
হাস্যকৌতুকের অসামান্য শিল্পী ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় খাঁটি বাঙাল এবং অনিবার্যরূপে আমাদেরই লোক। পূর্ববঙ্গের তো বটেই। খাস ঢাকারও। ঢাকার স্থানীয় ভাষাকে পশ্চিম বাংলাজুড়ে ছড়িয়ে ঢাকার ভানু খ্যাতিমান হয়েছিলেন। তার কৌতুকনক্শাসমূহে এবং স্বর্ণযুগের বাংলা চলচ্চিত্রে নিজের সংলাপগুলো পর্যন্ত নির্ভেজাল বাঙাল ভাষায় প্রয়োগ ও প্রচার করে নিজেকে ঢাকার ভানু রূপে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। এমনিতে পূর্ববঙ্গীয় বাংলা ভাষা নিয়ে পশ্চিম বাংলার বাঙালিদের নাক সিটকানো, ব্যঙ্গোক্তি, বিদ্রƒপ, হাসি-তামাশার খামতি ছিল না। পূর্ব বাংলার প্রচলিত বাংলা ভাষাকে তারা রীতিমতো তাচ্ছিল্য, উপহাস করতেন। এর ওপর ঢাকার স্থানীয় ভাষা তাদের পক্ষে হজম করা কঠিন থেকে কঠিনতর ছিল। ভানুর ঢাকার বাঙাল ভাষা নিশ্চিত তাদের কান গরম করে দিত। তাচ্ছিল্যের পূর্ব বাংলার ভাষাকে পশ্চিম বাংলার বাঙালিদের ওপর চাপিয়ে উল্টো তাদেরই নাজেহাল করে ছেড়েছেন তিনি। ভানুর অসাধারণ কৌতুকপূর্ণ ঢাকার ভাষা তারা নিরুপায়ে হজম করতে বাধ্য হয়েছিলেন। ভানুর কৌতুকে মানুষ হেসেছে, নির্মল আনন্দ উপভোগ করেছে, পাশাপাশি সচেতনতায় ঋদ্ধ হয়েছে। ভানুর কৌতুক কেবল হাসিসর্বস্ব ছিল না। তির্যক ছিল বহুলাংশে। অসংগতি-অনাচারের শৈল্পিক উপহাস করেছেন কৌতুকের মাধ্যমে। সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি সকল ক্ষেত্রের অসংগতি নিয়ে কৌতুকে তির্যক করেছেন, খোঁচা দিয়েছেন। ভানুর কৌতুকের উল্লেখযোগ্য দিকটি অসংগতিকে উপহাস করা। সেটা সার্থকভাবে তিনি করেছেন। দম ফাটানো হাসিতে লুটোপুটি খেলেও ভানুর তির্যকপূর্ণ কৌতুক শ্রোতাদের বুঝতে বেগ পেতে হতো না। সহজ-সাবলীল এবং সর্বজন বোধগম্যে ভানুর কৌতুকের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী।
ঢাকার ভানু কেবল পশ্চিম বাংলায় সীমাবদ্ধ ছিলেন না। মাতৃভূমি পূর্ববঙ্গেও জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। সাতচল্লিশের দেশভাগের পরও ভারতীয় চলচ্চিত্র পূর্বপাকিস্তানে প্রদর্শনে বিধিনিষেধ ছিল না। ভারতীয় হিন্দি-বাংলা ছবির বিশাল বাজার ছিল পূর্ব বাংলায়। ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় জেনারেল আইয়ুব খান তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী এবং সংবাদপত্রসহ সকল প্রকাশনার আগমন নিষিদ্ধ করে দেন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের পূর্ববর্তী বছরগুলোতে পূর্ব বাংলায় কলকাতায় নির্মিত বাংলা এবং মুম্বাইর হিন্দি ছবি অবাধে প্রদর্শিত হতো। সে কারণে পূর্ববঙ্গের দর্শকদের কাছে ভানু অপরিচিত-অজ্ঞাত কেউ ছিলেন না। বরযাত্রী (১৯৫১), পাশের বাড়ি (১৯৫২), সাড়ে চুয়াত্তর (১৯৫৩), ওরা থাকে ওধারে (১৯৫৪), ভানু পেল লটারী (১৯৫৮), যমালয়ে জীবন্ত মানুষ (১৯৫৮), পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট (১৯৫৯)সহ ভানু অভিনীত অনেক ছবি এখানে নিয়মিত প্রদর্শিত হওয়ার কারণে ভানু দুই বাংলায়ই সমান জনপ্রিয় ছিলেন। আমার বাবা-মায়ের কাছে নির্মল হাসি-আনন্দের উপভোগ্য সে সমস্ত ছবির ঘটনা শুনে শুনে বড় হয়েছি। সে কারণে সেসব ছবির প্রতি স্বাভাবিক আকর্ষণ কিশোর বয়স থেকেই অনুভব করতাম। নিষিদ্ধের কারণে ভানুর কৌতুক শোনা এবং তার চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ তখন ছিল না। স্বাধীনতার পরই অডিও ক্যাসেটে ভানুর কৌতুকনক্শা শোনার সুযোগ পেয়েছিলাম। এর-ওর থেকে ক্যাসেট সংগ্রহ করে হরহামেশা শুনতাম অসাধারণ সব কৌতুকনক্শা। ভানুর ন্যায় বাংলা ভাষায় অন্য কেউ তার স্থানে আজ অবধি দাঁড়াতে পারেনি এবং তাকে অতিক্রমও করতে পারেনি। ভানু তাই আজও একমাত্র এবং অদ্বিতীয়। চলচ্চিত্র সংসদ কর্তৃক আয়োজিত ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসের অডিটরিয়ামে ভানুর অভিনীত ছবি দেখার সুযোগ হয়। এর বহু পরে ভিসিআরের আগমনে ভিডিও ক্যাসেটে ভানুর অভিনীত ছবি দেখেছি। ইন্টারনেট এবং স্যাটেলাইট টিভির বদৌলতে এখন তো আমাদের জন্য কিছুই নিষিদ্ধ-আরাধ্য নেই। কলকাতার বাংলা চ্যানেলে কলকাতার স্বর্ণযুগের বাংলা ছবিও মাঝেমধ্যে সম্প্রচারিত হয়। এ ছাড়া ভিডিও সিডি এখন বেশ সহজলভ্য। ভানুর অভিনীত প্রচুর ছবি এখন সিডিতে পাওয়া যায়।
অভিনয় শৈলী, অভিব্যক্তি, বাচনভঙ্গি, কণ্ঠস্বর সমস্ত মিলিয়েই হাস্যকৌতুকের দিকপাল ভানু। দর্শক-শ্রোতাদের কখনো সুড়সুড়ি দিয়ে হাসানোর বৃথা চেষ্টা করেননি। শ্রোতা-দর্শকদের হাসানোর অসাধারণ ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। সচরাচর কৌতুকশিল্পীদের মাঝে কেবল অসামান্য নন, বিরলও। এই অসামান্য প্রতিভার মানুষটিকে যোগ্য সম্মান আমরা দিতে পারিনি। আমাদের একজন চলচ্চিত্রকার কিংবা সাংস্কৃতিক আয়োজনে তাকে এখানে কেউ ডাকেনি। এই লজ্জা আমাদের বহন করতেই হবে। ক্ষণজন্মা ভানু মাত্র ৬২ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন। একাত্তরের বিজয়ের পর স্বাধীন বাংলাদেশে পশ্চিম বাংলার অনেক গুণী-শিল্পীর আগমন ঘটেছিল। সরকারি ও বেসরকারি নানা উদ্যোগে তারা ঢাকায় এসেছিলেন। কিন্তু ভানুকে সরকারি-বেসরকারি একটি উদ্যোগেও ঢাকায় কেউ আনেনি। অগত্যা ব্যক্তিগত উদ্যোগে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন। বিটিভি তাকে নিয়ে অনুষ্ঠানও সম্প্রচার করেছিল। সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন, কৌতুক পরিবেশন করেছিলেন ওই অনুষ্ঠানে। জানি না বিটিভির আর্কাইভে সেই অনুষ্ঠান সংরক্ষিত আছে কিনা? বিটিভির সাক্ষাৎকারে ভানু আক্ষেপে-শ্লেষে বলেছিলেন, ‘আমাকে আপনারা কেউ ডাকলেন না। আপনাদের ডাকের অপেক্ষায় বহুদিন ছিলাম। কিন্তু আপনারা কেউ আমাকে ডাকেননি।’ আমরা নিশ্চয় ভানুর প্রতি সুবিচার করিনি। ঢাকার ভানুকে ঢাকা যোগ্য সম্মান দিতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এই লজ্জা আর মোচন হওয়ার নয়। নিজেকে কেবল পূর্ববঙ্গীয় নয়, খাস ঢাকার বলেই গর্ব করে বলতেন, আমি ঢাকার ভানু। এতে তার হীনম্মন্যতা ছিল না। ছিল প্রচ- অহংকার বোধ। ক’বছর পূর্বে কলকাতা ভ্রমণে নন্দনে ছবি দেখতে গিয়েছিলাম। ছবি দেখে বের হচ্ছি, হঠাৎ কলকাতার স্থানীয় আমার সঙ্গীটি ইশারায় এক ভদ্রমহিলাকে দেখিয়ে নিচুস্বরে বলেন, ওই মহিলা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বড় মেয়ে। শুনেই আমি ছুটে যাই ভদ্রমহিলার নিকট। দ্বিধা-সংকোচের পরোয়া না করে জিজ্ঞেস করি তিনি ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেয়ে কিনা? অপরিচিত আমার প্রশ্নে তিনি কিছুটা ইতস্তত। তার মুখে হ্যাঁ শোনার পর বলি, আমি ঢাকা থেকে এসেছি। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ব্যক্তিগত পরিচয় আমার ছিল না। কিন্তু তার সৃজনশীলতার সঙ্গে আমার পরিচয় বহু পূর্বের। আমার কথায় তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। তার পিতার প্রসঙ্গে অনেক প্রশ্ন করি এবং তিনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন নির্মল আন্তরিকতায়, সামান্যতম বিরক্ত না হয়ে।
