
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন আক্রমণের কয়েক দিন পর, গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি তার পারমাণবিক বাহিনীকে ‘হাই অ্যালার্ট’-এ রেখেছিলেন। বিশ্ববাসীকে তখন নড়েচড়ে বসতে হয়। যুদ্ধ-কৌশলবিদরা আপডেট দিতে শুরু করেন। পরিস্থিতি কোনদিকে যাচ্ছে, খতিয়ে দেখেন যুদ্ধ-পর্যবেক্ষকরা। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তখন রাশিয়ার ওই সিদ্ধান্তকে ‘অপারেশনাল পরিবর্তন’ মনে করেনি। মার্কিন জেনারেলরা ওই ‘হাই অ্যালার্ট’-কে রাজনৈতিক উসকানি মনে করেছেন।
উল্লেখ্য, ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ দেওয়া আটকাতেই গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ন্যাটোকে রাশিয়ার জন্য নিরাপত্তার হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে রুশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভ বলেন, পশ্চিমারা একজোট হয়ে মস্কোর বিরুদ্ধে হাইব্রিড যুদ্ধ চালাচ্ছে।
জেনারেল গেরাসিমভ প্রধান নিরাপত্তা হুমকিগুলোর বিষয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে এসব (নিরাপত্তা) হুমকির মধ্যে ন্যাটোর পরিধি ফিনল্যান্ড ও সুইডেন পর্যন্ত সম্প্রসারণের আকাক্সক্ষা যেমন রয়েছে, তেমনি ইউক্রেনকে ব্যবহার করে আমাদের দেশের বিরুদ্ধে একটা কৃত্রিম যুদ্ধ শুরু করার মতো হুমকিও আছে।’
যদিও ইউক্রেনের ক্রমাগত অস্বীকৃতি রাশিয়াকে আরও নৃশংস হওয়ার দিকে নিয়ে যেতে পারে। পুতিন হঠাৎ দ্রুত বিজয়ের চিন্তা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তেই পারে। এর আগে যেমন ক্লাস্টার বোমা ইউক্রেনীয় বেসামরিকদের আক্রমণ করার জন্য ব্যবহার করেছেন। যুদ্ধবিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন ন্যাটোর তরফ থেকে আক্রান্ত হলে রাশিয়া, বিশ্ববাসী আরেকটি মহাযুদ্ধের শিকার হতেই পারে।
আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক ড্যারিল কিমবল দি ইন্টারসেপ্টকে বলেছিলেন, ‘আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে সামরিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার দায় থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রকে ভাবতে হবে রাশিয়ার এখনো প্রচলিত সমরশক্তির প্রাধান্য রয়েছে।’
উল্লেখ্য, অলাস্কা সীমান্তের দিকে রাশিয়ার প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্র। ওদিক থেকে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে আঘাত করতে আন্তঃমহাদেশীয় দূরপাল্লার কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা লাগবে না। বেরিং প্রণালির দিকে মাত্র ৫৩ কিলোমিটার দূরে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৯তম অঙ্গরাজ্য আলাস্কা। ১৯৫৯ সালে আলাস্কা যুক্তরাষ্ট্রের একটি অঙ্গরাজ্য হিসেবে যুক্ত হয়েছিল। ওই অঞ্চলটি আয়তনে বাংলাদেশ থেকে ১২ গুণ বড়। বহুভাবে সমৃদ্ধ অঞ্চলটিকে রাশিয়া মাত্র ৭২ লাখ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের একটা বড় অংশ আলাস্কা কিনে নেওয়ার বিরোধিতা করেছিল তখন। ইতিহাসটা এ রকমÑ১৮৫৩ থেকে ১৮৫৬ সাল পর্যন্ত চলা ক্রিমিয়ার যুদ্ধে ব্রিটেনের নেতৃত্বাধীন মিত্রশক্তির কাছে রাশিয়া পরাজিত হয়েছিল। সেই যুদ্ধে ৮ লাখ রুশ নাগরিক হতাহত হয় এবং রাশিয়া পঙ্গু হয় অর্থনৈতিকভাবে। সে সময় রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের বাইরে থাকা জনবিরল আলাস্কা অঞ্চলটিকে বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন রাশিয়ার সম্রাট দ্বিতীয় আলেকজান্ডার। ব্রিটেনের কাছে সম্ভাব্য যুদ্ধে হারানোর চেয়ে তিনি আলাস্কা বিক্রি করে দেওয়াই ঠিক মনে করেন।
এমনিতেই রাশিয়ার রাজনীতিকরা চান ‘টেক ব্যাক আলাস্কা’। পুতিন অবশ্য সেদিকে যাওয়ার চিন্তা করছেন না যদ্দুর জানা গেল। তবে প্রতিশোধ নিতে বাধ্য হলে পুতিন, মার্কিনিরা ভালো বিপদে যে পড়বে নানাভাবে তা যুক্তরাষ্ট্রও জানে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটা সর্বাত্মক যুদ্ধে না জড়াতে সর্বাত্মক কূটনৈতিক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তাকে ন্যাটো শরিকদের স্বার্থ বিবেচনায় নিতে হবেই। বিশেষ করে যদি পুতিন আরও ধ্বংসাত্মক অস্ত্র ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন এবং চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষতি করার মতো বেপরোয়া কাজে লিপ্ত হন, তাহলে ন্যাটো তার সদস্য দেশগুলোর কাছে দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে। তখন কী হতে পারে?
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? সেটি হলো, সোভিয়েত ইউনিয়নের একসময়কার অংশ ইউক্রেন ‘উত্তরাধিকার সূত্রে’ যেসব পারমাণবিক অস্ত্র পেয়েছিল, সেসব দেশটি ১৯৯৪ সালে নিষ্ক্রিয় করেছিল। এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়া ইউক্রেনকে সার্বভৌমত্ব ও প্রতিরক্ষার নিশ্চয়তা দিয়েছিল।
কিন্তু সেসব নিশ্চয়তা এখন অকেজো। ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য না। তাই দেশটির জনগণ মার্কিন পারমাণবিক ছাতার ছায়ায় ঠাঁই পাচ্ছে না। ওদিকে সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলোর মধ্যে যারা ন্যাটোতে যোগ দিয়েছিল, এখন তাদের কি যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের দ্বারা আসলেই কি এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়া বা এশিয়ার মিত্ররা সুরক্ষিত থাকবে?
