
নারী একজন গর্ভধারিণী মা জননী, নারী কর্মজীবী একজন সফল মানুষ। তিনি শিক্ষক, নেতা, কর্তা, উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী। পরিবারের ভালোমন্দ, অগ্রগতি, শান্তি-শৃঙ্খলার একজন মহান দায়িত্বশীল মানুষ। তাকে ছাড়া পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রচিন্তা করা যায় না।
পরিবারের সুখ-শান্তি-উন্নতি-অগ্রগতির একজন অংশীদার সফল মা। দুনিয়াজুড়ে নারী জাতি, তাদের মেধাশক্তি যোগ্যতা দিয়ে সফলভাবে পৃথিবীকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। নারীর শ্রম, মেধা, যোগ্যতা দিয়ে পরিবার ও সমাজ নানাভাবে উপকৃত হচ্ছে। নারী মানুষের কর্মস্থল স্বামী থেকে পরিবার, পরিবার থেকে রাষ্ট্র, রাষ্ট্র থেকে দুনিয়াজুড়ে তাদের ভূমিকা বলে শেষ করা যাবে না।
নারীর প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করতে দুনিয়ায় ধর্মগ্রন্থসমূহে গুরুত্বের সঙ্গে নির্দেশনা রয়েছে। নারীকে অবহেলা, অবমূল্যায়ন, ছোট করে দেখা, মোটেও ভালোভাবে দেখা হয়নি। কঠোরভাবে ধর্মগ্রন্থে বলা আছে, মা জাতির প্রতি সুন্দর সদাচরণ করার জন্য। কিন্তু সমাজ সে পথ থেকে বহু দূরে সরে যাচ্ছে।
সেই সাহেবি যুগের চরিত্র এখনো সমাজ পালন করছে। নারীকে মানুষ হিসেবে সম্মান ও মূল্যায়ন করতে পুরুষ সমাজ নানাভাবে ফন্দি আঁটে। নানাভাবে নারী সমাজ তাদের সততা, দক্ষতা, যোগ্যতায় এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতি, কর্মক্ষেত্রে নারীর দক্ষতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নারী জাতি অত্যন্ত ধৈর্য ও সাহসের সঙ্গে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অনেক ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। তাদের অবদান পুরুষশাসিত সমাজ যেভাবে স্বীকৃতি দেওয়া দরকার, সেভাবে তারা পাচ্ছে না।
সামাজিকভাবে মাতা-পিতার সম্পদ থেকে, যেভাবে তাদের অধিকার পাওয়ার ন্যায্যতা রয়েছে, সে ক্ষেত্রে নারীরা এখনো পরিবার ও সমাজ থেকে সে অধিকার বঞ্চিত। নানাভাবে নারী জাতিকে ঠকানোর পরিকল্পনা থাকে, পরিবার ও সমাজ কর্তাদের হাতে। নারী তার অর্থ সম্পত্তিতে পূর্ণ অধিকার পাচ্ছেন না।
সমাজে অসংখ্য চিত্র লেখকের সৃষ্টিতে রয়েছে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সমাজে অসংখ্য পরিবারে দেখছি, নারীর যে অংশ সম্পত্তিতে ‘অধিকার’ হিসেবে ক্ষমতা রাখা রয়েছে, সে অধিকার পুরুষ আত্মীয়রা আত্মসাৎ করছে। অথবা নামমাত্র দিয়ে ঠকিয়ে রেখেছে। নারীদের পারিবারিক ও সামাজিকভাবে ঠকাঠকির খেলা, আমার জীবনকালেই দেখে আসছি।
আমরা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করি। নারীর সম্পদের অধিকার সমাজ ও পরিবার দিচ্ছে না। অসংখ্য সংবাদ ও ঘটনা আমার জানা। কিন্তু সমাজকর্তা কিছুই করছে না। রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গিয়েও তেমনভাবে সুফল পাওয়া যায় না। নানাভাবে ছলচাতুরী করে বঞ্চিত করার সফল নিয়মনীতি বাস্তবায়ন করা দৃশ্যমান একটি সামাজিক ব্যাধি। এ ব্যাধি এখন পরিবার ও সমাজের রক্তে রক্তে ঢুকে গেছে। এ চরিত্র নিয়মিতভাবে অনুশীলন হচ্ছে।
শিক্ষা, সংস্কৃতি চরিত্রে আমরা যতই উন্নতি ও দায়িত্বশীলতার কথা বলি না কেন বাস্তব ক্ষেত্রে নারীর সম্পত্তিতে অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে চোখ বন্ধ রেখেছি। চোখ খোলার কোনোই লক্ষণ ও সময় বাস্তবে দেখব বলে মনেও করতে পারছি না। কারণ সম্পত্তির মূল্য দিন দিন যে হারে বাড়ছে, তাতে করে নারী জাতি পিতা, স্বামী, ভাইবোন অথবা অন্য কারও কাছ থেকে যে সম্পদের হিসাব নিতে পারবে, সেটি আমার বিশ্বাসের জায়গায় স্থান পাচ্ছে না।
আমাদের পারিবারিক দায়িত্ববোধ থেকে এ বিষয়টি যত দিন বাস্তবায়ন না করব, সে সময় পর্যন্ত নারী তাদের পারিবারিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত থাকবে। তাদের পাশে সে বিষয়ে কাউকে এগিয়ে আসতে দেখছি না। অসহায়ভাবে নারীদের অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে। মায়া-মমতা, লজ্জায় অনেক মা জাতি সম্পত্তির অধিকার না চাইলেও, তাদের মনের মধ্যে জ¦ালা ও যন্ত্রণার আহামরি দেখা যায়। সমাজের জন্য এটি একটি মারাত্মক অভিশাপ, মারাত্মকভাবে জঘন্য অপরাধ। এ অপরাধকে সমাজ অপরাধ হিসেবে এখনো মনে করছে না।
নারীদের পৈতৃক সম্পত্তির অধিকার অন্য সদস্যরা আত্মসাৎ করে নীরবে ভোগ করে যাচ্ছে। কঠিন ধরনের অবস্থা সমাজের নানা পরিবারে দেখা যায়। এসব লজ্জাজনক কর্মকাণ্ডের কোনো প্রতিকার এ সমাজে হবে বলে মনে হয় না।
অসহায় অধিকার হারা, মা-বোনরা কীভাবে জঘন্য অনিয়ম ও পারিবারিক জুলুম থেকে রক্ষা পাবে, সেটি তাদের চিন্তা ও সাহসের মধ্যে আসছে না। তাই তারা মজলুম, অসহায় ও নির্যাতিত। বহু নামিদামি মানুষ, জমিদার, চৌধুরী, সিকদার পরিবারে এসব বঞ্চিত করার ইতিহাস অসংখ্যবার সমাজ দেখছে। তারাই সমাজ চালায়, তারাই সমাজের কর্তা। সমাজের নেতৃত্ব তাদের হাতেই।
