
অর্থনীতির ক্ষেত্রে দেশ এখন সংকটকাল অতিক্রম করছে। উত্তুঙ্গ মুদ্রাস্ফীতি, ওএমএসের ট্রাকের পেছনে মানুষের দীর্ঘ লাইন, উচ্চ জ্বালানি মূল্য, অস্থির মুদ্রা বিনিময় হার, সংরক্ষণবাদী আমদানি সত্ত্বেও চলতি হিসাবে বড়সড় ঘাটতি ও রিজার্ভের ক্রমহ্রাসমান প্রবণতা প্রভৃতিতে এই সংকটের অবয়ব দৃশ্যমান। শাসক দলের নেতাদের দাবি, কভিড-১৯ এর ধকল সামলে নিয়ে অর্থনীতি যখন পুনরায় দুলকি তালে চলতে শুরু করে তখন কাবাব মে হাড্ডি হয়ে আবির্ভূত হয় ইউক্রেন যুদ্ধ। অর্থাৎ সব দোষের নন্দঘোষ হলো ইউরোপীয় অঞ্চলের এই যুদ্ধ। অবশ্য নিন্দুকেরা বলেন, এই সংকটের জন্য বিরূপ বহিঃস্থ কারণের চেয়ে অদূরদর্শী দেশি পরিকল্পনা এবং অব্যবস্থাপনাও কম দায়ী নয়। সে যাই হোক, সরকার অবশ্য সংকট শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুতগতিতে বেশ কিছু প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধন নীতি অনুসরণ।
সরকারি ব্যয় সংকোচন নীতির অনুসরণে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প পরিহার, গাড়ি কেনা ও জ্বালানি খরচ কমানো, কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের ওপর একাধিকবার যতি টানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদেশে ‘সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল’-এর যে সংস্কৃতি চালু রয়েছে, সে পটভূমিতে স্বাভাবিক সময়েও এই জাতীয় নির্দেশের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বোধ করি কেউ প্রশ্ন তুলবে না। তবে বর্তমানে মাথা মোটা আমলাতন্ত্রে তাদের স্বার্থবিরোধী এই রকম নির্দেশ কতটুকু কার্যকর করা যাবে, সেটা একটা প্রশ্ন বটে। অপচয় আর অপব্যয়ের সংস্কৃতি শুধু সরকারি খাতে যে সীমাবদ্ধ, তা বলা যাবে না। সরকারি ও বেসরকারি যে পর্যায়েই অপব্যয় ও অপচয় হোক না কেন, তা জাতীয় সম্পদকে কমিয়ে ফেলে এবং নাগরিকদের কর্মদক্ষ হতে নিরুৎসাহিত করে। কাজেই সরকারি কাঠামোর বাইরেও বৃহত্তর পর্যায়ে যাতে সম্পদের অপব্যয় ও অপচয় না হয়, তার জন্য প্রয়োজন জরুরি নির্দেশনা ও ব্যবস্থা গ্রহণ।
কয়েক দিন আগে এক বন্ধুর ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হয়েছিল। অনুষ্ঠানটি ছিল লোকে লোকারণ্য বলতে যা বোঝায় তাই; দ্বিতীয় ব্যাচেও খাবার টেবিলে জায়গা পেতে কষ্ট হচ্ছিল। এই জাতীয় অনুষ্ঠানে সাধারণত যা হয়, তাই ঘটল; এক বন্ধুর শখের মহামূল্যবান একটি সেলফোন সেট লাপাত্তা হয়ে গেল। দুই বন্ধু তখন ছুটলেন সিসিটিভি নিয়ন্ত্রিত কক্ষের কন্ট্রোল রুমে; চোরের টিকিটা দেখা যায় কি না, তা পরীক্ষা করতে। অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করে তারা বীক্ষণ যন্ত্রের সংরক্ষিত ডিজিটাল পর্দায় তস্কর ও তার হাত-সাফাই কাজের সন্ধান করতে সমর্থ হলেন। কিন্তু ঐ যন্ত্রটি তো কেবল ছবি তুলতে ও তা কিছুকালের জন্য সংরক্ষণে সক্ষম; আটকের ক্ষমতা সে এখনো প্রাপ্ত হয়নি। চোরের ছবি দেখেও তাকে পাকড়াও করতে না পেরে আমাদের সবার মন খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু তারপর মনটা আরও বেশি খারাপ হয়ে গেল খাবার টেবিলে মানুষের আচরণ দেখে। টেবিলে খাবার বিস্তর, খাদকেরা পাতে নিচ্ছে এন্তার, কিন্তু অধিকাংশই চালাচ্ছে স্বেচ্ছাচার; খোদাই খাসির মতো একটু করে চেখে পছন্দ না হলে সামনে রাখা হাড়ের পাত্রে মাংস নিক্ষেপ করছে। আবার পছন্দ মতো গোস্ত পেতে বেয়ারাকে নতুন গামলা ভরে ভোজ্য আনার আদেশ দিচ্ছে। এ যেন মাংস খাওয়া ও ছোড়ার এক হোলিখেলা; একেক জনের উচ্ছিষ্টে অন্তত দুজন বুভুক্ষুর সহজেই উদর পূর্তি হতে পারে। এর আগেও বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে একই খামখেয়ালিপনার পুনরাবৃত্তি লক্ষ করেছি। এই শ্রেণির লোকজনের খাওয়া-দাওয়ার বাহার দেখে বুঝতে বাকি থাকে না, এই সর্বব্যাপী অপুষ্টির দেশে স্থূলতায় ভোগা আদম সন্তানদের মধ্যে হার ৪০ শতাংশের কাছাকাছি কেন? এই বিলাসিতা দেশের এই পরিস্থিতিতে একেবারেই বেমানান।
কভিড-১৯ ও তৎপরবর্তী ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বময় যে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা তৈরি হয়, সে পটভূমিতে দেশের প্রধানমন্ত্রী কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষি উপকরণের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং এক ইঞ্চি ভূমিও পতিত না রাখা। তার এই নীতি পর্যাপ্ত ফল দেয়; দেশ খাদ্য ঘাটতির কবল থেকে রক্ষা পায়। খাদ্য নিরাপত্তায় উৎপাদন বৃদ্ধি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদিত খাদ্যের অপচয় রোধ করা; এতে তেমন খরচ নেই বললেই চলে। এই কারণে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় উৎপাদিত খাদ্যপণ্যের অপচয় রোধ করা একটি অন্যতম অনুষঙ্গ। আমাদের ধর্মেও অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই বাস্তবতায় বিয়ের অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন গণজমায়েতে খাদ্যপণ্যের অপচয় রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
বিয়ের অনুষ্ঠানে খাদ্য অপচয় রোধকল্পে সরকার The Guest Control Order, 1984 জারি করে। প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল অনুষ্ঠানে অতিথির সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দিয়ে খাদ্যের ব্যয় ও অপচয় কমিয়ে আনা। কিন্তু আদেশ জারির মাধ্যমে অতিথি নিয়ন্ত্রণ করা ছিল প্রায় অসম্ভব। তখন সরকার ‘If you can not beat them, join them’ তত্ত্বের ভিত্তিতে অনুমোদিত সংখ্যার অতিরিক্ত অতিথিদের জন্য মাথাপিছু যৎসামান্য ফি আদায়ের ব্যবস্থা করে ফ্লাড গেইট খুলে দেয়। প্রথম প্রথম অনেকেই সরকারি আদেশের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনার্থে অতিরিক্ত ১০০ জনের ফি জমা দিয়ে ১০০০ জন অতিরিক্ত অতিথির ভূরিভোজন সম্পন্ন করিয়ে দিত। কিন্তু এখন এই জাতীয় আদেশের কোনো অস্তিত্ব আছে বলে কেউ জানে না। ফলে সরকারের আয়ও হচ্ছে না, আবার খাদ্যের অপচয় ও অপব্যবহার বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। এটা বন্ধ হওয়া দরকার, আর তা করা যেতে পারে উল্লিখিত আদেশ সংশোধনের মাধ্যমে।
বিয়েসহ গণজমায়েতগুলোতে খাদ্যের অপচয় রোধকল্পে খোলা গামলা ও কারি ডিশের পরিবর্তে প্যাকেটে খাদ্য পরিবেশন করা যেতে পারে এবং তাতে অপচয়ের মাত্রা ন্যূনতম পর্যায়ে নেমে আসতে পারে। মহানগরী ও শহরাঞ্চলে বিভিন্ন দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, মজলিশ, মৃত্যুবার্ষিকী, চল্লিশা প্রভৃতি আয়োজনে প্যাকেটে তবারক সরবরাহ করা হয়ে আসছে। এসব অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা থেকে এটা লক্ষ করা গেছে যে, এ ব্যবস্থায় অপচয় ন্যূনতম পর্যায়ে থাকে। বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতেও একই ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে তেমন কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। প্যাকেটের বিষয়বস্তু ও পরিমাপ এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যাতে অপচয়ের সুযোগ না থাকে। আর আদেশ সংশোধনের মাধ্যমে এটা করা হলে সাশ্রয়ী হওয়ায় অনুষ্ঠানদাতারাও খুশি হবেন। আর খাদকদেরও বিনা পয়সায় স্থূলতার চিকিৎসা শুরু হয়ে যাবে। তাদের কেউ কেউ অবশ্য প্রথম দিকে কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করতে পারেন। তবে সামাজিক চাপ এখন খাদকদের বিরুদ্ধে। কাজেই তাদের পালে বেশি হাওয়া লাগার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
এরকম আরও অনেক ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে অপচয়ের মাধ্যমে অনেক উঠতি বিগ শট তাদের সম্পদের প্রদর্শনী করতে ভালোবাসেন। শহরের অভিজাত এলাকায় প্রয়োজনের তুলনায় অতিকায় বড় অট্টালিকা নির্মাণ বা ফ্ল্যাট গড়ন এ রকম উন্নাসিক কাজের একটা দৃষ্টান্ত। ধানমন্ডির যে বাসায় আমি থাকি, তার পাশে নতুন একটি ফ্ল্যাট বাড়ি নির্মিত হচ্ছে। এ বাড়ির প্রতিটা ফ্ল্যাটের আয়তন ৪,৩০০ বর্গফুট। টাকা থাকলেই ভূমি-বুভুক্ষু এই দেশে কেন চার পরিবারের স্থলে এক পরিবারকে এত জায়গা দেওয়া হবে, তা আমার বোধগম্য নয়। এটাও অপচয়ের আরেক রূপ। চীন ও ভিয়েতনামে দেখেছি জন-ঘনত্ব আমাদের চেয়ে অনেক কম। কিন্তু তাদের বাড়ির সাইজ অনেক ছোট। কিন্তু গড়পড়তা তারা আমাদের চেয়েও ধনী। ভূমি সৃষ্টিকর্তার দেওয়া এক সসীম সম্পদ। বাসস্থানের মতো মৌলিক অধিকার রক্ষায় এর ওপর সমমাত্রিক অধিকার রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।
