
বিষয়টা কিছু মানুষের মজ্জাগত। ভয়াবহ আত্মকেন্দ্রিক এসব মানুষ, অন্যের কথা ভাবেন না। মনে করেন, নিজের উন্নতি মানেই দেশের উন্নতি। তাদের পদযুগল সামনে হাঁটে না। কিন্তু চিন্তার পদে হয়, উল্লম্ফন। যে কারণে, সেই মানুষ হরিণের মতো পাতার ভেতরে মুখ ঢুকিয়ে বসে থাকেন। ভাবেন, কেউ তাকে দেখে না। অথচ চোখ অন্ধকারে রেখে, উদোম শরীর যে বাইরে রেখেছেন সেই খেয়াল নেই। শুধু তা-ই না। মনে করেন, তার অপকীর্তির কথা কেউ জানবে না। এদিকে, বিষয়টা যে শৃঙ্খলা, আইন ও নীতিবিরুদ্ধ সেটিও ভুলে যান। সাধারণ মানুষ যখন অর্বাচীনের মতো কাজ করে, মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু একজন শিক্ষক যখন নীতিবিরুদ্ধ কাজে নিজেকে সচেতনভাবে সম্পৃক্ত করেন, তখন বিস্মিত হতে হয়। না হলে কি আর আইননীতির তোয়াক্কা না করে নিজের উন্নতিতে নিজে সম্পৃক্ত হন?
রবিবার দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায় প্রকাশিত ‘নিজেরাই পদোন্নতি দিচ্ছেন নিজেদের’ শিরোনামের সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, শিক্ষক নিয়োগ-সংক্রান্ত বিধি ভেঙে দুই শিক্ষক নেতাকে সহযোগী অধ্যাপক (গ্রেড-৪) বানাতে নানা আয়োজন করছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) কর্র্তৃপক্ষ। শিক্ষকরা হলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের প্রচার, প্রকাশনা ও দপ্তর সম্পাদক সাব্বীর আহমেদ চৌধুরী এবং একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বেরোবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ। তারা দুজনই আবার নিয়োগ-সংক্রান্ত প্ল্যানিং কমিটির সদস্য। তারা নিজেরাই নিজেদের যোগ্য ঘোষণা করেছেন।
গতকাল রাতে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদ কথা বলতে রাজি হননি। জনসংযোগ উপপরিচালক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিধি ভেঙে প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য ডাকা হয়েছে কি না, আমার জানা নেই। প্ল্যানিং কমিটির সদস্যরা ভালো বলতে পারবেন।’ সংবাদে আরও জানা যায়, জানা গেছে, লোকপ্রশাসন বিভাগের দুটি সহযোগী অধ্যাপকের শূন্যপদে চারজন প্রার্থী আবেদন করেছেন। তাদের তিনজন একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। তারা হলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মো. জুবায়ের ইবনে তাহের, মো. আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ এবং সাব্বীর আহমেদ চৌধুরী। বেরোবির শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী তাদের কেউই সহযোগী অধ্যাপকের শূন্যপদে আবেদনের যোগ্য নন। তবে অভ্যন্তরীণ শিক্ষক পদ আপগ্রেডেশন নীতিমালা অনুযায়ী শুধু জুবায়ের ইবনে তাহের সহযোগী অধ্যাপক পদে আবেদন করার যোগ্যতা অর্জন করেছেন।
আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদের সর্বসাকল্যে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা আট বছর এক মাস ৯ দিন এবং সাব্বীর আহমেদ চৌধুরীর চাকরিকাল আট বছর এক মাস আট দিন। তাদের কারোরই পিএইচডি বা এমফিল ডিগ্রি না থাকায় বর্তমান অভিজ্ঞতায় তারা সহযোগী অধ্যাপক পদে আবেদনের যোগ্য হননি। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, শূন্যপদে আবেদন করা অপর প্রার্থী ড. মো. রুহুল আমিন। তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তার সক্রিয় শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ১২ বছরের বেশি। ২০টি গবেষণা প্রবন্ধ রয়েছে তার। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্থাপন শাখা থেকে জানা গেছে, প্রার্থীদের মধ্যে যে তিনজন বেরোবির তারা প্ল্যানিং কমিটিরও সদস্য। তারা আবেদনকারী চার প্রার্থীকেই সহযোগী অধ্যাপকের শূন্যপদে যোগ্য মনোনীত করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, শর্ত শিথিল করে সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগের ব্যাপারটি জানেন ভিসি অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ।
প্রকাশিত সংবাদে আরও বলা হয়েছে যোগ্যতা অর্জনের আগেই বিধি ভেঙে দুজন জুনিয়র শিক্ষককে সহযোগী অধ্যাপক করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক তাদের জ্যেষ্ঠতা হারাবেন। অ্যাকাডেমিক ডিগ্রি শিথিল করে শিক্ষক নিয়োগের নজির বাংলাদেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। এমন ঘটনা আগেও হয়েছে। সেই অসততা, দুর্নীতি ও চৌর্যবৃত্তির সঠিক বিচার হলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতো না। পদোন্নতির বিরুদ্ধে কথা বলার সুযোগ নেই। যোগ্য মানুষ যোগ্যতম স্থানে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অস্বাভাবিক বিষয় হয় তখনই, যখন যোগ্যতার তোয়াক্কা না করে জুনিয়র হয়ে যান সিনিয়র। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ন্যক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দরকার।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে, ২৫ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় ষষ্ঠ সমাবর্তন। বয়সের বিচারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় তার যৌবন পেরিয়ে পূর্ণবয়স্ক, যার বয়স বাংলাদেশের বয়সের সমান। অন্যদিকে, যশোর বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বয়সের দিক থেকে একেবারে নবীন। এ বছর চতুর্থ সমাবর্তনে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডিপর্যায়ে ১ হাজার ৮৩৪ জন গ্র্যাজুয়েটকে সনদ দিয়ে, যার মধ্য থেকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ৫৭ জন স্বর্ণপদক ও অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত হন। এর মধ্যে ২২ জন গ্র্যাজুয়েট চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক, ২৬ জন ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড এবং ৯ জন ডিন অ্যাওয়ার্ড পান (তথ্যসূত্র :themailbd.com, ফেব্রুয়ারি, ১৮, ২০২৩)। অন্যদিকে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ষষ্ঠ সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করেন ১৫ হাজার ২১৯ জন শিক্ষার্থী, যার মধ্য থেকে ১৬ জনকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে স্বর্ণপদক দেওয়া হয় (তথ্যসূত্র : ঢাকা পোস্ট, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩)।
