
যদি কেউ প্রশ্ন করেনশিক্ষার মূল উদ্দেশ্য কী? এক কথায় বিষয়টি ব্যাখ্যা করা অসম্ভব। তবেআমাদের দেশের বাস্তবতা, শিক্ষা সম্পর্কে আলাদা ব্যাখ্যা দেয়। এখানে পুথিগত বিদ্যালাভই শিক্ষা। এর মানে, সার্টিফিকেট!
মানবিকতা, ভব্যতা, পরমতসহিষ্ণুতা, শিষ্টাচার এবং শ্রদ্ধাবোধের সমন্বয় হচ্ছে সভ্যতা। বিদ্যাগ্রহণের ফলে আপনাতেই হৃদয়ে জন্ম নেয় এসব বোধ। মানুষ আলোকিত হয়ে ওঠে। তখন স্বাভাবিকভাবেই একজন মানুষ বিনয়ী হয়ে ওঠেন। অপরকে ভালোবাসেন। জড়িয়ে নেন অপার আনন্দে। শিক্ষার আলোয় মানুষ জ্যোতির্ময় হয়ে ওঠে। পানি মেশানো দুধ খেতে দিলে একটি হাঁস যেমন শুধু দুধটুকু খেয়ে নেয়, থাকে শুধু পানি। শিক্ষা তাই-ই। গ্রহণ এবং বর্জনের আলোকিত চিন্তার ক্ষমতাই শিক্ষা। নইলে, কোনো অর্জন সম্ভব নাসমস্তই বিসর্জন।
এইচএসসির ফল প্রকাশিত হয়েছে। ইন্টারমিডিয়েট পাস করা এসব ছেলেমেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে। যাদের সামর্থ্য বেশি তারা উচ্চশিক্ষায় যাবেবিদেশ। কিন্তু ভালো রেজাল্ট করা ছেলেমেয়ের মধ্যে বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা করার সামর্থ্য কত শতাংশ মানুষের আছে? দেশে যারা থাকছে তাদের মধ্য থেকেই বা কত শতাংশ সুযোগ পাচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার? আবার এরপর রয়েছে চাকরি। সেই সোনার হরিণ ধরতে পারছে কতজন! গতকাল ৯ ফেব্রুয়ারি দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৮৭ জন। পাস করেছে ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৮৭ জন। পাসের হার ৮৫.৯৫ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন। এটি মোট উত্তীর্ণের ১৭.৪২ শতাংশ। এই যে প্রতি বছর লাখ লাখ ছেলেমেয়ে কলেজ থেকে বের হচ্ছে, তারা যাচ্ছে কোথায়? কত শতাংশ ছেলেমেয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে? আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করে পড়ানোর সামর্থ্য কত শতাংশ পরিবারের আছে?
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমিত আসনের বিপরীতে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে থাকছে ভর্তির অপেক্ষায়। তাদের মধ্যে সামর্থ্যবান পরিবারের ছেলেমেয়েরা যাচ্ছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর বাকি ছাত্রছাত্রী! কোনো গবেষণা হয়েছে? খোঁজ নিলে জানা যাবে এদের কারও বিয়ে হয়েছে। পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে কেউ নাম লিখিয়েছে চাকরিতে।
৫০, ৬০, ৭০-এর দশক পর্যন্ত এই ভূখন্ডের রাজনীতির মূল নিয়ন্ত্রণ ছিল ছাত্রদের হাতে। ফলে, বাঙালির প্রধান তিন অর্জনবায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, শুরু করেছে ছাত্ররাই। এমনকি ৯০-এর গণ-আন্দোলনেও ছাত্রদের মুখ্য ভূমিকা ছিল। এ এক দীর্ঘ করুণ অধ্যায়। ‘অশুভ-কাল’ ছায়া গ্রাস করেছে ছাত্রসমাজকে। সেই কাল-প্রেতাত্মা জানে ছাত্রশক্তিকে বিভ্রান্ত, আদর্শচ্যুত এবং অর্থলোভে আকৃষ্ট করতে পারলে এই জনগোষ্ঠী থেকে মঙ্গলকর, জনকল্যাণকর কোনো ইতিহাসের জন্ম নেবে না। অনেক হয়েছে, এবার স্থবির থাকুক বাংলাদেশের ইতিহাস! বাস্তবে অনেকটা তাই হচ্ছে। এখন ছাত্ররা কীসে মুগ্ধ হয়? কী, ভীষণ প্রয়োজন তার? গবেষণা করলে দেখা যাবেঅধিকাংশ ছাত্র এখন নিজের ভবিষ্যৎ নিয়েই ভাবে। সেখানে অন্য কেউ নেই। সমাজ-সংস্কৃতি গোল্লায় যাক! তাতে আমার কী?
জাপানে অপরাধ০ ভাগ! এমন সমাজব্যবস্থার ভিত্তি কীভাবে হলো? মানে, সবার মানসিকতা এত উন্নত হলো কীভাবে! দেখা যাবে এই নৈতিকতার শিক্ষা সে পেয়েছে স্কুল জীবনেই। আশা জাগানিয়া হচ্ছে জাপানের শিক্ষাব্যবস্থা, বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে। তবে বেসরকারিভাবে। ‘কুমন পদ্ধতি’র মাধ্যমে শিশুরা এমন কিছু শিখবে, যা জীবনের জন্য ভীষণ দরকার। ক্লাসে প্রথম হওয়া বা এ-প্লাস পাওয়া জরুরি নয়। প্রয়োজন বিশ্লেষণী ক্ষমতা এবং আত্মবিশ্বাস।
বিদ্যালাভে মানুষই উন্নত হয়। সেই-ই উন্নত যে নিজেকে উন্নত করার পাশাপাশি অন্যের কথাও ভাবে। ‘একা’ উন্নত হলে কোনো লাভ নেই। সমাজ উন্নত না হলে এই আমি বিচ্ছিন্ন হব সমাজ থেকেই। তখন বিদ্যা থেকে ‘বিনয়’ তিরোহিত হতে বাধ্য।
বিশিষ্ট অভিনেতা, চলচ্চিত্রকার, শব্দসৈনিক মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সুভাষ দত্ত (৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৩০-১৬ নভেম্বর ২০১২) সর্বৈবভাবে ছিলেন একজন সৃজনশীল সত্তা, কুশলী কৃতবিদ, সৎ ও স্বচ্ছমনের অধিকারী। প্রায় এক যুগ আগে নিজের সহযাত্রী আত্মীয়ের সড়ক দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক মৃত্যু দেখে জীবন ও জগৎ সম্পর্কে তার উপলব্ধির স্তরে এমন আলোড়ন সৃষ্টি হয় যে পরবর্তীকালে তিনি সর্ববাদী, সাত্ত্বিক সাধনায় নিবেদিত হন। তার ‘আলিঙ্গন’ ছবিতে এ ধরনের একটি চরিত্রের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটেছিল আমাদের। তার মধ্যে আমরা এমন একটি চরিত্রের সন্ধান পাই যার কাছে সব ধর্ম ও মতের মধ্যে ঐকমত্যের মর্মবাণী অনুভূত হয়। রামকৃষ্ণ মিশনের অনুরক্ত অনুসারী, বেলুড়মঠের নরেন্দ্রপুরের আত্মিক সাধনার সাত্ত্বিক পুরুষ সুভাষ দত্ত‘মনরে চল নিজের নিকেতনে’ স্বামী বিবেকানন্দের এই ভূয়োদর্শনে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন। সব ধরনের সংকীর্ণতা রহিত সুভাষ দত্ত সর্ববাদী মতাদর্শের ছিলেন। তিনি অকপটে লিখেছেন
‘আমি ধর্মান্ধ নই, আমার ভেতর কোনো সংকীর্ণতা নেই। আমি আজমির শরিফে গিয়েছি বেশ কয়েকবার। শাহজালাল, শাহপরান, শাহ মোস্তান, হাইকোর্টের মাজার, মিরপুরের মাজারএসব জায়গায় আমি গিয়েছি। টুপি পরে বা মাথায় পাগড়ি দিয়ে ধ্যান করেছি, মোনাজাত করেছি। আমি মিলাদ-মাহফিলে শরিক হয়েছি। চার্চে নতজানু হয়ে যিশুর সামনে প্রার্থনা করেছি, গিয়েছি বৌদ্ধ বিহারে।’
