
বাংলাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক শহীদুল্লা কায়সার ১৯২৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেনীর মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম আবু নাঈম মোহাম্মদ শহীদুল্লা। বাবা মাওলানা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ছিলেন ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ও লেখক জহির রায়হান তার অনুজ। শহীদুল্লা ১৯৪৬ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্সসহ বিএ পাস করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ঢাকায় ফিরে এসে পূর্ব পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক ধারার সব আন্দোলনের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। বামপন্থি রাজনীতির সমর্থক হিসেবে তিনি শ্রমিক-জনতার দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের জন্য সক্রিয় সংগ্রামের ওপর গুরুত্ব দিতেন। ১৯৫১ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য নির্বাচিত হন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে তিনি অত্যন্ত সাহসী ভূমিকা পালন করেন এবং গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় সাড়ে তিন বছর কারাভোগ করেন। এরপর ১৯৫৫ এবং ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসক আবার তাকে গ্রেপ্তার করে এবং প্রায় চার বছর কারাভোগের পর ১৯৬২ সালে তিনি মুক্তি লাভ করেন। ১৯৪৯ সালে ঢাকার সাপ্তাহিক ইত্তেফাকে শহীদুল্লার সাংবাদিক জীবন শুরু হয় এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এখানে কর্মরত ছিলেন। শহীদুল্লা কায়সারের সবচেয়ে জনপ্রিয় উপন্যাস ‘সারেং বউ’ (১৯৬২) ও ‘সংশপ্তক’ (১৯৬৫)। এ ছাড়া ‘কৃষ্ণচূড়া মেঘ’, ‘তিমির বলয়’, ‘দিগন্তে ফুলের আগুন’, সমুদ্র ও তৃষ্ণা, ‘চন্দ্রভানের কন্যা’ তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। ‘রাজবন্দীর রোজনামচা’ ও ‘পেশোয়ার থেকে তাসখন্দ’ তার স্মৃতিকথা ও ভ্রমণবৃত্তান্ত। শহীদুল্লা সাহিত্যকর্মের জন্য আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬২) এবং বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬২) লাভ করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের আগমুহূর্তে ১৪ ডিসেম্বর রাতে ঢাকার বাসভবন থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী রাজাকার-আলবদর গোষ্ঠী। এরপর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আরশোলা চিৎ হয়ে আছে। তার পাগুলো আকাশের দিকে উঠে আছে। পিঠের ওপর ভর দিয়ে আর শুয়ে থাকা যাচ্ছে না। উফ্। কতদিন শুয়ে আছে সে জানে না। সম্ভবত অনন্তকাল। মনে পড়ে, সে যখন উল্টে গিয়েছিল তখন জাপানে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটেছিল হিরোশিমায় নাকি নাগাসাকিতে বিশেষ মনে পড়ে না। তবে এটুকু মনে আছে, পারমাণবিক বিস্ফোরণের কম্পনেই সে উল্টে গিয়ে চিৎ হয়ে পড়েছিল। তারপর একবার সোজা হয়েছিল। অল্প সময়ের জন্য। এরপর থেকে সে প্রায়ই উল্টে যায় এবং দিনের বেশিরভাগ সময় ওল্টানো অবস্থাতেই কাটে।
উল্টে যাওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়েই আরশোলাদের মধ্যে ঈশ^র-ভাব তৈরি হয়েছিল। সম্প্রতি বিকশিত তাদের মিথে ঈশ^র একজন উল্টে থাকা আরশোলা নাম তেলাচোরা বাণেশ^র। তার আরেক নাম সহস্রপাদ। শোনা যাচ্ছে, তাদের একটা কিতাব রচিত হচ্ছে, নাম ‘তিয়েল’। বিশদ নাম শ্রীমদন তেলাশ্রম বাণপঞ্চম রমণচন্দ্রম মধুমেহন।
তার বাড়ি কোথায় ছিল এখন আর তার মনে নেই। সম্ভবত তেলাপোকার জীবনই তার একমাত্র জীবন ছিল এবং আছে। এখন তার খুব নিঃসঙ্গ লাগে। কালেভদ্রে অন্য কোনো আরশোলার সঙ্গে তার দেখা হয়। তারা তাকে গ্রেগর সামসা বলে ডাকে। সম্প্রতি আরেক আরশোলার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছে। প্রায়ই দেখা হচ্ছে তাদের। কিন্তু কোথায় দেখা হচ্ছে উল্টে থাকায় ঠিকমতো স্মরণ হচ্ছে না। তেলাপোকার স্মৃতি আছে কি না তা তার জানা নেই। বোধহয় বিষয়টি সাম্প্রতিক। আগে কখনো কোনো কিছু মনে রাখার প্রশ্ন তো ছিল না! কোথায় শুয়ে এসব সে ভাবছে তা-ও বলতে পারে না গ্রেগর সামসা। এসব স্মৃতি-টিতি খুব সম্ভবত সাম্প্রতিক। তবে সে জানে তেলাপোকাদের ভূগোলের বিস্তার খুব চওড়া। মনুষ্যবাহনে চড়ে তারা দুনিয়ার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে চলে যেতে পারে। শোনা যাচ্ছে ইদানীং তারা চন্দ্রে-মঙ্গলেও পাড়ি জমাচ্ছে। এখন কক্রোচ গ্লোবালাইজেশনের যুগ। তাদের গসপেল তিয়েলের প্রচারের যুগ এখন। গ্রেগর সামসা ১৯৪৫-৪৬ থেকেই চিৎ হয়ে থাকলেও এবং এখন প্রায়শ হলেও আর কোনো চিৎ হওয়া আরশোলার দেখা পায়নি এতকাল। সম্প্রতি ওইরকম আরেকজনের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হচ্ছে।
আরশোলাদের ঐশী এবং ঈশানী কিতাব রচিত হচ্ছে বলেই সম্ভবত তাদের ভৌগোলিক বিস্তৃতি বেড়েছে এবং বাড়ছে। যে আরশোলাটির সঙ্গে ইদানীং তার দেখা হচ্ছে তার নাম আংকেল স্যামুয়েল স্যামুয়েল ওরফে পেনিসোভিচ। গ্রেগর সামসা এবং আংকেল স্যামুয়েল মনে হয় বিপরীত তরিকার আরশোলা। সেটা তাদের অবস্থানিক কারণে কিনা বলা মুশকিল। গ্রেগর সামসার মনে পড়েছে, কিভি রাসে তাদের দেখা। ফ্রানৎস কাফকার মানসপুত্র সে। সে জেনেছে, কাফকার দেশ ও কিভি রাস একই অঞ্চলে। আর আংকেল স্যামুয়েল স্যামুয়েল জন্মেছে অতলান্তিকের পশ্চিম পাড়ের দেশে। কলম্বাসের ভেলায় চড়ে সে অতলান্তিক পাড়ি দিয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে কিভি রাসে বণিকের মানদণ্ড হাতে হাজির হয়েছে স্যামের দেশ। তখন থেকে স্যামুয়েলও আছে কিভি রাসে। তার নয় বটে, তবে তার রাষ্ট্রের মানদণ্ড সেখানে রাজদণ্ড হয়ে উঠতে চাইছে। গ্রেগর সামসা পালিয়েছিল তার দেশ থেকে উল্টে থেকেই ইদানীং আবার সেখানে চাকরি-বাকরির সমস্যা দেখা দিয়েছে। আর শমুয়েল (স্যামুয়েলের হিব্রু নাম) নৌবহরে চেপে এসেছিল রাসে। উল্টে যাওয়া অবস্থাতেই তারা নিষ্কৃত হয়েছে কিভি রাসের গ্রিন গ্রাসল্যান্ডে। জায়গাটা হয় দনবাসে অথবা দনবাসের কাছে কোথাও।
অদ্ভুত কারণে তাদের গ্রে ম্যাটারে অদ্ভুত পরিবর্তন এসেছে। তারা এখন মানুষের কথা বুঝতে পারে, ইঙ্গিতও ধরতে পারে। এটা বোধহয় তাদের আরশোলা-জীবনের অনন্য অর্জন। কে বলতে পারে! হয়তো তা তাদের ঈশ্বরের মহিমা। উল্টে যাওয়া আরশোলারা এখন বুঝতে পারে, রাসল্যান্ডে একটা যুদ্ধ চলছে। ঘাসের আপাত অদৃশ্য কন্দরে শুয়ে তারা মানুষের যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা দেখে। মর্ত্যলোকে মানুষ নামের প্রজাতিটির স্থিতিকাল তাদের চেয়ে বেশি নয়। আরশোলারা এই পৃথিবীতে টিকে আছে প্রায় তিরিশ কোটি বছর। ডাইনোসরেরও আগে থেকে। মস্তক ছাড়াই তারা অন্তত এক সপ্তাহ বেঁচে থাকতে সক্ষম। তাদের হালের বিবর্তনটা আচানকই বটে। তারা মানুষের এনক্রিপ্টেড ভাষাও বুঝতে পারে। একদিন ঈশ্বরের দয়ায় তারা হয়তো উল্টে যাওয়া থেকে অনায়াসে সোজাও হতে পারবে। এ জন্য, বিশেষ করে গ্রেগর সামসা, ভাবছে বেড়ালের কাছে তারা পড়ন্তকালে ভাসমান অবস্থায় উল্টে যাওয়া বিষয়ক বিশেষ প্রশিক্ষণ নেবে। দেন নো বডি উইল বি এবল টু কিপ দেম আপসাইড ডাউন।
