
নীরব ঘাতক ডায়াবেটিস। এটি হচ্ছে বহুমূত্র রোগ। প্রতিবছর পৃথিবীর মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হলে বুঝতে হবে একজন মানুষ ‘বহুমূত্র’ বা ‘মধুমেহ’ (ডায়াবেটিস) রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। রোগের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অনিয়মিত লাইফস্টাইল এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে, মধুমেহ রোগ দেখা দিতে পারে। একই সঙ্গে চিকিৎসকরা বলছেন- মুটিয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ, শুধু বসে বসে কাজ করা, শরীরচর্চা-পরিশ্রম ও খেলাধুলা না করার কারণে ডায়াবেটিস বেড়ে যাচ্ছে। মানসিক চাপ মানুষের ডায়াবেটিস বাড়ায় কি না সে বিষয়ে কোনো গবেষণা হয়নি। তবে কমপক্ষে ছয়-সাত ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। কম ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। সপ্তাহে ১৫০ মিনিট হাঁটা ডায়াবেটিসের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সব স্বাস্থ্যসংস্থার নির্দেশিকায় রয়েছে। নিয়মিত হাঁটলে সুগার নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে থাকে। ওষুধের পরিমাণ ও ডোজ কম লাগে। হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি হয়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিয়ন্ত্রণে থাকে ওজনও। অলস জীবন ছেড়ে কর্মব্যস্ত জীবনযাপন করতে হবে। খেলাধুলা করতে হবে। হাঁটতে হবে নিয়মিত। বেশি করে খেতে হবে ফল ও শাকসবজি। ভারসাম্য নিয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে শর্করা, প্রোটিন ও ফ্যাটের মধ্যে।
গতকাল দেশ রূপান্তরের শেষ পাতায় প্রকাশিত ‘৬২% মানুষ জানে না ডায়াবেটিসে আক্রান্ত’ শিরোনামে সংবাদের মাধ্যমে জানা যায় দেশের ৬১ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ জানে না তাদের ডায়াবেটিস রয়েছে। অর্থাৎ ১০০ রোগীর মধ্যে ৬২ জনই জানে না তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। গত বছরের এপ্রিলে প্রকাশিত বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার একটি গবেষক দলের এক গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এমন তথ্য জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ডায়াবেটিস রোগবিশেষজ্ঞ ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, সারা দেশের বিভিন্ন শহরে এই গবেষণা করা হয়। তাতে দেখা গেছে, ৬২ শতাংশ রোগী তাদের ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতন না। অথচ এসব রোগীর কিছুদিন পর কিডনি ও চোখ নষ্ট হবে, হার্ট অ্যাটাক হবে, স্ট্রোক হবে। কাজেই তাদের চিকিৎসা শুরু করতে হবে। কিন্তু যেহেতু তার রোগ সম্পর্কে জানে না, তাই সে চিকিৎসাও করাবে না।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, মানুষকে জানতে হবে ডায়াবেটিস একবার হলে আপাতত নিরাময়যোগ্য নয়, রোগটি প্রতিরোধ করতে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কিন্তু তারা তো জানেই না, তারা রোগী। তাহলে তারা প্রতিরোধ করবে কীভাবে? এই দুটো কারণে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা খুব প্রয়োজন। এ ব্যাপারে ডা. শাহজাদা সেলিম জানান, ২০২০ সালের তথ্যের ভিত্তিতে ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন ২০২১ সালে যে হিসাব প্রকাশ করেছিল, তাতে বাংলাদেশে ১ কোটি ৩১ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলে উল্লেখ করা হয়। এরপর বারডেম একটা গবেষণা করে। সেখানে জনসংখ্যার ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলে উল্লেখ করা হয়। সেই হিসাবে বাংলাদেশে তিন কোটির বেশি ডায়াবেটিস রোগী। ফলে প্রকৃত রোগীর সংখ্যা কত, তা এখনো সুস্পষ্ট নয়। রোগীর প্রকৃত সংখ্যাটা জানা জরুরি।
ডায়াবেটিস ঝুঁকির মূল কারণ, তীব্র ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস বলে মত দেন ডা. শাহজাদা সেলিম। ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা পেতে মুখের কাজ কম করার ও পায়ের কাজ বেশি করার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। এ ছাড়া ডায়াবেটিসের কারণে মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে, নষ্ট হয়ে যেতে পারে কিডনি। চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়াবেটিসের এত ঝুঁকি থাকার পরও যত মানুষ এই রোগে আক্রান্ত তাদের অর্ধেকেরও বেশি এই রোগটি সম্পর্কে সচেতন নন। তবে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে কিছু নিয়মনীতি মেনে চললে অনেক ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
বংশগতভাবে এই রোগে আক্রান্ত হলে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। নিজদোষে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগেই সতর্কতা দরকার। ভুলে গেলে চলবে না সচেতনতা এবং আত্মনিয়ন্ত্রণই ডায়াবেটিস থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়।
অর্থনীতির ক্ষেত্রে দেশ এখন সংকটকাল অতিক্রম করছে। উত্তুঙ্গ মুদ্রাস্ফীতি, ওএমএসের ট্রাকের পেছনে মানুষের দীর্ঘ লাইন, উচ্চ জ্বালানি মূল্য, অস্থির মুদ্রা বিনিময় হার, সংরক্ষণবাদী আমদানি সত্ত্বেও চলতি হিসাবে বড়সড় ঘাটতি ও রিজার্ভের ক্রমহ্রাসমান প্রবণতা প্রভৃতিতে এই সংকটের অবয়ব দৃশ্যমান। শাসক দলের নেতাদের দাবি, কভিড-১৯ এর ধকল সামলে নিয়ে অর্থনীতি যখন পুনরায় দুলকি তালে চলতে শুরু করে তখন কাবাব মে হাড্ডি হয়ে আবির্ভূত হয় ইউক্রেন যুদ্ধ। অর্থাৎ সব দোষের নন্দঘোষ হলো ইউরোপীয় অঞ্চলের এই যুদ্ধ। অবশ্য নিন্দুকেরা বলেন, এই সংকটের জন্য বিরূপ বহিঃস্থ কারণের চেয়ে অদূরদর্শী দেশি পরিকল্পনা এবং অব্যবস্থাপনাও কম দায়ী নয়। সে যাই হোক, সরকার অবশ্য সংকট শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুতগতিতে বেশ কিছু প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধন নীতি অনুসরণ।
