
সাম্প্রতিককালে দেশের অর্থনীতিতে বিদ্যমান সংকটগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান বিপুল পরিমাণে অর্থ পাচার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ^জুড়ে যখন চলছে ডলার সংকট, সেই মুহূর্তে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে আর অন্যদিকে চলছে অর্থ পাচার। বছরের পর বছর ধরে দেশের রাজনীতিতে বহুল উচ্চারিত এক প্রপঞ্চ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, জনপ্রশাসন থেকে শুরু করে সরকারের নানামুখী উন্নয়ন কর্মকান্ডের সবখানেই যেন অনিয়ম ও দুর্নীতি দিন দিন আরও বেশি কাঠামোগতভাবে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। গত বছর ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় বাধা ছিল দুর্নীতি। রবিবার প্রকাশিত বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ ২০২২ শীর্ষক উদ্যোক্তা-জরিপ বলছে, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ব্যবসার পরিবেশের অবনতি হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা সংকট মেটাতে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার জন্য সংস্থাটির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সমঝোতা হয়েছে। মোট সাত কিস্তিতে তারা বাংলাদেশকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে। তবে জ্বালানি-বিদ্যুতের মতো বেশ কিছু সেবা খাতে ভর্তুকি কমানোসহ আইএমএফের নানা ধরনের শর্ত ও আলোচনার কথা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। আইএমএফের ঋণের বিষয়ে সিপিডি বলেছে, দেশের প্রয়োজনকে বিসর্জন দিয়ে চাপ ঘাড়ে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছিলেন, ‘আইএমএফ নিজস্ব নীতি বিশেষ করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি ও অর্থ পাচার প্রতিরোধে কার্যকর কৌশলগত বিষয়ে মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং বিভিন্ন শর্ত পূরণ করতে গিয়ে ইতিমধ্যে অতিরিক্ত চাপে থাকা দেশের সাধারণ মানুষের ওপর বৈষম্যমূলক প্রভাবের বাড়তি বোঝা তৈরি হবে।’
দুর্নীতির পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের সামনে মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতির মতো যেসব নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ যুক্ত হচ্ছে। পুঁজিবাজারের দুর্বলতা ‘ওপেন সিক্রেট’ বিষয়। সিপিডির জরিপে অংশ নেওয়া ৪৪ দশমিক ১ শতাংশ বলেছেন, বিভিন্ন মাধ্যমে মুদ্রাপাচারের ঘটনা বেড়েছে। টাকা পাচারের কারণে ব্যবসা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে মুদ্রাপাচার রোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। অর্থ পাচার ও হুন্ডি সবসময় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ (৬৪ দশমিক ৬ শতাংশ) দুর্নীতিকে ব্যবসায় বড় বাধা উল্লেখ করেন। কোন কোন জায়গায় দুর্নীতি হচ্ছে সেটিও জরিপে উঠে এসেছে। ৬৪ শতাংশ কর্মকর্তা কর প্রদানে, ৫৪ শতাংশ ব্যবসায়িক লাইসেন্স নিতে, ৪৯ শতাংশ গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ নিতে এবং ৭৫ শতাংশ কর্মকর্তা আমদানি-রপ্তানিতে দুর্নীতির কথা বলেছেন। ৪৪.৬ শতাংশ কর্মকর্তা দুর্নীতির পাশাপাশি ব্যবসার জন্য দুর্বল অবকাঠামো, ৪৩.১ শতাংশ ব্যাংকঋণের অপর্যাপ্ততা ও অদক্ষ প্রশাসন, ৩৮.৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিরতা, ৩৫.৪ শতাংশ নীতির ধারাবাহিকতার অভাব, ২৬.২ শতাংশ জটিল করব্যবস্থা ও উচ্চ করহার, ১৬.৯ শতাংশ দুর্বল নীতিবোধ ও সরকারে স্থিতির অভাব, ১৫.৪ শতাংশ অপরাধ ও উদ্ভাবনে অপর্যাপ্ত সক্ষমতা এবং ১০.৮ শতাংশ কর্মকর্তা শ্রম-সংক্রান্ত নিয়মনীতির সীমাবদ্ধতাকে সমস্যা বলেছেন।
দুর্নীতির কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। সেবার মূল্যও বাড়ছে। এই ঘানি সাধারণ মানুষকেই টানতে হয়। নানা স্তরে দুর্নীতি ব্যবসার পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ করে নীতি, কৌশল ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বড় সংস্কার আনতে হবে; স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দক্ষতার মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; নাগরিক ও ব্যবসায়িক সেবা নিশ্চিত করতে হবে; ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; আর্থিক খাতে সংস্কার আনতে হবে এবং নির্বাচনী ইশতেহারে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করতে হবে। সুপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রক্রিয়ার আওতায় বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তথা অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটিয়ে দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর দক্ষতা কাজে লাগানো গেলে আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির স্বপ্ন বাস্তবে রূপলাভ করবে, এ কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়। তবে সমস্যা হলো, অবকাঠামোগত সমস্যা, দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা এবং অন্যান্য কারণে শিল্প তথা ব্যবসার বিকাশ ঘটছে মন্থরগতিতে। বিনিয়োগে হচ্ছে নিরুৎসাহিত। ফলে আমরা ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছি। বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি, আর্থিক খাতের নাজুক অবস্থান, সামাজিক অস্থিরতা, দেশ থেকে টাকা পাচার এসব বেড়েই চলেছে। এসব সমস্যার সমাধান না হলে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত হওয়ার যে স্বপ্ন দেখছে, তা অর্জন করা কঠিন হবে। আর্থিক খাতের ব্যাপক সংস্কার করে, সামাজিক অস্থিরতা নিরসন করে, বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটিয়ে, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রেখে এবং সর্বোপরি দুর্নীতি রোধ করে এ অবস্থার উত্তরণ ঘটানো সম্ভব।