রাশিয়া বরাবর বলে আসছেÑন্যাটোর সঙ্গে আগেভাগে আক্রমণে যাবে না কিন্তু আক্রান্ত হলে প্রতিশোধ নেবে ভয়ানকভাবে দ্রুত। হয়তো ন্যাটো চায় বৃহত্তর ইউরোপীয় সংঘাত সৃষ্টি করে পুতিনকে ভয় দেখাতে, পিছে ঠেলে দিতে। কিন্তু তখন কি পুতিন পরাজয়ের জন্য প্রস্তুত হবেন? বড় শক্তির যুদ্ধের ইতিহাস তো তা দেখায় না।
তবে অবশ্যই আক্রমণের ঝুঁকি আগের চেয়ে বেশি। যুদ্ধ যত দীর্ঘ হবে, পুতিন রাশিয়ার স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি থেকে বিচ্যুত হতে তত বেশি ইচ্ছুক হবেন। পুতিন আর তার জেনারেলরা তো ললিপপ চুষে না। দাবার চাল তারা নিশ্চয়ই বোঝেন। হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা নিশ্চিত কখন হবে যুদ্ধে লিপ্ত দুই পক্ষ বুঝতে পারার কথা। একটা দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে ঢুকিয়ে রাশিয়াকে ফতুর করার বুদ্ধি কি পুতিন বোঝেন না? নিশ্চয়ই বোঝেন। গ্যাস পলিটিকসে তো রাশিয়াকে হারাতে পারার সম্ভাবনা নেই। গম রাজনীতি খেলার সুবিধাও রাশিয়ার হাতে।
পারমাণবিক বিশেষজ্ঞ এবং কুইন্সি ইনস্টিটিউটের ফেলো জো সিরিনসিওন দ্য ইন্টারসেপ্ট-এ লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো জড়িত হলে রাশিয়া যুদ্ধ হারার সম্ভাবনা নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়।’ তখন পুতিন শেষ ফয়সালার দিকে যেতেই পারে। পুতিন তো আগে থেকে বিশ্ববাসীকে বলে আসছেন, যদি টের পান হেরে যাবেন বা তার জীবনবিনাশের সম্ভাবনার ব্যাপারে গোয়েন্দা রিপোর্ট নিশ্চিত করে, তাহলে পারমাণবিক আক্রমণ করে ফেলতে পারে রাশিয়া।
গুরুত্বপূর্ণ চিন্তা হলো এখানে, রাশিয়া বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের কেউ তাদের পারমাণবিক অস্ত্রাগারকে ব্যবহার না করার নীতি দিয়ে পরিচালনা করে না। মানে, ব্যাপারটি কোনোভাবেই পরিকল্পনার বাইরে না।
সিরিনসিওনের মতে, রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রগুলোকে প্রচলিত অস্ত্রের ‘একটি এক্সটেনশন’ হিসেবে দেখছে। মানে, দরকার মনে করলে বোতাম টিপে দেবে।
ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার পারমাণবিক যুদ্ধ লেগে গেলে, বিশ্ব খাদ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। দেখা দেবে দুর্ভিক্ষ। খাদ্যাভাবেই মারা যাবেন প্রায় পাঁচশ কোটি মানুষ। বিশ্বব্যাপী ক্যালরির উৎপাদন হ্রাস পাবে ৯০ শতাংশ। বায়ুমন্ডলের স্ট্রাটোস্ফিয়ার উত্তপ্ত হয়ে পড়বে। ফলে ধ্বংস হবে ওজোন স্তর, এ পূর্বাভাস দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইউক্রেনের ৪ অঞ্চল সংযুক্ত করে গত বছর অক্টোবরে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, নিজ ভূখণ্ড রক্ষা করতে প্রয়োজনে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারেও পিছু হটবেন না তিনি। রুশ ডকট্রিন হলো ‘যখন রাষ্ট্রের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে’ তখন তারা পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে প্রস্তুত। ‘লৌহমানব’খ্যাত পুতিনের এ প্রচ্ছন্ন হুমকির পর থেকেই আলোচনা-সমালোচনায় সরগরম হয়ে উঠেছেন যুদ্ধবিশারদরা। হামলা শুরু হলে কী ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে রাশিয়া? কী পরিমাণ ক্ষতি হবে ইউক্রেন তথা পুরো বিশ্বের, এর হিসাব করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা।
ইউক্রেন যুদ্ধের হিসাব-নিকাশে যা উঠে আসছে তা হলো, যুদ্ধের ৬ মাসের মাথায় প্রায় ফ্রন্টেই রাশিয়ার বাহিনীকে চাপের মুখে ফেলতে শুরু করে ইউক্রেন পশ্চিমা দেশগুলোর দেওয়া আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে। প্রতিরোধের মুখে পড়েছে রুশ বাহিনী। মেডেয়া বেঞ্জামিন ও নিকোলাস জে এস ডেভিস জিনেটে তাদের বিশ্লেষণে বলছেন, রুশ ডকট্রিনের হিসাবে রাশিয়ার নেতারা যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর কাছে তাদের নিজস্ব সীমানায় যুদ্ধে হেরে গেলে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছে তা দুনিয়াকে বোঝাবে।
যুদ্ধকৌশলবিদরা জানান, রাশিয়া পারমাণবিক হামলা চালালে ব্যবহার করবে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র। মস্কো তুলনামূলক কম শক্তিসম্পন্ন অস্ত্রগুলো শত্রুসেনাদের বিরুদ্ধে স্বল্প পরিসরে ব্যবহার করতে পারে। এ ধরনের অস্ত্রগুলো সুনির্দিষ্ট কোনো শহর ধ্বংসের জন্য ব্যবহার করা যায়। তবে এটি দূরপাল্লার ওয়ারহেড ধরনের অস্ত্রের তুলনায় বহু গুণ ছোট।
সেন্টার ফর আর্মস কন্ট্রোল অ্যান্ড নন-প্রলিফারেশনের গবেষণা বিশ্লেষক মনিকা মন্টগোমারি দি ইন্টারসেপ্টকে বলেছেন “যেকোনো পারমাণবিক অস্ত্র, ফলন নির্বিশেষে, ধ্বংসাত্মক মানবিক এবং পরিবেশগত পরিণতি এবং একটি ‘পূর্ণ-বিকশিত’ পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘নিম্ন-ফলন’ (লো-ঈল্ড) শব্দটি একটি ভুল শব্দ। কেননা, এই শ্রেণির অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ১৫ ও ২১ কিলোটন বোমা, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে ফেলেছিল। যার তাৎক্ষণিক প্রভাবে ও কয়েক মাস ধরে কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। বিকিরণজনিত অসুস্থতা তো আছেই।
বড় মাপের বিপদ সত্ত্বেও, কিছু বিশ্লেষক বিশ্বাস করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তার বাহিনীকে এমনভাবে প্রস্তুত করা উচিত যেন একটি সীমিত পারমাণবিক যুদ্ধ জয়যোগ্য হয়। এ ধারণাটি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আরও কম শক্তিসম্পন্ন পারমাণবিক অস্ত্র বিকাশের পথে নিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এরই মধ্যে এ ধরনের প্রায় ১০০০ অস্ত্র রয়েছে। বিশ্ববাসী আবার একটা পারমাণবিক মহাযুদ্ধের শিকার হোক তা সুস্থ চিন্তার শান্তিকামী মানুষ চায় না। কিন্তু খেলার মাঠের বাস্তবতা এই যে ‘খুব ভালো শক্তিধর’ খেলোয়াড়টিরও কোনো কারণে মাথা খারাপ হয়ে গেলে, ফাউল করে বসে।
লেখক: কবি, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক
মুক্তিযুদ্ধে এমনটা যে ঘটবে তার আলামত কিন্তু যুদ্ধের সময়েই টের পাওয়া গিয়েছিল। এই যুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহ ঘটেছে। নেতৃত্ব ছিল নির্বাচনে-জেতা জাতীয়তাবাদীদের হাতে। ভারত সরকার তাদের সাহায্য করেছে। জাতীয়তাবাদীরা ক্ষমতার হস্তান্তর চেয়েছে, রূপান্তর চায়নি। তারা লড়ছিল হস্তান্তরের লক্ষ্যেই। জনগণ কিন্তু তত দিনে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে, তারা শুধু যে ক্ষমতার হস্তান্তর চেয়েছে তা নয়, চেয়েছে রাষ্ট্র ক্ষমতার বিচূর্ণকরণ। বস্তুত রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের অভ্যুত্থান এবং একাত্তরের যুদ্ধ এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে যে চেতনাটি অগ্রসর হচ্ছিল সেটা ছিল সমাজবিপ্লবী। এই চেতনা ঠিকই বুঝেছে যে পুরাতন রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রেখে মুক্তি আসবে না। রাষ্ট্রকে ভাঙতে হবে, যাতে করে রাষ্ট্র জনগণের শত্রু না হয়ে মিত্র হয়; শুধু মিত্রও নয়, জনগণের সেবক হয়। ঊনসত্তরের অভ্যুত্থানের মূল আকাক্সক্ষাটা ছিল ওই রকম রাষ্ট্রের। কথা ছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ওই আকাক্সক্ষাটাকে বাস্তবায়িত করবে।
