
‘অগ্নিশিখার আলো হলো বাস্তবতার জ্ঞান, তার তাপ হলো বাস্তবতার বাস্তবতা, এবং তার সঙ্গে মিলন হলো বাস্তবতার সত্য অবস্থা।’ কিতাব আল-তাওয়াসিন, মনসুর আল-হাল্লাজ। ভাষান্তর : রায়হান রাইন।
১৯৪৩ সালে কাগজে জলরঙে ‘অপেক্ষা’ শিরোনামে ছবি এঁকেছিলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। ১৯৫১ সালে কাগজের বোর্ডে জলরঙে আঁকা তার আরেকটি চিত্রকর্মের শিরোনাম ‘ব্রহ্মপুত্রে ফেরিতে পার হতে অপেক্ষা’। কয়েকজন মানুষ নদীর পাড়ে মাথায় ও শরীরে চাদর জড়িয়ে নির্বিকারভাবে অপলক ও অনিশ্চয়তার দৃষ্টি নিয়ে বসে আছে। ধারণা করা যায়, ওই অপেক্ষায় গ্রামবাংলার সেই সব মানুষ শীতের তীব্র কনকনে ঠা-া থেকে মুক্তি চায়। কিংবা জীবনকে জর্জরিত করার নিয়তিকে করতে চায় পরাজিত। বলিষ্ঠ রেখায় আঁকা সেইসব মানুষ আমাদের কাছে এমনই অচেনা যাদের কথা ইতিহাসে স্পষ্ট করে লেখা নেই। তারা অপেক্ষায় আছে একটু উত্তাপের আশা নিয়ে। তাদের অপেক্ষার ইতিহাস এখনো বর্তমান। এবারের শীতকালেও পত্রিকায় প্রকাশিত আলোকচিত্র ও প্রতিবেদনে সেই সব মানুষদের একটু উত্তাপের অপেক্ষার চিত্র আমাদের চোখের সামনে এখনো কটাক্ষ করছে। কবে হবে এমন অপেক্ষার অবসান? কখনো কি তাদের নবতর কোনো ছবি আমরা দেখব?
ব্রিটিশ কবি ইদিট সিটওয়েল (ঊফরঃয ঝরঃবিষষ) শীতকাল নিয়ে লিখেছেন ‘আরাম করার সময় হলো শীতকাল, ভালো খাবার আর উষ্ণতার জন্যও, একটু বন্ধুত্বপূর্ণ হাতের স্পর্শ পেতে এবং আগুনের পাশে একটু আলাপ: এই সময়টি বাড়ির জন্য।’ শীতকাল হলো বাড়িতে ফিরে আসার হিসাবখাতা। এ হিসাব-নিকাশেই বাস্তবতা মূর্ত হয় সত্যে। সত্যের কাছাকাছি পৌঁছা মানে জীবনের অসন্তুষ্টি থেকে নির্বাণ পাওয়া। শীতকাল হলো সেই সময় যখন প্রাণিজগৎ প্রতিরোধ তৈরি করে। এ প্রতিরোধ এমনই যেখান থেকে ফিরে আসতে হয় ‘নতুন’ কিছু পাওয়ার আশায়। প্রাণ-প্রকৃতিতে শীতকাল আসে চক্রের মতো নিয়ম মেনে। যার থেকে আমাদের নিস্তার নেই। আমরা কেবল পারি প্রতিরোধ করতে।
শীতকালে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের মল চত্বর হয়ে যায় ভীষণ রকমের নীরব আর মাটিতে থাকে গাছ থেকে ঝরে যাওয়া অগুনতি শুকনো পাতা। সেই সময়ে আপন মনে নিজের সঙ্গে, সঙ্গীর সঙ্গে, সবার সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে জগতের সবকিছু থেকে নিজেদের আলাদা করে ফেলা যায়। করোনা মহামারীপূর্ব পৃথিবীতে লাল রঙের এক শীতের পোশাকে মলিন হলুদ রঙের মল চত্বরে সবার থেকে আড়াল হয়ে এক সঙ্গীকে নিয়ে হেঁটেছিলেন তরুণ আলোকচিত্রশিল্পী শাহাদাত হোসেন। তার তোলা আলোকচিত্র নির্দিষ্ট কোনো স্থানকে নির্দেশ করে না থাকে না কোনো ইঙ্গিত। শাহাদাত নিজেও এমনটি চান না বলে জানিয়েছেন। এর মানে কি তার তোলা ছবি বিশে^র যে কোনো স্থানের কথা বলে বা তা সবার কাছে প্রাসঙ্গিক? হয়তো যে কোনো স্থানেই তার আলোকচিত্র বর্তমান অস্তিত্বের নির্দশন। হয়তো মল চত্বরের সেই কুয়াশায় থাকা বিকালে শাহাদাতের শরীরে থাকা লাল রঙের সেই পোশাক দূর থেকে দেখা কোনো এক বিভ্রম! এর মধ্যেই শীতকালটা শেষ করার মায়ায় থাকতে হয় সবাইকে।
মল চত্বরের পাশেই এক কোনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায়শিক্ষা অনুষদের সামনে রয়েছে ‘মাল্রো বাগান’। সেখানে শিলালিপিতে লেখা রয়েছে ১৯৭৩ সালের ২১ এপ্রিল অঁদ্রে মাল্রোর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে দেওয়া এক বক্তৃতার অংশবিশেষ। তিনি বলছেন, ‘ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, আজ আমি প্রথমবারের মতো কথা বলছি পৃথিবীর একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সামনে যাদের শহীদদের সংখ্যা অনেক বেশি জীবিতের চেয়ে!’ জীবিত এসব মানুষদের জন্য সময় এগিয়েছে অনেক দ্রুত, আগের সবকিছু গিয়েছে বদলে বদলাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু চল্লিশ ও পঞ্চাশ দশকে আঁকা শিল্পচার্যের সেই চিত্র আমরা কতটুকু বদলাতে পেরেছি? কতটা সম্ভব হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ করা? গ্রামবাংলার এমন শীতকাল কবে ফিরবে বাড়িতে?