অনন্য সৃজনশীল প্রতিভার অধিকারী সুভাষ দত্তের শিল্পভাবনার শর্ত ও মূল্যবোধ ছিলজীবন-সংগ্রামে মুখর তুখোড় তৎপরতা শেষে শিকড়ের কাছে প্রত্যাবর্তন, নিজের উপলব্ধির কাছে ফিরে আসা। পৈতৃক নিবাস বগুড়ার সারিয়াকান্দি ধুনটের হাটশের গ্রামে আর লেখাপড়ার হাতেখড়ি দিনাজপুরে মাতুলালয়ে, বড় হয়েছেন সেখানে। নিজে পড়াশোনার পাঠ মাঝপথে চুকিয়ে ‘ফিল্মের টানে’ সুদূর বোম্বেতে পাড়ি জমিয়েছিলেন, সেখানে ‘অনেক কিছু’ করার পর দেশে, সেই দিনাজপুরেই ফিরেছিলেন। ‘জীবিকার শহর ঢাকায়’ তার পদার্পণ ১৯৫৩ সালের ২৩ নভেম্বর।
ঢাকায় সিনেমার প্রচারপত্র ও আর্ট ডিরেকশন এবং বাংলা-উর্দু ছবিতে কৌতুকপ্রদ চরিত্রে অভিনয় করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছিলেন। অসম্ভব অনুসন্ধিৎসু এবং সূক্ষ্ম দৃষ্টির অধিকারী কঠোর পরিশ্রমী এই মানুষটির সব সময় আগ্রহ ছিল সৃজনশীল কিছু করার। জীবনকে যেমন দেখতেন তীক্ষ্ন দৃষ্টিতে তেমনি এর শিল্পিত রূপায়ণেও ভাবতেন বেশি। আর এর জন্য তার পড়াশোনা ও অধ্যবসায় শেষমেশ মেশে সেলুলয়েডের ফিতার ক্যানভাসে জীবনের নিত্যতাকে তুলে ধরার।
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের চলচ্চিত্র শিল্প যখন পশ্চিম বাংলার সেরা সব বাংলা ছবি এবং পশ্চিম পাকিস্তানের উর্দু ছবির প্রচন্ড ঢেউয়ের ধাক্কায় নিরুদ্দেশ যাত্রী, এই ঢাকাতেও উর্দু ছবি নির্মাণের বন্যা বইতে শুরু করেছিল, বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনে রক্ত দিতে হচ্ছিল, স্বাধিকার থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অয়োময় আকাক্সক্ষা যখন দানা বাধছিলসে সময় ১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্ত ‘সুতরাং’ ছবি নির্মাণ করে বাঙালির, বাংলা সংস্কৃতির, সৃজনশীলতার, মৌলিকত্বের মর্মমূলে যেন আত্মবিশ্বাসের বিজয় নিশান উড়িয়ে দিলেন। সুতরাং সবই নতুন-চিত্রনাট্যকার, পরিচালক, সংগীত পরিচালক, গীতিকার, নায়িকা, নায়ক, প্রযোজক, এরা সবাই যেন এক কাতারে শামিল হলেননতুন পথের, প্রত্যয়দীপ্ত নবযাত্রার অভিষেক ঘটাতে।
সুভাষ দত্ত ‘সুতরাং’ করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প নেন ১৯৬২ সালের শেষের দিকে। পত্রিকায় সুতরাং বানানোর বিজ্ঞাপন দেখে বাংলাবাজারের মেসে বসবাসকারী জনৈক সত্যসাহা (১৯৩৪-৯৯) সত্যই সাহস করে এসে সুরকার হতে চাইলেন। সুভাষ দত্তের ভাষায়‘আমি সত্যসাহার দু-একটা পরীক্ষা নিলাম। কেমন সুর-টুর জানে। তারপর ছবির সিচুয়েশন নিয়ে বসলাম। বললাম এ ধরনের গান লাগবে আমার ছবিতে। সৈয়দ শামসুল হকের সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে। এটা হওয়ার পর আমি নায়িকা খুঁজব। যেহেতু আমি বেঁটে মানুষ। তাই ছোটখাটো একটা মেয়ে দরকার আমার বিপরীতে, নায়িকা হওয়ার জন্য।’
তার নায়িকা চট্টগ্রামের মিনা পাল। তার আবিষ্কারের কাহিনীটিও অভিনব।
‘আমি ছবির ষোলোটি দৃশ্যের স্কেচ এঁকে পাঠালাম। স্কেচ দেখে মীনার ছবি তুলে আনলেন সত্য সাহা। কয়েকটি ফটোগ্রাফ খুবই ভালো লাগল। বললাম, ঠিক আছে। ওকে আসতে বলো। তারপর মীনা তার বাপ এবং বোনদের নিয়ে ঢাকা এলো। এখন আমার দুই প্রোডিউসার ওকে দেখে হই চই করে উঠলেন। আরে, এ দেখছি খুবই ছোট মেয়ে। বাচ্চা মেয়ে। একে দিয়ে হবে নাকি। মীনা পাল ফ্রক পরা ছিল। আমি বললাম, ফ্রকটা ছেড়ে শাড়ি পরে এসো। ওরা নবাবপুরে, ঢাকা বোর্ডিংয়ে উঠেছিল। সে হোটেলে গিয়ে শাড়ি পরে এলো। দেখলাম ভালোই লাগছে। মুহূর্তে শুঁয়োপোকা থেকে প্রজাপতির মতো মীনা পাল থেকে কবরী বেরিয়ে আসে। ওর চেহারার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল ওর হাসি।’
তার সেরা চলচ্চিত্রগুলোর মর্মবাণী হলো শিকড়ের কাছে ফিরে আসা। ‘সুতরাং’ ছবিতে তার নিজের অভিনীত চরিত্র সিপাহি জব্বার শহরে ব্যস্ত সমস্ত কর্মজীবন ছেড়ে ‘ওরে মন ছুটে চল মধুমতি গায়’, গাইতে গাইতে ফিরেছে গ্রামে। ‘কত ঘুরে এলাম কত দেখে এলাম অশান্ত মনে আমি ছুটে এলাম... আমার গায়ের মত কভু দেখিনি, সে যে আমার জন্মভূমি...’। ‘আলিঙ্গন’র সাধু বাবার মতো সুভাষ দত্ত তার শিল্পকর্মে, ‘বসুন্ধরা’য় সেই মাটির কাছে ফিরে যাওয়ার আকুতি প্রকাশ করেছেন। দেশিকোত্তম এই ব্যক্তিত্ব নিজের দেশ, মাটি ও মানুষকে সর্বোচ্চ মহিমায় দেখিয়েছেন। ১৯৭১ সালে হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দি হয়েও সেই অভিনয় সুনামের সুবাদে পাঞ্জাবি ক্যাপ্টেনের শ্রদ্ধা ও সমীহবোধের কারণে মুক্তি পেয়েছিলেন। নিজের সেই মুক্ত পাওয়ার স্মৃতিকে ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষীতে’ আনোয়ার হোসেনের অভিনয়ের মধ্যে তুলে ধরেছেন।
‘সুতরাং’ ছবিতে নিজের প্রেমিকা জরিনার মাতৃহারা সন্তানকে লালনপালনের দায়িত্ব নেওয়ার ঔদার্য যেমন দেখিয়েছেন, তেমনি ১৯৭২ সালে যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে বীরাঙ্গনাদের সামাজিক পুনর্বাসনে রেখেছেন মানবীয় দর্শনের ব্যাখ্যা ও সমাধানের প্রেরণা। অধ্যাপক আশরাফ সিদ্দিকীর ‘গলির ধারের ছেলেটি’র চলচ্চিত্রায়ণে (ডুমুরের ফুল) একই সঙ্গে শিশু মনস্তত্ত্বের ও মানবীয় দৃষ্টিভঙ্গির এমন কাব্যিক শোকগাথা নির্মাণ করেন, যা একটি ধ্রুপদি শিল্পকর্মে উন্নীত হয়। ‘আবির্ভাব’ ও ‘ ‘বসুন্ধরা’ ছবিতে সন্তানময়ী মায়ের আবেগ ও আকিঞ্চন আকাক্সক্ষাকে শৈল্পিক তুলিতে বিমূর্ত করেছেন। তার তাবৎ চলচ্চিত্রেই মানবিক মূল্যবোধের, সমাজ দর্শনের, এবং নিবিষ্ট চিন্তা-চেতনার ভাষ্যে বাক্সময় হয়ে উঠেছে।
নারীশিক্ষার অগ্রদূত মহীয়সী মহিলা বেগম রোকেয়ার ওপর সরকারি অনুদানে তার নির্মীয়মাণ শেষ ছবি শেষ করার ব্যাপারে তিনি বিশেষ আগ্রহী ছিলেনএ ছবিতে তিনি বেগম রোকেয়ার সামাজিক ভূমিকাকে বিশেষ ব্যঞ্জনায় তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। দৈনিক ইত্তেফাকে ‘বেগম রোকেয়ার সামাজিক ভূমিকা’ শীর্ষক আমার একটি প্রবন্ধ পড়ে এ ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহ বোধ করেছিলেন। সামাজিক গবেষণার প্রতি তার নিষ্ঠা ছিল, প্রচুর পড়াশোনা করতেন। দুর্ভাগ্য, অলঙ্ঘনীয় জটিলতার আবর্ত ও অবগুণ্ঠন থেকে বেগম রোকেয়ার ওপর ছবিটি নির্মাণে পৃষ্ঠপোষকতা সুনিশ্চিত করা যায়নি। এ নিয়ে তিনি প্রায়ই উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করতেন। কালজয়ী এক সৃজনশীল কাজের অপ্রকাশের এই অব্যক্ত বেদনাবোধ নিয়েই তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।
