
ভারতীয় বাঙালি লেখিকা লীলা মজুমদারের জন্ম কলকাতার রায় পরিবারে ১৯০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। তার বাবার নাম প্রমদারঞ্জন রায় ও মা সুরমাদেবী। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি পরীক্ষায় তিনি সর্বোচ্চ নম্বর অর্জন করেন। ১৯৩৩ সালে তিনি বিয়ে করেন দন্ত চিকিৎসক ডা. সুধীরকুমার মজুমদারকে। এ বিয়েতে তার বাবার প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি তার স্বনির্বাচিত পাত্রকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করেন। বিবাহিত জীবনে তারা সুখী দম্পতি ছিলেন। স্বামী আজীবন তার সাহিত্যচর্চায় উৎসাহী ছিলেন। তার প্রথম গল্প ‘লক্ষ্মীছাড়া’ ১৯২২ সালে সন্দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯৬১ সালে সত্যজিৎ রায় সন্দেশ পত্রিকা পুনর্জীবিত করলে তিনি ১৯৬৩ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত সাম্মানিক সহ-সম্পাদক হিসেবে পত্রিকাটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘হলদে পাখির পালক’, ‘টং লিং’, ‘পদি পিসির বর্মী বাক্স’ ও ‘সব ভুতুড়ে’। তিনি অনেক শিক্ষামূলক রচনা ও রম্যরচনা ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেন। তার আত্মজীবনীতে শিলংয়ের ছেলেবেলা, শান্তিনিকেতন ও অল ইন্ডিয়া রেডিওর সঙ্গে তার কাজকর্ম, রায়চৌধুরী পরিবারের মজার ঘটনাবলি ও বাংলা সাহিত্যে দীর্ঘ পরিভ্রমণের কথা বর্ণিত হয়েছে। রবীন্দ্র পুরস্কার, আনন্দ পুরস্কার, বিদ্যাসাগর পুরস্কার, ভুবনেশ্বরী পদক, দেশিকোত্তমসহ নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় তিনি ভূষিত হয়েছেন। ২০০৭ সালের ৫ এপ্রিল তিনি মৃতুবরণ করেন।
চারদিকে হইহল্লা, ছোটাছুটি। বেশ আনন্দমুখর একটি পরিবেশ। দুই ঘরের মধ্যে ফাঁদ। অব্যর্থ চেষ্টা ওকে ফাঁদে আটকাতেই হবে, না হয় লজ্জার অন্ত থাকবে না। ঘরে নতুন অতিথি। সকাল বেলা কে যেন একটু আগ বাড়িয়ে আজ খোপ ছেড়েছে। তাই তো মা-বোনের ভ্রুকুটিতে চিন্তার ভাঁজ। বেলা গড়িয়ে সূর্য প্রায় মধ্যগগনে। সবাই ব্যস্ত মোরগটাকে ধরতে। আবহমান বাংলার এটি একটি চিরায়ত কর্ম। যা দুই-আড়াই দশক আগেও দেখা যেত। মাছে-ভাতে বাঙালির আতিথেয়তায় থালায় একটু মুরগির মাংস এটি ছিল যথেষ্ট স্বস্তিদায়ক একটি ব্যাপার। পরিস্থিতি এখন অনেক পাল্টে গেছে। দেশ উন্নয়নের সঙ্গে প্রাণিজ প্রোটিনের এই উৎসও পরিবর্তিত হয়েছে। দেশি মুরগির স্বাদ মানুষ ভুলেই গেছে। এর স্থলে জায়গা করে নিয়েছে ব্রয়লার মাংস যা খুবই সহজলভ্য।
আমাদের দেশে বাণিজ্যিকভাবে পোলট্রি খামার চালু হয় আশির দশক থেকে। ক্রমান্বয়ে এটি একটি কৃষির উপখাতে পরিণত হয়েছে এবং জিডিপিতে অবদান রাখছে ২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আমাদের দেশে ছোট, বড়, মাঝারি মিলিয়ে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার পোলট্রি ফার্ম রয়েছে। করোনার আগে সংখ্যাটি ছিল ১ লাখ ১০ হাজারের ওপর। দেশে প্রতিদিন চার কোটির বেশি ডিম উৎপাদিত হয়। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ হাজার ৩৩৫ কোটি পিস ডিম উৎপাদন হয়েছে। ১০ বছরের মধ্যে এই উৎপাদন তিনগুণের বেশি বেড়েছে। আর বণিজ্যিক ভিত্তিতে দৈনিক মুরগির মাংস উৎপাদিত হয় ৩ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। তা এখন দেশের মানুষের প্রয়োজনীয় প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।
পুষ্টিবিদরা বলছেন , মানবদেহের জন্য দৈনিক ২ হাজার ৪০০ ক্যালরি আবশ্যক। এটা কিন্তু একেবারেই ন্যূনতম হিসাব। দেখা যায়, গ্রামীণ গরিব খেটে খাওয়া লোকজন জীবনধারণে প্রয়োজনীয় ক্যালরির শতকরা ৫৪ ভাগ পূরণ করে ভাতের মতো শর্করাজাতীয় খাবার খেয়ে। আর শাকসবজির অবদান ৩৩ ভাগ। মাছ প্রায় শতকরা ৬ দশমিক ৬ ভাগ। মাংস থেকে আসে মাত্র ২ দশমিক ২ শতাংশ। মোট কথা, ক্যালরির চাহিদা পূরণে গ্রামীণ খানাগুলো ভাত বা রুটির ওপরই অধিক নির্ভরশীল এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ মাংস পরিভোগ করে থাকে নামমাত্র। অথচ প্রোটিন ছাড়া মানুষের শরীর স্বাভাবিক নিয়মে কাজ করতে পারে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, মানবদেহের শক্তির ১০-১৫ শতাংশ আসা উচিত আমিষ জাতীয় খাদ্য থেকে। সংস্থার মতে, আমাদের গড় আয়ু ৭৪ বছর ৩ মাস। অথচ একজন রিকশাচালকের গড় আয়ু মাত্র ৪৫ বছর। রিকশাচালকের আয়ুর এ করুণ অবস্থা কিন্তু প্রোটিনের অভাবেই। প্রোটিনের অভাব হলে মানুষ অকালেই বার্ধক্যে আক্রান্ত হয়।
বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এখনো প্রোটিন ঘাটতি অনেক। শুধু চালের উৎপাদন বাড়িয়ে একটি সুস্থ-সবল জাতি গঠন করা সম্ভব নয়। তাই প্রাণিজ প্রোটিনের সহজ উৎস পোলট্রি খাতে মনোযোগ দিতে হবে। ইতিমধ্যে ডিম ও মুরগির মাংস উৎপাদনে একটি বিপ্লব ঘটিয়েছে এই শিল্প। প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে থাকা ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান ও আগামীর আপামর মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণে এ শিল্প অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। অথচ কৃষিভিত্তিক এ খাতটি নানামুখী অবহেলার শিকার। এমনিতেই অতিমারী করোনার রেশ কাটতে না কাটতেই পরবর্তী সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের চোট সামলাতেই দিশেহারা এই খাত সংশ্লিষ্টরা। এর ওপর আবার সাম্প্রতিক সময়ে ডলার ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা এই খাতের চলমান সংকটকে আরও গভীরতর করছে। সয়াবিন ও ভুট্টা দিয়ে মুরগির খাবারের ৭০-৭৫ শতাংশ উপাদান তৈরি হয়। আমদানি খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব পণ্যের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) তথ্য বলছে, পোলট্রিজাত