
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৩ মার্চ বাংলাদেশে পবিত্র রমজান শুরু হতে পারে। দিনের হিসেবে ২৭ দিন পরে হলেও রমজান কিন্তু আমাদের দরজায়, আলোচনায় এমনকি চিন্তায়। এর কারণ বাজার পরিস্থিতি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন মতে, এবারের রোজায় দেশের মানুষকে ছোলা, খেজুর, ভোজ্য তেল, চিনি ও আটার মতো নিত্যপণ্য কিনতে হবে বেশি দামে। অবশ্য নিত্যপণ্যের দাম এখনই গত রোজার চেয়ে অনেক বেশি। সংগত কারণে রোজায় চাহিদা বাড়ে ভোজ্য তেল, চিনি, ছোলা, ডাল ও খেজুরের। এর বাইরে চাল ও আটার চাহিদা সব সময়ই থাকে। চাল বাদে বাকি পণ্যগুলোর চাহিদার বেশির ভাগ মেটানো হয় আমদানি করে। পত্রিকার রিপোর্ট বলছে, এখন পর্যন্ত আমদানি কম। আর এখানেই কারসাজির সুযোগ সৃষ্টি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষের। আসন্ন রমজানে যে পরিস্থিতি সন্তোষজনক থাকবে, এটা নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই।
মহামারী করোনার কারণে বৈশি^ক অর্থনৈতিক মন্দাবস্থায় আশানুরূপ উন্নতি হয়। করোনা মহামারীতে অনেকে বেকার হয়েছেন, আবার চাকরি থাকলেও আয়-রোজগার কমেছে অনেকের। ফলে, বর্তমান বাজারদর যদি স্থিতিশীলও থাকে, তার পরও সাধারণ মানুষের চলা দায়। এর মধ্যে পবিত্র রমজানে আরেক দফা মূল্যবৃদ্ধি, সাধারণ মানুষের জন্য যা হবে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’।
পৃথিবীব্যাপী ধর্মীয় উপলক্ষ বা দেশীয় উৎসবের সময় জিনিসপত্রের দাম কমে। উৎসব ঘিরে ইউরোপ-আমেরিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ছাড়ের হিড়িক পড়ে যায়। অনেকে বছরভর এ সময়টার জন্যই অপেক্ষা করে। সারা বছরের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনে রাখে। ছাড় আর সেলের এ রীতি দুনিয়াজোড়া, ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ! এখানে সব ধরনের উৎসবের আগে পণ্যের দাম বাড়ে।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সারা বছরই ভেজাল মিশিয়ে কিংবা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ক্রেতাসাধারণের পকেট কাটেন। রোজার সময় তাদের অপতৎপরতা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। সরকারি নিয়ন্ত্রণের অভাবে তারা মুনাফা শিকারে চরম বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তাদের অতি মুনাফালোভী মনোবৃত্তির কারণে রমজানে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকে না।
প্রায় সব মুসলিমরাষ্ট্রে রমজান মাসে পণ্যের দাম কমাতে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। রোজাদারদের খুশি করাকে তাদের ইবাদতের অংশ মনে করে। শুধু মুসলিম বিশ্বই নয়, অন্য ধর্মাবলম্বীরাও ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে জিনিসপত্রের দামের বিশেষ ছাড় দিয়ে থাকে। আমাদের দেশেই শুধু ব্যতিক্রম। রোজা ও ঈদকে ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার মৌসুম হিসেবে বেছে নেয়। তাদের এমন মনোভাব থাকে, এক মাসে সারা বছরের ব্যবসা করে ফেলবে। তারাও মুসলমান, আমরাও মুসলমান, বিষয়টা ভাবতেও লজ্জার করে। বলছি না, কিংবা দাবি করছি না, বাংলাদেশে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম কমিয়ে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হোক, আমাদের দাবি ভোক্তাদের পকেট গলায় পাড়া দিয়ে কাটার প্রবণতা বন্ধ হোক।
সরকারের আশ্বাস আর গণমানুষের দাবি উপেক্ষা করে অসাধু ব্যবসায়ীদের ‘আসবে রোজা, বাড়বে দাম’ এমন মনোভাব কোনোভাবেই কাম্য নয়। দীর্ঘদিন ধরে চালের দাম বেশি, যা কোনোভাবেই কমল না। এতে নিম্ন ও মধ্য আয়ের সংসারে চলছে অস্থিরতা। দেশের পরিস্থিতি এমন যে নিম্নবিত্তের উচ্চদামে পণ্য ক্রয়ের কষ্ট বোঝার বা দেখার কেউ নেই। কোনো কিছুর দাম একবার বাড়লে আর কমে না। পরিবহন খাতের মতোই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে সর্বসাধারণ যেন অসহায়।
রোজা এলেই কেন জিনিসপত্রের দাম বাড়বে? এ তো জানা কথাই যে রোজায় কিছু পণ্যের চাহিদা বাড়ে। এর মধ্যে আছে পেঁয়াজ, ছোলা, ডাল, চিনি, দুধ, তেল, আটা, মুড়ি, খেজুর, আলু, বেগুন, শসা ইত্যাদি। এসব পণ্য কী পরিমাণ লাগবে, তাও আমাদের জানা আছে। আগেভাগেই কেন আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারি না। নির্দিষ্ট একটি পণ্য দেশে কতটুকু আছে, কতটুকু উৎপাদিত হয়েছে, বাড়তি কতটুকু আমদানি করতে হবে, তার হিসাব কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে অবশ্যই থাকতে হবে। প্রতি বছরই তাহলে কেন এ অনিয়ম? এ ধারা কি যুগ যুগ ধরেই চলবে?
প্রশাসন থেকে বলা হয়, পণ্যের ঘাটতি নেই, বিপরীতে আমরা দেখছি দামেরও মাত্রা নেই! অথচ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রণালয়সহ নানা পর্যায়ের মাথাভারী বোঝা রয়েছে; জনগণের কষ্টার্জিত অর্থে যাদের বেতন-ভাতা দেওয়া হয়। তাহলে সংশ্লিষ্টজন ব্যক্তিরা কে কতটুকু দায়িত্ব পালন করছেন?
