
১৬৭৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন বিশ্বখ্যাত ফরাসি নাট্যকার মলিয়ের। পশ্চিমা সাহিত্যের সেরা হাস্যরসাত্মক রচনাকারদের একজন হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হয়। তার রচনাগুলোর মধ্যে ল্য মিসান্থ্রপি, ল্য এক্ল দেস ফেমেস, টারটুফে অউ ল্য ইম্পোস্তার, ল্য আভ্রে, ল্য মালাদে ইমাজিনারে উল্লেখযোগ্য। মলিয়ের ১৬২২ সালের ১৫ জানুয়ারি ফ্রান্সের প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন। ‘দে ক্লেরমন্ট’-এর মতো নামকরা কলেজে পড়ানোর কারণে থিয়েটারে যোগ দেওয়া তার জন্য খুব সহজ ছিল। ভ্রাম্যমাণ অভিনেতা হিসেবে ১৩ বছরের জীবনাভিজ্ঞতা থেকেই তিনি প্রথম নাটক লেখেন। সেখানে তিনি ইতালীয় ঘরানার কমেডির সঙ্গে ফরাসি হাস্যরসের মিশ্রণ ঘটান। পরে ফরাসি রাজার চোখে পড়ায় তিনি ও তার দল রাজভাতা পায়। যদিও তিনি রাজা ও প্যারিসের অধিবাসীদের ভূয়সী প্রশংসা পান, কিন্তু তার বিদ্রুপাত্মক লেখা নীতিবাদী ও ক্যাথলিক চার্চ অনুসারীদের সমালোচনার মুখে পড়ে। ধর্মীয় ভণ্ডামিকে আক্রমণ করায় চার্চ তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। নাটকের কাজে অত্যধিক পরিশ্রমের ফলে মলিয়েরের স্বাস্থ্য দুর্বল হতে শুরু করে, ফলে ১৬৬৭ সালে তিনি বাধ্য হন মঞ্চ থেকে সাময়িক অবসর নিতে। ১৬৭৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি যক্ষ্মাক্রান্ত অবস্থাতেই তিনি জীবনের শেষ নাটক ‘ল্য মালাদে ইমাজিনার’-এ অভিনয় করেন। আর্গন নামক স্বাস্থ্য আতঙ্কিত রোগীর ভূমিকায় অভিনয়রত অবস্থাতেই উপর্যুপরি কাশি ও রক্তস্রাবের শিকার হন। নাটকটির অভিনয় শেষ করে তিনি মঞ্চেই ঢলে পড়েন এবং কয়েক ঘণ্টা পর মৃত্যুবরণ করেন। তখন তার বয়স ৫১ বছর। মলিয়েরের হাসির নাটক আমাদের দেশের মঞ্চেও জনপ্রিয়। লোক নাট্যদল ‘কঞ্জুস’ ও সাত্ত্বিক নাট্যদল ‘পেজগী’ নামে তার দুটি নাটকের বাংলা অনুবাদ মঞ্চস্থ করে থাকে।
সংসদে সংরক্ষিত মহিলা এমপি লুৎফুন নেছা বক্তব্য দিচ্ছিলেন। ২০১৭ সালে সংসদের এক অধিবেশনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করছিলেন। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিলেন, সংসদের তৎকালীন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া। শিশুর মতো অশুদ্ধ উচ্চারণ ও আঞ্চলিক ভাষায় পটুয়াখালীতে তার এলাকার সমস্যা তুলে ধরছেন তিনি। সংসদ টিভিতে অধিবেশনটি লাইভ প্রচার হচ্ছিল। তার বক্তব্য শুনে, অনেক সংসদ সদস্য হাসছিলেন। তবু তিনি একজন সংসদ সদস্য।
সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর ১২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা ও অযোগ্যতা সংক্রান্ত বিধিমালা রয়েছে। এই আইনে যেকোনো শিক্ষাজ্ঞানসম্পন্ন বাংলাদেশি নাগরিক সংসদ সদস্য হওয়ার অধিকার রাখেন। অর্থাৎ একজন সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীর নির্দিষ্ট কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না। নিবন্ধিত মনোনয়ন পেলেই হয়, আর স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে পূর্বে অন্তত একটি সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হতে হয় বা ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন থাকতে হয়।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগ্রাহী প্রার্থীকে একটি মনোনয়ন ফরম পূরণ করতে হয়। ফরমটি পূরণের আগে একটি চেকলিস্ট ফরম রয়েছে , যা থেকে একজন ব্যক্তি নিজেকে যাচাই করতে পারেন তিনি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন কি না। ফরমটিতে ক, খ ও গ তিনটি ভাগ তৈরি করা। তবে ক ভাগের ৪টি প্রশ্নের কোনো একটির উত্তর ‘না’ হলে, তিনি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। ফরমটির ক বিভাগে জানতে চাওয়া হয় প্রার্থী বাংলাদেশের নাগরিক কি না, বয়স ২৫ বছর পূর্ণ, ভোটার তালিকায় নাম এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন, আর স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে পূর্বে অন্তত একটি সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়া বা ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন আছে কি না? থাকলেই একজন ব্যক্তি নির্বাচনের জন্য আবেদনে যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তবে ফরমের খ ও গ অংশে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে প্রার্থী নিজেকে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা যাচাই করে নিতে পারেন।
জাতীয় সংসদ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইনসভা। এককক্ষ বিশিষ্ট এই আইনসভার সদস্য ৩৫০ জন। এর মধ্যে ৩০০ জন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। অবশিষ্ট ৫০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যরা নির্বাচিত সংসদ সদস্যের ভোটে নির্বাচিত হন। সংসদের মেয়াদকাল পাঁচ বছর। সর্বোচ্চ আইনসভা হলেও সাংসদদের শিক্ষাগত কোনো যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না। ফলে কিছু ব্যক্তি আঞ্চলিক আধিপত্য বা পৈতৃক সূত্র বা আর্থিক বদান্যতায় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া বা সংসদ সদস্য হয়ে যান, কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াই। ফলে অনেকেই জানেন না, পয়েন্ট অব অর্ডার কী, প্রশ্নোত্তরপর্ব কী, তারকা চিহ্নিত প্রশ্ন কী? এমনকি রাষ্ট্রীয় জরুরি বিষয়ে বা আলোচনায় তারা অংশ নিতে পারেন না। এমন অনেক সংসদ সদস্য আছেন যিনি ৫ বছরের সংসদ চলাকালে একদিনও সংসদে দাঁড়িয়ে কিছু বলেননি।
