
সাম্প্রতিক সময়ে ভূমিকম্প নিয়ে মানুষের মনে ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমন্তবর্তী এলাকায় ৭.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। ব্যাপক বিধ্বংসী এই ভূমিকম্পের ফলে জানমাল ও অবকাঠামোগত অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তুরস্ক ও সিরিয়ার বিস্তৃত এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। ধ্বংসস্তূপ সরালেই মিলছে মানুষের লাশ। প্রায় ৭০টির বেশি দেশের উদ্ধারকর্মী উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৩৭ হাজার অতিক্রম করেছে এবং উদ্ধার অভিযানের অগ্রগতির সঙ্গে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়বে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। আমাদের দেশে গত ১৫ বছরে ছোট-বড় মিলে ১৪১ বার ভূকম্পন সৃষ্টি হয়েছে। কম্পন দীর্ঘ সময় ধরে হলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষয়টিকে মোটেও হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। ছোট-মাঝারি ভূমিকম্প অনেক সময় বড় ধরনের ভূমিকম্পের লক্ষণ হতে পারে। বড় ভূমিকম্পের শত বছরের মধ্যে আরেকটি বড় ভূমিকম্প হয়। সেদিক থেকে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আমাদের দেশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কতটা প্রস্তুত এই বড় ধরনের ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে।
সাধারণত তিনটি প্রধান কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। প্রথমত, ভূপৃষ্ঠজনিত, দ্বিতীয়ত, আগ্নেয়গিরিজনিত ও তৃতীয়ত, শিলাচ্যুতিজনিত। ভূমিকম্পের মাত্রা মাপা হয় রিখটার স্কেলে। রিখটার স্কেলে এককের সীমা ১ থেকে ১০ পর্যন্ত। রিখটার স্কেলে মাত্রা ৫-এর বেশি হওয়া মানে ভয়াবহ দুর্যোগের আশঙ্কা। মনে রাখতে হবে, ভূমিকম্প এক ডিগ্রি বৃদ্ধি পেলেই এর মাত্রা ১০ থেকে ৩২ গুণ বৃদ্ধি পেতে পারে। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ৫-৫.৯৯ মাঝারি, ৬-৬.৯৯ তীব্র, ৭-৭.৯৯ ভয়াবহ, ৮-এর ওপরে অত্যন্ত ভয়াবহ।
বিশ্বে সবচেয়ে ভূমিকম্পনপ্রবণ এলাকার একটি হলো চিলি। সেখানে ১৯৬০ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী (রিখটার স্কেলে ৯.৫ মাত্রা) ভূমিকম্প হয়। তাই চিলি ধীরে ধীরে তাদের সব বিল্ডিং ভূমিকম্প সহনীয় করে গড়ে তুলেছে। সে কারণে বড় ভূমিকম্পতেও সেখানে ক্ষয়ক্ষতি খুব কম হয়। সম্প্রতি ২০১৫ সালে চিলিতে ৮ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। যাতে মানুষ মারা যান মাত্র ১৩ জন। অথচ হাইতিতে ২০১০ সালে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় তিন লাখ মানুষ মারা যান। এর প্রধান কারণ দুর্বল স্থাপনা। হাইতিতে বলতে গেলে ভূমিকম্প-সহনীয় বিল্ডিং নেই, তাই ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা হয় ব্যাপক।
ভূমিকম্প প্রস্তুতিতে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় দেশ জাপান। ২০১১ সালের তহুকু ভূমিকম্পটি ছিল জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মাত্রার আর বিশ্বে পঞ্চম। অতিদ্রুত ধেয়ে আসা সুনামি ছিল ধ্বংসযজ্ঞের মূল কারণ, যা সব প্রস্তুতি কার্যক্রমকে অকার্যকর করে দিয়েছিল। এটা যদি ঘণ্টাখানেক সময় দিত, নিহতের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে যেত। ফুকুশিমা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের দুর্ঘটনা সমস্যাটিকে আরও জটিল করে তুলেছিল।
২০১৫ সালে নেপালের ভূমিকম্প আর মণিপুরের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের পর বাস্তবতা হচ্ছে, এই বিপর্যয়ের আশঙ্কার মধ্যেই বাংলাদেশিদেরও বসবাস করতে হবে। এখানে শহরাঞ্চলে মূল ক্ষয়ক্ষতি হবে স্থাপনা ধসে। মর্মান্তিক এক পরিণতির আশঙ্কায় ভীতির সঙ্গে বসবাসের চেয়ে কঠিন সময় কঠিনতম দৃঢ়তায় মোকাবিলা করার প্রত্যয় নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে।
বাংলাদেশের স্থাপনাসমূহ নিয়েও এ রকম শঙ্কা রয়েছে। তাই ক্ষয়ক্ষতি যাতে কম হয় সেজন্য সরকার প্রণীত বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করা হলে বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হবে।
ভূমিকম্পের সময় যা করবেন
ভূমিকম্প হচ্ছে বুঝতে পারলে জীবন বাঁচাতে হলে প্রথমে মাথা ঠা-া রাখার চেষ্টা করতে হবে। কোনোভাবেই আতঙ্কিত হওয়া যাবে না।
যদি বাসাবাড়িতে থাকেন তাহলে মাথা বালিশ দিয়ে ঢেকে টেবিল, খাট বা শক্ত কোনো আসবাবপত্রের নিচে আশ্রয় নিন।
মনে রাখবেন, ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির অন্যতম কারণ গ্যাস ও বিদ্যুৎ থেকে লাগা আগুন। তাই দ্রুত রান্নঘরের গ্যাসের চুলা, ঘরের বৈদ্যুতিক সুইচগুলো বন্ধ করতে হবে।
ভূমিকম্পের সময় খালি পায়ে নয়, শক্ত জুতো পরে চলাফেরা করুন, যাতে গ্লাস, মেটাল ইত্যাদির ইনজুরি থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
ব্যাটারিচালিত রেডিও, টর্চলাইট বা ম্যাচ-মোমবাতি, পানি, শুকনো খাবার ও প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম সব সময় ঘরে রাখা প্রয়োজন।
গ্যাস লিকেজ আছে কি না তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ম্যাচ-মোমবাতি জ্বালাবেন না।
হুইলচেয়ারে থাকলে, চাকা লক বা বন্ধ করে হাত দিয়ে মাথা ও ঘাড় ঢেকে রাখুন।
স্কুল, কলেজ বা অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকলে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলব্যাগ মাথায় দিয়ে শক্ত টেবিলের নিচে আশ্রয় নিতে হবে।
ভূমিকম্পের সময় বহুতল ভবন থেকে নামতে হলে সিঁড়ি ব্যবহার করতে হবে। কোনোক্রমেই লিফট ব্যবহার করবেন না। লিফটে থাকলে নিকটবর্তী ফ্লোরে তাড়াতাড়ি নেমে পড়ুন।
বেশি ওপরতলায় থাকলে কম্পন বা ঝাঁকুনি না থামা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, কম্পন বা ঝাঁকুনি থামলে দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে খোলা জায়গায় বা নিরাপদ স্থানে অবস্থান নিন। তাড়াহুড়ো করে লাফ দিয়ে নামা যাবে না।
শিল্প-কারখানা, হাসপাতাল, মার্কেট, সিনেমা হলে থাকলে হুড়োহুড়ি করে বের হওয়ার জন্য দরজার সামনে ভিড় বা ধাক্কাধাক্কি করতে যাবেন না। যেখানে আছেন সেখানেই দুহাতে মাথা ঢেকে বসে থাকুন।
গাড়িতে থাকলে রাস্তা ব্লক না করে একপাশে থেমে যান এবং ভেতরে থাকুন। সেতু, ওভারব্রিজ, ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, গাছ, বৈদ্যুতিক খুঁটি, বিলবোর্ড ইত্যাদি থেকে দূরে থাকতে হবে। পেছন থেকে ছুটে আসা গাড়ি থেকে সতর্ক থাকুন, রিয়ার মিররের ওপর নজর রাখতে হবে।
ঘরের বাইরে যেখানেই থাকুন না কেন বড় গাছ, উঁচু বাড়ি, বৈদ্যুতিক খুঁটি ইত্যাদি থেকে দূরে খোলা স্থানে আশ্রয় নিতে হবে।
সমুদ্র বা নদীর ধারে থাকলে শিগগিরই দ্রুততার সঙ্গে উঁচু জায়গায় অবস্থান নিতে হবে।
একবার কম্পন হওয়ার পর আবারও কম্পন হতে পারে। তাই সুযোগ বুঝে বিল্ডিং থেকে বের হয়ে খালি জায়গায় চলে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
মানুষ মানুষের জন্য। বিপদের সময় আপনার মনুষ্যত্ব যেন আপন মহিমায় আলো ছড়ায়। নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে প্রতিবেশীদের প্রতিও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। বিপদ থেকে রক্ষার পাশাপাশি বিপদে ভয় না পেয়ে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করার চেষ্টা করতে হবে। বড় ধরনের ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি কতটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে তা বলা মুশকিল, তবে প্রস্তুতি থাকলে মোকাবিলা করতে সুবিধা হবে। জাতীয়পর্যায়ে লজিস্টিক্যালি ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের সক্ষমতা হয়তো খুবই অপ্রতুল। কিন্তু ব্যক্তিগত বা দলবদ্ধভাবে ওপরের গাইড লাইনগুলো মেনে চললে প্রাণহানি বা আহত হওয়ার ঘটনা অনেকখানি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
লেখক : কলাম লেখক
আরশোলা চিৎ হয়ে আছে। তার পাগুলো আকাশের দিকে উঠে আছে। পিঠের ওপর ভর দিয়ে আর শুয়ে থাকা যাচ্ছে না। উফ্। কতদিন শুয়ে আছে সে জানে না। সম্ভবত অনন্তকাল। মনে পড়ে, সে যখন উল্টে গিয়েছিল তখন জাপানে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটেছিল হিরোশিমায় নাকি নাগাসাকিতে বিশেষ মনে পড়ে না। তবে এটুকু মনে আছে, পারমাণবিক বিস্ফোরণের কম্পনেই সে উল্টে গিয়ে চিৎ হয়ে পড়েছিল। তারপর একবার সোজা হয়েছিল। অল্প সময়ের জন্য। এরপর থেকে সে প্রায়ই উল্টে যায় এবং দিনের বেশিরভাগ সময় ওল্টানো অবস্থাতেই কাটে।
উল্টে যাওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়েই আরশোলাদের মধ্যে ঈশ^র-ভাব তৈরি হয়েছিল। সম্প্রতি বিকশিত তাদের মিথে ঈশ^র একজন উল্টে থাকা আরশোলা নাম তেলাচোরা বাণেশ^র। তার আরেক নাম সহস্রপাদ। শোনা যাচ্ছে, তাদের একটা কিতাব রচিত হচ্ছে, নাম ‘তিয়েল’। বিশদ নাম শ্রীমদন তেলাশ্রম বাণপঞ্চম রমণচন্দ্রম মধুমেহন।
তার বাড়ি কোথায় ছিল এখন আর তার মনে নেই। সম্ভবত তেলাপোকার জীবনই তার একমাত্র জীবন ছিল এবং আছে। এখন তার খুব নিঃসঙ্গ লাগে। কালেভদ্রে অন্য কোনো আরশোলার সঙ্গে তার দেখা হয়। তারা তাকে গ্রেগর সামসা বলে ডাকে। সম্প্রতি আরেক আরশোলার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছে। প্রায়ই দেখা হচ্ছে তাদের। কিন্তু কোথায় দেখা হচ্ছে উল্টে থাকায় ঠিকমতো স্মরণ হচ্ছে না। তেলাপোকার স্মৃতি আছে কি না তা তার জানা নেই। বোধহয় বিষয়টি সাম্প্রতিক। আগে কখনো কোনো কিছু মনে রাখার প্রশ্ন তো ছিল না! কোথায় শুয়ে এসব সে ভাবছে তা-ও বলতে পারে না গ্রেগর সামসা। এসব স্মৃতি-টিতি খুব সম্ভবত সাম্প্রতিক। তবে সে জানে তেলাপোকাদের ভূগোলের বিস্তার খুব চওড়া। মনুষ্যবাহনে চড়ে তারা দুনিয়ার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে চলে যেতে পারে। শোনা যাচ্ছে ইদানীং তারা চন্দ্রে-মঙ্গলেও পাড়ি জমাচ্ছে। এখন কক্রোচ গ্লোবালাইজেশনের যুগ। তাদের গসপেল তিয়েলের প্রচারের যুগ এখন। গ্রেগর সামসা ১৯৪৫-৪৬ থেকেই চিৎ হয়ে থাকলেও এবং এখন প্রায়শ হলেও আর কোনো চিৎ হওয়া আরশোলার দেখা পায়নি এতকাল। সম্প্রতি ওইরকম আরেকজনের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হচ্ছে।