অতীতেও জানুয়ারি মাস এলেই পাঠ্যপুস্তক নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু সেই সমালোচনাগুলোর মোটাদাগে বিষয় ছিলঅশুদ্ধ বানান, ছাপার মান, টুকটাক তথ্যগত ভুল, প্রধানমন্ত্রীর বাণী ও ছবি ব্যবহার, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে নির্দিষ্ট কিছু লেখকের লেখা বাদ দেওয়া প্রভৃতি। ২৩ সালে নতুন ও পুরাতন শিক্ষাক্রমে আগের সব সমালোচনা করার মতো বিষয় বর্তমান আছে। কিন্তু এবার সব আলোচনা আর সমালোচনা গিয়ে ঠেকেছে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুশীলন ও ইতিহাস এবং সামাজিক বিজ্ঞান বই দুটি নিয়ে। বিশেষ করে বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ে ‘চৌর্যবৃত্তি’ এবং ‘বিবর্তন তত্ত্ব’কে কেন্দ্র করে। আর এদিকে, চৌর্যবৃত্তি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, মূলধারার গণমাধ্যম সরগরম আলোচনায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও হাসিনা খান ভুল স্বীকার করে বিবৃতি পর্যন্ত দেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের দেশে পাঠ্যপুস্তক ‘রচনার’ এযাবৎকালের প্রক্রিয়া কেমন ছিল? পাঠ্যপুস্তক কি সম্পূর্ণ লেখকরা রচনা করে থাকেন? পাঠ্যপুস্তক কতটুকু রচনা আর কতটুকু সংকলিত ও সম্পাদিত ছিল, তা আমরা কখনোই ভেবে দেখিনি। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণির বাংলা বই পুরোটাই সংকলিত ও সম্পাদিত। বইয়ের শুরুতে যে ‘লেখক’দের নাম দেওয়া থাকে তাদের কারও কবিতা, গদ্য, গল্প লেখা থাকে না। যাদের লেখা থাকে তারা হলেন বাংলা ভাষাসহ অন্য ভাষার প্রধানতম কবি, সাহিত্যিকের। কিন্তু কবিতা-গদ্য-গল্প-নাটক না লিখেই এসব লেখক পাঠ্যপুস্তক রচয়িতার মর্যাদা ভোগ করছেন দিনের পর দিন! কই স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে কাউকেই তো এ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেখিনি! কেউ তো বলেনি তারা সংকলনকারী ও সম্পাদক, রচয়িতা নন! আর আমাদের সংকলনকারী সম্পাদকদেরও নৈতিকতা বা সততার বালাই নেই। তারা নিজেরাও সংকলনকারী-সম্পাদক পরিচয় না দিয়ে রচনাকারী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে থাকেন। অনেকে তো পাঠ্যপুস্তকে নিজের নাম লেখা পৃষ্ঠা বা লেখক হিসেবে সরকারি চিঠির ছবি তুলে ফেইসবুকে দিয়ে আত্মশ্লাঘা প্রকাশ করেন।
বছরের পর বছর ধরে যেখানে সংকলিত বিষয় চলছে সেখানে, নতুন শিক্ষাক্রমে হুট করে বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের কিছু অংশ ‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ডট ওআরজি’ থেকে নিয়ে গুগল ট্রান্সলেটরে ভাষান্তর করে হুবহু ছাপিয়ে দেওয়াকে চৌর্যবৃত্তি বলা যায় কি? আমরা সদ্য শেখা প্লেইজারিজম শব্দটির যত্রতত্র ব্যবহার করছি না তো? প্রশ্ন দুটি উত্থাপন করার কারণ হচ্ছেআমরা আসলে রচনা, সংকলন ও সম্পাদনাকে এক করে দেখছি।
ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলোর স্থানিক রূপ থাকে। প্রতিটি জনপদের ভিন্ন ভিন্ন গল্পগাথা, জন্মের ইতিহাস, নৃ-তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য আলাদা। এগুলো প্রতিনিয়ত নির্মাণ হতে থাকে। বাংলাদেশে তো সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাস নতুন করে লেখা হতে থাকে! কিন্তু প্রকৃতি বিজ্ঞান বা ন্যাচারাল সায়েন্সের ইতিহাস সাহিত্য বা সমাজবিজ্ঞানের পথে হাঁটে না। এদের থেকে উল্টো রথে চলে প্রকৃতি বিজ্ঞান। এর সৌন্দর্যই হলো এর কোনো স্থানিক রূপ নেই। মৌলিক পরমাণুর সংখ্যা, মাধ্যাকর্ষণ, জীবের বৃদ্ধি ও বংশগতি প্রভৃতি বিষয় দেশ, ব্যক্তিবিশেষ বা সময়ের হাতের ইশারায় চলে না। প্রকৃতি বিজ্ঞান চলে তার নিজস্ব নিয়মে। সমগ্র বিশ্বের বিদ্যালয়েই যুগ যুগ ধরে বিজ্ঞানে একই বিষয় পড়ানো হয়। চৌর্যবৃত্তি বলার আগে আর একটি বিষয় স্মরণ রাখা প্রয়োজন তা হলোপ্রতিটি মাধ্যমের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে, যা তাকে অন্য মাধ্যম থেকে পৃথক করে। গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা, গবেষণা নিবন্ধ, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন এসবে লেখক তার সৃষ্টিকে নিজের বলে দাবি করতে পারেন। কিন্তু পাঠ্যপুস্তক রচয়িতাদের সেই সুযোগ নেই। এখানে সম্পূর্ণটাই দলগত কাজ। আর তা ছাড়া গবেষণা নিবন্ধে যেমন তথ্যসূত্র উল্লেখ করার সুযোগ আছে এবং আর সে কারণেই গবেষণা নিবন্ধে তথ্যসূত্র উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু পাঠ্যপুস্তকে তথ্যসূত্র উল্লেখ করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু কেন তথ্যের উৎসের উল্লেখ করার সুযোগ নেই এবং তথ্যের উৎস প্রবর্তনের দাবি করার যৌক্তিকতা নেই সেই নিয়ে আলাপ জারি রাখা যায়। কিন্তু একে সরাসরি চৌর্যবৃত্তি কি বলার সুযোগ আছে?