২০১৩ সালের ৯ জুন জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরপর্বে হাবিবুর রহমান মোল্লা সংসদ সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তৎকালীন সংসদকার্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছিলেন সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা ও অযোগ্যতা নির্ধারিত আছে। নতুন করে সংসদ সদস্যদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতার বিধান অন্তর্ভুক্ত করে আইন সংশোধনের কোনো পরিকল্পনা আপাতত সরকারের নেই।
বেসরকারি সংস্থা ‘সুজন’-এর তথ্য মতে, একাদশ জাতীয় সংসদের ২৯৯ জন সাংসদের ৮০ দশমিক ৯৩ শতাংশের বা ২৪২ জনের শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। মহাজোটের সাংসদদের মধ্যে এ হার ছিল ৮১ দশমিক ৯৪ শতাংশ বা ২৩৬ জন এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাংসদদের ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ বা পাঁচজনের। নতুন সাংসদদের মধ্যে স্বল্পশিক্ষিত এসএসসি ও তার চেয়ে কম শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীর হার ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ বা ২০ জন। মহাজোটের সাংসদদের মধ্যে এ হার ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ বা ১৭ জন এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১২ দশমিক ৫ শতাংশ বা একজন। সব প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ উচ্চশিক্ষিত (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর), তবে নতুন সাংসদদের ৮০ দশমিক ৯৩ শতাংশ উচ্চশিক্ষিত। অপরদিকে, প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ২২ দশমিক ৮৫ শতাংশ স্বল্পশিক্ষিত বা এসএসসি ও তার চেয়ে কম হলেও নতুন সাংসদদের ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ স্বল্পশিক্ষিত।
দশম জাতীয় সংসদে উচ্চশিক্ষিতের (স্নাতক বা স্নাতকোত্তর) হার ছিল ৮০ দশমিক ৩৩ শতাংশ, একাদশ জাতীয় সংসদে যা সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে (৮০ দশমিক ৯৩ শতাংশ)।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিতদের মধ্যে, অন্তত ৭ শতাংশ প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল এসএসসি ও তার কম। আবার কিছু সংসদ সদস্য মনোনয়নপত্রে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ওই সংসদ সদস্য ছিলেন ৮ জন এসএসসির চেয়ে কম, মাধ্যমিক পাস ছিলেন ১৫ জন, ডিপ্লোমা পাস করা ছিলেন আটজন। এছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক পাস ছিলেন ২৬ জন, বিএ বা স্নাতক ডিগ্রি ছিল ১১১ জনের। মেডিকেল ডিগ্রিধারী ১১ জন এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ছিলেন ১১৪ জন। এছাড়া মনোনয়নপত্রে পিএইচডি ডিগ্রির কথা উল্লেখ করেছিলেন ৭ জন।
নবম সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের দেওয়া হলফনামায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়াপারসন খালেদা জিয়া নিজেকে ‘স্বশিক্ষিত’ বলে উল্লেখ করেছেন। আর বিএনপির সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী তার শিক্ষাগত যোগ্যতার অংশে লেখেন ‘নাই’। হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটনও হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি উল্লেখ করেন। আবার সংসদের জীবনবৃত্তান্তের সংকলনে বলেন ‘বি.কম’ পাস। ঢাকা-১০ আসনের সদস্য এ কে এম রহমতুল্লাহ নিজেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং রংপুর-১ আসনের হোসেন মকবুল শাহরিয়ার, পাবনা-৩ আসনের মকবুল হোসেন, মৌলভীবাজার-৩ আসনের সৈয়দ মহসিন আলী হলফনামায় বলেছিলেন তারা এসএসসি পাস। কুষ্টিয়ার সুলতানা তরুণ এবং নারায়ণগঞ্জের সারাহ বেগম কবরী হলফনামায় নিজেদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি বলে উল্লেখ করেছিলেন।
সংসদ সদস্য হওয়ার সঠিক শিক্ষা ক্যাটাগরি না থাকায় জনসমর্থন বা দলীয় সমর্থন নিয়ে অনেকেই হচ্ছেন আইন প্রণেতা।
গত ৪ সেপ্টেম্বর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বগুড়া-৭ আসন থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রেজাউল করিমকে ‘জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ বিল-২০২১’-এর সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর বক্তব্য উপস্থাপন করতে বললে সাংসদ অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য উপস্থাপন করতে থাকেন। এতে সংসদে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি এ প্রসঙ্গে বলেন, জাতীয় সংসদের মতো জায়গায় দাঁড়িয়ে একজন সাংসদকে কথা বলার ক্ষেত্রে তার জন্য বরাদ্দকৃত সময়ের সুষ্ঠু ব্যবহার কীভাবে করতে হবে তা জানতে হবে। নির্ধারিত বিষয়ে ফ্লোর পেয়ে একজন সাংসদকে কথা বলার আগে সেই বিষয়ে পড়াশোনা, চিন্তাভাবনা আর হিসাব করতে হবে- মুখে যা এলো তা বলে সংসদে হাস্যরসের সৃষ্টি করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এক্ষেত্রে সংসদীয় রীতিনীতি, আদব-কায়দা শেখানোর ব্যাপারটিকেও গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
আলোচনায় হিরো আলম : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ভোটের মাঠে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন আলোচিত-সমালোচিত হিরো আলম। তিনি ওবায়দুল কাদেরকে ভোটের মাঠে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘তিনি কথায় কথায় বলেন আসুন খেলা হবে। আমি ওবায়দুল স্যারকে জোর গলায় বলতে চাই, খেলা সবার সঙ্গে করতে হবে না। আমি হিরো আলমের সঙ্গে একটা নির্বাচনে আপনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ও আপনি দলীয়ভাবে দাঁড়ান। এরপর আপনি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে দেখেন খেলা হয় কি না।’
