
সাম্প্রতিককালে দেশের অর্থনীতিতে বিদ্যমান সংকটগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান বিপুল পরিমাণে অর্থ পাচার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ^জুড়ে যখন চলছে ডলার সংকট, সেই মুহূর্তে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে আর অন্যদিকে চলছে অর্থ পাচার। বছরের পর বছর ধরে দেশের রাজনীতিতে বহুল উচ্চারিত এক প্রপঞ্চ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, জনপ্রশাসন থেকে শুরু করে সরকারের নানামুখী উন্নয়ন কর্মকান্ডের সবখানেই যেন অনিয়ম ও দুর্নীতি দিন দিন আরও বেশি কাঠামোগতভাবে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। গত বছর ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় বাধা ছিল দুর্নীতি। রবিবার প্রকাশিত বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ ২০২২ শীর্ষক উদ্যোক্তা-জরিপ বলছে, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ব্যবসার পরিবেশের অবনতি হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা সংকট মেটাতে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার জন্য সংস্থাটির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সমঝোতা হয়েছে। মোট সাত কিস্তিতে তারা বাংলাদেশকে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে। তবে জ্বালানি-বিদ্যুতের মতো বেশ কিছু সেবা খাতে ভর্তুকি কমানোসহ আইএমএফের নানা ধরনের শর্ত ও আলোচনার কথা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। আইএমএফের ঋণের বিষয়ে সিপিডি বলেছে, দেশের প্রয়োজনকে বিসর্জন দিয়ে চাপ ঘাড়ে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছিলেন, ‘আইএমএফ নিজস্ব নীতি বিশেষ করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি ও অর্থ পাচার প্রতিরোধে কার্যকর কৌশলগত বিষয়ে মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং বিভিন্ন শর্ত পূরণ করতে গিয়ে ইতিমধ্যে অতিরিক্ত চাপে থাকা দেশের সাধারণ মানুষের ওপর বৈষম্যমূলক প্রভাবের বাড়তি বোঝা তৈরি হবে।’
দুর্নীতির পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের সামনে মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতির মতো যেসব নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ যুক্ত হচ্ছে। পুঁজিবাজারের দুর্বলতা ‘ওপেন সিক্রেট’ বিষয়। সিপিডির জরিপে অংশ নেওয়া ৪৪ দশমিক ১ শতাংশ বলেছেন, বিভিন্ন মাধ্যমে মুদ্রাপাচারের ঘটনা বেড়েছে। টাকা পাচারের কারণে ব্যবসা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে মুদ্রাপাচার রোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। অর্থ পাচার ও হুন্ডি সবসময় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ (৬৪ দশমিক ৬ শতাংশ) দুর্নীতিকে ব্যবসায় বড় বাধা উল্লেখ করেন। কোন কোন জায়গায় দুর্নীতি হচ্ছে সেটিও জরিপে উঠে এসেছে। ৬৪ শতাংশ কর্মকর্তা কর প্রদানে, ৫৪ শতাংশ ব্যবসায়িক লাইসেন্স নিতে, ৪৯ শতাংশ গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ নিতে এবং ৭৫ শতাংশ কর্মকর্তা আমদানি-রপ্তানিতে দুর্নীতির কথা বলেছেন। ৪৪.৬ শতাংশ কর্মকর্তা দুর্নীতির পাশাপাশি ব্যবসার জন্য দুর্বল অবকাঠামো, ৪৩.১ শতাংশ ব্যাংকঋণের অপর্যাপ্ততা ও অদক্ষ প্রশাসন, ৩৮.৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিরতা, ৩৫.৪ শতাংশ নীতির ধারাবাহিকতার অভাব, ২৬.২ শতাংশ জটিল করব্যবস্থা ও উচ্চ করহার, ১৬.৯ শতাংশ দুর্বল নীতিবোধ ও সরকারে স্থিতির অভাব, ১৫.৪ শতাংশ অপরাধ ও উদ্ভাবনে অপর্যাপ্ত সক্ষমতা এবং ১০.৮ শতাংশ কর্মকর্তা শ্রম-সংক্রান্ত নিয়মনীতির সীমাবদ্ধতাকে সমস্যা বলেছেন।
দুর্নীতির কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। সেবার মূল্যও বাড়ছে। এই ঘানি সাধারণ মানুষকেই টানতে হয়। নানা স্তরে দুর্নীতি ব্যবসার পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ করে নীতি, কৌশল ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বড় সংস্কার আনতে হবে; স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দক্ষতার মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; নাগরিক ও ব্যবসায়িক সেবা নিশ্চিত করতে হবে; ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; আর্থিক খাতে সংস্কার আনতে হবে এবং নির্বাচনী ইশতেহারে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করতে হবে। সুপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রক্রিয়ার আওতায় বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তথা অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটিয়ে দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর দক্ষতা কাজে লাগানো গেলে আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির স্বপ্ন বাস্তবে রূপলাভ করবে, এ কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়। তবে সমস্যা হলো, অবকাঠামোগত সমস্যা, দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা এবং অন্যান্য কারণে শিল্প তথা ব্যবসার বিকাশ ঘটছে মন্থরগতিতে। বিনিয়োগে হচ্ছে নিরুৎসাহিত। ফলে আমরা ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছি। বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি, আর্থিক খাতের নাজুক অবস্থান, সামাজিক অস্থিরতা, দেশ থেকে টাকা পাচার এসব বেড়েই চলেছে। এসব সমস্যার সমাধান না হলে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত হওয়ার যে স্বপ্ন দেখছে, তা অর্জন করা কঠিন হবে। আর্থিক খাতের ব্যাপক সংস্কার করে, সামাজিক অস্থিরতা নিরসন করে, বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটিয়ে, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রেখে এবং সর্বোপরি দুর্নীতি রোধ করে এ অবস্থার উত্তরণ ঘটানো সম্ভব।
অতীতেও জানুয়ারি মাস এলেই পাঠ্যপুস্তক নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু সেই সমালোচনাগুলোর মোটাদাগে বিষয় ছিলঅশুদ্ধ বানান, ছাপার মান, টুকটাক তথ্যগত ভুল, প্রধানমন্ত্রীর বাণী ও ছবি ব্যবহার, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে নির্দিষ্ট কিছু লেখকের লেখা বাদ দেওয়া প্রভৃতি। ২৩ সালে নতুন ও পুরাতন শিক্ষাক্রমে আগের সব সমালোচনা করার মতো বিষয় বর্তমান আছে। কিন্তু এবার সব আলোচনা আর সমালোচনা গিয়ে ঠেকেছে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুশীলন ও ইতিহাস এবং সামাজিক বিজ্ঞান বই দুটি নিয়ে। বিশেষ করে বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ে ‘চৌর্যবৃত্তি’ এবং ‘বিবর্তন তত্ত্ব’কে কেন্দ্র করে। আর এদিকে, চৌর্যবৃত্তি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, মূলধারার গণমাধ্যম সরগরম আলোচনায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও হাসিনা খান ভুল স্বীকার করে বিবৃতি পর্যন্ত দেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের দেশে পাঠ্যপুস্তক ‘রচনার’ এযাবৎকালের প্রক্রিয়া কেমন ছিল? পাঠ্যপুস্তক কি সম্পূর্ণ লেখকরা রচনা করে থাকেন? পাঠ্যপুস্তক কতটুকু রচনা আর কতটুকু সংকলিত ও সম্পাদিত ছিল, তা আমরা কখনোই ভেবে দেখিনি। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণির বাংলা বই পুরোটাই সংকলিত ও সম্পাদিত। বইয়ের শুরুতে যে ‘লেখক’দের নাম দেওয়া থাকে তাদের কারও কবিতা, গদ্য, গল্প লেখা থাকে না। যাদের লেখা থাকে তারা হলেন বাংলা ভাষাসহ অন্য ভাষার প্রধানতম কবি, সাহিত্যিকের। কিন্তু কবিতা-গদ্য-গল্প-নাটক না লিখেই এসব লেখক পাঠ্যপুস্তক রচয়িতার মর্যাদা ভোগ করছেন দিনের পর দিন! কই স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে কাউকেই তো এ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেখিনি! কেউ তো বলেনি তারা সংকলনকারী ও সম্পাদক, রচয়িতা নন! আর আমাদের সংকলনকারী সম্পাদকদেরও নৈতিকতা বা সততার বালাই নেই। তারা নিজেরাও সংকলনকারী-সম্পাদক পরিচয় না দিয়ে রচনাকারী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে থাকেন। অনেকে তো পাঠ্যপুস্তকে নিজের নাম লেখা পৃষ্ঠা বা লেখক হিসেবে সরকারি চিঠির ছবি তুলে ফেইসবুকে দিয়ে আত্মশ্লাঘা প্রকাশ করেন।
বছরের পর বছর ধরে যেখানে সংকলিত বিষয় চলছে সেখানে, নতুন শিক্ষাক্রমে হুট করে বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের কিছু অংশ ‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ডট ওআরজি’ থেকে নিয়ে গুগল ট্রান্সলেটরে ভাষান্তর করে হুবহু ছাপিয়ে দেওয়াকে চৌর্যবৃত্তি বলা যায় কি? আমরা সদ্য শেখা প্লেইজারিজম শব্দটির যত্রতত্র ব্যবহার করছি না তো? প্রশ্ন দুটি উত্থাপন করার কারণ হচ্ছেআমরা আসলে রচনা, সংকলন ও সম্পাদনাকে এক করে দেখছি।
ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলোর স্থানিক রূপ থাকে। প্রতিটি জনপদের ভিন্ন ভিন্ন গল্পগাথা, জন্মের ইতিহাস, নৃ-তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য আলাদা। এগুলো প্রতিনিয়ত নির্মাণ হতে থাকে। বাংলাদেশে তো সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাস নতুন করে লেখা হতে থাকে! কিন্তু প্রকৃতি বিজ্ঞান বা ন্যাচারাল সায়েন্সের ইতিহাস সাহিত্য বা সমাজবিজ্ঞানের পথে হাঁটে না। এদের থেকে উল্টো রথে চলে প্রকৃতি বিজ্ঞান। এর সৌন্দর্যই হলো এর কোনো স্থানিক রূপ নেই। মৌলিক পরমাণুর সংখ্যা, মাধ্যাকর্ষণ, জীবের বৃদ্ধি ও বংশগতি প্রভৃতি বিষয় দেশ, ব্যক্তিবিশেষ বা সময়ের হাতের ইশারায় চলে না। প্রকৃতি বিজ্ঞান চলে তার নিজস্ব নিয়মে। সমগ্র বিশ্বের বিদ্যালয়েই যুগ যুগ ধরে বিজ্ঞানে একই বিষয় পড়ানো হয়। চৌর্যবৃত্তি বলার আগে আর একটি বিষয় স্মরণ রাখা প্রয়োজন তা হলোপ্রতিটি মাধ্যমের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে, যা তাকে অন্য মাধ্যম থেকে পৃথক করে। গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা, গবেষণা নিবন্ধ, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন এসবে লেখক তার সৃষ্টিকে নিজের বলে দাবি করতে পারেন। কিন্তু পাঠ্যপুস্তক রচয়িতাদের সেই সুযোগ নেই। এখানে সম্পূর্ণটাই দলগত কাজ। আর তা ছাড়া গবেষণা নিবন্ধে যেমন তথ্যসূত্র উল্লেখ করার সুযোগ আছে এবং আর সে কারণেই গবেষণা নিবন্ধে তথ্যসূত্র উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু পাঠ্যপুস্তকে তথ্যসূত্র উল্লেখ করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু কেন তথ্যের উৎসের উল্লেখ করার সুযোগ নেই এবং তথ্যের উৎস প্রবর্তনের দাবি করার যৌক্তিকতা নেই সেই নিয়ে আলাপ জারি রাখা যায়। কিন্তু একে সরাসরি চৌর্যবৃত্তি কি বলার সুযোগ আছে?