দেখা যায় যে, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬ বছরে চারবার সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের সমান বয়সী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ৫২ বছরে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে ছয়বার। অন্যদিকে শতবর্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০২২ সালে ৫৩তম সমাবর্তনের আয়োজন করে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিতভাবে সমাবর্তন আয়োজনে ব্যর্থ। অথচ প্রতি বছরই ছাত্র ভর্তি করার সময় তাদের শিক্ষাজীবন শেষে সনদ প্রদানের আনুষ্ঠানিকতার বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত ছিল। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে ছাত্র ভর্তি করার সময় হলগুলোতে কী সংখ্যক আসন শূন্য আছে, বিভাগগুলোর কী পরিমাণ ধারণক্ষমতা আছে ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়। প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ছাত্রকল্যাণ ফান্ড এবং বিভাগ ছাত্র সংসদে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা দেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষাদান এবং পরীক্ষা শেষে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে সনদ প্রদানের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয় না। আমি অনুমান করতে পারছি এটি প্রায় বাংলাদেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল চিত্র। অথচ, সমাবর্তন তথা শিক্ষাজীবন শেষে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর সনদপ্রাপ্তির আনুষ্ঠানিকতা ছাত্র মাত্রেই অধিকার। যেকোনো ট্রেনিং প্রোগ্রাম শেষেও একটি আনুষ্ঠানিক সনদ প্রদান অনুষ্ঠান এর আয়োজন করা হয়। অথচ কোটি কোটি টাকার বাজেটের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে সময় লাগে কয়েক বছর। অনেকেই এ সময়ের মধ্যে কর্মজীবনেও কয়েক বছর পার করে দেন, ফলে সনদপ্রাপ্তির আনন্দটা সময়মতো উপভোগ করতে না পেরে সে যেন ক্রমেই ম্লান হতে থাকে।
অনেকে যুক্তি দিয়ে থাকেন যে সমাবর্তন আয়োজন একটি ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। চার পাঁচ বছরের দীর্ঘ বিরতিতে সমাবর্তন আয়োজন একটি ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া বৈকি। আর এ ব্যয়ের একটি বড় অংশ বরাদ্দ করা হয় ১০-১৫ হাজার গ্র্যাজুয়েটের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন প্যান্ডেল তৈরি করতে। পত্রপত্রিকা মারফত জানতে পারলাম, এ বছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ষষ্ঠ সমাবর্তনের প্যান্ডেল বাবদ খরচ হয়েছে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয় এবং গ্র্যাজুয়েট উভয়ের জন্যই এটা গলায় বিঁধা কাঁটার মতো। প্যান্ডেল ছাড়া সমাবর্তন আয়োজন সম্ভব নয়, আবার এত টাকার জোগান দেওয়াও কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ফলে, স্বাভাবিকভাবেই এই অর্থ জোগানের চাপ গিয়ে পড়েছে রেজিস্ট্রেশন ফির ওপর।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুব সহজেই এ সমস্যার সমাধান করতে পারে। প্রতি বছর প্রথম বর্ষে ছাত্র ভর্তি করার সময় বিভাগের ছাত্রকল্যাণ তহবিল, বিভাগের জন্য বরাদ্দ করা ফান্ডের মতো সমাবর্তন তথা শিক্ষাজীবন শেষে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে সনদ প্রদানের বিষয়টি মাথায় রেখে একটা অর্থ বরাদ্দ দিতে পারে। এটা অন্তর্ভুক্ত হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বাজেটে কিংবা শিক্ষা শেষে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন ফির মাধ্যমে, যেমনটি এখন করা হচ্ছে। একইভাবে অনুষ্ঠান আয়োজন হতে পারে অডিটোরিয়াম বা কোনো হলরুমে। এতে করে প্রতি বছর অল্পসংখ্যক গ্র্যাজুয়েটের জন্য আয়োজন করতে হবে বলে সমাবর্তন আয়োজন করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষকে বেগ পেতে হবে না। আবার অন্যদিকে, একটা বিশাল অঙ্কের অর্থ অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে।
সমাবর্তন গ্র্যাজুয়েটদের জন্য শিক্ষাজীবন শেষে কর্মজীবনে প্রবেশের এক মাইলফলক। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে গ্র্যাজুয়েটদের সামনে এমন একজন ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়, যার জীবন থেকে গ্র্যাজুয়েটরা একটি সুন্দর এবং বাস্তবধর্মী দিকনির্দেশনা পাবেন। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে একবার সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টেকনোলজির জগতের অন্যতম পুরোধা অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস, যিনি তার বক্তব্যে তার জীবনের তিনটি ঘটনা বর্ণনা করে গ্র্যাজুয়েটদের ভবিষ্যতে কী করণীয় সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, যা বিশ্বের কয়েকটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে বিশেষ সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দিতে পারে। এতে সদ্য শিক্ষাজীবন সমাপ্তকারী গ্র্যাজুয়েটরা নিজেরা এ ধরনের সম্মানসূচক ডিগ্রি অর্জনের জন্য অনুপ্রাণিত হবেন, কর্মজীবনে সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবেন, সমাজ এবং মানবতার কল্যাণে ভূমিকা রাখবেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই আমরা লক্ষ করি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জাতীয়তার গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারেনি। কিংবা সমাবর্তন বক্তা নির্বাচন করার ক্ষেত্রে নিজেদের প্রচলিত কনভেনশনের বাইরে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। ফলে সমাবর্তন বক্তব্য গ্র্যাজুয়েটদের জন্য মূল আকর্ষণ হয়ে উঠতে পারে না।