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) উপনির্বাচনের ৪৫টি ভোটকেন্দ্রের ভোট পুনঃগণনার আবেদন জমা দিতে এসে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম এসব কথা বলেন। গত ১ ফেব্রুয়ারি বগুড়া-৪ এবং বগুড়া-৬ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন হিরো আলম। বগুড়া-৪ আসনে ১৪ দলীয় সমর্থিত ও জাসদ প্রার্থীর কাছে ৮৩৪ ভোটে হেরে যান তিনি। এর পরেই হিরো আলম অভিযোগ করেন এই আসনে ভোট সুষ্ঠু হলেও গণনার সময় ফলাফল পাল্টে দেওয়া হয়েছে। ৪৫টি ভোটকেন্দ্রের ফলাফল পুনঃগণনার জন্য আবেদন করেছেন। হিরো আলম বলেন, হিরো কখনো জিরো হয় না। কিন্তু সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল স্যার বলেছেন, হিরো আলম জিরো হয়ে গিয়েছে। যারা হিরোকে জিরো বানাতে চায় তারাই জিরো হয়ে গিয়েছে। সেতুমন্ত্রী আমাকে তাচ্ছিল্য করে কথা বলেছেন। তবে একজন মন্ত্রী দেশের নাগরিককে তাচ্ছিল্য করে কথা বলতে পারেন না। খেলার জন্য নাকি উনি মাঠে প্লেয়ার খুঁজে পান না। আমার সঙ্গে একটু প্রতি কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে ভোটারদের ভয় না দেখিয়ে সুষ্ঠু ভোট দিয়ে দেখেন।
হিরো আলম যাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন, তিনি একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিক। সম্প্রতি তিনি তৃতীয়বারের মতো দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক হয়েছেন। তিনি নোয়াখালী-৫ আসন থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। গত দুই সরকারের মেয়াদে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন।
এটা হিরো আলম করতে পেরেছেন এ কারণে যে, বাংলাদেশের আইনসভার সদস্য হওয়ার যোগ্যতায় তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন। সংসদ নিয়ে তার জ্ঞান থাকুক বা না থাকুক, তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন। দেশের সংবিধান বা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আইন হিরো আলমকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।
একজন স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পাস ব্যক্তিকে আমাদের চাকরির বাজারে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণির পদে চাকরি পেতে স্নাতক পাস প্রার্থী খোঁজা হয়। আবার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ছোটখাটো পদে চাকরির ক্ষেত্রেও এমবিএ পাস লাগে। একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা যখন গুরুত্বপূর্ণ তখন দেশের আইন প্রণেতাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা আবশ্যিকভাবেই ‘ভালো’ হওয়া উচিত। তা না হলে দেশের জন্য তারা যে আইন করবেন তা যথাযথ হবে কী করে?
২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম কুমিল্লায় একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য পৃথিবীর কোথাও শিক্ষাগত যোগ্যতা মুখ্য নয়। উচ্চশিক্ষিত না হলেও জনবান্ধব ও মেধাবী অনেকেই ভালো করছেন। তবে শিক্ষিত হলে অবশ্যই ভালো হবে।
মন্ত্রীর কথায় যুক্তি আছে। যদিও জাতীয় সংসদে উচ্চ শিক্ষিতের হার বাড়ছে। তা সত্ত্বেও সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতার বিধান থাকা প্রয়োজন। বিশ্বের কোনো দেশে এই বিধান না থাকলে আমরা যে করতে পারব না তা কিন্তু না। একটি দেশের আইনসভার সদস্যদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলে দেশ এগুবে কী করে?
লেখক: সাংবাদিক
স্ত্রীকে নিয়ে পবিত্র হজব্রত পালনের জন্য ২০২০ সালে আট লাখ টাকা জোগাড় করেছিলেন টঙ্গীর বাসিন্দা মো. কামরুল ইসলাম। সেবার বেসরকারিভাবে হজে যাওয়ার ‘সাধারণ’ প্যাকেজের মূল্য ছিল জনপ্রতি ৩ লাখ ৬১ হাজার ৮০০ টাকা। তবে করোনা মহামারীর কারণে সে বছর শেষ মুহূর্তে হজে যেতে পারেননি তারা।
চলতি বছর হজপালনের পরিকল্পনা করছেন মো. কামরুল ইসলাম। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন, এ বছর বেসরকারিভাবে জনপ্রতি হজ প্যাকেজের মূল্য ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৭ টাকা। এটাই সর্বনিম্ন প্যাকেজ, তবে এটা তিন বছর আগের খরচের প্রায় দ্বিগুণ। সরকারি আয়োজনে প্যাকেজ মূল্য আরও ১০ হাজার টাকা বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে।
মো. কামরুল ইসলাম এখন ভাবছেন বাড়তি টাকা কীভাবে জোগাড় করা যায়। তার পরিকল্পনা বাড়ির সামনের দোকানের পজিশন বিক্রির। এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। না হলে হজপালনের পরিকল্পনাই বাদ দিতে হবে। মো. কামরুল ইসলামের মতো অনেকে হজ প্যাকেজের মূল্যবৃদ্ধির ফলে হজযাত্রা নিয়ে দোলাচলে পড়েছেন। কামরুল ইসলামের যদিও বিকল্পভাবে টাকা জোগাড়ের ব্যবস্থা আছে, যাদের নেই তাদের কী হবে?
খবরে প্রকাশ, এ বছর উড়োজাহাজভাড়া, মক্কা-মদিনার বাড়িভাড়া ও অন্যান্য পরিষেবা খরচ বেড়েছে। এর সঙ্গে ডলার ও সৌদি মুদ্রা রিয়ালের বিনিময় হার বৃদ্ধি পাওয়ায় সার্বিকভাবে হজপালনের খরচ বেড়েছে। গত বছরের হজ প্যাকেজের সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায়, চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে যাওয়া ও আসার উড়োজাহাজভাড়া বেড়েছে ৪০ শতাংশের বেশি। গত বছর যাওয়া-আসার (রাউন্ড ট্রিপ) ভাড়া ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এবার তা ৫৭ হাজার ৭৯৭ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা। সাধারণভাবে ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা পথে একটি রাউন্ড ট্রিপে উড়োজাহাজের টিকিটের মূল্য ধরা হয় ১ লাখ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকার মতো। সেই তুলনায় হজ প্যাকেজের উড়োজাহাজভাড়া অনেক বেশি। উড়োজাহাজভাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে মক্কা ও মদিনায় হজযাত্রীদের বাড়িভাড়া। গত বছর হজ প্যাকেজে বাড়িভাড়া (ভ্যাটসহ) ছিল ৬ হাজার ৫০৪ রিয়াল বা ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫৭ টাকা। এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ৭ হাজার ২০১ রিয়াল বা ২ লাখ ৪ হাজার ৪৪৫ টাকা। গত বছর বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি রিয়ালের দাম ২৪ দশমিক ৩ টাকা হিসাব করা হয়েছিল। চলতি বছর তা হিসাব করা হয়েছে ২৮ দশমিক ৩৯ টাকা।
