
প্লেটো ছিলেন সক্রেটিসের যোগ্য শিষ্য। শিক্ষা নিয়ে গভীর উপলব্ধির কথাগুলো তিনি বিভিন্নভাবে উল্লেখ করেছেন। সক্রেটিসের বিভিন্ন চিন্তার সহজ-সরল ব্যাখ্যা এসেছে প্লেটোর হাত ধরে। তিনি নীতিশিক্ষার মধ্য দিয়ে ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের উন্নতি করতে চেয়েছিলেন।
প্লেটো এমন একটি শিক্ষা চেয়েছিলেন, যা একজন শিক্ষার্থীর নৈতিক মানকে উন্নত করবে এবং একই সঙ্গে একটি সমাজের উপযোগী হিসেবে তাকে গড়ে তুলবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
মানুষের বেঁচে থাকার মধ্যে একটা উদ্দেশ্য থাকে। সেই উদ্দেশ্যকে পরিপূর্ণ করে তোলে অন্তর্গত শিক্ষা। পারিবারিক শিক্ষা, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং সামাজিক শিক্ষা এই ৩ শিক্ষা একত্র হলে মানুষের হৃদয়ে তৈরি হয় ‘অন্তর্গত’ শিক্ষা।
এই শিক্ষার কারণেই একই মানের সার্টিফিকেটে উন্নীত মানুষজন হয় একেক রকম। মানুষের আচরণেই তার প্রকাশ ঘটে। আর চিন্তায় প্রতিফলিত হয় সেই সমষ্টিগত চিন্তার সর্বোচ্চ ব্যাপ্তি।
আবার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াও মানুষ আলোকিত হয়ে ওঠেন। কিন্তু পারিবারিক এবং সামাজিক শিক্ষাই একজন মানুষের বড় পরিচয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর যে ব্যতিক্রম হয় না তা না। তবে সেটা ধর্তব্যের মধ্যে না আনাই ভালো।
আমাদের বেঁচে থাকার মধ্যে একটা উদ্দেশ্য আছে। একজন মানুষের পক্ষে সেই উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব নাও হতে পারে। কিন্তু ব্যক্তিগত চিন্তার বাইরে সমষ্টিগত চিন্তায় নিজেকে সম্পৃক্ত করতে না পারলে সেই জীবনের কোনো মূল্য নেই। অথচ দুর্ভাগ্যের বিষয়, এই মূল্যহীন জীবন নিয়েই আমরা খুশি।
কীভাবে নিজেকে ওপরে ওঠাতে পারি, কীভাবে সেই অবস্থান ধরে রাখতে পারি সেই চিন্তায় পার হয় জীবন। সেখানে ‘আমি’ ছাড়া কেউ নেই। এই আমিত্বই খর্ব করছে জীবনের মাহাত্ম্য। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, ‘আমি’ যে হারিয়ে যাচ্ছি সেই বোধটুকুও নেই। এ এক অদ্ভুত, বোধহীন সময়! এ সময়ে আমিই মুখ্য। হারিয়ে যাচ্ছি ‘আমরা’।
একজন মানুষকে ভালোবাসতে কতটুকু ‘শিক্ষা’ লাগে? যদি লাগেও, সেটা কোন ধরনের শিক্ষা? আলোকিত মানুষ হওয়ার সঙ্গে, অর্থের সম্পর্ক কতটুকু? অথবা একজন অর্থবান মানুষের কাছে জীবনের অর্থই বা কেমন? এই অস্থির সময়ে এসব আমরা বিবেচনা করি না। যেখানে বেঁচে থাকাই মুখ্য, সেখানে বাড়তি চিন্তার সুযোগ কোথায়!
অথচ হওয়ার কথা ছিল এটাই আমাদের আসল চিন্তা। কিন্তু হয়নি। না হওয়ার জন্য এককভাবে কেউ দায়ী নন। এই ব্যর্থতার দায়, মূলত কে নেবে! ব্যক্তি, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সমাজ না রাষ্ট্র? নাকি এর জন্য আমিই দায়ী!
আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে নিজেকে কখনো প্রশ্নের মুখোমুখি করি না। একবারের জন্যও ভাবি না, এই আমি যদি ‘আমরা’ না হতে পারি ব্যক্তিজীবন, সংসার জীবন এবং সামাজিক জীবনের কোনো মূল্য থাকবে না।
এর মানে হচ্ছে, জীবনের কোনো উদ্দেশ্য নেই। জীবনের কোনো লক্ষ্য নেই। সেই উদ্দেশ্যহীন, লক্ষ্যহীন জীবন যখন মুখ্য হয়ে ওঠে, তখন কোনো সমাজ আর এগোতে পারে না।
মায়াময় জীবনের কাছে আমাদের অনেক চাওয়া। সেই ব্যক্তি চাওয়াকে সমষ্টিগতভাবে অধিকাংশ মানুষই ভাবেন না। কেন আমাকে এমন মানসিকতায় উন্নীত করা হলো? কেনইবা আমি শুধু নিজের চিন্তায় নিজেকে ব্যাপৃত রাখছি?