বিগত বছরগুলোতে আমাদের দেশে বিশেষ করে বাংলা, সমাজ, বিজ্ঞান বইগুলো কতটুকু লেখক রচনা করেন? প্রায় সবই তো সংকলন করা। বরং ২০২৩ সালের নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ্যপুস্তক রচয়িতাদের খানিকটা খাটাখাটুনি গেছে। কিছু অংশ তারা নিজেরা মাথা খাঁটিয়ে লিখেছেন। এর আগ পর্যন্ত শিক্ষার ‘মান’ বাড়ানো বলতে আমাদের শিক্ষাবিদরা বুঝেছেন, উঁচু শ্রেণির বিষয়বস্তুকে খানিকটা আকারে ছোট করে নিচের শ্রেণিতে ঢুকিয়ে দেওয়া। গরুর সাইজ ছোট করে আঁকলেই বাছুর হয়ে যায় না, এটা তারা এত দিন বোঝেননি। বাছুরের অবয়ব স্পষ্ট করতে গেলে অপরিপক্ব দৈহিক গঠন, চকিত চাহনি, চপলতা সবকিছুই ফুটিয়ে তুলতে হয়; অনেক বিলম্বে হলেও শিক্ষাবিদরা তা বিবেচনায় নিয়েছেন। নতুন শিক্ষাক্রমে দেখলাম শিক্ষাবিদরা শিক্ষার্থীদের ধারণ ক্ষমতাকে বুঝতে আন্তরিক হচ্ছেন। আমার কাছে মনে হচ্ছে, সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগকারীরা নিজেদের অজান্তেই লেখকদের পুরস্কৃত করে ফেলছে! কারণ, আমাদের দেশের পাঠ্যপুস্তক সংকলনকারী ও সম্পাদনকারীকে যদি পাঠ্যপুস্তক রচনাকারীর মর্যাদা দেওয়া হয় তবে; রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বা তলস্তয়কে কোথায় ঠাঁই দেব? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বভারতীর ছাত্রদের জন্য নিজে পাঠ্যপুস্তক রচনা করেছেন এবং অন্য সহযোগীদের দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর একের পর এক পাঠ্যপুস্তক রচনা করেছেন। এই পাঠ্যপুস্তক রচনার জন্য তাকে তৎকালীন সাহিত্যসমাজ থেকে কম তিরস্কার শুনতে হয়নি! বঙ্কিমচন্দ্র ঈশ্বরচন্দ্রকে নিছক জ্ঞান করতেন পাঠ্যপুস্তক প্রণেতা হিসেবে। আর আমাদের পাঠ্যপুস্তক সংকলনকারীরা কোনো কিছু রচনা না করেই রচনাকারীর মর্যাদা পায়! সৌভাগ্যবান আমাদের লেখকরা আর দুর্ভাগা দেশের শিক্ষার্থীরা।
লেখক : পিএইচডি গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরোভিচ পুতিন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। গর্বাচেভ এবং ভদকাবন্দনাপীর ইয়েলেৎসিনের চেয়ে খারাপ লোক। সম্ভবত স্তালিনের চেয়েও খারাপ লোক। তাকে ইভান দ্য টেরিবেল বলতে পারলে ভালো হতো। গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই তার আচরণে এবং রাশিয়ায় অর্থাৎ রুশ ফেডারেশনে। তার সবচেয়ে বড় মিত্র গণপ্রজাতন্ত্রী চীনেও গণতন্ত্র নেই। দুই অগণতন্ত্র (একটা সাবেক ও একটা বর্তমান কমিউনিস্ট দেশ) এবং সর্বাত্মকবাদ (টোটালিটারিয়ানিজম) এখন বাণিজ্যিক-রাসায়নিক হালুয়া পাকাচ্ছে, ডলারকে নাকচ করে দেওয়ার জন্য। পুতিন জঘন্য; কমরেড ইয়েলেৎসিনের মতো ভালো লোক নয় ভদকার রাজ্যে বসে ভদকা খায় না। এটাই পুতিনবিষয়ক পাশ্চাত্য ভাষ্য। অল্টারনেট ভার্সন অব দ্য হলি স্ক্রিপচার।
রাশিয়া ও চীনের আরেক মিত্র উত্তর কোরিয়া। সেখানেও গণতন্ত্র নেই। কী বিতিকিচ্ছিরি দোস্তালি রে বাবা! ব্রুটস অ্যান্ড ব্রুটাস! চীন তো করোনাময়ীর রাসলীলা। পুতিন বরং রাসপুতিন হলে খুব ভালো হতো। রাশিয়া হলো স্ল্যাভাসুরের দেশ, আর চীন হলো কিরাতাসুর। উত্তর কোরিয়াও অসুর। সবাই মিলে অসুরবনীপাল! বাংলাদেশও অসুরের দেশ বঙ্গাসুর। তবে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ এখন থাক। জিওপলিটিক্যাল ডাইসে বাংলাদেশকে নিয়ে খেলা করা যাবে না, আণ্ডা-গণ্ডা দেশও পশ্চিমা পলিসিতে এখন গুরুত্বপূর্ণ। সাবধানে কথা বলা পাশ্চাত্য ভদ্রলোকের লক্ষণ। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের পাশের দেশ ভারত। আবার চীনের সঙ্গেও তার ভাবসাব ইদানীং ভালো। ভারতকে নিয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক রসায়নের বিক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশকেও এই বলয়ে- গোবলয়ে না হলেও রাখতে হবে। অতএব বাংলা হেজিমনিক ডিসকোর্স থেকে আপাতত বাদ থাক। ঘুঘু ফসকে গেলে সমস্যা। ফাঁদে পড়বে কে? তাহলে চীনের বিরুদ্ধে তাকে কাজে লাগানো যাবে কি! চীনকে চেকে রাখতে না পারলে আবার রাশিয়া এসে হাজির হবে। শি-পুতিন সমীকরণটা বেশ জটিল। দে আর জেন্টিলস অর গোয়িমস। লং লিভ গর্বি, লং লিভ ইলি। ইউ আর দ্য প্রফেটস, হু কেম বিফোর দ্য জাজমেন্ট ডে। ইউ আর দ্য টার্মিনেটরস অব ইভিল। ডাউন উইথ পুতিন, রাদার সে রাসপুতিন।
ইউক্রেনের ওপর আশীর্বাদ বর্ষিত হোক। লং লিভ প্রিন্স ভলোদিমির জেলেনস্কি হু উইল লিড আস টু হেভেন, হোয়ার অলরেডি ইলি (কমরেড ইয়েলেৎসিন) হ্যাজ গন। প্রিন্স ভলোদিমিরস ইউক্রেন অ্যান্ড ইটস লিবারেটর ফোর্সেস আর ডুয়িং ওয়েল, ফাইটিং দ্য রাশান ডেমনস হিরোয়িকেলি। দে আর অ’সাম ইন প্লেয়িং পিয়ানো এরোটিকেলি এজ প্রিন্স ভলোদিমির জেলেনস্কি প্লেজ। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের বীরত্ব দেখার মতো। তারা বালাকলিয়া দখল করেছে, ইজিয়ুম দখল করেছে, ক্রাসনি লিমান দখল করেছে, কুপিয়ানস্ক দখল করেছে। মাঝেমাঝেই তারা রাশিয়ার ভেতরে হামলা চালাচ্ছে। রাশিয়া দখলকৃত এসব জায়গা আবার দখল করতে পারেনি। বরং রাশিয়া খেরসনে দিনিয়েপার নদীর পশ্চিম পাশ অর্থাৎ খেরসন শহর ছেড়ে এসেছে ইউক্রেন বাহিনীর হাতে। কী লজ্জার বিষয়। একদিন ইউক্রেন ক্রিমিয়া দখল করবে। দনবাস তো দখল করবেই। গড ইজ উইথ দেম। স্বর্গোদ্যান রক্ষায় নিয়োজিত চেরাবগণ (চেরুবিম, বাইবেল) ঘূর্ণায়মান বিদ্যুত্তলোয়ার নিয়ে তাদের সঙ্গে শামিল হয়েছে, যেন একেকজন শামিল বাসায়েভ- ইউক্রেন শ্যাল ওভারকাম রাশিয়া সাম ডে। সারা বিশ^ এখন ইউক্রেনের পাশে শুধু ইউক্রেন ছাড়া!