বিগত বছরগুলোতে আমাদের দেশে বিশেষ করে বাংলা, সমাজ, বিজ্ঞান বইগুলো কতটুকু লেখক রচনা করেন? প্রায় সবই তো সংকলন করা। বরং ২০২৩ সালের নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ্যপুস্তক রচয়িতাদের খানিকটা খাটাখাটুনি গেছে। কিছু অংশ তারা নিজেরা মাথা খাঁটিয়ে লিখেছেন। এর আগ পর্যন্ত শিক্ষার ‘মান’ বাড়ানো বলতে আমাদের শিক্ষাবিদরা বুঝেছেন, উঁচু শ্রেণির বিষয়বস্তুকে খানিকটা আকারে ছোট করে নিচের শ্রেণিতে ঢুকিয়ে দেওয়া। গরুর সাইজ ছোট করে আঁকলেই বাছুর হয়ে যায় না, এটা তারা এত দিন বোঝেননি। বাছুরের অবয়ব স্পষ্ট করতে গেলে অপরিপক্ব দৈহিক গঠন, চকিত চাহনি, চপলতা সবকিছুই ফুটিয়ে তুলতে হয়; অনেক বিলম্বে হলেও শিক্ষাবিদরা তা বিবেচনায় নিয়েছেন। নতুন শিক্ষাক্রমে দেখলাম শিক্ষাবিদরা শিক্ষার্থীদের ধারণ ক্ষমতাকে বুঝতে আন্তরিক হচ্ছেন। আমার কাছে মনে হচ্ছে, সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগকারীরা নিজেদের অজান্তেই লেখকদের পুরস্কৃত করে ফেলছে! কারণ, আমাদের দেশের পাঠ্যপুস্তক সংকলনকারী ও সম্পাদনকারীকে যদি পাঠ্যপুস্তক রচনাকারীর মর্যাদা দেওয়া হয় তবে; রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বা তলস্তয়কে কোথায় ঠাঁই দেব? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বভারতীর ছাত্রদের জন্য নিজে পাঠ্যপুস্তক রচনা করেছেন এবং অন্য সহযোগীদের দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর একের পর এক পাঠ্যপুস্তক রচনা করেছেন। এই পাঠ্যপুস্তক রচনার জন্য তাকে তৎকালীন সাহিত্যসমাজ থেকে কম তিরস্কার শুনতে হয়নি! বঙ্কিমচন্দ্র ঈশ্বরচন্দ্রকে নিছক জ্ঞান করতেন পাঠ্যপুস্তক প্রণেতা হিসেবে। আর আমাদের পাঠ্যপুস্তক সংকলনকারীরা কোনো কিছু রচনা না করেই রচনাকারীর মর্যাদা পায়! সৌভাগ্যবান আমাদের লেখকরা আর দুর্ভাগা দেশের শিক্ষার্থীরা।
লেখক : পিএইচডি গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরোভিচ পুতিন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। গর্বাচেভ এবং ভদকাবন্দনাপীর ইয়েলেৎসিনের চেয়ে খারাপ লোক। সম্ভবত স্তালিনের চেয়েও খারাপ লোক। তাকে ইভান দ্য টেরিবেল বলতে পারলে ভালো হতো। গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই তার আচরণে এবং রাশিয়ায় অর্থাৎ রুশ ফেডারেশনে। তার সবচেয়ে বড় মিত্র গণপ্রজাতন্ত্রী চীনেও গণতন্ত্র নেই। দুই অগণতন্ত্র (একটা সাবেক ও একটা বর্তমান কমিউনিস্ট দেশ) এবং সর্বাত্মকবাদ (টোটালিটারিয়ানিজম) এখন বাণিজ্যিক-রাসায়নিক হালুয়া পাকাচ্ছে, ডলারকে নাকচ করে দেওয়ার জন্য। পুতিন জঘন্য; কমরেড ইয়েলেৎসিনের মতো ভালো লোক নয় ভদকার রাজ্যে বসে ভদকা খায় না। এটাই পুতিনবিষয়ক পাশ্চাত্য ভাষ্য। অল্টারনেট ভার্সন অব দ্য হলি স্ক্রিপচার।
রাশিয়া ও চীনের আরেক মিত্র উত্তর কোরিয়া। সেখানেও গণতন্ত্র নেই। কী বিতিকিচ্ছিরি দোস্তালি রে বাবা! ব্রুটস অ্যান্ড ব্রুটাস! চীন তো করোনাময়ীর রাসলীলা। পুতিন বরং রাসপুতিন হলে খুব ভালো হতো। রাশিয়া হলো স্ল্যাভাসুরের দেশ, আর চীন হলো কিরাতাসুর। উত্তর কোরিয়াও অসুর। সবাই মিলে অসুরবনীপাল! বাংলাদেশও অসুরের দেশ বঙ্গাসুর। তবে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ এখন থাক। জিওপলিটিক্যাল ডাইসে বাংলাদেশকে নিয়ে খেলা করা যাবে না, আণ্ডা-গণ্ডা দেশও পশ্চিমা পলিসিতে এখন গুরুত্বপূর্ণ। সাবধানে কথা বলা পাশ্চাত্য ভদ্রলোকের লক্ষণ। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের পাশের দেশ ভারত। আবার চীনের সঙ্গেও তার ভাবসাব ইদানীং ভালো। ভারতকে নিয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক রসায়নের বিক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশকেও এই বলয়ে- গোবলয়ে না হলেও রাখতে হবে। অতএব বাংলা হেজিমনিক ডিসকোর্স থেকে আপাতত বাদ থাক। ঘুঘু ফসকে গেলে সমস্যা। ফাঁদে পড়বে কে? তাহলে চীনের বিরুদ্ধে তাকে কাজে লাগানো যাবে কি! চীনকে চেকে রাখতে না পারলে আবার রাশিয়া এসে হাজির হবে। শি-পুতিন সমীকরণটা বেশ জটিল। দে আর জেন্টিলস অর গোয়িমস। লং লিভ গর্বি, লং লিভ ইলি। ইউ আর দ্য প্রফেটস, হু কেম বিফোর দ্য জাজমেন্ট ডে। ইউ আর দ্য টার্মিনেটরস অব ইভিল। ডাউন উইথ পুতিন, রাদার সে রাসপুতিন।
ইউক্রেনের ওপর আশীর্বাদ বর্ষিত হোক। লং লিভ প্রিন্স ভলোদিমির জেলেনস্কি হু উইল লিড আস টু হেভেন, হোয়ার অলরেডি ইলি (কমরেড ইয়েলেৎসিন) হ্যাজ গন। প্রিন্স ভলোদিমিরস ইউক্রেন অ্যান্ড ইটস লিবারেটর ফোর্সেস আর ডুয়িং ওয়েল, ফাইটিং দ্য রাশান ডেমনস হিরোয়িকেলি। দে আর অ’সাম ইন প্লেয়িং পিয়ানো এরোটিকেলি এজ প্রিন্স ভলোদিমির জেলেনস্কি প্লেজ। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের বীরত্ব দেখার মতো। তারা বালাকলিয়া দখল করেছে, ইজিয়ুম দখল করেছে, ক্রাসনি লিমান দখল করেছে, কুপিয়ানস্ক দখল করেছে। মাঝেমাঝেই তারা রাশিয়ার ভেতরে হামলা চালাচ্ছে। রাশিয়া দখলকৃত এসব জায়গা আবার দখল করতে পারেনি। বরং রাশিয়া খেরসনে দিনিয়েপার নদীর পশ্চিম পাশ অর্থাৎ খেরসন শহর ছেড়ে এসেছে ইউক্রেন বাহিনীর হাতে। কী লজ্জার বিষয়। একদিন ইউক্রেন ক্রিমিয়া দখল করবে। দনবাস তো দখল করবেই। গড ইজ উইথ দেম। স্বর্গোদ্যান রক্ষায় নিয়োজিত চেরাবগণ (চেরুবিম, বাইবেল) ঘূর্ণায়মান বিদ্যুত্তলোয়ার নিয়ে তাদের সঙ্গে শামিল হয়েছে, যেন একেকজন শামিল বাসায়েভ- ইউক্রেন শ্যাল ওভারকাম রাশিয়া সাম ডে। সারা বিশ^ এখন ইউক্রেনের পাশে শুধু ইউক্রেন ছাড়া!