একটি বারের জন্যও এটা ভাবি না। এই না ভাবার দায় কে নেবে? যত দিন এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের কাছে পরিষ্কার না হবে, তত দিন সমাজ ও সমষ্টির উন্নতি সম্ভব না।
শুধু নিজের উন্নতিতে সমাজের কোনো উন্নতি নেই। সমষ্টিগত উন্নয়নই পারে জীবন এবং সমাজকে সুন্দর করে সাজাতে। অন্যের মধ্যে নিজেকে বিলীন করতে না পারলে কখনো কোনো দিনই জীবনের আসল উদ্দেশ্যকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
জীবনকে ভালোবাসতে চাইলে, নিজেকে ভালোবাসতে চাইলে জীবনের একটা মহৎ উদ্দেশ্য থাকা জরুরি। না হলে ব্যর্থ জীবনে নিজের অর্জন হবে শুধুই বিসর্জন।
লেখক : সাংবাদিক
স্বনামধন্য, প্রাজ্ঞ, বর্ষীয়ান অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। উন্নয়ন চিন্তাবিদ, পরিবেশকর্মী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবিধানিক ইনস্টিটিউট- ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর সভাপতি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন, মুজিবনগর সরকারের অধীনে পরিকল্পনা সেলে কর্মরত ছিলেন। একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদকে ভূষিত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য এই বরেণ্য অর্থনীতিবিদ মুখোমুখি হয়েছিলেন দেশ রূপান্তরের। বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং বিশ্বমন্দা প্রসঙ্গে খোলামেলা কথা বললেন দীর্ঘক্ষণ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সহকারী সম্পাদক তাপস রায়হান
দেশ রূপান্তর : বর্তমান অর্থনৈতিক চিত্র কেমন?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : আমি তো খারাপ কিছু দেখি না। মনে রাখতে হবে, পৃথিবী এখন দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে টালমাটাল অবস্থা। এই পরিস্থিতির মধ্যে, আমাদের দেশ অনেক ভালো করছে। তবে একটা চ্যালেঞ্জ আছে। পৃথিবীর সব দেশেই, কিছু না কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কিছু চ্যালেঞ্জ আছে, যেটি এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তৈরি হয়। ‘চ্যালেঞ্জ নেই’, পৃথিবীর এমন কোনো দেশ পাওয়া যাবে না। সেটি হতে পারে- সামাজিক, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক। এর বাইরেও চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে। একটি সমাজে, কোনো না কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ সবসময়ই থাকে। এটি থাকলেই যে অর্থনীতির খারাপ অবস্থা, তা না। এখন তো বিশ্ব, একটি জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। আমরা যেটিকে- গ্লোবাল ভিলেজ বলি। ফলে অন্য দেশে কিছু হলে, তার প্রভাব আমাদের দেশেও পড়বে। দুটো ধাক্কা, আমাদের সামাল দিতে হচ্ছে। প্রথমত, করোনা। এটা কোত্থেকে, কীভাবে হলো- কেউ জানে না। এটা কিন্তু বিশ্ব মহামারী। আগামীতেও এরকম হতে পারে। বাংলাদেশ কিন্তু চমৎকারভাবে, এই দুরূহ পথ পাড়ি দিয়েছে। এর দুটো দিক আছে। একটা হচ্ছে, স্বাস্থ্যগত আরেকটা অর্থনৈতিক। আমাদের ব্যবস্থাপনা খুবই ভালো ছিল। আমরা যখন করোনার টিকা পেয়েছি, তখনো কিন্তু বিশ্বের ১৩০টি দেশ এই টিকা পায়নি। বিনামূল্যে দেশের মানুষ, এই টিকা পেয়েছে। আমি তো চতুর্থ ডোজ দিলাম। টিকার স্বাস্থ্যগত দিকটা খুবই চমৎকার। হাসপাতালের ব্যবস্থা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করা- এসব ক্ষেত্রে আমরা অনেক ভালো করেছি। আবার অর্থনৈতিকভাবে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তাদেরও একাধিকবার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। আমাদের একটা চরিত্র আছে, অপরকে পছন্দ করি না। কিন্তু কোনো দুর্যোগের মুখোমুখি হলে, আমরা এক হয়ে যাই। যেটা মুক্তিযুদ্ধের সময় দেখেছি, ৮৬ সালের বন্যায় দেখেছি। ৯৮ সালের বন্যাতেও দেখেছি। তখন আমাদের মধ্যে কোনো ধরনের, অনৈক্য কাজ করে না। যে কোনো দুর্যোগের সময় আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াই, এবারও কিন্তু দাঁড়িয়েছি।
দেশ রূপান্তর : এর মানে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজ দায়িত্ব পালন করেছেন?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : না, সবাই না। একদল চুরি করেছে। আরেক দল পাশে দাঁড়িয়েছে। বলা হয়েছিল, অনেক মানুষ মারা যাবে। কই, তাতো হয়নি? এটা কিন্তু সরকারের সাফল্য। বিষয়টি স্বীকার করতে হবে।
দেশ রূপান্তর : এর মানে, বিশ্ব প্রেক্ষাপটে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : হ্যাঁ। তা বলা যেতে পারে। তবে, করোনার আগে অর্থনীতির যে অবস্থা ছিল- এখনো সেই অবস্থায় যেতে পারিনি। কিন্তু অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা ভালো করেছি। অর্থনৈতিক দিকেও ভালো করেছি, স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও ভালো করেছি।
দেশ রূপান্তর : কিন্তু সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তো, জনগণকে সতর্ক করা হচ্ছে?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : সেটা তো দায়িত্ব। এটা করতেই হবে। সেটা আমরাও করছি।
দেশ রূপান্তর : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কি আমাদের, কোনো ধরনের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : অবশ্যই। বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
দেশ রূপান্তর : তাহলে কি বলতে পারি, আমদানি নির্ভরতার কারণে এই চ্যালেঞ্জ বেশি?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : না। আমরা তো কম নির্ভরশীল। পৃথিবীর অনেক দেশ, এই আমদানির ওপর নির্ভর করে।
দেশ রূপান্তর : আপনি বলতে চাইছেন, আমরা কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : বিশ্বের অনেক দেশ থেকে, ভালো অবস্থানে আছি। আমাদের মৌলিক দিকগুলো ভালো। কিন্তু করোনার আগে অর্থনীতির যে চিত্র ছিল, সেই জায়গায় এখনো যেতে পারিনি। ২০১৮-১৯ সালে প্রবৃদ্ধির হার ছিল, ৮.১৫ শতাংশ। বর্তমানে প্রাক্কলন করা হয়েছে- ৬.৫-৭। এখনো আমরা আগের জায়গায় যেতে পারিনি। কিন্তু অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে বলা যেতে পারে- আমরা ভালো আছি।
দেশ রূপান্তর : এই যে, প্রবৃদ্ধি হ্রাস এর মূল কারণ কী?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : বিশ্ব প্রেক্ষাপট একটা মূল কারণ। তারপর আমাদের দেশের মধ্যে...