পণ্য, মাছ ও গবাদিপশু উৎপাদনে ব্যবহৃত ১৬ ধরনের কাঁচামালের দাম করোনা মহামারী শুরু অর্থাৎ ২০২০ সালের মার্চ থেকে গত বছরের মার্চ পর্যন্ত গড়ে ৬৩ শতাংশের মতো বেড়েছে। আট ধরনের কাঁচামালের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ বা এরও বেশি হারে। এই কাঁচামালের দরের ঊর্ধ্বগতি এখনো অব্যাহত আছে। এর পর জ্বালানি তেলের দাম ও দেশব্যাপী লোডশেডিংয়ের কারণে পোলট্রি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আর খামারিদের বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। বাড়তি এই খরচের অনুপাতে লাভ হচ্ছে কি না, সেই অঙ্ক এখন আর সরল নেই। খামারিরা যখন এই জটিল অঙ্ক মেলাতে ব্যস্ত, তখন মূল্যস্ফীতির চাপে মাংস কেনায় লাগাম টানতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা। ফলে মুরগি সঠিক সময়ে বিক্রি নিয়েও দেখা দেয় একপ্রকার অনিশ্চয়তা। তবে এ শিল্পে সবচেয়ে ধোঁয়াশার জায়গা হলো বাচ্চা মুরগির দামের অস্থিতিশীলতা। কখনো কখনো এর দাম আকাশছোঁয়া। সরকারের পক্ষ থেকে এর একটি নির্দিষ্ট দর বেঁধে দেওয়া হলেও তা মানছে না কেউই। ২৫ থেকে ৩০ টাকার উৎপাদন খরচের একটি বাচ্চা ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে হরহামেশাই। আবার দেখা যায়, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ৭০ থেকে ৮০ টাকাও বিক্রি হয়। এই অধিক মুনাফা লাভের প্রবণতাও এই শিল্পে সংকটের অন্যতম বড় এক কারণ। তাই তো হতাশায় জর্জরিত প্রান্তিক খামারিরা নিরুপায় হয়ে পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছেন। ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) তথ্যানুসারে, গত বছরের মে মাসে দেশে গড়ে সাপ্তাহিক ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার চাহিদা ছিল ১ কোটি ৮৭ লাখ। আগস্ট মাসে প্রথমার্ধে যা কমে দাঁড়িয়েছে সপ্তাহে ১ কোটি ৩২ লাখে। অর্থাৎ দেশে প্রতি সপ্তাহে তখন ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার চাহিদা কমেছে ৫৫ লাখ। ফলে পোলট্রি খাবারের চাহিদাও কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ছোট, মাঝারি অনেক দেশীয় ফিডমিল। এতে সামগ্রিকভাবে চাপে পড়ছে পোলট্রি শিল্প। তবে এর মধ্যেও আশার আলো দেখাচ্ছে হাঁসের মাংস। এটির উৎপাদন দিন দিন বাড়ছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশে হাঁসের উৎপাদন ছিল ৪ কোটি ৭৩ লাখ। ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে হয়েছে ৬ কোটি ৩৮ লাখ। বাজার দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকায়। এখানে এক উদ্যোক্তাশ্রেণি তৈরি হচ্ছে। যা কর্মসংস্থান তৈরিতেও বিশেষ ভূমিকা রাখছে। দেশের মোট মাংস উৎপাদনের প্রায় ৪০ শতাংশই আসে পোলট্রি খাত থেকে। কিন্তু তা এখন ক্রমান্বয়ে নানামুখী সংকটে সংকুচিত হচ্ছে। এই সমস্যার উৎসমূলে অনুসন্ধানী নজর দিলে দেখা যায় এখানে যেমন খাবার ও মুরগির বাচ্চা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত কিছু বড় প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেট বাণিজ্য কাজ করছে, ঠিক তেমনি খামারিদের খামার ব্যবস্থাপনায় বিজ্ঞানসম্মত সঠিক জানা-শোনার অভাবের বিষয়টিও সুস্পষ্ট।
এই খাতে সরকারি তদারকির অভাব যথেষ্ট লক্ষণীয়। না হয় খাবার তৈরির অন্যতম কাঁচামাল সয়ামিলের দেশে যথেষ্ট চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। এ খাতে ব্যবহৃত পণ্যগুলো আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা যায় কি না, সেটি ভেবে দেখতে হবে। চলমান সংকট নিরসনে দ্রুত পোলট্রি বোর্ড গঠন করে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে, খামারিদের সহজ শর্তে ব্যাংকঋণের ব্যবস্থাসহ বীমার আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় এ বিকাশমান বিশাল শিল্পটি মুখ থুবড়ে পড়বে। বেকার হয়ে যাবে হাজার হাজার তরুণ উদ্যোক্তা ও সংশ্লিষ্টরা। ফলে কালক্রমে পুষ্টি বা প্রোটিনজনিত ঘাটতির কারণে আপামর জনসাধারণের স্বাস্থ্যহানি ও মেধা বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। যা জাতীয় জীবনে একটি বড় সংকট হিসেবে উদয় হবে।
লেখক : পুঁজিবাজার বিশ্লেষক
তৌহীদ রেজা নূর। শহীদ সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী সিরাজুদ্দীন হোসেনের সন্তান। প্রজন্ম ’৭১-এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর এই আলোকিত মানুষ পিএইচডি ডিগ্রি নেন ভারতের জওয়াহেরলাল ইউনিভার্সিটিতে। পরবর্তী সময়ে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যা বিষয়ে গবেষণা করতে চলে যান স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্কে। হঠাৎই দেশে আসা। চলে যাবেন আবার। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং প্রজন্ম’৭১ নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা বললেন দেশ রূপান্তরের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সহকারী সম্পাদক- তাপস রায়হান ।
দেশ রূপান্তর : ১৯৫২ ও ১৯৭১। বাঙালির এই দুই অর্জনকে কীভাবে দেখেন?
তৌহীদ রেজা নূর : বায়ান্ন হচ্ছে- চেতনার লড়াই। অস্তিত্বের লড়াই। নিজের ভাষাকে, প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই। আর ১৯৭১ হচ্ছে অধিকারের লড়াই। স্বাধিকারের লড়াই। সার্বভৌমত্বের লড়াই। একটি জাতির পূর্ণ বিকাশ, স্বাধীনতায়। আমরা সেটা অনেক রক্ত দিয়ে অর্জন করেছি। এর জন্য অনেক ত্যাগ করতে হয়েছে। এর সব কিন্তু চেতনা থেকেই জন্ম নেওয়া। যার ভিত্তি তৈরি করেছিল ১৯৫২। এই যুদ্ধ কিন্তু শেষ হয়নি। আজও চলছে। চলবে ততদিন, যতদিন সেই আদর্শের পূর্ণ বাস্তবায়ন না হবে।
দেশ রূপান্তর : আপনি তো ‘জেনোসাইড’ নিয়ে গবেষণা করছেন। সেখানে, ভাষা আন্দোলনকে কীভাবে যুক্ত করা হবে?
