
চিকিৎসক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানী রফিকুল ইসলাম ২০১৮ সালের ৫ মার্চ মারা যান। তার জন্ম কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ১৯৩৬ সালে। তিনি ডায়রিয়া নিরাময়ের জন্য খাবার স্যালাইন (ওরস্যালাইন) আবিষ্কারের জন্য পরিচিত। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানসেট তার আবিষ্কৃত খাবার স্যালাইনকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বলে উল্লেখ করেছিল। ১৯৬৫ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ব্রিটেনে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ওষুধ ও স্বাস্থ্যবিধি (ট্রপিক্যাল মেডিসিন ও হাইজিন) বিষয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করেন। এমবিবিএস পাস করার পর তিনি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশে যোগদান করেন এবং ২০০০ সালে এই প্রতিষ্ঠান থেকে অবসরে যান। এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকাকালীন তিনি বিভিন্ন ওষুধ নিয়ে গবেষণা করেন। তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হলো খাবার স্যালাইন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালীন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শরণার্থী শিবিরগুলোতে কলেরা ছড়িয়ে পড়লে একমাত্র চিকিৎসা হিসেবে শিরায় স্যালাইন (ইনট্রাভেনাস) দেওয়া হতো। কিন্তু ইনট্রাভেনাসের স্বল্পতা ছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ডায়রিয়ার চিকিৎসায় স্যালাইনের ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। ফলে এটি ‘ঢাকা স্যালাইন’ নামেও পরিচিতি লাভ করে। ১৯৮০ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ওরস্যালাইনকে স্বীকৃতি দেয়। এ ছাড়া বাংলাদেশি বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক এই খাবার স্যালাইনকে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখে।
স্বনামধন্য, প্রাজ্ঞ, বর্ষীয়ান অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। উন্নয়ন চিন্তাবিদ, পরিবেশকর্মী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবিধানিক ইনস্টিটিউট- ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর সভাপতি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন, মুজিবনগর সরকারের অধীনে পরিকল্পনা সেলে কর্মরত ছিলেন। একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদকে ভূষিত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য এই বরেণ্য অর্থনীতিবিদ মুখোমুখি হয়েছিলেন দেশ রূপান্তরের। বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং বিশ্বমন্দা প্রসঙ্গে খোলামেলা কথা বললেন দীর্ঘক্ষণ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সহকারী সম্পাদক তাপস রায়হান
দেশ রূপান্তর : বর্তমান অর্থনৈতিক চিত্র কেমন?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : আমি তো খারাপ কিছু দেখি না। মনে রাখতে হবে, পৃথিবী এখন দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে টালমাটাল অবস্থা। এই পরিস্থিতির মধ্যে, আমাদের দেশ অনেক ভালো করছে। তবে একটা চ্যালেঞ্জ আছে। পৃথিবীর সব দেশেই, কিছু না কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কিছু চ্যালেঞ্জ আছে, যেটি এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তৈরি হয়। ‘চ্যালেঞ্জ নেই’, পৃথিবীর এমন কোনো দেশ পাওয়া যাবে না। সেটি হতে পারে- সামাজিক, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক। এর বাইরেও চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে। একটি সমাজে, কোনো না কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ সবসময়ই থাকে। এটি থাকলেই যে অর্থনীতির খারাপ অবস্থা, তা না। এখন তো বিশ্ব, একটি জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। আমরা যেটিকে- গ্লোবাল ভিলেজ বলি। ফলে অন্য দেশে কিছু হলে, তার প্রভাব আমাদের দেশেও পড়বে। দুটো ধাক্কা, আমাদের সামাল দিতে হচ্ছে। প্রথমত, করোনা। এটা কোত্থেকে, কীভাবে হলো- কেউ জানে না। এটা কিন্তু বিশ্ব মহামারী। আগামীতেও এরকম হতে পারে। বাংলাদেশ কিন্তু চমৎকারভাবে, এই দুরূহ পথ পাড়ি দিয়েছে। এর দুটো দিক আছে। একটা হচ্ছে, স্বাস্থ্যগত আরেকটা অর্থনৈতিক। আমাদের ব্যবস্থাপনা খুবই ভালো ছিল। আমরা যখন করোনার টিকা পেয়েছি, তখনো কিন্তু বিশ্বের ১৩০টি দেশ এই টিকা পায়নি। বিনামূল্যে দেশের মানুষ, এই টিকা পেয়েছে। আমি তো চতুর্থ ডোজ দিলাম। টিকার স্বাস্থ্যগত দিকটা খুবই চমৎকার। হাসপাতালের ব্যবস্থা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করা- এসব ক্ষেত্রে আমরা অনেক ভালো করেছি। আবার অর্থনৈতিকভাবে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তাদেরও একাধিকবার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। আমাদের একটা চরিত্র আছে, অপরকে পছন্দ করি না। কিন্তু কোনো দুর্যোগের মুখোমুখি হলে, আমরা এক হয়ে যাই। যেটা মুক্তিযুদ্ধের সময় দেখেছি, ৮৬ সালের বন্যায় দেখেছি। ৯৮ সালের বন্যাতেও দেখেছি। তখন আমাদের মধ্যে কোনো ধরনের, অনৈক্য কাজ করে না। যে কোনো দুর্যোগের সময় আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াই, এবারও কিন্তু দাঁড়িয়েছি।
দেশ রূপান্তর : এর মানে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজ দায়িত্ব পালন করেছেন?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : না, সবাই না। একদল চুরি করেছে। আরেক দল পাশে দাঁড়িয়েছে। বলা হয়েছিল, অনেক মানুষ মারা যাবে। কই, তাতো হয়নি? এটা কিন্তু সরকারের সাফল্য। বিষয়টি স্বীকার করতে হবে।
দেশ রূপান্তর : এর মানে, বিশ্ব প্রেক্ষাপটে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : হ্যাঁ। তা বলা যেতে পারে। তবে, করোনার আগে অর্থনীতির যে অবস্থা ছিল- এখনো সেই অবস্থায় যেতে পারিনি। কিন্তু অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা ভালো করেছি। অর্থনৈতিক দিকেও ভালো করেছি, স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও ভালো করেছি।
দেশ রূপান্তর : কিন্তু সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তো, জনগণকে সতর্ক করা হচ্ছে?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : সেটা তো দায়িত্ব। এটা করতেই হবে। সেটা আমরাও করছি।
দেশ রূপান্তর : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কি আমাদের, কোনো ধরনের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : অবশ্যই। বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
দেশ রূপান্তর : তাহলে কি বলতে পারি, আমদানি নির্ভরতার কারণে এই চ্যালেঞ্জ বেশি?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : না। আমরা তো কম নির্ভরশীল। পৃথিবীর অনেক দেশ, এই আমদানির ওপর নির্ভর করে।
দেশ রূপান্তর : আপনি বলতে চাইছেন, আমরা কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : বিশ্বের অনেক দেশ থেকে, ভালো অবস্থানে আছি। আমাদের মৌলিক দিকগুলো ভালো। কিন্তু করোনার আগে অর্থনীতির যে চিত্র ছিল, সেই জায়গায় এখনো যেতে পারিনি। ২০১৮-১৯ সালে প্রবৃদ্ধির হার ছিল, ৮.১৫ শতাংশ। বর্তমানে প্রাক্কলন করা হয়েছে- ৬.৫-৭। এখনো আমরা আগের জায়গায় যেতে পারিনি। কিন্তু অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে বলা যেতে পারে- আমরা ভালো আছি।
দেশ রূপান্তর : এই যে, প্রবৃদ্ধি হ্রাস এর মূল কারণ কী?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : বিশ্ব প্রেক্ষাপট একটা মূল কারণ। তারপর আমাদের দেশের মধ্যে...