জানুয়ারি মাসে বিজনেস ওয়ার্ল্ডের সূত্রে যমুনা টিভির অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০২২ সালে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ১৬৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমুদ্র ও বায়ুমন্ডলীয় জাতীয় অধিদপ্তরের পরিচালক ড. রকি স্পাইনার্ড বলেছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন এবং চরম আবহাওয়ার কারণে ঝুঁকিতে পড়েছেন অতীতের তুলনায় বেশিসংখ্যক মার্কিনি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব পড়েছে মানুষের দৈনন্দিন জীবন, কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর খেলার জায়গাতেও।’
বৈশি্বক জলবায়ুর প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। মানুষের তৈরি করা আজ পৃথিবীতে প্রকৃতির আচরণ আর ‘স্বাভাবিক’ থাকছে না। এবারের শীতকাল আমাদের এমনটিই জানিয়েছে। এ বছরের ৭ জানুয়ারি ভোরের কাগজে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে শীতকালে তাপমাত্রা বেশি থাকলেও শীত বেশি অনুভূত হওয়ার প্রধান কারণ হলো জলাভূমি, খাল-বিল, নদী-নালার পরিমাণ কমে কংক্রিটের অবকাঠামো বেড়ে যাওয়া।’ এছাড়া ২৪ জানুয়ারি প্রথম আলোতে ‘জলাভূমি, গাছপালা উজাড়, ঢাকায় শৈত্যপ্রবাহ আসে না’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও জলবায়ু গবেষক আশরাফ দেওয়ান বলেছেন, ‘ঢাকা শহরের অপরিকল্পিত নগরায়ণ এখানকার সুন্দর প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যকে ধ্বংস করে ফেলেছে। ঢাকায় শীতকাল ছাড়া বাকি সময়জুড়ে দিন ও রাতে একই ধরনের উত্তাপ বা গরম অনুভূত হয়।’ মানুষের তৈরি স্থানে প্রকৃতির এ বদলে যাওয়ার বিরুদ্ধে মানুষ কী করে প্রতিরোধ তৈরি করবে? মানুষ কি নিজেই তার স্থানচ্যুতির কারণ হিসেবে স্বীকৃতি নিচ্ছে?
তবুও সৃজনশীল মানুষ তার সৃষ্টিতে সাক্ষী রেখে যায় প্রকৃতির। বাংলাদেশি প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী কাজী গিয়াসউদ্দিন জাপানে আছেন দীর্ঘদিন ধরে। ঢাকার পাশে সাভারে করেছেন স্টুডিও। কাজী গিয়াসের আঁকা তেলচিত্রে সাদা রঙের প্রচুর ব্যবহার কেন সেটি জানতে চেষ্টা করেছেন তার মেয়ে লেখক ও মডেল কাজী মায়া। জাপানে জন্ম ও বড় হওয়া কাজী মায়া শৈশবে শীতকালে বাংলাদেশ ভ্রমণের স্মৃতি স্মরণ করেছেন তার বাবার সাদা রঙের ব্যবহারের কারণ জানতে। এক লেখায় তিনি লিখেছেন অনেকটা এভাবে সাভারের স্টুডিওতে দরজা খুলে দেখেছেন কুয়াশা ডাকা সকাল। জাপানের তুষারপাত নয়, তার বাবার চিত্রকর্মের থাকা সাদার উৎস সেই কুয়াশা। যদিও কাজী গিয়াসের ঢাকার স্টুডিওর চারপাশে রয়েছে সবুজ ঘাসের চত্বর। একজন সৃজনশীল মানুষের কাছে বিভিন্ন স্থানে থাকা এমন সব ‘বিশেষ’ নিয়ামকই তার সৃষ্টির উৎস। চেতনে-অবচেতনে তিনি এসব ধারণ করেন আজীবন।
এ কথার প্রেক্ষাপট থেকে বিবেচনা করা যেতে পারে, নিজের আত্মপরিচয় প্রসঙ্গে ভাষার প্রতি বাধ্যবাধকতা না থাকার বিষয়ে বলেছেন ঢাকা লিট ফেস্টের ১০ম আয়োজনে আসা তানজানিয়ায় জন্ম নেওয়া নোবেলজয়ী ব্রিটিশ কথাসাহিত্যিক আবদুলরাজাক গুরনাহ। সম্প্রতি প্রথম আলোতে প্রকাশিত তার এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেকেই তার পরিচয় মনে করেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলছেন, ‘আমার পরিচিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে শুধু নিজের নামটাই বলব। নিজেকে আমি কোনো বিশেষ পরিচয়ে বেঁধে দিতে চাই না।’ যদিও তার সৃজনজগৎ ইতিহাস, মানুষ, ভূগোল, ভাষা আর সময়ের ব্যাকরণে মিলেমিশে ব্যক্তিসত্তার বিষয়কে এড়িয়ে পৃথিবীর সঙ্গে সংলাপ রচনা করতেই আগ্রহী। শুধু ভাষা নয় আরও অনেক কিছুকে নিয়ে শীতকাল কি তবে বাড়ি ফিরবে এবার?
গত বছর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে ১৯তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ ২০২২-এ আয়োজিত সেমিনারের শিরোনাম ছিল ‘হোম অ্যান্ড ডিসপ্লেসমেন্ট’। সমাপনী বক্তৃতায় অধ্যাপক আহরার আহমদ বলছেন, ‘‘But if the idea of home is difficult to specify, the notion of displacement is more challenging. Is it possible to choose not to have a home, and live like wanderers, pastoralists and herders without any fixity or address?’’ মানুষকে স্থির করে শীতকাল। তার এ স্থির হওয়া কি কোনো স্থানে আটকে থাকা স্থবির হয়ে যাওয়া? না হলে কেনই-বা আমরা কেউ শুনছি না শীতের কষ্টে কোনো একভাবে প্রাণ নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষদের কথা?