তৌহীদ রেজা নূর : আমরা যখন, জোনোসাইড বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করছি- তখন এর প্রস্তুতি পর্ব হিসেবে ভাষা আন্দোলনও বাদ যাবে না। দুটো তো একই সূত্রে গাঁথা। একাত্তর তৈরি হওয়ার প্রেক্ষাপট নির্মাণে, ভাষা আন্দোলনের বিশাল অবদান। কোনোভাবেই তাকে বাদ রাখা যাবে না।
দেশ রূপান্তর : ভাষাশহীদদের সন্তানও তো, সরকারি সুবিধা পাওয়ার দাবি রাখেন?
তৌহীদ রেজা নূর : অবশ্যই।
দেশ রূপান্তর : কিন্তু বাস্তবতা কি অন্য কথা বলে?
তৌহীদ রেজা নূর : ঠিক, তা না। অর্জন করার আরও অনেক কিছু আছে। সেগুলো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে।
দেশ রূপান্তর : আপনি তো, প্রজন্ম ’৭১-এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। সেই নব্বই দশকের শুরুতে, এই সংগঠন তৈরির কোনো বাস্তব ভিত্তি ছিল?
তৌহীদ রেজা নূর : অবশ্যই ছিল। একটিবার ভাবুন, তখন বাংলাদেশের অবস্থা কেমন ছিল? কেন আমরা বাধ্য হয়েছিলাম, এই সংগঠন দাঁড় করাতে?
দেশ রূপান্তর : এর মানে, জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যে ঘাতক-দালাল নির্মূল আন্দোলন শুরু হয়েছিল, আপনাদের সংগঠন এরও আগে তৈরি করেছিলেন?
তৌহীদ রেজা নূর : ১৯৯১ সালের অক্টোবরে আমাদের যাত্রা শুরু হয়। এর ২ মাস পরে, গোলাম আযমকে যখন জামায়াতে ইসলামী, ‘আমির’ বলে ঘোষণা দেয়। তার বিরুদ্ধেই গর্জে ওঠে সবাই। তখনই এগিয়ে আসেন জাহানারা ইমাম। গড়ে তোলেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
দেশ রূপান্তর : বর্তমানে কি আমরা, ভাষা বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে অনেক দূরে?
তৌহীদ রেজা নূর: না। ঠিক তা নয়। শুধু সরকারের ওপর, নির্ভর করলে চলবে না। দায়, আমাদেরও আছে। যদিও সময়, অনেক প্রশ্নের উত্তর দেয়। যেভাবে দিয়েছে, গণজাগরণ মঞ্চ।
দেশ রূপান্তর : সমাজে কি গণজাগরণ মঞ্চ তৈরি করার কোনো বাস্তব ভিত্তি তৈরি হয়েছিল?
তৌহীদ রেজা নূর : এছাড়া তো কোনো পথ ছিল না। ওটা তৈরি হয়েছিল, যুদ্ধাপরাধী আবদুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেওয়ার দাবিতে। আইনে একটা ফাঁক ছিল। সেই আন্দোলনের কারণেই, আইনের সংশোধন করা হয়। এরপর ফাঁসি দেওয়া হয় তাকে।
দেশ রূপান্তর : আপনার কী মনে হয়, বর্তমানে একাত্তরের শহীদ সন্তানদের আন্দোলন করা জরুরি?
তৌহীদ রেজা নূর : প্রজন্ম ’৭১ তো এখনো আছে। অবশ্যই আন্দোলন করা জরুরি। এটা থাকবেও।
দেশ রূপান্তর : শহীদ সন্তানদের মধ্যেও তো বিভক্তি? বিভিন্ন নামে তাদের সংগঠন। এই বিভক্তি কেন?
তৌহীদ রেজা নূর : দেখেন, এই বিভক্তিটা অনিবার্য। এখানে চেতনাগত, ভাবনাগত, উপলব্ধিগত একটা বিষয় আছে। এটা থাকতে হবে। আপনি যদি মনে করেন, ‘জয় বাংলা’ আওয়ামী লীগের স্লোগান তাহলে তো হবে না। আপনি যদি এটাকে মুক্তিযুদ্ধের ‘রণধ্বনি’ হিসেবে স্বীকার না করেন, তাহলে বিভক্তি আসবেই। আপনার ওরিয়েন্টশন যদি হয় জাসদ ভাবনা, শিবির ভাবনা তাহলে তো হবে না। এরপর আর একসঙ্গে থাকা যায়? তাহলে তো আপনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মধ্যে নেই। যখন স্বাধীনতার ২০ বছর পর, আমাদের যখন যাত্রা শুরু হয়- তখন ছিল আদর্শ থেকে বিচ্যুতির সময়।
দেশ রূপান্তর : কিন্তু এই চেতনা তো পাই, ভাষা আন্দোলন থেকে। মূলত কি তখনই এর শুরু হলো না?
তৌহীদ রেজা নূর : তাতো অবশ্যই। নিশ্চয়ই।
দেশ রূপান্তর : আপনি তো বর্তমানে আমেরিকার নিউ ইয়র্কে ‘জেনোসাইড’ নিয়ে গবেষণা করছেন। এ ব্যাপারে একটু বিস্তারিত বলবেন?
তৌহীদ রেজা নূর : বিষয়টা হলো, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে যে গণহত্যা হয়েছিল বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি দেখার চেষ্টা করছি। এই জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বিষয়ে আমি কাজ করছি। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের ‘জেনোসাইড’ এখনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি। অনেক ক্ষেত্রেই, এটি থাকে অনুচ্চারিত।
দেশ রূপান্তর : শহীদ সন্তান বা পরিবার কি সরকার থেকে কোনো ধরনের, বিশেষ অর্থনৈতিক সুবিধা পাচ্ছে? যেভাবে মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের সন্তানরা পাচ্ছেন?
তৌহীদ রেজা নূর : আমার জানা নেই। আসলে ‘ভাতা’র বিষয়টি আমি যেভাবে দেখি, সেটা হচ্ছে আজ অর্ধশতাব্দী পার হওয়ার পর, সেই সময় যে মানুষটি হত্যার শিকার হয়েছিলেন, সেই মানুষটিই কিন্তু পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। প্রত্যেকেই কিন্তু আমরাসহ এক ধরনের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এতদূর এসেছি।
দেশ রূপান্তর : এর মানে ভাষা আন্দোলনে যে চেতনা কাজ করেছিল, মহান মুক্তিযুদ্ধে যে চেতনা কাজ করেছিল- বাস্তবতা সেখান থেকে অনেক দূরে- তাই তো?
