
তিনি যখন হাসেন, আমরা মুগ্ধ হই। যখন বলেন, তখন বিস্মিত হই।
আর জাদু? তার হাত ধরেই এখন শিল্প।
কথা বলেছেন, বাংলা ভাষার বিভিন্ন আঙ্গিক নিয়ে ।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আজীবন সদস্য, একুশে পদকপ্রাপ্ত এই বিশ্ববরেণ্য ইল্যুশনিস্ট, মুখোমুখি হয়েছিলেন
দেশ রূপান্তরের। কথা বলেছেন, প্রাণখুলে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- সহকারী সম্পাদক তাপস রায়হান।দেশ রূপান্তর : প্রমিত ভাষার সঙ্গে, কথ্য ভাষার মিশ্রণ- বিষয়টি কীভাবে সমন্বয় করা যায়?
জুয়েল আইচ : আমি জানি না। সত্যি বলছি, জানি না। বাংলা একাডেমিকে বলো। তারা ভালো বলতে পারবে।
দেশ রূপান্তর : তাহলে, আপনি কী বলবেন?
জুয়েল আইচ : (প্রাণখোলা হাসি) হা হা হা। বলো তো, কী বলি! আসলে সব কিছুই শিখতে হয়। শেখার বিকল্প নেই। চাইলেই, কিছু করা যায় না। সবকিছু জোর করে হয় না।
দেশ রূপান্তর : প্রমিত ভাষার সঙ্গে, কথ্য ভাষার সমন্বয় বিষয়টি কীভাবে দেখেন?
জুয়েল আইচ : তুমি তো নাছোড়বান্দা। হা হা হা। আবার সেই প্রশ্ন করেছো?
দেশ রূপান্তর : আপনি চমৎকার উত্তর দিতে পারবেন। তাই বলেছি? এরপর আর বলব না!
জুয়েল আইচ : শোনো, একেকটা সমাজে ৩ রকমের ভাষা থাকে। একটা হচ্ছে, যেটা চলে এসেছে। অতীতের জ্ঞানী-গুণীরা যেভাবে কথা বলেছেন। কিন্তু সেটা পরিবর্তন হতে হতে, একসময় কথ্য ভাষায় চলে আসে। যেমন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একসময় সাধু ভাষায় লিখেছেন। আবার সেই সময়ের কথ্য ভাষা, তিনি নিজের মতোন তৈরি করে লিখেছেন। কলকাতার প্রচলিত ভাষা কিন্তু প্রমিত ভাষা না। তুমি দেখবে, ওরা বলছে ‘ছছি বাবু, ছছা খায়’। এটা তো হবে না। এটা কোন ধরনের ভাষা? তেমনি এই ঢাকাতেও, নানান উচ্চারণে আমরা কথা বলি। কিন্তু আমাদের নিজস্ব কথা বলার রীতি আছে।
দেশ রূপান্তর : যেমন?
জুয়েল আইচ : ৩ রকমের ভাষা আছে। এটা সমাজে থাকবে। একটা হচ্ছে সাধু। একটা চলিত। আরেকটা, কথ্য। এই তিন রীতির ভাষা, সবসময় থাকবে। এর থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে না।
দেশ রূপান্তর : তা ঠিক আছে। কিন্তু স্থান-কাল-পাত্র ঠিক রাখা দরকার না?
জুয়েল আইচ : তাতো অবশ্যই। সেটা থাকবেই। যে মানুষ শুদ্ধভাবে কথা বলতে পারে, সে কিন্তু উল্টোপাল্টা ভাষায় কথা বলতে পারবে না। কারণ, তার অবচেতন মন, সেই শুদ্ধ ভাষাটাই মুখ থেকে বের করবে। ইচ্ছে করলেও উল্টোপাল্টা ভাষার ব্যবহার, সম্ভব না।
দেশ রূপান্তর : যদি আরেকটু সহজ করে বলতেন।
জুয়েল আইচ : আচ্ছা। ধরো, ইংরেজিতে কথা বলতে পারো। তুমি কি, ভুল গ্রামারে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করতে পারবে? তুমি যে ইংরেজি শব্দটার সঠিক উচ্চারণ জানো, সেটা কি ভুল উচ্চারণে ব্যবহার করতে পারবে?
দেশ রূপান্তর : তাহলে বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে কীভাবে পারছি? এই ভাষারও তো নির্দিষ্ট একটা রীতি আছে।
জুয়েল আইচ : আমরা শুদ্ধটা শিখিনি বলে, তা পারছি। শুনতে শুনতে যতটুকু পেরেছি, তাই বলছি।
দেশ রূপান্তর : তাহলে মূল সমস্যাটা আমাদের শিখন পদ্ধতিতে?
জুয়েল আইচ : একদম। সবকিছুই আগে শিখতে হয়। সাইকেল চালানো শিখতে হয়। সাঁতার শিখতে হয় না? তারপর ডুবতে হয়। সাঁতার না জেনে কি ডুব দিয়ে এগোনো যাবে?
দেশ রূপান্তর : বাংলা ভাষার তো একটা মানদন্ড আছে। সেটা কীভাবে অক্ষুণœ রাখা যায়?
জুয়েল আইচ : কোনো কিছুই শিক্ষা ছাড়া হয় না। আমাদের শিখতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। একটা বাঁশে ৭টা ছিদ্র আছে। সেটা হয়ে গেল, বাঁশি। এখন ‘ফুঁ’ দিলেই কি সেটা বাজবে? নাকি এটি কীভাবে বাজাতে হয়, তা শিখতে হবে? এর জন্য, সাধনা করতে হবে। যে কোনো কিছু করতে চাইলে, শিখতে হবে।
আমার স্মার্টফোনে যতগুলো ‘অ্যাপ’ রয়েছে, আমি চাইলেই কি ব্যবহার করতে পারব? না, পারব না। শিখতে হবে।
দেশ রূপান্তর : তাহলে প্রমিত বাংলা ভাষার সঙ্গে, কথ্য ভাষার সমন্বয়টা কীভাবে করা যেতে পারে?
জুয়েল আইচ : শিখতে হবে। চেষ্টা করতে হবে।
দেশ রূপান্তর : একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আপনাকে, একটা চিঠির মাধ্যমে একুশে পদকপ্রাপ্তির সংবাদ জানিয়েছিল। আপনি সেই চিঠির উত্তর দিয়ে, বিনীতভাবে তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। বলেছিলেন, আমি ‘জাদুবিদ্যা’র কোনো শিল্পী নই। জাদুশিল্পের একজন সাধারণ মানুষ। বিষয়টা একটু বলবেন?
জুয়েল আইচ : ঐ তো। আমাকে তারা জানিয়েছিল। জাদুবিদ্যায় একুশে পদক দেওয়ার বিষয়ে। আমি বলেছিলাম, জাদুশিল্পের কথা। জাদুবিদ্যা হচ্ছে তুকতাক, অলৌকিক, জুতো চালান দেয়, বাটি চালান দেয়, ভূত নিয়ে নিয়ে আসে এসব। আমি তো তা নই। এসবের সঙ্গে আমি, যুক্তির মাধ্যমে এক ধরনের যুদ্ধ করি। ‘জাদু’ হচ্ছে একটা শিল্প। দীর্ঘদিন এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছি। আমি তো এটা মেনে নিতে পারি না। বলো, পারি কি? বলেছিলাম আমাকে যদি পুরস্কার দিতে হয়, তাহলে ‘জাদুশিল্পে’ দিতে হবে। তা হলে, আমার কোনো আপত্তি নেই। জাদুবিদ্যায় আমি কোনো পুরস্কার নিতে রাজি নই। তারপর, কর্তৃপক্ষ চিঠির ভাষা পরিবর্তন করে, ‘জাদুশিল্পে’ আমাকে একুশে পদক দিয়েছে।
দেশ রূপান্তর : আবার আগের বিষয়ে চলে আসি। শুদ্ধ বাংলা ভাষার চর্চা, কীভাবে আমরা বাড়াতে পারি?
