
সংসদে সংরক্ষিত মহিলা এমপি লুৎফুন নেছা বক্তব্য দিচ্ছিলেন। ২০১৭ সালে সংসদের এক অধিবেশনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করছিলেন। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিলেন, সংসদের তৎকালীন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া। শিশুর মতো অশুদ্ধ উচ্চারণ ও আঞ্চলিক ভাষায় পটুয়াখালীতে তার এলাকার সমস্যা তুলে ধরছেন তিনি। সংসদ টিভিতে অধিবেশনটি লাইভ প্রচার হচ্ছিল। তার বক্তব্য শুনে, অনেক সংসদ সদস্য হাসছিলেন। তবু তিনি একজন সংসদ সদস্য।
সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর ১২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা ও অযোগ্যতা সংক্রান্ত বিধিমালা রয়েছে। এই আইনে যেকোনো শিক্ষাজ্ঞানসম্পন্ন বাংলাদেশি নাগরিক সংসদ সদস্য হওয়ার অধিকার রাখেন। অর্থাৎ একজন সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীর নির্দিষ্ট কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না। নিবন্ধিত মনোনয়ন পেলেই হয়, আর স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে পূর্বে অন্তত একটি সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হতে হয় বা ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন থাকতে হয়।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগ্রাহী প্রার্থীকে একটি মনোনয়ন ফরম পূরণ করতে হয়। ফরমটি পূরণের আগে একটি চেকলিস্ট ফরম রয়েছে , যা থেকে একজন ব্যক্তি নিজেকে যাচাই করতে পারেন তিনি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন কি না। ফরমটিতে ক, খ ও গ তিনটি ভাগ তৈরি করা। তবে ক ভাগের ৪টি প্রশ্নের কোনো একটির উত্তর ‘না’ হলে, তিনি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। ফরমটির ক বিভাগে জানতে চাওয়া হয় প্রার্থী বাংলাদেশের নাগরিক কি না, বয়স ২৫ বছর পূর্ণ, ভোটার তালিকায় নাম এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন, আর স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে পূর্বে অন্তত একটি সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়া বা ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন আছে কি না? থাকলেই একজন ব্যক্তি নির্বাচনের জন্য আবেদনে যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তবে ফরমের খ ও গ অংশে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে প্রার্থী নিজেকে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা যাচাই করে নিতে পারেন।
জাতীয় সংসদ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইনসভা। এককক্ষ বিশিষ্ট এই আইনসভার সদস্য ৩৫০ জন। এর মধ্যে ৩০০ জন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। অবশিষ্ট ৫০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যরা নির্বাচিত সংসদ সদস্যের ভোটে নির্বাচিত হন। সংসদের মেয়াদকাল পাঁচ বছর। সর্বোচ্চ আইনসভা হলেও সাংসদদের শিক্ষাগত কোনো যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না। ফলে কিছু ব্যক্তি আঞ্চলিক আধিপত্য বা পৈতৃক সূত্র বা আর্থিক বদান্যতায় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া বা সংসদ সদস্য হয়ে যান, কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াই। ফলে অনেকেই জানেন না, পয়েন্ট অব অর্ডার কী, প্রশ্নোত্তরপর্ব কী, তারকা চিহ্নিত প্রশ্ন কী? এমনকি রাষ্ট্রীয় জরুরি বিষয়ে বা আলোচনায় তারা অংশ নিতে পারেন না। এমন অনেক সংসদ সদস্য আছেন যিনি ৫ বছরের সংসদ চলাকালে একদিনও সংসদে দাঁড়িয়ে কিছু বলেননি।
২০১৩ সালের ৯ জুন জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরপর্বে হাবিবুর রহমান মোল্লা সংসদ সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তৎকালীন সংসদকার্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছিলেন সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা ও অযোগ্যতা নির্ধারিত আছে। নতুন করে সংসদ সদস্যদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতার বিধান অন্তর্ভুক্ত করে আইন সংশোধনের কোনো পরিকল্পনা আপাতত সরকারের নেই।
বেসরকারি সংস্থা ‘সুজন’-এর তথ্য মতে, একাদশ জাতীয় সংসদের ২৯৯ জন সাংসদের ৮০ দশমিক ৯৩ শতাংশের বা ২৪২ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। মহাজোটের সাংসদদের মধ্যে এ হার ছিল ৮১ দশমিক ৯৪ শতাংশ বা ২৩৬ জন এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাংসদদের ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ বা পাঁচজনের। নতুন সাংসদদের মধ্যে স্বল্পশিক্ষিত এসএসসি ও তার চেয়ে কম শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীর হার ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ বা ২০ জন। মহাজোটের সাংসদদের মধ্যে এ হার ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ বা ১৭ জন এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১২ দশমিক ৫ শতাংশ বা একজন। সব প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ উচ্চশিক্ষিত (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর), তবে নতুন সাংসদদের ৮০ দশমিক ৯৩ শতাংশ উচ্চশিক্ষিত। অপরদিকে, প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ২২ দশমিক ৮৫ শতাংশ স্বল্পশিক্ষিত বা এসএসসি ও তার চেয়ে কম হলেও নতুন সাংসদদের ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ স্বল্পশিক্ষিত।
দশম জাতীয় সংসদে উচ্চশিক্ষিতের (স্নাতক বা স্নাতকোত্তর) হার ছিল ৮০ দশমিক ৩৩ শতাংশ, একাদশ জাতীয় সংসদে যা সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে (৮০ দশমিক ৯৩ শতাংশ)।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিতদের মধ্যে, অন্তত ৭ শতাংশ প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল এসএসসি ও তার কম। আবার কিছু সংসদ সদস্য মনোনয়নপত্রে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ওই সংসদ সদস্য ছিলেন ৮ জন এসএসসির চেয়ে কম, মাধ্যমিক পাস ছিলেন ১৫ জন, ডিপ্লোমা পাস করা ছিলেন আটজন। এছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক পাস ছিলেন ২৬ জন, বিএ বা স্নাতক ডিগ্রি ছিল ১১১ জনের। মেডিকেল ডিগ্রিধারী ১১ জন এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ছিলেন ১১৪ জন। এছাড়া মনোনয়নপত্রে পিএইচডি ডিগ্রির কথা উল্লেখ করেছিলেন ৭ জন।
নবম সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের দেওয়া হলফনামায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়াপারসন খালেদা জিয়া নিজেকে ‘স্বশিক্ষিত’ বলে উল্লেখ করেছেন। আর বিএনপির সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার শিক্ষাগত যোগ্যতার অংশে লেখেন ‘নাই’। হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটনও হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি উল্লেখ করেন। আবার সংসদের জীবনবৃত্তান্তের সংকলনে বলেন ‘বি.কম’ পাস। ঢাকা-১০ আসনের সদস্য এ কে এম রহমতুল্লাহ নিজেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং রংপুর-১ আসনের হোসেন মকবুল শাহরিয়ার, পাবনা-৩ আসনের মকবুল হোসেন, মৌলভীবাজার-৩ আসনের সৈয়দ মহসিন আলী হলফনামায় বলেছিলেন তারা এসএসসি পাস। কুষ্টিয়ার সুলতানা তরুণ এবং নারায়ণগঞ্জের সারাহ বেগম কবরী হলফনামায় নিজেদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি বলে উল্লেখ করেছিলেন।
