
বাংলাদেশে নির্বাচনের ঢোলে বাড়ির আওয়াজ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের সীমানার বাইরেও। সুষ্ঠু ভোটের দাবির সঙ্গে ওয়াদাও তুঙ্গে। লক্ষণীয় বিষয়, এ দাবি ও ওয়াদার বেশির ভাগই বিদেশিদের কাছে। বিএনপির বিদেশিদের কাছে নালিশ রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচিত। সেই সঙ্গে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিটি স্থানিকের আওতা ছাড়িয়ে বৈশ্বিক করে দেওয়ার চেষ্টাও ব্যাপক। যার অর্থ, সুষ্ঠু-অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন শুধু বাংলাদেশের বিষয় নয়, এটি গোটা দুনিয়ারও বিষয়। এর বিপরীতে সরকারের শীর্ষমহল থেকেও সুষ্ঠু নির্বাচনের ওয়াদা শোনানো হচ্ছে বিদেশিদের। কিছুদিন ধরে যেসব বিদেশি হাই-প্রোফাইল এসেছেন তাদের সবাইকেই আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস শোনানো হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনের বিচারের তালগাছটা প্রকারান্তরে বিদেশিদের হাতে চলে যাচ্ছে কি না প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আগামী নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে কথাটি কেন সরকারি মহলকে বিদেশি অতিথিদের কাছে অবিরাম বলতে হচ্ছে? নির্বাচন প্রশ্নে বিদেশিদের কোনো কথা শোনা হবে না বলে আওয়ামী লীগের সাহসী ও স্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে। না শুনলে সেই বিদেশিদেরই কেন সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিতে হচ্ছে? ক্ষমতাসীনদের ঘোষণায় বিদেশিরা দমেনি। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে নির্বাচনের কথা আনছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আবার নতুন করে বলা শুরু করেছে। যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপানও সুষ্ঠু নির্বাচনের নসিহত করছে। সরকার বা সরকারি দল তা অগ্রাহ্য করছে না। বলছে না, এসব সবক তারা শুনবে না। উপরন্তু, কথা দিচ্ছে। সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের ওয়াদা দিচ্ছে। বিষয়টি একদিকে সাংঘর্ষিক, আরেক দিকে বিএনপির জন্য বেশ পুলকের। দলটিকে নির্বাচনে এনে দিতে মার্কিন সহায়তা চাওয়ার তথ্য মাস-দশেক আগে নিজেই প্রকাশ করে উটকো ঝামেলায় পড়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। মাস কয়েকের ব্যবধানে এখন বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে সরকারের নানা পদক্ষেপ ওপেন সিক্রেটের মতো।
নির্বাচনে আসা যেকোনো রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব। আবার না আসার স্বাধীনতাও নিশ্চয়ই আছে। এ দায়িত্ব ও স্বাধীনতা দুটিই আপেক্ষিক ও যুক্তির বিষয়। কোনো দলকে নির্বাচনে আনা সরকারের দায়িত্ব না হলেও দায় রয়েছে। এখানে পারস্পরিক আস্থার বিষয় রয়েছে। যে জায়গায় চরম ঘাটতি। এর ফাঁকে বিদেশিদের সালিশ বা মধ্যস্থতার নমুনাও বেশ স্পষ্ট। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনী বল বিদেশিদের পায়ে বা কোটে চলে যাওয়া কারও জন্য শঙ্কার, কারও জন্য সম্ভাবনার।
সরকারের ভালো কিছুই দেখছে না বিএনপি। বিশেষ করে নির্বাচন প্রশ্নে সরকারের ওপর জিরো পারসেন্ট আস্থাও নেই বিএনপির। তারা এ সরকারের অধীনে নির্বাচন করে দেখেছে। নির্বাচন না করেও দেখেছে। সরকার যেন নির্বাচন করতে না পারে সেই চেষ্টাও বাদ দেয়নি। কোনো অভিজ্ঞতাই সুখকর হয়নি বিএনপির জন্য। তাহলে সামনে কোনটি করবে? বিএনপি থেকে বলা হচ্ছে, তাদের ছাড়া আগামী নির্বাচন করতে পারবে না সরকার। কোন ভরসায় এমন আশাবাদ দলটির? এক কথায় জবাব নেই তাদের কাছে। রাজনীতি বিশ্লেষকদের কাছেও জবাব নেই। রাজনীতির চেয়েও এটি বেশি হয়ে পড়েছে কূটনীতির বিষয়। আবার এ কথাও সত্য, দেশি-বিদেশি যেকোনো মধ্যস্থতায়ই হোক, একটি সমঝোতা যে আবশ্যক তা বলার অপেক্ষা রাখে না, যা রাজনীতিকে নিয়ে যাচ্ছে কূটনীতির বাঁকে।