তেলাপোকা আংকেল স্যাম কী ভাবছে তার জানা নেই, জানার প্রয়োজনও বোধ করে না সে। উল্টো দশা থেকে সোজা হওয়া যাবে কিনা সেটাই তার মূল ভাবনা। এসব কথা ভাবছে র্যান্ড করপোরেশন, পেন্টাগনের থিংকট্যাংক এ কথা ভাবতে গেল কেন? বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য আছে নাকি! নাকি রাষ্ট্রব্যবস্থায় গভীর কোনো চিন্তনবিভ্রাটের প্রতিফলন এটা।
রাষ্ট্রের থিংকট্যাংক যখন রাষ্ট্রচিন্তার সঙ্গে বিরোধপূর্ণ ভাবনার প্রতিফলন ঘটায় তখন রাষ্ট্রের বনেদি অংশে অর্থাৎ নীতিনির্ধারকদের মধ্যে চিড় ধরেছে বলা চলে। যুক্তরাষ্ট্র তো এই যুদ্ধেরই পক্ষে। এত সাধ করে তারা স্যাংকশন জারি করল, তাও আবার কয়েক দফায় তার কি কোনো ফল তারা পাচ্ছে না? র্যান্ড করপোরেশনের ইঙ্গিত তো সেদিকেই। নিষেধাজ্ঞায় উল্টো ফল হলো তাহলে? সে সিদ্ধান্তে পৌঁছাল: শুধু তার মতো আরশোলারাই উল্টে যায় না, কখনো কখনো গোটা রাষ্ট্রটাই উল্টে যায়। শুধু সে-ই বোকা নয়, কখনো রাষ্ট্রের চালকচামুণ্ডারাও বোকা হয়। গ্রেগর সামসা এ ব্যাপারে আংকেল স্যামের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ খুঁজে পেল না। কারণ আংকেল স্যাম যুক্তরাষ্ট্রের আরশোলা। কিন্তু এমন ভাবনা কি ঠিক! পিতার অর্থাৎ পালয়িতার চরিত্রদোষে পুত্রকে দায়ী করা চলে না। তবু গ্রেগর সামসা সাবধান থাকতে চাইছে। সম্ভবত এটা কাফকায়েস্ক কিউরিওসিটি।
গ্রেগর সামসা পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনার মতো গ্রাসল্যান্ডে পড়ে থাকা র্যান্ড করপোরেশনের রিপোর্টটির বিষয়ে একটি পত্রিকার বিশ্লেষণী প্রতিবেদন পড়তে থাকল। ইদানীং তাদের পাঠের অভ্যাসও হয়েছে। নাকি কেবলই তার হয়েছে। সে পড়তে থাকল
RAND CorporationÕs latest report on Ukraine [is] so significant, [ecause it] is not the quality of the analysis, but the fact that the nationÕs most prestigious national security think-tank has taken an opposite position on the war than the Washington[`s] political class and their globalist allies. This is a very big deal. .. Keep in mind, wars donÕt end because the public opposes them. That is a myth. Wars end when a critical split emerges between elites that eventually lead(s) to a change in policy. The RAND CorporationÕs new report, ÔAvoiding a long war: US policy and the trajectory of the Russia-Ukraine conflictÕ, represents just such a split. It indicates that powerful elites have broken with the majority opinion because they think the current policy is hurting the United States. (Ukraine Is Sinking. Are Western Elites Bailing Out?/ Mike Whitney; February 1, 2023. (https://www.unz.com)
গ্রেগর সামসা ভাবছে, মানুষকে পাঠ করার, মানুষের মন্তব্য বোঝার, মানুষের এনক্রিপ্টেড ল্যাংগুয়েজ বোঝার সামর্থ্য কি শুধুই তার হয়েছে? আর কোনো আরশোলার হয়নি? বিবর্তন কি ব্যক্তিগত? নাকি সমষ্টিগত! আংকেল স্যামুয়েল স্যামুয়েলের সঙ্গে যেহেতু তার কথা হচ্ছে না তাই সে বুঝতে পারছে না এ পরিবর্তনটা কেবল তার মধ্যেই হয়েছে কি না। তৃতীয় কোনো আরশোলার দেখা পেলে এ বিভ্রাট ভঞ্জন করা হয়তো সম্ভব হতো।
ইউক্রেন পরিস্থিতি বিষয়ে গ্রেগর সামসা আরও কিছু জ্ঞান অর্জন করেছে। এর মধ্যেই একদিন প্রায় আধমরা অবস্থায় আরেক আরশোলা এসে হাজির। যে ট্রেঞ্চে কিঞ্চিৎ দূরে আংকেল স্যামের সঙ্গে চিৎ হয়ে শুয়েছিল সে সেখানে লাফিয়ে পড়তে গিয়ে উল্টো হয়ে গেছে আগন্তুক আরশোলা। কী যে জ্বালা সব চিৎ হওয়া আরশোলা এই ট্রেঞ্চে এসে উপুড় হয়ে যাচ্ছে। নাকি তা তাদের ঈশ^রের কেরামতি। তারা দেখেছে, মানুষের দল এ ধরনের ঐশ^রিক কেরামতিতে খুব আস্থাশীল। হয়তো তাতে কিছু ফল ফলে। তারাও নাহয় ঈশ্বরে একটু আস্থাশীল হবে, অসুবিধা কী!
নবাগত আরশোলারও তাদের মতোই চৈতন্যোদয় হয়েছে। সে বলছে, এই এলাকার অবস্থা খুব খারাপ বলেই তার দেমাকে এসেছে। ক্রিস হেজের ইউক্রাইন দ্য ওয়ার দ্যাট ওয়েন্ট রং নামের একটা লেখা তার নজরে পড়েছে। তাতে বলা হয়েছে
Empires in terminal decline leap from one military fiasco to the next. The war in Ukraine, another bungled attempt to reassert U.S. global hegemony, fits this pattern.
যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে আক্রমণাত্মক অস্ত্র ও রসদ জোগাচ্ছে। বিমানবিধ্বংসী স্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্র, ট্যাংকবিধ্বংসী জ্যাভেলিন ক্ষেপণাস্ত্র, এম৭৭৭ টাউড হাউটজার, গ্র্যাড রকেট, এম১৪২ মাল্টিপল রকেট লঞ্চার, হাইমারস ক্ষেপণাস্ত্র, টাউ ক্ষেপণাস্ত্র, প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, নাসাম ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, আর্মারড পারসোনেল ক্যারিয়ার প্রভৃতি। এম১ আব্রামস ট্যাংকও দিচ্ছে। এসবের সঙ্গে জার্মান লেপার্ড ২এ৬ ট্যাংক, ব্রিটিশ চ্যালেঞ্জার টু ট্যাংক আসছে। পোল্যান্ড ও অন্যান্য ন্যাটো-সদস্য দেশ থেকেও ট্যাংক আসছে। বর্মভেদী ডিপ্লিটেড ইউরেনিয়ামও দেওয়া হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে এফ-১৫ ও এফ-১৬ জঙ্গিবিমান। ২৮টি দেশ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সরবরাহ করতে যাচ্ছে। আগেও প্রচুর অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে, যার সিংহভাগ রাশিয়ার পাল্টা হামলায় ধূলিসাৎ হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বাকি সবই ইউরোপের দেশ।
যুদ্ধের ফলে ইউক্রেনের অর্থনীতি ২০২২ সালে ৩৫ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। ৬০ শতাংশ ইউক্রেনি দিনে সাড়ে ৫ ডলারও খরচ করতে পারছে না। ৯০ লাখ ইউক্রেনির বিদ্যুৎ নেই। তাপমাত্রা এখন শূন্যের নিচে।
হেজিমনির অবসান ঘটতে যাচ্ছে। পেলিপ্পোনেশিয়ান যুদ্ধে এথেন্সের হেজিমনির অবসান হয়েছিল। রোম সাম্রাজ্যের ক্ষয় যখন চূড়ান্তে তখন প্রিটোরিয়ান গার্ডরা এম্পারারশিপকে নিলামে তুলেছিল, যে বেশি অর্থ দিতে পারবে তাকেই এম্পারারশিপ দেওয়া হবে। সামরিক বলদামিতে প্রথম বিশ^যুদ্ধে হত-শক্তি ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সুয়েজ খালের জাতীয়করণ উপলক্ষে মিসরে হামলা চালাতে গিয়ে ১৯৫৬ সালে সব হারাল এবং যুক্তরাষ্ট্রের চামচায় পরিণত হলো। ২০২২ সাল মার্কিন হেজিমনির অস্তাচলের বছর।
While rising empires are often judicious, even rational in their application of armed force for conquest and control of overseas dominions, fading empires are inclined to ill-considered displays of power, dreaming of bold military masterstrokes that would somehwo recoup lost prestige and power,” (https://consortiumnews.com/)
মার্কিন হেজিমনিরও এখন সেই দশা। অস্তগামী সূর্য। অস্তমান বিবস্বান। কিন্তু সাম্রাজ্য পুরোপুরি অস্তমিত না হলে এমন জ্ঞানেরও উদয় হয় না। জয় তেলাচোরা বাণেশ^র। জয় সহস্রপাদ। তিন আরশোলাই কিঞ্চিৎ বিশ্রামের জন্য চিতাবস্থা থেকে হঠাৎ উপুড়াবস্থায় ধ্যানস্থ হলো। বিশ^ব্যবস্থাটা কি সত্যি বদলে যাচ্ছে!
