর্নামেন্টে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন তারা। এমনিতে ঘরোয়া ফুটবল খেলে সেভাবে পারিশ্রমিক জুটে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হলে একটা আকর্ষণীয় পারিশ্রমিকের হাতছানি ছিল। তারচেয়েও বেশি ছিল নানা দেশের নামী-দামী ফুটবলারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুবর্ণ সুযোগ। দারুণ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুখ বুজে মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন দিনের পর দিন। এর মাঝেই তারা দেখেছেন বাবার মতো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের বিদায়। বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ন্যায্য দাবী পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার পরও তারা বাফুফের কঠোর অনুশাসন মেনে দুঃসহ গরমে সকাল-বিকাল ঘাম ঝড়িয়েছেন। এরপর যখন দেখলেন এই স্বপ্ন বারবার হোচট খাচ্ছে কে-স্পোর্টসের ব্যর্থতা আর বাফুফের অদূরদর্শীতায়, তখন আর মুখ বুজে থাকতে পারলেন না। হতাশার কথা জানাতে গিয়ে অগোচরে তাদের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এসেছে ক্ষোভের আগুন।
অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে বাফুফে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় পাঁচ দিনের ছুটি। বৃহস্পতিবার রাতে বাসে করে সাতক্ষীরাগামী সাফজয়ের অগ্রনায়ক সাবিনা খাতুন দেশ রূপান্তরকে মুঠোফোনে বলছিলেন, 'ওমেন্স সুপার লিগ স্রেফ আমাদের আবেগ নিয়ে খেললো।' একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'প্রথমত সাফের পর কোন খেলা নেই। তারপর এই লিগ মেয়েদের নিয়ে দুই দফা এত কিছু করলো, এত আশা দিলো, মেয়েরা খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। আর সব থেকে বড় ব্যাপার বিদেশী খেলোয়াড় যারা দক্ষিণ এশিয়ার, তাদের নিয়ে আমি নিজেও কাজ করছিলাম। তাদের কাছে এখন আমার সম্মান কই থাকলো! বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়েরা অনেক আশায় ছিল। কিন্তু... । এটা নিয়ে অবশ্য মেয়েরা অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আমিও কোন আশা দেখছি না।'
সতীর্থদের সংগে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে বাড়ির যেতে যেতে জাতীয় দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা বলছিলেন, 'আসলে কিছু বলার ভাষাই হারায় ফেলেছি। একটা টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আমরা কঠোর অনুশীলণ করছিলাম। আশা ছিল খেলবো। এখন সেটা হচ্ছে না বলে খুব কষ্ট লাগছে। যখন শুনলাম লিগটা হবে না, তখন মনের অবস্থা কেমন হতে পারে, বুঝতেই পারছেন।'
সাফের পর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সিনিয়র ফুটবলাররা। এ নিয়ে ভীষণ হতাশ সানজিদা বলেন, 'নয়টা মাস ধরে অপেক্ষায় আছি খেলার। প্রীতি ম্যাচ বলেন কিংবা কোন টুর্নামেন্ট, একটা ম্যাচও আমরা খেলতে পারিনি সাফের পর। অথচ আমাদের সঙ্গে যারা সাফে খেলেছে, তারা প্রায় সবাই পাঁচটা-ছয়টা করে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে এর মধ্যে।' মেয়েদের সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই খেলার কথা ছিল। অথচ বাফুফে অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে তাদের খেলতে পাঠায়নি। সানজিদা বললেন, 'আমরা আসলে হতাশ হতেও ভুলে গেছি। বারবার টুর্নামেন্টে খেলার কথা বলা হয়, আবার সেটা বাতিল হয়। এরকমটা হতে হতে আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি।'
হতাশা, বঞ্চনায় বাফুফের চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেছেন নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। প্রিয় কোচের জন্য কষ্ট পান সানজিদা, 'ছোটন স্যারের হাত ধরেই আমার এখানে আসা। তার কাছেই আমার ফুটবলার হয়ে গড়ে ওঠা। তিনি চলে গেছেন। এতে খুব কষ্ট পাই। তিনি আমাদের অনেক আদর-যত্ন করতেন। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয়, ঠিক তেমন সম্পর্ক ছিল।'
১৩ জুন সাবিনা-সানজিদাদের ক্যাম্পে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাফুফে। বিকল্প নেই বলে তারা হয়তো ফিরবেন। তবে ফেরার সময় তাদের চোখে থাকবে না বড় কোন স্বপ্ন। সেটা দেখাই বারণ। কে-স্পোর্টস আর বাফুফে মিলে যে মেয়েদের সব স্বপ্ন গলা টিপে মেরে ফেলেছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর মেয়ের জামাতাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য প্রটোকল দেওয়ার একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অনেকেই চিঠিটি শেয়ার করে সমালোচনা করছেন। কেউ বলছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই বলে কথা! কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই প্রটোকল কোন হিসেবে পান? আবার কেউবা বলছেন, একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে!