দেশে এক দিকে মুক্তবাজার অর্থনীতির চর্চা চলছে। আবার উল্টো দিকে অনেক কিছু চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে নির্ধারণ না হয়ে সরকার কর্র্তৃক নির্ধারিত হয়ে আসছে। জ্বালানির মূল্য, সারের মূল্য, ডলারের মূল্য এই মিশ্র ব্যবস্থার কয়েকটি উদাহরণ। বাণিজ্যমন্ত্রীও সম্প্রতি পাঁচ ছয়টি পণ্যের সর্বোচ্চ বিক্রয়মূল্য নির্ধারণের ঘোষণা দিয়েছেন। এখন বিয়েসহ যে সব গণজমায়েতে খাদ্য সরবরাহ করা হয়, সেখানে যদি প্যাকেটে তা সরবরাহ করা এবং পরিবারপ্রতি বাসস্থানের জন্য সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়, তবে সাধারণ মানুষের এ দুইটি মৌলিক চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্র প্রসারিত হবে। আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা ও কাজ শুরু করবেন।
লেখক: খাদ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও কলামিস্ট
ডায়াবেটিস একটি হরমোন সংশ্লিষ্ট রোগ। দেহযন্ত্র অগ্ন্যাশয় যদি যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে না পারে অথবা শরীর যদি উৎপন্ন ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হয়, তাহলে যে রোগ হয় তা হলো ‘ডায়াবেটিস’ বা ‘বহুমূত্র রোগ’। তখন রক্তে চিনি বা শকর্রার উপস্থিতিজনিত অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। ইনসুলিনের ঘাটতিই হলো এ রোগের মূল কথা। অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হরমোন ইনসুলিন, যার সহায়তায় দেহের কোষগুলো রক্ত থেকে গ্লুকোজ নিতে সমর্থ হয় এবং একে শক্তির জন্য ব্যবহার করতে পারে। ইনসুলিন উৎপাদন বা ইনসুলিনের কাজ করার ক্ষমতার যেকোনো একটি বা দুটোই যদি না হয়, তাহলে রক্তে বাড়তে থাকে গ্লুকোজ। আর একে নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে ঘটে নানা রকম জটিলতা, দেহের টিস্যু ও যন্ত্র বিকল হতে থাকে।
১৯৫৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ড. মো. ইব্রাহিমের উদ্যোগে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই এই দিনটিকে ডায়াবেটিস সচেতনতা তৈরিতে উপজীব্য করা হয়। এছাড়াও প্রতি বছরই ১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালিত হয়। এদিন বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক বেনটিং জন্ম নিয়েছিলেন এবং তিনি বিজ্ঞানী চার্লস বেস্টের সঙ্গে একত্রে ইনসুলিন আবিষ্কার করেছিলেন। লক্ষ্য হলো: পৃথিবীতে কোনো শিশুই যেন ডায়াবেটিসে মারা না যায়। ডায়াবেটিসের মতো ক্রনিক রোগ ব্যক্তি, পরিবার, দেশ, এমনকি সারা পৃথিবীর জন্য গুরুতর ঝুঁকি বহন করে এ সত্য জাতিসংঘ অনুধাবন করে ২০০৬ সালে একে জাতিসংঘ দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। পৃথিবীতে প্রায় ৪৬৫ মিলিয়ন লোক ডায়াবেটিস নিয়ে জীবনযাপন করছে।
মানুষের রক্তে গ্লকোজের পরিমাণ সাধারণত ৩.৩ থেকে ৬.৯ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর <৭.৮ মিলি.মোল/লি। কিন্তু যদি গ্লুকোজের পরিমাণ অভুক্ত অবস্থায় ৭ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর >১১ মিলি.মোল/লি পাওয়া যায়, তবে তার ডায়াবেটিস আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। বহুমূত্র রোগ বা ডায়াবেটিস বললে সাধারাণত ডায়াবেটিস মেলিটাস বোঝায়। তবে ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস নামে আরেকটি রোগ আছে যাতে মূত্র উৎপাদন বেশি হয় কিন্তু তা অউঐ বা অ্যান্টি ডাইইউরেটিক হরমোন নামে অন্য একটি হরমোনের উৎপাদনের অভাব বা ক্রিয়ার অভাবে হয়ে থাকে এবং মূত্রাধিক্য এবং তার জন্য অতিতৃষ্ণা এই দুটি উপসর্গের মিল ছাড়া এই রোগটির সঙ্গে ‘ডায়াবেটিস মেলিটাস’-এর কোনো সম্পর্ক নেই। এ দুটির মধ্যে ডায়াবেটিস মেলিটাসের প্রকোপ অনেক বেশি। ডায়াবেটিস মেলিটাস আবার দু’রকম হতে পারে। যথা: টাইপ-১ বা ইনসুলিন নির্ভরশীল এবং টাইপ-২ বা ইনসুলিন নিরপেক্ষ ডায়াবেটিস।
টাইপ-১ ডায়াবেটিস হলো অটোইমিউন রোগ। এ রোগে অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন নিঃসরণকারী কোষগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। তাই যাদের টাইপ-১ হয়, এদের দেহে ইনসুলিন উৎপাদিত হয় খুবই কম। এ জন্য রোগীকে বেঁচে থাকার জন্য ইনসুলিন ইনজেকশন বা ইনসুলিন পাম্প নিতে হয়। শিশু ও তরুণদের মধ্যে এ ধরনের বহুমূত্র হয় বেশি। ১০-৩০ বছরের মধ্যে দেখা দেয়। এটাা মূলত জেনেটিক কারণে হয়ে থাকে। এর জন্য দায়ী হলো ঐখঅউজ ৩ এবং ঐখঅউজ ৪ নামক দুটি জিন। টাইপ-১ কে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়, টাইপ-১-এ : অটোইমিউনিটির জন্য বিটা কোষের ধ্বংসের কারণে এই টাইপ-১-এ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। টাইপ-১-বি : এটিও বিটা কোষের ধ্বংসের কারণে হয়ে থাকে, কিন্তু এর সঠিক কারণ জানা যায়নি।
টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগের পেছনে থাকে মূলত ‘ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স’। টাইপ-২ রোগীরা তাদের শরীরে যে ইনসুলিন উৎপন্ন হয়, তাকে ব্যবহার করতে পারে না। ব্যায়াম ও খাদ্যবিধির সাহায্যে একে প্রথমে মোকাবিলা করা হয়। তবে অনেক সময় প্রয়োজন হয় মুখে খাওয়ার ওষুধ, এমনকি ইনসুলিন ইনজেকশন। ৪০ বছর বা তারপরে এ ধরনের ডায়াবেটিস রোগ দেখা দেয়। মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় পানীয় টাইপ-২ এর ঝুঁকি বাড়ায়।
অত্যধিক পরিমাণ সাদা ভাত খাওয়াও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। শারীরিক পরিশ্রম না করাও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের অন্যতম একটা কারণ। বিশ্বজুড়ে ৪৬৫ মিলিয়ন ডায়াবেটিস রোগীর ৯০ শতাংশের বেশি হলো টাইপ-২ ডায়াবেটিস। দুই ধরনের ডায়াবেটিসই গুরুতর এবং হতে পারে শিশু ও তরুণদেরও। এ জন্য ডায়াবেটিসের বিপদ-চিহ্নগুলো জানা খুবই প্রয়োজন। ‘মৃদু ডায়াবেটিস’ বলে কিন্তু কিছু নেই। নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় তৃতীয় এক প্রকার ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। এটা গ্যাস্টেশনাল ডায়াবেটিস নামেও পরিচিত। ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬১/২২৫ নম্বর ঘোষণায় ডায়াবেটিসকে দীর্ঘমেয়াদি, অবক্ষয়ী ও ব্যয়বহুল ব্যাধি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে যা মানবদেহে মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।
ডায়াবেটিসের সাধারণ লক্ষণাদির মধ্যে রয়েছে ঘন ঘন প্রস্রাব যার কারণে এ রোগটির নাম বহুমূত্র রোগ, অধিক তৃষ্ণা এবং মুখ শুকিয়ে যাওয়া, অতিশয় দুর্বলতা, সার্বক্ষণিক ক্ষুধা, স্বল্প সময়ে দেহের ওজন হ্রাস, চোখে ঝাপসা দেখা, ঘন ঘন সংক্রমণ ইত্যাদি। ডায়াবেটিসের অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমন: বেশি পরিমাণে জাঙ্কফুড খাওয়ার ফলে শরীরে ক্যালোরি এবং ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায়। যার কারণে শরীরের ইনসুলিনে চিনির মাত্রা বেড়ে যায়, জিনগত রোগের কারণে ডায়াবেটিস হতে পারে, ডায়াবেটিস শরীরের অতিরিক্ত ওজন এবং ওজন বৃদ্ধির কারণে ঘটতে পারে, প্রতিদিনের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ অনুশীলন না করায় ডায়াবেটিস হতে পারে, বেশি চাপে থাকার কারণে ডায়াবেটিস সমস্যা হয়ে যায়, যদি কোনো ব্যক্তি অতিরিক্ত পরিমাণে ধূমপান করে তার ফলস্বরূপ তার ডায়াবেটিস হতে পারে, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ভুল ওষুধ সেবনের কারণে একজন ব্যক্তির ডায়াবেটিস হতে পারে। বলা যেতে পারে, ডায়াবেটিস হলো কোনো ব্যক্তির অতিরিক্ত চা, কোল্ড ড্রিঙ্কস এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার গ্রহণের ফলস্বরূপ।
অতিরিক্ত মেদ এ রোগের অন্যতম কারণ। উপসর্গহীনতা বা অসচেতনতার কারণে চিকিৎসার অভাবে ডায়াবেটিস হতে পারে। কিডনি বা বৃক্কের অক্ষমতার অন্যতম মূল কারণ ডায়াবেটিস। অন্ধত্ব বা দৃষ্টিবিচ্যুতির অন্যতম মূল কারণ ডায়াবেটিস। এছাড়া বিনা দুর্ঘটনায় অঙ্গচ্ছেদের অন্যতম মূল কারণও ডায়াবেটিস।