সরকারি ব্যয় সংকোচন নীতির অনুসরণে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প পরিহার, গাড়ি কেনা ও জ্বালানি খরচ কমানো, কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের ওপর একাধিকবার যতি টানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদেশে ‘সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল’-এর যে সংস্কৃতি চালু রয়েছে, সে পটভূমিতে স্বাভাবিক সময়েও এই জাতীয় নির্দেশের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বোধ করি কেউ প্রশ্ন তুলবে না। তবে বর্তমানে মাথা মোটা আমলাতন্ত্রে তাদের স্বার্থবিরোধী এই রকম নির্দেশ কতটুকু কার্যকর করা যাবে, সেটা একটা প্রশ্ন বটে। অপচয় আর অপব্যয়ের সংস্কৃতি শুধু সরকারি খাতে যে সীমাবদ্ধ, তা বলা যাবে না। সরকারি ও বেসরকারি যে পর্যায়েই অপব্যয় ও অপচয় হোক না কেন, তা জাতীয় সম্পদকে কমিয়ে ফেলে এবং নাগরিকদের কর্মদক্ষ হতে নিরুৎসাহিত করে। কাজেই সরকারি কাঠামোর বাইরেও বৃহত্তর পর্যায়ে যাতে সম্পদের অপব্যয় ও অপচয় না হয়, তার জন্য প্রয়োজন জরুরি নির্দেশনা ও ব্যবস্থা গ্রহণ।
কয়েক দিন আগে এক বন্ধুর ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হয়েছিল। অনুষ্ঠানটি ছিল লোকে লোকারণ্য বলতে যা বোঝায় তাই; দ্বিতীয় ব্যাচেও খাবার টেবিলে জায়গা পেতে কষ্ট হচ্ছিল। এই জাতীয় অনুষ্ঠানে সাধারণত যা হয়, তাই ঘটল; এক বন্ধুর শখের মহামূল্যবান একটি সেলফোন সেট লাপাত্তা হয়ে গেল। দুই বন্ধু তখন ছুটলেন সিসিটিভি নিয়ন্ত্রিত কক্ষের কন্ট্রোল রুমে; চোরের টিকিটা দেখা যায় কি না, তা পরীক্ষা করতে। অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করে তারা বীক্ষণ যন্ত্রের সংরক্ষিত ডিজিটাল পর্দায় তস্কর ও তার হাত-সাফাই কাজের সন্ধান করতে সমর্থ হলেন। কিন্তু ঐ যন্ত্রটি তো কেবল ছবি তুলতে ও তা কিছুকালের জন্য সংরক্ষণে সক্ষম; আটকের ক্ষমতা সে এখনো প্রাপ্ত হয়নি। চোরের ছবি দেখেও তাকে পাকড়াও করতে না পেরে আমাদের সবার মন খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু তারপর মনটা আরও বেশি খারাপ হয়ে গেল খাবার টেবিলে মানুষের আচরণ দেখে। টেবিলে খাবার বিস্তর, খাদকেরা পাতে নিচ্ছে এন্তার, কিন্তু অধিকাংশই চালাচ্ছে স্বেচ্ছাচার; খোদাই খাসির মতো একটু করে চেখে পছন্দ না হলে সামনে রাখা হাড়ের পাত্রে মাংস নিক্ষেপ করছে। আবার পছন্দ মতো গোস্ত পেতে বেয়ারাকে নতুন গামলা ভরে ভোজ্য আনার আদেশ দিচ্ছে। এ যেন মাংস খাওয়া ও ছোড়ার এক হোলিখেলা; একেক জনের উচ্ছিষ্টে অন্তত দুজন বুভুক্ষুর সহজেই উদর পূর্তি হতে পারে। এর আগেও বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে একই খামখেয়ালিপনার পুনরাবৃত্তি লক্ষ করেছি। এই শ্রেণির লোকজনের খাওয়া-দাওয়ার বাহার দেখে বুঝতে বাকি থাকে না, এই সর্বব্যাপী অপুষ্টির দেশে স্থূলতায় ভোগা আদম সন্তানদের মধ্যে হার ৪০ শতাংশের কাছাকাছি কেন? এই বিলাসিতা দেশের এই পরিস্থিতিতে একেবারেই বেমানান।
কভিড-১৯ ও তৎপরবর্তী ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বময় যে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা তৈরি হয়, সে পটভূমিতে দেশের প্রধানমন্ত্রী কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষি উপকরণের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং এক ইঞ্চি ভূমিও পতিত না রাখা। তার এই নীতি পর্যাপ্ত ফল দেয়; দেশ খাদ্য ঘাটতির কবল থেকে রক্ষা পায়। খাদ্য নিরাপত্তায় উৎপাদন বৃদ্ধি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদিত খাদ্যের অপচয় রোধ করা; এতে তেমন খরচ নেই বললেই চলে। এই কারণে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় উৎপাদিত খাদ্যপণ্যের অপচয় রোধ করা একটি অন্যতম অনুষঙ্গ। আমাদের ধর্মেও অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই বাস্তবতায় বিয়ের অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন গণজমায়েতে খাদ্যপণ্যের অপচয় রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
বিয়ের অনুষ্ঠানে খাদ্য অপচয় রোধকল্পে সরকার The Guest Control Order, 1984 জারি করে। প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল অনুষ্ঠানে অতিথির সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দিয়ে খাদ্যের ব্যয় ও অপচয় কমিয়ে আনা। কিন্তু আদেশ জারির মাধ্যমে অতিথি নিয়ন্ত্রণ করা ছিল প্রায় অসম্ভব। তখন সরকার ‘If you can not beat them, join them’ তত্ত্বের ভিত্তিতে অনুমোদিত সংখ্যার অতিরিক্ত অতিথিদের জন্য মাথাপিছু যৎসামান্য ফি আদায়ের ব্যবস্থা করে ফ্লাড গেইট খুলে দেয়। প্রথম প্রথম অনেকেই সরকারি আদেশের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনার্থে অতিরিক্ত ১০০ জনের ফি জমা দিয়ে ১০০০ জন অতিরিক্ত অতিথির ভূরিভোজন সম্পন্ন করিয়ে দিত। কিন্তু এখন এই জাতীয় আদেশের কোনো অস্তিত্ব আছে বলে কেউ জানে না। ফলে সরকারের আয়ও হচ্ছে না, আবার খাদ্যের অপচয় ও অপব্যবহার বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। এটা বন্ধ হওয়া দরকার, আর তা করা যেতে পারে উল্লিখিত আদেশ সংশোধনের মাধ্যমে।
বিয়েসহ গণজমায়েতগুলোতে খাদ্যের অপচয় রোধকল্পে খোলা গামলা ও কারি ডিশের পরিবর্তে প্যাকেটে খাদ্য পরিবেশন করা যেতে পারে এবং তাতে অপচয়ের মাত্রা ন্যূনতম পর্যায়ে নেমে আসতে পারে। মহানগরী ও শহরাঞ্চলে বিভিন্ন দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, মজলিশ, মৃত্যুবার্ষিকী, চল্লিশা প্রভৃতি আয়োজনে প্যাকেটে তবারক সরবরাহ করা হয়ে আসছে। এসব অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা থেকে এটা লক্ষ করা গেছে যে, এ ব্যবস্থায় অপচয় ন্যূনতম পর্যায়ে থাকে। বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতেও একই ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে তেমন কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। প্যাকেটের বিষয়বস্তু ও পরিমাপ এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যাতে অপচয়ের সুযোগ না থাকে। আর আদেশ সংশোধনের মাধ্যমে এটা করা হলে সাশ্রয়ী হওয়ায় অনুষ্ঠানদাতারাও খুশি হবেন। আর খাদকদেরও বিনা পয়সায় স্থূলতার চিকিৎসা শুরু হয়ে যাবে। তাদের কেউ কেউ অবশ্য প্রথম দিকে কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করতে পারেন। তবে সামাজিক চাপ এখন খাদকদের বিরুদ্ধে। কাজেই তাদের পালে বেশি হাওয়া লাগার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