সংসদ সদস্য হওয়ার সঠিক শিক্ষা ক্যাটাগরি না থাকায় জনসমর্থন বা দলীয় সমর্থন নিয়ে অনেকেই হচ্ছেন আইন প্রণেতা।
গত ৪ সেপ্টেম্বর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বগুড়া-৭ আসন থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রেজাউল করিমকে ‘জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ বিল-২০২১’-এর সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর বক্তব্য উপস্থাপন করতে বললে সাংসদ অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য উপস্থাপন করতে থাকেন। এতে সংসদে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি এ প্রসঙ্গে বলেন, জাতীয় সংসদের মতো জায়গায় দাঁড়িয়ে একজন সাংসদকে কথা বলার ক্ষেত্রে তার জন্য বরাদ্দকৃত সময়ের সুষ্ঠু ব্যবহার কীভাবে করতে হবে তা জানতে হবে। নির্ধারিত বিষয়ে ফ্লোর পেয়ে একজন সাংসদকে কথা বলার আগে সেই বিষয়ে পড়াশোনা, চিন্তাভাবনা আর হিসাব করতে হবে- মুখে যা এলো তা বলে সংসদে হাস্যরসের সৃষ্টি করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এক্ষেত্রে সংসদীয় রীতিনীতি, আদব-কায়দা শেখানোর ব্যাপারটিকেও গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
আলোচনায় হিরো আলম : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ভোটের মাঠে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন আলোচিত-সমালোচিত হিরো আলম। তিনি ওবায়দুল কাদেরকে ভোটের মাঠে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘তিনি কথায় কথায় বলেন আসুন খেলা হবে। আমি ওবায়দুল স্যারকে জোর গলায় বলতে চাই, খেলা সবার সঙ্গে করতে হবে না। আমি হিরো আলমের সঙ্গে একটা নির্বাচনে আপনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ও আপনি দলীয়ভাবে দাঁড়ান। এরপর আপনি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে দেখেন খেলা হয় কি না।’
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) উপনির্বাচনের ৪৫টি ভোটকেন্দ্রের ভোট পুনঃগণনার আবেদন জমা দিতে এসে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম এসব কথা বলেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি বগুড়া-৪ এবং বগুড়া-৬ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন হিরো আলম। বগুড়া-৪ আসনে ১৪ দলীয় সমর্থিত ও জাসদ প্রার্থীর কাছে ৮৩৪ ভোটে হেরে যান তিনি। এর পরেই হিরো আলম অভিযোগ করেন এই আসনে ভোট সুষ্ঠু হলেও গণনার সময় ফলাফল পাল্টে দেওয়া হয়েছে। ৪৫টি ভোটকেন্দ্রের ফলাফল পুনঃগণনার জন্য আবেদন করেছেন। হিরো আলম বলেন, হিরো কখনো জিরো হয় না। কিন্তু সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল স্যার বলেছেন, হিরো আলম জিরো হয়ে গিয়েছে। যারা হিরোকে জিরো বানাতে চায় তারাই জিরো হয়ে গিয়েছে। সেতুমন্ত্রী আমাকে তাচ্ছিল্য করে কথা বলেছেন। তবে একজন মন্ত্রী দেশের নাগরিককে তাচ্ছিল্য করে কথা বলতে পারেন না। খেলার জন্য নাকি উনি মাঠে প্লেয়ার খুঁজে পান না। আমার সঙ্গে একটু প্রতি কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে ভোটারদের ভয় না দেখিয়ে সুষ্ঠু ভোট দিয়ে দেখেন।
হিরো আলম যাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন, তিনি একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিক। সম্প্রতি তিনি তৃতীয়বারের মতো দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক হয়েছেন। তিনি নোয়াখালী-৫ আসন থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। গত দুই সরকারের মেয়াদে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন।
এটা হিরো আলম করতে পেরেছেন এ কারণে যে, বাংলাদেশের আইনসভার সদস্য হওয়ার যোগ্যতায় তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন। সংসদ নিয়ে তার জ্ঞান থাকুক বা না থাকুক, তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন। দেশের সংবিধান বা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আইন হিরো আলমকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।
একজন স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পাস ব্যক্তিকে আমাদের চাকরির বাজারে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণির পদে চাকরি পেতে স্নাতক পাস প্রার্থী খোঁজা হয়। আবার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ছোটখাটো পদে চাকরির ক্ষেত্রেও এমবিএ পাস লাগে। একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা যখন গুরুত্বপূর্ণ তখন দেশের আইন প্রণেতাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা আবশ্যিকভাবেই ‘ভালো’ হওয়া উচিত। তা না হলে দেশের জন্য তারা যে আইন করবেন তা যথাযথ হবে কী করে?
২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম কুমিল্লায় একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য পৃথিবীর কোথাও শিক্ষাগত যোগ্যতা মুখ্য নয়। উচ্চশিক্ষিত না হলেও জনবান্ধব ও মেধাবী অনেকেই ভালো করছেন। তবে শিক্ষিত হলে অবশ্যই ভালো হবে।
মন্ত্রীর কথায় যুক্তি আছে। যদিও জাতীয় সংসদে উচ্চ শিক্ষিতের হার বাড়ছে। তা সত্ত্বেও সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতার বিধান থাকা প্রয়োজন। বিশ্বের কোনো দেশে এই বিধান না থাকলে আমরা যে করতে পারব না তা কিন্তু না। একটি দেশের আইনসভার সদস্যদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলে দেশ এগুবে কী করে?
লেখক: সাংবাদিক
স্ত্রীকে নিয়ে পবিত্র হজব্রত পালনের জন্য ২০২০ সালে আট লাখ টাকা জোগাড় করেছিলেন টঙ্গীর বাসিন্দা মো. কামরুল ইসলাম। সেবার বেসরকারিভাবে হজে যাওয়ার ‘সাধারণ’ প্যাকেজের মূল্য ছিল জনপ্রতি ৩ লাখ ৬১ হাজার ৮০০ টাকা। তবে করোনা মহামারীর কারণে সে বছর শেষ মুহূর্তে হজে যেতে পারেননি তারা।
চলতি বছর হজপালনের পরিকল্পনা করছেন মো. কামরুল ইসলাম। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন, এ বছর বেসরকারিভাবে জনপ্রতি হজ প্যাকেজের মূল্য ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৭ টাকা। এটাই সর্বনিম্ন প্যাকেজ, তবে এটা তিন বছর আগের খরচের প্রায় দ্বিগুণ। সরকারি আয়োজনে প্যাকেজ মূল্য আরও ১০ হাজার টাকা বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে।
মো. কামরুল ইসলাম এখন ভাবছেন বাড়তি টাকা কীভাবে জোগাড় করা যায়। তার পরিকল্পনা বাড়ির সামনের দোকানের পজিশন বিক্রির। এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। না হলে হজপালনের পরিকল্পনাই বাদ দিতে হবে। মো. কামরুল ইসলামের মতো অনেকে হজ প্যাকেজের মূল্যবৃদ্ধির ফলে হজযাত্রা নিয়ে দোলাচলে পড়েছেন। কামরুল ইসলামের যদিও বিকল্পভাবে টাকা জোগাড়ের ব্যবস্থা আছে, যাদের নেই তাদের কী হবে?