সুভাষ দত্ত একজন মহৎপ্রাণ শিল্পী ছিলেন। চলচ্চিত্রকে শিল্প মর্যাদায় অভিষিক্ত করতে তার প্রয়াসের যেমন অন্ত ছিল না, আবার তার হাতেই বাংলা চলচ্চিত্রে পুঁজি বিনিয়োগের সার্থকতার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বলাবাহুল্য, তিনিই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে নাবালকত্ব থেকে সাবালকত্বে, উর্দু ছবির ভাববন্ধন থেকে বাংলা ছবিকে রক্তমাংসসহ সবল-সতেজ ও শিল্প বিনিয়োগ উপযোগী করে তোলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। পুরো ষাট ও সত্তরের দশকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন তিনি।
লেখক: সাবেক সচিব, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান
তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্ত এলাকার কয়েকটি শহর ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, ১৯ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। তুরস্কের ভূমিকম্পের খবর গণমাধ্যমে এভাবে এসেছে, ‘ঘুমন্ত দুই দেশে মৃত্যুর সকাল। তখন ভোররাত। বাইরে ঝিরিঝিরি তুষার পড়ছে। তীব্র শীতে ঘরের উষ্ণতায় বেশির ভাগ মানুষই গভীর ঘুমে। কিন্তু সে ঘুম যে আর ভাঙবে না তা জানা ছিল না হাজারো মানুষের। সোমবার ভোর সোয়া ৪টার সময় তীব্র ভূমিকম্পের আঘাতে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ঘরবাড়ি। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার বহু শহরের বাসিন্দারা।’
মানুষের কর্মকুশলতা পরীক্ষার জন্য আল্লাহতায়ালা সৃষ্টি করেছেন ‘জীবন ও মৃত্যু’। সুরা মুলকের সূচনায় আছে, ‘আল্লাহ জীবনের আগেই মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন।’ আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করেন নানাভাবে। মানুষ অনিবার্য কিয়ামতের দিকে ধাবিত হচ্ছে, যা এক মহাপ্রলয়ংকরী ভূমিকম্প। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন প্রবল কম্পনে জমিন প্রকম্পিত করা হবে। আর জমিন তার ভার বের করে দেবে। আর মানুষ বলবে, এর কী হলো? সেদিন জমিন তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে।’সুরা জিলজাল : ১-৪
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আয়াত পাঠ করলেন এবং বললেন, ‘তোমরা জানো, পৃথিবীর বৃত্তান্ত কি? সাহাবিরা (রা.) বললেন, আল্লাহ এবং তার রাসুলই ভালো জানেন। নবী করিম (সা.) বললেন, তার বৃত্তান্ত এই যে, নর অথবা নারী এ মাটির ওপর যা কিছু করছে এই মাটি তার সাক্ষী দেবে। আর বলবে, অমুক অমুক ব্যক্তি অমুক অমুক দিনে অমুক অমুক কর্ম করেছে।’মুসনাদে আহমদ : ২/৩৭৪
বস্তুত ভূকম্পনের মাধ্যমে আল্লাহ তার বান্দাদের সতর্ক করেন, যাতে তারা অনুতপ্ত হয় এবং আল্লাহর পথে ফিরে আসে। এই সঙ্গে আমাদের অবশ্যই চিন্তা করা উচিত, কেন এত ভূমিকম্প হচ্ছে? মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি ভয় দেখানোর জন্যই (তাদের কাছে আজাবের) নিদর্শনগুলো পাঠাই।’সুরা বনি ইসরাইল : ৫৯
বাংলাদেশেও মাঝেমধ্যে ভূমিকম্প হয়। তখন দেখা যায়, ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিতে লোকজন ঊর্ধ্বশ্বাসে ছোটাছুটি করছে। কেউ কেউ তো নিজেকে বাঁচাতে বহুতল ভবন থেকে লাফ দিয়ে প্রাণ হারিয়েছে। সামান্য সময়ের ভূমিকম্প শুরু ও শেষ হওয়ার পর অল্প কিছু মানুষ ছাড়া অধিকাংশের কাজ ছিল ভূমিকম্পের সময় কার কী অবস্থা হয়েছিল এবং ভূমিকম্পের আশঙ্কা কোথায়কতটুকু আছে এসব নিয়ে আলোচনা। বড় একটি অংশকে দেখা গেছে, ভূমিকম্পের দশ-পনেরো মিনিট পর থেকেই ফুর্তি ও আনন্দের আমেজ নিয়ে উল্লাস করতে। যেন এটা তেমন কিছুই নয় এবং এতে সতর্ক হওয়ার কিছুই নেই। অল্প কিছু মানুষ এ সময় অন্যান্য সতর্কতার পাশাপাশি তওবা-ইস্তেগফার করেছেন। মনেপ্রাণে আল্লাহকে ডেকেছেন, আল্লাহর দরবারে দোয়া করেছেন। ভূমির কম্পনের সঙ্গে সঙ্গে হৃদয়ে পাপ ত্যাগ করে ভালোর পথে প্রত্যাবর্তন ও অনুতাপের কম্পন অনুভব করেছেন।
ভূমিকম্পের মতো বিপর্যয়কর একটি কুদরতি দুর্যোগ যখন চলে আসে, তখন কোনো মানুষেরই কিছুই করার থাকে না। বিজ্ঞানের এত উন্নতি সত্ত্বেও কোনো পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হয় না। এটা অবশ্যই আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে সতর্কীকরণ। তার পরও দেখা যায়, সমাজের একটি বড় অংশ এমন একটা গা-ছাড়া অবস্থায় অভ্যস্ত হয়ে গেছে যে, এতে কোনোভাবেই সতর্ক ও অনুতপ্ত হওয়ার মতো কোনো বোধ জাগ্রত হতে চায় না। অথচ মুমিনের অবস্থা এমন হওয়ার কথা নয়। পবিত্র কোরআনের ভাষায় এ বৈশিষ্ট্য কাফের ও মুনাফিকদের। সুরা তওবার ১২৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তারা কি লক্ষ করে না, প্রতি বছর তারা দু-একবার বিপর্যস্ত হচ্ছে। অথচ তারা এর পরও তওবা করে না কিংবা উপদেশ গ্রহণ করে না।’
বান্দা তো সর্বাবস্থায় অসহায়। একটু সমস্যায় পড়লেই সেটা টের পাওয়া যায়। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও ভূমিকম্পসহ নানা পর্যায়ের বিপদে সেটা অনুভব করা যায়। মুমিন বান্দার কাজ এমন অসহায় অবস্থায় আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা এবং জীবনব্যাপী করতে শেখা।
সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে ছোট-ছোট বিপদাপদরূপে কিছু শাস্তি যখন আসে, তখন আল্লাহর কথা স্মরণ হওয়া, অন্তরে তার ভয় জাগ্রত হওয়া, তার দিকে ফিরে আসা কাম্য। তাহলে মৃত্যুর আগেই মানুষ তার রবের পরিচয় পেয়ে যায় এবং আখেরাতের শাস্তি থেকে নাজাত পেয়ে যায়। পক্ষান্তরে ছোট-ছোট বিপদে মানুষ যদি সাবধান না হয়, এমনকি অন্যের ওপর পতিত বড় বড় বিপদ কিংবা প্রাণঘাতী বিপদেরও নানা ‘ব্যাখ্যা’ দাঁড় করিয়ে দয়াময় আল্লাহকে ভুলে থাকার চেষ্টা করে, সেটাই ‘অন্তরের কাঠিন্য।’ যা মানুষের জন্য অতি বড় বিপদ এবং ভয়াবহ বিপদের পূর্বাভাস। এ অবস্থার আরেক নাম ‘আল্লাহর পাকড়াও সম্পর্কে নির্ভয় ও বেপরোয়া হওয়া।’ কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর পাকড়াও সম্পর্কে নির্ভয় তো হয় শুধু ক্ষতিগ্রস্ত লোকরা।’সুরা আরাফ : ৯৯