জুয়েল আইচ : এজন্য প্রথমেই, সবাইকে ভাষা শিখতে হবে। কোনোকিছু না শিখে, শুদ্ধ কোনো কাজ করা যায় না।
দেশ রূপান্তর : শেখাবেন কারা?
জুয়েল আইচ : যারা ভালো পারেন , তারা। আমি সবসময় বলি সবকিছুর আগে, ‘ভালো’ থাকতে হয়। সাংবাদিক তো যে কেউ হতে পারেন। ভালো সাংবাদিক, ক’জন আছেন? ‘মানুষ’ তো আমরা সবাই। ভালো মানুষ, ক’জন? কৃষক তো, সবাই কৃষক। ভালো কৃষক, ক’জন? কথা তো সবাই বলে। ভালোভাবে কথা, ক’জন বলে? যে ভালো কথা বলে, তার কাছ থেকে শিখতে হবে। যে ভালো লিখতে পারে, তার কাছ থেকে শিখতে হবে। শেখা, শেখা, শেখা। এর কোনো বিকল্প নেই। এর কোনো জবাব নেই। মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত ওটা, মন্ত্রের মতোন পড়তে হবে। শিখতে হবে, শিখতে হবে। যেখানে যা কিছু আছে, শিখতে হবে। সুনির্মল বসুর কবিতাটা মনে আছে? ঐ যে বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র।
বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র/ নানান ভাবে নতুন জিনিস, শিখছি দিবারাত্র। এই পৃথিবীর বিরাট খাতায়/ পাঠ্য যেসব পাতায় পাতায়/ শিখছি সে সব কৌতূহলে/ নেই দ্বিধা লেশমাত্র আহা! এর কোনো শেষ নেই। না শিখলে, এই ‘এলংব্যালং’ থেকেই যাবে। এটা প্রতিদিন, প্রতিটি মানুষের, প্রতিটি জাতির মনে রাখা দরকার।
একুশে ফেব্রুয়ারি এদেশের মানুষকে আত্মত্যাগের চেতনা শিখিয়েছে, বাঙালিকে করেছে মহান। জাতি হিসেবে আমরা আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অনুপ্রাণিত হয়ে ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদী আদর্শের সঙ্গে মিলিত অসাম্প্রদায়িকক চেতনা গ্রহণ করেছি। মহান ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে এসেছে মহান স্বাধীনতার চেতনা।
ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম এবং তারই ধারাবাহিকতায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের যুদ্ধে জয়ী না হলে সে দেশকে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন দেশ বলা যাবে না।
ফেব্রুয়ারি আজকের ভাষা আন্দোলনের অমর স্মারক মাস। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় পুলিশের গুলিতে যারা প্রাণ দিয়েছিলেন, এই মাসজুড়ে আমরা তাদের স্মরণ করছি। পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও শাসকগোষ্ঠী বাংলাকে মর্যাদা দিতে রাজি ছিল না। এমনকি পাকিস্তান রাষ্ট্রের নেতা হিসেবে বিবেচিত মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এই বিষয়ে অত্যন্ত নেতিবাচক অবস্থান নিয়েছিলেন, যা এই অঞ্চলের ছাত্র ও শিক্ষিত সম্প্রদায়কে ক্ষুব্ধ করেছিল। পরবর্তী ইতিহাস সবারই জানা।
ভাষা আন্দোলনে উদ্ভূত চেতনাই আমাদের স্বাধীনতার বোধ নিয়ে আসে। পাকিস্তানি কর্র্তৃপক্ষ এটিকে অপমান করতে থাকলে তা আরও তীব্র হয়। আমাদের অনন্য ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে। সাহিত্যে আমাদের পরিচয় ও অধিকারের প্রশ্ন প্রবলভাবে উঠতে শুরু করে। শুধু নিজের ভাষার প্রতি ভালোবাসা নয়, নিজের মানুষের কল্যাণের কথাও এভাবে সামনে আসে। স্বায়ত্তশাসনের দাবি বাড়াতে থাকে। কয়েক দশকের সামরিক শাসন দিয়ে তা দমনেরও চেষ্টা করা হয়। এরই মধ্যে বাঙালির গৌরব ক্ষুণœ ও বিনষ্ট করার অপচেষ্টা চলছে। রবীন্দ্রনাথকে অস্বীকার করার অপচেষ্টা করা হলে তা তীব্রভাবে প্রতিহত করা হয়। পূর্ববাংলার গ্রামীণ সমাজ থেকে উঠে আসা শিক্ষিত সম্প্রদায় নজরুল-রবীন্দ্রনাথকে সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রধান উৎস হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৬০ এর দশক জুড়ে, বাঙালির রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জাগরণ হাত ধরে চলেছিল, কখনো কখনো একে অপরের সঙ্গে জড়িত ছিল। এটি অনিবার্যভাবে আমাদের স্বাধীনতার দিকে নিয়ে যায়। তাই এটা বলা খুবই যুক্তিযুক্ত যে, ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই স্বাধীন বাংলাদেশ নামে স্বাধীনতা এসেছে।
বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ বাংলাদেশের কারণেই বাংলাকে জানে ও সম্মান করে। তারা সম্মান করে যে, বাঙালি মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় শুধু আত্মত্যাগই করেনি, যোগ্য স্থানেও প্রতিষ্ঠা করেছে। বিশ্ববাসী আজ জানে যে, এ অঞ্চলের মানুষও ভাষাভিত্তিক জাতীয়তার ভিত্তিতে একটি দেশ প্রতিষ্ঠা করেছে। স্বাধীনতা-উত্তর সংবিধানে তারা জাতীয়তাবাদকে রাষ্ট্রের একটি মৌলিক নীতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছিল, যা পরবর্তী সময়ে একটি সামরিক সরকার বাতিল করার চেষ্টা করেছিল। জাতীয়তা ও নাগরিকত্বকে বিভ্রান্ত করে তারা এদেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার কৌশল নিয়েছে। কিন্তু মানুষকে বেশিক্ষণ বিভ্রান্ত করে রাখা যায়নি। তারা আবারও মূলধারার জাতীয়তাবাদে ফিরে এসেছে। দেশ মুক্তিযুদ্ধের পথে ফিরে আসায় আমাদের জাতীয় চেতনা রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়েছে।
দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। একসময় ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে আখ্যায়িত দেশটি এখন চালসহ অনেক প্রধান খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশ শুধু বিদেশে জনশক্তি পাঠিয়ে নয়, দেশীয় উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমেও সমৃদ্ধ হয়েছে। বাংলাদেশ এখন নিজস্ব অর্থায়নে বড় বড় উনয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে। বলা হয়, ভাষা আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট দেশে কোনো অপুষ্টির শিকার মানুষ নেই। গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। স্বাধীনতার ৫২ বছরে পাল্টেছে দেশের চিত্র। বাংলাদেশ কৃষি থেকে শিল্পের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং এখানে সেবা খাতও বিকশিত হচ্ছে। একাত্তরের শহীদরাও নিশ্চয়ই এমন একটি দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন।
বাংলাদেশে আমরা প্রত্যাশিত সবকিছু পেয়ে গেছি এটা বলা যাবে না । এক্ষেত্রে শুরুতেই শিক্ষার কথা উল্লেখ করতে হবে। আমরা শিক্ষার প্রসার ঘটিয়েছি তাতে কোনো সন্দেহ নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়াতে পেরেছি; প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি, টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিও কম নয়। কিন্তু মানসম্মত শিক্ষা কতটা নিশ্চিত হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। প্রাথমিক স্তর থেকে শিক্ষার বিভিন্ন ধারা আমাদের নতুন প্রজন্মকে একই সমতায় দাঁড়াতে দিচ্ছে না। ধনী পরিবারের সন্তানরা যেমন উন্নত ধরনের শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যায়, তা বৈষম্যে তৈরি করে। আমরা মাতৃভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম করব বা সর্বস্তরে বাংলার প্রচলন করব এই ছিল আমাদের অঙ্গীকার। তা সম্পন্ন করার জন্য যে সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন তা আমরা কতটুকু নিতে পেরেছি? উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে বাংলায় মানসম্পন্ন বই ও অনুবাদেও কতটা অগ্রগতি হয়েছে?