বাংলাদেশে অনেক দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত পরিবার দারিদ্র্যের গ্লানি থেকে বেরোতে পারছে না শুধু নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য ও চিকিৎসাব্যয়ের কারণে। এমন অবস্থায় ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়লে গরিবরা সবচেয়ে বেশি চাপে থাকবে। এমনিতেই মানুষ খাবারের তালিকা কাটছাঁট করেছে। অনেকে সঞ্চয় ভেঙেছে এবং ভাঙছে। মানুষ বাজার ও চিকিৎসা খরচ সামলাতে পারছে না। এর মধ্যে রমজানে পণ্যমূল্যের বৃদ্ধির ফলে অনেক মানুষকে না খেয়ে রোজা পালন করতে হবে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
এ কথা অস্বীকারের কোনো উপায় নেই, মুনাফা অর্জন ব্যবসায়ীদের স্বাভাবিক নীতি। কিন্তু জনগণকে জিম্মি করে অতি বা অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জন ব্যবসার নীতি হতে পারে না। রমজানের অন্যতম শিক্ষা হচ্ছে সংযম। জীবনের সব ক্ষেত্রে সংযমী হওয়াই রমজানের শিক্ষা। অথচ আমাদের জীবনে এর ব্যতিক্রম বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে উল্টোটা দেখতে পাই। এসবের দ্বারা প্রকারান্তরে ওইসব ব্যবসায়ী রমজানের বিরুদ্ধেই অবস্থান নেন। কারণ, অহেতুক জিনিসপত্র ও খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়িয়ে তারা রোজাদারদেরই কষ্ট দেয়।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বাড়ানো নিশ্চিতভাবেই মিথ্যা ও ঠকবাজির নামান্তর। কাজটি কত গর্হিত, আল্লাহর কত অপছন্দনীয় এবং এর পরিণতি কত ভয়াবহ তা অসাধু ব্যবসায়ীরা চিন্তা করে দেখে না। কোরআন মজিদে আল্লাহপাক অসাধু ব্যবসায়ীদের প্রতি চরম অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘চরম দুর্ভোগ তাদের জন্য (বা ওয়াইল নামক দোজখে যেতে হবে তাদের) যারা মাপে কম করে। (আল্লাহপাক আরও পরিষ্কার করে বুঝিয়ে বলছেন) যারা লোকের কাছ থেকে যখন মেপে নেয় তখন পূর্ণমাত্রায় নেয়। (নিজের হিসাবটা ঠিকমতো বুঝে নেয়)। যখন লোকদের মেপে দেয় কিংবা ওজন করে দেয় তখন কম করে দেয়। (ঠকায়। ব্যবসায়ে প্রতারণা ও ঠকবাজির এই কাজটি কাফেরদের চরিত্রের মতো। আল্লাহপাক জিজ্ঞাসা করেন) তারা কি চিন্তা করে না যে, তারা (মরণের পর) পুনরায় উত্থিত হবে? যেদিন মানুষ দাঁড়াবে বিশ্ব পালনকর্তার সামনে। এটা কিছুতেই উচিত নয়। নিশ্চয় পাপাচারীদের আমলনামা সিজ্জিনে আছে।’সুরা মুতাফফিফিন : ১-৮
আমরা মনে করি, নামাজ না পড়লে, রোজা না রাখলে, হজ না করলে, বা জাকাত না দিলে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। অথচ লক্ষ করুন, ব্যবসায়ে প্রতারণা ও ঠকবাজি করলে পাপী হিসেবে সাব্যস্ত হতে হবে। ওই আয়াতে তাদের পাপী হিসেবে জাহান্নামিদের কাতারে দাঁড় করানো হয়েছে। বিষয়টি ব্যবসায়ীদের অনুধাবন জরুরি।
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক
ঠিক সময়টা মনে করতে পারছি না তবে পঞ্চাশ বছর আগের তো হবেই। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন একটা কথা বলেছিলেন দেশে এখন রুচির দুর্ভিক্ষ চলছে। কথাটি নিয়ে অনেকবার ভেবেছি। প্রত্যেক সমাজেই কিছু রুচিবান লোক থাকেন আবার কিছু লোক থাকেন যারা রুচির ধার ধারেন না। তাদের দৃষ্টি চলতি হাওয়ার দিকে। তবে রুচিবান মানুষরা মানুষের উন্নত রুচির খোঁজ-খবর দিয়ে থাকেন। কী শিল্প-সাহিত্যে, কী প্রাত্যহিক জীবনে। বর্তমানে কথাটি একেবারেই সত্য বলে মনে হয়। এই দেখে যে, সত্যি রুচির এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ চলছে। এবারে দুর্ভিক্ষের উৎস হচ্ছে মিডিয়া।
দেশে মুক্তচিন্তা মহাপাপ, মুক্তচিন্তার জন্য কত মহৎপ্রাণ জীবন পর্যন্ত দিয়ে দিল। কিন্তু মুক্তমিডিয়া সগৌরবে মানুষের রুচিকে হত্যা করতে শুরু করল। আজকাল প্রযুক্তির কল্যাণে মিডিয়া এমন একটা মুক্ত জায়গায় চলে গেছে যে সেখানে দুষ্ট রুচি ও নিম্ন রুচির জয়জয়কার। এইসব কুরুচির স্রষ্টারা তাদের সৃজনের ফসল ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ কামাই করে চলছে। এর মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করা অনেক লোক আছে- তাদের একজন স্বঘোষিত হিরো আলম। বাংলাভাষী দর্শকদের কাছে তিনি বেশ প্রিয়। সুরুচির জন্য বা কোনো সৃজনশীলতার জন্য নয়, তিনি প্রিয় রুচিহীন বিনোদনের খাদ্য তৈরি করে ফেরি করার জন্য। সমাজের অনেক সুরুচিসম্পন্ন লোক বলে খ্যাত ব্যক্তিরাও হিরো আলমের সুখ্যাতি করেন, তাদের স্বাধীন কলমটি দিয়ে দু-চার কথা লিখেও ফেলেন। অবশ্য আজকাল কলম লাগে না, মুখে বলা যায়, কম্পিউটারে পটাপট টাইপ করে মুক্তমিডিয়ায় পোস্ট করে দেন। ফলাফল এই দাঁড়ায় যে, তিনি আর মিডিয়ায় আবদ্ধ থাকতে চান না। তার শক্তিশালী রুচিহীন ঈগলের ডানাটি উড়তে উড়তে এসে জাতীয় রাজনীতিতে অবতরণ করে। স্কুলে একজন শিক্ষক তার নির্বাচনের প্রয়োজনে একটি মাইক্রোবাসও উপহার দেন। শোনা গেল, মাইক্রোবাসটির আট বছরের কোনো কাগজপত্র নেই। একজন চিত্রনায়িকাকেও দেখা গেল নির্বাচনী অভিযানে নেমে পড়েছেন। এবং শেষ পর্যন্ত তিনি সামান্য ভোটে পরাজিত হয়েছেন। এই নিয়েও প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে লেখাজোখার মাধ্যমে বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন। তাদের মধ্যে আমিও একজন।
কিন্তু মিডিয়া যেহেতু মুক্ত তা জেনে আমি নিজেও লজ্জা পেয়েছি। আজকাল প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে নাটকের জন্য একটা কথা বেশ চালু হয়েছে। তা হলো দর্শক রোমান্টিক কমেডি চায়, এবং তার সঙ্গে আকার ইঙ্গিতে একটু অশ্লীলতাও চায়। দর্শকদের মধ্যেও একটা বিড়াট অংশ এর সমঝদার। তাদেরও দাবি তাই। নিবেদিতপ্রাণ শত শত পরিচালক এবং কাহিনীকার কলম এবং ক্যামেরা নিয়ে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন এবং তারা অরুচির গহিন অরণ্যে ডুব দিয়ে স্বপ্নের হিরো আলমকে ধরতে চাইছেন। এবং নিজেরা একটা আত্মতুষ্টিতে ভুগছেন যে, আমি হিরো আলমের চেয়ে ভালো। কিন্তু যেসব তথাকথিত বুদ্ধিজীবী হিরো আলমকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন তাদের মনের মধ্যে একজন হিরো আলম বসবাস করে। এবং তারা ঘটনাক্রমে একটা লেবাস পরে পদক পুরস্কার পেয়ে সমাজের একটা জায়গায় নিজেদের অধিষ্ঠিত করেছেন।