জানা যায়, গত ৬ জুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। পরে ৭ জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালককে চিঠিটি পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে চিঠিটির সত্যতাও পাওয়া যায়।
মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার উপসচিব ড. অমিতাভ চক্রবর্ত্তী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হকের মেয়ের জামাতা মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ৯ জুন শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নম্বর ইকে ৫৮৬ যোগে দুবাই থেকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। তাকে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের অনুমতিসহ মন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার মশিউর রহমানকে কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশন এবং বিমানবন্দরের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য বোর্ডিং ব্রিজ পাস দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিমানবন্দর পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য পৃথক লাউঞ্জ রয়েছে। যেটাকে ভিআইপি লাউঞ্জ বলা হয়। ভিআইপি লাউঞ্জ কারা ব্যবহার করতে পারবেন এমন একটি স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।
লাউঞ্জ রজনীগন্ধা, বকুল, দোলনচাঁপা ও চামেলি নামে বিমানবন্দরে ৪টি ভিআইপি লাউঞ্জ রয়েছে। রজনীগন্ধা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ভিআইপিরা ব্যবহার করেন। বকুল ব্যবহার করেন অতিরিক্ত সচিব বা তার পদমযার্দার ও সমমর্যাদার ব্যক্তিরা। দোলনচাঁপা ব্যবহার করেন সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর চামেলি দিয়ে একুশে পদক পাওয়া ব্যক্তি, সংবাদপত্রের সম্পাদক ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রবেশ ও বের হতে পারেন।
আজ ৯ জুন (শুক্রবার)। ভাগ্যরেখা অনুযায়ী আপনার আজকের দিনটি কেমন কাটতে পারে? ব্যক্তি, পারিবারিক ও কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে কী বলছে জ্যোতিষশাস্ত্র? এ বিষয়গুলো সম্পর্কে যারা দিনের শুরুতেই কিছুটা ধারণা নিয়ে রাখতে চান তারা একবার পড়ে নিতে পারেন আজকের রাশিফল।
মেষ : ২১ মার্চ-২০ এপ্রিল
জাতক এ সপ্তাহে শত বছরের পুরনো কেনো বস্তুর সন্ধান লাভ করবেন। কষ্টিপাথরের মূর্তি, অলংকার বা কোনো অমূল্য ধর্ম গ্রন্থের সন্ধান পেতে পারেন।
বৃষ : ২১ এপ্রিল-২০ মে
জাতকের এ সময়টায় সন্তান, স্ত্রী অথবা বন্ধু-বান্ধবীর কারণে প্রভূত ক্ষতি হতে পারে। মূল্যবান দ্রব্যাদির বিষয়ে একটু সাবধান হোন।
মিথুন : ২১ মে-২০ জুন
আপনার এ সপ্তাহে অর্থ ভাগ্য ভালো। জাতকের মঙ্গল লগ্ন কোনো প্রতিযোগিতামূলক জীবিকায় প্রলুব্ধ করবে। যেমন, নেভি, আর্মি বা বৈমানিক ইত্যাদি।
কর্কট : ২১ জুন-২০ জুলাই
জাতকের হঠাৎ কোনো দলিল-দস্তাবেজ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। লোভ নয়, মালিককে ফিরিয়ে দেওয়াই মানুষের কাজ।
সিংহ : ২১ জুলাই-২০ আগস্ট
মঙ্গল ও রবির অবস্থানগত কারণে সিংহের ক্রোধ জাগ্রত হতে পারে। মেয়েরা রাগ করে বিপথে যাবেন না। অযথা আপনার অমূল্য বাচ্চাদানি বিনষ্ট হবে।
কন্যা : ২১ আগস্ট-২২ সেপ্টেম্বর
জাতকের এ সপ্তাহটা শুভ। তবে অযথা প্রশাসনের বিরুদ্ধ কোনো কাজে জড়াবেন না।
তুলা : ২৩ সেপ্টেম্বর-২২ অক্টোবর
জাতকের গ্রহগণ সৌভাগ্যের দ্বার মেলে ধরবে। সহসা দয়িতার কারণে অর্থপ্রাপ্তি হতে পারে।
বৃশ্চিক : ২৩ অক্টোবর-২০ নভেম্বর
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ইন্দ্রিয় তাড়নায় জাতক অবৈধকর্মে লিপ্ত হতে পারেন। অনুঢ়ারা অর্থোপার্জনে আত্মীয়-স্বজনদের সহযোগিতা লাভ করবেন।
ধনু : ২১ নভেম্বর-২০ ডিসেম্বর
জাতকের অর্থ ও বন্ধু জুটবে। বিদেশ ভ্রমণ যোগ বিদ্যমান। তবে ভ্রমণে সাবধানতা অবলম্বন করাই শ্রেয়।
মকর : ২১ ডিসেম্বর-১৯ জানুয়ারি
জাতকের জন্মকু-ুলীতে শনি কেন্দ্রস্থ হওয়ার ফলে, ক্রোধ বিপদ ডেকে আনবে। দুর্ঘটনায় রক্তপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। অতএব ক্রোধ সম্বরণ করুন।
কুম্ভ : ২০ জানুয়ারি-১৮ ফেব্রুয়ারি
জাতক জীবনে প্রতিপত্তি লাভ করবেন। সৃষ্টিশীল কাজে সুনামের যোগ রয়েছে। রাজদ্বারে স্বীকৃতি পাবেন।
মীন : ১৯ ফেব্রুয়ারি-২০ মার্চ
জাতক অপরিচিত নারী দ্বারা প্রলোভনের শিকার হতে পারেন। নিজেকে যতই স্মার্ট ভাবুন না কেন, পথিনারী বিবর্জিতা, ভ্রমণে নারীসঙ্গ পরিহার করুন।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভা আজ শুক্রবার। এদিন সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিধি মেনে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের (বিএবি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
তিনি ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস ২০২৩’ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে এ আহবান জানান।
‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও শুক্রবার (৯ জুন) বিএবি’র উদ্যোগে ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস ২০২৩’ পালিত হচ্ছে জেনে সন্তোষ প্রকাশ করে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, অ্যাক্রেডিটেশন ও বাণিজ্য পারস্পরিক আস্থার সূত্রে গাঁথা।
তিনি বলেন, মান নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধি-বিধান, মেট্রোলজি, নিরপেক্ষ ও স্বীকৃত সাযুজ্য নিরূপণ ব্যবস্থা একটি দেশের গুণগত মান অবকাঠামোর প্রাথমিক ভিত্তি, যা ব্যবসায়ী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যক্রমকে সহজতর করার পাশাপাশি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করতে সহায়তা করে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্ব বাণিজ্যে কারিগরি বাধা অপসারণে অ্যাক্রেডিটেশনের গুরুত্ব অপরিসীম। জাতীয় মান ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং ভোক্তা ও উৎপাদকের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে অ্যাক্রেডিটেশন বিশ্ব বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এ প্রেক্ষিতে দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য-‘অ্যাক্রেডিটেশন : সাপোটিং দ্যা ফিউচার অব গ্লোবাল ট্রেড’ যথার্থ ও সময়োপযোগী হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিএবি অ্যাক্রেডিটেশন সেবা প্রদানের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অবদান রাখছে। সংস্থাটি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে- এটাই সকলের প্রত্যাশা।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।
এক যুগের ব্যবধানে ঘটা সহিংসতার দুটি ঘটনায় করা তিন শতাধিক মামলা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর তদন্ত করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মামলাগুলো ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা এবং ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছিল। পাশাপাশি যেসব মামলা বিচারাধীন আছে সেগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশের সব ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।
পুুলিশের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ ও দুদক সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন করে তদন্ত করার সময় অহেতুক নিরপরাধ লোকজন যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। মামলায় যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২০০১ ও ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংসতা মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, রাজনৈতিক কারণে মামলা জিইয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সব সরকারের আমলেই এসব করা হচ্ছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছিল এই নিয়ে দেশে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই আসামি হয়েছেন। ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংতার ঘটনা মামলা হয়েছে এসব মামলা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন ও যেসব মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে সেগুলোর দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন ওইসব মামলা আদালতে ঝুলছে। এতে ভুক্তভোগীরা বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই যারা এসব অপকর্ম করেছে তাদের তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
সহিংসতা মামলার পাশাপাশি গত ১০ বছরের ব্যবধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ অনুসন্ধান করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি ও জামায়াত ২০১৩-২০১৫ সালে তান্ডবলীলা চালিয়েছে। ২০০১ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক অত্যাচার করা হয়েছিল। ওইসব মামলার বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাছাড়া আন্দোলনের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সারা দেশেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলা কী অবস্থায় আছে তাও পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল, তাদের বিচার করা হবে। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তবে নিরপরাধ কাউকে আমরা হয়রানি করছি না। ভবিষতেও করব না।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তাদের দমন করতে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে হবে না। এতে সাধারণ জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। আন্দোলনের নামে তারা জ্বালাও-পোড়াও করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলা আদালতে রয়েছে সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।
