
‘ছন্দের জাদুকর’ নামে খ্যাত কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের জন্ম কলকাতার নিকটবর্তী নিমতা গ্রামে ১৮৮২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। তার বাবা রজনীনাথ দত্ত। তার পিতামহ অক্ষয়কুমার দত্ত ছিলেন তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদক। ১৮৯৯ সালে তিনি কলকাতার সেন্ট্রাল কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স এবং স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে ১৯০১ সালে এফএ পাস করেন; কিন্তু পরে বিএ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। তিনি প্রথমে বাবার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যোগ দেন এবং পরে ব্যবসা ছেড়ে কাব্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। ভারতী পত্রিকাগোষ্ঠীর তিনি অন্যতম কবি ছিলেন। প্রথম জীবনে মধুসূদন দত্ত, অক্ষয়কুমার বড়াল প্রমুখের দ্বারা প্রভাবিত এবং রবীন্দ্রানুসারী হলেও তিনি কবিস্বভাবে হয়ে ওঠেন স্বতন্ত্র। বাংলা ভাষার নিজস্ব বাগধারা ও ধ্বনি সহযোগে নতুন ছন্দ সৃষ্টি তার কবিপ্রতিভার মৌলিক কীর্তি। এজন্য তিনি ‘ছন্দের জাদুকর’ ও ‘ছন্দরাজ’ নামে সাধারণ্যে পরিচিত ছিলেন। তার অন্য কৃতিত্ব বিদেশি কবিতার সফল অনুবাদ। আরবি, ফারসি, চীনা, জাপানি, ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার বহু কবিতা অনুবাদ করে তিনি বাংলা সাহিত্যের বৈচিত্র্য ও সমৃদ্ধি সাধন করেন। নবকুমার, কবিরতœ, অশীতিপর শর্মা, ত্রিবিক্রম বর্মণ, কলমগীর ইত্যাদি ছদ্মনামে তিনি কাব্যচর্চা করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য রচনাবলি সবিতা, সন্ধিক্ষণ, বেণু ও বীণা, হোম শিখা, ফুলের ফসল, কুহু ও কেকা, তুলির লিখন, অভ্র-আবীর, হসন্তিকা, বেলাশেষের গান, বিদায়-আরতি, কাব্যসঞ্চয়ন, শিশু-কবিতা; গদ্যরচনাজন্মদুঃখী (উপন্যাস); প্রবন্ধচীনের ধূপ, ছন্দ-সরস্বতী প্রভৃতি। ১৯২২ সালের ২৫ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
প্রতিদিন তপ্ত হচ্ছে ঢাকা। বিষাক্ত হচ্ছে বাতাস। চামড়া থেকে চাদর ধুলার আস্তর এমনভাবে পড়ছে যাকে আর ‘ধূলিমলিন কিংবা ‘ধূলি ধূসরিত’ বলা যাচ্ছে না। ধূলি-দূষণের এই যন্ত্রণাকে বোঝাতে কি নতুন কোনো শব্দ তৈরি হচ্ছে? ঢাকার হাজারীবাগ থেকে বালুরমাঠ ঘুরে এমন কিছু একটা আন্দাজ করা গেল। বস্তিবাসী নিম্ন আয়ের মানুষ ধূলি-দূষণের এই নাকাল অবস্থাকে বলছেন ‘ধুলায় সব ভইরা গেছে’। এই ‘ভরে যাওয়া’ বলতে তারা কিন্তু ‘প্রলেপ বা আস্তর কিংবা অনুজ্জ্বলতা’ বোঝেন না, বোঝান ধুলায় তলিয়ে যাওয়া বা ডুবে যাওয়া। এভাবে জলবায়ু, প্রকৃতি ও মানবসৃষ্ট সংকটগুলো বরাবরই আমাদের ভাষা ও ব্যাকরণ প্রভাবিত করে। আবহাওয়া বদলায়, ভাষা বদলায়। প্রাণ-প্রকৃতি চুরমার হয়, ভাষাও বদলে বদলে যায়। যাহোক, আলাপখানি ভাষা নিয়ে নয়, জলাভূমি নিয়ে। প্রমাণ হয়েছে তপ্ত, বায়ু ও ধূলি-দূষিত ঢাকার এই নাকাল অবস্থা দ্রুত ঘটছে জলাভূমি, সবুজ বলয় ও উন্মুক্ত প্রান্তরের অভাবে। যদি এই নগরে পর্যাপ্ত জলাভূমি থাকত তবে এই নগর প্রাণবন্ত থাকত। দূষণের এই তীব্র ধকল সইতে হতো না। নিদেনপক্ষে ঢাকার আশপাশের নদী ও খালগুলো আমাদের বাঁচানো জরুরি। দখল আর দূষণে মৃত, রুগ্ণ জলাভূমি অঞ্চলগুলো পুনরুদ্ধারের এখনই শেষ সময়। যত দেরি তত ভোগান্তি। আর দীর্ঘসূত্রতা সামগ্রিক অবস্থাকে আরও জটিল করে তুলবে, চাইলেও আর জলাভূমিগুলো পুনরুদ্ধার হয়তো সম্ভব হবে না। শুধু ঢাকা নয়, দেশজুড়ে সব জলাভূমি পুনরুদ্ধার ও সুরক্ষার তৎপরতা জোরদার করতে হবে। জলাভূমি সুরক্ষায় আমাদের সংবিধান ও আইনসমূহ অঙ্গীকারবদ্ধ। জলাভূমি পুনরুদ্ধার ও সুরক্ষায় নাগরিক ঐক্য ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার সক্রিয় করা জরুরি।
শুধু ঢাকা বা বড় শহরগুলো নয়; দেশের সর্বত্র জলাভূমিগুলো আজ নিদারুণ মৃত্যুযন্ত্রণা পাড়ি দিচ্ছে। চলনবিলের পাড়ে নাটোরের জোয়াড়ি গ্রামে ১৯০১ সালে জন্মানো প্রমথনাথ বিশী। সাহিত্যিক, শিক্ষক ও রাজনীতিক। ১৯৫১ সালে প্রকাশিত ‘চলনবিল’ বইতে প্রমথনাথ লিখেছেন, ‘...অনুমান করলে অন্যায় হবে না যে, চারশত বৎসর পূর্বে এ বিলটি রাজশাহী, পাবনা, বগুড়ার অধিকাংশ স্থান জুড়ে বিরাজ করতো। ব্রহ্মপুত্র ও পদ্মার সঙ্গমস্থলের পশ্চিমোত্তর অংশে চলনবিল বিরাজিত। অবস্থান, আকৃতি, প্রকৃতি দেখে চলনবিলকে উত্তর বাংলার নদ-নদী-স্নায়ুজালের নাভিকেন্দ্র বললে অত্যুক্তি হবে না।’ দেশের সবচেয়ে বড় বিল হিসেবে পরিচিত ‘চলনবিলকে’ নিদারুণভাবে এলোপাতাড়ি উন্নয়নের কোপে ফালি ফালি করা হয়েছে। ঊনিশ শতকের প্রথম দিকেও বিলটির আয়তন ছিল প্রায় এক হাজার বর্গ কিমি। চলতি সময়ে তা মাত্র ৩৬৮ বর্গ কিমিতে দাঁড়িয়েছে। বর্ষায় জলের বিস্তার থাকলেও হেমন্তে এর আয়তন দাঁড়ায় মাত্র ২৫.৯ বর্গ কিমি। নাটোরের সিংড়া, গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলা, পাবনার ভাঙ্গুরা ও চাটমোহর উপজেলা, নওগাঁর আত্রাই উপজেলা এবং সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া উপজেলায় বিস্তৃত দেশের এই বৃহত্তম বিলের বুকের কলিজা থেঁতলে দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সড়কপথ। শুধু চলনবিল নয়, দেশের সব বিল জলাভূমিই আজ অধিপতি উন্নয়নের বাহাদুরিতে রক্তাক্ত। খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলায় বিস্তৃত বিলডাকাতিয়া এমনি আরেক দুঃসহ উন্নয়নক্ষত। উপকূলীয় বাঁধ, বাণিজ্যিক চিংড়িঘের বিলডাকাতিয়াকে তীব্র লবণজলে বন্দি করে রেখেছিল দীর্ঘসময়। মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকা জেলার তিনটি উপজেলায় বিস্তৃত দেশের মধ্য-অঞ্চলের এক গুরুত্বপূর্ণ বিল আড়িয়ল। শতবছর আগে ইতিহাসকার যতীন্দ্রমোহন রায় এই বিলের প্রশস্তি টেনে লিখেছেন, ‘চলনবিল ও আইরল (আড়িয়ল) বিলেই অতি প্রাচীনকালে ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গম ঘটেছিল।’ রাষ্ট্র আড়িয়ল-সভ্যতাকে অস্বীকার করে বিমানবন্দর করতে চেয়েছিল। প্রবল জনরোষের মুখে তা বাতিল হয়।
