
তৌহীদ রেজা নূর। শহীদ সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী সিরাজুদ্দীন হোসেনের সন্তান। প্রজন্ম ’৭১-এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর এই আলোকিত মানুষ পিএইচডি ডিগ্রি নেন ভারতের জওয়াহেরলাল ইউনিভার্সিটিতে। পরবর্তী সময়ে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যা বিষয়ে গবেষণা করতে চলে যান স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্কে। হঠাৎই দেশে আসা। চলে যাবেন আবার। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং প্রজন্ম’৭১ নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা বললেন দেশ রূপান্তরের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সহকারী সম্পাদক- তাপস রায়হান ।
দেশ রূপান্তর : ১৯৫২ ও ১৯৭১। বাঙালির এই দুই অর্জনকে কীভাবে দেখেন?
তৌহীদ রেজা নূর : বায়ান্ন হচ্ছে- চেতনার লড়াই। অস্তিত্বের লড়াই। নিজের ভাষাকে, প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই। আর ১৯৭১ হচ্ছে অধিকারের লড়াই। স্বাধিকারের লড়াই। সার্বভৌমত্বের লড়াই। একটি জাতির পূর্ণ বিকাশ, স্বাধীনতায়। আমরা সেটা অনেক রক্ত দিয়ে অর্জন করেছি। এর জন্য অনেক ত্যাগ করতে হয়েছে। এর সব কিন্তু চেতনা থেকেই জন্ম নেওয়া। যার ভিত্তি তৈরি করেছিল ১৯৫২। এই যুদ্ধ কিন্তু শেষ হয়নি। আজও চলছে। চলবে ততদিন, যতদিন সেই আদর্শের পূর্ণ বাস্তবায়ন না হবে।
দেশ রূপান্তর : আপনি তো ‘জেনোসাইড’ নিয়ে গবেষণা করছেন। সেখানে, ভাষা আন্দোলনকে কীভাবে যুক্ত করা হবে?
তৌহীদ রেজা নূর : আমরা যখন, জোনোসাইড বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করছি- তখন এর প্রস্তুতি পর্ব হিসেবে ভাষা আন্দোলনও বাদ যাবে না। দুটো তো একই সূত্রে গাঁথা। একাত্তর তৈরি হওয়ার প্রেক্ষাপট নির্মাণে, ভাষা আন্দোলনের বিশাল অবদান। কোনোভাবেই তাকে বাদ রাখা যাবে না।
দেশ রূপান্তর : ভাষাশহীদদের সন্তানও তো, সরকারি সুবিধা পাওয়ার দাবি রাখেন?
তৌহীদ রেজা নূর : অবশ্যই।
দেশ রূপান্তর : কিন্তু বাস্তবতা কি অন্য কথা বলে?
তৌহীদ রেজা নূর : ঠিক, তা না। অর্জন করার আরও অনেক কিছু আছে। সেগুলো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে।
দেশ রূপান্তর : আপনি তো, প্রজন্ম ’৭১-এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। সেই নব্বই দশকের শুরুতে, এই সংগঠন তৈরির কোনো বাস্তব ভিত্তি ছিল?
তৌহীদ রেজা নূর : অবশ্যই ছিল। একটিবার ভাবুন, তখন বাংলাদেশের অবস্থা কেমন ছিল? কেন আমরা বাধ্য হয়েছিলাম, এই সংগঠন দাঁড় করাতে?
দেশ রূপান্তর : এর মানে, জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যে ঘাতক-দালাল নির্মূল আন্দোলন শুরু হয়েছিল, আপনাদের সংগঠন এরও আগে তৈরি করেছিলেন?
তৌহীদ রেজা নূর : ১৯৯১ সালের অক্টোবরে আমাদের যাত্রা শুরু হয়। এর ২ মাস পরে, গোলাম আযমকে যখন জামায়াতে ইসলামী, ‘আমির’ বলে ঘোষণা দেয়। তার বিরুদ্ধেই গর্জে ওঠে সবাই। তখনই এগিয়ে আসেন জাহানারা ইমাম। গড়ে তোলেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
দেশ রূপান্তর : বর্তমানে কি আমরা, ভাষা বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে অনেক দূরে?
তৌহীদ রেজা নূর: না। ঠিক তা নয়। শুধু সরকারের ওপর, নির্ভর করলে চলবে না। দায়, আমাদেরও আছে। যদিও সময়, অনেক প্রশ্নের উত্তর দেয়। যেভাবে দিয়েছে, গণজাগরণ মঞ্চ।
দেশ রূপান্তর : সমাজে কি গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি করার কোনো বাস্তব ভিত্তি তৈরি হয়েছিল?
তৌহীদ রেজা নূর : এছাড়া তো কোনো পথ ছিল না। ওটা তৈরি হয়েছিল, যুদ্ধাপরাধী আবদুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেওয়ার দাবিতে। আইনে একটা ফাঁক ছিল। সেই আন্দোলনের কারণেই, আইনের সংশোধন করা হয়। এরপর ফাঁসি দেওয়া হয় তাকে।
দেশ রূপান্তর : আপনার কী মনে হয়, বর্তমানে একাত্তরের শহীদ সন্তানদের আন্দোলন করা জরুরি?
তৌহীদ রেজা নূর : প্রজন্ম ’৭১ তো এখনো আছে। অবশ্যই আন্দোলন করা জরুরি। এটা থাকবেও।
দেশ রূপান্তর : শহীদ সন্তানদের মধ্যেও তো বিভক্তি? বিভিন্ন নামে তাদের সংগঠন। এই বিভক্তি কেন?
তৌহীদ রেজা নূর : দেখেন, এই বিভক্তিটা অনিবার্য। এখানে চেতনাগত, ভাবনাগত, উপলব্ধিগত একটা বিষয় আছে। এটা থাকতে হবে। আপনি যদি মনে করেন, ‘জয় বাংলা’ আওয়ামী লীগের স্লোগান তাহলে তো হবে না। আপনি যদি এটাকে মুক্তিযুদ্ধের ‘রণধ্বনি’ হিসেবে স্বীকার না করেন, তাহলে বিভক্তি আসবেই। আপনার ওরিয়েন্টশন যদি হয় জাসদ ভাবনা, শিবির ভাবনা তাহলে তো হবে না। এরপর আর একসঙ্গে থাকা যায়? তাহলে তো আপনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মধ্যে নেই। যখন স্বাধীনতার ২০ বছর পর, আমাদের যখন যাত্রা শুরু হয়- তখন ছিল আদর্শ থেকে বিচ্যুতির সময়।
দেশ রূপান্তর : কিন্তু এই চেতনা তো পাই, ভাষা আন্দোলন থেকে। মূলত কি তখনই এর শুরু হলো না?
তৌহীদ রেজা নূর : তাতো অবশ্যই। নিশ্চয়ই।
দেশ রূপান্তর : আপনি তো বর্তমানে আমেরিকার নিউ ইয়র্কে ‘জেনোসাইড’ নিয়ে গবেষণা করছেন। এ ব্যাপারে একটু বিস্তারিত বলবেন?