দেশ রূপান্তর : আপনি কি বলতে চাইছেন, সম্পদ বণ্টন ব্যবস্থায় কোনো ত্রুটি রয়েছে?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : অবশ্যই। এটা দেশের মধ্যে যেমন আছে, তেমনি আন্তর্জাতিক বাজারেও রয়েছে। তবে এখন কিন্তু আমরা এগিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি।
দেশ রূপান্তর : দ্রব্যমূল্য এবং বিদ্যুতের দাম তো, ক্রমশ সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : প্রধানমন্ত্রী তো বলেছেন- আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্য হ্রাস পেলে, আমাদের এখানেও সমন্বয় করা হবে। তবে সেটা এখনো দৃশ্যমান না। আমি আশা করছি, প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন, সেটা করা হবে। আর জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ববাজারে কমতে শুরু করেছে। এর সুফল নিশ্চয়ই আমরা পাব।
দেশ রূপান্তর : কোথাও কি সমস্যা হচ্ছে? সম্পদের সুষম বণ্টন হলে তো, এমন হওয়ার কথা না?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : আমি ঐখানেই যাচ্ছিলাম। এটা আগেও ছিল, এখনো আছে। শুধু আমাদের দেশে না। সমস্ত বিশে^ই বণ্টন ব্যবস্থায়, সমস্যা আছে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে মাত্র ১ শতাংশের হাতে, পৃথিবীর অর্ধেক সম্পদ। বাকি ৯৯%-এর হাতে আছে, বাকি অর্ধেক। এরমধ্যেও সমস্যা আছে। অনেক বৈষম্য। দেখা যায়, কারও অনেক বেশি। কারও একেবারেই কম। যে কারণে আমেরিকাতেও দেখা যায়, সেখানে ‘লঙ্গরখানা’ আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১ শতাংশের হাতে ৪০ শতাংশ সম্পদ। তো, আমাদের এখানে সম্পদের হিসাবটা খুব একটা পরিষ্কার না। বৈষম্য পরিমাপক সূচক ২০১০ সালে ছিল ০.৪৫। ২০১৮ সালে এসে এটা ০.৪৮ হয়ে যায়। বর্তমানে মনে হয়, পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। হ্যাঁ, এটা ঠিক- বৈষম্য খারাপের দিকে যাচ্ছে। ওপরের যারা তারা বেশি ধনী হচ্ছে। নিচের দিকে যারা, তারা আরও দরিদ্র হচ্ছে। বৈষম্যটা প্রকট। এটা অনেকটা, সরকারিভাবেই স্বীকৃত। তবে পরিস্থিতি কিন্তু আরও খারাপ হতে পারত। কতগুলো পদক্ষেপ, আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কিছু পথ আছে। সমস্যা হচ্ছে, আমাদের দেশে আইনের বাস্তবায়ন কম। অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয় না।
দেশ রূপান্তর : এই দায় কার?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : যারা বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছেন, এই দায় তাদের। একদম, ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত। এখানে অনেক কর্মকর্তা থাকতে পারেন। মন্ত্রী-সচিবও থাকতে পারেন।
দেশ রূপান্তর : এটা কি তাদের অদক্ষতা না অবহেলা?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : দুটোই। অবহেলাও আছে, অদক্ষতাও আছে। এছাড়া আত্মতুষ্টিও আছে। কিছুটা আবার তদারকির সমস্যা। আরেকটা বিষয় হচ্ছে- যারা দুর্নীতি করেন, ঠিকমতো বাস্তবায়ন করেন না- তাদের বিচার যেমন হওয়ার কথা ছিল, তেমন হচ্ছে না। এতে অনেকেই, প্রশ্রয় পাচ্ছে। এই সমস্ত কারণেই, লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না। এই জায়গায় বড় ধরনের সমস্যা আছে। না হলে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতাম। কিন্তু এগিয়ে যাচ্ছি। এখন যদি দুর্নীতি কমিয়ে আনা না যায়, ব্যাংকের যে টাকা পাচার হচ্ছে, এটা যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়- তাহলে সমস্যা হতে পারে।
দেশ রূপান্তর : মানুষের চাহিদা বাড়ছে, জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। এর সঙ্গে মূল্যস্ফীতির কোনো যোগসূত্র আছে?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : আসলে এটা চাহিদা এবং সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল। এর বাইরে, কিছু ব্যবসায়ী আছেন, যারা কৃত্রিমভাবে সংকট তৈরি করেন। আমাদের আমদানি করতে হয়, অনেক পণ্য। এখন জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়াতে, আমদানি ব্যয়ও বেড়ে গেছে। কারণ অনেক দেশে উৎপাদনে সমস্যা হচ্ছে, সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে। পরিবহনে সমস্যা হচ্ছে। এখন ডলারের দাম বেড়ে যাওয়াতে আমাদের টাকার মান কমে গেছে। এই কারণেও কিন্তু মূল্যস্ফীতি হচ্ছে।
