
এ-কালের আধুনিক ভোজনরসিক মানুষজন ভোজনের পর মিষ্টিজাতীয় উপ-খাবার যেমন : মিষ্টান্ন, মিষ্টি, ফলমূল, আইসক্রিম ইত্যাদি খেয়ে থাকেন। এটিকে তারা বাহারি এক নাম দিয়েছে, ডেজার্ট। এই ডেজার্ট মানে কিন্তু ‘মরুভূমি’র ডেজার্ট না। মরুভূমির ডেজার্টে ‘এস’ থাকে একটা, আর ভোজনের ডেজার্টে থাকে ডাবল ‘এস’। ডাবল এস মানে ডাবল মজা। ভোজনরসিক মানুষজন খাওয়ার পরও মনে করেন যে তাদের খাওয়া শেষ হয়নি। তাই তারা খাওয়ার পর সমাপনী খাওয়ারও আয়োজন করেন।
ভোগবাদ এমন এক অভিজ্ঞতা যে, একসময় সবকিছুই একঘেয়ে আর পানসে হয়ে আসে। তখন মানুষ বৈচিত্র্য খোঁজে। রঙ্গরস খোঁজে। এমন পরিস্থিতিতেই আবির্ভাব ঘটে ভাঁড়ের। রাজার দরবারে যেমন গোপালরা আসেন, তেমনি কালের বিবর্তনে সমাজ বা রাষ্ট্রেও নয়া নয়া ভাঁড়ের আগমন ঘটে। সমাজ জীবন তখন রসে টইটম্বুর হয়ে ওঠে।
হিরো আলমও আমাদের যাপিত একঘেয়ে সোশ্যাল মিডিয়াকেন্দ্রিক জীবনে এক অপার আনন্দের পসরা নিয়ে হাজির হয়েছেন। ভোগবাদী সমাজের সামনে ডেজার্ট হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তাকে ছাড়া আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ার দৈনন্দিন জীবন অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে! প্রতিদিন দেশের সর্বোচ্চ মহল থেকে ফুটপাতের চায়ের আড্ডায় নিয়মিত আলোচনায় থাকছেন। কর্মহীন এবং একই সঙ্গে বিশ্লেষক এই জাতির সামনে দারুণ এক আলোচ্য বিষয় হিসেবে উপস্থিত এখন হিরো আলম।
এ-কালের মানুষজন রঙ্গরসিকতা ভুলে কাঠখোট্টা হয়ে গেছে। কারও ভেতরে কোনো রসবোধ নেই। রসবোধ থাকবে কী করে? রসবোধ আসে জ্ঞান থেকে। জ্ঞান আজ নির্বাসনে। বইয়ে জ্ঞান নেই। সমাজে জ্ঞান নেই। শিক্ষিত এবং শিক্ষার হার বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু জ্ঞানী মানুষের বড় আকাল। আর জ্ঞানী মানুষ নেই বলে রসেরও খরা চলছে এখন। মানুষের ভেতরে রস নেই। মনীষীরা বলে গেছেন, রসবোধহীন মানুষ প্রকারান্তরে অমানুষ বা নামানুষও। যে কারণে হিরো আলমের মতো ভাঁড়দের আবির্ভাব ঘটছে। কমেডি আর ভাঁড়ামো যে এক নয়, সেটিও এ-কালের মানুষ তফাৎ করতে পারছেন না। যেমনটা তফাৎ করতে পারছেন না জনপ্রিয় আর আলোচিত ব্যক্তির মধ্যকার ফারাক।
রসসন্ধানী মানুষজন সারাদিনমান কঠিন জীবন কাটানোর পর কিঞ্চিৎ সময়ের জন্য হিরো আলমে মজছেন। ডেজার্ট উপভোগ করছেন। ঘুষ খাচ্ছেন, দুর্নীতি করছেন, চুরি করছেন, ডাকাতি করছেন, পরস্পরকে ঠকাচ্ছেন এবং এরপর খাওয়া-খাওয়ি শেষে তাদের ডেজার্ট খাওয়ার দরকার পড়ছে। তখনই সোশ্যাল মিডিয়ার গতর বেয়ে তাদের পাতে চলে আসছেন হিরো আলম। দুই ভাগে ভাগ হয়ে জাতি নেমে পড়ছে বিতর্কে।
কথা হলো, হিরো আলমের অভিনয় হয় না, তাহলে এ দেশে কার অভিনয়টা হয়? আমরা এর উত্তর দিতে পারি না। কারণ, আমাদের এখানে সেই শূন্যতা বড় থেকে বড় হচ্ছে। হিরো আলমের গান হয় না। তাহলে কার গানটা হয়? আমরা এ প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারি না। এই অঙ্গনেও বড় শূন্যতা আজ গ্রাস করছে।
এই যে পাল্টা প্রশ্ন, সেটির উত্তর বের করতে পারলে, প্রকৃত হিরোরা সমাজে আবারও আলো ছড়াতে পারত। তখন সামাজিক ডেজার্টের আর দরকার পড়ত না। এটি ঠিক যে পৃথিবীর সব দেশেই এ রকম ডেজার্টরা আছেন। তবে সেসব দেশে আসল হিরোরাও আছেন। কিন্তু আমাদের দেশে হিরো আলমরাই সব সেক্টর কবজা করে আছেন। রাজনীতির হিরো আলম, শিক্ষাঙ্গনের হিরো আলম, ঢালিউড হিরো আলম, গণমাধ্যমের হিরো আলমএভাবে প্রত্যেকটি অঙ্গনেই এক বা একাধিক হিরো আলম আছেন।
মূলত হিরো আলমরা যা করছেন তা জেনেবুঝেই করছেন এবং চালিয়েও যাচ্ছেন। তারা বিক্রি হতে চান। গণমাধ্যমও তাদের বিক্রি করতে চায়। দিনকে দিন এভাবে হিরো আলমরা হটকেক হয়ে উঠছেন, আমাদের মিডিয়া তাদের হটকেক বানিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করছে। ফলে তিন পক্ষেরই লাভ হচ্ছে। মিডিয়া তার ভিউ পাচ্ছে, হিরো আলমরা তাদের হিরোগিরি দেখাচ্ছেন এবং রসাকাক্সক্ষী সমাজ তাদের ভোজন শেষের ডেজার্ট পাচ্ছেন। কিন্তু এর বাইরেও বিশাল একটি জনগোষ্ঠী আছে, যারা সত্যিকারের হিরোদের সমাজের সর্বাগ্রে দেখতে চায়। ভাঁড়রূপী ডেজার্ট চায় না।
ফলে এভাবে সমাজেরও ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে সবার অগোচরে। আলোচিত হওয়াটাকেই এই প্রজন্ম বড় করে দেখছে। জনপ্রিয় হওয়া বলে যে একটি কথা আছে, সেটি ভুলেই যাচ্ছে এ প্রজন্ম। মিডিয়াও ভুল করছে বোধ করি। জনপ্রিয় আর আলোচিত দুটি ভিন্ন বিষয়কে গুলিয়ে ফেলছে তারা। এভাবে জনরুচিও নষ্ট করছে মিডিয়া। ‘টু এডুকেট’ মানে সমাজকে শেখানোর যে কাজ মিডিয়ার, সেটি ভুলে পর্যবসিত হচ্ছে।