কিন্তু যুদ্ধ সেদিকে এগোয়নি। নেতৃত্বে রয়ে গেছে জাতীয়তাবাদীই। পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের জায়গায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ স্থাপিত হয়েছে। এ পর্যন্ত ঠিকই আছে। দুই জাতীয়তাবাদের ভেতর পার্থক্যটাও সুস্পষ্ট, কিন্তু দুয়ের ভেতর মিল এইখানে যে, উভয়েই পুঁজিবাদী। এই মিলটা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। জাতীয়তাবাদী নেতারা ব্যক্তিমালিকানার বিরোধী ছিলেন না, যেমন ছিলেন না তারা সামাজিক মালিকানার পক্ষে। বস্তুত পুরাতন ধ্যানধারণাই নতুন রাষ্ট্রে কার্যকর হয়েছে। সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যাভিমুখী যাত্রার কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু সেদিকে যাবে কী, রাষ্ট্র অচিরেই তার পুরাতন পথে ফিরে গেছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যক্তিমালিকানায় চলে গেছে। রাষ্ট্রীয়করণ ছিল ব্যক্তিমালিকানা স্থাপনের মধ্যবর্তী ধাপ। আদমজী জুট মিলস পাকিস্তান আমলে ছিল, এখন নেই। এটা কেবল ঘটনা নয়, একটা প্রতীকও বটে।
যুদ্ধের শুরুতেই কিন্তু বোঝা গিয়েছিল যে বিপ্লবী উপাদান থাকা সত্ত্বেও এ যুদ্ধ বিপ্লবী হবে না। ধরা যাক স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ঘটনা। চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে প্রান্তিকভাবে যুক্ত তিনজন দুঃসাহসী তরুণ স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগ নিয়ে ওই গোপন বেতার কেন্দ্রটি স্থাপন করেন, কালুরঘাট ট্রান্সমিটার কেন্দ্রটিকে ব্যবহার করে। নাম দিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র। ২৬ মার্চ ওই নামেই বেতার কেন্দ্রটি চালু হয়। কিন্তু তার বিপ্লবী নামটি ধরে রাখা যায়নি। বিপ্লবী নাম ধরে রাখবে কী, ৩০ তারিখ দুপুরে কেন্দ্রটিই সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। ধ্বংসের কাজটি করে পাকিস্তানি হানাদাররা। তারা বিমান আক্রমণ চালায়। ওটিই ছিল বাংলাদেশে তাদের যুদ্ধবিমানের প্রথম আক্রমণ। বেতার কেন্দ্রটি ধ্বংস না করে তাদের স্বস্তি ছিল না, কারণ সেখান থেকে প্রতিরোধ যুদ্ধের সংবাদ সম্প্রচারিত হয়েছিল। তারা লড়ছে, বিশ্ববাসী জেনেছিল, সবচেয়ে বেশি করে জেনেছিল বাঙালিরা, দেশে যেমন, বিদেশেও তেমনি। তারা উদ্দীপ্ত হয়েছে, ভরসা পেয়েছে, সাহস পেয়েছে রুখে দাঁড়ানোর। হানাদাররা অস্থির হয়েছে। খুঁজে খুঁজে বের করেছে বেতার কেন্দ্রের ঠিকানা, বোমাবর্ষণ করেছে মহোৎসাহে।
এরপরও কেন্দ্রটি চালু ছিল। প্রথমে গেছে সে আগরতলায়, সেখান থেকে কলকাতায়। কিন্তু ‘বিপ্লবী’ আর থাকেনি। ওই পরিচয় বিলুপ্ত করা হয়েছিল কিন্তু মেজর জিয়ার নির্দেশেই। পরে আওয়ামী লীগের প্রবাসী সরকার যে বিপ্লবীকে ফেরত এনেছে তা মোটেই নয়, বেতার কেন্দ্রটি বিপ্লবহীন ‘স্বাধীন’ অবস্থায় রয়ে গেছে। যুদ্ধটা তো ছিল পুরোপুরি জনযুদ্ধ, কিন্তু ওই শব্দটি একবার মাত্র ব্যবহার করা হয়েছে, তারপর নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ‘জনযুদ্ধ’ মাওবাদের গন্ধ আছে বলে। বেতার অনুষ্ঠানের শেষে একটি সিগনেচার টিউন বাজানো হতো, সে গানটির শুরু ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ দিয়ে, শেষে ছিল ভুখা বেকার মানুষদের কথা, আপত্তিকর বিবেচনায় গানটি বাদ দেওয়া হয়। বেকারদের দায়িত্ব স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র কেন নিতে যাবে? স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ওপর চাপ ছিল আওয়ামী লীগের খবরকে বেশি বেশি প্রচার করার, পারলে মুক্তিযুদ্ধকে একদলীয় ঘটনা হিসেবে চিত্রিত করার। কলকাতায় কেন্দ্রটি সম্পূর্ণরূপে প্রবাসী সরকারের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। শেষের দিকে ভারত সরকারের একজন প্রতিনিধিও অনুষ্ঠানসূচির ওপর চোখ রাখতেন। স্বাধীনতার পরপর ইনি ঢাকাতেও এসেছিলেন, বাংলাদেশ বেতারের দেখভাল করার জন্য। ডিসেম্বরের ৬ তারিখে ভারত সরকার যখন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় সেই ক্ষণ থেকেই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র তার নাম বদলে ফেলে বাংলাদেশ বেতার হয় অর্থাৎ একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হয়ে যায়। বিপ্লবীত্ব আগেই গিয়েছিল এবার গেল স্বাধীনতাটুকুও। যেন বাংলাদেশেরই প্রতীক। পাকিস্তানি বেতারের মতোই স্বাধীন বাংলা বেতারের অনুষ্ঠানও কিন্তু কোরআন পাঠ ও ব্যাখ্যা দিয়েই শুরু হতো। সপ্তাহে ছয় দিন ইসলামের দৃষ্টিতে বলে একটি অনুষ্ঠান থাকত।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা; ওই ঘটনার ভেতরে আমাদের মুক্তিসংগ্রামের মোড়বদলের কালে সংগ্রামের শক্তি ও সীমা দুটোই প্রতিফলিত হয়েছে। কেন্দ্রের গঠনে উদ্যোগী তিন তরুণের সঙ্গে বেগম মুশতারী শফীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল। যুদ্ধের শুরুতেই তিনি তার স্বামী এবং সহোদর একমাত্র ভাইটিকে হারান; তার বড় বোনের স্বামীও শহীদ হয়েছেন। অবিশ্বাস্য কষ্টের ভেতর দিয়ে সাত সন্তানের ছয়জনকে সঙ্গে নিয়ে ভাসতে ভাসতে সম্পূর্ণরূপে সর্বহারা দশায় আগরতলায় উপস্থিত হয়ে কোনো মতে প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিলেন। পরে তার অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে তিনি ‘স্বাধীনতা আমার রক্তঝরা দিন’ (১৯৮৯) নামে একটি বই লিখেছেন, তার অভিজ্ঞতার ভেতর ভবিষ্যতের বাংলাদেশ কেমন হবে তার লক্ষণ বিলক্ষণ ফুটে উঠেছিল। আগরতলায় গিয়ে যেসব ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছেন তাতে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ সম্পর্কে ভরসা রীতিমতো বিচলিত রয়েছে। আগরতলা পৌঁছে তিনি জানতে পেরেছেন যে চট্টগ্রামের এমএনএ এমপিএরা একটি ভবনে রয়েছেন। শুনে আশান্বিত হয়ে তিনি গেছেন তাদের খোঁজে। ভবনে গিয়ে পৌঁছান সকাল সাড়ে দশটায়। নেতাদের সন্ধান পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু দরজার সামনে কাজের ছেলেটি বলেছে দেখা করা যাবে না। কেন? কারণ ওনারা একটু বেসামাল আছেন। দরজাটা ভেজানো ছিল। মুশতারী শফী লিখেছেন, ‘আমি যেখানে বসেছি সেখান থেকে দরজার ফাঁক দিয়ে আরেকটি রুম দেখা যায়। সেখানে দেখা যাচ্ছে চিৎ হয়ে উপুড় হয়ে মেঝেতেই দু-তিনজন শুয়ে আছে।’ তিনি ভেবেছিলেন ঘুমোচ্ছে। পরে জানলেন নেতারা রাতে ড্রিংক করেছেন, সেজন্য সকালে তাদের ওই করুণদশা। মুশতারী শফীর স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া : ‘আমি অবাক। এখানে ড্রিংক? এরাই না জাতীয় নেতা? মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করছেন?’ (পৃ. ১৩৭-৩৮)
অবাক হওয়াটা ওখানেই শেষ হয়নি। তার জন্য আরও একটি ‘বিস্ময়-মহাবিস্ময়’ অপেক্ষা করছিল। তিনি লিখেছেন, ‘এখানে এসে একটা বিষয় লক্ষ করলাম, ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টির রিক্রুট-করা মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা প্রবাসী সরকার করছে না। যেমন আওয়ামী লীগের যে কেউ যে-কাউকে রিক্রুট করলে তার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি খরচে ট্রেনিং এবং থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, বামপন্থি দলের কাউকেই সে রকমটি করা হচ্ছে না। কোথাও পাশ কাটিয়ে যাওয়া হচ্ছে, কোথাও সরাসরি নাকচ করা হচ্ছে। ফলে বামপন্থিরা ভারত সরকারের দুয়ারে দুয়ারে ধাক্কা দিয়ে এবং নিজেদের পার্টির খরচে সম্পূর্ণ আলাদা ট্রানজিট ক্যাম্প এবং যুবকদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ (পৃ. ১৫৪)