পুতিন এবং তার জেনারেল স্টাফ হারছিলই এবং পাশ্চাত্যপুরাণের (যথা বিবিসি, সিএনএন প্রভৃতি) বিবরণ অনুযায়ী তার এবং তাদের জেতার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ বুচায় সব বুজায়া গেছে। কমেডিয়ান প্রিন্স ম্যাডিস্কি জেলেনস্কি এবং হেনস স্টলটেনবার্গের ডুমস ডে ফাইটারস অব ন্যাটো (নর্থ আটলান্টিক টেরোরিস্ট অর্গানাইজেশন) বীরত্বগাথা লিখছিল ভুন্ডারবাফেন দিয়ে, একদা হের গিৎলার যেমন লিখতে চেয়েছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নে। প্রসঙ্গত, রুশীরা হিটলারকে বলে গিৎলার। জার্মান ভুন্ডারবাফেনের আভিধানিক অর্থ আজবাস্ত্র (আজব-অস্ত্র) বা ওয়ান্ডার-উইপন; একে তাজ্জবাস্ত্র, বিস্ময়াস্ত্রও বলা চলে। ভারতীয় উপমহাদেশের (বিশেষ করে বাংলা) পরিভাষায় বলা যায় দিব্যাস্ত্র। অগণিত দিব্যাস্ত্র আসছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো থেকে। আর পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমে অ্যাংলো-জায়নিস্ট পাকাল মুসাবিদায় ইউক্রেনের ‘লাখে লাখে সৈন্য কাতারে কাতার, গুনিয়া দেখ মাত্র কয়েক হাজার’ অবস্থা। এমন দশাতেই ভুন্ডারলান্ডিশ্চে আলিসা (অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড) গিয়ে হাজির হলো ইউক্রেনের সবজিক্ষেতে, শশকের পিছে দৌড়াতে দৌড়াতে। আঁতিপাঁতি করে খুঁজছে সে সেই কন্দর, যাতে ঢুকে পড়ে সে পৌঁছেছিল ওয়ান্ডারল্যান্ডে। কিন্তু সবজিক্ষেত এখন মাইনফিল্ড। ফলে মাইন খুঁজতে সে ব্যস্ত হয়ে পড়বে এবং ঢুকে পড়বে ভুন্ডারল্যান্ডে আলিসার অদ্ভুত জগতে।
দিব্যাস্ত্র এখন এত বেশি যে এসব এখন- আফটার দ্য গ্র্যান্ড রিসেট- ডালভাত হয়ে গেছে। সুপারসনিক অস্ত্র বা ভুন্ডারভুন্ডারবাফেনও বিবেচনায় ঠিক আসতে চায় না। এখন আলোচিত বিষয় হলো হাইপারসনিক অস্ত্র- গাণ্ডিব। নইলে প্যানিকই সৃষ্টি করা যাবে না। এই যে গণ্ডায় গণ্ডায় অবসলিট তথা অচল ট্যাঙ্ক ইউক্রেনকে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করছে পশ্চাতিনারা (কালেকটিভ ওয়েস্ট) তাতে কার পশ্চাৎ তারা বুঁজাবে ঠাহর করা যাচ্ছে না। রাশিয়া, চীন ও উত্তর কোরিয়ার হাতে এখন সব মাখাস্ত্র, যেসব অস্ত্রের ক্যাপাসিটির তোলাদণ্ড হচ্ছে মাখ (১ মাখ সমান শব্দের গতিবেগ)। ওরা যথাক্রমে ২০, ১৯ ও ১৬ মাখের কারবারি। মাখীয় অস্ত্রের মু-ুতে থাকে এখন পরম ব্রহ্মাস্ত্র- ভুন্ডারভুন্ডারভুন্ডারবাফেন। তা ট্যাঙ্কজাতীয় এসব নন-সনিক অস্ত্রে কি কাজ হবে! ব্রহ্মাস্ত্রেও যখন কাজ হতে চায় না। আর ইউক্রেনের মতো গা-ু বাহিনীর হাতে পড়লে গাণ্ডিবের কী হবে?
জার্মান সেনাবাহিনীর ব্রিগেড জেনারেল এরিক ভাডের ভাষ্য-
‘
‘as did the Inspector General of the German Armed Forces, General Eberhard Zorn, who, like me, warned against overestimating the Ukrainians’ regionally limited offensives in the summer months. Military experts – who know what’s going on among the secret services, what it’s like on the ground and what war really means – are largely excluded from the discourse. They don’t fit in with media opinion-forming. We are largely experiencing a media synchronization that I have never experienced in …Military operations must always be coupled with attempts to bring about political solutions. The one-dimensionality of current foreign policy is hard to bear. She is very heavily focused on weapons. The main task of foreign policy is and remains diplomacy, reconciliation of interests, understanding and conflict management. … again as to what should happen with the deliveries of the tanks at all. To take over the Crimea or the Donbass, the martens and leopards are not enough. In eastern Ukraine, in the Bakhmut area, the Russians are clearly advancing. They will probably have completely conquered the Donbass before long. One only has to consider the numerical superiority of the Russians over Ukraine. … . We expect that the outcome of this conflict will reshape Europe’s outdated security architecture and force a realignment that will mark the end of the unipolar era.
(Ukraine: Is the Hammer About to Fall?; MIKE WHITNEY , JANUARY 17, 2023; https://www.unz.com)
লোগানস্ক ও দনেৎস্কে ফ্রন্টলাইন-পরিস্থিতি রাশিয়ার অনুকূলে। একটু একটু করে এগুচ্ছে রুশ ও দনবাস মিলিশিয়ারা। বাখমুত ও সলেদারে তাদের অগ্রগতি ভালো। সলেদার এরই মধ্যে রাশিয়ার দখলে গেছে। বাখমুতও যাবে যাবে করছে। পুতিন কী যেন একটা করতে যাচ্ছেন। প্রতিদিন ইউক্রেনের ২৫০-৩০০ সেনা মারা যাচ্ছে বলে রাশিয়ার এবং কিছু বিদেশি সংবাদ মাধ্যমে বলা হচ্ছে। সোলেদার রুশ প্রাইভেট মিলিটারি বাহিনী ভাগনার পিএমসির দখলে। পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমে সেসব খবর অবশ্য নেই। পুতিনবাহিনী হারবে না এটাই মনে হচ্ছে। পাশ্চাত্যের কোনো সচেতন লেখক একথা বলছেন না যে, পুতিন উদ্যম হারিয়েছেন। তবে একথা ঠিক খেরসন সিটি এবং আরও কিছু এলাকা থেকে রুশ বাহিনী পিছু হটেছিল। পশ্চিমা প্রেস্টিটিউট বলছে, রাশিয়া পিছটান দিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক অভিযান বলছে অন্য কথা- এটা তাদের কৌশল। যেমন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একি ভাড বলেছেন। রাশিয়ার বাহিনীর শীতকালীন ভুন্ডারঅপারেশনে কী যে হয়! কেয়ামতের লক্ষণ দেখছেন অনেকেই- যেন আজবদেশে গিয়ে অ্যালিস খরগোশের গর্তে বসে ওয়ার ভিডিও দেখছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লেনিনগ্রাদ, স্তালিনগ্রাদে কী ঘটেছিল তার কথা আমরা ইতিহাসের পাতা থেকে জানি। এবার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় তেমন কিছু ঘটতে যাচ্ছে। ইউক্রেনের পাল্টা হামলায় ক্রিমিয়া কী হবে তা না হয় ড্রিমস্লিপের মধ্যেই থাকুক। কিংবদন্তির রাশিয়ান মাইটের সামনে ছায়ার যুদ্ধে (প্রক্সি যুদ্ধে) যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো ও ইইউ জিততে পারবে কি?
মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল মাইক মিলির ভাষ্য, চলমান যুদ্ধে জেতা ইউক্রেনের জন্য আসলেই কঠিন। আর যুদ্ধটা হয়তো এ বছর শেষ হবে না। রাশিয়া হয়তো জিতবে কিন্তু এ জেতাতেও বর্তমান বৈশ্বিক দ্বন্দ্বের অবসান সম্ভবত হবে না। মার্কিন আধিপত্যের ম্যাট্রিক্স ফিল্ডে অনেকগুলো সমীকরণ থেকে যাচ্ছে। সবগুলোর সমাধান হওয়া দরকার। ইউক্রেনের যুদ্ধের অভিঘাত ডাইনে-বায়ে অনেক অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে। জেলেনস্কির সাবেক উপদেষ্টা আলেক্সি অরেস্তোভিচ বলেছেন, এ যুদ্ধে ইউক্রেন জিতবে না। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের (ওরফে বোজো) ভুল একটা হয়েছিল ২০১৪ সালেই, যার জের টানছে পশ্চিমা বিশ্ব। ইউক্রেন যখন গত মার্চে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে পৌঁছাতে যাচ্ছিল তখন বোজো প্রায় গোপনে ইউক্রেনে এসেছিলেন। এবং ধারণা করা চলে তিনিই ওয়ান্ডারল্যান্ডের অ্যালিস। খরগোশের গর্তে বসে কী যেন কী করলেন, আর বুচায় হত্যাকাণ্ড ঘটে গেল। ইউক্রেনের শান্তি প্রক্রিয়াও থেমে গেল। নোয়াম চমস্কিকে এখন বলতে হচ্ছে- লেখক :
World moving closer to ‘irreversible’ disaster – The world is teetering on the brink of the abyss due to an increased risk of nuclear war, failure to address environmental challenges, and diminished ability to tackle problems rationally, world-renowned philosopher and linguist Noam Chomsky told RT. (https://www.rt.com)
লেখক: সাংবাদিক
১৯২১ সালের ৩১ জানুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার নাগবাড়ির এক জমিদার পরিবারে জন্ম হয় আবু সাঈদ চৌধুরীর। বাবা আবদুল হামিদ চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের স্পিকার ছিলেন। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ইংল্যান্ড থেকে ব্যারিস্টারি পাস করেন। ১৯৪৮ সালে ঢাকা হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬১ সালে হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন। ১৯৭১ সালে জেনেভায় অবস্থানকালে পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যার প্রতিবাদে উপাচার্য পদে ইস্তফা দেন। মুজিবনগরে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ দূত হিসেবে জেনেভা থেকে লন্ডন যান এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে সচেষ্ট হন। দেশে ফিরে ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালের ১০ এপ্রিল পুনরায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। পরে বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক বিশেষ দূত এবং বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায় বন্দর ও নৌপরিবহনমন্ত্রী হয়েছিলেন। এরপর খোন্দকার মোশতাক আহমদের মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি নির্বাচিত হন। আবু সাঈদ চৌধুরী ১৯৮৭ সালের ২ আগস্ট লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন।
ইংরেজি সাহিত্যের পুরনো একটি ক্ল্যাসিক উপন্যাস চার্লস ডিকেন্সের গ্রেট এক্সপেক্টেশন থেকে মিস হাভিশামের একটি স্থির দৃশ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাইবেদিতে পড়ে থাকা এক নববধূকে দেখা গেল তার বাকি বছরগুলোর জন্য স্থির সময়ের মধ্যে আটকে থাকতে, সেই থেকে তিনি সব সময় বিয়ের পোশাক পরা, একটি স্থিরদৃশ্যে আটকা পড়ে আছেন, যখন কি না তার পৃথিবী ভেঙে পড়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওপর বিবিসির দুই পর্বের তথ্যচিত্রটিও আমার ওপর একই ধরনের প্রভাব ফেলেছিল। মনে হলো পুরনো লেস আর সাদা জামা পরা সেই নববধূর দিকে তাকিয়ে আছি আমি, সময়ের সঙ্গে যা বড় বেমানান। আমি তা-ই ব্যাখ্যা করব এ লেখায়।
আমার মতো কাক্সিক্ষত ও বিধ্বংসী দর্শকদের কাছে তথ্যচিত্রটি নতুন তদন্ত প্রতিবেদন হিসেবে আগাম বেচা হয়েছিল, যা নতুন তথ্য সামনে আনবে এবং এমন কিছু দেখাবে, যা আমরা আগে দেখিনি। উদার বামপন্থি বেশ কিছু মানুষের চমকপ্রদ অংশগ্রহণ ছিল, যাদের আমি সব সময়ই প্রশংসা করে থাকি এবং ভবিষ্যতেও করব, এবং আমার নায়ক হিসেবেই থাকবেন তারা। অরুন্ধতী রায়, যে লেখিকা কখনো তার কথার বরখেলাপ করেননি। আকার প্যাটেল, একজন অ্যাক্টিভিস্ট এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভারতীয় প্রধান। তিনি বেশ ভালোভাবেই তার নিরলস লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। সিদ্ধার্থ ভারদারাজন, আমার প্রিয় সাংবাদিকদের একজন এবং তিনি সর্বশেষ স্বাধীনভাবে দাঁড়িয়ে থাকা প্রেস স্পেসের প্রতিষ্ঠাতা। এ ছাড়া দ্য ক্যারাভান ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতা হর্তোষ বল। ক্রিস্টোফ জাফরেলট, হিন্দু অধিকার নিয়ে প্রচুর গবেষণা ও লেখালেখি করা একজন সুপরিচিত শিক্ষাবিদ। এমন সেরা ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেওয়া সত্ত্বেও, বিবিসি ওই তথ্যচিত্রে তাদের এমনভাবেই তুলে ধরেছে যে নতুন কিছুই বলা হয়নি।
তথ্যচিত্রটির জন্য ক্ষমতায় থাকা শাসকরা নিজেরাই দুর্ভোগের শিকার বলে আরও একবার অপপ্রচার চালানোর সুযোগ পাবে। এতে যুক্ত বামপন্থিদের সমালোচনাকেও তারা নিজস্ব প্রয়োজনে কাজে খাটানোর সুযোগ পাবে। বিবিসি কার্যত ভারতের সেরা অ্যাক্টিভিস্ট, লেখক ও সাংবাদিকদের যারা তেজি, সজীব ও গতিশীল তথ্যচিত্রটিতে তাদেরই নিয়েছে। তাদের পুনরাবৃত্তিমূলক ও গৎবাঁধাভাবে একসঙ্গে এমনভাবে গেঁথে দিয়েছে যে দেখে মনে হয় যেন তারা স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, বিবিসি মিস হাভিশামের ছবিটির পুনরাবৃত্তি করেছে।
তথ্যচিত্রটির প্রথম পর্বের কথা বলা যাক। মোদি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সেই ২০০২ সালে ফিরে যায় ক্যামেরা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে সে সময়েই গণহত্যার ঘটনাটি ঘটে। অশুভ সংগীত বাজতে থাকে এবং এ সময় একটি অন্ধকার কম্পিউটার স্ক্রিন সামনে আসে। বড় ধরনের একটি তথ্য উদঘাটন হয় তাতেএখন আর গোপন নয় এমন একটি কূটনৈতিক বার্তা এটি, যেখানে একজন ব্রিটিশ কূটনীতিক অনুমান করেছেন, মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতার জন্য মোদি দায়ী এবং তিনিই পুলিশকে পিছিয়ে যেতে বলেছেন এবং জনতাকে তাদের কাজ করতে দেওয়ার আহ্বান জানান। একজন অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক এবং সাবেক ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিব জ্যাক স্ট্রের মতামত ছাড়া এই দাবির সমর্থনে কোনো নতুন প্রমাণ উপস্থাপন না করে বিবিসি ভারতে বিজেপি এবং তার মুখপাত্রদের প্রশ্ন তোলার সুযোগ করে দিয়েছে যে, ২০ বছর আগের একজন অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিকের কণ্ঠস্বর কেন সর্বজ্ঞ ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে? বিবিসি যদি কূটনৈতিক বার্তা ব্যবহার করে দেখাতে পারত যে, যেই ব্রিটেন এবং ইউরোপ মোদিকে রক্তপাতের জন্য দায়ী করেছিল সেই তারাই কীভাবে পাঁচ বছর না যেতেই তার গলা থেকে বড়শির এই আংটা খুলে নিয়েছিল, তাহলে তারা গল্পের নতুন মোচড় দেখাতে পারত।
গোঁধরা-উত্তরহীন প্রশ্ন
২০০২ সালের সহিংসতার বিষয়টি যখনই আলোচনায় এসেছে, বিজেপি সব সময় বলতে চেয়েছে যে, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আগের দিন একটি ট্রেনের বগি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, যেখানে ভিএইচপির ৫৯ জন হিন্দু কর সেবককে পুড়িয়ে ছাই করা হয়েছিল। বিবিসি এ বিষয়ে আরও কিছু কাজ করতে পারত, যা বিজেপিকে কঠিন কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি করত। প্রথমত, ৫৯ জন করসেবক বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণ করছিলেন। ট্রেনে আরও অনেকে ছিলেন যারা টিকিট কেটে উঠেছিলেন এবং জীবিত নামার সুযোগ পেয়েছিলেন। তারা আসলে কি দেখতে পেয়েছিলেন? তাদের কথা কেন ধামাচাপা দেওয়া হয়? যদি মুসলমানরাই আসলে ওই বগিতে আগুন দিয়ে থাকে, তবে সেই জীবিতদের কথা শোনার ক্ষেত্রে তো ভয়ের কিছু থাকার কথা নয়।
তথ্যচিত্রে পুড়ে যাওয়া ট্রেনের বগিতে বেশি মনোযোগ দিয়ে বিজেপির অস্বস্তি আরও বাড়ানো যেত। পুড়িয়ে ফেলার একটি তদন্ত সেদিনের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার করেছিল। আরও একটি তদন্ত হয়েছিল কয়েক বছর পরে, বিরোধী নেতা লালু যাদব যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন। উভয় তদন্তকে পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে দেখা হয়ে থাকে। বিবিসি কি এখানে কিছু মৌলিক প্রশ্ন ছুড়ে দিতে পারত না? নির্ধারিত স্টেশনের আগেই চেইন টেনে কেন ট্রেন থামানো হলো? মুসলমান এক মেয়ের শ্লীলতাহানি কি আসলেই করা হয়েছিল? এই গল্পগুলোর কী হয়েছিল এবং কেন এসব বিষয় হারিয়ে গেল?