তৌহীদ রেজা নূর : বিষয়টা হলো, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে যে গণহত্যা হয়েছিল বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি দেখার চেষ্টা করছি। এই জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বিষয়ে আমি কাজ করছি। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের ‘জেনোসাইড’ এখনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি। অনেক ক্ষেত্রেই, এটি থাকে অনুচ্চারিত।
দেশ রূপান্তর : শহীদ সন্তান বা পরিবার কি সরকার থেকে কোনো ধরনের, বিশেষ অর্থনৈতিক সুবিধা পাচ্ছে? যেভাবে মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের সন্তানরা পাচ্ছেন?
তৌহীদ রেজা নূর : আমার জানা নেই। আসলে ‘ভাতা’র বিষয়টি আমি যেভাবে দেখি, সেটা হচ্ছে আজ অর্ধশতাব্দী পার হওয়ার পর, সেই সময় যে মানুষটি হত্যার শিকার হয়েছিলেন, সেই মানুষটিই কিন্তু পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। প্রত্যেকেই কিন্তু আমরাসহ এক ধরনের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এতদূর এসেছি।
দেশ রূপান্তর : এর মানে ভাষা আন্দোলনে যে চেতনা কাজ করেছিল, মহান মুক্তিযুদ্ধে যে চেতনা কাজ করেছিল- বাস্তবতা সেখান থেকে অনেক দূরে- তাই তো?
তৌহীদ রেজা নূর : না। ঠিক তা না। বাস্তবতা অনেক দূরে, সেটা আমি বলব না। আমাদের অর্জন করার জন্য, আরও অনেক কাজ করার আছে। এই বিষয়টি লালন করার জন্য আরও অনেক কিছু করার আছে। এটা শুধু রাষ্ট্রের দায়িত্ব না। একজন নাগরিকের দায়িত্বও কম না। এটা একটি পরিবারের দায়িত্ব। শিক্ষাঙ্গনের দায়িত্ব। দায়িত্ব সবার আছে। শুধু রাষ্ট্রের ওপর সব দায় চাপালে ঠিক হবে না। এখানে গণমাধ্যমের দায়িত্বও রয়েছে। রাষ্ট্র অনেকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই যে, যুদ্ধাপরাধীর বিচারের বিষয়টি। এটা অত্যন্ত জটিল এবং এখানে মূল ভূমিকা কে পালন করেছে? শুধু বাংলাদেশ না। সারা বিশে^ই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার বিষয়টি, বেশ জটিল এবং স্পর্শকাতর বিষয়। এটা কিন্তু বাংলাদেশ করতে পেরেছে। এই যে, বীরাঙ্গনাদের ‘মুক্তিযোদ্ধা’ পরিচয় দেওয়া- এটাও তো কম বড় বিষয় নয়? কিছু কিছু দুর্বলতা থাকলেও, অনেক বড় বড় কাজ কিন্তু করেছে। আমাদের বড় দুর্বলতার জায়গা হলো- যে চর্চাটা, যে শেকড় থেকে শুরু হয়েছিল আমাদের চেতনাবোধে সেভাবে লালন করা দরকার। এই চেতনা ছড়িয়ে দেওয়া দরকার। এই দায়িত্ব কিন্তু সবার। যদিও আমাদের মধ্যে, দিবসকেন্দ্রিক ভাবনাটা বেশি। এটা গণমাধ্যমে বেশি দেখা যায়। গণমাধ্যমের অনেক সাংবাদিকের মধ্যেও এই চেতনার ঘাটতি আছে। যেমন ধরেন- যে সাংবাদিক ‘বুদ্ধিজীবী দিবস’ কভার করতে এসেছেন- তিনি যথেষ্ট গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করে আসেননি। দেখা যায়, একজন শহীদের নামও সে ভুল উচ্চারণ করেছে। আমি জানি না, এটিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায় । তবে বছরব্যাপী মানুষের মধ্যে একটা রুচি, বোধ এবং মনন তৈরির দায়িত্ব নিতে পারে গণমাধ্যম। অনেক আলোচনা হতে পারে। গবেষণা হতে পারে।
দেশ রূপান্তর : কিন্তু তা থেকে তো পরিত্রাণ পেতে হবে?
তৌহীদ রেজা নূর : আমি তা বলতে পারব না। এ থেকে কীভাবে বের হওয়া যায়।
দেশ রূপান্তর : আবার ‘ভাষা’র বিষয়ে ফিরে আসি। এটা তো একটা চেতনা।
তৌহীদ রেজা নূর : হ্যাঁ, চেতনার একটি অংশ।
দেশ রূপান্তর : এই চেতনার পূর্ণ বাস্তবায়ন কি হচ্ছে?
তৌহীদ রেজা নূর : না, পারছি না। বাস্তবায়ন করতে হলে তো, আগে বুঝতে হবে? চেতনার জায়গায় বড় রকমের ঘাটতি আছে। আগে মাতৃভাষাকে আত্মস্থ করতে হবে? নিজের মধ্যে নিতে হবে? নিজেকে তো উন্নত করতে হবে, নাকি? আমাদের বইপত্র, কোর্টকাচারি- সব জায়গায় তো বাংলার প্রাধান্য থাকতে হবে?
চারদিকে হইহল্লা, ছোটাছুটি। বেশ আনন্দমুখর একটি পরিবেশ। দুই ঘরের মধ্যে ফাঁদ। অব্যর্থ চেষ্টা ওকে ফাঁদে আটকাতেই হবে, না হয় লজ্জার অন্ত থাকবে না। ঘরে নতুন অতিথি। সকাল বেলা কে যেন একটু আগ বাড়িয়ে আজ খোপ ছেড়েছে। তাই তো মা-বোনের ভ্রুকুটিতে চিন্তার ভাঁজ। বেলা গড়িয়ে সূর্য প্রায় মধ্যগগনে। সবাই ব্যস্ত মোরগটাকে ধরতে। আবহমান বাংলার এটি একটি চিরায়ত কর্ম। যা দুই-আড়াই দশক আগেও দেখা যেত। মাছে-ভাতে বাঙালির আতিথেয়তায় থালায় একটু মুরগির মাংস এটি ছিল যথেষ্ট স্বস্তিদায়ক একটি ব্যাপার। পরিস্থিতি এখন অনেক পাল্টে গেছে। দেশ উন্নয়নের সঙ্গে প্রাণিজ প্রোটিনের এই উৎসও পরিবর্তিত হয়েছে। দেশি মুরগির স্বাদ মানুষ ভুলেই গেছে। এর স্থলে জায়গা করে নিয়েছে ব্রয়লার মাংস যা খুবই সহজলভ্য।
আমাদের দেশে বাণিজ্যিকভাবে পোলট্রি খামার চালু হয় আশির দশক থেকে। ক্রমান্বয়ে এটি একটি কৃষির উপখাতে পরিণত হয়েছে এবং জিডিপিতে অবদান রাখছে ২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আমাদের দেশে ছোট, বড়, মাঝারি মিলিয়ে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার পোলট্রি ফার্ম রয়েছে। করোনার আগে সংখ্যাটি ছিল ১ লাখ ১০ হাজারের ওপর। দেশে প্রতিদিন চার কোটির বেশি ডিম উৎপাদিত হয়। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ হাজার ৩৩৫ কোটি পিস ডিম উৎপাদন হয়েছে। ১০ বছরের মধ্যে এই উৎপাদন তিনগুণের বেশি বেড়েছে। আর বণিজ্যিক ভিত্তিতে দৈনিক মুরগির মাংস উৎপাদিত হয় ৩ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। তা এখন দেশের মানুষের প্রয়োজনীয় প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।
