
আত্মা আগে দেহ পরে/এক ঘরেতে বাস/ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে/মহা সর্বনাশ জীবনগ্রাসী এই সর্বনাশের থাবা থেকে মানুষের রক্ষা নেই। দেহ থেকে আত্মা একসময় মুক্ত হবেই। তখন মানুষ হয়ে যান ‘লাশ’! কোনো নামে আর চিহ্নিত হন না। তখন তিনি নিষ্প্রাণ-নিথর-শীতল-প্রাণহীন একজন। জীবকুলের এই জীবনচক্র, আপন গতিতে চলছে। সেখানে মানুষের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। যে কারণে ‘মৃত্যু’ স্বাভাবিক।
কিন্তু অস্বাভাবিক মৃত্যুকে মেনে নেওয়া কঠিন। তবু মেনে নিতে হয়। যার গর্ভে জন্ম নিয়ে এই আমি দেখছি পৃথিবীর আলো সেই ‘মা’র অকালমৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারে না। তবু মা চলে যান আমাকে জন্ম দিয়ে। নয়তো মা-আমার দুজনেরই মৃত্যু সেই জন্মকালেই। এই অকালমৃত্যুহার আমাদের দেশে দিন দিন কমছে। এর মানে হচ্ছে জ্ঞান, বিজ্ঞানে আমরা উন্নত হচ্ছি। সচেতনতা বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
গতকাল দেশ রূপান্তরের শেষ পাতায় প্রকাশিত ‘২০ বছরে মাতৃমৃত্যু কমেছে ৭২.৫%’ শিরোনামের সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশে ২০০০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত গত ২০ বছরে মাতৃমৃত্যু হার ৭২ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। সর্বশেষ ২০২০ সালে গর্ভাবস্থা বা প্রসবজনিত জটিলতার কারণে প্রতি ১ লাখ নারীর মধ্যে মারা গেছেন ১২৩ জন। অথচ ২০০০ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪৪১ জন। সে হিসাবে এই ২০ বছরে প্রতি ১ লাখ নারীর মধ্যে মৃত্যু কমেছে ৩১৮ জন।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ প্রকাশিত ‘মাতৃমৃত্যু প্রবণতা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনের তথ্যবিশ্লেষণ করে বাংলাদেশের মাতৃমৃত্যু পরিস্থিতির এ চিত্র পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে বিশ্ব মাতৃমৃত্যুর সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০ বছরে বিশ্বে মাতৃমৃত্যুর সার্বিক হার এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। তবে এ সময় গর্ভাবস্থা বা প্রসবজনিত জটিলতার কারণে প্রতি ২ মিনিটে ১ জন নারীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২০০০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মাতৃমৃত্যু হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। কিন্তু ২০১৬ থেকে ২০ সাল পর্যন্ত এ হার স্থবির ছিল এবং কিছু অঞ্চলে বেড়েছে।
সংবাদে আরও বলা হয়েছে, ২০ বছরের মধ্যে সামগ্রিক মাতৃমৃত্যুর হার ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে। ২০০০ সালে প্রতি ১ লাখ শিশু জন্মের সময় ৩৩৯ জন মাতৃমৃত্যু থেকে কমে ২০২০ সালে ২২৩ জন হয়েছে। সে হিসাবে ২০২০ সালে প্রতিদিন প্রায় ৮০০ জন নারী মারা গেছেন বা প্রতি ২ মিনিটে প্রায় একজন মারা গেছেন।
এর আগে ২০০৫ সালে গর্ভাবস্থা বা প্রসবজনিত জটিলতার কারণে বাংলাদেশে প্রতি ১ লাখ নারীর মধ্যে মারা গেছেন ৩৭৬ জন, ২০১০ সালে তা কমে ৩০১ জনে দাঁড়ায় ও ২০১৫ সালে এ সংখ্যা ছিল আরও কম, ২১২ জন।
প্রতিবেদনে মাতৃমৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে গুরুতর রক্তপাত, সংক্রমণ, অনিরাপদ গর্ভপাত থেকে জটিলতা এবং এইচআইভি/এইডসের মতো জটিলতা অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এসব জটিলতার অধিকাংশই প্রতিরোধযোগ্য বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।
এ ব্যাপারে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের প্রধান নাতালিয়া কানেম বলেন, ‘আমরা পরিবার পরিকল্পনায় জরুরিভাবে বিনিয়োগ করে এবং ৯ লাখ ধাত্রীর বৈশ্বিক ঘাটতি পূরণ করার মাধ্যমে আরও ভালো কিছু করতে পারি এবং অবশ্যই করতে পারি।’
বিশ্বব্যাপী গর্ভাবস্থায়, মা বা সন্তানের মৃত্যু শুধু হ্রাস করতে পারে আমাদের সচেতনতা। এর কোনো বিকল্প নেই। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে কোনো মা যেন মৃত্যুর কোলে ঢলে না পড়েন। এই মৃত্যুহার নামুক শূন্যের কোঠায়। জীবন জড়িয়ে থাক, জীবনকে।
করোনা মহামারী ও চলমান ইউরোপীয় সমর প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থায় কিছু চ্যালেঞ্জ সামনে চলে আসছে। এর মধ্যে বড় চ্যালেঞ্জ, কাক্সিক্ষত হারে রাজস্ব আহরণ না হওয়া। কভিডে অর্থনীতি অনেকটা স্থবির থাকায় স্বাভাবিকভাবে রাজস্ব আহরণ কমে আসছে, কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছানো যাচ্ছে না। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে আসছে যে, মন্দাবস্থায় নিয়মিত রাজস্ব আহরণ কঠিন হচ্ছে। সংগত কারণেই ইদানীং আহরণ হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। লক্ষ্যমাত্রা কম কিংবা বেশি করে ধরা হোক বাস্তবতা হচ্ছে রাজস্ব আহরণ গতিশীল হচ্ছে না। সুতরাং অর্থনীতিকে সচল করা বা হওয়ার ওপরই রাজস্ব আহরণের মাত্রা ঊর্ধ্বগামী হওয়াটা নির্ভরশীল। আইএমএফ তেমন শর্তই দিয়েছে।
রাজস্ব আহরণ বাড়াতে বাংলাদেশ যতগুলো মুখরোচক উদ্যোগ নিয়েছে- তার মধ্যে একটি হলো, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ। বিগত তিন-চার চলতি বাজেটবর্ষে অপ্রদর্শিত অর্থ, বিদেশে পাচার করা অর্থ বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘দেশের প্রচলিত আইনে যাই থাকুক না কেন, ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের প্রতি বর্গমিটারের ওপর নির্দিষ্ট হারে এবং নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, বিদেশে অর্জিত (?) আয়, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা যেকোনো সিকিউরিটিজের ওপর অত্যন্ত সীমিত হারে কর প্রদান করে আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করলে আয়কর কর্র্তৃপক্ষসহ অন্য কোনো কর্র্তৃপক্ষ কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না।’ এই সুযোগের সদ্ব্যবহার খুব একটা লক্ষ করা যায়নি। তথাপি ন্যায়নীতি ও কর ন্যায্যতার মাথা খেয়ে এটি অব্যাহত রয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। ঢালাওভাবে কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, এ কারণে তা কতটা যুক্তিযুক্ত সেটি পর্যালোচনার অবকাশ অবশ্যই রয়েছে।
