
১৫০৭ সাল। জুরিখের এক তরুণ তার বাবাকে বলল, এই যে বিছানায় তুমি ৯০ বছর বয়সে কাতরাচ্ছ, মৃত্যুর প্রহর গুনছো। নিজের জীবন এত ভারবাহী, তবু সুইসাইড করছো না কেন? বাবা উত্তর দেন, পাপ হবে। ভীরুরা ওই কাজ করে।
এর চল্লিশ বছর পর সেই তরুণ সুইসাইড করে। সুইসাইড নোটে লিখেছিল, জীবন যখন নিরর্থক তখন সাহসীরাই সুইসাইড করে। চলো মরি, যার যার দরকারে। বহু বছর পর আলবেয়ার কামু এ নিয়ে আলোচনা উত্থাপন করেন। বলেন, জীবন মিনিংলেস। নিরর্থক। কিন্তু সুইসাইড করলে জীবনকে গুরুত্ব যেহেতু দেওয়া হয়, তাই সুইসাইড করা যাবে না।
মজার ঘটনা, সুইজারল্যান্ডে সুইসাইড করার যে রাইট দেওয়া হয়েছে এই অধিকার আদায়ে আন্দোলনকারীদের একজন, সেই তরুণের বংশপরম্পরায় নাতি। নাম ডানিয়েল সুটার। রাজনীতিবিদ। তিনিও সম্প্রতি জানিয়েছেন, মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন সুইসাইডের। এর জন্য পছন্দের কাজগুলো করছেন, প্রিয় জায়গা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সুইজারল্যান্ডের ডিগনিটাস নামের এক সংস্থা সাহায্য করে মানুষকে আত্মহত্যা করতে সম্প্রতি এই সংস্থার কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে।
সুইজারল্যান্ডে আত্মহত্যা করার সপক্ষে বেশ কিছু আইন রয়েছে, তবে সেই আইনে পরিষ্কার উল্লেখ রয়েছে যে, আর্থিক সুবিধা আদায়ের জন্য কখনোই কাউকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া যাবে না।
ডিগনিটাসের মালিকদের অন্যতম লুডভিশ মিনেলজ পাল্টা জবাবে সুইস ইনফোসি এইচকে এক ইন্টারভিউতে বলেন, গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর তিন তরুণ ও দুই তরুণী একসঙ্গে এসেছিল। তারা দীর্ঘদিন থেকে মানসিক সমস্যায় ভুগছে। তাই মৃত্যু চায়। তাদের হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘চলো মরে যাই’। কিন্তু কোনো ভালো চিকিৎসকের আওতায় চিকিৎসা নেওয়ার ব্যবস্থাপত্র না থাকায় আমরা ফিরিয়ে দিয়েছি।
কলকাতার এক মুভির নাম হেমলক সোসাইটি। এ মুভিতে দেখা যায়, সুইসাইড যারা করতে চায় তাদের সুইসাইড করার কথা বলেই এ সোসাইটির সদস্য করে ধীরে ধীরে কীভাবে জীবনের প্রতি ফের প্রেম জন্মাতে পারে সে বিষয়ে সাহায্য করে থাকে। ছবিটির ইংরেজি ভারসন করায় প্রথমে আগ্রহী ছিলেন ডানিয়েল সুটার। পরে পিছিয়ে যান। আর হেমলক সোসাইটি মুভির সঙ্গে ক্যামেরার কাজে যুক্ত ছিলেন অনীশ দীক্ষিত নামের যে যুবা, তিনি গত বছরের নভেম্বরে ‘মরে যাই’ লিখে সুইসাইড করেন।
এই কয়েকশো বছরের ঘটনা ও কিছু অদ্ভুত মিলকে কী বলা যায়?
কোনো ব্যক্তি নিরাময় অযোগ্য কঠিন কোনো রোগে আক্রান্ত হলে, তাকে অসহনীয় কষ্ট ও ব্যথা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য প্রাণনাশে সহায়তা করাকেই ‘ইউথেনেশিয়া’ বা ইচ্ছামৃত্যু বলে। জন ওয়ারেন ১৮৪৮ সালে এটি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছিলেন। ১৮৬৬ সালে জোসেফ বুলার ক্লোরোফর্ম অনুরূপ কাজে ব্যবহার করেছিলেন। ১৮৭০ সালে স্যামুয়েল উইলিয়ামস, একজন স্কুলশিক্ষক, ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম স্পেকুলেটিভ ক্লাবে প্রদত্ত একটি বক্তৃতার মাধ্যমে সমসাময়িক ইউথেনেশিয়া বিতর্কের সূচনা করেন, যা পরে বার্মিংহাম স্পেকুলেটিভ ক্লাবের প্রবন্ধ শিরোনামে একটি একক প্রকাশনায় প্রকাশিত হয়েছিল।
১৯০৬ সালে হেনরি হান্ট ওহাইওর সাধারণ পরিষদে আইন প্রবর্তন করার সময় ইউথেনেশিয়াকে বৈধ করার প্রথম প্রয়াস ঘটেছিল। ১৯৩৫ সালে স্বেচ্ছাসেবী ইউথেনেশিয়া লিগ্যালাইজেশন সোসাইটি গ্রেট ব্রিটেনে ইউথেনেশিয়া বৈধকরণের জন্য প্রচারণা চালায়। ১৯৩৬ সালে রাজা পঞ্চম জর্জকে তার মৃত্যু ত্বরান্বিত করার জন্য মরফিন এবং কোকেনের একটি মারাত্মক ডোজ দেওয়া হয়েছিল। সেই সময়ে তিনি কার্ডিও-শ্বাসযন্ত্রের ব্যর্থতায় ভুগছিলেন, এবং তার জীবন শেষ করার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তার চিকিৎসক লর্ড ডসন সম্মতি দিয়েছিলেন। যদিও এই ঘটনাটি ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গোপন রাখা হয়েছিল।
কিন্তু সুইজারল্যান্ডে ‘ইচ্ছামৃত্যু’র আইনি আনুমোদন পাওয়ার পর এখনো বিভিন্ন দেশের অনেকেই সেদেশে গিয়ে নিজেদের মৃত্যু চাইছেন। স্বেচ্ছামৃত্যুর জন্য অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে সুইজারল্যান্ডে পাড়ি দিয়েছিলেন বিজ্ঞানী ডেভিড গুডাল। ১০৪তম জন্মদিনে তার ছিল এই শেষ ইচ্ছা। ২০১৮ সালে একটি হাসপাতালে স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করলেন এই বিজ্ঞানী। মেক্সিকো থেকে অভিনেত্রী ও মডেল নিফ্রিসিসা ২০২১ সালে এসে স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করেন। তার বয়স ৯৩ ছিল। বিশ্বজুড়ে কিছু সরকার শর্তসাপেক্ষে ইউথেনেশিয়াকে বৈধতা দিলেও এখনো অনেকে অপরাধমূলক হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে।