হজের সময় পাঁচ দিন ধরে মিনা, আরাফাহ ও মুজদালিফায় হজযাত্রীদের বিভিন্ন পরিষেবা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে তাঁবুর ব্যবস্থা করা, তাঁবুতে ম্যাট্রেস, বিছানা, চাদর, বালিশ, কম্বল, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ও প্রতিদিনের খাবার সরবরাহ ইত্যাদি। মোয়াল্লেম সেবা হিসেবে পরিচিত এসব পরিষেবার জন্য খরচ গত বছর প্রাথমিকভাবে ২ হাজার ৫২০ রিয়াল বা ৬১ হাজার ২৩৬ টাকা (প্রতি রিয়াল ২৪ দশমিক ৩ টাকা ধরে) নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরে তা বেড়ে হয় ৫ হাজার ৬৫৬ রিয়াল বা ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। এ বছর এই খাতের খরচ মাত্র ২ রিয়াল বেড়েছে। তবে মুদ্রার বিনিময় হার বাড়ায় (প্রতি রিয়াল ২৮ দশমিক ৩৯ টাকা ধরে) তা ১ লাখ ৬০ হাজার ৬৩০ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া চলতি বছর হজযাত্রীদের খাবার খরচ, জমজমের পানি, ভিসা ফি ও হজ গাইড বাবদ ব্যয় বেড়েছে।
হজের খরচ বৃদ্ধির কারণ বিশ্লেষণে এটা স্পষ্ট, হজের ব্যয় বৃদ্ধিতে সৌদি আরব এবং বাংলাদেশ যার যার অবস্থানে লাভের জায়গায় কোনো ধরনের ছাড় দেয়নি। অর্থাৎ লোভের হাত থেকে ছাড় পায়নি পবিত্র হজ খাত। হজের মতো ফরজ ইবাদত ও ধর্মীয় বিষয় নিয়ে এমন মুনাফাবাজি সাধারণ মানুষ কখনোই আশা করেনি। হজ থেকে তো কোনো সরকারেরই মুনাফা করার কথা নয়।
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ মধ্যবিত্ত। প্রায় সবার শেষ আশা থাকে, আল্লাহর মেহমান হয়ে জীবনে একবার হলেও পবিত্র কাবা ঘর জিয়ারত ও নবীজির রওজায় উপস্থিত হয়ে সালাম পেশ করার। কিন্তু হজের ব্যয় বৃদ্ধির কারণে অনেক হজযাত্রীই চোখের পানি ফেলে প্রাক-নিবন্ধন বাতিল করছেন।
২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে হজ প্যাকেজের মূল্য ছিল ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। একই বছর ভারতের হজ প্যাকেজ ছিল বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫ লাখ ৭৬৩ টাকা আর পাকিস্তানের হজ প্যাকেজের মূল্য ছিল বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩ লাখ ৩১ হাজার ৭৫২ টাকা। চলতি বছর বাংলাদেশি টাকায় ভারতের হজ প্যাকেজ মূল্য হচ্ছে প্রায় ৫ লাখ ১৫ হাজার ৮৪৬ টাকা আর পাকিস্তানের হজ প্যাকেজ মূল্য হচ্ছে ৩ লাখ ৫০ হাজার ৯৭২ টাকা।
গত জানুয়ারি মাসেও ১৫ দিনের ওমরাহ প্যাকেজের খরচ ছিল ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা। এই টাকায় উড়োজাহাজভাড়া, মক্কা-মদিনায় আবাসন, মক্কা-মদিনা যাতায়াত ও খাবার যুক্ত ছিল। সেখানে হজের সময় এমন অস্বাভাবিক খরচ বৃদ্ধির যৌক্তিক কোনো কারণ থাকতে পারে না।
প্রশ্ন হলো, বর্তমান অবস্থায় হজের ব্যয়বৃদ্ধির প্রভাব সম্ভাব্য হজযাত্রীরা কীভাবে মোকাবিলা করবেন? উত্তর, এ বছর বাংলাদেশ থেকে হজে যাওয়ার জন্য যারা নিবন্ধন করেছেন, হজের প্যাকেজ মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে তাদের বড় একটি অংশই শেষ পর্যন্ত আর হজে যাবেন না। বাস্তবে তেমনটি ঘটলে সম্ভবত এ বছরই হবে এ ধরনের প্রথম ঘটনা যে কোটা বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত তা অপূর্ণ থেকে যাবে।
যদি বলা হয়, উড়োজাহাজভাড়া বেড়ে যাওয়ার কারণে প্যাকেজব্যয় বাড়াতে হচ্ছে, তাহলে বলব, হজযাত্রী পরিবহনের একচেটিয়া কর্র্তৃত্ব শুধু বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি এয়ারলাইনসের ওপর ছেড়ে না দিয়ে সব এয়ারলাইনসের মধ্যে প্রতিযোগিতা সৃষ্টির জন্য তা উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক। এমনটি করা হলে তাতে উড়োজাহাজভাড়া কমতে বাধ্য।
অন্যদিকে সৌদি আরবে পবিত্র কাবা অবস্থিত হওয়ায় পুরো হজ ব্যবস্থাপনা সৌদি সরকার করে থাকে। সৌদির সঙ্গে জড়িত হজপালনে যেসব আনুষঙ্গিক খরচ বেড়েছে, তা আন্তর্জাতিক বাজার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কি নাসেটাও কূটনৈতিক পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা করা যেতে পারে। সবদিক থেকে হজপালনে কিছুটা ব্যয় সাশ্রয় হলে স্বল্প আয়ের দেশের মানুষ হজপালনে আরও বেশি করে অংশ নিতে পারবেন। তাই সরকারকে দেশে এবং সৌদি আরবের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে সহনীয় মাত্রায় হজযাত্রার ব্যয় সর্বনিম্ন ৫ লাখ টাকার নিচে পুনর্নির্ধারণ করা প্রয়োজন বলে মনে করি। আর ব্যয়সাশ্রয়ের লক্ষ্যে হাজিদের দেখাশোনার জন্য ন্যূনতম পর্যায়ের লোকবল যুক্ত রেখে রাষ্ট্রীয় ব্যয়ে হজপালনের সুযোগ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়েও সরকারের সিদ্ধান্ত কামনা করছি।
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক
শত শত বছর আগে আরবিভাষী মুসলিম ধর্মপ্রচারকরা ইন্দোনেশিয়ায় এসেছিলেন। সে কারণে আরবি ভাষার প্রভাব রয়েছে ইন্দোনেশিয়ানদের ধর্মীয় এবং সামাজিক আচারে। তবে মাতৃভাষা পরিত্যাগ না করার ফলে ধর্মীয় আরবি ভাষার তুলনায় মাতৃভাষা রয়েছে শক্ত অবস্থানে। মাতৃভাষা এবং আরবি ভাষার মিশ্রণে নামও রয়েছে তাদের, যেমন আল হাসাবি, শিহাব ইত্যাদি। অস্ট্রোনেশিয়ান, জ্যাভানিজ, সুন্দানিজ, বালিনিজ ভাষার পাশাপাশি আরবি, সংস্কৃত, চাইনিজ এবং পশ্চিমা বিভিন্ন ভাষাভিত্তিক নামও অনেকের রয়েছে। সাবেক স্বৈরশাসক সুহার্তোর শাসনামলে আইনি প্রক্রিয়ায় চাইনিজদের নিজ ভাষায় নামকরণ নিষিদ্ধ করে ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় ব্যক্তির নামকরণে বাধ্য করা হয়েছিল। সে কারণে চাইনিজরা নিজেদের মাতৃভাষার পরিবর্তে ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় তাদের নাম রাখতে বাধ্য হয়েছিল। যেমন চাইনিজ জনৈক ব্যবসায়ী তার নাম লিম সু লং পাল্টে রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন সুদানো সেলিম। সুহার্তোর শাসন অবসানের পর ওই কালো আইনটি রদ করা হয়েছে। সে কারণে চাইনিজ ইন্দোনেশিয়ানরা নিজ ভাষায় নাম রাখার স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছেন।
সংখ্যাগরিষ্ঠ ইন্দোনেশিয়ানরা পারিবারিক নামের ধারাবাহিকতায় নিজেদের নামকরণ করেন না। নগণ্য সংখ্যকের ক্ষেত্রেই পারিবারিক নামের পদবি দেখা যায়। পিতৃপরিচয়ের ভিত্তিতে অনেকের নাম রয়েছে, যেমন প্রয়াত প্রেসিডেন্ট সুকর্নর কন্যা সাবেক প্রেসিডেন্ট মেঘবতী সুকর্ণ পুত্রী, যার বঙ্গানুবাদ মেঘবতী সুকর্নর কন্যা। আবার এমনও দেখা যাবে যে, পিতার নাম আহমেদ সুধর্মা, পুত্রের নাম আলি পুত্রা সুধর্মা অর্থাৎ সুধর্মার ছেলে আলি। এটি আরবদের অনুসরণে নিশ্চয়। আরবরা বিন-বিনতে-এর পর পিতার নাম যুক্ত করে দেয় নামের শেষে। ইদানীং আমাদের দেশেও অমন অনুকরণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে।
খ্রিস্টান অধ্যুষিত পূর্ব তিমুর দীর্ঘকাল ইন্দোনেশিয়ার অংশ ছিল। পৃথক রাষ্ট্রের দাবিতে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সঙ্গে পূর্ব তিমুরবাসীর রক্তক্ষয়ী সংঘাত ছিল নিয়মিত। অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের চাপে পূর্ব তিমুরের দখলদারিত্ব ইন্দোনেশিয়া ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। পূর্ব তিমুর এখন স্বাধীন পৃথক রাষ্ট্র। পূর্ব তিমুরের ভাষা পর্তুগিজ এবং টিটাম। এই দুই ভাষার পাশাপাশি পূর্ব তিমুরবাসীদের ব্যক্তির নাম ল্যাটিন এবং আরবি ভাষায়ও রয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ নাম বিশ্বে বিরল। বিশেষ করে দুই-তিন ভাষার শব্দের মিশ্রণে খুব কম দেশের মানুষের নামকরণ রয়েছে।
ধর্মীয় আনুগত্যের দায়বদ্ধতায় ব্যক্তির নামকরণের পাশাপাশি কিছুটা হলেও ভাষাভিত্তিক ব্যক্তির নামকরণের প্রবণতা দেখা দিয়েছিল আমাদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-সংগ্রামের সময়কালে এবং স্বাধীনতার পরপর। তবে সে-প্রবণতা স্থায়ী হয়নি। সে-ধারাবাহিকতা অক্ষুণœও থাকেনি, যেমন থাকেনি ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পরিচয় পর্যন্ত। রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ বিধান পাল্টে ধর্মীয় মোড়ক এঁটে দেওয়া হয়েছে পরিকল্পিতভাবেই। ঘটনাটি সামরিক সরকারের আমলে ঘটেছিল বটে, তবে নির্বাচিত সরকার স্থায়ী করে দিয়েছে। আমাদের দেশে ধর্মভিত্তিক নামকরণের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যক্তির ভাষাভিত্তিক নামকরণের দৃষ্টান্ত ক্রমেই বিরল হয়ে পড়েছে।
আমাদের দেশে প্রান্তিক পর্যায়ের ব্যক্তির নামের শেষে মিয়া ব্যবহৃত হয়। মিয়া শব্দের অভিধানিক অর্থ সম্ভ্রান্ত মুসলিম ভদ্রলোক। শব্দটির আরবি অর্থ একশত। মিয়া পদবি এক সময়ে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ছিল। কালের বিবর্তনে তা এখন সেকেলে এবং অত্যন্ত সাধারণ পদবিতে পরিণত হয়েছে। সাধারণের নামের শেষেই স্থান পেয়েছে। একে অপরকে সম্মানিতরূপে মিয়া সম্বোধন অতীতের রেওয়াজ ছিল, এখন করলে অপমান-আপত্তিজনক বলেই বিবেচিত হবে।
হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের ব্যক্তির নামের পেছনে পদবি থাকে। হিন্দুদের ক্ষেত্রে জাত-বর্ণের ভিত্তিতে এবং খ্রিস্টান-মুসলিমদের ক্ষেত্রে বংশানুক্রমে। চৌধুরী, মজুমদার পদবি হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের নামের শেষে আমরা দেখি বটে, তবে পদবির অগ্রভাগের নাম দেখে সহজেই চিহ্নিত করা যায় ব্যক্তির সম্প্রদায়গত পরিচয়। বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সংখ্যাগরিষ্ঠদের নামের প্রথমাংশ মাতৃভাষায় অর্থাৎ বাংলায়। তবে নামের শেষাংশ অবশ্যম্ভাবীরূপে সম্প্রদায়গত এবং জাত-বর্ণ পরিচয়ে। সে কারণে তাদের নামকে শতভাগ মাতৃভাষাভিত্তিক এবং সম্প্রদায়-ঊর্ধ্বে বিবেচনা করা যায় না। হরিপদ, বিষ্ণুপদ, ইন্দ্রজিৎ, রামপ্রসাদ, ঈশ্বরচন্দ্র, কালীপ্রসন্ন, নারায়ণ, বিষ্ণু-প্রিয়া, দুর্গাদাস, লক্ষ্মীকান্ত, শিবশঙ্কর, মহাদেব, শিবানী, ইত্যাদি প্রচুর নাম সম্পূর্ণরূপে সম্প্রদায়গত। দেবতাদের নামানুসারে। বাঙালি হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায় ধর্মীয় বিবেচনাতেই ব্যক্তির নামকরণ করে থাকে। নাম দিয়ে সহজেই চেনা যায় কে হিন্দু, কে মুসলিম।
যিশুখ্রিস্টের শিষ্য সেন্ট টমাস জেরুজালেম থেকে মাদ্রাজে এসেছিলেন ৫২ খ্রিস্টাব্দে। বিশ বছর ধর্মপ্রচারের পর ৭২ খ্রিস্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ভারতের চেন্নাইর মাইলাপোরে তার সমাধি রয়েছে। সমাধিস্থলটি বিশাল ইনস্টিটিউটে পরিণত। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ মানত করতে সেখানে যান। সেখানকার সার্বিক অবস্থার সঙ্গে আজমিরের খাজা মঈনুদ্দিন চিশতির দরগাহর মিল রয়েছে। সেন্ট টমাসের আগমন, ধর্মপ্রচার এবং মৃত্যুসহ সব তথ্যাদি পুস্তকাকারে বিলি করা হয় এবং বিশাল একটি এপিটাফে সে সমস্ত তথ্য লিপিবদ্ধ রয়েছে।