আমাদের সম্পদ কর ব্যবস্থাপনার মধ্যে গলদ আছে। যেমন, জমি বিক্রি হলো ৭০ লাখ টাকা, অথচ রেকর্ড হলো ৬০ লাখ টাকা। বাকি ১০ লাখ টাকার কর কীভাবে হবে। এ রকম কিছু বিষয়ে বিদ্যমান বিধিবিধানে সমস্যা আছে। সেজন্য কারও কারও কাছে অপ্রদর্শিত অর্থ বা প্রদর্শন করেননি এমন অর্থ থাকতে পারে। এটা হতেই পারে। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে চলতি বাজেটে অপ্রদর্শিত টাকা প্রদর্শনের মোড়কে মূলত দুর্নীতিজাত অবৈধ আয়কে বৈধ বিবেচনার একটা বিশেষ ধরনের সুযোগ ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের জন্য করহার করা হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ, যা কোনো দিন করা হয়নি, কোনো দেশে করা হয় না। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয় ঘটছে। এক. রাষ্ট্রের কর রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ছাড় দেওয়া হচ্ছে। যাদের জন্য এবং যেভাবে এ ছাড় দেওয়া তা ট্যাক্স জাস্টিসের পরিপন্থী। দুই. এর মধ্য দিয়ে নিয়মিত কর দেওয়া সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে, প্রকারান্তরে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। কর ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা এবং সবাইকে করের আওতায় আনার ক্ষেত্রে এটি একটি অনৈতিক পন্থা বা পরিবেশ, যা কাম্য নয়। সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, ‘রাষ্ট্র এমন অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করিবেন, যেখানে সাধারণ নীতি হিসাবে কোন ব্যক্তি অনুপার্জিত আয় ভোগ করিতে সমর্থ হইবেন না।’ এটা একটা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সেখানে যদি দেখা যায় অবৈধ অর্থ উপার্জনে বাধা দেওয়া হচ্ছে না, বড় ধরনের কর ছাড় দিয়ে আরও বলা হচ্ছে কীভাবে অর্থ উপার্জন করেছে তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না। এটা সংবিধানপ্রদত্ত রাষ্ট্রের দায়িত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
অনৈতিক পন্থায় করহার হ্রাস বা ছাড় দেওয়ার সঙ্গে কর অবকাশ বা অব্যাহতি এবং কর রেয়াতের একটা সুস্পষ্ট পার্থক্য আছে। কোনো একটা এলাকা বা শিল্প পিছিয়ে আছে সেটিকে এগিয়ে আনতে কর অবকাশ বা অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর একটা যুক্তি আছে। এতে একটা এলাকা বা উদীয়মান শিল্পের উন্নয়ন হবে। সে ক্ষেত্রে প্রথমে কর ধরলে তার উন্নতি ব্যাহত হতে পারে। সেজন্য সব দেশেই ট্যাক্স হলিডের বিধান আছে। আমাদের দেশে এটাও ছিল বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে এখনো আছেও। আর কর রেয়াত বা প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে প্রথম কর আদায় করা হয়, পরে শিল্পের বা সেবার স্বার্থে ফেরত দেওয়া হয়। এটাকে কর প্রত্যর্পণ বলা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কর ভর্তুকি দেওয়ার নজিরও আছে। রাষ্ট্র যদি মনে করে যে কোনো খাত ভালো কাজ করছে। যেমন কৃষি খাতে প্রণোদনা বা ভর্তুকি দেওয়া হয়। কেন ভর্তুকি দেওয়া হয়? তাদের সমর্থ করে তোলার জন্য। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে, একজন লোকের প্রায় ৮০-৮৫ শতাংশ অপ্রদর্শিত অর্থ (অপ্রদর্শিত অর্থের আড়ালে দুর্নীতিজাত কালো টাকা) ঘোষিত সুযোগে মাত্র সীমিত শতাংশ হারে কর দিয়ে বৈধ করতে পারছে। অর্থাৎ অন্য ব্যক্তি বা কোম্পানি করদাতা যেখানে ২৫-৩০ শতাংশ কর দিচ্ছে, সেখানে কালো টাকার মালিকরা পাচ্ছেন বিশেষ ছাড়। এটি একটি বড় ধরনের কর প্রণোদনা। আবার বলা হচ্ছে, কালো টাকার উৎস নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন করবে না অর্থাৎ দুর্নীতিবাজদের রাষ্ট্র সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বরং ইমিউনিটি দিচ্ছে।
রাষ্ট্রকে কর দেওয়া নাগরিকের দায়িত্ব। যদি করই না দেওয়া হয়, দুর্বল রিপ্রেজেনটেশনে জবাবদিহি চাওয়ার অধিকার তার থাকে না। নিজে কর না দিয়ে সে রাষ্ট্রের কাছে সেবা চাইছে। কর দিলে বাজেট বরাদ্দ পাওয়া তার অধিকার, কর না দিয়ে সে সরকারের কাছে অনুনয়-বিনয় করে, সরকার তার এই দুর্বলতা জানে বলে দয়াদাক্ষিণ্য হিসেবে কিছু সেবা দেয়, তার মাধ্যমে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করে এবং রাষ্ট্রের টাকা আত্মসাতের সুযোগ পায় বা প্রলুব্ধ হয়। সে কর দেয় না বা ফাঁকি দেয় বা দিতে চায় বলেই কর অফিসের লোকরা তাকে চেপে ধরে, ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারে ব্যাপৃত হয়। ফাঁকিবাজ করদাতা তার সঙ্গে আঁতাত করে রাষ্ট্রের কর স্বার্থকে ফাঁকি তো দেয়ই এবং কর বিভাগের অন্যায় হয়রানি বা ভয় প্রদর্শনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে না।
এখানে প্রশ্ন হলো কর ইনসাফ প্রতিষ্ঠা না করলে কর আহরণে উন্নতি আসবে না। কর-জিডিপি অনুপাতে বাংলাদেশ যে তলানিতে, তার কারণটাই হলো এভাবে এ সমাজে কর এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। মানে কাউকে ট্যাক্স দিতে বাধ্য করা হচ্ছে না বলে, এমনটিই হচ্ছে। অপ্রদর্শিত অর্থ এবং দুর্নীতিজাত অর্থ অর্থনীতির মূলধারায় আনার উদ্যোগ ইতিবাচক। কিন্তু বিশেষ হ্রাসকৃত হারে কর দিয়ে এবং উৎস নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না, যেটি গুরুতরভাবে প্রশ্নসাপেক্ষ। কীভাবে উপার্জিত হলো, কীভাবে এলো, তা নিয়ে প্রশ্ন করা না গেলে তো সম্পদ পুনর্বণ্টনের কাজটি করা কঠিন হবে। অর্থাৎ বৈষম্য উসকে দেওয়া হবে, যদি টাকা কীভাবে উপার্জিত হচ্ছে তা নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা বা প্রশ্নের মাধ্যমে বাধা না দেওয়া হয়, যদি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিকে নিরুৎসাহিত করা হয়।
দেখা যাচ্ছে, ২০১০ সালের পর থেকে সম্পদের একটা বিরাট বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। হু-হু করে জিডিপির সংখ্যাভিত্তিক পরিমাণ বেড়েছে এবং সেভাবে পারক্যাপিটা জিডিপিও বেড়েছে বলে দেখানো হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবতায় ‘গরুর হিসাব শুধু কাজীর খাতায়, গোয়ালে তেমন গরু নেই’ পরিস্থিতি। বহু রিপোর্ট অনুযায়ী, এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে খুব দ্রুত ধনীর সংখ্যা বাড়ছে।