দেশ রূপান্তর : আপনি কি বলতে চাইছেন, সম্পদ বণ্টন ব্যবস্থায় কোনো ত্রুটি রয়েছে?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : অবশ্যই। এটা দেশের মধ্যে যেমন আছে, তেমনি আন্তর্জাতিক বাজারেও রয়েছে। তবে এখন কিন্তু আমরা এগিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি।
দেশ রূপান্তর : দ্রব্যমূল্য এবং বিদ্যুতের দাম তো, ক্রমশ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : প্রধানমন্ত্রী তো বলেছেন- আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্য হ্রাস পেলে, আমাদের এখানেও সমন্বয় করা হবে। তবে সেটা এখনো দৃশ্যমান না। আমি আশা করছি, প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন, সেটা করা হবে। আর জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ববাজারে কমতে শুরু করেছে। এর সুফল নিশ্চয়ই আমরা পাব।
দেশ রূপান্তর : কোথাও কি সমস্যা হচ্ছে? সম্পদের সুষম বণ্টন হলে তো, এমন হওয়ার কথা না?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : আমি ঐখানেই যাচ্ছিলাম। এটা আগেও ছিল, এখনো আছে। শুধু আমাদের দেশে না। সমস্ত বিশে^ই বণ্টন ব্যবস্থায়, সমস্যা আছে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে মাত্র ১ শতাংশের হাতে, পৃথিবীর অর্ধেক সম্পদ। বাকি ৯৯%-এর হাতে আছে, বাকি অর্ধেক। এরমধ্যেও সমস্যা আছে। অনেক বৈষম্য। দেখা যায়, কারও অনেক বেশি। কারও একেবারেই কম। যে কারণে আমেরিকাতেও দেখা যায়, সেখানে ‘লঙ্গরখানা’ আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১ শতাংশের হাতে ৪০ শতাংশ সম্পদ। তো, আমাদের এখানে সম্পদের হিসাবটা খুব একটা পরিষ্কার না। বৈষম্য পরিমাপক সূচক ২০১০ সালে ছিল ০.৪৫। ২০১৮ সালে এসে এটা ০.৪৮ হয়ে যায়। বর্তমানে মনে হয়, পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। হ্যাঁ, এটা ঠিক- বৈষম্য খারাপের দিকে যাচ্ছে। ওপরের যারা তারা বেশি ধনী হচ্ছে। নিচের দিকে যারা, তারা আরও দরিদ্র হচ্ছে। বৈষম্যটা প্রকট। এটা অনেকটা, সরকারিভাবেই স্বীকৃত। তবে পরিস্থিতি কিন্তু আরও খারাপ হতে পারত। কতগুলো পদক্ষেপ, আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কিছু পথ আছে। সমস্যা হচ্ছে, আমাদের দেশে আইনের বাস্তবায়ন কম। অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয় না।
দেশ রূপান্তর : এই দায় কার?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : যারা বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছেন, এই দায় তাদের। একদম, ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত। এখানে অনেক কর্মকর্তা থাকতে পারেন। মন্ত্রী-সচিবও থাকতে পারেন।
দেশ রূপান্তর : এটা কি তাদের অদক্ষতা না অবহেলা?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : দুটোই। অবহেলাও আছে, অদক্ষতাও আছে। এছাড়া আত্মতুষ্টিও আছে। কিছুটা আবার তদারকির সমস্যা। আরেকটা বিষয় হচ্ছে- যারা দুর্নীতি করেন, ঠিকমতো বাস্তবায়ন করেন না- তাদের বিচার যেমন হওয়ার কথা ছিল, তেমন হচ্ছে না। এতে অনেকেই, প্রশ্রয় পাচ্ছে। এই সমস্ত কারণেই, লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না। এই জায়গায় বড় ধরনের সমস্যা আছে। না হলে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতাম। কিন্তু এগিয়ে যাচ্ছি। এখন যদি দুর্নীতি কমিয়ে আনা না যায়, ব্যাংকের যে টাকা পাচার হচ্ছে, এটা যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়- তাহলে সমস্যা হতে পারে।
দেশ রূপান্তর : মানুষের চাহিদা বাড়ছে, জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। এর সঙ্গে মূল্যস্ফীতির কোনো যোগসূত্র আছে?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : আসলে এটা চাহিদা এবং সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল। এর বাইরে, কিছু ব্যবসায়ী আছেন, যারা কৃত্রিমভাবে সংকট তৈরি করেন। আমাদের আমদানি করতে হয়, অনেক পণ্য। এখন জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়াতে, আমদানি ব্যয়ও বেড়ে গেছে। কারণ অনেক দেশে উৎপাদনে সমস্যা হচ্ছে, সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে। পরিবহনে সমস্যা হচ্ছে। এখন ডলারের দাম বেড়ে যাওয়াতে আমাদের টাকার মান কমে গেছে। এই কারণেও কিন্তু মূল্যস্ফীতি হচ্ছে।
দেশ রূপান্তর : তাহলে কি বলতে পারি- আগামীতে কোনো ধরনের দুর্ভিক্ষ বা অর্থনৈতিক বিপর্যয় এড়াতে, আমরা সক্ষম হব?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : আমার ধারণা, সরকার যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে তা ঠিকমতো কার্যকর হলে, কোনো ধরনের বিপর্যয় হবে না। ‘নীতি’তে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আরও তদারকি দরকার।
দেশ রূপান্তর : এর মানে, অর্থনৈতিক মন্দার কোনো সুযোগ নেই?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : এটা হবে না বলেই, আমার বিশ্বাস। ঐ যে বললাম, শর্তসাপেক্ষে। আরও সচেতন হতে হবে। বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান তো বলছে, বিশ্বমন্দা হবে। যদি তাই-ই হয়, তাহলে এর প্রভাব, আমাদের অর্থনীতিতেও পড়বে। তবে ততটা খারাপ হবে না। আরেকটা বিষয়, বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল নিয়ে অনেকেই শঙ্কিত। সেখানে শঙ্কার একটা কারণ আছে। প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, আমাদের সতর্কতার সঙ্গে অগ্রসর হতে হবে। সব যদি সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহৃত হয়, তাহলে আমার মনে হয় না- পরিস্থিতি তেমন একটা খারাপ হবে।
দেশ রূপান্তর : তাহলে কি বলা যায়, আগামীতে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নতির দিকে যাবে?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : এটা তো নিশ্চিত করে বলা যাবে না। মাঝখানে যদি কোনো বিশ^ মহামারী দেখা দেয়, তার প্রভাব তো আমাদের এখানেও পড়বে। তবে আমাদের কিন্তু একটা লক্ষ্য আছে। ২০৩০ সালে আমরা, টেকসই উন্নয়ন করব। ২০৩১ সালে আমরা, উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ হব। আর ২০৪১ সালে আমরা উন্নত দেশ হব। এই লক্ষ্যগুলো সামনে রেখেই, সব কাজ করা হচ্ছিল। আমাদের প্রস্তুতিও তেমনই ছিল। কিন্তু করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আমাদের আটকে দিল। আবার তা পুনরুদ্ধার করে সেই পথে যাওয়া তো, সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এই লক্ষ্যগুলো এখনো আছে। তবে পৌঁছা যাবে কি না, সেটা নির্ভর করে আগামীতে কীভাবে নীতিগুলো বাস্তবায়িত হবে?