এটি পরিষ্কারভাবে রাষ্ট্রের কাছে জানা আছে। বর্তমানে নারীরা সমাজের নীতিনির্ধারণী অনেক পদের সঙ্গে যুক্ত, ভাবতে হবে তাদের। পুরুষ ইচ্ছে করে হলেও নারীর সব অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাইবে না।
নিজের অধিকার নিজেদের প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্যোগ ও কর্মসূচি নিতে হবে। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সবক্ষেত্রে নারীর ন্যায্য অধিকারপ্রাপ্তি রাষ্ট্রীয়ভাবে করার আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। ঠকিয়ে ঠকিয়ে যেনতেনভাবে মা জাতির সম্পত্তির আত্মসাৎ আর দেখতে চাই না।
পুরুষের পাশাপাশি নারীর সম্পত্তির অধিকার পারিবারিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হোক। তাদের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে আইনি সহায়তার পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
পারিবারিকভাবে নিগৃহীত মজলুম অসহায় নারীদের সাহায্য ও কল্যাণে নারী সংগঠনদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
লেখক : কলাম লেখক
পূর্ববঙ্গ থেকে যখন স্বায়ত্তশাসনের দাবি তোলা হয় তখন যুক্তি হিসেবে পাকিস্তানে দুই অংশের ভেতরকার আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতা ও দূরত্বের যুক্তি তো থাকেই, ১৯৪০ সালে গৃহীত যে লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে ১৯৪৭-এ পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা সেই প্রস্তাবের কথাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। লাহোর প্রস্তাবে পরিষ্কারভাবেই বলা হয়েছে যে, প্রস্তাবিত রাষ্ট্রটি এককেন্দ্রিক হবে না, এর থাকবে দুটি অংশ, একটি ভারতবর্ষের উত্তর-পশ্চিমে অপরটি উত্তর-পূর্বে; দুটি অংশই হবে ‘স্বাধীন’। জোর দিয়েই বলা হয়েছিল যে, constituent states shall be autonomous and sovereign। অর্থাৎ তারা কেবল যে স্বায়ত্তশাসিত হবে তা-ই নয়, তাদের ‘সার্বভৌমত্ব’ও থাকবে। তখন পাকিস্তান ছিল একটা ধারণা।
কিন্তু ১৯৪৬ সালে যখন দেখা গেল ধারণাটির বাস্তবায়ন ঘটতে যাচ্ছে তখন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র ইচ্ছানুসারে এবং তার নিকটস্থ ব্যক্তিদের সমর্থন অনুযায়ী ব্যবস্থাপক পরিষদসমূহের সদস্যদের এক সম্মেলনে প্রস্তাবটি সংশোধন করে নিয়ে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জায়গাতে একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রের কথা বসিয়ে দেওয়ার কাজটি সম্পন্ন করেন। পাকিস্তানের জন্য জিন্নাহ সাহেব প্রাণপাত করছেন, অথচ তিনি শাসনকর্তা হবেন শুধু একটি অংশের, এটি কেমন কথা। তিনি অখণ্ড পাকিস্তান চাইলেন, নেহরু যেমন চাইছিলেন অখণ্ড ভারত। আদি প্রস্তাবের সংশোধনীটি তিনি উত্থাপন করিয়ে নিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে দিয়েই, যিনি তখন কেবল যে বাংলার প্রধানমন্ত্রী তাই নন ভারতবর্ষে একমাত্র পাকিস্তানপন্থি প্রধানমন্ত্রীও বটে। ইতিহাসের কৌতুক এখানেও যে, মূল নায়ক, কুশলী জিন্নাহ আদি প্রস্তাবটি উত্থাপন করিয়েছিলেন যাকে দিয়ে তিনি, এ কে ফজলুল হকও ছিলেন বাংলার তখনকার প্রধানমন্ত্রী, এবং যাকে দিয়ে তিনি সেই প্রস্তাবকে সংশোধনের মাধ্যমে কিম্ভূতরূপে বিকৃত করার প্রস্তাব উত্থাপন করালেন সেই সোহরাওয়ার্দীও ছিলেন বাংলারই প্রধানমন্ত্রী।
শুধু তাই নয়, আরদ্ধ কর্মটি সম্পাদিত হওয়ার পর ‘শেরে বাংলা’ ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী দুজনেই পেয়েছিলেন একই রকমের সমাদর। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকালীনই ফজলুল হককে নানাভাবে অপদস্থ করে বাংলার প্রধানমন্ত্রিত্ব ও মুসলিম লীগে তার অবস্থান, দুজায়গা থেকেই ঠেলে-ধাক্কিয়ে বের করে দেওয়া হলো। এবং পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরে সোহরাওয়ার্দীকে প্রায় একই ভাবে নতুন রাষ্ট্রের পূর্বাংশের প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে তো অবশ্যই, এমনকি গণ-পরিষদের সদস্য পদ থেকেও বঞ্চিত করা হলো। পাকিস্তানের কোনো-অঞ্চলেরই-বাসিন্দা নন, এই কারণে পাকিস্তানের নতুন শাসকদের মধ্যে যাদের পক্ষে গণপরিষদের সদস্য থাকার উপায় ছিল না, এমন ছয়জনকে পূর্ব বাংলার ব্যবস্থাপক পরিষদের সদস্যদের কোটা থেকে গণপরিষদে পাঠানো হলো।
এদের মধ্যে নবাবজাদা লিয়াকত আলী খান ছিলেন প্রধান; যিনি পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হলেন, এবং হওয়ার পরপরই পূর্ববঙ্গের স্বায়ত্তশাসন কীভাবে ও কতটা পরিমাণে হরণ করা যায় সে কাজে তৎপর হয়ে উঠলেন। অখণ্ড বাংলাকে যে বিভক্ত করা হয়েছে তার দায়িত্ব অনেকেরই, কিন্তু প্রধান অপরাধী হচ্ছে কংগ্রেসের অভ্যন্তরের হিন্দু মহাসভাপন্থিরা। অবাঙালি পাকিস্তানপন্থিরা বাংলার সবটা না-পাওয়াতে অসন্তুষ্ট হয়েছিল অবশ্যই, কিন্তু কে জানে ভেতরে ভেতরে এইটুকু ভেবে স্বস্তি পেয়েছিল কি না যে কলকাতাকে না-পাওয়াতে মন্দের ভালো হয়েছে, কেননা ভারতবর্ষের ওই দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরটি পাকিস্তানে এলে সেটাকেই হয়তো রাজধানী করবার দাবি উঠত। তবে তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথার্থ কোনো কারণ ছিল না, কারণ বাংলার মুসলিম লীগে এমন কোনো নেতা তখন ছিলেন না যিনি শক্তভাবে অমন দাবি তুলতে পারতেন।