পরীক্ষার পরে, কিছু ওষুধ, যেমন : মেটফর্মিন, চিনির স্তর নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দেওয়া হয়। এটি কেবলমাত্র ডায়াবেটিস টাইপ-২ রোগীদের দেওয়া হয়। এই ড্রাগ ইনসুলিন উৎপাদন উৎসাহিত করে। শরীরকে ইনসুলিন আরও ভালোভাবে ব্যবহার করতে সহায়তা করে। টাইপ-১ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের রোগীদের চোখের রেটিনা, ছানি ইত্যাদি একবারে পরীক্ষা করা উচিত। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে কালো জাম খাওয়া উচিত। ব্ল্যাকবেরিতে অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। যা ইনসুলিন তৈরিতে সহায়তা করে। যার কারণে রক্তে সুগার স্বাভাবিক পর্যায়ে থেকে যায়।
গুড়ের ৮ থেকে ১০টি টুকরা পিষে একটি চাটনি তৈরি করে তারপরে এটি এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে সারা রাত রেখে দিতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে তা পান করতে পারলে কাজে দেবে। হিবিস্কাসের পাতায় উচ্চ পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড থাকে। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খুব কার্যকর প্রমাণ করে। ড্রামস্টিক পাতার রস ডায়াবেটিসে প্যানাসিয়ার মতো কাজ করে। ড্রামস্টিক পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড থাকে। যা চিনির স্তর নিয়ন্ত্রণ এবং ইনসুলিন বাড়ায়, এর ফলে প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতিদিন ৮ থেকে ১০টি নিমপাতা চিবানো উচিত। নিমের উপস্থিত অ্যান্টিভাইরাল গুণ দেহে চিনির স্তর নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
ডায়াবেটিস রোগীদের দৈনিক ব্যায়াম, যোগ ব্যায়ামের মতো শারীরিক ক্রিয়াকলাপ করা উচিত। যোগ ব্যায়ামের আসন করা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। ডায়াবেটিস রোগীদের সর্বদা তাদের পায়ে আঘাত এড়ানো উচিত। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত। অতিরিক্ত তেল এবং মসলা এড়িয়ে চলা এবং প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। ডায়াবেটিসের চিকিৎসা হলো ইনসুলিন, অ্যান্টিডায়াবেটিক মুখে খাওয়ার ওষুধ, জীবনধারার পরিবর্তন, নিয়মিত ব্যায়াম, খাদ্য গ্রহণে সচেতনতা এবং অসুখ সম্বন্ধে রোগীর প্রয়োজনীয় ও সঠিক ধারণা।
লেখক : কলাম লেখক ও কর্মকর্তা, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশে নির্বাচনের ঢোলে বাড়ির আওয়াজ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের সীমানার বাইরেও। সুষ্ঠু ভোটের দাবির সঙ্গে ওয়াদাও তুঙ্গে। লক্ষণীয় বিষয়, এ দাবি ও ওয়াদার বেশির ভাগই বিদেশিদের কাছে। বিএনপির বিদেশিদের কাছে নালিশ রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচিত। সেই সঙ্গে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিটি স্থানিকের আওতা ছাড়িয়ে বৈশ্বিক করে দেওয়ার চেষ্টাও ব্যাপক। যার অর্থ, সুষ্ঠু-অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন শুধু বাংলাদেশের বিষয় নয়, এটি গোটা দুনিয়ারও বিষয়। এর বিপরীতে সরকারের শীর্ষমহল থেকেও সুষ্ঠু নির্বাচনের ওয়াদা শোনানো হচ্ছে বিদেশিদের। কিছুদিন ধরে যেসব বিদেশি হাই-প্রোফাইল এসেছেন তাদের সবাইকেই আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস শোনানো হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনের বিচারের তালগাছটা প্রকারান্তরে বিদেশিদের হাতে চলে যাচ্ছে কি না প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আগামী নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে কথাটি কেন সরকারি মহলকে বিদেশি অতিথিদের কাছে অবিরাম বলতে হচ্ছে? নির্বাচন প্রশ্নে বিদেশিদের কোনো কথা শোনা হবে না বলে আওয়ামী লীগের সাহসী ও স্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে। না শুনলে সেই বিদেশিদেরই কেন সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিতে হচ্ছে? ক্ষমতাসীনদের ঘোষণায় বিদেশিরা দমেনি। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে নির্বাচনের কথা আনছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আবার নতুন করে বলা শুরু করেছে। যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপানও সুষ্ঠু নির্বাচনের নসিহত করছে। সরকার বা সরকারি দল তা অগ্রাহ্য করছে না। বলছে না, এসব সবক তারা শুনবে না। উপরন্তু, কথা দিচ্ছে। সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের ওয়াদা দিচ্ছে। বিষয়টি একদিকে সাংঘর্ষিক, আরেক দিকে বিএনপির জন্য বেশ পুলকের। দলটিকে নির্বাচনে এনে দিতে মার্কিন সহায়তা চাওয়ার তথ্য মাস-দশেক আগে নিজেই প্রকাশ করে উটকো ঝামেলায় পড়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। মাস কয়েকের ব্যবধানে এখন বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে সরকারের নানা পদক্ষেপ ওপেন সিক্রেটের মতো।
নির্বাচনে আসা যেকোনো রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব। আবার না আসার স্বাধীনতাও নিশ্চয়ই আছে। এ দায়িত্ব ও স্বাধীনতা দুটিই আপেক্ষিক ও যুক্তির বিষয়। কোনো দলকে নির্বাচনে আনা সরকারের দায়িত্ব না হলেও দায় রয়েছে। এখানে পারস্পরিক আস্থার বিষয় রয়েছে। যে জায়গায় চরম ঘাটতি। এর ফাঁকে বিদেশিদের সালিশ বা মধ্যস্থতার নমুনাও বেশ স্পষ্ট। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনী বল বিদেশিদের পায়ে বা কোটে চলে যাওয়া কারও জন্য শঙ্কার, কারও জন্য সম্ভাবনার।
সরকারের ভালো কিছুই দেখছে না বিএনপি। বিশেষ করে নির্বাচন প্রশ্নে সরকারের ওপর জিরো পারসেন্ট আস্থাও নেই বিএনপির। তারা এ সরকারের অধীনে নির্বাচন করে দেখেছে। নির্বাচন না করেও দেখেছে। সরকার যেন নির্বাচন করতে না পারে সেই চেষ্টাও বাদ দেয়নি। কোনো অভিজ্ঞতাই সুখকর হয়নি বিএনপির জন্য। তাহলে সামনে কোনটি করবে? বিএনপি থেকে বলা হচ্ছে, তাদের ছাড়া আগামী নির্বাচন করতে পারবে না সরকার। কোন ভরসায় এমন আশাবাদ দলটির? এক কথায় জবাব নেই তাদের কাছে। রাজনীতি বিশ্লেষকদের কাছেও জবাব নেই। রাজনীতির চেয়েও এটি বেশি হয়ে পড়েছে কূটনীতির বিষয়। আবার এ কথাও সত্য, দেশি-বিদেশি যেকোনো মধ্যস্থতায়ই হোক, একটি সমঝোতা যে আবশ্যক তা বলার অপেক্ষা রাখে না, যা রাজনীতিকে নিয়ে যাচ্ছে কূটনীতির বাঁকে।
এ দেশের নির্বাচন বা কোনো ইস্যুতে বিদেশিরা কেন নাক গলাবে? এমন একটি তাত্ত্বিক প্রশ্ন রয়েছে বরাবরই। আবার দেশ ভাগ, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ, আন্দোলন, ক্ষমতার পটপরিবর্তনের নানান ঘটনায় ছিল বিদেশি সম্পৃক্ততা। তা কারও জন্য স্বস্তির, আর কারও জন্য হয়েছে বেদনার। ওই স্বস্তিবোধ করা বেনিফিশিয়ারিরাও পরে প্রয়োজনে বিদেশি ভূমিকার নৈতিক সমালোচনা করেন। আর বেদনাহতরা বিদেশি নেক নজরের নানা চেষ্টা চালান। গোটা বিষয়টাই এক অর্থে আপেক্ষিক এবং যার যার সুবিধামতো। টানা গত কয়েকটি নির্বাচনের সময় দেশের রাজনীতিতে বিদেশি কূটনীতিকদের ভূমিকা এমনকি প্রকাশ্য তৎপরতা চলেছে। আজকের ক্ষমতাসীনরা এর সব চেয়ে বড় বেনিফিশিয়ারি। তখন এই বিদেশিদের পরম বন্ধু, উন্নয়ন সহযোগী, গণতন্ত্রের সহায়কসহ নানা বিশেষণ ও সম্বোধনে বিশেষায়িত করা হয়েছে। কূটনীতিকরা কোথায়, কার সঙ্গে কথা বলছেন, কী মন্তব্য করছেন এসব খবরের দিকে মানুষের ব্যাপক আগ্রহ। গণমাধ্যমকর্মীরাও ব্যস্ত থাকেন ঢাকায় বিদেশি কূটনীতিকদের তথ্য জোগাড়ে। এবারের পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা। কথাবার্তা বেশি। সরকার ও ক্ষমতাসীন দলে এ বিষয়ে খুব অসহিষ্ণুতা। অস্থিরতাও প্রকাশ্যে। তাদের কাছে এটি ‘দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপ’, যা প্রকারান্তরে সরকারের দ্বিমুখিতা।
ঘটনা বিচারে গত দু-তিনটি নির্বাচনের পূর্বাপর ও নির্বাচন চলাকালে কোনো কোনো বিদেশি কূটনীতিক, যা করেছেন সেই তুলনায় এবার এখনো কম। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে শুধু প্রভাবিত নয়, অনেকটা ধরে-বেঁধে আওয়ামী লীগের সঙ্গী করতে ভারতের তখনকার পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিংয়ের ভূমিকা স্মরণযোগ্য। এবার এখন পর্যন্ত সে রকম কিছু না হলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন জানিয়েছেন, এ সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে তিনি ভারতের সাহায্য চেয়েছেন। এরই মধ্যে ভারতও কথা দিয়েছে, তারা আছেন সরকারের সঙ্গে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিএনপিকে নির্বাচনে এনে দেওয়ার তদবিরের কথাও জানা হয়েছে ড. মোমেনের জবানিতেই।