খবরে প্রকাশ, এ বছর উড়োজাহাজভাড়া, মক্কা-মদিনার বাড়িভাড়া ও অন্যান্য পরিষেবা খরচ বেড়েছে। এর সঙ্গে ডলার ও সৌদি মুদ্রা রিয়ালের বিনিময় হার বৃদ্ধি পাওয়ায় সার্বিকভাবে হজপালনের খরচ বেড়েছে। গত বছরের হজ প্যাকেজের সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায়, চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে যাওয়া ও আসার উড়োজাহাজভাড়া বেড়েছে ৪০ শতাংশের বেশি। গত বছর যাওয়া-আসার (রাউন্ড ট্রিপ) ভাড়া ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এবার তা ৫৭ হাজার ৭৯৭ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা। সাধারণভাবে ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা পথে একটি রাউন্ড ট্রিপে উড়োজাহাজের টিকিটের মূল্য ধরা হয় ১ লাখ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকার মতো। সেই তুলনায় হজ প্যাকেজের উড়োজাহাজভাড়া অনেক বেশি। উড়োজাহাজভাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে মক্কা ও মদিনায় হজযাত্রীদের বাড়িভাড়া। গত বছর হজ প্যাকেজে বাড়িভাড়া (ভ্যাটসহ) ছিল ৬ হাজার ৫০৪ রিয়াল বা ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫৭ টাকা। এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ৭ হাজার ২০১ রিয়াল বা ২ লাখ ৪ হাজার ৪৪৫ টাকা। গত বছর বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি রিয়ালের দাম ২৪ দশমিক ৩ টাকা হিসাব করা হয়েছিল। চলতি বছর তা হিসাব করা হয়েছে ২৮ দশমিক ৩৯ টাকা।
হজের সময় পাঁচ দিন ধরে মিনা, আরাফাহ ও মুজদালিফায় হজযাত্রীদের বিভিন্ন পরিষেবা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে তাঁবুর ব্যবস্থা করা, তাঁবুতে ম্যাট্রেস, বিছানা, চাদর, বালিশ, কম্বল, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ও প্রতিদিনের খাবার সরবরাহ ইত্যাদি। মোয়াল্লেম সেবা হিসেবে পরিচিত এসব পরিষেবার জন্য খরচ গত বছর প্রাথমিকভাবে ২ হাজার ৫২০ রিয়াল বা ৬১ হাজার ২৩৬ টাকা (প্রতি রিয়াল ২৪ দশমিক ৩ টাকা ধরে) নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরে তা বেড়ে হয় ৫ হাজার ৬৫৬ রিয়াল বা ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। এ বছর এই খাতের খরচ মাত্র ২ রিয়াল বেড়েছে। তবে মুদ্রার বিনিময় হার বাড়ায় (প্রতি রিয়াল ২৮ দশমিক ৩৯ টাকা ধরে) তা ১ লাখ ৬০ হাজার ৬৩০ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া চলতি বছর হজযাত্রীদের খাবার খরচ, জমজমের পানি, ভিসা ফি ও হজ গাইড বাবদ ব্যয় বেড়েছে।
হজের খরচ বৃদ্ধির কারণ বিশ্লেষণে এটা স্পষ্ট, হজের ব্যয় বৃদ্ধিতে সৌদি আরব এবং বাংলাদেশ যার যার অবস্থানে লাভের জায়গায় কোনো ধরনের ছাড় দেয়নি। অর্থাৎ লোভের হাত থেকে ছাড় পায়নি পবিত্র হজ খাত। হজের মতো ফরজ ইবাদত ও ধর্মীয় বিষয় নিয়ে এমন মুনাফাবাজি সাধারণ মানুষ কখনোই আশা করেনি। হজ থেকে তো কোনো সরকারেরই মুনাফা করার কথা নয়।
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ মধ্যবিত্ত। প্রায় সবার শেষ আশা থাকে, আল্লাহর মেহমান হয়ে জীবনে একবার হলেও পবিত্র কাবা ঘর জিয়ারত ও নবীজির রওজায় উপস্থিত হয়ে সালাম পেশ করার। কিন্তু হজের ব্যয় বৃদ্ধির কারণে অনেক হজযাত্রীই চোখের পানি ফেলে প্রাক-নিবন্ধন বাতিল করছেন।
২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে হজ প্যাকেজের মূল্য ছিল ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। একই বছর ভারতের হজ প্যাকেজ ছিল বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫ লাখ ৭৬৩ টাকা আর পাকিস্তানের হজ প্যাকেজের মূল্য ছিল বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩ লাখ ৩১ হাজার ৭৫২ টাকা। চলতি বছর বাংলাদেশি টাকায় ভারতের হজ প্যাকেজ মূল্য হচ্ছে প্রায় ৫ লাখ ১৫ হাজার ৮৪৬ টাকা আর পাকিস্তানের হজ প্যাকেজ মূল্য হচ্ছে ৩ লাখ ৫০ হাজার ৯৭২ টাকা।
গত জানুয়ারি মাসেও ১৫ দিনের ওমরাহ প্যাকেজের খরচ ছিল ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা। এই টাকায় উড়োজাহাজভাড়া, মক্কা-মদিনায় আবাসন, মক্কা-মদিনা যাতায়াত ও খাবার যুক্ত ছিল। সেখানে হজের সময় এমন অস্বাভাবিক খরচ বৃদ্ধির যৌক্তিক কোনো কারণ থাকতে পারে না।
প্রশ্ন হলো, বর্তমান অবস্থায় হজের ব্যয়বৃদ্ধির প্রভাব সম্ভাব্য হজযাত্রীরা কীভাবে মোকাবিলা করবেন? উত্তর, এ বছর বাংলাদেশ থেকে হজে যাওয়ার জন্য যারা নিবন্ধন করেছেন, হজের প্যাকেজ মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে তাদের বড় একটি অংশই শেষ পর্যন্ত আর হজে যাবেন না। বাস্তবে তেমনটি ঘটলে সম্ভবত এ বছরই হবে এ ধরনের প্রথম ঘটনা যে কোটা বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত তা অপূর্ণ থেকে যাবে।
যদি বলা হয়, উড়োজাহাজভাড়া বেড়ে যাওয়ার কারণে প্যাকেজব্যয় বাড়াতে হচ্ছে, তাহলে বলব, হজযাত্রী পরিবহনের একচেটিয়া কর্র্তৃত্ব শুধু বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি এয়ারলাইনসের ওপর ছেড়ে না দিয়ে সব এয়ারলাইনসের মধ্যে প্রতিযোগিতা সৃষ্টির জন্য তা উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক। এমনটি করা হলে তাতে উড়োজাহাজভাড়া কমতে বাধ্য।
অন্যদিকে সৌদি আরবে পবিত্র কাবা অবস্থিত হওয়ায় পুরো হজ ব্যবস্থাপনা সৌদি সরকার করে থাকে। সৌদির সঙ্গে জড়িত হজপালনে যেসব আনুষঙ্গিক খরচ বেড়েছে, তা আন্তর্জাতিক বাজার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কি নাসেটাও কূটনৈতিক পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা করা যেতে পারে। সবদিক থেকে হজপালনে কিছুটা ব্যয় সাশ্রয় হলে স্বল্প আয়ের দেশের মানুষ হজপালনে আরও বেশি করে অংশ নিতে পারবেন। তাই সরকারকে দেশে এবং সৌদি আরবের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে সহনীয় মাত্রায় হজযাত্রার ব্যয় সর্বনিম্ন ৫ লাখ টাকার নিচে পুনর্নির্ধারণ করা প্রয়োজন বলে মনে করি। আর ব্যয়সাশ্রয়ের লক্ষ্যে হাজিদের দেখাশোনার জন্য ন্যূনতম পর্যায়ের লোকবল যুক্ত রেখে রাষ্ট্রীয় ব্যয়ে হজপালনের সুযোগ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়েও সরকারের সিদ্ধান্ত কামনা করছি।
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক
শত শত বছর আগে আরবিভাষী মুসলিম ধর্মপ্রচারকরা ইন্দোনেশিয়ায় এসেছিলেন। সে কারণে আরবি ভাষার প্রভাব রয়েছে ইন্দোনেশিয়ানদের ধর্মীয় এবং সামাজিক আচারে। তবে মাতৃভাষা পরিত্যাগ না করার ফলে ধর্মীয় আরবি ভাষার তুলনায় মাতৃভাষা রয়েছে শক্ত অবস্থানে। মাতৃভাষা এবং আরবি ভাষার মিশ্রণে নামও রয়েছে তাদের, যেমন আল হাসাবি, শিহাব ইত্যাদি। অস্ট্রোনেশিয়ান, জ্যাভানিজ, সুন্দানিজ, বালিনিজ ভাষার পাশাপাশি আরবি, সংস্কৃত, চাইনিজ এবং পশ্চিমা বিভিন্ন ভাষাভিত্তিক নামও অনেকের রয়েছে। সাবেক স্বৈরশাসক সুহার্তোর শাসনামলে আইনি প্রক্রিয়ায় চাইনিজদের নিজ ভাষায় নামকরণ নিষিদ্ধ করে ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় ব্যক্তির নামকরণে বাধ্য করা হয়েছিল। সে কারণে চাইনিজরা নিজেদের মাতৃভাষার পরিবর্তে ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় তাদের নাম রাখতে বাধ্য হয়েছিল। যেমন চাইনিজ জনৈক ব্যবসায়ী তার নাম লিম সু লং পাল্টে রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন সুদানো সেলিম। সুহার্তোর শাসন অবসানের পর ওই কালো আইনটি রদ করা হয়েছে। সে কারণে চাইনিজ ইন্দোনেশিয়ানরা নিজ ভাষায় নাম রাখার স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছেন।
সংখ্যাগরিষ্ঠ ইন্দোনেশিয়ানরা পারিবারিক নামের ধারাবাহিকতায় নিজেদের নামকরণ করেন না। নগণ্য সংখ্যকের ক্ষেত্রেই পারিবারিক নামের পদবি দেখা যায়। পিতৃপরিচয়ের ভিত্তিতে অনেকের নাম রয়েছে, যেমন প্রয়াত প্রেসিডেন্ট সুকর্নর কন্যা সাবেক প্রেসিডেন্ট মেঘবতী সুকর্ণ পুত্রী, যার বঙ্গানুবাদ মেঘবতী সুকর্নর কন্যা। আবার এমনও দেখা যাবে যে, পিতার নাম আহমেদ সুধর্মা, পুত্রের নাম আলি পুত্রা সুধর্মা অর্থাৎ সুধর্মার ছেলে আলি। এটি আরবদের অনুসরণে নিশ্চয়। আরবরা বিন-বিনতে-এর পর পিতার নাম যুক্ত করে দেয় নামের শেষে। ইদানীং আমাদের দেশেও অমন অনুকরণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে।
খ্রিস্টান অধ্যুষিত পূর্ব তিমুর দীর্ঘকাল ইন্দোনেশিয়ার অংশ ছিল। পৃথক রাষ্ট্রের দাবিতে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সঙ্গে পূর্ব তিমুরবাসীর রক্তক্ষয়ী সংঘাত ছিল নিয়মিত। অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের চাপে পূর্ব তিমুরের দখলদারিত্ব ইন্দোনেশিয়া ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। পূর্ব তিমুর এখন স্বাধীন পৃথক রাষ্ট্র। পূর্ব তিমুরের ভাষা পর্তুগিজ এবং টিটাম। এই দুই ভাষার পাশাপাশি পূর্ব তিমুরবাসীদের ব্যক্তির নাম ল্যাটিন এবং আরবি ভাষায়ও রয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ নাম বিশ্বে বিরল। বিশেষ করে দুই-তিন ভাষার শব্দের মিশ্রণে খুব কম দেশের মানুষের নামকরণ রয়েছে।
ধর্মীয় আনুগত্যের দায়বদ্ধতায় ব্যক্তির নামকরণের পাশাপাশি কিছুটা হলেও ভাষাভিত্তিক ব্যক্তির নামকরণের প্রবণতা দেখা দিয়েছিল আমাদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-সংগ্রামের সময়কালে এবং স্বাধীনতার পরপর। তবে সে-প্রবণতা স্থায়ী হয়নি। সে-ধারাবাহিকতা অক্ষুণœও থাকেনি, যেমন থাকেনি ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পরিচয় পর্যন্ত। রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ বিধান পাল্টে ধর্মীয় মোড়ক এঁটে দেওয়া হয়েছে পরিকল্পিতভাবেই। ঘটনাটি সামরিক সরকারের আমলে ঘটেছিল বটে, তবে নির্বাচিত সরকার স্থায়ী করে দিয়েছে। আমাদের দেশে ধর্মভিত্তিক নামকরণের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যক্তির ভাষাভিত্তিক নামকরণের দৃষ্টান্ত ক্রমেই বিরল হয়ে পড়েছে।
আমাদের দেশে প্রান্তিক পর্যায়ের ব্যক্তির নামের শেষে মিয়া ব্যবহৃত হয়। মিয়া শব্দের অভিধানিক অর্থ সম্ভ্রান্ত মুসলিম ভদ্রলোক। শব্দটির আরবি অর্থ একশত। মিয়া পদবি এক সময়ে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ছিল। কালের বিবর্তনে তা এখন সেকেলে এবং অত্যন্ত সাধারণ পদবিতে পরিণত হয়েছে। সাধারণের নামের শেষেই স্থান পেয়েছে। একে অপরকে সম্মানিতরূপে মিয়া সম্বোধন অতীতের রেওয়াজ ছিল, এখন করলে অপমান-আপত্তিজনক বলেই বিবেচিত হবে।
হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের ব্যক্তির নামের পেছনে পদবি থাকে। হিন্দুদের ক্ষেত্রে জাত-বর্ণের ভিত্তিতে এবং খ্রিস্টান-মুসলিমদের ক্ষেত্রে বংশানুক্রমে। চৌধুরী, মজুমদার পদবি হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের নামের শেষে আমরা দেখি বটে, তবে পদবির অগ্রভাগের নাম দেখে সহজেই চিহ্নিত করা যায় ব্যক্তির সম্প্রদায়গত পরিচয়। বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সংখ্যাগরিষ্ঠদের নামের প্রথমাংশ মাতৃভাষায় অর্থাৎ বাংলায়। তবে নামের শেষাংশ অবশ্যম্ভাবীরূপে সম্প্রদায়গত এবং জাত-বর্ণ পরিচয়ে। সে কারণে তাদের নামকে শতভাগ মাতৃভাষাভিত্তিক এবং সম্প্রদায়-ঊর্ধ্বে বিবেচনা করা যায় না। হরিপদ, বিষ্ণুপদ, ইন্দ্রজিৎ, রামপ্রসাদ, ঈশ্বরচন্দ্র, কালীপ্রসন্ন, নারায়ণ, বিষ্ণু-প্রিয়া, দুর্গাদাস, লক্ষ্মীকান্ত, শিবশঙ্কর, মহাদেব, শিবানী, ইত্যাদি প্রচুর নাম সম্পূর্ণরূপে সম্প্রদায়গত। দেবতাদের নামানুসারে। বাঙালি হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায় ধর্মীয় বিবেচনাতেই ব্যক্তির নামকরণ করে থাকে। নাম দিয়ে সহজেই চেনা যায় কে হিন্দু, কে মুসলিম।
যিশুখ্রিস্টের শিষ্য সেন্ট টমাস জেরুজালেম থেকে মাদ্রাজে এসেছিলেন ৫২ খ্রিস্টাব্দে। বিশ বছর ধর্মপ্রচারের পর ৭২ খ্রিস্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ভারতের চেন্নাইর মাইলাপোরে তার সমাধি রয়েছে। সমাধিস্থলটি বিশাল ইনস্টিটিউটে পরিণত। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ মানত করতে সেখানে যান। সেখানকার সার্বিক অবস্থার সঙ্গে আজমিরের খাজা মঈনুদ্দিন চিশতির দরগাহর মিল রয়েছে। সেন্ট টমাসের আগমন, ধর্মপ্রচার এবং মৃত্যুসহ সব তথ্যাদি পুস্তকাকারে বিলি করা হয় এবং বিশাল একটি এপিটাফে সে সমস্ত তথ্য লিপিবদ্ধ রয়েছে।
খ্রিস্টান সম্প্রদায়ে মোটাদাগে দুটি ভিন্ন মত-পথ স্পষ্ট। একটি ক্যাথলিক অপরটি প্রোটেস্ট্যান্ট। ধর্মান্তরিত ক্যাথলিক খ্রিস্টানরা অতীত নাম-পদবি পাল্টে নতুন নাম-পদবি গ্রহণ করে থাকে। বাইবেল অনুসরণে এবং বিভিন্ন সাধু-সাধ্বী, যাজকের নামানুসারে নাম রেখে থাকে। অপর দিকে প্রোটেস্ট্যান্টরা ধর্মান্তরে নাম-পদবি পরিবর্তন না করে অতীত নাম ও পদবি ব্যবহার করে। ১৯৭১-এর মার্চ থেকে ৯ মাসব্যাপী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যার সময়কালে খ্রিস্টান পরিচয়ে আত্মরক্ষার্থে প্রোটেস্ট্যান্টরা বাধ্য হয়ে নিজেদের নামের অগ্রভাগে বিভিন্ন খ্রিস্টধর্মের সাধু, সাধ্বী, যাজকদের নাম যুক্ত করেছিল। তবে তাদের অতীত পদবি তারা বংশানুক্রমে নিজেদের নামের শেষে যুক্ত রেখেছে। তাদের পদবিতে দাস, বিশ্বাস, চৌধুরী, গুপ্ত, সাহা, ব্যানার্জি এমনকি খান, খন্দকার, হোসেন পর্যন্ত রয়েছে।