সে যাই হোক, স্বাধীন হওয়ার পরপরই টের পাওয়া গেল যে পূর্ব বাংলা পাঞ্জাবশাসিত পাকিস্তানের একটি অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ হতে চলেছে। সে জন্যই দাবি উঠেছে স্বায়ত্তশাসনের, এবং ওই দাবিকে যৌক্তিক দিক দিয়ে জোরদার করবার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে আদি লাহোর প্রস্তাবের। বলা হয়ে থাকে যে, মুসলিম লীগের নেতাদের স্বার্থান্বেষী ও স্বেচ্ছাচারী আচরণে বিক্ষুব্ধ হয়ে সোহরাওয়ার্দী-আবুল হাশিমপন্থিরাই উদ্যোগ নিয়ে আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রকৃত প্রস্তাবে তৎপরতাটা সোহরাওয়ার্দীপন্থিদের তুলনায় হাশিমপন্থিদের দিক থেকেই ছিল অধিক উল্লেখযোগ্য। প্রথমত, সোহরাওয়ার্দী নিজে পূর্ববঙ্গকে নয়, পশ্চিম পাকিস্তানকেই তার কর্মক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন; দ্বিতীয়ত, তিনি সেখানে গিয়ে জিন্নাহ-আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে একটি দল গঠন করেছিলেন এবং আশা করছিলেন পূর্ববঙ্গে তার একটি শাখা প্রতিষ্ঠিত হবে।
অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনে যে তরুণরা উদ্যোগ নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন শামসুল হক, যাকে দলের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়; এবং মতাদর্শিকভাবে শামসুল হক ছিলেন আবুল হাশিমের রব্বানিয়াত দর্শনের অনুসারী। নতুন দলের ঘোষণাপত্রটি শামসুল হকই লিখে থাকবেন, কারণ তাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পাকিস্তান খেলাফত বা আল্লাহর প্রতিনিধিত্বমূলক রাষ্ট্র হবে এবং আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে জনগণ সার্বভৌম ক্ষমতা ও প্রভুত্বের অধিকারী হবে। এটি রব্বানিয়াত দর্শনেরই কথা। তবে ‘মূলদাবি’ হিসেবে শামসুল হক যে লাহোর প্রস্তাবের কথা বলেছেন সেটা আরও অধিক তাৎপর্যপূর্ণ। তার মতে, লাহোর প্রস্তাব ‘সর্বকালের সর্বযুগের সর্বদেশের যুগপ্রবর্তক ঘটনাবলির ন্যায় একটি নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করিয়াছে।” মনে হচ্ছে উদ্যোগীদের দৃষ্টিতে লাহোর প্রস্তাব ছিল একটি মহাবৈপ্লবিক ঘটনা। তবে, তাদের মতে, মুসলিম লীগ নেতৃত্বের অপরাগতার দরুন ওই বিপ্লবের লক্ষ্যগুলো অর্জন করা যেহেতু সম্ভব হয়নি তাই মুসলিম লীগকে “স্বার্থান্বেষী মুষ্টিমেয় লোকদের পকেট হইতে বাহির করিয়া সত্যিকারের জনগণের মুসলিম লীগ হিসেবে গড়িয়া তোলা আবশ্যক।” অর্থাৎ কিনা লাহোর প্রস্তাবের বাস্তবায়ন চাই।
নতুন সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা ভাসানী, এর আগে যিনি আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন, এবং মনেপ্রাণে যিনি লাহোর প্রস্তাবের ‘দুই পাকিস্তান’ নীতিতে বিশ্বাস করতেন। যে-মুসলিম লীগ কর্মী সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয় সেটির আহ্বান করা হয়েছিল ভাসানীর নামেই; যার প্রতিক্রিয়াতে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক মুসলিম লীগের তদানীন্তন সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ আলী চৌধুরী (মোহন মিয়া) ও অন্য কয়েকজন কর্মকর্তা মিলে এক বিবৃতিতে জানান যে, “মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সাহেবের দ্বারা আগামী ২৩শে ও ২৪শে জুন তারিখে মুসলিম লীগ কর্মী সম্মেলন নামে যে সভা আহূত হইয়াছে, তাহার সহিত মুসলিম লীগের কোনো সম্পর্ক নাই।
বস্তুত ইহা দলগত স্বার্থ ও ক্ষমতা লাভের জন্য মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির দ্বারা মুসলমান সংহতি নষ্ট করিয়া পাকিস্তানের স্থায়িত্ব ও অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আহূত হইয়াছে।”
নবগঠিত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ, প্রাদেশিক মুসলিম লীগের মতো ‘প্রাদেশিক’ ছিল না; ছিল লাহোর প্রস্তাবে যে ধারণা ব্যক্ত হয়েছিল কল্পনার সেই স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের একটি সংগঠন। মওলানা ভাসানী অবশ্য সোহরাওয়ার্দীকে এর সঙ্গে যুক্ত করতে চেয়েছিলেন। সেটা এই লক্ষ্যে যে সারা পাকিস্তান জুড়ে সংগঠনের বিস্তার ঘটলে মুসলিম লীগের বিরোধী শক্তি হিসেবে এর শক্তি বৃদ্ধি পাবে। সোহরাওয়ার্দী তখন থাকতেন লাহোরে, ভাসানী শেখ মুজিবকে লাহোরে পাঠিয়েছিলেন সোহরাওয়ার্দী এবং সম্ভব হলে মিয়া ইফতেখারউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। সেটা ১৯৪৯-এরই ঘটনা।