দেশ রূপান্তর : তাহলে কি বলতে পারি- আগামীতে কোনো ধরনের দুর্ভিক্ষ বা অর্থনৈতিক বিপর্যয় এড়াতে, আমরা সক্ষম হব?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : আমার ধারণা, সরকার যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে তা ঠিকমতো কার্যকর হলে, কোনো ধরনের বিপর্যয় হবে না। ‘নীতি’তে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আরও তদারকি দরকার।
দেশ রূপান্তর : এর মানে, অর্থনৈতিক মন্দার কোনো সুযোগ নেই?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : এটা হবে না বলেই, আমার বিশ্বাস। ঐ যে বললাম, শর্তসাপেক্ষে। আরও সচেতন হতে হবে। বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান তো বলছে, বিশ্বমন্দা হবে। যদি তাই-ই হয়, তাহলে এর প্রভাব, আমাদের অর্থনীতিতেও পড়বে। তবে ততটা খারাপ হবে না। আরেকটা বিষয়, বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল নিয়ে অনেকেই শঙ্কিত। সেখানে শঙ্কার একটা কারণ আছে। প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, আমাদের সতর্কতার সঙ্গে অগ্রসর হতে হবে। সব যদি সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহৃত হয়, তাহলে আমার মনে হয় না- পরিস্থিতি তেমন একটা খারাপ হবে।
দেশ রূপান্তর : তাহলে কি বলা যায়, আগামীতে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নতির দিকে যাবে?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : এটা তো নিশ্চিত করে বলা যাবে না। মাঝখানে যদি কোনো বিশ^ মহামারী দেখা দেয়, তার প্রভাব তো আমাদের এখানেও পড়বে। তবে আমাদের কিন্তু একটা লক্ষ্য আছে। ২০৩০ সালে আমরা, টেকসই উন্নয়ন করব। ২০৩১ সালে আমরা, উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ হব। আর ২০৪১ সালে আমরা উন্নত দেশ হব। এই লক্ষ্যগুলো সামনে রেখেই, সব কাজ করা হচ্ছিল। আমাদের প্রস্তুতিও তেমনই ছিল। কিন্তু করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আমাদের আটকে দিল। আবার তা পুনরুদ্ধার করে সেই পথে যাওয়া তো, সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এই লক্ষ্যগুলো এখনো আছে। তবে পৌঁছা যাবে কি না, সেটা নির্ভর করে আগামীতে কীভাবে নীতিগুলো বাস্তবায়িত হবে?
দেশ রূপান্তর : আমরা একটু, অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলি। মানুষের চাহিদা যখন বাড়ছে এবং জোগান যখন কমছে- তার সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতির কোনো সম্পর্ক আছে? ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : আছে তো! চাহিদা বাড়লে, দাম বাড়বেই।
দেশ রূপান্তর : আপনি ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এ বিষয়ে একটু বিস্তারিত বলবেন?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : আমি লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সে পড়াশোনা করেছি। সেখান থেকেই পিএইচডি করেছি। দিল্লিতে স্কুল অব ইকোনমিক্স আছে। লাহোরে আছে। কিন্তু বাংলাদেশে ছিল না। ২০১০ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। আমি এখনো সভাপতি। এছাড়া বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমিতির সভাপতি ছিলাম ৩ বার। সেখান থেকেই আমরা, এই উদ্যোগ নিয়েছিলাম। বর্তমানে এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ। এই স্কুলের ডিগ্রি দেওয়া হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। এটা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীভূত প্রতিষ্ঠান।
দেশ রূপান্তর : আপনি মুক্তিযুদ্ধকালীন, মুজিবনগর সরকারের অধীনে পরিকল্পনা সেলে কর্মরত ছিলেন। সেইসময়, আপনাদের কাজ কোন ধরনের ছিল?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : সেখানে বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন ছিলেন। অনেক ধরনের কাজ করতে হতো। আমি ছিলাম, যুবক বয়সী। কেন জানি না, সৌভাগ্যক্রমে দেশের প্রথম ‘পাটনীতি’ আমিই তৈরি করেছিলাম। এই ভেবে যে, যদি স্বাধীন হয়ে যাই- তাহলে তো এটি কাজে আসবে। ওটাই কিন্তু বাংলাদেশের প্রথম ‘পাটনীতি’।
দেশ রূপান্তর : শেষে কিছু বলবেন?