তার মনে প্রশ্ন জেগেছে জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম যেখানে চলছে, সেখানে বাম-ডান আবার কী, সবাই তো মুক্তিযোদ্ধা। তার মতো মানুষদের কাছে সব মুক্তিযোদ্ধাই যে এক, এটা ঠিক, কিন্তু নেতৃত্ব তো ছিল পুঁজিবাদী ঘরানার, তারা বামপন্থির গন্ধ পেলেই সতর্ক হতো। ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টির মতো নরম বামদের তবু সহ্য করত, তাড়িয়ে দিত না। শক্ত বামপন্থিদের দেখা মাত্র ধাওয়া করত। শক্ত বামপন্থিদের কাউকে কাউকে তাই প্রাণ ভয়ে আগরতলার মুক্তভূমি থেকে আবার হানাদারকবলিত পাকিস্তানে পালিয়ে আসতে হয়েছে। কেউ কেউ নিহতও হয়েছে, আগরতলাতেই। মুশতারী শফীর আরেক মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোনো-মতো তৈরি করা ফিল্ড হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসক, স্বেচ্ছাসেবক সবাই কাজ করছেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। আহত যোদ্ধারা দিন গুনছেন কখন উঠে দাঁড়াতে পারবেন, এবং পুনরায় যুদ্ধে যাবেন। স্বেচ্ছাসেবকদের ভেতর মুশতারী শফীও ছিলেন।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
এক। রাজনীতির মাঠে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। না হলে রাজনীতির গতির সঙ্গে তাল মেলানো কঠিন হয়ে যায়। নেতৃত্বের হযবরল অবস্থা, নেতৃত্বের বিক্ষিপ্ত বক্তব্য, কোন্দল ও অযোগ্য ব্যক্তিদের গণহারের পদায়নের কারণে বিএনপির মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব, শঙ্কা, ভয়, অনিশ্চয়তা প্রবলভাবে বিদ্যমান। বিদেশে বসেও আন্দোলন-সংগ্রামে সফল নেতৃত্ব দেওয়ার উদাহরণ ইতিহাসে অনেক আছে। এখন প্রযুক্তি অনেক এগিয়েছে। কিন্তু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন বা তার দল প্রযুক্তির সেই সুবিধাকে কাজে লাগাতে পারেনি।
দুই। বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে রাজনীতির মাঠে ঢেউ তুলেছিল বিএনপি। ঢাকার সমাবেশের আগ পর্যন্ত বিএনপি সুবিধাজনক অবস্থাতেই ছিল। মানুষের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। বিভিন্ন দলের যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা ও বিভাগীয় সমাবেশগুলোয় ব্যাপক জনসমাগমের পরও বিএনপির মধ্যে ঝিমুনিভাব দেখা যাচ্ছে। মূলত, পল্টনে সমাবেশ করতে না পারা বিএনপির জন্য এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক পরাজয়। সরকারের চাপের মুখে বিএনপি বলতে শুরু করে, নিরাপদ ও সুবিধাজনক স্থানে তারা সমাবেশ করার কথা বিবেচনা করবে। বিএনপির নমনীয় অবস্থান বুঝতে পেরেই আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থানে চলে যায়। ৭ ডিসেম্বর পল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় এক বিএনপি কর্মী নিহত হন। পুলিশ অভিযান চালায় বিএনপির অফিসে। এ ঘটনার পরপরই বিএনপিকে কিছুটা অগোছালো মনে হয়। দলীয় অফিসে হামলা এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ অন্য নেতাকর্মীদের গণহারে আটকের পর কোনো শক্তিশালী কর্মসূচি ঘোষণা করেনি বিএনপি। ৭ ডিসেম্বর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একা একা কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে ফুটপাতে অসহায়ের মতো বসে ছিলেন। এ সময় অন্য কোনো নেতাকর্মীকে তার পাশে দেখা যায়নি। ১০ ডিসেম্বর পল্টন থেকে সমাবেশ সরিয়ে নেওয়ায় বিএনপি মূলত আওয়ামী লীগের সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক খেলায় হেরে যায়। সরকার বা আওয়ামী লীগ যেভাবে চেয়েছে, বিএনপি সেভাবেই সমাবেশ করেছে।
তিন। বিএনপির একজন নেতা বলেছিলেন, ১০ ডিসেম্বরের পর দেশ চলবে খালেদা জিয়ার কথায়। ৮ তারিখ রাতে পুলিশ দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে বাসা থেকে তুলে ডিবি অফিসে নেয়। পরে বিস্ফোরক আইনে দুই নেতার নামে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হলো। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে রাজপথে প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না। যারা ১০ তারিখের আওয়াজ তুলেছিলেন, তারা নিশ্চুপ হয়ে গেলেন। বিএনপি এর আগে অনেকবার বলেছে যে ঈদের পর আন্দোলন হবে। কিন্তু সেই ঈদ আর বিএনপির আসেনি। এজন্য অনেক তামাশাও হয়েছে। এখন শোনা যাচ্ছে, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ দলটি চূড়ান্ত আন্দোলনে নামতে চায়। কোনোভাবে যদি ওই সময় পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলনকে আওয়ামী লীগ টেনে নিতে পারে, তাহলে যেকোনো প্রকারে নির্বাচন করে ফেলবে। কারণ, নভেম্বরেই তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। আর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেই যদি চূড়ান্ত, তাহলে এখন বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে সাধারণ কর্মীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে কেন? গত কয়েক মাসে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বিএনপির ৯ কর্মী নিহত হয়েছেন। তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলে নির্বাচন আটকানো এই বিএনপির পক্ষে সম্ভব হবে না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও পারেনি।
চার। ২০০৬ সালের পর থেকে গত ১৫ বছর বিএনপি ক্ষমতার বাইরে। ক্ষমতার বাইরে থাকা দলগুলোর নানা অর্জন থাকে। বিএনপির প্রাপ্তি বা অর্জন কোথায়? গত কয়েক বছরে তাদের যে আন্দোলন, তার সিংহভাগই হচ্ছে ক্ষমতায় যাওয়ার আন্দোলন। এটা সাধারণ মানুষের ভেতর বেশি প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশের ভোটের রাজনীতি দুভাগে বিভক্ত, আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগবিরোধী। বিএনপি হয়তো এই আওয়ামী লীগবিরোধী প্ল্যাটফর্মের প্রতিনিধিত্ব করেছে। রাজনীতি আসলে কৌশলের খেলা। কখনো কখনো অপকৌশলেরও খেলা। রাজপথে আমরা যা দেখি, সেটা সেই কৌশল বা অপকৌশলের শেষ ধাপ। তার আগে পর্দার পেছনে চলে আসল খেলা। সেই খেলায় আওয়ামী লীগের কাছে বারবার হেরে যাচ্ছে বিএনপি। হেরে ক্ষমতা থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে।
পাঁচ। মনে হচ্ছে, বিএনপি আওয়ামী লীগের সঙ্গে কৌশলে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। বিএনপির থিংকট্যাংক আন্দোলনের নতুন নতুন কৌশল উদ্ভাবনে ব্যর্থ হয়েছে। সরকার দমন-নিপীড়ন করছে। এটা আমরা জানি। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বিএনপিকে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হবে। সহিংসতা না করেও সফল আন্দোলন করা যায়। প্রতিপক্ষের চাপ সব সময়ই রাজনীতিতে থাকবে। জনসমর্থন থাকার পরও বিএনপি এই চাপের কাছে নতি স্বীকার করছে। ডিসেম্বরে বিএনপির মধ্যে যে গতি ছিল, তার অনেকটাই এখন থিতিয়ে গেছে। সামনে রোজা। ওই সময় আন্দোলন জমাতে পারবে না। ২০১৪ আর ২০১৮ সালের ভোটে আওয়ামী লীগের কৌশল কাজ করেছে। তারা এবারও বেশ আত্মবিশ্বাসী। বিভিন্ন কৌশলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী হচ্ছে। দুবারই বিএনপির কৌশল মাঠে মারা গেছে। এবার তাদের তূণে কী ধরনের তির আছে, তা স্পষ্ট নয়। দলের চেয়ারপারসন অন্তরীণ। তার যা বয়স এবং শরীরের যে অবস্থা, তাতে তিনি আর দলের নেতৃত্ব দেবেন বা আন্দোলনে নামবেন; তেমন বাস্তবতা নেই। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও দণ্ড মাথায় নিয়ে পালিয়ে আছেন। তাই এ অবস্থায় নেতৃত্বশূন্যতাই বিএনপির সবচেয়ে বড় সংকট। এখানে ভালো খেলার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দলে একজন ভালো নেতা থাকা। বিএনপির সেই নেতা কে?