হিন্দুস্তান টাইমসে চলতি বছরের গত মাসে একটি খবর ভেতরের পাতায় প্রকাশিত হয়, যেন এ খবর পাঠকের চোখে কম পড়ে সেজন্য। এতে বলা হয়, একটি ঐতিহাসিক রায়ে, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট প্যাসিভ ইউথেনেশিয়াকে বৈধ করেছে। এতে ইচ্ছামৃত্যুর আইন অনুমোদনের পথ আরও সহজ হলো। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বে একটি বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে এই রায় দেয়।
বলিউডের একটি মুভির নাম গুজারিশ। এ মুভিতে দেখা যায়, এক পঙ্গু জাদুকর তার স্বেচ্ছামৃত্যু চায়। হাসপাতালে বিছানায় শুয়ে সেই অপেক্ষায় থাকে। মাথার ভেতরে অতীত আড্ডা বসায়। সেই রঙিন আড্ডাগুলো তাকে আরও ক্লিষ্ট করে। সে সময় সেবারত নার্সের সঙ্গে প্রেম। একটা সময় সেই নার্সই যেন জাদুকর হয়ে ওঠে। তাদের বিয়ের রাতে প্রেমিকা ও বউ সেই নার্সের বিষের স্পর্শেই তার মৃত্যু হয়।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
এক্সপ্রেসেন স্টকহোম
সত্য গোপন করার জন্য সামরিক সরকারের সব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আমরা এখন জানি পূর্ব পাকিস্তানে কী ঘটছে। শরণার্থীরা ব্যাপক গোলাবর্ষণ, বেপরোয়া ধ্বংসযজ্ঞ এবং গণহত্যার সাক্ষ্য দিয়েছে।
শত সহস্র মানুষ তাদের ঘর ছেড়ে পালাচ্ছে। ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষ হানা দিয়েছে। পাকিস্তানের ঐক্য অটুট রাখতেই হবে এই প্রণোদনার নামে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রতি শক্রতার অস্ত্র প্রয়োগ করা হচ্ছে। দেশের প্রথম সংসদীয় নির্বাচনের ফলাফল ভন্ডুল করে দেওয়ার পর জন্য সামরিক জান্তা সহিংস শক্তি প্রয়োগ করে চলেছে। সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল হজম করার প্রস্তুতি পাকিস্তানি শাসকদের ছিল না উলটো সামরিক বাহিনী লেলিয়ে দিয়েছে। এটা স্পষ্ট, এই পদ্ধতিতে কখনোই পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের পুনর্মিলন ঘটানো সম্ভব হবে না। নির্মমভাবে অধিকার প্রতিষ্ঠা অথবা যুদ্ধ এ ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। শেখ মুজিবুর রহমানকে যে বন্দি করা হয়েছে তা প্রমাণ করতে পাকিস্তানের সামরিক কর্তৃপক্ষ একটি আলোকচিত্র অবমুক্ত করেছে। তার বন্দিদশার ছবিটি দেখিয়ে সামরিক সরকার পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মনোবল ভেঙে দিতে চায়। প্রশ্ন, ছবিটি আগে ছাড়া হলো না কেন? কোন তারিখের ছবি তা-ই বা উল্লেখ করা হয়নি কেন? তারা শেখ মুজিবুর রহমানকে কেন দেখাচ্ছে না? এটা স্পষ্ট, ইয়াহিয়া খানের শাসন যে কোনো মূল্যে তার (শেখ মুজিব) শহীদ হওয়ার সুযোগ প্রতিহত করতে চাইবে। প্রশ্ন হচ্ছে কারাবন্দি শেখ মুজিবকে দেখার যে অনুভূতি পূর্ব পাকিস্তানে জন্মাবে, তা কি পরিস্থিতি পাল্টে দেবে? তাকে নিয়ে কিংবা তাকে ছাড়া (বন্দিদশায় রেখে) যে অবস্থায়ই হোক না কেন, পূর্ব পাকিস্তানের আর পিছু হটার পথ নেই। এই নীতি অনুসরণের জন্য অবশ্যই নিন্দা জ্ঞাপন করতে হবে। (১ এপ্রিল ১৯৭১)
দ্য ইভনিং স্টার হংকং
পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে তাদের মতো করে সংবিধান প্রণয়নের যে অধিকার অর্জন করেছে, শুরু থেকেই ভুট্টো তা অস্বীকার করে আসছেন। সামন্ত ভূস্বামী, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মেধাবী কিন্তু সুযোগসন্ধানী জুলফিকার আলি ভুট্টো সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে নির্বাচনে জেতেন। কিন্তু তিনি যেভাবে রহমানের (শেখ মুজিবুর রহমান) কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে যাচ্ছেন, তাতে গরিবের নয় বরং পশ্চিমের অভিজাত শ্রেণির স্বার্থই রক্ষা করা হচ্ছে।
ভুট্টোর বর্জনের হুমকির কারণে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে হতাশ রহমান ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন, যা শেষ পর্যন্ত বিস্তৃত হতে হতে পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় সব বেসামরিক প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণে এসে ঠেকেছে। তার দল আওয়ামী লীগ কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানে ধর্মঘট শুরু করার পর পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানে সেনা প্রেরণের খবর আসা অব্যাহত রয়েছে। জাতীয় বিমান সংস্থা ও ঢাকা এয়ারপোর্টের কর্তৃত্ব সরকারের হাতে আছে। জাহাজযোগেও পূর্ব পাকিস্তানে সেনা প্রেরণের অসমর্থিত সংবাদ পাওয়া গেছে।
‘ঘূর্ণিঝড় এখনো হয়তো তার পুরো পাওনা বুঝে নেয়নি।’ জুলফিকার আলি ভুট্টো ৪ মার্চ এক সাক্ষাৎকারে ভেতরের তথ্যটি এভাবেই ফাঁস করেছেন। এর মানে, পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, আমলা, ভূস্বামী ও অভিজাত শ্রেণি পূর্ব পাকিস্তানের ওপর নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রাখতে আরও রক্ত ঝরাতে চায়। তিন সপ্তাহ পর গত বৃহস্পতিবার সেই রক্তপাত শুরু হয়ে গেছে। যদিও পাকিস্তান সরকার দাবি করছে, লড়াই কার্যত শেষ হয়ে এসেছে। বাস্তবে দুই অসম অংশের মধ্যে গণযুদ্ধ হবে অনেক দীর্ঘমেয়াদি ও রক্তাক্ত। পূর্ব পাকিস্তানে ঘূর্ণিঝড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা কত তা হয়তো কখনো জানা হবে না। তেমনি কারও জানা হবে না, এই গণযুদ্ধে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা কত। কারণ, পাকিস্তান সরকার তথ্য গোপনের চেষ্টা করে যাচ্ছে। পূর্ব পাকিস্তানের বন্দরে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই; এখানে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা সেনাবাহিনীর জন্য সরবরাহ করা রসদ বন্দরে নামাতে দিচ্ছেন না। রহমান সেনাবাহিনীকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছেন। সীমিত রেশনের ওপর তাদের নির্ভর করতে হচ্ছে।