এ কারণেই এটি বেশি করে আমাদের মিডিয়ার ব্যর্থতা। আমাদের চারপাশের হিরোদের তুলে ধরতে না পারার এই ব্যর্থতা মিডিয়া এড়াতে পারে না। মিডিয়া নিজের পসারের জন্য হিরো আলমদের ব্যবহার করছে। হিরো আলমদের মধ্যকার জোকারিকে দিনের পর দিন অবলীলায় তুলে ধরে চলেছে। একজন মানুষ নাছোড়বান্দা, এটি অবশ্যই একটি ভালো গুণ; কিন্তু এই গুণটি ছাড়া আর কোনো গুণ যাদের নেই তাদেরই দিনের পর দিন অনুসরণীয় করে তুলছে আমাদের মিডিয়া। তরুণরা এখান থেকে কী শিখবে? তারা তো এ কারণেই ভাইরাল বা আলোচিত হওয়ার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।
গণতান্ত্রিক সমাজে যে যার মতো নিজের প্রচার করবে, তাতে দোষের কিছু নেই। হিরো আলমদেরও আত্মপ্রচারে কোনো দোষ নেই। কিন্তু ভিউয়ের জন্য হিরো আলমদের প্রচার করে ফায়দা লোটা গণমাধ্যমের অসাধুতা বা ব্যর্থতারই নামান্তর। তারা আসল হিরোদের খুঁজে বের করতে বা তুলে ধরার ব্যর্থতা ঢাকতেই হিরো আলমদের উচ্চে তুলে ধরছে। একটি সুশিক্ষাহীন সমাজ যে দিনের পর দিন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হয়ে উঠছে, এক হিরো আলমকে দিয়েই সেটি সহজেই প্রমাণ করা যাচ্ছে এখন।
লেখক: সাংবাদিক
আরশোলা চিৎ হয়ে আছে। তার পাগুলো আকাশের দিকে উঠে আছে। পিঠের ওপর ভর দিয়ে আর শুয়ে থাকা যাচ্ছে না। উফ্। কতদিন শুয়ে আছে সে জানে না। সম্ভবত অনন্তকাল। মনে পড়ে, সে যখন উল্টে গিয়েছিল তখন জাপানে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটেছিল হিরোশিমায় নাকি নাগাসাকিতে বিশেষ মনে পড়ে না। তবে এটুকু মনে আছে, পারমাণবিক বিস্ফোরণের কম্পনেই সে উল্টে গিয়ে চিৎ হয়ে পড়েছিল। তারপর একবার সোজা হয়েছিল। অল্প সময়ের জন্য। এরপর থেকে সে প্রায়ই উল্টে যায় এবং দিনের বেশিরভাগ সময় ওল্টানো অবস্থাতেই কাটে।
উল্টে যাওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়েই আরশোলাদের মধ্যে ঈশ^র-ভাব তৈরি হয়েছিল। সম্প্রতি বিকশিত তাদের মিথে ঈশ^র একজন উল্টে থাকা আরশোলা নাম তেলাচোরা বাণেশ^র। তার আরেক নাম সহস্রপাদ। শোনা যাচ্ছে, তাদের একটা কিতাব রচিত হচ্ছে, নাম ‘তিয়েল’। বিশদ নাম শ্রীমদন তেলাশ্রম বাণপঞ্চম রমণচন্দ্রম মধুমেহন।
তার বাড়ি কোথায় ছিল এখন আর তার মনে নেই। সম্ভবত তেলাপোকার জীবনই তার একমাত্র জীবন ছিল এবং আছে। এখন তার খুব নিঃসঙ্গ লাগে। কালেভদ্রে অন্য কোনো আরশোলার সঙ্গে তার দেখা হয়। তারা তাকে গ্রেগর সামসা বলে ডাকে। সম্প্রতি আরেক আরশোলার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছে। প্রায়ই দেখা হচ্ছে তাদের। কিন্তু কোথায় দেখা হচ্ছে উল্টে থাকায় ঠিকমতো স্মরণ হচ্ছে না। তেলাপোকার স্মৃতি আছে কি না তা তার জানা নেই। বোধহয় বিষয়টি সাম্প্রতিক। আগে কখনো কোনো কিছু মনে রাখার প্রশ্ন তো ছিল না! কোথায় শুয়ে এসব সে ভাবছে তা-ও বলতে পারে না গ্রেগর সামসা। এসব স্মৃতি-টিতি খুব সম্ভবত সাম্প্রতিক। তবে সে জানে তেলাপোকাদের ভূগোলের বিস্তার খুব চওড়া। মনুষ্যবাহনে চড়ে তারা দুনিয়ার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে চলে যেতে পারে। শোনা যাচ্ছে ইদানীং তারা চন্দ্রে-মঙ্গলেও পাড়ি জমাচ্ছে। এখন কক্রোচ গ্লোবালাইজেশনের যুগ। তাদের গসপেল তিয়েলের প্রচারের যুগ এখন। গ্রেগর সামসা ১৯৪৫-৪৬ থেকেই চিৎ হয়ে থাকলেও এবং এখন প্রায়শ হলেও আর কোনো চিৎ হওয়া আরশোলার দেখা পায়নি এতকাল। সম্প্রতি ওইরকম আরেকজনের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হচ্ছে।
আরশোলাদের ঐশী এবং ঈশানী কিতাব রচিত হচ্ছে বলেই সম্ভবত তাদের ভৌগোলিক বিস্তৃতি বেড়েছে এবং বাড়ছে। যে আরশোলাটির সঙ্গে ইদানীং তার দেখা হচ্ছে তার নাম আংকেল স্যামুয়েল স্যামুয়েল ওরফে পেনিসোভিচ। গ্রেগর সামসা এবং আংকেল স্যামুয়েল মনে হয় বিপরীত তরিকার আরশোলা। সেটা তাদের অবস্থানিক কারণে কিনা বলা মুশকিল। গ্রেগর সামসার মনে পড়েছে, কিভি রাসে তাদের দেখা। ফ্রানৎস কাফকার মানসপুত্র সে। সে জেনেছে, কাফকার দেশ ও কিভি রাস একই অঞ্চলে। আর আংকেল স্যামুয়েল স্যামুয়েল জন্মেছে অতলান্তিকের পশ্চিম পাড়ের দেশে। কলম্বাসের ভেলায় চড়ে সে অতলান্তিক পাড়ি দিয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে কিভি রাসে বণিকের মানদণ্ড হাতে হাজির হয়েছে স্যামের দেশ। তখন থেকে স্যামুয়েলও আছে কিভি রাসে। তার নয় বটে, তবে তার রাষ্ট্রের মানদণ্ড সেখানে রাজদণ্ড হয়ে উঠতে চাইছে। গ্রেগর সামসা পালিয়েছিল তার দেশ থেকে উল্টে থেকেই ইদানীং আবার সেখানে চাকরি-বাকরির সমস্যা দেখা দিয়েছে। আর শমুয়েল (স্যামুয়েলের হিব্রু নাম) নৌবহরে চেপে এসেছিল রাসে। উল্টে যাওয়া অবস্থাতেই তারা নিষ্কৃত হয়েছে কিভি রাসের গ্রিন গ্রাসল্যান্ডে। জায়গাটা হয় দনবাসে অথবা দনবাসের কাছে কোথাও।