এরকম আরও অনেক ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে অপচয়ের মাধ্যমে অনেক উঠতি বিগ শট তাদের সম্পদের প্রদর্শনী করতে ভালোবাসেন। শহরের অভিজাত এলাকায় প্রয়োজনের তুলনায় অতিকায় বড় অট্টালিকা নির্মাণ বা ফ্ল্যাট গড়ন এ রকম উন্নাসিক কাজের একটা দৃষ্টান্ত। ধানমন্ডির যে বাসায় আমি থাকি, তার পাশে নতুন একটি ফ্ল্যাট বাড়ি নির্মিত হচ্ছে। এ বাড়ির প্রতিটা ফ্ল্যাটের আয়তন ৪,৩০০ বর্গফুট। টাকা থাকলেই ভূমি-বুভুক্ষু এই দেশে কেন চার পরিবারের স্থলে এক পরিবারকে এত জায়গা দেওয়া হবে, তা আমার বোধগম্য নয়। এটাও অপচয়ের আরেক রূপ। চীন ও ভিয়েতনামে দেখেছি জন-ঘনত্ব আমাদের চেয়ে অনেক কম। কিন্তু তাদের বাড়ির সাইজ অনেক ছোট। কিন্তু গড়পড়তা তারা আমাদের চেয়েও ধনী। ভূমি সৃষ্টিকর্তার দেওয়া এক সসীম সম্পদ। বাসস্থানের মতো মৌলিক অধিকার রক্ষায় এর ওপর সমমাত্রিক অধিকার রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।
দেশে এক দিকে মুক্তবাজার অর্থনীতির চর্চা চলছে। আবার উল্টো দিকে অনেক কিছু চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে নির্ধারণ না হয়ে সরকার কর্র্তৃক নির্ধারিত হয়ে আসছে। জ্বালানির মূল্য, সারের মূল্য, ডলারের মূল্য এই মিশ্র ব্যবস্থার কয়েকটি উদাহরণ। বাণিজ্যমন্ত্রীও সম্প্রতি পাঁচ ছয়টি পণ্যের সর্বোচ্চ বিক্রয়মূল্য নির্ধারণের ঘোষণা দিয়েছেন। এখন বিয়েসহ যে সব গণজমায়েতে খাদ্য সরবরাহ করা হয়, সেখানে যদি প্যাকেটে তা সরবরাহ করা এবং পরিবারপ্রতি বাসস্থানের জন্য সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়, তবে সাধারণ মানুষের এ দুইটি মৌলিক চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্র প্রসারিত হবে। আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা ও কাজ শুরু করবেন।
লেখক: খাদ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও কলামিস্ট
ডায়াবেটিস একটি হরমোন সংশ্লিষ্ট রোগ। দেহযন্ত্র অগ্ন্যাশয় যদি যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে না পারে অথবা শরীর যদি উৎপন্ন ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হয়, তাহলে যে রোগ হয় তা হলো ‘ডায়াবেটিস’ বা ‘বহুমূত্র রোগ’। তখন রক্তে চিনি বা শকর্রার উপস্থিতিজনিত অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। ইনসুলিনের ঘাটতিই হলো এ রোগের মূল কথা। অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হরমোন ইনসুলিন, যার সহায়তায় দেহের কোষগুলো রক্ত থেকে গ্লুকোজ নিতে সমর্থ হয় এবং একে শক্তির জন্য ব্যবহার করতে পারে। ইনসুলিন উৎপাদন বা ইনসুলিনের কাজ করার ক্ষমতার যেকোনো একটি বা দুটোই যদি না হয়, তাহলে রক্তে বাড়তে থাকে গ্লুকোজ। আর একে নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে ঘটে নানা রকম জটিলতা, দেহের টিস্যু ও যন্ত্র বিকল হতে থাকে।
১৯৫৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ড. মো. ইব্রাহিমের উদ্যোগে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই এই দিনটিকে ডায়াবেটিস সচেতনতা তৈরিতে উপজীব্য করা হয়। এছাড়াও প্রতি বছরই ১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালিত হয়। এদিন বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক বেনটিং জন্ম নিয়েছিলেন এবং তিনি বিজ্ঞানী চার্লস বেস্টের সঙ্গে একত্রে ইনসুলিন আবিষ্কার করেছিলেন। লক্ষ্য হলো: পৃথিবীতে কোনো শিশুই যেন ডায়াবেটিসে মারা না যায়। ডায়াবেটিসের মতো ক্রনিক রোগ ব্যক্তি, পরিবার, দেশ, এমনকি সারা পৃথিবীর জন্য গুরুতর ঝুঁকি বহন করে এ সত্য জাতিসংঘ অনুধাবন করে ২০০৬ সালে একে জাতিসংঘ দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। পৃথিবীতে প্রায় ৪৬৫ মিলিয়ন লোক ডায়াবেটিস নিয়ে জীবনযাপন করছে।
মানুষের রক্তে গ্লকোজের পরিমাণ সাধারণত ৩.৩ থেকে ৬.৯ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর <৭.৮ মিলি.মোল/লি। কিন্তু যদি গ্লুকোজের পরিমাণ অভুক্ত অবস্থায় ৭ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর >১১ মিলি.মোল/লি পাওয়া যায়, তবে তার ডায়াবেটিস আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। বহুমূত্র রোগ বা ডায়াবেটিস বললে সাধারাণত ডায়াবেটিস মেলিটাস বোঝায়। তবে ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস নামে আরেকটি রোগ আছে যাতে মূত্র উৎপাদন বেশি হয় কিন্তু তা অউঐ বা অ্যান্টি ডাইইউরেটিক হরমোন নামে অন্য একটি হরমোনের উৎপাদনের অভাব বা ক্রিয়ার অভাবে হয়ে থাকে এবং মূত্রাধিক্য এবং তার জন্য অতিতৃষ্ণা এই দুটি উপসর্গের মিল ছাড়া এই রোগটির সঙ্গে ‘ডায়াবেটিস মেলিটাস’-এর কোনো সম্পর্ক নেই। এ দুটির মধ্যে ডায়াবেটিস মেলিটাসের প্রকোপ অনেক বেশি। ডায়াবেটিস মেলিটাস আবার দু’রকম হতে পারে। যথা: টাইপ-১ বা ইনসুলিন নির্ভরশীল এবং টাইপ-২ বা ইনসুলিন নিরপেক্ষ ডায়াবেটিস।
টাইপ-১ ডায়াবেটিস হলো অটোইমিউন রোগ। এ রোগে অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন নিঃসরণকারী কোষগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। তাই যাদের টাইপ-১ হয়, এদের দেহে ইনসুলিন উৎপাদিত হয় খুবই কম। এ জন্য রোগীকে বেঁচে থাকার জন্য ইনসুলিন ইনজেকশন বা ইনসুলিন পাম্প নিতে হয়। শিশু ও তরুণদের মধ্যে এ ধরনের বহুমূত্র হয় বেশি। ১০-৩০ বছরের মধ্যে দেখা দেয়। এটাা মূলত জেনেটিক কারণে হয়ে থাকে। এর জন্য দায়ী হলো ঐখঅউজ ৩ এবং ঐখঅউজ ৪ নামক দুটি জিন। টাইপ-১ কে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়, টাইপ-১-এ : অটোইমিউনিটির জন্য বিটা কোষের ধ্বংসের কারণে এই টাইপ-১-এ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। টাইপ-১-বি : এটিও বিটা কোষের ধ্বংসের কারণে হয়ে থাকে, কিন্তু এর সঠিক কারণ জানা যায়নি।
টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগের পেছনে থাকে মূলত ‘ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স’। টাইপ-২ রোগীরা তাদের শরীরে যে ইনসুলিন উৎপন্ন হয়, তাকে ব্যবহার করতে পারে না। ব্যায়াম ও খাদ্যবিধির সাহায্যে একে প্রথমে মোকাবিলা করা হয়। তবে অনেক সময় প্রয়োজন হয় মুখে খাওয়ার ওষুধ, এমনকি ইনসুলিন ইনজেকশন। ৪০ বছর বা তারপরে এ ধরনের ডায়াবেটিস রোগ দেখা দেয়। মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় পানীয় টাইপ-২ এর ঝুঁকি বাড়ায়।