ভাষা আন্দোলনের অমর স্মারক মাসে বইমেলার আয়োজন করছে বাংলা একাডেমি।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেলার প্রসার ঘটেছে এবং এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ছে বহুদূরে। এ উপলক্ষে সাহিত্যসহ নানা ধরনের বইও প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু মানের দিকে লক্ষ করলে অনেক ক্ষেত্রেই হতাশ হবেন। ভাষার ব্যবহারেও চলছে নৈরাজ্য। তবে অনলাইনে বাংলায় লেখা অনেক বেড়েছে। তরুণদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য।
একুশে ফেব্রুয়ারিকে এখন জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই স্বীকৃতির মর্যাদা রক্ষার জন্য আমাদের দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা রক্ষায় মনোযোগ দিতে হবে। তাদের সন্তানরা যাতে তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করে এবং একই সঙ্গে উন্নয়নের মূলধারায় যুক্ত হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। ভাষা আন্দোলন যেমন আমাদের গর্বিত করেছে, তেমনি কিছু কাজের দায়ও দিয়েছে, যা এড়ানো যায় না। আমরা যদি শিক্ষা, সংস্কৃতিতে অগ্রসর হতে না পারি এবং উন্নত মানবসম্পদ হতে না পারি তাহলে আমরা আমাদের ভাষা ও দেশকে মহিমান্বিত করতে পারব না। এক্ষেত্রে সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে বৈষম্য দূরীকরণের পদক্ষেপ নিতে হবে। যা খুব জরুরি।
ফেব্রুয়ারি আমাদের আত্মদর্শনের সুযোগ এনে দেয়। ভাষা আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট এ দেশে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করার পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। পাকিস্তান আমলে আমরা সাংস্কৃতিক বিভাজন প্রত্যাখ্যান করেছি এবং গণতান্ত্রিক চেতনাকে লালন করে এগিয়েছি, যা এড়ানো উচিত নয়। ঐক্যের পথে এগিয়ে যেতে হবে। প্রগতিশীলতার চর্চা করতে হবে। পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে, প্রতিটি দেশে এই পশ্চাৎপদ উপাদানগুলোর মধ্যে আলাদাভাবে এগিয়ে যাওয়া কঠিন, তবে কোনো বিকল্প নেই। বাঙালির প্রশ্নে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, সুবিধাবাদ ও আপস বরদাস্ত করা যায় না। না হলে বিপর্যয় ঘটবে। একদিন হয়তো দেখা যাবে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যেতে পারলেও আমরা রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিকে অনেক পিছিয়ে পড়েছি। এই লড়াইয়ের মূলে রয়েছে শিক্ষা। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে বিভক্তির পরিবর্তে ঐক্যের ভিত্তি মজবুত করতে হবে। দুর্ভাগ্যবশত, রাষ্ট্রীয় অর্থায়ন লিখিত এবং মুদ্রিত পাঠ্যপুস্তকগুলো অপ্রত্যাশিত বিতর্কের সম্মুখীন হচ্ছে। এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে, আহত হয়েছে আরও হাজার হাজার মানুষ। এ ভূমিকম্পকে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পগুলোর একটি বলে মনে করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওই এলাকার মাটির নিচে থাকা অ্যারাবিয়ান প্লেটটি উত্তর দিকে সরে গিয়ে আনাতোলিয়ান প্লেটে ধাক্কা দিলে এই ভয়াবহ ভূমিকম্পের তৈরি হয়। একই কারণে ১৮২২ সালেও এখানেই একদফা ভূমিকম্প হয়েছিল। বিশ্বের যেসব এলাকা ভূমিকম্পপ্রবণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, তুরস্কের এই এলাকাটি তার অন্যতম। বিশ্বের ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকাগুলো শনাক্ত করতে জাতিসংঘ গ্লোবাল সিসমিক হ্যাজার্ড অ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রাম নামে একটি কর্মসূচি চালু করেছিল। সেটার উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীর ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলগুলোর একটি মানচিত্র তৈরি করা, যাতে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করবে। বছরের পর বছর ধরে, তুর্কিদের একটি বড় ধরনের ভূমিকম্পের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল কিন্তু খুব কম মানুষই ধারণা করেছিলেন যে এটি পূর্ব আনাতোলিয়ান ফল্ট বরাবর আঘাত হানবে।
এই ভূমিকম্পের প্রভাব দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত হয়েছে, কারণ বেশিরভাগ বড় কম্পন উত্তরের ফল্টে আঘাত করেছে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তুরস্কের এলাজিগে একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। তখন ইস্তান্বুল টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির ভূতত্ত্ব প্রকৌশলী অধ্যাপক নাসি গোরুর এই ভূমিকম্পের ঝুঁকিটি অনুমান করেছিলেন। এমনকি তিনি আদিয়ামান এবং কাহরামানমারাস শহরের উত্তরে পরবর্তী ভূমিকম্পের পূর্বাভাসও দিয়েছিলেন। ‘তুরস্কের অন্যতম প্রধান ভূমিকম্প প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মুস্তাফা এরদিক ধারণা করছেন যে বিল্ডিং কোডগুলো অনুসরণ না করার কারণে জীবনের এত বড় ক্ষতি হয়েছে। তুরস্কে ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড না মানার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।’
দেশটির বিচারমন্ত্রী এ নিয়ে বলেছেন যে কেউ এই কোড লঙ্ঘন করলে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। বিরোধী দল সিএইচপি’র নেতা কামাল কিলিকদারোওলু বলছেন, ২০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সরকার ভূমিকম্পের জন্য দেশকে প্রস্তুত করতে পারেননি। তুরস্কে বিধ্বংসী ভূমিকম্পকে ঘিরে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, এত বড়মাপের ট্র্যাজেডি এড়ানো যেত কি না এবং প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সরকার মানুষের জীবন বাঁচাতে আরও কিছু করতে পারত কি না। ১৯৩৯ সালের পর এটাই ছিল সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প। টানা কুড়ি বছর ক্ষমতায় থাকার পরে আসন্ন নির্বাচনে এরদোয়ানের পুনরায় ক্ষমতায় আসীন হওয়া ঝুঁকিতে পড়েছে। তার জাতীয় ঐক্যের আবেদন উপেক্ষিত হয়েছে। রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ভূমিকম্প-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় কিছু ভুল হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তবে তিনি একটি দুর্গত এলাকায় পরিদর্শনের সময় এই ভূমিকম্পের পেছনে ভাগ্যকে দোষারোপ করে বলেন, এ ধরনের ঘটনা সবসময় ঘটেছে। এটি নিয়তির অংশ।
তুরস্ক দুটি ফল্ট লাইনে অবস্থিত এবং দেশটিতে ভূমিকম্পের যে বিল্ডিং কোড রয়েছে সেটি ৮০ বছরের পুরনো। তুরস্কের ৮১টি প্রদেশের মধ্যে ১০টি প্রদেশে ব্যাপক উদ্ধার অভিযানের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সাড়া পেতে অনেক সময় লেগে যায় এবং কয়েকটি গ্রামে প্রথম কয়েকদিন পৌঁছানো যায়নি। ভূমিকম্পে ছয় হাজারেরও বেশি ভবন ধসে পড়েছে এবং তুরস্কের দুর্যোগ মোকাবিলা কর্র্তৃপক্ষের কর্মীরা নিজেরাই ভূমিকম্পে আটকা পড়েছেন। দুর্যোগের প্রথম কয়েক ঘণ্টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ হলেও রাস্তা খারাপ থাকায় উদ্ধারকারী দলগুলোকে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিন পর্যন্ত সংগ্রাম করতে হয়। অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় তুরস্কে ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা বেশি। কিন্তু দেশটির স্বেচ্ছাসেবী উদ্ধারকারী দলের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বাস করেন, এবারের ভূমিকম্পের ঘটনায় রাজনীতি ঢুকে পড়েছে। এর আগে ১৯৯৯ সালের আগস্টে তুরস্কে বড় ভূমিকম্প আঘাত হানে। সে সময় দেশটির সশস্ত্র বাহিনী ওই উদ্ধার অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিল। কিন্তু এরদোয়ানের সরকার তুর্কি সমাজে তাদের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল। আকুত ফাউন্ডেশনের প্রধান, নাসুহ মাহরুকি বলেছেন, সারা বিশ্বে সবচেয়ে সংগঠিত এবং লজিস্টিকভাবে শক্তিশালী সংস্থাগুলো হলো সশস্ত্র বাহিনী; তাদের হাতে প্রচুর জিনিসপত্র রয়েছে। সুতরাং এই শক্তিকে দুর্যোগের সময় ব্যবহার করতে হবে। এর পরিবর্তে, তুরস্কের বেসামরিক দুর্যোগ কর্র্তৃপক্ষের কর্মী রয়েছে ১০ থেকে ১৫ হাজারের মতো। আকুতের মতো বেসরকারি সংস্থাগুলো তাদের তিন হাজারের মতো স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে সহায়তা করছে। বর্তমানে সেনাবাহিনীর সক্ষমতা ১৯৯৯ সালের তুলনায় অনেক বেশি, কিন্তু তাদের পরিকল্পনার বাইরে যে কোনো কাজ করতে সরকারের আদেশের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান স্বীকার করেছেন যে, তুরস্কের কাছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তল্লাশি ও উদ্ধারকারী দল থাকা সত্ত্বেও সরকার যত দ্রুত অভিযান পরিচালনা করতে চেয়েছিল তত দ্রুত হয়নি।