অদ্ভুত কারণে তাদের গ্রে ম্যাটারে অদ্ভুত পরিবর্তন এসেছে। তারা এখন মানুষের কথা বুঝতে পারে, ইঙ্গিতও ধরতে পারে। এটা বোধহয় তাদের আরশোলা-জীবনের অনন্য অর্জন। কে বলতে পারে! হয়তো তা তাদের ঈশ্বরের মহিমা। উল্টে যাওয়া আরশোলারা এখন বুঝতে পারে, রাসল্যান্ডে একটা যুদ্ধ চলছে। ঘাসের আপাত অদৃশ্য কন্দরে শুয়ে তারা মানুষের যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা দেখে। মর্ত্যলোকে মানুষ নামের প্রজাতিটির স্থিতিকাল তাদের চেয়ে বেশি নয়। আরশোলারা এই পৃথিবীতে টিকে আছে প্রায় তিরিশ কোটি বছর। ডাইনোসরেরও আগে থেকে। মস্তক ছাড়াই তারা অন্তত এক সপ্তাহ বেঁচে থাকতে সক্ষম। তাদের হালের বিবর্তনটা আচানকই বটে। তারা মানুষের এনক্রিপ্টেড ভাষাও বুঝতে পারে। একদিন ঈশ্বরের দয়ায় তারা হয়তো উল্টে যাওয়া থেকে অনায়াসে সোজাও হতে পারবে। এ জন্য, বিশেষ করে গ্রেগর সামসা, ভাবছে বেড়ালের কাছে তারা পড়ন্তকালে ভাসমান অবস্থায় উল্টে যাওয়া বিষয়ক বিশেষ প্রশিক্ষণ নেবে। দেন নো বডি উইল বি এবল টু কিপ দেম আপসাইড ডাউন।
তেলাপোকা আংকেল স্যাম কী ভাবছে তার জানা নেই, জানার প্রয়োজনও বোধ করে না সে। উল্টো দশা থেকে সোজা হওয়া যাবে কিনা সেটাই তার মূল ভাবনা। এসব কথা ভাবছে র্যান্ড করপোরেশন, পেন্টাগনের থিংকট্যাংক এ কথা ভাবতে গেল কেন? বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য আছে নাকি! নাকি রাষ্ট্রব্যবস্থায় গভীর কোনো চিন্তনবিভ্রাটের প্রতিফলন এটা।
রাষ্ট্রের থিংকট্যাংক যখন রাষ্ট্রচিন্তার সঙ্গে বিরোধপূর্ণ ভাবনার প্রতিফলন ঘটায় তখন রাষ্ট্রের বনেদি অংশে অর্থাৎ নীতিনির্ধারকদের মধ্যে চিড় ধরেছে বলা চলে। যুক্তরাষ্ট্র তো এই যুদ্ধেরই পক্ষে। এত সাধ করে তারা স্যাংকশন জারি করল, তাও আবার কয়েক দফায় তার কি কোনো ফল তারা পাচ্ছে না? র্যান্ড করপোরেশনের ইঙ্গিত তো সেদিকেই। নিষেধাজ্ঞায় উল্টো ফল হলো তাহলে? সে সিদ্ধান্তে পৌঁছাল: শুধু তার মতো আরশোলারাই উল্টে যায় না, কখনো কখনো গোটা রাষ্ট্রটাই উল্টে যায়। শুধু সে-ই বোকা নয়, কখনো রাষ্ট্রের চালকচামুণ্ডারাও বোকা হয়। গ্রেগর সামসা এ ব্যাপারে আংকেল স্যামের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ খুঁজে পেল না। কারণ আংকেল স্যাম যুক্তরাষ্ট্রের আরশোলা। কিন্তু এমন ভাবনা কি ঠিক! পিতার অর্থাৎ পালয়িতার চরিত্রদোষে পুত্রকে দায়ী করা চলে না। তবু গ্রেগর সামসা সাবধান থাকতে চাইছে। সম্ভবত এটা কাফকায়েস্ক কিউরিওসিটি।
গ্রেগর সামসা পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনার মতো গ্রাসল্যান্ডে পড়ে থাকা র্যান্ড করপোরেশনের রিপোর্টটির বিষয়ে একটি পত্রিকার বিশ্লেষণী প্রতিবেদন পড়তে থাকল। ইদানীং তাদের পাঠের অভ্যাসও হয়েছে। নাকি কেবলই তার হয়েছে। সে পড়তে থাকল
RAND CorporationÕs latest report on Ukraine [is] so significant, [ecause it] is not the quality of the analysis, but the fact that the nationÕs most prestigious national security think-tank has taken an opposite position on the war than the Washington[`s] political class and their globalist allies. This is a very big deal. .. Keep in mind, wars donÕt end because the public opposes them. That is a myth. Wars end when a critical split emerges between elites that eventually lead(s) to a change in policy. The RAND CorporationÕs new report, ÔAvoiding a long war: US policy and the trajectory of the Russia-Ukraine conflictÕ, represents just such a split. It indicates that powerful elites have broken with the majority opinion because they think the current policy is hurting the United States. (Ukraine Is Sinking. Are Western Elites Bailing Out?/ Mike Whitney; February 1, 2023. (https://www.unz.com)
গ্রেগর সামসা ভাবছে, মানুষকে পাঠ করার, মানুষের মন্তব্য বোঝার, মানুষের এনক্রিপ্টেড ল্যাংগুয়েজ বোঝার সামর্থ্য কি শুধুই তার হয়েছে? আর কোনো আরশোলার হয়নি? বিবর্তন কি ব্যক্তিগত? নাকি সমষ্টিগত! আংকেল স্যামুয়েল স্যামুয়েলের সঙ্গে যেহেতু তার কথা হচ্ছে না তাই সে বুঝতে পারছে না এ পরিবর্তনটা কেবল তার মধ্যেই হয়েছে কি না। তৃতীয় কোনো আরশোলার দেখা পেলে এ বিভ্রাট ভঞ্জন করা হয়তো সম্ভব হতো।
ইউক্রেন পরিস্থিতি বিষয়ে গ্রেগর সামসা আরও কিছু জ্ঞান অর্জন করেছে। এর মধ্যেই একদিন প্রায় আধমরা অবস্থায় আরেক আরশোলা এসে হাজির। যে ট্রেঞ্চে কিঞ্চিৎ দূরে আংকেল স্যামের সঙ্গে চিৎ হয়ে শুয়েছিল সে সেখানে লাফিয়ে পড়তে গিয়ে উল্টো হয়ে গেছে আগন্তুক আরশোলা। কী যে জ্বালা সব চিৎ হওয়া আরশোলা এই ট্রেঞ্চে এসে উপুড় হয়ে যাচ্ছে। নাকি তা তাদের ঈশ^রের কেরামতি। তারা দেখেছে, মানুষের দল এ ধরনের ঐশ^রিক কেরামতিতে খুব আস্থাশীল। হয়তো তাতে কিছু ফল ফলে। তারাও নাহয় ঈশ্বরে একটু আস্থাশীল হবে, অসুবিধা কী!