নদীমাতৃক বাংলাদেশ জলাভূমিময়। এ কারণেই হয়তো শ্রী হরিদাস পালিত ১৯৩২ সালে প্রকাশিত ‘কায়স্থ সমাজ’ পত্রিকায় লিখেছিলেন, “এ দেশটা জলবহুল দেশ, জলাভূমি যথেষ্ট, ছেঁচে জলক্ষেত্রে দিতে হতো না। বাং মানে না, আর লো মানে পাত্র ডুবিয়ে জল তোলা। তা থেকে জল ছেঁচাও বোঝায়। যে দেশে ছেঁচে জল দিতে হয় না, জল ছেঁচার আবশ্যক হয় না, অর্থাৎ ধান্যক্ষেত্রে জলের অভাব হয় না সেই দেশই ‘বাংলোদিশম’।” নানা বাস্তুসংস্থানে, নানা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় এসব জলাভূমি দেশের নানাস্থানে গড়ে তুলেছে বহুমাত্রিক জীবনসম্পর্ক। হাওর, বিল, বাঁওড়, খাল, নালা, খাঁড়ি, দিঘি, পুকুর, ঝিরি, হ্রদ, ঝরনা, গর্ত, খাদ, পাগাড়, বাইদএ রকম নানা নামে নানা বৈশিষ্ট্য নিয়েই বাংলাদেশের জলাভূমি আখ্যান। জলাভূমি অঞ্চল হয়েও আমরা তৈরি করতে পারিনি ‘জাতীয় জলাভূমি নিবন্ধনতালিকা ও নির্ঘণ্ট’। দেশের জলাভূমিসমূহের কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য ও বিবরণ আমাদের নাগালে নেই। জলাভূমির ধরন ও বিস্তারে ভিন্নতাকে গায়েব করে ‘জলাভূমি’ প্রত্যয়টি মূলত ‘নিম্নাঞ্চল’-এর সমার্থক করে তোলা হয়েছে।
মৌলভীবাজারের বড়লেখার মাধবকুন্ড জলপ্রপাত স্থানীয় আদিবাসী ও বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র জলধারা। সিলেট অঞ্চলে টিলা-অরণ্যে এ রকম অসংখ্য ঝরনা ও ছড়া স্থানীয় বাস্তুসংস্থানের আদি জলের উৎস। মাধবকু- জলপ্রপাতকে বনবিভাগ ইজারা দিয়েছে। তার আগে ‘লাইফ’ নামের একটি কোম্পানিকে এই জলপ্রপাতের পানি বোতলে ভরে বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। একই জেলার কমলগঞ্জের হামহাম জলপ্রপাত আজ বাঁশ-বাণিজ্যের কারণে ক্ষতবিক্ষত। পার্বত্য চট্টগ্রামের ঝিরি ও ঝরনাগুলোর দশাও করুণ। বান্দরবান জেলার আলীকদমের পোয়ামুহুরী, কুরুকপাতা, দোছড়ি এলাকায় হেমন্তকালটি নিদারুণ পানির কষ্টে পাড়ি দিতে হয় আদিবাসীদের। কারণ ঝরনা ও ঝিরিগুলো আজ নিশ্চিহ্ন হয়েছে। পাহাড়ে প্রাকৃতিক বাস্তুসংস্থান খুন করে বহুজাতিক কোম্পানির তামাক চাষ, বনবিভাগের বাণিজ্যিক সেগুন বাগান, নিরাপত্তার নামে বৃহৎ অবকাঠামো, বাণিজ্যিক পর্যটন, লাগাতার ভূমি দখল সব মিলিয়ে ঝিরিগুলো প্রতিদিন উধাও হচ্ছে পাহাড় থেকে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসতি অঞ্চলের নামও ধারণ করে আছে ঝিরির স্মৃতি। খাগড়াছড়ি, মহালছড়ি, সিন্দুকছড়ি, বরুণাছড়ি, বড়ইছড়ি, কুতুবছড়ি, মানিকছড়ি ও বিলাইছড়ি। বান্দরবানের নাফাখুম ঝরনা, বগা হ্রদ, রাঙ্গামাটির শুভলং ঝরনা, খাগড়াছড়ির আলুটিলা ঝিরি আজ করপোরেট পর্যটনের চাপে হাঁপাচ্ছে।
দেখা যায়, জলাভূমি সুরক্ষায় রাষ্ট্রীয় নীতি ও নথিগুলো কী বলে। জাতীয় পানিনীতির (১৯৯৯) ৪.১৩ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, ‘...হাওর, বাঁওড় ও বিলজাতীয় জলাভূমিগুলো বাংলােেদশর আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যের ধারক এবং এক অনন্য প্রাকৃতিক সম্পদ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত দিক থেকে এগুলোর গুরুত্ব অসীম। হাওর এবং বাঁওড়গুলোতে শুষ্ক মৌসুমেও যথেষ্ট গভীরতায় পানি থাকে, তবে ছোট বিলগুলো সাধারণত চূড়ান্ত পর্যায়ে আর্দ্রভূমিতে পরিণত হয়। এই বিলগুলো প্লাবনভূমির নিম্নতম অংশ। এই জলাশয়গুলো আমাদের প্রাকৃতিক মৎস্য-সম্পদের সিংহভাগের উৎস এবং নানা ধরনের জলজ সবজি ও পাখির আবাসস্থল। তা ছাড়াও শীত মৌসুমে উত্তর গোলার্ধ থেকে আগত অতিথি পাখিদের নির্ভরযোগ্য আশ্রয়। হাওর এবং বিলগুলো খালের মাধ্যমে নদীর সঙ্গে সংযুক্ত। অতীতে প্রকৌশলগত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে অনেক বিলকে তাৎক্ষণিক ফসল লাভের জন্য নিষ্কাশিত আবাদি জমিতে পরিণত করা হয়েছে। কিন্তু কিছুদিন পরেই এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রকট আকার ধারণ করে। প্রথমেই মাছ এবং গ্রামীণ জনগণের খাদ্যের উৎস কচু, শাপলা, কলমি-জাতীয় জলজ সবজির বিলুপ্তি ঘটে। বর্ষা মৌসুমে প্লাবনভূমির বর্জ্য প্রবহমান খালের মাধ্যমে বাহিত ও শোধিত হয়ে নিষ্কাশিত হতো। কিন্তু নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় সেই প্রাকৃতিক শোধনক্রিয়া ব্যাহত হয়ে পরিবেশের মারাত্মক সংকট সৃষ্টি করেছে।’
১৯৯৭ সালের আগেও বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও এ সাল থেকেই প্রথম প্রতি বছরের ২ ফেব্র“য়ারি বিশ্ব জলাভূমি দিবস পালিত হয়। প্রতি বছরই পৃথিবীর জলাভূমিসমূহের গুরুত্ব এবং এর সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক এবং উন্নয়নধারাকে বিবেচনা করে প্রতি বছরের জন্যই এক একটি প্রতিপাদ্য তৈরি করা হয়। ২০০৬ সালে জলাভূমি দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘জলাভূমিসমূহ এবং পানিনির্ভর জীবন ও স্থায়িত্বশীল জীবনযাত্রা’, ২০০৭ সালের প্রতিপাদ্য ছিল ‘আগামীর জন্য মাছ?’, ২০০৮ সালে ‘স্বাস্থ্যকর জলাভূমি, স্বাস্থ্যকর জনগণ’, ২০০৯ সালে ‘নদী ও নদীতীর ব্যবস্থাপনা’, ২০১০ সালে ‘প্রাণবৈচিত্র্য ও জলবায়ু পরিবর্তন’, ২০১১ সালে ‘জলাভূমি ও জঙ্গল’, ২০১২ সালে ‘জলাভূমি ও পর্যটন’, ২০১৩ সালে ‘জলাভূমি ও পানি ব্যবস্থাপনা’, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালের প্রতিপাদ্য ‘জলাভূমিসমূহই আমাদের ভবিষ্যৎ’, ২০১৬ ‘জলাভূমি আমাদের ভবিষ্যৎ ও স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন’, ২০১৭ ‘জলাভূমি দুর্যোগ কমায় বা জলাভূমি দুর্যোগ-ঝুঁকি হ্রাস করে, ২০১৮’ স্থায়িত্বশীল ভবিষ্যৎ নগরের জন্য জলাভূমি’, ২০১৯ ‘জলাভূমি ও জলবায়ু পরিবর্তন’, ২০২০ ‘জলাভূমি ও প্রাণবৈচিত্র্য’, ২০২১ ‘জল ও জলাভূমি’, ২০২২ ‘মানুষ ও প্রকৃতির জন্য জলাভূমি কর্মসূচি’। চলতি ২০২৩ সালের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘জলাভূমি পুনরুদ্ধারের এখনি সময়’। জলাভূমিসমূহ আমাদের এই বৃহৎ বদ্বীপের প্রাণবৈচিত্র্যের আঁতুড়ঘর। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন ২০১০ বলেছে, ‘আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট বা অন্য কোনোভাবে শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না।’ কিন্তু প্রশ্নহীন উন্নয়নের চাপে বারবার দেশের সব জলাভূমির শ্রেণিচরিত্র নিদারুণভাবে পরিবর্তন করা হচ্ছে। জলাভূমির সুরক্ষা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আমরা বহু দেরি করে ফেলেছি। আর নয়। জলাভূমি পুনরুদ্ধার ও সুরক্ষা ব্যবস্থাপনায় রাষ্ট্রীয় মনোযোগ ও তৎপরতা সক্রিয় করার এখনই শেষ সময়।
লেখক: গবেষক ও লেখক
সিফাত (ছদ্মনাম) অষ্টম শ্রেণির একজন ছাত্র। মাধ্যমিক স্তর না পেরোতেই একটি মোবাইল না দেওয়ায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। অথচ এ বয়সে একটা সময় মোবাইল কল্পনাও করা যেত না। শখের বসে প্রয়োজন হলেও সিফাতের মোবাইল ফোনটি কি খুব প্রয়োজন ছিল? সিফাতকে কি পরে কোনো মোবাইল কিনে দিত না? সিফাত কি পরে আরও সমৃদ্ধ মোবাইল পেত না? আত্মহত্যা কি সিফাতকে মোবাইল কিনে দিয়েছে? সিফাতের আশা কি পূরণ হয়েছে? সিফাত কি বাবা-মায়ের জন্য কিছু করতে পেরেছে? সিফাত সমাজের জন্য কী করল? সিফাতকে সমাজের মানুষ মনে রাখবে?