আরশোলাদের ঐশী এবং ঈশানী কিতাব রচিত হচ্ছে বলেই সম্ভবত তাদের ভৌগোলিক বিস্তৃতি বেড়েছে এবং বাড়ছে। যে আরশোলাটির সঙ্গে ইদানীং তার দেখা হচ্ছে তার নাম আংকেল স্যামুয়েল স্যামুয়েল ওরফে পেনিসোভিচ। গ্রেগর সামসা এবং আংকেল স্যামুয়েল মনে হয় বিপরীত তরিকার আরশোলা। সেটা তাদের অবস্থানিক কারণে কিনা বলা মুশকিল। গ্রেগর সামসার মনে পড়েছে, কিভি রাসে তাদের দেখা। ফ্রানৎস কাফকার মানসপুত্র সে। সে জেনেছে, কাফকার দেশ ও কিভি রাস একই অঞ্চলে। আর আংকেল স্যামুয়েল স্যামুয়েল জন্মেছে অতলান্তিকের পশ্চিম পাড়ের দেশে। কলম্বাসের ভেলায় চড়ে সে অতলান্তিক পাড়ি দিয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে কিভি রাসে বণিকের মানদণ্ড হাতে হাজির হয়েছে স্যামের দেশ। তখন থেকে স্যামুয়েলও আছে কিভি রাসে। তার নয় বটে, তবে তার রাষ্ট্রের মানদণ্ড সেখানে রাজদণ্ড হয়ে উঠতে চাইছে। গ্রেগর সামসা পালিয়েছিল তার দেশ থেকে উল্টে থেকেই ইদানীং আবার সেখানে চাকরি-বাকরির সমস্যা দেখা দিয়েছে। আর শমুয়েল (স্যামুয়েলের হিব্রু নাম) নৌবহরে চেপে এসেছিল রাসে। উল্টে যাওয়া অবস্থাতেই তারা নিষ্কৃত হয়েছে কিভি রাসের গ্রিন গ্রাসল্যান্ডে। জায়গাটা হয় দনবাসে অথবা দনবাসের কাছে কোথাও।
অদ্ভুত কারণে তাদের গ্রে ম্যাটারে অদ্ভুত পরিবর্তন এসেছে। তারা এখন মানুষের কথা বুঝতে পারে, ইঙ্গিতও ধরতে পারে। এটা বোধহয় তাদের আরশোলা-জীবনের অনন্য অর্জন। কে বলতে পারে! হয়তো তা তাদের ঈশ্বরের মহিমা। উল্টে যাওয়া আরশোলারা এখন বুঝতে পারে, রাসল্যান্ডে একটা যুদ্ধ চলছে। ঘাসের আপাত অদৃশ্য কন্দরে শুয়ে তারা মানুষের যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা দেখে। মর্ত্যলোকে মানুষ নামের প্রজাতিটির স্থিতিকাল তাদের চেয়ে বেশি নয়। আরশোলারা এই পৃথিবীতে টিকে আছে প্রায় তিরিশ কোটি বছর। ডাইনোসরেরও আগে থেকে। মস্তক ছাড়াই তারা অন্তত এক সপ্তাহ বেঁচে থাকতে সক্ষম। তাদের হালের বিবর্তনটা আচানকই বটে। তারা মানুষের এনক্রিপ্টেড ভাষাও বুঝতে পারে। একদিন ঈশ্বরের দয়ায় তারা হয়তো উল্টে যাওয়া থেকে অনায়াসে সোজাও হতে পারবে। এ জন্য, বিশেষ করে গ্রেগর সামসা, ভাবছে বেড়ালের কাছে তারা পড়ন্তকালে ভাসমান অবস্থায় উল্টে যাওয়া বিষয়ক বিশেষ প্রশিক্ষণ নেবে। দেন নো বডি উইল বি এবল টু কিপ দেম আপসাইড ডাউন।
তেলাপোকা আংকেল স্যাম কী ভাবছে তার জানা নেই, জানার প্রয়োজনও বোধ করে না সে। উল্টো দশা থেকে সোজা হওয়া যাবে কিনা সেটাই তার মূল ভাবনা। এসব কথা ভাবছে র্যান্ড করপোরেশন, পেন্টাগনের থিংকট্যাংক এ কথা ভাবতে গেল কেন? বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য আছে নাকি! নাকি রাষ্ট্রব্যবস্থায় গভীর কোনো চিন্তনবিভ্রাটের প্রতিফলন এটা।
রাষ্ট্রের থিংকট্যাংক যখন রাষ্ট্রচিন্তার সঙ্গে বিরোধপূর্ণ ভাবনার প্রতিফলন ঘটায় তখন রাষ্ট্রের বনেদি অংশে অর্থাৎ নীতিনির্ধারকদের মধ্যে চিড় ধরেছে বলা চলে। যুক্তরাষ্ট্র তো এই যুদ্ধেরই পক্ষে। এত সাধ করে তারা স্যাংকশন জারি করল, তাও আবার কয়েক দফায় তার কি কোনো ফল তারা পাচ্ছে না? র্যান্ড করপোরেশনের ইঙ্গিত তো সেদিকেই। নিষেধাজ্ঞায় উল্টো ফল হলো তাহলে? সে সিদ্ধান্তে পৌঁছাল: শুধু তার মতো আরশোলারাই উল্টে যায় না, কখনো কখনো গোটা রাষ্ট্রটাই উল্টে যায়। শুধু সে-ই বোকা নয়, কখনো রাষ্ট্রের চালকচামুণ্ডারাও বোকা হয়। গ্রেগর সামসা এ ব্যাপারে আংকেল স্যামের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ খুঁজে পেল না। কারণ আংকেল স্যাম যুক্তরাষ্ট্রের আরশোলা। কিন্তু এমন ভাবনা কি ঠিক! পিতার অর্থাৎ পালয়িতার চরিত্রদোষে পুত্রকে দায়ী করা চলে না। তবু গ্রেগর সামসা সাবধান থাকতে চাইছে। সম্ভবত এটা কাফকায়েস্ক কিউরিওসিটি।
গ্রেগর সামসা পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনার মতো গ্রাসল্যান্ডে পড়ে থাকা র্যান্ড করপোরেশনের রিপোর্টটির বিষয়ে একটি পত্রিকার বিশ্লেষণী প্রতিবেদন পড়তে থাকল। ইদানীং তাদের পাঠের অভ্যাসও হয়েছে। নাকি কেবলই তার হয়েছে। সে পড়তে থাকল