নবাগত আরশোলারও তাদের মতোই চৈতন্যোদয় হয়েছে। সে বলছে, এই এলাকার অবস্থা খুব খারাপ বলেই তার দেমাকে এসেছে। ক্রিস হেজের ইউক্রাইন দ্য ওয়ার দ্যাট ওয়েন্ট রং নামের একটা লেখা তার নজরে পড়েছে। তাতে বলা হয়েছে
Empires in terminal decline leap from one military fiasco to the next. The war in Ukraine, another bungled attempt to reassert U.S. global hegemony, fits this pattern.
যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে আক্রমণাত্মক অস্ত্র ও রসদ জোগাচ্ছে। বিমানবিধ্বংসী স্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্র, ট্যাংকবিধ্বংসী জ্যাভেলিন ক্ষেপণাস্ত্র, এম৭৭৭ টাউড হাউটজার, গ্র্যাড রকেট, এম১৪২ মাল্টিপল রকেট লঞ্চার, হাইমারস ক্ষেপণাস্ত্র, টাউ ক্ষেপণাস্ত্র, প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, নাসাম ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, আর্মারড পারসোনেল ক্যারিয়ার প্রভৃতি। এম১ আব্রামস ট্যাংকও দিচ্ছে। এসবের সঙ্গে জার্মান লেপার্ড ২এ৬ ট্যাংক, ব্রিটিশ চ্যালেঞ্জার টু ট্যাংক আসছে। পোল্যান্ড ও অন্যান্য ন্যাটো-সদস্য দেশ থেকেও ট্যাংক আসছে। বর্মভেদী ডিপ্লিটেড ইউরেনিয়ামও দেওয়া হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে এফ-১৫ ও এফ-১৬ জঙ্গিবিমান। ২৮টি দেশ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সরবরাহ করতে যাচ্ছে। আগেও প্রচুর অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে, যার সিংহভাগ রাশিয়ার পাল্টা হামলায় ধূলিসাৎ হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বাকি সবই ইউরোপের দেশ।
যুদ্ধের ফলে ইউক্রেনের অর্থনীতি ২০২২ সালে ৩৫ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। ৬০ শতাংশ ইউক্রেনি দিনে সাড়ে ৫ ডলারও খরচ করতে পারছে না। ৯০ লাখ ইউক্রেনির বিদ্যুৎ নেই। তাপমাত্রা এখন শূন্যের নিচে।
হেজিমনির অবসান ঘটতে যাচ্ছে। পেলিপ্পোনেশিয়ান যুদ্ধে এথেন্সের হেজিমনির অবসান হয়েছিল। রোম সাম্রাজ্যের ক্ষয় যখন চূড়ান্তে তখন প্রিটোরিয়ান গার্ডরা এম্পারারশিপকে নিলামে তুলেছিল, যে বেশি অর্থ দিতে পারবে তাকেই এম্পারারশিপ দেওয়া হবে। সামরিক বলদামিতে প্রথম বিশ^যুদ্ধে হত-শক্তি ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সুয়েজ খালের জাতীয়করণ উপলক্ষে মিসরে হামলা চালাতে গিয়ে ১৯৫৬ সালে সব হারাল এবং যুক্তরাষ্ট্রের চামচায় পরিণত হলো। ২০২২ সাল মার্কিন হেজিমনির অস্তাচলের বছর।
While rising empires are often judicious, even rational in their application of armed force for conquest and control of overseas dominions, fading empires are inclined to ill-considered displays of power, dreaming of bold military masterstrokes that would somehwo recoup lost prestige and power,” (https://consortiumnews.com/)
মার্কিন হেজিমনিরও এখন সেই দশা। অস্তগামী সূর্য। অস্তমান বিবস্বান। কিন্তু সাম্রাজ্য পুরোপুরি অস্তমিত না হলে এমন জ্ঞানেরও উদয় হয় না। জয় তেলাচোরা বাণেশ^র। জয় সহস্রপাদ। তিন আরশোলাই কিঞ্চিৎ বিশ্রামের জন্য চিতাবস্থা থেকে হঠাৎ উপুড়াবস্থায় ধ্যানস্থ হলো। বিশ^ব্যবস্থাটা কি সত্যি বদলে যাচ্ছে!