এ দেশের নির্বাচন বা কোনো ইস্যুতে বিদেশিরা কেন নাক গলাবে? এমন একটি তাত্ত্বিক প্রশ্ন রয়েছে বরাবরই। আবার দেশ ভাগ, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ, আন্দোলন, ক্ষমতার পটপরিবর্তনের নানান ঘটনায় ছিল বিদেশি সম্পৃক্ততা। তা কারও জন্য স্বস্তির, আর কারও জন্য হয়েছে বেদনার। ওই স্বস্তিবোধ করা বেনিফিশিয়ারিরাও পরে প্রয়োজনে বিদেশি ভূমিকার নৈতিক সমালোচনা করেন। আর বেদনাহতরা বিদেশি নেক নজরের নানা চেষ্টা চালান। গোটা বিষয়টাই এক অর্থে আপেক্ষিক এবং যার যার সুবিধামতো। টানা গত কয়েকটি নির্বাচনের সময় দেশের রাজনীতিতে বিদেশি কূটনীতিকদের ভূমিকা এমনকি প্রকাশ্য তৎপরতা চলেছে। আজকের ক্ষমতাসীনরা এর সব চেয়ে বড় বেনিফিশিয়ারি। তখন এই বিদেশিদের পরম বন্ধু, উন্নয়ন সহযোগী, গণতন্ত্রের সহায়কসহ নানা বিশেষণ ও সম্বোধনে বিশেষায়িত করা হয়েছে। কূটনীতিকরা কোথায়, কার সঙ্গে কথা বলছেন, কী মন্তব্য করছেন এসব খবরের দিকে মানুষের ব্যাপক আগ্রহ। গণমাধ্যমকর্মীরাও ব্যস্ত থাকেন ঢাকায় বিদেশি কূটনীতিকদের তথ্য জোগাড়ে। এবারের পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা। কথাবার্তা বেশি। সরকার ও ক্ষমতাসীন দলে এ বিষয়ে খুব অসহিষ্ণুতা। অস্থিরতাও প্রকাশ্যে। তাদের কাছে এটি ‘দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপ’, যা প্রকারান্তরে সরকারের দ্বিমুখিতা।
ঘটনা বিচারে গত দু-তিনটি নির্বাচনের পূর্বাপর ও নির্বাচন চলাকালে কোনো কোনো বিদেশি কূটনীতিক, যা করেছেন সেই তুলনায় এবার এখনো কম। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে শুধু প্রভাবিত নয়, অনেকটা ধরে-বেঁধে আওয়ামী লীগের সঙ্গী করতে ভারতের তখনকার পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিংয়ের ভূমিকা স্মরণযোগ্য। এবার এখন পর্যন্ত সে রকম কিছু না হলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন জানিয়েছেন, এ সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে তিনি ভারতের সাহায্য চেয়েছেন। এরই মধ্যে ভারতও কথা দিয়েছে, তারা আছেন সরকারের সঙ্গে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিএনপিকে নির্বাচনে এনে দেওয়ার তদবিরের কথাও জানা হয়েছে ড. মোমেনের জবানিতেই।
সচরাচর কোনো রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত দেশে একজন রাষ্ট্রদূত বা অ্যাম্বাসাডর স্বাগতিক দেশের পররাষ্ট্রনীতিকে নিজের রাষ্ট্রের পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা করবেন, সেটাই তার দায়িত্ব। তিনি তার দেশের স্বার্থই দেখবেন। কিন্তু বাংলাদেশে বরাবরই ওই কূটনীতিককে তার জায়গায় রাখা হয় না। ক্ষমতাসীন-ক্ষমতাহীন উভয়ই তাকে মুরুব্বির কেদারায় বসিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজেরা লাভবান ও প্রতিপক্ষকে ঘায়েলে তৎপরতায়। তাকে নাক গলানোর যাবতীয় কূটনৈতিক বন্দোবস্ত রাজনীতিকরা করে দিচ্ছেন। ব্যবসায়ী-আমলাসহ অন্যান্য সেক্টরও পিছিয়ে থাকে না। দূতাবাসের একটি দাওয়াত পেতে, দূতের মন পেতে হেন চেষ্টা নেই, যা না করা হয়। তখন তারা ‘নাক গলানো’ শব্দ মনে রাখেন না। শুধু নাক নয়, নিজের গলা পর্যন্ত দিয়ে ফেলেন।
আমরা কেন আমাদের নিয়ে বিদেশিদের নাক গলাতে বা আগ্রহ বাড়ানোর ব্যবস্থা করি? এমন প্রশ্নে খুব বেজার হন রাজনীতিকরা। বিদেশিরা তাদের কদর বুঝে তা নিশ্চিত হতেও প্রায়ই ঢুঁ মারার মতো সফরে আসছেন এ দেশে। যাত্রাবিরতির নামেও আসেন। আমাদের দেশে তাদের গুরুত্বের সঙ্গে চাহিদাও তৈরি হয়েছে। সামনে এ সফর আরও বাড়বে সেই আভাসও রয়েছে। ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের সমান্তরালে বাংলাদেশে রাজনীতির বিভাজনও তাদের জন্য উপকার। নাক ডাকার সঙ্গে কথা বলার মঞ্চ পর্যন্ত তৈরি করে দেয়ওা হচ্ছে এ দেশে। বিদেশিদের দিয়ে মঞ্চের নিরপেক্ষতা, সৌন্দর্য, আভিজাত্য তৈরির একটি চর্চাও চলছে। আর নিউজ কাভারেজ তো উপরি পাওনার মতো। সেখানে আসার পর গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে তাদের নানা প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয়। তারা এড়িয়ে যান না। জবাব দেন নিজেদের মতো। লক্ষ করার মতো বিষয় তাদের রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ কবে থামবে, কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে বিশ্ব অর্থনীতি, ওই বিদেশি দূতের দেশে রাজনৈতিক-সামাজিক চিত্র কেমন; এ ধরনের প্রশ্ন করা হয় না। বরং জানতে চাওয়া হয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও নির্বাচন-সংক্রান্ত প্রশ্ন। স্বাভাবিকভাবেই এটি তাদের জন্য সুযোগ। গরজ না থাকলেও এর মধ্য দিয়ে তাদের আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আগ্রহী হতে বাধ্য করা হচ্ছে।