সচরাচর কোনো রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত দেশে একজন রাষ্ট্রদূত বা অ্যাম্বাসাডর স্বাগতিক দেশের পররাষ্ট্রনীতিকে নিজের রাষ্ট্রের পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা করবেন, সেটাই তার দায়িত্ব। তিনি তার দেশের স্বার্থই দেখবেন। কিন্তু বাংলাদেশে বরাবরই ওই কূটনীতিককে তার জায়গায় রাখা হয় না। ক্ষমতাসীন-ক্ষমতাহীন উভয়ই তাকে মুরুব্বির কেদারায় বসিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজেরা লাভবান ও প্রতিপক্ষকে ঘায়েলে তৎপরতায়। তাকে নাক গলানোর যাবতীয় কূটনৈতিক বন্দোবস্ত রাজনীতিকরা করে দিচ্ছেন। ব্যবসায়ী-আমলাসহ অন্যান্য সেক্টরও পিছিয়ে থাকে না। দূতাবাসের একটি দাওয়াত পেতে, দূতের মন পেতে হেন চেষ্টা নেই, যা না করা হয়। তখন তারা ‘নাক গলানো’ শব্দ মনে রাখেন না। শুধু নাক নয়, নিজের গলা পর্যন্ত দিয়ে ফেলেন।
আমরা কেন আমাদের নিয়ে বিদেশিদের নাক গলাতে বা আগ্রহ বাড়ানোর ব্যবস্থা করি? এমন প্রশ্নে খুব বেজার হন রাজনীতিকরা। বিদেশিরা তাদের কদর বুঝে তা নিশ্চিত হতেও প্রায়ই ঢুঁ মারার মতো সফরে আসছেন এ দেশে। যাত্রাবিরতির নামেও আসেন। আমাদের দেশে তাদের গুরুত্বের সঙ্গে চাহিদাও তৈরি হয়েছে। সামনে এ সফর আরও বাড়বে সেই আভাসও রয়েছে। ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের সমান্তরালে বাংলাদেশে রাজনীতির বিভাজনও তাদের জন্য উপকার। নাক ডাকার সঙ্গে কথা বলার মঞ্চ পর্যন্ত তৈরি করে দেয়ওা হচ্ছে এ দেশে। বিদেশিদের দিয়ে মঞ্চের নিরপেক্ষতা, সৌন্দর্য, আভিজাত্য তৈরির একটি চর্চাও চলছে। আর নিউজ কাভারেজ তো উপরি পাওনার মতো। সেখানে আসার পর গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে তাদের নানা প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয়। তারা এড়িয়ে যান না। জবাব দেন নিজেদের মতো। লক্ষ করার মতো বিষয় তাদের রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ কবে থামবে, কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে বিশ্ব অর্থনীতি, ওই বিদেশি দূতের দেশে রাজনৈতিক-সামাজিক চিত্র কেমন; এ ধরনের প্রশ্ন করা হয় না। বরং জানতে চাওয়া হয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও নির্বাচন-সংক্রান্ত প্রশ্ন। স্বাভাবিকভাবেই এটি তাদের জন্য সুযোগ। গরজ না থাকলেও এর মধ্য দিয়ে তাদের আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আগ্রহী হতে বাধ্য করা হচ্ছে।
এসবের যোগফলে আমাদের দেশের সুষ্ঠু নির্বাচন, ক্ষমতায় বসানো-নামানো-দমানোসহ নানান কাজের কৃতিত্বটা তাদের ঝুড়িতে তুলে দেওয়ার এ প্রবণতা কমার আলামত নেই। বরং আরও বৃদ্ধির কারণ ও পরিস্থিতি বিদ্যমান, চলমান। ক্ষমতায় যেতে তাদের কৃপা, টিকে থাকতে তাদের দয়া, ক্ষমতা থেকে নামাতে তাদের মহানুভবতার এ সন্ধিক্ষণ সামনে আরও কত দূর গড়াবে এখনই বলা যাচ্ছে না। অতীত-বর্তমানের বহু ঘটনায় প্রমাণিত বিদেশিরা কোনো বিষয়ে বেশি পদক্ষেপ নিলে ফলাফল নানান দিকে চলে যায়। পক্ষে-বিপক্ষে দুদিকেই উপাদান তৈরি হয়। যার নানা দৃষ্টান্ত এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে নিয়ে অতি উৎসাহ ও অতি বিরোধিতার ফলও এরই মধ্যে স্পষ্ট। গুমের শিকার পরিবারগুলোর সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলামের বাসায় তার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য গেলে সেখানে সরকারি মহলের যোগসাজশে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির ফল ভুগতে হচ্ছে। আবার তাকে অ্যাকটিভ করার জেরও পড়ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের পরামর্শ ও নানা তাগিদের পেছনে রয়েছে অনেক উদ্দেশ্য-বিধেয়। ভারত-চীনের তো আরও বেশি।
লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন
সাংবাদিক, লেখক ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী সিরাজুদ্দীন হোসেন ১৯২৯ সালের ১ মার্চ মাগুরা জেলার শালিখার অন্তর্গত শরশুনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৩ সালে ঝিকরগাছা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন ও ১৯৪৫ সালে যশোর মধুসূদন কলেজ থেকে আইএ পাস করার পর তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ১৯৪৭ সালে বিএ পাস করেন। সিরাজুদ্দীন হোসেন সাংবাদিক হিসেবে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় প্রথমে কলকাতায় এবং পরে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত একই পত্রিকায় ঢাকায় কাজ করেন। ওই বছর তিনি ফ্রাঙ্কলিন পাবলিকেশন্স-এ যোগ দেন। তিনি ইত্তেফাক পত্রিকার বার্তা সম্পাদক (১৯৫৪-১৯৬৬, ১৯৬৯), সংবাদ সংস্থা পিপিআই-এর ব্যুরো চিফ (১৯৬৬-১৯৬৯) এবং দৈনিক ইত্তেফাক-এর নির্বাহী সম্পাদক (১৯৭০-১৯৭১) হিসেবে কাজ করেন। স্পষ্টবাদী, সত্যনিষ্ঠ এবং নির্ভীক সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন ছয় দফা আন্দোলন এবং পরে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে সক্রিয়ভাবে কাজ করেন। সাংবাদিক ও লেখক হিসেবে তিনি বাঙালির শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে লিখেছেন, কাজ করে গেছেন প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চালাকালীন তিনি অধিকৃত ঢাকায় ইত্তেফাকে দুঃসাহসিক সব সম্পাদকীয় লেখেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহায়তা দেন এবং অবরুদ্ধ বাংলাদেশের সংবাদ সংগ্রহ করে মুজিবনগর সরকারের কাছে নিয়মিত প্রেরণ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র ছয়দিন আগে ১৯৭১ সালে ১০ ডিসেম্বর হানাদার পাকিস্তানি সৈন্যরা তার চামেলীবাগের বাসা থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায়। পরে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
নীরব ঘাতক ডায়াবেটিস। এটি হচ্ছে বহুমূত্র রোগ। প্রতিবছর পৃথিবীর মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হলে বুঝতে হবে একজন মানুষ ‘বহুমূত্র’ বা ‘মধুমেহ’ (ডায়াবেটিস) রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। রোগের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অনিয়মিত লাইফস্টাইল এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে, মধুমেহ রোগ দেখা দিতে পারে। একই সঙ্গে চিকিৎসকরা বলছেন- মুটিয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ, শুধু বসে বসে কাজ করা, শরীরচর্চা-পরিশ্রম ও খেলাধুলা না করার কারণে ডায়াবেটিস বেড়ে যাচ্ছে। মানসিক চাপ মানুষের ডায়াবেটিস বাড়ায় কি না সে বিষয়ে কোনো গবেষণা হয়নি। তবে কমপক্ষে ছয়-সাত ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। কম ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। সপ্তাহে ১৫০ মিনিট হাঁটা ডায়াবেটিসের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সব স্বাস্থ্যসংস্থার নির্দেশিকায় রয়েছে। নিয়মিত হাঁটলে সুগার নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে থাকে। ওষুধের পরিমাণ ও ডোজ কম লাগে। হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি হয়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিয়ন্ত্রণে থাকে ওজনও। অলস জীবন ছেড়ে কর্মব্যস্ত জীবনযাপন করতে হবে। খেলাধুলা করতে হবে। হাঁটতে হবে নিয়মিত। বেশি করে খেতে হবে ফল ও শাকসবজি। ভারসাম্য নিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে শর্করা, প্রোটিন ও ফ্যাটের মধ্যে।
গতকাল দেশ রূপান্তরের শেষ পাতায় প্রকাশিত ‘৬২% মানুষ জানে না ডায়াবেটিসে আক্রান্ত’ শিরোনামে সংবাদের মাধ্যমে জানা যায় দেশের ৬১ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ জানে না তাদের ডায়াবেটিস রয়েছে। অর্থাৎ ১০০ রোগীর মধ্যে ৬২ জনই জানে না তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। গত বছরের এপ্রিলে প্রকাশিত বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার একটি গবেষক দলের এক গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এমন তথ্য জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ডায়াবেটিস রোগবিশেষজ্ঞ ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, সারা দেশের বিভিন্ন শহরে এই গবেষণা করা হয়। তাতে দেখা গেছে, ৬২ শতাংশ রোগী তাদের ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতন না। অথচ এসব রোগীর কিছুদিন পর কিডনি ও চোখ নষ্ট হবে, হার্ট অ্যাটাক হবে, স্ট্রোক হবে। কাজেই তাদের চিকিৎসা শুরু করতে হবে। কিন্তু যেহেতু তার রোগ সম্পর্কে জানে না, তাই সে চিকিৎসাও করাবে না।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, মানুষকে জানতে হবে ডায়াবেটিস একবার হলে আপাতত নিরাময়যোগ্য নয়, রোগটি প্রতিরোধ করতে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কিন্তু তারা তো জানেই না, তারা রোগী। তাহলে তারা প্রতিরোধ করবে কীভাবে? এই দুটো কারণে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা খুব প্রয়োজন। এ ব্যাপারে ডা. শাহজাদা সেলিম জানান, ২০২০ সালের তথ্যের ভিত্তিতে ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন ২০২১ সালে যে হিসাব প্রকাশ করেছিল, তাতে বাংলাদেশে ১ কোটি ৩১ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলে উল্লেখ করা হয়। এরপর বারডেম একটা গবেষণা করে। সেখানে জনসংখ্যার ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলে উল্লেখ করা হয়। সেই হিসাবে বাংলাদেশে তিন কোটির বেশি ডায়াবেটিস রোগী। ফলে প্রকৃত রোগীর সংখ্যা কত, তা এখনো সুস্পষ্ট নয়। রোগীর প্রকৃত সংখ্যাটা জানা জরুরি।