রাষ্ট্র যদি মনে করে, কালো টাকা অর্থনীতিতে উপকারে আসুক তাহলে এমন সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। হাওর বা উপকূলীয় বাঁধ বা বড় অবকাঠামো প্রকল্প অর্থের অভাবে মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেছে, করোনাকালে স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চাপ পড়েছে। হাসপাতালে শয্যা কম। বিদ্যমান বরাদ্দ ও সরকারি প্রক্রিয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে করা যাচ্ছে না, জনসম্পদ উন্নয়নে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান কিংবা শ্রমঘন কুটিরশিল্প উদ্যোগ গ্রহণে প্রযোজ্য কর দিয়ে সাদা করা টাকা বিনিয়োগের আহ্বান জানানো যায়। এসব জনগুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করলে সরকার একটা উৎসাহব্যঞ্জক প্রণোদনা বা কর প্রত্যর্পণ ঘোষণা করবে। এর ফলে উন্নয়নে ব্যক্তি খাতের অংশগ্রহণও বাড়বে, বিনিয়োগের একটা সুযোগও তৈরি হবে। বিদ্যমান প্রক্রিয়ায় প্রকল্পে যে দুর্নীতি হয় তা যদি প্রণোদনা আকারে দিয়ে দেওয়া হয় তাতেও লাভ। সুতরাং এ ধরনের সৃজনশীল চিন্তাভাবনা করে কালো টাকাকে অর্থনীতির ধারায় আনতে হবে।
১৯৯৭ সালে ভারত যখন ‘ভলান্টারি ডিসক্লোজার অব ইনকাম স্কিম’ (ভিডিআইএস) জারি করেছিল, তখন কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অব ইন্ডিয়া এর কড়া সমালোচনা করেছিলেন। সাংবিধানিক সংস্থাটি সে সময় বলেছিল, এ সুযোগ সামাজিক সভ্য-ভব্যতার অপব্যবহার। এর ফলে এর আড়ালে অনৈতিকতা, অর্থ লোপাট স্বীকৃতি পাচ্ছে। ২০১৫ সালে ভারত ‘আনডিসক্লোজড ফরেন ইনকাম অ্যান্ড অ্যাসেটস ইমপোজিশন অব ট্যাক্স অ্যাক্ট’ জারি করেছিল। সেই আলোকে বাংলাদেশে ফরেন অ্যাসেটস ডিজক্লোজারের স্কিম জারি করা বরং বেশি প্রয়োজন ছিল। ভারতে ১৯৯৭ সালে ৪ লাখ ৭৫ জন নিজেদের আয়-সম্পদ ঘোষণা করেছিল। আর ২০১৫ সালে করেছিল ৬৩৮ জন। ১৯৯৭ সালে মোট অর্থ ডিসক্লোজ হয়েছিল ৩৩ বিলিয়ন ডলার আর ২০১৫ সালে ডিসক্লোজ হয়েছিল ৪ বিলিয়নের মতো। ১৯৯৭ সালে ভারত সরকার রাজস্ব পেয়েছিল ৯.৮৪ মিলিয়ন ডলার, ২০১৫ সালে পেয়েছিল ২ মিলিয়ন। এখানে কমপ্লায়েন্স পিরিয়ড ছিল কিন্তু তিন মাসের। জাল টাকার বিস্তার বা অন্য কোনো দুষ্কর্ম যেন না ঘটে তার জন্য সময় দিতে হয় অল্প। দুই মাস বা তিন মাস। বছরব্যাপী বা অবারিত থাকে না। ১৯৯৭ সালে ভারতে ভিডিআই এসএ করহার ছিল ৩৫ শতাংশ। অর্থাৎ তখনকার করপোরেট করের চেয়েও বেশি এবং অন্যদের জন্য ৩০ শতাংশ। তার মানে বিদ্যমান করহারের চেয়ে বেশি দিতে হয়েছিল। এটিই হলো পেনাল্টি। এটিই হলো সিস্টেম। এদিকে ২০১৫ সালে ৩০ শতাংশ কর এবং ৩০ শতাংশ পেনাল্টি ধরে দেওয়া হয়েছিল। কারণ এটা না থাকলে সৎ করদাতার সঙ্গে যেমন সাংঘর্ষিক হয়ে যায়, তেমনি এই সুযোগ দেওয়ায় দুষ্কৃতরাও অপকর্মে প্রলুব্ধ হয়। কর আরোপ করা এবং কর মওকুফের এখতিয়ার সংসদের রয়েছে ঠিকই। কর আরোপের ক্ষেত্রে যেমন রাষ্ট্রের স্বার্থ দেখতে হবে, তেমনি কর মওকুফের ক্ষেত্রেও সবার আগে রাষ্ট্রের স্বার্থটা দেখা দরকার।
লেখক: উন্নয়ন অর্থনীতি বিশ্লেষক
দৈনিক দিনকালের প্রকাশনা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবলম্বনকে স্বাধীন মতপ্রকাশে বাংলাদেশের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে দেশ ও বিদেশে অপতৎপরতা চোখে পড়ার মতো। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা, সংবাদমাধ্যম ও অধিকার সংস্থাগুলো কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই এ অপপ্রচারে সায় দিচ্ছে; যা সর্বত্র বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। পত্রিকাটির প্রকাশক ও মুদ্রাকর দেশের প্রধান বিরোধী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ায় বিষয়টিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে সুযোগ-সন্ধানী মহলের বিশেষ বেগ পেতে হয়নি। খুব সহজেই তারা প্রকৃত সত্য আড়াল করে বাকস্বাধীনতার ধোয়া তুলে দেশ-বিদেশে সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করছে। প্রকৃত সত্য হলো, দৈনিক দিনকালের প্রকাশনা বাতিলের সঙ্গে স্বাধীন মতপ্রকাশের সংশ্লিষ্টতা নেই বরং বিষয়টি নিতান্তই পত্রিকার প্রকাশনা ও রেজিস্ট্রেশন-সংক্রান্ত আইনগত ও পদ্ধতিগত ব্যত্যয়ের ফল; যা সম্পূর্ণ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণে সম্পন্ন হয়েছে।
দৈনিক দিনকাল ২০০২ সালে তারেক রহমান প্রকাশক ও মুদ্রাকর মর্মে নিবন্ধনপ্রাপ্ত হয়। পরে তিনি দীর্ঘদিন বিদেশে অবস্থানরত থাকায় চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর ছাপাখানা ও প্রকাশনা ঘোষণা ও নিবন্ধীকরণ (ডিক্লারেশন অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন) আইন ১৯৭৩-এর ১০, ১১, ১৬, ২০(১) (খ) ধারার আলোকে প্রকাশক বিধি অনুযায়ী দায়িত্ব হস্তান্তর না করে দীর্ঘ সময় বিদেশে অবস্থান, প্রকাশক ফৌজদারি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় এবং যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে অফিসের ঠিকানা ও ছাপাখানা পরিবর্তন করার তিনটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক, ঢাকাকে অনুরোধ করে (চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের স্মারক নম্বর : ৬৫৭০, তারিখ : ০১/১০/২০১৯)।
জেলা প্রশাসক ওই স্মারকের ভিত্তিতে দৈনিক দিনকালকে কারণ দর্শানোর নোটিস প্রদান করলে দৈনিক দিনকাল এর কোনো উত্তর দেয়নি। পরে জেলা প্রশাসক, ঢাকা গত ২৬ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখ ছাপাখানা ও প্রকাশনা ঘোষণা ও নিবন্ধীকরণ আইন ১৯৭৩-এর ১০, ১১, ১৬, ২০(১) (খ) ধারা লঙ্ঘন করায় গত ১৬/০৪/২০০২ তারিখে দৈনিক দিনকালের প্রকাশক ও মুদ্রাকর হিসেবে পত্রিকার ঘোষণাপত্র ও মুদ্রণের ঘোষণাপত্র বাতিল করে।
দৈনিক দিনকাল ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখ বিধি মোতাবেক প্রেস কাউন্সিলে আপিল করে; যা দীর্ঘ পর্যালোচনার পর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে খারিজ করে দেয়। ফলে জেলা প্রশাসক কর্র্তৃক প্রদান করা বাতিল আদেশ বহাল থাকে।