পুষ্টিবিদরা বলছেন , মানবদেহের জন্য দৈনিক ২ হাজার ৪০০ ক্যালরি আবশ্যক। এটা কিন্তু একেবারেই ন্যূনতম হিসাব। দেখা যায়, গ্রামীণ গরিব খেটে খাওয়া লোকজন জীবনধারণে প্রয়োজনীয় ক্যালরির শতকরা ৫৪ ভাগ পূরণ করে ভাতের মতো শর্করাজাতীয় খাবার খেয়ে। আর শাকসবজির অবদান ৩৩ ভাগ। মাছ প্রায় শতকরা ৬ দশমিক ৬ ভাগ। মাংস থেকে আসে মাত্র ২ দশমিক ২ শতাংশ। মোট কথা, ক্যালরির চাহিদা পূরণে গ্রামীণ খানাগুলো ভাত বা রুটির ওপরই অধিক নির্ভরশীল এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ মাংস পরিভোগ করে থাকে নামমাত্র। অথচ প্রোটিন ছাড়া মানুষের শরীর স্বাভাবিক নিয়মে কাজ করতে পারে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, মানবদেহের শক্তির ১০-১৫ শতাংশ আসা উচিত আমিষ জাতীয় খাদ্য থেকে। সংস্থার মতে, আমাদের গড় আয়ু ৭৪ বছর ৩ মাস। অথচ একজন রিকশাচালকের গড় আয়ু মাত্র ৪৫ বছর। রিকশাচালকের আয়ুর এ করুণ অবস্থা কিন্তু প্রোটিনের অভাবেই। প্রোটিনের অভাব হলে মানুষ অকালেই বার্ধক্যে আক্রান্ত হয়।
বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এখনো প্রোটিন ঘাটতি অনেক। শুধু চালের উৎপাদন বাড়িয়ে একটি সুস্থ-সবল জাতি গঠন করা সম্ভব নয়। তাই প্রাণিজ প্রোটিনের সহজ উৎস পোলট্রি খাতে মনোযোগ দিতে হবে। ইতিমধ্যে ডিম ও মুরগির মাংস উৎপাদনে একটি বিপ্লব ঘটিয়েছে এই শিল্প। প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে থাকা ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান ও আগামীর আপামর মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণে এ শিল্প অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। অথচ কৃষিভিত্তিক এ খাতটি নানামুখী অবহেলার শিকার। এমনিতেই অতিমারী করোনার রেশ কাটতে না কাটতেই পরবর্তী সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের চোট সামলাতেই দিশেহারা এই খাত সংশ্লিষ্টরা। এর ওপর আবার সাম্প্রতিক সময়ে ডলার ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা এই খাতের চলমান সংকটকে আরও গভীরতর করছে। সয়াবিন ও ভুট্টা দিয়ে মুরগির খাবারের ৭০-৭৫ শতাংশ উপাদান তৈরি হয়। আমদানি খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব পণ্যের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) তথ্য বলছে, পোলট্রিজাত পণ্য, মাছ ও গবাদিপশু উৎপাদনে ব্যবহৃত ১৬ ধরনের কাঁচামালের দাম করোনা মহামারী শুরু অর্থাৎ ২০২০ সালের মার্চ থেকে গত বছরের মার্চ পর্যন্ত গড়ে ৬৩ শতাংশের মতো বেড়েছে। আট ধরনের কাঁচামালের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ বা এরও বেশি হারে। এই কাঁচামালের দরের ঊর্ধ্বগতি এখনো অব্যাহত আছে। এর পর জ্বালানি তেলের দাম ও দেশব্যাপী লোডশেডিংয়ের কারণে পোলট্রি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আর খামারিদের বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। বাড়তি এই খরচের অনুপাতে লাভ হচ্ছে কি না, সেই অঙ্ক এখন আর সরল নেই। খামারিরা যখন এই জটিল অঙ্ক মেলাতে ব্যস্ত, তখন মূল্যস্ফীতির চাপে মাংস কেনায় লাগাম টানতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা। ফলে মুরগি সঠিক সময়ে বিক্রি নিয়েও দেখা দেয় একপ্রকার অনিশ্চয়তা। তবে এ শিল্পে সবচেয়ে ধোঁয়াশার জায়গা হলো বাচ্চা মুরগির দামের অস্থিতিশীলতা। কখনো কখনো এর দাম আকাশছোঁয়া। সরকারের পক্ষ থেকে এর একটি নির্দিষ্ট দর বেঁধে দেওয়া হলেও তা মানছে না কেউই। ২৫ থেকে ৩০ টাকার উৎপাদন খরচের একটি বাচ্চা ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে হরহামেশাই। আবার দেখা যায়, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ৭০ থেকে ৮০ টাকাও বিক্রি হয়। এই অধিক মুনাফা লাভের প্রবণতাও এই শিল্পে সংকটের অন্যতম বড় এক কারণ। তাই তো হতাশায় জর্জরিত প্রান্তিক খামারিরা নিরুপায় হয়ে পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছেন। ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) তথ্যানুসারে, গত বছরের মে মাসে দেশে গড়ে সাপ্তাহিক ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার চাহিদা ছিল ১ কোটি ৮৭ লাখ। আগস্ট মাসে প্রথমার্ধে যা কমে দাঁড়িয়েছে সপ্তাহে ১ কোটি ৩২ লাখে। অর্থাৎ দেশে প্রতি সপ্তাহে তখন ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার চাহিদা কমেছে ৫৫ লাখ। ফলে পোলট্রি খাবারের চাহিদাও কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ছোট, মাঝারি অনেক দেশীয় ফিডমিল। এতে সামগ্রিকভাবে চাপে পড়ছে পোলট্রি শিল্প। তবে এর মধ্যেও আশার আলো দেখাচ্ছে হাঁসের মাংস। এটির উৎপাদন দিন দিন বাড়ছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশে হাঁসের উৎপাদন ছিল ৪ কোটি ৭৩ লাখ। ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে হয়েছে ৬ কোটি ৩৮ লাখ। বাজার দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকায়। এখানে এক উদ্যোক্তাশ্রেণি তৈরি হচ্ছে। যা কর্মসংস্থান তৈরিতেও বিশেষ ভূমিকা রাখছে। দেশের মোট মাংস উৎপাদনের প্রায় ৪০ শতাংশই আসে পোলট্রি খাত থেকে। কিন্তু তা এখন ক্রমান্বয়ে নানামুখী সংকটে সংকুচিত হচ্ছে। এই সমস্যার উৎসমূলে অনুসন্ধানী নজর দিলে দেখা যায় এখানে যেমন খাবার ও মুরগির বাচ্চা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত কিছু বড় প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেট বাণিজ্য কাজ করছে, ঠিক তেমনি খামারিদের খামার ব্যবস্থাপনায় বিজ্ঞানসম্মত সঠিক জানা-শোনার অভাবের বিষয়টিও সুস্পষ্ট।
এই খাতে সরকারি তদারকির অভাব যথেষ্ট লক্ষণীয়। না হয় খাবার তৈরির অন্যতম কাঁচামাল সয়ামিলের দেশে যথেষ্ট চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। এ খাতে ব্যবহৃত পণ্যগুলো আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা যায় কি না, সেটি ভেবে দেখতে হবে। চলমান সংকট নিরসনে দ্রুত পোলট্রি বোর্ড গঠন করে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে, খামারিদের সহজ শর্তে ব্যাংকঋণের ব্যবস্থাসহ বীমার আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় এ বিকাশমান বিশাল শিল্পটি মুখ থুবড়ে পড়বে। বেকার হয়ে যাবে হাজার হাজার তরুণ উদ্যোক্তা ও সংশ্লিষ্টরা। ফলে কালক্রমে পুষ্টি বা প্রোটিনজনিত ঘাটতির কারণে আপামর জনসাধারণের স্বাস্থ্যহানি ও মেধা বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। যা জাতীয় জীবনে একটি বড় সংকট হিসেবে উদয় হবে।