লেখক : প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, কেন্দ্রীয় কমিটি
সমস্ত প্রাণীরই চোখ আছে। কেঁচো ছাড়া। তারা দেখে। মানুষও দেখে। সব প্রাণী সমানভাবে দেখে না। কিন্তু সব মানুষই সমানভাবে দেখে। একেকজনের উপলব্ধি ভিন্ন। যে কারণে বলা হয়, দেখার ‘চোখ’ থাকতে হয়।
চোখ দেখে আসলে, উল্টো। আবার চোখ থাকলেই হয় না, দেখতে আলো লাগে। যে কারণে, অন্ধকারে মানুষ কিছুই দেখে না। মস্তিষ্ক সেই উল্টো প্রতিবিম্ব সোজা করে দেয়। ফলে আমরা দেখি।
কিন্তু তা যদি না হয়! মস্তিষ্ক উল্টোকে সোজা না করে? তাহলেও মানুষ দেখত, তবে উল্টো। আর এই জটিল ক্রিয়াটি ঘটে ‘ন্যানো সেকেন্ডে’! মানুষ তা টের পায় না।
আবার মানুষ, বহুদূরের বস্তুও দেখে না। ধূলিকণা এবং কুয়াশার কারণে তা বাধাগ্রস্ত হয়। তার মানে হচ্ছে, আমাদের চোখের দেখার শক্তি সীমাবদ্ধ।
তাহলে, দুটো বিষয় পরিষ্কার। এক. প্রকৃতভাবে মানুষ শুধু চোখের সাহায্যে দেখে উল্টো। দুই. মানুষের দৃষ্টি দৈর্ঘ্য সীমাবদ্ধ।
এর মানে হচ্ছে, সেই উল্টোকে সোজা করে নিচ্ছে, মস্তিষ্ক। যদি তা না হতো, মানুষ আরেকজন মানুষকে দেখত তিনি মাথা নিচে দিয়ে, ঠ্যাং ওপরে দিয়ে এগুচ্ছেন! কিন্তু এইভাবে, কতদূর এগুনো যায়! জটিল মস্তিষ্কের বিস্ময়কর ক্ষমতার কারণে, মানুষ কিছুই টের পায় না। শুধু তাই নয়, দেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে নিয়ন্ত্রণ করছে, এই মস্তিষ্ক।
ঢাকার দোহার উপজেলার ঘটনা। পৌরসভা থানার মোড় থেকে জয়পাড়া-লটাখোলা পর্যন্ত ফুটপাত চলে গেছে, অস্থায়ী দোকানপাটের দখলে। অভিযোগ উঠেছে, দোকান মালিকরা ভাড়া দিচ্ছেন ফুটপাত! জানা যায়, দোহার পৌরসভার পথচারীদের চলাচলের এই ফুটপাত, প্রতিদিন চাঁদার ভিত্তিতে হকারদের কাছে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই, এসব অস্থায়ী দোকানপাটের দখলে চলে গেছে ফুটপাত। আর পথচারী নিচ্ছেন, চলাচলের ঝুঁকি। আবার এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ইজিবাইক এবং মোটরসাইকেল। অবশ্য প্রশাসনের লোকজন, মাঝেমধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চালান। কিছুদিন পর, আবার আগের অবস্থা।
দোকান মালিকরা, সেই হকারদের কাছে থেকে নিয়মিত টাকা নেন। স্থানভেদে ২৫০-৫০০ টাকা। এরকম ১০০ হকার থাকলে, ৫০০ টাকা হিসাবে দৈনিক আসে ৫০,০০০!
প্রশ্ন হচ্ছে, এই টাকার গন্ধ কে কে পাচ্ছেন? উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন, শীতের সকালে সবজির দোকানদাররা, ঘণ্টাখানেকের জন্য বসে। এরপর ফুটপাত ফাঁকা হয়ে যায়। দোকান মালিকদের ফুটপাত ভাড়া দেওয়ার বিষয়টি তিনি জানেন না।
ছাপা হওয়া সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, দোহার পৌরসভার মেয়র বলেছেন, জয়পাড়া ইউনিয়নের অবস্থা খুবই খারাপ। পৌরসভার উদ্যোগে মাইকিং করা হয়েছে। তাদের নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে। সময়মতো দোকান না সরালে, উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
ফুটপাত ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন এ বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া গেলে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই চিত্র শুধু দোহার উপজেলার না। দেশের বিভিন্ন জেলার, অসংখ্য ফুটপাতে এই ঘটনা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। দেখার কেউ নেই। বিশেষ করে, রাজধানী ঢাকা শহরের ফুটপাতগুলো কোন অবস্থায় রয়েছে, তা সচেতন মানুষ জানে। এমনকি, দৃষ্টিহীন-প্রতিবন্ধী মানুষও জানে ফুটপাতে কীভাবে চলাফেরা করতে হয়! বিশেষ করে, মিরপুর-গুলিস্তান-গাবতলী-সায়েদাবাদের অবস্থা তো ভয়ংকর। এ ছাড়া ঢাকা শহরের অধিকাংশ এলাকার ফুটপাতে চোখে পড়ে বাহারি দোকানের রমরমা ব্যবসা। প্রশ্ন হচ্ছে, কাদের প্রশ্রয় ও আশ্রয়ে এরা নিরাপদে ব্যবসা চালাচ্ছেন, বছরের পর বছর? তা কিন্তু মানুষ জানে। ঢাকা শহরের ফুটপাত থেকে প্রতিদিন কত কোটি টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে তা নিয়ে রীতিমতো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করা যেতে পারে।
মূল কথা হচ্ছে, জনগণের এই ভোগান্তি কবে শেষ হবে কেউ জানে না! সেই উল্টো দেখার মতো।
নীতির রাজা রাজনীতি। এই রাজার মস্তিষ্কে, ভীষণ গ-গোল। অধিকাংশ দৃশ্যকে, সোজা করতে পারছে না। যে কারণে আমাদের দেখা উল্টো। ফলে, যা হওয়ার তাই হচ্ছে। আবার, চিন্তাও গোলমেলে। উদ্ভট সব দৃশ্য-ভাবনা।
মজার বিষয় হচ্ছে, সেই ‘রাজা’ মানতে রাজি নন তিনি উল্টো দেখেন! অধিকাংশ বিষয়ে উল্টো কারবার। চোখের সামনে, অন্যায়-অপরাধ হচ্ছে। তিনি চুপ!