উল্লেখ্য, ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধীকরণ) আইন ১৯৭৩-এর ধারা ১১, ১৬ মোতাবেক প্রকাশকের অনুপস্থিতিতে ৬ মাসের অধিক হলেই বিধি অনুযায়ী দায়িত্ব হস্তান্তর এবং যিনি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তার দায়িত্ব গ্রহণের লিখিত বিবরণী দাখিলের বাধ্যবাধকতা আছে, তা দৈনিক দিনকাল অনুসরণ করেনি।
ধারা ২০(১) (খ) অনুযায়ী মুদ্রাকর বা প্রকাশক যদি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো অপরাধে দণ্ডিত হন; তাহলে তার পক্ষে প্রমাণীকরণ ঘোষণা বাতিল হয়ে যায়। ধারা ৭ ও ১০ মোতাবেক যথাযথ অনুমতি ও পদ্ধতিগত নীতিমালা অনুসরণে ব্যর্থ হলেও পত্রিকার ঘোষণাপত্র বাতিল হয়ে যাবে।
উপরোল্লিখিত ধারা মোতাবেক প্রেস কাউন্সিল বোর্ড যথাযথভাবে আপিলটির নিষ্পত্তি করলেও সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে একটি আইনগত সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক রঙ চড়িয়ে দেশের ভাবমূর্তি কঠিন প্রশ্নের মুখে ফেলা হয়েছে। দেশের মুক্তচিন্তা যুক্ত প্রকাশনা, মুক্ত সাংবাদিকতাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সবার অধিকার। রাষ্ট্র এ অধিকার সমুন্নত রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু সবাইকেই নিয়মনীতি অনুসরণ করতে হয়। ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধীকরণ) আইন ১৯৭৩ অনুসরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় গত ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে আরও ১০টি পত্রিকার নিবন্ধন বাতিল করা হয়। পত্রিকার নিবন্ধন বাতিল হলে নিয়মানুযায়ী পুনরায় নতুন করে অনুমতির জন্য আবেদন করতে হয়; যা সবাইকেই অনুসরণ করতে হয়।
কিন্তু দৈনিক দিনকাল রাজনৈতিক পত্রিকা হওয়ার কারণে এবং পত্রিকাটির পেছনে দেশের বৃহত্তম বিরোধী দল থাকায় তারা রাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। মিছিল, মিটিং, মানববন্ধন, মিথ্যা ও ভুল ব্যাখ্যা উপস্থাপনের মাধ্যমে বিদেশি পত্রিকায় প্রতিবেদন ছাপানো ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে দেশের সম্মান ভূলুণ্ঠিত করার হীন চেষ্টায় লিপ্ত। বিষয়টি একান্তই রাজনৈতিক ও দেশের মানুষকে বোকা বানিয়ে সহানুভূতি অর্জনের প্রচেষ্টা হিসেবে পরিগণিত।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, ফ্রিল্যান্সার
ভারতের মানুষের মাতৃভাষা কয়েকশ। এসআইএল ইন্টারন্যাশনাল পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৪১৫টি। এই ৪১৫টি ভাষার উপভাষার সংখ্যা ১৫৭৬টি (১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুসারে)। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে ২৯টি কথ্যভাষায় ১০ লাখ মানুষ কথা বলে। ১২২টি কথ্যভাষা ১০ হাজার মানুষের মুখের ভাষা। এ ছাড়া অজস্র উপভাষা রয়েছে, যেগুলোর লিপি নেই। সেসব ভাষার অস্তিত্ব টিকে আছে মানুষের মুখে মুখে। বর্তমান ভারতের রাজ্যগুলোর ভাষা ভিন্ন ভিন্ন। একই রাজ্যের একাধিক ভাষা যেমন রয়েছে, তেমনি একই ভাষা অপরাপর রাজ্যেও প্রচলিত আছে। ভারতের প্রাদেশিক সরকারি স্বীকৃত ভাষা (অসমীয়া, বাংলা, বোড়ো, ডোগরি, গুজরাটি, হিন্দি, কন্নড়, কাশ্মীরি, কোঙ্কনী, মৈথলী, মলয়ালম, মৈত্রৈ (মণিপুরি), মারাঠি, নেপালি, ওড়িয়া, পাঞ্জাবি, সংস্কৃত, সাঁওতাল, তামিল, তেলেগু, উর্দু, মিজো ও কোকোবরক। ইংরেজি ভাষাও অনেক প্রদেশের সরকারি ভাষার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত, যেমন অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ও চণ্ডীগড়। ভারতের প্রাদেশিক ভাষাসমূহের তালিকাই প্রমাণ করে অপরাপর প্রাদেশিক ভাষার মতো হিন্দিও প্রাদেশিক ভাষা। অনেক প্রদেশের সহকারী সরকারি ভাষা হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি, বাংলা, মারাঠি, পাঞ্জাবি, [খাসি, গারো, ভুটিয়া, গুরং, লেপচা, লিম্বু, মাঙার, মুখিয়া, নেওরি, রাজ, শেরপা, তমাং ইত্যাদি সিকিম প্রদেশের সহকারী সরকারি ভাষা।
প্রশ্ন থাকে বহু ভাষাভাষীর দেশ ভারতে প্রাদেশিক হিন্দি ভাষা কেন সরকারি ভাষার মর্যাদা লাভ করেছে! এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে পেছনে ফিরে যেতে হবে। ব্রিটিশ শাসনাধীনে ভারতীয় পুঁজিপতি শ্রেণি এক রাষ্ট্রের সুবিধায় ভারতে বাণিজ্যিক আধিপত্য বিস্তার-প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল। ব্রিটিশদের মুৎসুদ্দি রূপে নিজেদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সুযোগও হাতাতে পেরেছিল। তাদের মনস্কামনা পূরণে অন্তরায় ছিল ভাষার বিভক্তি। ব্রিটিশ ভারতেই ভারতীয় বুর্জোয়ারা স্বীয় স্বার্থে এককেন্দ্রিক শাসনের পাশাপাশি এক ভাষা ও এক জাতির আওয়াজ তুলেছিল। জাতি হিসেবে ভারতীয় এবং ভাষা হিসেবে বেছে নিয়েছিল তারা হিন্দি ভাষা-দেবনাগরী লিপি। নিজেদের কায়েমি স্বার্থে হিন্দি ভাষাকে ভারতের সমগ্র জাতিসত্তার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার ফন্দি এঁটেছিল; অপরাপর ভাষা-সংস্কৃতি, স্বাজাত্যবোধকে বিলীন করে দেওয়ার মতলবে। ব্রিটিশ ভারতে এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রের সুবিধা ভোগ সম্ভব হলেও, তাদের পক্ষে হিন্দি ভাষাকে সর্বভারতীয় ভাষায় পরিণত করা সম্ভব হয়নি।
১৯১৫ সালে ভারতে ফিরে এসে গান্ধী ভারতজুড়ে ভ্রমণ করেন। তখনই তিনি দেখতে পান ভারতীয় মাড়োয়ারি পুঁজিপতিরা গো-রক্ষা এবং হিন্দি ভাষা প্রচলনে নানান পন্থায় মদদ জুগিয়ে যাচ্ছে। গান্ধী সহসাই পুঁজিপতিদের পক্ষে সেই প্রচারাভিযানে যুক্ত হয়ে যান। অর্থাৎ গো-রক্ষা আন্দোলনের পাশাপাশি হিন্দি ভাষাকে সমগ্র জাতিসত্তার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার বুর্জোয়া শ্রেণির আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। এই তৎপরতার মধ্য দিয়েই ভারতে গান্ধীর রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত। ১৯১৬ সালে কংগ্রেসের অধিবেশনে ‘সর্বভারতীয় এক ভাষা ও একলিপি সম্মেলন’ গান্ধীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। ১৯১৯ সালে হিন্দি ভাষা প্রচারে হিন্দি সাহিত্য সম্মেলনের উপকমিটির সভাপতি হয়েছিলেন গান্ধী। ভারতীয় মাড়োয়ারি পুঁজিপতিদের অর্থের জোগানে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। সিন্ধু ন্যাশনাল কলেজে ১৯২০ সালের জুলাইয়ে গান্ধী বলেছিলেন, ‘হিন্দিই হবে সমগ্র ভারতের ভাষা এবং সেজন্য হিন্দি শেখা অন্যসব প্রদেশের কর্তব্য।’ গান্ধী প্রকাশ্যে বলে বেড়াতেন, ‘অহিন্দিভাষীদের হিন্দি শেখা হচ্ছে ধর্ম।’ ভারতীয়দের ধর্মীয় অনুভূতিতে হিন্দি ভাষা বিস্তারে ধর্মকে পর্যন্ত ব্যবহার করতে চেয়েছেন। হিন্দি ভাষাকে ধর্মীয় পর্যায়ভুক্ত করতেও দ্বিধা করেননি গান্ধী। গান্ধী লিখেছিলেন, ‘এলাহাবাদের হিন্দি সাহিত্য সম্মেলনের উদ্যোগে ১৮ মাসব্যাপী মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে হিন্দি ভাষার প্রচার খুব জোরালোভাবেই চলছে।’ হিন্দি ভাষাকে সমগ্র জাতিসত্তার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার মাড়োয়ারি পুঁজিপতিদের অর্থানুকূল্যের বিষয়টিও স্বীকার করে গান্ধী বলেছিলেন, ‘হিন্দি প্রচারের কাজ ভারতের এই রাজতুল্য বণিকশ্রেণির বিশেষত্ব।’