তৌহীদ রেজা নূর : না। ঠিক তা না। বাস্তবতা অনেক দূরে, সেটা আমি বলব না। আমাদের অর্জন করার জন্য, আরও অনেক কাজ করার আছে। এই বিষয়টি লালন করার জন্য আরও অনেক কিছু করার আছে। এটা শুধু রাষ্ট্রের দায়িত্ব না। একজন নাগরিকের দায়িত্বও কম না। এটা একটি পরিবারের দায়িত্ব। শিক্ষাঙ্গনের দায়িত্ব। দায়িত্ব সবার আছে। শুধু রাষ্ট্রের ওপর সব দায় চাপালে ঠিক হবে না। এখানে গণমাধ্যমের দায়িত্বও রয়েছে। রাষ্ট্র অনেকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই যে, যুদ্ধাপরাধীর বিচারের বিষয়টি। এটা অত্যন্ত জটিল এবং এখানে মূল ভূমিকা কে পালন করেছে? শুধু বাংলাদেশ না। সারা বিশে^ই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার বিষয়টি, বেশ জটিল এবং স্পর্শকাতর বিষয়। এটা কিন্তু বাংলাদেশ করতে পেরেছে। এই যে, বীরাঙ্গনাদের ‘মুক্তিযোদ্ধা’ পরিচয় দেওয়া- এটাও তো কম বড় বিষয় নয়? কিছু কিছু দুর্বলতা থাকলেও, অনেক বড় বড় কাজ কিন্তু করেছে। আমাদের বড় দুর্বলতার জায়গা হলো- যে চর্চাটা, যে শেকড় থেকে শুরু হয়েছিল আমাদের চেতনাবোধে সেভাবে লালন করা দরকার। এই চেতনা ছড়িয়ে দেওয়া দরকার। এই দায়িত্ব কিন্তু সবার। যদিও আমাদের মধ্যে, দিবসকেন্দ্রিক ভাবনাটা বেশি। এটা গণমাধ্যমে বেশি দেখা যায়। গণমাধ্যমের অনেক সাংবাদিকের মধ্যেও এই চেতনার ঘাটতি আছে। যেমন ধরেন- যে সাংবাদিক ‘বুদ্ধিজীবী দিবস’ কভার করতে এসেছেন- তিনি যথেষ্ট গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করে আসেননি। দেখা যায়, একজন শহীদের নামও সে ভুল উচ্চারণ করেছে। আমি জানি না, এটিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায় । তবে বছরব্যাপী মানুষের মধ্যে একটা রুচি, বোধ এবং মনন তৈরির দায়িত্ব নিতে পারে গণমাধ্যম। অনেক আলোচনা হতে পারে। গবেষণা হতে পারে।
দেশ রূপান্তর : কিন্তু তা থেকে তো পরিত্রাণ পেতে হবে?
তৌহীদ রেজা নূর : আমি তা বলতে পারব না। এ থেকে কীভাবে বের হওয়া যায়।
দেশ রূপান্তর : আবার ‘ভাষা’র বিষয়ে ফিরে আসি। এটা তো একটা চেতনা।
তৌহীদ রেজা নূর : হ্যাঁ, চেতনার একটি অংশ।
দেশ রূপান্তর : এই চেতনার পূর্ণ বাস্তবায়ন কি হচ্ছে?
তৌহীদ রেজা নূর : না, পারছি না। বাস্তবায়ন করতে হলে তো, আগে বুঝতে হবে? চেতনার জায়গায় বড় রকমের ঘাটতি আছে। আগে মাতৃভাষাকে আত্মস্থ করতে হবে? নিজের মধ্যে নিতে হবে? নিজেকে তো উন্নত করতে হবে, নাকি? আমাদের বইপত্র, কোর্টকাচারি- সব জায়গায় তো বাংলার প্রাধান্য থাকতে হবে?
এক বছর আগে, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণের সিদ্ধান্ত সমগ্র বিশ্বকে হতচকিত ও আতঙ্কিত করে তুলেছিল। তখন কেউ ভাবেনি যে, এই যুদ্ধ এতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে, এক বছর পরও এই যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো চিহ্ন দেখা যাবে না। এক বছরে ইউক্রেন দেশটি বিধ্বস্ত হয়েছে। কিন্তু আরও বড় কথা, ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে যে, আধুনিক ইতিহাসের একটি মাইলফলক হয়ে চলেছে এই যুদ্ধ। পুরো বিশ্বাসীকেই এই যুদ্ধের নেতিবাচক ফল ভোগ করতে হচ্ছে।
সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটি সামনে চলে এসেছে তা হলো, পরমাণু যুদ্ধ কি আসন্ন? ইউক্রেন যুদ্ধের বর্ষপূর্তির আগে, গত ২১ ফেব্রুয়ারি রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের হুমকিতে সেই জল্পনাই এখন চরমে। এতদিন মস্কোর তরফে এ ব্যাপারে পরোক্ষে ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আচমকা কিয়েভ সফর এবং হুমকিতে এক লহমায় পাল্টে গিয়েছে গোটা পরিস্থিতি। এই পদক্ষেপের জবাবে এদিন আমেরিকার সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি ভাঙার কথা ঘোষণা করেন পুতিন। তার সাফ হুঁশিয়ারি, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়, তাহলে আমরাও পিছিয়ে থাকব না। একসপ্তাহ আগে আমি যুদ্ধক্ষেত্রে নতুন স্ট্র্যাটেজিক সিস্টেম মোতায়েনের ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছি।’ যদিও সেটি কী, তা স্পষ্ট করা হয়নি। তবে একথার মাধ্যমে তিনি যে কার্যত পরমাণু যুদ্ধের ইঙ্গিত দিয়েছেন, তা স্পষ্ট।
পুতিনের এই ঘোষণা পরমাণু যুদ্ধের সম্ভাবনা উসকে দিয়েছে বলে মত সামরিক বিশেষজ্ঞদেরও। ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর পূর্ণ হওয়ার প্রাক্কালে গত ২০ ফেব্রুয়ারি আচমকা ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ পরিদর্শনে যান জো বাইডেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে পাশে নিয়ে প্রচ্ছন্ন হুমকিও দেন মস্কোকে। সঙ্গে ছিল ইউক্রেনকে চার হাজার কোটি টাকার অস্ত্র সাহায্য, প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র এবং আধুনিক সাঁজোয়া গাড়ি পাঠানোর আশ্বাস। বিষয়টি মোটেই ভালোভাবে নেয়নি ক্রেমলিন। তাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পাদিত শেষ চুক্তি ‘নিউ স্টার্ট’ বা ‘স্ট্র্যাটেজিক অফেন্সিভ আর্মস ট্রিটি’ থেকে একতরফাভাবে বেরিয়ে আসার কথা ঘোষণা করেছেন পুতিন।
২০১০ সালের ৮ এপ্রিল বারাক ওবামার আমলে তৎকালীন রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের সঙ্গে এই কৌশলগত চুক্তি স্বাক্ষর করে ওয়াশিংটন। দু’দেশে পরমাণু অস্ত্র হ্রাসে এটির ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। ২০২১ সালে সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাইডেন প্রশাসন সেটি আরও পাঁচ বছর বাড়িয়ে দেয়। এদিন দেশবাসীর উদ্দেশে ‘স্টেট অব দ্য নেশন’ ভাষণে রুশ প্রেসিডেন্ট তা খারিজ করে দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে আমেরিকাসহ পশ্চিমি দুনিয়াকে দায়ী করেছেন পুতিন। তিনি বলেছেন, ‘স্থানীয় সমস্যাগুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে আন্তর্জাতিক ইস্যুতে রূপ দিয়েছে পশ্চিমি দেশগুলো। দেশের স্বার্থে এই অভিসন্ধির বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছি। রাশিয়াকে সহজেই হারানো যাবে বলে মনে করেছিল পশ্চিমের দেশগুলো। সেই কারণে ইউক্রেনে সংঘাতের আগুন জ্বালানো হয়। কিন্তু আমাদের হারানো অসম্ভব। তাদের জন্যই আমরা আজ যুদ্ধে যেতে বাধ্য হয়েছি।’ ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল (খেরাসন, জাপোরিঝিয়া, দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক) রুশ ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত করার কথাও ঘোষণা করেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