আমরা সবসময়ই মনে করি পশ্চিমবঙ্গের দর্শক আমাদের চেয়ে ভালো। কিন্তু প্রথম খটকা লাগল যখন বেদের মেয়ে জোছনা ওখানকার সিনেমার সমস্ত রেকর্ড ভেঙে ফেলল। এবং আমাদের একজন নায়িকা ওখানে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে অনেক বড় নায়িকার ধস নামিয়ে দিলেন। হিরো আলমের প্রতি সাম্প্রতিককালে সবার মতো আমারও কৌতূহল হলো। দেখলাম পশ্চিমবঙ্গ থেকে শুরু করে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক, লন্ডন এসব জায়গায় ব্যারিস্টার নামে খ্যাত অনেক কালো কোট পরা নরনারী হিরো আলমের সাফাই গাইতে শুরু করেছেন। একটি গণতান্ত্রিক সংবিধানের দেশে যে কেউ নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেন এবং তার সপক্ষে ভোট চাইবার জন্য যেকোনো অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন। অতীতে আমরা সশস্ত্র প্রচার অভিযান দেখেছি কিন্তু এবারে তার প্রয়োজন হয়নি। কারণ প্রার্থী হিরো আলম নিজেই মুক্তিবান রুচির দুর্ভিক্ষ ঘটিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। শুধু তাই নয়, দেশের প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে কথাও বলতে পারেন। সরকার এবং বিরোধী দলের নেতারা তাদের সুবিধামতো মন্তব্যও করে যাচ্ছেন। রুচির দুর্ভিক্ষে হিরো আলমের একটা বড় সুবিধা হয়েছে বটে কিন্তু চিন্তা ও যোগ্যতার দুর্ভিক্ষে যখন অযোগ্য লোকেরা দেশের আইন প্রণয়ন করছেন তখন তাদের উচ্চকণ্ঠ কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারছে না। বছরের পর বছর যে সংসদ অকার্যকর হয়ে থাকে, সংসদের ভেতরে দুই দলের মধ্যে যখন বচসা শুরু হয় তখন হিরো আলমদের চরিত্রের সঙ্গে খুব একটা অমিল দেখা যায় না। দেশের সাংসদ এবং স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা যে ভাষায় কথা বলেন এবং যে পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন তা হিরো আলম রচিত গান নাটক বা সিনেমার চেয়ে উন্নত কিছু নয়। যদি রাজনীতি সঠিক অবস্থানে থাকত, যদি সেখানে রুচির দুর্ভিক্ষ না থাকত তাহলে হিরো আলম হয়তো সাংসদ হওয়ার নির্বাচনে অংশই নিতেন না। হিরো আলম যতই জনপ্রিয় হোন, তিনি তো আর চার্লি চ্যাপলিনের সমকক্ষ নন। চার্লি চ্যাপলিন যখন নিউ ইয়র্ক শহরে আসতেন তখন ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যেত। তারপরেও তিনি তো নির্বাচনে যাননি। তিনি কোনো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাবেননি। কিন্তু তিনি ছিলেন রাষ্ট্রনায়কদের কট্টর সমালোচক। জনপ্রিয়তা আমাদের দেশে একটা অদ্ভুত ব্যাপার। আমার মতো একটু আধটু মিডিয়ায় জনপ্রিয় ব্যক্তিরা এলাকায় বেড়াতে গেলেই গ্রামের লোকেরা বলতে থাকে আপনি ইলেকশন করেন। এই অবস্থা হিরো আলমেরও হয়েছে। এবং তিনি বিশ্বাস করেছেন জনপ্রিয়তাই রাজনীতির একটা বড় শর্ত। তবে মানুষ যখন অযোগ্য লোকদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেখেন তখন হিরো আলমকেও তাদের চেয়ে অযোগ্য ভাবেন না।
বোম্বের কিছু মহানায়ক নির্বাচনে জয়ী হয়ে মন্ত্রীও হয়েছেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তারা যথেষ্ট সুনাম নিয়ে ফিরতে পারেননি। দক্ষিণ ভারতে দর্শকরা নায়ককে ত্রাতা মনে করেন। এটা মনে করে তারা যথেষ্ট খেসারতও দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গেও এই রীতি চালু হয়েছে। সে কারণেই পশ্চিমবঙ্গের একটা শ্রেণির মানুষের কাছে হিরো আলম যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছেন। গত কয়েক দশক ধরে সমাজের এক শ্রেণির লোক জনপ্রিয় হতে শুরু করেছেন। প্রচুর টাকা খরচ করে জনগণ তাদের বাহাস শোনেন। একদিকে যাত্রাপালার জন্য প্রশাসনের অনুমতি মেলে না অন্যদিকে শত শত মাইক লাগিয়ে মানুষের ঘুম হারাম করে অবিরাম ওয়াজ মাহফিল চলছে। যার ফলাফলে হিজাব-বোরখা এবং মাদ্রাসায় দেশ প্লাবিত হয়ে গিয়েছে। যে শিক্ষক হিরো আলমকে গাড়ি উপহার দিয়েছেন তার মতো শিক্ষকের এখন আর অভাব নেই। পনের-বিশ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে শিক্ষকতার চাকরি যারা নেন এবং যারা এর দালালি করেন তাদের পক্ষে রুচিহীন রাজনীতি করা অত্যন্ত সহজ কাজ।
আজ দেশে কুরুচির একটা প্রতিযোগিতা চলছে। দুর্ভিক্ষ ঘটে গেছে। খাদ্যের দুর্ভিক্ষকে নিরাময় করা সম্ভব কিন্তু কালে কালে যে রুচির দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে তাকে ফেরানো অত্যন্ত কষ্টকর কাজ। অপরাজনীতি অপসংস্কৃতি সবাই মিলে এই দুর্ভিক্ষ ঘটিয়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিপুল অবৈধ অর্থ। হিরো আলম তেমনি অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত সক্ষম ব্যক্তি। নেটওয়ার্কে ভেসে তার টাকা আসে। প্রচুর অবৈধ অর্থের মালিক তার টাকার জোগান দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। একদা একজন শিক্ষক সাংসদ এবং কোনো প্রবীণ নেতা সমাজে অত্যন্ত সম্মানের জায়গায় অবস্থান করতেন। গ্রামের সিভিল সোসাইটি বলতে তাদেরই বোঝাত। কিন্তু সেসব এখন অতীত। শিক্ষক আছেন, সাংসদ আছেন, স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধি আছেন সব জায়গাকে গ্রাস করেছে অবৈধ অর্থ এবং তার সঙ্গে কুরুচির সংস্কৃতি। রুচির দুর্ভিক্ষে সমগ্র সমাজ নিপতিত এবং তারই একজন পণ্যসরবরাহকারী হিরো আলম এবং তার শতসহস্র অনুগামী। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোনো প্রেসক্রিপশন কারও জানা আছে কি না জানি না, তবে এর জন্য বড় ধরনের একটা সাংস্কৃতিক আন্দোলন দরকার। কিন্তু তার জন্য কি সমাজ প্রস্তুত?