সমাবর্তনের অন্যতম এক আকর্ষণ স্বর্ণপদক প্রদান। স্বর্ণপদক একদিকে যেমন একজন গ্র্যাজুয়েটের জন্য তার কঠোর পরিশ্রমের স্বীকৃতি, অন্যদিকে তেমনি এটি বর্তমান শিক্ষার্থীদের জন্য এক ধরনের প্রেরণা। তাই স্বর্ণপদক প্রদানের ক্ষেত্র এবং পরিধি বাড়ানো বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিসির একটা অংশ হওয়া উচিত। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে স্বর্ণপদক প্রদান করা সম্ভব হয় না, কিংবা কয়েক বছরের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে হয়তো একজন বা দুজন গ্র্যাজুয়েটকে ফলাফলের ভিত্তিতে নির্বাচন করা হয়। যেমন : এ বছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মোফাসসিল উদ্দিন আহমেদ স্বর্ণপদক ১১ জন গ্র্যাজুয়েটের মধ্য থেকে ১ জনকে প্রদান করার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারণ স্বর্ণপদকের জন্য যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ আছে তাতে একজনকেই শুধু এই পদক দেওয়া যাবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই সংবাদ পড়ার পর খুবই মর্মাহত হয়েছি। মোফাসসিল উদ্দিন আহমেদ স্বর্ণপদকপ্রাপ্তির যে শর্ত তাতে এই ১১ জনের ফলাফলই সেই শর্ত পূরণ করে। কিন্তু অর্থ সংকুলান করতে না পারার কারণে অনেকেই তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটা বিশ্ববিদ্যালয় এবং গ্র্যাজুয়েট উভয়ের জন্যই বিব্রতকর বটে।
এখন কথা হচ্ছে, স্বর্ণপদকের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান আসবে কোথা থেকে? আমরা যদি একটু উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে তাকাই তাহলে সহজেই এ সমস্যার সমাধান খুঁজে পাব। একটি বিশ্ববিদ্যালয় একজন গ্র্যাজুয়েটের জন্য দ্বিতীয় আঁতুড়ঘর। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে গ্র্যাজুয়েটের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিত তার প্রতিটি গ্র্যাজুয়েটের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য লিপিবদ্ধ রাখা। এটা কঠিন কোনো কাজ নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইদের কাছে স্বর্ণপদকের ফান্ড গঠনের জন্য অনুরোধ করা যেতে পারে। আমি মাঝেমধ্যেই ইউনিভার্সিটি অব আলবার্টা থেকে ইমেইল পাই গ্র্যাজুয়েট দপাঠানো হয় যেখানে আমার পাঠানো ১০০ কিংবা ৫০ ডলার কী করে একজন মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি স্টুডেন্টের টিউশন ফি প্রদানে সহায়ক হতে পারে তার বর্ণনা থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একজন অ্যালামনাইয়ের সম্পর্ক যেন বিশ্ববিদ্যালয় দিবস কিংবা পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে আগমন, র্যালি, স্মৃতিচারণ ইত্যাদির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তার বিশালসংখ্যক অ্যালামনাইকে তার সামর্থ্য অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড গঠনের জন্য কাজে লাগাতে পারে।
আমাদের দেশে সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে বিশাল এক কর্মযজ্ঞ, সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয় যেন ব্যস্ত থাকে এই আয়োজনকে ঘিরে। এই প্র্যাকটিস থেকেও আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। সমাবর্তন গ্র্যাজুয়েটদের অনুষ্ঠান, এটির আয়োজন যেন বর্তমান শিক্ষার্থীদের শিক্ষা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমে কোনো প্রভাব না ফেলে সে বিষয়টিও বিবেচনা করা উচিত।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Email: [email protected]
১.
এই প্রজন্ম কতটা ইতিহাসের সত্যানুসন্ধানী সেটা বেশ ভালোভাবেই প্রতিনিয়ত টের পাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একজন শিক্ষক হিসেবে, যেমন শ্রেণিকক্ষে, তেমনি আনন্দময় সহশিক্ষার সৃজনশীল আয়োজন ‘মঙ্গল আসর’-এর পাঠচক্রের আলোচনাতেও। আমাদের বাংলার আনাচে-কানাচে, আসা-যাওয়ার পথের ধারে মহান মুক্তিযুদ্ধের নানান স্মৃতিক্ষেত্র রয়েছে, অথচ শিক্ষার্থীদের কাছে সেসব বিষয়ে জানতে চাইলে নিজেকেই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। আমাদের ভাসানটেক সরকারি কলেজে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে স্থাপিত হয়েছে স্বাধীনতার ইতিহাসভিত্তিক ম্যুরাল ‘বাংলাদেশের হৃদয় হতে’। কদিন আগে একাদশ শ্রেণির নবাগত শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে পৌরনীতি ও সুশাসন বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধের পাঠদানকালে আকস্মিক ভিজিলেন্সে উপস্থিত হন আমাদের কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহমুদা খাতুন। তিনি আমার পাঠদানের বিষয়ে জেনে নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে কলেজের উল্লেখযোগ্য শিক্ষণীয় স্থাপনার বিষয়ে প্রশ্ন করলে হাতে গোনা দু-একজন ছাড়া কেউই কিছু বলতে পারেনি। অথচ কলেজের প্রবেশ পথেই শহীদ মিনারের সঙ্গে ম্যুরালটি স্থাপিত। অনেকেই দৃষ্টিনন্দন ম্যুরালের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন কিন্তু মনোযোগ দিয়ে পড়েননি কিংবা পড়লেও মনে রাখতে পারেননি বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বিষয়বস্তু। যতদূর জানি, কলেজের মতন দেশের প্রতিটি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে জানি’ বিষয়ে বিশেষ পাঠ ও পরীক্ষা গ্রহণের নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এই প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মোবাইলসহ নানান তথ্যপ্রযুক্তির প্রতি যে পরিমাণ আগ্রহ ও মনোযোগ দেখি, সেই বিবেচনায় আত্মানুসন্ধানে দেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও মহান শহীদদের বিষয়ে জানার আকুতি আশাব্যঞ্জক নয় বলেই বেদনাহত হই। অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই এবং অনেক নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকই নিজেকে জানার গভীর প্রত্যয়ে স্বপ্নবান শিক্ষার্থীদের মনে স্বদেশপ্রেম, নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে সচেষ্ট থাকেন কিন্তু সেই প্রয়াস কতটুকু ফলপ্রসূ হয় তা শ্রেণিকক্ষের পাঠ অভিজ্ঞতায় নিজেকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। ২.