লেখকঃ সাংবাদিক
সাম্প্রতিক সময়ে ভূমিকম্প নিয়ে মানুষের মনে ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমন্তবর্তী এলাকায় ৭.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। ব্যাপক বিধ্বংসী এই ভূমিকম্পের ফলে জানমাল ও অবকাঠামোগত অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তুরস্ক ও সিরিয়ার বিস্তৃত এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। ধ্বংসস্তূপ সরালেই মিলছে মানুষের লাশ। প্রায় ৭০টির বেশি দেশের উদ্ধারকর্মী উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৩৭ হাজার অতিক্রম করেছে এবং উদ্ধার অভিযানের অগ্রগতির সঙ্গে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়বে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। আমাদের দেশে গত ১৫ বছরে ছোট-বড় মিলে ১৪১ বার ভূকম্পন সৃষ্টি হয়েছে। কম্পন দীর্ঘ সময় ধরে হলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষয়টিকে মোটেও হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। ছোট-মাঝারি ভূমিকম্প অনেক সময় বড় ধরনের ভূমিকম্পের লক্ষণ হতে পারে। বড় ভূমিকম্পের শত বছরের মধ্যে আরেকটি বড় ভূমিকম্প হয়। সেদিক থেকে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আমাদের দেশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কতটা প্রস্তুত এই বড় ধরনের ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে।
সাধারণত তিনটি প্রধান কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। প্রথমত, ভূপৃষ্ঠজনিত, দ্বিতীয়ত, আগ্নেয়গিরিজনিত ও তৃতীয়ত, শিলাচ্যুতিজনিত। ভূমিকম্পের মাত্রা মাপা হয় রিখটার স্কেলে। রিখটার স্কেলে এককের সীমা ১ থেকে ১০ পর্যন্ত। রিখটার স্কেলে মাত্রা ৫-এর বেশি হওয়া মানে ভয়াবহ দুর্যোগের আশঙ্কা। মনে রাখতে হবে, ভূমিকম্প এক ডিগ্রি বৃদ্ধি পেলেই এর মাত্রা ১০ থেকে ৩২ গুণ বৃদ্ধি পেতে পারে। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ৫-৫.৯৯ মাঝারি, ৬-৬.৯৯ তীব্র, ৭-৭.৯৯ ভয়াবহ, ৮-এর ওপরে অত্যন্ত ভয়াবহ।
বিশ্বে সবচেয়ে ভূমিকম্পনপ্রবণ এলাকার একটি হলো চিলি। সেখানে ১৯৬০ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী (রিখটার স্কেলে ৯.৫ মাত্রা) ভূমিকম্প হয়। তাই চিলি ধীরে ধীরে তাদের সব বিল্ডিং ভূমিকম্প সহনীয় করে গড়ে তুলেছে। সে কারণে বড় ভূমিকম্পতেও সেখানে ক্ষয়ক্ষতি খুব কম হয়। সম্প্রতি ২০১৫ সালে চিলিতে ৮ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। যাতে মানুষ মারা যান মাত্র ১৩ জন। অথচ হাইতিতে ২০১০ সালে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় তিন লাখ মানুষ মারা যান। এর প্রধান কারণ দুর্বল স্থাপনা। হাইতিতে বলতে গেলে ভূমিকম্প-সহনীয় বিল্ডিং নেই, তাই ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা হয় ব্যাপক।
ভূমিকম্প প্রস্তুতিতে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় দেশ জাপান। ২০১১ সালের তহুকু ভূমিকম্পটি ছিল জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মাত্রার আর বিশ্বে পঞ্চম। অতিদ্রুত ধেয়ে আসা সুনামি ছিল ধ্বংসযজ্ঞের মূল কারণ, যা সব প্রস্তুতি কার্যক্রমকে অকার্যকর করে দিয়েছিল। এটা যদি ঘণ্টাখানেক সময় দিত, নিহতের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে যেত। ফুকুশিমা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের দুর্ঘটনা সমস্যাটিকে আরও জটিল করে তুলেছিল।
২০১৫ সালে নেপালের ভূমিকম্প আর মণিপুরের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের পর বাস্তবতা হচ্ছে, এই বিপর্যয়ের আশঙ্কার মধ্যেই বাংলাদেশিদেরও বসবাস করতে হবে। এখানে শহরাঞ্চলে মূল ক্ষয়ক্ষতি হবে স্থাপনা ধসে। মর্মান্তিক এক পরিণতির আশঙ্কায় ভীতির সঙ্গে বসবাসের চেয়ে কঠিন সময় কঠিনতম দৃঢ়তায় মোকাবিলা করার প্রত্যয় নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে।
বাংলাদেশের স্থাপনাসমূহ নিয়েও এ রকম শঙ্কা রয়েছে। তাই ক্ষয়ক্ষতি যাতে কম হয় সেজন্য সরকার প্রণীত বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করা হলে বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হবে।
ভূমিকম্পের সময় যা করবেন
ভূমিকম্প হচ্ছে বুঝতে পারলে জীবন বাঁচাতে হলে প্রথমে মাথা ঠা-া রাখার চেষ্টা করতে হবে। কোনোভাবেই আতঙ্কিত হওয়া যাবে না।
যদি বাসাবাড়িতে থাকেন তাহলে মাথা বালিশ দিয়ে ঢেকে টেবিল, খাট বা শক্ত কোনো আসবাবপত্রের নিচে আশ্রয় নিন।
মনে রাখবেন, ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির অন্যতম কারণ গ্যাস ও বিদ্যুৎ থেকে লাগা আগুন। তাই দ্রুত রান্নঘরের গ্যাসের চুলা, ঘরের বৈদ্যুতিক সুইচগুলো বন্ধ করতে হবে।
ভূমিকম্পের সময় খালি পায়ে নয়, শক্ত জুতো পরে চলাফেরা করুন, যাতে গ্লাস, মেটাল ইত্যাদির ইনজুরি থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
ব্যাটারিচালিত রেডিও, টর্চলাইট বা ম্যাচ-মোমবাতি, পানি, শুকনো খাবার ও প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম সব সময় ঘরে রাখা প্রয়োজন।
গ্যাস লিকেজ আছে কি না তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ম্যাচ-মোমবাতি জ্বালাবেন না।
হুইলচেয়ারে থাকলে, চাকা লক বা বন্ধ করে হাত দিয়ে মাথা ও ঘাড় ঢেকে রাখুন।
স্কুল, কলেজ বা অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকলে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলব্যাগ মাথায় দিয়ে শক্ত টেবিলের নিচে আশ্রয় নিতে হবে।
ভূমিকম্পের সময় বহুতল ভবন থেকে নামতে হলে সিঁড়ি ব্যবহার করতে হবে। কোনোক্রমেই লিফট ব্যবহার করবেন না। লিফটে থাকলে নিকটবর্তী ফ্লোরে তাড়াতাড়ি নেমে পড়ুন।
বেশি ওপরতলায় থাকলে কম্পন বা ঝাঁকুনি না থামা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, কম্পন বা ঝাঁকুনি থামলে দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে খোলা জায়গায় বা নিরাপদ স্থানে অবস্থান নিন। তাড়াহুড়ো করে লাফ দিয়ে নামা যাবে না।
শিল্প-কারখানা, হাসপাতাল, মার্কেট, সিনেমা হলে থাকলে হুড়োহুড়ি করে বের হওয়ার জন্য দরজার সামনে ভিড় বা ধাক্কাধাক্কি করতে যাবেন না। যেখানে আছেন সেখানেই দুহাতে মাথা ঢেকে বসে থাকুন।
গাড়িতে থাকলে রাস্তা ব্লক না করে একপাশে থেমে যান এবং ভেতরে থাকুন। সেতু, ওভারব্রিজ, ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, গাছ, বৈদ্যুতিক খুঁটি, বিলবোর্ড ইত্যাদি থেকে দূরে থাকতে হবে। পেছন থেকে ছুটে আসা গাড়ি থেকে সতর্ক থাকুন, রিয়ার মিররের ওপর নজর রাখতে হবে।
ঘরের বাইরে যেখানেই থাকুন না কেন বড় গাছ, উঁচু বাড়ি, বৈদ্যুতিক খুঁটি ইত্যাদি থেকে দূরে খোলা স্থানে আশ্রয় নিতে হবে।
সমুদ্র বা নদীর ধারে থাকলে শিগগিরই দ্রুততার সঙ্গে উঁচু জায়গায় অবস্থান নিতে হবে।
একবার কম্পন হওয়ার পর আবারও কম্পন হতে পারে। তাই সুযোগ বুঝে বিল্ডিং থেকে বের হয়ে খালি জায়গায় চলে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
মানুষ মানুষের জন্য। বিপদের সময় আপনার মনুষ্যত্ব যেন আপন মহিমায় আলো ছড়ায়। নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে প্রতিবেশীদের প্রতিও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। বিপদ থেকে রক্ষার পাশাপাশি বিপদে ভয় না পেয়ে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করার চেষ্টা করতে হবে। বড় ধরনের ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি কতটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে তা বলা মুশকিল, তবে প্রস্তুতি থাকলে মোকাবিলা করতে সুবিধা হবে। জাতীয়পর্যায়ে লজিস্টিক্যালি ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের সক্ষমতা হয়তো খুবই অপ্রতুল। কিন্তু ব্যক্তিগত বা দলবদ্ধভাবে ওপরের গাইড লাইনগুলো মেনে চললে প্রাণহানি বা আহত হওয়ার ঘটনা অনেকখানি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