লেখক: নাট্যকার, অভিনেতা ও কলামিস্ট
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকেই ছিল চীনের অন্যতম প্রধান কৌশলগত মিত্র। কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধকালে আমেরিকান বলয়ে ছিল ইসলামাবাদ। নব্বইয়ের দশকে এক মেরুর বিশ্বব্যবস্থার সূচনা হলে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক গঠনে আগ্রহী হয়ে ওঠে। আর জুনিয়র জর্জ বুশের সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে পাকিস্তানের পারভেজ মোশাররফের সরকার আমেরিকাকে সব ধরনের সহযোগিতা করলেও আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগী হিসেবে ভারতকে প্রতিষ্ঠিত করে। আফগান সামরিক বাহিনী গোয়েন্দা পরিষেবাসহ নিরাপত্তা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এক প্রকার ভারতের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বিভিন্ন অন্তর্ঘাতী কাজে ভারত মার্কিন সমর্থিত আফগান সরকারের সংশ্লিষ্টতা তৈরি হয়, আর যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষে স্থান পায় পাকিস্তান। যা হোক, পাকিস্তানের বর্তমান প্রেক্ষাপটে রিজার্ভ কমে যাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নজিরবিহীন বন্যার জেরে টালমাটাল দেশটির অর্থনীতি। দেশটির গৌরবখ্যাত তুলা বুননশিল্পের অবস্থাও শোচনীয়। এ শিল্পে নিয়োজিত অন্তত ৭০ লাখ কর্মী হারিয়েছেন চাকরি। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে বেড়েছে খাদ্যপণ্যের দাম। সবকিছু মিলিয়ে পাকিস্তানজুড়ে চলছে হাহাকার।
২০২১ সালে ১৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বিশ্বের অন্যতম বড় টেক্সটাইল পণ্য উৎপাদনকারী দেশ পাকিস্তান, যা ছিল রপ্তানির অর্ধেকেরও বেশি। তবে ছোট টেক্সটাইল ও টেক্সটাইল পণ্য যেমন বিছানার চাদর, তোয়ালে এবং ডেনিম উৎপাদনকারী বহু কারখানা তুলার অপ্রতুলতার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। তার ওপর টেক্সটাইল শিল্পে বেড়েছে কর। রিজার্ভ সংকটের কারণে এখন টেক্সটাইল পণ্যের কাঁচামাল, চিকিৎসাসামগ্রী এবং খাদ্যপণ্য আটকে আছে করাচি বন্দরে। দেশটির টেক্সটাইল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, এ শিল্পে নিয়োজিত অন্তত ৭০ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছে।
গত বছর পাকিস্তানজুড়ে ভয়াবহ বন্যায় বেশির ভাগ তুলাশস্য নষ্ট হয়ে যায়। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বৈদেশিক রিজার্ভের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে, ২০১৪ সালের পর, যা সর্বনিম্ন। বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে মাত্র তিন সপ্তাহের পণ্য আমদানি করতে পারবে ইসলামাবাদ। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় এরই মধ্যে তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর। বর্তমানে ডলার ঘাটতি এতটাই তীব্র যে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী আমদানি করতেও বেগ পেতে হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ ওষুধও পাবেন না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জ্বালানি সংকটে বেশির ভাগ কারখানাই বন্ধ হওয়ার পথে। গ্যাস সংকটে বেশির ভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে দেশ। মুদ্রাস্ফীতি ২৭.৫৫ শতাংশ, যা দীর্ঘ ৪৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এক হাতে পারমাণবিক বোমা, অন্য হাতে ভিক্ষার থালা।
২০১৯ সালে ইমরান খান সরকারের সময় সাড়ে ছয় বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছিল আইএমএফ। কিন্তু ক্রমান্বয়ে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে ঋণ আটকে যায়। বর্তমান শাহবাজ শরিফ সরকার দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দিতে আইএমএফের কাছে প্রথম কিস্তিতে ১.১ বিলিয়ন ঋণ চেয়েছিল। আইএমএফ পাকিস্তানকে এ মুহূর্তে ঋণ দিতে আস্থায় পাচ্ছে না।
সম্প্রতি পাকিস্তানের ওপর জলবায়ুর প্রভাব নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দেশটিকে ১০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে উন্নত দেশগুলো। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতও দেশটিকে সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে।
অলৌকিক কিছু না ঘটলে আগামী এক মাসের মধ্যে পাকিস্তানে ভয়ংকর অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে আসবে। পাকিস্তানের এ অবস্থার জন্য রাজনৈতিক অস্থিরতারই দায়ী। স্বাধীনতার ৭৫ বছরেও সেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ২৩ জন শাসকের কেউই ক্ষমতার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। ২৫ বছর ছিল সরাসরি সামরিক শাসন, আর বাকি ৫০ বছরও গণতান্ত্রিক সরকারগুলো সামরিক শাসকদের হাতের পুতুল ছিল।
১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সময় জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশ জনগণ পূর্ব পাকিস্তানে ছিল। তা সত্ত্বেও শুরু থেকেই রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, প্রশাসনিকসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই পূর্ব পাকিস্তানকে পদে পদে বঞ্চিত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানের অন্যায়, শোষণ, নির্যাতন ও অবিচারের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-নির্বিশেষে সব মানুষ স্বাধীনতার মন্ত্রে একত্র হয়েছিল বলেই বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