এই উত্তরগুলো আমরা অনেকেই জানি। সিফাত তার নিজের জন্য যেমন কোনো কিছু করতে পারেনি, ঠিক তেমনি সমাজের জন্যও কিছু করেনি। সিফাতের আত্মহত্যাটি ছিল নিষ্ফল আবেদন। সিফাতকে ঘৃণা ছাড়া প্রশংসার চোখে কেউ দেখবে না। অথচ সিফাতের জীবনে অনেক কিছু করার সময় বা সুযোগ ছিল। সিফাতের জীবনে শুধু মোবাইল নয় অনেক কিছু পাওয়া সম্ভব ছিল।
সাম্প্রতিক সময়ে সিফাতের মতো অনেক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ঘটছে এমন দুর্ঘটনা। বিশেষ করে অল্পবয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে। পরিণত বয়সের আগেই তাদের এই অপরিপক্ব সিদ্ধান্ত শুধু পরিবারেই প্রভাব ফেলছে না, প্রভাব পড়ছে সমাজে। অথচ এটি কোনো সমস্যা সমাধানের পথ নয়। আত্মহত্যা জীবন বদলে দেওয়ার কোনো গল্প নয়। বরং একটি স্বপ্নময় জীবনের অকালমৃত্যু আত্মহত্যা।
বিশ্বের বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের ব্যক্তিত্বপূর্ণ জীবনী থেকে জানা যায় সাফল্যের পেছনে হতাশার গল্প। গভীর হতাশায় নিমজ্জিত থেকেও তারা বিশ্বে আজ আলোকিত। তাদের আলোয় আলোকিত হচ্ছে নতুন প্রজন্ম। তাদের জীবনী থেকেই জানা যায়, শৈশবে না পাওয়ার আক্ষেপের কাহিনী। কিন্তু পরিপূর্ণ বয়সে তারা জয় করেছে না পাওয়ার গল্প। তাদের এই সফলতার মূলমন্ত্র আমার কাছে ধৈর্য। এই সফলতার রহস্য আত্মসচেতনতা। অথচ এই আত্মসচেতনতার অভাবে অকালেই থেমে যাচ্ছে সফলতার গল্প।
যে সময়টা নিজেকে তৈরি করার সময় সেই শিক্ষাজীবনে আত্মহত্যার প্রতিবেদন দেখে আমার মতো উদ্বিগ্ন সচেতন সমাজের অনেকেই। জীবনের অনেক অংশ বাকি। কী এমন ঘটনা ছিল যে কারণে এ বয়সে এই পরিণতি? প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২২ সালে সারা দেশে স্কুল ও কলেজপর্যায়ের ৪৪৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। তাদের মধ্যে স্কুল ও সমমানপর্যায়ের ৩৪০ জন এবং কলেজপর্যায়ের শিক্ষার্থী ১০৬ জন। এ ছাড়া বছরজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৮৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।
শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘স্কুল ও কলেজশিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা; সমাধান কোনো পথে?’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ সমীক্ষা প্রকাশ করা হয়েছে।
জরিপে দেখা যায়, ২০২১ সালেই দেশে ১০১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। যাদের মধ্যে ৬২ জন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ২৩ জন বেসরকারি, ১২ জন মেডিকেল কলেজ ও অনার্সপড়ুয়া ও ৪ জন ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
এতে জানানো হয়, স্কুল-কলেজপর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ছিল ঢাকা বিভাগে। আর আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী ২৮৫ জন এবং ছাত্র ১৬১ জন। এরই মধ্যে ৫৪ জন মাদ্রাসাশিক্ষার্থী।
সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, সারা দেশের আট বিভাগে আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ ঢাকা বিভাগে এবং সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন।
আঁচল ফাউন্ডেশন জানায়, ২৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ অভিমান করে শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এদের বড় অংশেরই অভিমান ছিল পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার অন্য কারণগুলোর মধ্যে প্রেমঘটিত কারণও অন্যতম। প্রেমঘটিত কারণে ২৩ দশমিক ৩২ শতাংশ, পারিবারিক কলহে ৩ দশমিক ১৪, হতাশাগ্রস্ত হয়ে ২ দশমিক ০১, মানসিক সমস্যায় ১ দশমিক ৭৯, আর্থিক সমস্যায় ১ দশমিক ৭৯ এবং উত্ত্যক্ত, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথে ধাবিত হয়েছেন ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী।
কেন দিন দিন আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে আর কীভাবেই বা এ থেকে তরুণসমাজকে রক্ষা করা যায় সে প্রশ্ন সচেতন সমাজের। আত্মসচেতনতা এই প্রবণতা কমার বড় উপায় বলে আমার মনে হয়। আর এই আত্মসচেতনতা বাড়াতে প্রয়োজন সচেতনতা সভা, প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন। নানা কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটলেও জীবন বিসর্জনের এ প্রক্রিয়াকে সমর্থন দিচ্ছে না কোনো ধর্ম। প্রায় সব ধর্মই আত্মহত্যাকে মহাপাপ ও ক্ষমার অযোগ্য বলে ঘোষণা করেছে। সুতরাং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও এই পাপকাজ থেকে বিরত থাকাই উত্তম। আসুন আত্মসচেতন হই, সমৃদ্ধ জীবন গড়ি।
লেখক : সাংবাদিক ও শিক্ষক
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং আরও আটটি ইউরোপীয় দেশসহ ১২ প্রতিষ্ঠাতা সদস্য একে অপরকে রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে রক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে উত্তর আটলান্টিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। এটি মূলত সামরিক সহযোগিতার জোট। পরে কয়েক দশক ধরে জোটটি বড় হতে থাকে। আজকে ন্যাটোর সদস্য সংখ্যা ৩০। ন্যাটো হচ্ছে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক সংগঠন। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসনের হাত থেকে পশ্চিম বার্লিন এবং ইউরোপের নিরাপত্তা বাস্তবায়ন করা। ন্যাটো একটি যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি, যে চুক্তির আওতায় জোটভুক্ত দেশগুলো পারস্পরিক সামরিক সহযোগিতা প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রে নাইন-ইলেভেনের সন্ত্রাসী হামলার পর ন্যাটো তাদের রক্ষায় মাঠে নামে। এর প্রত্যেকটি সদস্যরাষ্ট্র তাদের সামরিক বাহিনীকে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখতে বদ্ধপরিকর। বর্তমানে ন্যাটোর সদস্য দেশের সংখ্যা ৩০। সেসব হচ্ছেআলবেনিয়া, বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া, কানাডা, ক্রোয়েশিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হাঙ্গেরি, আইসল্যান্ড, ইতালি, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, লুক্সেমবার্গ, মন্টিনেগ্রো, নেদারল্যান্ডস, উত্তর মেসিডোনিয়া, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেন, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ন্যাটো প্রতিষ্ঠিত হয় ৪ এপ্রিল, ১৯৪৯ তারিখ। ন্যাটো প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসনের হাত থেকে পশ্চিম বার্লিন এবং ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ন্যাটো হলো এমন একটি যৌথ নিরাপত্তা চুক্তি, যে চুক্তির আওতায় জোটভুক্ত দেশগুলো পারস্পরিক সামরিক সহযোগিতা প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ।
যা হোক, মূল কথায় আসা যাক, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের রাজনীতিকরা তাদের নানা মাত্রার বীরত্ব প্রকাশ করতে গিয়ে নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন বা ন্যাটোকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন। কিন্তু ঢালই যদি ভঙ্গুর হয় কিংবা যে উপকরণ দিয়ে ঢাল তৈরি হয়েছে, তাতে যদি ত্রুটি থাকে, তখন কী হয়? পশ্চিমা দেশগুলো সেটা কি বুঝতে পারছে? এ মাসে মাদ্রিদে হতে যাওয়া ন্যাটো সম্মেলনটি শীতল যুদ্ধ-পরবর্তী সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনমুখী বলে প্রচার করা হচ্ছে। রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ৩০ দেশের এ জোট ‘মুক্তবিশ্ব’ রক্ষায় কীভাবে একত্র হলো, তা নিয়ে সেখানে আত্ম-অভিনন্দনের বন্যাও বয়ে যেতে পারে। কিন্তু মূল প্রশ্নটাই এড়িয়ে যাওয়া হবে। গত মার্চ মাসে পোল্যান্ডে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ন্যাটোর কার্যত নেতা জো বাইডেন বক্তব্য দিতে গিয়ে জোটটির নেতারা কী ধরনের কথা বলবেন, আর কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন, তার একটা মান ঠিক করে দিয়েছেন। বাইডেন তেজদীপ্ত শপথের সুরে বলেন, ‘ন্যাটোর প্রতি ইঞ্চি মাটি আমাদের সম্মিলিত শক্তির সবটা দিয়ে’ যুদ্ধের বাইরে রাখব। ওই বক্তব্যের কয়েক মাস পার হয়ে গেলেও দীর্ঘমেয়াদি কোনো তৎপরতার ব্যাপারে উদাসীনতাই দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি আইসল্যান্ডে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেল ওয়ালেশকে বাইডেনের সুরে সুর মেলাতে দেখা গেল। ইউক্রেনের পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট লিথুনিয়া, লাটভিয়া ও এস্তোনিয়ায় হামলা করতে পারেন বলে চাউর হয়েছে। ওয়ালেশ সতর্ক করে বলেন, পুতিন এই দেশ তিনটিকে ইউক্রেনের মতো ‘প্রকৃত’ দেশ বলে মনে করেন না। কিন্তু বাইডেনের মতো ওয়ালেশও ইউক্রেন যাতে স্বাধীন দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে টিকে থাকতে পারে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা হাজির করেননি। যখন অনেক মিত্র দেশ সামনে এগিয়ে আসছে,তখন ইউরোপে ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা শীত নিন্দায় চলে যাচ্ছেন। তারা ন্যাটো জোটকে অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করছেন। কিয়েভকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে গেলে মস্কোকে ক্রুদ্ধ করা হবেএমন যুক্তিতে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৌশলগত সার্বভৌমত্বের দিবাস্বপ্ন দেখা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁও কথার চেয়ে কাজে বেশি বিশ্বাসী। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের কাজগুলো দ্বিধাগ্রস্ততা ও ঢিলেমির ধ্রুপদি দৃষ্টান্ত।