RAND CorporationÕs latest report on Ukraine [is] so significant, [ecause it] is not the quality of the analysis, but the fact that the nationÕs most prestigious national security think-tank has taken an opposite position on the war than the Washington[`s] political class and their globalist allies. This is a very big deal. .. Keep in mind, wars donÕt end because the public opposes them. That is a myth. Wars end when a critical split emerges between elites that eventually lead(s) to a change in policy. The RAND CorporationÕs new report, ÔAvoiding a long war: US policy and the trajectory of the Russia-Ukraine conflictÕ, represents just such a split. It indicates that powerful elites have broken with the majority opinion because they think the current policy is hurting the United States. (Ukraine Is Sinking. Are Western Elites Bailing Out?/ Mike Whitney; February 1, 2023. (https://www.unz.com)
গ্রেগর সামসা ভাবছে, মানুষকে পাঠ করার, মানুষের মন্তব্য বোঝার, মানুষের এনক্রিপ্টেড ল্যাংগুয়েজ বোঝার সামর্থ্য কি শুধুই তার হয়েছে? আর কোনো আরশোলার হয়নি? বিবর্তন কি ব্যক্তিগত? নাকি সমষ্টিগত! আংকেল স্যামুয়েল স্যামুয়েলের সঙ্গে যেহেতু তার কথা হচ্ছে না তাই সে বুঝতে পারছে না এ পরিবর্তনটা কেবল তার মধ্যেই হয়েছে কি না। তৃতীয় কোনো আরশোলার দেখা পেলে এ বিভ্রাট ভঞ্জন করা হয়তো সম্ভব হতো।
ইউক্রেন পরিস্থিতি বিষয়ে গ্রেগর সামসা আরও কিছু জ্ঞান অর্জন করেছে। এর মধ্যেই একদিন প্রায় আধমরা অবস্থায় আরেক আরশোলা এসে হাজির। যে ট্রেঞ্চে কিঞ্চিৎ দূরে আংকেল স্যামের সঙ্গে চিৎ হয়ে শুয়েছিল সে সেখানে লাফিয়ে পড়তে গিয়ে উল্টো হয়ে গেছে আগন্তুক আরশোলা। কী যে জ্বালা সব চিৎ হওয়া আরশোলা এই ট্রেঞ্চে এসে উপুড় হয়ে যাচ্ছে। নাকি তা তাদের ঈশ^রের কেরামতি। তারা দেখেছে, মানুষের দল এ ধরনের ঐশ^রিক কেরামতিতে খুব আস্থাশীল। হয়তো তাতে কিছু ফল ফলে। তারাও নাহয় ঈশ্বরে একটু আস্থাশীল হবে, অসুবিধা কী!
নবাগত আরশোলারও তাদের মতোই চৈতন্যোদয় হয়েছে। সে বলছে, এই এলাকার অবস্থা খুব খারাপ বলেই তার দেমাকে এসেছে। ক্রিস হেজের ইউক্রাইন দ্য ওয়ার দ্যাট ওয়েন্ট রং নামের একটা লেখা তার নজরে পড়েছে। তাতে বলা হয়েছে
Empires in terminal decline leap from one military fiasco to the next. The war in Ukraine, another bungled attempt to reassert U.S. global hegemony, fits this pattern.
যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে আক্রমণাত্মক অস্ত্র ও রসদ জোগাচ্ছে। বিমানবিধ্বংসী স্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্র, ট্যাংকবিধ্বংসী জ্যাভেলিন ক্ষেপণাস্ত্র, এম৭৭৭ টাউড হাউটজার, গ্র্যাড রকেট, এম১৪২ মাল্টিপল রকেট লঞ্চার, হাইমারস ক্ষেপণাস্ত্র, টাউ ক্ষেপণাস্ত্র, প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, নাসাম ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, আর্মারড পারসোনেল ক্যারিয়ার প্রভৃতি। এম১ আব্রামস ট্যাংকও দিচ্ছে। এসবের সঙ্গে জার্মান লেপার্ড ২এ৬ ট্যাংক, ব্রিটিশ চ্যালেঞ্জার টু ট্যাংক আসছে। পোল্যান্ড ও অন্যান্য ন্যাটো-সদস্য দেশ থেকেও ট্যাংক আসছে। বর্মভেদী ডিপ্লিটেড ইউরেনিয়ামও দেওয়া হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে এফ-১৫ ও এফ-১৬ জঙ্গিবিমান। ২৮টি দেশ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সরবরাহ করতে যাচ্ছে। আগেও প্রচুর অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে, যার সিংহভাগ রাশিয়ার পাল্টা হামলায় ধূলিসাৎ হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বাকি সবই ইউরোপের দেশ।
যুদ্ধের ফলে ইউক্রেনের অর্থনীতি ২০২২ সালে ৩৫ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। ৬০ শতাংশ ইউক্রেনি দিনে সাড়ে ৫ ডলারও খরচ করতে পারছে না। ৯০ লাখ ইউক্রেনির বিদ্যুৎ নেই। তাপমাত্রা এখন শূন্যের নিচে।
হেজিমনির অবসান ঘটতে যাচ্ছে। পেলিপ্পোনেশিয়ান যুদ্ধে এথেন্সের হেজিমনির অবসান হয়েছিল। রোম সাম্রাজ্যের ক্ষয় যখন চূড়ান্তে তখন প্রিটোরিয়ান গার্ডরা এম্পারারশিপকে নিলামে তুলেছিল, যে বেশি অর্থ দিতে পারবে তাকেই এম্পারারশিপ দেওয়া হবে। সামরিক বলদামিতে প্রথম বিশ^যুদ্ধে হত-শক্তি ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সুয়েজ খালের জাতীয়করণ উপলক্ষে মিসরে হামলা চালাতে গিয়ে ১৯৫৬ সালে সব হারাল এবং যুক্তরাষ্ট্রের চামচায় পরিণত হলো। ২০২২ সাল মার্কিন হেজিমনির অস্তাচলের বছর।
While rising empires are often judicious, even rational in their application of armed force for conquest and control of overseas dominions, fading empires are inclined to ill-considered displays of power, dreaming of bold military masterstrokes that would somehwo recoup lost prestige and power,” (https://consortiumnews.com/)
মার্কিন হেজিমনিরও এখন সেই দশা। অস্তগামী সূর্য। অস্তমান বিবস্বান। কিন্তু সাম্রাজ্য পুরোপুরি অস্তমিত না হলে এমন জ্ঞানেরও উদয় হয় না। জয় তেলাচোরা বাণেশ^র। জয় সহস্রপাদ। তিন আরশোলাই কিঞ্চিৎ বিশ্রামের জন্য চিতাবস্থা থেকে হঠাৎ উপুড়াবস্থায় ধ্যানস্থ হলো। বিশ^ব্যবস্থাটা কি সত্যি বদলে যাচ্ছে!