ধর্মীয় উৎসব পার্বণের এবং জাতীয় দিবসের নামানুসারে ব্যক্তির নাম রাখার নানা নজির রয়েছে। ওই সমস্ত দিনে জন্ম নেওয়া অনেকের নাম পার্বণের নামানুসারে হয়েছে; এমনটাও আমরা দেখে থাকি। যেমন আশুরার দিনে আশুরা, শবেকদরের দিনে কদর বানু, শবেমেরাজের দিনে মেরাজ, রোজার মাসে রমজান, কোরবানির ঈদে কোরবান আলি। ১৪ আগস্টে জন্ম নেওয়া অনেকের নাম পাকিস্তান, আজাদ, পাকিস্তান আমলে দেখেছি।
অনেকের আবার নাম আছে, যেমন- ফজর আলি, যোহর আলি, আসর আলি, মাগরিব উদ্দিন। এশা নামটি হালে কন্যাসন্তানদের ক্ষেত্রে অধিকমাত্রায় দেখা যায়। সপ্তাহের সাত দিনের নামেও অনেকের নাম রাখা হয়; শুক্রবারে শুকুর মিয়া, রবিবারে রবি, সোমবারে সম্মন, মঙ্গলবারে মঙ্গল ইত্যাদি।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত
১৬৭৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন বিশ্বখ্যাত ফরাসি নাট্যকার মলিয়ের। পশ্চিমা সাহিত্যের সেরা হাস্যরসাত্মক রচনাকারদের একজন হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হয়। তার রচনাগুলোর মধ্যে ল্য মিসান্থ্রপি, ল্য এক্ল দেস ফেমেস, টারটুফে অউ ল্য ইম্পোস্তার, ল্য আভ্রে, ল্য মালাদে ইমাজিনারে উল্লেখযোগ্য। মলিয়ের ১৬২২ সালের ১৫ জানুয়ারি ফ্রান্সের প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন। ‘দে ক্লেরমন্ট’-এর মতো নামকরা কলেজে পড়ানোর কারণে থিয়েটারে যোগ দেওয়া তার জন্য খুব সহজ ছিল। ভ্রাম্যমাণ অভিনেতা হিসেবে ১৩ বছরের জীবনাভিজ্ঞতা থেকেই তিনি প্রথম নাটক লেখেন। সেখানে তিনি ইতালীয় ঘরানার কমেডির সঙ্গে ফরাসি হাস্যরসের মিশ্রণ ঘটান। পরে ফরাসি রাজার চোখে পড়ায় তিনি ও তার দল রাজভাতা পায়। যদিও তিনি রাজা ও প্যারিসের অধিবাসীদের ভূয়সী প্রশংসা পান, কিন্তু তার বিদ্রুপাত্মক লেখা নীতিবাদী ও ক্যাথলিক চার্চ অনুসারীদের সমালোচনার মুখে পড়ে। ধর্মীয় ভণ্ডামিকে আক্রমণ করায় চার্চ তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। নাটকের কাজে অত্যধিক পরিশ্রমের ফলে মলিয়েরের স্বাস্থ্য দুর্বল হতে শুরু করে, ফলে ১৬৬৭ সালে তিনি বাধ্য হন মঞ্চ থেকে সাময়িক অবসর নিতে। ১৬৭৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি যক্ষ্মাক্রান্ত অবস্থাতেই তিনি জীবনের শেষ নাটক ‘ল্য মালাদে ইমাজিনার’-এ অভিনয় করেন। আর্গন নামক স্বাস্থ্য আতঙ্কিত রোগীর ভূমিকায় অভিনয়রত অবস্থাতেই উপর্যুপরি কাশি ও রক্তস্রাবের শিকার হন। নাটকটির অভিনয় শেষ করে তিনি মঞ্চেই ঢলে পড়েন এবং কয়েক ঘণ্টা পর মৃত্যুবরণ করেন। তখন তার বয়স ৫১ বছর। মলিয়েরের হাসির নাটক আমাদের দেশের মঞ্চেও জনপ্রিয়। লোক নাট্যদল ‘কঞ্জুস’ ও সাত্ত্বিক নাট্যদল ‘পেজগী’ নামে তার দুটি নাটকের বাংলা অনুবাদ মঞ্চস্থ করে থাকে।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে, বাংলাদেশের ‘পরিবেশ’ বৈচিত্র্য বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। এসব বন্যপ্রাণী, বিভিন্ন প্রতিবেশ ব্যবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারায় অধিকাংশ প্রাণীই বর্তমানে বিপন্ন। বাদ পড়ছে না সরীসৃপ প্রাণীও।
বাংলাদেশে পাওয়া যায়, এমন সরীসৃপ প্রাণীর মধ্যে ত্রিশটিরও বেশি প্রজাতি বর্তমানে মহাবিপন্ন। ৩০ কোটি বছর আগে সরীসৃপের উদ্ভব ঘটেছিল। এসব সরীসৃপ প্রজাতির মধ্যেই আছে ২ প্রজাতির কুমির।
গতকাল দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত, ‘ভালুকায় উন্মুক্ত হলো- কুমিরের খামার’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, দেশীয় পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করতে ময়মনসিংহের ভালুকায় উথুয়া ইউনিয়নের হাতিবেড় গ্রামে দেশের প্রথম ‘র্যাপটাইলস ফার্ম’ নামের বাণিজ্যিক কুমির খামার পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এতে এই এলাকায় পর্যটনের পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির দিকে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। গত মঙ্গলবার খামারটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে খামার কর্তৃপক্ষ।
সংবাদে আরও জানা যায়, বর্তমানে নতুন বাচ্চাসহ ২৫২৬টি কুমির রয়েছে খামারে। চেয়ারম্যান ড. নাঈম আহমেদ জানান, খামারের ব্যয় মেটাতেই আমরা পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করেছি। সেখানে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য টিকিটের মূল্য ১৫০ টাকা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
বিশ্ববাজারে কুমিরের চামড়া, মাংস, হাড়, দাঁতের বেশ কদর। পাশাপাশি এর দামও চড়া। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, ইতালি এবং এশিয়ার চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ায় এগুলোর ব্যাপক চাহিদা। দেশের প্রথম র্যাপটাইলস ফার্ম নামের বাণিজ্যিক কুমির খামার পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এতে এলাকায় পর্যটনের পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। ইউরোপ ছাড়া পৃথিবীর সব মহাদেশেই প্রায় ১৭.৫ কোটি বছর আগে ডাইনোসরের সমকালীন কুমিরের উদ্ভব ঘটলেও ডাইনোসরের বিলুপ্তির পর অদ্যাবধি এরা পৃথিবীর বিভিন্ন ভৌগোলিক পরিবেশে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে আসছে।
পরিবেশ ও অর্থনৈতিক গুরুত্বের দিক থেকে বাংলাদেশে কুমিরের প্রজনন ও চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে কুমিরের বাণিজ্যিক চাষ করা হয়। অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক উন্নত দেশে, কুমির অপ্রচলিত খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ঐসব দেশে, পর্যটন শিল্প হিসেবে কুমিরের খামার স্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া কুমিরের চামড়া অনেক অভিজাত সামগ্রী তৈরিতে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। প্রাকৃতিক পরিবেশে কুমিরের প্রজাতিসমূহের বিলুপ্তি রোধকল্পে এর আবাসস্থলের উন্নয়ন ও প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। তাছাড়া কুমিরের কৃত্রিম প্রজনন-কৌশল ও চাষ-পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য দেশের বিভিন্ন পরিবেশগত অঞ্চলে, সরকারি উদ্যোগে আধুনিক সুবিধা সংবলিত কয়েকটি গবেষণাগার স্থাপন করা জরুরি। এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে কুমিরের উৎপদন বৃদ্ধিসহ এ থেকে প্রক্রিয়াজাতকৃত পণ্য রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।