এই মুহূর্তে ইউক্রেন যুদ্ধ দু’টি গতিপথের সামনে দাঁড়িয়ে। এক, ক্রমাগত ও নিরন্তর আক্রমণ প্রসারে তত বেশি না-হলেও ক্ষয়ক্ষতিপ্রবণ ঘটিয়েই যাবে রাশিয়া। বহু মানুষ মারা যাবেন, বহু নগর-লোকালয় বিনষ্ট হবে, রুশ ফেডারেশনের মধ্যেও দেখা দেবে অস্থিরতা। দুই, একটি আঞ্চলিক যুদ্ধের অঞ্চলগণ্ডি পেরিয়ে এটি আরও বড় হয়ে উঠতে পারে, যে পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট পুতিনের পরমাণু-অস্ত্র নিয়ে জুয়াখেলার ইচ্ছেও চাগিয়ে উঠতে পারে।
ঘটনাপ্রবাহ যেদিকে মোড় নিচ্ছে তাতে একটি ছবি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপীয় শক্তি, অর্থাৎ ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোকে অতঃপর একটি বৃহত্তর ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে পূর্ব ইউরোপীয় অঙ্গনে। যদি কখনো প্রেসিডেন্ট পুতিন যুদ্ধবিরতিতে স্বাক্ষর করেন, তখনো। কেননা ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন কিংবা কাশ্মীরের মতোই, সম্ভবত ইউক্রেনেও কোনো যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী হবে না। মূল রাশিয়ার সঙ্গে পূর্বতন সোভিয়েট বলয়ের সম্পর্ক এমনই বিস্ফোরক থেকে যাবে, বিশেষত ইউক্রেনে এর সহজ মীমাংসা কল্পনাতীত। সে ক্ষেত্রে আর একটি দ্বিতীয় ইসরায়েল পরিস্থিতির জন্ম হলো বলা যায়, যেখানে পশ্চিমি শিবির সব সময়ে দায় বোধ করবে একটি নির্ধারক ও নিয়ন্ত্রক ভূমিকা পালনের, প্রয়োজনে সামরিক হস্তক্ষেপেরও। অস্ত্র সংগ্রহ ও সরবরাহ দুই-ই দ্রুতবেগে বাড়ছে। ১৯৪৫ সালের পর এই প্রথম ন্যাটো এত বড় যুদ্ধে নেমেছে। কাকতালীয় নয় যে, ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটোর অন্তর্ভুক্তি এই যুদ্ধের সময়েই ঘটতে পেরেছে।
দুর্ভাগ্যজনক এই পরিস্থিতির অবশ্যম্ভাবী প্রভাব পড়তে চলেছে বিশ্ব অর্থনীতিতেও। ইতিমধ্যেই তা অনুভূত হতে শুরু করেছে। রাশিয়ার শক্তি সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার ফলে গোটা ইউরোপ জ্বালানি সংকটের সম্মুখীন। যদিও সদ্য-অতিক্রান্ত শীত আশঙ্কার তুলনায় স্থিতিশীল কেটেছে, ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশ্বনেতারা অতীব উদ্বিগ্ন। বিশ্বজুড়ে গম উৎপাদনের ৩০ শতাংশ ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে আসে, সুতরাং খাদ্যশস্যেও ঘাটতি আসার আশঙ্কা। মুদ্রাস্ফীতি ঘটছে বিভিন্ন দেশে। নাগরিক ক্ষোভ ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। ইউক্রেন থেকে আসা নতুন উদ্বাস্তুস্রোত আবার সামাজিক অস্থিতি তৈরি করছে। সব মিলিয়ে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এক বছর যে সময়ের মধ্যে বিশ্বকে ঠেলে দিয়েছে, তা মোটেও স্বস্তির নয়।
সবচেয়ে বড় কথা ৩৬ বছরের পুরনো ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি থেকে আমেরিকা-রাশিয়ার এই সরে আসা এবং নতুন করে হুমকি-ধমকি সেই ঠাণ্ডা যুদ্ধের স্মৃতিকেই ফিরিয়ে আনছে। বিশ্বজুড়ে দুই বৃহৎ শক্তির, অর্থাৎ আমেরিকা ও রাশিয়ার অস্ত্র প্রতিযোগিতায় রাশ টানতে বিশ্বজনমতের চাপে ১৯৮৭ সালে সম্পাদিত এই চুক্তিতে (আইএনএফ) ক্ষুদ্র ও মাঝারি পাল্লার (৫০০ কিলোমিটার থেকে ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার) সব পরমাণু অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্র নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর চার বছরের মধ্যে আমেরিকা ও রাশিয়া ২ হাজার ৭০০ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করে ফেলেছিল। সারা বিশ্বে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় লাগাম টানতে এই চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও কয়েক বছর ধরে পৃথিবীজুড়েই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে।
পুতিনের নেতৃত্বে রাশিয়া ক্রমেই সমরসজ্জায় এগিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমের ওপর রাশিয়ার অগ্রগণ্যতা প্রতিষ্ঠা করার একটা প্রচেষ্টা রাশিয়ার মধ্যে প্রবল। বিশেষ করে ট্যাকটিক্যাল নিউক্লিয়ার অস্ত্রের ক্ষেত্রে রাশিয়া পশ্চিমা শক্তির তুলনায় এগিয়ে থাকতে চায়। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পশ্চিমারা ভেবেছিল, রাশিয়া আর কোনোদিন কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারবে না বা পুনরুজ্জীবন ঘটবে না। কিন্তু সে ধারণা যে ভুল, সেটা এরই মধ্যে পুতিন প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন।
পুতিন মনে করেন, ন্যাটোর প্রচলিত অস্ত্রশক্তির কাছে তার দেশের পিছিয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতিতে যে কোনো হামলার সম্ভাব্য প্রত্যুত্তর হতে পারে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের উৎপাদন বাড়ানো। এর ফলে কেউ তার দেশের ওপর পরিকল্পিত কোনো হামলা পরিচালনার সাহস পাবে না।
বিষয়টি সম্পর্কে আমেরিকানরাও ওয়াকিবহাল। তাই তো রাশিয়ার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে আমেরিকাও অস্ত্র তৈরিতে, বিশেষ করে পারমাণবিক অস্ত্র উন্নত করে চলেছে। রাশিয়া ও আমেরিকা উভয় দেশই অত্যাধুনিক সব পারমাণবিক অস্ত্র ক্রমাগত শক্তিশালী করে চলেছে এবং এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগও বাড়িয়েছে। নিজ নিজ দেশের নিরাপত্তার নামে রাশিয়া ও আমেরিকা এখন গভীর সামরিক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। যদিও এটা নিরাপত্তা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনো কাজেই আসবে না। বরং এতে উভয় পক্ষের সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বৃদ্ধি পাবে। সবচেয়ে আশঙ্কার ব্যাপার হচ্ছে, বর্তমানে রাশিয়া ও আমেরিকা দুই দেশেই দুজন একরোখা-অপরিণামদর্শী যুদ্ধবাজ ব্যক্তি ক্ষমতায় রয়েছেন। বিশ্বশান্তির পথে না হেঁটে যারা উল্টোপথে চলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন! এই দুই ব্যক্তির খেয়ালি আচরণ মানবজাতির জন্য যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্যোগ বয়ে আনতে পারে।