আল্লাহতায়ালার পাকড়াও সম্পর্কে নিশ্চিন্ত ও বেপরোয়া হওয়া কবিরা গোনাহসমূহের একটি। সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘সবচেয়ে বড় গোনাহ চারটি। আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা, আল্লাহর পাকড়াও সম্পর্কে বেপরোয়া হওয়া, তার ক্ষমা ও করুণা সম্পর্কে নিরাশ হওয়া, তার দয়া ও দান সম্পর্কে আশাহীন হওয়া।আল মুসান্নাফ, আবদুর রাযযাক : ১৯৭০১
বর্তমানে পৃথিবীর নানা স্থানে বিধ্বংসী ভূমিকম্প, প্রলয়ংকরী বন্যা, মাত্রাতিরিক্ত তুষারপাত, ধ্বংসাত্মক ভূমিধস ও অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে। এগুলো মহান আল্লাহর প্রেরিত সতর্ককারী নিদর্শন বৈ অন্যকিছু নয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে বিপদ-আপদই তোমাদের ওপর আসুক না কেন, তা হচ্ছে তোমাদের নিজেদের হাতের কামাই। আর আল্লাহ তোমাদের অনেক (অপরাধ) ক্ষমা করে দেন।’সুরা শুরা : ৩০
তাই যখন কোথাও ভূমিকম্প হয়, সূর্যগ্রহণ হয় কিংবা ঝড়ো বাতাস অথবা বন্যা হয়, তখন মানুষের উচিত আল্লাহতায়ালার কাছে অতি দ্রুত একনিষ্ঠভাবে তওবা করা। তার কাছে আত্মসমর্পণ করা, নিরাপত্তা চাওয়া, আশ্রয় লাভের জন্য দোয়া করা। দয়াময় আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা। সমাজে প্রচলিত জিনা-ব্যভিচার, অন্যায়-অবিচার রোধ করা।
প্রাকৃতিক নানা বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ মানুষের অপকর্ম। এগুলোর পথ ধরেই মানুষ কিয়ামতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সতর্ক করে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যখন জাতির নিকৃষ্ট ব্যক্তি তাদের নেতা হবে, ক্ষতির ভয়ে মানুষকে সম্মান করা হবে, সে সময় তোমরা অপেক্ষা করো রক্তিম বর্ণের ঝড়ের (অ্যাসিড বৃষ্টি), ভূকম্পনের, ভূমিধসের, রূপ বিকৃতির (লিঙ্গ পরিবর্তন) পাথর বৃষ্টির এবং সুতো ছেঁড়া (তাসবিহ) দানার মতো একটির পর একটি নিদর্শনগুলোর জন্য।’জামে তিরমিজি
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক
পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার বিখ্যাত ফুরফুরা শরিফকে ভাবা হয় আজমির শরিফের পর ভারতের সবচেয়ে প্রভাবশালী দরবার শরিফ। বাংলাদেশ ও ভারতে ফুরফুরা শরিফের প্রচুর হিন্দু-মুসলিম ভক্ত রয়েছে। ফুরফুরা শরিফ মূলত সামাজিক সেবামূলক কর্মকান্ডে নিয়োজিত থাকলেও দরবারের বর্তমান পীরজাদারা রাজনীতির মাঠে বেশ সক্রিয়।
দরবারের প্রয়াত ছোট হুজুরের নাতি আব্বাস সিদ্দিকী প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট’ নামে রাজনৈতিক দল। দল গঠনের পর গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতার সঙ্গে আসন ভাগাভাগির চেষ্টা করেছিলেন আব্বাস সিদ্দিকী। যদিওবা শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের সঙ্গে সংযুক্ত মোর্চায় যায় দলটি। আব্বাস সিদ্দিকীর ভাই নওশাদ সিদ্দিকী সে জোটের হয়ে নির্বাচন করে রাজ্যের বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
বর্তমানে কলকাতার রাজনীতির মাঠ সরগরম নওশাদ সিদ্দিকীর গ্রেপ্তার নিয়ে। মূলত ভাঙড়েতে (নওশাদ সিদ্দিকীর আসন) দলীয় পতাকা লাগানোকে কেন্দ্র করে তৃণমূল ও সেক্যুলার ফ্রন্টের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। সে সংঘর্ষের জেরে কলকাতায় সমাবেশ হলে সেখান থেকে নওশাদ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তার করা হয়। নওশাদ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তারের পর পীরজাদারা সম্মিলিত প্রতিবাদের ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া, এ ঘটনায় অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এর মধ্যে কৌতূহল জোগায় পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের প্রতিক্রিয়া নিয়ে। তিনি বলেন, ‘আমি নওশাদ ভাইয়ের মুক্তি দাবি করছি’। ২০২১-এ আব্বাস সিদ্দিকীরা যখন রাজনীতিতে এসেছিলেন তখন দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, ‘আমার যদি নির্বাচনে লড়াই করার অধিকার থাকে, তবে আব্বাস সিদ্দিকীরও রয়েছে।’ বিজেপির মুসলমানদের রাজনৈতিক দল গঠনকে উৎসাহ এবং মুসলিম নেতাদের মুক্তির দাবি করার এই কৌশলের বিশেষ রাজনীতি রয়েছে।
ভারতের যে কটি প্রদেশের নির্বাচনে মুসলিম ভোট ফ্যাক্টর তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ একটি। পশ্চিমবঙ্গের প্রতি তিনটি ভোটের একটি ভোট মুসলিম ভোট। দিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব ডেভেলপিং সোসাইটি’র মতে, ২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে হিন্দু ভোটের ৫০ শতাংশ পেয়েছে বিজেপি। অন্যদিকে মুসলিম ভোটের ৭৫ শতাংশ পড়েছে তৃণমূলের বাক্সে। ফলে আর কিছুটা হিন্দু ভোট বাড়াতে পারলে এবং মুসলিম ভোট বিভক্ত করতে পারলে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ শাসন করার স্বপ্ন পূর্ণ হতে পারে। মুসলমান ভোট বিভক্ত করে বিজেপির জেতার এই কৌশল বেশ কটি রাজ্যে বেশ সফল হয়েছে।
আসামের মুসলমানদের রাজনৈতিক দল অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ)। দলটি ২০১৬ সালের আসাম বিধানসভায় স্বতন্ত্র নির্বাচন করে। ফলে মুসলিম ভোট কংগ্রেস থেকে সরতে শুরু করে। মুসলিম ভোটের এই বিভক্তির ফলাফল যায় বিজেপির ঘরে। ২০১৬ সালের আসাম বিধানসভায় জয়লাভ করে আসামে সরকার গঠন করে বিজেপি, অথচ আসাম রাজ্যের মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৩৫ শতাংশ। আসামে মুসলিম ভোটের বিভক্তি বিজেপির জয়কে সহজ করে দেয়। আসামের সে ফর্মুলা পশ্চিমবঙ্গে বাস্তবায়ন করতে চায় বিজেপি।