শুধু তাই না, তিনি আবার বধিরও! শুনতেও পান না। কিন্তু বলেন, ভালো।
হচ্ছে উল্টো, কিন্তু সোজা করার কেউ নেই! অচল, স্থানীয় প্রশাসনিক মস্তিষ্ক। এমনটি যেন ভুলেও না হয়! জনসম্পৃক্ত বিষয়গুলো, সহজ-সরল-সৎপথে অগ্রসর হওয়াই কাম্য।
প্রখ্যাত বাঙালি চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান ১৯৮৮ সালের এই দিনে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। পুরো নাম আবু শরাফ মোহাম্মদ কামরুল হাসান। ১৯২১ সালের ২ ডিসেম্বর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পৈতৃক নিবাস ছিল পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার নারেঙ্গা গ্রামে। কলকাতার গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস থেকে ১৯৪৭ সালে চিত্রকলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। দেশবিভাগের পর ঢাকায় চলে আসেন এবং শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সঙ্গে আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। একাত্তরের উত্তাল মার্চে শিল্পীদের ‘স্বা-ধী-ন-তা’ মিছিলের অন্যতম সংগঠক এবং বাংলা চারু ও কারুশিল্পী সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও বেতার দপ্তরের শিল্প বিভাগের পরিচালক হন তিনি। পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া খানের রক্তপায়ী হিংস্র মুখমণ্ডলের স্কেচ ‘এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে’ একাত্তরে গণহত্যার এক অসামান্য চিত্রদলিল হয়ে আছে। ১৯৮৮ সালের জাতীয় কবিতা পরিষদের অধিবেশনে আঁকেন জীবনের শেষ স্কেচ ‘দেশ আজ বিশ্ববেহায়ার খপ্পরে’। এই ক্যারিকেচার আঁকার কিছুক্ষণ পরই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। পথিকৃৎ এই শিল্পীর চিত্রকলায় লৌকিক ও আধুনিক রীতির মিশ্রণ ঘটায় তিনি ‘পটুয়া কামরুল হাসান’ নামে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার চূড়ান্ত নকশা ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সরকারি মনোগ্রাম তৈরির কাজে যুক্ত ছিলেন।
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ আর নির্বাচনী তাপের মধ্যেই আজ জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এটি। অনেক যোগ-বিয়োগ কষে বাজেট প্রণয়নের শেষ সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী চমক হিসেবে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করতে সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটেছেন। ভর্তুকি নাম দিয়ে বড় অঙ্কের ‘কর ছাড়’ দিয়েছেন। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে রাজস্ব জাল বিছিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে আটকে ফেললেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো প্রস্তাবিত বাজেট সারসংক্ষেপ, ভর্তুকির নামে ‘কর ছাড়’কে বৈশি^ক মন্দা মোকাবিলার ঢাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের পরোক্ষ প্রভাবে বাজারে পণ্যের দাম কমার গতিরোধ করবে বলেও সরকারপ্রধানকে জানিয়েছেন।
তবে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ছোটদের কর পরিশোধে চেপে ধরলেও কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের ঠিকই খুশি করলেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে এমন আশা করা কঠিন।
এনবিআরের সাবেক সদস্য কর-বিশ্লেষক ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ সুবিধা কমানোর চাপ আছে। এ শর্ত না মানলে ঋণের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করা হতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় বড় মাপের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চাপ আছে। বিভিন্নমুখী চাপে সরকার সব পক্ষকে খুশি করতেই আগামীতে কৌশলে কর ছাড় রাখছে ভর্তুকির নাম দিয়ে। অন্যদিকে সাধারণ আয়ের মানুষের ওপর কিন্তু ন্যূনতম কর ধার্য করার কথা শুনছি। অনেক মানুষকে রাজস্বের আওতায় আনার কথাও শুনেছি। এভাবে ছোটদের ওপর ঠিকই কর পরিশোধে চাপ বাড়াল।’
একই মত জানিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বড় মাপের ব্যবসায়ীদের অনেকে সরাসরি রাজনীতি করেন। অনেকে রাজনীতি না করলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেন। এরা সমাজের প্রভাবশালী। বাজেট প্রণয়নকালেই এরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে নিজেদের পক্ষে সুবিধামতো অনেক কিছু আদায় করে নেন। এবারও তাই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে আইএমএফের জেরার মুখে বলার সুযোগ থাকছে যে কর ছাড় ও ভর্তুকি দুই হিসাব এক করেছি।’
সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকে আশায় আছেন এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী হয়তো জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সূত্র কষবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো রক্ষাকবচ রাখলেন না। কৌশলী অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে দেওয়া কথা রেখেছেন। সাধারণ মানুষকে রাজস্ব জালে আটকে ফেলার ছক করেছেন। মূল বাজেটের আকার বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের আয়ের হিসাবও বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এখানে কর খাত থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে চলতিবারের তুলনায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করলেন। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে করবহির্ভূত খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। শেষ সময়ের হিসাবকষে শত সংকটের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করেছেন।
আগামী বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী কর ছাড়সহ ২ লাখ ৮৯ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করবেন। জাতীয় বাজেটে নিয়মিত ভর্তুকি হিসাবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার কথা আছে। বাকিটা প্রত্যক্ষ কর ছাড় দিয়ে ভর্তুকি খাতে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেতনসহ অন্য খাতে ৭৭ হাজার ২১৮ কোটি বা মোট কর ছাড়ের ক্ষুদ্রঋণ খাতে ১২ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি, প্রবাসী আয় খাতে ৯ শতাংশ বা ১১ হাজার ২৮৭ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩৮০ কোটি, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক শিল্প খাতে ৪ শতাংশ বা ৪ হাজার ৬১২ কোটি, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ৩ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতে ২ শতাংশ বা ৩ হাজার ১২০ কোটি, আইটি এবং সফটওয়্যার খাতে ১ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৭৭ কোটি এবং পুঁজিবাজার খাতে ১ শতাংশ বা ৯৬৬ কোটি টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইস মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ যেন পুরনো বোতলে নতুন পানীয়। বড়দেরই বিভিন্ন কৌশলে সুবিধা দেওয়া হলো।’
অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের কৌশল হিসেবে বড় সুবিধা দিলেও ইটিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলে কঠোরতা এনেছেন। ইটিআইএন না নিলে ৪০ ধরনের সেবা এবং রিটার্ন দাখিলের সিøপ না নিলে ৩৮ ধরনের সেবা দেওয়া হবে না। এতদিন ইটিআইএন নিয়েও অনেকে করযোগ্য আয় না থাকলে শুধু রিটার্ন দাখিল করেছে, একটি টাকার কর দিতে হয়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ১ জুলাই থেকে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।
সাধারণ আয়ের অনেক করদাতা বলেছেন, খাবারের খরচ অনেক বেড়েছে। বাসা ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা সবকিছুই এখন বেশি। এর মধ্যে সাধারণ আয়ের ওপর কর পরিশোধে চাপ দেওয়া হলে ভোগান্তি বাড়বে। সাধারণ মানুষকে কর পরিশোধে বাধ্য করলেও সম্পদশালীদের রাজস্ব ফাঁকি কমাতে, বকেয়া আদায়ে এবং অর্থ পাচার রোধে জোরালো কিছু রাখা হয়নি। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতেও পুরনো পথেই হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী অর্থবছর থেকে রিটার্ন জমা দিতে দেরি হলে বেশি হারে জরিমানা দিতে হবে। বাজেটে আইন করে জরিমানার পরিমাণ প্রদেয় করের পরিমাণ দ্বিগুণ ৪ শতাংশ নির্ধারণে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বড়রা সুবিধা দিয়ে রাজস্ব আদায়ে চাপ বাড়ানোয় জীবনযাত্রার অনেক খাতেই খরচ বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কমাতেও বাজেটে রাখা হয়নি কিছু। আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কবে কমবে তা নিয়ে রয়েছে অশ্চিয়তা। তাই গত মাস ছয়েক থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চাল, ডাল, আট, ময়দা, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবারের দাম আপাতত কমছে না। চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও কমবে না। গত (নভেম্বর ২০২২-এপ্রিল ২০২৩) ছয় মাসের সাধারণ মূল্যস্ফীতির গড় হার ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