ডায়াবেটিস ঝুঁকির মূল কারণ, তীব্র ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস বলে মত দেন ডা. শাহজাদা সেলিম। ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা পেতে মুখের কাজ কম করার ও পায়ের কাজ বেশি করার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। এ ছাড়া ডায়াবেটিসের কারণে মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে, নষ্ট হয়ে যেতে পারে কিডনি। চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়াবেটিসের এত ঝুঁকি থাকার পরও যত মানুষ এই রোগে আক্রান্ত তাদের অর্ধেকেরও বেশি এই রোগটি সম্পর্কে সচেতন নন। তবে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে কিছু নিয়মনীতি মেনে চললে অনেক ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
বংশগতভাবে এই রোগে আক্রান্ত হলে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। নিজদোষে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগেই সতর্কতা দরকার। ভুলে গেলে চলবে না সচেতনতা এবং আত্মনিয়ন্ত্রণই ডায়াবেটিস থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়।
রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন সুলতান মাহমুদ। ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে ধানমন্ডি এলাকায় ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন এ শিক্ষক। এখনো সেই ফ্ল্যাটের ঋণ পুরোপুরি পরিশোধ হয়নি। সুলতানের ব্যবহৃত ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা দুটি। একটি বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক আর অন্যটি প্রাইম ব্যাংকের।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা জানতে চাইলেন তিনি জানান, ফ্ল্যাটের কিস্তি পরিশোধ, সন্তানদের বেতন আর ফ্যামিলি খরচ পরিশোধ সব মিলিয়ে প্রায় প্রতি মাসের শেষেই আর্থিক সংকট তৈরি হয়। এ সংকট থেকে বাঁচতেই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন। তবে মাসের শুরুতে বেতন পেয়েই পরিশোধ করে দিচ্ছেন ক্রেডিট কার্ডের বিল। এতে অতিরিক্ত সুদও গুনতে হচ্ছে না তাকে।
সুলতান মাহমুদ বলেন, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার না করলে হয়তো প্রতি মাসেই আমার বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধার করে চলতে হতো। এতে সম্মানহানিরও ঝুঁকি থাকে। কিন্তু এখন ব্যাংক থেকে স্বল্প সময়ের জন্য ধার নিয়ে তা আবার ফেরত দিচ্ছি। এতে কারও কাছে হাত পাততে হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, একসময় মানুষ ক্রেডিট কার্ডের প্রতি কম আগ্রহী হলেও বর্তমানে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে দেশের ৩৯টি ব্যাংক কার্ড সেবা দিচ্ছে। গত মার্চ শেষে এসব ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ লাখ ৭৮ হাজারটি। ঠিক চার বছর আগে ২০১৯ সালে মার্চ শেষে এ কার্ডের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ৪৯ হাজারটি। অর্থাৎ মাত্র চার বছরের ক্রেডিট কার্ড বেড়েছে ৮ লাখ ২৮ হাজার বা ৬১ দশমিক ৪২ শতাংশ। এই একই সময়ে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। গত মার্চে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের মার্চে এ লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ চার বছরের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
শুধু সুলতানই নন, ব্যবসায়ী আমিরুল, সাংবাদিক আক্তার আর চাকরিজীবী তারিকুলও একই কারণে ব্যবহার করছেন দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ক্রেডিট কার্ড। তাদের মতে, ক্রেডিট কার্ডের কারণে সহজ হয়েছে তাদের জীবনযাত্রা। তবে উল্টো চিত্রও আছে। করোনা মহামারীর সময় চাকরি হারানো আজাদুল ইসলাম ক্রেডিট কার্ডে ধার নিয়ে এখন বিপাকে রয়েছেন। তিনি বলেন, করোনার সময় প্রথম দিকে আমাদের বেতন কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়। সে সময় সংসারের খরচ বহন করতে ক্রেডিট কার্ডের সহায়তা নিয়েছেন। যে ঋণ এখন পর্যন্ত টানতে হচ্ছে তাকে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ হবে বলে আশাবাদী এ গ্রাহক।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ক্রেডিট কার্ড জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে এর ‘ধার’ নেওয়ার পদ্ধতির জন্য। পাশাপাশি পণ্যের দামে ডিসকাউন্টের পাশাপাশি কিস্তিতে পরিশোধের পদ্ধতিও এ ব্যাপ্তি বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। যেটি গ্রাহককে এককালীন বেশি দামের পণ্য কিনতে সহায়তা করে। এবার জেনে নেওয়া যাক ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা-অসুবিধাগুলো।
পণ্য কিনতে কিস্তি সুবিধা : ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কিস্তিতে পণ্য কিনতে একসঙ্গে সব টাকা পরিশোধ করতে হবে না। বিনা সুদে বা নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদে গ্রাহক কয়েক মাসের সমান কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। যদিও গ্রাহক তার ক্রেডিট লিমিটের চেয়ে বেশি দামি পণ্য কিনতে পারবেন না। আর কিস্তির টাকাও পরিশোধ করতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। এতে কারও কাছে টাকা ধার করার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে পরিশোধের ক্ষেত্রে সময়সীমা পার হয়ে গেলে জরিমানা গুনতে হতে পারে।
ঋণের সুবিধা : কিছু ক্রেডিট কার্ড, বিশেষ করে বিদেশে শূন্য শতাংশ সুদে ঋণ দেয়। এসব ক্ষেত্রে মাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ মূল্য পরিশোধ করতে হয়, যা বেশ সুবিধাজনক। আবার কোনো কোনো কার্ডে ঋণে সুদের হার অনেক থাকে। এ ক্ষেত্রেও একটা সুবিধা আছে। বোঝা এড়াতে দ্রুত ঋণ পরিশোধ করা হয়। নিজস্ব ঋণ থাকে না।
পরিবর্তনযোগ্য : এসব ক্ষেত্রে সঠিক কার্ডটি বেছে নিতে পারা জরুরি। একটি ভুল কার্ড দিনের পর দিন ব্যবহার করলে ঋণের বোঝা শুধু বাড়তেই থাকবে। তবে এটা বুঝতে ব্যাংকের পুরো শর্তাবলি মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। যদিও কার্ডের ধরন পরিবর্তন করা যায় খুব সহজে। কারণ প্রতিটি ব্যাংকে বিভিন্ন প্রকারের ক্রেডিট থাকে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী কার্ড যেমন নিতে পারবেন তেমনি পরবর্তী সময়ে সেটির ধরন পরিবর্তনও করতে পারবেন। আবার নির্দিষ্ট পরিমাণ লেনদেন করলে বাৎসরিক ফি এড়ানো যায়। যেমন অনেক ব্যাংকের কার্ডে অন্তত ১৮ বার কেনাকাটা করলে বাৎসরিক ফি দিতে হয় না। ব্যাংকভেদে এ নিয়মের ভিন্নতা রয়েছে। দেশের বাইরেও ব্যবহার করা যায় : ক্রেডিট কার্ড ইন্টারন্যাশনাল হলে সেটি ব্যবহার করা যাবে বিশ্বের অনেক দেশেই। টাকার পাশাপাশি ডলারও ধার করে ব্যবহার করা যায়। হোটেল বুকিং, বিমানভাড়া, রেস্টুরেন্ট ও কেনাকাটায় মেলে নানা ছাড় ও পয়েন্ট জেতার সুযোগ। বিদেশে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে যা খরচ করবেন, মাস শেষে আপনার সেই পরিমাণ বিল হিসেবে ইস্যু করবে ব্যাংক। তারপর সুদ বা জরিমানা এড়াতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই বিল পরিশোধ করতে হবে।
অফারের ছড়াছড়ি