বাংলাদেশ শূন্য ভাণ্ডার দিয়ে যাত্রা শুরু করে মাত্র ৫১ বছরে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সব সূচকেই পাকিস্তানকে অনেক পেছনে ফেলে দিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় পাকিস্তানের প্রায় দ্বিগুণ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাংলাদেশ ৩৪ বিলিয়ন ডলার, পাকিস্তান ৩০৯ কোটি ডলার, যা ১১ গুণেরও বেশি। বাংলাদেশের টাকা পাকিস্তানি রুপির চেয়ে বর্তমানে আড়াই গুণের বেশি শক্তিশালী। বাংলাদেশের শতভাগ জনগণ বিদ্যুৎ পায়, পাকিস্তানে ৭৩ শতাংশ। বাংলাদেশের জনগণের গড় আয়ু ৭২.৮ বছর, পাকিস্তানের ৬৬ বছর। বাংলাদেশের সাক্ষরতার হার ৭৫ শতাংশ, পাকিস্তানের ৫৯ শতাংশ। বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.২ শতাংশ, অন্যদিকে পাকিস্তানে ২.১ শতাংশ। বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর হার হাজারে ২১ জন, পাকিস্তানে ৫৯ জন। কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ৩৮ শতাংশ, পাকিস্তানে ২৩ শতাংশ। দারিদ্র্যের হার ২০.৫ শতাংশ, পাকিস্তানে ৪৭ শতাংশ।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে পাকিস্তানের গণমাধ্যমগুলোতে একাধিক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে পাকিস্তান সরকারকে শেখ হাসিনার কাছ থেকে শেখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৪ বছর ধরে একটি টেকসই প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত করেছেন। স্বাধীনতার ৫১ বছরে পাকিস্তান থেকে সব সূচকে এগিয়ে থেকে ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর ঋণ কিছুটা হলেও শোধ করতে পেরেছে বাংলাদেশ। অন্যায়, অত্যাচার ও নিপীড়নের ফলাফল কী হতে পারে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে পাকিস্তান। এটা তাদের কৃতকর্মের ফল। বাংলাদেশ শুধু দক্ষিণ এশিয়ার নয়, এশিয়ারই অন্যতম সেরা অর্থনীতির দেশ। অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রতিটি সূচকে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে, অনেক ক্ষেত্রে ভারত থেকেও এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।
পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদ, সুধীসমাজ এমনকি রাজনীতিবিদদের প্রায়ই বাংলাদেশের উদাহরণ দিতে দেখা যায়। উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ মডেলের কথা জোর দিয়ে বলা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতে, বাংলাদেশ এখন ৩৫তম অর্থনীতির দেশ। ২০৩০ সালে ২৫তম এবং ২০৪১ গিয়ে দাঁড়াবে ২১তম দেশে। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশের দারিদ্র্য ছিল ৭৫ শতাংশ বেশি, কিন্তু এখন পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ ৪৫ শতাংশ ধনী রাষ্ট্র।
পাকিস্তানি অর্থনীতিবিদদের অনেকে মনে করেন, ২০৩০ সালের মধ্যেই বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের সাহায্য চাইতে পারে। গত বছর ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়েছিল শ্রীলঙ্কা। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে প্রেসিডেন্টকে বিদেশে পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল। তখনই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো খুব দ্রুত আরও এক ডজন দেশের শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল। সেখানে পাকিস্তান, ইউক্রেন, কেনিয়া, ইথিওপিয়া, মিসর, এল সালভাদর, বেলারুশ, ইকুয়েডর, নাইজেরিয়া, আর্জেন্টিনার মতো দেশগুলোকে মারাত্মক ঝুঁকির দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, পাকিস্তান ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে খুব দ্রুত শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি হবে।
ইতোমধ্যেই পাকিস্তানের অনেক মেধাবী ও কর্মচঞ্চল তরুণ উচ্চতর শিক্ষা ও অন্যান্য কারণে পাকিস্তান ছাড়ছেন। তারা বিদেশে স্থায়ী হতে চান। আর দেশে ফিরতে চান না। পাকিস্তানে আগে থেকেই অর্থনৈতিক সংকট চলছিল। করোনা মহামারী আর গত বছরের প্রলয়ংকরী বন্যা এ পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। অনেক জায়গায় দেখা দিয়েছে খাবারের সংকট। বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। সেই সঙ্গে মুদ্রাবাজারে ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানের রুপির ক্রমাগত দরপতন অব্যাহত রয়েছে। গত বছর আট লাখের বেশি তরুণ চাকরির সন্ধানে পাকিস্তান ছেড়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির অভিবাসন ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানবিষয়ক ব্যুরো। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
করোনা মহামারীর আগে ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ২৫ হাজার ৮৭৬। চরম অর্থনৈতিক সংকটের জেরে কাজ নেই। বেকারত্ব ক্রমেই বাড়ছে পাকিস্তানজুড়ে। আর এ পরিস্থিতি দেশটির হাজারো শিক্ষিত তরুণকে বিদেশে পাড়ি জমাতে উৎসাহ জোগাচ্ছে। খাবার ও জ্বালানির বাড়তি দামের লাগাম টানা এবং চলমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে পাকিস্তান সরকার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে ঋণ নিয়ে সংকট সামলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে তরুণদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার প্রবণতা পাকিস্তানকে দীর্ঘ মেয়াদে ভোগাতে পারে। এ বিষয়ে পাকিস্তানের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও বিশেষ উদ্যোগবিষয়ক মন্ত্রী আহসান ইকবাল বলেন, শিক্ষিত তরুণদের এভাবে দেশ ছেড়ে যাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগের। নজিরবিহীন সংকটে টালমাটাল পাকিস্তানের অর্থনীতি। ভয়াবহ মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে আমদানি প্রায়ই বন্ধ হয়ে পড়েছে। জ্বালানি সংকটে বন্ধ অধিকাংশ কল-কারখানা। গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বেশির ভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ থাকার ফলে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে দেশ। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে ভয়াবহ বন্যায় বিপন্ন দেশটির জনগণ এখন নজিরবিহীন দুরবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।
লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক
শিক্ষাবিদ, চিন্তাবিদ ও গবেষক আহমদ শরীফের জন্ম চট্টগ্রামে ১৯২১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। তার বাবার নাম আবদুল আজিজ। পটিয়া হাইস্কুল ও চট্টগ্রাম কলেজের পাঠ শেষে ১৯৪৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। কুমিল্লার নওয়াব ফয়জুন্নেসা কলেজে বাংলার অধ্যাপক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু হয়। কিছুদিন তিনি রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রের কর্মসূচি নিয়ামক ছিলেন। ১৯৫০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে গবেষণা সহকারী হিসেবে যোগ দেন এবং পরে শিক্ষক হন। মধ্যযুগের কবি সৈয়দ সুলতানের ওপর গবেষণা করে তিনি ১৯৬৭ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৭২ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যকালের বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান, কলা অনুষদের ডিন, সিন্ডিকেট সদস্য এবং শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। আজীবন তিনি পুঁথিচর্চা, গবেষণা ও সম্পাদনা করেছেন। বাংলা একাডেমির প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ‘লায়লী-মজনু’ (১৯৫৭) তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। তিনি মধ্যযুগের চল্লিশটিরও বেশি কাব্যের পুঁথি সম্পাদনা করেছেন। তিনি তার গবেষণা ও ইতিহাস পর্যালোচনার মাধ্যমে মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে বাঙালি মুসলমানদের অবদানের যথার্থ পরিচয় তুলে ধরেন। তিনি ছিলেন যুক্তিনিষ্ঠ, বিজ্ঞানমনস্ক, মানবকল্যাণকামী ও প্রগতিশীল লেখক। ‘সাহিত্য ও সংস্কৃতি চিন্তা’, ‘স্বদেশ অন্বেষা’, ‘কালের দর্পণে স্বদেশ’, ‘মানবতা ও গণমুক্তি’, ‘বাঙলা বাঙালী ও বাঙালিত্ব’, ‘স্বদেশ চিন্তা’ ইত্যাদি তার মৌলিক গ্রন্থ। বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদকসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৯৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
জীবনের একটা চক্র থাকে। মৃত্যুর মাধ্যমে তার সমাপ্তি। কিন্তু এর আগে, শরীরকে যথাসাধ্য সুস্থ রাখার চেষ্টা করেন মানুষ। শরীর থাকলে রোগ হবেই। তিনি অসুস্থ হবেন। যাবেন ডাক্তারের কাছে । নেবেন ব্যবস্থাপত্র । চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হবেন। মানব জীবনচক্র চলে আপনগতিতে। মানবদেহের এই জটিল নিজস্ব ক্রিয়াকলাপে যখন সমস্যা দেখা দেয়, তখনই একজন মানুষ যান ডাক্তারের কাছে। কিন্তু অর্ধশিক্ষিত, অসচেতন এবং দরিদ্র মানুষ শরীরের প্রতি তেমন সচেতন না। রোগের চূড়ান্ত প্রকাশ না হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন না। কিন্তু সেই ডাক্তারের মধ্যেই যদি, ‘টাকা’ ও ‘সময়’ নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় সাধারণ মানুষ তখন অসহায় হয়ে যান। বর্তমানে যেমনটি দেখা দিয়েছে।
গতকাল দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায় প্রকাশিত ‘ চিকিৎসা ফি ও চালুর সময় নিয়ে কমিটিতে দ্বিমত’ শিরোনামের সংবাদের মাধ্যমে জানা যায় সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখার বিষয়ে একটি খসড়া নীতিমালা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গঠিত এ-সংক্রান্ত কমিটি। নীতিমালার খসড়ায় চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ ফি ৩০০ ও সর্বনিম্ন ১৫০ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি আগামী ১ মার্চ থেকে ঢাকায় ও আগস্টের মধ্যে সারা দেশের সরকারি হাসপাতালে এই ব্যবস্থা চালু করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
তবে এই খসড়া নীতিমালার কিছু প্রস্তাবনার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন কমিটির কয়েকজন সদস্য। তারা সর্বোচ্চ ৬০০ ও সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা নির্ধারণের পক্ষে মত দিয়েছেন। তারা আরও বলেছেন, তাড়াহুড়ো না করে ভেবেচিন্তে সব দিক বিবেচনায় নিয়ে ধাপে ধাপে এটি বাস্তবায়ন করা উচিত; বিশেষ করে তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনের পর এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের পক্ষে। তারা মনে করছেন, এই উদ্যোগে চিকিৎসকরা অসন্তুষ্ট হলে মানুষের কাছে সরকারের ব্যাপারে ভুল বার্তা যাবে এবং নির্বাচনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, খসড়া নীতিমালায় প্রস্তাব করা হয়েছে, এসব চেম্বারে চিকিৎসকরা বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রোগী দেখবেন। রোগীদের আগে থেকেই সিরিয়াল নিতে হবে না। তবে হাসপাতালে এসে টিকিট কাটতে হবে। কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ ধরনের চেম্বারে বসার ব্যাপারে কোনো চিকিৎসককে বাধ্য করা হবে না। তারা এখানে রোগী দেখার পর হাসপাতালের বাইরে তাদের চেম্বারেও রোগী দেখতে পারবেন।
এসব চেম্বারে আসা রোগীরা ওই হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করাতে পারবেন এবং এ জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত হাসপাতালের পরীক্ষাগার খোলা থাকবে। এ জন্য তাকে সরকার নির্ধারিত পরীক্ষা ফি দিতে হবে। চেম্বারে একজন অধ্যাপক সপ্তাহে দুদিন, সহযোগী অধ্যাপক দুদিন ও সহকারী অধ্যাপক দুদিন রোগী দেখবেন।
বিএমএর সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, ‘চিকিৎসকদের ফি নির্দিষ্ট হয়নি। জুনিয়র চিকিৎসকদের জন্য ৩০০ হতে পারে এবং সিনিয়র অভিজ্ঞদের জন্য ৬০০ টাকা। আরেকটু চিন্তাভাবনা করে ঠিক করা দরকার।