লেখক : পুঁজিবাজার বিশ্লেষক
এক বছর আগে, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণের সিদ্ধান্ত সমগ্র বিশ্বকে হতচকিত ও আতঙ্কিত করে তুলেছিল। তখন কেউ ভাবেনি যে, এই যুদ্ধ এতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে, এক বছর পরও এই যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো চিহ্ন দেখা যাবে না। এক বছরে ইউক্রেন দেশটি বিধ্বস্ত হয়েছে। কিন্তু আরও বড় কথা, ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে যে, আধুনিক ইতিহাসের একটি মাইলফলক হয়ে চলেছে এই যুদ্ধ। পুরো বিশ্বাসীকেই এই যুদ্ধের নেতিবাচক ফল ভোগ করতে হচ্ছে।
সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটি সামনে চলে এসেছে তা হলো, পরমাণু যুদ্ধ কি আসন্ন? ইউক্রেন যুদ্ধের বর্ষপূর্তির আগে, গত ২১ ফেব্রুয়ারি রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের হুমকিতে সেই জল্পনাই এখন চরমে। এতদিন মস্কোর তরফে এ ব্যাপারে পরোক্ষে ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আচমকা কিয়েভ সফর এবং হুমকিতে এক লহমায় পাল্টে গিয়েছে গোটা পরিস্থিতি। এই পদক্ষেপের জবাবে এদিন আমেরিকার সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি ভাঙার কথা ঘোষণা করেন পুতিন। তার সাফ হুঁশিয়ারি, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়, তাহলে আমরাও পিছিয়ে থাকব না। একসপ্তাহ আগে আমি যুদ্ধক্ষেত্রে নতুন স্ট্র্যাটেজিক সিস্টেম মোতায়েনের ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছি।’ যদিও সেটি কী, তা স্পষ্ট করা হয়নি। তবে একথার মাধ্যমে তিনি যে কার্যত পরমাণু যুদ্ধের ইঙ্গিত দিয়েছেন, তা স্পষ্ট।
পুতিনের এই ঘোষণা পরমাণু যুদ্ধের সম্ভাবনা উসকে দিয়েছে বলে মত সামরিক বিশেষজ্ঞদেরও। ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর পূর্ণ হওয়ার প্রাক্কালে গত ২০ ফেব্রুয়ারি আচমকা ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ পরিদর্শনে যান জো বাইডেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে পাশে নিয়ে প্রচ্ছন্ন হুমকিও দেন মস্কোকে। সঙ্গে ছিল ইউক্রেনকে চার হাজার কোটি টাকার অস্ত্র সাহায্য, প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র এবং আধুনিক সাঁজোয়া গাড়ি পাঠানোর আশ্বাস। বিষয়টি মোটেই ভালোভাবে নেয়নি ক্রেমলিন। তাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পাদিত শেষ চুক্তি ‘নিউ স্টার্ট’ বা ‘স্ট্র্যাটেজিক অফেন্সিভ আর্মস ট্রিটি’ থেকে একতরফাভাবে বেরিয়ে আসার কথা ঘোষণা করেছেন পুতিন।
২০১০ সালের ৮ এপ্রিল বারাক ওবামার আমলে তৎকালীন রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের সঙ্গে এই কৌশলগত চুক্তি স্বাক্ষর করে ওয়াশিংটন। দু’দেশে পরমাণু অস্ত্র হ্রাসে এটির ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। ২০২১ সালে সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাইডেন প্রশাসন সেটি আরও পাঁচ বছর বাড়িয়ে দেয়। এদিন দেশবাসীর উদ্দেশে ‘স্টেট অব দ্য নেশন’ ভাষণে রুশ প্রেসিডেন্ট তা খারিজ করে দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে আমেরিকাসহ পশ্চিমি দুনিয়াকে দায়ী করেছেন পুতিন। তিনি বলেছেন, ‘স্থানীয় সমস্যাগুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে আন্তর্জাতিক ইস্যুতে রূপ দিয়েছে পশ্চিমি দেশগুলো। দেশের স্বার্থে এই অভিসন্ধির বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছি। রাশিয়াকে সহজেই হারানো যাবে বলে মনে করেছিল পশ্চিমের দেশগুলো। সেই কারণে ইউক্রেনে সংঘাতের আগুন জ্বালানো হয়। কিন্তু আমাদের হারানো অসম্ভব। তাদের জন্যই আমরা আজ যুদ্ধে যেতে বাধ্য হয়েছি।’ ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল (খেরাসন, জাপোরিঝিয়া, দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক) রুশ ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত করার কথাও ঘোষণা করেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
এই মুহূর্তে ইউক্রেন যুদ্ধ দু’টি গতিপথের সামনে দাঁড়িয়ে। এক, ক্রমাগত ও নিরন্তর আক্রমণ প্রসারে তত বেশি না-হলেও ক্ষয়ক্ষতিপ্রবণ ঘটিয়েই যাবে রাশিয়া। বহু মানুষ মারা যাবেন, বহু নগর-লোকালয় বিনষ্ট হবে, রুশ ফেডারেশনের মধ্যেও দেখা দেবে অস্থিরতা। দুই, একটি আঞ্চলিক যুদ্ধের অঞ্চলগণ্ডি পেরিয়ে এটি আরও বড় হয়ে উঠতে পারে, যে পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট পুতিনের পরমাণু-অস্ত্র নিয়ে জুয়াখেলার ইচ্ছেও চাগিয়ে উঠতে পারে।
ঘটনাপ্রবাহ যেদিকে মোড় নিচ্ছে তাতে একটি ছবি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপীয় শক্তি, অর্থাৎ ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোকে অতঃপর একটি বৃহত্তর ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে পূর্ব ইউরোপীয় অঙ্গনে। যদি কখনো প্রেসিডেন্ট পুতিন যুদ্ধবিরতিতে স্বাক্ষর করেন, তখনো। কেননা ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন কিংবা কাশ্মীরের মতোই, সম্ভবত ইউক্রেনেও কোনো যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী হবে না। মূল রাশিয়ার সঙ্গে পূর্বতন সোভিয়েট বলয়ের সম্পর্ক এমনই বিস্ফোরক থেকে যাবে, বিশেষত ইউক্রেনে এর সহজ মীমাংসা কল্পনাতীত। সে ক্ষেত্রে আর একটি দ্বিতীয় ইসরায়েল পরিস্থিতির জন্ম হলো বলা যায়, যেখানে পশ্চিমি শিবির সব সময়ে দায় বোধ করবে একটি নির্ধারক ও নিয়ন্ত্রক ভূমিকা পালনের, প্রয়োজনে সামরিক হস্তক্ষেপেরও। অস্ত্র সংগ্রহ ও সরবরাহ দুই-ই দ্রুতবেগে বাড়ছে। ১৯৪৫ সালের পর এই প্রথম ন্যাটো এত বড় যুদ্ধে নেমেছে। কাকতালীয় নয় যে, ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটোর অন্তর্ভুক্তি এই যুদ্ধের সময়েই ঘটতে পেরেছে।