২০১৮ সালে হালনাগাদ হওয়া বিল্ডিং কোড মতে, উচ্চমানের কংক্রিটকে রিবড ইস্পাত বার দিয়ে শক্তিশালী করতে হবে। লম্বালম্বি কলাম এবং আড়াআড়ি বসানো বিমগুলোর কম্পনের প্রভাব শোষণ করার সক্ষমতা থাকতে হবে। সমস্ত নিয়ম মেনে চললে কলামগুলো অক্ষত থাকত এবং ক্ষতিটি বিমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত। কিন্তু এর পরিবর্তে কলামগুলো ভেঙে পড়ায় প্রতিটি তলা একে অপরের ওপর ধসে পড়েছে, যার ফলে এত হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ১৯৯৯ সালের ভূমিকম্পের পরে দুটি ভূমিকম্প সংহতি কর নামের তহবিল তৈরি করা হয়েছিল। বিভিন্ন মোবাইল ফোন কোম্পানির ভয়েস এবং ম্যাসেজিং সার্ভিসের ওপর কর, ইন্টারনেট সেবা, ক্যাবল টিভি ও রেডিও’র ওপর কর আরোপ করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে তুরস্কের সরকারের কোষাগারে প্রায় সাড়ে চারশ কোটি ডলার জমা হয়েছিল। এই তহবিল দিয়ে ভূমিকম্প প্রতিরোধী ভবন তৈরি এবং দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য খরচ করার কথা ছিল। কিন্তু ওই তহবিলের অর্থ দিয়ে কী করা হয়েছে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। এর কোনো ব্যাখ্যা সরকারের কাছ থেকে কখনোই পাওয়া যায়নি। নগর পরিকল্পনাবিদরা অভিযোগ করেছেন যে, ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে নিয়ম মেনে ভবন তৈরি করা হয়নি। যারা নিয়ম না মেনে ভবন নির্মাণ করেছিল তাদের কিছু আর্থিক জরিমানা করে ছাড় দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে প্রায় ৬০ লাখ ভবন অপরিবর্তিত অবস্থায় থেকে যায়। জরিমানা, ট্যাক্স এবং নানা ধরনের ফি থেকে তুরস্ক সরকারের কোষাগারে বিলিয়ন বিলিয়ন টার্কিশ লিরা জমা হয়। ২০১৯ সালে ইস্তাম্বুলে একটি আবাসিক ভবন ধসে ২১ জন নিহতের ঘটনায় তখনকার সিভিল ইঞ্জিনিয়ার চেম্বার প্রধান বলেছিলেন, এই সাধারণ ক্ষমা তুর্কি শহরগুলোকে কবরস্থানে পরিণত করবে। ইস্তান্বুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেলিন পিনার গিরিটলিওগ্লুর বলেন, এবারের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি শহর থেকে এক লাখেরও বেশি আবেদন জমা পড়েছিল।
এসব এলাকায় বিল্ডিং কোড না মেনে বহু ভবন নির্মাণ হয়েছে। সর্বশেষ ভূমিকম্পে এত ভবন ধসে পড়ার ক্ষেত্রে সরকারের সাধারণ ক্ষমা অন্যতম বড় কারণ। আমরা একে অপরকে দোষারোপ করে কোথাও যেতে পারব না এবং আমাদের সমাধান খোঁজা উচিত।
যাইহোক, ১৮৭০ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত বড় আকারের বেশ কয়েকটি ভূমিকম্প দেখেছে বাংলাদেশ। পরবর্তী সময়ে ছোট ছোট কিছু ভূমিকম্প হলেও বড় মাত্রার কোনো ভূমিকম্পের মুখোমুখি হতে হয়নি। তবে গত ১০০ বছরে বড় কোনো ভূমিকম্প না হওয়ায় ছোট কম্পনগুলো শক্তি সঞ্চয় করে সামনে বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা তৈরি করছে বলে মনে করছেন ভূতত্ত্ববিদরা। আর ভূমিকম্পের সময় হতাহতের বড় একটি কারণই ভবন ধস। তারপরেও ভবন নির্মাণের শর্তগুলো মানা হচ্ছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ ভূমিকম্প-সম্ভাব্য অঞ্চলে অবস্থিত। তবে অবকাঠামো নির্মাণে ভূমিকম্পের ঝুঁকির বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব পায়নি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিগত দশকগুলোতে বেশ কয়েকটি ছোটখাটো ভূমিকম্প হলেও ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে গুণগত মান নিশ্চিত না হওয়ার বিষয়টি নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। সম্প্রতি তুরস্কে ভূমিকম্পে বিপুল হতাহতের ঘটনায় ভবন নির্মাণে নিরাপত্তার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। প্রকৌশলীরা বলছেন, ঝুঁকি থাকলেও গত দুই দশকে ভবন নির্মাণ প্রক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য তেমন পরিবর্তন হয়নি। তাদের মতে, বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড আইন থাকলেও, এর বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে এমনটা হচ্ছে। গত দুই দশকে নির্মাণকাজে ব্যবহৃত উপাদানের মান উন্নয়ন হলেও, সার্বিক নির্মাণ প্রক্রিয়ায় তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। উঁচু ভবনের ক্ষেত্রে বেশ বড় অঙ্কের বিনিয়োগ থাকায় নির্মাণ প্রক্রিয়ায় কিছুটা পরিবর্তন দেখা গেছে। কিন্তু পাঁচ থেকে ছয় তলা ভবন নির্মাণে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি।
ব্রিটিশ জিওলজিক্যাল সার্ভের কর্মকর্তা রজার মুসন বলেছেন, উল্লিখিত কোনো ভূমিকম্প যেখানেই হোক, তা তুরস্কের ভূমিকম্পের চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে। বিশেষ করে কাঠমান্ডুর মতো শহরগুলো বিশেষ ঝুঁকিতে রয়েছে। কারণ এই শহরটি নরম শিলা পাথরের পুরু স্তরের ওপরে তৈরি হয়েছে। ফলে ভূমিকম্প হলে সেখানে কম্পন বেশি অনুভূত হবে। ২০১৫ সালে ইন্ডিয়ান প্লেট এবং তিব্বত প্লেটের সংঘর্ষে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিল। সেই ভূমিকম্পে ৯ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু আর এক লাখের বেশি মানুষ আহত হয়েছিল। ভূতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে কয়েকটি প্লেট থাকার কারণে এসব এলাকা ভূমিকম্পের বড় ঝুঁকিতে রয়েছে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দুই যুগ ধরে এ নিয়ে গবেষণা করেছে। সেখানে দেখা গেছে, ইন্ডিয়া প্লেট ও বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে দীর্ঘসময় ধরে কোনো ভূমিকম্পের শক্তি বের হয়নি। ফলে সেখানে ৪০০ হাজার বছর ধরে শক্তি জমা হয়ে রয়েছে। ইন্ডিয়া প্লেট পূর্ব দিকে বার্মা প্লেটের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে আর বার্মা প্লেট পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ফলে সেখানে যে পরিমাণ শক্তি জমা হচ্ছে, তাতে আট মাত্রার অধিক ভূমিকম্প হতে পারে। এটা যেমন একবারে হতে পারে, আবার কয়েকবারেও হতে পারে। তবে যে কোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। সাধারণত এ ধরনের ক্ষেত্রে সাত বা আট মাত্রার ভূমিকম্প হয়ে থাকে। কিন্তু কবে বা কখন সেটা হবে, তা এখনো বিজ্ঞানীদের এখনো ধারণা নেই। তবে এসব ব্যাপারে এখনই সতর্কতা অবলম্বন না করলে এসব ফল্টে ভূমিকম্প হলে ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বা বিপদের মাত্রা অনেক বেশি বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।
লেখকঃ গবেষক ও কলাম লেখক