এর পরে ১৯৫২-তে মুজিব আবার পশ্চিম পাকিস্তানে যান; একই উদ্দেশ্যে; সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে দেখা করতে। সোহরাওয়ার্দী তখন তাকে জানান যে, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের পক্ষে পশ্চিমে-গঠিত জিন্নাহ-আওয়ামী মুসলিম লীগের এফিলিয়েশন নেওয়া দরকার। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে শেখ মুজিব লিখেছেন, ‘তিনি বললেন, একটা কনফারেন্স ডাকব, তার আগে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের এফিলিয়েশন নেওয়া দরকার।’ জবাবে শেখ মুজিব তখন তাকে যা বলেছিলেন, ‘আপনি জিন্নাহ আওয়ামী লীগ করেছেন, আমরা নাম পরিবর্তন করতে পারব না। কোনো ব্যক্তির নাম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগ করতে চাই না। দ্বিতীয়ত আমাদের ম্যানিফেস্টো আছে, গঠনতন্ত্র আছে, তার পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। মওলানা সাহেব আমাকে ১৯৪৯ সালে আপনার কাছে পাঠিয়েছিলেন। তখনো তিনি নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ গঠনের জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তারও কোনো আপত্তি থাকবে না যদি আপনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের ম্যানিফেস্টো ও গঠনতন্ত্র মেনে নেন। অনেক আপত্তির পর তিনি মানতে রাজি হলেন এবং নিজ হাতে তার সম্মতির কথা লিখে দিলেন।’
মুজিব লিখেছেন, ‘আমি আর এটাও অনুরোধ করলাম তাকে লিখে দিতে যে, উর্দু ও বাংলা দু’টোকেই রাষ্ট্রভাষা হিসেবে তিনি সমর্থন করেন। কারণ অনেক ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গেছে। মুসলিম লীগ ও তথাকথিত প্রগতিশীলরা প্রপাগান্ডা করছে তার বিরুদ্ধে। [...]’
লাহোর প্রস্তাবের রাজনৈতিক মর্মবস্তুতে অবশ্য আরেকটি জিনিস ছিল, সেটি হলো দ্বিজাতি তত্ত্ব। ভারতবর্ষের মুসলমানরা একটি অভিন্ন ও স্বতন্ত্র জাতি, এই ধারণার ওপর দাঁড়িয়েই লাহোর প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছিল। ধরে নেওয়া হয়েছিল যে জাতীয় সত্তার প্রধান ভিত্তি হচ্ছে ধর্ম। সেটা যে সত্য নয়, প্রধান ভিত্তি যে ভাষা সেটা তো অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বের হয়ে এসেছিল বায়ান্নর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ভেতর দিয়েই। সোহরাওয়ার্দী কিন্তু লাহোর প্রস্তাবের ওই মর্মবস্তুটিকে কখনোই খারিজ করে দেননি; জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দ্বিজাতি তত্ত্বকে তিনি সত্য বলে জেনেছেন, যে জন্য পাকিস্তানকে ভাঙা নয়, তাকে রক্ষা করার কাজেই তিনি সচেষ্ট ছিলেন।
১৯৬২ সালে আইয়ুব খান যখন তাকে কারারুদ্ধ করে তখন তার বিরুদ্ধে প্রধান যে অভিযোগ আনা হয়েছিল সেটি হলো, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই, ‘বিশেষ করে গত তিন বছর ধরে, তিনি ভেতরের ও বাইরের পাকিস্তান-বিরোধীদের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছেন।’ অভিযোগনামার জবাবে জেলখানা থেকেই সোহরাওয়ার্দী যে জোরালো চিঠিটি লিখেছিলেন তাতে তিনি বলেছেন যে, এই অভিযোগ পড়ে তিনি যারপরনাই মর্মাহত হয়েছেন। কারণ তিনি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, ‘মুসলমানদের জন্য পাকিস্তান হচ্ছে এক ও অবিভাজ্য’; এবং এই বিশ্বাসের দ্বারা তাড়িত হয়েই তিনি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য নিজের জীবনকে বিপন্ন করেছেন এবং এখন বার্ধক্যে এসে পৌঁছেছেন। পূর্ব ও পশ্চিমকে এক সঙ্গে থাকতে হবে এই বিশ্বাসের দ্বারা পরিচালিত হয়েই তিনি কাজ করে গেছেন।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সম্প্রতি প্রযুক্তিবিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে, বিশেষ করে চ্যাটজিপিটি’র ব্যবহার শুরু হলে এ নিয়ে যেন আলোচনা থামছেই না। যদিও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ডিজিটাল ইকোসিস্টেমের অংশ বেশ কিছুদিন ধরেই। গুগল, অ্যাপেল, মাইক্রোসফট, অ্যামাজন, টেসলা ও আলিবাবা’র মতো বড় বড় কোম্পানিগুলো বেশ কিছুকাল ধরেই জোরেশোরেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করছে। চ্যাটজিপিটি যেমন একটি সার্চইঞ্জিন বট যে কিনা শুধু তথ্য খুঁজতেই দক্ষ না কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আলোকে তথ্যের প্যাটার্ন তৈরি করতেও পারে, এটাই এখন অসীম বিস্ময় সৃষ্টি করছে এবং সংবাদ মাধ্যমে একের পর এক খবরের জোগান দিচ্ছে। একইভাবে আমরা অন্য বট প্রোগ্রামের কথা জানি বিশেষ করে করোনার সময় বিভিন্ন সেবা গ্রহণে বট ব্যবস্থার সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই পরিচিত হই। আবার গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট যে কি না আমাদের সঙ্গে ভাষার মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারে এবং চাহিদার ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় তথ্য মুহূর্তের মধ্যে হাজির করে। আবার আমাদের মধ্যে কে কে গুগল অনুবাদের ব্যবহার করেছি, এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা কেমন?
কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই কাজ চালানো যায় কিন্তু একটু জটিল বাক্য অনুবাদ করতে গেলে অনেক সময় হাস্যরসের সৃষ্টি করে। তবে চ্যাটজিপিটিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নাকি অনেক বেশি গোছানো, গল্প-কবিতা লিখছে, পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে, বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নিবন্ধ রচনা করতে পারছে। তার মানে বোঝাই যায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ধীরে ধীরে কতটা উন্নতি করছে।
ভার্চুয়াল জগৎ এখন মানব সংস্কৃতির অংশ যদিও আমাদের ডিজিটাল সংস্কৃতিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের অভিজ্ঞতায় সাধারণভাবে সরকারি দু’একটা ফর্ম ডাউনলোড করা, অডিও ও ভিডিও কল করা, ফেসবুকের ব্যবহার, প্রকাশনা, ওয়েবসাইট তৈরি ইত্যাদি ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবসা ও বাণিজ্যের প্রচার ও প্রসারের জন্য ফেসবুক-সহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার ও ই-কমার্সের কিছুটা হলেও প্রচলন শুরু হয়েছে। এই সীমিত চর্চার মধ্যেও আবার নেতিবাচক চর্চার দৃষ্টান্ত যথেষ্ট। যার মধ্যে আছে অনলাইন গুজব ছড়ানো, ব্যক্তিগত তথ্য চুরি ও ছড়িয়ে দেওয়া, অন্যকে হেনস্তা করা ও ট্রল এবং পর্নগ্রাফি ইত্যাদি।
কিন্তু পৃথিবীর অর্থনৈতিক কাঠামো যেদিকে যাচ্ছে তাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তারই জয়জয়কার এবং চলছে বাজার ধরার প্রতিযোগিতা। পৃথিবীতে ডিজিটাল প্রযুক্তি অতিদ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে আর এই পরিবর্তন হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে। বলা হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংবলিত স্বচালিত গাড়ির বাজার হবে ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং স্বচালিত ড্রোনের বাজার হবে ৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যদিও আমাদের দেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে এক ধরনের চাপা আতঙ্ক আছে।
অনেকেই মনে করেছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মনে হয় মানুষের বিকল্প হতে যাচ্ছে কিন্তু আদতে মোটেও তা নয়। বরঞ্চ এটি মেশিন লার্নিং, তথ্য বিশ্লেষণ ও ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা এবং ভাষার ব্যবহারের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় এটি মানুষের আচরণ অনুকরণ করতে পারে এবং মানুষের জন্য কষ্টসাধ্য ও বারবার করতে হয় এমন কাজে সিদ্ধহস্ত হয়ে ওঠে। তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ধীরে ধীরে নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে পারে ও কোনো ধরনের তাৎক্ষণিক নির্দেশনা ছড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও সেবা দিয়ে থাকে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের চিন্তাভাবনার বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে মানুষের ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত ভাবনাকে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা বা যান্ত্রিক উপায়ে প্রকাশ করে থাকে এবং এভাবেই এটি নতুন সংস্কৃতির সৃষ্টি করছে।
আজ থেকে বিশ কিংবা ত্রিশ বছর আগে আমাদের সংস্কৃতির প্রায় পুরোটাই ছিল সামাজিক জগৎ সম্পর্কিত। কিন্তু গত ত্রিশ বছরে আমাদের সংস্কৃতির জগতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। মানুষের সংস্কৃতি এখন শুধু সামাজিক পরিমণ্ডলকেন্দ্রিক না, ধীরে ধীরে তা ভার্চুয়াল পরিমণ্ডলে ব্যাপকভাবে ঠাঁই করে নিয়েছে।
এই ভার্চুয়াল মাধ্যমকে কেন্দ্র করেই জীবনযাপন, যোগাযোগ, বাজার সদয়, লেনদেন, বিনোদন ইত্যাদি সবই চলছে। এই ভার্চুয়াল জগতেই আস্তে আস্তে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আনাগোনা গভীর হচ্ছে। প্রযুক্তি ব্যবহারের মানুষের অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ করছে, শুধু তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে না। মেশিন লার্নিং ও রোবটিক্স প্রযুক্তির সহযোগে মানুষের জীবনযাপনের অভিজ্ঞতাকে পাল্টে দিচ্ছে। আর এসবই মানব ইতিহাসে এক নতুন সংস্কৃতির জন্ম দিচ্ছে এবং মানুষে সেখানেই ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। সেখানে ভার্চুয়াল জগৎও মাঝে মাঝে অস্থির হয়ে ওঠে, ভার্চুয়াল অপরাধীদের দাপটে। না ভার্চুয়াল অপরাধের সঙ্গে শুধু মানুষই নয় এখানেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকেও ব্যবহার করা হয়।
কোনো কম্পিউটার ব্যবস্থার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে ফেলা, আড়িপাতা, ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেওয়া সবই হচ্ছে এই জগৎকে ঘিরে। ইতিমধ্যে আমরা সামাজিক মাধ্যমের অলগারিদম সম্পর্কে জানি কীভাবে ঝড়ের বেগে বিভিন্ন সংঘাত ও সহিংসতা সম্পর্কিত কনটেন্ট ছড়িয়ে পড়ে। আবার এদের প্রতিরোধ করার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত বিভিন্ন ফিল্টারও তৈরি করা হয় যা দ্রুতই সহিংসতামূলক বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট আটকে দিতে পারে। এখানেও চোর-পুলিশের খেলা, আমাদের দৃশ্যমান জগতের বাইরে এই অদৃশ্যমান জগতের বহর যে কত বড় তা অনেক সময় আমাদের চিন্তারও বাইরে।