এমনকি বিবিসি যদি দ্রুত গুগল সার্চও করতে চাইত, তাহলে ভিএইচপি সদস্যদের গল্প জানা যেত, যারা ট্রেনে অযোধ্যা (উত্তর প্রদেশে) থেকে গুজরাটে ফিরছিলেন। সেই দিন থেকে, ভিএইচপির এই সদস্যরা হয় তাদের সাংগঠনিক লোকদের আচরণে হতাশ কিংবা ভিএইচপি পরিবারে তাদের অবস্থান সম্পর্কে অসন্তুষ্ট ও বিভ্রান্ত বোধ করছে। কেন তাদের বিবেচনায় আনা হবে না?
ভারসাম্যের কর্মকাণ্ড
এবার আসি তথ্যচিত্রটির দ্বিতীয় পর্বে। এটি ভারতের গণপিটুনি দিয়ে শুরু২০১৫ সালে উত্তর প্রদেশের দাদরিতে, আখলাকের, এবং ২০১৭ সালে ঝাড়খণ্ডে, আলিমুদ্দিন আনসারির। এ তথ্যচিত্র মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক অপরাধের বিষয়ে মোদির নীরবতার সঙ্গে ২০১৯ সালে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরকে বিকল ও বিভক্ত করা, হিন্দুদের প্রতি পক্ষপাতমূলক নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) তৈরি, সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভকে হিংসাত্মকভাবে দমনকে সম্পর্কযুক্ত করে। যথেষ্ট মজাদারভাবে এই তথ্যচিত্রের বিরুদ্ধ সমালোচনাও যুক্ত করা হয়েছে অরুন্ধতী রায়ের কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘কেন আমি আপনার সঙ্গে এই তথ্যচিত্রে কথা বলব, শুধু যাতে কোথাও একটি রেকর্ড থাকে যে আমরা সবাই এর সঙ্গে একমত নই। তবে এ কোনোভাবেই সাহায্যের আহ্বান নয়, কারণ কোথাও থেকে কোনো সাহায্যই আসবে না।’
হিন্দু চরমপন্থিদের সহিংসতা ও ধর্ষণের আহ্বান এবং দিল্লির দাঙ্গায় পুলিশ সদস্যের লাথিতে মুসলমান হত্যার ভিডিওফিল্মটির সবচেয়ে জঘন্য এবং দেখা অসম্ভব অংশটি বিরোধী-তথ্য ও বাইট দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করা হয়েছে। আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের সাক্ষ্য এবং নিহত ফাইজানের মায়ের কথার পাশাপাশি বিজেপি নেতা স্বপন দাশগুপ্তের বিদ্বেষপূর্ণ এবং আত্মতুষ্ট কথাবার্তা যুক্ত করা হয়েছে। সেখানে তিনি আসলে দিল্লি দাঙ্গায় যে সহিংসতা হয়েছে তাকেই অস্বীকারের অপচেষ্টা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বড় পরিসরে ভাবলে, দিল্লির দাঙ্গা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। তবে মিডিয়ার কাছে তা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ এর অর্থ হচ্ছে কম পরিশ্রমেই আপনি হাতের নাগালে ভালো ফুটেজ পেয়ে যাচ্ছেন।’ এখন আমি যদি এই ফিল্ম তৈরি করতাম, আমি দাশগুপ্তের বক্তব্যর ফাঁপা দিকটি ফুটিয়ে তুলতে এর সঙ্গে সহিংসতার ফুটেজও সমান্তরালে তুলে ধরতাম। পুলিশ কর্র্তৃক মুসলিম পুরুষদের লাথি মেরে হত্যা এবং তাদের জাতীয় সংগীত গাইতে বলার ফুটেজ ব্যবহার করতাম। এরপর দর্শকরা মুখোমুখি হতেন দাশগুপ্তের ভয়াবহ সব অহংকারী কথাবার্তার, যা এই প্রশ্নকে সামনে আনেবিবিসি কি রুয়ান্ডা কিংবা আউশভিৎসের গণহত্যার ওপর তথ্যচিত্র বানানোর ক্ষেত্রে কুখ্যাত এসএসের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহার করে একই রকম ‘ভারসাম্য’ ধরে রাখার চেষ্টা করত?
এসব তথ্যচিত্র দিয়ে বিবিসি কী করতে চায়? তাৎক্ষণিকভাবে মনে আসে ১৯৬৫ সালে ইন্দোনেশিয়ায় গণহত্যার ওপর জোশুয়া ওপেনহাইমার নির্মিত দুই তথ্যচিত্রের কথা। যারা অপরাধী এবং তাদের কৃতকর্মের জন্য উল্লাস প্রকাশ করে থাকে, তাদেরই তিনি ক্যামেরায় তুলে ধরেছেন। তাদের ভাবনাকে ‘ভারসাম্য’ দেওয়ার কোনো চেষ্টা ছাড়াই তারা কারা তা দেখিয়ে দেয় তার তথ্যচিত্র দুটি। অ্যাক্ট অব কিলিং এবং দ্য লুক অব সাইলেন্সএই দুই তথ্যচিত্র ইন্দোনেশিয়ার রাজনীতিকে বেশ নাড়া দিয়েছিল। তথ্যচিত্র দুটি তৈরি ও প্রকাশের ক্ষেত্রেও দেশটির রাজনৈতিক মহল অংশীদার হয়েছিল। ভালো তথ্যচিত্র নির্মাণই শুধু এমন ভূমিকা রাখতে পারে।
যেখানে আঘাত লাগে সেখানে আঘাত করার উদ্দেশ্য নিয়েই এগোতে হবে। এজন্য অরুন্ধতী রায়, আকার প্যাটেল এবং সাফুরা জারগারদুই পর্বেও বিবিসির এ তথ্যচিত্রের নায়কদের মতোই আমাদের অবশ্যই সর্বব্যাপীভাবে অনুসন্ধিৎসু, সতেজ ও সাহসী হতে হবে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনটি মুসলমানদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট ছিল বলে সাফুরা জারগারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। এজন্য তাকে গর্ভবতী অবস্থায় ৭৪ দিনের জন্য কারাগারে কাটাতে হয়। আর বিবিসি কি না এ ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষায় ব্যস্ত।
লেখকঃ সাংবাদিক এবং ‘দ্য অ্যানাটমি অব হেইট’র লেখক। ভারতের উত্তর প্রদেশে বসবাস ও কর্মরত। ‘দ্য এআইডিইএম’ থেকে অনুবাদ : রথো রাফি
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করতে ঘুরেফিরে সংলাপের বিষয়টি আসছে। ক্ষমতাসীনদের তরফ থেকে প্রভাবশালী যেসব দেশ বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের বারবার সংলাপের রাস্তা বাতলেছেন। সেই রাস্তায় না চলে দফায় দফায় অনীহা দেখিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। হঠাৎ গত মঙ্গলবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের জনসভা থেকে বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমুর জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপে বসা সংক্রান্ত বক্তব্য ঘিরে আবার আলোচনায় এসেছে বিষয়টি। অবশ্য এ প্রস্তাব বিএনপির প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমুর মাধ্যমে আসা প্রস্তাবটি হাওয়া থেকে আসেনি। এটা যুক্তরাষ্ট্রকে এড়িয়ে তৃতীয়পক্ষকে সামনে এনে দায় এড়ানোর এক ধরনের কৌশল হতে পারে।
১৪ দলের জনসভায় আমু বলেছেন, প্রয়োজনে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হতে পারে। এ নিয়ে সরকারের তিনজন মন্ত্রী গতকাল কথা বলেছেন। দুজন বলেছেন, এমন কোনো সংকট হয়নি জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপ করতে হবে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সংকট সমাধানে আলোচনার বিকল্প নেই।
তবে বিএনপি আমুর এ প্রস্তাবকে আপাতত আমলে নিচ্ছে না। দলটির নেতারা বলেছেন, লিখিত প্রস্তাব দিলে ভেবে দেখবেন তারা।
প্রভাবশালী যেসব দেশ বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়, তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের বারবার সংলাপের রাস্তা বাতলেছেন। সেই রাস্তায় না চলে দফায় দফায় অনীহা দেখিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সংলাপে অনীহার কারণও উল্লেখ করেছে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দলটি। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও বিএনপির সঙ্গে সংলাপের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছিলেন। ফলে পথ হারিয়েছিল সংলাপ আলোচনা। তারা পরে গত মঙ্গলবার হঠাৎ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের জনসভা থেকে বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু সংলাপ বিষয়ে বক্তব্য দেন।
কূটনীতিতে দক্ষ কয়েকজন রাজনীতিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ কোনো সংস্থা নয় যে, কারও প্রস্তাবে মধ্যস্থতায় আসতে রাজি হয়ে যাবে। মধ্যস্থতা চেয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সহযোগিতা চাইলেই কেবল আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটি সাড়া দিতে পারে। সুতরাং সরকারেরও সায় রয়েছে এ প্রস্তাবে। তার আগে প্রতিক্রিয়া যাচাই করা রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া সুফল পাবে মনে করলে সরকার সে পথে যেতে পারে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের দুই সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, সংলাপের ব্যাপারে একেবার অনীহা থাকলে প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে এ ধরনের প্রস্তাব দেওয়ার মতো নেতা আমির হোসেন আমু নয়। সংলাপের ব্যাপারে সরকারের ভেতর-বাইরে অবস্থান যাই থাকুক, আমুর প্রস্তাবে সরকারের ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের ইশারা ছাড়া হয়নি।
এ প্রস্তাবের এক দিন পর গতকাল দলীয় একটি আলোচনা সভায় আমির হোসেন আমু বলেন, ‘এটা আওয়ামী লীগের বাড়ির দাওয়াত না যে, দাওয়াত করে এনে খাওয়াব। আলোচনার জন্য কাউকে বলা হয়নি, কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি।’ বর্ষীয়ান এ নেতা বলেন, ‘নির্বাচন হবে সংবিধানের ভিত্তিতে। সেই পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে বলা যায়। কিন্তু আলোচনার জন্য নয়।’ এর আগে মঙ্গলবার ১৪ দল আয়োজিত জনসভায় তিনি তার বক্তব্য প্রত্যাহার করেননি। কিছুটা কৌশলী বক্তব্য রেখেছেন গতকাল।