লেখক : কলাম লেখক
এ-কালের আধুনিক ভোজনরসিক মানুষজন ভোজনের পর মিষ্টিজাতীয় উপ-খাবার যেমন : মিষ্টান্ন, মিষ্টি, ফলমূল, আইসক্রিম ইত্যাদি খেয়ে থাকেন। এটিকে তারা বাহারি এক নাম দিয়েছে, ডেজার্ট। এই ডেজার্ট মানে কিন্তু ‘মরুভূমি’র ডেজার্ট না। মরুভূমির ডেজার্টে ‘এস’ থাকে একটা, আর ভোজনের ডেজার্টে থাকে ডাবল ‘এস’। ডাবল এস মানে ডাবল মজা। ভোজনরসিক মানুষজন খাওয়ার পরও মনে করেন যে তাদের খাওয়া শেষ হয়নি। তাই তারা খাওয়ার পর সমাপনী খাওয়ারও আয়োজন করেন।
ভোগবাদ এমন এক অভিজ্ঞতা যে, একসময় সবকিছুই একঘেয়ে আর পানসে হয়ে আসে। তখন মানুষ বৈচিত্র্য খোঁজে। রঙ্গরস খোঁজে। এমন পরিস্থিতিতেই আবির্ভাব ঘটে ভাঁড়ের। রাজার দরবারে যেমন গোপালরা আসেন, তেমনি কালের বিবর্তনে সমাজ বা রাষ্ট্রেও নয়া নয়া ভাঁড়ের আগমন ঘটে। সমাজ জীবন তখন রসে টইটম্বুর হয়ে ওঠে।
হিরো আলমও আমাদের যাপিত একঘেয়ে সোশ্যাল মিডিয়াকেন্দ্রিক জীবনে এক অপার আনন্দের পসরা নিয়ে হাজির হয়েছেন। ভোগবাদী সমাজের সামনে ডেজার্ট হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তাকে ছাড়া আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ার দৈনন্দিন জীবন অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে! প্রতিদিন দেশের সর্বোচ্চ মহল থেকে ফুটপাতের চায়ের আড্ডায় নিয়মিত আলোচনায় থাকছেন। কর্মহীন এবং একই সঙ্গে বিশ্লেষক এই জাতির সামনে দারুণ এক আলোচ্য বিষয় হিসেবে উপস্থিত এখন হিরো আলম।
এ-কালের মানুষজন রঙ্গরসিকতা ভুলে কাঠখোট্টা হয়ে গেছে। কারও ভেতরে কোনো রসবোধ নেই। রসবোধ থাকবে কী করে? রসবোধ আসে জ্ঞান থেকে। জ্ঞান আজ নির্বাসনে। বইয়ে জ্ঞান নেই। সমাজে জ্ঞান নেই। শিক্ষিত এবং শিক্ষার হার বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু জ্ঞানী মানুষের বড় আকাল। আর জ্ঞানী মানুষ নেই বলে রসেরও খরা চলছে এখন। মানুষের ভেতরে রস নেই। মনীষীরা বলে গেছেন, রসবোধহীন মানুষ প্রকারান্তরে অমানুষ বা নামানুষও। যে কারণে হিরো আলমের মতো ভাঁড়দের আবির্ভাব ঘটছে। কমেডি আর ভাঁড়ামো যে এক নয়, সেটিও এ-কালের মানুষ তফাৎ করতে পারছেন না। যেমনটা তফাৎ করতে পারছেন না জনপ্রিয় আর আলোচিত ব্যক্তির মধ্যকার ফারাক।
রসসন্ধানী মানুষজন সারাদিনমান কঠিন জীবন কাটানোর পর কিঞ্চিৎ সময়ের জন্য হিরো আলমে মজছেন। ডেজার্ট উপভোগ করছেন। ঘুষ খাচ্ছেন, দুর্নীতি করছেন, চুরি করছেন, ডাকাতি করছেন, পরস্পরকে ঠকাচ্ছেন এবং এরপর খাওয়া-খাওয়ি শেষে তাদের ডেজার্ট খাওয়ার দরকার পড়ছে। তখনই সোশ্যাল মিডিয়ার গতর বেয়ে তাদের পাতে চলে আসছেন হিরো আলম। দুই ভাগে ভাগ হয়ে জাতি নেমে পড়ছে বিতর্কে।
কথা হলো, হিরো আলমের অভিনয় হয় না, তাহলে এ দেশে কার অভিনয়টা হয়? আমরা এর উত্তর দিতে পারি না। কারণ, আমাদের এখানে সেই শূন্যতা বড় থেকে বড় হচ্ছে। হিরো আলমের গান হয় না। তাহলে কার গানটা হয়? আমরা এ প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারি না। এই অঙ্গনেও বড় শূন্যতা আজ গ্রাস করছে।
এই যে পাল্টা প্রশ্ন, সেটির উত্তর বের করতে পারলে, প্রকৃত হিরোরা সমাজে আবারও আলো ছড়াতে পারত। তখন সামাজিক ডেজার্টের আর দরকার পড়ত না। এটি ঠিক যে পৃথিবীর সব দেশেই এ রকম ডেজার্টরা আছেন। তবে সেসব দেশে আসল হিরোরাও আছেন। কিন্তু আমাদের দেশে হিরো আলমরাই সব সেক্টর কবজা করে আছেন। রাজনীতির হিরো আলম, শিক্ষাঙ্গনের হিরো আলম, ঢালিউড হিরো আলম, গণমাধ্যমের হিরো আলমএভাবে প্রত্যেকটি অঙ্গনেই এক বা একাধিক হিরো আলম আছেন।
মূলত হিরো আলমরা যা করছেন তা জেনেবুঝেই করছেন এবং চালিয়েও যাচ্ছেন। তারা বিক্রি হতে চান। গণমাধ্যমও তাদের বিক্রি করতে চায়। দিনকে দিন এভাবে হিরো আলমরা হটকেক হয়ে উঠছেন, আমাদের মিডিয়া তাদের হটকেক বানিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করছে। ফলে তিন পক্ষেরই লাভ হচ্ছে। মিডিয়া তার ভিউ পাচ্ছে, হিরো আলমরা তাদের হিরোগিরি দেখাচ্ছেন এবং রসাকাক্সক্ষী সমাজ তাদের ভোজন শেষের ডেজার্ট পাচ্ছেন। কিন্তু এর বাইরেও বিশাল একটি জনগোষ্ঠী আছে, যারা সত্যিকারের হিরোদের সমাজের সর্বাগ্রে দেখতে চায়। ভাঁড়রূপী ডেজার্ট চায় না।
ফলে এভাবে সমাজেরও ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে সবার অগোচরে। আলোচিত হওয়াটাকেই এই প্রজন্ম বড় করে দেখছে। জনপ্রিয় হওয়া বলে যে একটি কথা আছে, সেটি ভুলেই যাচ্ছে এ প্রজন্ম। মিডিয়াও ভুল করছে বোধ করি। জনপ্রিয় আর আলোচিত দুটি ভিন্ন বিষয়কে গুলিয়ে ফেলছে তারা। এভাবে জনরুচিও নষ্ট করছে মিডিয়া। ‘টু এডুকেট’ মানে সমাজকে শেখানোর যে কাজ মিডিয়ার, সেটি ভুলে পর্যবসিত হচ্ছে।
এ কারণেই এটি বেশি করে আমাদের মিডিয়ার ব্যর্থতা। আমাদের চারপাশের হিরোদের তুলে ধরতে না পারার এই ব্যর্থতা মিডিয়া এড়াতে পারে না। মিডিয়া নিজের পসারের জন্য হিরো আলমদের ব্যবহার করছে। হিরো আলমদের মধ্যকার জোকারিকে দিনের পর দিন অবলীলায় তুলে ধরে চলেছে। একজন মানুষ নাছোড়বান্দা, এটি অবশ্যই একটি ভালো গুণ; কিন্তু এই গুণটি ছাড়া আর কোনো গুণ যাদের নেই তাদেরই দিনের পর দিন অনুসরণীয় করে তুলছে আমাদের মিডিয়া। তরুণরা এখান থেকে কী শিখবে? তারা তো এ কারণেই ভাইরাল বা আলোচিত হওয়ার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।
গণতান্ত্রিক সমাজে যে যার মতো নিজের প্রচার করবে, তাতে দোষের কিছু নেই। হিরো আলমদেরও আত্মপ্রচারে কোনো দোষ নেই। কিন্তু ভিউয়ের জন্য হিরো আলমদের প্রচার করে ফায়দা লোটা গণমাধ্যমের অসাধুতা বা ব্যর্থতারই নামান্তর। তারা আসল হিরোদের খুঁজে বের করতে বা তুলে ধরার ব্যর্থতা ঢাকতেই হিরো আলমদের উচ্চে তুলে ধরছে। একটি সুশিক্ষাহীন সমাজ যে দিনের পর দিন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হয়ে উঠছে, এক হিরো আলমকে দিয়েই সেটি সহজেই প্রমাণ করা যাচ্ছে এখন।
লেখক: সাংবাদিক
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়ে ওঠে, জীবন-যৌবন উত্তাপের শুদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ। প্রকাশ্য কথা ছিল শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতি। ভদ্রতা-বিনয়, শিক্ষা-দীক্ষা, কর্মনিষ্ঠা- দেশপ্রেম ও সম্প্রীতির বন্ধনে যূথবদ্ধ হয়েছিলেন তারা। অথচ, কী দুর্ভাগ্যের বিষয় প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছরের মাথায় সেই ছাত্রলীগ এখন নানামুখী বিতর্ক সৃষ্টি করছে। তাদের বর্তমান কর্মকা-, কোনোভাবেই ‘রাজনৈতিক’ হিসেবে আখ্যা দেওয়ার সুযোগ নেই। ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনের এমন রাজনৈতিক স্খলন, রাজনীতিসচেতন সবাইকে ব্যথিত করে, আতঙ্কিত করে, বিস্মিত করে।