খ্রিস্টান সম্প্রদায়ে মোটাদাগে দুটি ভিন্ন মত-পথ স্পষ্ট। একটি ক্যাথলিক অপরটি প্রোটেস্ট্যান্ট। ধর্মান্তরিত ক্যাথলিক খ্রিস্টানরা অতীত নাম-পদবি পাল্টে নতুন নাম-পদবি গ্রহণ করে থাকে। বাইবেল অনুসরণে এবং বিভিন্ন সাধু-সাধ্বী, যাজকের নামানুসারে নাম রেখে থাকে। অপর দিকে প্রোটেস্ট্যান্টরা ধর্মান্তরে নাম-পদবি পরিবর্তন না করে অতীত নাম ও পদবি ব্যবহার করে। ১৯৭১-এর মার্চ থেকে ৯ মাসব্যাপী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যার সময়কালে খ্রিস্টান পরিচয়ে আত্মরক্ষার্থে প্রোটেস্ট্যান্টরা বাধ্য হয়ে নিজেদের নামের অগ্রভাগে বিভিন্ন খ্রিস্টধর্মের সাধু, সাধ্বী, যাজকদের নাম যুক্ত করেছিল। তবে তাদের অতীত পদবি তারা বংশানুক্রমে নিজেদের নামের শেষে যুক্ত রেখেছে। তাদের পদবিতে দাস, বিশ্বাস, চৌধুরী, গুপ্ত, সাহা, ব্যানার্জি এমনকি খান, খন্দকার, হোসেন পর্যন্ত রয়েছে।
ধর্মীয় উৎসব পার্বণের এবং জাতীয় দিবসের নামানুসারে ব্যক্তির নাম রাখার নানা নজির রয়েছে। ওই সমস্ত দিনে জন্ম নেওয়া অনেকের নাম পার্বণের নামানুসারে হয়েছে; এমনটাও আমরা দেখে থাকি। যেমন আশুরার দিনে আশুরা, শবেকদরের দিনে কদর বানু, শবেমেরাজের দিনে মেরাজ, রোজার মাসে রমজান, কোরবানির ঈদে কোরবান আলি। ১৪ আগস্টে জন্ম নেওয়া অনেকের নাম পাকিস্তান, আজাদ, পাকিস্তান আমলে দেখেছি।
অনেকের আবার নাম আছে, যেমন- ফজর আলি, যোহর আলি, আসর আলি, মাগরিব উদ্দিন। এশা নামটি হালে কন্যাসন্তানদের ক্ষেত্রে অধিকমাত্রায় দেখা যায়। সপ্তাহের সাত দিনের নামেও অনেকের নাম রাখা হয়; শুক্রবারে শুকুর মিয়া, রবিবারে রবি, সোমবারে সম্মন, মঙ্গলবারে মঙ্গল ইত্যাদি।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে, বাংলাদেশের ‘পরিবেশ’ বৈচিত্র্য বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। এসব বন্যপ্রাণী, বিভিন্ন প্রতিবেশ ব্যবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারায় অধিকাংশ প্রাণীই বর্তমানে বিপন্ন। বাদ পড়ছে না সরীসৃপ প্রাণীও।
বাংলাদেশে পাওয়া যায়, এমন সরীসৃপ প্রাণীর মধ্যে ত্রিশটিরও বেশি প্রজাতি বর্তমানে মহাবিপন্ন। ৩০ কোটি বছর আগে সরীসৃপের উদ্ভব ঘটেছিল। এসব সরীসৃপ প্রজাতির মধ্যেই আছে ২ প্রজাতির কুমির।
গতকাল দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত, ‘ভালুকায় উন্মুক্ত হলো- কুমিরের খামার’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, দেশীয় পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করতে ময়মনসিংহের ভালুকায় উথুয়া ইউনিয়নের হাতিবেড় গ্রামে দেশের প্রথম ‘র্যাপটাইলস ফার্ম’ নামের বাণিজ্যিক কুমির খামার পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এতে এই এলাকায় পর্যটনের পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির দিকে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। গত মঙ্গলবার খামারটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে খামার কর্তৃপক্ষ।
সংবাদে আরও জানা যায়, বর্তমানে নতুন বাচ্চাসহ ২৫২৬টি কুমির রয়েছে খামারে। চেয়ারম্যান ড. নাঈম আহমেদ জানান, খামারের ব্যয় মেটাতেই আমরা পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করেছি। সেখানে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য টিকিটের মূল্য ১৫০ টাকা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
বিশ্ববাজারে কুমিরের চামড়া, মাংস, হাড়, দাঁতের বেশ কদর। পাশাপাশি এর দামও চড়া। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, ইতালি এবং এশিয়ার চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ায় এগুলোর ব্যাপক চাহিদা। দেশের প্রথম র্যাপটাইলস ফার্ম নামের বাণিজ্যিক কুমির খামার পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এতে এলাকায় পর্যটনের পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। ইউরোপ ছাড়া পৃথিবীর সব মহাদেশেই প্রায় ১৭.৫ কোটি বছর আগে ডাইনোসরের সমকালীন কুমিরের উদ্ভব ঘটলেও ডাইনোসরের বিলুপ্তির পর অদ্যাবধি এরা পৃথিবীর বিভিন্ন ভৌগোলিক পরিবেশে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে আসছে।
পরিবেশ ও অর্থনৈতিক গুরুত্বের দিক থেকে বাংলাদেশে কুমিরের প্রজনন ও চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে কুমিরের বাণিজ্যিক চাষ করা হয়। অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক উন্নত দেশে, কুমির অপ্রচলিত খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ঐসব দেশে, পর্যটন শিল্প হিসেবে কুমিরের খামার স্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া কুমিরের চামড়া অনেক অভিজাত সামগ্রী তৈরিতে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। প্রাকৃতিক পরিবেশে কুমিরের প্রজাতিসমূহের বিলুপ্তি রোধকল্পে এর আবাসস্থলের উন্নয়ন ও প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। তাছাড়া কুমিরের কৃত্রিম প্রজনন-কৌশল ও চাষ-পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য দেশের বিভিন্ন পরিবেশগত অঞ্চলে, সরকারি উদ্যোগে আধুনিক সুবিধা সংবলিত কয়েকটি গবেষণাগার স্থাপন করা জরুরি। এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে কুমিরের উৎপদন বৃদ্ধিসহ এ থেকে প্রক্রিয়াজাতকৃত পণ্য রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।