নওশাদ সিদ্দিকীর দল ‘ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট’ যতই মমতার মুখোমুখি দাঁড়ায় ততই বিজেপির সুবিধা। কারণ একচেটিয়া (৭৫ শতাংশ) মুসলিম ভোটপ্রাপ্তি মমতাকে সর্বশেষ বিধানসভায় জয় এনে দিয়েছে। আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনের আগে ও ২০২৬-এর পরবর্তী বিধানসভাকে সামনে রেখে মমতার সঙ্গে মুসলিম কমিউনিটির দূরত্ব তৈরি করতে পারলে বিজেপির জেতার একটা সম্ভাবনা তৈরি হবে।
ভারতের ৫৩০ লোকসভা আসনের মধ্যে অন্তত ১০০ লোকসভা আসনে মুসলমান ভোট ম্যাটার করে। তাই শুধু পশ্চিমবঙ্গ বা আসাম নয় সারা ভারতের যেসব জায়গা মুসলিম ভোট ফ্যাক্টর হয়ে উঠছে, সেসব জায়গায় বিজেপি এই কৌশল নিয়েছে।
উত্তর প্রদেশের ২৪ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠী মুসলিম, অর্থাৎ সাড়ে চার কোটি মুসলমানের বাস উত্তর প্রদেশে। তুরস্কের পর সবচেয়ে বেশি মুসলিম বাস করে উত্তর প্রদেশে। অথচ বর্তমান সরকারে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য হলেও মুসলিম সম্প্রদায় থেকে কোনো বিধায়ক নেই। মুসলিম ভোট বিভক্তি করে মাত্র ২০১৭ সালে বিজেপি উত্তর প্রদেশে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। সেবার ৪০৩টি বিধানসভা সিটের মধ্যে ৩২২টিতে জিতেছিল বিজেপি অথচ তাদের পপুলার ভোট ছিল ভোটের ৪০ শতাংশ। কীভাবে সাড়ে চার কোটি মুসলিম জনসংখ্যাকে পাশ কাটিয়ে বিজেপি নিরঙ্কুশ হিন্দু সরকার গঠন করছে উত্তর প্রদেশে! বিশ্লেষণ বলে দেয়, মুসলিম ভোট বিভক্তির কৌশলই বিজেপিকে নির্বাচন জিতিয়ে এনেছে।
বর্তমান উত্তর প্রদেশ সরকারের ৪০৩টি বিধানসভার সিটের মধ্যে বিজেপি জিতেছে ২৭৪টি, যা গতবারের চেয়ে ৪৮টি কম। আর বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টি জিতেছে ১২৪ আসন, যা গতবারের চেয়ে ৭২টি বেশি। ২৭৪টি আসনে জয় পাওয়া বিজেপির পপুলার ভোট ৪৫ শতাংশ আর ১২৪ আসন পাওয়া সমাজবাদী পার্টির পপুলার ভোট ৩৬ শতাংশ আবার মাত্র ১ আসন পাওয়া বহুজন সমাজবাদী পার্টির (বিএসপি) পপুলার ভোট ১৩ শতাংশ। কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে সমাজবাদী পার্টি ও বিএসপির মোট পপুলার ভোট হয় ৪৯ শতাংশ, যা বিজেপির চেয়ে ৪ শতাংশ বেশি। অথচ তাদের আসনসংখ্যা হয় ১২৫টি, যা বিজেপির চেয়ে ১৪৯টি কম।
জওয়াহেরলাল নেহরুর জন্মভূমি উত্তর প্রদেশের বিধানসভায় কংগ্রেস কোনো সমীকরণে নেই। রাজ্যটি দীর্ঘদিন শাসন করেছে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি ও মায়াবতির বহুজন সমাজ পার্টি। দু-দলই বিজেপির বিরোধিতা করলেও তাদের মধ্যে ন্যূনতম ঐক্য নেই। গত বিধানসভা নির্বাচনে মায়াবতির বহুজন সমাজবাদী পার্টি ৪০৩ জনের মধ্যে ১১৩ জন প্রার্থী দেয় মুসলিম কমিউনিটি থেকে। অখিলেশ যাদবের দল থেকে দাবি করা হয়, ‘বিজেপির বি টিম হয়ে কাজ করেছে বিএসপি, মূলত সমাজবাদী পার্টি থেকে মুসলিম ভোট সরিয়ে বিজেপিকে সুবিধা দিতে মায়াবতী এতজন মুসলিম প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন।’ বিজেপি থেকে মাত্র ৯ শতাংশ পপুলার ভোট কম পাওয়া অখিলেশ যাদবের এমন আক্ষেপ থাকতেই পারে।
তবে সে নির্বাচনে হায়দ্রাবাদের আসাদউদ্দীন ওয়াইসির দল অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) গিয়েও হাজির হয়। তেলেঙ্গানা, মহারাষ্ট্র ও বিহারের বিধানসভায় আসন পাওয়ার পর দলটি উত্তর প্রদেশেও লড়াই করে। কোনো আসন জিততে না পারলেও বেশ কিছু মুসলিম ভোট বাক্সে পেয়েছিল, যা হয়তো পড়ত সমাজবাদী পার্টির বাক্সে। সমাজবাদীর এই আক্ষেপ আরও তীব্র হয় যখন দেখা যায় তাদের প্রার্থী অনেক আসনে হাজারেরও কম ভোটে বিজেপির প্রার্থীর কাছে হেরেছে। এভাবে এমআইএম, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেসে বিভক্ত হয়ে যায় ২০ শতাংশ মুসলিম ভোট। বিরোধীদের এমন বিভক্তি মূলত বিজেপিকে সহজ ও নিরঙ্কুশ জয় এনে দেয়।
মুসলিমদের ধর্মভিত্তিক রাজনীতিতে দিলীপ ঘোষদের আরও নানা ধরনের সমীকরণ রয়েছে। মুসলিমদের সেক্যুলার রাজনীতি থেকে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের দিকে ঠেলে দিতে পারলে তাদের রাজনৈতিক সুবিধা হয়। এতে বিজেপি সমর্থকদের গরম বক্তব্য দিয়ে উজ্জীবিত রাখার সুযোগ পাওয়া যায়। মুসলিমদের বিশেষভাবে সংজ্ঞায়িত ও চিহ্নিত করা যাবে। অন্যদিকে কংগ্রেস ও বিজেপি বিরোধী দলগুলোর মুসলিম ভোটের কাঁধে সাঁকো পার করাও বন্ধ করা যাবে।
ভারতের রাজনীতিতে হিন্দুদের কট্টরতার উদাহরণ দিয়ে মুসলমান দলের জনপ্রিয়তা বাড়ানো এবং মুসলমানদের কট্টরতার উদাহরণ দিয়ে হিন্দু দলের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর এক ধরনের কৌশলও রয়েছে। হায়দ্রাবাদের মুসলিম রাজনৈতিক দল অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) দলটি বেশ পুরনো। কিন্তু ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর বিজেপির মুসলমান বিরোধিতাকে কাউন্টার করে দলটি সারা ভারতের মুসলমানদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বিশ্লেষকরা বলেন, পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম না হলে বা পাকিস্তান ও ভারত জিন্নাহর ঘোষণা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার মতো বন্ধুবৎসল প্রতিবেশী হলে বিজেপি ভারতের ক্ষমতায় বসতে পারত না। (জিন্নাহর তথ্যসূত্র শশী থারুর, ২০১৮)। এখনো পাকিস্তানের জেনারেলের এক একটা হুমকি ভারতে হু হু করে বিজেপির ভোট বৃদ্ধি করে।
ভারতে মুসলমানদের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল গঠনও সেক্যুলার ভারতের জন্য সুখকর নয়। কারণ রাজনীতি ও ধর্মের ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। রাজনীতি বলে ক্ষমতার কথা, ধর্ম বলে বিশ্বাসের কথা। ক্ষমতার জাঁতাকলে প্রায়ই বিশ্বাস ধামাচাপা পড়ে যায়। ধর্মভিত্তিক রাজনীতিতে জনগণ ধর্ম ও রাজনীতিকে আলাদা করতে পারে না। ফলে ধর্মের আবেগে তারা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রায়শই যৌক্তিকভাবে নিতে পারে না। এই যুক্তি ও আবেগের মাঝখানে ভারতের মুসলিম ভোট ভাগ হয়ে যাচ্ছে কয়েক গ্রুপে। এই ভাগাভাগি মমতার তৃণমূল কংগ্রেস, অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি বা রাহুল গান্ধীর জাতীয় কংগ্রেসের মুসলিম ভোটব্যাংকের নিরঙ্কুশতাকে চ্যালেঞ্জে ফেলে দিচ্ছে।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