পুতিন এবং তার জেনারেল স্টাফ হারছিলই এবং পাশ্চাত্যপুরাণের (যথা বিবিসি, সিএনএন প্রভৃতি) বিবরণ অনুযায়ী তার এবং তাদের জেতার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ বুচায় সব বুজায়া গেছে। কমেডিয়ান প্রিন্স ম্যাডিস্কি জেলেনস্কি এবং হেনস স্টলটেনবার্গের ডুমস ডে ফাইটারস অব ন্যাটো (নর্থ আটলান্টিক টেরোরিস্ট অর্গানাইজেশন) বীরত্বগাথা লিখছিল ভুন্ডারবাফেন দিয়ে, একদা হের গিৎলার যেমন লিখতে চেয়েছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নে। প্রসঙ্গত, রুশীরা হিটলারকে বলে গিৎলার। জার্মান ভুন্ডারবাফেনের আভিধানিক অর্থ আজবাস্ত্র (আজব-অস্ত্র) বা ওয়ান্ডার-উইপন; একে তাজ্জবাস্ত্র, বিস্ময়াস্ত্রও বলা চলে। ভারতীয় উপমহাদেশের (বিশেষ করে বাংলা) পরিভাষায় বলা যায় দিব্যাস্ত্র। অগণিত দিব্যাস্ত্র আসছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো থেকে। আর পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমে অ্যাংলো-জায়নিস্ট পাকাল মুসাবিদায় ইউক্রেনের ‘লাখে লাখে সৈন্য কাতারে কাতার, গুনিয়া দেখ মাত্র কয়েক হাজার’ অবস্থা। এমন দশাতেই ভুন্ডারলান্ডিশ্চে আলিসা (অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড) গিয়ে হাজির হলো ইউক্রেনের সবজিক্ষেতে, শশকের পিছে দৌড়াতে দৌড়াতে। আঁতিপাঁতি করে খুঁজছে সে সেই কন্দর, যাতে ঢুকে পড়ে সে পৌঁছেছিল ওয়ান্ডারল্যান্ডে। কিন্তু সবজিক্ষেত এখন মাইনফিল্ড। ফলে মাইন খুঁজতে সে ব্যস্ত হয়ে পড়বে এবং ঢুকে পড়বে ভুন্ডারল্যান্ডে আলিসার অদ্ভুত জগতে।
দিব্যাস্ত্র এখন এত বেশি যে এসব এখন- আফটার দ্য গ্র্যান্ড রিসেট- ডালভাত হয়ে গেছে। সুপারসনিক অস্ত্র বা ভুন্ডারভুন্ডারবাফেনও বিবেচনায় ঠিক আসতে চায় না। এখন আলোচিত বিষয় হলো হাইপারসনিক অস্ত্র- গাণ্ডিব। নইলে প্যানিকই সৃষ্টি করা যাবে না। এই যে গণ্ডায় গণ্ডায় অবসলিট তথা অচল ট্যাঙ্ক ইউক্রেনকে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করছে পশ্চাতিনারা (কালেকটিভ ওয়েস্ট) তাতে কার পশ্চাৎ তারা বুঁজাবে ঠাহর করা যাচ্ছে না। রাশিয়া, চীন ও উত্তর কোরিয়ার হাতে এখন সব মাখাস্ত্র, যেসব অস্ত্রের ক্যাপাসিটির তোলাদণ্ড হচ্ছে মাখ (১ মাখ সমান শব্দের গতিবেগ)। ওরা যথাক্রমে ২০, ১৯ ও ১৬ মাখের কারবারি। মাখীয় অস্ত্রের মু-ুতে থাকে এখন পরম ব্রহ্মাস্ত্র- ভুন্ডারভুন্ডারভুন্ডারবাফেন। তা ট্যাঙ্কজাতীয় এসব নন-সনিক অস্ত্রে কি কাজ হবে! ব্রহ্মাস্ত্রেও যখন কাজ হতে চায় না। আর ইউক্রেনের মতো গা-ু বাহিনীর হাতে পড়লে গাণ্ডিবের কী হবে?
জার্মান সেনাবাহিনীর ব্রিগেড জেনারেল এরিক ভাডের ভাষ্য-
‘
‘as did the Inspector General of the German Armed Forces, General Eberhard Zorn, who, like me, warned against overestimating the Ukrainians’ regionally limited offensives in the summer months. Military experts – who know what’s going on among the secret services, what it’s like on the ground and what war really means – are largely excluded from the discourse. They don’t fit in with media opinion-forming. We are largely experiencing a media synchronization that I have never experienced in …Military operations must always be coupled with attempts to bring about political solutions. The one-dimensionality of current foreign policy is hard to bear. She is very heavily focused on weapons. The main task of foreign policy is and remains diplomacy, reconciliation of interests, understanding and conflict management. … again as to what should happen with the deliveries of the tanks at all. To take over the Crimea or the Donbass, the martens and leopards are not enough. In eastern Ukraine, in the Bakhmut area, the Russians are clearly advancing. They will probably have completely conquered the Donbass before long. One only has to consider the numerical superiority of the Russians over Ukraine. … . We expect that the outcome of this conflict will reshape Europe’s outdated security architecture and force a realignment that will mark the end of the unipolar era.