একটি বিষয় মনে রাখা দরকার, যে কোনো দেশে অর্থনীতির মূল শক্তি রপ্তানি। যে দেশ যত বেশি পরিমাণে পণ্য রপ্তানি করতে পারে, সেই দেশ অর্থনৈতিকভাবে তত শক্তিশালী। এক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে কুমির চাষ। একইসঙ্গে সাধারণ মানুষের জন্য, খামারটি উন্মুক্ত করে দেওয়ায় মানুষও পাচ্ছেন নির্মল বিনোদন। দেশে এমন ‘ক্ষেত্র’ খুব একটা নেই যেখান থেকে আয় হবে বৈদেশিক মুদ্রা এবং দেশের মানুষ পাবে নির্মল বিনোদন। মানুষের হৃদয়স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে, নির্মল বিনোদন ভীষণ প্রয়োজন। কুমির খামারটি অর্থনৈতিকভাবে কীভাবে আরও ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু পদক্ষেপ জরুরি।
সচেতনতা বৃদ্ধি ও সংরক্ষণ বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে, বিপন্ন সরীসৃপ প্রাণী রক্ষা করা প্রয়োজন। তবেই প্রতিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে, ভালো থাকবে সার্বিক পরিবেশ।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিশ্বের প্রায় সব দেশই। অধিকাংশ দেশই তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কার নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির কথা প্রায় সবারই জানা, তারাও ইতিমধ্যে তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এসেছে। তবে ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার। ফলাফল ভোক্তা মূল্যসূচকে (সিপিআই) বা মূল্যস্ফীতিতে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড। মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সিপিআই ইনডেক্সে এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।
গত ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করে সরকার। এ বাজেটের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আগামী অর্থবছরে সরকার কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বাজেট প্রস্তাবে কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি পরাবাস্তব বাজেট। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা আসলে সম্ভব নয়। গত ১১ মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। সে হিসাবে মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো, আগের বছরের মে মাসে যে পণ্য গড়ে ১০০ টাকা কিনতে হয়েছে, এ বছরের মে মাসে তা কিনতে হচ্ছে গড়ে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সায়। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, ধরুন আগের বছরের একই সময়ে ৫০০ টাকার একটি নোটে কোনো ব্যক্তি পাঁচটি পণ্য কিনতে পেরেছিলেন। এ বছরের একই সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এখন একই টাকায় তিনটি পণ্য কিনতে পারছেন। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১ বছরে বেড়েছে ১১.৩২ শতাংশ : ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, অথচ এ বছরের মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ বছরের এপ্রিল মাসেও খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।
খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে এক বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ : বিবিএসের তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বা ৬৪ শতাংশ।
গ্রামের চেয়ে শহরের মূল্যস্ফীতি বেশি : এক বছর আগেও শহরের মূল্যস্ফীতি গ্রামের চেয়ে কম ছিল। কারণ গ্রামের চেয়ে শহরে পণ্য মজুদের আধুনিক ব্যবস্থা আছে। তবে সরকারি উদ্যোগে শহরের মতো গ্রামেও কিছু স্থানে খাদ্যগুদামের ব্যবস্থা তৈরি হওয়ায় এখন শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি কমেছে। মে মাসে শহর এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, একই সময়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বিশ্বে কমেছে মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশে বাড়ছে : গত শনিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট-পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, থাইল্যান্ডে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, গত এপ্রিলে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ আগের তুলনায় দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে ৬৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। সেখান থেকে ৪৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গত অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, সেখান থেকে ৩৪ শতাংশ কমিয়ে ৭ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে ইইউ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়। তবে বাংলাদেশ এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় শুরুর দিকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো গত বছর আগস্টে এক ঘোষণাতেই জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই মাসেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশ দেরিতে হলেও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। বর্তমানে এ সুদহার ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে নীতি সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে আভাস দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দাবি করেছে, বিশে^র দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির যে হার, তা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য হুমকি। মূল্যস্ফীতির এই হার ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
২০০৯ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখনো মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর ছিল। পরে অবশ্য তা কমতে কমতে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঠিক এরকম এক সময়ে গত বছর ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এর পরপরই বাড়ানো হয় সব ধরনের পরিবহন ভাড়া। এ দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। ফলে পরের মাস আগস্টে মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে।