রাজধানী জুড়ে চলছে পরিবহন নৈরাজ্য। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। শহরের মানুষ পুরোপুরি জিম্মি তাদের কাছে। যেভাবে ইচ্ছা, যখন ইচ্ছা পরিবহন কর্তৃপক্ষ তাদের গাড়ি চালাবেন। ইচ্ছে হলে ভাড়া বাড়াবেন। ইচ্ছে হলে ফিটনেস ছাড়াই গাড়ি রাস্তায় বের করবেন। সবকিছু ‘ম্যানেজ’ করে, দিনের পর দিন লক্কড়ঝক্কড় মার্কা গাড়ি চলছে। ট্রাফিক পুলিশের সামনে দিয়েই তারা যাচ্ছে। পুলিশ মাঝেমধ্যে গাড়ি ধরলেও, একটু পর আবার ছেড়ে দেয়। ড্রাইভারের কাছে তারা লাইসেন্স চান, কাগজ চান ফিটনেসের। ট্রাফিক পুলিশ, সেই কাগজ হাতে নিয়ে একটু দূরে গিয়ে কন্ডাক্টরের সঙ্গে কী বিষয়ে যেন ‘ফুসুর ফুসুর’ করেন। কন্ডাক্টরও, লাইসেন্সের ভেতর কিছু ‘নোট’ দেন। ব্যস, ট্রাফিকের কর্তব্য শেষ! ছেড়ে দেওয়া হয় গাড়ি। এইভাবে চলছে, বছরের পর বছর। ঠিক, এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছেন পরিবহন মালিক কর্তৃপক্ষ। ফলে ফিটনেস ছাড়া গাড়ি রাস্তায় চললেও, কোনো ধরনের সমস্যার পড়তে হয় না। কিছুদিন পর, পুলিশি অভিযান চলবে। তখন টাকার পরিমাণও বাড়বে। সেই, যথা পূর্বং তথা পরং আগে যা ছিল, তাই থাকবে। কিছুই হবে না। এভাবেই চলছে, বছরের পর বছর।
গতকাল দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায় প্রকাশিত ‘মেট্রোরেলের শহরে গরিবি বাস’ শিরোনামের সংবাদে জানা যায়, রাজধানীজুড়ে সড়কে এখনো দাপিয়ে বেড়ায় ফিটনেসবিহীন বাস। এই নিম্নমানের বাসগুলোর দিকে তাকালে দেশের এবং দেশের বাইরে থেকে আসা অনেকেই ভাবতে পারেন বাংলাদেশে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হলেও সেকালের গরিবি বাসে সয়লাব শহরজুড়ে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে নানা সময় বাসগুলো বন্ধের নির্দেশনা দিলেও সেভাবে মনিটরিং না করায় বছরের পর বছর বাসগুলো সড়কে চলছে। তবে বাস মালিক সমিতি থেকে এই মাসে বাসগুলো বন্ধের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছেন সমিতির নেতারা।
সংবাদে আরও জানা যায়- বৃহস্পতিবার রাজধানীর সদরঘাট, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, ফার্মগেইট, মোহাম্মদপুর, গাবতলী, মিরপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, সড়কে এখনো ফিটনেসবিহীন বাস প্রকাশ্যে চলছে। মাঝপথে অনেক বাস বন্ধ হতে দেখা যায়। বেশিরভাগ বাসের সিট ভাঙা, নেই ভালো বসার স্থান। আর বাসগুলো থেকে কালো ধোঁয়া বের হয়ে পরিবেশ মারাত্মক হুমকির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তবে সবচেয়ে খারাপ বাস চলতে দেখা যায় পুরান ঢাকার বাবুবাজার বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে গাবতলী পর্যন্ত রোডে। এই রোডে শতভাগ বাসের ফিটনেস নেই বললেই চলে।
চলতি মাসেই ফিটনেসবিহীন বাসের বিরুদ্ধে মনিটরিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এই মাস থেকেই আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। ফিটনেসবিহীন বাস কোনোভাবেই সড়কে চলাচল করতে দেওয়া যাবে না। আর বাবুবাজার রোডে যেসব ফিটনেসবিহীন বাস চলাচল করে, সেগুলো আমাদের সমিতির আওতায় নেই বলে জানান তিনি।
কোন বাস কোন সমিতির আওতায় নেই, কোন বাসের ফিটনেস নেই, কোন বাস ড্রাইভারের লাইসেন্স নেই- তা দেখার দায়িত্ব নিশ্চয়ই জনগণের নয়? তাহলে! এসব দেখার জন্য সরকারের নির্দিষ্ট কর্র্তৃপক্ষ আছে, জনবল আছে তারপরও কিছু হচ্ছে না। কেন? এই ‘কেন’-এর উত্তর যতদিন না পাওয়া যাবে ততদিন এই সমস্যার সমাধান হবে না।
সততার বুলি আওড়ে, সমস্যার সমাধান করা যায় না। সমাধান করতে হলে, সৎচিন্তার মানুষ হতে হয়। শুদ্ধ হতে হয়। ঠিক তখনই চেতনায় আসে, মহৎ এবং জনকল্যাণমূলক পরিকল্পনা। রাজধানীবাসীকে পরিবহন দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেওয়া কঠিন কিছু না। একটু আন্তরিক ইচ্ছা থাকলেই হয়।
অমূল্য জীবনকে পুঁজি করে, জরাজীর্ণ বাসকে সামনে রেখে, অসৎ পথে যারা কোটি কোটি টাকার ফায়দা লুটছেন তাদের থামানো দরকার। ভুলে গেলে চলবে না, যেনতেনভাবে অর্থ আয়, একটি সভ্য সমাজের চিত্র হতে পারে না।
‘পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে’আধুনিক বিজ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত এই মতবাদের প্রবক্তা এবং আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক নিকোলাস কোপার্নিকাস ১৪৭২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি পোল্যান্ডের টোরুন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। জার্মান বংশোদ্ভূত এক ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান তিনি। বাবা নিকোলাস কোপার্নিগ ছিলেন প্রভাবশালী বণিক। চার ভাইবোনের মধ্যে কোপার্নিকাস ছিলেন সবার ছোট। মাত্র দশ বছর বয়সে পিতাকে হারান। পিতার মৃত্যুর পর মামার বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করেন। তিনি জ্যোতির্বিদ্যা, গণিতশাস্ত্র ও আইনশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন। অধ্যয়ন শেষে পরিবারের আগ্রহে বাল্টিক সাগরের ধারে এক গির্জায় যাজকের পদে চাকরি শুরু করেন। গির্জাটি ছিল একটি পাহাড়ের ওপর। এর কাছাকাছি একটি গম্বুজ থেকেই নিকোলাস তার পর্যবেক্ষণ চালাতেন। কোপার্নিকাস লক্ষ করেন সূর্যকে কেন্দ্রে রেখে গ্রহগুলোর গতিপথ সহজে ব্যাখ্যা করা যায়। পৃথিবীকে গায়ের জোরে কেন্দ্রে বসালেই অযথা জটিলতা তৈরি হয়। তিনি ‘নভোবস্তুসমূহের পরিভ্রমণ সম্পর্কে’ নামে একটি বইয়ে তার বৈজ্ঞানিক অনুসিদ্ধান্তসমূহ লিপিবদ্ধ করেন। বইটি ১৫৩০ সালে লিখিত হলেও তা প্রকাশিত হয় কোপার্নিকাসের মৃত্যুর পর ১৫৪৩ সালে। কিন্তু সেকালের রক্ষণশীল খ্রিস্টান ধর্মযাজকদের রোষানলে পড়ে বইটি নিষিদ্ধ হয়ে যায় ২০০ বছরের জন্য! অবশ্য কোপার্নিকাসের ধারণা সম্পূর্ণ ঠিক ছিল না। গ্রহগুলোর গতিপথ নিয়ে তার চিন্তায় কিছুটা ভুল ছিল। তবে তিনিই প্রথম সৌরজগতের গঠন সম্পর্কে সঠিক ধারণার খুব কাছাকাছি গিয়েছিলেন। তার চিন্তা ধীরে ধীরে আলোর পথ দেখায় টাইকো ব্রাহে, জোহানেস কেপলার, গ্যালিলিও গ্যালিলি প্রমুখ বিজ্ঞানীদের। তারা কোপার্নিকাসের ভুল-ত্রুটি শুধরে নিয়ে সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের ধারণাকে প্রমাণ ও প্রতিষ্ঠা করেন। ১৫৪৩ সালের ২৪ মে ৭০ বছর বয়সে তিনি মৃতুবরণ করেন।
বাংলাদেশের ৫৩তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস রবিবার।
একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালিদের ওপর অতর্কিত গণহত্যা অভিযান ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু করে এবং বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারের পূর্বে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ রাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি সেনারা বাঙালি বেসামরিক লোকের ওপর গণহত্যা শুরু করে।
তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মী এবং সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। ওই ঘোষণা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হয়।
বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তারের আগে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পাশাপাশি যে কোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
মুহূর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই সময় বাস্তবতা ও নিরাপত্তা জনিত কারণে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার এই ঘোষণা নথি সংরক্ষণ করা সম্ভব ছিল না। পরবর্তী সময়ে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তৎকালীন ইপিআর-এর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পরে। পরে চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ মার্চ বেশ কয়েকজন শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।
দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধর পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে একটি ভূখণ্ডের, যার নাম বাংলাদেশ।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।
রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধির মধ্যেই তৈরি পোশাক খাতের আকাশে দেখা দিয়েছে শঙ্কার মেঘ। কয়েক মাস ধরেই খাতটির উদ্যোক্তারা রপ্তানি আয় কমে যাওয়া নিয়ে নানা ধরনের শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন। তারা বলছেন, রপ্তানির প্রধান প্রধান অঞ্চলগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি থাকায় আগামীতে ওই সব অঞ্চলে রপ্তানি ব্যাপক হারে কমে গেছে। তাদের ভাষ্য, ইতিমধ্যে তার প্রভাবও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। অর্ডার কমে যাওয়ায় কমেছে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানিও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যও বলছে সে কথা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলার হার নেমেছে প্রায় অর্ধেকে।
দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। তবে এই খাতের কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতির পুরোটাই আমদানিনির্ভর; যা চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাপক হারে কমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) টেক্সটাইল ফেব্রিক্স আমদানির এলসি বা ঋণপত্র খোলা কমেছে ২৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ৬২৬ কোটি ডলারের এলসি খোলেন গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮৬৫ কোটি ডলার।
তবে প্রস্তুত কাপড়ের চেয়ে বেশি আমদানি কমেছে কাঁচামালের। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে কাঁচা তুলা বা কটন আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৪৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এ সময়ে কাঁচা তুলা আমদানিতে ১৫৩ কোটি ডলারের এলসি খোলেন ব্যবসায়ীরা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে তুলা আমদানিতে ২৭২ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। আবার তুলার চেয়ে সুতা আমদানি আরও কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সুতা আমদানিতে এলসি খোলা হয় ১০৭ কোটি ডলারের, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৪২ কোটি ডলার। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সুতা আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৫৬ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের আট মাসে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৫৪ দশমিক ১১ শতাংশ। এই সময় টেক্সটাইল যন্ত্রপাতির এলসি খোলা কমেছে ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ। আর গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ৬৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি করে উদ্যোক্তারা সাধারণত নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন বা কারখানার সম্প্রসারণ করে থাকেন। অর্থাৎ শিল্প খাতে বিনিয়োগ বাড়ে। বিনিয়োগ বাড়লে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। সামগ্রিক অর্থনীতিতে গতিশীলতা আসে। আর এটি কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে, ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা ব্যবসা সম্প্রসারণ কিংবা নতুন কলকারখানা স্থাপন অনেক কমিয়ে দিয়েছেন। এতে দেশে বিনিয়োগ ও উৎপাদনে ‘ধস’ নামার একটা অশনিসংকেত পাওয়া যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে কাঁচামাল ও জাহাজভাড়া অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার ব্যাপক পতন, বিভিন্ন দেশে মন্দার শঙ্কাসহ নানা কারণে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে উচ্চ আমদানি ব্যয়ের কারণে দেশে ডলার সংকট দেখা দিলে এলসি খোলায় কড়াকড়ি আরোপ করে সরকার। এতে ডলারের ওপর চাপ কিছুটা কমানো গেলেও আমদানি জটিলতায় পড়েছে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য খাত।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানির ক্রয়াদেশ কিছুটা কমেছে। কিন্তু উচ্চমূল্যের পণ্য রপ্তানি বাড়ায় রপ্তানি আয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রভাব পড়েনি। যেহেতু সাধারণ পোশাক রপ্তানি কমেছে সে কারণে কাঁচামাল ও মেশিনারিজ আমদানিও কমেছে। পাশাপাশি ডলার সংকটও আমদানি কমে যাওয়াতে ভূমিকা রেখেছে। ফারুকের আশঙ্কা, উন্নত দেশগুলোতে ব্যাংকিং খাতে যে সংকট দেখা দিয়েছে, তার কারণেও রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে এসব বিষয় মোকাবিলায় পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংকগুলোতে বিনিয়োগ করার মতো অর্থের সংকট রয়েছে। এ কারণে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করতে পারছে না। পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকার বড় অবমূল্যায়নের কারণে মালিকরা খুব বেশি প্রয়োজন না হলে মূলধনি যন্ত্রপাতি আনছেন না। অবশ্য আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম কমায় আমদানির পরিমাণে প্রভাব পড়েছে বলেও মনে করেন ফজলে শামীম এহসান।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মন্দার আশঙ্কায় কেউ নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এ কারণে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। তবে কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়াটাকে তারাও আসন্ন সংকট হিসেবে দেখছেন। গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এবং ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশে ডলারের সংকটের কারণে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা কাঁচামাল আমদানি করতেই হিমশিম খাচ্ছেন। এটা খুব ভালো লক্ষণ নয়। তবে তিনি আশাও দেখছেন। তার ভাষ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম কমে যাওয়ায় মূলত আমদানি ব্যয় কম হয়েছে। আমদানির পরিমাণ খুব একটা কমেছে বলে মনে করেন না তিনি।
পুলিশ ভেরিফিকেশন না হওয়ায় চাকরি স্থায়ীকরণ হচ্ছিল না। কিন্তু তার দেরি সয়নি। নিজের তত্ত্বাবধানে থাকা সার্ভিস বইয়ের পাতায় কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে স্থায়ী করে নিলেন নিজের চাকরি। এই ব্যক্তি হলেন ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের উচ্চমান সহকারী মো. মনোয়ার হোছাইন। স্থানীয় সরকার বিভাগ তদন্তের পর থানায় মামলা হয়। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে তার বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগের চারটির প্রমাণ মিলে। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট আইনের দুটি ধারায় তার ১২ বছর সাজা ও অর্থদ- হয়েছে। পুলিশ মনোয়ারকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯৪ সালের ১৯ মে ‘ক্রু’ বা মশককর্মী পদে যোগ দেন মনোয়ার হোছাইন। দপ্তরের চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী, এলডিএ কাম টাইপিস্ট হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু অসম্ভবকে সম্ভব করে তিনি ওই পদও বাগিয়েছেন। ওই পদ থেকে উচ্চমান সহকারী (হেড ক্লার্ক) পদেও পদোন্নতি নিয়েছেন। এরপর দপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদের অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে নেন। তথ্য গোপন করে পদোন্নতি নেওয়া এই কর্মকর্তার বাদ ছিল চাকরিতে স্থায়ী হওয়া। প্রথমবার কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে বিধিবহির্ভূত পদোন্নতি নেওয়ার পর তার উচ্চাকাক্সক্ষা বেড়ে যায়। ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি তিনি দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল স্বাক্ষর করে চাকরি স্থায়ী করেন। এর আগে দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. রওশন আরা তালুকদারকে চাকরি স্থায়ী করার জন্য চাপ দেন। কিন্তু তিনি রাজি হননি।