দ্য লিবিয়ান টাইমস
মস্কো (এপি-ইউপিআই) : ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের অবনতি ঘটছে প্রতি ঘণ্টায়। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের বিশেষ দূত এম আরশাদ হুসেইন গতকাল সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী আলেক্সি কোসিগিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছে, মস্কোতে কর্মরত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতও ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পাঁচ দিন আগে আরশাদ হুসেইন মস্কোতে পৌঁছেছেন। পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যা এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতি নিয়ে সোভিয়েত কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য ইয়াহিয়া খানের দূত হিসেবে তার এ সফর।
তাসখন্দ আলোচনায় (১৯৬৫) মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কোসিগিন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সর্বশেষ প্রধান দ্বন্দ্বের অবসান ঘটান। শুক্রবার রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, পূর্ব পাকিস্তানের গণযুদ্ধ সম্পর্কে সোভিয়েত নেতার দ্বিতীয় চিঠিটি ইয়াহিয়া খানের হাতে পৌঁছেছে। উপমহাদেশের প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে ঘণ্টায় ঘণ্টায় সম্পর্কের অবনতি ঘটছে এবং দুই সরকার একের পর এক প্রতিবাদলিপি পাঠিয়ে চলেছে। পাকিস্তানের অনুরোধে একটি দ্বিপক্ষীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে দুটি কূটনৈতিক মিশনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনার কলকাতায় স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন করতে পারছিলেন না বলে ভারতকে জানানো হয়। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে পাকিস্তান সরকার কলকাতায় সে দেশের ডেপুটি হাইকমিশনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানায়।
প্রকৃতপক্ষে সেখানে কর্মরত ১০০ জনের মধ্যে ৭০ জনই পূর্ব পাকিস্তানের বিদ্রোহী কূটনীতিক। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, কলকাতায় পাকিস্তানি মিশনে কর্মরত সবাইকে ফেরত পাঠানোর যুক্তি ভারত অবশ্যই মেনে নেবে না। তিনি বলেন, যারা যেতে চায় যাবে, কিন্তু ভারত ছাড়ার জন্য অন্যদের ওপর বলপ্রয়োগ করা হবে না।
মুখপাত্র বলেন, একইভাবে ভারত সরকারও ঢাকা থেকে ভারতীয় কূটনীতিক ও তাদের কর্মচারীদের মধ্যে যারা ভারতে আসতে চান, কেবল তাদের ফেরত পাঠানোর ওপরই জোর দিচ্ছে। এ মিশনের দলিল-দস্তাবেজ কেমন করে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে হবে, তা-ও দুই দেশকেই ঠিক করতে হবে। পাকিস্তান জোর দিয়ে বলেছে, পারস্পরিকতার নীতি (প্রিন্সিপাল অব রেসিপ্রসিটি) কঠোরভাবে মানতে হবে।
ডেইলি মেইল জাম্বিয়া
কান্ডজ্ঞানহীন জীবননাশ
ট্যাংক, গোলা, দুর্ভিক্ষ মানুষের কান্ডজ্ঞানহীন জীবননাশের এই বাস্তবতায় বিশ্বকে অবশ্যই সজাগ হতে হবে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সরকার পূর্ব পাকিস্তানে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। কয় মাস আগে শুরু হওয়া এই দ্বন্দ্বে গুলিবিদ্ধ হয়ে, অনাহারে ও রোগে ভুগে হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। প্রতিটি সরকারেরই বিদ্রোহীদের পরাস্ত করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু আমরা মনে করি, পাকিস্তানের বেলায় নিহতের সংখ্যা আতঙ্কজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এখন মনে হচ্ছে, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পিত প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। (১৪ জুন, ১৯৭১)
দ্য পালাভার উইকলি ঘানা
শেখ মুজিব ও তার দলের একমাত্র অপরাধ তারা স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দেশের যে অংশে তাদের অবস্থান, সে অংশে ঔপনিবেশিক মর্যাদা বদলে সংযুক্ত পাকিস্তান ফেডারেশনে একটি সম্মানজনক অবস্থানের দাবি জানিয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিকজান্তা সংখ্যাগরিষ্ঠের ওপর ত্রাস ও বর্বরতার রাজত্ব কায়েম করেছে। পাকিস্তানের কাছে এক নম্বর শত্রু বিবেচিত ভারত নিজ দেশে জন-বিস্ফোরণ সত্ত্বেও মানবিক কারণে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা অসংখ্য শরণার্থীকে ঠাঁই দিতে যতটা সম্ভব সবই করেছে, আশ্রয় দিয়েছে, খাবার দিয়েছে।