প্রকৃতির বিচিত্র আচরণ এবং বৈশিষ্ট্যকে মোকাবিলা করেই মানব সভ্যতা সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে এগিয়েছে। অনেকেই একে বলছেন অগ্রগতি। এ অগ্রগতি কি প্রকৃতির বিরুদ্ধ আচরণকে প্রতিহত করে বেঁচে থাকা? নাকি বিদ্যা ও দক্ষতা অর্জনের মধ্য দিয়ে মানবসভ্যতার সত্য অবস্থান তৈরিতে ব্রত হওয়া? এই ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঢাকা আর্ট সামিটের ষষ্ঠ আয়োজন। ‘বন্যা’ এবারের প্রতিপাদ্য। বন্যার মতো দুর্যোগে ঘরবন্দি মানুষের জীবন কীভাবে সৃজনশীল হতে পারে তার একটি বড় উদাহরণ শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদের ১৯৮৫ সালের আঁকা ছাপচিত্র ‘জলের নিনাদ’। বন্যায় ঘরে তৈরি হওয়া জলাবদ্ধতায় স্থির পানির মধ্যে থাকা নানাকিছুর সন্নিবেশে তৈরি হয়েছে তার এ সৃষ্টি। আসলে জীবন না থাকলে শিল্প সৃষ্টি হয় না।
সবকিছুকে বাস্তব মনে করে, সব মুহূর্তকে আলিঙ্গন করে অগ্রসর হওয়াই জীবন ও সৃষ্টির অনিবার্য অর্থ। প্রকৃতির নানারূপে কীভাবে মানুষের তৈরি পৃথিবী গড়ে উঠবে সে বিচার কারা করবে? এ প্রশ্নের জবাব পাওয়া যেতে পারে নাট্যকার সারাহ্ কেইনের লেখা এবং সৈয়দ জামিল আহমেদের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় মঞ্চনাটক ‘৪.৪৮ মন্ত্রাস’-এর একটি সংলাপে, ‘এ পৃথিবীতে ধ্বংসই একমাত্র অবিনশ^র’। ধ্বংসই সৃষ্টির মূল সুর। এ চরম সত্য শীতকালে জ¦লে থাকা আগুনের মতো। যে আগুনের আলোয় প্রাণ পায় অস্তিত্বের সন্ধান। আবার বসন্তের হওয়ায় জীবন পায় নতুন স্পন্দন। সুযোগ হয় মানুষের একটি স্বপ্নের রাজ্য তৈরি করার। শীতকালের সুযোগ হয় বাড়ি ফিরে যাওয়ার।
লেখক: লেখক ও সাংবাদিক
‘ও মোর বানিয়া বন্ধুরে একটা তাবিজ বানাইয়া দে, একটা মাদুলি বানাইয়া দে’। কমবেশি গানটি অনেকেই শুনেছি। ‘বানিয়া’ বা ‘বেনিয়া’ আমাদের পরিচিত শব্দ। মানে যারা ব্যবসা করে। এশিয়ার বড় গ্রাম হবিগঞ্জের বানিয়াচং নামটিও নাকি এসেছে খাসি ভাষা থেকে, বেনিয়াদের ছোনং মানে বেনিয়াদের গ্রাম। খাসি ভাষায় ছোনং মানে গ্রাম। অনেকে আবার বেদেদের ভেতর সান্দারদের ‘বাইন্যা’ হিসেবে চেনেন, মানে যারা ফেরি করে বাণিজ্য করে। কিছুদিন আগেও প্রাচীন গঞ্জ ও মফস্বলগুলোতে ‘বাইন্যাতির দোকান’ ভাষাটি প্রচলিত ছিল। তো এই বেনিয়া, বানিয়া বা বাণিজ্য কারবারিরা নদীতীরের আশপাশে ঘাটের কাছে কোথাও বসতেন। সাধারণত তাদের বসতে হতো বৃহৎ কোনো গাছের তলায়। নদীতীরে গ্রামগঞ্জে এমন বৃহৎ গাছগুলো সাধারণত বট, অশ্বত্থ, তেঁতুল, পাকুড়, ছাতিয়ান, জারুল, শিমুল। হয়তো বটগাছের তলায় বেনিয়া বা বানিয়ারা বসতেন বলে একসময় ইউরোপীয় বণিকরা এই বটগাছকে ‘বানিয়াদের গাছ বা বানিয়ান ট্রি’ বলতে শুরু করেন। আর এভাবেই বাংলা বটের ইংরেজি নাম হয়ে যায় ‘বেনিয়ান ট্রি’। ভাষাবিদ কলিম খান বিষয়টি এভাবেই দেখেন। গাছের নামকরণের উৎস যাই হোক বৃহৎ গাছকে ঘিরেই আমাদের গ্রাম বা বসতি স্থাপনের বহু নামকরণ হয়েছে। বটতলা, পাকুড়তলা, শিমুলতলী, কড়ইতলী, কাঁঠালবাগান, হিজলতলী, বড়ইবাড়ি, ছাতিয়ানতলা, গাবতলী কত কী স্থাননাম জড়িয়ে আছে বহু গাছের স্মৃতি-বিস্মৃতি নিয়ে। সৌরজগতের এই ছোট্ট নীলগ্রহে গাছ সভ্যতার আদিবন্ধু। আজকের হোমো স্যাপিয়েন্স মানবপ্রজাতি থেকে শুরু করে ফ্লোরিয়েনসিস, ডেনিসোভান, নিয়ানডার্থাল কী হোমো ইরেকটাস সব মানবপ্রজাতি গাছেদের কাছে ঋণী। কিন্তু সভ্যতার দীর্ঘ পরিভ্রমণ ঘাঁটলে দেখা যায় মানুষ সবসময় গাছেদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকেনি, নতজানু হয়নি। বরং নৃশংসভাবে গাছেদের হত্যা করেছে, বিনাশ করেছে, রক্তাক্ত করেছে। আর এর পরিণতি হয়েছে বরাবরই ভয়াবহ। দুনিয়ায় যত বেশি গাছের বৈচিত্র্য ও সংখ্যা কমেছে তত বেশি প্রাণের বিলুপ্তি ঘটেছে। মানুষের সমাজে রোগব্যাধি ও নানামুখী অস্থিরতা বেড়েছে। তাপমাত্রা বেড়েছে, জলবায়ু উল্টেপাল্টে গেছে, বাস্তুতন্ত্র ক্ষয় হয়েছে, দুর্যোগ ও সংকট বেড়েছে লাগাতার। প্রতিটি নগরসভ্যতা গড়ে উঠেছে বহু বৃক্ষপ্রাণের জীবনের বিনিময়ে। ইনকা, মায়া, সরস্বতী, সিন্ধু, মেসোপটেমীয়, মিসরীয় বা গ্রিক সভ্যতার নগর নির্মাণ ও পরিকল্পনা কতটুকু বৃক্ষ সংবেদনশীল ছিল আমরা পুরোটা জানি না। কিন্তু আজকের নগর উন্নয়ন কর্মসূচি ও নগর পরিকল্পনা বৃক্ষসংবেদনশীল হতে হবে। কারণ গত দুশো বছরের প্রবল শিল্পায়ন ও নগরায়ণের চাপ ও ক্ষত আমরা বর্তমানে সামাল দিতে বাধ্য হচ্ছি। পৃথিবীর চারধারে আজ কার্বন বিষের পদচ্ছাপ। উল্টেপাল্টে গেছে জলবায়ু পঞ্জিকা। জলবায়ু সংকটের এই নিদারুণ বিপদের ময়দানে দাঁড়িয়ে আমরা কি আবারও নির্বিচারে গাছ কেটে, জলাভূমি উধাও করে, মাঠ-প্রান্তর গায়েব করে, বুনো প্রাণদের তাড়িয়ে একের পর এক কংক্রিট-প্লাস্টিক-কাচের শহর বানিয়ে যাব? এভাবে কি সবকিছু তাড়িয়ে কেবলমাত্র মানুষ এককভাবে বাঁচতে পারবে? বহু প্রমাণ আছে পারবে না, মানুষ পারছে না। গাছ, পাখি, পতঙ্গ, মানুষ, জলাভূমি, উন্মুক্ত প্রান্তর সব নিয়েই আজ সবার নগর গড়ে তোলার দাবি উঠেছে বিশ্বময়। আমাদের নগর পরিকল্পনাবিদ, রাজনীতিক, নীতিনির্ধারক, নগর উন্নয়নবিদ সবাইকে এই আওয়াজ বুঝতে হবে। অন্তরে ধারণ করতে হবে। সম্মান ও স্বীকৃতি দিতে হবে। আমরা বরাবরই দেখছি ঢাকাসহ যেকোনো শহরে সড়ক বা কোনো অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য নির্দয়ভাবে গাছেদের কেটে ফেলা হয়। এসব কর্মসূচির আগে কোনো ধরনের পরিবেশগত, প্রতিবেশগত ও সামাজিক সমীক্ষা ও যাচাই হয় কিনা আমরা জানি না। কিন্তু একটিবারও ভেবে দেখা হয় না, এভাবে একের পর এক গাছ কেটে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কেমন সর্বনাশ তৈরি করছি। এক একটি গাছ কেবলমাত্র একটি একক প্রাণসত্তা নয়, গাছের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে বহু প্রাণ। পতঙ্গ, পাখি, বন্যপ্রাণী, মানুষ। প্রতিটি নগরে বড় হয়ে ওঠা প্রতিটি গাছেদের সঙ্গে কত মানুষের নানা স্মৃতি জড়িয়ে থাকে। গাছেরা মানুষের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক স্মৃতির ধারক।