দেশ রূপান্তর : আমরা একটু, অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলি। মানুষের চাহিদা যখন বাড়ছে এবং জোগান যখন কমছে- তার সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতির কোনো সম্পর্ক আছে? ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : আছে তো! চাহিদা বাড়লে, দাম বাড়বেই।
দেশ রূপান্তর : আপনি ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এ বিষয়ে একটু বিস্তারিত বলবেন?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : আমি লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সে পড়াশোনা করেছি। সেখান থেকেই পিএইচডি করেছি। দিল্লিতে স্কুল অব ইকোনমিক্স আছে। লাহোরে আছে। কিন্তু বাংলাদেশে ছিল না। ২০১০ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। আমি এখনো সভাপতি। এছাড়া বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমিতির সভাপতি ছিলাম ৩ বার। সেখান থেকেই আমরা, এই উদ্যোগ নিয়েছিলাম। বর্তমানে এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ। এই স্কুলের ডিগ্রি দেওয়া হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। এটা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীভূত প্রতিষ্ঠান।
দেশ রূপান্তর : আপনি মুক্তিযুদ্ধকালীন, মুজিবনগর সরকারের অধীনে পরিকল্পনা সেলে কর্মরত ছিলেন। সেইসময়, আপনাদের কাজ কোন ধরনের ছিল?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : সেখানে বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন ছিলেন। অনেক ধরনের কাজ করতে হতো। আমি ছিলাম, যুবক বয়সী। কেন জানি না, সৌভাগ্যক্রমে দেশের প্রথম ‘পাটনীতি’ আমিই তৈরি করেছিলাম। এই ভেবে যে, যদি স্বাধীন হয়ে যাই- তাহলে তো এটি কাজে আসবে। ওটাই কিন্তু বাংলাদেশের প্রথম ‘পাটনীতি’।
দেশ রূপান্তর : শেষে কিছু বলবেন?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : হা হা হা। এই ৮২ বছর বয়সে, কী আর বলব? সুস্থ থাকুক, বাংলাদেশের মানুষ। ভালো থাকুক, দেশ রূপান্তরের সবাই।
সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের আধুনিক জীবনে এক নতুন বাস্তবতা। নগর-বন্দর, গ্রামে-গঞ্জে চায়ের দোকানে মানুষ তথ্যের জন্য এখন আর পত্রিকার পাতা ঘাঁটাঘাঁটি করে না। এর বদলে এসেছে স্মার্টফোন ও আইফোননির্ভরতা। গণমাধ্যমে তথ্যের বিপণনের সাবেকি প্রথা এখন আর নেই। চারপাশে, দেশে-বিদেশে কী ঘটছে, সেগুলো ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, গুগলসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে পেয়ে যাচ্ছে সবাই। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে মানুষ মানবিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক দূরত্বকে পুরোপুরি দূর করে দিচ্ছে। প্রযুক্তির ব্যবহারে যেকোনো ব্যক্তি তথ্য, অভিমত, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি দেওয়া-নেওয়া করতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম একটি সোশ্যাল মিডিয়া হচ্ছে টুইটার। কিন্তু এই টুইটারের মালিকানা কিনে নেওয়ার পর থেকেই ইলন মাস্ক এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিটিকে একেবারে মধ্যযুগীয় জমিদারদের মতো পরিচালনা করছেন এবং সম্পূর্ণরূপে এটি এখন তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছা মতো চলছে। স্পষ্টতই এই প্রযুক্তি-ধনকুবের মন থেকে বিশ্বাস করেন, টুইটারে যারা কাজ করেন, তাদের যে কারও চেয়ে তিনি সবকিছুই ভালো জানেন এবং তিনি তার এই নতুন কোম্পানিটির কর্মীদের সঙ্গে আধুনিক যুগের দিনমজুরদের মতো আচরণ করে চলেছেন। টুইটার নিয়ে ঘটনা এখন যে পর্যায়ে এসেছে, তা সম্ভবত অনিবার্য ছিল। এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি ব্যক্তিপূজার সংস্কৃতির লালন করছে। এই সংস্কৃতির শুরুটা করেছিলেন স্টিভ জবস। তিনি অতি সতর্কতা ও যতেœর সঙ্গে বিশ্ববাসীর কাছে নিজের উদার ও কৌতূহলী উদ্ভাবকের ভাবমূর্তি ধরে রেখেছিলেন; কিন্তু বাস্তবে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে কঠোর-নিয়ন্ত্রিত একটি করপোরেশনের প্রধান ছিলেন। জবস সারা জীবন রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও তার আইকনিক অবস্থান অনুসরণ করে উঠে আসা উত্তরাধিকারীরা তার মূল্যবোধ ও আদর্শকে মোটেও অনুসরণ করেননি।
তারা তাদের নিজেদের প্রতিপত্তি ও ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নিজেদের উদ্যমকে রাজনীতির হাতে সঁপে দিয়েছেন এবং নিজেদের কায়েমি স্বার্থ উদ্ধারের এজেন্ডাগুলোকে উন্মোচিত করে দিয়েছেন। টুইটারের মালিকানা কেনার পেছনে ইলন মাস্কের যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে, তা তিনি গত মে মাসে তার টুইটার হ্যান্ডেলে করা একটি পোস্টেই খোলাসা করেছিলেন। সেখানে তিনি ফ্রান্সের সূর্যরাজ খ্যাত রাজা চতুর্দশ লুইয়ের একটি ছবি পোস্ট করেন। এর মাধ্যমে ইলন মাস্ক নিজেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নতুন আলোকিত রাজা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন বলে মনে করা হয়। ওই সময় তিনি টুইটারকে একেবারে অবাধ করবেন বলে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু গত দুই মাস ধরে মাস্কের কার্যকলাপ ও প্রতিক্রিয়া