স্পষ্টতই বোঝা যায়, বিষয়টা একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে। স্বাভাবিকভাবেই, চূড়ান্ত পর্যায়ে যেতে সময় লাগবে। কিন্তু মধ্যবর্তী সময়ে, রোগীকে যেন কোনো ধরনের দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে না হয়। এর সঙ্গে কোনোভাবেই, রাজনীতিকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। এক পক্ষ মনে করেন, নীতিমালাটি ডাক্তারদের বিপক্ষে যাবে। আবার অন্যপক্ষ মনে করেন, ডাক্তারদের বিপক্ষে যাওয়ার সুযোগ নেই।
এই নীতিমালা, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে না পরে হবে এমন প্রশ্ন উত্থাপন যুক্তিসংগত নয়। সবকিছু দলীয় রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার-বিশ্লেষণ করা আমাদের মজ্জাগত হয়ে গেছে। এ বিষয়ে রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে রাখা দরকার। রোগী এবং রোগকে প্রধান্য দিলে, টাকা ও সময় মুখ্য হতে পারে না। ‘চিকিৎসা’ মানুষের মৌলিক অধিকার এবং এটি ‘সেবা’ বিষয়টি এভাবে বিবেচনা করলে, সমাধান দ্রুত আসতে পারে। প্রত্যাশা থাকল, এর সঙ্গে জড়িত সব পক্ষ বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবেন।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে ফরমায়েশি বলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য দেশের আইন ও আদালত অবমাননার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির মামলায় এর আগে বিএনপির দুই নেতাকে নিম্ন আদালতের দেওয়া সাজা বহাল রেখে দেশের উচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছে, সে সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিবের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দেশবাসীকে হতাশ করেছে।’
গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদে জানিয়ে এ বিবৃতি দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মনে করেন, মার্কিন নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করার পর বিএনপি তাদের বিদেশি প্রভুদের কাছ থেকে করুণা প্রাপ্তির আশায় সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। উচ্চ আদালতের রায়কে ফরমায়েশি বলা তাদের সেই চলমান ষড়যন্ত্রেরই অংশ। বিএনপির এ দুই নেতার আজকের পরিণতি তাদের ধারাবাহিক অপরাজনীতিরই ফসল বলে মন্তব্য করেন সেতুমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট শাসন আমলে হাওয়া ভবন খুলে তারা দুর্নীতি ও লুটপাটের মহোৎসবে মেতে উঠেছিল, যার পরিণতিতে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সে সময় হাওয়া ভবনের কর্ণধার জিয়াপুত্র তারেক রহমানের দুর্নীতির খতিয়ান বিশ^ গণমাধ্যম ও বিশ^খ্যাত গোপন নথি প্রকাশকারী সংস্থা উইকিলিকসে বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি দুই নেতার দুর্নীতির মামলার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কোনো যোগসূত্র নেই। ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে এবং তাদের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ার পর নিম্ন আদালত সাজা দিয়ে রায় দেয়। প্রায় ১৬ বছর বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ করে আদালত তাদের সাজা দিয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশের পবিত্র সংবিধান অনুযায়ী সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও আইন ও বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। এমনকি বিশ্বজিৎ হত্যাকা- এবং বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার হত্যা মামলায়ও ছাত্রলীগের নেতারা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ভোগ করছেন।’ তিনি বলেন, বিএনপি দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে তাদের দলীয় গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করেছে এবং দলের চিহ্নিত শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের সুরক্ষা দিয়েছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রসঙ্গ উঠলেই আলোচনায় আসেন সাবেক সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরণ। নগরীর লোকেরা বলে, তার মতো নগর পিতা দরকার। এবার আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত নগরবাসীকে কথা দিয়েছেন, হিরণের মতো করে নগরী গড়বেন তিনি। শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুর এক দশক পেরিয়ে গেছে, তবু তিনি আলোচনায়; শুধু বরিশালে নয়, সারা দেশে।
সংশ্লিষ্ট লোকজন বলে, হিরণের কর্মফলই তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। একসময় সব ক্ষেত্রে বরিশাল সিটির মানুষ অবহেলিত ছিল। সেসব অবহেলার কারণ ঘুচিয়ে এবং মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী নগরীকে আধুনিক করার অঙ্গীকার নিয়ে হাজির হন হিরণ। মেয়র নির্বাচিত হয়ে পাঁচ বছরের মধ্যে নগরীর রূপ পাল্টে দেন তিনি। বরিশালকে সাজান আধুনিক রূপে।
অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য আবদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিরণ ছিলেন আদর্শ নেতা। মানুষকে বোঝার চেষ্টা করতেন। দক্ষ ও বিচক্ষণ এবং সৃজনশীল মানুষ। তিনি নগরীর উন্নয়ন নিয়ে যেমন ভেবেছেন, ঠিক তেমনি মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন। তাই মানুষ ভুলতে পারে না তাকে।’
বিসিক শিল্পনগরীসংলগ্ন চায়ের দোকানদার মো. হালিম বলেন, ‘হিরণ সবসময় মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করতেন। সাধারণ পোশাকে চলতেন। দলমত নির্বিশেষ সবাইকে ভালোবাসতেন।’
নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সমির বলেন, ‘মেয়র হিরণ আমাদের জন্য রাস্তাঘাট, সড়কে বাতির ব্যবস্থাসহ অনেক কিছু করেছেন। তার কাজগুলোই কোনোমতে অনুসরণ করেছে অন্যরা। যে কাজ করে তাকেই তো মনে রাখব আমরা, তাই হিরণকে মনে রেখেছি।’