২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাড়ে সাত কোটি মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্তপিপাসু সামরিকজান্তা মানব-ইতিহাসের একটি জঘন্যতম অপরাধ সংঘটিত করেছে। বস্তুনিষ্ঠতার জন্য খ্যাত অনেক সংবাদপত্র ছবি ও প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণের মাধ্যমে ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ এই গণহত্যার চিত্র তুলে ধরেছে। যেসব সাক্ষ্য ও প্রতিবেদন পাওয়া গেছে, তাতে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ইচ্ছাকৃতভাবে এই ভয়াবহ গণহত্যা ঘটানো হয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনী নির্মমভাবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। পূর্ব পাকিস্তানের খ্যাতিমান অধ্যাপক, আইনজীবী, সাংবাদিক, চিকিৎসক, ছাত্র-নির্বিশেষে বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীদের নিঃশেষ করে দেওয়ার লক্ষ্যে পরিচালিত এই হত্যাযজ্ঞ বীভৎস গণহত্যাগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। এই গণহত্যা এখনো চলছে। পূর্ব পাকিস্তান থেকে পালিয়ে ভারতে যাওয়া শরণার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে এখন প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার শরণার্থী ভারত যাচ্ছে। যে সরকার তার লাখ লাখ নাগরিককে অন্য একটি দেশে চলে যেতে বাধ্য করে, সেই সরকারের আর ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার রয়েছে কি না, সেটাই প্রশ্ন।
ভেচের্নিয়ে নোভোস্তি যুগোশ্লাভিয়া
বেয়নেটের সাহায্যে স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখার দাবি জানানো হচ্ছে। বাঙালিদের স্বায়ত্তশাসনের জন্য আন্দোলনের জবাবে সামরিক আক্রমণের তিন মাস পর এই প্রথম বিদেশি সাংবাদিকদের পূর্ব পাকিস্তানে ঢুকতে দেওয়া হয়। চাপিয়ে দেওয়া সফরসঙ্গী ছাড়াই তারা ঘুরে দেখার অনুমতি পেয়েছেন। যদিও এতদিন ধ্বংসের আলামত সরিয়ে ফেলা হয়েছে, তারপরও যেটুকু রয়ে গেছে, তা আগের নৃশংসতার সাক্ষ্য দিতে যথেষ্ট।
রাজধানী শহর ঢাকা এখনো আতঙ্ক, সহিংসতা ও সন্ত্রাসের ছায়ায় ঢাকা। রাস্তায় লোকজন ফিসফিস করে কথা বলে। অসমান রাস্তায় গাড়ি তেমন বেরই হয় না। এটাকেই সরকার বলছে ‘স্বাভাবিক অবস্থা’। স্বাভাবিক অবস্থা নিশ্চিত করতে ভয়াবহ শাস্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে। গোপনে কেউ যদি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র শোনে, কঠোর শাস্তি তার প্রাপ্য। অধিকাংশ দোকানপাট এখনো বন্ধ। গাড়ির নম্বরপ্লেটে বাংলা মুছে ইংরেজি লেখা হয়েছে। খালি রাস্তায় ও দোকানে মানুষ ফিসফিস করে কথা বলে। সেনাবাহিনী এখনো বাঙালিদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে, গ্রেপ্তার করছে এবং কখনো কখনো হত্যাও করছে। যদিও ট্যাংক ও রকেটের আলামত সরিয়ে ফেলা হয়েছে, ধ্বংসের ও আতঙ্কের ছাপ রয়ে গেছে পুরান ঢাকায়। শহরের সবচেয়ে গরিব শ্রেণির মানুষ এখানে বসবাস করে এবং তারা আওয়ামী লীগের একান্ত সমর্থক। অবিশ্বাস্য শ্লথগতিতে হাটবাজার ও নোংরা সরু রাস্তায় জীবন ফিরে আসছে। এখানকার অধিকাংশ মানুষ হিন্দু, তারা নির্মমভাবে খুন হয়েছে, না-হয় ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। (৮ জুলাই ১৯৭১)
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক
আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বড় শত্রুও স্বীকার করবেন, আর যাই দোষ-গুণ থাকুক না কেন, মোদিজি চমৎকার কথক। দিনকে রাত, রাতকে দিন করতে ওর জুড়ি নেই। এমন জোরের সঙ্গে বলেন, যা শুনতে শুনতে মনে হয় এ রকম সত্য কথনের বিকল্প নেই। যেমন ত্রিপুরা ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি বিধানসভা নির্বাচন এবং কয়েকটি রাজ্যের উপনির্বাচনে বিজেপির আপাত সাফল্যের পরপরই তিনি যথারীতি গলা চড়িয়ে জানিয়ে দিলেন, এ উন্নয়নের, সুশাসনের পক্ষে ভারতীয় জনতার রায়। তিনি আবার যতটা দলের কথা বলেন, তার চেয়ে ঢের চেঁচান নিজের সাফল্য নিয়ে। নিজেই বলেন, মোদিজি এই করেছেন, মোদিজি ওই করেছেন ইত্যাদি। নিন্দুকরা একে ঢাক পেটানো বললে কী হবে, নরেন্দ্র মোদি যে নিজেই নিজেকে ভালো প্রশাসক বলে নিজের পিঠ চাপড়ান তা এখন আর এ দেশের কাউকে জানতে বাকি নেই।
ত্রিপুরা বিধানসভা এবারও বিজেপি দখলে রাখতে পেরেছে এ নিয়ে তো বিতর্ক নেই। কিন্তু জেতার সাফল্যে চাপা পড়ে যাচ্ছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এবার অনেকে বলেছিলেন, সিপিআই এম, কংগ্রেস জোট বাজিমাত করবে। ঘটনাচক্রে আমি কখনো সে দলে ছিলাম না বলে আমার কিছু বামপন্থি বন্ধু ঈষৎ মনঃক্ষুন্ন হয়েও ছিলেন। তাদের বোঝাতে পারিনি যে, উপমহাদেশের কোথাওই এখন আর ভোট কোনো গণতান্ত্রিক রীতি মেনে হয় না। মানি, পাওয়ার, ম্যাসলম্যান অনেক ক্ষেত্রেই নির্বাচনের রায়কে প্রভাবিত করে। জনগণের দ্বারা, জনগণের রায়ে জনগণের সরকার এসব কেতাবি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ব্যাখ্যা এখন নিছক আপ্তবাক্য হয়ে গেছে।
ফলে বেশির ভাগ জায়গাতেই ক্ষমতায় যারা থাকেন, সব সময় অ্যাডভান্টেজ সরকার পক্ষ। আপনি প্রশ্ন তুলবেন যে, তাহলে যেখানে বিরোধী দল জেতে সেখানে কীভাবে তারা সাফল্য পান!