সন্দেহ নেই, ইউক্রেনকে ঘিরে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাদানুবাদ ফের ঠাণ্ডা মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে যাচ্ছে। পরমাণু অস্ত্রের প্রতিযোগিতা থেকে এখন দুই রাষ্ট্রকে বিরত করবে কে বা কারা? এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজন হচ্ছে, যুদ্ধের বিরুদ্ধে নতুন করে বিশ্বে জোরদার শান্তি আন্দোলন গড়ে তোলা। তা না হলে পরমাণু শক্তিধর দুটি দেশের নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বড় যুদ্ধের বিপদ ডেকে আনবে! আবার আমরা ফিরে যাব সেই স্নায়ুযুদ্ধের যুগে!
ইউক্রেনকে ঘিরে দুই পরাশক্তির যে যুদ্ধ, তা সহসাই মিটবে বলে মনে হচ্ছে না। আমেরিকা আর রাশিয়া, দুটো দেশেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২৪ সালে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, তার আগে হয়তো এই প্রাণক্ষয়ী, অর্থক্ষয়ী সংঘাত শেষ হবে না। মানবজাতির জন্য যা চরম দুঃসংবাদ!
লেখক: লেখক ও কলামিস্ট
সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দেশে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দেড়শোর ওপর। এগুলোর বেশিরভাগেই প্রতি বছর বা এক বছর পরপর সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। সমাবর্তনে অংশ নিতে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দীর্ঘদিন ধরে ‘নিবন্ধন ফি’ নামে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক ধরনের ব্যবসা চালু রয়েছে। স্নাতক, স্নাতকোত্তর শেষ করে একজন শিক্ষার্থী যখন চাকরির আবেদনে ব্যস্ত ঠিক তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আনুষ্ঠানিক সনদ দেওয়ার নাম করে হাজার হাজার টাকা গ্র্যাজুয়েটদের কাছ থেকে আদায়ের ‘প্রথা’ চালু করে রেখেছে। নিবন্ধন ফি জোগাড় করতে না পেরে অনেক শিক্ষার্থীই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সেরা স্বাদ নেওয়া থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে। কিন্তু অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আদায় করা টাকার অর্ধেকও খরচ করে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
দেশ রূপান্তরে ‘উচ্ছ্বাসের আড়ালে অসন্তোষ’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শনিবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সমাবর্তন। সমাবর্তন উপলক্ষে ডিগ্রিপ্রাপ্তদের হাস্যোজ্জ্বল পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে গোটা ক্যাম্পাস। তবে শিক্ষার্থীদের এই উচ্ছ্বাসের মধ্যেই সমাবর্তনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রয়েছে অসন্তোষ। নিবন্ধন করতে জটিলতা থেকে শুরু করে খাবারের মেন্যু ও সমাবর্তনের লোগো নিয়ে বিতর্ক উঠেছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এবারের সমাবর্তনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর একসঙ্গে ৪ হাজার টাকা ফি ধরা হয়। স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে পৃথকভাবে ২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে নিবন্ধন করা গেছে। আর এমফিল ডিগ্রির শিক্ষার্থীরা ৬ হাজার, পিএইচডি ৭ হাজার এবং সাপ্তাহিক কোর্সের সনদধারীরা ৮ হাজার টাকা দিয়ে নিবন্ধন করেছেন। ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সবশেষ সমাবর্তনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য নিবন্ধন ফি ছিল পৃথকভাবে ১ হাজার ৫০০ টাকা। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর একত্রে ছিল ২ হাজার ৫০০, এমফিল ডিগ্রি ২ হাজার ৫০০ এবং পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের নিবন্ধন ফি ছিল ৩ হাজার টাকা। এবারের নিবন্ধন ফি অতিরিক্ত জানিয়ে তা কমানোর দাবিতে মানববন্ধন ও উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাপ্তাহিক কোর্সের শিক্ষার্থীদের সমাবর্তন না দেওয়ার দাবিও ছিল তাদের। তবে সেসব দাবি মানেনি প্রশাসন।
অংশগ্রহণকারীদের খাবার হিসেবে দেওয়া হবে ছোট একটি বান পিৎজা, এক সøাইস কেক, সন্দেশ, চিকেন ফ্রাই, আপেল এবং পানি। ৩১১ টাকা মূল্যের এ খাবারের জন্য প্যাকেটের পেছনেই ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫ টাকা। যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা। ১৮ হাজার জনের এ খাবারে মোট বরাদ্দ ধরা হয়েছে প্রায় ৫৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া বিনা পারিশ্রমিকে লোগো তৈরির বিনিময়ে চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. মহসিনকে সমাবর্তনের প্যান্ডেলের আওতায় ডিজাইনের জন্য ১১ লাখ টাকার কাজ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ লোগোর মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। এবারের সমাবর্তনে ১৫ হাজার ২২৩ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে নিয়মিত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্নকারী ১১ হাজার ৪৪৬, উইকেন্ড প্রোগ্রামের ৩ হাজার ৪৬২, এমফিল ডিগ্রির ৩৪ ও পিএইচডি সম্পন্নকারী ২৮১ জন। সমাবর্তনে ১২ কোটি টাকা বাজেট ধরা হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অর্থায়ন করবে ১ কোটি টাকা।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নামমাত্র ফি দিয়ে পড়ালেখা করছে। চার বছরের স্নাতক কোর্সে একজন শিক্ষার্থীর যে টাকা টিউশন ফি দিতে হয়, দেখা যায় এর চেয়ে বেশি তাকে সমাবর্তন ফি দিতে হচ্ছে। রাষ্ট্র যদি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নামমাত্র ফি নিয়ে বছরে লাখ টাকার বেশি ব্যয় করতে পারে, তাহলে সমাবর্তনের আয়োজনও রাষ্ট্রেরই করা উচিত। তাহলে সমাবর্তনের নামে বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে। উন্নত দেশগুলোতে সমাবর্তনে অংশ নিতে শিক্ষার্থীদের কোনো ফি দিতে হয় না। এমনকি সনদ নেওয়ার জন্যও তাদের শিক্ষার্থীদের পয়সা খরচ করা লাগে না। বরং এই সব সমাবর্তনে অংশ নিতে গ্র্যাজুয়েটদের বাবা-মাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু আমাদের দেশে দেখা যাচ্ছে অনেক শিক্ষার্থীকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের চাপিয়ে দেওয়া এই নিবন্ধন ফি জোগাড় করতে না পারায় বন্ধুদের নিয়ে একসঙ্গে সনদ হাতে ফ্রেমবন্দি হওয়া থেকে বিরত থাকতে হচ্ছে। একজন শিক্ষার্থীর জীবনে সবচেয়ে আনন্দময় দিন হলো এই সমাবর্তন। সবাইকেই আনুষ্ঠানিক সনদ দেওয়ার রীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য। উচিত হবে, গ্র্যাজুয়েটদের এই সব সনদ দেওয়ার অনুষ্ঠানকে বাণিজ্যিকীকরণ না করা ও লুটপাটের আয়োজন থেকে বিরত থাকা। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক আয়ের বাড়তি খাত হিসেবে না দেখে সমাবর্তনকে একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের শেষ অনুষ্ঠানটি আনন্দময় করার সুযোগ দেবে।