গতকাল দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত ‘নির্যাতন করে ভিডিও ভাইরালের হুমকি ছাত্রলীগ নেত্রীর’ শিরোনামের সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, ৭ ফেব্রুয়ারি নির্যাতনের শিকার ছাত্রী, ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের দেশরতœ শেখ হাসিনা হলের একটি কক্ষে অতিথি হিসেবে অবস্থান করেন। পরে গত ১২ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে হলের জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাজে আচরণের অভিযোগ করেন একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাবাসসুম ও ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরা। এরপর সন্ধ্যায় তাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার দাবি জানান তারা। এ সময় হল প্রভোস্ট ও প্রোক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতে বিষয়টির মীমাংসা করা হয়। পরে রাতেই নবীন ওই শিক্ষার্থীকে ডেকে নেন ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরা ও তাবাসসুমসহ কয়েকজন। এ সময় তাকে বিভিন্ন হুমকি দেওয়া হয়। তাদের পা ধরে ক্ষমা চাইতে গেলে লাথি মারেন তারা। এ ছাড়া জোর করে তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন এবং নির্যাতনের বিষয়ে কাউকে কিছু বললে ওই ভিডিও ছড়িয়ে (ভাইরাল) দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এ ছাড়াও নবীন এ শিক্ষার্থীকে দিয়ে ময়লা গ্লাস চেটে পরিষ্কার করানো হয়। এমন পরিস্থিতিতে ভয় পেয়ে পরদিন সোমবার সকালেই হল ছেড়ে বাসায় চলে যান। পরদিন মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে এসে নির্যাতনের ঘটনা জানিয়ে বিচার চেয়ে প্রোক্টর, ছাত্রউপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট হল প্রভোস্টের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় অধ্যাপক ড. আহসান উল আম্বিয়াকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শেখ হাসিনা হল প্রশাসন।
প্রকাশিত সংবাদে আরও জানা যায়, কিছুদিন আগেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) চার শিক্ষার্থীকে কলেজ ছাত্রাবাসে আটকে রেখে মারধরের অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। যাদের মধ্যে গুরুতর দুজনকে নিতে হয় আইসিইউতে। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই এবার ইবিতে ছাত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠল।
এইভাবে ছাত্রলীগ কর্তৃক একের পর এক নির্যাতনের ঘটনা, ছাত্রসমাজে কী বার্তা দেয়? বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন, গতানুগতিক ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কী আসবে সেই তদন্তে? যারা অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হবেন, তাদের কোনো বিচার হবে! সত্যি কথা বলতে কী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আদৌ বিচার করার ‘ক্ষমতা’ রাখে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে? পারবেন তারা, দায়ী ছাত্রদের কোনো ধরনের শাস্তি দিতে! ছাত্রলীগের এত বেপরোয়া আচরণের, নেপথ্যে কারা আছেন আমরা জানি না। তবে এটা সবাই জানে, কোনোদিন এই ধরনের ঘটনার বিচার হয়নি। যদি কঠোর কোনো দৃষ্টান্ত রাখতে পারতেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা, তাহলে একের পর এক এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতো না।
এমনিতেই বর্তমানে বিভিন্ন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। সরকার পরিচালনায় যারা আছেন, তাদেরও যে বিষয়গুলো ভয়ংকর বিব্রত করে তা নেতাদের বোঝা উচিত। হল কর্তৃপক্ষ কী করবেন না করবেন এই আশায় বসে না থেকে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাদের উচিত হবে, সাংগঠনিকভাবে কঠের ব্যবস্থা নেওয়া। তাদের এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত ভবিষ্যতে যাতে কোনো ছাত্রলীগকর্মী উত্তেজনা, আবেগ বা হিংসার বশবর্তী হয়ে এমন কাজ না করতে পারেন। কোনোভাবেই এই ঘটনাকে ‘বিচ্ছিন্ন’ বলার সুযোগ নেই। মনে রাখা দরকার, চেয়ার পেয়ে ক্ষমতার দম্ভ তারাই দেখান, যাদের নৈতিকতা এবং শিক্ষার ভিত দুর্বল। একইসঙ্গে এই কথাও মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস কোনোভাবেই যেন, ম্লান না হয়। চারপাশে কিন্তু গর্ত খোঁড়া আছে, যে কোনো সময় অঘটন হতে পারে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতিতে এমন কিছু চরিত্র আছে, যারা সব সময়ই ক্ষমতার কাছাকাছি থাকে, ক্ষেত্র বিশেষে এরা নীতিনির্ধারকও হয়ে ওঠে। ক্ষমতার মধু আহরণে এরা সামনের কাতারে থাকলেও, পালাবদলের আগেই ওরা রূপ পাল্টাতে শুরু করে! ওদের কাছে কি কোনো বার্তা আছে বদলে যাওয়া বা বদলে ফেলার বার্তা?
বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে প্রবাসের মাটিতে কেমন যেন একটা তোড়জোড় শুরু হয়েছে। হতাশা, অনিশ্চয়তা নিয়ে যারা পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, এরাও যেন দৃশ্যপটে আসতে শুরু করেছে। রূপ পাল্টে যারা আওয়ামী সেজে এতদিন চারদিক দাবড়িয়ে বেড়িয়েছেন, খোলস পাল্টাতে এদের কেউ কেউ প্রস্তুতি শুরু করেছেন, প্রবাসের মাটিতে এরা রূপ পাল্টিয়ে ইতিমধ্যে নতুন রূপ ধারণ করতে শুরু করেছেন। এরা কি তাহলে নতুন কোনো আগমনী বার্তায় উজ্জীবিত হয়ে উঠছেন? কী সেই বার্তা? গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিবর্তনের বার্তা দেওয়ার মালিক জনগণ, আর তার একমাত্র উপায় গণভোট। এখনো সেই গণভোটের বাকি এক বছর, তাহলে বসন্তের কোকিলদের মাঝে এত দৌড়ঝাঁপ কেন?
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দাতা নামের লগ্নিকারকদের দারুণ প্রভাব। সরকার ও রাজনীতিতে আড়ালে-আবডালে এরা নানাভাবে কলকাঠি নাড়ে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, উন্নয়ন অংশীদার বা দাতা পরিচয়ে এরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির নানারকম কর্মকা- চালায়। সোজাসাপ্টা ভাষায়, আমরা যাদের ডিপ্লোমেট বা কূটনীতিক নামে চিনি, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী এদের কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ কর্মকা- নিয়ে সরব হওয়ার সুযোগ নেই। তবুও দরিদ্রতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের নীতিনির্ধারণী বিষয় নিয়েও এরা তৎপর হয়ে ওঠে। মাঝেমধ্যে মানবাধিকারের নামে চাপাচাপির বার্তা চালায়।
প্রকৃত অর্থে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে, নিষেধাজ্ঞার খড়্গ আসতেই পারে। পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট জাতির শ্রেষ্ঠসন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যখন সপরিবারে নির্মম-নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হলো, তাদের মানবাধিকার তখন জাগ্রত হলো না!
একুশে আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আইভী রহমানসহ যারা নিহত হলেন, তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্বকে বরণ করে নিতে হলো, পার্লামেন্টারিয়ান আহসান উল্লাহ মাস্টার, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কূটনীতিক, অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া নিহত হলেন, তখনো এদের মানবাধিকার জাগ্রত হলো না! সাঈদীকে চাঁদ দেখার গুজব রটিয়ে শত শত মানুষকে অগ্নিদগ্ধ করা হলো, ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে অঙ্গার হয়ে অসার দেহ পড়ে থাকল, তখনো তাদের মানবাধিকার জাগ্রত হলো না!
একুশ বছরে বিকৃত ইতিহাস জেনে গড়ে উঠে একটি প্রজন্ম। এই প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস-ই সত্যরূপে আবির্ভূত হয়। গত এক যুগে একাত্তরের পরাজিত আদর্শের অনুসারী একদল সুবিধাবাদী রঙ পাল্টিয়ে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। এই ধারাটি শুধু দেশে নয়, প্রবাসের মাটিতেও সক্রিয় ছিল। কূটনীতিকদের লম্ফঝম্ফ দেখে এরা আবারও রূপ পাল্টাতে শুরু করেছে। এতদিন ‘জয়বাংলা’ বলে যারা হুঙ্কার ছেড়েছিল, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানেও বঙ্গবন্ধুর নাম নিতে তাদের আপত্তি!