সম্প্রতি ঢাকার ধানম-ি সাত মসজিদ সড়কের বহু গাছ কেটে ফেলা হয়েছে এবং আরও গাছ মৃত্যুদ-ের আতঙ্ক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃক নিয়োগকৃত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সাতমসজিদ সড়কের গাছ কেটে সড়কদ্বীপ উন্নয়নের কাজ করছে। ধানম-ি অঞ্চলটি ঐতিহাসিক ও সামাজিকভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর বাড়ি থেকে শুরু করে বহু ঐতিহাসিক মানুষের স্মৃতিময় স্থল এটি। বর্ডার গার্ড সদর দপ্তর, আবাহনী খেলার মাঠ, ছায়ানট, বেঙ্গল গ্যালারি, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও এখানে। এককালের পা-ু নদী আজকের ধানম-ি লেক এখানেই। শিক্ষা, ক্রীড়া, শরীরচর্চা ও সাংস্কৃতিক অনুশীলন এবং চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলের প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশ সুরক্ষা বিষয়ে আমাদের গভীর মনোযোগ ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার জরুরি। গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকার একটি গাছ কেটে ফেলার আগে এর সামগ্রিক পরিবেশ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রভাবের বিষয়গুলো আন্দাজ করা জরুরি। কারণ এই এলাকার প্রতিটি গাছ এই অঞ্চলের সামগ্রিক প্রতিবেশব্যবস্থার সঙ্গে জটিলভাবে সম্পর্কিত। ইতিমধ্যেই আবাহনী মাঠের বিপরীতে স্টার কাবাব থেকে জিগাতলা পর্যন্ত বহু গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। অবশ্যই আমাদের নগর সম্প্রসারণ, সড়ক উন্নয়ন দরকার। কিন্তু একের পর এক গাছ কেটে নিশ্চয়ই নয়। ঢাকার মতো শহরে যেখানে সড়ক ও সড়ক বিভাজকে গাছ আছে সেখানে নতুনভাবে সড়ক সম্প্রসারণ বা সড়ক উন্নয়ন কর্মসূচি কীভাবে পরিবেশবান্ধব হতে পারে এ বিষয়ে আমাদের নীতিমালা দরকার। এই শহরে আমাদের খুব বেশি গাছ নেই। বিশেষ করে শহরের প্রবীণ গাছেদের বহু আগেই আমরা হত্যা করেছি। তাহলে কার ছায়ায় কার স্মৃতি মমতায় বড় হবে আমাদের আগামীর প্রজন্ম? আমরা আশা করব রাষ্ট্র এ বিষয়ে তৎপর হবে। সিটি করপোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর, পরিবেশ-বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় বিষয়টি আমলে নেবেন।
বৃক্ষরোপণে দেশে রাষ্ট্রীয় তৎপরতাগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস ছাড়াও বৃক্ষরোপণে আমরা বছরব্যাপী বেশ জনসম্পৃক্ততা দেখি। ‘আগ্রাসী (ইনভ্যাসিভ বা এলিয়েন স্পিসিস) প্রজাতি’ নিয়ে বহু তর্ক আছে। বিশেষ করে একাশিয়া, ম্যাঞ্জিয়াম, ইপিলইপিল, শিশু, ইউক্যালিপটাস গাছের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বহু নেতিবাচক প্রভাব আছে। ‘বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২’ আগ্রাসী প্রজাতির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা এনেছে। সাত মসজিদ সড়কে আগ্রাসী প্রজাতি খুব একটা নেই। বট, বড়ই, বকুল, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, শিরিষ গাছগুলো দেখা যায়। এমনকি কেবল বৃক্ষ নয়, বেশকিছু বছরে কিছু তৃণগুল্ম ও লতা ঝোপও এখানে বিকশিত হয়েছে। এখানে পাখি, পতঙ্গ, সরীসৃপ দেখা গেছে বর্ষাকালে। এক চিলতে ছোট্ট জায়গায় একটা বিশেষ বাস্তুতন্ত্রও তৈরি হয়েছে। এখন সড়ক উন্নয়নের নামে গাছ কেটে আমরা এই বাস্তুতন্ত্র চুরমার করে দিতে পারি কি? কেবল প্রাকৃতিক সম্পর্কই নয়; এই গাছেদের সঙ্গে আমাদের শিশুদের এক ধরনের স্মৃতিময় সামাজিক সম্পর্কও তৈরি হচ্ছে। স্কুলে যাওয়ার পথে, আবাহনী খেলার মাঠে অনুশীলনের যাওয়ার পথে এই গাছগুলো তাদের সঙ্গী হয়ে উঠেছিল। আমরা চাইলেই গাছেদের সঙ্গে শিশুদের গড়ে ওঠা এই সামাজিক সম্পর্ক ভেঙে দিতে পারি না। গাছেরাও মানুষের মতোই রাষ্ট্রের নাগরিক। আর সব নাগরিকের নিরাপত্তার বিধান সংবিধানে অঙ্গীকার করেছে রাষ্ট্র। সংবিধানের ১৮ (ক) ধারায় উল্লেখ আছে, ‘রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন’। সাতমসজদি রোডে সড়ক উন্নয়নের নামে গাছ কেটে প্রাকৃতিক ও সামাজিক বৈচিত্র্যময় সম্পর্কগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ ধারাকে লঙ্ঘন করে। ২০১৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘বৃক্ষ সংরক্ষণ আইন ২০১৬’ নীতিগতভাবে অনুমোদন করা হয়। এ আইনের মাধ্যমে যত্রতত্র বৃক্ষসম্পদ আহরণ সীমিত ও প্রাচীন বৃক্ষগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর ২৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী দেশের এমন বৃক্ষগুলো সংরক্ষণ করার কথা সরকারের। যেসব ঐতিহ্যবাহী, পুরাতন বয়স্ক, দেশীয় ও শতবর্ষী বৃক্ষের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও প্রথাগত মূল্য রয়েছে সেসব বৃক্ষ উক্ত আইন অনুযায়ী ‘স্মারক বৃক্ষ’। সাত মসজিদ সড়কের গাছগুলো হয়তো বয়সে এত প্রবীণ নয়, কিন্তু দীর্ঘ সময়ে পাবলিক পরিসরে অবস্থানের কারণে এসব গাছও নগরের পাবলিক স্মৃতিস্মারক হয়ে উঠেছে।
আমরা কি সড়কের বৃক্ষপ্রাণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পেরেছি? নগরায়ণ, সড়ক সম্প্রসারণ আর অবকাঠামো উন্নয়নের নামে বৃক্ষহীন এক প্লাস্টিক মোড়ানো শহর তৈরি করে চলেছি আমরা। এমন বৃক্ষহীন শহরের পরিণতি বারবার ‘দ্য লোরাক্স’ ছবির কথা মনে করিয়ে দেয়। ২০১২ সালে ইউনিভার্সাল স্টুডিও থেকে ড. সিউ্যসের কাহিনী থেকে ক্রিস রিনাউড ‘দ্য লোরাক্স’ নামের একটি কার্টুন অ্যানিমেশন ছবি নির্মাণ করেন। গাছেদের মেরে প্লাস্টিকের শহর বানানোর এক তীব্র করুণ পরিণতি দেখানো হয়েছে ছবিটিতে। ছবিটিতে দেখানো হয়, এক কল্পিত থিনিডভিল শহরের কোথাও কোনো জীবিত গাছ নেই। সব প্লাস্টিক, সব মেশিনে চলে। ও’হেয়ার নামের একটি কোম্পানি মূলত থিনিড শহরটি চালায়। যেহেতু শহরে কোনো গাছ নেই, ও-হেয়ার কোম্পানিটিই বোতলে ভরে অক্সিজেন বিক্রি করে। শহরের এ অবস্থাটি মূলত তৈরি হয়েছে ওয়ান্স-লারের জন্য। গাছ কেটে থিনিড শহর বানানোর পরিকল্পনা করে সে। অরণ্য ও প্রকৃতির দেবতা লোরাক্স এবং বন্যপ্রাণীর কথা কানে তুলে না। তৈরি করে গাছশূন্য এক নতুন শহুর থিনিডভিল। ততদিনে ওয়ান্স-লার থেকে শহরের মালিকানা দখল করে ও-হেয়ার কোম্পানি এবং তার পোষা মাস্তান বাহিনী। তারপর শহরের এক ছোট্ট ছেলে খুব কষ্টে সত্যিকারের গাছের বীজ শহরে এনে বুনে দেয় এবং আবার শহরটি বৃক্ষময় হয়ে ওঠে, প্রাণ ফিরে পায়। আমরা কোনোভাবেই চাই না গাছেদের কেটে কেটে কল্পিত এই থিনিড শহরের মতো প্লাস্টিকের শহর হয়ে উঠুক আমাদের প্রিয় নগর ঢাকা। আমরা চাই গাছে-মানুষে, পাখি-পতঙ্গে, জলাভূমি-উন্মুক্ত মাঠ আর অজস্র প্রাণের মায়ায় গড়ে উঠুক আমাদের সবার শহর। আশা করি নগর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবেন, ধানমন্ডি সাত মসজিদ সড়কের গাছগুলো কাটা থেকে বিরত থাকবেন। কাটা গাছের স্থানে দেশি প্রজাতির চারা রোপণ করে সড়ক ও সড়ক বিভাজকগুলোকে বৃক্ষবান্ধব করে গড়ে তুলবেন।