বিভিন্ন সময়ে ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন অফার দেওয়া হয়। যেমন ‘ক্যাশ ব্যাক অফার’, ‘স্পেশাল ডিসকাউন্ট’। দেশের বাইরে বেড়াতে গেলে, হোটেলে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারে অনেক সময়ই মূল্যছাড় দেওয়া হয়। প্লেনের টিকিট কাটতেও অনেক সময় পাওয়া যায় বিশেষ মূল্যছাড়। আর অনলাইন কেনাকাটার জন্যও এখন ক্রেডিট কার্ড বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন সময়ে দেখা যায়, নামিদামি হোটেল ও রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়ায় ছাড় এবং অফার দিয়ে থাকে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আবাসিক হোটেলগুলোও ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে থাকে। একটি কিনলে একটি ফ্রি (বাই ওয়ান গেট ওয়ান) অফারও দেওয়া হয়। এ ছাড়া রয়েছে মূল্যছাড়সহ নানা অফার। অনেকেই পরিবার নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে ঘুরতে যান। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও হোটেলের নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হোটেল বুক করা যায়। এ ক্ষেত্রেও আপনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারেন। তবে বিদেশে হোটেল বুকিংয়ের টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রে ডুয়েল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড প্রয়োজন হবে।
অসুবিধা
ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনি অসুবিধাও কম নয়। এজন্য বেশ সতর্ক হতে হবে গ্রাহককে। একটু বেখেয়ালি হলেই পড়তে পারেন ঋণের ফাঁদে।
ঋণের ফাঁদ
ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার সবসময়ই একটি ঋণ নেওয়ার মাধ্যম। মনে রাখতে হবে অর্থ খরচের ৪৫ দিনের মধ্যে সেটি পরিশোধ করতেই হবে। অন্যথায় ঋণের ওপর সুদ শুরু হবে। যা ঋণের পরিমাণ প্রতিদিন বাড়িয়ে দেবে। তাই কিছুটা ঝুঁকি থেকেই যায়।
লুক্কায়িত ব্যয়
সুদের হার পরিশোধই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের একমাত্র ব্যয় নয়। সময়মতো মাসিক বিল পরিশোধ না করলে গ্রাহককে জরিমানা গুনতে হতে পারে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে নগদ অর্থ তুলতে এর জন্য নির্দিষ্ট হারে ফি দিতে হতে পারে। সরাসরি বুথ থেকে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে নগদ অর্থ উত্তোলন করতে গেলে বাড়তি ফি এবং ওইদিন থেকেই (এ ক্ষেত্রে ৪৫ দিন সময় দেওয়া হয় না) সুদ গণনা শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে চেক দিয়ে টাকা সঞ্চয় হিসেবে স্থানান্তর করে তারপর সেটি নগদায়ন করলে ৪৫ দিন সময় পাওয়া যাবে।
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলতে নেমে হিটস্ট্রোকে মাঠেই রিয়া আক্তার (১০) নামের এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার দুপুরে উপজেলার সহদেবপুর ইউনিয়নের দ্বীমুখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এদিকে মঙ্গলবারের (৩০ মে) খেলায় সদর উপজেলার এক ছাত্রী মাঠে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
নিহত রিয়া আক্তার কালিহাতীর ছুনুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী এবং একই গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে।
ছুনুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের সঙ্গে দ্বীমুখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলা ছিল। রিয়া মাঠে খেলতে নেমে হঠাৎ মাটিতে পড়ে যায়। পরে তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোঘণা করেন।
প্রধান শিক্ষক বলেন, মরদেহ সোমবারই দাফন করা হয়েছে। আমরা রিয়ার বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা প্রকাশ করছি।
টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রচণ্ড গরমে খেলতে গিয়ে মেয়েটি মারা গেছে। মঙ্গলবারের খেলায় সদর উপজেলার একটি মেয়ে মাঠে বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বঙ্গমাতা টুর্নামেন্টটি আগামী ১২ জুনের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে।
প্রচণ্ড রোদে ছাত্রীদের খেলতে অসুবিধার বিষয়টি আমরা ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাকে অবগত করেছি।
রিয়া আক্তারকে খেলতে নামতে বাধ্য করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি অস্বীকার করেছেন।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সুজা উদ্দিন তালুকদার বলেন, এখনকার বাচ্চারা রোদের মধ্যে এ ধরনের খেলায় অভ্যস্ত নয়। প্রচণ্ড রোদে হঠাৎ করে মাঠে খেলতে নামলে তাদের জীবন ঝুঁকি থাকে। রোদের তাপে অতিরিক্ত ঘাম, ডিহাইড্রেশন এমনকি হিটস্ট্রোকে তাৎক্ষণিক মৃত্যু হতে পারে। তাই রোদের মধ্যে এভাবে বাচ্চাদের দিয়ে খেলানো উচিত নয়। বিষয়টি নীতি নির্ধারকদের বিবেচনা করা দরকার।
মহামারী করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বের প্রায় সব দেশই অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি থেকে জনসাধারণকে কিছুটা স্বস্তি দিতে ঋণের সুদের হার বাড়িয়ে দেওয়াসহ নীতিনির্ধারণী নানা ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। বাংলাদেশও এমন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। বিদেশি মুদ্রার সংকটসহ মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে শর্তসাপেক্ষে ধার নেওয়া ছাড়াও আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এখনো এর সুফল মেলেনি। এমন সংকটের মধ্যেই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ বাজেট উপস্থাপন হতে যাচ্ছে।
এবারের বাজেট সব দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে সামনে নির্বাচন, অন্যদিকে বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক চাপে চিড়েচেপ্টা দেশের অর্থনীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম, আইএমএফের শর্তের জাল নানান বাস্তবতার মধ্যে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বিশাল বাজেট প্রস্তাব পেশ করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য বরাদ্দ করা অর্থ পুরোপুরি খরচ করতে না পারার শঙ্কার মধ্যেই আরও বড় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বেশি। যদিও অর্থনীতিবিদরা এ বাজেটকে বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে মনে করছেন।
এবারের বাজেটের স্লোগান ‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’। এটি মুস্তফা কামালের দায়িত্বকালে পঞ্চম, আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম ও বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট। ১ জুন সংসদে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার কথা রয়েছে অর্থমন্ত্রীর। আজ বুধবার থেকে বাজেট অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে।
দেশের অর্থনীতি যখন চাপের মুখে, তখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে ঋণ চেয়েছিল বাংলাদেশ। নানান চড়াই-উতরাই শেষে গত ৩০ জানুয়ারি ৪৭ কোটি ডলার ছাড়ও করে ঋণদাতা সংস্থাটি। কিন্তু ঋণ দেওয়ার আগে নানান শর্ত জুড়ে দেয় তারা। এর মধ্যে ‘দুর্বল’ এনবিআরকে সবল করার বিশেষ শর্ত ছিল। জিডিপির তুলনায় বাংলাদেশের কর আদায়ের হার ৯ শতাংশের মধ্যে। ৩৮টি শর্তের মধ্যে কর আদায় বাড়ানোর অন্যতম শর্ত ছিল তাদের। এবারের বাজেটেও কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই কর আদায়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আদতে কতটুকু বাস্তবসম্মত তা নিয়েও সন্দিহান তারা।
বাজেটের আয়ের খাত বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজস্ব থেকে আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদানসহ এর আকার দাঁড়াবে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। রাজস্ব বোর্ডের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রতি বছরের মতো এবারও বাড়ছে। এবারের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআরবহির্র্ভূত কর ২০ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কর ব্যতীত অন্য আয় হবে ৫০ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদানের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাজেটের যে লক্ষ্যমাত্রার হিসাব ধারা হয়েছে তা বাস্তবসম্মত নয়। গত বছরের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল সেটি থেকে বাড়িয়ে তারা বাজেট ধরছে। তবে আমি মনে করি, বাজেটে পাস হওয়ার পর তা কতটুকু কার্যকর হয়েছে সেই হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা হওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রার কতটা আদায় হয়েছে তা বিবেচনা করে নতুন করে বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা বাস্তবসম্মত নয়। সম্পদ আছে মনে করে যদি ব্যয় কাঠামো তৈরি করা হয়, তাহলে যে অর্থ নেই তাকে ব্যয় মনে করে দেখানো হবে। তার মানে হলো, সম্পদ না থাকলে ব্যয়ও হবে না।’
ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘এই মুহূর্তে লোক দেখানোর মতো একটা হিসাব দেখা যায়। আয়ও হবে না, ব্যয়ও হবে না। আমার ভাষায় এটি পরাবাস্তব বাজেট।’
ব্যয়ের খাত : অন্যান্য বারের মতো এবারও আয়ের তুলনায় ব্যয়ের খাত বেশি হচ্ছে। এবারের ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বাজেটে পরিচালন ব্যয় অর্থাৎ আবর্তক ব্যয়, মূলধন ব্যয়, অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ও বৈদেশিক ঋণের সুদসহ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। তাছাড়া এবারের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের (এডিপি) ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এডিপিবহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পগুলোর ব্যয় ৭ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হওয়ায় অনুদানসহ ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।
ঘাটতি মেটানো হবে যেভাবে : বাজেটের ঘাটতি মেটানো হবে মূলত অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে। এবারের বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা প্রথমবারের মতো ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বিদেশিক ঋণদাতাদের কাছ থেকে ঋণ আনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের ভরসা এবারও ব্যাংক খাত। বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকেই নেওয়া হবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার ঋণ। ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেবে ৮৬ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেবে ৪৫ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা।
তাছাড়া ব্যাংক থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলেও এবারের বাজেটে ব্যাংকবহির্ভূত ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে। এবারের ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে সরকার ঋণ নেবে ২৩ হাজার কোটি টাকা। গত বছরও এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা। এবারের সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নেবে ১৮ হাজার কোটি টাকা, আগের অর্থবছরে যা ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা।
জিডিপি : আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের বাজেটে সংশোধিত জিডিপির চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপির আকার ৪৪ লাখ ৩৯ কোটি ২৭৩ কোটি টাকা। এবারের বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ আর ভোক্তা মূল্যসূচক বা মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমান পরিস্থিতিতে জিডিপি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
আগামী অর্থবছরের বাজেট সরকারের জন্য সব দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফের যে ৩৮টি শর্ত রয়েছে, অর্ধেকের বেশিই বাস্তবায়ন করতে হবে এ অর্থবছরে। সরকারকে বেঁধে দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রিজার্ভের যথাযথ গণনা পদ্ধতি প্রণয়ন, প্রতি তিন মাস অন্তর জিডিপির হার নির্ধারণ, সুদের হারে করিডোর পদ্ধতি তৈরি, মুদ্রা বিনিময় হারের একটি দর রাখাসহ কয়েকটি শর্ত পূরণের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কিত। এগুলোর কিছু বাস্তবায়নের ঘোষণা আসবে আগামী জুন মাসে মুদ্রানীতি ঘোষণার সময়, কিছু আসবে জুলাইয়ে। আইএমএফের চাওয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ।
আকাশযাত্রা নিরাপদ ও শান্তিময় করাই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কেবিন ক্রুদের একমাত্র ব্রত। ফ্লাইট ছাড়ার পর মধ্য আকাশে আপনার পাশে দাঁড়িয়ে যিনি স্মিত হেসে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলেন, স্যার আপনার সিট বেল্ট বাঁধতে হবে। এর কিছুক্ষণ পর আরেকজন এসে বলবেন, চা কফি, কিংবা অন্য কিছু? এরপর যারা খাবার দেবেন, আবার সুনিপুণভাবে সেগুলো গুছিয়ে নিয়ে যাবেন, আপনার ঘুম পাড়ানোর জন্য পরিবেশ নিশ্চিত করবেন, সেটাই কেবিন ক্রুদের পেশা।
তারাই কেবিন ক্রু। যারা উড্ডয়ন থেকে অবতরণ পর্যন্ত সময়টুকু সার্বক্ষণিক সেবা শুশ্রূষা নিশ্চিত করেন। ছোটখাটো অসুখ-বিসুখ করলে কিংবা ঘরে অসুস্থ স্বজন রেখে আসলেও আপনার সামনে হাসিমুখে দাঁড়াতে হয়। এটাই তাদের মূল দায়িত্ব। বিশ্বব্যাপী এটাকে বলা হয় ‘গ্লামার জব ইন দ্য স্কাই‘।
আজ ৩১ মে আন্তর্জাতিক কেবিন ক্রু দিবস। কানাডা ইউনিয়নের উদ্যোগে ২০১৫ সালে বিশ্বে প্রথম কেবিন ক্রু দিবস পালন করা হয়। প্রথম ৪৮০ জন কেবিন ক্রু নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দিবসটি উদযাপন করা হয়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স একমাত্র রাষ্ট্রীয় বিমান সেবা প্রতিষ্ঠান- যেখানে কাজ করছেন এক ঝাঁক অভিজ্ঞ ও নবীন কেবিন ক্রু। যারা পরিবার আত্মীস্বজনকে দূরে রেখে বিভিন্ন উৎসব, ছুটি ও বিশেষ দিনেও নিজেদের আনন্দকে বিসর্জন দিয়ে সাধারণ কর্মঘণ্টার বিপরীতে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই যাত্রীসেবা নিশ্চিত করে যাচ্ছেন।
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী উড়োজাহাজ নিয়ে দেশ বিদেশে বিভিন্ন গন্তব্যে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও সাহসিকতার স্বাক্ষর রাখছেন প্রতিনিয়ত। অতীতে বিমানের দেশে ও দেশের বাইরে জরুরি অবতরণে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ক্রুদের প্রচেষ্টায় সকল যাত্রীদের নিরাপদে রাখা সম্ভব হয়েছে।
সম্প্রতি বিমান ছিনতাই ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধেও বিমান কেবিন ক্রুরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়া অসুস্থ যাত্রীদের বিশেষ সেবা প্রদান, আকাশপথে প্রসূতি যাত্রীদের সন্তান প্রসবে সহযোগিতা ও গুরুতর আহত যাত্রীদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানসহ বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতার স্বাক্ষর তারা রেখেছেন। আকাশপথে কেবিন ক্রুদের নিবিড় সেবায় অসংখ্যা অসুস্থ যাত্রী সুস্থতার সঙ্গে তাদের গন্তব্যে অবতরণ করতে সক্ষম হয়েছে। এজন্য কেবিন ক্রু একটি অনন্য সাধারণ পেশা হিসেবে পরিচিত।
দিবসটি উপলক্ষে আজ সীমিত পরিসরে বিশেষ আয়োজন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কেবিন ক্রু অ্যাসোসিয়েন। এবার হজের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকায় তারা সীমিত করেছে সব কর্মসূচি। সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম দস্তগীর বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের সমস্ত কেবিন ক্রুকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, এ উপলক্ষে আজ বুধবার কেবিন ক্রু অ্যাসোসিয়েশন অফিসে একটি কেক কেটে সব সদস্যকে শুভ্চ্ছো জানানো হবে। দিবসটিতে তাৎপর্য নিয়ে মতবিনিময় ও সবার কুশলাদি বিনিময় করে করোনার মাঝেও এই কঠিন দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে সবাইকে ব্রতী হওয়ার আহ্বান জানানো হবে। পেশা আকর্ষণীয় ও সম্মানজনক হিসেবে বিবেচিত।
সুশিক্ষিত ও আলট্রা মডার্ন তরুণ-তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে থাকা এই পেশার প্রতি সাধারণ মানুষের কৌতূহলও লক্ষ্যণীয়। বিমানে কেবিন ক্রুদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে দস্তগীর বলেন, বিশ্বব্যাপী এটা অবশ্যই মর্যাদাসম্পন্ন পেশা। বিমান সেই মর্যাদা সমুন্নত রেখেছে। এখন আমাদের দাবি ২০১৮ সালের এডমিন অর্ডার অনুযায়ী আমাদের সকল সুযোগ-সুবিধা পুরোপুরি প্রদান করা হোক।