দেখে তাকে একজন মহান সূর্যরাজের চেয়ে কম উদার এবং একটি প্রায় ভেঙে পড়া রাজ্যের একজন আধুনিক স্বৈরশাসকের চেয়ে বেশি কিছু মনে হচ্ছে। একজন উচ্চাভিলাষী ক্ষমতা দখলকারীর মতো তিনি গণতন্ত্র এবং জনগণের ইচ্ছার কথা বলে টুইটার দখল করা শুরু করেছিলেন, এবং এর মাধ্যমে তিনি গণতন্ত্র এবং জনগণের ইচ্ছা উভয়কেই উপহাস করেছেন। তিনি নিজে যে টুইটারকে ডিজিটাল টাউন স্কয়ার বলে অভিহিত করে থাকেন, সেটিকেই তিনি এমনভাবে ব্যক্তিগত পরিসর বানিয়েছেন যেখানে তার কথাই শেষ কথা। আর দশজন স্বৈরশাসকের মতো মাস্কও ভিন্নমত ও সমালোচনার প্রতি সহনশীলতা দেখাননি। কোম্পানির মধ্যে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস দেখানোর জন্য তিনি কর্মীদের চাকরি খেয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। একজন কট্টর কর্তৃত্ববাদীর মতো তিনি গণমাধ্যমে ঘৃণা করেন এবং সংবাদমাধ্যমের ওপর খড়গ তুলতে দ্বিধা করেন না।
টুইটারকে কিনে নিয়েই মাস্ক তার নতুন সাম্রাজ্যে ঢুকলেন মূর্তিমান আতঙ্কের মতো। তিনি শুরুতেই তার ভুল ধরিয়ে দেওয়া এবং তার বিষয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনামূলক মন্তব্য করা কর্মীদের একের পর এক চাকরি খাওয়া শুরু করেন। হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে টুইটার নিষিদ্ধ করেছিল; মাস্ক এসে সেই অ্যাকাউন্ট চালু করেছেন। টুইটারকে লাভজনক করার জন্য তিনি টুইটারের নীল টিক চিহ্নধারীদের মাসে ৮ ডলার দিতে হবে বলে ঘোষণা দেন। তাতে টুইটারে স্বাভাবিকভাবেই বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিরা সাধারণ মানুষ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের মানসিকতা ও অনন্য আইডিয়ার অনন্য মানুষ বলে যে কথা প্রচলিত আছে, ইলন মাস্কের দাম্ভিক ও অসহনশীল আচরণ সেই কথার সত্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। টুইটার নিয়ে মাস্ক যা করছেন, তাতে বরং সাধারণের এই ধারণা জন্মাবে যে আজকের দিনের ধনকুবেররা আগের দিনের সামন্তদের মতো। তবে মাস্কের মতো ধনকুবের এবং অতীতের সামন্ত জমিদারদের মধ্যে অবশ্যই কিছু পার্থক্য আছে। একুশ শতকের ধনকুবেরদের নিদেনপক্ষে তাত্ত্বিকভাবে হলেও অধিকতর গণতান্ত্রিক ও ভারসাম্যমূলক জবাবদিহির নীতি থাকে। তাদের ক্ষমতাচর্চার ক্ষেত্র কোনো ছোট অঞ্চল বা দেশের পরিসরে সীমাবদ্ধ থাকে না। তাদের বৈশ্বিক করপোরেশনগুলো বিশ্বের সর্বত্র কার্যক্রম বিস্তৃত রাখে। তাদের প্রভাব আমাদের বিশ্ববাসীর সামগ্রিক জীবন, এমনকি এই ধরিত্রীর ভবিষ্যতের ওপরও প্রভাব ফেলে। ইলন মাস্কের মতো ধনীদের শুধু যে তাদের নিজেদের কর্মচারীদের ওপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, তা নয়, বরং আমাদের সবার জীবনযাপনের ওপরও বিস্তর পরোক্ষ প্রভাব আছে। কার বক্তব্য সামনে আসবে কিংবা কাকে নিষিদ্ধ করতে হবে, সেসব বিষয় তারা ঠিক করার ক্ষমতা রাখেন। মানব সম্প্রদায়ের মনোযোগ কোথায় রাখতে হবে, সে বিষয়ে প্রায়ই তারা অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রভাব খাটিয়ে থাকেন।
মাস্ক তার অজনপ্রিয়তাকে এতটাই অস্বীকার করেছিলেন যে, তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, লোকেরা যদি সিইও পদ থেকে তার পদত্যাগের পক্ষে ভোট দেয় তাহলে তিনি সরে দাঁড়াবেন। লোকেরা তা-ই করল। ৫৭.৫ শতাংশ ভোট পদত্যাগের পক্ষে পড়ল। কিন্তু তিনি পদত্যাগ করলেন না।
ফলাফলটি স্বীকার করতে মাস্কের ৪০ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে এবং ফল মেনে নেওয়ার সময় তিনি বলেছেন, তিনি শুধুমাত্র তখনই পদত্যাগ করবেন যখন তিনি অন্য কোনো যোগ্য কাউকে পাবেন। এটি স্বৈরশাসকদের অতি পুরনো কৌশল। তারা এমন ভান করেন যে, তারা ছাড়া আর গদিতে বসার আর কোনো যোগ্য লোক নেই। এটি তাদের অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্ষমতায় থাকার অজুহাত তৈরি করে দেয়। কিন্তু আল-বশিরের সঙ্গে মাস্কের যে বিষয়ে মিল নেই, তা হলো জাহাজ যখন ডুবছে তখনো মাস্ককে তার অনুগতরা ভেসে থাকার সাহস দিয়ে যাচ্ছেন। মাস্ক তার সম্পদের জোরে এই শক্তি পেয়েছেন। কিন্তু এই শক্তি বাজার-শক্তির ওপর নির্ভর করে যাতে কারও পুরোপুরি হাত নেই। বড় বিনিয়োগকারীরা যারা তার বিভিন্ন টেক অ্যাডভেঞ্চারকে সক্ষম করেছেন, তারা অনুগতদের তুলনায় অনেক বেশি চঞ্চল। তারা আর্থিক ক্ষতির কারণ হতে পারে এমন বিপদের সামান্যতম চিহ্ন দেখলেই তাকে ফেলে ঝাঁপ দেবেন। আল-বশির এবং অন্যান্য পতিত স্বৈরশাসকদের মতো ইলন মাস্ক একই ভুল করছেন বলে মনে হচ্ছে। তিনি জনগণের ক্ষমতাকে ছোট করে দেখছেন। মাস্কের ডিজিটাল স্বৈরাচারের অবসান ঘটবেই দুদিন আগে হোক বা পরে হোক। কিন্তু তার ত্রুটিপূর্ণ শাসন তার অন্যান্য প্রযুক্তি-ভাইদের জন্য একটি সতর্কতা হিসেবে দাঁড়ানো উচিত যারা প্রযুক্তির স্বৈরশাসক হওয়ার অভিলাষ লালন করেন। তাদের মনে রাখতে হবে, ইন্টারনেট-বিশেষত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মানুষের স্বাধীনতার প্রতি স্বাভাবিক অনুরাগের ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এটি দখল ও নিয়ন্ত্রণ করার যে কোনো চেষ্টা ব্যর্থ হবেই।
লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক
স্থূলতা বা ওবেসিটি হলে, শরীরে জমা হয় অতিরিক্ত পরিমাণে চর্বি। স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক ঝুঁকির কারণে, কমে যেতে পারে আয়ু। এর পাশাপাশি শরীরে দেখা দেয়, নানা ধরনের জটিলতা। বিশেষ করে, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এছাড়াও হতে পারে শ্বাসকষ্ট, ক্যানসার বা অস্টিওআর্থ্রাইটিস। মূলত কায়িক শ্রমের অভাব এবং অতিরিক্ত ক্যালোরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করার ফলেই, এটি হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুদের মধ্যে বেশি পরিমাণে হচ্ছে এটি। তবে আমাদের দেশে, শিশু-কিশোরদের মধ্যে স্থূলতা বেড়েই চলেছে।
গতকাল দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত ‘শিশু-কিশোরদের স্থূলতা বেড়েছে তিনগুণের বেশি’ শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, দেশে মোট প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ১৮-২৪ শতাংশ দৈহিক স্থূলতা ও অতিরিক্ত ওজনে ভুগছেন। তবে সংখ্যার চেয়ে বেশি উদ্বেগজনক হলো, দেশে নতুন করে মানুষের মধ্যে দৈহিক স্থূলতা ও অতিরিক্ত ওজন বাড়ছে। বিশেষ করে গত ২০ বছরে অপ্রাপ্ত বয়স্ক অর্থাৎ শিশু-কিশোরদের মধ্যে দৈহিক স্থূলতা বেড়েছে তিনগুণের বেশি। আগে যেখানে ৪-৫ শতাংশ শিশু-কিশোরের দৈহিক স্থূলতা ও অতিরিক্ত ওজন ছিল, এখন সেটা বেড়ে ১৪-১৫ শতাংশে পৌঁছে গেছে। অর্থাৎ এ সময়ে দৈহিক স্থূলকায় শিশুদের সংখ্যা তিনগুণ বেড়ে গেছে।
সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিএসএমএমইউ ২০১৪ সালের এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী বলেছে, তখন ৬-১৫ বছর বয়সী স্কুলগামী শিশু-কিশোরদের মধ্যে দৈহিক স্থূলতা ছিল ৩ দশমিক ৫ শতাংশের ও অতিরিক্ত ওজন ছিল ৯ দশমিক ৫ শতাংশের। গ্রামে এই হার মাত্র ১ দশমিক ২ শতাংশ ও শহরে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। ছেলেশিশুরা বেশি স্থূলতায় ভুগছে অর্থাৎ ১১ দশমিক ৭ শতাংশ। মেয়েশিশুদের মধ্যে এ হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
এ ব্যাপারে বিএসএমএমইউর শিশু বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সুরাইয়া বেগম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাধারণত দেখা যায় মোট জনসংখ্যার ৭ শতাংশ শিশু-কিশোরের অতিরিক্ত ওজন। কিন্তু মা অথবা বাবার যদি ওজন বেশি থাকে, সে ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ শিশু-কিশোরের ওজন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর যদি দুজনেরই ওজন বেশি থাকে, তাহলে ৭০ শতাংশ শিশু-কিশোরের ওজন বেশি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।’
‘কেন দৈহিক স্থূলতা ও অতিরিক্ত ওজন’ এমন প্রশ্নের উত্তরে বিএসএমএমইউর এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষ যে পরিমাণ ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করে, সারা দিনে যে পরিমাণ ক্যালরি খরচ করে, তাতে দেখা যায় দিন শেষে বেশ পরিমাণ ক্যালরি অব্যবহৃত হিসেবে থেকে যায়। বাংলাদেশের মানুষের যে সামগ্রিক জীবনযাপন পদ্ধতি, তাতে তার বয়সের সাপেক্ষে যে পরিমাণ শারীরিক পরিশ্রম করার কথা, তার চেয়ে কম করেন। এর মধ্যে যার যেটুকু খাওয়া দরকার, সে সেটুকু খায়, আবার কেউ কেউ বেশি খায়। তিনি আরও বলেন, ‘এখন যেকোনো বিল দিতে মোবাইল বা ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করছি। সামাজিক কাঠামোগুলো আস্তে আস্তে কমছে। প্রতিদিন স্কুল-কলেজে আবশ্যিক হওয়ার কথা ছিল খেলার মাঠ। ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করবে। কিন্তু খেলার মাঠ কমছে। তাই আমরা এখন বলছি, খেলার মাঠ থাকুক বা না থাকুক, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপরের ক্লাসে যেতে নির্দিষ্ট পরিমাণ শারীরিক শ্রম বাধ্যতামূলক করতে হবে।’বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী একটা নির্দিষ্ট ওজন থাকা দরকার। গড়ে কারও যদি উচ্চতা ১৩৪ সেন্টিমিটার হয় তাহলে তার দৈহিক ওজন ৭০ কেজির কম হবে। এটা গড় হিসাব। যদি নারী হয় তাহলে তার ওজন আরও ৫ কেজি কম হবে। এটা থেকে যত বেশি ওজন হবে, তত বেশি উদ্যোগ নিতে হবে ওজন কমানোর।
বিশেষ করে, নাগরিক জীবনের শিশু-কিশোরদের মধ্যে এই চিত্র বাড়ছে। এসব শহরে শিশুদের বিনোদনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। খেলার মাঠ নেই। যে কারণে, দিন দিন তারা আসক্ত হচ্ছে মোবাইল বা কম্পিউটারে। এ থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে তার জন্য বিশেষভাবে সমাজের বিভিন্ন সচেতন কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসা দরকার। মনে রাখতে হবে ওরাই আগামীর ভবিষ্যৎ।