নির্বাচনের রাজনীতি একটা বিজ্ঞান এখানে হিসাব খুব জটিল। ভুল হলে গরল। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কার পরাজয় হয়েছে? বিশেষ করে জাহাঙ্গীর আলমের ভাষায় ‘এটি নৌকার নয় বরং ব্যক্তি আজমত উল্লার পরাজয়’ মন্তব্যটি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অন্যদিকে নেটিজেনদের ঠাট্টা সুষ্ঠু ভোটের জন্য আমেরিকার চাপে প্রথম ‘বলি’ হলেন আজমত উল্লা। জাহাঙ্গীর ঠিকই আঁচ করতে পেরেছিলেন তাকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না, তাই মাকে প্রার্থী করে রাখেন। তার এ কৌশলী সিদ্ধান্তের কাছে আওয়ামী লীগ হেরেছে। বাংলাদেশে এতদিন উত্তরাধিকারের রাজনীতির সংস্কৃতিতে বাবা কিংবা মায়ের আসনে সন্তান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন। এবার তার উল্টোটা ঘটতে দেখা গেল।
আওয়ামী লীগ ভেবেছিল জাহাঙ্গীরের মা অখ্যাত। ছেলের মতো প্রভাব ফেলতে পারবেন না তিনি। হালকাভাবে নেওয়াটা আওয়ামী লীগের ভুল ছিল। বহুদিন ধরে তারা এ কাজটি করে আসছে। ‘প্রতিপক্ষকে কখনো দুর্বল ভাবতে নেই’, কথাটা দলটি ভুলে গেছে। প্রার্থী হওয়ার আগে জাহেদা খাতুনকে রাজনৈতিক-সামাজিকভাবে গাজীপুরের মানুষ চিনত না, নির্বাচন তো দূরের কথা কোনো রাজনৈতিক কমর্সূচিতে তিনি ছিলেন না। জাহাঙ্গীর তার সেই মায়ের পক্ষে আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোটকে একাট্টা করেছেন। নীরব সমথর্কদের সংগঠিত করেছেন। তিনি তার মাকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গেছেন, কান্নাকাটি করেছেন। সহানুভূতি আদায় করেছেন। আর আজমত উল্লা ভোটারদের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন না, হয়তো নানাশক্তির ওপর তিনি নির্ভরশীল ছিলেন। প্রতিপক্ষকে খুব একটা হিসাবে ধরেননি। এটা ছিল ক্ষমতাসীনদের ভুল।
এটা ঠিক, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের কাছে এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই চ্যালেঞ্জকে অনেকটাই সামাল দিতে পেরেছে সরকার। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে বিজয়ী হলেও সাধারণ মানুষকে আস্থায় নিয়ে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বৈতরণী পার হতে পারবে কি না সেই প্রশ্নটা এখন সামনে চলে এসেছে। আমার মনে হয়, এ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য অস্বস্তিকর সতর্ক সংকেতও। আওয়ামী লীগের ভেতর আরেকটি আওয়ামী লীগ তৈরি হয়েছে, সেটাও প্রমাণ হয়েছে এ নির্বাচনে। এরা যে কখন আওয়ামী লীগের ভেতর প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে, এটা দলটি ধারণা করতে পারেনি। এখন যারা আওয়ামী লীগ করেন তাদের বেশিরভাগই তা করেন স্বার্থসিদ্ধির জন্য, দলের আদর্শের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি খুব ক্ষীণ এটাও এ নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছিল অতি আত্মবিশ্বাসী ও আত্মপ্রত্যয়ী। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় দলটির কারও কারও মধ্যে অহংকার এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বিপজ্জনকভাবে পর্যায়ে চলে গেছে। তারা মনে করেন দল যাকে মনোনয়ন দেবে তাকে প্রভাব খাটিয়ে জিতিয়ে আনবে। গাজীপুরেও সেই প্রবণতা দেখা গেছে। যার কারণে যেভাবে গুরুত্ব সহকারে মাঠে কাজ করার দরকার ছিল, সেভাবে তারা গাজীপুরে কাজ করেননি। রাজনীতি হুমকি, ধমকের বিষয় নয়। একটি সমঝোতার কৌশল। এ চিরন্তন সত্যটা আওয়ামী লীগ ভুলেই গেছে। ভয় দেখিয়ে, প্রভাব খাটিয়ে রাজনীতিতে জয়ী হওয়া যায় না।
জাহাঙ্গীর ও তার মা যখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন, তখন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ‘দমননীতির’ কৌশল নিয়েছিল। ভোটের আগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা, দুদকে তলব, প্রচারের সময় গাড়ি ভাঙচুর, পেশিশক্তি প্রয়োগ সবই জনগণের মধ্যে জায়েদা খাতুনের পক্ষে এক ধরনের সহানুভূতি তৈরি করেছে। ভোটের দিন দেখা গেছে, নৌকার কার্ড গলায় ঝুলিয়ে তারা ঘড়ি মার্কায় ভোট দিয়েছেন।
গাজীপুরে পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললাম। তারা জানাল ব্যক্তি জাহাঙ্গীর আলমের ইমেজ ও তার উন্নয়ন কাজ নগরবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। তাদের ধারণা, তাকে মেয়র পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে থমকে যাবে উন্নয়ন কাজ। নানা ষড়যন্ত্র ও প্রতিহিংসার শিকার হলেও জাহাঙ্গীরের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অটুট।
জাহাঙ্গীর আলমের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থনের কারণেই তার মায়ের বিজয় সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। ঋণখেলাপির দায়ে তার প্রার্থিতা বাতিল হবে এটা জানত জাহাঙ্গীর। তাই তার পক্ষে মা জায়েদা খাতুনকে তিনি মেয়র পদে দাঁড় করান। সাধারণ নারী ভোটারদের অকুণ্ঠ সমর্থন, শ্রমিকদের মধ্যে জাহাঙ্গীরের জনপ্রিয়তাও জায়েদা খাতুনের জয়ে ভূমিকা রাখে। এছাড়া নির্বাচনের প্রচারে কয়েক দফা হামলা, বাধা দেওয়ার বিষয়টি মানুষের নজর কেড়েছে। ফলে মানুষ অনেকটা বিরক্ত হয়েই আজমত উল্লা খানের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। বিরোধী শিবিরের ভোটও পড়েছে জাহাঙ্গীরের মায়ের ব্যালটে। জায়েদা খাতুন যেসব আসনে এজেন্ট দিতে পারেননি, সেখানেও জিতেছেন তিনি। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় তারা ও তাদের শরিকরা জায়েদা খাতুনের প্রতীকে ভোট দিয়েছেন।
আজমত উল্লা মার্জিত, বিনয়ী ও স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসেবে গাজীপুরের রাজনীতিতে পরিচিত হলেও তার বিরুদ্ধে জনবিচ্ছিন্নতার অভিযোগ রয়েছে। ভোটারদের সঙ্গে পর্যাপ্ত যোগাযোগের অভাব, দলীয় কোন্দল এবং স্থানীয় প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিদের উদাসীনতাও রয়েছে। জাহাঙ্গীরের তুলনায় নির্বাচনের প্রচারে নৌকার প্রার্থী তেমন একটা টাকা খরচ করেননি।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আওয়ামী লীগের বিভক্তি। সেই বিভক্তি নির্বাচনের আগে অতটা দেখা না গেলেও ভোটের দিন প্রকাশ পেয়েছে। প্রচারেও ছিল গাফিলতি। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে ঢিলেমি ছিল প্রচারণায়। বড় বড় শোডাউন এবং রোড শো করলেও মানুষের দ্বারে দ্বারে যাননি। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে একাধিক নেতা পরাজয়ের কারণ হিসেবে বলছেন, দলের স্থানীয় নেতাকর্মীর মধ্যে ভেতরে ভেতরে দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং। এতে আওয়ামী লীগের ভোট দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগের একাংশ গোপনে ঘড়ির পক্ষে কাজ করেছে। নৌকার প্রার্থী তা আগে ধরতে পারেননি। ভোটের পর আজমত উল্লা বলেছেন, দলে থাকা বেইমানদের গাদ্দারিতে হেরেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামো ও নির্বাচনী ব্যবস্থাটি এমন জায়গায় চলে গেছে যে, কার চেয়ে কে কতটা যোগ্য ও ভালো মানুষ সেটি তার জয়-পরাজয় নিয়ন্ত্রণ করে না। মানুষ এখন ভোট দেয় কিছু পাওয়ার উদ্দেশ্যে নয়, বরং অনেক সময় ভোট দিয়ে তার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। যে কারণে দেখা যায়, দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকের বাইরে থাকা বিপুল ভোটারের অনেকেই সুযোগ পেলেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে ভোট দিতে নিরুৎসাহিত হন। আবার ক্ষমতাবানের কাছ থেকে তার কমিউনিটির অনেক মানুষ যেমন উপকৃত হন, তার বিপরীতে বিপুল সংখ্যক মানুষ বঞ্চিত এবং নানাভাবে নির্যাতিতও হন। ফলে তারা ভোটের সময় ‘দেখিয়ে দেওয়া’র অপেক্ষায় থাকেন। এ দেখিয়ে দেওয়ার ব্যাপারগুলো গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঘটেছে। মানুষের ক্ষোভের আঁচটা যে মাত্রায় ছড়িয়েছে, এর প্রভাবটা এ নির্বাচনে পড়েছে। প্রশ্ন হলো এ জয় কি তাহলে মানুষের ক্ষোভের বিস্ফোরণ?