আইনজীবী, সমাজকর্মী ও ইতিহাসবিদ অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় অবিভক্ত বাংলার নদীয়া জেলার নওয়াপাড়ায় ১৮৬১ সালের ১ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৮৮০ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে এফএ এবং ১৮৮৩ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ১৮৮৫ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে তিনি বিএল পাস করে রাজশাহীতে আইন ব্যবসা শুরু করেন। গবেষণা ও ইতিহাসচর্চায় তার প্রবল আগ্রহ ছিল। তিনি বাংলার প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় ইতিহাস, শিল্পকলা ও পটশিল্প সম্পর্কে গভীর ও প্রামাণিক জ্ঞান অর্জন করেন। ঐতিহাসিক চিত্র শিরোনামে সিরাজউদ্দৌলা, মীর কাসিম, রানী ভবানী, সীতারাম প্রমুখ ব্যক্তিকে নিয়ে ইতিহাসবিষয়ক প্রথম বাংলা সাময়িক পত্রিকা প্রকাশ করেন। বরেন্দ্রবাসীর গৌরবময় অতীত সম্পর্কে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণাকে উৎসাহিত করতে তিনি সম্মিলিতভাবে বরেন্দ্র রিসার্চ সোসাইটি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন এবং বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা করেন। রাজশাহী পৌরসভার কমিশনার থাকাকালে তিনি রাজশাহীর নাগরিক সুবিধা-সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত করেন। ডায়মন্ড জুবিলি ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কুলের সূচনালগ্নে তিনি এ প্রতিষ্ঠানকে যথেষ্ট পৃষ্ঠপোষকতা দান করেন। এমনকি স্কুলের অবৈতনিক প্রশিক্ষক হিসেবে তিনি ছাত্রছাত্রীদের রেশম চাষ পদ্ধতি শিক্ষা দিতেন। বেশ কিছুসংখ্যক সংস্কৃত নাটকের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন এবং ভালো ক্রিকেট খেলোয়াড় ও চিত্রকর হিসেবেও তার পরিচিতি ছিল। ১৯৩০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
বুধবার (২৯ মার্চ) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
হেফাজতে সুলতানার মৃত্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ‘হঠাৎ করে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। আপনি প্রায় প্রতিদিনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ধরনের দুর্ঘটনা দেখতে পাবেন।’
‘এই সপ্তাহে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি গণগুলিতে শিশু নিহত হয়েছে। কারও সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে? আমি মনে করি না এই ধরনের দুর্ঘটনা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নষ্ট করবে।’
এর আগে, নওগাঁ পৌরসভা-চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহকারী সুলতানাকে (৩৮) র্যাব-৫ এর একটি টহল দল ২২ মার্চ সকালে কাজে যাওয়ার সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ধরে নিয়ে যায়। হেফাজতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতাল এবং তারপর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ মার্চ তার মৃত্যু হয়।
মোমেন বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে অন্যদের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়ার দরকার নেই।
‘বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের সংগ্রামে ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে। অন্য দেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে আমাদের কোনো পাঠের প্রয়োজন নেই।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন খুবই শক্তিশালী।
যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের সমস্যা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাদের গণতন্ত্র খুবই দুর্বল। তাই তারা দেশে ও বিদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কারের পক্ষে ওকালতি করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র দেশে ও বিদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কারের বিষয়ে আরও সোচ্চার হওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা আমাদের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি। আমরা এটি সম্পর্কে একই পৃষ্ঠায় আছি। আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো গত এক দশকে ব্যাপক সংস্কারের মধ্য দিয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা ভুয়া ভোটারদের মোকাবিলা করার জন্য ছবিসহ ভোটার আইডি তৈরি করেছি। বিগত ১৪ বছরে নির্বাচন কমিশন হাজার হাজার নির্বাচন পরিচালনা করেছে। তাদের প্রায় সবগুলোই ছিল স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য। এবং ভবিষ্যতেও আমাদের নির্বাচন হবে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য।’
মোমেন বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন বৈশ্বিক গণমাধ্যমে ‘জাদুকরী’ হিসেবে সমাদৃত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান বিশ্বব্যাপী আমাদের গুরুত্ব বাড়িয়েছে। এবং ক্রমাগত উন্নয়নের কারণে, বিশ্বের অনেক দেশ এখন আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী।’
তিনি আরও বলেন,‘এই স্বাধীনতা দিবসে এবং রমজানের শুরুতে, আমরা অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাছ থেকে অভিনন্দনমূলক চিঠি পেয়েছি।’
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যেও 'সময়োচিত সংস্কার পদক্ষেপ' গ্রহণের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ বাংলাদেশে আগামী সাধারণ নির্বাচনে তার নেতৃত্বাধীন সরকার চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচিত হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক সংবাদ সংস্থাটি এক নিবন্ধে লিখেছে, 'তিনি (শেখ হাসিনা) টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।' একই সঙ্গে শেখ হাসিনাকে পুরো তহবিল পেতে আরও সংস্কার করতে হবে বলেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে টানা চতুর্থ মেয়াদে সম্ভাব্য জয়ী হওয়ার কারণ এটা নয় যে তার অনেক প্রতিপক্ষ কারাগারে আছেন বা আইনি ফাঁদে পড়েছেন।