অত্যধিক পরিমাণ সাদা ভাত খাওয়াও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। শারীরিক পরিশ্রম না করাও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের অন্যতম একটা কারণ। বিশ্বজুড়ে ৪৬৫ মিলিয়ন ডায়াবেটিস রোগীর ৯০ শতাংশের বেশি হলো টাইপ-২ ডায়াবেটিস। দুই ধরনের ডায়াবেটিসই গুরুতর এবং হতে পারে শিশু ও তরুণদেরও। এ জন্য ডায়াবেটিসের বিপদ-চিহ্নগুলো জানা খুবই প্রয়োজন। ‘মৃদু ডায়াবেটিস’ বলে কিন্তু কিছু নেই। নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় তৃতীয় এক প্রকার ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। এটা গ্যাস্টেশনাল ডায়াবেটিস নামেও পরিচিত। ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬১/২২৫ নম্বর ঘোষণায় ডায়াবেটিসকে দীর্ঘমেয়াদি, অবক্ষয়ী ও ব্যয়বহুল ব্যাধি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে যা মানবদেহে মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।
ডায়াবেটিসের সাধারণ লক্ষণাদির মধ্যে রয়েছে ঘন ঘন প্রস্রাব যার কারণে এ রোগটির নাম বহুমূত্র রোগ, অধিক তৃষ্ণা এবং মুখ শুকিয়ে যাওয়া, অতিশয় দুর্বলতা, সার্বক্ষণিক ক্ষুধা, স্বল্প সময়ে দেহের ওজন হ্রাস, চোখে ঝাপসা দেখা, ঘন ঘন সংক্রমণ ইত্যাদি। ডায়াবেটিসের অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমন: বেশি পরিমাণে জাঙ্কফুড খাওয়ার ফলে শরীরে ক্যালোরি এবং ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায়। যার কারণে শরীরের ইনসুলিনে চিনির মাত্রা বেড়ে যায়, জিনগত রোগের কারণে ডায়াবেটিস হতে পারে, ডায়াবেটিস শরীরের অতিরিক্ত ওজন এবং ওজন বৃদ্ধির কারণে ঘটতে পারে, প্রতিদিনের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ অনুশীলন না করায় ডায়াবেটিস হতে পারে, বেশি চাপে থাকার কারণে ডায়াবেটিস সমস্যা হয়ে যায়, যদি কোনো ব্যক্তি অতিরিক্ত পরিমাণে ধূমপান করে তার ফলস্বরূপ তার ডায়াবেটিস হতে পারে, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ভুল ওষুধ সেবনের কারণে একজন ব্যক্তির ডায়াবেটিস হতে পারে। বলা যেতে পারে, ডায়াবেটিস হলো কোনো ব্যক্তির অতিরিক্ত চা, কোল্ড ড্রিঙ্কস এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার গ্রহণের ফলস্বরূপ।
অতিরিক্ত মেদ এ রোগের অন্যতম কারণ। উপসর্গহীনতা বা অসচেতনতার কারণে চিকিৎসার অভাবে ডায়াবেটিস হতে পারে। কিডনি বা বৃক্কের অক্ষমতার অন্যতম মূল কারণ ডায়াবেটিস। অন্ধত্ব বা দৃষ্টিবিচ্যুতির অন্যতম মূল কারণ ডায়াবেটিস। এছাড়া বিনা দুর্ঘটনায় অঙ্গচ্ছেদের অন্যতম মূল কারণও ডায়াবেটিস।
পরীক্ষার পরে, কিছু ওষুধ, যেমন : মেটফর্মিন, চিনির স্তর নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দেওয়া হয়। এটি কেবলমাত্র ডায়াবেটিস টাইপ-২ রোগীদের দেওয়া হয়। এই ড্রাগ ইনসুলিন উৎপাদন উৎসাহিত করে। শরীরকে ইনসুলিন আরও ভালোভাবে ব্যবহার করতে সহায়তা করে। টাইপ-১ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের রোগীদের চোখের রেটিনা, ছানি ইত্যাদি একবারে পরীক্ষা করা উচিত। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে কালো জাম খাওয়া উচিত। ব্ল্যাকবেরিতে অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। যা ইনসুলিন তৈরিতে সহায়তা করে। যার কারণে রক্তে সুগার স্বাভাবিক পর্যায়ে থেকে যায়।
গুড়ের ৮ থেকে ১০টি টুকরা পিষে একটি চাটনি তৈরি করে তারপরে এটি এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে সারা রাত রেখে দিতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে তা পান করতে পারলে কাজে দেবে। হিবিস্কাসের পাতায় উচ্চ পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড থাকে। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খুব কার্যকর প্রমাণ করে। ড্রামস্টিক পাতার রস ডায়াবেটিসে প্যানাসিয়ার মতো কাজ করে। ড্রামস্টিক পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড থাকে। যা চিনির স্তর নিয়ন্ত্রণ এবং ইনসুলিন বাড়ায়, এর ফলে প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতিদিন ৮ থেকে ১০টি নিমপাতা চিবানো উচিত। নিমের উপস্থিত অ্যান্টিভাইরাল গুণ দেহে চিনির স্তর নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
ডায়াবেটিস রোগীদের দৈনিক ব্যায়াম, যোগ ব্যায়ামের মতো শারীরিক ক্রিয়াকলাপ করা উচিত। যোগ ব্যায়ামের আসন করা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। ডায়াবেটিস রোগীদের সর্বদা তাদের পায়ে আঘাত এড়ানো উচিত। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত। অতিরিক্ত তেল এবং মসলা এড়িয়ে চলা এবং প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। ডায়াবেটিসের চিকিৎসা হলো ইনসুলিন, অ্যান্টিডায়াবেটিক মুখে খাওয়ার ওষুধ, জীবনধারার পরিবর্তন, নিয়মিত ব্যায়াম, খাদ্য গ্রহণে সচেতনতা এবং অসুখ সম্বন্ধে রোগীর প্রয়োজনীয় ও সঠিক ধারণা।
লেখক : কলাম লেখক ও কর্মকর্তা, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশে নির্বাচনের ঢোলে বাড়ির আওয়াজ ছড়িয়ে পড়েছে দেশের সীমানার বাইরেও। সুষ্ঠু ভোটের দাবির সঙ্গে ওয়াদাও তুঙ্গে। লক্ষণীয় বিষয়, এ দাবি ও ওয়াদার বেশির ভাগই বিদেশিদের কাছে। বিএনপির বিদেশিদের কাছে নালিশ রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচিত। সেই সঙ্গে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিটি স্থানিকের আওতা ছাড়িয়ে বৈশ্বিক করে দেওয়ার চেষ্টাও ব্যাপক। যার অর্থ, সুষ্ঠু-অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন শুধু বাংলাদেশের বিষয় নয়, এটি গোটা দুনিয়ারও বিষয়। এর বিপরীতে সরকারের শীর্ষমহল থেকেও সুষ্ঠু নির্বাচনের ওয়াদা শোনানো হচ্ছে বিদেশিদের। কিছুদিন ধরে যেসব বিদেশি হাই-প্রোফাইল এসেছেন তাদের সবাইকেই আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস শোনানো হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনের বিচারের তালগাছটা প্রকারান্তরে বিদেশিদের হাতে চলে যাচ্ছে কি না প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আগামী নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে কথাটি কেন সরকারি মহলকে বিদেশি অতিথিদের কাছে অবিরাম বলতে হচ্ছে? নির্বাচন প্রশ্নে বিদেশিদের কোনো কথা শোনা হবে না বলে আওয়ামী লীগের সাহসী ও স্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে। না শুনলে সেই বিদেশিদেরই কেন সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিতে হচ্ছে? ক্ষমতাসীনদের ঘোষণায় বিদেশিরা দমেনি। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে নির্বাচনের কথা আনছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আবার নতুন করে বলা শুরু করেছে। যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপানও সুষ্ঠু নির্বাচনের নসিহত করছে। সরকার বা সরকারি দল তা অগ্রাহ্য করছে না। বলছে না, এসব সবক তারা শুনবে না। উপরন্তু, কথা দিচ্ছে। সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের ওয়াদা দিচ্ছে। বিষয়টি একদিকে সাংঘর্ষিক, আরেক দিকে বিএনপির জন্য বেশ পুলকের। দলটিকে নির্বাচনে এনে দিতে মার্কিন সহায়তা চাওয়ার তথ্য মাস-দশেক আগে নিজেই প্রকাশ করে উটকো ঝামেলায় পড়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। মাস কয়েকের ব্যবধানে এখন বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে সরকারের নানা পদক্ষেপ ওপেন সিক্রেটের মতো।
নির্বাচনে আসা যেকোনো রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব। আবার না আসার স্বাধীনতাও নিশ্চয়ই আছে। এ দায়িত্ব ও স্বাধীনতা দুটিই আপেক্ষিক ও যুক্তির বিষয়। কোনো দলকে নির্বাচনে আনা সরকারের দায়িত্ব না হলেও দায় রয়েছে। এখানে পারস্পরিক আস্থার বিষয় রয়েছে। যে জায়গায় চরম ঘাটতি। এর ফাঁকে বিদেশিদের সালিশ বা মধ্যস্থতার নমুনাও বেশ স্পষ্ট। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনী বল বিদেশিদের পায়ে বা কোটে চলে যাওয়া কারও জন্য শঙ্কার, কারও জন্য সম্ভাবনার।
সরকারের ভালো কিছুই দেখছে না বিএনপি। বিশেষ করে নির্বাচন প্রশ্নে সরকারের ওপর জিরো পারসেন্ট আস্থাও নেই বিএনপির। তারা এ সরকারের অধীনে নির্বাচন করে দেখেছে। নির্বাচন না করেও দেখেছে। সরকার যেন নির্বাচন করতে না পারে সেই চেষ্টাও বাদ দেয়নি। কোনো অভিজ্ঞতাই সুখকর হয়নি বিএনপির জন্য। তাহলে সামনে কোনটি করবে? বিএনপি থেকে বলা হচ্ছে, তাদের ছাড়া আগামী নির্বাচন করতে পারবে না সরকার। কোন ভরসায় এমন আশাবাদ দলটির? এক কথায় জবাব নেই তাদের কাছে। রাজনীতি বিশ্লেষকদের কাছেও জবাব নেই। রাজনীতির চেয়েও এটি বেশি হয়ে পড়েছে কূটনীতির বিষয়। আবার এ কথাও সত্য, দেশি-বিদেশি যেকোনো মধ্যস্থতায়ই হোক, একটি সমঝোতা যে আবশ্যক তা বলার অপেক্ষা রাখে না, যা রাজনীতিকে নিয়ে যাচ্ছে কূটনীতির বাঁকে।
এ দেশের নির্বাচন বা কোনো ইস্যুতে বিদেশিরা কেন নাক গলাবে? এমন একটি তাত্ত্বিক প্রশ্ন রয়েছে বরাবরই। আবার দেশ ভাগ, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ, আন্দোলন, ক্ষমতার পটপরিবর্তনের নানান ঘটনায় ছিল বিদেশি সম্পৃক্ততা। তা কারও জন্য স্বস্তির, আর কারও জন্য হয়েছে বেদনার। ওই স্বস্তিবোধ করা বেনিফিশিয়ারিরাও পরে প্রয়োজনে বিদেশি ভূমিকার নৈতিক সমালোচনা করেন। আর বেদনাহতরা বিদেশি নেক নজরের নানা চেষ্টা চালান। গোটা বিষয়টাই এক অর্থে আপেক্ষিক এবং যার যার সুবিধামতো। টানা গত কয়েকটি নির্বাচনের সময় দেশের রাজনীতিতে বিদেশি কূটনীতিকদের ভূমিকা এমনকি প্রকাশ্য তৎপরতা চলেছে। আজকের ক্ষমতাসীনরা এর সব চেয়ে বড় বেনিফিশিয়ারি। তখন এই বিদেশিদের পরম বন্ধু, উন্নয়ন সহযোগী, গণতন্ত্রের সহায়কসহ নানা বিশেষণ ও সম্বোধনে বিশেষায়িত করা হয়েছে। কূটনীতিকরা কোথায়, কার সঙ্গে কথা বলছেন, কী মন্তব্য করছেন এসব খবরের দিকে মানুষের ব্যাপক আগ্রহ। গণমাধ্যমকর্মীরাও ব্যস্ত থাকেন ঢাকায় বিদেশি কূটনীতিকদের তথ্য জোগাড়ে। এবারের পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা। কথাবার্তা বেশি। সরকার ও ক্ষমতাসীন দলে এ বিষয়ে খুব অসহিষ্ণুতা। অস্থিরতাও প্রকাশ্যে। তাদের কাছে এটি ‘দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপ’, যা প্রকারান্তরে সরকারের দ্বিমুখিতা।
ঘটনা বিচারে গত দু-তিনটি নির্বাচনের পূর্বাপর ও নির্বাচন চলাকালে কোনো কোনো বিদেশি কূটনীতিক, যা করেছেন সেই তুলনায় এবার এখনো কম। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে শুধু প্রভাবিত নয়, অনেকটা ধরে-বেঁধে আওয়ামী লীগের সঙ্গী করতে ভারতের তখনকার পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিংয়ের ভূমিকা স্মরণযোগ্য। এবার এখন পর্যন্ত সে রকম কিছু না হলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন জানিয়েছেন, এ সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে তিনি ভারতের সাহায্য চেয়েছেন। এরই মধ্যে ভারতও কথা দিয়েছে, তারা আছেন সরকারের সঙ্গে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিএনপিকে নির্বাচনে এনে দেওয়ার তদবিরের কথাও জানা হয়েছে ড. মোমেনের জবানিতেই।
সচরাচর কোনো রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত দেশে একজন রাষ্ট্রদূত বা অ্যাম্বাসাডর স্বাগতিক দেশের পররাষ্ট্রনীতিকে নিজের রাষ্ট্রের পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা করবেন, সেটাই তার দায়িত্ব। তিনি তার দেশের স্বার্থই দেখবেন। কিন্তু বাংলাদেশে বরাবরই ওই কূটনীতিককে তার জায়গায় রাখা হয় না। ক্ষমতাসীন-ক্ষমতাহীন উভয়ই তাকে মুরুব্বির কেদারায় বসিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজেরা লাভবান ও প্রতিপক্ষকে ঘায়েলে তৎপরতায়। তাকে নাক গলানোর যাবতীয় কূটনৈতিক বন্দোবস্ত রাজনীতিকরা করে দিচ্ছেন। ব্যবসায়ী-আমলাসহ অন্যান্য সেক্টরও পিছিয়ে থাকে না। দূতাবাসের একটি দাওয়াত পেতে, দূতের মন পেতে হেন চেষ্টা নেই, যা না করা হয়। তখন তারা ‘নাক গলানো’ শব্দ মনে রাখেন না। শুধু নাক নয়, নিজের গলা পর্যন্ত দিয়ে ফেলেন।