একটি বিষয় মনে রাখা দরকার, যে কোনো দেশে অর্থনীতির মূল শক্তি রপ্তানি। যে দেশ যত বেশি পরিমাণে পণ্য রপ্তানি করতে পারে, সেই দেশ অর্থনৈতিকভাবে তত শক্তিশালী। এক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে কুমির চাষ। একইসঙ্গে সাধারণ মানুষের জন্য, খামারটি উন্মুক্ত করে দেওয়ায় মানুষও পাচ্ছেন নির্মল বিনোদন। দেশে এমন ‘ক্ষেত্র’ খুব একটা নেই যেখান থেকে আয় হবে বৈদেশিক মুদ্রা এবং দেশের মানুষ পাবে নির্মল বিনোদন। মানুষের হৃদয়স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে, নির্মল বিনোদন ভীষণ প্রয়োজন। কুমির খামারটি অর্থনৈতিকভাবে কীভাবে আরও ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু পদক্ষেপ জরুরি।
সচেতনতা বৃদ্ধি ও সংরক্ষণ বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে, বিপন্ন সরীসৃপ প্রাণী রক্ষা করা প্রয়োজন। তবেই প্রতিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে, ভালো থাকবে সার্বিক পরিবেশ।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে ফরমায়েশি বলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য দেশের আইন ও আদালত অবমাননার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির মামলায় এর আগে বিএনপির দুই নেতাকে নিম্ন আদালতের দেওয়া সাজা বহাল রেখে দেশের উচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছে, সে সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিবের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দেশবাসীকে হতাশ করেছে।’
গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদে জানিয়ে এ বিবৃতি দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মনে করেন, মার্কিন নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করার পর বিএনপি তাদের বিদেশি প্রভুদের কাছ থেকে করুণা প্রাপ্তির আশায় সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। উচ্চ আদালতের রায়কে ফরমায়েশি বলা তাদের সেই চলমান ষড়যন্ত্রেরই অংশ। বিএনপির এ দুই নেতার আজকের পরিণতি তাদের ধারাবাহিক অপরাজনীতিরই ফসল বলে মন্তব্য করেন সেতুমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট শাসন আমলে হাওয়া ভবন খুলে তারা দুর্নীতি ও লুটপাটের মহোৎসবে মেতে উঠেছিল, যার পরিণতিতে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সে সময় হাওয়া ভবনের কর্ণধার জিয়াপুত্র তারেক রহমানের দুর্নীতির খতিয়ান বিশ^ গণমাধ্যম ও বিশ^খ্যাত গোপন নথি প্রকাশকারী সংস্থা উইকিলিকসে বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি দুই নেতার দুর্নীতির মামলার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কোনো যোগসূত্র নেই। ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে এবং তাদের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ার পর নিম্ন আদালত সাজা দিয়ে রায় দেয়। প্রায় ১৬ বছর বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ করে আদালত তাদের সাজা দিয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশের পবিত্র সংবিধান অনুযায়ী সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও আইন ও বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। এমনকি বিশ্বজিৎ হত্যাকা- এবং বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার হত্যা মামলায়ও ছাত্রলীগের নেতারা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ভোগ করছেন।’ তিনি বলেন, বিএনপি দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে তাদের দলীয় গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করেছে এবং দলের চিহ্নিত শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের সুরক্ষা দিয়েছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রসঙ্গ উঠলেই আলোচনায় আসেন সাবেক সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরণ। নগরীর লোকেরা বলে, তার মতো নগর পিতা দরকার। এবার আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত নগরবাসীকে কথা দিয়েছেন, হিরণের মতো করে নগরী গড়বেন তিনি। শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুর এক দশক পেরিয়ে গেছে, তবু তিনি আলোচনায়; শুধু বরিশালে নয়, সারা দেশে।
সংশ্লিষ্ট লোকজন বলে, হিরণের কর্মফলই তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। একসময় সব ক্ষেত্রে বরিশাল সিটির মানুষ অবহেলিত ছিল। সেসব অবহেলার কারণ ঘুচিয়ে এবং মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী নগরীকে আধুনিক করার অঙ্গীকার নিয়ে হাজির হন হিরণ। মেয়র নির্বাচিত হয়ে পাঁচ বছরের মধ্যে নগরীর রূপ পাল্টে দেন তিনি। বরিশালকে সাজান আধুনিক রূপে।
অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য আবদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিরণ ছিলেন আদর্শ নেতা। মানুষকে বোঝার চেষ্টা করতেন। দক্ষ ও বিচক্ষণ এবং সৃজনশীল মানুষ। তিনি নগরীর উন্নয়ন নিয়ে যেমন ভেবেছেন, ঠিক তেমনি মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন। তাই মানুষ ভুলতে পারে না তাকে।’
বিসিক শিল্পনগরীসংলগ্ন চায়ের দোকানদার মো. হালিম বলেন, ‘হিরণ সবসময় মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করতেন। সাধারণ পোশাকে চলতেন। দলমত নির্বিশেষ সবাইকে ভালোবাসতেন।’
নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সমির বলেন, ‘মেয়র হিরণ আমাদের জন্য রাস্তাঘাট, সড়কে বাতির ব্যবস্থাসহ অনেক কিছু করেছেন। তার কাজগুলোই কোনোমতে অনুসরণ করেছে অন্যরা। যে কাজ করে তাকেই তো মনে রাখব আমরা, তাই হিরণকে মনে রেখেছি।’