এসবের যোগফলে আমাদের দেশের সুষ্ঠু নির্বাচন, ক্ষমতায় বসানো-নামানো-দমানোসহ নানান কাজের কৃতিত্বটা তাদের ঝুড়িতে তুলে দেওয়ার এ প্রবণতা কমার আলামত নেই। বরং আরও বৃদ্ধির কারণ ও পরিস্থিতি বিদ্যমান, চলমান। ক্ষমতায় যেতে তাদের কৃপা, টিকে থাকতে তাদের দয়া, ক্ষমতা থেকে নামাতে তাদের মহানুভবতার এ সন্ধিক্ষণ সামনে আরও কত দূর গড়াবে এখনই বলা যাচ্ছে না। অতীত-বর্তমানের বহু ঘটনায় প্রমাণিত বিদেশিরা কোনো বিষয়ে বেশি পদক্ষেপ নিলে ফলাফল নানান দিকে চলে যায়। পক্ষে-বিপক্ষে দুদিকেই উপাদান তৈরি হয়। যার নানা দৃষ্টান্ত এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে নিয়ে অতি উৎসাহ ও অতি বিরোধিতার ফলও এরই মধ্যে স্পষ্ট। গুমের শিকার পরিবারগুলোর সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলামের বাসায় তার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য গেলে সেখানে সরকারি মহলের যোগসাজশে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির ফল ভুগতে হচ্ছে। আবার তাকে অ্যাকটিভ করার জেরও পড়ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের পরামর্শ ও নানা তাগিদের পেছনে রয়েছে অনেক উদ্দেশ্য-বিধেয়। ভারত-চীনের তো আরও বেশি।
লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন
অর্থনীতির ক্ষেত্রে দেশ এখন সংকটকাল অতিক্রম করছে। উত্তুঙ্গ মুদ্রাস্ফীতি, ওএমএসের ট্রাকের পেছনে মানুষের দীর্ঘ লাইন, উচ্চ জ্বালানি মূল্য, অস্থির মুদ্রা বিনিময় হার, সংরক্ষণবাদী আমদানি সত্ত্বেও চলতি হিসাবে বড়সড় ঘাটতি ও রিজার্ভের ক্রমহ্রাসমান প্রবণতা প্রভৃতিতে এই সংকটের অবয়ব দৃশ্যমান। শাসক দলের নেতাদের দাবি, কভিড-১৯ এর ধকল সামলে নিয়ে অর্থনীতি যখন পুনরায় দুলকি তালে চলতে শুরু করে তখন কাবাব মে হাড্ডি হয়ে আবির্ভূত হয় ইউক্রেন যুদ্ধ। অর্থাৎ সব দোষের নন্দঘোষ হলো ইউরোপীয় অঞ্চলের এই যুদ্ধ। অবশ্য নিন্দুকেরা বলেন, এই সংকটের জন্য বিরূপ বহিঃস্থ কারণের চেয়ে অদূরদর্শী দেশি পরিকল্পনা এবং অব্যবস্থাপনাও কম দায়ী নয়। সে যাই হোক, সরকার অবশ্য সংকট শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুতগতিতে বেশ কিছু প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধন নীতি অনুসরণ।
সরকারি ব্যয় সংকোচন নীতির অনুসরণে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প পরিহার, গাড়ি কেনা ও জ্বালানি খরচ কমানো, কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের ওপর একাধিকবার যতি টানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদেশে ‘সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল’-এর যে সংস্কৃতি চালু রয়েছে, সে পটভূমিতে স্বাভাবিক সময়েও এই জাতীয় নির্দেশের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বোধ করি কেউ প্রশ্ন তুলবে না। তবে বর্তমানে মাথা মোটা আমলাতন্ত্রে তাদের স্বার্থবিরোধী এই রকম নির্দেশ কতটুকু কার্যকর করা যাবে, সেটা একটা প্রশ্ন বটে। অপচয় আর অপব্যয়ের সংস্কৃতি শুধু সরকারি খাতে যে সীমাবদ্ধ, তা বলা যাবে না। সরকারি ও বেসরকারি যে পর্যায়েই অপব্যয় ও অপচয় হোক না কেন, তা জাতীয় সম্পদকে কমিয়ে ফেলে এবং নাগরিকদের কর্মদক্ষ হতে নিরুৎসাহিত করে। কাজেই সরকারি কাঠামোর বাইরেও বৃহত্তর পর্যায়ে যাতে সম্পদের অপব্যয় ও অপচয় না হয়, তার জন্য প্রয়োজন জরুরি নির্দেশনা ও ব্যবস্থা গ্রহণ।
কয়েক দিন আগে এক বন্ধুর ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হয়েছিল। অনুষ্ঠানটি ছিল লোকে লোকারণ্য বলতে যা বোঝায় তাই; দ্বিতীয় ব্যাচেও খাবার টেবিলে জায়গা পেতে কষ্ট হচ্ছিল। এই জাতীয় অনুষ্ঠানে সাধারণত যা হয়, তাই ঘটল; এক বন্ধুর শখের মহামূল্যবান একটি সেলফোন সেট লাপাত্তা হয়ে গেল। দুই বন্ধু তখন ছুটলেন সিসিটিভি নিয়ন্ত্রিত কক্ষের কন্ট্রোল রুমে; চোরের টিকিটা দেখা যায় কি না, তা পরীক্ষা করতে। অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করে তারা বীক্ষণ যন্ত্রের সংরক্ষিত ডিজিটাল পর্দায় তস্কর ও তার হাত-সাফাই কাজের সন্ধান করতে সমর্থ হলেন। কিন্তু ঐ যন্ত্রটি তো কেবল ছবি তুলতে ও তা কিছুকালের জন্য সংরক্ষণে সক্ষম; আটকের ক্ষমতা সে এখনো প্রাপ্ত হয়নি। চোরের ছবি দেখেও তাকে পাকড়াও করতে না পেরে আমাদের সবার মন খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু তারপর মনটা আরও বেশি খারাপ হয়ে গেল খাবার টেবিলে মানুষের আচরণ দেখে। টেবিলে খাবার বিস্তর, খাদকেরা পাতে নিচ্ছে এন্তার, কিন্তু অধিকাংশই চালাচ্ছে স্বেচ্ছাচার; খোদাই খাসির মতো একটু করে চেখে পছন্দ না হলে সামনে রাখা হাড়ের পাত্রে মাংস নিক্ষেপ করছে। আবার পছন্দ মতো গোস্ত পেতে বেয়ারাকে নতুন গামলা ভরে ভোজ্য আনার আদেশ দিচ্ছে। এ যেন মাংস খাওয়া ও ছোড়ার এক হোলিখেলা; একেক জনের উচ্ছিষ্টে অন্তত দুজন বুভুক্ষুর সহজেই উদর পূর্তি হতে পারে। এর আগেও বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে একই খামখেয়ালিপনার পুনরাবৃত্তি লক্ষ করেছি। এই শ্রেণির লোকজনের খাওয়া-দাওয়ার বাহার দেখে বুঝতে বাকি থাকে না, এই সর্বব্যাপী অপুষ্টির দেশে স্থূলতায় ভোগা আদম সন্তানদের মধ্যে হার ৪০ শতাংশের কাছাকাছি কেন? এই বিলাসিতা দেশের এই পরিস্থিতিতে একেবারেই বেমানান।