লেখকঃ সাংবাদিক
এ-কালের আধুনিক ভোজনরসিক মানুষজন ভোজনের পর মিষ্টিজাতীয় উপ-খাবার যেমন : মিষ্টান্ন, মিষ্টি, ফলমূল, আইসক্রিম ইত্যাদি খেয়ে থাকেন। এটিকে তারা বাহারি এক নাম দিয়েছে, ডেজার্ট। এই ডেজার্ট মানে কিন্তু ‘মরুভূমি’র ডেজার্ট না। মরুভূমির ডেজার্টে ‘এস’ থাকে একটা, আর ভোজনের ডেজার্টে থাকে ডাবল ‘এস’। ডাবল এস মানে ডাবল মজা। ভোজনরসিক মানুষজন খাওয়ার পরও মনে করেন যে তাদের খাওয়া শেষ হয়নি। তাই তারা খাওয়ার পর সমাপনী খাওয়ারও আয়োজন করেন।
ভোগবাদ এমন এক অভিজ্ঞতা যে, একসময় সবকিছুই একঘেয়ে আর পানসে হয়ে আসে। তখন মানুষ বৈচিত্র্য খোঁজে। রঙ্গরস খোঁজে। এমন পরিস্থিতিতেই আবির্ভাব ঘটে ভাঁড়ের। রাজার দরবারে যেমন গোপালরা আসেন, তেমনি কালের বিবর্তনে সমাজ বা রাষ্ট্রেও নয়া নয়া ভাঁড়ের আগমন ঘটে। সমাজ জীবন তখন রসে টইটম্বুর হয়ে ওঠে।
হিরো আলমও আমাদের যাপিত একঘেয়ে সোশ্যাল মিডিয়াকেন্দ্রিক জীবনে এক অপার আনন্দের পসরা নিয়ে হাজির হয়েছেন। ভোগবাদী সমাজের সামনে ডেজার্ট হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তাকে ছাড়া আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ার দৈনন্দিন জীবন অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে! প্রতিদিন দেশের সর্বোচ্চ মহল থেকে ফুটপাতের চায়ের আড্ডায় নিয়মিত আলোচনায় থাকছেন। কর্মহীন এবং একই সঙ্গে বিশ্লেষক এই জাতির সামনে দারুণ এক আলোচ্য বিষয় হিসেবে উপস্থিত এখন হিরো আলম।
এ-কালের মানুষজন রঙ্গরসিকতা ভুলে কাঠখোট্টা হয়ে গেছে। কারও ভেতরে কোনো রসবোধ নেই। রসবোধ থাকবে কী করে? রসবোধ আসে জ্ঞান থেকে। জ্ঞান আজ নির্বাসনে। বইয়ে জ্ঞান নেই। সমাজে জ্ঞান নেই। শিক্ষিত এবং শিক্ষার হার বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু জ্ঞানী মানুষের বড় আকাল। আর জ্ঞানী মানুষ নেই বলে রসেরও খরা চলছে এখন। মানুষের ভেতরে রস নেই। মনীষীরা বলে গেছেন, রসবোধহীন মানুষ প্রকারান্তরে অমানুষ বা নামানুষও। যে কারণে হিরো আলমের মতো ভাঁড়দের আবির্ভাব ঘটছে। কমেডি আর ভাঁড়ামো যে এক নয়, সেটিও এ-কালের মানুষ তফাৎ করতে পারছেন না। যেমনটা তফাৎ করতে পারছেন না জনপ্রিয় আর আলোচিত ব্যক্তির মধ্যকার ফারাক।
রসসন্ধানী মানুষজন সারাদিনমান কঠিন জীবন কাটানোর পর কিঞ্চিৎ সময়ের জন্য হিরো আলমে মজছেন। ডেজার্ট উপভোগ করছেন। ঘুষ খাচ্ছেন, দুর্নীতি করছেন, চুরি করছেন, ডাকাতি করছেন, পরস্পরকে ঠকাচ্ছেন এবং এরপর খাওয়া-খাওয়ি শেষে তাদের ডেজার্ট খাওয়ার দরকার পড়ছে। তখনই সোশ্যাল মিডিয়ার গতর বেয়ে তাদের পাতে চলে আসছেন হিরো আলম। দুই ভাগে ভাগ হয়ে জাতি নেমে পড়ছে বিতর্কে।
কথা হলো, হিরো আলমের অভিনয় হয় না, তাহলে এ দেশে কার অভিনয়টা হয়? আমরা এর উত্তর দিতে পারি না। কারণ, আমাদের এখানে সেই শূন্যতা বড় থেকে বড় হচ্ছে। হিরো আলমের গান হয় না। তাহলে কার গানটা হয়? আমরা এ প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারি না। এই অঙ্গনেও বড় শূন্যতা আজ গ্রাস করছে।
এই যে পাল্টা প্রশ্ন, সেটির উত্তর বের করতে পারলে, প্রকৃত হিরোরা সমাজে আবারও আলো ছড়াতে পারত। তখন সামাজিক ডেজার্টের আর দরকার পড়ত না। এটি ঠিক যে পৃথিবীর সব দেশেই এ রকম ডেজার্টরা আছেন। তবে সেসব দেশে আসল হিরোরাও আছেন। কিন্তু আমাদের দেশে হিরো আলমরাই সব সেক্টর কবজা করে আছেন। রাজনীতির হিরো আলম, শিক্ষাঙ্গনের হিরো আলম, ঢালিউড হিরো আলম, গণমাধ্যমের হিরো আলমএভাবে প্রত্যেকটি অঙ্গনেই এক বা একাধিক হিরো আলম আছেন।
মূলত হিরো আলমরা যা করছেন তা জেনেবুঝেই করছেন এবং চালিয়েও যাচ্ছেন। তারা বিক্রি হতে চান। গণমাধ্যমও তাদের বিক্রি করতে চায়। দিনকে দিন এভাবে হিরো আলমরা হটকেক হয়ে উঠছেন, আমাদের মিডিয়া তাদের হটকেক বানিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করছে। ফলে তিন পক্ষেরই লাভ হচ্ছে। মিডিয়া তার ভিউ পাচ্ছে, হিরো আলমরা তাদের হিরোগিরি দেখাচ্ছেন এবং রসাকাক্সক্ষী সমাজ তাদের ভোজন শেষের ডেজার্ট পাচ্ছেন। কিন্তু এর বাইরেও বিশাল একটি জনগোষ্ঠী আছে, যারা সত্যিকারের হিরোদের সমাজের সর্বাগ্রে দেখতে চায়। ভাঁড়রূপী ডেজার্ট চায় না।
ফলে এভাবে সমাজেরও ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে সবার অগোচরে। আলোচিত হওয়াটাকেই এই প্রজন্ম বড় করে দেখছে। জনপ্রিয় হওয়া বলে যে একটি কথা আছে, সেটি ভুলেই যাচ্ছে এ প্রজন্ম। মিডিয়াও ভুল করছে বোধ করি। জনপ্রিয় আর আলোচিত দুটি ভিন্ন বিষয়কে গুলিয়ে ফেলছে তারা। এভাবে জনরুচিও নষ্ট করছে মিডিয়া। ‘টু এডুকেট’ মানে সমাজকে শেখানোর যে কাজ মিডিয়ার, সেটি ভুলে পর্যবসিত হচ্ছে।
এ কারণেই এটি বেশি করে আমাদের মিডিয়ার ব্যর্থতা। আমাদের চারপাশের হিরোদের তুলে ধরতে না পারার এই ব্যর্থতা মিডিয়া এড়াতে পারে না। মিডিয়া নিজের পসারের জন্য হিরো আলমদের ব্যবহার করছে। হিরো আলমদের মধ্যকার জোকারিকে দিনের পর দিন অবলীলায় তুলে ধরে চলেছে। একজন মানুষ নাছোড়বান্দা, এটি অবশ্যই একটি ভালো গুণ; কিন্তু এই গুণটি ছাড়া আর কোনো গুণ যাদের নেই তাদেরই দিনের পর দিন অনুসরণীয় করে তুলছে আমাদের মিডিয়া। তরুণরা এখান থেকে কী শিখবে? তারা তো এ কারণেই ভাইরাল বা আলোচিত হওয়ার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।
গণতান্ত্রিক সমাজে যে যার মতো নিজের প্রচার করবে, তাতে দোষের কিছু নেই। হিরো আলমদেরও আত্মপ্রচারে কোনো দোষ নেই। কিন্তু ভিউয়ের জন্য হিরো আলমদের প্রচার করে ফায়দা লোটা গণমাধ্যমের অসাধুতা বা ব্যর্থতারই নামান্তর। তারা আসল হিরোদের খুঁজে বের করতে বা তুলে ধরার ব্যর্থতা ঢাকতেই হিরো আলমদের উচ্চে তুলে ধরছে। একটি সুশিক্ষাহীন সমাজ যে দিনের পর দিন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হয়ে উঠছে, এক হিরো আলমকে দিয়েই সেটি সহজেই প্রমাণ করা যাচ্ছে এখন।