দুর্ভাগ্যজনক এই পরিস্থিতির অবশ্যম্ভাবী প্রভাব পড়তে চলেছে বিশ্ব অর্থনীতিতেও। ইতিমধ্যেই তা অনুভূত হতে শুরু করেছে। রাশিয়ার শক্তি সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার ফলে গোটা ইউরোপ জ্বালানি সংকটের সম্মুখীন। যদিও সদ্য-অতিক্রান্ত শীত আশঙ্কার তুলনায় স্থিতিশীল কেটেছে, ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশ্বনেতারা অতীব উদ্বিগ্ন। বিশ্বজুড়ে গম উৎপাদনের ৩০ শতাংশ ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে আসে, সুতরাং খাদ্যশস্যেও ঘাটতি আসার আশঙ্কা। মুদ্রাস্ফীতি ঘটছে বিভিন্ন দেশে। নাগরিক ক্ষোভ ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। ইউক্রেন থেকে আসা নতুন উদ্বাস্তুস্রোত আবার সামাজিক অস্থিতি তৈরি করছে। সব মিলিয়ে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর যে সময়ের মধ্যে বিশ্বকে ঠেলে দিয়েছে, তা মোটেও স্বস্তির নয়।
সবচেয়ে বড় কথা ৩৬ বছরের পুরনো ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি থেকে আমেরিকা-রাশিয়ার এই সরে আসা এবং নতুন করে হুমকি-ধমকি সেই ঠাণ্ডা যুদ্ধের স্মৃতিকেই ফিরিয়ে আনছে। বিশ্বজুড়ে দুই বৃহৎ শক্তির, অর্থাৎ আমেরিকা ও রাশিয়ার অস্ত্র প্রতিযোগিতায় রাশ টানতে বিশ্বজনমতের চাপে ১৯৮৭ সালে সম্পাদিত এই চুক্তিতে (আইএনএফ) ক্ষুদ্র ও মাঝারি পাল্লার (৫০০ কিলোমিটার থেকে ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার) সব পরমাণু অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্র নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর চার বছরের মধ্যে আমেরিকা ও রাশিয়া ২ হাজার ৭০০ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করে ফেলেছিল। সারা বিশ্বে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় লাগাম টানতে এই চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও কয়েক বছর ধরে পৃথিবীজুড়েই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে।
পুতিনের নেতৃত্বে রাশিয়া ক্রমেই সমরসজ্জায় এগিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমের ওপর রাশিয়ার অগ্রগণ্যতা প্রতিষ্ঠা করার একটা প্রচেষ্টা রাশিয়ার মধ্যে প্রবল। বিশেষ করে ট্যাকটিক্যাল নিউক্লিয়ার অস্ত্রের ক্ষেত্রে রাশিয়া পশ্চিমা শক্তির তুলনায় এগিয়ে থাকতে চায়। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পশ্চিমারা ভেবেছিল, রাশিয়া আর কোনোদিন কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারবে না বা পুনরুজ্জীবন ঘটবে না। কিন্তু সে ধারণা যে ভুল, সেটা এরই মধ্যে পুতিন প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন।
পুতিন মনে করেন, ন্যাটোর প্রচলিত অস্ত্রশক্তির কাছে তার দেশের পিছিয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতিতে যে কোনো হামলার সম্ভাব্য প্রত্যুত্তর হতে পারে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের উৎপাদন বাড়ানো। এর ফলে কেউ তার দেশের ওপর পরিকল্পিত কোনো হামলা পরিচালনার সাহস পাবে না।
বিষয়টি সম্পর্কে আমেরিকানরাও ওয়াকিবহাল। তাই তো রাশিয়ার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে আমেরিকাও অস্ত্র তৈরিতে, বিশেষ করে পারমাণবিক অস্ত্র উন্নত করে চলেছে। রাশিয়া ও আমেরিকা উভয় দেশই অত্যাধুনিক সব পারমাণবিক অস্ত্র ক্রমাগত শক্তিশালী করে চলেছে এবং এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগও বাড়িয়েছে। নিজ নিজ দেশের নিরাপত্তার নামে রাশিয়া ও আমেরিকা এখন গভীর সামরিক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। যদিও এটা নিরাপত্তা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনো কাজেই আসবে না। বরং এতে উভয় পক্ষের সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বৃদ্ধি পাবে। সবচেয়ে আশঙ্কার ব্যাপার হচ্ছে, বর্তমানে রাশিয়া ও আমেরিকা দুই দেশেই দুজন একরোখা-অপরিণামদর্শী যুদ্ধবাজ ব্যক্তি ক্ষমতায় রয়েছেন। বিশ্বশান্তির পথে না হেঁটে যারা উল্টোপথে চলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন! এই দুই ব্যক্তির খেয়ালি আচরণ মানবজাতির জন্য যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্যোগ বয়ে আনতে পারে।
সন্দেহ নেই, ইউক্রেনকে ঘিরে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাদানুবাদ ফের ঠাণ্ডা মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে যাচ্ছে। পরমাণু অস্ত্রের প্রতিযোগিতা থেকে এখন দুই রাষ্ট্রকে বিরত করবে কে বা কারা? এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজন হচ্ছে, যুদ্ধের বিরুদ্ধে নতুন করে বিশ্বে জোরদার শান্তি আন্দোলন গড়ে তোলা। তা না হলে পরমাণু শক্তিধর দুটি দেশের নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বড় যুদ্ধের বিপদ ডেকে আনবে! আবার আমরা ফিরে যাব সেই স্নায়ুযুদ্ধের যুগে!
ইউক্রেনকে ঘিরে দুই পরাশক্তির যে যুদ্ধ, তা সহসাই মিটবে বলে মনে হচ্ছে না। আমেরিকা আর রাশিয়া, দুটো দেশেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২৪ সালে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, তার আগে হয়তো এই প্রাণক্ষয়ী, অর্থক্ষয়ী সংঘাত শেষ হবে না। মানবজাতির জন্য যা চরম দুঃসংবাদ!