নিবন্ধে বলা হয়, শেখ হাসিনার বিজয়ের কারণ 'কেবলমাত্র তার অনেক প্রতিপক্ষ কারাগারে আছে বা আইনি ফাঁদে পড়েছেন- এটা নয় বরং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তার সাফল্যের কারণেই এটা ব্যাপকভাবে প্রত্যাশিত।'
আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির সময়োপযোগী সংস্কারের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণপ্রাপ্তির পটভূমিতে ব্লুমবার্গ দুটি উপশিরোনামসহ 'বাংলাদেশ লিডার বেটস আইএমএফ-ম্যান্ডেটেড রিগর উইল পে অফ ইন পোলস' শিরোনামের এই নিবন্ধটি প্রকাশ করে।
এতে বলা হয়, 'পুরো তহবিল পেতে শেখ হাসিনাকে আরও সংস্কার করতে হবে' এবং 'নির্বাচনে তিনি টানা চতুর্থবারের মতো জয়ী হবেন বলে আশা করা হচ্ছে'।
ব্যালট বাক্সে পরাজিত হওয়ার ভয়ে বিশ্বজুড়ে সরকারি দলের নেতারা প্রায়শই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাথে সম্মত সংস্কার বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়ছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের মতো নন।
তার দ্রুত আইএমএফ ম্যান্ডেটের বাস্তবায়ন দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে যেখানে পাকিস্তান এখনও জ্বালানি ভর্তুকি নিয়ে দুরাবস্থার মধ্যে রয়েছে। শ্রীলঙ্কা স্থানীয় পৌরসভা নির্বাচন বিলম্বিত করেছে, কারণ, তারা গত সপ্তাহে আইএমএফ তহবিল পেতে কর এবং সুদের হার বাড়িয়েছে।
গত জুলাই মাসে আইএমএফের সহায়তা চাওয়া দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি দেশের মধ্যে সর্বশেষ ছিল বাংলাদেশ। দেশটি দ্রুত জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির পর প্রথম ঋণ অনুমোদন পেয়েছে। ৭৫ বছর বয়সী শেখ হাসিনা এই পদক্ষেপ নিতে কোনো কুণ্ঠা বোধ করেননি।
মেয়েদের বয়সভিত্তিক দল নিয়ে বাফুফে যতটা তৎপর, সিনিয়র জাতীয় দল নিয়ে ততটাই উদাসীন। আরো একবার দেশের ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থার সিদ্ধান্ত সেটাই প্রমাণ করল। অর্থাভাবের অজুহাত দিয়ে সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানী সরকারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বাফুফে বলেছে, ‘মায়ানমার যাতায়াতের বিমান ভাড়া, ইনস্যুরেন্স ফি, সেখানে থাকা-খাওয়া ও ট্রান্সপোর্টশনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচের সংকুলান না হওয়ায় উক্ত প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ মেয়েদের জাতীয় ফুটবল দলের অংশগ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।’
অলিম্পিক বাছাইয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা আছে ‘বি’ গ্রুপে। স্বাগতিক মায়ানমারের সঙ্গে গ্রুপে আরও আছে ইরান ও মালদ্বীপ। গ্রুপের খেলাগুলো হবে আগামী ৫ থেকে ১১ এপ্রিল।
বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে চেয়েছিলাম এই বাছাই পর্বের স্বাগতিক হতে। কিন্তু স্বাগতিক মর্যাদা মায়ানমারকে দেওয়া হয়। টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী এখানে অংশ নিতে হলে সব খরচ নিজেদের বহন করতে হবে, যা বহন করার মতো অবস্থায় নেই বাফুফের।’
আবু নাঈম সোহাগ আরও বলেন, ‘আমরা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। সেই সাহায্য পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এরপরই আমরা দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
গত সেপ্টেম্বরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পর আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেননি সাবিনারা। এই সফর বাতিল হওয়ায় মাঠে নামার অপেক্ষাটা তাদের আরো বাড়ল।
মেয়েদের জাতীয় দল নিয়ে বাফুফের উদাসীনতার নজির এটাই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৯ সালের এসএ গেমসে মেয়েদের দল পাঠায়নি বাফুফে।
সেবার যুক্তিটা ছিল অদ্ভুত। যেহেতু তখন মেয়েদের জাতীয় দলটি মূলত বয়সভিত্তিক দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া ছিল, তাই শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে খারাপ করলে তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারে। এই কারণের কথা বলে সেবার এসএ গেমসে দল পাঠায়নি বাফুফে।
যদি কোনো নারী কমপক্ষে দুটি মুরগি পালন করেন অথবা কোনো ব্যক্তি যদি সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করেন তাকে শ্রমশক্তির আওতায় এনেছে সরকার। অথচ সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করে কর্মের আওতায় এসেছেন এমন পরিসংখ্যানের হিসাবই দেওয়া হয়নি। গতকাল বুধবার শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রকাশের কথা থাকলে শ্রমশক্তি জরিপটি ছয় বছর পর প্রকাশ করল বিবিএস। এতে বর্তমানে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৩০ হাজার বলে উল্লেখ করা হযেছে। যা ২০১৭ সালের জরিপে ছিল ২৭ লাখ। অর্থাৎ ছয় বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার কমেছে ৭০ হাজার। শ্রমশক্তি জরিপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
সরকারের বেকারত্বের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ৩০ দিনে বেতন বা নিজস্ব পণ্য উৎপাদনের নিমিত্তে কোনো না কোনো কাজ খুঁজে থাকেন এবং গত সাত দিনে কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকেন তবে তাকে বেকার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বিবিএস বলছে, করোনার সময় দেশে বেকারের সংখ্যা বাড়েনি বরং কমেছে। কারণ ওই সময় সরকার বিশেষ অনেক পদক্ষেপ নেওয়ায় এসব বেকারের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। তাছাড়া কৃষি খাতে অংশগ্রহণ বাড়ায় বেকারের সংখ্যা কমেছে।