আগের ইনিংসের মতোই ব্যর্থ উসমান খাজা। পারেননি ডেভিড ওয়ার্নারও। প্রথম ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ানও ফিরে গেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ে তাই খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই অস্ট্রেলিয়া। তবুও তৃতীয় দিন শেষে এগিয়ে আছে তারা।
ওভালে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ২৯৬ রানে আটকে দেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট হারিয়ে ১২৩ রান করে অসিরা। এগিয়ে আছে ২৯৬ রানে।
দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিংয়ের শুরুটা ভালো করেছে ভারত। অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরেছে তারা।
দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজা ফেরেন ২৪ রানের মধ্যেই। মারনাস লাবুশান ও স্টিভেন স্মিথের ৬২ রানের জুটি ভাঙেন রবীন্দ্র জাদেজা, পরে ট্রাভিস হেডকেও ফেরান এই স্পিনার। টেস্ট ক্যারিয়ারে অষ্টমবারের মতো স্মিথকে আউট করেছেন জাদেজা।
তৃতীয় দিন শেষে মারনাস লাবুশানের সঙ্গে অপরাজিত আছেন ক্যামেরুন গ্রিন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: অস্ট্রেলিয়া: ৪৬৯ ও ৪৪ ওভারে ১২৩/৪ (লাবুশেন ৪১*, স্মিথ ৩৪; জাদেজা ২/২৫, উমেশ ১/২১)ভারত ১ম ইনিংস: ৬৯.৪ ওভারে ২৯৬ (রাহানে ৮৯, শার্দূল ৫১, জাদেজা ৪৮; কামিন্স ৩/৮৩, গ্রিন ২/৪৪, বোল্যান্ড ২/৫৯)।
আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিজের পালন করা সাড়ে ২১ মণ ওজনের গরু উপহার দিতে চেয়েছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার চরকাউনা গ্রামের সাধারণ কৃষক বুলবুল আহমেদ ও তার স্ত্রী ইসরাত জাহান। তাদের এই ভালোবাসার প্রতি সম্মান জানিয়ে উপহারের এই গরু গ্রহণে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
শুক্রবার (৯ জুন) সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী উপহারের গরু গ্রহণে সম্মতি দেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী খুশি হয়েছেন এবং এই বিরল ভালোবাসার জন্য বুলবুল আহমেদ ও তার স্ত্রীকে ধন্যবাদ দেন।
হাসান জাহিদ তুষার জানান, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা এই গরু বুলবুল আহমেদের নিজ বাড়িতেই থাকবে এবং সেখানেই কোরবানি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোরবানির গরুর মাংস স্থানীয় দরিদ্র-অসহায় জনগণের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
গরুটি ক্রস ব্রাহমা প্রজাতির। এতে আনুমানিক ৮০০ কেজি মাংস হতে পারে বলে জানিয়েছেন বুলবুল আহমেদ। বুলবুল জানান, ২০২০ সালে নেত্রকোনা জেলা থেকে আড়াই লাখ টাকায় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়ার জন্য তিনি এই গরু কেনেন। গরু কেনার পর কিশোরগঞ্জের বিখ্যাত পাগলা মসজিদে পাঁচ হাজার টাকা মানতও করছিলেন তিনি যেন তার গরুটি সুস্থ থাকে।
তিনি আরও জানান, তিনি ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে মাঠকর্মী হিসেবে কর্মরত তার স্ত্রী ইসরাত জাহান আওয়ামী লীগ সরকারের একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্প থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য এই গরু কেনেন। তারা গত তিন বছর গরুটির নিবিড় পরিচর্যা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেগ ও ভালবাসা থেকে তারা এই গরু ক্রয় ও লালন পালন করেছেন বলে জানান।
উপহার হিসেবে তার গরুটি গ্রহণ করার সম্মতি দেওয়ায় বুলবুল আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। বুলবুল আহমেদ কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
বেশ ক'দিন তীব্র তাপদাহের পর গতকাল রাজধানী ঢাকাজুড়ে হয়েছে স্বস্তির বৃষ্টি। এতে তাপমাত্রা এসেছে কমে, পরিচ্ছন্ন হয়েছে পরিবেশ। তবুও আজ সকালে বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষ পাঁচে আছে ঢাকা। বৃষ্টিধোয়া রাজধানী ঢাকা আজ সকাল সাড়ে ৮টায় ১৫৫ স্কোর নিয়ে দূষণের তালিকায় চতুর্থ।
আজ শনিবার (১০ জুন) সকাল সাড়ে ৮টায় বায়ুমানের সূচক (একিউআই) অনুযায়ী ঢাকায় বাতাসের স্কোর ছিল ১৫৫। বায়ুর মান বিচারে এ মাত্রাকে 'অস্বাস্থ্যকর' বলা হয়। একই সময়ে একিউআই স্কোর ১৬৮ নিয়ে প্রথম অবস্থানে আছে পাকিস্তানের লাহোর। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভিয়েতনামের হ্যানয়, স্কোর ১৫৬। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইসরায়েলের তেলআবিব। আর পঞ্চম স্থানে আছে চীনের শেংডু, স্কোর ১৪৯।
একইসময়ে ১৩৮ স্কোর নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহেনেসবার্গ। ১৩২ স্কোর নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। অষ্টম নেপালের কাঠমান্ডু, স্কোর ১২৭। ১১৮ স্কোর নিয়ে নবম স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েট আর ১১৭ স্কোর নিয়ে দশম সৌদি আরবের রিয়াদ।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরের এ তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই স্কোর একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে কি না, তা জানায়।
তথ্যমতে, একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত 'অস্বাস্থ্যকর' হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকলে 'খুব অস্বাস্থ্যকর' এবং স্কোর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকলে 'ঝুঁকিপূর্ণ' বলে বিবেচিত হয়।
ষাটের দশকে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের আগুন তরুণদের বুকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠান ক্ষেত্র তৈরি করতে গড়ে তুলেছিলেন ‘নিউক্লিয়াস’। স্বাধীনতার পর তিনি সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের বাঁধভাঙা ঢেউ তুলেছিলেন। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে সবকিছু থেকে দূরে আড়ালে চলে যান। রাজনীতিতে তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল রহস্য। সেই রহস্য নায়ক সিরাজুল আলম খান চলে গেলেন চিররহস্যের দেশে।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এ সংগঠক গতকাল শুক্রবার দুপুর আড়াইটার কিছু পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক।