১৯২১ সালে এক চিঠিতে গান্ধী মাড়োয়ারি পুঁজিপতিদের উদ্দেশে লিখেছিলেন, ‘ভারতবর্ষে ফিরে আসার পর থেকেই আমি আপনাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর হচ্ছি। আমার কাজে আপনারা প্রশ্রয় দিয়েছেন এবং আমাকে প্রচুর সাহায্য করেছেন। হিন্দি প্রচারের আন্দোলনকে আপনারা কার্যকরভাবে সমর্থন দিয়েছেন।’ গান্ধীর হিন্দি ভাষা প্রচারাভিযানে মাড়োয়ারিদের পাশাপাশি গুজরাটি, পার্শি বণিকশ্রেণিও আর্থিক সহায়তা প্রদানে পিছিয়ে ছিল না। বাংলা ও আসাম প্রদেশে হিন্দি প্রচারাভিযানে ১৯২৮ সালে হিন্দুত্ববাদী বুর্জোয়া ধনশ্যামদাস বিড়লাকে কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত করে কলকাতায় হিন্দি প্রচারের এক সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৩৫ সালে হিন্দি ভাষাকে জাতীয় ভাষায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজেন্দ্র প্রসাদকে সভাপতি করে হিন্দি সাহিত্য সম্মেলনে ‘রাষ্ট্রভাষা প্রচার সমিতি’ গঠিত হয়। পরে স্বয়ং রাজেন্দ্র প্রসাদ লিখেছিলেন, ‘এর নীতি স্বয়ং গান্ধীজি নির্ধারণ করেছিলেন এবং আমাদের শিল্পপতি বন্ধুরা অর্থের জোগান দিতেন।’
হিন্দি ভাষা ও দেবনাগরী লিপি সমগ্র ভারতীয়দের ওপর চাপানোর এই উদ্যোগে উত্তর প্রদেশের মুসলিম সম্প্রদায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। উর্দুভাষী মুসলমানদের মধ্যে এ নিয়ে আতঙ্ক ও ভীতির সঞ্চারে তারা উপলব্ধি করে হিন্দির দৌরাত্ম্যে তাদের উর্দু ভাষা-সংস্কৃতির বিলোপ ঘটবে। ১৯৩৭ সালের অক্টোবরে লক্ষেèৗতে মুসলিম লীগ অধিবেশনে সমস্ত মুসলিম সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ভারতের জাতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দি ভাষাকে চাপিয়ে দেওয়ার তীব্র নিন্দা জানায়।
১৯২৭ সালের জুলাইয়ে গান্ধী লিখেছিলেন, ‘সব ভারতীয় ভাষার একটি লিপি হওয়া উচিত এবং শুধু দেবনাগরীই হতে পারে সেই লিপি।’ গান্ধী বলেছেন, ‘হিন্দু-মুসলিম উন্মত্ততার জন্য সম্পূর্ণ সংস্কারের পক্ষে বাধা আছে। তবে এর আগে হিন্দু ভারতকে বুঝতে হবে যে, যেসব ভাষা সংস্কৃত থেকে উদ্ভূত এবং দ্রাবিড় গোষ্ঠীভুক্ত তাদের লিপিগুলো, যেমন বাংলা, গুরুমুখী, সিন্ধি, ওড়িয়া, গুজরাটি, তেলেগু, তামিল, কন্নড়, মলয়ালম ইত্যাদি ভাষার লিপিকে বর্জন করে সে স্থলে থাকবে শুধুই দেবনাগরী লিপি। এর ফলে হিন্দু ভারত সংহত ও বলিষ্ঠ হবে।’ গান্ধী নিজেই স্বীকার করেছেন পাঞ্জাবে হিন্দু-মুসলমান এবং অন্য সবাই উর্দু জানে (উর্দু ভাষার লিপি ফার্সি)। ধর্মের ভিত্তিতে ভাষার সংগ্রাম শুরু করেছিলেন গান্ধী। পাঞ্জাবি হিন্দুরা দেবনাগরী লিপি গ্রহণ করবে এবং মুসলিমরা ফার্সি লিপি। একইভাবে বাঙালি হিন্দুর লিপি হবে দেবনাগরী এবং বাঙালি মুসলমানের লিপি হবে বাংলা অথবা ফার্সি। সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বিরোধকে ভাষা ও লিপির ভেতরে টেনে আনেন স্বয়ং গান্ধী। ব্রিটিশদের বিভক্তীকরণের চক্রান্তের নীতি অনুসরণ কি ভাষার প্রশ্নে গান্ধী করেননি? হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের বিভক্তি ব্রিটিশরা করেছিল তাদের শোষণ প্রক্রিয়া এবং দখলদারিত্ব স্থায়ী করার লক্ষ্যে। গান্ধীও হিন্দি ভাষা ও দেবনাগরী লিপির পক্ষে সম্প্রদায়গত বিভাজনের নীতি অনুসরণ করে সেই বিভাজনকেই সামনে নিয়ে এসেছিলেন।
হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের সাম্প্রদায়িক বিভাজন-বিভক্তি ব্রিটিশদের সৃষ্ট। সাম্প্রদায়িক বিভাজন নতুন মাত্রা পেয়েছিল গান্ধীর হিন্দি ভাষা ও দেবনাগরী লিপির জাতীয় ভাষা ও লিপির আন্দোলন অভিযানে। এতে দ্রুতই মুসলিম সম্প্রদায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। মুসলমানদের বিরোধিতার মুখে গান্ধী-নেহরুর মত পরিবর্তন করলেও; উর্দুভাষী মুসলিম সম্প্রদায় হিন্দি-উর্দু ভাষা বিতর্কে সরব হয়ে ওঠে এবং ভাষা নিয়ে সাম্প্রদায়িক বিরোধেরও সূচনা ঘটে। ১৯৩৭ সালের জুলাইয়ে কংগ্রেস সভাপতি নেহরু বলেন, ‘অবশ্যই হিন্দি অথবা হিন্দুস্তানি হচ্ছে জাতীয় ভাষা এবং হওয়া উচিতও। লিপি সম্পর্কে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করা দরকার যে, হিন্দি ও উর্দু দুই লিপিই সহাবস্থান করা উচিত।... এই বিতর্ক বন্ধ করার জন্য ভালো হবে যদি আমরা কথ্যভাষাকে হিন্দুস্তানি এবং লিপিকে হিন্দি অথবা উর্দু আখ্যা দিই। ইউরোপের প্রসিদ্ধ গ্রন্থগুলোর হিন্দিতে অনুবাদ হওয়া একান্ত দরকার।’ নেহরুর বক্তব্যটির সারকথা হচ্ছে, লিখিত ভাষা হিন্দিই হবে ভারতের জাতীয় ভাষা। সেটা দেবনাগরী কিংবা উর্দু দুই লিপিতেই লিখিত হতে পারে। ‘ভাষাপ্রশ্ন’ গ্রন্থে নেহরু লিখেছিলেন, ‘একমাত্র হিন্দুস্তানিই সমগ্র ভারতের ভাষা হতে পারে।’ লিপির ক্ষেত্রে দেবনাগরী এবং উর্দু লিপির কথাও মুসলিম সম্প্রদায়ের ক্ষোভ প্রশমনে বলতে বাধ্য হয়েছিলেন।