এ পর্যায়ে সংলাপের প্রস্তাব উদ্দেশ্যবিহীন মনে করে না ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতাও। তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ পর্যায়ে বিএনপিও কী প্রতিক্রিয়া দেখায় সেটাও দেখার আছে। প্রস্তাব গ্রহণ করলে এক ধরনের কৌশলে যাবে, প্রস্তাব নাকচ করলে দেশি ও বিদেশি মহলে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে এক ধরনের সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। সেই আশায়ও নতুন করে এ প্রস্তাব দিয়ে থাকতে পারেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ এ নেতা।
সূত্র জানায়, আলোচনায় উঠে এসেছে সরকার বা আওয়ামী লীগ এক ধরনের চাপে পড়েছে। আর সেই চাপ সামলে নির্বাচন তুলে নিতে সংলাপের রাজনীতিকে কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। ‘ব্যাকফুটে’ খেলে চার বা ছক্কা হাঁকাতে চায় বলে সংলাপের আওয়াজ দিয়েছে মাঠে। আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থাকে মধ্যস্থতায় রেখে সংলাপের আলোচনা নতুন কোনো শক্তিকে আলোচনায় আনার কৌশলও হতে পারে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী নেতা ও ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের একাধিক নেতাও দেশ রূপান্তরকে বলেন, শীর্ষ পর্যায়ের ইশারা ছাড়া আমু এমন প্রস্তাব কোনোভাবেই দেননি। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপের পথ দেখিয়ে মূলত তৃতীয়পক্ষকে আনতে পারে, রাজনীতিতে সে আলোচনা তুলতে চেয়েছেন।
আওয়ামী লীগের মধ্যমসারির নেতাদের একটি অংশ যদিও দাবি করেন, তাদের দলের প্রভাবশালী এ নেতার বক্তব্য সম্পর্কে তাদের কাছে কোনো ধারণা নেই। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমির হোসেন আমু জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপের যে প্রস্তাব দিয়েছেন সে সম্পর্কে তাদের পর্যায়ের নেতাদের কোনো ধারণা থাকার কথা নয়।’ দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মি আহমেদ বলেন, ‘এ বক্তব্য সম্পর্কে তারও কোনো ধারণা নেই।’
অবশ্য নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, একেবারেই হাওয়া থেকে এমন প্রস্তাব আসেনি। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মাধ্যমের প্রত্যাশা তো আছেই।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সংলাপ হতে পারে। হয়তো হবেও। কিন্তু সেই সময় এখনো আসেনি।’
আওয়ামী লীগ সিনিয়র নেতারা মনে করেন, সংলাপ ও আলোচনায় সমস্যা সমাধানে কখনই আগ্রহী নয় বিএনপি। ফলে সংলাপের ডাক দিয়ে দায় থেকে মুক্ত হতে পারবে আওয়ামী লীগ। সেই কৌশলে সংলাপ আয়োজনে গেলে ক্ষতি কি? সেই পরিকল্পনা থেকে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে আমু সেই পথ দেখিয়েছেন। তাছাড়া হঠাৎ যে চাপে পড়েছে সরকার সেখান থেকে বেরিয়ে আসা যায় কি না, সেটাও দেখা যাবে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপের প্রস্তাবে।
তবে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল দলীয় একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে আমরা আলোচনা করব, এটা নিজেদের সমস্যা, নিজেরাই সমাধান করব। বিগত নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী সংলাপের আহ্বান করেছিলেন। যেখানে বিএনপি দুবার সংলাপে অংশ নিয়েছিল। আলোচনার জন্য জাতিসংঘ কেন মধ্যস্থতা করবে? আমাদের দেশে এমন কোনো রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়নি যে জাতিসংঘের এখানে হস্তক্ষেপ করতে হবে।’
একইদিন রাজধানীতে আরেকটি অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘রাজনৈতিক যেকোনো সমস্যা সমাধানে আলোচনা প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ দল হিসেবে সব দলকে নিয়ে আলোচনা করে সমাধানে বিশ্বাসী।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে জনগণের ক্ষমতায় চলতে হবে। আর জনগণের ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে হলে সবার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তাই আলোচনার বিকল্প কিছু নেই।’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা বলছেন, লিখিত কোনো প্রস্তাব আসে সেটার জবাব কী দেওয়া যায় তা নিয়ে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে ওই প্রস্তাবে অবশ্যই ‘নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক’ যে নামেই ডাকা হোক, তা এজেন্ডায় থাকতে হবে।
ওই নেতা বলেন, গত মে মাসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপিকে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছিলেন। যদিও ৯ মে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপির অংশগ্রহণের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর থেকে দুই দলের আলোচনায় বসা না বসা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা রয়েছে।
গত সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে আলোচনার একপর্যায়ে এ প্রসঙ্গে এক নেতা জানান, হয়তোবা তাদের (ক্ষমতাসীনদের) কাছ থেকে প্রস্তাব (সংলাপ) আসতে পারে। কেননা সম্প্রতি তারা নরম সুরে কথা বলছে। তবে স্থায়ী কমিটির প্রায় সব সদস্যই এজেন্ডা ছাড়া সেই আলোচনায় যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে মত দেন।
সিনিয়র এক নেতা তার মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে বৈঠকে বলেন, ২০১৮ সালে শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করে আমরা তার সঙ্গে সংলাপে বসেছিলাম। সেই সংলাপে যেসব কথা তিনি দিয়েছিলেন, সেগুলোর একটাও তারা রক্ষা করেননি। আর ২০১৪ সালে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর মধ্যস্থতায় ৫ জানুয়ারি নিয়মরক্ষার নির্বাচন বলা হলেও ক্ষমতা এসে আর নির্বাচন দেয়নি আওয়ামী লীগ। তাই এবার বসতে হলে এজেন্ডা নিয়ে বসতে হবে। অপেক্ষাকৃত জুনিয়র এক নেতা বলেন, হঠাৎই আওয়ামী লীগ সংলাপের বিষয়ে কথা বলছে না। তারা বলতে বাধ্য হচ্ছে। আমাদের করণীয় ঠিক রেখেই তাদের সঙ্গে বসতে হবে। ওই এজেন্ডায় খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না। উনি (আমির হোসেন আমু) আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল স্পোকস ম্যান কি না এটা আমি জানি না। আমরা উনার বক্তব্যকে গুরুত্ব দেব কেন? আমি এর বেশি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না।’
জামালপুরের সরিষাবাড়ীর সোহরাব হাসান ও তার স্ত্রী হজে যাওয়ার জন্য চার দিন আগে ঢাকায় আসেন। আশকোনার একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন তারা। গত সোমবার তাদের ফ্লাইট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভিসা না হওয়ায় তারা এখনো যেতে পারেননি। তাদের এজেন্ট বলেছেন, তিন-চার দিনের মধ্যে ভিসা হয়ে যাবে এবং বিমানের একটি ফ্লাইটে জেদ্দায় যাবেন তারা।
সোহরাব হাসানদের মতো অন্তত ১৬ হাজার হজযাত্রীর ভিসা এখনো হয়নি। কবে হবে তা-ও কেউ স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না। তবে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হাব বলছে, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যেই সবার ভিসা সম্পন্ন করা হবে।
মন্ত্রণালয় গতকাল বুধবারের মধ্যেই সবার ভিসার বিষয়টি শেষ করতে বলেছিল। তা না হলে এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছিল। অন্যদিকে সৌদি সরকার বাংলাদেশকে লাল তালিকাভুক্ত করার হুঁশিয়ারি দিয়ে সতর্কবার্তা পাঠায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ৮ হাজার হজযাত্রীর ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আরও তিন দিন সময় চেয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
গতকাল আশকোনায় হজক্যাম্পে সরেজমিনে কয়েকজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, এজেন্সিগুলোর খামখেয়ালিপনায় ভিসা পেতে দেরি হচ্ছে। যাদের ভিসা হচ্ছে না তারা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। মন্ত্রণালয় আশার বাণী শোনাচ্ছে। ভিসাসহ আরও কিছু অভিযোগে ৯০টি হজ এজেন্টকে শোকজ করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। জবাব সন্তোষজনক না হলে তাদের আইনের আওতায় আনারও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানায়।