একই কথা বলেছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, হামলায় পেশিশক্তি যেমন থাকে, রাজনৈতিক শক্তিও থাকে। সাধারণভাবে এমন একটি ধর্মীয় জিগির তোলা হয় তখন অনেক ক্ষেত্রেই সব দল এক হয়ে হামলা চালায়। বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলার তদন্ত শেষ হয়নি তা সঠিকভাবে তদন্ত করতে হবে। ঢালাওভাবে রাজনৈতিক নেতাদের দোষারোপ করা যাবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখনো বেশ কিছু মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তাছাড়া জ্বালাও-পোড়াওয়ের অনেক মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। সবমিলিয়ে অন্তত তিন শতাধিক মামলা হবে। এসব মামলা সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পুুলিশের সব ইউনিটকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার না হওয়ায় আবারও একটি মহল দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, স্পর্শকাতর মামলায় দীর্ঘদিনে বিচারকাজ শেষ না হওয়ার কারণে বাদীপক্ষের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আসামিপক্ষ ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর এসব কারণে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঝুলে থাকা মামলাগুলো সক্রিয় করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তবে অহেতুক কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কারণ উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ‘হিউম্যান রাইট ফর পিস’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ২০০৯ সালের ৬ মে এসব নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয় আদালত। ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো. সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন দীর্ঘ সময় তদন্ত করে ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয়। তদন্তকালে কমিশন ৫ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ পেয়েছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত ১৮ হাজার নেতাকর্মী জড়িত ছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সহিংসতার পর বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ১৮৯টি, ঢাকায় ১৮৪টি, চট্টগ্রামে ৩৫০টি, রাজশাহীতে ১১৭টি এবং খুলনায় ৪০৫টি হামলার ঘটনা ঘটে। তাছাড়া হামলায় খুলনা বিভাগে ৭৩, ঢাকা বিভাগে ৯২, রাজশাহী বিভাগে ৫৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৭, বরিশাল বিভাগে ৩৮ এবং সিলেট বিভাগে ২ জন হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। তারমধ্যে ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, যশোর, নাটোর, রাজবাড়ী, পাবনা, ফেনী, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, দৌলতখান, চরফ্যাশন, লালমোহন, বোরহানউদ্দিন, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা এবং মৌলভীবাজার জেলায় হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড বেশি ঘটে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ২২১টি। এর মধ্যে ৫৭টি মামলা তদন্তাধীন। বাকিগুলোতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে পেট্রলবোমা হামলায় দেশজুড়ে মারা গেছে শতাধিক নিরীহ মানুষ। তারমধ্যে আগুনেই পুড়ে মারা গেছে ৪০ জনের মতো। এ সময় রেললাইন পর্যন্ত উপড়ে ফেলাসহ সরকারি সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ওই সময় মামলা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার। বেশির ভাগ মামলার তদন্ত হয়েছে। ৪৫০টি মামলা বিচারধীন। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আসামি। তারা কৌশলে বারবার শুনানির তারিখ নেয়, যে কারণে মামলা পিছিয়ে যায়। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, কয়েকটি তারিখ দেওয়ার পর মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হবে।
এছাড়া ৩১২টি মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে নাশকতা মামলার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ মামলার আসামি এলাকায় থাকেন না। তাদের নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করে অভিযোগপত্র দেওয়া তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে যায়। আর যেসব মামলায় আদালতে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোরও বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। তাছাড়া পলাতক আসামিদের বিষয়ে কিছু আইনি জটিলতার কারণেই দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুনরায় নাশকতা ঘটানো হতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এই নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তার জানামতে, মামলাগুলো নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা একাধিক সভা করেছেন।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, গত দশ বছরে দুদকে ‘অনেক ভিআইপির’ বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। ওইসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। অনুসন্ধানের জন্য আলাদা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।