চিকিৎসক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানী রফিকুল ইসলাম ২০১৮ সালের ৫ মার্চ মারা যান। তার জন্ম কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ১৯৩৬ সালে। তিনি ডায়রিয়া নিরাময়ের জন্য খাবার স্যালাইন (ওরস্যালাইন) আবিষ্কারের জন্য পরিচিত। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানসেট তার আবিষ্কৃত খাবার স্যালাইনকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বলে উল্লেখ করেছিল। ১৯৬৫ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ব্রিটেনে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ওষুধ ও স্বাস্থ্যবিধি (ট্রপিক্যাল মেডিসিন ও হাইজিন) বিষয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করেন। এমবিবিএস পাস করার পর তিনি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশে যোগদান করেন এবং ২০০০ সালে এই প্রতিষ্ঠান থেকে অবসরে যান। এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকাকালীন তিনি বিভিন্ন ওষুধ নিয়ে গবেষণা করেন। তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হলো খাবার স্যালাইন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালীন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শরণার্থী শিবিরগুলোতে কলেরা ছড়িয়ে পড়লে একমাত্র চিকিৎসা হিসেবে শিরায় স্যালাইন (ইনট্রাভেনাস) দেওয়া হতো। কিন্তু ইনট্রাভেনাসের স্বল্পতা ছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ডায়রিয়ার চিকিৎসায় স্যালাইনের ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। ফলে এটি ‘ঢাকা স্যালাইন’ নামেও পরিচিতি লাভ করে। ১৯৮০ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ওরস্যালাইনকে স্বীকৃতি দেয়। এ ছাড়া বাংলাদেশি বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক এই খাবার স্যালাইনকে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ আর নির্বাচনী তাপের মধ্যেই আজ জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এটি। অনেক যোগ-বিয়োগ কষে বাজেট প্রণয়নের শেষ সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী চমক হিসেবে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করতে সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটেছেন। ভর্তুকি নাম দিয়ে বড় অঙ্কের ‘কর ছাড়’ দিয়েছেন। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে রাজস্ব জাল বিছিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে আটকে ফেললেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো প্রস্তাবিত বাজেট সারসংক্ষেপ, ভর্তুকির নামে ‘কর ছাড়’কে বৈশি^ক মন্দা মোকাবিলার ঢাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের পরোক্ষ প্রভাবে বাজারে পণ্যের দাম কমার গতিরোধ করবে বলেও সরকারপ্রধানকে জানিয়েছেন।
তবে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ছোটদের কর পরিশোধে চেপে ধরলেও কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের ঠিকই খুশি করলেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে এমন আশা করা কঠিন।
এনবিআরের সাবেক সদস্য কর-বিশ্লেষক ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ সুবিধা কমানোর চাপ আছে। এ শর্ত না মানলে ঋণের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করা হতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় বড় মাপের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চাপ আছে। বিভিন্নমুখী চাপে সরকার সব পক্ষকে খুশি করতেই আগামীতে কৌশলে কর ছাড় রাখছে ভর্তুকির নাম দিয়ে। অন্যদিকে সাধারণ আয়ের মানুষের ওপর কিন্তু ন্যূনতম কর ধার্য করার কথা শুনছি। অনেক মানুষকে রাজস্বের আওতায় আনার কথাও শুনেছি। এভাবে ছোটদের ওপর ঠিকই কর পরিশোধে চাপ বাড়াল।’
একই মত জানিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বড় মাপের ব্যবসায়ীদের অনেকে সরাসরি রাজনীতি করেন। অনেকে রাজনীতি না করলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেন। এরা সমাজের প্রভাবশালী। বাজেট প্রণয়নকালেই এরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে নিজেদের পক্ষে সুবিধামতো অনেক কিছু আদায় করে নেন। এবারও তাই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে আইএমএফের জেরার মুখে বলার সুযোগ থাকছে যে কর ছাড় ও ভর্তুকি দুই হিসাব এক করেছি।’
সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকে আশায় আছেন এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী হয়তো জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সূত্র কষবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো রক্ষাকবচ রাখলেন না। কৌশলী অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে দেওয়া কথা রেখেছেন। সাধারণ মানুষকে রাজস্ব জালে আটকে ফেলার ছক করেছেন। মূল বাজেটের আকার বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের আয়ের হিসাবও বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এখানে কর খাত থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে চলতিবারের তুলনায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করলেন। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে করবহির্ভূত খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। শেষ সময়ের হিসাবকষে শত সংকটের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করেছেন।