ডিজিটাল সংস্কৃতি ও ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে মানুষের কর্মসংস্থানের ধরনের ক্ষেত্রে একটি বিরাট পরিবর্তন আসবে। বারেবারে করতে হয় এমন কাজগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়বে। ফলে প্রচলিত এমন অনেক পেশা অপ্রয়োজনীয় হয়ে উঠবে। ভার্চুয়াল মার্কেটে এখন আর কোনো সেলস পার্সন-এর কোনো প্রয়োজন নেই, বরং সেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংবলিত কোনো একটি বট কাজ করছে যে প্রতিনিয়ত ক্রেতার আলাদা আলাদা পছন্দ ও অপছন্দকে অনুসরণ করে এবং প্রত্যেককে কাস্টমাইজ সার্ভিস দিচ্ছে। একইভাবে দেখা যাচ্ছে কলকারখানায় অনেক শ্রমিকের কাজ করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংবলিত মাত্র একটি রোবট।
আমরা এখন বিশ্বায়নের যুগে বসবাস করছি, এই যুগে প্রযুক্তি যেভাবে সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করছে তা নিয়ে কোনো ভবিষ্যদ্বাণীই যেন কাজে লাগছে না। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েভ এখন শুধু তরঙ্গের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই এর সঙ্গে এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সমন্বয় ঘটেছে, আর ভবিষ্যতে আর কী কী অপেক্ষা করছে তা বলা দুরূহ। বিশ্বায়নের কালে বিশ্বে ক্ষমতার কেন্দ্রিকতা নির্ভর করে বিশ্বপ্রযুক্তির ওপর কার কতটুকু নিয়ন্ত্রণ আছে তার ওপর।
এই অবস্থায় বিশ্বে আমাদের অবস্থান তৈরি নির্ভর করে নতুন নতুন প্রযুক্তি এবং এ সম্পর্কিত ইকোসিস্টেমে আমরা কতটুকু অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারছি তার ওপর। অধিকন্তু শুধু অভ্যস্ত হলেই হবে না এর পাশাপাশি এই প্রযুক্তির ওপর কতটুকু নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও অন্যের নির্ভরশীলতা তৈরি করতে পেরেছি তার ওপর। ডিজিটাল বাংলাদেশের পর দেশকে এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে তৈরি করতে চাই, আর এই স্মার্ট দেশ তৈরিতে স্মার্ট সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
লেখক: উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
বাঙালি রাজনীতিক ও কবি সরোজিনী নাইডু ১৯৪৯ সালের ২ মার্চ ভারতের এলাহাবাদে মৃত্যুবরণ করেন। পৈতৃক নিবাস বিক্রমপুরের ব্রাহ্মণগাঁও। নাইডুর বাবা ড. অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন হায়দরাবাদের নিজামের শিক্ষা উপদেষ্টা। মা বরোদা সুন্দরী দেবী ছিলেন কবি। সরোজিনী ১৮৭৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ভারতের হায়দরাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। মাদ্রাজ থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে ১৮৯৫ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে যান সরোজিনী। ১৮৯৮ সালে হায়দরাবাদের ড. মতিয়ালা গোবিন্দরাজলু নাইডুর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ১৯১৫ সালে তিনি অল ইন্ডিয়া ন্যাশনাল কংগ্রেসে যোগ দেন। তিনি ১৯১৬ সালে বিহারে নীলচাষিদের অধিকারের দাবিতে প্রচারাভিযানে অংশ নেন। ১৯১৭ সালে নারীর ভোটাধিকারের দাবিতে অ্যানি বেসান্তকে সভাপতি করে উইমেন ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হলে নাইডু এই সংগঠনের সদস্য হন। ১৯২৬ সালে অল ইন্ডিয়া উইমেন কনফারেন্স গঠিত হলে সরোজিনী এর সভাপতি নির্বাচিত হন। সরোজিনী ১৯২৮ সালে গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের বার্তা নিয়ে আমেরিকা যান এবং আফ্রিকান, আমেরিকান ও ভারতীয় আমেরিকানদের প্রতি বৈষম্যের প্রতিবাদ জানান। ১৯৩০ সালে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়ে ১৯৩১ সালে মুক্তিলাভ করেন। ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের জন্য তাকে আবার গ্রেপ্তার করে ২১ মাস কারান্তরীণ রাখা হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর ভারতের উত্তরপ্রদেশের গভর্নর নিযুক্ত হন এবং আমৃত্যু এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। সরোজিনীর আজীবন কর্মসাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার সরোজিনী নাইডু স্বর্ণপদক প্রবর্তন করেছে।
‘রাজনীতি’ করা হয়, মানুষের কল্যাণে। একজন মানুষের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়, চলমান রাজনীতি। দূরদর্শী রাজনৈতিক নেতৃত্ব, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলে রাজনৈতিক সংগঠন। সেই সংগঠনই, সময়ের প্রয়োজনে কথা বলে- গণমানুষের। সেখানে আদর্শগত পার্থক্য থাকলেও- দেশের মানুষের অধিকার, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেই, গঠিত হয়- রাজনৈতিক দল। সেই দল যখন, জনকল্যাণ এবং দলীয় আদর্শের সঙ্গে দেশের মানুষকে সম্পৃক্ত করে নেয়- তখন নিবন্ধন শর্ত কঠিন হলেও তা পূরণ করা, দুরূহ হওয়ার কথা নয়। কোনো রাজনৈতিক দলে জনগণ সম্পৃক্ত থাকলে- নিবন্ধন শর্ত মেনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা, কঠিন কিছু না।