আর নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ভিকতর ওরবান যেন ক্রিজের অন্য প্রান্তে সপাটে ব্যাট চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার তুরস্কের সমস্যা সৃষ্টিকারী প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান নিজ উদ্যোগে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের সদস্যপদের বিরুদ্ধে যেভাবে পেছন থেকে ছুরি মেরেছেন, সেটাও ন্যাটো জোটের অনৈক্যের বড় এক দৃষ্টান্ত। ন্যাটোর গোবেচারা মহাসচিব স্টলটেনবার্গ সদস্য দেশগুলোর নানামুখী চাপ সামলাতে আর অনৈক্যের এই ফাটল মেরামত করতে গিয়ে রীতিমতো গলদঘর্ম। এদিকে পোল্যান্ড ও অন্য সম্মুখ সারির দেশগুলো কঠোরতম পদক্ষেপ চায়। রাশিয়ার সীমান্তে অতিরিক্ত সেনার সঙ্গে স্থায়ীভাবে ভারী সমরাস্ত্র ও যুদ্ধবিমানের মোতায়েন চায় তারা। তাদের এ ধরনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ন্যাটোর কর্মকর্তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বলিষ্ঠ ও ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বর্তমান বিশ্বে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে শোষণ-বঞ্চনার অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে। কিন্তু তার সঙ্গে পশ্চিমা ডানপন্থি কিংবা উগ্র জাতীয়তাবাদী নেতা-নেত্রীদের দৃশ্যত কোনো বিরোধ নেই। সুচিন্তিতভাবে বিরোধ তৈরি করা হচ্ছে মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষ ও তাদের কৃষ্টি-সংস্কৃতির বিরুদ্ধে। এতে পশ্চিমা উগ্র ডান কিংবা প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি মনে করে তাদের জনপ্রিয়তা অর্জন সহজতর হবে। বিশ্বব্যাপী, বিশেষ করে পশ্চিমা জগতে, বর্তমান প্রথাগত রাজনীতিকরা যখন অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছেন, তখন উগ্র ডানপন্থি কিংবা প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি কখনো ধর্মীয় বিষয়কে ইস্যু করে মাঠে নামছে বিভিন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে, আবার কখনো জাতিগোষ্ঠীগত বৈষম্যকে উসকে দেয় তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে। ইতালি, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, সুইডেনসহ বিভিন্ন পশ্চিমা রাষ্ট্রে এ ধরনের রাজনৈতিক তৎপরতা নতুন নয়। যুক্তরাষ্ট্র কিংবা যুক্তরাজ্যেও যে এ ধারার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অবসান ঘটেছে, তাও নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রভাবাধীন রিপাবলিকান দলের এক বিশাল অংশের শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদ কিংবা যুক্তরাজ্যের উগ্র জাতীয়তাবাদী ন্যাশনাল ফ্রন্টের শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ গণতন্ত্র ও মানবতাবাদের নাকের ডগায় বৃদ্ধাঙ্গুলি ঠেকিয়ে প্রকাশ্যেই চরম সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোয় সাম্প্রদায়িকতা কিংবা ধর্মীয় বিরোধ সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ হলেও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অজুহাতে তারা এমন সব ঘটনাকেও বরদাশত করে যাচ্ছে, যা অগণতান্ত্রিক এবং মানবাধিকারের বরখেলাপ। কারণ সেসব দেশে গণতন্ত্রের নামে সাম্প্রদায়িকতা কিংবা উগ্র জাতীয়তাবাদী ধ্যানধারণা প্রচার ও প্রসারের কোনো অবকাশ নেই। ধর্ম, বর্ণ ও জাতীয় কৃষ্টি-সংস্কৃতি-নির্বিশেষে সব মানুষের সমান অধিকার রয়েছে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ইতালি, ফিনল্যান্ড, সুইডেনসহ পশ্চিমা জগতে সেগুলো খাতায় লিপিবদ্ধ থাকলেও বাস্তবে খুঁজে পাওয়া যায় না। তাতে তারা নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে আনছে। সমাজে সৃষ্টি হচ্ছে নানা বৈষম্য, বিরোধ ও সংঘর্ষ। তা ছাড়া উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনীতি ও প্রতিক্রিয়াশীল তৎপরতার কারণে ভেঙে পড়ছে সাধারণ মানুষের প্রচলিত কিংবা প্রতিষ্ঠিত মূল্যবোধ। গণতন্ত্র, মানবাধিকার কিংবা ধর্মবিশ্বাস ও চর্চার ক্ষেত্রটি ক্রমে ক্রমে নড়বড়ে হয়ে পড়ছে। এতে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। চলতি বছর মে মাসে তুরস্কে জাতীয় সংসদ এবং প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন ঘোষণা করেছেন দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যম সেই নির্বাচনকে এ বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করেছে। কারণ সেই নির্বাচন একদিকে যেমন প্রাজ্ঞ-প্রবীণ রাজনীতিক এরদোয়ানের ভাগ্য নির্ধারণ করবে, অন্যদিকে বর্তমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষ এবং এমনকি ন্যাটোর ভবিষ্যৎ অবস্থান ও কার্যক্রমকেও প্রভাবিত করবে বলে বিশ্ব গণমাধ্যমের সংবাদ বিশ্লেষকদের অভিমত।
অবস্থায় চলতি বছরের নভেম্বরে ভারতের দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জি২০ শীর্ষ সম্মেলন। তাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত সভায় যুদ্ধবিরোধী প্রস্তাব নেওয়ার মতো বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষের পরিণতি এরই মধ্যে উপলব্ধি করেছে বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলো। বিশ্ব এখন এক অর্থনৈতিক মন্দার ব্যাপক গ্রাসে নিক্ষিপ্ত হতে যাচ্ছে বলে তাদের আশঙ্কা।
এ অবস্থায় ইউক্রেনকে বিজয়ী করতে কিংবা রাশিয়াকে ভেঙে দেওয়ার জন্য দীর্ঘস্থায়ী সংঘর্ষে যেতে তারা প্রস্তুত নয়। এখন ইউক্রেন যুদ্ধ যদি প্রলম্বিত হয়, যদি রাশিয়া ও ইউক্রেন আরও মরিয়া হয়ে ওঠে, যদি কূটনৈতিক প্রচেষ্টাগুলো কানাগলিতে ঢুকে পড়ে, তাহলে ন্যাটোর দীর্ঘমেয়াদি দুর্বলতা ও ভঙ্গুরতা আরও বেশি অনিবার্য হয়ে উঠবে। সোভিয়েত পরবর্তীকালে ন্যাটো জোটের যে ধাপ্পাবাজি, সেটি সবার কাছে উন্মুক্ত হয়ে যাবে। এত বড় কোনো সংস্থায় সর্বসম্মত রাজনৈতিক মতৈক্য থাকবে, সে ধরনের কিছু আশা করা বোকামি হবে। কিন্তু সামরিক সক্ষমতার প্রসঙ্গ যখন উঠছে, তখন সবগুলো সদস্য দেশের মধ্যে অদ্ভুত একটা মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়ে কে কার পেছনে যাবে, সেই প্রতিযোগিতা যেন সবার মাঝে। রাশিয়ার দিক থেকে আসা পারমাণবিক ও রাসায়নিক যুদ্ধের প্রচ্ছন্ন হুমকিতেই ন্যাটোর দেশগুলোর কণ্ঠ যেন বিকল হয়ে গেছে। আবার ন্যাটোর জোটের দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। সামরিক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি ছাড়া কোনো কিছু করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সাংগঠনিক ও সামরিক, দুটি ক্ষেত্রেই ন্যাটোর কার্যক্রম সবখানেই রয়েছে। ইতালি, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাষ্ট্রএ তিন দেশে জোটটির যৌথ কমান্ডের সদর দপ্তর অবস্থিত। আবার এর শীর্ষ জেনারেল বেলজিয়ামে থাকেন। এ রকম বাস্তবতায় অস্ত্র সরবরাহ ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণে যেমন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে, ঠিক তেমনি গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানেও বাধা তৈরি হচ্ছে। আবার ইউরো-আটলান্টিকে রাশিয়াকে এবং ইন্দো-প্যাসিফিকে চীনকে সামলাতে গিয়ে ন্যাটোকে অনেক বেশি চাপ নিতে হচ্ছে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ন্যাটো বল ছেড়ে দিয়েছিল। তারা ভেবেছিল শেষ বাঁশি বেজে গেছে। খেলা শেষ। কিন্তু খেলা শেষ হয়নি। এখন যেমন পুতিন তার হাতের ঢোল পিটিয়ে পশ্চিমকে পরীক্ষার মুখে ফেলছেন। এখন ন্যাটো যদি নিজেকে না শোধরাতে পারে, তাহলে লুকানোর জায়গা তারা আর খুঁজে পাবে না। ন্যাটো কি আবার ব্যর্থ হবে? এই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক
‘অহিংসা’একটি বহুমাত্রিক ধারণা। এটি জৈন ধর্মের নৈতিক দর্শনে একটি অসাধারণ বিকাশে পূর্ণতা পেয়েছিল। জৈন ধর্মের তেইশতম তীর্থংকর প্রভু পরশনাথ, খ্রিস্টপূর্ব নবম শতাব্দীতে অহিংসার ধারণাকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন। কিন্তু অপরাধীরা, অহিংসার শাসন দ্বারা সুরক্ষিত নয়।