লেখক: সাংবাদিক
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়ে ওঠে, জীবন-যৌবন উত্তাপের শুদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ। প্রকাশ্য কথা ছিল শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতি। ভদ্রতা-বিনয়, শিক্ষা-দীক্ষা, কর্মনিষ্ঠা- দেশপ্রেম ও সম্প্রীতির বন্ধনে যূথবদ্ধ হয়েছিলেন তারা। অথচ, কী দুর্ভাগ্যের বিষয় প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছরের মাথায় সেই ছাত্রলীগ এখন নানামুখী বিতর্ক সৃষ্টি করছে। তাদের বর্তমান কর্মকা-, কোনোভাবেই ‘রাজনৈতিক’ হিসেবে আখ্যা দেওয়ার সুযোগ নেই। ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনের এমন রাজনৈতিক স্খলন, রাজনীতিসচেতন সবাইকে ব্যথিত করে, আতঙ্কিত করে, বিস্মিত করে।
গতকাল দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত ‘নির্যাতন করে ভিডিও ভাইরালের হুমকি ছাত্রলীগ নেত্রীর’ শিরোনামের সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, ৭ ফেব্রুয়ারি নির্যাতনের শিকার ছাত্রী, ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের দেশরতœ শেখ হাসিনা হলের একটি কক্ষে অতিথি হিসেবে অবস্থান করেন। পরে গত ১২ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে হলের জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাজে আচরণের অভিযোগ করেন একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাবাসসুম ও ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরা। এরপর সন্ধ্যায় তাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার দাবি জানান তারা। এ সময় হল প্রভোস্ট ও প্রোক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতে বিষয়টির মীমাংসা করা হয়। পরে রাতেই নবীন ওই শিক্ষার্থীকে ডেকে নেন ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরা ও তাবাসসুমসহ কয়েকজন। এ সময় তাকে বিভিন্ন হুমকি দেওয়া হয়। তাদের পা ধরে ক্ষমা চাইতে গেলে লাথি মারেন তারা। এ ছাড়া জোর করে তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন এবং নির্যাতনের বিষয়ে কাউকে কিছু বললে ওই ভিডিও ছড়িয়ে (ভাইরাল) দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এ ছাড়াও নবীন এ শিক্ষার্থীকে দিয়ে ময়লা গ্লাস চেটে পরিষ্কার করানো হয়। এমন পরিস্থিতিতে ভয় পেয়ে পরদিন সোমবার সকালেই হল ছেড়ে বাসায় চলে যান। পরদিন মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে এসে নির্যাতনের ঘটনা জানিয়ে বিচার চেয়ে প্রোক্টর, ছাত্রউপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট হল প্রভোস্টের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় অধ্যাপক ড. আহসান উল আম্বিয়াকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শেখ হাসিনা হল প্রশাসন।
প্রকাশিত সংবাদে আরও জানা যায়, কিছুদিন আগেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) চার শিক্ষার্থীকে কলেজ ছাত্রাবাসে আটকে রেখে মারধরের অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। যাদের মধ্যে গুরুতর দুজনকে নিতে হয় আইসিইউতে। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই এবার ইবিতে ছাত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠল।
এইভাবে ছাত্রলীগ কর্তৃক একের পর এক নির্যাতনের ঘটনা, ছাত্রসমাজে কী বার্তা দেয়? বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন, গতানুগতিক ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কী আসবে সেই তদন্তে? যারা অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হবেন, তাদের কোনো বিচার হবে! সত্যি কথা বলতে কী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আদৌ বিচার করার ‘ক্ষমতা’ রাখে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে? পারবেন তারা, দায়ী ছাত্রদের কোনো ধরনের শাস্তি দিতে! ছাত্রলীগের এত বেপরোয়া আচরণের, নেপথ্যে কারা আছেন আমরা জানি না। তবে এটা সবাই জানে, কোনোদিন এই ধরনের ঘটনার বিচার হয়নি। যদি কঠোর কোনো দৃষ্টান্ত রাখতে পারতেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা, তাহলে একের পর এক এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতো না।
এমনিতেই বর্তমানে বিভিন্ন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। সরকার পরিচালনায় যারা আছেন, তাদেরও যে বিষয়গুলো ভয়ংকর বিব্রত করে তা নেতাদের বোঝা উচিত। হল কর্তৃপক্ষ কী করবেন না করবেন এই আশায় বসে না থেকে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাদের উচিত হবে, সাংগঠনিকভাবে কঠের ব্যবস্থা নেওয়া। তাদের এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত ভবিষ্যতে যাতে কোনো ছাত্রলীগকর্মী উত্তেজনা, আবেগ বা হিংসার বশবর্তী হয়ে এমন কাজ না করতে পারেন। কোনোভাবেই এই ঘটনাকে ‘বিচ্ছিন্ন’ বলার সুযোগ নেই। মনে রাখা দরকার, চেয়ার পেয়ে ক্ষমতার দম্ভ তারাই দেখান, যাদের নৈতিকতা এবং শিক্ষার ভিত দুর্বল। একইসঙ্গে এই কথাও মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস কোনোভাবেই যেন, ম্লান না হয়। চারপাশে কিন্তু গর্ত খোঁড়া আছে, যে কোনো সময় অঘটন হতে পারে।
বাংলাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক শহীদুল্লা কায়সার ১৯২৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেনীর মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম আবু নাঈম মোহাম্মদ শহীদুল্লা। বাবা মাওলানা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ছিলেন ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ও লেখক জহির রায়হান তার অনুজ। শহীদুল্লা ১৯৪৬ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্সসহ বিএ পাস করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ঢাকায় ফিরে এসে পূর্ব পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক ধারার সব আন্দোলনের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। বামপন্থি রাজনীতির সমর্থক হিসেবে তিনি শ্রমিক-জনতার দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের জন্য সক্রিয় সংগ্রামের ওপর গুরুত্ব দিতেন। ১৯৫১ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য নির্বাচিত হন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে তিনি অত্যন্ত সাহসী ভূমিকা পালন করেন এবং গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় সাড়ে তিন বছর কারাভোগ করেন। এরপর ১৯৫৫ এবং ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসক আবার তাকে গ্রেপ্তার করে এবং প্রায় চার বছর কারাভোগের পর ১৯৬২ সালে তিনি মুক্তি লাভ করেন। ১৯৪৯ সালে ঢাকার সাপ্তাহিক ইত্তেফাকে শহীদুল্লার সাংবাদিক জীবন শুরু হয় এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এখানে কর্মরত ছিলেন। শহীদুল্লা কায়সারের সবচেয়ে জনপ্রিয় উপন্যাস ‘সারেং বউ’ (১৯৬২) ও ‘সংশপ্তক’ (১৯৬৫)। এ ছাড়া ‘কৃষ্ণচূড়া মেঘ’, ‘তিমির বলয়’, ‘দিগন্তে ফুলের আগুন’, সমুদ্র ও তৃষ্ণা, ‘চন্দ্রভানের কন্যা’ তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। ‘রাজবন্দীর রোজনামচা’ ও ‘পেশোয়ার থেকে তাসখন্দ’ তার স্মৃতিকথা ও ভ্রমণবৃত্তান্ত। শহীদুল্লা সাহিত্যকর্মের জন্য আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬২) এবং বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬২) লাভ করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের আগমুহূর্তে ১৪ ডিসেম্বর রাতে ঢাকার বাসভবন থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী রাজাকার-আলবদর গোষ্ঠী। এরপর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ আর নির্বাচনী তাপের মধ্যেই আজ জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এটি। অনেক যোগ-বিয়োগ কষে বাজেট প্রণয়নের শেষ সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী চমক হিসেবে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করতে সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটেছেন। ভর্তুকি নাম দিয়ে বড় অঙ্কের ‘কর ছাড়’ দিয়েছেন। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে রাজস্ব জাল বিছিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে আটকে ফেললেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো প্রস্তাবিত বাজেট সারসংক্ষেপ, ভর্তুকির নামে ‘কর ছাড়’কে বৈশি^ক মন্দা মোকাবিলার ঢাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের পরোক্ষ প্রভাবে বাজারে পণ্যের দাম কমার গতিরোধ করবে বলেও সরকারপ্রধানকে জানিয়েছেন।
তবে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ছোটদের কর পরিশোধে চেপে ধরলেও কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের ঠিকই খুশি করলেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে এমন আশা করা কঠিন।
এনবিআরের সাবেক সদস্য কর-বিশ্লেষক ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ সুবিধা কমানোর চাপ আছে। এ শর্ত না মানলে ঋণের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করা হতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় বড় মাপের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চাপ আছে। বিভিন্নমুখী চাপে সরকার সব পক্ষকে খুশি করতেই আগামীতে কৌশলে কর ছাড় রাখছে ভর্তুকির নাম দিয়ে। অন্যদিকে সাধারণ আয়ের মানুষের ওপর কিন্তু ন্যূনতম কর ধার্য করার কথা শুনছি। অনেক মানুষকে রাজস্বের আওতায় আনার কথাও শুনেছি। এভাবে ছোটদের ওপর ঠিকই কর পরিশোধে চাপ বাড়াল।’
একই মত জানিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বড় মাপের ব্যবসায়ীদের অনেকে সরাসরি রাজনীতি করেন। অনেকে রাজনীতি না করলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেন। এরা সমাজের প্রভাবশালী। বাজেট প্রণয়নকালেই এরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে নিজেদের পক্ষে সুবিধামতো অনেক কিছু আদায় করে নেন। এবারও তাই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে আইএমএফের জেরার মুখে বলার সুযোগ থাকছে যে কর ছাড় ও ভর্তুকি দুই হিসাব এক করেছি।’
সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকে আশায় আছেন এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী হয়তো জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সূত্র কষবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো রক্ষাকবচ রাখলেন না। কৌশলী অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে দেওয়া কথা রেখেছেন। সাধারণ মানুষকে রাজস্ব জালে আটকে ফেলার ছক করেছেন। মূল বাজেটের আকার বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের আয়ের হিসাবও বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এখানে কর খাত থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে চলতিবারের তুলনায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করলেন। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে করবহির্ভূত খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। শেষ সময়ের হিসাবকষে শত সংকটের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করেছেন।