লেখক: লেখক ও কলামিস্ট
সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দেশে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দেড়শোর ওপর। এগুলোর বেশিরভাগেই প্রতি বছর বা এক বছর পরপর সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। সমাবর্তনে অংশ নিতে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দীর্ঘদিন ধরে ‘নিবন্ধন ফি’ নামে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক ধরনের ব্যবসা চালু রয়েছে। স্নাতক, স্নাতকোত্তর শেষ করে একজন শিক্ষার্থী যখন চাকরির আবেদনে ব্যস্ত ঠিক তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আনুষ্ঠানিক সনদ দেওয়ার নাম করে হাজার হাজার টাকা গ্র্যাজুয়েটদের কাছ থেকে আদায়ের ‘প্রথা’ চালু করে রেখেছে। নিবন্ধন ফি জোগাড় করতে না পেরে অনেক শিক্ষার্থীই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সেরা স্বাদ নেওয়া থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। কিন্তু অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আদায় করা টাকার অর্ধেকও খরচ করে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
দেশ রূপান্তরে ‘উচ্ছ্বাসের আড়ালে অসন্তোষ’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শনিবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সমাবর্তন। সমাবর্তন উপলক্ষে ডিগ্রিপ্রাপ্তদের হাস্যোজ্জ্বল পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে গোটা ক্যাম্পাস। তবে শিক্ষার্থীদের এই উচ্ছ্বাসের মধ্যেই সমাবর্তনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রয়েছে অসন্তোষ। নিবন্ধন করতে জটিলতা থেকে শুরু করে খাবারের মেন্যু ও সমাবর্তনের লোগো নিয়ে বিতর্ক উঠেছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এবারের সমাবর্তনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর একসঙ্গে ৪ হাজার টাকা ফি ধরা হয়। স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে পৃথকভাবে ২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে নিবন্ধন করা গেছে। আর এমফিল ডিগ্রির শিক্ষার্থীরা ৬ হাজার, পিএইচডি ৭ হাজার এবং সাপ্তাহিক কোর্সের সনদধারীরা ৮ হাজার টাকা দিয়ে নিবন্ধন করেছেন। ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সবশেষ সমাবর্তনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য নিবন্ধন ফি ছিল পৃথকভাবে ১ হাজার ৫০০ টাকা। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর একত্রে ছিল ২ হাজার ৫০০, এমফিল ডিগ্রি ২ হাজার ৫০০ এবং পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের নিবন্ধন ফি ছিল ৩ হাজার টাকা। এবারের নিবন্ধন ফি অতিরিক্ত জানিয়ে তা কমানোর দাবিতে মানববন্ধন ও উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাপ্তাহিক কোর্সের শিক্ষার্থীদের সমাবর্তন না দেওয়ার দাবিও ছিল তাদের। তবে সেসব দাবি মানেনি প্রশাসন।
অংশগ্রহণকারীদের খাবার হিসেবে দেওয়া হবে ছোট একটি বান পিৎজা, এক সøাইস কেক, সন্দেশ, চিকেন ফ্রাই, আপেল এবং পানি। ৩১১ টাকা মূল্যের এ খাবারের জন্য প্যাকেটের পেছনেই ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫ টাকা। যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা। ১৮ হাজার জনের এ খাবারে মোট বরাদ্দ ধরা হয়েছে প্রায় ৫৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া বিনা পারিশ্রমিকে লোগো তৈরির বিনিময়ে চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. মহসিনকে সমাবর্তনের প্যান্ডেলের আওতায় ডিজাইনের জন্য ১১ লাখ টাকার কাজ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ লোগোর মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। এবারের সমাবর্তনে ১৫ হাজার ২২৩ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে নিয়মিত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্নকারী ১১ হাজার ৪৪৬, উইকেন্ড প্রোগ্রামের ৩ হাজার ৪৬২, এমফিল ডিগ্রির ৩৪ ও পিএইচডি সম্পন্নকারী ২৮১ জন। সমাবর্তনে ১২ কোটি টাকা বাজেট ধরা হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অর্থায়ন করবে ১ কোটি টাকা।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নামমাত্র ফি দিয়ে পড়ালেখা করছে। চার বছরের স্নাতক কোর্সে একজন শিক্ষার্থীর যে টাকা টিউশন ফি দিতে হয়, দেখা যায় এর চেয়ে বেশি তাকে সমাবর্তন ফি দিতে হচ্ছে। রাষ্ট্র যদি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নামমাত্র ফি নিয়ে বছরে লাখ টাকার বেশি ব্যয় করতে পারে, তাহলে সমাবর্তনের আয়োজনও রাষ্ট্রেরই করা উচিত। তাহলে সমাবর্তনের নামে বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে। উন্নত দেশগুলোতে সমাবর্তনে অংশ নিতে শিক্ষার্থীদের কোনো ফি দিতে হয় না। এমনকি সনদ নেওয়ার জন্যও তাদের শিক্ষার্থীদের পয়সা খরচ করা লাগে না। বরং এই সব সমাবর্তনে অংশ নিতে গ্র্যাজুয়েটদের বাবা-মাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু আমাদের দেশে দেখা যাচ্ছে অনেক শিক্ষার্থীকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের চাপিয়ে দেওয়া এই নিবন্ধন ফি জোগাড় করতে না পারায় বন্ধুদের নিয়ে একসঙ্গে সনদ হাতে ফ্রেমবন্দি হওয়া থেকে বিরত থাকতে হচ্ছে। একজন শিক্ষার্থীর জীবনে সবচেয়ে আনন্দময় দিন হলো এই সমাবর্তন। সবাইকেই আনুষ্ঠানিক সনদ দেওয়ার রীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য। উচিত হবে, গ্র্যাজুয়েটদের এই সব সনদ দেওয়ার অনুষ্ঠানকে বাণিজ্যিকীকরণ না করা ও লুটপাটের আয়োজন থেকে বিরত থাকা। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক আয়ের বাড়তি খাত হিসেবে না দেখে সমাবর্তনকে একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের শেষ অনুষ্ঠানটি আনন্দময় করার সুযোগ দেবে।
ভারতীয় বাঙালি লেখিকা লীলা মজুমদারের জন্ম কলকাতার রায় পরিবারে ১৯০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। তার বাবার নাম প্রমদারঞ্জন রায় ও মা সুরমাদেবী। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি পরীক্ষায় তিনি সর্বোচ্চ নম্বর অর্জন করেন। ১৯৩৩ সালে তিনি বিয়ে করেন দন্ত চিকিৎসক ডা. সুধীরকুমার মজুমদারকে। এ বিয়েতে তার বাবার প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি তার স্বনির্বাচিত পাত্রকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করেন। বিবাহিত জীবনে তারা সুখী দম্পতি ছিলেন। স্বামী আজীবন তার সাহিত্যচর্চায় উৎসাহী ছিলেন। তার প্রথম গল্প ‘লক্ষ্মীছাড়া’ ১৯২২ সালে সন্দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯৬১ সালে সত্যজিৎ রায় সন্দেশ পত্রিকা পুনর্জীবিত করলে তিনি ১৯৬৩ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত সাম্মানিক সহ-সম্পাদক হিসেবে পত্রিকাটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘হলদে পাখির পালক’, ‘টং লিং’, ‘পদি পিসির বর্মী বাক্স’ ও ‘সব ভুতুড়ে’। তিনি অনেক শিক্ষামূলক রচনা ও রম্যরচনা ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেন। তার আত্মজীবনীতে শিলংয়ের ছেলেবেলা, শান্তিনিকেতন ও অল ইন্ডিয়া রেডিওর সঙ্গে তার কাজকর্ম, রায়চৌধুরী পরিবারের মজার ঘটনাবলি ও বাংলা সাহিত্যে দীর্ঘ পরিভ্রমণের কথা বর্ণিত হয়েছে। রবীন্দ্র পুরস্কার, আনন্দ পুরস্কার, বিদ্যাসাগর পুরস্কার, ভুবনেশ্বরী পদক, দেশিকোত্তমসহ নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় তিনি ভূষিত হয়েছেন। ২০০৭ সালের ৫ এপ্রিল তিনি মৃতুবরণ করেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