(Ukraine: Is the Hammer About to Fall?; MIKE WHITNEY , JANUARY 17, 2023; https://www.unz.com)
লোগানস্ক ও দনেৎস্কে ফ্রন্টলাইন-পরিস্থিতি রাশিয়ার অনুকূলে। একটু একটু করে এগুচ্ছে রুশ ও দনবাস মিলিশিয়ারা। বাখমুত ও সলেদারে তাদের অগ্রগতি ভালো। সলেদার এরই মধ্যে রাশিয়ার দখলে গেছে। বাখমুতও যাবে যাবে করছে। পুতিন কী যেন একটা করতে যাচ্ছেন। প্রতিদিন ইউক্রেনের ২৫০-৩০০ সেনা মারা যাচ্ছে বলে রাশিয়ার এবং কিছু বিদেশি সংবাদ মাধ্যমে বলা হচ্ছে। সোলেদার রুশ প্রাইভেট মিলিটারি বাহিনী ভাগনার পিএমসির দখলে। পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমে সেসব খবর অবশ্য নেই। পুতিনবাহিনী হারবে না এটাই মনে হচ্ছে। পাশ্চাত্যের কোনো সচেতন লেখক একথা বলছেন না যে, পুতিন উদ্যম হারিয়েছেন। তবে একথা ঠিক খেরসন সিটি এবং আরও কিছু এলাকা থেকে রুশ বাহিনী পিছু হটেছিল। পশ্চিমা প্রেস্টিটিউট বলছে, রাশিয়া পিছটান দিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক অভিযান বলছে অন্য কথা- এটা তাদের কৌশল। যেমন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একি ভাড বলেছেন। রাশিয়ার বাহিনীর শীতকালীন ভুন্ডারঅপারেশনে কী যে হয়! কেয়ামতের লক্ষণ দেখছেন অনেকেই- যেন আজবদেশে গিয়ে অ্যালিস খরগোশের গর্তে বসে ওয়ার ভিডিও দেখছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লেনিনগ্রাদ, স্তালিনগ্রাদে কী ঘটেছিল তার কথা আমরা ইতিহাসের পাতা থেকে জানি। এবার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় তেমন কিছু ঘটতে যাচ্ছে। ইউক্রেনের পাল্টা হামলায় ক্রিমিয়া কী হবে তা না হয় ড্রিমস্লিপের মধ্যেই থাকুক। কিংবদন্তির রাশিয়ান মাইটের সামনে ছায়ার যুদ্ধে (প্রক্সি যুদ্ধে) যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো ও ইইউ জিততে পারবে কি?
মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল মাইক মিলির ভাষ্য, চলমান যুদ্ধে জেতা ইউক্রেনের জন্য আসলেই কঠিন। আর যুদ্ধটা হয়তো এ বছর শেষ হবে না। রাশিয়া হয়তো জিতবে কিন্তু এ জেতাতেও বর্তমান বৈশ্বিক দ্বন্দ্বের অবসান সম্ভবত হবে না। মার্কিন আধিপত্যের ম্যাট্রিক্স ফিল্ডে অনেকগুলো সমীকরণ থেকে যাচ্ছে। সবগুলোর সমাধান হওয়া দরকার। ইউক্রেনের যুদ্ধের অভিঘাত ডাইনে-বায়ে অনেক অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে। জেলেনস্কির সাবেক উপদেষ্টা আলেক্সি অরেস্তোভিচ বলেছেন, এ যুদ্ধে ইউক্রেন জিতবে না। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের (ওরফে বোজো) ভুল একটা হয়েছিল ২০১৪ সালেই, যার জের টানছে পশ্চিমা বিশ্ব। ইউক্রেন যখন গত মার্চে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে পৌঁছাতে যাচ্ছিল তখন বোজো প্রায় গোপনে ইউক্রেনে এসেছিলেন। এবং ধারণা করা চলে তিনিই ওয়ান্ডারল্যান্ডের অ্যালিস। খরগোশের গর্তে বসে কী যেন কী করলেন, আর বুচায় হত্যাকাণ্ড ঘটে গেল। ইউক্রেনের শান্তি প্রক্রিয়াও থেমে গেল। নোয়াম চমস্কিকে এখন বলতে হচ্ছে- লেখক :
World moving closer to ‘irreversible’ disaster – The world is teetering on the brink of the abyss due to an increased risk of nuclear war, failure to address environmental challenges, and diminished ability to tackle problems rationally, world-renowned philosopher and linguist Noam Chomsky told RT. (https://www.rt.com)
লেখক: সাংবাদিক
১৯২১ সালের ৩১ জানুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার নাগবাড়ির এক জমিদার পরিবারে জন্ম হয় আবু সাঈদ চৌধুরীর। বাবা আবদুল হামিদ চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের স্পিকার ছিলেন। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ইংল্যান্ড থেকে ব্যারিস্টারি পাস করেন। ১৯৪৮ সালে ঢাকা হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬১ সালে হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন। ১৯৭১ সালে জেনেভায় অবস্থানকালে পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যার প্রতিবাদে উপাচার্য পদে ইস্তফা দেন। মুজিবনগরে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ দূত হিসেবে জেনেভা থেকে লন্ডন যান এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে সচেষ্ট হন। দেশে ফিরে ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালের ১০ এপ্রিল পুনরায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। পরে বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক বিশেষ দূত এবং বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায় বন্দর ও নৌপরিবহনমন্ত্রী হয়েছিলেন। এরপর খোন্দকার মোশতাক আহমদের মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি নির্বাচিত হন। আবু সাঈদ চৌধুরী ১৯৮৭ সালের ২ আগস্ট লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন।
ইংরেজি সাহিত্যের পুরনো একটি ক্ল্যাসিক উপন্যাস চার্লস ডিকেন্সের গ্রেট এক্সপেক্টেশন থেকে মিস হাভিশামের একটি স্থির দৃশ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাইবেদিতে পড়ে থাকা এক নববধূকে দেখা গেল তার বাকি বছরগুলোর জন্য স্থির সময়ের মধ্যে আটকে থাকতে, সেই থেকে তিনি সব সময় বিয়ের পোশাক পরা, একটি স্থিরদৃশ্যে আটকা পড়ে আছেন, যখন কি না তার পৃথিবী ভেঙে পড়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওপর বিবিসির দুই পর্বের তথ্যচিত্রটিও আমার ওপর একই ধরনের প্রভাব ফেলেছিল। মনে হলো পুরনো লেস আর সাদা জামা পরা সেই নববধূর দিকে তাকিয়ে আছি আমি, সময়ের সঙ্গে যা বড় বেমানান। আমি তা-ই ব্যাখ্যা করব এ লেখায়।