লেখকঃ সাংবাদিক
সাম্প্রতিক সময়ে ভূমিকম্প নিয়ে মানুষের মনে ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমন্তবর্তী এলাকায় ৭.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। ব্যাপক বিধ্বংসী এই ভূমিকম্পের ফলে জানমাল ও অবকাঠামোগত অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তুরস্ক ও সিরিয়ার বিস্তৃত এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। ধ্বংসস্তূপ সরালেই মিলছে মানুষের লাশ। প্রায় ৭০টির বেশি দেশের উদ্ধারকর্মী উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৩৭ হাজার অতিক্রম করেছে এবং উদ্ধার অভিযানের অগ্রগতির সঙ্গে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়বে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। আমাদের দেশে গত ১৫ বছরে ছোট-বড় মিলে ১৪১ বার ভূকম্পন সৃষ্টি হয়েছে। কম্পন দীর্ঘ সময় ধরে হলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষয়টিকে মোটেও হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। ছোট-মাঝারি ভূমিকম্প অনেক সময় বড় ধরনের ভূমিকম্পের লক্ষণ হতে পারে। বড় ভূমিকম্পের শত বছরের মধ্যে আরেকটি বড় ভূমিকম্প হয়। সেদিক থেকে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আমাদের দেশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কতটা প্রস্তুত এই বড় ধরনের ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে।
সাধারণত তিনটি প্রধান কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। প্রথমত, ভূপৃষ্ঠজনিত, দ্বিতীয়ত, আগ্নেয়গিরিজনিত ও তৃতীয়ত, শিলাচ্যুতিজনিত। ভূমিকম্পের মাত্রা মাপা হয় রিখটার স্কেলে। রিখটার স্কেলে এককের সীমা ১ থেকে ১০ পর্যন্ত। রিখটার স্কেলে মাত্রা ৫-এর বেশি হওয়া মানে ভয়াবহ দুর্যোগের আশঙ্কা। মনে রাখতে হবে, ভূমিকম্প এক ডিগ্রি বৃদ্ধি পেলেই এর মাত্রা ১০ থেকে ৩২ গুণ বৃদ্ধি পেতে পারে। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ৫-৫.৯৯ মাঝারি, ৬-৬.৯৯ তীব্র, ৭-৭.৯৯ ভয়াবহ, ৮-এর ওপরে অত্যন্ত ভয়াবহ।
বিশ্বে সবচেয়ে ভূমিকম্পনপ্রবণ এলাকার একটি হলো চিলি। সেখানে ১৯৬০ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী (রিখটার স্কেলে ৯.৫ মাত্রা) ভূমিকম্প হয়। তাই চিলি ধীরে ধীরে তাদের সব বিল্ডিং ভূমিকম্প সহনীয় করে গড়ে তুলেছে। সে কারণে বড় ভূমিকম্পতেও সেখানে ক্ষয়ক্ষতি খুব কম হয়। সম্প্রতি ২০১৫ সালে চিলিতে ৮ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। যাতে মানুষ মারা যান মাত্র ১৩ জন। অথচ হাইতিতে ২০১০ সালে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় তিন লাখ মানুষ মারা যান। এর প্রধান কারণ দুর্বল স্থাপনা। হাইতিতে বলতে গেলে ভূমিকম্প-সহনীয় বিল্ডিং নেই, তাই ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা হয় ব্যাপক।
ভূমিকম্প প্রস্তুতিতে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় দেশ জাপান। ২০১১ সালের তহুকু ভূমিকম্পটি ছিল জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মাত্রার আর বিশ্বে পঞ্চম। অতিদ্রুত ধেয়ে আসা সুনামি ছিল ধ্বংসযজ্ঞের মূল কারণ, যা সব প্রস্তুতি কার্যক্রমকে অকার্যকর করে দিয়েছিল। এটা যদি ঘণ্টাখানেক সময় দিত, নিহতের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে যেত। ফুকুশিমা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের দুর্ঘটনা সমস্যাটিকে আরও জটিল করে তুলেছিল।
২০১৫ সালে নেপালের ভূমিকম্প আর মণিপুরের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের পর বাস্তবতা হচ্ছে, এই বিপর্যয়ের আশঙ্কার মধ্যেই বাংলাদেশিদেরও বসবাস করতে হবে। এখানে শহরাঞ্চলে মূল ক্ষয়ক্ষতি হবে স্থাপনা ধসে। মর্মান্তিক এক পরিণতির আশঙ্কায় ভীতির সঙ্গে বসবাসের চেয়ে কঠিন সময় কঠিনতম দৃঢ়তায় মোকাবিলা করার প্রত্যয় নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে।
বাংলাদেশের স্থাপনাসমূহ নিয়েও এ রকম শঙ্কা রয়েছে। তাই ক্ষয়ক্ষতি যাতে কম হয় সেজন্য সরকার প্রণীত বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করা হলে বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হবে।
ভূমিকম্পের সময় যা করবেন
ভূমিকম্প হচ্ছে বুঝতে পারলে জীবন বাঁচাতে হলে প্রথমে মাথা ঠা-া রাখার চেষ্টা করতে হবে। কোনোভাবেই আতঙ্কিত হওয়া যাবে না।
যদি বাসাবাড়িতে থাকেন তাহলে মাথা বালিশ দিয়ে ঢেকে টেবিল, খাট বা শক্ত কোনো আসবাবপত্রের নিচে আশ্রয় নিন।
মনে রাখবেন, ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির অন্যতম কারণ গ্যাস ও বিদ্যুৎ থেকে লাগা আগুন। তাই দ্রুত রান্নঘরের গ্যাসের চুলা, ঘরের বৈদ্যুতিক সুইচগুলো বন্ধ করতে হবে।
ভূমিকম্পের সময় খালি পায়ে নয়, শক্ত জুতো পরে চলাফেরা করুন, যাতে গ্লাস, মেটাল ইত্যাদির ইনজুরি থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
ব্যাটারিচালিত রেডিও, টর্চলাইট বা ম্যাচ-মোমবাতি, পানি, শুকনো খাবার ও প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম সব সময় ঘরে রাখা প্রয়োজন।
গ্যাস লিকেজ আছে কি না তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ম্যাচ-মোমবাতি জ্বালাবেন না।
হুইলচেয়ারে থাকলে, চাকা লক বা বন্ধ করে হাত দিয়ে মাথা ও ঘাড় ঢেকে রাখুন।
স্কুল, কলেজ বা অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকলে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলব্যাগ মাথায় দিয়ে শক্ত টেবিলের নিচে আশ্রয় নিতে হবে।
ভূমিকম্পের সময় বহুতল ভবন থেকে নামতে হলে সিঁড়ি ব্যবহার করতে হবে। কোনোক্রমেই লিফট ব্যবহার করবেন না। লিফটে থাকলে নিকটবর্তী ফ্লোরে তাড়াতাড়ি নেমে পড়ুন।
বেশি ওপরতলায় থাকলে কম্পন বা ঝাঁকুনি না থামা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, কম্পন বা ঝাঁকুনি থামলে দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে খোলা জায়গায় বা নিরাপদ স্থানে অবস্থান নিন। তাড়াহুড়ো করে লাফ দিয়ে নামা যাবে না।
শিল্প-কারখানা, হাসপাতাল, মার্কেট, সিনেমা হলে থাকলে হুড়োহুড়ি করে বের হওয়ার জন্য দরজার সামনে ভিড় বা ধাক্কাধাক্কি করতে যাবেন না। যেখানে আছেন সেখানেই দুহাতে মাথা ঢেকে বসে থাকুন।
গাড়িতে থাকলে রাস্তা ব্লক না করে একপাশে থেমে যান এবং ভেতরে থাকুন। সেতু, ওভারব্রিজ, ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, গাছ, বৈদ্যুতিক খুঁটি, বিলবোর্ড ইত্যাদি থেকে দূরে থাকতে হবে। পেছন থেকে ছুটে আসা গাড়ি থেকে সতর্ক থাকুন, রিয়ার মিররের ওপর নজর রাখতে হবে।
ঘরের বাইরে যেখানেই থাকুন না কেন বড় গাছ, উঁচু বাড়ি, বৈদ্যুতিক খুঁটি ইত্যাদি থেকে দূরে খোলা স্থানে আশ্রয় নিতে হবে।
সমুদ্র বা নদীর ধারে থাকলে শিগগিরই দ্রুততার সঙ্গে উঁচু জায়গায় অবস্থান নিতে হবে।
একবার কম্পন হওয়ার পর আবারও কম্পন হতে পারে। তাই সুযোগ বুঝে বিল্ডিং থেকে বের হয়ে খালি জায়গায় চলে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