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ : হা হা হা। এই ৮২ বছর বয়সে, কী আর বলব? সুস্থ থাকুক, বাংলাদেশের মানুষ। ভালো থাকুক, দেশ রূপান্তরের সবাই।
সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের আধুনিক জীবনে এক নতুন বাস্তবতা। নগর-বন্দর, গ্রামে-গঞ্জে চায়ের দোকানে মানুষ তথ্যের জন্য এখন আর পত্রিকার পাতা ঘাঁটাঘাঁটি করে না। এর বদলে এসেছে স্মার্টফোন ও আইফোননির্ভরতা। গণমাধ্যমে তথ্যের বিপণনের সাবেকি প্রথা এখন আর নেই। চারপাশে, দেশে-বিদেশে কী ঘটছে, সেগুলো ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, গুগলসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে পেয়ে যাচ্ছে সবাই। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে মানুষ মানবিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক দূরত্বকে পুরোপুরি দূর করে দিচ্ছে। প্রযুক্তির ব্যবহারে যেকোনো ব্যক্তি তথ্য, অভিমত, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি দেওয়া-নেওয়া করতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম একটি সোশ্যাল মিডিয়া হচ্ছে টুইটার। কিন্তু এই টুইটারের মালিকানা কিনে নেওয়ার পর থেকেই ইলন মাস্ক এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিটিকে একেবারে মধ্যযুগীয় জমিদারদের মতো পরিচালনা করছেন এবং সম্পূর্ণরূপে এটি এখন তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছা মতো চলছে। স্পষ্টতই এই প্রযুক্তি-ধনকুবের মন থেকে বিশ্বাস করেন, টুইটারে যারা কাজ করেন, তাদের যে কারও চেয়ে তিনি সবকিছুই ভালো জানেন এবং তিনি তার এই নতুন কোম্পানিটির কর্মীদের সঙ্গে আধুনিক যুগের দিনমজুরদের মতো আচরণ করে চলেছেন। টুইটার নিয়ে ঘটনা এখন যে পর্যায়ে এসেছে, তা সম্ভবত অনিবার্য ছিল। এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি ব্যক্তিপূজার সংস্কৃতির লালন করছে। এই সংস্কৃতির শুরুটা করেছিলেন স্টিভ জবস। তিনি অতি সতর্কতা ও যতেœর সঙ্গে বিশ্ববাসীর কাছে নিজের উদার ও কৌতূহলী উদ্ভাবকের ভাবমূর্তি ধরে রেখেছিলেন; কিন্তু বাস্তবে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে কঠোর-নিয়ন্ত্রিত একটি করপোরেশনের প্রধান ছিলেন। জবস সারা জীবন রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও তার আইকনিক অবস্থান অনুসরণ করে উঠে আসা উত্তরাধিকারীরা তার মূল্যবোধ ও আদর্শকে মোটেও অনুসরণ করেননি।
তারা তাদের নিজেদের প্রতিপত্তি ও ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নিজেদের উদ্যমকে রাজনীতির হাতে সঁপে দিয়েছেন এবং নিজেদের কায়েমি স্বার্থ উদ্ধারের এজেন্ডাগুলোকে উন্মোচিত করে দিয়েছেন। টুইটারের মালিকানা কেনার পেছনে ইলন মাস্কের যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে, তা তিনি গত মে মাসে তার টুইটার হ্যান্ডেলে করা একটি পোস্টেই খোলাসা করেছিলেন। সেখানে তিনি ফ্রান্সের সূর্যরাজ খ্যাত রাজা চতুর্দশ লুইয়ের একটি ছবি পোস্ট করেন। এর মাধ্যমে ইলন মাস্ক নিজেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নতুন আলোকিত রাজা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন বলে মনে করা হয়। ওই সময় তিনি টুইটারকে একেবারে অবাধ করবেন বলে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু গত দুই মাস ধরে মাস্কের কার্যকলাপ ও প্রতিক্রিয়া দেখে তাকে একজন মহান সূর্যরাজের চেয়ে কম উদার এবং একটি প্রায় ভেঙে পড়া রাজ্যের একজন আধুনিক স্বৈরশাসকের চেয়ে বেশি কিছু মনে হচ্ছে। একজন উচ্চাভিলাষী ক্ষমতা দখলকারীর মতো তিনি গণতন্ত্র এবং জনগণের ইচ্ছার কথা বলে টুইটার দখল করা শুরু করেছিলেন, এবং এর মাধ্যমে তিনি গণতন্ত্র এবং জনগণের ইচ্ছা উভয়কেই উপহাস করেছেন। তিনি নিজে যে টুইটারকে ডিজিটাল টাউন স্কয়ার বলে অভিহিত করে থাকেন, সেটিকেই তিনি এমনভাবে ব্যক্তিগত পরিসর বানিয়েছেন যেখানে তার কথাই শেষ কথা। আর দশজন স্বৈরশাসকের মতো মাস্কও ভিন্নমত ও সমালোচনার প্রতি সহনশীলতা দেখাননি। কোম্পানির মধ্যে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস দেখানোর জন্য তিনি কর্মীদের চাকরি খেয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। একজন কট্টর কর্তৃত্ববাদীর মতো তিনি গণমাধ্যমে ঘৃণা করেন এবং সংবাদমাধ্যমের ওপর খড়গ তুলতে দ্বিধা করেন না।
টুইটারকে কিনে নিয়েই মাস্ক তার নতুন সাম্রাজ্যে ঢুকলেন মূর্তিমান আতঙ্কের মতো। তিনি শুরুতেই তার ভুল ধরিয়ে দেওয়া এবং তার বিষয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনামূলক মন্তব্য করা কর্মীদের একের পর এক চাকরি খাওয়া শুরু করেন। হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে টুইটার নিষিদ্ধ করেছিল; মাস্ক এসে সেই অ্যাকাউন্ট চালু করেছেন। টুইটারকে লাভজনক করার জন্য তিনি টুইটারের নীল টিক চিহ্নধারীদের মাসে ৮ ডলার দিতে হবে বলে ঘোষণা দেন। তাতে টুইটারে স্বাভাবিকভাবেই বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিরা সাধারণ মানুষ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের মানসিকতা ও অনন্য আইডিয়ার অনন্য মানুষ বলে যে কথা প্রচলিত আছে, ইলন মাস্কের দাম্ভিক ও অসহনশীল আচরণ সেই কথার সত্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। টুইটার নিয়ে মাস্ক যা করছেন, তাতে বরং সাধারণের এই ধারণা জন্মাবে যে আজকের দিনের ধনকুবেররা আগের দিনের সামন্তদের মতো। তবে মাস্কের মতো ধনকুবের এবং অতীতের সামন্ত জমিদারদের মধ্যে অবশ্যই কিছু পার্থক্য আছে। একুশ শতকের ধনকুবেরদের নিদেনপক্ষে তাত্ত্বিকভাবে হলেও অধিকতর গণতান্ত্রিক ও ভারসাম্যমূলক জবাবদিহির নীতি থাকে। তাদের ক্ষমতাচর্চার ক্ষেত্র কোনো ছোট অঞ্চল বা দেশের পরিসরে সীমাবদ্ধ থাকে না। তাদের বৈশ্বিক করপোরেশনগুলো বিশ্বের সর্বত্র কার্যক্রম বিস্তৃত রাখে। তাদের প্রভাব আমাদের বিশ্ববাসীর সামগ্রিক জীবন, এমনকি এই ধরিত্রীর ভবিষ্যতের ওপরও প্রভাব ফেলে। ইলন মাস্কের মতো ধনীদের শুধু যে তাদের নিজেদের কর্মচারীদের ওপর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, তা নয়, বরং আমাদের সবার জীবনযাপনের ওপরও বিস্তর পরোক্ষ প্রভাব আছে। কার বক্তব্য সামনে আসবে কিংবা কাকে নিষিদ্ধ করতে হবে, সেসব বিষয় তারা ঠিক করার ক্ষমতা রাখেন। মানব সম্প্রদায়ের মনোযোগ কোথায় রাখতে হবে, সে বিষয়ে প্রায়ই তারা অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রভাব খাটিয়ে থাকেন।
মাস্ক তার অজনপ্রিয়তাকে এতটাই অস্বীকার করেছিলেন যে, তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, লোকেরা যদি সিইও পদ থেকে তার পদত্যাগের পক্ষে ভোট দেয় তাহলে তিনি সরে দাঁড়াবেন। লোকেরা তা-ই করল। ৫৭.৫ শতাংশ ভোট পদত্যাগের পক্ষে পড়ল। কিন্তু তিনি পদত্যাগ করলেন না।
ফলাফলটি স্বীকার করতে মাস্কের ৪০ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে এবং ফল মেনে নেওয়ার সময় তিনি বলেছেন, তিনি শুধুমাত্র তখনই পদত্যাগ করবেন যখন তিনি অন্য কোনো যোগ্য কাউকে পাবেন। এটি স্বৈরশাসকদের অতি পুরনো কৌশল। তারা এমন ভান করেন যে, তারা ছাড়া আর গদিতে বসার আর কোনো যোগ্য লোক নেই। এটি তাদের অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্ষমতায় থাকার অজুহাত তৈরি করে দেয়। কিন্তু আল-বশিরের সঙ্গে মাস্কের যে বিষয়ে মিল নেই, তা হলো জাহাজ যখন ডুবছে তখনো মাস্ককে তার অনুগতরা ভেসে থাকার সাহস দিয়ে যাচ্ছেন। মাস্ক তার সম্পদের জোরে এই শক্তি পেয়েছেন। কিন্তু এই শক্তি বাজার-শক্তির ওপর নির্ভর করে যাতে কারও পুরোপুরি হাত নেই। বড় বিনিয়োগকারীরা যারা তার বিভিন্ন টেক অ্যাডভেঞ্চারকে সক্ষম করেছেন, তারা অনুগতদের তুলনায় অনেক বেশি চঞ্চল। তারা আর্থিক ক্ষতির কারণ হতে পারে এমন বিপদের সামান্যতম চিহ্ন দেখলেই তাকে ফেলে ঝাঁপ দেবেন। আল-বশির এবং অন্যান্য পতিত স্বৈরশাসকদের মতো ইলন মাস্ক একই ভুল করছেন বলে মনে হচ্ছে। তিনি জনগণের ক্ষমতাকে ছোট করে দেখছেন। মাস্কের ডিজিটাল স্বৈরাচারের অবসান ঘটবেই দুদিন আগে হোক বা পরে হোক। কিন্তু তার ত্রুটিপূর্ণ শাসন তার অন্যান্য প্রযুক্তি-ভাইদের জন্য একটি সতর্কতা হিসেবে দাঁড়ানো উচিত যারা প্রযুক্তির স্বৈরশাসক হওয়ার অভিলাষ লালন করেন। তাদের মনে রাখতে হবে, ইন্টারনেট-বিশেষত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মানুষের স্বাধীনতার প্রতি স্বাভাবিক অনুরাগের ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এটি দখল ও নিয়ন্ত্রণ করার যে কোনো চেষ্টা ব্যর্থ হবেই।
লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক
প্লেটো ছিলেন সক্রেটিসের যোগ্য শিষ্য। শিক্ষা নিয়ে গভীর উপলব্ধির কথাগুলো তিনি বিভিন্নভাবে উল্লেখ করেছেন। সক্রেটিসের বিভিন্ন চিন্তার সহজ-সরল ব্যাখ্যা এসেছে প্লেটোর হাত ধরে। তিনি নীতিশিক্ষার মধ্য দিয়ে ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের উন্নতি করতে চেয়েছিলেন।
প্লেটো এমন একটি শিক্ষা চেয়েছিলেন, যা একজন শিক্ষার্থীর নৈতিক মানকে উন্নত করবে এবং একই সঙ্গে একটি সমাজের উপযোগী হিসেবে তাকে গড়ে তুলবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
মানুষের বেঁচে থাকার মধ্যে একটা উদ্দেশ্য থাকে। সেই উদ্দেশ্যকে পরিপূর্ণ করে তোলে অন্তর্গত শিক্ষা। পারিবারিক শিক্ষা, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং সামাজিক শিক্ষা এই ৩ শিক্ষা একত্র হলে মানুষের হৃদয়ে তৈরি হয় ‘অন্তর্গত’ শিক্ষা।
এই শিক্ষার কারণেই একই মানের সার্টিফিকেটে উন্নীত মানুষজন হয় একেক রকম। মানুষের আচরণেই তার প্রকাশ ঘটে। আর চিন্তায় প্রতিফলিত হয় সেই সমষ্টিগত চিন্তার সর্বোচ্চ ব্যাপ্তি।
আবার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াও মানুষ আলোকিত হয়ে ওঠেন। কিন্তু পারিবারিক এবং সামাজিক শিক্ষাই একজন মানুষের বড় পরিচয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর যে ব্যতিক্রম হয় না তা না। তবে সেটা ধর্তব্যের মধ্যে না আনাই ভালো।
আমাদের বেঁচে থাকার মধ্যে একটা উদ্দেশ্য আছে। একজন মানুষের পক্ষে সেই উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব নাও হতে পারে। কিন্তু ব্যক্তিগত চিন্তার বাইরে সমষ্টিগত চিন্তায় নিজেকে সম্পৃক্ত করতে না পারলে সেই জীবনের কোনো মূল্য নেই। অথচ দুর্ভাগ্যের বিষয়, এই মূল্যহীন জীবন নিয়েই আমরা খুশি।
কীভাবে নিজেকে ওপরে ওঠাতে পারি, কীভাবে সেই অবস্থান ধরে রাখতে পারি সেই চিন্তায় পার হয় জীবন। সেখানে ‘আমি’ ছাড়া কেউ নেই। এই আমিত্বই খর্ব করছে জীবনের মাহাত্ম্য। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, ‘আমি’ যে হারিয়ে যাচ্ছি সেই বোধটুকুও নেই। এ এক অদ্ভুত, বোধহীন সময়! এ সময়ে আমিই মুখ্য। হারিয়ে যাচ্ছি ‘আমরা’।
একজন মানুষকে ভালোবাসতে কতটুকু ‘শিক্ষা’ লাগে? যদি লাগেও, সেটা কোন ধরনের শিক্ষা? আলোকিত মানুষ হওয়ার সঙ্গে, অর্থের সম্পর্ক কতটুকু? অথবা একজন অর্থবান মানুষের কাছে জীবনের অর্থই বা কেমন? এই অস্থির সময়ে এসব আমরা বিবেচনা করি না। যেখানে বেঁচে থাকাই মুখ্য, সেখানে বাড়তি চিন্তার সুযোগ কোথায়!