আমার মতো কাক্সিক্ষত ও বিধ্বংসী দর্শকদের কাছে তথ্যচিত্রটি নতুন তদন্ত প্রতিবেদন হিসেবে আগাম বেচা হয়েছিল, যা নতুন তথ্য সামনে আনবে এবং এমন কিছু দেখাবে, যা আমরা আগে দেখিনি। উদার বামপন্থি বেশ কিছু মানুষের চমকপ্রদ অংশগ্রহণ ছিল, যাদের আমি সব সময়ই প্রশংসা করে থাকি এবং ভবিষ্যতেও করব, এবং আমার নায়ক হিসেবেই থাকবেন তারা। অরুন্ধতী রায়, যে লেখিকা কখনো তার কথার বরখেলাপ করেননি। আকার প্যাটেল, একজন অ্যাক্টিভিস্ট এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভারতীয় প্রধান। তিনি বেশ ভালোভাবেই তার নিরলস লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। সিদ্ধার্থ ভারদারাজন, আমার প্রিয় সাংবাদিকদের একজন এবং তিনি সর্বশেষ স্বাধীনভাবে দাঁড়িয়ে থাকা প্রেস স্পেসের প্রতিষ্ঠাতা। এ ছাড়া দ্য ক্যারাভান ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতা হর্তোষ বল। ক্রিস্টোফ জাফরেলট, হিন্দু অধিকার নিয়ে প্রচুর গবেষণা ও লেখালেখি করা একজন সুপরিচিত শিক্ষাবিদ। এমন সেরা ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেওয়া সত্ত্বেও, বিবিসি ওই তথ্যচিত্রে তাদের এমনভাবেই তুলে ধরেছে যে নতুন কিছুই বলা হয়নি।
তথ্যচিত্রটির জন্য ক্ষমতায় থাকা শাসকরা নিজেরাই দুর্ভোগের শিকার বলে আরও একবার অপপ্রচার চালানোর সুযোগ পাবে। এতে যুক্ত বামপন্থিদের সমালোচনাকেও তারা নিজস্ব প্রয়োজনে কাজে খাটানোর সুযোগ পাবে। বিবিসি কার্যত ভারতের সেরা অ্যাক্টিভিস্ট, লেখক ও সাংবাদিকদের যারা তেজি, সজীব ও গতিশীল তথ্যচিত্রটিতে তাদেরই নিয়েছে। তাদের পুনরাবৃত্তিমূলক ও গৎবাঁধাভাবে একসঙ্গে এমনভাবে গেঁথে দিয়েছে যে দেখে মনে হয় যেন তারা স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, বিবিসি মিস হাভিশামের ছবিটির পুনরাবৃত্তি করেছে।
তথ্যচিত্রটির প্রথম পর্বের কথা বলা যাক। মোদি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সেই ২০০২ সালে ফিরে যায় ক্যামেরা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে সে সময়েই গণহত্যার ঘটনাটি ঘটে। অশুভ সংগীত বাজতে থাকে এবং এ সময় একটি অন্ধকার কম্পিউটার স্ক্রিন সামনে আসে। বড় ধরনের একটি তথ্য উদঘাটন হয় তাতেএখন আর গোপন নয় এমন একটি কূটনৈতিক বার্তা এটি, যেখানে একজন ব্রিটিশ কূটনীতিক অনুমান করেছেন, মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতার জন্য মোদি দায়ী এবং তিনিই পুলিশকে পিছিয়ে যেতে বলেছেন এবং জনতাকে তাদের কাজ করতে দেওয়ার আহ্বান জানান। একজন অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক এবং সাবেক ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিব জ্যাক স্ট্রের মতামত ছাড়া এই দাবির সমর্থনে কোনো নতুন প্রমাণ উপস্থাপন না করে বিবিসি ভারতে বিজেপি এবং তার মুখপাত্রদের প্রশ্ন তোলার সুযোগ করে দিয়েছে যে, ২০ বছর আগের একজন অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিকের কণ্ঠস্বর কেন সর্বজ্ঞ ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে? বিবিসি যদি কূটনৈতিক বার্তা ব্যবহার করে দেখাতে পারত যে, যেই ব্রিটেন এবং ইউরোপ মোদিকে রক্তপাতের জন্য দায়ী করেছিল সেই তারাই কীভাবে পাঁচ বছর না যেতেই তার গলা থেকে বড়শির এই আংটা খুলে নিয়েছিল, তাহলে তারা গল্পের নতুন মোচড় দেখাতে পারত।
গোঁধরা-উত্তরহীন প্রশ্ন
২০০২ সালের সহিংসতার বিষয়টি যখনই আলোচনায় এসেছে, বিজেপি সব সময় বলতে চেয়েছে যে, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আগের দিন একটি ট্রেনের বগি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, যেখানে ভিএইচপির ৫৯ জন হিন্দু কর সেবককে পুড়িয়ে ছাই করা হয়েছিল। বিবিসি এ বিষয়ে আরও কিছু কাজ করতে পারত, যা বিজেপিকে কঠিন কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি করত। প্রথমত, ৫৯ জন করসেবক বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণ করছিলেন। ট্রেনে আরও অনেকে ছিলেন যারা টিকিট কেটে উঠেছিলেন এবং জীবিত নামার সুযোগ পেয়েছিলেন। তারা আসলে কি দেখতে পেয়েছিলেন? তাদের কথা কেন ধামাচাপা দেওয়া হয়? যদি মুসলমানরাই আসলে ওই বগিতে আগুন দিয়ে থাকে, তবে সেই জীবিতদের কথা শোনার ক্ষেত্রে তো ভয়ের কিছু থাকার কথা নয়।
তথ্যচিত্রে পুড়ে যাওয়া ট্রেনের বগিতে বেশি মনোযোগ দিয়ে বিজেপির অস্বস্তি আরও বাড়ানো যেত। পুড়িয়ে ফেলার একটি তদন্ত সেদিনের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার করেছিল। আরও একটি তদন্ত হয়েছিল কয়েক বছর পরে, বিরোধী নেতা লালু যাদব যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন। উভয় তদন্তকে পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে দেখা হয়ে থাকে। বিবিসি কি এখানে কিছু মৌলিক প্রশ্ন ছুড়ে দিতে পারত না? নির্ধারিত স্টেশনের আগেই চেইন টেনে কেন ট্রেন থামানো হলো? মুসলমান এক মেয়ের শ্লীলতাহানি কি আসলেই করা হয়েছিল? এই গল্পগুলোর কী হয়েছিল এবং কেন এসব বিষয় হারিয়ে গেল?