এ ঘটনার পর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্থানীয় সরকার বিভাগ ও দুদকের তদন্ত কমিটির কাছে লিখিতভাবে তার স্বাক্ষর জাল করার বিষয়ে অভিযোগ করেন। ২০১১ সালে মনোয়ারকে বরখাস্ত করা হয়।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. রওশন আরা তালুকদার তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগের পক্ষে বিভিন্ন প্রমাণও জমা দেন। তিনি লিখিত বক্তব্যে জানান, অভিযুক্ত মনোয়ার হোছাইনের চাকরি স্থায়ীকরণ সংক্রান্ত চাকরি বইয়ের দ্বিতীয় খ-ের নবম পৃষ্ঠায় যে স্বাক্ষর রয়েছে তা তার নয়। ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি তারিখের স্বাক্ষরটি মনোয়ারের সৃজনকৃত। চাকরিকালীন তার বিষয়ে কোনো পুলিশ ভেরিফিকেশন করানো হয়নি। এ জন্য তার চাকরিও স্থায়ী করা হয়নি। আর সার্ভিস বইয়ে যে সিল ব্যবহার করা হয়েছে তা তার সময়ে ব্যবহৃত সিল থেকে ভিন্ন। সিলের নিচে যে স্বাক্ষর রয়েছে তিনি বলতে পারবেন সেটা কীভাবে হলো। ইস্যু রেজিস্টার খাতায় ৪৬ নম্বর দিয়ে যে চিঠিটি তৈরি করা হয়েছে তার কোনো কপি কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। ৪৬ নম্বর ক্রমিকটি ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি লেখা রয়েছে। অন্যান্য কলাম খালি রয়েছে। পরের পাতায় ২০১০ সালের ২৫ জানুয়ারি ২৬ নম্বর ক্রমিক দিয়ে একটি বদলির চিঠি ইস্যু করা হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরও জানান, ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের উচ্চমান সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন মনোয়ার হোছাইন। দপ্তরের বিধি-বিধান অনুযায়ী নথি, রেকর্ডপত্র, সার্ভিস বই তার কাছে রক্ষিত ছিল। এ কারণে জাল স্বাক্ষরের দায় তিনি কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। দপ্তরে জমা দেওয়া তার এলএলবি পাসের সনদও সঠিক ছিল না। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় থেকে তার ওই সনদ সঠিক নয় বলে লিখিতভাবে দপ্তরকে জানানো হয়েছে।
মনোয়ারের বিরুদ্ধে অনিয়মতান্ত্রিক কার্যকলাপ, নিয়োগ বাণিজ্য, স্বাক্ষর জাল, নিজেই নিজের চাকরি স্থায়ীকরণ এবং নথি, রেকর্ডপত্র, সার্ভিস বইয়ে ত্রুটি ঘটানোসহ পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে চারটি অভিযোগের প্রমাণ মেলে।
ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশে ২০১৩ সালের ১৮ জুন দপ্তরের পক্ষ থেকে চকবাজার থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা (নম্বর-৪) করা হয়। পরে মামলাটি তদন্তের জন্য দুদকে পাঠানো হয়। দুদক তদন্ত করে মনোয়ারের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর তাকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট আইনের একটি ধারায় তার পাঁচ বছরের কারাদ- হয়। পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের সশ্রম কারাদ- দেয় আদালত। আরেকটি ধারায় সাত বছরের কারাদন্ড দেওয়ার পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের বরখাস্ত উচ্চমান সহকারী মনোয়ার হোছাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, একটি চক্র তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। তাদের চক্রান্তের শিকার হয়ে তিনি কর্মস্থল থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল এবং আদালতের সাজার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা কত কিছু করছে। কোথায় আবার কী করেছে বুঝতে পারছি না। এ প্রসঙ্গটি বারবার উত্থাপন করলেও তিনি এড়িয়ে যান।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, গণহত্যা নিয়ে পাকিস্তান যা বলে, তারাও (বিএনপি) তাই বলে। কারণ তারা পাকিস্তানি ভাবধারায় উজ্জীবিত, তাদের হৃদয়ে পাকিস্তানি চেতনা।
আজ রবিবার (২৬ মার্চ) ভোরে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের দাবি 'আওয়ামী লীগের ভুলের জন্য গণহত্যা হয়েছিল'- এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, তাদের (বিএনপি) হৃদয়ে পাকিস্তানি চেতনা। তারা এমনটা বলবে, এটাই সমীচীন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার শত্রুরা সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ; এমন নানা পোশাকে স্বাধীনতাকে চ্যালেঞ্জ করে। এই অপশক্তিকে পরাস্ত করতে হবে। কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ সোনার বাংলা গড়ার পথে রয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া এখন অন্যতম অঙ্গীকার।
এর আগে, জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুলউল আলম হানিফ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের অপরাধীরা আগে ভারতে গিয়ে আত্মগোপন করত। এরপর জানা গেল, সেখান থেকে দেশে অপরাধ ঘটায় তারা। কারও কারও নেপালে অবস্থানের কথাও জানা যায়। ভারতকে নিরাপদ মনে না করায় আরব আমিরাতের দুবাই বেছে নিচ্ছে অপরাধীরা। সেখানে তারা আস্তানা গেড়েছে।
পুলিশসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দেশের অপরাধজগতের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীরা অপরাধ করেই দুবাই চলে যাচ্ছে। সেখানে বসেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কলকাঠি নাড়ছে। এখন বিতর্কিত মডেল, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরাও দুবাইকে কেন্দ্র করে নানা কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। সেখানে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যও আছে। তাদের কেউ কেউ সোনার কারবারও করছেন। ওই দেশে ভারতের দুর্ধর্ষ অপরাধী দাউদ ইব্রাহিমের শিষ্যত্ব নেওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ওইসব অপরাধীর তথ্য জানার পরও তাদের ফেরত আনতে পারছেন না। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিসের’ দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে পুলিশকে। তালিকাভুক্ত অপরাধীদের ধরতে রেড নোটিস জারি হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তারা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যাকাণ্ডের পর অনেকে পার পেয়ে গেছে। যদিও মামলাটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। তবে নতুন করে আলোচিত মামলাটির পুনঃতদন্ত করার কথা ভাবছে পুলিশ। এ নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ রূপান্তরকে জানান, ২০২২ সালের ২৪ মার্চ সড়কে গুলি চালিয়ে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যা করা হয়। গুলিতে নিহত হন এক কলেজছাত্রী। চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুনের মূল হোতা সুমন শিকদার ওরফে মুসা ঘটনার রাতেই দেশ ছেড়ে চলে যায় দুবাইয়ে। সেখানে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও জয়ের সঙ্গে তার বৈঠক হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে মুসা চলে যায় ওমানে। জিসান ও জয় এখনো দুবাইতেই বসবাস করছে। যদিও ওমান থেকে মুসাকে ওই বছরের ৯ জুন ইন্টারপোলের মাধ্যমে ঢাকায় ফিরিয়ে আনে পুলিশ সদর দপ্তর। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই ফের আলোচনায় আসে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও হিরো আলমের দুবাই সফরকে কেন্দ্র করে। তারা বনানীতে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের আসামি আরাভ খান নামধারী রবিউল ইসলামের সোনার দোকান উদ্বোধন করতে সেখানে যান। দুবাই যাওয়ার কারণে সাকিব ও হিরো আলমকে যেকোনো সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে ডাকা হতে পারে। এ ছাড়া ‘প্লেজার ট্যুরের’ জন্য এখন দেশের শিল্পপতিদের পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছে দুবাই। কারণ ঢাকাকে তারা নিরাপদ মনে করছেন না। পাশাপাশি দেশে আটক সোনার চালানের ৮০ শতাংশ জব্দ হচ্ছে দুবাইফেরত বিভিন্ন এয়ারলাইনস থেকে। সব মিলিয়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে দুবাই।