অথচ হওয়ার কথা ছিল এটাই আমাদের আসল চিন্তা। কিন্তু হয়নি। না হওয়ার জন্য এককভাবে কেউ দায়ী নন। এই ব্যর্থতার দায়, মূলত কে নেবে! ব্যক্তি, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সমাজ না রাষ্ট্র? নাকি এর জন্য আমিই দায়ী!
আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে নিজেকে কখনো প্রশ্নের মুখোমুখি করি না। একবারের জন্যও ভাবি না, এই আমি যদি ‘আমরা’ না হতে পারি ব্যক্তিজীবন, সংসার জীবন এবং সামাজিক জীবনের কোনো মূল্য থাকবে না।
এর মানে হচ্ছে, জীবনের কোনো উদ্দেশ্য নেই। জীবনের কোনো লক্ষ্য নেই। সেই উদ্দেশ্যহীন, লক্ষ্যহীন জীবন যখন মুখ্য হয়ে ওঠে, তখন কোনো সমাজ আর এগোতে পারে না।
মায়াময় জীবনের কাছে আমাদের অনেক চাওয়া। সেই ব্যক্তি চাওয়াকে সমষ্টিগতভাবে অধিকাংশ মানুষই ভাবেন না। কেন আমাকে এমন মানসিকতায় উন্নীত করা হলো? কেনইবা আমি শুধু নিজের চিন্তায় নিজেকে ব্যাপৃত রাখছি?
একটি বারের জন্যও এটা ভাবি না। এই না ভাবার দায় কে নেবে? যত দিন এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের কাছে পরিষ্কার না হবে, তত দিন সমাজ ও সমষ্টির উন্নতি সম্ভব না।
শুধু নিজের উন্নতিতে সমাজের কোনো উন্নতি নেই। সমষ্টিগত উন্নয়নই পারে জীবন এবং সমাজকে সুন্দর করে সাজাতে। অন্যের মধ্যে নিজেকে বিলীন করতে না পারলে কখনো কোনো দিনই জীবনের আসল উদ্দেশ্যকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
জীবনকে ভালোবাসতে চাইলে, নিজেকে ভালোবাসতে চাইলে জীবনের একটা মহৎ উদ্দেশ্য থাকা জরুরি। না হলে ব্যর্থ জীবনে নিজের অর্জন হবে শুধুই বিসর্জন।
লেখক : সাংবাদিক
স্থূলতা বা ওবেসিটি হলে, শরীরে জমা হয় অতিরিক্ত পরিমাণে চর্বি। স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক ঝুঁকির কারণে, কমে যেতে পারে আয়ু। এর পাশাপাশি শরীরে দেখা দেয়, নানা ধরনের জটিলতা। বিশেষ করে, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এছাড়াও হতে পারে শ্বাসকষ্ট, ক্যানসার বা অস্টিওআর্থ্রাইটিস। মূলত কায়িক শ্রমের অভাব এবং অতিরিক্ত ক্যালোরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করার ফলেই, এটি হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুদের মধ্যে বেশি পরিমাণে হচ্ছে এটি। তবে আমাদের দেশে, শিশু-কিশোরদের মধ্যে স্থূলতা বেড়েই চলেছে।
গতকাল দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত ‘শিশু-কিশোরদের স্থূলতা বেড়েছে তিনগুণের বেশি’ শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, দেশে মোট প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ১৮-২৪ শতাংশ দৈহিক স্থূলতা ও অতিরিক্ত ওজনে ভুগছেন। তবে সংখ্যার চেয়ে বেশি উদ্বেগজনক হলো, দেশে নতুন করে মানুষের মধ্যে দৈহিক স্থূলতা ও অতিরিক্ত ওজন বাড়ছে। বিশেষ করে গত ২০ বছরে অপ্রাপ্ত বয়স্ক অর্থাৎ শিশু-কিশোরদের মধ্যে দৈহিক স্থূলতা বেড়েছে তিনগুণের বেশি। আগে যেখানে ৪-৫ শতাংশ শিশু-কিশোরের দৈহিক স্থূলতা ও অতিরিক্ত ওজন ছিল, এখন সেটা বেড়ে ১৪-১৫ শতাংশে পৌঁছে গেছে। অর্থাৎ এ সময়ে দৈহিক স্থূলকায় শিশুদের সংখ্যা তিনগুণ বেড়ে গেছে।
সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিএসএমএমইউ ২০১৪ সালের এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী বলেছে, তখন ৬-১৫ বছর বয়সী স্কুলগামী শিশু-কিশোরদের মধ্যে দৈহিক স্থূলতা ছিল ৩ দশমিক ৫ শতাংশের ও অতিরিক্ত ওজন ছিল ৯ দশমিক ৫ শতাংশের। গ্রামে এই হার মাত্র ১ দশমিক ২ শতাংশ ও শহরে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। ছেলেশিশুরা বেশি স্থূলতায় ভুগছে অর্থাৎ ১১ দশমিক ৭ শতাংশ। মেয়েশিশুদের মধ্যে এ হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
এ ব্যাপারে বিএসএমএমইউর শিশু বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সুরাইয়া বেগম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাধারণত দেখা যায় মোট জনসংখ্যার ৭ শতাংশ শিশু-কিশোরের অতিরিক্ত ওজন। কিন্তু মা অথবা বাবার যদি ওজন বেশি থাকে, সে ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ শিশু-কিশোরের ওজন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর যদি দুজনেরই ওজন বেশি থাকে, তাহলে ৭০ শতাংশ শিশু-কিশোরের ওজন বেশি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।’
‘কেন দৈহিক স্থূলতা ও অতিরিক্ত ওজন’ এমন প্রশ্নের উত্তরে বিএসএমএমইউর এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষ যে পরিমাণ ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করে, সারা দিনে যে পরিমাণ ক্যালরি খরচ করে, তাতে দেখা যায় দিন শেষে বেশ পরিমাণ ক্যালরি অব্যবহৃত হিসেবে থেকে যায়। বাংলাদেশের মানুষের যে সামগ্রিক জীবনযাপন পদ্ধতি, তাতে তার বয়সের সাপেক্ষে যে পরিমাণ শারীরিক পরিশ্রম করার কথা, তার চেয়ে কম করেন। এর মধ্যে যার যেটুকু খাওয়া দরকার, সে সেটুকু খায়, আবার কেউ কেউ বেশি খায়। তিনি আরও বলেন, ‘এখন যেকোনো বিল দিতে মোবাইল বা ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করছি। সামাজিক কাঠামোগুলো আস্তে আস্তে কমছে। প্রতিদিন স্কুল-কলেজে আবশ্যিক হওয়ার কথা ছিল খেলার মাঠ। ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করবে। কিন্তু খেলার মাঠ কমছে। তাই আমরা এখন বলছি, খেলার মাঠ থাকুক বা না থাকুক, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপরের ক্লাসে যেতে নির্দিষ্ট পরিমাণ শারীরিক শ্রম বাধ্যতামূলক করতে হবে।’বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী একটা নির্দিষ্ট ওজন থাকা দরকার। গড়ে কারও যদি উচ্চতা ১৩৪ সেন্টিমিটার হয় তাহলে তার দৈহিক ওজন ৭০ কেজির কম হবে। এটা গড় হিসাব। যদি নারী হয় তাহলে তার ওজন আরও ৫ কেজি কম হবে। এটা থেকে যত বেশি ওজন হবে, তত বেশি উদ্যোগ নিতে হবে ওজন কমানোর।
বিশেষ করে, নাগরিক জীবনের শিশু-কিশোরদের মধ্যে এই চিত্র বাড়ছে। এসব শহরে শিশুদের বিনোদনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। খেলার মাঠ নেই। যে কারণে, দিন দিন তারা আসক্ত হচ্ছে মোবাইল বা কম্পিউটারে। এ থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে তার জন্য বিশেষভাবে সমাজের বিভিন্ন সচেতন কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসা দরকার। মনে রাখতে হবে ওরাই আগামীর ভবিষ্যৎ।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিশ্বের প্রায় সব দেশই। অধিকাংশ দেশই তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কার নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির কথা প্রায় সবারই জানা, তারাও ইতিমধ্যে তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এসেছে। তবে ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার। ফলাফল ভোক্তা মূল্যসূচকে (সিপিআই) বা মূল্যস্ফীতিতে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড। মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সিপিআই ইনডেক্সে এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।