অগ্নিঝরা মার্চ আর বিজয়ের ডিসেম্বর! এ মাস দুটি বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম অর্জনের মাস। তবুও এ মাসগুলোতেই যেন কিছু মানুষের হৃদয়ের দহন বেড়ে যায়! যন্ত্রণায় এদের রক্ত টগবগিয়ে ওঠে। অন্তরাত্মাকে শীতল করতে এরা প্রচন্ড প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে। এর অন্তরালে কাজ করে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার এক সুদূরপ্রসারী হীন প্রচেষ্টা। এই ঘৃণ্য অপশক্তির প্রথম টার্গেট ছিল ১৫ আগস্ট।
একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস আমাদের জাতীয় জীবনের গৌরবোজ্জ্বল দিন। পনেরো আগস্ট, ৩ নভেম্বর বাঙালির ইতিহাসের কলঙ্কময় দিবস। প্রবাসে থাকলেও এসব দিবসে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারি না। ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ থেকেই নানা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করি। ২০২২-এর বিজয় দিবসে জাতির শ্রেষ্ঠসন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। আয়োজকদের মতে, প্রবাসের নতুন প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকশিত করাই তাদের লক্ষ্য ছিল। উপস্থিত বারোজন সংবর্ধিত মুক্তিযোদ্ধার একজন বাদে কেউই বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কথা বলেননি! এ মহান নেতার নামটিও উচ্চারণ করেননি। সুকৌশলে বঙ্গবন্ধুকে এড়িয়ে চলার এমন হীন চেষ্টা দেখে বিস্মিত হয়েছি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করেছেন, বিশ্বব্যাংককে অবজ্ঞা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করেছেন, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, ফ্লাইওভারের মতো বড় বড় প্রকল্পের মাধ্যমে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে রাত-দিন কাজ করছেন, তবুও চারদিকে এত ষড়যন্ত্র কেন?
ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির নায়ক শাসক দলের ব্যাপক ক্ষমতাবান নেতাদের মুহূর্তে কপর্দকহীন করে শেখ হাসিনা তাদের আইনের মুখোমুখি করেছেন, ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটালাইজেশনের প্রক্রিয়ায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে উঠছে দুর্নীতিবাজ চক্র, পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণে রেল আর সড়ক যোগাযোগে বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট, পৃথিবীর বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত অবধি বিস্তৃত হচ্ছে রেলওয়ে নেটওয়ার্ক, গড়ে উঠছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দৃষ্টিনন্দন রেলওয়ে স্টেশনসহ বড় বড় মেগা উন্নয়ন প্রকল্প। এতসবের পরও ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে নেই। আবারও বঙ্গবন্ধুর নামকে মুছে দিতে দেশি-বিদেশি লম্ফঝম্ফ দৃশ্যমান হচ্ছে! স্বাধীন বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে ধারণ করেই এই ষড়যন্ত্রকে রুখতে হবে। যারা বঙ্গবন্ধুকে বিসর্জন দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে, এরা দেশপ্রেমের ছদ্মাবরণে একাত্তরের পরাজিত শক্তির সোল এজেন্ট, এদের রুখতেই হবে।
লেখক : কলামিস্ট ও উন্নয়ন গবেষক
ক্যালগেরি, কানাডা
ঢাকাকে বাসযোগ্য নগর হিসেবে গড়ে তুলতে এখন পর্যন্ত যেসব পরিকল্পনা বা মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে সেগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। কিন্তু জনঘনত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, এক-তৃতীয়াংশ নগর সুবিধায় ঢাকায় চার গুণের বেশি মানুষের বসবাস। অবকাঠামো বিবেচনায় প্রায় ১২ গুণ বেশি চাপ বহন করছে দেশের রাজধানী শহর।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) প্রণীত ঢাকার ‘বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ)’ ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, একটি পরিকল্পিত শহরের ৬০ ভাগ জায়গায় সড়ক, জলাশয় ও উন্মুক্ত স্থান রাখা হয়। আর ৪০ ভাগ জায়গায় আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাসহ নগরবাসীর প্রয়োজনের আলোকে অবকাঠামো গড়ে ওঠে। ৪০০ বছরের পুরনো শহর ঢাকায় সড়ক, জলাশয় ও উন্মুক্ত স্থান রয়েছে প্রায় ২৪ ভাগ। আর অবকাঠামো তৈরি হয়েছে ৭৬ ভাগ জায়গায়। একটি পরিকল্পিত শহরে প্রতি একরে সর্বোচ্চ ১০০-১২০ জন বসবাস করে। ঢাকায় বর্তমানে একর প্রতি বসবাস করছে ৪০০-৫০০ জন।
দুই সিটিতে বিভক্ত ঢাকা মহানগরের আয়তন ৩০৫ দশমিক ৪৭ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২২ সালের জনশুমারির প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, রাজধানী শহরে জনসংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ ৭৯ হাজার ৮৮২। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা আরও বেশি বলে মনে করা হয়।
রাজউকের ড্যাপের তথ্যমতে, ঢাকায় সড়ক রয়েছে ৮ দশমিক ৪৫ ভাগ, জলাশয় রয়েছে ১৩ দশমিক ৯২ ভাগ এবং উন্মুক্ত স্থান রয়েছে ১ দশমিক ৩৫ ভাগ। জনঘনত্ব হিসাবে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় একরপ্রতি জনঘনত্ব ৩৯৩ জন। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় বসবাসকৃত এলাকার জনঘনত্ব ৫০০ জন।
ড্যাপে আরও বলা হয়েছে, ঢাকার লালবাগ এলাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১ লাখ ৬৮ হাজার ১৫১ জন মানুষ বসবাস করে। জনঘনত্বের দিক থেকে যা বিশে^র সর্বোচ্চ। চকবাজারে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১ লাখ ৩০ হাজার ১২২ জন মানুষ বসবাস করে। যা বিশে^ তৃতীয়। কোতোয়ালিতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১ লাখ ১ হাজার ৬৯৩ জন বসবাস করে। যা জনঘনত্বের দিক থেকে বিশে^ দশম।
রাজউকের নগরপরিকল্পনাবিদ ও ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঢাকাকে বাসযোগ্য রাখতে হলে মূল ঢাকার ওপর চাপ কমাতে হবে। এ জন্য ঢাকার আশপাশে পরিকল্পিত শহর গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি সেখান থেকে ঢাকার সঙ্গে দ্রুততম সময়ে যোগাযোগের জন্য অবকাঠামো ও পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তাহলে মূল ঢাকার জনঘনত্ব কমবে। আর জনঘনত্ব কমলে মূল ঢাকা অনেকাংশ বসবাস উপযোগী হয়ে উঠবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) ২০২০ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৯৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে ঢাকায় জলাভূমি ও উন্মুক্ত জায়গার পরিমাণ কমেছে ১৩৪ বর্গকিলোমিটার। আর এ সময়ে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কংক্রিট। ইতিমধ্যে ঢাকার দুই সিটি এলাকার প্রায় ৮২ ভাগ কংক্রিট আচ্ছাদিত হয়ে পড়েছে।
পরিকল্পনাবিদদের এ সংগঠটি বলছে, পরিকল্পিত নগর গড়ে তুলতে সড়ক থাকা দরকার ২৫ শতাংশ, জলাশয় ১৫ শতাংশ, সবুজ ও উন্মুক্ত স্থান থাকা দরকার ২০ শতাংশ। অর্থাৎ নাগরিক সুবিধার জন্য ৬০ ভাগ জায়গা খালি থাকা দরকার। আর ৪০ ভাগ জায়গায় আবাসন, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, মার্কেট গড়ে উঠবে। তবে ভৌগোলিক অবস্থান, জনঘনত্ব এবং অন্যান্য বিবেচনায় সড়ক, জলাশয়, সবুজ ও উন্মুক্ত জায়গার পরিমাণ কমবেশি হতে পারে। তবে কোনো শহরের ৪০ ভাগের বেশি অবকাঠামো নির্মাণ করলে তার বাসযোগ্য পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব হয় না।
নিরাপত্তার বিবেচনায়ও ঢাকা যে নাজুক অবস্থায় রয়েছে, সেটা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ২০২২ সালের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে দেশের ৩৮ শতাংশ ভবন। এর মধ্যে ঢাকার ৫৫ শতাংশ। আর গত বছর ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের গ্লোবাল লাইভবিলিটি ইনডেক্স অনুসারে ঢাকা বিশে^র সপ্তম কম বসবাসযোগ্য শহর।
চলতি মাসে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার সাড়ে আট ভাগ সবুজ রয়েছে। ঢাকার উন্মুক্ত স্থান ও জলাশয়কেন্দ্রিক সুবজ এলাকা ধরে এ গবেষণা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঢাকার বর্তমান সড়ক, জলাশয় ও উন্মুক্ত স্থান রয়েছে তিন ভাগের এক ভাগ। আর জনসংখ্যা রয়েছে চার গুণ অর্থাৎ, ঢাকা অবকাঠামোর তুলনায় প্রায় ১২ গুণ বেশি চাপ নিয়ে চলেছে। ভালো হতো ১২ ভাগের এক ভাগ জনসংখ্যা থাকলে।
তিনি বলেন, ঢাকার বাস্তবতা বিবেচনায় চাইলেই আদর্শ জায়গায় যাওয়া সম্ভব হবে না। ইচ্ছা করলেই এখন সড়কের পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব নয়। তবে এখনো কিছু উন্নয়ন করার সুযোগ রয়েছে। সেটা হলো, বিদ্যমান সড়কগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে।