লেখক: গবেষক, প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ
সম্প্রতি রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় স্বয়ং চিফ অব জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভকে ইউক্রেনে যুদ্ধরত রুশ বাহিনীর নেতৃত্বভার দিল। মাত্র তিন মাস আগে ওই দায়িত্বে নিয়োগ পাওয়া জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিনকে গেরাসিমভের ডেপুটি পদে অবনমন দেওয়া হয়েছে। রদবদলটি নানা জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সুরোভিকিনকে রুশ এবং ইউক্রেনীয় উভয় পক্ষের যোদ্ধারাই মস্কোর অন্যতম দক্ষ কমান্ডার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তিনি ইউক্রেনের বিচ্ছিন্ন শহর খেরসনকে ধরে রাখা অর্থহীন মনে করে এটি পরিত্যাগ করতে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে রাজি করাতে সক্ষম হন। তোপের মুখে থাকা একটি অবস্থান থেকে বাহিনী প্রত্যাহার করা কঠিন কাজ হলেও সুরোভিকিন তা সুন্দরভাবে এবং সীমিত ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে সম্পন্ন করেছিলেন।
তবে তীব্র লড়াই চলা বাখমুত শহরে সুরোভিকিন শক্তি সংহতকরণের দিকেই মনোনিবেশ করেন। তিনি দক্ষিণে কথিত ‘সুরোভিকিন প্রতিরক্ষা লাইন’ স্থাপন করেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি এ বছরের নতুন আক্রমণের জন্য সংরক্ষিত সেনাদের আগমনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিলেন। ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের অবকাঠামোর ওপর নির্বিচার বোমাবর্ষণের পরিকল্পনাও সুরোভিকিনেরই। ইউক্রেনীয়দের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি, সীমিত জরুরি সম্পদ স্থাপনা মেরামতের কাজে ব্যবহারে বাধ্য করা এবং সম্ভবত আরও বেশি শরণার্থীকে ইউরোপে তাড়ানো ছিল এর উদ্দেশ্য। বস্তুত সুরোভিকিনকে তুলনামূলক সক্ষমই মনে হয়েছে যদিও তা পুতিনের জন্য যথেষ্ট ছিল না। আসলে পুতিন একজন বলির পাঁঠা চেয়েছিলেন, আর সুরোভিকিনই হলেন সেই পাঁঠা।
পুতিনের পুরো রাজনৈতিক ব্যবস্থাই পরিকল্পিতভাবে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক, এমনকি একে অন্যের প্রতি মরণপণ আক্রমণাত্মক। ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে উৎসাহিত করা হয়, কারণ এটি পুতিনকে ‘মহান ফয়সালাকারী’র ভূমিকা পালন করার সুযোগ করে দেয়। প্রত্যেককে তার অনুগ্রহ চাইতে হয় এবং তিনি তার ক্ষমতা বজায় রাখার জন্য কাকে পুরস্কৃত করবেন আর কাকে শাস্তি দেবেন তা বেছে নেন। তবে রাজনীতিতে যা কাজ করতে পারে যুদ্ধক্ষেত্রে তা নিতান্ত অকার্যকরও হতে পারে। সুরোভিকিনকে যৌথবাহিনীর কমান্ডার পদবি দেওয়া হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু কমান্ডের অধীনে থাকা নানা অঙ্গকে একটি সমন্বিত বাহিনী হিসেবে পরিচালনা করতে যে রাজনৈতিক সমর্থন প্রয়োজন তা পুতিন তাকে কখনোই দেননি।
পুতিনবাদের একটি দ্বিতীয় দিক হচ্ছে (যা এক জটিল সমস্যা) ‘বীর নেতা’র ওপর জোর দেওয়া, যিনি কি না কোনো সমস্যাকে রাতারাতি বিজয়ে পরিণত করতে সক্ষম। তার বন্ধুস্বজন এবং মোসাহেবদের উৎসাহের বদৌলতে পুতিন নিশ্চিত হয়েছেন, তিনি নিজেই সেই ম্যাজিকের মতো পরিস্থিতি বদলে দিতে পারা নেতা। কিন্তু এটি গভীরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ, কারণ যা কিছু সঠিক হয় তা পুতিনের কৃতিত্ব হিসেবে উপস্থাপিত হয়। আর যা কিছু ভুল তার জন্য দায়ী করা হয় অধীনস্তদের। পুতিন যত বেশি চাপের মধ্যে থাকেন তার প্রত্যাশা তত বেশি অবাস্তব হয়। সম্প্রতি বরাবরের অনুগত শিল্পমন্ত্রী দানিস মান্তুরভকে দেশে যুদ্ধবিমান উৎপাদনে বিলম্বের জন্য প্রকাশ্যে তিরস্কার করেন তিনি। মান্তুরভ প্রেসিডেন্টকে বোঝাতে চেষ্টা করেন রাশিয়া নিষেধাজ্ঞার কারণে পশ্চিমা প্রযুক্তি এবং বিনিয়োগ পাচ্ছে না। অন্যদিকে ইউক্রেন থেকেও কিছু যন্ত্রাংশ আর আগের মতো কিনতে পারছে না। পুতিন তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আপনি কি বুঝতে পারছেন না আমরা কি পরিস্থিতিতে আছি? এটা এক মাসের মধ্যে করতে হবে। পরে হলে চলবে না।’ একইভাবে পুতিনের দৃশ্যত জেনারেল সুরোভিকিনের কাছেও অবাস্তব প্রত্যাশা ছিল।
রুশ সরকারি বক্তব্য হচ্ছে সুরোভিকিনের পদাবনতি হয়নি, নেহাত সমস্যার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় আরও সিনিয়র একজন কমান্ডারের প্রয়োজন ছিল বলে গেরাসিমভকে তার জায়গায় বসানো হয়েছে। পরিহাসের বিষয় হলো, বাস্তবে এটি শুধু সুরোভিকিনের জন্যই নয়, গেরাসিমভের জন্যও পদাবনতি। চিফ অব জেনারেল স্টাফের মতো কর্মকর্তা কখনো মাঠপর্যায়ের যুদ্ধে ভূমিকা রাখেন না। এটা খুবই অস্বাভাবিক। এর মাধ্যমে গেরাসিমভও একটি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আছেন। গেরাসিমভের ক্যারিয়ার এখন সম্ভবত পুতিনের উচ্চাশা পূরণে ব্যর্থ না হওয়ার ওপর নির্ভর করবে। তাই তার জন্য যুদ্ধের মাত্রা বাড়ানোর প্রলোভন রয়েছে। রাশিয়া কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে বসতে পারে এ আশঙ্কা মাঝেমধ্যে দেখা দিলেও এর সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। যেটার সম্ভাবনা আরও বেশি তা হচ্ছে মস্কো বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোকে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়ার চেষ্টা করবে বা আরও বেশি সেনা মোতায়েন করবে, নতুন সেনা নিয়োগ বা নাগরিকদের বাধ্যতামূলক যুদ্ধে পাঠানো যেভাবেই তা হোক। তবে এগুলো মূলত গেরাসিমভের ওপরের পর্যায়ের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।