মানুষ মানুষের জন্য। বিপদের সময় আপনার মনুষ্যত্ব যেন আপন মহিমায় আলো ছড়ায়। নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে প্রতিবেশীদের প্রতিও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। বিপদ থেকে রক্ষার পাশাপাশি বিপদে ভয় না পেয়ে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করার চেষ্টা করতে হবে। বড় ধরনের ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি কতটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে তা বলা মুশকিল, তবে প্রস্তুতি থাকলে মোকাবিলা করতে সুবিধা হবে। জাতীয়পর্যায়ে লজিস্টিক্যালি ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের সক্ষমতা হয়তো খুবই অপ্রতুল। কিন্তু ব্যক্তিগত বা দলবদ্ধভাবে ওপরের গাইড লাইনগুলো মেনে চললে প্রাণহানি বা আহত হওয়ার ঘটনা অনেকখানি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
লেখক : কলাম লেখক
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়ে ওঠে, জীবন-যৌবন উত্তাপের শুদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ। প্রকাশ্য কথা ছিল শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতি। ভদ্রতা-বিনয়, শিক্ষা-দীক্ষা, কর্মনিষ্ঠা- দেশপ্রেম ও সম্প্রীতির বন্ধনে যূথবদ্ধ হয়েছিলেন তারা। অথচ, কী দুর্ভাগ্যের বিষয় প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছরের মাথায় সেই ছাত্রলীগ এখন নানামুখী বিতর্ক সৃষ্টি করছে। তাদের বর্তমান কর্মকা-, কোনোভাবেই ‘রাজনৈতিক’ হিসেবে আখ্যা দেওয়ার সুযোগ নেই। ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনের এমন রাজনৈতিক স্খলন, রাজনীতিসচেতন সবাইকে ব্যথিত করে, আতঙ্কিত করে, বিস্মিত করে।
গতকাল দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত ‘নির্যাতন করে ভিডিও ভাইরালের হুমকি ছাত্রলীগ নেত্রীর’ শিরোনামের সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, ৭ ফেব্রুয়ারি নির্যাতনের শিকার ছাত্রী, ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের দেশরতœ শেখ হাসিনা হলের একটি কক্ষে অতিথি হিসেবে অবস্থান করেন। পরে গত ১২ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে হলের জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাজে আচরণের অভিযোগ করেন একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাবাসসুম ও ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরা। এরপর সন্ধ্যায় তাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার দাবি জানান তারা। এ সময় হল প্রভোস্ট ও প্রোক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতে বিষয়টির মীমাংসা করা হয়। পরে রাতেই নবীন ওই শিক্ষার্থীকে ডেকে নেন ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরা ও তাবাসসুমসহ কয়েকজন। এ সময় তাকে বিভিন্ন হুমকি দেওয়া হয়। তাদের পা ধরে ক্ষমা চাইতে গেলে লাথি মারেন তারা। এ ছাড়া জোর করে তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন এবং নির্যাতনের বিষয়ে কাউকে কিছু বললে ওই ভিডিও ছড়িয়ে (ভাইরাল) দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এ ছাড়াও নবীন এ শিক্ষার্থীকে দিয়ে ময়লা গ্লাস চেটে পরিষ্কার করানো হয়। এমন পরিস্থিতিতে ভয় পেয়ে পরদিন সোমবার সকালেই হল ছেড়ে বাসায় চলে যান। পরদিন মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে এসে নির্যাতনের ঘটনা জানিয়ে বিচার চেয়ে প্রোক্টর, ছাত্রউপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট হল প্রভোস্টের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় অধ্যাপক ড. আহসান উল আম্বিয়াকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শেখ হাসিনা হল প্রশাসন।
প্রকাশিত সংবাদে আরও জানা যায়, কিছুদিন আগেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) চার শিক্ষার্থীকে কলেজ ছাত্রাবাসে আটকে রেখে মারধরের অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। যাদের মধ্যে গুরুতর দুজনকে নিতে হয় আইসিইউতে। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই এবার ইবিতে ছাত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠল।
এইভাবে ছাত্রলীগ কর্তৃক একের পর এক নির্যাতনের ঘটনা, ছাত্রসমাজে কী বার্তা দেয়? বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন, গতানুগতিক ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কী আসবে সেই তদন্তে? যারা অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হবেন, তাদের কোনো বিচার হবে! সত্যি কথা বলতে কী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আদৌ বিচার করার ‘ক্ষমতা’ রাখে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে? পারবেন তারা, দায়ী ছাত্রদের কোনো ধরনের শাস্তি দিতে! ছাত্রলীগের এত বেপরোয়া আচরণের, নেপথ্যে কারা আছেন আমরা জানি না। তবে এটা সবাই জানে, কোনোদিন এই ধরনের ঘটনার বিচার হয়নি। যদি কঠোর কোনো দৃষ্টান্ত রাখতে পারতেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা, তাহলে একের পর এক এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতো না।
এমনিতেই বর্তমানে বিভিন্ন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। সরকার পরিচালনায় যারা আছেন, তাদেরও যে বিষয়গুলো ভয়ংকর বিব্রত করে তা নেতাদের বোঝা উচিত। হল কর্তৃপক্ষ কী করবেন না করবেন এই আশায় বসে না থেকে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাদের উচিত হবে, সাংগঠনিকভাবে কঠের ব্যবস্থা নেওয়া। তাদের এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত ভবিষ্যতে যাতে কোনো ছাত্রলীগকর্মী উত্তেজনা, আবেগ বা হিংসার বশবর্তী হয়ে এমন কাজ না করতে পারেন। কোনোভাবেই এই ঘটনাকে ‘বিচ্ছিন্ন’ বলার সুযোগ নেই। মনে রাখা দরকার, চেয়ার পেয়ে ক্ষমতার দম্ভ তারাই দেখান, যাদের নৈতিকতা এবং শিক্ষার ভিত দুর্বল। একইসঙ্গে এই কথাও মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস কোনোভাবেই যেন, ম্লান না হয়। চারপাশে কিন্তু গর্ত খোঁড়া আছে, যে কোনো সময় অঘটন হতে পারে।
বাংলাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক শহীদুল্লা কায়সার ১৯২৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেনীর মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম আবু নাঈম মোহাম্মদ শহীদুল্লা। বাবা মাওলানা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ছিলেন ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ও লেখক জহির রায়হান তার অনুজ। শহীদুল্লা ১৯৪৬ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্সসহ বিএ পাস করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ঢাকায় ফিরে এসে পূর্ব পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক ধারার সব আন্দোলনের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। বামপন্থি রাজনীতির সমর্থক হিসেবে তিনি শ্রমিক-জনতার দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের জন্য সক্রিয় সংগ্রামের ওপর গুরুত্ব দিতেন। ১৯৫১ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য নির্বাচিত হন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে তিনি অত্যন্ত সাহসী ভূমিকা পালন করেন এবং গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় সাড়ে তিন বছর কারাভোগ করেন। এরপর ১৯৫৫ এবং ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসক আবার তাকে গ্রেপ্তার করে এবং প্রায় চার বছর কারাভোগের পর ১৯৬২ সালে তিনি মুক্তি লাভ করেন। ১৯৪৯ সালে ঢাকার সাপ্তাহিক ইত্তেফাকে শহীদুল্লার সাংবাদিক জীবন শুরু হয় এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এখানে কর্মরত ছিলেন। শহীদুল্লা কায়সারের সবচেয়ে জনপ্রিয় উপন্যাস ‘সারেং বউ’ (১৯৬২) ও ‘সংশপ্তক’ (১৯৬৫)। এ ছাড়া ‘কৃষ্ণচূড়া মেঘ’, ‘তিমির বলয়’, ‘দিগন্তে ফুলের আগুন’, সমুদ্র ও তৃষ্ণা, ‘চন্দ্রভানের কন্যা’ তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। ‘রাজবন্দীর রোজনামচা’ ও ‘পেশোয়ার থেকে তাসখন্দ’ তার স্মৃতিকথা ও ভ্রমণবৃত্তান্ত। শহীদুল্লা সাহিত্যকর্মের জন্য আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬২) এবং বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬২) লাভ করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের আগমুহূর্তে ১৪ ডিসেম্বর রাতে ঢাকার বাসভবন থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী রাজাকার-আলবদর গোষ্ঠী। এরপর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আগের ইনিংসের মতোই ব্যর্থ উসমান খাজা। পারেননি ডেভিড ওয়ার্নারও। প্রথম ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ানও ফিরে গেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ে তাই খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই অস্ট্রেলিয়া। তবুও তৃতীয় দিন শেষে এগিয়ে আছে তারা।
ওভালে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ২৯৬ রানে আটকে দেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট হারিয়ে ১২৩ রান করে অসিরা। এগিয়ে আছে ২৯৬ রানে।
দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিংয়ের শুরুটা ভালো করেছে ভারত। অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরেছে তারা।
দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজা ফেরেন ২৪ রানের মধ্যেই। মারনাস লাবুশান ও স্টিভেন স্মিথের ৬২ রানের জুটি ভাঙেন রবীন্দ্র জাদেজা, পরে ট্রাভিস হেডকেও ফেরান এই স্পিনার। টেস্ট ক্যারিয়ারে অষ্টমবারের মতো স্মিথকে আউট করেছেন জাদেজা।
তৃতীয় দিন শেষে মারনাস লাবুশানের সঙ্গে অপরাজিত আছেন ক্যামেরুন গ্রিন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: অস্ট্রেলিয়া: ৪৬৯ ও ৪৪ ওভারে ১২৩/৪ (লাবুশেন ৪১*, স্মিথ ৩৪; জাদেজা ২/২৫, উমেশ ১/২১)ভারত ১ম ইনিংস: ৬৯.৪ ওভারে ২৯৬ (রাহানে ৮৯, শার্দূল ৫১, জাদেজা ৪৮; কামিন্স ৩/৮৩, গ্রিন ২/৪৪, বোল্যান্ড ২/৫৯)।
আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিজের পালন করা সাড়ে ২১ মণ ওজনের গরু উপহার দিতে চেয়েছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার চরকাউনা গ্রামের সাধারণ কৃষক বুলবুল আহমেদ ও তার স্ত্রী ইসরাত জাহান। তাদের এই ভালোবাসার প্রতি সম্মান জানিয়ে উপহারের এই গরু গ্রহণে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
শুক্রবার (৯ জুন) সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী উপহারের গরু গ্রহণে সম্মতি দেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী খুশি হয়েছেন এবং এই বিরল ভালোবাসার জন্য বুলবুল আহমেদ ও তার স্ত্রীকে ধন্যবাদ দেন।
হাসান জাহিদ তুষার জানান, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা এই গরু বুলবুল আহমেদের নিজ বাড়িতেই থাকবে এবং সেখানেই কোরবানি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোরবানির গরুর মাংস স্থানীয় দরিদ্র-অসহায় জনগণের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
গরুটি ক্রস ব্রাহমা প্রজাতির। এতে আনুমানিক ৮০০ কেজি মাংস হতে পারে বলে জানিয়েছেন বুলবুল আহমেদ। বুলবুল জানান, ২০২০ সালে নেত্রকোনা জেলা থেকে আড়াই লাখ টাকায় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়ার জন্য তিনি এই গরু কেনেন। গরু কেনার পর কিশোরগঞ্জের বিখ্যাত পাগলা মসজিদে পাঁচ হাজার টাকা মানতও করছিলেন তিনি যেন তার গরুটি সুস্থ থাকে।
তিনি আরও জানান, তিনি ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে মাঠকর্মী হিসেবে কর্মরত তার স্ত্রী ইসরাত জাহান আওয়ামী লীগ সরকারের একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্প থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য এই গরু কেনেন। তারা গত তিন বছর গরুটির নিবিড় পরিচর্যা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেগ ও ভালবাসা থেকে তারা এই গরু ক্রয় ও লালন পালন করেছেন বলে জানান।
উপহার হিসেবে তার গরুটি গ্রহণ করার সম্মতি দেওয়ায় বুলবুল আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। বুলবুল আহমেদ কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
ষাটের দশকে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের আগুন তরুণদের বুকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠান ক্ষেত্র তৈরি করতে গড়ে তুলেছিলেন ‘নিউক্লিয়াস’। স্বাধীনতার পর তিনি সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের বাঁধভাঙা ঢেউ তুলেছিলেন। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে সবকিছু থেকে দূরে আড়ালে চলে যান। রাজনীতিতে তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল রহস্য। সেই রহস্য নায়ক সিরাজুল আলম খান চলে গেলেন চিররহস্যের দেশে।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এ সংগঠক গতকাল শুক্রবার দুপুর আড়াইটার কিছু পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক।
সিরাজুল আলম খানের ব্যক্তিগত সহকারী রুবেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অসুস্থ অবস্থায় তাকে রাজধানীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে প্রথমে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত ১ জুন নেওয়া হয় আইসিইউতে। এরপর গত বৃহস্পতিবার রাতে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী ছিলেন। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সিরাজুল আলম খান।
১৯৬১ সালে ছাত্রলীগের সহসাধারণ সম্পাদক হন সিরাজুল আলম খান। ১৯৬৩ সালে তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করেন।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান (মান্না), জনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক (নুর)।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তার আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি। শোক জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন সংগঠন।