অপরদিকে, হজযাত্রী সংকট থাকায় বিমানের শিডিউল কিছুটা এলোমেলো হওয়ার পাশাপাশি ফ্লাইট বাতিলও হয়েছে। এসব ফ্লাইট নতুন করে চূড়ান্ত করছে বিমান। তা ছাড়া ফ্লাইটের সøট পেতে সৌদি আরবে চিঠি পাঠিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ১৬ দিনে ২৮ হাজার ৬৩১ জন হজযাত্রীকে সৌদি আরবে নিয়ে গেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।
আশকোনা হজ অফিসের পরিচালক সাইফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আল্লাহর ঘরে যাওয়ার জন্য যারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন, সবাইকে ২২ জুনের মধ্যে সৌদি আরব পাঠানো হবে। এখনো যাদের ভিসা হয়নি, তাদের আমরা সব ধরনের সহায়তা করছি। আমরাও অভিযোগ পাচ্ছি। আবার তা সমাধানও করা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, যেসব এজেন্সি ঘাপলা করছে, তাদের নজরদারি করা হচ্ছে। এখনো সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া করেনি ১৬৯টি হজ এজেন্সি। তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা দ্রুত বাড়ি ভাড়া করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জানা গেছে, চলতি বছর ১ লাখ ২২ হাজার ২২১ বাংলাদেশি হজ পালন করার অনুমতি পেয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯০ জন হজযাত্রীর ভিসা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ১৬ হাজারের মতো হজযাত্রীর ভিসা হয়নি। মক্কা-মদিনা বাড়িভাড়া, মোয়াল্লেমসহ সৌদি আরবের দেওয়া বিভিন্ন শর্ত পূরণ করতে না পারায় ভিসা পেতে দেরি হচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছে। তা ছাড়া ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে হজ এজেন্সিগুলোকে সৌদি আরব আরও কিছু শর্ত দিয়েছে। এর মধ্যে ফ্লাইটের টিকিট, প্রবেশ ও বের হওয়ার রুট এবং আসা-যাওয়ার তারিখ নিশ্চিত করা অন্যতম। কিন্তু এজেন্সিগুলো শর্ত পূরণ না করায় হজযাত্রীদের ভিসা পেতে দেরি হওয়ায় হজ ফ্লাইট নিয়ে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। বিমানের প্রায় প্রতিটি হজ ফ্লাইটইকে খালি আসন নিয়ে ছেড়ে যেতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে যাত্রীর সংকট দেখা দেওয়ায় বাতিল হয়েছে বেশ কয়েকটি ফ্লাইট। সমস্যা সমাধানে সপ্তাহখানেক আগে সৌদি সরকারের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তওফিক আল-রাবিয়াহ চিঠি পাঠিয়েছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানকে। এরপর ধর্ম মন্ত্রণালয় বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে কয়েক দিন আগে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া অন্যতম।
সূত্র জানায়, গতকাল বুধবারের মধ্যে ৮০ শতাংশ ভিসা সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশকে কড়া সতর্কবার্তা দেয় সৌদি আরব। অন্যথায় বাংলাদেশকে সৌদি আরবের বিধিনিষেধে পড়তে হতে পারে। এমনকি সৌদি সরকারের এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা না মানলে বাংলাদেশকে লাল তালিকাভুক্তও করা হতে পারে। সৌদি সরকারের এই নির্দেশনার বিষয়টি জানিয়ে সেখানকার বাংলাদেশ হজ অফিস ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠি পাঠায়। এর পরই মন্ত্রণালয় হজ এজেন্সিগুলোকে জরুরিভিত্তিতে ভিসা কার্যক্রম শেষ করার তাগিদ দেয়।
বিমানের মার্কেটিং শাখার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা জটিলতা দেখা দিয়েছে মূলত হজ এজেন্সিগুলোর কম পয়সায় প্যাকেজ ঠিক রেখে অতিরিক্ত মুনাফা লোটার মানসিকতায়; বিশেষ করে মদিনায় এ বছর মসজিদের আশপাশের বাংলাদেশি-অধ্যুষিত এলাকার সস্তার হোটেলগুলো সব ভেঙে দেওয়ায় এখন হজযাত্রীদের জন্য দামি বাড়ি ভাড়া নিতে হচ্ছে। এই বাড়তি ব্যয় এড়াতে এজেন্সিগুলো লম্বা সময়ের প্যাকেজের পরিবর্তে স্বল্পমেয়াদি প্যাকেজ নেওয়ার কৌশল অবলম্বন করছে। ঢাকায় হজযাত্রীদের ভিসা আবেদনের সময় সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়ার রসিদ প্রদর্শন না করলে ভিসা দেওয়া হয় না। এতে বেকায়দায় পড়ে হজ এজেন্সিগুলো। তারা হজ ঘনিয়ে আসার আগের সাত দিন ও শেষ হওয়ার প্রথম সাত দিনের মধ্যে দেশে ফিরিয়ে আনার হিসাব মাথায় রেখে বাড়িভাড়া নেয়। এই একটা কারণেই ঢাকার হজ এজেন্সিগুলো এখন শেষ মুহূর্তে হজযাত্রীদের জন্য বাড়িভাড়া নিয়ে ভিসার আবেদন করার কৌশল নিয়েছে। এতে হজযাত্রী সংকটে বিমান ও সাউদিয়ার বেশ কটি ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। এজেন্সিগুলো চাইছে স্বল্প মেয়াদি প্যাকেজের মাধ্যমে প্রতি হজযাত্রীর কাছ থেকে ৪০-৫০ হাজার টাকা লাভ করতে চায়। তাদের এই মুনাফাকেন্দ্রিক কৌশলের দরুন এত দিন প্রায় অর্ধেক ভিসা সম্পন্ন করা হয়নি।
গতকাল আশকোনায় হজক্যাম্পে গিয়ে দেখা গেছে, তারা ভিসার বিষয়ে ক্যাম্পের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছেন। তবে কড়াকড়ি থাকায় অনেকে ভেতরে ঢুকতে পারছিলেন না। ফরিদপুরের আবদুর রহমান বলেন, এলাকার একটি এজেন্সিকে প্রায় ৮ লাখ টাকা দিয়েছেন। তারা সঠিক সময়ে ভিসা করতে পারেনি। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে ঝগড়াও হয়েছে। তারা জানিয়েছে, তারা জোর দিয়ে বলেছে যে তিন দিনের মধ্যে ভিসার ব্যবস্থা করবে। ওই এজেন্সির লোকজনকে হজক্যাম্পে তলবও করা হয়েছে। তাদের সামনেই বলেছেন, ভিসার ব্যবস্থা করতে না পারলে যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নেবেন তারা। এখন অপেক্ষায় আছেন বলে জানিয়েছেন রহমান।
এ বিষয়ে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি শাহাদাত হোসাইন তসলিম জানান, সৌদি আরব এমন কৌশল সব সময় নিয়ে থাকে। এ নিয়ে নানা ধরনের আতঙ্ক ছড়ায়। অথচ ৮০ ভাগ ভিসা বুধবার পর্যন্ত হয়ে গেছে। এই হিসাবে আর মাত্র সর্বোচ্চ ১৬ হাজার হজযাত্রী বাকি রয়েছে। এ নিয়ে অযথা কোনো দুশ্চিন্তা বা আশঙ্কা করার কিছু নেই; বরং এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় হজ ব্যবস্থাপনা আরও সুন্দর ও সফলতার সঙ্গেই শেষ করতে পারবেন তারা। তিনি বলেন, শেষ সময়ে এসে ভিসা জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। ভিসার জন্য সৌদি আরবের দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে প্রতিটিই পূরণ করতে হয় এজেন্সির মালিকদের। একটিও পূরণ করতে ব্যর্থ হলে তারা ভিসা দেয় না।
শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘আমরা তথ্য পাচ্ছি অনেক এজেন্সি এসব শর্ত পূরণ করতে পারেনি বলে তাদের ভিসা দিচ্ছে না। হাবের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।’
বিমানের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনো অনেক হজযাত্রীর ভিসা হয়নি তা সত্য। তবে এজেন্সিগুলো আগাম টিকিট বুকিং দিয়ে রেখেছে।’ তিনি জানান, ১৬ দিনে ২৮ হাজার ৬৩১ জন হজযাত্রীকে জেদ্দা ও মদিনায় পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে সোমবার পাঠানো হয়েছে ১ হাজার ৭০৫ জনকে। ২২ জুন শেষ ফ্লাইট।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসা আনাসহ নানা কারণে ৯০টি হজ এজেন্সিকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। ওই নোটিসে বলা হয়, হজ কার্যক্রম পরিচালনাকারী সব এজেন্সিকে তাদের নিজেদের সব হজযাত্রীর ভিসা সম্পন্ন করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত নিবন্ধিত হজযাত্রীদের ভিসা ইস্যু করেনি; যা সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় অসহযোগিতার শামিল। এ ধরনের অব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় বিঘœ সৃষ্টি করেছে এবং সরকারের হজ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট নির্দেশনা উপেক্ষিত হয়েছে, যা ‘হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২১’-এর পরিপন্থী। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের কারণ বিদ্যমান বলেও নোটিসে জানানো হয়। সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলো সঠিকভাবে দিতে না পারলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, সব হজযাত্রীকে পরিবহনে নতুন করে আরও পাঁচটি ফ্লাইটের সøট দিতে সৌদি সিভিল এভিয়েশনকে অনুরোধ জানাতে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করে চিঠি পাঠানো হয়েছে কিছুদিন আগে। হজ এজেন্সিগুলোর কারণে এ পর্যন্ত বিমানের কটি ফ্লাইট ধারণক্ষমতার কম যাত্রী নিয়ে পরিচালিত হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়েছে, তা জানাতে সংস্থাটির এমডিকে মঙ্গলবার চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