বিএনপি এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়েছিল আওয়ামী লীগই। দলের মধ্যে একটা অংশ তো বিরুদ্ধে ছিলই। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন নতুন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতি, অভ্যন্তীরণ দ্বন্দ্ব, জনগণের মনোভাব ইত্যাদি সম্পর্কে দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে যে সঠিক তথ্য নেই, সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনগুলোতেও যদি এরকম অন্তঃকলহ থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য গাজীপুরের মতোই পরিণতি অপেক্ষা করছে।
লেখক: প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী দেবাশীষ কুমার সাহার পদ ২০তম গ্রেডের। বেতন হতে পারে সর্বসাকল্যে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা। তিনিই কিনা নেপালের কাঠমান্ডু ও ধলেশ্বরীর বিভিন্ন ক্যাসিনোতে জুয়া খেলতে যেতেন নিয়মিত। সর্বশেষ গত ২ এপ্রিল ৬০ লাখ টাকা নিয়ে বাংলাদেশ থেকে নেপাল যান ক্যাসিনো জুয়া খেলতে। অতিরিক্ত ডলার রাখার দায়ে নেপালের ত্রিভুবন বিমানমন্দরে এক সহযোগীসহ আটক হন দেবাশীষ। সেখানে ২৩ দিন জেল খেটেছেন। দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
দেবাশীষের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার জমি হাতিয়ে নেওয়া ও নারী কেলেঙ্কারির সংবাদ প্রকাশের পর গতকাল বুধবার রাজউক তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। সংস্থার চেয়ারম্যান (সচিব) মো. আনিছুর রহমান মিঞা স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, রাজউকের জরিপসাথি পদে কর্মরত দেবাশীষ কুমার সাহার বিরুদ্ধে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকার জমি হাতিয়ে নেওয়া ও নারী কেলেঙ্কারির সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় সংস্থার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। তার এ ধরনের কার্যকলাপ রাজউকের (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী প্রতারণার শামিল। কর্মকর্তা ও কর্মচারী চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ এবং প্রতারণার জন্য তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। তার বিরুদ্ধে নিয়মিত বিভাগীয় মামলা করার সুপারিশ করা হয়েছে ওই আদেশে।
সাবেক এক সচিবের মেয়ের প্রতারণার মামলায় গত মঙ্গলবার রাতে দেবাশীষকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। গতকাল তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ তাকে রিমান্ডে নেওয়ার জন্য আবেদন করা হবে বলে ডিবি জানিয়েছে।
তার বিরুদ্ধে ওঠা ধর্ষণ, অর্থ আত্মসাতের একাধিক অভিযোগের তদন্ত করছে ডিবি। তবে দেবাশীষ গ্রেপ্তার হলেও আতঙ্কে দিন কাটছে ভুক্তভোগী ওই নারীর।
গত মঙ্গলবার ডিএমপির রামপুরা থানায় করা মামলায় ওই নারী অভিযোগ করেছেন, ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময় রাজউকের ঝিলমিল এবং পূর্বাচলে তিনটি প্লট ভুক্তভোগীকে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তার কাছ থেকে ৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন দেবাশীষ। এই টাকা দেওয়ার জন্য ভুক্তভোগী তার নিজের নামের দুটি ফ্ল্যাট, ১৫০ ভরি স্বর্ণ, একটি প্লট, ৫০ লাখ টাকা মূল্যের সঞ্চয়পত্র, প্রাইভেট কার বিক্রি করে টাকা দেন। প্লট না পেয়ে টাকা ফেরত চাইলে দেবাশীষ গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর তার রামপুরার মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার বাসায় গিয়ে মারধর করেন। এতে তার গর্ভে থাকা সন্তান মারা যায়।
ভুক্তভোগী গতকাল রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। দেবাশীষের হাত অনেক লম্বা। সে আমার ও আমার স্বামীর যেকোনো ক্ষতি করে দিতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘আমি মা-বাবার একমাত্র মেয়ে। কখনো বাইরের জগৎ সম্পর্কে ভালো জানতাম না। বাবা-মার মৃত্যুর পর আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে দেবাশীষ সর্বস্বান্ত করেছে। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’
ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেবাশীষকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। কাল (আজ বৃহস্পতিবার) তার ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে।’
দেবাশীষের বিরুদ্ধে অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিসি বলেন, ‘দেবাশীষ যেসব নারীকে জিম্মি করেছে, তাদের তথ্য আমরা পাচ্ছি। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।’
দেবাশীষের ক্যাসিনোকান্ড : দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে দেবাশীষের ক্যাসিনোকা-ের বিস্তারিত তথ্য। প্রতিবেদনটি দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, গত ১১ এপ্রিল করতোয়া এলাকায় যাওয়ার সময় ত্রিভুবন বিমানবন্দরে দেবাশীষ ও তার সঙ্গী মো. মফিজুল ইসলামকে আটক করে বিমানবন্দর পুলিশ। ইমিগ্রেশনের পর নিরাপত্তা তল্লাশি গেটে তাদের কাছ থেকে ১০ হাজার করে মোট ২০ হাজার ডলার উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তাদের দুজনকে ৩০ হাজার ডলার করে জরিমানা করে এবং পরিশোধ শর্তে ছেড়ে দেওয়ার আদেশ দেয়। পরে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করলে ১০ লাখ নেপালি রুপি জমা দিয়ে ২৩ দিন পর হাজত থেকে জামিনে ছাড়া পান এবং পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, দেবাশীষ রাজউকের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এবং পেশাদার ক্যাসিনো জুয়াড়ি। তিনি অনেক অবৈধ সম্পত্তির মালিক, তার বিরুদ্ধে অনেক অপকর্মের মামলা ও অভিযোগ রয়েছে।
ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেবাশীষের ফাঁদে পা দিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেক নারী। সম্পত্তিসংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে রাজউকে যাওয়া নারীদের টার্গেট করেন তিনি; বিশেষ করে সহজ-সরল নারীর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাৎ করেন। অনেক নারীকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণও করেছেন দেবাশীষ। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফির মামলাও আছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।