কভিড-১৯ ও তৎপরবর্তী ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বময় যে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা তৈরি হয়, সে পটভূমিতে দেশের প্রধানমন্ত্রী কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষি উপকরণের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং এক ইঞ্চি ভূমিও পতিত না রাখা। তার এই নীতি পর্যাপ্ত ফল দেয়; দেশ খাদ্য ঘাটতির কবল থেকে রক্ষা পায়। খাদ্য নিরাপত্তায় উৎপাদন বৃদ্ধি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদিত খাদ্যের অপচয় রোধ করা; এতে তেমন খরচ নেই বললেই চলে। এই কারণে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় উৎপাদিত খাদ্যপণ্যের অপচয় রোধ করা একটি অন্যতম অনুষঙ্গ। আমাদের ধর্মেও অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই বাস্তবতায় বিয়ের অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন গণজমায়েতে খাদ্যপণ্যের অপচয় রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
বিয়ের অনুষ্ঠানে খাদ্য অপচয় রোধকল্পে সরকার The Guest Control Order, 1984 জারি করে। প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল অনুষ্ঠানে অতিথির সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দিয়ে খাদ্যের ব্যয় ও অপচয় কমিয়ে আনা। কিন্তু আদেশ জারির মাধ্যমে অতিথি নিয়ন্ত্রণ করা ছিল প্রায় অসম্ভব। তখন সরকার ‘If you can not beat them, join them’ তত্ত্বের ভিত্তিতে অনুমোদিত সংখ্যার অতিরিক্ত অতিথিদের জন্য মাথাপিছু যৎসামান্য ফি আদায়ের ব্যবস্থা করে ফ্লাড গেইট খুলে দেয়। প্রথম প্রথম অনেকেই সরকারি আদেশের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনার্থে অতিরিক্ত ১০০ জনের ফি জমা দিয়ে ১০০০ জন অতিরিক্ত অতিথির ভূরিভোজন সম্পন্ন করিয়ে দিত। কিন্তু এখন এই জাতীয় আদেশের কোনো অস্তিত্ব আছে বলে কেউ জানে না। ফলে সরকারের আয়ও হচ্ছে না, আবার খাদ্যের অপচয় ও অপব্যবহার বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। এটা বন্ধ হওয়া দরকার, আর তা করা যেতে পারে উল্লিখিত আদেশ সংশোধনের মাধ্যমে।
বিয়েসহ গণজমায়েতগুলোতে খাদ্যের অপচয় রোধকল্পে খোলা গামলা ও কারি ডিশের পরিবর্তে প্যাকেটে খাদ্য পরিবেশন করা যেতে পারে এবং তাতে অপচয়ের মাত্রা ন্যূনতম পর্যায়ে নেমে আসতে পারে। মহানগরী ও শহরাঞ্চলে বিভিন্ন দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, মজলিশ, মৃত্যুবার্ষিকী, চল্লিশা প্রভৃতি আয়োজনে প্যাকেটে তবারক সরবরাহ করা হয়ে আসছে। এসব অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা থেকে এটা লক্ষ করা গেছে যে, এ ব্যবস্থায় অপচয় ন্যূনতম পর্যায়ে থাকে। বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতেও একই ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে তেমন কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। প্যাকেটের বিষয়বস্তু ও পরিমাপ এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যাতে অপচয়ের সুযোগ না থাকে। আর আদেশ সংশোধনের মাধ্যমে এটা করা হলে সাশ্রয়ী হওয়ায় অনুষ্ঠানদাতারাও খুশি হবেন। আর খাদকদেরও বিনা পয়সায় স্থূলতার চিকিৎসা শুরু হয়ে যাবে। তাদের কেউ কেউ অবশ্য প্রথম দিকে কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করতে পারেন। তবে সামাজিক চাপ এখন খাদকদের বিরুদ্ধে। কাজেই তাদের পালে বেশি হাওয়া লাগার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