প্রথমত, ভারত এত বড় একটা দেশ, যেখানে চেষ্টা করলেও পুরোপুরি স্বৈরতন্ত্র কায়েম করা কঠিন। ফলে এ দেশে বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া বা ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা, কালো আইনের প্রবণতা বাড়লেও, পাশাপাশি প্রতিবাদী স্বর এ দেশে কম নেই। তরুণ প্রজন্মের বড় একটা অংশ বিনা যুক্তিতে সব মেনে নেন না। বিজ্ঞাপনে যে এলিট ভারতকে আমরা দেখি, মনে হয় সবাই হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির কাছে সমর্পিত প্রাণ, বাস্তবে সবটুকু ঠিক নয়। এখনো এ দেশের দলিত, সংখ্যালঘুদের বিপুলসংখ্যক মানুষ বহুত্ববাদী ভারতের পক্ষে। ফলে মানি, পাওয়ার, মাফিয়া ও শাসকদের সরাসরি লাল চোখ উপেক্ষা করেও সময়-সময় ভোটবাক্সে জনতার ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, শাসকদের নিজেদের মধ্যেও গোষ্ঠী কোন্দল অনেক সময় তাদের বিপদের কারণ হয়ে যায়। ভারতের মানুষের আর একটা বড় গুণ, সে বাইরে থেকে নিরীহ হলেও ভেতরে-ভেতরে প্রতিষ্ঠানবিরোধী। ফলে তাদের মিথ্যে চাতুরী বা লোভ দেখিয়ে চিরকাল বশে রাখা যায় না।
একটা গল্প ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি। একটা গ্লাসে অর্ধেক জল আছে। আপনি বলতে পারেন গ্লাস অর্ধেক খালি অথবা অর্ধেক ভর্তি। কী বলবেন তা আপনার দৃষ্টিভঙ্গি এবং বলার কৌশলের ওপর নির্ভর করবে। মোদিজি যেমন কৌশল করে নিজেদের সাফল্যকে বিজ্ঞাপিত করেছেন। ভর্তি দেখিয়েছেন। কিন্তু অর্ধেক খালি সেটা গোপন করে গেছেন। তিনি বলেননি যে তামিলনাড়ু উপনির্বাচনে তারা হেরেছেন। তিনি একবারের জন্যও মুখ খোলেননি যে মহারাষ্ট্রের কসবাপেট বিধানসভা কেন্দ্রে ঠিক কী কারণে ২৮ বছর বাদে কংগ্রেসের কাছে বিজেপিকে শোচনীয়ভাবে হেরে যেতে হয়েছে। এমনকি যে ত্রিপুরার জয় নিয়ে বিজেপি মহল এমন গদগদ, বস্তুত সেখানেও শাসক বিজেপির চেয়ে অবিজেপি দলগুলোর প্রাপ্ত মিলিত ভোটের হার বেশি। ত্রিপুরা বিধানসভায় কোটি কোটি টাকা খরচ করে, প্রশাসনিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়েও বিজেপি ভোট পেয়েছে ৩৯ শতাংশ। নরেন্দ্র মোদি নিজেদের সাফল্যের পেছনে তিনটা কারণ উল্লেখ করেছেন। ১. সরকারের কাজ, ২. কর্মসংস্কৃতি এবং ৩. বিজেপি কর্মীদের দায়বদ্ধতা। প্রথম দুটি বিষয় নিয়ে কোনো না কোনো সময় বিশ্লেষণ নিশ্চয়ই করব। তৃতীয় যে কর্মীদের দায়বদ্ধতার ঢাক বাজছে তা কতটা অন্তঃসারশূন্য সেটা এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার দৌলতে মোটামুটি সারা দুনিয়া জেনে গেছে। বিরোধী দলের ঘরবাড়ি ভাঙা, আগুন দেওয়া থেকে সমর্থকদের মারধর যদি দায়বদ্ধতা হয়, তাহলে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই। গণতন্ত্রের যে পাঠ কয়েক বছর ধরে আমরা শিখছি, ত্রিপুরার জয়-পরবর্তী সময়ে নতুন অধ্যায় সংযোজিত হচ্ছে এই মাত্র। হতে পারে স্মার্ট ইন্ডিয়ায় এর নতুন নাম কর্মসংস্কৃতি।
ত্রিপুরার পাশাপাশি মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডের ভোটের ফলাফল বিজেপির পক্ষে পঞ্চাশ-পঞ্চাশ। নাগাল্যান্ড জিতলেও মেঘালয়ে কেউই নিরঙ্কুশ নন। উত্তর-পূর্বে বিজেপি নিরঙ্কুশ হতে চায় নানা কারণে। তার বড় কারণ চীনের সঙ্গে টক্কর দিতে গেলে ওই সীমান্ত এলাকাগুলোতে শাসক অনুগত দলের ক্ষমতায় থাকা একান্ত প্রয়োজন। তা ছাড়া উত্তর-পূর্বের রাজনীতির মূলকেন্দ্র দিল্লি নয়, আসাম। দিল্লি মস্তিষ্ক হলেও যাবতীয় কলকাঠি নাড়তে আসামের বিকল্প নেই। হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির মডেল সারা ভারতে দুটি। গুজরাট তো ছিলই। কয়েক বছর ধরে সংঘ রাজনীতির নয়া ঘাঁটির নাম আসাম।
তাই আসামকে ঘিরে যে নব্য হিন্দুত্ব তার খুবই প্রয়োজন আশপাশের ছোটখাটো অন্যান্য রাজ্যে বিজেপির জয়। সেখানেও কিন্তু শুধুই গোলাপ বিছানো পথ নেই। অজস্র কাঁটাও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে চলার পথে। তা ছাড়া নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া সম্পর্কে একটু চর্চাও যাদের আছে, তারা জানেন যে ওই রাজ্যগুলোতে দলবদল স্বাভাবিক ঘটনা। আজ যিনি কংগ্রেস, কাল তিনি তৃণমূল অথবা বিজেপি। ফলে ওই জনপদের রাজনীতির গুরুত্ব যথেষ্ট। কিন্তু ভোটবিশ্লেষণ খুব জরুরি নয়। একটা কথা প্রায়ই বলি বা লিখি যে, শুধুই ভোটের পর্যালোচনা করলে আধুনিক ভারত রাষ্ট্রের রাজনীতিচর্চা যথেষ্ট নয়। লড়াইটা আসলে দৃষ্টিভঙ্গির, দর্শনের। বহুত্ববাদ বনাম এককেন্দ্রিক।
ফেডারেল কাঠামোর বদলে সেন্ট্রালাইজেশন অব পাওয়ার। ঘুরে-ফিরে সেই এক জাতি, এক দল, এক নেতা স্লোগান। নির্বাচন তো সংখ্যাতত্ত্বের খেলা। কিন্তু উত্তর প্রদেশে যে বুলডোজার রাজ কায়েম হয়েছে, তার কী হবে! নীরবে মেনে নিতে হচ্ছে বুলডোজার দিয়ে মা ও মেয়েকে পিষে ফেলার মতো নৃশংস ঘটনা। প্রতিবাদ করলে নেহা সিং রাঠোরের মতো জনপ্রিয় লোক কবিকেও পুলিশের হেনস্তার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। হাথরাস ধর্ষণের আসামিদের প্রায় সবাই জামিন পাচ্ছেন। জেএনইউএ ছাত্রদের ধর্নায় বসার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। বেকারি বাড়ছে। গ্যাসের দামও। আদানি নিয়ে নীরব আমাদের দেশ নেতারা। তারা বেশি ব্যস্ত মোগল আমলের ঐতিহাসিক স্থান, সৌধ, স্থাপত্যশৈলীর নামবদলের মহান ব্রতে। নেহা সিং গেয়েছেন, ইউ পি মে কাবা! আমি বলব, ইন্ডিয়াতে কাবা! কী হচ্ছে সব গণতন্ত্রের নামে! বড় পরিসরে আলোচনা না করলে নিছক নির্বাচন নিয়ে কথা বলা বাতুলতা। অর্থহীন।