আগামী বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী কর ছাড়সহ ২ লাখ ৮৯ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করবেন। জাতীয় বাজেটে নিয়মিত ভর্তুকি হিসাবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার কথা আছে। বাকিটা প্রত্যক্ষ কর ছাড় দিয়ে ভর্তুকি খাতে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেতনসহ অন্য খাতে ৭৭ হাজার ২১৮ কোটি বা মোট কর ছাড়ের ক্ষুদ্রঋণ খাতে ১২ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি, প্রবাসী আয় খাতে ৯ শতাংশ বা ১১ হাজার ২৮৭ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩৮০ কোটি, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক শিল্প খাতে ৪ শতাংশ বা ৪ হাজার ৬১২ কোটি, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ৩ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতে ২ শতাংশ বা ৩ হাজার ১২০ কোটি, আইটি এবং সফটওয়্যার খাতে ১ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৭৭ কোটি এবং পুঁজিবাজার খাতে ১ শতাংশ বা ৯৬৬ কোটি টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইস মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ যেন পুরনো বোতলে নতুন পানীয়। বড়দেরই বিভিন্ন কৌশলে সুবিধা দেওয়া হলো।’
অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের কৌশল হিসেবে বড় সুবিধা দিলেও ইটিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলে কঠোরতা এনেছেন। ইটিআইএন না নিলে ৪০ ধরনের সেবা এবং রিটার্ন দাখিলের সিøপ না নিলে ৩৮ ধরনের সেবা দেওয়া হবে না। এতদিন ইটিআইএন নিয়েও অনেকে করযোগ্য আয় না থাকলে শুধু রিটার্ন দাখিল করেছে, একটি টাকার কর দিতে হয়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ১ জুলাই থেকে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।
সাধারণ আয়ের অনেক করদাতা বলেছেন, খাবারের খরচ অনেক বেড়েছে। বাসা ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা সবকিছুই এখন বেশি। এর মধ্যে সাধারণ আয়ের ওপর কর পরিশোধে চাপ দেওয়া হলে ভোগান্তি বাড়বে। সাধারণ মানুষকে কর পরিশোধে বাধ্য করলেও সম্পদশালীদের রাজস্ব ফাঁকি কমাতে, বকেয়া আদায়ে এবং অর্থ পাচার রোধে জোরালো কিছু রাখা হয়নি। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতেও পুরনো পথেই হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী অর্থবছর থেকে রিটার্ন জমা দিতে দেরি হলে বেশি হারে জরিমানা দিতে হবে। বাজেটে আইন করে জরিমানার পরিমাণ প্রদেয় করের পরিমাণ দ্বিগুণ ৪ শতাংশ নির্ধারণে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বড়রা সুবিধা দিয়ে রাজস্ব আদায়ে চাপ বাড়ানোয় জীবনযাত্রার অনেক খাতেই খরচ বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কমাতেও বাজেটে রাখা হয়নি কিছু। আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কবে কমবে তা নিয়ে রয়েছে অশ্চিয়তা। তাই গত মাস ছয়েক থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চাল, ডাল, আট, ময়দা, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবারের দাম আপাতত কমছে না। চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও কমবে না। গত (নভেম্বর ২০২২-এপ্রিল ২০২৩) ছয় মাসের সাধারণ মূল্যস্ফীতির গড় হার ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বিশেষ কোনো চাপ নেই, অর্থনৈতিক উন্নয়ন গতিশীল রাখতে এবারের বাজেটে থাকছে ধারাবাহিকতা।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেলে ঘোষিত হতে যাওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে 'গরিববান্ধব' উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আরও বলেন, সবাইকে নিয়ে সবার জন্য বাজেট ঠিক করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তার আকার বড় হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে জাতীয় সংসদ ভবনে যাত্রার প্রাক্কালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাজেট সম্পর্কে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বিকেলে জাতীয় সংসদে সাত লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করবেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অর্জনের লক্ষ্য স্থির করেছে সরকার। সেখানে মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে মোট বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে, এমন আশা করছেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেটে ৫ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেট ঘাটতি হতে পারে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। রবিবার (৪ জুন) থেকে সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হবে।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
দেশের ৬০টি জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে দিনের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া দেশজুড়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ আরও দুই দিন থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, ঢাকা বিভাগের ১৩টি, খুলনার ১০টি, রাজশাহীর আটটি, বরিশালের ছয়, রংপুরের আটটি, সিলেটের চার ও ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলাসহ চট্টগ্রাম, সীতাকুণ্ড, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
আগামী দুই দিনে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে এবং বিদ্যমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।