এত কথা বললাম একাত্তরের মহান শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের ওপর নির্মিত ফাখরুল আরেফিন খানের প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘অবিনশ্বর’-এর প্রিমিয়ার শো দেখতে দেখতে ভাবনার জালে জড়িয়ে পড়ে। মুক্তিযুদ্ধের সত্য তথ্য নিয়ে তৈরি কাওসার চৌধুরীর ‘বধ্যভূমিতে এক দিন’, জাহিদুল ইসলাম বিপ্লবের ‘ওমর ফারুকের মা’ কিংবা ফাখরুল আরেফিন খানেরই আরেকটি চলচ্চিত্র ‘জেকে ৭১’Ñ দেখার স্মৃতি মনে পড়ায়। দেশের প্রায় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই ডিজিটাল ক্লাসরুমের ব্যবস্থা আছে। সেই সুবিধা গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঠিক চেতনা জাগরণে নিয়মিত প্রদর্শনের নীতিমালা প্রণীত হলে এবং বাস্তবায়নে যথাযথ মনিটরিং হলে সবার মধ্যেই প্রকৃত চেতনার বিকাশ ঘটবে বলেই আমি মনে করি। ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে বিভ্রান্তির নানান সুযোগসমূহকে প্রতিহত করতে বিকল্প ইতিবাচক বাস্তবায়নযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্প আছে বলে মনে হয় না আমার।
৩.
ভাষার মাসে ভাষা আন্দোলনের রূপকার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের লড়াই ও সংগ্রামের ওপর নির্মিত প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘অবিনশ্বর’-এর প্রিমিয়ার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উদ্যোগে ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় প্রথম প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অনুদানে ফাখরুল আরেফিন খানের পরিচালনায় ও গড়াই ফিল্মসের প্রযোজনায় প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে। আমরা জানি, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত একজন বাঙালি আইনজীবী, সমাজকর্মী ও ভাষাসৈনিক। যিনি দেশভাগের আগে ভারতীয় উপমহাদেশের ভারত অংশে এবং পরে পূর্ব পাকিস্তানে রাজনীতিবিদ হিসেবে সক্রিয় ছিলেন। শহীদ বুদ্ধিজীবী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ব্রিটিশবিরোধী কার্যকলাপের জন্য তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হন। তিনি পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনের সব কার্যবিবরণী ইংরেজি ও উর্দুর পাশাপাশি বাংলায়ও রাখার দাবি উত্থাপন করেছিলেন। পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে ১৯৪৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সর্বপ্রথম বাংলা ভাষাকে আমাদের ‘রাষ্ট্রভাষা’ করার দাবি পাকিস্তান গণপরিষদে উত্থাপন করেন। ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ও তার দোসররা ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও তার ছোট ছেলে দিলীপকুমার দত্তকে ধরে নিয়ে যায় এবং ময়নামতী সেনানিবাসে নির্যাতন করে হত্যা করে। বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের অবদান চিরস্মরণীয়। এটি নির্মাণ প্রসঙ্গে পরিচালক ফাখরুল আরেফীন খান বলেছেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যে কজন মানুষকে নিয়ে আমরা সর্বময় আলোচনার মধ্যে থাকি, সেখানে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত অনুপস্থিত। তাকে আমরা কখনো আলোচনার মধ্যে আনি না। অথচ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল সূতিকাগার ভাষা আন্দোলনের প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি। আর সে কারণেই শেষ পর্যন্ত তাকে প্রাণ দিতে হয়েছিল ১৯৭১ সালে। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের জীবন ও কর্মের ওপর নির্মিতব্য প্রামাণ্যচিত্রের মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলা ভাষার এই মহান সৈনিককে তরুণ প্রজন্মের কাছে বাংলা ভাষার আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ও চেতনাকে পৌঁছে দেওয়া।
৪.