আমরা কেন আমাদের নিয়ে বিদেশিদের নাক গলাতে বা আগ্রহ বাড়ানোর ব্যবস্থা করি? এমন প্রশ্নে খুব বেজার হন রাজনীতিকরা। বিদেশিরা তাদের কদর বুঝে তা নিশ্চিত হতেও প্রায়ই ঢুঁ মারার মতো সফরে আসছেন এ দেশে। যাত্রাবিরতির নামেও আসেন। আমাদের দেশে তাদের গুরুত্বের সঙ্গে চাহিদাও তৈরি হয়েছে। সামনে এ সফর আরও বাড়বে সেই আভাসও রয়েছে। ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের সমান্তরালে বাংলাদেশে রাজনীতির বিভাজনও তাদের জন্য উপকার। নাক ডাকার সঙ্গে কথা বলার মঞ্চ পর্যন্ত তৈরি করে দেয়ওা হচ্ছে এ দেশে। বিদেশিদের দিয়ে মঞ্চের নিরপেক্ষতা, সৌন্দর্য, আভিজাত্য তৈরির একটি চর্চাও চলছে। আর নিউজ কাভারেজ তো উপরি পাওনার মতো। সেখানে আসার পর গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে তাদের নানা প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয়। তারা এড়িয়ে যান না। জবাব দেন নিজেদের মতো। লক্ষ করার মতো বিষয় তাদের রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ কবে থামবে, কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে বিশ্ব অর্থনীতি, ওই বিদেশি দূতের দেশে রাজনৈতিক-সামাজিক চিত্র কেমন; এ ধরনের প্রশ্ন করা হয় না। বরং জানতে চাওয়া হয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও নির্বাচন-সংক্রান্ত প্রশ্ন। স্বাভাবিকভাবেই এটি তাদের জন্য সুযোগ। গরজ না থাকলেও এর মধ্য দিয়ে তাদের আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আগ্রহী হতে বাধ্য করা হচ্ছে।
এসবের যোগফলে আমাদের দেশের সুষ্ঠু নির্বাচন, ক্ষমতায় বসানো-নামানো-দমানোসহ নানান কাজের কৃতিত্বটা তাদের ঝুড়িতে তুলে দেওয়ার এ প্রবণতা কমার আলামত নেই। বরং আরও বৃদ্ধির কারণ ও পরিস্থিতি বিদ্যমান, চলমান। ক্ষমতায় যেতে তাদের কৃপা, টিকে থাকতে তাদের দয়া, ক্ষমতা থেকে নামাতে তাদের মহানুভবতার এ সন্ধিক্ষণ সামনে আরও কত দূর গড়াবে এখনই বলা যাচ্ছে না। অতীত-বর্তমানের বহু ঘটনায় প্রমাণিত বিদেশিরা কোনো বিষয়ে বেশি পদক্ষেপ নিলে ফলাফল নানান দিকে চলে যায়। পক্ষে-বিপক্ষে দুদিকেই উপাদান তৈরি হয়। যার নানা দৃষ্টান্ত এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে নিয়ে অতি উৎসাহ ও অতি বিরোধিতার ফলও এরই মধ্যে স্পষ্ট। গুমের শিকার পরিবারগুলোর সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলামের বাসায় তার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য গেলে সেখানে সরকারি মহলের যোগসাজশে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির ফল ভুগতে হচ্ছে। আবার তাকে অ্যাকটিভ করার জেরও পড়ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের পরামর্শ ও নানা তাগিদের পেছনে রয়েছে অনেক উদ্দেশ্য-বিধেয়। ভারত-চীনের তো আরও বেশি।
লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন
সাংবাদিক, লেখক ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী সিরাজুদ্দীন হোসেন ১৯২৯ সালের ১ মার্চ মাগুরা জেলার শালিখার অন্তর্গত শরশুনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৩ সালে ঝিকরগাছা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন ও ১৯৪৫ সালে যশোর মধুসূদন কলেজ থেকে আইএ পাস করার পর তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ১৯৪৭ সালে বিএ পাস করেন। সিরাজুদ্দীন হোসেন সাংবাদিক হিসেবে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় প্রথমে কলকাতায় এবং পরে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত একই পত্রিকায় ঢাকায় কাজ করেন। ওই বছর তিনি ফ্রাঙ্কলিন পাবলিকেশন্স-এ যোগ দেন। তিনি ইত্তেফাক পত্রিকার বার্তা সম্পাদক (১৯৫৪-১৯৬৬, ১৯৬৯), সংবাদ সংস্থা পিপিআই-এর ব্যুরো চিফ (১৯৬৬-১৯৬৯) এবং দৈনিক ইত্তেফাক-এর নির্বাহী সম্পাদক (১৯৭০-১৯৭১) হিসেবে কাজ করেন। স্পষ্টবাদী, সত্যনিষ্ঠ এবং নির্ভীক সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন ছয় দফা আন্দোলন এবং পরে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে সক্রিয়ভাবে কাজ করেন। সাংবাদিক ও লেখক হিসেবে তিনি বাঙালির শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে লিখেছেন, কাজ করে গেছেন প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চালাকালীন তিনি অধিকৃত ঢাকায় ইত্তেফাকে দুঃসাহসিক সব সম্পাদকীয় লেখেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহায়তা দেন এবং অবরুদ্ধ বাংলাদেশের সংবাদ সংগ্রহ করে মুজিবনগর সরকারের কাছে নিয়মিত প্রেরণ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র ছয়দিন আগে ১৯৭১ সালে ১০ ডিসেম্বর হানাদার পাকিস্তানি সৈন্যরা তার চামেলীবাগের বাসা থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায়। পরে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিশ্বের প্রায় সব দেশই। অধিকাংশ দেশই তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কার নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির কথা প্রায় সবারই জানা, তারাও ইতিমধ্যে তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এসেছে। তবে ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার। ফলাফল ভোক্তা মূল্যসূচকে (সিপিআই) বা মূল্যস্ফীতিতে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড। মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সিপিআই ইনডেক্সে এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।
গত ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করে সরকার। এ বাজেটের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আগামী অর্থবছরে সরকার কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বাজেট প্রস্তাবে কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি পরাবাস্তব বাজেট। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা আসলে সম্ভব নয়। গত ১১ মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। সে হিসাবে মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো, আগের বছরের মে মাসে যে পণ্য গড়ে ১০০ টাকা কিনতে হয়েছে, এ বছরের মে মাসে তা কিনতে হচ্ছে গড়ে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সায়। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, ধরুন আগের বছরের একই সময়ে ৫০০ টাকার একটি নোটে কোনো ব্যক্তি পাঁচটি পণ্য কিনতে পেরেছিলেন। এ বছরের একই সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এখন একই টাকায় তিনটি পণ্য কিনতে পারছেন। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১ বছরে বেড়েছে ১১.৩২ শতাংশ : ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, অথচ এ বছরের মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ বছরের এপ্রিল মাসেও খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।
খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে এক বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ : বিবিএসের তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বা ৬৪ শতাংশ।
গ্রামের চেয়ে শহরের মূল্যস্ফীতি বেশি : এক বছর আগেও শহরের মূল্যস্ফীতি গ্রামের চেয়ে কম ছিল। কারণ গ্রামের চেয়ে শহরে পণ্য মজুদের আধুনিক ব্যবস্থা আছে। তবে সরকারি উদ্যোগে শহরের মতো গ্রামেও কিছু স্থানে খাদ্যগুদামের ব্যবস্থা তৈরি হওয়ায় এখন শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি কমেছে। মে মাসে শহর এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, একই সময়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বিশ্বে কমেছে মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশে বাড়ছে : গত শনিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট-পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, থাইল্যান্ডে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, গত এপ্রিলে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ আগের তুলনায় দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে ৬৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। সেখান থেকে ৪৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গত অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, সেখান থেকে ৩৪ শতাংশ কমিয়ে ৭ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে ইইউ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়। তবে বাংলাদেশ এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় শুরুর দিকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো গত বছর আগস্টে এক ঘোষণাতেই জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই মাসেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশ দেরিতে হলেও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। বর্তমানে এ সুদহার ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে নীতি সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে আভাস দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দাবি করেছে, বিশে^র দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির যে হার, তা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য হুমকি। মূল্যস্ফীতির এই হার ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
২০০৯ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখনো মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর ছিল। পরে অবশ্য তা কমতে কমতে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঠিক এরকম এক সময়ে গত বছর ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এর পরপরই বাড়ানো হয় সব ধরনের পরিবহন ভাড়া। এ দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। ফলে পরের মাস আগস্টে মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে।
যদিও সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে থাকে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে আসে। জানুয়ারিতে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চ মাসে হয় ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এপ্রিলে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এসেছিল।
মজুরি সূচক বেড়েছে : বিবিএসের তথ্য বলছে, গত কয়েক মাস ধরেই মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। অক্টোবরে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩২ শতাংশে।
সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে প্রেম এরপর বিয়ে। দেড় বছরের দাম্পত্য জীবনে আট মাস ধরে চিত্রনায়িকা পরীমণি ও শরিফুল রাজের বনিবনা হচ্ছে না বলেই শোনা যাচ্ছে। চলছে টানাপোড়েন এবং সেই সংসার এখন ভাঙনের পথে। রাজের ফেসবুক থেকে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর রাজের সঙ্গে পরীমণির মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। সব ছাপিয়ে যা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রবিবার একটি গণমাধ্যমের ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে এসে শরিফুল রাজ জানান, আপাতত তারা সেপারেশনে আছেন এবং তাদের আর একসাথে হওয়ার কোন সুযোগ নেই। পরীকে তিনি শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে সবশেষে পরীমণির উদ্দেশ্যে রাজ বলেন, ‘বেবি, আই লাভ ইউ। যা-ই হোক না কেন, আনন্দে থেকো। আমরা আমাদের সন্তানকে ভালো রাখব।’
রাজের এমন মন্তব্যের উত্তর দিতে সোমবার রাতে গণমাধ্যমটির লাইভে এসে রাজের উদ্দেশ্যে পরীমণি বলেন, ‘গরু মেরে জুতা দান করার কোনো দরকার নেই। কেউ রেসপেক্ট করলে সেটা তার কার্যকলাপ দেখেই বোঝা যায়, মুখ ফুটে বলতে হয় না। আমাকে পাবলিকলি অপমান করে এরপর রেসপেক্ট দেখানোর কোনো দরকার নেই। আর আমার বাচ্চাকে নিয়ে এসব ইমোশনালি কোনো কথা শুনতে চাই না। এসব ইমোশনালি কথা মানুষকে গিলিয়ে লাভ নেই। মানুষ বুঝে।’
ফাঁস হওয়া ভিডিওগুলো পরী বলেন, ‘এত বছর ধরে তারা বন্ধু অথচ আমি জানতাম না। এসব সামনে আসার পর জানতে পারলাম। আর রাজ যতটা তার বন্ধুদের ইমেজ নিয়ে কনসার্ন তার পরিবার নিয়ে এতটাও কনসার্ন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমনিতে অনেক শান্তশিষ্ট। অনেকটা সাপের মতো, লেজে পাড়া না দিলে চুপচাপ থাকি কিন্তু আমার লেজে পাড়া দিলেই আমি ফুঁস করে উঠি আর তখন কামড় দিবই।’