গতকাল দেশ রূপান্তরের ১ম পাতায় প্রকাশিত- ‘নিবন্ধন শর্ত আসলেই কঠিন!’ শিরোনামের সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়- নিবন্ধনের জন্য ৯৮টি দল নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করেছিল। সেগুলো থেকে দ্বিতীয় দফায় ৭৭টি দলকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়। এসব দলের কিছু নথির ঘাটতি ছিল। ঘাটতি পূরণের সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। ওই সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ায় ইসির সংশ্লিষ্ট দপ্তর দলগুলোর আবেদনের কাগজ যাচাই করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করছে। সূত্র জানিয়েছে, এক-তৃতীয়াংশ দলই নিবন্ধনের জন্য শর্ত ঠিকভাবে পূরণ করতে পারেনি। যেসব দল বৈঠকের পর্যালোচনায় উতরে যাবে তারা তৃতীয় দফায় মাঠপর্যায়ে জরিপের জন্য যোগ্য হবে। জরিপ সম্পন্ন হলে কমিশনের পরবর্তী বৈঠকে দলগুলোর চূড়ান্ত তালিকা করা হবে। ইসি সূত্র বলেছে, তৃতীয় দফায়ও কয়েকটি দল নিবন্ধনের অযোগ্য হবে। কারণ, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইনের ৪ নম্বর ধারায় নিবন্ধনের জন্য মাঠপর্যায়ে কার্যক্রমের শর্তের কথা বলা রয়েছে। অধিকাংশ দলেরই মাঠের কার্যক্রম থাকে না। তৃতীয় দফায় উত্তীর্ণ দলের চূড়ান্ত তালিকা জুনে প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে- রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইনের ৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, নিবন্ধন পেতে হলে দুটি শর্ত পূরণ করতে হবে। (ক) দফার (অ) উপধারায় বলা হয়েছে, আবেদন দাখিল করার তারিখের আগের দুটি সংসদ নির্বাচনে দলীয় নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে কমপক্ষে একটি আসন পেতে হবে; (আ) উপধারায় বলা হয়েছে, ওইসব সংসদ নির্বাচনের কোনো একটিতে আবেদনকারী দলের অংশগ্রহণ করা আসনে প্রদত্ত মোট ভোটের ৫ শতাংশ ভোট পেতে হবে; (ই) উপধারায় বলা হয়েছে, দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সক্রিয় কেন্দ্রীয় দপ্তর ও অন্যূন একশ উপজেলা বা মেট্রোপলিটান থানার প্রতিটিতে কার্যকর দপ্তরসহ কমপক্ষে দুইশ ভোটার সদস্য থাকতে হবে। (খ) দফার (অ) উপধারায় বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ের কমিটির সদস্য নির্বাচিত করা; (আ) উপধারায় বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য থাকতে হবে এবং কমিশনে দেওয়া বার্ষিক প্রতিবেদনে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিবরণী অন্তর্ভুক্ত করা।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বাছাইয়ে টিকে থাকা অধিকাংশ দলই তৃতীয় শর্ত পূরণ করতে পারে না। কারণ কাগজ-কলমে কার্যালয় থাকলেও বাস্তবে অনেক দলের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। কারও কার্যালয় থাকলেও উপজেলা পর্যায়ে ২০০ জনের স্বাক্ষরের যে বিধান রয়েছে, সংগৃহীত স্বাক্ষরে তার মিল থাকে না। সংবাদেই উল্লেখ রয়েছে- আজ বৃহস্পতিবারের বৈঠকে যে প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হবে তাতে টিকে থাকা দলগুলোর এক-তৃতীয়াংশই নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করতে পারেনি। ২০ থেকে ২৫টি দলের নিবন্ধনের বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে।
একটি বিষয় পরিষ্কার- যে সব দলের কাছে নিবন্ধন শর্ত পূরণ কঠিন মনে হচ্ছে, তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য নির্বাচন এবং তার মাধ্যমে ভিন্ন উপায়ে অর্থ উপার্জন। সেখানে জনকল্যাণ বা দেশপ্রেমের কোনো প্রেরণা নেই। ‘নাম কা ওয়াস্তে’ রাজনৈতিক দলের কাছে, নির্বাচনই মুখ্য হবে- এটাই বাস্তবতা। তবে এই বাস্তবতা, কতটুকু জনহিতকর- তা সবাই বোঝে। রাজনৈতিক আদর্শ বাদ দিয়ে, জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ব্যর্থ হয়ে- নির্বাচন এবং ক্ষমতা যখন মুখ্য হয়ে যায়, তখন সাধারণ বিষয়ও জটিল হতে বাধ্য।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হলের আসন দখল করে রাখার বিরুদ্ধে অনশনরত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।তারা বলেন, ওই স্থানে গত বুধবার রাত থেকে অনশনে ছিলেন প্রত্যয়। তাকে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলায় জড়িতরা। এ সময় প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়।