প্রয়াত সিরাজুল আলম খানের ঘনিষ্ঠ ও নাট্য পরিচালক সাকিল সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, সিরাজুল আলম খানের মরদেহ বিকেলে হাসপাতাল থেকে মোহাম্মদপুরের আল-মারকাজুলে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গোসল শেষে রাতে শমরিতা হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে। আজ শনিবার সকাল ১০টায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে জানাজা শেষে নোয়াখালীতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে পুনরায় জানাজা শেষে বেগমগঞ্জের আলীপুরে মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে রাজনীতির এ নায়ককে।
১৯৪১ সালে জন্ম নেওয়া এ কিংবদন্তি রাজনীতিককে বিগত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত হাসপাতালে যেতে হয়েছে। দেশে এবং বিদেশে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি।
জন্মের কয়েক বছর পর পিতার চাকরির সুবাদে সিরাজুল আলম খুলনায় চলে যান। ১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ১৯৫৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। অনার্স ডিগ্রি অর্জনের পর কনভোকেশন মুভমেন্টে অংশ নেওয়ার কারণে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় ১৯৬২ ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার ‘নিউক্লিয়াস’ গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এ ছাত্রনেতারা। ছয় দফার সমর্থনে জনমত গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন সিরাজুল আলম খান। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন তিনি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। এরপর ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খানের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ প্রতিষ্ঠা হয়। তিনি কখনো নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের পরামর্শ দিয়ে তাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে খ্যাতি পান। অনুসারী সবাই তাকে ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকতেন।
মূলত নব্বইয়ের দশকে সিরাজুল আলম খান কখনো জনসমক্ষে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান। নব্বই পর্যন্ত একাধিকবার জেল-জুলুম খেটেছেন তিনি।
দাদা ভাইয়ের মৃত্যুত গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চেয়ারপারসন অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা, গণফোরাম একাংশে সভাপতি মোস্তফা মোহসিন মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।
বেশ ক'দিন তীব্র তাপদাহের পর গতকাল রাজধানী ঢাকাজুড়ে হয়েছে স্বস্তির বৃষ্টি। এতে তাপমাত্রা এসেছে কমে, পরিচ্ছন্ন হয়েছে পরিবেশ। তবুও আজ সকালে বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষ পাঁচে আছে ঢাকা। বৃষ্টিধোয়া রাজধানী ঢাকা আজ সকাল সাড়ে ৮টায় ১৫৫ স্কোর নিয়ে দূষণের তালিকায় চতুর্থ।
আজ শনিবার (১০ জুন) সকাল সাড়ে ৮টায় বায়ুমানের সূচক (একিউআই) অনুযায়ী ঢাকায় বাতাসের স্কোর ছিল ১৫৫। বায়ুর মান বিচারে এ মাত্রাকে 'অস্বাস্থ্যকর' বলা হয়। একই সময়ে একিউআই স্কোর ১৬৮ নিয়ে প্রথম অবস্থানে আছে পাকিস্তানের লাহোর। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভিয়েতনামের হ্যানয়, স্কোর ১৫৬। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইসরায়েলের তেলআবিব। আর পঞ্চম স্থানে আছে চীনের শেংডু, স্কোর ১৪৯।
একইসময়ে ১৩৮ স্কোর নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহেনেসবার্গ। ১৩২ স্কোর নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। অষ্টম নেপালের কাঠমান্ডু, স্কোর ১২৭। ১১৮ স্কোর নিয়ে নবম স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েট আর ১১৭ স্কোর নিয়ে দশম সৌদি আরবের রিয়াদ।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরের এ তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই স্কোর একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে কি না, তা জানায়।
তথ্যমতে, একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত 'অস্বাস্থ্যকর' হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকলে 'খুব অস্বাস্থ্যকর' এবং স্কোর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকলে 'ঝুঁকিপূর্ণ' বলে বিবেচিত হয়।
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় ১২ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মো. রহুল আমিন (৫৬) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (৯ জুন) শিশুটির বাবা বাদী হয়ে বরুড়া থানায় মামলা করলে তাকে আটক করা হয়।
আটক মো. রহুল আমিন উপজেলার ঝলম ইউনিয়নের বেওলাইন গ্রামের মৃত আব্দুল হকের ছেলে।
ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করে বরুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ফিরোজ হোসেন বলেন, ধর্ষণের শিকার শিশুটির বাবা বাদী হয়ে বরুড়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রুজু করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ধর্ষককে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ মার্চ ভোর আনুমানিক ৬টায় দিকে উপজেলার ঝলম ইউনিয়নের বেওলাইন গ্রামে ১২ বছরের শিশুকে গোয়ালঘরের পেছনে ধর্ষণ করেন মো. রহুল আমিন। এবিষয়ে এতোদিন জানাজানি না হলেও ৪ জুন (রোববার) হঠাৎ শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে পরিবারের লোকজন স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখানে পল্লী চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়ার পর পরীক্ষা করে কর্তবরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসা জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হন। তারপর ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারকে বিষয়টি জানান। ভুক্তভোগী শিশুটি এখন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর (৪১) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত্যুর আগে তিনি চিরকুট লিখে গেছেন। তবে সেখানে কি লেখা আছে তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মহাখালীর আমতলী এলাকার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়ায় মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম। পুলিশের ধারণা, অর্পিতা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে। পরে স্বজনের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করতেন অর্পিতা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মা ফাতেমা কবিরের মৃত্যুর কারণে তিনি দেশে আসেন। এরপর দেশেই ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তার লণ্ডনে ফেরার কথা ছিল। মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া একটি চিরকুটে (সুইসাইড নোট) তিনি আত্মহত্যার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
মেয়ের মৃত্যুতে শোকে বিবহবল লেখক–কলামিস্ট শাহরিয়ার কবির গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। তবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে অর্পিতাকে তাঁর মায়ের কবরে দাফন করা হয়েছে। রবিবার তাঁর কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’