সবশেষে পরী বলেন, ‘আমি চাই এসবের শেষ হোক। আমি আজকে এখানে এসে এসব বলতাম না। তুমিই (রাজ) আমাকে বাধ্য করেছ। এরকম অসুস্থ মানুষের সঙ্গে আমি আর থাকতে চাই না। আমি চাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ আমাকে ডিভোর্স দিক।’
অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল সোমবার দুপুরে কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটে গত ২৫ মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়। ২০২০ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পর এবারই প্রথম কয়লা সংকটে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হলো।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের এই বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানটিকে কয়লা ক্রয়ে ঋণ দিয়ে আসছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল পর্যন্ত কয়লার ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিএমসি। পরে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হলে কয়লা আমদানির এলসি খোলার শর্ত দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান। গতকাল পর্যন্ত ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ মাসের শেষদিকে কয়লা দেশে আসার কথা রয়েছে।
কয়লার অভাবে দেশের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক মাসে লোকসান হবে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে জনদুর্ভোগ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে পুরো ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
এদিকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের বাইরে শুধু কয়লাবাবদ পিডিবির কাছে কেন্দ্রটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকা এ বকেয়ার টাকা পরিশোধের জন্য দফায় দফায় চিঠি দিয়েও তা পরিশোধ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলছে, বৈশি^ক মন্দার পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি কেন্দ্রভাড়া বাবদ প্রতি মাসে পিডিবিকে ২৪৭ কোটি টাকা দিতে হবে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও নির্ধারিত কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে পিডিবিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট করে প্রায় তিন কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল কেন্দ্রটি। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি ইউনিট। গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকার মতো।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার প্রকৃত জানা না গেলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানান, সব ধরনের ব্যয় বাদ দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে তাদের নিট মুনাফা হতো ৫ থেকে ৬ শতাংশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড়মূল্য সাড়ে ৫ টাকা এবং মুনাফা সাড়ে ৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক মাসে মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এ মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে বিসিপিসিএল। এদিকে কয়লা কেনার জন্য সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ছয় মাসের বেশি সময় কয়লার বিল বকেয়া থাকায় সুদের পরিমাণও বেড়ে যাবে। বাড়তি এ সুদের অর্থ বিসিপিসিএলকেই পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রতি ইউনিটের গড়মূল্য প্রায় ১১ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও পিডিবি এ বিদ্যুৎ লোকসান দিয়ে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়। পায়রা থেকে এক মাস বিদ্যুৎ কিনতে না পারলে পিডিবির লোকসান আরও বাড়বে।
সূত্রমতে, কয়লা দেশে পৌঁছানো এবং কেন্দ্র চালু করতে সব মিলে অন্তত এক মাসের মতো সময় লাগবে। কোনো কারণে যদি কয়লা আসতে আরও দেরি হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিশে^র সেরা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এক সুইচে চালু করার পর নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বৈশি^ক কারণে ডলার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তবে এ সময়ে আমরা বসে না থেকে কেন্দ্রের মেইনটেনেন্সের কাজটি করে ফেলব, যাতে দীর্ঘদিন আর মেইনটেনেন্স করা না লাগে।’
কেন্দ্রটি বন্ধের ফলে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে তা জানতে চাইলে প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘আমরা এমনিতেই বকেয়া বিল পাচ্ছি না। এটাই বড় ক্ষতি। অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি কেন্দ্রটি বন্ধের কারণে সাশ্রয়ী দামে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দিতে না পেরে কমফোর্ড ফিল করছি না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র ভাড়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি এবং কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলেও এ ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয়। আর লোডশেডিং না দিয়ে সরকার যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়, তাহলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই এই মুহূর্তে। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৪ টাকার ওপর লোকসান হবে।’ তিনি বলেন, ‘ডলার ছাড় ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আগেই ডলার ছাড় করা উচিত ছিল। এতে বিরাট ক্ষতি হলো। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয় হতে পারে। একটি হলো যারা ডলার ছাড় করছেন তারা বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না অথবা দেশের পরিস্থিতি আসলেই ভয়াবহ। তবে দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডলার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। আর বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে। এ ক্ষেত্রে খাতের গুরুত্ব বুঝে ডলার ছাড় করা হয়। তবে দেশের প্রয়োজনে ডলার ছাড় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের গাফিলতি নেই।’
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।