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, বিশেষ করে রাজনীতিতে, অহিংসার নীতি সফলভাবে প্রচার করেন মোহন চাঁদ করমচাঁদ গান্ধী। মহাত্মা গান্ধীর এই অহিংস প্রতিরোধ আন্দোলনসত্যাগ্রহ একসময় ভারতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। পরে ‘অহিংস’-নীতি নিয়ে রাজনীতি করা, সরকার পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে ওঠে। এমন সৃজনশীল শক্তিকে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে প্রোথিত করা সম্ভব হয়নি। ভয়ংকর লোভ এবং আত্মকেন্দ্রিকতা মানুষকে ক্রমেই হিংস্র করে তুলছে। ঠিক তখনই প্রয়োজন হয়ে ওঠে সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলার। যে কারণে সরকারকে এগিয়ে আসতে হয় রাষ্ট্রে বসবাসরত জনগণের কল্যাণার্থে। তৈরি করতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিশেষ করে, জনগণের দৈনন্দিন সমস্যা সমাধানের জন্য পুলিশ বাহিনীকে দিন-রাত জাগ্রত থাকতে হয়।
আজ শনিবার, ৪৮ বছরে পা দিচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। ১২টি থানা ও সাড়ে ছয় হাজার জনবল নিয়ে ১৯৭৬ সালে গঠিত হয়েছিল ডিএমপি। বর্তমানে এর বিস্তৃতি ঘটেছে। থানা হয়েছে ৫০টি। স্বাভাবিকভাবেই জনবল বাড়িয়ে হয়েছে ৩২ হাজারের মতো। বাড়ানো হয়েছে পুলিশের সুযোগ-সুবিধা।
গতকাল ১০ ফেব্রুয়ারি দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত এক সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, পুলিশ বাহিনীতে আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে। আরও পরিবর্তন হবে। কিন্তু সে হিসেবে সেবার মান বাড়ছে না। থানাগুলোতে কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছেন না নগরবাসী। যে কারণে সেবার মান বাড়াতে ডিএমপিকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। ভালো কাজ করার জন্য পুলিশের প্রত্যেক সদস্যকে কঠোর বার্তা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশকে জনবান্ধব করা হচ্ছে। থানায় গিয়ে কোনো নগরবাসী হয়রানির শিকার হওয়ার প্রমাণ মিললে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে শাস্তিও দেওয়া হয়েছে।
প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আরও জানা যায়, জিডির বিষয়ে অনেকের কাছ থেকে নেতিবাচক বক্তব্য পাওয়া গেছে। নগরবাসীর অভিযোগজনবল, আধুনিক সরঞ্জাম, তথ্যপ্রযুক্তিসহ সব জায়গায় ডিএমপির সক্ষমতা বাড়লেও নাগরিক প্রত্যাশা পূরণে রয়েছে ঘাটতি। থানা-পুলিশের বিরুদ্ধে প্রায়ই হয়রানি, দেরিতে সাড়া দেওয়া, মামলা না নেওয়া, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। তবে ডিএমপি মনে করছেএত বড় একটি শহরে অপরাধের মাত্রা হিসাব করলে তেমন কোনো অপরাধই হচ্ছে না। দু-একটি চুরি, ছিনতাই ঘটছে, তা অল্প সময়ের মধ্যেই আসামিদের পাকড়াও করা যাচ্ছে।
কিন্তু বাস্তবতা কিছুটা ভিন্ন। অনলাইনে জিডি করতে গিয়ে, বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন নগরবাসী। আবার সরাসরি মামলা করতে গেলেও নগরবাসীকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে! এ তো গেল রাজধানী ঢাকার কথা। দেশের বিভাগীয় শহর, জেলা, উপজেলার থানাগুলোর অবস্থা কেমন? সেখানে কি জনগণ পুলিশের দায়িত্ব-কর্তব্য-সেবায় সন্তুষ্ট? পুলিশ কি সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে? না পারলে মূল সমস্যাটা কোথায়! পুলিশের কাছে সাধারণ মানুষের আন্তরিক প্রত্যাশা থাকে। যে কারণে, তাদের বন্ধু হতে হয়। যাতে একজন মানুষ নির্ভয়ে সমস্যার কথা বলতে পারে। সহযোগিতা চাইতে পারে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের মোট জনসংখ্যার তুলনায় পুলিশের সংখ্যা একেবারেই কম। তবু আইনশৃঙ্খলার যাতে অবনতি না হয় সেদিকে রাখতে হবে কঠোর নজরদারি। তাদেরই জনগণের কাছাকাছি থাকতে হবে।
তবে, গুটিকয়েক পুলিশ সদস্যের অসৎ কর্মকা-ও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রাখা দরকার। তাদের চাঁদাবাজি, চারিত্রিক স্খলন এবং অসহযোগিতা গোটা পুলিশ বাহিনীকে বিতর্কিত করে তোলে। সাধারণ মানুষ, পুলিশের কাছে চায় সেবা। নিশ্চিন্ত এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে একজন মানুষ যখন পুলিশের কাছে সেবা পাবেন, তখনই তার প্রতি আস্থা তৈরি হবে। এর আগে না। মানুষের ভালোবাসা পেতে হলে দ্ব্যর্থহীনভাবে মানুষকেই ভালোবাসতে হবে। দরকার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন।
গাজীপুরের টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরীতে ৩৬০ টাকা বেতনে কর্মজীবন শুরু করা আসাদুর রহমান কিরণ এখন গাজীপুর মহানগরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর বিভিন্ন দল বদলে ক্ষমতার পাশাপাশি প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। বিভিন্ন সূত্র মতে, কিরণ এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। তার এত সম্পদের মালিক হওয়ার পেছনে রয়েছে দখলবাজি, জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর দুর্নীতি ও অনিয়ম।
কিরণের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ ৩১টি দপ্তরে যে অভিযোগ জমা পড়েছে, তাতে ডিগবাজি দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসা এই ভারপ্রাপ্ত মেয়রের ৬০০ কোটি টাকার দুর্নীতি-অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এই অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য হাইকোর্ট দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছে।
২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর নির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। নগরীর ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ তখন ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পান।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণকে একাধিকবার ফোন করা হয়েছে। মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।
৩১ দপ্তরে অভিযোগ : গত বছর ২০ জুলাই ৩১টি দপ্তরে সচেতন নাগরিক, বাংলাদেশের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন মো. নজরুল ইসলাম। লিখিত অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে, দুদক, স্থানীয় সরকার, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে গত বছর জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালন না করেও সিটি করপোরেশনের তহবিল থেকে টাকা আত্মসাৎ করেছেন কিরণ।
জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার অভিযোগপত্রে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের দুর্নীতি ও অনিয়ম চিত্র তুলে ধরেছি।’
কিরণের অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র : ভারপ্রাপ্ত মেয়রের চেয়ারে বসে কিরণ দুর্নীতি-লুটপাট, কমিশন বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। দায়িত্ব নেওয়ার পর তার নজর পড়ে পুবাইলের চিরুলিয়ায় অর্পিত সম্পত্তির ওপর। ২৩ বিঘা জমি নিজের কবজায় নেন কিরণ। এর জন্য ভুয়া জমির মালিক বানান একজনকে। এ জমি নিজের করায়ত্তে নিতে সিটি করপোরেশনের ১৮ লাখ টাকা কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। জানাজানি হয়ে গেলে কিছুদিন আগে কর পরিশোধ করেন। তবে অবৈধ প্রক্রিয়ায় জমির মালিক হওয়ায় ওই জমির খাজনা এখনো দিতে পারেননি কিরণ।
পোশাকশিল্প কারখানার সবচেয়ে বড় নগরী গাজীপুর। সিটি করপোরেশনের আয়ের সবচেয়ে বড় মাধ্যম শিল্প ও হোল্ডিং ট্যাক্স। আর সেখানেই অনিয়মের বড় ক্ষেত্র তৈরি করেছেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র। তিন/পাঁচ কোটি টাকার বকেয়া হোল্ডিং, শিল্প ট্যাক্স অর্ধেকে নামিয়ে এনে করপোরেশনের কোষাগারে মাত্র ৫০ লাখ টাকা জমা দিয়ে বাকি টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে রেহাই দিয়ে দেন করদাতাদের। কিরণের এই কৌশলে বেঁচে যান কর ফাঁকি দেওয়া শিল্প-মালিকরা। কিন্তু রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় রাষ্ট্র। নগরের আটটি জোনে করের টাকা আত্মসাৎ করার অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিরণ ২০১৬-১৭ সালে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় একটি টেন্ডার আহ্বান করেন। টেন্ডার নম্বর : জিসিসি/জেড। ওই টেন্ডারের কাজের অগ্রগতি না থাকায় জাহাঙ্গীর আলম মেয়র নির্বাচিত হলে ওই টেন্ডারের কোনো বিল পরিশোধ করতে পারেননি কিরণ। ২০২১ সালে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই বিল পরিশোধের উদ্যোগ নেন। ওই সময়ের বিভিন্ন ঠিকাদারকে ডেকে তাদের কাছ থেকে কাজের হিসাব করে তার কমিশন আদায় করেন কিরণ। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কিছু চিত্র সিটি করপোরেশনের চেক রেজিস্ট্রার বই ঘেঁটেও পাওয়া গেছে।