ড. আদিল বলেন, ‘ঢাকার উন্মুক্ত জায়গা বাড়ানো তো দূরের কথা, যেগুলো আছে সেগুলোও টিকিয়ে রাখতে পারছে না সরকার। এ জন্য পলিসি পর্যায়ে বড় পরিবর্তন আনতে হবে। এখনো ঢাকায় ওয়ার্ড পর্যায়ে ছোট ছোট উন্মুক্ত জায়গা সৃষ্টি করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া রাজউকের ড্যাপের কিছু প্রস্তাবনা রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করে ঢাকার জনঘনত্ব কমানো এবং গণপরিসর বাড়ানো সম্ভব। পাশাপাশি ঢাকার জনঘনত্ব কমাতে ঢাকায় নতুন কোনো কর্মস্থান সৃষ্টি করা যাবে না। যেমন শিল্প, কলকারখানা এবং অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তাহলে জনসংখ্যার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে।’
পরিকল্পনা হয় বাস্তবায়ন হয় না : ঢাকাকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে ১৯১৭ সালে নগরপরিকল্পনাবিদ স্যার প্যাট্রিক গেডিসকে দিয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যান করে ব্রিটিশরা। এটাকে মাস্টারপ্ল্যানের ধারণাপত্র বলা হয়। এর নাম ছিল ‘ঢাকা টাউন প্ল্যান’। ঢাকা সমতল আর বৃষ্টিপ্রবণ শহর। এ দুটো বাস্তবতা ধরে বিশদ পরিকল্পনার সুপারিশ করেন ওই নগরপরিকল্পনাবিদ। কিন্তু ওই সুপারিশের আর বাস্তব রূপ পায়নি। সে সময় ঢাকার চারদিকে চারটি নদীর পাশাপাশি শহরে অনেক খালও ছিল। একসময় শহরে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৫০টি প্রাকৃতিক খাল দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে নদীতে পড়ত। ফলে জলাবদ্ধতা হতো না। সে সময় ঢাকার জনসংখ্যা ছিল ৮-১০ লাখ।
এরপর পাকিস্তান আমলে ১৯৫৯ সালে ঢাকার জন্য আরেকটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়। এ মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী বেশ কিছু অবকাঠামো, আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা তৈরি করা হয়। তবে পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়নি। ১৯৫৯ সালে ঢাকার জনসংখ্যা ছিল ১৫ লাখ।
বাংলাদেশে পরিকল্পনাবিদদের সমন্বয়ে ঢাকার জন্য প্রথম মাস্টারপ্ল্যান তৈরি হয় ২০১০ সালে। সে সময় ঢাকার জনসংখ্যা ছিল প্রায় দেড় কোটি ধরা হতো। রাজউকের নেতৃত্বে প্রণয়ন করা এ মাস্টারপ্ল্যানের নাম ড্যাপ। মাস্টারপ্ল্যানটি পরিকল্পিত ও বাসযোগ্য নগর গঠনের সূচকের বিবেচনায় ৭০ ভাগ সঠিক ছিল। তবে ৩০ ভাগ নিয়ে নানা প্রশ্ন ছিল। ২০১৫ সালে ড্যাপের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর ২০১৬ থেকে ২০৩৫ সালের জন্য ড্যাপ সংশোধন করা হয়। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে সংশোধিত ড্যাপ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। এবারের ড্যাপে ঢাকার জনঘনত্ব কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
চারদিকে পাহাড় ও সবুজের অরণ্য। এই সবুজ বিনাশ করে সড়ক নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। পাহাড়ি এলাকায় সড়ক নির্মাণের প্রকৌশলগত জ্ঞানের অভাব কিংবা অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটা, রাস্তার প্রায় এক কিলোমিটার অংশ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ক্যাম্পাসের আওতায় চলে যাওয়া বা রেল লাইনের ওপর ব্রিজ নির্মাণসহ নানা জটিলতায় একের পর এক আটকে যাওয়া প্রকল্পটি ইতিমধ্যে ২৭ বছর পার করেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন ও পরিমার্জনে শুরুর ৪০ কোটি টাকার প্রকল্প এখন ৩৫৩ কোটিতে পৌঁছেছে। তারপরও শেষের দেখা নেই ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ ডিটি-বায়েজীদ (বায়েজীদ লিংক রোড) সংযোগ সড়কের।
দীর্ঘদিন ধরে রেললাইনের ওপরে নির্মিত ব্রিজের কাজ প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দেওয়ার পর এখন চলছে। গত সপ্তাহে দেখা যায়, রেললাইনের ওপরের অংশে গার্ডার বসানোর কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। এতদিন রেললাইনের উভয় প্রান্তে গার্ডার বসলেও রেললাইনের ওপরের অংশে খালি রাখা হয়েছিল। রেললাইন বিড়ম্বনার পাশাপাশি রোডের গা ঘেঁষে রয়েছে সুউচ্চ পাহাড়। টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ধসে রাস্তার ওপর পড়তে পারে এবং এতে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা হতে পারে। অর্ধকাটা এসব পাহাড় নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ও রোড নির্মাণ বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) মধ্যে বিরোধ চলছে। পাহাড় কেটে সড়ক নির্মাণের কারণে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ১০ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়। অর্ধকাটা এসব পাহাড় কেটে ঝুঁকিমুক্ত করার বিষয়ে শক্তিশালী পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায়ও আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু এখনো এর সুরাহা নেই। যথারীতি আরেকটি বর্ষা আসছে এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে খাড়া পাহাড়। বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে জানমালের ক্ষতি হতে পারে সেই শঙ্কায় গত বছর বর্ষায় এই রোডে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে। এবারও কি একই পথে হাঁটতে হবে?
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে কথা হয় রোড বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসের সঙ্গে। তিনি বলেন, পাহাড়ের বিষয়টি নিয়ে এই সপ্তাহে পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে আমাদের মিটিং রয়েছে। আশা করছি বিষয়টি সুরাহা হবে।’
এদিকে পাহাড় নিয়ে সুরাহার পথ সুগম হলেও জনগণের যাতায়াতের ওপর টোল বসাচ্ছে সিডিএ। চট্টগ্রাম মহানগরীতে নগরবাসীর চলাচলের কোনো পথে টোল নেই (কর্ণফুলী সেতু ও টোল রোড ছাড়া)। এরমধ্যে টোল রোডটি শুধুমাত্র পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলের জন্য নির্মিত। কিন্তু ডিটি-বায়েজীদ সংযোগ সড়কে টোল যুক্ত হতে যাচ্ছে। ৩২০ কোটি টাকার প্রকল্প সরকার ৩৫৩ কোটি টাকায় বর্ধিতকরণের অনুমোদনের সময় অতিরিক্ত ৩৩ কোটি টাকা টোল আদায়ের মাধ্যমে পরিশোধের কথা বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘রোড মেইনটেনেন্স আমরা করব। একইসঙ্গে সড়কবাতি স্থাপন, রেললাইনের ওপরে ব্রিজ নির্মাণ, নালা সংস্কার কাজগুলো নতুন করে করা হবে।’ টোল প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘টোল প্লাজা বসবে ফৌজদারহাট অংশে। শহর প্রান্ত দিয়ে এসে টোল প্লাজা ক্রস করলেই শুধুমাত্র টোল দিতে হবে। রোডের সৌন্দর্য উপভোগ করে ফিরে গেলে টোল দিতে হবে না।’
কবে নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ হতে পারে জানতে চাইলে কাজী হাসান বিন শামস বলেন, চলতি বছরের মধ্যে আমরা কাজ শেষ করে দ্বিতীয় ব্রিজটি চালু করে আনুষ্ঠানিকভাবে তা ওপেন করে দিতে চাই। যদিও ইতিমধ্যে এই রোড দিয়ে অনেক যান চলাচল করছে। কিন্তু ওভারব্রিজটি চালু না করায় তা পূর্ণতা পায়নি।
টোল কবে থেকে যুক্ত হতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘আগামী বছর থেকে টোল যুক্ত হতে পারে।’
সড়কের ইতিবৃত্ত বায়েজীদ বোস্তামী রোডের সঙ্গে ঢাকা ট্রাঙ্ক রোডকে (ডিটি রোড) যুক্ত করার উদ্দেশ্যে প্রায় ছয় কিলোমিটার পাহাড়ি এলাকার ওপর দিয়ে এই রোড নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। ৪০ কোটি টাকার সেই প্রকল্পের অধীনে ব্যাপক হারে পাহাড় কেটে সড়ক নির্মাণ করলেও বর্ষা এলেই পুরো রাস্তাসহ পাহাড়ি ঢলে চলে যেত। ফলে প্রকল্পটি বারবার হোঁচট খায়। এই প্রকল্পের মাঝখানের এক কিলোমিটার অংশ আবার এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন করার সময় তাদের ক্যাম্পাসের ভেতরে চলে যায়। ফলে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পরবর্তী সময়ে ২০১৩ সালে নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ক্যাম্পাসের বাইরে দিয়ে নতুন করে বাঁক নিয়ে সড়কের নকশায় পরিবর্তন আনা হয়। দুই লেনের সেই প্রকল্প প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১৭২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে এসে আবারও নকশায় পরিবর্তন। এবার দুই লেনের পরিবর্তে চার লেনে উন্নীত করা হয়। যথারীতি বাজেট ৩২০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। ২০২১ সালে এসে তা ৩৫৩ কোটি টাকায় উন্নীত হয়।
প্রথমবারের মত মা হলেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি।
মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) রাত ১১টা ২০ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন তিনি। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মাহির স্বামী রাকিব সরকার।
তিনি জানান, মা ও ছেলে দুজনেই সুস্থ আছেন। পুত্রের নাম এখনও ঠিক করা হয়নি বলে জানান তিনি।
২০১২ সালে ‘ভালোবাসার রঙ’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে বড়পর্দায় অভিষেক ঘটে রাজশাহীর মেয়ে মাহির। পরবর্তীতে ‘অগ্নি’ ‘কী দারুণ দেখতে, ‘দবির সাহেবের সংসার’, ‘অনেক সাধের ময়না’, ‘ঢাকা অ্যাটাক’সহ বেশ কয়েকটি আলোচিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