কেবিন ক্রুদের পেশাদারিত্ব ও দায়িত্ববোধ সম্পর্কে গোলাম দস্তগীর জানান, কেবিন ক্রুদের দুইভাবে চিহ্নিত করা যায়। প্রথমত ফেস অব দ্য এয়ারলাইন হিসেবে। কারণ কেবিন ক্রুদের আচরণ ও পেশাদারিত্বই এয়ারলাইনসগুলোর যাত্রী ধরে রাখা এবং নতুন যাত্রীদের আকৃষ্ট করা। দ্বিতীয়ত, লাস্ট লাইন অব দ্য ডিফেন্স হিসেবে। কারণ আকাশে উড্ডয়নের পরে যে কোনো জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য কেবিন ক্রু ছাড়া আর কোনো সিকিউরিটি পার্সোনাল থাকেন না। সমগ্র পৃথিবীতে ঝুঁকিপূর্ণ যেসব পেশা রয়েছে তন্মধ্যে কেবিন ক্রু অন্যতম। বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ক্রুরা বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪৩ হাজার ফুট উচ্চতায় স্বল্প সুবিধা সংবলিত পরিবেশে কেবিন ক্রুরা তাদের দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
একজন ভ্রমণকারীর ভ্রমণকে সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিরাপদ করে তোলাই কেবিন ক্রুদের মূল কর্তব্য। প্রতিটি সফল উড্ডয়ন ও অবতরণ একজন কেবিন ক্রুকে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে পৃথিবীতে ভ্রমণপিপাসু মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যবসায়িক ভ্রমণ, রাজনৈতিক ভ্রমণ, চিকিৎসার জন্য ভ্রমণ, আনন্দ ভ্রমণ ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে আকাশযাত্রা বেড়েই চলেছে। শিশু থেকে শুরু করে বয়োজ্যেষ্ঠ সবাই থাকেন কেবিন ক্রুদের ভ্রমণসঙ্গী। কেবিন ক্রুদের বলা হয়, ফার্স্ট রেসপনডার।
দস্তগীর বলেন, কেবিন ক্রুদের হার্টঅ্যাটাক, হাইপোক্সিয়া, হাইপারভেন্টিলেশন, হাইপোগ্লাসেমিয়া, হাইপারগ্লোসিমায়, চকিং, নোজ ব্লিডিং এবং প্রেগন্যান্ট ডেলিভারির দায়িত্বও পালন করতে হয় অনেক ক্ষেত্রে। পেশাদারিত্বের এই দক্ষতায় সত্যিকার অর্থেই আকাশ হয়ে উঠুক শান্তির নীড়। বিমান আকাশে ওড়ার একঘণ্টা আগে ক্যাপ্টেন কেবিন ক্রুদের আবহাওয়া ও অন্যান্য বিষয় সংক্রান্ত তথ্য জানিয়ে দেয়।
এছাড়া পরিচ্ছন্নতা, সি পকেট সংক্রান্ত তথ্য, খাবার-দাবারের সরঞ্জাম পৌঁছানো, জরুরি ইক্যুইপমেন্ট, ফার্স্ট এইড প্রভৃতি ঠিকঠাক আছে কিনা এসব কেবিন ক্রুদের দেখে নিতে হয়।
বিমানে ওঠার পর যাত্রীদের টিকিট মিলিয়ে দেখা, কেবিন লাগেজ সিটে পৌঁছাতে সহায়তা করা, যাত্রীদের সিট দেখিয়ে দেওয়া এবং বিমান আকাশে ওড়ার আগে যাত্রীদের সিট বেল্ট লাগাতে বলাও কেবিন ক্রুদের কাজের পর্যায়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, বিমান ওঠানামা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় পাইলটের হয় কেবিন ক্রুদের বলতে হয়। এই পেশার যে লাইফ স্টাইল এবং রোমাঞ্চকর অনুভূতি।
আজ বুধবার বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। বিকল্প খাদ্য ফসল উৎপাদন ও বিপণনের সুযোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং টেকসই ও পুষ্টিকর ফসল চাষে তামাক চাষিদের উৎসাহিত করতে এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘গ্রো ফুড, নট টোব্যাকো’।
তামাক উৎপাদনে কোম্পানির কূটকৌশল উন্মোচনও এবারের বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। ‘তামাক নয়, খাদ্য ফলান’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে দিবসটি উদযাপিত হবে। দিবসটি উদযাপন উদযাপন উপলক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের আওতাধীন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (এনটিসিসি) প্রতিবছরের মত এবারও যথাযথ গুরুত্বের সাথে দিবসটি উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে সকাল ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়য়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে।
তামাক চাষ কৃষকের স্বাস্থ্য, মাটির স্বাস্থ্য এবং সার্বিকভাবে গোটা জনস্বাস্থ্য ও পৃথিবীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি সাধন করে। দীর্ঘমেয়াদে বৈশ্বিক প্রতিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং খাদ্য সংকট সৃষ্টিতেও ভুমিকা রাখে তামাক। বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান খাদ্য সংকটের পিছনে সংঘাত-যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯ মহামারির অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবের পাশাপাশি তামাক চাষের একটি প্রভাব রয়েছে। বর্তমানে, পৃথিবীর ১২৫টিরও বেশি দেশের প্রায় ৪ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয় এবং শীর্ষ তামাক উৎপাদনকারী দেশগুলোর অধিকাংশই নিম্ন ও মধ্যম আয়ভুক্ত দেশ।
অন্যদিকে পৃথিবীব্যাপী উৎকৃষ্ট মানের জমি ক্রমবর্ধমানহারে তামাকচাষে ব্যবহৃত হওয়ায় খাদ্য ফসলের জমি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। এসব জমি খাদ্যফসল ফলানোর কাজে ব্যবহার করা গেলে লাখ লাখ মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণের পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তার সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব।
বাংলাদেশে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ খুবই কম, মাত্র ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৭ হাজার একর। অথচ তামাক চাষে ব্যবহৃত মোট জমির পরিমাণের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। বিশ্বের মোট তামাকের ১.৩ শতাংশই উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। তামাকচাষের কারণে খাদ্য ফসলের জমি ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশে রবি মৌসুমের প্রধান খাদ্য ফসলগুলোর মধ্যে বোরো, গম এবং আলু অন্যতম এবং এ মৌসুমেই তামাক চাষ হয়ে থাকে।
অন্যদিকে বাংলাদেশে তামাকজনিত অসুস্থতায় প্রতি বছর ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। দেশে মৃত্যু এবং পঙ্গুত্বের প্রধান চারটি কারণের একটি তামাক। তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা ব্যয় ও কর্মক্ষমতা হ্রাসের আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। তামাকের এসব ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করেই তামাক নিয়ন্ত্রণকে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের অন্তর্ভুক্ত (টার্গেট ৩এ) করা হয়েছে। কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে তামাকের সরবরাহ এবং চাহিদা কমিয়ে আনাই হতে পারে তামাকের নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে ওঠার সঠিক উপায়।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, তামাক চাষে অতিরিক্ত যে লাভের কথা প্রচার করা হয়, তার প্রায় সবটাই বানোয়াট। আপাতদৃষ্টিতে তামাক চাষে বেশি আয় উপার্জন হলেও এই আয় থেকে পারিবারিক শ্রমের পারিতোষিক, জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত নিজস্ব গাছের বা কাঠের দাম, পরিবেশের ক্ষতি, স্বাস্থ্য ব্যয় ইত্যাদি বাদ দিলে তামাক চাষে লাভের বদলে ক্ষতি হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, তামাক চাষে নেট সোশ্যাল রিটার্ন ঋণাত্মক, প্রতি একরে ক্ষতি ৯১৬.১১ ডলার।
টোব্যাকো অ্যাটলাসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় ৩১ শতাংশ বন নিধনের পেছনে তামাক চাষ দায়ী। গবেষণায় দেখা গেছে কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার তিনটি উপজেলায় তামাকপাতা শুকানোর (কিউরিং) কাজে এক বছরেই প্রায় ৮৫ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি কাঠ ব্যবহৃত হয়েছে। স্থানীয় বন থেকে এইসব কাঠ সংগ্রহ করায় পাহাড়গুলো বৃক্ষহীন হয়ে পড়ছে এবং সেখানকার অধিবাসীরা আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধ্বসের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া তামাক চাষে ব্যবহৃত অতিরিক্ত কীটনাশক ও সার বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে নিকটস্থ জলাশয়ে মিশে মৎস্য উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তামাক বিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, তামাক চাষের ক্ষতি থেকে দৃষ্টি সরানোর জন্য তামাক কোম্পানিগুলো প্রায়শই নিজেদের অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব হিসেবে উপস্থাপন করে। তথাকথিত সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কর্মসূচির (সিএসআর) মাধ্যমে তামাক কোম্পানিগুলো তাদের ঘটানো ক্ষতি আড়াল করে এবং দায় এড়ানোর চেষ্টা করে।
তিনি বলেন, তামাক জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য হুমকি। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করণের মাধ্যমেই এসব ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের ঘোষণা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।