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অপরাধীরা যে দেশেই থাকুক না কেন, তাদের চিহ্নিত করে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে আটক করার পর দুবাই থেকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফেরত আনতে চেয়েছিল পুলিশ। সম্প্রতি আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আরাভকে দুবাই থেকে ফেরত আনতে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করি অল্প সময়ে সুখবর দেওয়া সম্ভব হবে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে জানান, সম্প্রতি আলোচনায় আসা আরাভ খানকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি ভারতের পাসপোর্টধারী। দেশে তার নামে ১২টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। ওইসব পরোয়ানার কপি ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে পাঠানোর পর দ্রুতই তাকে ফেরানো সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও এর আগে জিসান ও জয়কে দুবাই থেকে ফেরত আনার উদ্যেগ নিয়েও আনতে পারেনি। টের পেয়ে তারা দুবাই ছেড়ে কানাডায় চলে যায়। তারা আবার দুবাই এসেছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে বিতর্কিত মডেল, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা এই দেশে অপরাধ করে দুবাই গিয়ে আস্তানা গাড়েন। ইতিমধ্যে পুলিশ একটি তালিকা করেছে। ওই তালিকায় গুলশান ও বনানী এলাকার মডেলের সংখ্যা বেশি। বছরখানেক আগে গ্রেপ্তার হওয়া ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ বেশিরভাগ সময় দুবাই থাকেন। তাদের সঙ্গে অপরাধ জগতের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সখ্য আছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে। এমনকি বনানীতে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যাকান্ডে তাদেরও সম্পৃক্ততা ছিল বলেও অভিযোগ উঠেছিল। ঘটনার পর পিয়াসা, রাজ ও আরাভকে আটকও করা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের এক বড় মাপের নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তার অনুরোধে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এসব বিষয় নিয়ে পুনরায় তদন্ত করা হতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংগীতশিল্পী, এক ব্যবসায়ীর স্ত্রী ও কয়েকজন মডেল নিয়মিত দুবাই আসা-যাওয়া করেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালে তৎকালীন সরকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসী ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজন ধরা পড়েছে। আবার কেউ ক্রসফায়ারে মারা গেছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার তাড়া খেয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে আছে কেউ কেউ। আত্মগোপনে থেকেই তারা অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই দুবাই রয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। এ নিয়ে পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তারা কয়েক দফায় বৈঠক করেছেন। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও আলাদাভাবে বৈঠক হয়েছে। ওইসব বৈঠকে বলা হয়েছে, ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করার পরও কেন তারা ধরা পড়ছে না তা খতিয়ে দেখতে হবে। ২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাই চলে যায়। সেখান থেকেও ঢাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে আছে। তার সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহেল শাহরিয়ার ওরফে শটগান সোহেল, কামরুল হাসান হান্নান, ইব্রাহীম, রবিন ও শাহাদৎ হোসেন বেশিরভাগ সময় দুবাই থাকে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্দিবিনিময় চুক্তি থাকায় বেশ কয়েকজন শীর্ষ অপরাধীকে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, শাহাদৎ, নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার আসামি নুর হোসেনসহ অনেকেই কলকাতায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। নুর হোসেন ছাড়া অন্য সন্ত্রাসীদের দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। সুব্রত, মোল্লা মাসুদ ও শাহাদৎ ভারতে সুবিধা করতে না পেরে মুম্বাই হয়ে দুবাই চলে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার অপরাধজগতের এক সন্ত্রাসী এ প্রতিবেদককে বলেন, অপরাধীরা এখন আর ভারত যেতে চায় না। কারণ ওই দেশে শান্তিতে থাকা যায় না। ফলে সবাই এখন দুবাইমুখী হচ্ছে। দুবাইয়ে সবাই নিরাপদে থাকতে পারছে।
রাজধানীর মিরপুরের একটি মাধ্যমিক-সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে সিফাত। একই এলাকায় বসবাসকারী তার বন্ধু সিয়াম পড়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে। সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রোজার ছুটি। আর সরকারি প্রাথমিকে ছুটি ১৫ রোজা অর্থাৎ ৭ এপ্রিল থেকে।
এক দেশে একই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন নিয়মে ছুটি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে লেখাপড়ায় কেউ এগিয়ে যাবে, আবার কেউ পিছিয়ে পড়বে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ মামুনুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার বা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে ভেবেচিন্তেই নেয়। তবে সব ধরনের স্কুলে একটা কো-অর্ডিনেশন থাকলে ভালো হয়। আমরা ছুটির ব্যাপারে আরও আলাপ-আলোচনা করব।’
জানা গেছে, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে আগামী শুক্রবার শুরু হতে পারে রমজান মাস। বছরের শুরুতেই স্কুলগুলোর ছুটির তালিকা অনুমোদন করা হয়। সে অনুযায়ী পবিত্র রমজান, স্বাধীনতা দিবস, ইস্টার সানডে, বৈসাবি, নববর্ষ ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি, বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি কলেজ, আলিয়া মাদ্রাসা ও টিটি (টিচার্স ট্রেনিং) কলেজেও একই সময়ে ছুটির ঘোষণা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ছুটির তালিকা ভিন্ন। তারা পবিত্র রমজান, ইস্টার সানডে, চৈত্র-সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ৭ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ প্রায় ১৫ রমজান পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে।
রাজধানীসহ বড় বড় শহরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিকের মতোই তাদের ছুটি থাকবে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রোজার ছুটিও একই। তবে মাদ্রাসায় রোজার ছুটি শুরু এক দিন আগেই অর্থাৎ আজ বুধবার, ২২ মার্চ।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান। তাই বুধবার ক্লাস করে বৃহস্পতিবার রোজার ছুটি শুরু হবে। তবে সব স্কুলে একই ধরনের ছুটি থাকা জরুরি। এতে একই সময়ে সিলেবাস শেষ করা যাবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও সন্তুষ্ট থাকবে।’
রমজানে মাধ্যমিকে স্কুল বন্ধ আর প্রাথমিকে খোলা রাখায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার লাখ শিক্ষকের মধ্যে। তারা বলছেন, যেসব অভিভাবকের সন্তান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দুই স্কুলেই পড়ে তাদের সমস্যা হবে। রমজান মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। প্রাথমিকের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরাও রোজা রাখেন। তাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে মিল রেখে প্রাথমিকের ছুটি নির্ধারণ করা যৌক্তিক হবে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাংগাঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ বছর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরকারি ছুটি ৭৬ দিন, কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ৫৪ দিন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিন্ন ছুটি নির্ধারণের যুক্তি তুলে ধরে আমরা ইতিমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেছি। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো সাড়া পাইনি।’