উত্তরায় ‘অস্থায়ী কার্যালয়’ : উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরে ৭ নম্বর রোডে ১০ নম্বর বাড়ির ছয়তলায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের একটি ‘কার্যালয়’ করেছেন কিরণ। উত্তরার এ কার্যালয়ে বসে ঠিকাদারদের নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। লেনদেন-দরবার সবই হয় এ বাড়িতে বসেই। পার্সেন্টেজ ছাড়া যেমন ঠিকাদারদের কাজের বিল পরিশোধ করা হয় না, তেমনি পার্সেন্টেজ ছাড়া ঠিকাদারি কাজও পান না কেউই। কোন কাজ কে পাবে, কে পাবে না, কে কত পার্সেন্ট কমিশন দেবে এসব হিসাব ও মধ্যরাতের প্রমোদ-ফুর্তির যে ব্যয় হয় সিটি করপোরেশনের এলআর ফান্ড থেকে নির্বাহ করা হয়। শিল্পাঞ্চল-সমৃদ্ধ গাজীপুর নগরীর অধিকাংশ ব্যবসায়ী-ঠিকাদার ‘১০ পার্সেন্ট’ হিসাবেও কিরণকে চিনে-জানে।
বর্তমানে গাজীপুর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা সারা জীবন রাজনীতি করেছি দলের জন্য। অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছি কিন্তু মূল্যায়ন পাইনি। একটি কাজের জন্য আমি ছয় মাস ঘুরছি। কিন্তু কিরণ আমাকে কাজ দিচ্ছেন না। কারণ আমার কাছ থেকে পার্সেন্টেজ নিতে পারবেন না।’
শুধু কী তা-ই, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজনের নামে গত বছর ১৭ মার্চ কোনো আয়োজন না করেই কিরণ সিটি করপোরেশনের খরচের তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগও আছে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৭৬ জন কাউন্সিলর এবং কিছু কর্মকর্তার সিলেটে পিকনিক আয়োজন করার নামে করপোরেশনের তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা খরচ বাবদ দেখিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগও আছে।
কিরণের সম্পদ : টঙ্গীর পাগাড়, ঢাকার আশুলিয়া এবং গাজীপুরে নিজ নামে, স্ত্রী, শ্যালক ও শ্যালিকার নামে ১১২ বিঘা জমির মালিক কিরণ। টঙ্গীর পাগাড়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কিছু জমি রয়েছে, যা নয়ছয় ও ভয়ভীতি দেখিয়ে দলিল করে নিয়েছেন তিনি। নজরুল ইসলামের অভিযোগ অনুযায়ী, উত্তরায় ১১ নম্বর সেক্টরে ৭ নম্বর রোডের ১০ নম্বর বাড়িটি সাততলা। এটি নির্মাণ করতে কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। একই এলাকার ৭ নম্বর সেক্টরে ১৮ নম্বর রোডে ৯৫ নম্বর বাড়ি রয়েছে। বারোতলা নির্মাণাধীন ওই ভবনের আনুমানিক মূল্য ৩৫ কোটি টাকা। গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কে ফ্ল্যাটের তথ্যও পাওয়া গেছে। ২ হাজার ৫০০ বর্গফুটের ওই ফ্ল্যাটের মূল্য কমপক্ষে সাত কোটি টাকা।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় স্ত্রী ও নিজের নামে অন্তত ২০০ বিঘা জমির ওপর ভারপ্রাপ্ত মেয়রের কারখানা রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ৩০০ কোটি টাকা হতে পারে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অধীনে টঙ্গীতে তিনটি কারখানা আছে তার। এগুলোর আনুমানিক মূল্য ৩০০ কোটি কোটি টাকা।
কিরণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত কয়েকশ কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিজের ও স্ত্রীর নামে যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ইয়র্ক শহরে বাড়ি করেছেন বলেও অভিযোগ আছে। কিরণ দ্বৈত নাগরিক বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।
হাইকোর্টের আদেশ : গত বছরের ২০ জুলাই দুদকে জমা পড়া অভিযোগ লাল ফিতায় আটকে গেলে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন হয়। গত বছর ২১ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করা হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালত কিরণের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে। হাইকোর্ট চার মাসের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে সময় বেঁধে দেন। একই সঙ্গে গাজীপুরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত।
রাজনীতিতে উত্থান : প্রিন্টিং প্রেস কারখানায় বাইন্ডার-ম্যান হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন আসাদুর রহমান কিরণ। ১৯৮৪-৮৫ সালে এলিট প্রিন্টিং প্রেস নামে ওই কারখানায় চাকরি করা কিরণ ১৯৮৬ সালে রাজনীতিতে আসেন। ওই সময় তিনি জাতীয় পার্টির যুব সংগঠন যুব সংহতির টঙ্গীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই সময় গাজীপুর নিয়ন্ত্রণ করতেন হাসান উদ্দিন সরকার। তিনি জাতীয় পার্টি ও পরে বিএনপির রাজনীতিতেও যুক্ত হন। ওই সময়ের সবচেয়ে ক্ষমতাধর হাসান উদ্দিন সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা ও তার ঘনিষ্ঠ পরিচিতি লাভ করে শুরু করেন জমি দখল। টঙ্গী, পাগাড় মৌজায় হিন্দু-খ্রিস্টানের মালিকানায় থাকা জমি দখল করে নেন তিনি। পরে প্লট বানিয়ে চড়া দামে বিক্রি করেন। তবে প্রিন্টিং প্রেসের শ্রমিক কিরণ ওই সময় টঙ্গীর বিসিক এলাকায় শ্রমিক নেতা হিসেবেও আধিপত্য বিস্তার করেন। হিন্দু-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কেউ জমি দিতে না চাইলে রাজনৈতিক চাপ ও সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে উচ্ছেদ করতেন। পাগাড় শিল্পাঞ্চল এলাকা হওয়ায় ওই এলাকায় টার্গেট করে জমি দখল করেন কিরণ। টঙ্গী পৌরসভা হিসেবে প্রথম ভোটে ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কমিশনারও নির্বাচিত হন। তত দিনে ক্ষমতা-সম্পদ ও অঢেল অর্থের মালিক হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর গুরু পাল্টে কিরণ হয়ে যান সাবেক পৌর মেয়র গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লার ‘মাইম্যান’। এই সুযোগে ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত হয়ে ওঠে কিরণের। ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে আজমত উল্লা মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক আবদুল মান্নানের কাছে পরাজিত হন। কিরণ মূলত দুর্নীতি-অনিয়ম শেখেন তখন থেকেই। বিএনপি নেতা মান্নান মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হলে তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান। গাজীপুরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচন কেন্দ্র করে আজমত উল্লার সঙ্গেও সুসম্পর্ক নেই কিরণের।
গাজীপুরের মাওনা এলাকার আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চেয়ার ছুঁয়েই কিরণ স্বেচ্ছাচারিতা, লুটপাট, ভূমিদখলসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তিনি করেননি। দলীয় লোককে সরিয়ে রেখেছেন, সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রেখেছেন। কারণ, কিরণ আওয়ামী লীগ নয়, মূলত সুবিধাবাদী।’
ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বিষয়ে জানতে চাইলে আজমত উল্লা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিরণ অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে এসেছেন সত্যি, তবে তিনি দলের জন্য কাজ করেছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের যে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে সেটা তো প্রমাণ হয়নি এখনো। প্রমাণ হলে তখন মন্তব্য করা যাবে।’
আজ রবিবার (২ এপ্রিল) সকাল ৯টায় রাজধানী ঢাকার বায়ুর মানের স্কোর ছিল ১২৫। এই স্কোরের অর্থ- ঢাকার দূষণমাত্রা 'সংবেদনশীলদের জন্য অস্বাস্থ্যকর'। বাতাসের মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (আইকিউএয়ার) সূচক থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
একই সময়ে বায়ুদূষণের শীর্ষে রয়েছে থাইল্যান্ডের চিয়াং মাই। শহরটির দূষণের স্কোর ২৫৪ অর্থাৎ 'খুবই অস্বাস্থ্যকর'। দ্বিতীয় চীনের রাজধানী বেইজিং, স্কোর ১৬৬ অর্থাৎ 'অস্বাস্থ্যকর'। আর ১৬৪ স্কোর নিয়ে তৃতীয় ভারতের দিল্লি, এটিও 'অস্বাস্থ্যকর'।
উল্লেখ্য, স্কোর শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকলে বায়ুর মান ভালো বলে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে মাঝারি, সংবেদনশীলদের জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর, ২০১ থেকে ৩০০ খুবই অস্বাস্থ্যকর আর ৩০১-এর বেশি হলে বিপজ্জনক।
বরকতময় রমজান মাস পাওয়া প্রতিটি মুমিনের জন্য মহা সৌভাগ্যের বিষয়। কেননা এ মাসের মর্যাদা অনেক বেশি। যাতে বান্দার জন্য মহান মনিবের সন্তুষ্টি অর্জন করা অন্য সময়ের চেয়ে সহজতর। কোরআনে কারিমের ভাষায়, ‘তোমরা সংখ্যা পূর্ণ করবে এবং তোমাদের সৎপথে পরিচালিত করার কারণে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করবে এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।’ -সুরা বাকারা : ১৮৫