এমনকি বিবিসি যদি দ্রুত গুগল সার্চও করতে চাইত, তাহলে ভিএইচপি সদস্যদের গল্প জানা যেত, যারা ট্রেনে অযোধ্যা (উত্তর প্রদেশে) থেকে গুজরাটে ফিরছিলেন। সেই দিন থেকে, ভিএইচপির এই সদস্যরা হয় তাদের সাংগঠনিক লোকদের আচরণে হতাশ কিংবা ভিএইচপি পরিবারে তাদের অবস্থান সম্পর্কে অসন্তুষ্ট ও বিভ্রান্ত বোধ করছে। কেন তাদের বিবেচনায় আনা হবে না?
ভারসাম্যের কর্মকাণ্ড
এবার আসি তথ্যচিত্রটির দ্বিতীয় পর্বে। এটি ভারতের গণপিটুনি দিয়ে শুরু২০১৫ সালে উত্তর প্রদেশের দাদরিতে, আখলাকের, এবং ২০১৭ সালে ঝাড়খণ্ডে, আলিমুদ্দিন আনসারির। এ তথ্যচিত্র মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক অপরাধের বিষয়ে মোদির নীরবতার সঙ্গে ২০১৯ সালে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরকে বিকল ও বিভক্ত করা, হিন্দুদের প্রতি পক্ষপাতমূলক নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) তৈরি, সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভকে হিংসাত্মকভাবে দমনকে সম্পর্কযুক্ত করে। যথেষ্ট মজাদারভাবে এই তথ্যচিত্রের বিরুদ্ধ সমালোচনাও যুক্ত করা হয়েছে অরুন্ধতী রায়ের কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘কেন আমি আপনার সঙ্গে এই তথ্যচিত্রে কথা বলব, শুধু যাতে কোথাও একটি রেকর্ড থাকে যে আমরা সবাই এর সঙ্গে একমত নই। তবে এ কোনোভাবেই সাহায্যের আহ্বান নয়, কারণ কোথাও থেকে কোনো সাহায্যই আসবে না।’
হিন্দু চরমপন্থিদের সহিংসতা ও ধর্ষণের আহ্বান এবং দিল্লির দাঙ্গায় পুলিশ সদস্যের লাথিতে মুসলমান হত্যার ভিডিওফিল্মটির সবচেয়ে জঘন্য এবং দেখা অসম্ভব অংশটি বিরোধী-তথ্য ও বাইট দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করা হয়েছে। আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের সাক্ষ্য এবং নিহত ফাইজানের মায়ের কথার পাশাপাশি বিজেপি নেতা স্বপন দাশগুপ্তের বিদ্বেষপূর্ণ এবং আত্মতুষ্ট কথাবার্তা যুক্ত করা হয়েছে। সেখানে তিনি আসলে দিল্লি দাঙ্গায় যে সহিংসতা হয়েছে তাকেই অস্বীকারের অপচেষ্টা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বড় পরিসরে ভাবলে, দিল্লির দাঙ্গা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। তবে মিডিয়ার কাছে তা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ এর অর্থ হচ্ছে কম পরিশ্রমেই আপনি হাতের নাগালে ভালো ফুটেজ পেয়ে যাচ্ছেন।’ এখন আমি যদি এই ফিল্ম তৈরি করতাম, আমি দাশগুপ্তের বক্তব্যর ফাঁপা দিকটি ফুটিয়ে তুলতে এর সঙ্গে সহিংসতার ফুটেজও সমান্তরালে তুলে ধরতাম। পুলিশ কর্র্তৃক মুসলিম পুরুষদের লাথি মেরে হত্যা এবং তাদের জাতীয় সংগীত গাইতে বলার ফুটেজ ব্যবহার করতাম। এরপর দর্শকরা মুখোমুখি হতেন দাশগুপ্তের ভয়াবহ সব অহংকারী কথাবার্তার, যা এই প্রশ্নকে সামনে আনেবিবিসি কি রুয়ান্ডা কিংবা আউশভিৎসের গণহত্যার ওপর তথ্যচিত্র বানানোর ক্ষেত্রে কুখ্যাত এসএসের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহার করে একই রকম ‘ভারসাম্য’ ধরে রাখার চেষ্টা করত?