গেরাসিমভের নিয়োগকে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে উন্নতির একটি উপায় হিসেবে ঘোষণা করা হলেও পুতিন যদি কাদিরভ বা প্রিগোজিনকে নিয়ন্ত্রণ করতে আগ্রহী না হন তবে মাঠপর্যায়ে কিছুই বদলাবে না। প্রিগোজিন এরই মধ্যে গেরাসিমভের প্রতি তার ঘৃণা স্পষ্ট করেই প্রকাশ করেছেন। এজন্য ক্রেমলিনের তরফ থেকে তার কোনো সমস্যা হয়নি।
সুতরাং গেরাসিমভ হলেন পুতিনের রাজনৈতিক ঝুঁকি ও প্রয়োজনীয় সহায়তা ছাড়া অর্জন করা অসম্ভবএমন কাজ চাপিয়ে দেওয়া সাম্প্রতিকতম এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা। গেরাসিমভও যদি ব্যর্থ হন, তবে সর্বাধিনায়ক ভøাদিমির পুতিনের ওপর চূড়ান্ত দায় চাপানো থেকে বিরত থাকা জনগণের জন্য কঠিনই হবে।
লেখক : মার্ক গ্যালোত্তি লন্ডনভিত্তিক বিশ্লেষক এবং ‘পুতিন’স ওয়ার্স ফ্রম চেচনিয়া টু ইউক্রেন’ বইয়ের লেখক।
আল জাজিরা থেকে ভাষান্তর : আবু ইউসুফ
শহীদ বুদ্ধিজীবী, দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ গোবিন্দ চন্দ্র দেব পুরকায়স্থ (জি সি দেব) ১৯০৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সিলেট জেলার বিয়ানীবাজারের লাউতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৩১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে এমএ ডিগ্রি লাভ করে অধ্যাপনায় নিযুক্ত হন। অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি ‘রিজন, ইনটুইশন অ্যান্ড রিয়ালিটি’ নামক অভিসন্দর্ভ রচনা করে ১৯৪৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে যোগদান করেন। দেবের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : ‘আইডিয়ালিজম অ্যান্ড প্রগ্রেস’, ‘আইডিয়ালিজম : এ নিউ ডিফেন্স অ্যান্ড এ নিউ অ্যাপ্লিকেশন’, ‘আমার জীবনদর্শন’, ‘অ্যাসপিরেশন অব দি কমন ম্যান’, ‘দি ফিলোসফি অব বিবেকানন্দ অ্যান্ড দি ফিউচার অব ম্যান’, ‘তত্ত্ববিদ্যাসার’, ‘বুদ্ধ : দি হিউম্যানিস্ট’। দেব তার সব সম্পত্তি ও অর্থ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করেন। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পাকিস্তানি সরকার। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করেন এই বুদ্ধিজীবী। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের গণকবরে তার মরদেহ সমাহিত করা হয়। ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে ‘গোবিন্দ দেব দর্শন গবেষণা কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৬ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাকে মরণোত্তর ‘একুশে পদক’ দেয়।
ভাষা আন্দোলনের প্রেরণা নিয়ে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাংলা একাডেমি একটি মর্যাদাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। বাংলা ভাষা আর বিশ্বের নানা ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার প্রসিদ্ধ কেন্দ্রগুলোর অন্যতম প্রতিষ্ঠানরূপেও এটি পরিগণিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়াতে বাংলা একাডেমি সম্পর্কে বলা হয়েছে ‘বাংলা ভাষা সংক্রান্ত সর্ববৃহৎ গবেষণা প্রতিষ্ঠান।’ ১৩৬২ বঙ্গাব্দের ১৭ অগ্রহায়ণ, ৩ ডিসেম্বর ১৯৫৫ সালে ঢাকার ঐতিহাসিক বর্ধমান হাউজে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। নিজেদের সে্লাগান হিসেবে বাংলা একাডেমি লিখে থাকে ‘বাঙালি জাতিসত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতীক’। প্রতিষ্ঠাকালীন সংগ্রাম ও গৌরবময় অতীত সত্ত্বেও বাংলা একাডেমির সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড ও অর্জন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন রয়েছে দেশের বিদ্বৎসমাজ ও সচেতন মহলে। ‘অমর একুশে বইমেলা’ আয়োজনই সম্ভবত বাংলা একাডেমির সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় আয়োজন। বাংলা একাডেমির বইমেলা এখন জাতির প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছে। সেই বইমেলা আয়োজন নিয়েও বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না বাংলা একাডেমির।
বরাবরের মতোই ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে বইমেলা। কাগজের দাম দ্বিগুণ এবং বই মুদ্রণের অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম প্রায় দেড়গুণের বেশি বেড়ে যাওয়ায় এবারের অমর একুশে বইমেলায় বই প্রকাশ ও বিক্রির সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসার আশঙ্কা করছেন প্রকাশক-লেখকরা। অন্যদিকে, রাষ্ট্র কর্তৃক নিষিদ্ধ নয় এবং তিন বছর আগে প্রকাশিত একটি বইয়ের কারণে ‘আদর্শ’ প্রকাশনীকে বইমেলার স্টল বরাদ্দ না দেওয়ার ঘটনায় বিতর্কের শুরু। একাডেমি বলছে বইমেলার নীতিমালা অনুসরণ করে না এমন একটি বই প্রদর্শন ও বিক্রির জন্য বইমেলার স্টলে রাখতে চাওয়ায় প্রকাশনীটিকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। কমিটি মনে করে, বইটি বইমেলার নীতিমালা ও নিয়ামাবলির পরিপন্থী। এ বিষয়ে লেখক ও গবেষক আফসান চৌধুরী বাংলা একাডেমির নীতিমালা বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এইসব নীতিমালার কোনো ব্যাখ্যা নেই। আর এর মানদণ্ড কী হবে তা-ও স্পষ্ট নয়; আসল কথা হলো, আমার পছন্দ হলে ঠিক আছে আর পছন্দ না হলে ঠিক নেই। এটা নির্ভর করে কখন কারা ক্ষমতায় তার ওপর।’ বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতীক দাবি করা বাংলা একাডেমি নিঃসন্দেহে একটি খারাপ উদাহরণ তৈরি করল। অন্যদিকে, একুশে বইমেলা শুরু থেকে বাংলা একাডেমির আয়োজনে হয়ে এলেও এবার সংস্কৃতি সচিব তার মন্ত্রণালয়ের নাম যুক্ত করতে চাওয়ায় দেখা দিয়েছে দ্বন্দ্ব। বইমেলার নীতিমালা এবং দীর্ঘদিন চর্চিত আচারে বাংলা একাডেমিই ‘প্রাণের’ এই মেলার এই আয়োজক হিসেবে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান। সংস্কৃতি বিষয়ক সচিব আয়োজকের ঘরে মন্ত্রণালয়ের নাম বসাতে চাওয়ায় সমালোচনা উঠেছে লেখক-সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্য থেকে। একে বাংলা একাডেমির ওপর হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন তারা। আয়োজকের ভূমিকায় মন্ত্রণালয়ের নাম ওঠানোর ক্ষেত্রে সংস্কৃতি সচিব যুক্তি দেখিয়েছেন, বাংলা একাডেমি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত একটি প্রতিষ্ঠান। যদিও পরে সমালোচনা শুরু হলে মন্ত্রণালয়ের লোগো বাদ দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী বাংলা একাডেমি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং এটি পর্ষদ দ্বারা পরিচালিত হয়। রামেন্দু মজুমদার এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অতীতে বইমেলার আমন্ত্রণপত্রে কখনোই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নাম বা লোগো ব্যবহার করা হয়নি। সব সময় আয়োজক হিসেবে বাংলা একাডেমির নাম এবং লোগো ব্যবহার হয়েছে। মন্ত্রণালয় যদি আমন্ত্রণপত্রে তাদের নাম-লোগো ব্যবহার করতে চায়, তখন বাংলা একাডেমি যে একটা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সেটা আর মনে হবে না।’
বাৎসরিক এই বইমেলার আয়োজনের বাইরে বাংলা একাডেমির কর্মকাণ্ডের আর কোনো প্রতিফলন সাধারণের কাছে যেমন খুব একটা দৃশ্যমান নয়, তেমনি বিদ্যার্থী কিংবা গবেষকদের কাছেও একাডেমির আবেদন খুব একটা পরিলক্ষিত হয় না। গত দশ বছরে হাতেগোনা কয়েকটি কাজ বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান, আধুনিক বাংলা অভিধান, বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা প্রকাশ ছাড়া উল্লেখযোগ্য কাজ নেই বললেই চলে। নেই গবেষণা কাজের ধারাবাহিকতা। যে বইমেলা আয়োজন হয়ে পড়েছে একাডেমির প্রধান কাজ, সেটি নিয়েও দেখা গেল নানা অনিয়ম। মেলা আয়োজন করতে গিয়ে একাডেমির ওপর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের খবরদারি যেমন গ্রহণযোগ্য নয়, তেমনি মুক্তমত প্রকাশে বাধা তৈরিও একাডেমির মূলমন্ত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। মনে রাখতে হবে, অমর একুশে গ্রন্থমেলার জন্য আলাদা কোনো অর্থ বরাদ্দ দেয় না সরকার। স্পন্সরশিপ ও স্টল ভাড়া থেকে পাওয়া অর্থে মেলার ব্যয় মেটানো হয়। যেহেতু ফেব্রুয়ারির এই মেলা অমর একুশের চেতনার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত, তাই মেলা নিয়ে কোনো ধরনের নেতিবাচক প্রচারণা যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। অমর একুশের চেতনায় বাংলা একাডেমি বইমেলা আয়োজনকে প্রশ্নের ঊর্ধ্বে রাখতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়সহ সব মহলের আন্তরিকতারও প্রমাণ দিতে হবে।
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ আর নির্বাচনী তাপের মধ্যেই আজ জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এটি। অনেক যোগ-বিয়োগ কষে বাজেট প্রণয়নের শেষ সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী চমক হিসেবে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করতে সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটেছেন। ভর্তুকি নাম দিয়ে বড় অঙ্কের ‘কর ছাড়’ দিয়েছেন। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে রাজস্ব জাল বিছিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে আটকে ফেললেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো প্রস্তাবিত বাজেট সারসংক্ষেপ, ভর্তুকির নামে ‘কর ছাড়’কে বৈশি^ক মন্দা মোকাবিলার ঢাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের পরোক্ষ প্রভাবে বাজারে পণ্যের দাম কমার গতিরোধ করবে বলেও সরকারপ্রধানকে জানিয়েছেন।
তবে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ছোটদের কর পরিশোধে চেপে ধরলেও কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের ঠিকই খুশি করলেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে এমন আশা করা কঠিন।
এনবিআরের সাবেক সদস্য কর-বিশ্লেষক ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ সুবিধা কমানোর চাপ আছে। এ শর্ত না মানলে ঋণের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করা হতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় বড় মাপের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চাপ আছে। বিভিন্নমুখী চাপে সরকার সব পক্ষকে খুশি করতেই আগামীতে কৌশলে কর ছাড় রাখছে ভর্তুকির নাম দিয়ে। অন্যদিকে সাধারণ আয়ের মানুষের ওপর কিন্তু ন্যূনতম কর ধার্য করার কথা শুনছি। অনেক মানুষকে রাজস্বের আওতায় আনার কথাও শুনেছি। এভাবে ছোটদের ওপর ঠিকই কর পরিশোধে চাপ বাড়াল।’
একই মত জানিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বড় মাপের ব্যবসায়ীদের অনেকে সরাসরি রাজনীতি করেন। অনেকে রাজনীতি না করলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেন। এরা সমাজের প্রভাবশালী। বাজেট প্রণয়নকালেই এরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে নিজেদের পক্ষে সুবিধামতো অনেক কিছু আদায় করে নেন। এবারও তাই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে আইএমএফের জেরার মুখে বলার সুযোগ থাকছে যে কর ছাড় ও ভর্তুকি দুই হিসাব এক করেছি।’
সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকে আশায় আছেন এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী হয়তো জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সূত্র কষবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো রক্ষাকবচ রাখলেন না। কৌশলী অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে দেওয়া কথা রেখেছেন। সাধারণ মানুষকে রাজস্ব জালে আটকে ফেলার ছক করেছেন। মূল বাজেটের আকার বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের আয়ের হিসাবও বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এখানে কর খাত থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে চলতিবারের তুলনায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করলেন। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে করবহির্ভূত খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। শেষ সময়ের হিসাবকষে শত সংকটের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করেছেন।