বর্ণিত আয়াতে ‘শাহিদা’ (উপস্থিত ও বর্তমান থাকা) শব্দ দিয়ে রোজা সম্পর্কিত বহু হুকুম-আহকাম ও মাসয়ালা-মাসায়েলের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। আর আয়াতের শেষাংশে বান্দাকে ‘কৃতজ্ঞ’ হতে বলা হয়েছে। কৃতজ্ঞতর সাধারণ অর্থ উপকারীর উপকার মনে রাখা ও স্বীকার করে। এর সঙ্গে প্রশংসা, মহিমা, মূল্য ও যোগ্যতার বিষয়গুলো জড়িত। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ইসলামের শিক্ষা হলো- সর্বাবস্থায় সবকিছুর জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো। কেননা তিনিই তো এর প্রাপ্য। চোখের প্রতি পলকে এবং হৃৎপিণ্ডের ওঠানামার সঙ্গে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে তার দেওয়া অসংখ্য নিয়ামতে ডুবিয়ে রেখেছেন। এই নিয়ামত এবং দান, যেগুলো প্রতি দিনে-রাতে নবায়ন হচ্ছে, সেগুলোর জন্য আমাদের উচিত আল্লাহকে ধন্যবাদ জানানো। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং যারা উপদেশ গ্রহণ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশে ইচ্ছুক, তাদের জন্য রাত এবং দিনকে সৃষ্টি করেছেন পরস্পরের অনুগামীরূপে।’ -সুরা আল ফুরকান : ৬২
ইসলাম কৃতজ্ঞতাকে উচ্চাসন দিয়েছে। তাই তো উপকারী ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে। এ কৃতজ্ঞতা যদি কেউ প্রকাশ না করে, তাহলে সে সমাজের চোখে তো নিন্দিত হয়ই, সে নিন্দিত হয় মহান রাব্বুল আলামিনের কাছেও। নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে মানুষের কৃতজ্ঞতা আদায় করে না, সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞ হয় না।’ -জামে তিরমিজি : ১৯৫৪
উল্লিখিত কোরআনের আয়াত ও হাদিস দ্বারা এটা স্পষ্ট যে মানুষের অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা আদায় করা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশেরই অংশ। ইসলাম বলে, কৃতজ্ঞতার মানসিকতা লালন করে যেতে হবে। এমন যেন না হয়, আমার বিপদে একজন পাশে দাঁড়াল, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিল, কিন্তু আমি তা ভুলে গেলাম, তার প্রতিপক্ষ হয়ে গেলাম। এমন হলে পারস্পরিক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়।
অকৃতজ্ঞতা নীতিহীনতার পরিচয়। এর মাধ্যমে নিয়ামতের অপরিসীম ধারাকে দাতার সামনেই অসম্মান করা হয়। এ ধরনের আচরণের ফলে আরও বেশি কিছু চাওয়া কিংবা পাওয়ার অধিকার হ্রাস পায়। মানবজাতির প্রতি আদেশ হলো, তাদের প্রতিপালকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে।
কৃতজ্ঞতা কোনো কঠিন দায়িত্ব নয়, যেখানে ধৈর্যের সঙ্গে পথ চলতে হয়; বরং এটি হলো পরিপূর্ণতার পথ, যেটি দৃঢ় সংকল্প এবং উদ্দেশ্য নিয়ে পাড়ি দিতে হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ! আমি তোমাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে পবিত্র বস্তু আহার করো এবং আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো; যদি তোমরা শুধু তারই ইবাদত করে থাকো।’ -সুরা বাকারা : ১৭২
মধুর আবেগ এবং হৃদয়ের উপলব্ধি দিয়ে আল্লাহর নিয়ামতের শোকরিয়া আদায়, একজন ব্যক্তিকে আরও বেশি পাওয়ার যোগ্য করে তোলে। তার রহমতের বর্ষণ ঠিক সেই উর্বর জমিতে ঢালা পানির ন্যায়, যা জমিনকে ফুলে-ফলে সুশোভিত করে তোলে। কৃতজ্ঞতা শুধু ঠোঁটে প্রকাশযোগ্য কোনো শব্দ নয়; বরং কৃতজ্ঞতা হলো হৃদয়ের এমন এক অনুভূতি যা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তার জীবনের প্রতিটি কাজ এবং আচরণের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন। অকৃতজ্ঞতার পরিণাম সম্পর্কে মানবজাতিকে ভয়ংকর পরিণতির ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব। তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, আর অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ -সুরা বাকারা : ১৫২
রমজান মাসে অনেক পুণ্যের সমাহার ঘটে। পুণ্যময় এসব কাজের একটি হতে পারে আল্লাহকে স্মরণ ও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা। কারণ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারীকে অনুগ্রহ লাভের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
লেখক : খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
ভাড়া করা বিমানে উড়িয়ে নিয়েও মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রথম ম্যাচে একাদশে রাখল না দিল্লি ক্যাপিটালস। আসরে তাদের শুরুটাও ভালো হলো না। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারল মোস্তাফিজবিহীন দিল্লি।
ঘরের মাঠে ৫০ রানের জয়ে আসর শুরু করল লক্ষ্ণৌ। ১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দিল্লি থামে ৯ উইকেটে ১৪৩ রানে। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়ে লক্ষ্ণৌয়ের জয়ের নায়ক মার্ক উড।
এদিন দিল্লির ব্যাটিং ছিল পুরো ফ্লপ। দলের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ৪৮ বলে ৫৬ রান করেছেন। পাশাপাশি রাইলি রোশো ২০ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু বাকিরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ফলে যা হরার তাই হলো ম্যাচের ফল।
এর আগে স্বাগতিক দলের হয়ে ঝড় তোলেন কাইল মেয়ার্স। এই ক্যারিবীয়ান ৩৮ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন। ২টি চারের সঙ্গে হাঁকান ৭টি ছক্কা। এ ছাড়া নিকোলস পুরান ২১ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৩ রানের পুঁজি গড়ে লক্ষ্ণৌ।
গত অক্টোবরের পর আর্সেনালের জার্সিতে প্রথম গোলের দেখা পেলেন গাব্রিয়েল জেসুস। তার আবার জোড়া গোল। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের জ্বলে ওঠার দিনে লিডস ইউনাইটেডকে উড়িয়ে ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ফের আট পয়েন্টে এগিয়ে গেল আর্সেনাল।
ঘরের মাঠে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ৪-১ গোলে জিতে আর্সেনাল। স্পট কিকে দলকে প্রথম এগিয়ে দেন জেসুস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেন হোয়াইট ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। এর খানিক পরই জোড়া গোল পূর্ণ করেন জেসুস।
এরপর লিডস একটি গোল শোধ করলেও গ্রানিত জাকার গোলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
আন্তর্জাতিক বিরতি থেকে ফেরার পর এটিই প্রথম ম্যাচ ছিল আর্সেনালের। বিরতিতে যাওয়ার আগে নিজেদের মাঠে একই ব্যবধানে তারা হারিয়েছিল ক্রিস্টাল প্যালেসকে।
এই জয়ে ২৯ ম্যাচে ৭২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল গানাররা। ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর প্রথমবার প্রিমিয়ার লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখছে আর্সেনাল। তাদের সঙ্গে গত লিগের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ব্যবধান ৮।
গানারদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সিটি। একই দিন তারাও নিজেদের মাঠে লিভারপুলকে উড়িয়ে দিয়েছে ৪-১ গোলে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এক বছরেরও কম। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচন হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করা দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো আন্দোলন করছে।
এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত বছরের মাঝামাঝি থেকে এই চাপ ক্রমশ বাড়ছে। বিদেশিদের মধ্যে এবার যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অনেক বেশি। এর আলামত দেখা যাচ্ছে কয়েক মাস ধরে। নির্বাচন ছাড়াও দেশটি মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীন প্রশ্নে অনেক সোচ্চার। ২০২১ সালের ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি।
সরকারের তরফ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য তারা বিদেশিদের উদ্যোগ নিতে বলছে। একই সঙ্গে সরকার যেকোনো চাপে নতি স্বীকার করবে না, সেটাও বলেছে।
কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৯০ সালে দেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি আসার পর থেকেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক আগ্রহ বাড়ছে। নির্বাচনের এক বছর আগে থেকেই প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নানা সবক দিতে থাকে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