সিরাজুল আলম খানের ব্যক্তিগত সহকারী রুবেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অসুস্থ অবস্থায় তাকে রাজধানীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে প্রথমে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত ১ জুন নেওয়া হয় আইসিইউতে। এরপর গত বৃহস্পতিবার রাতে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী ছিলেন। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সিরাজুল আলম খান।
১৯৬১ সালে ছাত্রলীগের সহসাধারণ সম্পাদক হন সিরাজুল আলম খান। ১৯৬৩ সালে তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করেন।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান (মান্না), জনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক (নুর)।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তার আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি। শোক জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন সংগঠন।
প্রয়াত সিরাজুল আলম খানের ঘনিষ্ঠ ও নাট্য পরিচালক সাকিল সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, সিরাজুল আলম খানের মরদেহ বিকেলে হাসপাতাল থেকে মোহাম্মদপুরের আল-মারকাজুলে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গোসল শেষে রাতে শমরিতা হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে। আজ শনিবার সকাল ১০টায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে জানাজা শেষে নোয়াখালীতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে পুনরায় জানাজা শেষে বেগমগঞ্জের আলীপুরে মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে রাজনীতির এ নায়ককে।
১৯৪১ সালে জন্ম নেওয়া এ কিংবদন্তি রাজনীতিককে বিগত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত হাসপাতালে যেতে হয়েছে। দেশে এবং বিদেশে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি।
জন্মের কয়েক বছর পর পিতার চাকরির সুবাদে সিরাজুল আলম খুলনায় চলে যান। ১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ১৯৫৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। অনার্স ডিগ্রি অর্জনের পর কনভোকেশন মুভমেন্টে অংশ নেওয়ার কারণে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় ১৯৬২ ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার ‘নিউক্লিয়াস’ গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এ ছাত্রনেতারা। ছয় দফার সমর্থনে জনমত গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন সিরাজুল আলম খান। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন তিনি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। এরপর ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খানের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ প্রতিষ্ঠা হয়। তিনি কখনো নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের পরামর্শ দিয়ে তাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে খ্যাতি পান। অনুসারী সবাই তাকে ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকতেন।
মূলত নব্বইয়ের দশকে সিরাজুল আলম খান কখনো জনসমক্ষে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান। নব্বই পর্যন্ত একাধিকবার জেল-জুলুম খেটেছেন তিনি।
দাদা ভাইয়ের মৃত্যুত গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চেয়ারপারসন অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা, গণফোরাম একাংশে সভাপতি মোস্তফা মোহসিন মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।
ব্রাজিলের সান্তোস থেকে বার্সেলোনায় খেলতে এসেছিলেন নেইমার। তখন কাতালানদের মধ্যমণি আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। দুই দেশের রাজনৈতিক বিরোধ চরমে। তবু সেসবকে পাশ কাটিয়ে দুজনে হয়ে ওঠেন বন্ধু।
ক্যাম্প ন্যু ছেড়ে নেইমার পাড়ি জমিয়েছিলেন প্যারিসে। তবুও বন্ধুত্ব ছিল অটুট। তার টানেই মেসিকে যখন বার্সা ছেড়ে দেয়, তখন এই ব্রাজিলিয়ান পার্ক দে প্রিন্সেসে ভেড়াতে মধ্যস্ততা করেন।
পিএসজির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে মেসির। কিংবদন্তি এই ফুটবলার এবার ফুটবল ছেড়ে যাচ্ছেন সকার খেলতে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ইন্টার মায়ামির হয়ে মাঠ মাতাবেন তিনি।
মেসি নিজে সেই ঘোষণা দেওয়ার আগ পর্যন্ত তার দলবদল নিয়ে চলছিল নানা নাটকীয়তা। সেই সব রহস্যময় দিনগুলোতে নেইমার কি জানতেন মেসির ঠিকানা হতে চলেছে কোনটা?
এক সাক্ষাৎকারে নেইমার বলেছেন, 'আমি জানতাম মেসি মায়ামিতে যাবে (হাসি)।'
তারপর নেইমার যোগ করেন, 'মেসি আমার সেরা বন্ধুদের একজন। সে আমাকে দারুণ সব মুহূর্ত উপহার দিয়েছে। আমি তার সঙ্গে খেলার সুযোগ পেয়েছি এটা আমার সৌভাগ্য। আমি জানতাম সে মায়ামিতে যাচ্ছে, এ নিয়ে আমার সঙ্গে তার কথাও হয়েছে। শহর ও জীবনযাত্রার কারণে মেসি সেখানে দারুণ সময় কাটাবে, এটা তাকে বলেছিলাম। আমি নিশ্চিত তার পদচারণায় দেশটির লিগে আসবে আমুল পরিবর্তন।'
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর (৪১) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত্যুর আগে তিনি চিরকুট লিখে গেছেন। তবে সেখানে কি লেখা আছে তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মহাখালীর আমতলী এলাকার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়ায় মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম। পুলিশের ধারণা, অর্পিতা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে। পরে স্বজনের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করতেন অর্পিতা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মা ফাতেমা কবিরের মৃত্যুর কারণে তিনি দেশে আসেন। এরপর দেশেই ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তার লণ্ডনে ফেরার কথা ছিল। মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া একটি চিরকুটে (সুইসাইড নোট) তিনি আত্মহত্যার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
মেয়ের মৃত্যুতে শোকে বিবহবল লেখক–কলামিস্ট শাহরিয়ার কবির গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। তবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে অর্পিতাকে তাঁর মায়ের কবরে দাফন করা হয়েছে। রবিবার তাঁর কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’