এরকম আরও অনেক ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে অপচয়ের মাধ্যমে অনেক উঠতি বিগ শট তাদের সম্পদের প্রদর্শনী করতে ভালোবাসেন। শহরের অভিজাত এলাকায় প্রয়োজনের তুলনায় অতিকায় বড় অট্টালিকা নির্মাণ বা ফ্ল্যাট গড়ন এ রকম উন্নাসিক কাজের একটা দৃষ্টান্ত। ধানমন্ডির যে বাসায় আমি থাকি, তার পাশে নতুন একটি ফ্ল্যাট বাড়ি নির্মিত হচ্ছে। এ বাড়ির প্রতিটা ফ্ল্যাটের আয়তন ৪,৩০০ বর্গফুট। টাকা থাকলেই ভূমি-বুভুক্ষু এই দেশে কেন চার পরিবারের স্থলে এক পরিবারকে এত জায়গা দেওয়া হবে, তা আমার বোধগম্য নয়। এটাও অপচয়ের আরেক রূপ। চীন ও ভিয়েতনামে দেখেছি জন-ঘনত্ব আমাদের চেয়ে অনেক কম। কিন্তু তাদের বাড়ির সাইজ অনেক ছোট। কিন্তু গড়পড়তা তারা আমাদের চেয়েও ধনী। ভূমি সৃষ্টিকর্তার দেওয়া এক সসীম সম্পদ। বাসস্থানের মতো মৌলিক অধিকার রক্ষায় এর ওপর সমমাত্রিক অধিকার রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।
দেশে এক দিকে মুক্তবাজার অর্থনীতির চর্চা চলছে। আবার উল্টো দিকে অনেক কিছু চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে নির্ধারণ না হয়ে সরকার কর্র্তৃক নির্ধারিত হয়ে আসছে। জ্বালানির মূল্য, সারের মূল্য, ডলারের মূল্য এই মিশ্র ব্যবস্থার কয়েকটি উদাহরণ। বাণিজ্যমন্ত্রীও সম্প্রতি পাঁচ ছয়টি পণ্যের সর্বোচ্চ বিক্রয়মূল্য নির্ধারণের ঘোষণা দিয়েছেন। এখন বিয়েসহ যে সব গণজমায়েতে খাদ্য সরবরাহ করা হয়, সেখানে যদি প্যাকেটে তা সরবরাহ করা এবং পরিবারপ্রতি বাসস্থানের জন্য সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়, তবে সাধারণ মানুষের এ দুইটি মৌলিক চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্র প্রসারিত হবে। আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা ও কাজ শুরু করবেন।
লেখক: খাদ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও কলামিস্ট
ডায়াবেটিস একটি হরমোন সংশ্লিষ্ট রোগ। দেহযন্ত্র অগ্ন্যাশয় যদি যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে না পারে অথবা শরীর যদি উৎপন্ন ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হয়, তাহলে যে রোগ হয় তা হলো ‘ডায়াবেটিস’ বা ‘বহুমূত্র রোগ’। তখন রক্তে চিনি বা শকর্রার উপস্থিতিজনিত অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। ইনসুলিনের ঘাটতিই হলো এ রোগের মূল কথা। অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হরমোন ইনসুলিন, যার সহায়তায় দেহের কোষগুলো রক্ত থেকে গ্লুকোজ নিতে সমর্থ হয় এবং একে শক্তির জন্য ব্যবহার করতে পারে। ইনসুলিন উৎপাদন বা ইনসুলিনের কাজ করার ক্ষমতার যেকোনো একটি বা দুটোই যদি না হয়, তাহলে রক্তে বাড়তে থাকে গ্লুকোজ। আর একে নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে ঘটে নানা রকম জটিলতা, দেহের টিস্যু ও যন্ত্র বিকল হতে থাকে।
১৯৫৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ড. মো. ইব্রাহিমের উদ্যোগে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই এই দিনটিকে ডায়াবেটিস সচেতনতা তৈরিতে উপজীব্য করা হয়। এছাড়াও প্রতি বছরই ১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালিত হয়। এদিন বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক বেনটিং জন্ম নিয়েছিলেন এবং তিনি বিজ্ঞানী চার্লস বেস্টের সঙ্গে একত্রে ইনসুলিন আবিষ্কার করেছিলেন। লক্ষ্য হলো: পৃথিবীতে কোনো শিশুই যেন ডায়াবেটিসে মারা না যায়। ডায়াবেটিসের মতো ক্রনিক রোগ ব্যক্তি, পরিবার, দেশ, এমনকি সারা পৃথিবীর জন্য গুরুতর ঝুঁকি বহন করে এ সত্য জাতিসংঘ অনুধাবন করে ২০০৬ সালে একে জাতিসংঘ দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। পৃথিবীতে প্রায় ৪৬৫ মিলিয়ন লোক ডায়াবেটিস নিয়ে জীবনযাপন করছে।
মানুষের রক্তে গ্লকোজের পরিমাণ সাধারণত ৩.৩ থেকে ৬.৯ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর <৭.৮ মিলি.মোল/লি। কিন্তু যদি গ্লুকোজের পরিমাণ অভুক্ত অবস্থায় ৭ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর >১১ মিলি.মোল/লি পাওয়া যায়, তবে তার ডায়াবেটিস আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। বহুমূত্র রোগ বা ডায়াবেটিস বললে সাধারাণত ডায়াবেটিস মেলিটাস বোঝায়। তবে ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস নামে আরেকটি রোগ আছে যাতে মূত্র উৎপাদন বেশি হয় কিন্তু তা অউঐ বা অ্যান্টি ডাইইউরেটিক হরমোন নামে অন্য একটি হরমোনের উৎপাদনের অভাব বা ক্রিয়ার অভাবে হয়ে থাকে এবং মূত্রাধিক্য এবং তার জন্য অতিতৃষ্ণা এই দুটি উপসর্গের মিল ছাড়া এই রোগটির সঙ্গে ‘ডায়াবেটিস মেলিটাস’-এর কোনো সম্পর্ক নেই। এ দুটির মধ্যে ডায়াবেটিস মেলিটাসের প্রকোপ অনেক বেশি। ডায়াবেটিস মেলিটাস আবার দু’রকম হতে পারে। যথা: টাইপ-১ বা ইনসুলিন নির্ভরশীল এবং টাইপ-২ বা ইনসুলিন নিরপেক্ষ ডায়াবেটিস।