‘অবিনশ্বর’ প্রামাণ্যচিত্রের যে মূল উদ্দেশ্য বাংলা ভাষার যে মহান সৈনিককে তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা, সেটি যথার্থভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে বলে একজন দর্শক হিসেবে মনে হয়েছে। তবে মনে করি, শুধু বাছাই করা কিছু নির্দিষ্ট দর্শকের জন্য নয়, প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘অবিনশ্বর’-এর মতন আরও সমগোত্রীয় প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্রের বাছাই করা তালিকা প্রণয়ন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বছরব্যাপী প্রদর্শনীর নির্দেশনা দিতে পারে। তাহলেই সঠিক ইতিহাস চেতনায় সমৃদ্ধ নাগরিক গড়ে তোলার সরকারের প্রত্যাশিত নানান শুভ উদ্যোগ বিস্তৃত পরিসরে বাস্তবায়নের মাধ্যমে সোনার বাংলা গড়ে উঠবে বলেই গভীরভাবে আশাবাদী।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ ভাসানটেক সরকারি কলেজ, ঢাকা
যদি পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে, ধরা যাক দৈব কারণে উড়িষ্যা, ঝাড়খণ্ড, বিহার অথবা আসামের যুদ্ধ বেধে যায় তাহলে বিষয়টা কী দাঁড়াবে? বাহ্যত তা যুদ্ধই। হতে পারে তা ছোট অথবা বড়। তাতে বিবিধ রঙ চড়তে পারে বা চড়ানো হতে পারে। কেউ বলবেন, এটা এক ধরনের গৃহযুদ্ধ। কারণ তা একটি দেশের মধ্যে ঘটছে ভারতে। ধরা যাক আবারও দৈব কারণে রাজ্যগুলোর যেকোনো একটির সঙ্গে বাংলাদেশের যুদ্ধ বেধে গেল। তখনো সংঘাতটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলে সীমিত থাকলেও সেটি আর গৃহযুদ্ধ থাকবে না। সেটি হয়ে যাবে বাংলাদেশ-ভারত যুদ্ধ। গৃহযুদ্ধের সংজ্ঞায় থাকা আর সম্ভব নয়। তবে যত যাই হোক নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমাতেই থাকতে হচ্ছে।
উল্লিখিত অঞ্চলগুলো মহাভারতের বিবরণ অনুযায়ী যথাক্রমে অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, পুণ্ড্র এবং সুম্ম। তারা বালী রাজার দত্তক অথবা স্বীকৃত পুত্র। পাঁচ ভাই। বালী রাজা নিঃসন্তান ছিলেন। তার স্ত্রীর গর্ভে এক ঋষি, যার নাম গৌতম দীর্ঘতম, তার ঔরসে তারা জাত। সেকালে এবং তার বহু যুগ পরেও ক্ষেত্রজ সন্তানের প্রথা চালু ছিল। ফলে প্রথা অনুযায়ী তারা বালী রাজার সন্তান। মোটকথা তারা বা তাদের অধ্যুষিত অঞ্চল পরস্পর সম্পর্কিত। বালী ছিলেন মগধের রাজা। মগধ নিয়ে বিস্তারিত বলার প্রয়োজন নেই। অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, পুণ্ড্র ও সুম্মর প্রতিষ্ঠাতাদের ব্যাপারে এমন কথাই চালু আছে।
বাংলা (বঙ্গ), উড়িষ্যা (কলিঙ্গ), বিহার (অঙ্গ), ঝাড়খণ্ড (অঙ্গ বা মগধ), আসাম (প্রাগজ্যোতিষ) সবই একই সাংস্কৃতিক এবং মোটাদাগে নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীভুক্ত। জরাসন্ধ যখন ভারতবর্ষের সম্রাট ছিলেন তখনো ছিল; মৌর্য্যরা যখন সম্রাট ছিল তখনো ছিল, গুপ্তরা যখন ছিল তখনো মগধ ছিল ভারতের (ভারতবর্ষের) ক্ষমতার কেন্দ্র। সুলতানি আমলেও বাংলা (বৃহৎ বঙ্গ) বা বাঙ্গালাহ (তথা মগধ/বৃহৎ বঙ্গ) প্রায় স্বাধীন অস্তিত্ব ছিল। মুগল আমলে কেন্দ্র সরেছিল দিল্লিতে। আবার ব্রিটিশ আমলে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি নামে বাংলা অঞ্চল (বৃহৎ বঙ্গ/সাবেক মগধ) একসঙ্গেই ছিল, ভারতবর্ষ তথা ইন্ডিয়া কাঠামোর মধ্যে। পৌরাণিক বা মিথলজিক্যাল দৃষ্টিতে উল্লিখিত অঞ্চলগুলোর মধ্যে সশস্ত্র বিবাদকে যুদ্ধ বলা যাবে বটে কিন্তু তা যথার্থ হবে না। একে গৃহযুদ্ধ বললে তা হবে সংকীর্ণ সংজ্ঞা। একে বরং ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ বলা যেতে পারে। বলা উচিতও।
ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধকে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বলাই শ্রেয়। দুটি কারণে। এক, দুই দেশই সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত ছিল। দুই, ঐতিহাসিক বা প্রাগৈতিহাসিক সংযোগও আছে দুই দেশের মধ্যে। তারা জাতিগতভাবে সøাভ। পূর্বাঞ্চলীয় সøাভদের কেন্দ্র ছিল কিয়েভে বা কিয়িভে। এই স্ল্যাভদের বলা হতো কিয়েভান রাস বা কিয়িভের রুশ। কিয়েভ আসলে পূর্বী সøাভদের মক্কা। অতএব এটা যুদ্ধ হলেও ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ। এক সময় মগধের মৌর্য্যবংশীয় রাজা অশোক কলিঙ্গ আক্রমণ করে অনুরূপ ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধের সূচনা করেছিলেন। অশোক অবশ্য শোকে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। ভøাদিমির পুতিন বা ভলোদিমির জেলেনস্কি কী করবেন সেটা তাদের ব্যাপার। ইতিহাসে প্রায়শ এরকম ঘটনা ঘটে থাকে।