গত ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করে সরকার। এ বাজেটের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আগামী অর্থবছরে সরকার কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বাজেট প্রস্তাবে কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি পরাবাস্তব বাজেট। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা আসলে সম্ভব নয়। গত ১১ মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। সে হিসাবে মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো, আগের বছরের মে মাসে যে পণ্য গড়ে ১০০ টাকা কিনতে হয়েছে, এ বছরের মে মাসে তা কিনতে হচ্ছে গড়ে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সায়। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, ধরুন আগের বছরের একই সময়ে ৫০০ টাকার একটি নোটে কোনো ব্যক্তি পাঁচটি পণ্য কিনতে পেরেছিলেন। এ বছরের একই সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এখন একই টাকায় তিনটি পণ্য কিনতে পারছেন। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১ বছরে বেড়েছে ১১.৩২ শতাংশ : ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, অথচ এ বছরের মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ বছরের এপ্রিল মাসেও খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।
খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে এক বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ : বিবিএসের তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বা ৬৪ শতাংশ।
গ্রামের চেয়ে শহরের মূল্যস্ফীতি বেশি : এক বছর আগেও শহরের মূল্যস্ফীতি গ্রামের চেয়ে কম ছিল। কারণ গ্রামের চেয়ে শহরে পণ্য মজুদের আধুনিক ব্যবস্থা আছে। তবে সরকারি উদ্যোগে শহরের মতো গ্রামেও কিছু স্থানে খাদ্যগুদামের ব্যবস্থা তৈরি হওয়ায় এখন শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি কমেছে। মে মাসে শহর এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, একই সময়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বিশ্বে কমেছে মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশে বাড়ছে : গত শনিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট-পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, থাইল্যান্ডে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, গত এপ্রিলে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ আগের তুলনায় দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে ৬৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। সেখান থেকে ৪৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গত অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, সেখান থেকে ৩৪ শতাংশ কমিয়ে ৭ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে ইইউ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়। তবে বাংলাদেশ এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় শুরুর দিকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো গত বছর আগস্টে এক ঘোষণাতেই জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই মাসেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশ দেরিতে হলেও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। বর্তমানে এ সুদহার ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে নীতি সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে আভাস দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দাবি করেছে, বিশে^র দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির যে হার, তা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য হুমকি। মূল্যস্ফীতির এই হার ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
২০০৯ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখনো মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর ছিল। পরে অবশ্য তা কমতে কমতে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঠিক এরকম এক সময়ে গত বছর ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এর পরপরই বাড়ানো হয় সব ধরনের পরিবহন ভাড়া। এ দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। ফলে পরের মাস আগস্টে মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে।
যদিও সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে থাকে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে আসে। জানুয়ারিতে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চ মাসে হয় ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এপ্রিলে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এসেছিল।
মজুরি সূচক বেড়েছে : বিবিএসের তথ্য বলছে, গত কয়েক মাস ধরেই মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। অক্টোবরে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩২ শতাংশে।
সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে প্রেম এরপর বিয়ে। দেড় বছরের দাম্পত্য জীবনে আট মাস ধরে চিত্রনায়িকা পরীমণি ও শরিফুল রাজের বনিবনা হচ্ছে না বলেই শোনা যাচ্ছে। চলছে টানাপোড়েন এবং সেই সংসার এখন ভাঙনের পথে। রাজের ফেসবুক থেকে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর রাজের সঙ্গে পরীমণির মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। সব ছাপিয়ে যা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রবিবার একটি গণমাধ্যমের ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে এসে শরিফুল রাজ জানান, আপাতত তারা সেপারেশনে আছেন এবং তাদের আর একসাথে হওয়ার কোন সুযোগ নেই। পরীকে তিনি শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে সবশেষে পরীমণির উদ্দেশ্যে রাজ বলেন, ‘বেবি, আই লাভ ইউ। যা-ই হোক না কেন, আনন্দে থেকো। আমরা আমাদের সন্তানকে ভালো রাখব।’
রাজের এমন মন্তব্যের উত্তর দিতে সোমবার রাতে গণমাধ্যমটির লাইভে এসে রাজের উদ্দেশ্যে পরীমণি বলেন, ‘গরু মেরে জুতা দান করার কোনো দরকার নেই। কেউ রেসপেক্ট করলে সেটা তার কার্যকলাপ দেখেই বোঝা যায়, মুখ ফুটে বলতে হয় না। আমাকে পাবলিকলি অপমান করে এরপর রেসপেক্ট দেখানোর কোনো দরকার নেই। আর আমার বাচ্চাকে নিয়ে এসব ইমোশনালি কোনো কথা শুনতে চাই না। এসব ইমোশনালি কথা মানুষকে গিলিয়ে লাভ নেই। মানুষ বুঝে।’