ভানুর সদৃশ তার মেয়ে বাসবী, একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। ভানু পারিবারিক পরিম-লে আজীবন খাস ঢাকার ভাষায় কথা বলতেন। কলকাতার স্থানীয় বাঙালিদের ঘটি বলতে ছাড়তেন না। ১৯৪৬ সালে চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হন এবং ওই বছরই বিয়ে করেন। ১৯৪৭-এর রক্তাক্ত দেশভাগে মাতৃভূমিতে ফিরে আসার আশা ত্যাগ করে কলকাতায় স্থায়ী হয়ে যান। সাম্প্রদায়িকতার রক্তাক্ত দেশভাগে বাঙালি আর বাঙালি থাকেনি। হিন্দু-মুসলমানে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। ইচ্ছে থাকলেও মাতৃভূমিতে ফিরে আসা সম্ভব ছিল না। জয় বাংলার আমন্ত্রণের প্রতীক্ষায় থাকলেও, জীবদ্দশায় তাকে কেউ ঢাকায় আমন্ত্রণ জানায়নি। এই নিয়ে আক্ষেপ করতেন। শেষে নিজ উদ্যোগে ঢাকায় গিয়েছিলেন। বাসবীর কাছে জেনেছিলাম ভিন্ন এক ভানুর কথাও। বাসবী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন আমাকে সেই না-জানা কথা, তার বাবা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় সশস্ত্র স্বদেশি আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। সক্রিয় সদস্য ছিলেন সশস্ত্র স্বদেশি সংগঠন অনুশীলন দলে। কলকাতার রাইটার্স অপারেশনে অংশ নিয়েছিলেন তিন দেশপ্রেমিক স্বদেশি বীর বিনয়, বাদল এবং দীনেশদের সঙ্গে। অপারেশনে তিনজন পৃথকভাবে রাইটার্সে ঢুকেছিলেন সেদিন। দীনেশকে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে অপারেশন সংঘটনে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পড়েছিল ভানুর ওপর। সাইকেলের সামনে বসিয়ে দীনেশকে রাইটার্সের গেইটে পৌঁছে দিয়েছিলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে দীনেশকে নামিয়ে গেইটের বাইরে সাইকেল নিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর ভানু রাইটার্স এলাকা ত্যাগ করেছিলেন। রাইটার্স অপারেশনের পরিণতি আমরা জানি। ইউরোপীয় পোশাকে সজ্জিত তিন বিপ্লবী রাইটার্সে আচমকা আক্রমণ করে হত্যা করেন কুখ্যাত কর্নেল সিম্পসনকে। নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষে তিন ইংরেজ পুলিশ কর্মকর্তা টোয়াইনাম, প্রেন্টিস এবং নেলসন গুরুতর আহত হয়। ধরা পড়ে যাওয়ার মুহূর্তে বাদল বসু পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে ঘটনাস্থলে আত্মহত্যা করেন। বিনয় বসু ও দীনেশ গুপ্ত নিজেদের পিস্তলের গুলিতে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেডিকেল ছাত্র বিনয় বসু সকলের অলক্ষ্যে বুলেটের ক্ষতস্থানে নিজের আঙুল ঢুকিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। গুলিবিদ্ধ দীনেশ সুস্থ হলে বিচারে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে ঔপনিবেশিক ইংরেজ শাসক। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনের রাজনৈতিক-দেশপ্রেমের এই অধ্যায় জানা সম্ভব হতো না, যদি সেদিন আগ-বাড়িয়ে বাসবী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপ না করতাম। ভানুর টানেই সেদিন তার মেয়েকে পেয়ে ছুটে গিয়ে আলাপ করে ভানু সম্পর্কে জেনেছিলাম অনেক অজানা কথা।
ভানুর প্রকৃত নাম সাম্যময় বন্দ্যোপাধ্যায়। জন্ম ২৭ আগস্ট ১৯২০ ঢাকার বিক্রমপুরে। পিতা জিতেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। মা সুনীতি বন্দ্যোপাধ্যায়। শৈশব, কৈশোর এবং যৌবনের শুরুটা কেটেছে ঢাকায়। সদরঘাটের সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ভর্তি হন জগন্নাথ কলেজে। জগন্নাথ কলেজের শিক্ষা শেষে ১৯৪১ সালে জীবিকার জন্য চলে যান কলকাতায়। শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা, সাধারণ পেশা, সম্মানজনক জীবিকার জন্য কলকাতার বিকল্প তখন ছিল না। পূর্ব বাংলার প্রচুর মানুষ শিক্ষা, পেশার কারণে কলকাতায় দ্বিতীয় আবাস গড়ে তুলেছিলেন। কলকাতার বালীগঞ্জের অশ্বিনী দত্ত রোডে বোনের আশ্রয়ে থেকে চাকরিতে যোগ দেন আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি নামক সরকারি দপ্তরে। দুই বছর বোনের কাছে থাকার পর টালিগঞ্জের চারু এভিনিউতে নিজের পৃথক আবাসে ওঠেন। ১৯৪৬ সালে নীলিমা মুখোপাধ্যায়কে বিয়ে করেন। তাদের তিন সন্তান। গৌতম, বাসবী ও পিনাকী। চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন ‘জাগরণ’ ছবিতে। সেটি মুক্তি পায় ১৯৪৭ সালে। একই বছরে দ্বিতীয় ছবি ‘অভিযোগ’ মুক্তি পাওয়ার পর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ক্রমেই হয়ে পড়েন চলচ্চিত্রের ব্যস্ত শিল্পী। তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র মনমুগ্ধ (১৯৪৯), বরযাত্রী (১৯৫১), পাশের বাড়ি (১৯৫২), বসু পরিবার (১৯৫২), সাড়ে চুয়াত্তর (১৯৫৩), [সাড়ে চুয়াত্তর সুচিত্রা সেন অভিনীত প্রথম ছবি। নির্মল হাস্যরসের অসামান্য ছবি সাড়ে চুয়াত্তরের কাহিনীকার বিজন ভট্টাচার্য, পরিচালক তপন সিংহ।] ওরা থাকে ওধারে (১৯৫৪), ভানু পেল লটারী (১৯৫৮), যমালয়ে জীবন্ত মানুষ (১৯৫৮), পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট (১৯৫৯), গল্প হলেও সত্যি (১৯৬৬), ৮০তে আসিও না (১৯৬৭), মিস প্রিয়ংবদা (১৯৬৭), ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্ট্যান্ট (১৯৭১), সর্বশেষ ছবি শোরগোল তার মৃত্যুর পর ১৯৮৪ সালে মুক্তি পেয়েছিল। বান্দিশ (১৯৫৫) এবং এক গাঁও কি কাহানী (১৯৫৫) এই দুটি হিন্দি ছবিসহ ভানু অভিনীত সর্বমোট চলচ্চিত্রের সংখ্যা ২৩১টি। ২২৯টি বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছেন অসামান্য প্রতিভাধর সপ্রতিভ অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়।