এটা যে কার্যত ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ সে কথা মনে রেখেছে রাশিয়া। যুদ্ধের শুরু থেকেই সে কথা ভেবে যত কম বেসামরিক নাগরিক নিহত হয় তার চেষ্টা করেছে তারা। রাশিয়া চেষ্টা করেছে, এখনো করছে; তবে তেমন কোনো চেষ্টা করেনি ইউক্রেন। মার্কিন ও ন্যাটো-বটিকা গিলেছে তারা। অথবা গেলানো হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ হিসেবে ইউক্রেনও নাৎসিবাদ এবং নাৎসিবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। এখন ইউক্রেনের নব্য নাৎসিদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে রাশিয়াকে। নব্য নাৎসিবাদের উত্থান হলো কী করে? যুক্তরাষ্ট্রের বদান্যতায় ময়দান অভ্যুত্থানের পর। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের ইতিহাসটা তাহলে মিথ্যা হয়ে যাচ্ছে! যুক্তরাষ্ট্র কোনোকালেই নাৎসিবাদবিরোধী ছিল না। হলোকাস্টের শিকার ইহুদি জনগোষ্ঠীর জায়নবাদীরাও যে নাৎসিবাদের বিরোধী ছিল না তা এখন স্পষ্ট। পোরোশেঙ্কো, জেলেনস্কিরাও যতটা না ইহুদি, ইউক্রেনযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে প্রমাণিত হয়েছে তারা অনেক বেশি জায়নবাদী। যুক্তরাষ্ট্র এবং জায়নবাদীরা কখনো মৌলবাদবিরোধীও ছিল না। থাকলে কন্ট্রা বিদ্রোহী, আল-কায়েদা, আইএস বা দায়েশ, তাহরির আল শাম, আল নুসরা প্রভৃতি জঙ্গি মৌলবাদী গোষ্ঠীর জন্ম তারা দিতে পারত না। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রীতির সম্পর্কের খেসারত দিচ্ছে ইউক্রেন। ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণ এবং ইউক্রেনে নব্য নাৎসি তৎপরতা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সারকথা।
যুদ্ধটা শুরু হয়েছিল ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। ২০২৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। যুদ্ধ ২০২২-এর মার্চেই শেষ হয়ে যেতে পারত। আলোচনা সেদিকেই যাচ্ছিল। তুরস্কের মধ্যস্থতায় চুক্তি প্রায় সম্পন্নের পর্যায়ে ছিল। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ওরফে বোজো অ্যাংলো-জায়নিস্ট ইমপেরিয়াল মন্ত্রণায় গত মার্চে কিয়েভে গিয়েছিলেন। আর তারপরই বুচাকাণ্ড ঘটল। ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার সমঝোতা-প্রয়াসও ভেস্তে গেল। ইউক্রেনের পিস ডেলিগেশনের প্রতিনিধি দানিস কিরেভকে ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থাই হাপিস করে দিল। ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাপতালি বেনেতও ইউক্রেনের শান্তি প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে চেয়েছিলেন। বোজোর কারণে পারলেন না। ভেস্তে গিয়েছে বোজোর প্রধানমন্ত্রিত্বও। ন্যাটো-মার্কিন হুকুমে তিনি শান্তিপ্রক্রিয়া নস্যাৎ করেছিলেন। ব্রিটিশ অধিপতিমানস বলে কথা! মার্কিন সাম্রাজ্য মানে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যই। এক সময় যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটিশের রায়ত বই তো আর কিছু ছিল না। ইউক্রেনে যুদ্ধটা এখনো চলছে ন্যাটোর নামে মার্কিন হস্তক্ষেপে। মাস দেড়েকের মধ্যে থেমে যেতে থাকা একটা যুদ্ধ এক বছর ধরে চলছে। এ ব্যাপারে সব কৃতিত্বই যুক্তরাষ্ট্রের। এখন যুদ্ধে ইউক্রেন আসলে কোনো পক্ষ নয়। এখন এক পক্ষে রাশিয়া, আরেক পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো। ইউক্রেন শিখণ্ডী মাত্র। জিতবে কে? যুক্তরাষ্ট্র-ন্যাটো নাকি রাশিয়া? হারবে কে? রাশিয়া নাকি যুক্তরাষ্ট্র-ন্যাটো? ইউক্রেন আলোচনায় নেই ইউক্রেন ‘গয়ং গছ’।
রসাতলে যেতে বসা ইউক্রেনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে যেতে হচ্ছে জেলেনস্কির সঙ্গে বোঝাপাড়া করে নয়, বরং প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বোঝাপড়া করে। যেখানে যাবেন সেখানে যাতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা না হয় বাইডেন তার নিশ্চয়তা চেয়েছেন রাশিয়ার কাছে, ইউক্রেনের কাছে নয়। কারণ তিনি জানেন ইউক্রেনের যুদ্ধজয়ের সামর্থ্য নেই, ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা ঠেকানোর মুরোদও নেই। ইউক্রেন এখন ‘মুরাদ টাকলা’।
জেলেনস্কি এখন উপায় নেই গোলাম হোসেন দশায়। বাইডেনের এই সফরের আগে তিনি দুই মাস বাঙ্কারে ছিলেন বলে খবরে প্রকাশ। তিনি ইউক্রেনে প্রকাশ্যে খুব বেশিক্ষণ থাকতে পারেন না। যতটুকু সময় থাকেন হয় ইউক্রেনের পশ্চিম সীমান্তের লিববে নতুবা পোল্যান্ডে থাকেন। এ অঞ্চলটি স্তালিন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউক্রেনের সঙ্গে জুড়েছিলেন। আগে ছিল জার্মানির দখলীকৃত অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ায়। যে যুক্তরাষ্ট্র বিশ^ব্যবস্থার মোড়ল তার তো নিজের সক্ষমতাতেই ইউক্রেনে যাওয়ার কথা ছিল। তাহলে কি তার জোর নেই? হবে হয়তো Biden dared not visit Kiev without asking Russia for security guarantees first-Foreign Ministry Spokeswoman Maria Zakharova noted that “the US leader’s visit was staged with drama, but, in reality, sembled a failed stage of in a provincial theater.” (https://tass.com)