রিকশাচালক মো. হারুন বলেন, ‘এ নগরীর রাস্তাঘাট চলাচলের অযোগ্য ছিল। রাতে অন্ধকারে ডুবে থাকত। চুরি-ডাকাতি নিত্যখবর ছিল। কিন্তু হিরণ মেয়র হওয়ার পর রাতারাতি নগরী বদলে গেল। অনেক মানুষকে সিটি করপোরেশনে চাকরি দিয়েছেন তিনি। নগরীর গরিব মানুষকে এক টাকা করে হলেও সাহায্য করেছেন। সবার মন জয় করেছেন। আজ তার মতো একজন মানুষ থাকলে আমরা শান্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারতাম।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যাকে হারিয়েছি তাকে তো আর ফিরে পাব না। কিন্তু তার কর্ম, মানুষের প্রতি তার সম্মান এবং ভালোবাসা তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তিনি বিদ্যালয়ে এলে কখনো রাজনৈতিক আলাপ করতেন না। সবসময় শিক্ষার্থীদের আদর্শ মানুষ হওয়ার জন্য বলতেন, গল্প শোনাতেন।’
একজন ব্যবসায়ী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিরণ সাহেব থাকাকালে ব্যবসা করতে গিয়ে কখনো হেনস্তার শিকার হইনি। তিনি নিজেও ব্যবসায়ী ছিলেন। আমাদের ব্যবসায়ীদের কষ্ট তিনি বুঝতেন। কিন্তু নগরীর একদল মানুষ তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাকে নির্বাচনে হারিয়ে দিয়েছে। তারপর হিরণ সাহেব দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন।’
বিএম কলেজের সাবেক ভিপি ও শওকত হোসেন হিরণের ঘনিষ্ঠ মঈন তুষার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিরণ সাহেব প্রত্যেক নেতাকর্মীর নাম জানতেন। তিনি যার সাঙ্গে কথা বলতেন, সেই মানুষটিকে ভুলতেন না। এজন্য মানুষ তার প্রতি এত দুর্বল এবং আকৃষ্ট। নগরীর জন্য তিনি মাস্টারপ্ল্যান করে কাজ করেছেন। তার সঙ্গে মানুষ সরাসরি কথা বলতে পারত এবং দেখা করত। এখনো মানুষ তাকে ভালোবাসে এবং মনে রেখেছে।’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সোহেল রানা বলেন, ‘সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণ বরিশালকে আধুনিক নগরীতে রূপান্তরিত করে গেছেন। উন্নয়ন-আন্তরিকতা ও ব্যবস্থাপনার দক্ষতার সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি একজন আইকনিক সিটি মেয়র ছিলেন। আন্তরিকতাই একজন প্রশাসকের মূল সূচক। তাই তিনি সাধারণ মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছেন।’
মেয়র হিরণ ব্যক্তিগত জীবনে কেমন ছিলেন এ প্রশ্নের উত্তরে তার সহধর্মিণী ও সাবেক সংসদ সদস্য জেবুন্নেসা আফরোজ হিরণ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২৬ বছর আমি তাকে দেখেছি। তিনি কারও ভাই ছিলেন, একজন স্বামী ছিলেন এবং সন্তানদের বাবা ছিলেন। পরিবারভক্ত একজন মানুষ। মানবিক গুণাবলি ছিল। তার মা-ভক্তির খুব নাম আছে বরিশাল শহরে। স্বজন-সন্তান ও পরিবারের প্রতি যতœ নেওয়ায় কোনো কমতি ছিল না। স্ত্রী হিসেবে তাকে অসাধারণ কর্তব্যপরায়ণ একজন মানুষ হিসেবে দেখেছি আমি।’
তিনি বলেন, ‘উনি রাজনৈতিক মহলে অত্যন্ত বিচক্ষণ একজন ব্যক্তি ছিলেন। কর্মী ও সহযোদ্ধাদের প্রতি ভালোবাসা ছিল; নেতাদের প্রতি সম্মানে কোনো ঘাটতি ছিল না তার। ২০০১ সালের জামায়াত-বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসে, তখন কর্মীদের কীভাবে বুকে আগলে রাখতে হয় আমি তা পাশে থেকে দেখেছি। রাজনীতি এবং নগর উন্নয়নÑ দুই ক্ষেত্রেই তিনি সফল।’
প্রসঙ্গত, শওকত হোসেন হিরণ এলএলবি পাস করার পর জাসদ ছাত্রলীগে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন এবং ১৯৮৮ সালে ২২ বছর বয়সে বরিশাল সদর উপজেলা থেকে বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর আলোচনায় আসেন তিনি। ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। রাজনীতিতে আরেক দফা পরিবর্তন আসে ১৯৯৬ সালের পর। স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে ভালো সখ্য থাকায় আওয়ামী লীগে যোগ দেন হিরণ। তার রাজনৈতিক সক্রিয়তা ও সাংগঠনিক দক্ষতা বিবেচনা করে ২০০৩ সালে কেন্দ্রীয় কমিটি তাকে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মনোনীত করে। ২০০৮ সালের ৪ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন। বরিশাল মহানগরীকে আধুনিক সাজে সাজান। স্থানীয় মানুষ ও তার অনুসারীদের কাছে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। ২০১২ সালে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামালের কাছে পরাজিত হন। গুঞ্জন রয়েছে, তার দলীয় লোকেরাই তার পরাজয়ের কারণ। হিরণের মন ভাঙলেও তিনি থেমে যাননি। ২০১৪ সালে বরিশাল সদর আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই বছর ৯ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের মুখে থাকা কুড়িগ্রামের চর ভগপতিপুর সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকটি অবশেষে বিলীন হয়ে গেছে। ক্লিনিকটি সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চলের চর ভগপতিপুর এলাকায় ছিল।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে চর ভগপতিপুর সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকটি ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে বিলীন হয়। এর আগে ওই এলাকার একটি স্কুলও ভাঙনের শিকার হয়। এ ছাড়াও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে একটি মসজিদ ও আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দাদের। ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছে ব্রহ্মপুত্র নদসহ অন্যান্য নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গফুর বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের গাফিলতির কারণে ক্লিনিকটি নিলামে বিক্রি করা সম্ভব হয়নি।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, অনেক চেষ্টা করেও ক্লিনিকটি রক্ষা করা গেল না।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।