আগামী বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী কর ছাড়সহ ২ লাখ ৮৯ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করবেন। জাতীয় বাজেটে নিয়মিত ভর্তুকি হিসাবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার কথা আছে। বাকিটা প্রত্যক্ষ কর ছাড় দিয়ে ভর্তুকি খাতে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেতনসহ অন্য খাতে ৭৭ হাজার ২১৮ কোটি বা মোট কর ছাড়ের ক্ষুদ্রঋণ খাতে ১২ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি, প্রবাসী আয় খাতে ৯ শতাংশ বা ১১ হাজার ২৮৭ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩৮০ কোটি, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক শিল্প খাতে ৪ শতাংশ বা ৪ হাজার ৬১২ কোটি, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ৩ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতে ২ শতাংশ বা ৩ হাজার ১২০ কোটি, আইটি এবং সফটওয়্যার খাতে ১ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৭৭ কোটি এবং পুঁজিবাজার খাতে ১ শতাংশ বা ৯৬৬ কোটি টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইস মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ যেন পুরনো বোতলে নতুন পানীয়। বড়দেরই বিভিন্ন কৌশলে সুবিধা দেওয়া হলো।’
অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের কৌশল হিসেবে বড় সুবিধা দিলেও ইটিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলে কঠোরতা এনেছেন। ইটিআইএন না নিলে ৪০ ধরনের সেবা এবং রিটার্ন দাখিলের সিøপ না নিলে ৩৮ ধরনের সেবা দেওয়া হবে না। এতদিন ইটিআইএন নিয়েও অনেকে করযোগ্য আয় না থাকলে শুধু রিটার্ন দাখিল করেছে, একটি টাকার কর দিতে হয়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ১ জুলাই থেকে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।
সাধারণ আয়ের অনেক করদাতা বলেছেন, খাবারের খরচ অনেক বেড়েছে। বাসা ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা সবকিছুই এখন বেশি। এর মধ্যে সাধারণ আয়ের ওপর কর পরিশোধে চাপ দেওয়া হলে ভোগান্তি বাড়বে। সাধারণ মানুষকে কর পরিশোধে বাধ্য করলেও সম্পদশালীদের রাজস্ব ফাঁকি কমাতে, বকেয়া আদায়ে এবং অর্থ পাচার রোধে জোরালো কিছু রাখা হয়নি। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতেও পুরনো পথেই হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী অর্থবছর থেকে রিটার্ন জমা দিতে দেরি হলে বেশি হারে জরিমানা দিতে হবে। বাজেটে আইন করে জরিমানার পরিমাণ প্রদেয় করের পরিমাণ দ্বিগুণ ৪ শতাংশ নির্ধারণে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বড়রা সুবিধা দিয়ে রাজস্ব আদায়ে চাপ বাড়ানোয় জীবনযাত্রার অনেক খাতেই খরচ বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কমাতেও বাজেটে রাখা হয়নি কিছু। আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কবে কমবে তা নিয়ে রয়েছে অশ্চিয়তা। তাই গত মাস ছয়েক থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চাল, ডাল, আট, ময়দা, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবারের দাম আপাতত কমছে না। চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও কমবে না। গত (নভেম্বর ২০২২-এপ্রিল ২০২৩) ছয় মাসের সাধারণ মূল্যস্ফীতির গড় হার ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বিশেষ কোনো চাপ নেই, অর্থনৈতিক উন্নয়ন গতিশীল রাখতে এবারের বাজেটে থাকছে ধারাবাহিকতা।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেলে ঘোষিত হতে যাওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে 'গরিববান্ধব' উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আরও বলেন, সবাইকে নিয়ে সবার জন্য বাজেট ঠিক করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তার আকার বড় হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে জাতীয় সংসদ ভবনে যাত্রার প্রাক্কালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাজেট সম্পর্কে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বিকেলে জাতীয় সংসদে সাত লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করবেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অর্জনের লক্ষ্য স্থির করেছে সরকার। সেখানে মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে মোট বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে, এমন আশা করছেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেটে ৫ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেট ঘাটতি হতে পারে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। রবিবার (৪ জুন) থেকে সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হবে।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
দেশের ৬০টি জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে দিনের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া দেশজুড়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ আরও দুই দিন থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, ঢাকা বিভাগের ১৩টি, খুলনার ১০টি, রাজশাহীর আটটি, বরিশালের ছয়, রংপুরের আটটি, সিলেটের চার ও ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলাসহ চট্টগ্রাম, সীতাকুণ্ড, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
আগামী দুই দিনে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে এবং বিদ্যমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।