তার উল্লেখযোগ্য কৌতুকনক্শাসমূহ ভানু এল কলকাতায়, লর্ড ভানু, টেলিফোন বিভ্রাট, ভানু সদানন্দ, নব রামায়ণ, ঘাতক সংবাদ, কর্তা বনাম গিন্নি, কর্তা বাবুর দেশ ভ্রমণ, হনুমানের নগর দর্শন, কলকাতা ও ভদ্রতা, চাটুজ্যে-বাড়–জ্যে ইত্যাদি।
৪ মার্চ ১৯৮৩ সালে মাত্র ৬২ বছর বয়সে মানুষ হাসানোর অসামান্য এই মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করেন।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত
ত্রিশ শতকের মহামন্দার মহাচিকিৎসক অর্থনীতিবিদ জন এম কেইনস বলতেন, ‘আমি অচল ঘড়ির কাঁটা নই যে, একই জায়গায় থেমে থাকব; আমি সচল ঘড়ি, অবস্থা যখন পাল্টায়, আমি আমার মত পরিবর্তন করি। আপনি কী করেন জনাব?’
আজ যদি কেউ জিজ্ঞেস করেন, পৃথিবীতে তথা বাংলাদেশে সমাজতন্ত্র কি সম্ভব এ প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই হয়তো জন মেইনারড কেইনসের মন্তব্যের দ্বারস্থ হবেন।
এক
‘সমাজতন্ত্র’ নামক শব্দটি কিংবা সমাজতান্ত্রিক আদর্শের ধারণা, এক কালে আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় এবং স্বাধীনতা-উত্তর ক’টা বছর গ্রাম-শহর, ধনী-গরিব, ডান ও বামসবখানে, সব জায়গায়, সবার করোটিতে সমাজতন্ত্র জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়। তবে কেউ হুজুগে, কেউ সুযোগে এবং কেউ অন্তরের অন্তস্তল থেকে বিশ্বাসে ভর করে। তৎকালীন সিনেমা, নাটক, উপন্যাস কিংবা গানে সমাজতন্ত্রের মূল চেতনার সন্ধান পাওয়া যেত; যা ছিল ‘কেউ খাবে তো কেউ খাবে না, তা হবে না তা হবে না।’
সত্তরের নির্বাচনী প্রচারণায় এবং পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমাজতন্ত্রের কথা গণবিবৃতির মাধ্যমে বিধৃত করেছেন। প্রফেসর রেহমান সোবহানের আত্মজীবনীমূলক বই থেকে অনুবাদ করা অনুসন্ধান এই যে, বঙ্গবন্ধু নিয়মিত সমাজতন্ত্রের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি পুনরায় ব্যক্ত করেছেন। যেখানে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, একটা শোষণমুক্ত সমাজ গঠন। ‘আমি আমাদের শ্রমিক শ্রেণিকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠায় আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তার একটা মৌলিক উদ্দেশ্য হচ্ছে শ্রমিক সমাজের ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করা। জাতীয়করণের জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যেখানে শিল্পে শ্রমিকদের ভূমিকা রাখার ব্যবস্থা থাকবে। বস্তুত বর্ধিত উৎপাদনের ভাগ তারাও পাবে।’
অতীত স্মরণ করে পাই, সত্তরের দশক বিশেষত স্বাধীনতা-উত্তর থেকে পঁচাত্তর-পূর্ব বাংলাদেশে বামধারার রাজনীতির প্রাধান্য আর ডানধারা ডানাকাটা পাখির মতো মুখ থুবড়ে মাটিতে পতিত। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, পঁচাত্তরের দুর্ভাগ্যজনক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষিতে পেন্ডুলাম ঠিক উল্টো ঘুরে যায়। ‘সমাজতন্ত্র’ শব্দটি শাসনতন্ত্র থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হয়, বাজার অর্থনীতির ধারণা প্রাধান্য পায় এবং সমাজ থেকে সমাজতান্ত্রিক চিন্তাচেতনা বিলুপ্তির পথে পা বাড়ায়। খাঁটি কতক বামপন্থি ছাড়া মেকি সব, সমাজতন্ত্র ফেলে ভোঁ-দৌড় দিল। খুশিতে টগবগ ডুগডুগি বাজাল, ডান।
বিগত দিনে বাংলাদেশের চিত্তাকর্ষক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির (এবং উন্নয়নের) পাশাপাশি নেতিবাচক প্রভাবগুলো নিয়ে আমরা সবাই উদ্বিগ্নঊর্ধ্বমুখী অর্থনৈতিক বৈষম্য, ভারসাম্যহীন এক সমাজব্যবস্থা, স্বজনতোষণ পুঁজিবাদ, লুটেরা ধনিক শ্রেণি, ব্যাপক এবং বিস্তৃত দুর্নীতি, পরিবেশ ক্ষয় ইত্যাদি। বাজার অর্থনীতির ব্যর্থতা এবং একই সঙ্গে সরকারি নিয়ন্ত্রণ এবং তদারকির অদক্ষতা কিছুটা হলেও বিকল্প উন্নয়ন মডেলের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করছে। এর একটি তো অবশ্যই সমাজতন্ত্র যে শব্দটি তিরোহিত পঁচাত্তর-পরবর্তী সময় থেকে।
সেই বিলুপ্ত সমাজতন্ত্র শব্দটি মাটি খুঁড়ে যেন তুলে আনলেন প্রখ্যাত অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ তার সদ্য প্রকাশিত ‘উন্নয়নশীল দেশের গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র : একটি রূপরেখা’ বইতে। ‘সমসাময়িক উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও বাজার অর্থনীতির সমন্বয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি রূপরেখা তৈরি করা যায় কি না, তা নিয়ে কিছু প্রাথমিক চিন্তাভাবনাই এ বইয়ের উদ্দেশ্য।’ কিন্তু এই ‘উদ্দেশ্য’ যে তাকে কট্টর মার্কসবাদীদের সমালোচনার জ্বলন্ত উনুনে নিক্ষেপ করতে পারে এবং স্বজনতোষণ পুঁজিবাদের সমর্থকরা বিস্ফারিত নেত্রে তার দিকে তেড়েফুঁড়ে আসতে পারে, আশা করি সেটা মাথায় রেখেই তিনি হাতে কলম নিয়েছেন।
দুই
গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র? এ আবার হয় নাকি? ভ্রু কুঁচকে সাচ্চা বামপন্থি এই প্রশ্ন করতেই পারেন, যখন তাদের ধারণা ‘গণতন্ত্র’ হচ্ছে বুর্জুয়াদের বিলাস। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন এক সাক্ষাৎকারে তার রাজনৈতিক পছন্দ সম্পর্কে যা বলছেন, তা অনুবাদ করলে দাঁড়ায় এরকম ‘অবশ্যই বাম কিন্তু স্বাধীনতা এবং সমগ্র সাপেক্ষে। যেটা আমি পছন্দ করি না তা হচ্ছে বামেরা, হোক কলকাতা কিংবা ক্যামব্রিজে, জনগণকে স্বাধীনতা এবং পছন্দ করার অধিকার প্রদানকে একধরনের বুর্জুয়া বিলাসিতা বলে গণ্য করে। সুতরাং আমি বামধারায় ঝুঁকে গেলাম কিন্তু স্বাধীনতা ও মুক্তির আগ্রহ সহকারে।’
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র বিনির্মাণের এক চিত্তাকর্ষক বর্ণনা এবং সমাজতন্ত্রের বিভিন্ন ধরন নিয়ে আমাদের কিঞ্চিৎ ধারণা আছে এবং বইটি থেকে লব্ধ জ্ঞান তা শানিত করে বৈকি। আগেও বলা হয়েছে যে, একসময় এতদাঞ্চলে সমাজতন্ত্র শব্দটি বহুল আলোচিত ছিল : “বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই শাসনতন্ত্রে রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি হিসেবে ‘সমাজতন্ত্র’কে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে ১৯৭১ সালে, শ্রীলঙ্কায় ১৯৭৮ সালে এবং নেপালে ২০১৫ সালে শাসনতন্ত্রে সমাজতন্ত্রের কথাটি যোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বেশকিছু দেশ, যেখানে বহুদলীয় গণতন্ত্র বিদ্যমান, সেসব দেশের শাসনতন্ত্র বা রাষ্ট্রের মূলনীতিতে সমাজতন্ত্রের উল্লেখ আছে।” স্মর্তব্য যে, নানান ব্যাখ্যায় এবং অস্পষ্ট সংজ্ঞায় ব্যবহৃত সেই সমাজতন্ত্র। আবার, তথাকথিত ‘গোলাপি জোয়ার’ বা ‘পিংক টাইড’-এর প্রেক্ষাপটে বামপন্থি অর্থনীতির দিকে ঝুঁকে পড়ে ব্রাজিলসহ লাতিন আমেরিকার কিছু দেশ। ‘লাতিন আমেরিকার এই বামপন্থি ধারার রাজনীতি প্রধানত ইতিপূর্বের আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক সমর্থিত কট্টর বাজার অর্থনীতির প্রতিক্রিয়া হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছে।’