গান্ধী মুসলমানদের বিরোধিতার মুখে হিন্দুস্তানির অনুরাগী হয়ে সেই লক্ষ্যে ১৯৪২ সালে ‘হিন্দুস্তানি প্রচার সভা’ সংগঠন গড়ে তোলেন। উত্তর ভারতে কথ্যভাষা রূপে হিন্দুস্তানি ভাষা ছিল বটে। তবে সেটি হিন্দি ও উর্দুর সংমিশ্রণে। লিপি না থাকায় লিখিত ভাষারূপে হিন্দুস্তানি ভাষার কোনো অস্তিত্ব ছিল না। ১৯৪৬ সালে নির্বাচনের আগে ভারতের সংবিধান সভায় গান্ধী প্রস্তাব করেছিলেন, তারাই সংবিধান সভার সদস্য হতে পারবেন যারা হিন্দি ভাষার সঙ্গে পরিচিত। গান্ধী আরও দাবি করেন, ভারতের সংবিধান হিন্দুস্তানি ভাষায় লিখিত হতে হবে। মৃত্যুর আগে গান্ধী বলেছিলেন, ‘তার যদি ক্ষমতা থাকত তবে তিনি তাদেরই কংগ্রেসের সদস্য করতেন যারা হিন্দুস্তানি ভাষা জানেন।’ ১৯৪৭ সালে গান্ধী হিন্দুস্তানি ভাষাকে সমগ্র এশিয়ার ভাষায় পরিণত করার দিবা-স্বপ্নও দেখেছিলেন। মুসলিম বিরোধিতায় গান্ধী-নেহরুরা ভারতের জাতীয় ভাষা হিন্দির পরিবর্তে হিন্দুস্তানি কথ্য ভাষার প্রচারণা ছিল প্রতারণার কৌশল। উদ্দেশ্য ছিল দেবনাগরী লিপির বাতাবরণে হিন্দি ভাষাকেই সমগ্র জাতিসত্তার স্কন্ধে চাপানোর। বাস্তবতা হচ্ছে হিন্দুস্তানি ভাষা প্রকৃতই কথ্য ভাষা। সে ভাষার ছিল না লিপি। ছিল না সাহিত্য। সেটি শুধুই আঞ্চলিক কথ্যভাষা মাত্র। হিন্দুস্তানি ভাষার দাবিটি ছিল হিন্দি ভাষা প্রতিষ্ঠায় কৌশলগত অভিপ্রায় মাত্র। ওই কৌশলতাই অনিবার্য করে তোলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং দেশভাগ।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক নতুন দিগন্ত
কবি ও শিশুসাহিত্যিক সুনির্মল বসুর জন্ম ভারতের বিহার রাজ্যের গিরিডিতে ১৯০২ সালের ২০ জুলাই। তার পৈতৃক নিবাস ছিল তৎকালীন ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের মালখানগরে। সাহিত্যিক ও সাংবাদিক গিরিশচন্দ্র বসু ছিলেন তার পিতামহ। ১৯২০ সালে তিনি বাবার কর্মস্থল পাটনার গিরিডি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে কলকাতার সেন্ট পলস কলেজে ভর্তি হন; কিন্তু ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে কলেজ ত্যাগ করেন। কিশোর বয়স থেকে কবিতা লেখা ও ছবি আঁকার প্রতি তার ঝোঁক ছিল। তিনি কিছুদিন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তত্ত্বাবধানে আর্ট কলেজে ছবি আঁকা শেখেন। প্রবাসী পত্রিকায় তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। তিনি কবিতা, ছড়া, গল্প, উপন্যাস, রূপকথা, ভ্রমণকাহিনি, কৌতুক, নাটক ইত্যাদি মাধ্যমে শিশু-কিশোর উপযোগী সাহিত্য রচনা করেন। তার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘হাওয়ার দোলা’, ‘ছানাবড়া’, ‘বেড়ে মজা’, ‘হৈচৈ’, ‘হুলুস্থুল’, ‘কথাশেখা’, ‘পাততাড়ি’, ‘ছন্দের টুংটাং’, ‘আনন্দ নাড়–’, ‘শহুরে মামা’, ‘কিপটে ঠাকুরদা’, ‘টুনটুনির গান’, ‘গুজবের জন্ম’, ‘বীর শিকারী’, ‘লালন ফকিরের ভিটে, ‘পাতাবাহার’, ‘ইন্তিবিন্তির আসর’, ‘পাহাড়ে জঙ্গলে’ ইত্যাদি। ‘ছোটদের চয়নিকা’ ও ‘ছোটদের গল্প সঞ্চয়ন’ তার সম্পাদিত দুটি উল্লেখযোগ্য শিশুতোষ গ্রন্থ। তার রচিত আত্মজীবনী ‘জীবনখাতার কয়েক পাতা’র প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে। তিনি তার সমকালের একমাত্র শিশুতোষ পাক্ষিক পত্রিকা ‘কিশোর এশিয়া’র পরিচালক ছিলেন। দিল্লিতে অনুষ্ঠিত প্রবাসী বঙ্গসাহিত্য সম্মেলনের শিশুসাহিত্য শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৫৬ সালে তিনি সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ভুবনেশ্বরী পদক লাভ করেন। ১৯৫৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
বুধবার (২৯ মার্চ) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
হেফাজতে সুলতানার মৃত্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ‘হঠাৎ করে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। আপনি প্রায় প্রতিদিনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ধরনের দুর্ঘটনা দেখতে পাবেন।’
‘এই সপ্তাহে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি গণগুলিতে শিশু নিহত হয়েছে। কারও সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে? আমি মনে করি না এই ধরনের দুর্ঘটনা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নষ্ট করবে।’
এর আগে, নওগাঁ পৌরসভা-চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহকারী সুলতানাকে (৩৮) র্যাব-৫ এর একটি টহল দল ২২ মার্চ সকালে কাজে যাওয়ার সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ধরে নিয়ে যায়। হেফাজতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতাল এবং তারপর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ মার্চ তার মৃত্যু হয়।
মোমেন বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে অন্যদের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়ার দরকার নেই।
‘বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের সংগ্রামে ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে। অন্য দেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে আমাদের কোনো পাঠের প্রয়োজন নেই।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন খুবই শক্তিশালী।
যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের সমস্যা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাদের গণতন্ত্র খুবই দুর্বল। তাই তারা দেশে ও বিদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কারের পক্ষে ওকালতি করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র দেশে ও বিদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কারের বিষয়ে আরও সোচ্চার হওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা আমাদের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি। আমরা এটি সম্পর্কে একই পৃষ্ঠায় আছি। আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো গত এক দশকে ব্যাপক সংস্কারের মধ্য দিয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা ভুয়া ভোটারদের মোকাবিলা করার জন্য ছবিসহ ভোটার আইডি তৈরি করেছি। বিগত ১৪ বছরে নির্বাচন কমিশন হাজার হাজার নির্বাচন পরিচালনা করেছে। তাদের প্রায় সবগুলোই ছিল স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য। এবং ভবিষ্যতেও আমাদের নির্বাচন হবে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য।’
মোমেন বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন বৈশ্বিক গণমাধ্যমে ‘জাদুকরী’ হিসেবে সমাদৃত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান বিশ্বব্যাপী আমাদের গুরুত্ব বাড়িয়েছে। এবং ক্রমাগত উন্নয়নের কারণে, বিশ্বের অনেক দেশ এখন আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী।’