২০ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অনেক ঘটনাই ঘটে গেছে। বাইডেন রাশিয়ার অনুমোদন সাপেক্ষে কিয়েভে গেলেন। সম্রাটের চালচলন যদিও ছাড়লেন না। নিজে টেবিলে বসে কী যেন লিখলেন। কিন্তু দেখা গেল ভলোদিমির জেলেনস্কি অধোবদনে তার টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। যেন হুকুম বরদার। বাইডেন সম্ভবত মস্কোর অনুমতি নিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করবেন! পুতিন আবার পরমাণু অস্ত্র বিষয়ক তৃতীয় স্টার্ট চুক্তি স্থগিত করলেন। অবশ্য বাতিল করেননি। বাতিলের কালচার (ক্যানসেল কালচার) সাধারণত মার্কিনি এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতি। পারমাণবিক বলটা এখন মার্কিনি কোর্টে। জুনিয়র বুশ এক দফায় স্টার্ট চুক্তির দফারফা করেছিলেন। ট্রাম্প এক দফায় আইএনএফ চুক্তি বাতিল করেছিলেন। আরেক দফায় ট্রাম্প (ইসরায়েলি উসকানিতে) ইরানের পরমাণু চুক্তি (জেসিপিওএ) থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। বলা যায় মার্কিনি পররাষ্ট্রনীতির বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে ‘ঘ্যাচাং ফু’! ইমপেরিয়াল ম্যাডনেসে আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্র।
বাইডেন ইউক্রেনে যেতে পারলেন কিন্তু ওহাইও’র ট্রেইন ডিরেইলমেন্টের (ট্রেইন লাইনচ্যুত হওয়ার) জায়গায় যেতে পারলেন না। প্রায় ৪৪ হাজার প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে ওই ঘটনায় প্রায় ৫ মাইল এলাকাজুড়ে বিষাক্ত রাসায়নিক বিক্রিয়ায়। ভয়ংকর বিপর্যয়। নিজ দেশের দুর্যোগের এলাকায় যাওয়ার সময় তার নেই। কিন্তু ইউক্রেন সফরের সময় আছে। সমালোচকরা বলছে, ২০২৪-এর নির্বাচনে জনসমর্থন বাড়ানোই ইউক্রেন সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল। ইউক্রেন রসাতলে না পাতালে গেল তা বিবেচনার বিষয় ছিল না। এ কথাও বলা হচ্ছে, দেশের অভ্যন্তরে বড় একটি দুর্ঘটনাস্থল এড়িয়ে গিয়ে জনসমর্থনকে তিনি কার্যত ডোনাল্ড ট্রাম্পের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। বাইডেনের সফরের সময়েই ওয়াশিংটনে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছিল। সমাবেশ তেমন বড় ছিল না। হাজার তিনেক লোক ছিল। কিন্তু তাতে জড়ো হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক বেশ কয়েকজন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী, পাবলিক ফিগার এবং সাংবাদিক। সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী তুলসি গ্যাবার্ড, গ্রিন পার্টির সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জিল স্টাইন, সাবেক কংগ্রেসম্যান ডেনিস কুচিনিচ, পুলিৎজার পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক সিমুর হার্শ, বর্ষীয়ান কংগ্রেসম্যান এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী রন পল। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ এবং ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা বন্ধ করার দাবিই এ সমাবেশের মূল দাবি ছিল। ইউক্রেনে নয় বরং দেশের অভ্যন্তরে বেশি নজর দেওয়ার কথা বলেছেন তারা।
যুদ্ধে রাশিয়া ‘যুদ্ধাচরণ’ করছে বটে, তবে পশ্চিমারা বলছে, বেসামরিক লোকদের এবং সামরিক লোকজনকেও নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। কিন্তু সবাই, পাশ্চাত্যের প্রেস্টিটিউট ছাড়া, জানে যে, এ যুদ্ধ শুরুর আগে ২০১৪ থেকে ২০২২ পর্যন্ত দনবাসের ১৪ হাজার লোককে হত্যা করেছে ইউক্রেন। চলমান যুদ্ধে কত লোককে হত্যা করেছে তা এখনো সঠিকভাবে নির্ণীত নয়। রাশিয়া ছাতু করছে বটে, তবে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে; হত্যা করছে বটে, তবে সামরিক ব্যক্তিবর্গকে। যুদ্ধের ফলে রাশিয়ায় এবং ইউরোপে লাখ লাখ লোক উদ্বাস্তু হয়েছে। ১৯৯১ সালে পৃথগ্নতার পর (ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়নের সদস্য হিসেবেই জাতিসংঘের সদস্য ছিল। তার নতুন করে স্বাধীন হওয়ার কিছু নেই।) জিডিপি বাড়েনি। ইউক্রেন আইএমএফের তৃতীয় বৃহত্তম ঋণগ্রহীতা এবং ইউরোপের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ। সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়াকোভিচ বরং কড়া শর্তের কারণে আইএমএফের ঋণ নিতে অস্বীকার করেছিলেন। তার বিরুদ্ধেই ময়দান অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল। রাশিয়াকে এসবের জন্য দায়ী করা চলে না। যুদ্ধকেও দায়ী করা যায় না। কারণ এর সবই ২০১৪ সালের আগের ইতিহাস।
ইউক্রেন ভয় পাচ্ছে মার্কিনিরা না আবার রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য চাপ দেয়! ২১ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ‘নিউ স্টার্ট’ স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন ভøাদিমির পুতিন। তিনি ইউক্রেনযুদ্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের দায়ী করেছেন। বলেন, রাশিয়াকে ধ্বংস করতে বিশ্বযুদ্ধ বাধাতে চায় তারা। বৈশ্বিক সমস্যা তাতে বরং আরেক দফা বাড়ল। এখন সিদ্ধান্তটা যুক্তরাষ্ট্রকেই নিতে হবে। তবে ২৪ ফেব্রুয়ারিতেই চীন ইউক্রেনে শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে ১২ দফার একটি প্রস্তাব দিয়েছে। ওয়াশিংটনকে হয় কোনো নতুন বোজোর সন্ধান করতে হবে অথবা শান্তি স্থাপনে সায় দিতে হবে। কী হবে!