তিন
গণতান্ত্রিক সমাজের বিবর্তনশীল ধারণা থেকে আমরা লক্ষ করি, কীভাবে ‘অ-সমাজতান্ত্রিক’ জওহরলাল নেহরু সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনৈতিক সাফল্যে আকৃষ্ট হয়ে এবং কেমব্র্রিজ সতীর্থ প্রশান্তচন্দ্র মহালনবিশের অনুপ্রেরণায়, বেসরকারি বিনিয়োগ ও বৈদেশিক বাণিজ্যের ওপর সরকারের ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ, দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণে ভারী যন্ত্রশিল্প গড়ে তুলতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন। ‘সে তুলনায় বাংলাদেশে স্বাধীনতার পরপর সমাজতন্ত্রকে আদর্শগতভাবে বাহ্যত অনেকটা শক্তভাবে গ্রহণ করা হয়েছিল; বিশেষত প্রস্তাবিত ভূমি সংস্কার ও শিল্পের সরকারি মালিকানার বিষয়ে।’ তা ছাড়া, আশির দশকের শেষার্ধ থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন দর্শনে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক পরিবর্তনের ইতিবৃত্তান্ত‘নব্য-উদারীকরণ পরবর্তী সমাজতন্ত্র’, অমর্ত্য সেন এবং বার্ট্রান্ড রাসেলের সমাজতান্ত্রিক কাঠামোতে ব্যক্তি স্বাধীনতার সুযোগ, জন রলসের ন্যায়পরায়ণতা, ‘বাজার সমাজতন্ত্র’ ইত্যাদি সমেত উপসংহার আমাদের অজানা নয়। মোট কথা, ‘এযাবৎকালের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষণীয় হলো যে, বাজার অর্থনীতি ও ব্যক্তি উদ্যোগের অন্তর্নিহিত শক্তিকে অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু সে সঙ্গে কিছু মানুষের হাতে এত সম্পদ হতে দেওয়া যাবে না, যাতে সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোর ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং জনকল্যাণমূলক নীতি প্রবর্তনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়।’
যে দেশে বাজার বৈষম্যের বাহক আবার বিপ্লবের মাধ্যমে সর্বহারার ক্ষমতা দখল সম্ভব নয়, সেসব দেশে গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র একটা সমাধান হিসেবে কাজ করতে পারে; তবে তার জন্য প্রয়োজন খুব দক্ষ আমলাতন্ত্র এবং প্রতিশ্রুত রাজনীতিবিদ (দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে যার বিশাল ঘাটতি রয়েছে)। যেসব দেশে, যেমন দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া রাষ্ট্রীয় খাত প্রতিযোগিতামূলক মুনাফা অর্জন করতে পেরেছে; সেসব দেশে দক্ষ আমলা আর আইনের শাসনের বলেই সম্ভব হয়েছে।
আর কিছু না হোক, ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের পর্যালোচনা সমাজতান্ত্রিক চিন্তার খোরাক জোগাবে তাদের জন্য যারা মনে করেন, সমসাময়িক কালে ‘বাজার সমাজতন্ত্র’ একটা বিকল্প ভাবনা হতে পারে। রাজনীতিবিদ, নীতিনির্ধারক এবং অধ্যাপনায় রত সবার জন্য এটি পুনরায় বিবেচনার দাবি রাখে। যদিও এ ধরনের বক্তব্য বিতর্কের বাইরে নয়। প্রসঙ্গত বলে নেওয়া ভালো যে, ‘নব্য-উদারীকরণপরবর্তী সমাজতন্ত্র’ নিয়ে নতুন চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে লাতিন আমেরিকায় এমনকি খোদ যুক্তরাষ্ট্রে, তার ঢেউ বাংলাদেশে আসতে পারে একদিন এবং তখন বাংলাদেশের এই প্রফেসরের গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র সম্পর্কিত ধারণাগুলো খুব কাজে লাগবে বলে বিশ্বাস।
অনেকটা সমাধিস্থ সমাজতন্ত্রকে লোকালয়ে নিয়ে আসার সাহস দেখানোর জন্য প্রফেসর মাহমুদকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আশা করি, একদিন আরও বিস্তারিত লেন্সে তিনি বিষয়টি নিয়ে পাঠকের সামনে হাজির হবেনবিশেষত বাংলাদেশের প্রেক্ষিত বিবেচনায় রেখে। যেখানে ‘অন্যায় সুবিধা ও সর্বব্যাপী দুর্নীতিই বড় সমস্যা’ এবং ব্যাংকব্যবস্থা হরিলুটের কারখানা।
লেখক: অর্থনীতিবিদ, কলাম লেখক সাবেক উপাচার্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
মানবসমাজে সভ্যতার গতি যত বেগবান হচ্ছেতত কমে যাচ্ছে আবেগ, আন্তরিকতা, ভালোবাসা, মানবিকতা, কৃতজ্ঞতার মতো মানবহৃদয়ের কোমল সত্তাগুলো। ফলস্বরূপ ক্রমান্বয়ে আমরা হৃদয়হীন পশুতে পরিণত হচ্ছি। সৃষ্টিকর্তার এই সৃষ্টিশালায় বুদ্ধি-বৃত্তিসম্পন্ন একমাত্র জীব হচ্ছে মানুষ। তারাই সৃষ্টির সেরা সম্পদ বলে গর্ব এবং অহংকার করে থাকেন। সংবেদনশীল ও হৃদয়সম্পদে ধনী বলে দাবি করা মানুষগুলো কি আসলেই তাই? আমার কাছে এই বিষয়টা সবচেয়ে বড় অদ্ভুত লাগে। হৃদয়সম্পদে ধনী মানুষগুলোই আজ হৃদয়হীন, অমানবিক হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে।
একটি শিশুর জীবনের প্রথম প্রভাতে যার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়, তিনি হচ্ছেন মা। জীবনের পরম আদরগুলো মায়ের কাছ থেকেই সবাই পেয়ে থাকেন। সেইসঙ্গে বাবার খাটুনি করা শেষে ঘামে ভেজা শরীরে জড়িয়ে ধরা, চুমু দেওয়ার মতো ঐশ্বরিক সুখ পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যাবে না। পিতা-মাতার মমতা স্নেহ-ভালোবাসায় ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠে প্রতিটি শিশু। সন্তানের প্রতি তাদের স্নেহ অকৃত্রিম এবং অতুলনীয়। পিতা-মাতার মিলিত আত্মত্যাগ, পরিশ্রম ও স্নেহে লালিতপালিত শিশু ক্রমে পা বাড়ায় আত্মপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এবং একদিন এই পিতা-মাতার কাঁধে ভর করে সেই কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছেও যায়।
বড় দুঃখের বিষয়, পরিতাপের বিষয় এই শিশু যখন বড় হয়ে নিজ পায়ে দাঁড়ায় এবং নিজের লক্ষ্যে পৌঁছে যায়, তখন সে ভুলে যায় তার বৃদ্ধ পিতা-মাতার সেই আত্মত্যাগ, কষ্ট, পরিশ্রমের লড়াইকে। এই সন্তানের কাছেই তখন তার বৃদ্ধ পিতা-মাতা বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। আর এভাবেই সৃষ্টি হয় নতুন একটি দরজা। যেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে হয় বৃদ্ধাশ্রমে। মাসে মাসে, সেই বৃদ্ধাশ্রমে কিছু টাকা পাঠিয়ে কৃতজ্ঞতার পবিত্র দায় পালন করে এই হৃদয়হীন আধুনিক প্রজন্ম। কখনো কখনো খোঁজও নেন না, বাবা-মা কেমন আছেন! স্নেহ, ভালোবাসা, মায়া, মমতা এসব কিছুর বিনিময় তখন শুধু অবহেলা। এই কৃতজ্ঞতাহীন হৃদয়হত্যার কাহিনী আমাদের জন্য বড় লজ্জার এবং দুর্ভাগ্যের।