টাইপ-১ ডায়াবেটিস হলো অটোইমিউন রোগ। এ রোগে অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন নিঃসরণকারী কোষগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। তাই যাদের টাইপ-১ হয়, এদের দেহে ইনসুলিন উৎপাদিত হয় খুবই কম। এ জন্য রোগীকে বেঁচে থাকার জন্য ইনসুলিন ইনজেকশন বা ইনসুলিন পাম্প নিতে হয়। শিশু ও তরুণদের মধ্যে এ ধরনের বহুমূত্র হয় বেশি। ১০-৩০ বছরের মধ্যে দেখা দেয়। এটাা মূলত জেনেটিক কারণে হয়ে থাকে। এর জন্য দায়ী হলো ঐখঅউজ ৩ এবং ঐখঅউজ ৪ নামক দুটি জিন। টাইপ-১ কে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়, টাইপ-১-এ : অটোইমিউনিটির জন্য বিটা কোষের ধ্বংসের কারণে এই টাইপ-১-এ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। টাইপ-১-বি : এটিও বিটা কোষের ধ্বংসের কারণে হয়ে থাকে, কিন্তু এর সঠিক কারণ জানা যায়নি।
টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগের পেছনে থাকে মূলত ‘ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স’। টাইপ-২ রোগীরা তাদের শরীরে যে ইনসুলিন উৎপন্ন হয়, তাকে ব্যবহার করতে পারে না। ব্যায়াম ও খাদ্যবিধির সাহায্যে একে প্রথমে মোকাবিলা করা হয়। তবে অনেক সময় প্রয়োজন হয় মুখে খাওয়ার ওষুধ, এমনকি ইনসুলিন ইনজেকশন। ৪০ বছর বা তারপরে এ ধরনের ডায়াবেটিস রোগ দেখা দেয়। মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় পানীয় টাইপ-২ এর ঝুঁকি বাড়ায়।
অত্যধিক পরিমাণ সাদা ভাত খাওয়াও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। শারীরিক পরিশ্রম না করাও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের অন্যতম একটা কারণ। বিশ্বজুড়ে ৪৬৫ মিলিয়ন ডায়াবেটিস রোগীর ৯০ শতাংশের বেশি হলো টাইপ-২ ডায়াবেটিস। দুই ধরনের ডায়াবেটিসই গুরুতর এবং হতে পারে শিশু ও তরুণদেরও। এ জন্য ডায়াবেটিসের বিপদ-চিহ্নগুলো জানা খুবই প্রয়োজন। ‘মৃদু ডায়াবেটিস’ বলে কিন্তু কিছু নেই। নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় তৃতীয় এক প্রকার ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। এটা গ্যাস্টেশনাল ডায়াবেটিস নামেও পরিচিত। ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬১/২২৫ নম্বর ঘোষণায় ডায়াবেটিসকে দীর্ঘমেয়াদি, অবক্ষয়ী ও ব্যয়বহুল ব্যাধি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে যা মানবদেহে মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।
ডায়াবেটিসের সাধারণ লক্ষণাদির মধ্যে রয়েছে ঘন ঘন প্রস্রাব যার কারণে এ রোগটির নাম বহুমূত্র রোগ, অধিক তৃষ্ণা এবং মুখ শুকিয়ে যাওয়া, অতিশয় দুর্বলতা, সার্বক্ষণিক ক্ষুধা, স্বল্প সময়ে দেহের ওজন হ্রাস, চোখে ঝাপসা দেখা, ঘন ঘন সংক্রমণ ইত্যাদি। ডায়াবেটিসের অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমন: বেশি পরিমাণে জাঙ্কফুড খাওয়ার ফলে শরীরে ক্যালোরি এবং ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায়। যার কারণে শরীরের ইনসুলিনে চিনির মাত্রা বেড়ে যায়, জিনগত রোগের কারণে ডায়াবেটিস হতে পারে, ডায়াবেটিস শরীরের অতিরিক্ত ওজন এবং ওজন বৃদ্ধির কারণে ঘটতে পারে, প্রতিদিনের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ অনুশীলন না করায় ডায়াবেটিস হতে পারে, বেশি চাপে থাকার কারণে ডায়াবেটিস সমস্যা হয়ে যায়, যদি কোনো ব্যক্তি অতিরিক্ত পরিমাণে ধূমপান করে তার ফলস্বরূপ তার ডায়াবেটিস হতে পারে, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ভুল ওষুধ সেবনের কারণে একজন ব্যক্তির ডায়াবেটিস হতে পারে। বলা যেতে পারে, ডায়াবেটিস হলো কোনো ব্যক্তির অতিরিক্ত চা, কোল্ড ড্রিঙ্কস এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার গ্রহণের ফলস্বরূপ।
অতিরিক্ত মেদ এ রোগের অন্যতম কারণ। উপসর্গহীনতা বা অসচেতনতার কারণে চিকিৎসার অভাবে ডায়াবেটিস হতে পারে। কিডনি বা বৃক্কের অক্ষমতার অন্যতম মূল কারণ ডায়াবেটিস। অন্ধত্ব বা দৃষ্টিবিচ্যুতির অন্যতম মূল কারণ ডায়াবেটিস। এছাড়া বিনা দুর্ঘটনায় অঙ্গচ্ছেদের অন্যতম মূল কারণও ডায়াবেটিস।
পরীক্ষার পরে, কিছু ওষুধ, যেমন : মেটফর্মিন, চিনির স্তর নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দেওয়া হয়। এটি কেবলমাত্র ডায়াবেটিস টাইপ-২ রোগীদের দেওয়া হয়। এই ড্রাগ ইনসুলিন উৎপাদন উৎসাহিত করে। শরীরকে ইনসুলিন আরও ভালোভাবে ব্যবহার করতে সহায়তা করে। টাইপ-১ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের রোগীদের চোখের রেটিনা, ছানি ইত্যাদি একবারে পরীক্ষা করা উচিত। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে কালো জাম খাওয়া উচিত। ব্ল্যাকবেরিতে অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। যা ইনসুলিন তৈরিতে সহায়তা করে। যার কারণে রক্তে সুগার স্বাভাবিক পর্যায়ে থেকে যায়।