তিনি আরও বলেন,‘এই স্বাধীনতা দিবসে এবং রমজানের শুরুতে, আমরা অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাছ থেকে অভিনন্দনমূলক চিঠি পেয়েছি।’
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যেও 'সময়োচিত সংস্কার পদক্ষেপ' গ্রহণের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ বাংলাদেশে আগামী সাধারণ নির্বাচনে তার নেতৃত্বাধীন সরকার চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচিত হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক সংবাদ সংস্থাটি এক নিবন্ধে লিখেছে, 'তিনি (শেখ হাসিনা) টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।' একই সঙ্গে শেখ হাসিনাকে পুরো তহবিল পেতে আরও সংস্কার করতে হবে বলেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে টানা চতুর্থ মেয়াদে সম্ভাব্য জয়ী হওয়ার কারণ এটা নয় যে তার অনেক প্রতিপক্ষ কারাগারে আছেন বা আইনি ফাঁদে পড়েছেন।
নিবন্ধে বলা হয়, শেখ হাসিনার বিজয়ের কারণ 'কেবলমাত্র তার অনেক প্রতিপক্ষ কারাগারে আছে বা আইনি ফাঁদে পড়েছেন- এটা নয় বরং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তার সাফল্যের কারণেই এটা ব্যাপকভাবে প্রত্যাশিত।'
আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির সময়োপযোগী সংস্কারের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণপ্রাপ্তির পটভূমিতে ব্লুমবার্গ দুটি উপশিরোনামসহ 'বাংলাদেশ লিডার বেটস আইএমএফ-ম্যান্ডেটেড রিগর উইল পে অফ ইন পোলস' শিরোনামের এই নিবন্ধটি প্রকাশ করে।
এতে বলা হয়, 'পুরো তহবিল পেতে শেখ হাসিনাকে আরও সংস্কার করতে হবে' এবং 'নির্বাচনে তিনি টানা চতুর্থবারের মতো জয়ী হবেন বলে আশা করা হচ্ছে'।
ব্যালট বাক্সে পরাজিত হওয়ার ভয়ে বিশ্বজুড়ে সরকারি দলের নেতারা প্রায়শই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাথে সম্মত সংস্কার বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়ছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের মতো নন।
তার দ্রুত আইএমএফ ম্যান্ডেটের বাস্তবায়ন দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে যেখানে পাকিস্তান এখনও জ্বালানি ভর্তুকি নিয়ে দুরাবস্থার মধ্যে রয়েছে। শ্রীলঙ্কা স্থানীয় পৌরসভা নির্বাচন বিলম্বিত করেছে, কারণ, তারা গত সপ্তাহে আইএমএফ তহবিল পেতে কর এবং সুদের হার বাড়িয়েছে।
গত জুলাই মাসে আইএমএফের সহায়তা চাওয়া দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি দেশের মধ্যে সর্বশেষ ছিল বাংলাদেশ। দেশটি দ্রুত জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির পর প্রথম ঋণ অনুমোদন পেয়েছে। ৭৫ বছর বয়সী শেখ হাসিনা এই পদক্ষেপ নিতে কোনো কুণ্ঠা বোধ করেননি।
মেয়েদের বয়সভিত্তিক দল নিয়ে বাফুফে যতটা তৎপর, সিনিয়র জাতীয় দল নিয়ে ততটাই উদাসীন। আরো একবার দেশের ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থার সিদ্ধান্ত সেটাই প্রমাণ করল। অর্থাভাবের অজুহাত দিয়ে সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানী সরকারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বাফুফে বলেছে, ‘মায়ানমার যাতায়াতের বিমান ভাড়া, ইনস্যুরেন্স ফি, সেখানে থাকা-খাওয়া ও ট্রান্সপোর্টশনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচের সংকুলান না হওয়ায় উক্ত প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ মেয়েদের জাতীয় ফুটবল দলের অংশগ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।’
অলিম্পিক বাছাইয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা আছে ‘বি’ গ্রুপে। স্বাগতিক মায়ানমারের সঙ্গে গ্রুপে আরও আছে ইরান ও মালদ্বীপ। গ্রুপের খেলাগুলো হবে আগামী ৫ থেকে ১১ এপ্রিল।
বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে চেয়েছিলাম এই বাছাই পর্বের স্বাগতিক হতে। কিন্তু স্বাগতিক মর্যাদা মায়ানমারকে দেওয়া হয়। টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী এখানে অংশ নিতে হলে সব খরচ নিজেদের বহন করতে হবে, যা বহন করার মতো অবস্থায় নেই বাফুফের।’
আবু নাঈম সোহাগ আরও বলেন, ‘আমরা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। সেই সাহায্য পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এরপরই আমরা দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
গত সেপ্টেম্বরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পর আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেননি সাবিনারা। এই সফর বাতিল হওয়ায় মাঠে নামার অপেক্ষাটা তাদের আরো বাড়ল।
মেয়েদের জাতীয় দল নিয়ে বাফুফের উদাসীনতার নজির এটাই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৯ সালের এসএ গেমসে মেয়েদের দল পাঠায়নি বাফুফে।
সেবার যুক্তিটা ছিল অদ্ভুত। যেহেতু তখন মেয়েদের জাতীয় দলটি মূলত বয়সভিত্তিক দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া ছিল, তাই শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে খারাপ করলে তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারে। এই কারণের কথা বলে সেবার এসএ গেমসে দল পাঠায়নি বাফুফে।
যদি কোনো নারী কমপক্ষে দুটি মুরগি পালন করেন অথবা কোনো ব্যক্তি যদি সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করেন তাকে শ্রমশক্তির আওতায় এনেছে সরকার। অথচ সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করে কর্মের আওতায় এসেছেন এমন পরিসংখ্যানের হিসাবই দেওয়া হয়নি। গতকাল বুধবার শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রকাশের কথা থাকলে শ্রমশক্তি জরিপটি ছয় বছর পর প্রকাশ করল বিবিএস। এতে বর্তমানে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৩০ হাজার বলে উল্লেখ করা হযেছে। যা ২০১৭ সালের জরিপে ছিল ২৭ লাখ। অর্থাৎ ছয় বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার কমেছে ৭০ হাজার। শ্রমশক্তি জরিপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