যে পিতা-মাতা নিজেদের রক্তকে পানি করে শরীরের ঘাম ঝরিয়ে নিজে না খেয়ে সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করলেন, জীবনের শেষপ্রান্তে এসে অবজ্ঞা, অবহেলাই কি তাদের পাওনা? এটাই কি তাদের প্রতি উপযুক্ত প্রতিদান? একটু ভালোবাসা, যতœ, সুখ চাওয়া কি তাদের অন্যায়?
বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অভাবনীয় সাফল্য ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রভূত উন্নয়নের ফলে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। ফলে বিশ্বজুড়েই বেড়েছে প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা। বর্তমানে পরিবর্ধিত সামাজিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোয় যৌথ পরিবারে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাড়িতে ছেলের বউ কিংবা ছেলের সঙ্গে বনিবনার অভাবে তারা একই বাড়িতে থাকতে পারছেন না। তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে। সেখানে পরিচালন সমিতির অত্যাচারও চরম। এই অমানবিক অবস্থায় বর্তমানে বৃদ্ধ বাবা-মায়েদের অবস্থা করুণ। তাদের প্রতিনিয়ত ভোগ করতে হচ্ছে নরকযন্ত্রণা। আর্থিক, শারীরিক ও সামাজিক দিক দিয়ে দুর্বল ও শক্তিহীন এই মানুষগুলোর অসহনীয় দুর্দশা দেখে কেন নিশ্চুপ নিরুত্তর এই বর্তমান প্রজন্ম সেটাও বোধগম্য নয়।
জীবনের শেষপ্রান্তে এসে বৃদ্ধ পিতা-মাতার প্রত্যাশা খুব বেশি কিছু নয়। দু’বেলা দু’মুঠো খাবার, একটু আশ্রয়, চিকিৎসা যতœ আর বেশি করে ভালোবাসা। এই সহমর্মিতা, সহৃদয়তা কি দেখানো যায় না? ভুলে গেলে চলবে না, তারা আমাদের একান্ত আপনজন, আমাদের জন্মদাতা-জন্মদাত্রী, আমাদের পিতা-মাতা। তারা আমাদের লালন-পালন করে মানুষের মতো মানুষ না করলে আজ আমরা কোথায় থাকতাম? একবার কি ভেবে দেখেছেন? আধুনিক জীবনভাবনার আত্মঘাতী আগুন কিন্তু একদিন জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে শেষ করে দেবে আমাদের হৃদয়হীন এই অমানবিকতাকে। বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা বোঝা নয়, বরং সম্মান-সম্ভ্রমের অফুরন্ত উৎস। তাদের অভিজ্ঞতার ওপর যদি আমরা আরও বেশি করে আস্থা রাখতে পারি, তাহলে অনেক উপকৃত হব, লাভবান হব। যে মানুষজন জীবনের সোনালি সময়টা সন্তানদের সফল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য বিলিয়ে দেন তাদের আমরা যেন একটু ভালোবাসা, যতœ, শান্তি দিতে পারি, এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার। পোশাকে আধুনিকতা আসে না, আসে ভাবনা মন ও মননে। আমাদের মন ও মনন সেই অঙ্গীকারের শুদ্ধতায় উজ্জ্বল হোকএটাই কামনা করি।
লেখক : সাংবাদিক ও কলাম লেখক
বিশেষ ধরনের ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনিস্টিটিউটের (বিআরআরআই) বিজ্ঞানীরা। চিকিৎসকরা বলছেন, এই ধান উদ্ভাবনের ফলে ডায়াবেটিস রোগীকে ভাত খাওয়া নিয়ে টেনশনে থাকতে হবে না। জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশেও ডায়াবেটিস বা মধুমেহ রোগ প্রায় প্রতি ঘরে।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে শর্করাসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ কমিয়ে দিতে হয়, যদিও বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাবার ভাতএকটি শর্করাসমৃদ্ধ খাবার। কিন্তু এই ধানের চাল থেকে তৈরি ভাত খেলেও, ডায়াবেটিস রোগীরা থাকবেন একেবারেই শঙ্কাহীন। বিষয়টি যে কত বড় ধরনের আনন্দের সংবাদ, তা কেবল ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত মানুষজনই জানেন। যেসব সম্মানিত বিজ্ঞানী, এ ধরনের ধান উৎপাদন করে সফল হয়েছেন তাদের বিশেষভাবে সম্মানিত করা দরকার। কারণ, এমন সংবাদে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত দেশের লাখ লাখ মানুষের যে কী ধরনের অনুভূতি তৈরি হয়েছে, তা কেবল সেই রোগীরাই বলতে পারবেন।
গতকাল দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত ‘অনুমোদন পেল ডায়াবেটিস ধান’ শীর্ষক সংবাদের মাধ্যমে জানা যায় ‘বোরো মৌসুমে চাষের উপযোগী কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) সম্পন্ন একটি ও রোপা আউশ মৌসুমের অলবণাক্ততা জোয়ার-ভাটা অঞ্চলের উপযোগী একটিসহ উচ্চফলনশীল নতুন দুই জাতের ধানের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় বীজ বোর্ড। গতকাল বৃহস্পতিবার বোর্ডের ১০৯তম সভায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) উদ্ভাবিত ব্রি ধান১০৫ ও ব্রি ধান১০৬ জাতের অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে ব্রি ধান১০৫ জাতে কম জিআই থাকায় সেটি ইতিমধ্যে গবেষকদের মধ্যে ডায়াবেটিস ধান নামে পরিচিতি পেয়েছে।’
সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে ‘এ জাতের পূর্ণবয়স্ক গাছের গড়-উচ্চতা ১০১ সেমি। গড় ফলন হেক্টরে ৭.৬ টন, তবে উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে অনুকূল পরিবেশে হেক্টরপ্রতি ৮.৫ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। এর জীবনকাল ১৪৮ দিন। এ জাতের ১০০০টি দানার ওজন ১৯ দশমিক ৪ গ্রাম। ব্রি ধান১০৫-এর অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৭ শতাংশ এবং প্রোটিনের পরিমাণ ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। রান্না করা ভাত ঝরঝরে ও সুস্বাদু। তিনি জানান, ব্রি ধান১০৬ আউশ মৌসুমের অলবণাক্ততা জোয়ার-ভাটা অঞ্চলের উপযোগী উচ্চফলনশীল ধানের জাত। এ জাতের ডিগপাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা। পাতার রঙ গাঢ় সবুজ। তবে উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে ব্রি ধান১০৬-এর ফলন হেক্টরপ্রতি ৫.৪৯ টন পর্যন্ত পাওয়া যায়। নতুন জাতটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটি ঢলেপড়া প্রতিরোধী। ফলে গাছ হেলে পড়ে না। ধানের দানা মাঝারি মোটা এবং সোনালি বর্ণের। এ জাতের গড় জীবনকাল ১১৭ দিন। ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ২৪.৫ গ্রাম। ধানের দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৭.২ ভাগ এবং প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৮.৫ ভাগ।’
সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে ‘এ জাতের হোমোজাইগাস কৌলিক সারিটি নির্বাচনের পর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা মাঠে তিন বছর এর ফলন পরীক্ষা করা হয় এবং পরে কৌলিক সারিটি আউশ ২০২০-২১ মৌসুমে দেশের অলবণাক্ততা জোয়ার-ভাটা অঞ্চলে কৃষকের মাঠে আঞ্চলিক উপযোগিতা যাচাই করা হয়। পরে ২০২১-২২ সালে কৌলিক সারিটি উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব বিভাগের গবেষণায় ঢলেপড়া প্রতিরোধী বলে বিবেচিত হওয়ায় ২০২২-২৩ সালে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের ছয়টি অলবণাক্ততা জোয়ার-ভাটা অঞ্চলে কৃষকের মাঠে মূল্যায়ন করা হয়। এরপর জাতীয় বীজ বোর্ডের মাঠ মূল্যায়ন দল কর্তৃক ফলন পরীক্ষা সন্তোষজনক হওয়ায় কৌলিক সারিটি আউশ মৌসুমের অলবণাক্ততা জোয়ার-ভাটা অঞ্চলের উপযোগী উচ্চফলনশীল আউশ ধানের জাত হিসেবে চূড়ান্তভাবে ছাড়করণ করা হয়।’
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা ভাত খেতে পারবেনএই সংবাদ যেমন আনন্দের তেমনি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। কারণ, এমন সংবাদে নিশ্চিতভাবেই মধ্যস্বত্বভোগীরা আরও সক্রিয় হবে। তারা তৈরি করতে পারে, ধানের কৃত্রিম সংকট। ফলে চাল সরবরাহে, বিঘœ ঘটতে পারে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি দরকার। এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে না তেমনটিই আমাদের প্রত্যাশা থাকবে।
প্রখ্যাত সম্পাদক ও সাহিত্যিক আবুল কালাম শামসুদ্দীনের জন্ম ১৮৯৭ সালের ৩ নভেম্বর ময়মনসিংহের ত্রিশালে। তিনি ১৯১৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আইএ পাস করার পর কলকাতার রিপন কলেজে বিএ শ্রেণিতে ভর্তি হন। কিন্তু ওই সময় খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে তিনি তাতে যোগ দেন এবং বিএ পরীক্ষা না দিয়ে কলকাতার গৌড়ীয় সুবর্ণ বিদ্যায়তন থেকে ১৯২১ সালে উপাধি পরীক্ষায় পাস করেন। ১৯২২ সালে মাসিক মোহাম্মদী পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক হিসেবে তার সাংবাদিকতা জীবন শুরু হয়। পরে তিনি সাপ্তাহিক মোসলেম জগৎ, দ্য মুসলমান, দৈনিক সোলতান প্রভৃতি পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ১৯৩৬ সালে তিনি দৈনিক আজাদে যোগ দেন এবং পরে ১৯৪০-৬২ সাল পর্যন্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৪ সালে দৈনিক পাকিস্তানের সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ছাত্রহত্যার প্রতিবাদে তিনি আইন পরিষদের সদস্যপদ ও মুসলিম লীগ সংসদীয় পার্টি ত্যাগ করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে প্রথমবার যে শহীদ মিনার নির্মিত হয়, আবুল কালাম শামসুদ্দীন তার উদ্বোধন করেন। তার রচিত ও অনূদিত একাধিক গ্রন্থ রয়েছে। ‘পলাশী থেকে পাকিস্তান’ ও ‘অতীত দিনের স্মৃতি’ তার উল্লেখযোগ্য রচনা। তিনি ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সরকার কর্র্তৃক সিতারা-ই-খিদমত এবং ১৯৬৭ সালে সিতারা-ই-ইমতিয়াজ উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৭০ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ১৯৭৬ সালে একুশে পদক লাভ করেন। আবুল কালাম শামসুদ্দীন ১৯৭৮ সালের ৪ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন।
অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া এবং শরীরচর্চার অভাবের বেশির ভাগ মানুষেরই হার্ট খারাপ হচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে 'খারাপ' কোলেস্টেরল— এ সব মানুষের নিত্যসঙ্গী। তবে রক্তের বিভিন্ন উপাদানের মাত্রা যদি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে যায়, তা হলে ওষুধ তো খেতেই হবে। সঙ্গে পছন্দের প্রায় সব খাবারেই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে যাবে। তবে পুষ্টিবিদেরা বলছেন, রোজকার খাবারে কিছু পরিবর্তন আনলেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই হার্টের যাবতীয় সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
বিরিয়ানি হোক বা পোলাও সঙ্গে মাটনের কোনো পদ ছাড়া জমে না। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, এ ধরনের 'লাল' মাংস খেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তাই খাসির বদলে মুরগির মাংস খাওয়া তুলনায় স্বাস্থ্যকর।
অনেক চেষ্টা করেও ভাজাভুজি খাবারের লোভ সামলাতে পারছেন না। এই অভ্যাসের ফলেই কিন্তু অজান্তেই বেশির ভাগ মানুষের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে চলেছে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ভাজার বদলে যদি বেকড খাবার খাওয়ার অভ্যাস করা যায়, তবে এই সমস্যা অনেকটাই ঠেকিয়ে রাখা যেতে পারে।
সকালের নাশতায় পাউরুটি খান অনেকেই। কিন্তু পুষ্টিবিদেরা বলছেন, পাউরুটির ওপর মাখন দেওয়ার অভ্যাস ছাড়তে হবে। শুধু পাউরুটি খেতে যদি সমস্যা হয়, তবে ডিম ফেটিয়ে তার মধ্যে পাউরুটি ডুবিয়ে, তা বেক করে নিন। স্বাদ এবং স্বাস্থ্য দুই-ই থাকবে।
মন খারাপ হলে মাঝে মধ্যেই আইসক্রিম খেয়ে ফেলেন। তৎক্ষণাৎ মন ভালো করতে এই টোটকা সত্যিই কার্যকর। কিন্তু সমস্যা হলো আইসক্রিম খাওয়ার অভ্যাসে রক্তে বাড়তে থাকে কোলেস্টেরল। পরবর্তীতে যা হৃদরোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
গরমে তেষ্টা মেটাতে বার বার ঠাণ্ডা পানীয়তে চুমুক দিচ্ছেন। কিন্তু এ পানীয়ে থাকা কৃত্রিম শর্করা যে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করছে, টের পেয়েছেন কী? পুষ্টিবিদেরা বলছেন, এই তেষ্টা মেটাতে এবং স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে নরম পানীয় না খেয়ে ফল থেকে তৈরি রস খেতে পারেন।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। এমন অবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না কেউ। তাই বলে গরমের ভয়ে ঘরে বসে থাকলে তো আর জীবন চলবে না। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যেতে হবে। আর কর্মজীবীদের অফিস ও অন্যান্য কর্মস্থলে। অনেকেরই এই গরমেও কাজের প্রয়োজনে সারাদিন কেটে যায় বাইরে ঘুরে ঘুরেই। গরমকে মোকাবিলা করতে সঙ্গে এই প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো রাখলেই গরমের কাছে নিজেকে হার মানতে হবে না।
পানি পান