জরিপে বলা হয়েছে, দেশে এখন ২৬ লাখ ৩০ হাজার বেকার আছে। এর আগে ২০১৭ সালের জরিপে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ। ছয় বছরের ব্যবধানে বেকার কমেছে ৭০ হাজার।
জরিপে দেখা গেছে, ছয় বছর আগের তুলনায় বেকারত্বের হারও কমেছে। ২০১৭ সালে বেকারত্ব ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। সর্বশেষ জরিপ বলছে, এখন বেকারত্ব কমে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। সপ্তাহে এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজ করার সুযোগ না পেলে তাকে বেকার হিসেবে ধরা হয়।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, এখন দেশে শ্রমশক্তিতে ৭ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ আছে। এর মধ্যে কাজে নিয়োজিত ৭ কোটি ৭ লাখ ৮০ হাজার মানুষ। এ শ্রমশক্তির মধ্যে থাকা ৪ কোটি ৭৪ লাখ পুরুষ আর ২ কোটি ৫৯ লাখ নারী। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৯৯ লাখ ১০ হাজার মানুষ শ্রমশক্তির আওতায় এসেছে অর্থাৎ এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
জরিপে ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের বিবেচনা করা হয়েছে। গত বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশের প্রায় সোয়া লাখ পরিবার থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তথ্য সংগ্রহ করা হয় দ্বৈবচয়ন অর্থাৎ লটারি পদ্ধতিতে বাছাইয়ের মাধ্যমে। এর আগে ২০১৭ সালে শ্রমশক্তি জরিপ করেছে বিবিএস। প্রতি চার থেকে পাঁচ বছরের ব্যবধান এ জরিপ করা হয়ে থাকে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেকারদের মধ্যে পুরুষ ১৬ লাখ ৯০ হাজার। আর নারী ৯ লাখ ৪০ হাজার। পাঁচ বছর আগের চেয়ে নারীর বেকারত্ব কমেছে। বেড়েছে পুরুষের বেকারত্ব। ২০১৭ সালের জরিপে ১৪ লাখ পুরুষ বেকার ছিল। ওই সময় ১৩ লাখ নারী বেকার ছিল।
জরিপ বলছে, মোট সাত কোটি কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তির মধ্যে কৃষি খাতে নিয়োজিত রয়েছে ৩ কোটি ২২ লাখ, শিল্প খাতে ১ কোটি ২০ লাখ এবং সেবা খাতে ২ কোটি ৬৬ লাখ।
জরিপের হিসাবে আরও দেখা যায়, দেশে শ্রমশক্তির বাইরে আছেন ৪ কোটি ৬৯ লাখ মানুষ। এর মধ্যে নারী ৩ কোটি ৪৮ লাখ, পুরুষের সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ। বেকারত্ব কমে আসার পাশাপাশি কর্মে নিয়োজিত জনবলও বেড়েছে দেশে। ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী যুবকদের কর্মসংস্থান হয়েছে ২ কোটি ৬৮ লাখ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, এ জরিপের মাধ্যমে অর্থনীতির মূল গতিবিধি আমরা বুঝতে পারব। আমরা কোনো তথ্যই লুকিয়ে রাখব না। তিনি বলেন, আমাদের দেশের গৃহিণীরা প্রায় ২৪ ঘণ্টাই কাজ করেন। তাদের শ্রম হিসাব করা হয় না। তাদের শ্রম হিসাবে এলে জিডিপির আকার ৬০০ থেকে ৭০০ বিলিয়ন হতো। নারীদের শ্রমের প্রকৃত বিচার হয় না। আমরা আশা করছি এখন থেকে এ তথ্য প্রতি তিন মাসেই পাব।
আইএলওর আইন মানা হয়েছে কি না সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আইএলওর মানদ- অনুযায়ী এ জরিপ করা হয়েছে। কডিডের সময় আমাদের দেশে বেকারত্ব কমেছে কারণ সে সময় আমরা শিল্প খোলা রেখেছিলাম। লকডাউনে সড়কে বাস চলাচল করতে দিয়েছি। ১ মিলিয়ন ডলারের বেশি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে সে সময়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, এটি প্রভিশনাল রিপোর্ট। এ তথ্য মূল প্রতিবেদনে পরিবর্তিত হতে পারে। অর্থনীতির হাল বোঝার জন্য এ তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে বেকার বাড়ছে নাকি কমছে সে তথ্য সরকারের নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এসব তথ্য-উপাত্ত নিয়ে যেসব প্রশ্ন আসছে, এগুলো সবসময়ই এসে থাকে। এসব প্রশ্ন আসবেই। শহরের মহিলা শ্রমিক কমে গেছে, তার মানে হলো তারা গ্রামে গিয়ে কৃষিতে যুক্ত হচ্ছে।
বিবিএস বলছে, সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনা ও নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে ঘরে ঘরে চাকরি প্রদানের বিষয়ে বিশেষ সুযোগ তৈরির প্রচেষ্টায় বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমেছে।
এ সময় শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব এহসান-ই-এলাহী বলেন, আমি তো ভেবেছিলাম দেশে শ্রমিক ছয় কোটি, এখন দেখি সাত কোটির বেশি। এটি বড় সুসংবাদ। আমরা আগামী বছরের মধ্যে তিন লাখ শ্রমিকের ডেটাবেজ করব। কারণ আমাদের কাছে সঠিক কোনো ডেটাবেজ নেই।
মেট্রোরেলের উত্তরা দক্ষিণ ও শেওড়াপাড়া স্টেশন আগামীকাল ৩১ মার্চ যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) ইতিমধ্যে এ দুটি স্টেশন খোলার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। মেট্রোরেল সেবা পরিচালনাকারী ডিএমটিসিএল সূত্র এ তথ্য জানায়।
উত্তরা দক্ষিণ ও শেওড়াপাড়া স্টেশন চালু হলে যাত্রীরা উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশন ব্যবহার করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পারবেন।
ডিএমটিসিএল-এর একজন কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা দুটি দল গঠন করেছি যারা অপারেশনের জন্য উত্তরা দক্ষিণ এবং শেওড়াপাড়া স্টেশনের অপারেশন টিমের সাথে সমন্বয় করবে।'
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রথম এলিভেটেড মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন। রাজধানীর দিয়াবাড়িতে দিয়াবাড়ি-আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পের ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬ এর ১১.৭৩ কিলোমিটার অংশের ফলক উন্মোচন করেন তিনি। বর্তমানে মেট্রোরেল সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত যাত্রীসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।