ভোটে কখনো সত্যিকারের গণতন্ত্রের চেহারা সামনে আসে না। গরিব লোকদের কত শতাংশ ঠিকঠাক, নিজেদের মতামত ইভিএম মেশিনে জানাতে পারেন, তা নিয়েই তো প্রশ্ন উঠেছে। ইদানীং নোটা বা না ভোট দেওয়ার সংখ্যা কম নয়। পাশাপাশি ভোট দেন না সেই শতাংশ মানুষকে যদি ধরি, তাহলে দেখা যাবে ভোটব্যবস্থা নিয়েও অনীহা বাড়ছে। কত কোটি টাকা জনপ্রতিনিধি বাছতে আমাদের মতো গরিব দেশে খরচ হয়, সে হিসাবটাও ফেলে দেওয়ার নয়। বলা হয়, বটে ভোট হচ্ছে গণতন্ত্রের মহোৎসব; কিন্তু সারা পৃথিবীর রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যেই হালে ভোট পদ্ধতি নিয়ে সংশয় বাড়ছে। তবু বিকল্প পথ কিছু নেই বলে আমরা ভোটের লড়াই করি। আশায় থাকি ভোটের মাধ্যমে পছন্দের রাজনীতি বেছে নেওয়ার। যাকে জেতাই, সেও কিছুদিন বাদে কোনো না কোনো কারণে দল বদলে অন্য পার্টিতে চলে যান। আমরা অসহায় হয়ে শুধু দেখি। জনগণের রায়ে জেতা প্রার্থী দলবদল করলেও তাকে ফিরিয়ে আনার অধিকার জনতার নেই। এই রাইট টু রিকল দাবি আজকাল অবশ্য অল্প হলেও উঠছে। দেখা যাক আগামীদিনের রাজনীতিতে নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে কোনো বদল আসে কি না! না হলে মানি, পাওয়ার, ম্যাসলম্যান এই তিন শক্তির কাছে বারবার জনগণের আত্মসমর্পণ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। আর যে পথ রয়েছে। তা তীব্র গণ-আন্দোলন, যা চিরকাল দেশে দেশে শাসকদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।
লেখক: ভারতীয় প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা
মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সুস্থ বৃক্ক বা কিডনি জরুরি। দেহের এই সুপার কম্পিউটারের গঠন এবং কাজ ভয়ংকর জটিল। মানব দেহের পিঠের দিকে, মেরুদ-ের দুই পাশে কোমর বরাবর থাকে, দুটি কিডনি। এটি শরীরের অপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, প্রস্রাব হিসেবে শরীর থেকে বের করে দেয়। একইসঙ্গে রক্তকে পরিশোধন করে শরীরে ক্ষার ও অম্লের ভারসাম্য বজায় রাখে। কিন্তু পানি, অম্ল ও ক্ষারের সঙ্গে অন্য রাসায়নিক পদার্থের মাত্রাগত ভারসাম্য নষ্ট হলেই, মানুষ মৃত্যুর মুখোমুখি হতে পারে। এই কিডনিকে সুস্থ রাখার জন্য যে কারণে সচেতনতা জরুরি।
বিশ্বে ৮৫ কোটি এবং বাংলাদেশে দুই কোটির বেশি মানুষ কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত। এটি বিভিন্ন কারণে, দুর্বল হতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে, বাঁচিয়ে রাখতে মানুষের হাতে খোলা দুটি পথ। একটি ডায়ালাইসিস, আর অন্যটি প্রতিস্থাপন। দুটো পথই অত্যন্ত ব্যয়বহুল- যা সাধারণ মানুষের আয়ত্তের বাইরে। তখন অসহায়ভাবে মৃত্যুকে মেনে নেওয়া ছাড়া, অন্য কোনো পথ খোলা থাকে না। যে কারণে, বিভিন্ন ধরনের সচেতনতাই মানুষকে রক্ষা করতে পারে- কিডনি রোগের মৃত্যু থেকে।
গতকাল দেশ রূপান্তরের শেষ পাতায় প্রকাশিত- ‘বছরে বিকল হচ্ছে ৩৫-৪০ হাজার মানুষের কিডনি’ শীর্ষক সংবাদে জানা যায়, প্রতি বছর ৩৫-৪০ হাজার মানুষের কিডনি সম্পূর্ণ বিকল হচ্ছে। এসব রোগীর বেঁচে থাকার জন্য ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজন প্রয়োজন। কিন্তু কিডনি চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় শতকরা ১০ জন এর ব্যয় বহন করতে পারেন। চিকিৎসা করতে গিয়ে অনেক পরিবার আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে যায়। এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব তথ্য জানান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। বৈঠকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, সবার জন্য কিডনি স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হলে ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজন বীমার আওতায় আনতে হবে।
বৈঠকে সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ বলেন, কিডনি রোগীরা দুর্যোগের সময় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। আমরা জানি কিডনি রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপক। বিশ্বে ৮৫ কোটি লোক কিডনি রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে দুই কোটিরও অধিক কিডনি রোগী। দেশে প্রতি বছর ৩৫-৪০ হাজার লোকের কিডনি সম্পূর্ণ বিকলের শিকার হয়। তাদের বেঁচে থাকার জন্য ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজন প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, ডায়ালাইসিস সাধারণত সপ্তাহে ২-৩ দিন করতে হয়। দুর্যোগের কারণে ডায়ালাইসিস বন্ধ হলে মৃত্যু এগিয়ে আসবে। আবার দুর্যোগের সময় আঘাত, রক্তক্ষরণ, দুর্যোগ-পরবর্তী ডায়রিয়া ইনফেকশন এসব কারণে তীব্রমাত্রার আকস্মিক কিডনি বিকল হতে পারে। যার জন্য ডায়ালাইসিস প্রয়োজন। তাই কিডনি রোগীরা দুর্যোগের সময় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। ডা. এম এ সামাদ বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় কিডনি রোগীদের পূর্বপ্রস্তুতি অত্যন্ত জরুরি। যেমন প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রস্তুত রাখা। বিকল্প ডায়ালাইসিস সেন্টার সম্পর্কে আগে থেকে ধারণা নিয়ে রাখা। সাহায্যকারী নেটওয়ার্ক তৈরি করে রাখা। ডায়ালাইসিস পেতে বিলম্ব হলে সাময়িক খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, যেমন পানি কম, মাছ-মাংস কম, পটাশিয়ামযুক্ত খাবার যেমন ফল ও সবজি পরিহার করা।
কিডনি শুধু রক্ত শোধন বা বর্জ নিষ্কাশনই করে না। এর রয়েছে বহুবিধ কাজ। রক্তকণিকা তৈরি, মানব দেহের হাড়ের সুস্থতা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, পানি ও লবণের ভারসাম্য রক্ষাসহ বিভিন্ন কাজে তাকে জড়িত রাখতে হয়। এই কাজ শুরু হয়, মানুষের জন্মের আগেই, মাতৃগর্ভ থেকে। শেষ হয়, মৃত্যুতে। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা বিরতিহীন এই পথচলায়, ক্লান্তি আসতেই পারে। এই ক্লান্তি আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠে তখন, যখন কিডনির সুস্থতাবিরোধী বিভিন্ন কর্মকা-ে মানুষ নিজেকে ব্যাপৃত করে। অথবা মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হলে, সেখান থেকেও আঘাত আসতে পারে কিডনির ওপর। সমস্যা হচ্ছে, কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত হলে, একজন মানুষ প্রথম দিকে টেরই পান না যে, তিনি কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত। উপলব্ধি করেন তখন, যখন ৭০ শতাংশ কিডনি বিকল হয়ে গেছে! যে কারণে, শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে কোনো সমস্যা দেখা দিলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে জীবনকে বাঁচাতে, সচেতনতার বিকল্প নেই।