গরমের সময় শরীর থেকে স্বাভাবিক ভাবে অনেক বেশি ঘাম বের হয়ে থাকে। যার ফলে দেখা দিতে পারে পানি শূন্যতা। শরীরের মধ্যে যদি পানির পরিমাণ কমে যায় তাহলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। পানি শূন্যতা দূর করতে হলে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খেতে হবে।
বিশুদ্ধ পানি খাওয়ার পাশাপাশি ফলের জুস কিংবা কচি ডাবের পানি খেতে পারেন। দেহের ত্বককে ভালো রাখতে পানি, শরবত বা জুস পানের বিকল্প নেই। গরমে সময় প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লিটার বিশুদ্ধ পানি খেলে ডিহাইড্রেশন এবং পানি শূণ্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
খাবার স্যালাইন
গরমের সময় ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণ বের হতে থাকে যার ফলে শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়। এ থেকে মুক্তি পেতে খাবার স্যালাইন খেতে পারেন। বিকেল বেলা খাবার স্যালাইন খেলে অতিরিক্ত গরমেও শরীরে সতেজতা ফিরে আসে। আবার অনেকেই স্বাদযুক্ত স্যালাইন খান যেমন, টেস্টি স্যালাইন। ভুল করেও এসব খাবেন না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হলো ওরস্যালাইন । তবে আপনাদের মধ্যে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা খাবার স্যালাইন খাওয়ার আগে ভালো কোনো ডাক্তারের মতামত নেওয়া উচিত।
রেড মিট পরিহার করুন
অতিরিক্ত গরমের সময় গরু-ছাগলের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ গরমের সময় বা অতিরিক্ত গরমের সময় গরুর মাংস খেলে শরীরের তাপমাত্রা অনেকাংশে বেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গরু-ছাগলের মাংস ছেড়ে মাছ খেতে পারেন। আর অতিরিক্ত গরমে অবশ্যই অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকুন।
সবুজ শাক সবজি
গরমের সময় শরীরকে সুস্থ রাখতে বেশি বেশি করে সবুজ শাক সবজি খেতে পারেন। সবুজ শাক সবজিতে অধিক পরিমাণে ভিটামিন মিনারেল এবং খনিজ উপাদান থাকে। এতে করে অতিরিক্ত গরমেও শরীর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।তাছাড়াও খেতে পারেন তরমুজ যা শরীরে এনার্জি দিতে পারে।
টক জাতীয় ফল
প্রচুর গরমে সুস্থ থাকার উপায় হিসেবে টক জাতীয় ফল খেতে পারেন। যেমন: কামরাঙ্গা, লেবু, তেতুল, আমরা ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে অতিরিক্ত টক ফল খাওয়া ঠিক নয়। যদি কারো এসিডিটির সমস্যা থেকে থাকে তবে টক জাতীয় ফল খাওয়া হতে বিরত থাকুন। টক জাতীয় ফল খালি পেটে খাওয়া যাবে না। এতে করে আরো বেশী অসুস্থ হয়ে পারতে পাবেন।
টক দই
অতিরিক্ত গরমে সুস্থ থাকতে হলে টক দই খেতে পারেন। যারা করা রোদে কাজ করেন বিশেষ করে তাদের জন্য অনেক উপকারী হলো টক দই। রোদের প্রচুর তাপ থেকে শরীরকে কিছুটা হলেও রক্ষা করবে টক দই। টক দই শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে অনেকাংশে সাহায্য করে।
প্রতিদিন গোসল করুন
গরমের সময় প্রতিদিন এক বার করে হলেও গোসল করতে হবে। যদি পারেন তবে দিনে ২ বার গোসল করতে পারেন। গোসল করার ক্ষেত্রে একটু সাবধান থাকতে হবে। বাহির থেকে এসে সাথে সাথে গোসল করতে যাবেন না। একটু বিশ্রাম নিয়ে তারপর গোসল করতে যাবেন। কারণ হঠাৎ করে গরম থেকে এসে গোসল করলে ঠাণ্ডা লাগতে পারে।
ঘরেই অবস্থান করুন
অতিরিক্ত গরমে বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বাহিরে যাবেন না । যদিও বিভিন্ন কারণে বাহিরে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে রোদ থেকে বাঁচতে প্রয়োজনে ছাতা ব্যবহার করতে পারেন। যতটুকু সম্ভব ছায়াযুক্ত স্থানে থাকার চেষ্টা করুন।
শারীরিক পরিশ্রম কম করুন
গরমের সময় অনেকেই আছে অতিরিক্ত ব্যায়াম করে থাকেন এমনটি করা যাবে না কারণ অতিরিক্ত গরমে শরীরের তাপমাত্রা একটু বেশি হয়ে থাকে।
পাতলা সুতি কাপড় পরিধান করা
গরমের সময় পাতলা সুতি কাপড় পরা দরকার। কারণ সাদা কাপড় তাপ শোষণ করতে পারে না বরং তাপের প্রতিফলন ঘটায় ও গরম কম লাগে।
পারফিউম ব্যবহারে সতর্ক থাকুন
অতিরিক্ত গরমে ঘামের গন্ধ থেকে বেচে থাকার জন্য অনেকেই সুগন্ধি ব্যবহার করে থাকে। তবে অতিরিক্ত গরমে পারফিউম ব্যবহার না করাটাই উত্তম কাজ। কারণ, পারফিউম গরম লাগা বৃদ্ধি করে দেয়।
যদিও ব্যবহার করতে হয় তাহলে হালকা গন্ধের সুগন্ধি ব্যবহার করতে পাবেন। বাজারে কিছু সুগন্ধি পাওয়া যায় যেগুলো ব্যবহার করলে ঠাণ্ডা লাগে। সেগুলো ব্যবহার করলে আরো ভালো হয়।
ধূমপান পরিত্যাগ করা
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা কিনা ধূমপান করে থাকি। ধূমপান করলে শরীরের তাপমাত্রা তুলনামূলক ভাবে বেড়ে যায়। তাই প্রচন্ত গরমে সুস্থ থাকতে হলে ধূমপান পরিত্যাগ করতে হবে। যদিও এই অভ্যাসটি সহজে পরিত্যাগ করা যায় না। তাই যতটুকু পারেন ধূমপান কম করার চেষ্টা করুন।
চা কফি পরিত্যাগ করুন
চা, কফি বা অ্যালকোহল খেলে শরীরের তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পায়। আর যদি অতিরিক্ত গরমে চা, কফি বা অ্যালকোহল খেয়ে থাকেন তাহলে শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পাবে যার ফলে হতে পারে হিটস্ট্রোক। তাই গরমের সময় চা কফি বা অ্যালকোহল খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।
শান্ত থাকুন
মন মেজাজ গরম থাকলে শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। রাগের কারণে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং অতিরিক্ত গরমের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় আর দুই তাপমাত্রা এক সঙ্গে হলে কি অবস্থা হতে পারে একবার হলেও সেটা ভেবে দেখবেন।
বিশেষজ্ঞরা অতিরিক্ত গরমে শান্ত থাকার জন্য মতামত দিয়ে থাকে। বিশেষ করে যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের জন্য শান্ত থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
পলিথিন বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, বিভিন্ন ধরনের পলিথিনজাত মিনিপ্যাকের উৎপাদন, ব্যবহার ও এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সবগুলোই সমস্যা। পলিথিন উৎপাদন ও এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে বাতাসে যেমন কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়, অন্যদিকে এর ব্যবহার প্রাণিকুল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। প্লাস্টিকের কণা এখন মানুষের রক্তে, মায়ের দুধে, সামুদ্রিক মাছে। শুধু ব্যবহার সম্পর্কিত সমস্যা না, পলিথিনের মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও বেশি সমস্যাসংকুল। কারণ এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, কৃষির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, শহরের নর্দমা বন্ধ করে দিচ্ছে তা আবার রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে এবং সবশেষে শহরকে বসবাসের অনুপযোগী করে দিচ্ছে।