গুড়ের ৮ থেকে ১০টি টুকরা পিষে একটি চাটনি তৈরি করে তারপরে এটি এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে সারা রাত রেখে দিতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে তা পান করতে পারলে কাজে দেবে। হিবিস্কাসের পাতায় উচ্চ পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড থাকে। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খুব কার্যকর প্রমাণ করে। ড্রামস্টিক পাতার রস ডায়াবেটিসে প্যানাসিয়ার মতো কাজ করে। ড্রামস্টিক পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড থাকে। যা চিনির স্তর নিয়ন্ত্রণ এবং ইনসুলিন বাড়ায়, এর ফলে প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতিদিন ৮ থেকে ১০টি নিমপাতা চিবানো উচিত। নিমের উপস্থিত অ্যান্টিভাইরাল গুণ দেহে চিনির স্তর নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
ডায়াবেটিস রোগীদের দৈনিক ব্যায়াম, যোগ ব্যায়ামের মতো শারীরিক ক্রিয়াকলাপ করা উচিত। যোগ ব্যায়ামের আসন করা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। ডায়াবেটিস রোগীদের সর্বদা তাদের পায়ে আঘাত এড়ানো উচিত। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত। অতিরিক্ত তেল এবং মসলা এড়িয়ে চলা এবং প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। ডায়াবেটিসের চিকিৎসা হলো ইনসুলিন, অ্যান্টিডায়াবেটিক মুখে খাওয়ার ওষুধ, জীবনধারার পরিবর্তন, নিয়মিত ব্যায়াম, খাদ্য গ্রহণে সচেতনতা এবং অসুখ সম্বন্ধে রোগীর প্রয়োজনীয় ও সঠিক ধারণা।
লেখক : কলাম লেখক ও কর্মকর্তা, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়
সাংবাদিক, লেখক ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী সিরাজুদ্দীন হোসেন ১৯২৯ সালের ১ মার্চ মাগুরা জেলার শালিখার অন্তর্গত শরশুনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৩ সালে ঝিকরগাছা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন ও ১৯৪৫ সালে যশোর মধুসূদন কলেজ থেকে আইএ পাস করার পর তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ১৯৪৭ সালে বিএ পাস করেন। সিরাজুদ্দীন হোসেন সাংবাদিক হিসেবে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় প্রথমে কলকাতায় এবং পরে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত একই পত্রিকায় ঢাকায় কাজ করেন। ওই বছর তিনি ফ্রাঙ্কলিন পাবলিকেশন্স-এ যোগ দেন। তিনি ইত্তেফাক পত্রিকার বার্তা সম্পাদক (১৯৫৪-১৯৬৬, ১৯৬৯), সংবাদ সংস্থা পিপিআই-এর ব্যুরো চিফ (১৯৬৬-১৯৬৯) এবং দৈনিক ইত্তেফাক-এর নির্বাহী সম্পাদক (১৯৭০-১৯৭১) হিসেবে কাজ করেন। স্পষ্টবাদী, সত্যনিষ্ঠ এবং নির্ভীক সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন ছয় দফা আন্দোলন এবং পরে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে সক্রিয়ভাবে কাজ করেন। সাংবাদিক ও লেখক হিসেবে তিনি বাঙালির শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে লিখেছেন, কাজ করে গেছেন প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চালাকালীন তিনি অধিকৃত ঢাকায় ইত্তেফাকে দুঃসাহসিক সব সম্পাদকীয় লেখেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহায়তা দেন এবং অবরুদ্ধ বাংলাদেশের সংবাদ সংগ্রহ করে মুজিবনগর সরকারের কাছে নিয়মিত প্রেরণ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র ছয়দিন আগে ১৯৭১ সালে ১০ ডিসেম্বর হানাদার পাকিস্তানি সৈন্যরা তার চামেলীবাগের বাসা থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায়। পরে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