মার্চে ঘরের মাঠে দুটি প্রীতি ম্যাচের পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেখা যায়নি আর্জেন্টিনাকে। তিন মাস পর আগামী মাসে তারা খেলবে আরও দুটি প্রীতি ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে সেই ম্যাচের জন্য ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করেছেন লিওনেল স্কালোনি। তবে ঘোষিত সেই দলে নেই লাউতারো মার্তিনেজ।
আর্জেন্টিনার ক্রীড়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস ও ওলে তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গোড়ালির চোটের কারণে মার্তিনেজ চিকিৎসাধীন আছেন। তাই তাকে জাতীয় দলের স্কোয়াডে রাখা হয়নি।
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ইন্টার মিলানের হয়ে গোল করেছিলেন। ফাইনালেও তাকে ইতালিয়ান ক্লাবটির হয়ে খেলতে দেখা যেতে পারে। তারপরই তিনি মাঠের বাইরে চলে যাবেন। ঐ সময়ে তিনি বিশ্রামে থাকবেন। আর তাই কোচ স্কালোনি তাকে দলে রাখবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের অন্যতম সদস্য মার্তিনেজ। তবে পুরো টুর্নামেন্টে তিনি ব্যাথানাশক ঔষধ খেয়ে খেলছিলেন।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ও ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামে স্ত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় চাচাতো ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে পলাশ হোসেন (২৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
শনিবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত পলাশ হোসেন ওই গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, নিহত পলাশ হোসেনের চাচাতো ভাই সুমন প্রায়ই পলাশের স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করত। শনিবার সন্ধ্যায় আবারো উত্ত্যক্ত করে। পলাশ বাড়িতে এলে বিষয়টি তাকে জানায় তার স্ত্রী। এ ঘটনায় পলাশ তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে বিষয়টির প্রতিবাদ করতে গেলে উভয়ের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সুমন ছুরি দিয়ে পলাশকে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই পলাশ মারা যায়।
মহেশপুর থানার ওসি খন্দকার শামীম উদ্দিন বলেন, নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। নিহত পলাশ পেশায় ভ্যানচালক ছিলেন, সঙ্গে কৃষিকাজও করত।
রেফারির বাঁশি বাজার তিন মিনিটের মধ্যেই রিয়াল মাদ্রিদের জালে জড়ায় বল। রাফা মিরের দুর্দান্ত এক গোলে লিড পায় সেভিয়া। তবে শেষ অবধি তারা ধরে রাখতে পারেনি সে হাসি। রদ্রিগোর জোড়া গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে রিয়াল।
রাতে লা-লিগার ম্যাচে সেভিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। খেলার তৃতীয় মিনিটেই লিড পেয়েছিল সেভিয়া। তবে ২৯ মিনিটে রদ্রিগো সমতায় ফেরান রিয়ালকে। সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
বিরতির পর ফের বাড়ে আক্রমণের ধার। যার ফলে ৬৯ মিনিটে দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় রিয়াল। এবারও নায়ক রদ্রিগোই। এবারেরটি অবশ্য টনি ক্রুসের সহায়তায়। পরে আর কোনো গোল না হওয়ায় ২-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মাদ্রিদের ক্লাবটি।
তবে ম্যাচের ৮৩ মিনিটে লাল কার্ড দেখে আকুনা। হারের আগে সেভিয়ার আর্জেন্টাইন এই ডিফেন্ডারের ভুলে ১০ জনের দল নিয়ে খেলতে হয় রিয়ালকে।
শুরুতে গোল হজম করলেও ৬৭ শতাংশ সময় নিজেদের দখলে বল রেখেছিল রিয়াল। ছয়বার আক্রমণে গিয়েছিল তারা, যার মধ্যে তিনটি শট ছিল গোলবার লক্ষ্য করে।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
সংলাপে রাজনৈতিক সংকট দূর হওয়ার নজির তৈরি হয়নি এখনো। তবুও নানা সময়ে সংকট নিরসনে রাজনীতিতে সংলাপ করা নিয়ে আলোচনা হয়। সংলাপের আশ্রয় নিতেও দেখা গেছে দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভিন্ন মেরুতে অবস্থান থাকায় আবারও রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় আলোচনায় এসেছে ‘সংলাপ’। যদিও প্রধান দুই দলের নেতারা সংলাপে অনীহা প্রকাশ করে আসছেন। আবার আড়ালে আলাপে দুই দলের আগ্রহও দেখা গেছে।
অন্তরালের সংলাপ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার আড়ালে আলাপের মূল কারণ হলো বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বড় একটি অংশ বয়স্ক হয়ে গেছেন। তাদের অনেকের এবারের পরে নির্বাচন করার সক্ষমতা আর থাকবে না। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকতে গিয়ে সামাজিক মর্যাদা নষ্ট হয়েছে। এ সময় সংসদ সদস্য হয়ে মর্যাদা নিয়ে চলতে চান তারা। বিএনপির ওই অংশের সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতাও রয়েছেন যারা নির্বাচনে যেতে চান। ফলে নির্বাচনে যেতে আগ্রহী বিএনপির সেই সব নেতা আড়ালে আলাপে থাকতে রাজি আছেন। অন্যদিকে আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখতে চাওয়া বিদেশি শক্তিগুলোর সরকারের ওপর চাপ থাকায় বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে চায় আওয়ামী লীগ। ফলে প্রকাশ্যে সংলাপের আগ্রহ না দেখিয়ে আড়ালের আলাপে আগ্রহী দলটির নেতারা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে এক চুলও নড়বে না। অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে কোনোভাবেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যাবে না। দুই দলই নিজেদের এমন অনড় অবস্থান দেখাচ্ছে। দুই দলের পরস্পরবিরোধী অবস্থানে সৃষ্ট সংকট সমাধানে বিদেশি তৎপরতা বেশ আগে থেকেই শুরু হয়েছে। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসতে শুরু করেছে বিদেশি সেই তৎপরতায়ও গতি এসেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএনপি কাউকেই কাছাকাছি অবস্থানে, অর্থাৎ এক মেরুতে আনতে পারেনি এখনো। তবে বিদেশি প্রভাবশালী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা সংকট নিরসনে দুই দলকেই সংলাপে বসার জন্য বলছেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা সংলাপের মধ্য দিয়ে সমস্যা সমাধানের রাস্তা ঠিক করতে দুই দলকেই তাগিদ দিয়েছেন। বিদেশিদের অবস্থান হলো আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চান তারা। সে জন্য রাস্তা তৈরি করতে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই সংলাপে অনীহা দেখিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্যে অনীহার কথা জানিয়েছেন। বিএনপিও প্রায় প্রতিদিনই অনীহা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখছে।
তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও সংলাপে সমাধান আসেনি। এবারও সংলাপে সমাধান আসার সম্ভাবনা কম। যদি সংলাপের আগেই এজেন্ডা নির্ধারণ করে সংলাপে বসে, সেই সংলাপ সফল হওয়ার পথ থাকে না।