বাংলা সাহিত্যে যুগসন্ধিক্ষণের কবি এবং অন্যতম পথিকৃৎ সম্পাদক হিসেবে পরিচিত ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ১৮১২ খ্রিস্টাব্দের ৬ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার কাঞ্চনপল্লী বা কাঁচড়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা হরিনারায়ণ গুপ্ত প্রথমদিকে কবিরাজি চিকিৎসা করতেন; পরে শেয়ালডাঙ্গার কুঠিবাড়িতে চাকরি করেন। দশ বছর বয়সে মাতৃবিয়োগের পর ঈশ্বরচন্দ্র জোড়াসাঁকোয় মাতুলালয়ে আশ্রয় নেন। তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বেশিদূর এগোয়নি। তবে অসাধারণ মেধা ও স্মৃতিশক্তির অধিকারী ঈশ্বরচন্দ্র নিজ চেষ্টায় বাংলা, সংস্কৃত ও ইংরেজি ভাষা শেখেন এবং বেদান্ত দর্শনে পারদর্শিতা লাভ করেন। ১৮৩১ সালে তিনি সাপ্তাহিক ‘সংবাদ প্রভাকর’ সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন। তার সুযোগ্য সম্পাদনায় ১৮৩৯ সালের ১৪ জুন থেকে ‘সংবাদ প্রভাকর’ দৈনিক পত্রিকায় রূপান্তরিত হয়। আধুনিক বাংলার সমাজ গঠনে ‘সংবাদ প্রভাকরের’ ভূূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঈশ্বরচন্দ্র সংবাদ প্রভাকর ছাড়াও সংবাদ রতœাবলী, পাষ-পীড়ন ও সংবাদ সাধুরঞ্জন পত্রিকাও সম্পাদনা করেন। ঈশ্বরচন্দ্র প্রথমে কিছুটা রক্ষণশীল থাকলেও পরে তিনি প্রগতিশীল ভাবধারার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন। ঈশ্বরচন্দ্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি হলো ভারতচন্দ্র রায়, রামপ্রসাদ সেন, নিধুগুপ্ত, হরু ঠাকুর ও কয়েকজন কবিয়ালের লুপ্তপ্রায় জীবনী উদ্ধার করে প্রকাশ করা। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ছোটবেলা থেকেই মুখে মুখে কবিতা রচনা করতেন এবং কবিয়ালদের গান বেঁধে দিতেন। ১৮৫৯ সালের ২৩ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এক বছরেরও কম। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচন হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করা দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো আন্দোলন করছে।
এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত বছরের মাঝামাঝি থেকে এই চাপ ক্রমশ বাড়ছে। বিদেশিদের মধ্যে এবার যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অনেক বেশি। এর আলামত দেখা যাচ্ছে কয়েক মাস ধরে। নির্বাচন ছাড়াও দেশটি মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীন প্রশ্নে অনেক সোচ্চার। ২০২১ সালের ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি।
সরকারের তরফ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য তারা বিদেশিদের উদ্যোগ নিতে বলছে। একই সঙ্গে সরকার যেকোনো চাপে নতি স্বীকার করবে না, সেটাও বলেছে।
কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৯০ সালে দেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি আসার পর থেকেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক আগ্রহ বাড়ছে। নির্বাচনের এক বছর আগে থেকেই প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নানা সবক দিতে থাকে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
তাদের মতে, বরং নির্বাচন ঘিরে পরাশক্তিগুলোর প্রভাব লক্ষণীয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই প্রতিবেশী দেশ এবং বড় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সরকার নিয়ে সবচেয়ে বেশি আধিপত্য দেখিয়ে আসছিল ভারত। ১৯৯০ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পশ্চিমাদের প্রভাব। আর তিন দশক ধরে বিভিন্ন কূটনৈতিক জোট, আঞ্চলিক জোট এবং সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আগ্রহ বেড়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রভাবশালী দেশগুলোর নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ যতই থাক না কেন, এর মূল কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা। তারা মনে করছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সমাধান যদি নিজেরা না করতে পারি, তাহলে বাইরের প্রভাব বাড়তে থাকবে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালী উর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে তাদের প্রভাব বলয়ে রাখতে চায়। তাদের নিজেদের দেশেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। বর্তমান সরকারও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করছে। তাদের এই চাপ কাজে দেবে না।’ আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলের অভিমত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে এবং আঞ্চলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কারণও তাই। কূটনীতিকরা বলছেন, ভারত, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ থাকলেও এক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতা লক্ষণীয়। এ ক্ষেত্রে সরকারবিরোধী বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বারবার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি কিছুটা হলেও গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন পদ্ধতি এবং নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র অনেক বেশি সোচ্চার হলেও তাদের কূটনীতি সরকারবিরোধী দলগুলোর পক্ষে যাবে এমন ধারণা করার কোনো কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। এটা যেমন সত্য, তেমনি ইন্দো প্যাসিফিক এবং এ অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের বোঝাপড়াটা বেশি জরুরি। আর সে কারণেই বিএনপি যতই তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলুক যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে না। তাদের বক্তব্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং নির্বাচনে বিরোধীপক্ষের জন্য সুষ্ঠু ও অবাধ পরিবেশ তৈরি করা।