এসব তথ্যচিত্র দিয়ে বিবিসি কী করতে চায়? তাৎক্ষণিকভাবে মনে আসে ১৯৬৫ সালে ইন্দোনেশিয়ায় গণহত্যার ওপর জোশুয়া ওপেনহাইমার নির্মিত দুই তথ্যচিত্রের কথা। যারা অপরাধী এবং তাদের কৃতকর্মের জন্য উল্লাস প্রকাশ করে থাকে, তাদেরই তিনি ক্যামেরায় তুলে ধরেছেন। তাদের ভাবনাকে ‘ভারসাম্য’ দেওয়ার কোনো চেষ্টা ছাড়াই তারা কারা তা দেখিয়ে দেয় তার তথ্যচিত্র দুটি। অ্যাক্ট অব কিলিং এবং দ্য লুক অব সাইলেন্সএই দুই তথ্যচিত্র ইন্দোনেশিয়ার রাজনীতিকে বেশ নাড়া দিয়েছিল। তথ্যচিত্র দুটি তৈরি ও প্রকাশের ক্ষেত্রেও দেশটির রাজনৈতিক মহল অংশীদার হয়েছিল। ভালো তথ্যচিত্র নির্মাণই শুধু এমন ভূমিকা রাখতে পারে।
যেখানে আঘাত লাগে সেখানে আঘাত করার উদ্দেশ্য নিয়েই এগোতে হবে। এজন্য অরুন্ধতী রায়, আকার প্যাটেল এবং সাফুরা জারগারদুই পর্বেও বিবিসির এ তথ্যচিত্রের নায়কদের মতোই আমাদের অবশ্যই সর্বব্যাপীভাবে অনুসন্ধিৎসু, সতেজ ও সাহসী হতে হবে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনটি মুসলমানদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট ছিল বলে সাফুরা জারগারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। এজন্য তাকে গর্ভবতী অবস্থায় ৭৪ দিনের জন্য কারাগারে কাটাতে হয়। আর বিবিসি কি না এ ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষায় ব্যস্ত।
লেখকঃ সাংবাদিক এবং ‘দ্য অ্যানাটমি অব হেইট’র লেখক। ভারতের উত্তর প্রদেশে বসবাস ও কর্মরত। ‘দ্য এআইডিইএম’ থেকে অনুবাদ : রথো রাফি
দুর্নীতি দমন কমিশনার (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ বলেছেন, নির্বাচনের বছরে দুদক চোখ-কান খোলা রাখবে। আইন অনুসারে আমাদের যেটুকু অংশ, আমরা তা নিরপেক্ষভাবে পালনের চেষ্টা করব। আমরা সাধ্যমতো কাজ করছি।
মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সন্সেলনে দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান ও মো. জহুরুল হক এবং দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনের বছরে সব প্রার্থীর হলফনামায় যে সম্পদ বিবরণী থাকে তা খতিয়ে দেখবে দুদক। এ বছর চোখ-কান খোলা রাখবে। সমস্ত প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করবে। আগামী বছরে দুদকের কাজে আরো গতিশীলতা আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সোমবার রাতে বার্ষিক প্রতিবেদনটি (২০২২) রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়ে কিছু দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থান নিতে বলেছেন। দুদক স্বচ্ছতার সঙ্গে সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছে, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবগত করা হয়েছে।
ফাঁদ মামলা কেন কমেছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যতটুকু তথ্য পেয়েছি, সেই অনুসারে ফাঁদ মামলা হয়েছে। আমরা শতভাগ সফল হতে পারিনি। বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় গত বছর সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের করেছি। ওই বছর এফআরটি কম হয়েছে। মামলা বেশি হয়েছে, এফআরটি কমেছে। সাজার হার বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে দুদক ঠিকমতো কাজ করছে না, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, মামলা, তদন্ত, অনুসন্ধান সব কিছুই বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। তারা তাদের বক্তব্য দিয়েছে। আমরা তথ্য দিলাম, এগুলো সংরক্ষিত আছে। আপনারাই বিবেচনা করবেন।
এ সময় বেসিক ব্যাংক দুর্নীতি নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, মামলাগুলো চলমান। এ নিয়ে আর কোনও প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি তিনি।
সম্প্রতি আলোচিত দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের ‘অর্থপাচার’ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে দুদক চেয়ারম্যান জানান, এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই, পেলে কাজ করবে দুদক।
এদিকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, দেশের টাকা বাইরে চলে গেছে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়তো কাজ করতে পারেনি দুদক। পাচারকৃত অর্থ নিয়ে কাজ করে আরো অনেকগুলো সংস্থা। শুধু দুদকের একার কাজ নয় এটি। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি টাকা ফিরিয়ে আনার।
দুদকের অসন্তুষ্টির জায়গা কোনটি এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক বড় বড় দুর্নীতি বিশেষ করে দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। অনেক দুর্নীতিবাজ দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে, ব্যবসার আড়ালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা বিদেশে নিয়ে গেছে। এই বিষয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমাদের মাত্র একটি অপরাধের এখতিয়ার আছে। বাকি ২৬টি অপরাধের বিষয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের এখতিয়ার। কিন্তু জনগণের মনে এখনো ভ্রান্ত ধারণা দুদক কী কাজ করে। কিন্তু আমাদের অংশে আমরা কাজ করি ও শতভাগ সাফল্য রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশেরে এক পর্যবেক্ষণের সূত্র ধরে দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, দেশে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বাড়ে নাই, বরং কমেছে। তবে আভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বন্ধ করতে পারিনি। মামলা পরিচালনা ক্ষমতা কমেছে এটা মিথ্যা কথা। কারণ মানিলন্ডারিং মামলায় ১০০ ভাগ সাফল্য, অন্যান্য মামলায় সাজার পরিমাণ ৬৭ থেকে ৭০ ভাগ আমাদের পক্ষে। আমাদের সক্ষমতা কমেছে কে এটা বলেছে। এ কথা আমি বিশ্বাস করি না।
দুদকের ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরে দুদকে জমা পড়ে ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগ। এসব যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের জন্য সংস্থাটি হাতে নিয়েছে ৯০১টি অভিযোগ, যা মোট অভিযোগের ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৯৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ অভিযোগই অনুসন্ধানের জন্য আমলে নিতে পারেনি দুদক। ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগের মধ্যে ৩ হাজার ১৫২টি অভিযোগ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়েছে। ২০২২ সালে চার্জশিট অনুমোদন হয়েছে ২২৪টি, মামলা হয়েছে ৪০৬টি, ফাঁদ মামলা হয়েছে মাত্র ৪টি।
২০২১-২২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাজা, নিষ্পত্তি ও খালাসের পরিমাণ বেড়েছে। এরমধ্যে গতবছর সংস্থাটির ৩৪৬টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এছাড়া এই সময়ে কমিশন আমলের ৬৪ দশমিক ১৭ শতাংশ ও ব্যুরো আমলের ৩৫ দশমিক ৯০ মামলার আসামির সাজা হয়েছে। ২০২২ সালের দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন দুদক চেয়ারম্যান। উপস্থাপনকালে এই তথ্য জানানো হয়।
ছেলে ইজহান মালিককে সঙ্গে নিয়ে ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে রয়েছেন ভারতের সাবেক টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একাধিক ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে মনিদা শরীফে তোলা নিজের একাধিক ছবি পোস্ট করেন সানিয়া। ভিডিও পোস্ট করেছেন ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে।
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা প্রথম ছবিতেই দেখা যাচ্ছে সানিয়া তাকিয়ে আছেন তার ছেলের দিকে। সানিয়ার পরনে কালো রঙের বোরকা।
ছবিগুলো পোস্ট করে ক্যাপশনে সানিয়া লিখেছেন, ‘আলহামদুল্লিাহ। আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করুন।’
সানিয়ার পোস্ট করা ছবিগুলোর কয়েকটিতে পরিবারের অন্য সদস্যরাও রয়েছেন। তবে তার স্বামী পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিককে কোনোটাতেই দেখা যায়নি।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।