জানা গেছে, তিন দাবিতে গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলের আবাসিক ছাত্র। তার অন্য দুটি দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা ও হলের গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। ওই সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল। হঠাৎ করেই প্রত্যয়সহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হামলায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মনিকা, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৮তম ব্যাচের সুরসহ আরও কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, হামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের কয়েকজন হলেন ছাত্রলীগ নেতা ও রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গৌতম কুমার দাস, তুষার, ফেরদৌস, নোবেল, গোলাম রাব্বি, মুরসালিন, মুরাদ, সোহেল, তানভীর, রায়হান, রাহাত, সৌমিক, তারেক মীর, সজীব ও নাফিস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা যারা প্রত্যয়ের সঙ্গে ছিলাম তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যয়কে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করে সেটি ফিরিয়ে দেয়। প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আসেননি। একাধিক ছাত্রীর দিকেও চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ এমন একটি ফোনকল পেয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স পাঠায়। তবে কে কল দিয়েছিল সে সম্পর্কে চিকিৎসা কেন্দ্রের কেউ বলতে পারেননি।
তবে যে ফোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া হয়েছিল সেটিতে যোগাযোগ করে দেখা যায় নাম্বারটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে তারা এ রাত পৌনে ১টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
তবে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউলের ওপর হামলারে পেছনে ছাত্রলীগের কোনো হাত নেই বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, মীর মশাররফ হোসেন হলের অনশনরত ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। তবে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা করেছে। সেখানে ছাত্রলীগের একজনও জড়িত নয়।’
অসুস্হ সাবেক ফুটলার মোহাম্মদ মহসীনের পাশে দাড়িয়েছেন তার সাবেক সতীর্থরা। মোহামেডান ক্লাবের সাবেক ফুটবলার ও সোনালী অতীত ক্লাবের সদস্যরা বিকেলে বসে এই সিদ্ধান্ত নেন। পরে মহসীনের বাসায় যান তার সংগে দেখা করতে।সাবেক ফুটবলারদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল গাফফার, জোসী, বাবলু, জনি, সাব্বির, রিয়াজ।
এসময় গাফফার জানান, মহসীনের চিকিৎসার জন্য বিসিবি সভাপতির উদ্যোগে বুধবার সকালে অসুস্হ ফুটবলারকে হাসপাতালে ভর্তি করবে।
হাসপাতাল থেকে সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে ফেরার পর মহসীন কানাডায় ফিরে যেতে চাইলে সাবেক ফুটবলাররা সহায়তা করবে। মহসীন কানাডা থেকে দেশে ফিরেছেন মায়ের পাশে থাকতে। প্রায় নব্বই ছুই ছুই মহসিনের মায়ের পায়ে ব্যথা। মহসীনের পাশাপাশি তার মায়ের চিকিৎসার ব্যাপারেও সাবেক ফুটবলাররা পাশে থাকবেন বলে জানান আবদুল গাফফার।
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
প্রথম সেটে হেরে পিছিয়ে পড়েছিলেন। তবে পরের সেটেই ঘুরে দাঁড়ান। ৩ ঘণ্টা ৩৮ মিনিটের লড়াইয়ের পর কোয়ার্টার ফাইনালটা জিতে নিলেন নোভাক জকোভিচ। কারেন খাচানভকে ৪-৬, ৭-৬, ৬-২, ৬-৪ ব্যবধানে পরাজিত করে ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেমিফাইনালে উঠলেন এই সার্বিয়ান।
কোয়ার্টার ফাইনালের শুরুটা দেখে মনে হচ্ছিল, দিনটা বোধহয় জকোভিচের নয়। তবে মাথা ঠান্ডা রেখেছিলেন তিনি। খাচানভ প্রথম সেট জিতে নেওয়ার পর দ্বিতীয় সেটেও সমানে সমানে লড়াই করেন। যদিও টাইব্রেকারে জোকোর সামনে দাঁড়াতে পারেননি তিনি।
ম্যাচে সমতা ফেরানোর পর এক বার লকার রুমে ফিরে যান জোকোভিচ। তার পর শুধু কোর্টেই ফিরলেন না। নিজের চেনা ছন্দেও ফিরলেন। তৃতীয় এবং চতুর্থ সেটে আর শুরুর মতো লড়াই করতে পারলেন না প্রতিযোগিতার ১১ নম্বর বাছাই।
ফ্রেঞ্চ ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে মঙ্গলবার প্রতিযোগিতার প্রথম সেট হারলেন জোকোভিচ। হেরে যেতে পারেন এমন মনে না হলেও এ দিন ছন্দ পেতে কিছু সময় লেগেছে তার। ৩৬ বছরের জোকোভিচ কি সর্বোচ্চ পর্যায়ের টেনিসের ধকল আগের মতো সামলাতে পারছেন না আর?
এমন প্রশ্ন যখন উঁকি দিতে শুরু করছে, তখনই নিজের চেনা ছন্দে দেখা দিয়েছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে খাচানভের বিরুদ্ধে সময় পেয়েছেন। সুযোগ পেয়েছেন। সেমিফাইনাল বা ফাইনালের প্রতিপক্ষরা কি ছন্দে ফেরার সময় বা সুযোগ দেবেন তাঁকে?
টেনিসপ্রেমীদের মনে এই প্রশ্ন রেখেই ফ্রেঞ্চ ওপেনের শেষ চারে পৌঁছে গেলেন দু’বারের চ্যাম্পিয়ন। পাশাপাশি কিছুটা হয়তো উদ্বেগেও রাখলেন। সেমিফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করার পর জোকার স্বীকারও করে নিয়েছেন, কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথম দু’টি সেট তার থেকে ভাল খেলেছেন রুশ প্রতিপক্ষ।
এদিকে ওপর কোয়ার্টার ফাইনালে জয় পেয়েছেন কার্লোস আলকারাজ। সিৎসিপাসের বিপক্ষে তিনি ৩-০ (৬-২, ৬-১, ৭-৬) সেটে জিতে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছেন এই স্পেনিশ টেনিস তারকা।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।