ফ্লাইটের সøটের বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু ফ্লাইট না যাওয়ায় ক্যাপাসিটি লস হয়েছে। ওই ফ্লাইটগুলোতে যতসংখ্যক যাত্রী যাওয়ার কথা ছিল তা কমে গেছে। এ জন্য কিছু ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।
লিওনেল মেসি ঘোষণা দিলেন, ‘আমি ইন্টার মিয়ামিতে যাচ্ছি।’
রাতে স্প্যানিশ গণমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে এ ঘোষণা দিয়েছেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক।
ডারিও স্পোর্টকে তিনি জানান, ‘আমার ইউরোপের আরেক ক্লাব থেকে প্রস্তাব ছিল। কিন্তু ওই প্রস্তাব দেখিওনি, কারণ আমি ইউরোপে খেললে বার্সেলোনায় খেলতে চেয়েছে। বিশ্বকাপ জেতার এবং বার্সাতে না যেতে পারায়, এখন সময় যুক্তরাষ্ট্র লিগে খেলার এবং ভিন্নাভাবে ফুটবলকে উপভোগ করার। তবে দায়িত্ব থাকবে একই এবং আকাঙ্খা থাকবে জেতার এবং অবশ্যই ভালো করার। তবে আরো শান্তিপূর্ণভাবে।’
মেসি জানান, ‘বুসকেটস আর জর্ডি আলবার সাথে যোগাযোগ ছিল, কখনো তাদের সাথে একই জায়গায় যাওয়ার ব্যাপারে কথা হয়নি। আমি আমার সিদ্ধান্ত নিজে নিয়েছি।’
শৈশবের ক্লাব বার্সেলোনা থেকে মনের কষ্ট নিয়েই ২০২১ সালে স্পেন ছেড়ে ফ্রান্সের পিএসজিতে যোগ দিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। দু'বছর পর আবার বার্সেলোনায় ফিরতে চেয়েছিলেন খুব করে। তার জন্য বাধা হয়ে দাড়ানো লা ফিনান্সিয়াল ফেয়ার প্লে'র অনুমোদনও দিয়েছিল লিগা কর্তৃপক্ষ। মেসি চাচ্ছিলেন আগের বার তাকে যেভাবে চলে যেতে হয়েছিল বার্সেলোনা ছেড়ে, সেটা যেন না হয় পরে।
দুদিন ধরে এ নিয়ে কথাবার্তা হলেও বার্সেলোনা সেই নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। মেসির কাছে ছিল দুটি অপশন- সৌদি ক্লাব আল-হিলালের দুবছরে প্রায় ১ বিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাব গ্রহণ করা নয়তো মেজর লিগ সকারের ক্লাব ইন্টার মিয়ামির প্রস্তাব গ্রহণ করা। আল হিলালকে এক বছরের জন্য অপেক্ষায় থাকবে বলেছিলেন মেসি দুদিন আগে। বাকি ইন্টার মিয়ার প্রস্তাব। সেটাই গ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্রে ক্লাব ফুটবল খেলতে যাচ্ছেন।
মেসির সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি হচ্ছে ইন্টার মায়ামির। প্রতিবছর শেষ মেসি ক্লাব ছেড়ে দিতে পারবেন, না দিলে সয়ংক্রিয় ভাবে তিনি পরের বছর খেলবেন। বছর প্রতি ৫৪ লাখ ডলার পারিশ্রমিক পাবেন তিনি।
এবার অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ।
বুধবার কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় ২০২২-২৩ হিসাববছরের নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে লভ্যাংশের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোম্পানির সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে ১ জুন কোম্পানিটি ২০২১-২২ হিসাববছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করে।
কোম্পানি সূত্র জানায়, চলতি ২০২২-২৩ হিসাববছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে পণ্য বিক্রি করে আয় হয়েছে ৭৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। উৎপাদন, পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয় সমন্বয়ের পর কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা।
এতে করে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় বা (ইপিএস) দাঁড়ায় ৮৭ পয়সার কিছুটা বেশি।
তবে এফআরসির বিধান অনুযায়ী, শেয়ার মানি ডিপোজিটের বিপরীতে নতুন ইস্যু করা শেয়ার বিবেচনায় নয় মাসে ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৫৮ পয়সা। এই আয় থেকেই শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ অন্তর্বর্তী নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রায় ছয় বছর বন্ধ থাকার পর জাপানি বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনায় ঘুরে দাঁড়ায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। জাপানি প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশের তত্ত্বাবধানে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে উৎপাদনে ফেরে মৃতপ্রায় এমারেল্ড। উৎপাদিত রাইস ব্র্যান অয়েল বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৪৫ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগ ও নতুন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এমারেল্ডে প্রাণ ফিরিয়ে আনে মিনোরি।
রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় কোম্পানিটির প্রধান উদ্যোক্তা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ায় ২০১৬ সালে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এমারেল্ড অয়েলের। এ কারণে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে টানা পাঁচ বছর শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি। মিনোরির তত্ত্বাবধানে এখন লভ্যাংশ দেওয়া শুরু করেছে কোম্পানিটি।
মিনোরির নতুন বিনিয়োগের বিপরীতে গত ১০ এপ্রিল এমারেল্ড অয়েলের আরও ৩ কোটি ১৫ লাখ ৫৮ হাজার নতুন শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন দিয়েছে এসইসি, যা মিনোরি বাংলাদেশের নামে ইস্যু করা হবে। এর আগে বাজার থেকে এমারেল্ড অয়েলের ৪৬ লাখ শেয়ার কেনে মিনোরি বাংলাদেশ। নতুন শেয়ার যুক্ত হলে এমারেল্ড অয়েলের পরিশোধিত মূলধন ৯১ কোটি ২৭ লাখ টাকায় উন্নীত হবে।
ভূমি নিয়ে বিরোধ মীমাংসায় ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনালের বিচারক হবেন জেলা জজরা। এ ছাড়া প্রয়োজনে সিনিয়র সহকারী জজ বা সহকারী জজদেরও ট্রাইব্যুনাল মামলা নিষ্পত্তির জন্য বিচারক নিয়োগ করতে পারবে। এমন বিধান যুক্ত করে ১৯৫০ সালের স্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড টেন্যান্সি অ্যাক্ট (রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন) সংশোধনে জাতীয় সংসদে বিল উত্থাপন করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার সংসদে ‘স্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড টেন্যান্সি (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০২৩’ নামে এ বিলটি উত্থাপন করেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। পরে বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। ওই বিলটি পাস হলে ভূমি জরিপসংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রিতা কাটবে বলে মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন।
বিদ্যমান আইনে আছে, ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালের বিচারক হবেন যুগ্ম জেলা জজ। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার বিচারক নিয়োগ দেবে। এ বিধানের সঙ্গে নতুন ধারা যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে বলা হয়, এভাবে বিচারক নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত সরকার যুগ্ম জেলা জজদের ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজের ক্ষমতা দিতে পারবে। এ ছাড়া ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনাল থেকে স্থানান্তর করা মামলা নিষ্পত্তির জন্য এক বা একাধিক সিনিয়র সহকারী জজ বা সহকারী জজকে ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে সরকার নিয়োগ দিতে পারবে।
বিদ্যমান আইনে বলা আছে, ভূমি জরিপ আপিল ট্রাইব্যুনালের বিচারক হবেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক অথবা সাবেক বিচারক। কিন্তু দীর্ঘদিনেও এ আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়নি।
এটুআই বিল সংসদে : সরকারি সেবা ডিজিটালে রূপান্তর এবং নাগরিকের জীবনমানে সৃষ্ট সেবা অধিকতর কার্যকর ও টেকসই করতে এজেন্সি টু ইনোভেট (এটুআই) নামে একটি নতুন সংস্থা করা হচ্ছে। এজন্য এজেন্সি টু ইনোভেট বিল-২০২৩ জাতীয় সংসদে তোলা হয়েছে।
গতকাল স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে বিলটি উত্থাপন করেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এর আগে বিরোধী দলের সদস্যদের আপত্তি কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠনো হয়। বিলটির বিরোধিতা করে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেছেন, ‘জুনাইদ আহমেদ পলক যে নতুন কোম্পানি খুলতে বিল আনছেন, এটা হচ্ছে ঠিক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো। সব ব্যবসা-বাণিজ্যকে নিজ হাতে নেওয়ার একটা পাঁয়তারা।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।