এতসব সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না করা বা বন্ধ করতে না পারার সংকট কোথায় সেটা বুঝতে আমাদের সমস্যা হয়। পলিথিন বন্ধে আইন আছে, নানা ধরনের প্যাকেজিংয়ে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাও অনেক দিন হলো। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু তা সহসাই হচ্ছে না। ‘সোনালি ব্যাগ’ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পেটানো হয়েছে কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই সোনালি স্বপ্ন কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে আসছে এতদিনে।
পলিথিনের ব্যবহার শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি যার অনেকটাই অভ্যাসগত কারণে। শহরের মানুষের পলিথিনের ওপর অভ্যস্ততা যেমন বেশি, তেমনি তারা ভুক্তভোগীও বেশি। রাস্তাঘাট, ড্রেন নোংরা হয়ে তো থাকেই, বাড়তি পাওনা দুর্গন্ধ, তৈরি হয় জলজট ও ডেঙ্গুর মতো রোগবালাই। বাসাবাড়িতে পলিথিনের ব্যবহার তো আছেই, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, বেকারিজাত পণ্যের পলিথিনের ব্যবহার ও পলিথিনের মোড়ক যত্রতত্র নিক্ষেপই এই অবস্থার জন্য দায়ী। শুধু ঢাকা নয় অন্যান্য ছোট-বড় সব শহরে প্রায় একই অবস্থা। আর এগুলোই হচ্ছে পলিথিন নির্ভর অর্থনীতির অনুষঙ্গ কিন্তু এর অনর্থনীতি হচ্ছে পলিথিনের কারণে পরিবেশদূষণ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণভাবে পলিথিন ব্যবহারের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্যমান নির্ধারণ করা হয় না। তবে দূষণের মাত্রা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে পলিথিনের অর্থনীতির থেকে এর ক্ষয়ক্ষতির অর্থনীতি যে অনেক বড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আসছে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেট (২০২৩-২৪) বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ এর উল্লেখ করেছেন কিন্তু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে দৃশ্যমান কোনো রূপকল্প এবারের বাজেটে উল্লেখ করতে সমর্থ হননি। এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’। গত বছরের এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘একটাই পৃথিবী’। পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার আমাদের এই একমাত্র পৃথিবীকে দূষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আইন হয়েছে ২০০২-এ এবং আজ ২০২৩ সাল, এই দীর্ঘ ২১ বছরেও এই আইনের বাস্তবায়ন করা যায়নি। যদিও এবারের বাজেট বক্তৃতায় প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার এর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ধরেই নেওয়া যায় শুল্ক বৃদ্ধির এই হার কোনোভাবে পলিথিন নিরুৎসাহিত করার জায়গা থেকে না বরঞ্চ কিছুটা বাড়তি কর আদায়ের চিন্তা থেকে।
পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সস্তা পলিথিনের ব্যবহার টেকসই ভোগের ধারণার জন্যও কোনোভাবে সহায়ক না। বরঞ্চ এটা এমন এক ধরনের মনস্তত্ত্ব তৈরি করে যা শুধু পরিবেশকেই ধ্বংস করে। যদিও বিশ্বব্যাপী টেকসই ভোগের ধারণার ওপর ভিত্তি করে এখন ‘সার্কুলার অর্থনীতির’ ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সার্কুলার অর্থনীতি শুধু অপচয় কমায় না, প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা, দূষণরোধ, বর্জ্য থেকে তৈরি পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। তাই পরিবেশগত ঝুঁকি, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা এবং এ সংশ্লিষ্ট অভীষ্ট ২০৩০ সমূহ অর্জনে সার্কুলার অর্থনীতি অন্যতম হাতিয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে রাস্তায় কোনো পেট বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায় না। এর কারণ হচ্ছে এখন পেট বোতলের প্রায় শতভাগ রিসাইকেল করা হয় এবং পেট বোতল সংগ্রহের জন্য অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে হলেও একটি সংগ্রহ-লাইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু পলিথিনের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। তবে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার সার্কুলার ইকোনমির ধারণার সঙ্গেও একেবারে মানানসই না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রযুক্তিগতভাবে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন রিসাইকেল করা অসম্ভব না হলেও এটি একটি জটিল এবং অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল যে কারণে পেট বোতলের মতো রাস্তা থেকে পলিথিন সংগ্রহ করতে কাউকে দেখা যায় না উলটো রাস্তাঘাটে এখানে সেখানে পলিথিন পড়ে থাকে।
পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অনর্থনীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখন প্রথম দরকার এর ব্যবহার বন্ধ করা, এর ব্যবহারকে অনেক বেশি দামি করে ফেলতে হবে আর এর প্রতিফলন থাকতে হবে বাজেটে। দ্বিতীয়ত, সার্কুলার অর্থনৈতিক চর্চার উৎসাহিত করার জন্য পরিকল্পনা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগের মতো উদ্যোগগুলোকে সরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ ও বেসরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। সরকার প্রতি বছর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশ দিবস পালন করে কিন্তু দিবস পালন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই হবে না এর উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে তার ওপরও নজর দিতে হবে। তা নাহলে পলিথিনের অর্থনীতির নামে শুধু অনর্থনীতিকে বাড়িয়ে তোলা হবে, আর সেটা হবে টেকসই অর্থনীতি তৈরির সম্ভাবনার অপমৃত্যু।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।