দুই বছর আগে গাজীপুরের ব্যবসায়ী রকিবকে বিয়ে করেন মাহি। তার কয়েক মাস আগে পারভেজ মাহমুদ অপুর সঙ্গে তার দাম্পত্য জীবনের ইতি ঘটে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে মা হচ্ছেন বলে খবর দিয়েছিলেন এই চিত্রনায়িকা।
সৌদি আরবের আসির প্রদেশের আভা জেলায় বাস দুর্ঘটনায় ২৪ জনের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
প্রধানমন্ত্রী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্মকর্তাগণকে আহত বাংলাদেশী নাগরিকদের চিকিৎসার সকল প্রকার উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
সৌদি আরবের জেদ্দার বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের মতে, সোমবার সৌদি আরবের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় আসির প্রদেশের আভা জেলায় একটি ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনায় প্রায় ২৪ জন নিহত এবং প্রায় ২৩ জন আহত হয়।
বিকেল ৪টার দিকে আগাবত শার নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে, যেখানে যাত্রীদের অনেকেই বাংলাদেশী ছিলেন বলে জানা গেছে।
বাসটি ওমরাহ পালনরত হজযাত্রীদের নিয়ে পবিত্র নগরী মক্কায় যাচ্ছিল।
প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রেক সিস্টেমের ত্রুটির কারণে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায় এবং আগুন ধরে যায়।
স্থানীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কনস্যুলেট প্রতিনিধিকে জানিয়েছে যে, মৃতদেহ পুড়ে যাবার এবং বিকৃত হবার কারণে তাদের জাতীয়তা নির্ধারণ করা কঠিন হয়েছে।
তাই, উল্লিখিত দুর্ঘটনায় কতজন বাংলাদেশি মারা গেছে তা হাসপাতাল বা ট্রাফিক সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
চতুর্থ পর্বে মাস্টারদা সূর্য সেনকে নিয়ে লিখেছেন ইসমত শিল্পী
সূর্য সেনের স্বাধীনতার স্বপ্ন
স্বাধীনতার মাস মার্চেই বিপ্লবী সূর্য সেনের জন্ম। ১৮৯৪ সালের ২২ মার্চ তিনি চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
মাস্টারদা সূর্য সেন ছিলেন বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের একজন অন্যতম নেতা এবং ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি’র প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। ১৯৩০ সালে তিনি চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন কওে সেখানে বিপ্লবী সরকার গঠন করেন। ১৯৩৩ সালে তাকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বিচারে তাঁর ফাঁসি হয়।
বালক বয়সেই সূর্য সেন বুঝতে পেরেছিলেন যে, সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপার থেকে ছুটে আসা ইংরেজদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতেই হবে। জাস্টিস কিংসফোর্ডকে হত্যাচেষ্টার জন্য ক্ষুদিরামের ফাঁসি সূর্য সেনের হৃদয় ও মনকে দারুণভাবে আলোড়িত করে। কলেজে পড়ার সময়ই ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য তিনি বিপ্লবী সংগ্রামে যোগ দেন। বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে পড়ার সময় শিক্ষক সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী তাকে বিপ্লবী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করেন। ইংরেজদের শোষণ-নির্যাতন থেকে মুক্তির পথ খুঁজে বের করার জন্য সূর্য সেনের হৃদয়-মন তৈরি হয়। তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দেশ থেকে ইংরেজ তাড়ানোর অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষা নেন।
সে সময় চট্টগ্রামে একটি গোপন বিপ্লবী দল ছিল। ১৯১৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে এই বিপ্লবী দলের কয়েকজন ছাড়া প্রায় সবাইকে গ্রেপ্তার করে সরকার জেল দেয়। বিপ্লবের জন্য স্বচ্ছ চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধি ও মেধা অন্যদের তুলনায় বেশি থাকায় তিনি কিছু দিনের মধ্যেই দলের একজন নেতা হয়ে ওঠেন। চট্টগ্রামের বিভিন্ন অস্ত্রাগার লুণ্ঠন তার বুদ্ধি-পরামর্শ-নেতৃত্বেই সংঘটিত হয়েছিল।
সূর্য সেনের বিপ্লবী কর্মকাণ্ড, দুঃসাহসী অভিযান, সঠিক নেতৃত্ব¡ এই উপমহাদেশের মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিল। দেশের তরুণ ও যুবশক্তি তার আত্মাহুতিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে মরণপণ স্বাধীনতা সংগ্রামে দলে দলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সূর্য সেনের বাহিনী কয়েক দিনের জন্য ব্রিটিশ শাসনকে চট্টগ্রাম এলাকা থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। সূর্য সেনের অন্যতম সাথী বিপ্লবী অনন্ত সিংহের ভাষায়, ‘কে জানত যে আত্মজিজ্ঞাসায় মগ্ন সেই নিরীহ শিক্ষকের স্থির প্রশান্ত চোখ দুটি একদিন জ্বলে উঠে মাতৃভূমির দ্বিশতাব্দীব্যাপী অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে উদ্যত হবে? ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহ দমনের জন্য বর্বর অমানুষিক অত্যাচারের প্রতিশোধ, জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ! কে জানত সেই শীর্ণ বাহু ও ততোধিক শীর্ণ পদযুগলের অধিকারী একদিন সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ রাজশক্তির বৃহত্তম আয়োজনকে ব্যর্থ করে তার সব ক্ষমতাকে উপহাস করে বছরের পর বছর চট্টগ্রামের গ্রামে গ্রামে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে তুলবে?’
সূর্য সেন পরে ছাত্রদের মাঝে বিপ্লবের মন্ত্র ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য শিক্ষকতার পেশা গ্রহণ করেন। চরিত্রের মাধুর্য দিয়ে বুঝিয়ে-সুজিয়ে দলে দলে যুবকদের তার বিপ্লবী দলে টেনে আনেন। তিনি দেশপ্রেমের শিখাকে প্রত্যেকের অন্তরে জ্বেলে দেন। ছাত্রদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মেলামেশার কারণে নিজের স্কুল ও শহরের বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ছাত্ররা একান্ত আপনজনের মতো তাকে ‘মাস্টারদা’ বলে ডাকতে শুরু করে।
১৯২৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে মাস্টারদার স্ত্রী পুষ্পকুন্তলা হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে মারা যান। এ সময় মাস্টারদা জেলে ছিলেন। পরে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান।
১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে মাত্র কয়েকজন যুবক রাত সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম পাহাড়ের ওপর অবস্থিত অস্ত্রাগারটি আকস্মিকভাবে আক্রমণ করে দখল করে নেন এবং সব অস্ত্র লুণ্ঠন ও ধ্বংস করে ফেলেন। সূর্য সেন সেই রাতে ঘোষণা করেন, চট্টগ্রাম এই মুহূর্তে দুইশ বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করেছে। এই মুহূর্তে চট্টগ্রাম স্বাধীন।
মাস্টারদার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম শহর ৪৮ ঘণ্টার জন্য ইংরেজ শাসনমুক্ত ও স্বাধীন ছিল। জালালাবাদ পাহাড়ে বিপ্লবীদের মুখোমুখি সংঘর্ষ শেষ হওয়ার পরও তারা টানা তিন বছর গেরিলা যুদ্ধ চালিয়েছিলেন। ব্রিটিশ সৈন্যদের দৃষ্টি থেকে মাস্টারদাকে আড়ালে রাখার উদ্দেশ্যেই বিপ্লবীরা এই যুদ্ধ চালিয়েছিলেন।
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনাধীন পরাধীন ভারতের স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীরা। সূর্য সেন ছাড়াও এই দলে ছিলেন গণেশ ঘোষ, লোকনাথ বল, নির্মল সেন, অনন্ত সিং, অপূর্ব সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী, নরেশ রায়, ত্রিপুরা সেনগুপ্ত, বিধুভূষণ ভট্টাচার্য, শশাঙ্ক শেখর দত্ত, অর্ধেন্দু দস্তিদার, হরিগোপাল বল, প্রভাসচন্দ্র বল, তারকেশ্বর দস্তিদার, মতিলাল কানুনগো, জীবন ঘোষাল, আনন্দ গুপ্ত, নির্মল লালা, জিতেন দাসগুপ্ত, মধুসূদন দত্ত, পুলিনচন্দ্র ঘোষ, সুবোধ দে, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এবং কল্পনা দত্ত। ছিলেন সুবোধ রায় নামের এক ১৪ বছরের বালক।
বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তারের হাত থেকে অলৌকিকভাবে রক্ষা পেয়েছেন মাস্টারদা। চট্টগ্রামের কাছেই গইরালা গ্রামে এক বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন মাস্টারদা। এক জ্ঞাতির বিশ্বাসঘাতকতায় ব্রিটিশ সৈন্যরা তার সন্ধান পেয়ে যায়। মাস্টারদা গ্রেপ্তার হন ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। ১৯৩৪ সালে ফাঁসির আগেই স্বাধীনতার স্বপ্নের কথা বলেছিলেন সূর্য সেন। ১৯৩৪ সালে ১২ জানুয়ারি ভোর ১২.৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর হয়। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে সঙ্গীদের উদ্দেশে তিনি লিখে যান, ‘আমি তোমাদের জন্য রেখে গেলাম মাত্র একটি জিনিস, তা হলো আমার একটি সোনালি স্বপ্ন। স্বাধীনতার স্বপ্ন। প্রিয় কমরেডস, এগিয়ে চলো, সাফল্য আমাদের সুনিশ্চিত।’
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’