লেখক: সাংবাদিক
নোবেলজয়ী রুশ চিকিৎসক ও শরীরতাত্ত্বিক ইভান পেত্রোভিচ পাভলভ ১৯৩৬ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সোভিয়েত ইউনিয়নের লেনিনগ্রাদে মৃত্যুবরণ করেন। শরীরের বস্তুবাদী গবেষণার জন্য তিনি প্রসিদ্ধ। চিকিৎসাবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানের আধুনিক রূপান্তরে তার ব্যাপক অবদান রয়েছে। ১৮৪৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার রয়াজানে জন্মগ্রহণ করেন পাভলভ। তার বাবা ছিলেন পাদ্রি। প্রথমে ধর্মীয় বিদ্যায় শিক্ষা শুরু করলেও ২০ বছর বয়সের আগেই চার্লস ডারউইনের লেখা পড়ে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নেন তরুণ পাভলভ। ১৮৭০ সালে রয়াজান থিওলজিক্যাল সেমিনারির পাঠ শেষ করেন। পরে ইউনিভার্সিটি অব সেইন্ট পিটার্সবুর্গের পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত অনুষদে প্রকৃতিবিজ্ঞান নিয়ে পড়েন। অধ্যাপনা করেন ইউনিভার্সিটি অব সেইন্ট পিটার্সবুগ, ইম্পেরিয়াল মেডিকেল অ্যাকাডেমি ও মিলিটারি মেডিকেল অ্যাকাডেমিতে। তার সবচেয়ে বড় অবদান ‘সাপেক্ষ প্রতিবর্ত’ ব্যাখ্যাকারী গবেষণা। গুরু মস্তিষ্কের অনেকগুলো প্রতিবর্ত ক্রিয়ার ব্যাখ্যা প্রদান করেন এবং গবেষণার মাধ্যমে কুকুরের দেহে কীভাবে এসব প্রতিবর্ত তৈরি হয় ও কাজ করে তা প্রমাণ করেন তিনি। এভাবে মানুষ এবং পশুর মস্তিষ্কের সঙ্গে বাইরের উত্তেজকের সম্পর্কের বিধান আবিষ্কার ও ব্যাখ্যা করেন তিনি। তার সাপেক্ষ প্রতিবর্ত ক্রিয়ার তত্ত্বের ভিত্তিতে আধুনিক মনোবিজ্ঞানে বস্তুবাদী ও আচরণবাদী গবেষণা এবং ব্যাখ্যা বিশেষভাবে বৃদ্ধি পায়। ১৯২২ সালে তার গবেষণা ফলাফলগুলো ভাষণ আকারে প্রকাশিত হয়। চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার পান ১৯০৪ সালে। ১৯১৫ সালে তিনি ‘কপলে মেডাল’ জিতেন। তার উল্লেখযোগ্য দুটি বই হলোÑলেকচার্স অন দ্য ওয়ার্ক অব দ্য ডাইজেস্টিভ গ্ল্যান্ডস (১৮৯৭) এবং কন্ডিশনার্ড রিফ্লেক্সেস : অ্যান ইনভেস্টিগেশন অব দ্য ফিজিওলজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি অব দ্য সেরেব্রাল কর্টেক্স (১৯২২)।
টেস্ট ক্রিকেটে সিলেটের পথচলা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। অভিজাত সংস্করণে যা ছিল দেশের অষ্টম ভেন্যু। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পা রাখে দেশের সবচেয়ে সুন্দর এই স্টেডিয়ামটি। তবে মাঠের অভিষেক ম্যাচেই হেরে যায় বাংলাদেশ। তারপর আর কোনো পাঁচ দিনের খেলা গড়ায়নি এই মাঠে। এ নিয়ে স্থানীয়দের আক্ষেপের শেষ নেই।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর ফুরাচ্ছে। পাঁচ বছর পর আবারও টেস্ট ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
ক্রিকবাজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, ‘আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে আমরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথম টেস্ট আয়োজন করতে পারব বলে আশা করছি। এটি আমাদের জন্য খুব একটি উপলক্ষ হবে। কারণ পাঁচ বছর পর সিলেটের মাঠে টেস্ট ক্রিকেট ফিরবে।’
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল সিলেট সফর করেছে। তারা সেখানকার মাঠসহ সব সুযোগ সুবিধা পরিদর্শন করেছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়ে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। সবকিছু দেখে তারা এখানে আরও বেশি ম্যাচ আয়োজনের জন্য উন্মুখ বলে জানিয়েছেন বিসিবির নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান নাদেল।
তিনি যোগ করেছেন, ‘নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল আমাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বেশ মুগ্ধ। তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছে আমরা তাদের সব প্রত্যাশা ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারব।’
এফটিপি সূচি অনুযায়ী চলতি বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্ট ম্যাচের সিরিজে খেলার কথা নিউজিল্যান্ডের। তবে সিরিজটি হবে দুই ভাগে। প্রথম ভাগে সেপ্টেম্বরের শেষভাগে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডে খেলবে কিউইরা। এই সিরিজ খেলেই বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাবে দুই দল।
বিশ্বকাপের পর হবে দুই দলের টেস্ট সিরিজ। নভেম্বরের শেষ দিকে আবারও বাংলাদেশে আসবে কিউইরা। বিসিবি প্রস্তাবিত সূচি অনুযায়ী ২১ নভেম্বর ঢাকায় পা রাখার কথা সফরকারীদের। এরপর একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে দলটি। ২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর হবে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের প্রথম টেস্ট।
প্রথম দুই সেটই গড়িয়েছে টাইব্রেকারে। প্রথমটি নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৫ মিনিটে। দ্বিতীয়টিও টাইব্রেকারে। সেটির নিষ্পত্তি ঘণ্টার ওপরে। দুটোতেই জয় নোভাক জকোভিচের। তারপরেরটিও জিতে যান এই সার্বিয়ান। ১৪তম ফ্রেঞ্চ ওপেনের খেলায় স্পেনের আলেজান্দ্রো ফোকিনার সঙ্গে ৩-০ সেটে জয়লাভ করেন তিনি। যে জয়ে মধুর প্রতিশোধ নিয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছেন তিনি।
৩৬ বছর বয়সী এই নাম্বার ওয়ান টেনিস তারকা প্রথম সেটে কিছুটা ছন্দহীন ছিলেন। তবে চ্যাম্পিয়নদের ঘুরে দাঁড়াতে তো সময় বেশি লাগে না। জকোভিচও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তারপর ফোকিনাকে কোনো সেট জিততে না দিয়েই ম্যাচ শেষ করেন তিনি।
প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী চলা এই ম্যাচটিতে এক পেশে জয় হলেও প্রতিটি সেটেই উত্তেজনার পারদ ছড়িয়েছেন দুজন। সমর্থকেরাও বারবার হয়েছেন রোমাঞ্চিত। তবে শেষ পর্যন্ত নোভাক জকোভিচের সমর্থকেরাই হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আগামী সোমবার জকোভিচ শেষ ষোলোর ম্যাচ খেলতে নামবেন। সেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে কার্লোস আলকারাজকে পেতে পারেন তিনি।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।