নীরব ঘাতক ডায়াবেটিস। এটি হচ্ছে বহুমূত্র রোগ। প্রতিবছর পৃথিবীর মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হলে বুঝতে হবে একজন মানুষ ‘বহুমূত্র’ বা ‘মধুমেহ’ (ডায়াবেটিস) রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। রোগের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অনিয়মিত লাইফস্টাইল এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে, মধুমেহ রোগ দেখা দিতে পারে। একই সঙ্গে চিকিৎসকরা বলছেন- মুটিয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ, শুধু বসে বসে কাজ করা, শরীরচর্চা-পরিশ্রম ও খেলাধুলা না করার কারণে ডায়াবেটিস বেড়ে যাচ্ছে। মানসিক চাপ মানুষের ডায়াবেটিস বাড়ায় কি না সে বিষয়ে কোনো গবেষণা হয়নি। তবে কমপক্ষে ছয়-সাত ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। কম ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। সপ্তাহে ১৫০ মিনিট হাঁটা ডায়াবেটিসের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সব স্বাস্থ্যসংস্থার নির্দেশিকায় রয়েছে। নিয়মিত হাঁটলে সুগার নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে থাকে। ওষুধের পরিমাণ ও ডোজ কম লাগে। হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি হয়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিয়ন্ত্রণে থাকে ওজনও। অলস জীবন ছেড়ে কর্মব্যস্ত জীবনযাপন করতে হবে। খেলাধুলা করতে হবে। হাঁটতে হবে নিয়মিত। বেশি করে খেতে হবে ফল ও শাকসবজি। ভারসাম্য নিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে শর্করা, প্রোটিন ও ফ্যাটের মধ্যে।
গতকাল দেশ রূপান্তরের শেষ পাতায় প্রকাশিত ‘৬২% মানুষ জানে না ডায়াবেটিসে আক্রান্ত’ শিরোনামে সংবাদের মাধ্যমে জানা যায় দেশের ৬১ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ জানে না তাদের ডায়াবেটিস রয়েছে। অর্থাৎ ১০০ রোগীর মধ্যে ৬২ জনই জানে না তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। গত বছরের এপ্রিলে প্রকাশিত বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার একটি গবেষক দলের এক গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এমন তথ্য জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ডায়াবেটিস রোগবিশেষজ্ঞ ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, সারা দেশের বিভিন্ন শহরে এই গবেষণা করা হয়। তাতে দেখা গেছে, ৬২ শতাংশ রোগী তাদের ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতন না। অথচ এসব রোগীর কিছুদিন পর কিডনি ও চোখ নষ্ট হবে, হার্ট অ্যাটাক হবে, স্ট্রোক হবে। কাজেই তাদের চিকিৎসা শুরু করতে হবে। কিন্তু যেহেতু তার রোগ সম্পর্কে জানে না, তাই সে চিকিৎসাও করাবে না।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, মানুষকে জানতে হবে ডায়াবেটিস একবার হলে আপাতত নিরাময়যোগ্য নয়, রোগটি প্রতিরোধ করতে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কিন্তু তারা তো জানেই না, তারা রোগী। তাহলে তারা প্রতিরোধ করবে কীভাবে? এই দুটো কারণে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা খুব প্রয়োজন। এ ব্যাপারে ডা. শাহজাদা সেলিম জানান, ২০২০ সালের তথ্যের ভিত্তিতে ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন ২০২১ সালে যে হিসাব প্রকাশ করেছিল, তাতে বাংলাদেশে ১ কোটি ৩১ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলে উল্লেখ করা হয়। এরপর বারডেম একটা গবেষণা করে। সেখানে জনসংখ্যার ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলে উল্লেখ করা হয়। সেই হিসাবে বাংলাদেশে তিন কোটির বেশি ডায়াবেটিস রোগী। ফলে প্রকৃত রোগীর সংখ্যা কত, তা এখনো সুস্পষ্ট নয়। রোগীর প্রকৃত সংখ্যাটা জানা জরুরি।
ডায়াবেটিস ঝুঁকির মূল কারণ, তীব্র ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস বলে মত দেন ডা. শাহজাদা সেলিম। ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা পেতে মুখের কাজ কম করার ও পায়ের কাজ বেশি করার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। এ ছাড়া ডায়াবেটিসের কারণে মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে, নষ্ট হয়ে যেতে পারে কিডনি। চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়াবেটিসের এত ঝুঁকি থাকার পরও যত মানুষ এই রোগে আক্রান্ত তাদের অর্ধেকেরও বেশি এই রোগটি সম্পর্কে সচেতন নন। তবে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে কিছু নিয়মনীতি মেনে চললে অনেক ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
বংশগতভাবে এই রোগে আক্রান্ত হলে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। নিজদোষে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগেই সতর্কতা দরকার। ভুলে গেলে চলবে না সচেতনতা এবং আত্মনিয়ন্ত্রণই ডায়াবেটিস থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।