তাদের মতে, বরং নির্বাচন ঘিরে পরাশক্তিগুলোর প্রভাব লক্ষণীয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই প্রতিবেশী দেশ এবং বড় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সরকার নিয়ে সবচেয়ে বেশি আধিপত্য দেখিয়ে আসছিল ভারত। ১৯৯০ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পশ্চিমাদের প্রভাব। আর তিন দশক ধরে বিভিন্ন কূটনৈতিক জোট, আঞ্চলিক জোট এবং সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আগ্রহ বেড়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রভাবশালী দেশগুলোর নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ যতই থাক না কেন, এর মূল কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা। তারা মনে করছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সমাধান যদি নিজেরা না করতে পারি, তাহলে বাইরের প্রভাব বাড়তে থাকবে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালী উর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে তাদের প্রভাব বলয়ে রাখতে চায়। তাদের নিজেদের দেশেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। বর্তমান সরকারও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করছে। তাদের এই চাপ কাজে দেবে না।’ আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলের অভিমত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে এবং আঞ্চলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কারণও তাই। কূটনীতিকরা বলছেন, ভারত, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ থাকলেও এক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতা লক্ষণীয়। এ ক্ষেত্রে সরকারবিরোধী বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বারবার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি কিছুটা হলেও গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন পদ্ধতি এবং নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র অনেক বেশি সোচ্চার হলেও তাদের কূটনীতি সরকারবিরোধী দলগুলোর পক্ষে যাবে এমন ধারণা করার কোনো কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। এটা যেমন সত্য, তেমনি ইন্দো প্যাসিফিক এবং এ অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের বোঝাপড়াটা বেশি জরুরি। আর সে কারণেই বিএনপি যতই তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলুক যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে না। তাদের বক্তব্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং নির্বাচনে বিরোধীপক্ষের জন্য সুষ্ঠু ও অবাধ পরিবেশ তৈরি করা।
কূটনীতিক সূত্রগুলো বলছে, আগের কয়েক দফা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী থাকলেও ভারতের সঙ্গে একধরনের সমঝোতা করে বা আলোচনা করে তাদের মতামত দিয়েছে। কিন্তু ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন নিয়ে পরামর্শ এবং তাদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে বেশি সোচ্চার।
বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক চর্চার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগের বিষয়টি প্রথম প্রকাশ পায় ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে। এরপর থেকেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংলাপও হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল এবং প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করেছেন। তাদের সফরে আগামী নির্বাচন, বিরোধীপক্ষের প্রতি সরকারের আচরণ, মানবাধিকার ও সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সরকার, আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
গত ২১ মার্চ নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের উদ্ধৃত করে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে, নির্বাচনে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে এবং বিরোধীদলীয় পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানোসহ গুরুতর অনিয়ম রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত সম্মান ও অংশীদারিত্বের মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে মানবাধিকারের বিষয়গুলো উত্থাপন করে। এটা তারা চালিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এমন আগ্রহের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বলয় বাড়াতে চায় দেশটি। এরই মধ্যে দেশটি এশিয়ায় তাদের বন্ধু দেশগুলোকে নিয়ে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ (আইপিএস) পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এর আওতায় ইন্দো-প্যাসিফিক ফোরাম গঠন করা হয়েছে। একই কৌশলের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভারত সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে কোয়াড গঠন করেছে। এগুলোর লক্ষ্য হলো চীনের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলে একটি শক্তিশালী বলয় গঠন করা। ভারতের পাশাপাশি এ বলয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকেও চায়। বাংলাদেশ যেন কোনোভাবেই চীনের বলয়ে না যেতে পারে, সেই কৌশলের অংশ হিসেবেও আগামী নির্বাচন ঘিরে চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে দেশটি। যদিও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো জোটেই যায়নি। আবার ‘বার্মা অ্যাক্ট’ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রস্তাবে তারা বাংলাদেশকে পাশে চায়। এসব কারণে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ নানা ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ ঢাকায় সফররত দেশটির কর্মকর্তারা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্ক নিয়েও ইতিবাচক কথা বলেন। এ ছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বিভিন্ন বক্তব্যেও নির্বাচনের পরিবেশ ও স্বচ্ছতা নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে ঢাকা সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তারও বলেছিলেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে তারা সরকারকে এবং এই দেশকে সহযোগিতা করেব। তিনি সেই সময় দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাস ও ইউএসএইডের বাংলাদেশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব তুলে ধরেন।
গত বছরের অক্টোবরে ঢাকায় এসেই এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে চায়। এরপর থেকে তিনি নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রায় অভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আসছেন। পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো একটি দলকে সমর্থন করে না। তারা চান জনগণ তাদের পছন্দের সরকার নির্বাচন করবে।
এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসহ ১৪টি দেশের কূটনীতিকরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন নিয়ে তাদের মনোভাব তুলে ধরেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অভিনন্দন বার্তায়ও বাংলাদেশে সবার জন্য উন্মুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। দিবসটি উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শুভেচ্ছা বার্তায় অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে লেখা বাইডেনের এ বার্তায় বর্তমান সরকার ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসাও করা হয়েছে।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলে তার ঢাকা সফরে বলেছিলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, অর্থাৎ যারা পরাজিত হবেন, তারাও যেন মনে করেন নির্বাচনটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ হয়েছে এমনটাই তারা চান। তিনি বলেছিলেন, শক্তিশালী সুশীল সমাজ, মুক্ত গণমাধ্যম এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক পরিবেশ চায় যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে নেতিবাচক প্রশ্ন উঠবে না। এই পরিবেশ তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও শোলে জানান।
ডেরেক শোলে চলে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, সরকারপক্ষ থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিকে বলা হয়েছে তারা অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। তারা সরকারের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত। তবে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও পূর্ববর্তী নির্বাচন নিয়ে তারা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। যখনই প্রয়োজন হবে, তারা সেটা জানাবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর সুযোগ নেই। এই সুযোগটা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোই করে দিয়ে আসছে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র একটি শক্তিশালী অবস্থান চায়। এ জন্যই তারা কথা বলছে।’