দুই দলের একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, প্রকাশ্যে সংলাপ না করে এবার আড়ালে সংলাপ হতে পারে। অনেকটা হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটে যেতে পারে-বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন দিয়ে বসতে পারেন।’ তিনি বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
নির্বাচন সামনে রেখে দেশে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকেরা সংকট নিরসনে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। ওই সব বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দুই দলেরই অবস্থান জানতে চেয়েছেন তারা। একই সঙ্গে দুই দলকে তারা এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন যে ভিন্নমত থাকলেও স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের স্বার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়া জরুরি। এ কারণে নির্বাচনের আগে দুই প্রধান দলের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার আবশ্যকতা রয়েছে। এই সমঝোতার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, কিংবা উভয় পন্থায় দুই দলের মধ্যে ‘আলাপ’ হওয়া দরকার, তা সেটা সংলাপ বা আলোচনা যে নামেই করা হোক না কেন। এদিকে কূটনীতিকদের কাছে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে, বিএনপি কোনো ধরনের সংলাপে আগ্রহী নয়। ২০১৪ সালের নির্বাচন কেন্দ্র করে বিএনপির আচরণ বিদেশিদের কাছে তুলে ধরে সংলাপে বিএনপির অনীহার কথা জানান।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দাবি করছেন, রাজনীতিতে কোনো কিছু আদায় করতে হলে আন্দোলনের মাধ্যমে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ক্ষমতাসীনদের বাধ্য করতে হয়। কিন্তু সেটা বিএনপি পারছে না। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেছিল। সেখানে জনগণকে সম্পৃক্ত করে বিএনপিকে পদত্যাগে বাধ্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিএনপি এখন সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারবে বলে মনে করছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মাঠে আওয়ামী লীগের অবস্থান আছে। জনগণ সরকারের সঙ্গে আছে। আর তাদের সঙ্গে জনগণই নেই। তাই তো খালেদা জিয়াকে এখনো মুক্ত করতে পারেনি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘যেকোনো সমস্যার সমাধান সংলাপের মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব। সংলাপে বসলে হয়তো শতভাগ পাব না। তবে গিভ অ্যান্ড টেক তো কিছু হবেই। গণতন্ত্রে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই।’
তবে দলটির সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, ‘সংলাপ চলছে। মিডিয়ায়, টক শোতে, মাঠে মঞ্চে। এক দল আরেক দলকে উদ্দেশ্য করে যে বক্তব্য দিচ্ছে, তাও এক ধরনের সংলাপ। এসব অনেকেই সংলাপ বলে টের না পেলেও মূলত এটাও সংলাপ।’
আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, সংলাপের ব্যাপারে পশ্চিমা কূটনীতিকেরা তাদের তেমন কোনো পরামর্শ দেননি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘আমরা তাদের (কূটনীতিক) বলেছি সংলাপের উদ্যোগ আমরা নিয়ে কী করব? তাদের (বিএনপি) যদি কোনো দাবি থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলতে পারে। নির্বাচন কমিশন যদি সুপারিশ করে, সেটা অবশ্যই সরকারের কাছে আসবে। সরকার দেখবে তখন।’
সংলাপ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ভাবনা আমাদের নাই।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। আর আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচনকালীন এই সরকারই থাকবে এবং তাদের অধীনে নির্বাচনে হবে। নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ অবস্থায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সংকট সমাধানে কূটনীতিকদের দূতিয়ালি চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও ইতিবাচক বিএনপি। সাম্প্রতিক সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থার দূতসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। ওই বৈঠকগুলোতে কেন এই সরকারের অধীনে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতে চায় না তা ব্যাখ্যা করেছে দলটি। বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে যাবে না, সেটিও স্পষ্ট করেছে। একই সঙ্গে কূটনীতিকদের বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে সে বিষয়ে সংলাপের আহ্বান আসলে তাতে সাড়া দেবে বিএনপি। আর এই সংকট মোকাবিলায় কূটনীতিকদের ‘রোল প্লে’ (ভূমিকা রাখা) করার সুযোগ আছে বলে মনে করেন দলটির নেতারা। তাদের মতে, প্রকাশ্যে না হলেও পর্র্দার অন্তরালে সংলাপ হতে পারে। কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপের কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনেও গুঞ্জন রয়েছে ভেতর-ভেতর সংলাপ হচ্ছে।
সর্বশেষ ১৮ মে গুলশানের আমেরিকান ক্লাবে মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল চিফ ব্রান্ডন স্ক্যাট, পলিটিক্যাল অফিসার ম্যাথিউ বে, পলিটিক্যাল কনস্যুলার ডেনিয়েল শেরির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
জানতে চাইলে শামা ওবায়েদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকগুলোতে তারা আমাদের অবস্থান জানতে চান। আমরাও আমাদের অবস্থান তুলে ধরি। সর্বশেষ তারা জানতে চেয়েছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে আপনাদের অবস্থান কী। আমরা বলেছি, আন্দোলন চলছে, সেটা আমরা কন্টিনিউ (চালিয়ে যাব) করব। তারা অন্য পক্ষের (ক্ষমতাসীনদের) কথাও শুনছেন। এ অবস্থায় তারা কী করছে (দূতিয়ালি), নাকি অন্য কিছু হচ্ছে সেটা তাদের বিষয়। তবে আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আরেকটি গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত হোক, সে ব্যাপারে তাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকুক।’
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক সংলাপের ব্যাপারে কূটনীতিকেরা কোনো বৈঠকেই আমাদের কিছু বলেনি।’
তবে বৈঠকগুলোতে থাকা দলের আরেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা একাধিকবার সরকারের সঙ্গে সংলাপ করেছি। ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনের সংলাপে পর চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের তিন মাস পর নতুন নির্বাচন দেওয়ার কথা বলে তারা প্রতারণা করেছে। তাই এজেন্ডা ছাড়া কোনো সংলাপে আমরা যাচ্ছি না। কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে আমরা বলেছি, আনুষ্ঠানিক সংলাপের বিষয়ে আমরা ইতিবাচক। কিন্তু সেটি হতে হবে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে তা নিয়ে।’
ওই নেতার আরও বলেন, ‘সরকার এখন বিভিন্ন চাপে আছে। আন্তর্জাতিক চাপ তো আগে থেকেই আছে। এখন নতুন করে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ বেড়েছে। এসব চাপ সামাল দিতে তারা সংলাপের নামে নানা কথা বলবে। কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় সরকারের মনোভাবে কিছু হলেও আঁচ করা যায়। হয়তো কয়েক দিন পর সরকার আনুষ্ঠানিক সংলাপের জন্য আমন্ত্রণও জানাতে পারে।’
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।