আগামী বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী কর ছাড়সহ ২ লাখ ৮৯ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করবেন। জাতীয় বাজেটে নিয়মিত ভর্তুকি হিসাবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার কথা আছে। বাকিটা প্রত্যক্ষ কর ছাড় দিয়ে ভর্তুকি খাতে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেতনসহ অন্য খাতে ৭৭ হাজার ২১৮ কোটি বা মোট কর ছাড়ের ক্ষুদ্রঋণ খাতে ১২ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি, প্রবাসী আয় খাতে ৯ শতাংশ বা ১১ হাজার ২৮৭ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩৮০ কোটি, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক শিল্প খাতে ৪ শতাংশ বা ৪ হাজার ৬১২ কোটি, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ৩ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতে ২ শতাংশ বা ৩ হাজার ১২০ কোটি, আইটি এবং সফটওয়্যার খাতে ১ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৭৭ কোটি এবং পুঁজিবাজার খাতে ১ শতাংশ বা ৯৬৬ কোটি টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইস মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ যেন পুরনো বোতলে নতুন পানীয়। বড়দেরই বিভিন্ন কৌশলে সুবিধা দেওয়া হলো।’
অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের কৌশল হিসেবে বড় সুবিধা দিলেও ইটিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলে কঠোরতা এনেছেন। ইটিআইএন না নিলে ৪০ ধরনের সেবা এবং রিটার্ন দাখিলের সিøপ না নিলে ৩৮ ধরনের সেবা দেওয়া হবে না। এতদিন ইটিআইএন নিয়েও অনেকে করযোগ্য আয় না থাকলে শুধু রিটার্ন দাখিল করেছে, একটি টাকার কর দিতে হয়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ১ জুলাই থেকে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।
সাধারণ আয়ের অনেক করদাতা বলেছেন, খাবারের খরচ অনেক বেড়েছে। বাসা ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা সবকিছুই এখন বেশি। এর মধ্যে সাধারণ আয়ের ওপর কর পরিশোধে চাপ দেওয়া হলে ভোগান্তি বাড়বে। সাধারণ মানুষকে কর পরিশোধে বাধ্য করলেও সম্পদশালীদের রাজস্ব ফাঁকি কমাতে, বকেয়া আদায়ে এবং অর্থ পাচার রোধে জোরালো কিছু রাখা হয়নি। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতেও পুরনো পথেই হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী অর্থবছর থেকে রিটার্ন জমা দিতে দেরি হলে বেশি হারে জরিমানা দিতে হবে। বাজেটে আইন করে জরিমানার পরিমাণ প্রদেয় করের পরিমাণ দ্বিগুণ ৪ শতাংশ নির্ধারণে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বড়রা সুবিধা দিয়ে রাজস্ব আদায়ে চাপ বাড়ানোয় জীবনযাত্রার অনেক খাতেই খরচ বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কমাতেও বাজেটে রাখা হয়নি কিছু। আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কবে কমবে তা নিয়ে রয়েছে অশ্চিয়তা। তাই গত মাস ছয়েক থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চাল, ডাল, আট, ময়দা, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবারের দাম আপাতত কমছে না। চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও কমবে না। গত (নভেম্বর ২০২২-এপ্রিল ২০২৩) ছয় মাসের সাধারণ মূল্যস্ফীতির গড় হার ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বিশেষ কোনো চাপ নেই, অর্থনৈতিক উন্নয়ন গতিশীল রাখতে এবারের বাজেটে থাকছে ধারাবাহিকতা।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেলে ঘোষিত হতে যাওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে 'গরিববান্ধব' উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আরও বলেন, সবাইকে নিয়ে সবার জন্য বাজেট ঠিক করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তার আকার বড় হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে জাতীয় সংসদ ভবনে যাত্রার প্রাক্কালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাজেট সম্পর্কে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বিকেলে জাতীয় সংসদে সাত লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করবেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অর্জনের লক্ষ্য স্থির করেছে সরকার। সেখানে মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে মোট বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে, এমন আশা করছেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেটে ৫ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেট ঘাটতি হতে পারে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। রবিবার (৪ জুন) থেকে সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হবে।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
দেশের ৬০টি জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে দিনের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া দেশজুড়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ আরও দুই দিন থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, ঢাকা বিভাগের ১৩টি, খুলনার ১০টি, রাজশাহীর আটটি, বরিশালের ছয়, রংপুরের আটটি, সিলেটের চার ও ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলাসহ চট্টগ্রাম, সীতাকুণ্ড, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
আগামী দুই দিনে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে এবং বিদ্যমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।