ফাঁস হওয়া ভিডিওগুলো পরী বলেন, ‘এত বছর ধরে তারা বন্ধু অথচ আমি জানতাম না। এসব সামনে আসার পর জানতে পারলাম। আর রাজ যতটা তার বন্ধুদের ইমেজ নিয়ে কনসার্ন তার পরিবার নিয়ে এতটাও কনসার্ন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমনিতে অনেক শান্তশিষ্ট। অনেকটা সাপের মতো, লেজে পাড়া না দিলে চুপচাপ থাকি কিন্তু আমার লেজে পাড়া দিলেই আমি ফুঁস করে উঠি আর তখন কামড় দিবই।’
সবশেষে পরী বলেন, ‘আমি চাই এসবের শেষ হোক। আমি আজকে এখানে এসে এসব বলতাম না। তুমিই (রাজ) আমাকে বাধ্য করেছ। এরকম অসুস্থ মানুষের সঙ্গে আমি আর থাকতে চাই না। আমি চাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ আমাকে ডিভোর্স দিক।’
অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল সোমবার দুপুরে কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটে গত ২৫ মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়। ২০২০ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পর এবারই প্রথম কয়লা সংকটে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হলো।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের এই বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানটিকে কয়লা ক্রয়ে ঋণ দিয়ে আসছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল পর্যন্ত কয়লার ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিএমসি। পরে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হলে কয়লা আমদানির এলসি খোলার শর্ত দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান। গতকাল পর্যন্ত ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ মাসের শেষদিকে কয়লা দেশে আসার কথা রয়েছে।
কয়লার অভাবে দেশের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক মাসে লোকসান হবে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে জনদুর্ভোগ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে পুরো ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
এদিকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের বাইরে শুধু কয়লাবাবদ পিডিবির কাছে কেন্দ্রটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকা এ বকেয়ার টাকা পরিশোধের জন্য দফায় দফায় চিঠি দিয়েও তা পরিশোধ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলছে, বৈশি^ক মন্দার পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি কেন্দ্রভাড়া বাবদ প্রতি মাসে পিডিবিকে ২৪৭ কোটি টাকা দিতে হবে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও নির্ধারিত কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে পিডিবিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট করে প্রায় তিন কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল কেন্দ্রটি। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি ইউনিট। গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকার মতো।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার প্রকৃত জানা না গেলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানান, সব ধরনের ব্যয় বাদ দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে তাদের নিট মুনাফা হতো ৫ থেকে ৬ শতাংশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড়মূল্য সাড়ে ৫ টাকা এবং মুনাফা সাড়ে ৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক মাসে মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এ মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে বিসিপিসিএল। এদিকে কয়লা কেনার জন্য সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ছয় মাসের বেশি সময় কয়লার বিল বকেয়া থাকায় সুদের পরিমাণও বেড়ে যাবে। বাড়তি এ সুদের অর্থ বিসিপিসিএলকেই পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রতি ইউনিটের গড়মূল্য প্রায় ১১ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও পিডিবি এ বিদ্যুৎ লোকসান দিয়ে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়। পায়রা থেকে এক মাস বিদ্যুৎ কিনতে না পারলে পিডিবির লোকসান আরও বাড়বে।
সূত্রমতে, কয়লা দেশে পৌঁছানো এবং কেন্দ্র চালু করতে সব মিলে অন্তত এক মাসের মতো সময় লাগবে। কোনো কারণে যদি কয়লা আসতে আরও দেরি হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিশে^র সেরা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এক সুইচে চালু করার পর নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বৈশি^ক কারণে ডলার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তবে এ সময়ে আমরা বসে না থেকে কেন্দ্রের মেইনটেনেন্সের কাজটি করে ফেলব, যাতে দীর্ঘদিন আর মেইনটেনেন্স করা না লাগে।’
কেন্দ্রটি বন্ধের ফলে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে তা জানতে চাইলে প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘আমরা এমনিতেই বকেয়া বিল পাচ্ছি না। এটাই বড় ক্ষতি। অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি কেন্দ্রটি বন্ধের কারণে সাশ্রয়ী দামে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দিতে না পেরে কমফোর্ড ফিল করছি না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র ভাড়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি এবং কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলেও এ ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয়। আর লোডশেডিং না দিয়ে সরকার যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়, তাহলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই এই মুহূর্তে। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৪ টাকার ওপর লোকসান হবে।’ তিনি বলেন, ‘ডলার ছাড় ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আগেই ডলার ছাড় করা উচিত ছিল। এতে বিরাট ক্ষতি হলো। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয় হতে পারে। একটি হলো যারা ডলার ছাড় করছেন তারা বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না অথবা দেশের পরিস্থিতি আসলেই ভয়াবহ। তবে দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডলার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। আর বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে। এ ক্ষেত্রে খাতের গুরুত্ব বুঝে ডলার ছাড় করা হয়। তবে দেশের প্রয়োজনে ডলার ছাড় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের গাফিলতি নেই।’
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।