যদিও সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে থাকে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে আসে। জানুয়ারিতে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চ মাসে হয় ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এপ্রিলে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এসেছিল।
মজুরি সূচক বেড়েছে : বিবিএসের তথ্য বলছে, গত কয়েক মাস ধরেই মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। অক্টোবরে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩২ শতাংশে।
দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে হাইড্রোলিক পাওয়ার স্টেশনে তীব্র পানির সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। অনাবৃষ্টি এবং তীব্র তাপদাহে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে এই সংকট দেখা দিয়েছে। ৫টি ইউনিটের মধ্যে কোনরকমে মাত্র ১টি ইউনিট সচল রেখে সর্বনিম্ন ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৬ জুন) সকালে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আবদুজ্জাহের জানান, হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি জানান, পানির অভাবে কেন্দ্রের সব ক’টি ইউনিট সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে ঠেকেছে। তিনি আরও জানান, কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে ১ নম্বর ইউনিটটি চালু রাখা হয়েছে। এই ইউনিট হতে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। অথচ এই কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট সচল থাকলে প্রায় ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে পাঠানো হয়। সেখানে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট।
এটিএম আব্দুজ্জাহের বলেন, বছরের এই সময়ে কখনই পানি এতো নিচে থাকে না। এ বছর এখনো বৃষ্টিপাত শুরু না হওয়ায় খুবই বিপাকে পড়তে হয়েছে আমাদের। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মাত্র একটি ইউনিট চালু আছে। আমরাও বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি।
কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বরত প্রকৌশলী জানান, গত মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদের পানির পরিমাণ ৭৩ দশমিক ৬২ ফুট (মিন সি লেভেল) ছিল। রুলকার্ভ অনুযায়ী এসময় হ্রদে পানি থাকার কথা ৭৮ দশমিক ২০ ফুট এমএসএল (মিন সি লেভেল)। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচুর বৃষ্টিপাত না হলে এই সংকট হতে উত্তরণ সম্ভব নয় বলে জানান প্রকৌশলীরা।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানায়, অনাবৃষ্টি, বন উজার হওয়া, কাপ্তাই হ্রদে নাব্যতা সংকটের কারণে পানি তলানিতে চলে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে এমন বিপর্যয় ঘটেছে। সঙ্গতকারণে গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে পানি কমে যাওয়ার ফলে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে তা নয়, কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। হ্রদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি উপজেলার সাথে নৌপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে মানুষের দুর্ভোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কাপ্তাই হ্রদের পাশে বসবাসকারী নুরুল ইসলাম জানান, ভারী বৃষ্টিপাত না হলে হ্রদে পানি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। তাই দ্রুত সময়ে কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং করা প্রয়োজন। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদের গভীরতা যেমন বাড়বে তেমনি এই সমস্যা থেকে কিছুটা সমাধান পাওয়া যাবে।
বিলাইছড়ি বাজারের ব্যবসায়ী ইসমাঈল হোসেন জানান, বিলাইছড়িতে নৌপথ বন্ধ মানেই জীবন ও জীবিকার দুর্বিষহ অবস্থা। আমরা বিলাইছড়িবাসীই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি হ্রদের পানি কমে যাওয়ায়। বৃষ্টি হতে যত দেরি হবে আমাদের কষ্ট তত বেশি দীর্ঘায়িত হবে।
তিনি বলেন, হ্রদের পানি অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় বাজারের পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। বড় বোটতো আসতেই পারছে না, ছোট ছোট বোটে পণ্য পরিবহনে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে, পর্যাপ্ত পণ্যও আনা যাচ্ছে না। আবার অনেক দূর থেকে পণ্য বাজারে তুলতে শ্রমিকদের বাড়তি মজুরি দিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে সাপ্তাহিক বাজারও এখন ঠিকমতো জমছে না। কারণ দূর থেকে মানুষজন আসতে পারছে না। এখন বৃষ্টি হওয়া ছাড়া পানি বাড়ার তো আর কোনো সম্ভাবনা নেই।
অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল সোমবার দুপুরে কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটে গত ২৫ মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়। ২০২০ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পর এবারই প্রথম কয়লা সংকটে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হলো।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের এই বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানটিকে কয়লা ক্রয়ে ঋণ দিয়ে আসছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল পর্যন্ত কয়লার ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিএমসি। পরে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হলে কয়লা আমদানির এলসি খোলার শর্ত দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান। গতকাল পর্যন্ত ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ মাসের শেষদিকে কয়লা দেশে আসার কথা রয়েছে।
কয়লার অভাবে দেশের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক মাসে লোকসান হবে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে জনদুর্ভোগ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে পুরো ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
এদিকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের বাইরে শুধু কয়লাবাবদ পিডিবির কাছে কেন্দ্রটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকা এ বকেয়ার টাকা পরিশোধের জন্য দফায় দফায় চিঠি দিয়েও তা পরিশোধ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলছে, বৈশি^ক মন্দার পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি কেন্দ্রভাড়া বাবদ প্রতি মাসে পিডিবিকে ২৪৭ কোটি টাকা দিতে হবে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও নির্ধারিত কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে পিডিবিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট করে প্রায় তিন কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল কেন্দ্রটি। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি ইউনিট। গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকার মতো।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার প্রকৃত জানা না গেলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানান, সব ধরনের ব্যয় বাদ দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে তাদের নিট মুনাফা হতো ৫ থেকে ৬ শতাংশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড়মূল্য সাড়ে ৫ টাকা এবং মুনাফা সাড়ে ৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক মাসে মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এ মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে বিসিপিসিএল। এদিকে কয়লা কেনার জন্য সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ছয় মাসের বেশি সময় কয়লার বিল বকেয়া থাকায় সুদের পরিমাণও বেড়ে যাবে। বাড়তি এ সুদের অর্থ বিসিপিসিএলকেই পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রতি ইউনিটের গড়মূল্য প্রায় ১১ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও পিডিবি এ বিদ্যুৎ লোকসান দিয়ে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়। পায়রা থেকে এক মাস বিদ্যুৎ কিনতে না পারলে পিডিবির লোকসান আরও বাড়বে।
সূত্রমতে, কয়লা দেশে পৌঁছানো এবং কেন্দ্র চালু করতে সব মিলে অন্তত এক মাসের মতো সময় লাগবে। কোনো কারণে যদি কয়লা আসতে আরও দেরি হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিশে^র সেরা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এক সুইচে চালু করার পর নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বৈশি^ক কারণে ডলার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তবে এ সময়ে আমরা বসে না থেকে কেন্দ্রের মেইনটেনেন্সের কাজটি করে ফেলব, যাতে দীর্ঘদিন আর মেইনটেনেন্স করা না লাগে।’
কেন্দ্রটি বন্ধের ফলে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে তা জানতে চাইলে প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘আমরা এমনিতেই বকেয়া বিল পাচ্ছি না। এটাই বড় ক্ষতি। অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি কেন্দ্রটি বন্ধের কারণে সাশ্রয়ী দামে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দিতে না পেরে কমফোর্ড ফিল করছি না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র ভাড়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি এবং কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলেও এ ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয়। আর লোডশেডিং না দিয়ে সরকার যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়, তাহলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই এই মুহূর্তে। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৪ টাকার ওপর লোকসান হবে।’ তিনি বলেন, ‘ডলার ছাড় ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আগেই ডলার ছাড় করা উচিত ছিল। এতে বিরাট ক্ষতি হলো। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয় হতে পারে। একটি হলো যারা ডলার ছাড় করছেন তারা বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না অথবা দেশের পরিস্থিতি আসলেই ভয়াবহ। তবে দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডলার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। আর বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে। এ ক্ষেত্রে খাতের গুরুত্ব বুঝে ডলার ছাড় করা হয়। তবে দেশের প্রয়োজনে ডলার ছাড় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের গাফিলতি নেই।’
সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে প্রেম এরপর বিয়ে। দেড় বছরের দাম্পত্য জীবনে আট মাস ধরে চিত্রনায়িকা পরীমণি ও শরিফুল রাজের বনিবনা হচ্ছে না বলেই শোনা যাচ্ছে। চলছে টানাপোড়েন এবং সেই সংসার এখন ভাঙনের পথে। রাজের ফেসবুক থেকে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর রাজের সঙ্গে পরীমণির মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। সব ছাপিয়ে যা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রবিবার একটি গণমাধ্যমের ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে এসে শরিফুল রাজ জানান, আপাতত তারা সেপারেশনে আছেন এবং তাদের আর একসাথে হওয়ার কোন সুযোগ নেই। পরীকে তিনি শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে সবশেষে পরীমণির উদ্দেশ্যে রাজ বলেন, ‘বেবি, আই লাভ ইউ। যা-ই হোক না কেন, আনন্দে থেকো। আমরা আমাদের সন্তানকে ভালো রাখব।’
রাজের এমন মন্তব্যের উত্তর দিতে সোমবার রাতে গণমাধ্যমটির লাইভে এসে রাজের উদ্দেশ্যে পরীমণি বলেন, ‘গরু মেরে জুতা দান করার কোনো দরকার নেই। কেউ রেসপেক্ট করলে সেটা তার কার্যকলাপ দেখেই বোঝা যায়, মুখ ফুটে বলতে হয় না। আমাকে পাবলিকলি অপমান করে এরপর রেসপেক্ট দেখানোর কোনো দরকার নেই। আর আমার বাচ্চাকে নিয়ে এসব ইমোশনালি কোনো কথা শুনতে চাই না। এসব ইমোশনালি কথা মানুষকে গিলিয়ে লাভ নেই। মানুষ বুঝে।’
ফাঁস হওয়া ভিডিওগুলো পরী বলেন, ‘এত বছর ধরে তারা বন্ধু অথচ আমি জানতাম না। এসব সামনে আসার পর জানতে পারলাম। আর রাজ যতটা তার বন্ধুদের ইমেজ নিয়ে কনসার্ন তার পরিবার নিয়ে এতটাও কনসার্ন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমনিতে অনেক শান্তশিষ্ট। অনেকটা সাপের মতো, লেজে পাড়া না দিলে চুপচাপ থাকি কিন্তু আমার লেজে পাড়া দিলেই আমি ফুঁস করে উঠি আর তখন কামড় দিবই।’
সবশেষে পরী বলেন, ‘আমি চাই এসবের শেষ হোক। আমি আজকে এখানে এসে এসব বলতাম না। তুমিই (রাজ) আমাকে বাধ্য করেছ। এরকম অসুস্থ মানুষের সঙ্গে আমি আর থাকতে চাই না। আমি চাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ আমাকে ডিভোর্স দিক।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।