সরকারের বেকারত্বের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ৩০ দিনে বেতন বা নিজস্ব পণ্য উৎপাদনের নিমিত্তে কোনো না কোনো কাজ খুঁজে থাকেন এবং গত সাত দিনে কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকেন তবে তাকে বেকার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বিবিএস বলছে, করোনার সময় দেশে বেকারের সংখ্যা বাড়েনি বরং কমেছে। কারণ ওই সময় সরকার বিশেষ অনেক পদক্ষেপ নেওয়ায় এসব বেকারের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। তাছাড়া কৃষি খাতে অংশগ্রহণ বাড়ায় বেকারের সংখ্যা কমেছে।
জরিপে বলা হয়েছে, দেশে এখন ২৬ লাখ ৩০ হাজার বেকার আছে। এর আগে ২০১৭ সালের জরিপে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ। ছয় বছরের ব্যবধানে বেকার কমেছে ৭০ হাজার।
জরিপে দেখা গেছে, ছয় বছর আগের তুলনায় বেকারত্বের হারও কমেছে। ২০১৭ সালে বেকারত্ব ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। সর্বশেষ জরিপ বলছে, এখন বেকারত্ব কমে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। সপ্তাহে এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজ করার সুযোগ না পেলে তাকে বেকার হিসেবে ধরা হয়।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, এখন দেশে শ্রমশক্তিতে ৭ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ আছে। এর মধ্যে কাজে নিয়োজিত ৭ কোটি ৭ লাখ ৮০ হাজার মানুষ। এ শ্রমশক্তির মধ্যে থাকা ৪ কোটি ৭৪ লাখ পুরুষ আর ২ কোটি ৫৯ লাখ নারী। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৯৯ লাখ ১০ হাজার মানুষ শ্রমশক্তির আওতায় এসেছে অর্থাৎ এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
জরিপে ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের বিবেচনা করা হয়েছে। গত বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশের প্রায় সোয়া লাখ পরিবার থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তথ্য সংগ্রহ করা হয় দ্বৈবচয়ন অর্থাৎ লটারি পদ্ধতিতে বাছাইয়ের মাধ্যমে। এর আগে ২০১৭ সালে শ্রমশক্তি জরিপ করেছে বিবিএস। প্রতি চার থেকে পাঁচ বছরের ব্যবধান এ জরিপ করা হয়ে থাকে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেকারদের মধ্যে পুরুষ ১৬ লাখ ৯০ হাজার। আর নারী ৯ লাখ ৪০ হাজার। পাঁচ বছর আগের চেয়ে নারীর বেকারত্ব কমেছে। বেড়েছে পুরুষের বেকারত্ব। ২০১৭ সালের জরিপে ১৪ লাখ পুরুষ বেকার ছিল। ওই সময় ১৩ লাখ নারী বেকার ছিল।
জরিপ বলছে, মোট সাত কোটি কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তির মধ্যে কৃষি খাতে নিয়োজিত রয়েছে ৩ কোটি ২২ লাখ, শিল্প খাতে ১ কোটি ২০ লাখ এবং সেবা খাতে ২ কোটি ৬৬ লাখ।
জরিপের হিসাবে আরও দেখা যায়, দেশে শ্রমশক্তির বাইরে আছেন ৪ কোটি ৬৯ লাখ মানুষ। এর মধ্যে নারী ৩ কোটি ৪৮ লাখ, পুরুষের সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ। বেকারত্ব কমে আসার পাশাপাশি কর্মে নিয়োজিত জনবলও বেড়েছে দেশে। ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী যুবকদের কর্মসংস্থান হয়েছে ২ কোটি ৬৮ লাখ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, এ জরিপের মাধ্যমে অর্থনীতির মূল গতিবিধি আমরা বুঝতে পারব। আমরা কোনো তথ্যই লুকিয়ে রাখব না। তিনি বলেন, আমাদের দেশের গৃহিণীরা প্রায় ২৪ ঘণ্টাই কাজ করেন। তাদের শ্রম হিসাব করা হয় না। তাদের শ্রম হিসাবে এলে জিডিপির আকার ৬০০ থেকে ৭০০ বিলিয়ন হতো। নারীদের শ্রমের প্রকৃত বিচার হয় না। আমরা আশা করছি এখন থেকে এ তথ্য প্রতি তিন মাসেই পাব।
আইএলওর আইন মানা হয়েছে কি না সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আইএলওর মানদ- অনুযায়ী এ জরিপ করা হয়েছে। কডিডের সময় আমাদের দেশে বেকারত্ব কমেছে কারণ সে সময় আমরা শিল্প খোলা রেখেছিলাম। লকডাউনে সড়কে বাস চলাচল করতে দিয়েছি। ১ মিলিয়ন ডলারের বেশি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে সে সময়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, এটি প্রভিশনাল রিপোর্ট। এ তথ্য মূল প্রতিবেদনে পরিবর্তিত হতে পারে। অর্থনীতির হাল বোঝার জন্য এ তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে বেকার বাড়ছে নাকি কমছে সে তথ্য সরকারের নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এসব তথ্য-উপাত্ত নিয়ে যেসব প্রশ্ন আসছে, এগুলো সবসময়ই এসে থাকে। এসব প্রশ্ন আসবেই। শহরের মহিলা শ্রমিক কমে গেছে, তার মানে হলো তারা গ্রামে গিয়ে কৃষিতে যুক্ত হচ্ছে।
বিবিএস বলছে, সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনা ও নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে ঘরে ঘরে চাকরি প্রদানের বিষয়ে বিশেষ সুযোগ তৈরির প্রচেষ্টায় বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমেছে।
এ সময় শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব এহসান-ই-এলাহী বলেন, আমি তো ভেবেছিলাম দেশে শ্রমিক ছয় কোটি, এখন দেখি সাত কোটির বেশি। এটি বড় সুসংবাদ। আমরা আগামী বছরের মধ্যে তিন লাখ শ্রমিকের ডেটাবেজ করব। কারণ আমাদের কাছে সঠিক কোনো ডেটাবেজ নেই।
মেট্রোরেলের উত্তরা দক্ষিণ ও শেওড়াপাড়া স্টেশন আগামীকাল ৩১ মার্চ যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) ইতিমধ্যে এ দুটি স্টেশন খোলার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। মেট্রোরেল সেবা পরিচালনাকারী ডিএমটিসিএল সূত্র এ তথ্য জানায়।
উত্তরা দক্ষিণ ও শেওড়াপাড়া স্টেশন চালু হলে যাত্রীরা উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশন ব্যবহার করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পারবেন।
ডিএমটিসিএল-এর একজন কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা দুটি দল গঠন করেছি যারা অপারেশনের জন্য উত্তরা দক্ষিণ এবং শেওড়াপাড়া স্টেশনের অপারেশন টিমের সাথে সমন্বয় করবে।'
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রথম এলিভেটেড মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন। রাজধানীর দিয়াবাড়িতে দিয়াবাড়ি-আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পের ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬ এর ১১.৭৩ কিলোমিটার অংশের ফলক উন্মোচন করেন তিনি। বর্তমানে মেট্রোরেল সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত যাত্রীসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।