রিকশাচালক মো. হারুন বলেন, ‘এ নগরীর রাস্তাঘাট চলাচলের অযোগ্য ছিল। রাতে অন্ধকারে ডুবে থাকত। চুরি-ডাকাতি নিত্যখবর ছিল। কিন্তু হিরণ মেয়র হওয়ার পর রাতারাতি নগরী বদলে গেল। অনেক মানুষকে সিটি করপোরেশনে চাকরি দিয়েছেন তিনি। নগরীর গরিব মানুষকে এক টাকা করে হলেও সাহায্য করেছেন। সবার মন জয় করেছেন। আজ তার মতো একজন মানুষ থাকলে আমরা শান্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারতাম।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যাকে হারিয়েছি তাকে তো আর ফিরে পাব না। কিন্তু তার কর্ম, মানুষের প্রতি তার সম্মান এবং ভালোবাসা তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তিনি বিদ্যালয়ে এলে কখনো রাজনৈতিক আলাপ করতেন না। সবসময় শিক্ষার্থীদের আদর্শ মানুষ হওয়ার জন্য বলতেন, গল্প শোনাতেন।’
একজন ব্যবসায়ী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিরণ সাহেব থাকাকালে ব্যবসা করতে গিয়ে কখনো হেনস্তার শিকার হইনি। তিনি নিজেও ব্যবসায়ী ছিলেন। আমাদের ব্যবসায়ীদের কষ্ট তিনি বুঝতেন। কিন্তু নগরীর একদল মানুষ তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাকে নির্বাচনে হারিয়ে দিয়েছে। তারপর হিরণ সাহেব দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন।’
বিএম কলেজের সাবেক ভিপি ও শওকত হোসেন হিরণের ঘনিষ্ঠ মঈন তুষার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিরণ সাহেব প্রত্যেক নেতাকর্মীর নাম জানতেন। তিনি যার সাঙ্গে কথা বলতেন, সেই মানুষটিকে ভুলতেন না। এজন্য মানুষ তার প্রতি এত দুর্বল এবং আকৃষ্ট। নগরীর জন্য তিনি মাস্টারপ্ল্যান করে কাজ করেছেন। তার সঙ্গে মানুষ সরাসরি কথা বলতে পারত এবং দেখা করত। এখনো মানুষ তাকে ভালোবাসে এবং মনে রেখেছে।’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সোহেল রানা বলেন, ‘সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণ বরিশালকে আধুনিক নগরীতে রূপান্তরিত করে গেছেন। উন্নয়ন-আন্তরিকতা ও ব্যবস্থাপনার দক্ষতার সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি একজন আইকনিক সিটি মেয়র ছিলেন। আন্তরিকতাই একজন প্রশাসকের মূল সূচক। তাই তিনি সাধারণ মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছেন।’
মেয়র হিরণ ব্যক্তিগত জীবনে কেমন ছিলেন এ প্রশ্নের উত্তরে তার সহধর্মিণী ও সাবেক সংসদ সদস্য জেবুন্নেসা আফরোজ হিরণ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২৬ বছর আমি তাকে দেখেছি। তিনি কারও ভাই ছিলেন, একজন স্বামী ছিলেন এবং সন্তানদের বাবা ছিলেন। পরিবারভক্ত একজন মানুষ। মানবিক গুণাবলি ছিল। তার মা-ভক্তির খুব নাম আছে বরিশাল শহরে। স্বজন-সন্তান ও পরিবারের প্রতি যতœ নেওয়ায় কোনো কমতি ছিল না। স্ত্রী হিসেবে তাকে অসাধারণ কর্তব্যপরায়ণ একজন মানুষ হিসেবে দেখেছি আমি।’
তিনি বলেন, ‘উনি রাজনৈতিক মহলে অত্যন্ত বিচক্ষণ একজন ব্যক্তি ছিলেন। কর্মী ও সহযোদ্ধাদের প্রতি ভালোবাসা ছিল; নেতাদের প্রতি সম্মানে কোনো ঘাটতি ছিল না তার। ২০০১ সালের জামায়াত-বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসে, তখন কর্মীদের কীভাবে বুকে আগলে রাখতে হয় আমি তা পাশে থেকে দেখেছি। রাজনীতি এবং নগর উন্নয়নÑ দুই ক্ষেত্রেই তিনি সফল।’
প্রসঙ্গত, শওকত হোসেন হিরণ এলএলবি পাস করার পর জাসদ ছাত্রলীগে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন এবং ১৯৮৮ সালে ২২ বছর বয়সে বরিশাল সদর উপজেলা থেকে বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর আলোচনায় আসেন তিনি। ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। রাজনীতিতে আরেক দফা পরিবর্তন আসে ১৯৯৬ সালের পর। স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে ভালো সখ্য থাকায় আওয়ামী লীগে যোগ দেন হিরণ। তার রাজনৈতিক সক্রিয়তা ও সাংগঠনিক দক্ষতা বিবেচনা করে ২০০৩ সালে কেন্দ্রীয় কমিটি তাকে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মনোনীত করে। ২০০৮ সালের ৪ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন। বরিশাল মহানগরীকে আধুনিক সাজে সাজান। স্থানীয় মানুষ ও তার অনুসারীদের কাছে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। ২০১২ সালে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামালের কাছে পরাজিত হন। গুঞ্জন রয়েছে, তার দলীয় লোকেরাই তার পরাজয়ের কারণ। হিরণের মন ভাঙলেও তিনি থেমে যাননি। ২০১৪ সালে বরিশাল সদর আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই বছর ৯ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের মুখে থাকা কুড়িগ্রামের চর ভগপতিপুর সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকটি অবশেষে বিলীন হয়ে গেছে। ক্লিনিকটি সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চলের চর ভগপতিপুর এলাকায় ছিল।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে চর ভগপতিপুর সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকটি ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে বিলীন হয়। এর আগে ওই এলাকার একটি স্কুলও ভাঙনের শিকার হয়। এ ছাড়াও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে একটি মসজিদ ও আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দাদের। ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছে ব্রহ্মপুত্র নদসহ অন্যান্য নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গফুর বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের গাফিলতির কারণে ক্লিনিকটি নিলামে বিক্রি করা সম্ভব হয়নি।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, অনেক চেষ্টা করেও ক্লিনিকটি রক্ষা করা গেল না।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।