কূটনীতিক সূত্রগুলো বলছে, আগের কয়েক দফা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী থাকলেও ভারতের সঙ্গে একধরনের সমঝোতা করে বা আলোচনা করে তাদের মতামত দিয়েছে। কিন্তু ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন নিয়ে পরামর্শ এবং তাদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে বেশি সোচ্চার।
বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক চর্চার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগের বিষয়টি প্রথম প্রকাশ পায় ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে। এরপর থেকেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংলাপও হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল এবং প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করেছেন। তাদের সফরে আগামী নির্বাচন, বিরোধীপক্ষের প্রতি সরকারের আচরণ, মানবাধিকার ও সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সরকার, আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
গত ২১ মার্চ নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের উদ্ধৃত করে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে, নির্বাচনে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে এবং বিরোধীদলীয় পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানোসহ গুরুতর অনিয়ম রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত সম্মান ও অংশীদারিত্বের মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে মানবাধিকারের বিষয়গুলো উত্থাপন করে। এটা তারা চালিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এমন আগ্রহের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বলয় বাড়াতে চায় দেশটি। এরই মধ্যে দেশটি এশিয়ায় তাদের বন্ধু দেশগুলোকে নিয়ে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ (আইপিএস) পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এর আওতায় ইন্দো-প্যাসিফিক ফোরাম গঠন করা হয়েছে। একই কৌশলের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভারত সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে কোয়াড গঠন করেছে। এগুলোর লক্ষ্য হলো চীনের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলে একটি শক্তিশালী বলয় গঠন করা। ভারতের পাশাপাশি এ বলয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকেও চায়। বাংলাদেশ যেন কোনোভাবেই চীনের বলয়ে না যেতে পারে, সেই কৌশলের অংশ হিসেবেও আগামী নির্বাচন ঘিরে চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে দেশটি। যদিও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো জোটেই যায়নি। আবার ‘বার্মা অ্যাক্ট’ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রস্তাবে তারা বাংলাদেশকে পাশে চায়। এসব কারণে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ নানা ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ ঢাকায় সফররত দেশটির কর্মকর্তারা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্ক নিয়েও ইতিবাচক কথা বলেন। এ ছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বিভিন্ন বক্তব্যেও নির্বাচনের পরিবেশ ও স্বচ্ছতা নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে ঢাকা সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তারও বলেছিলেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে তারা সরকারকে এবং এই দেশকে সহযোগিতা করেব। তিনি সেই সময় দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাস ও ইউএসএইডের বাংলাদেশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব তুলে ধরেন।
গত বছরের অক্টোবরে ঢাকায় এসেই এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে চায়। এরপর থেকে তিনি নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রায় অভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আসছেন। পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো একটি দলকে সমর্থন করে না। তারা চান জনগণ তাদের পছন্দের সরকার নির্বাচন করবে।
এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসহ ১৪টি দেশের কূটনীতিকরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন নিয়ে তাদের মনোভাব তুলে ধরেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অভিনন্দন বার্তায়ও বাংলাদেশে সবার জন্য উন্মুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। দিবসটি উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শুভেচ্ছা বার্তায় অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে লেখা বাইডেনের এ বার্তায় বর্তমান সরকার ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসাও করা হয়েছে।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলে তার ঢাকা সফরে বলেছিলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, অর্থাৎ যারা পরাজিত হবেন, তারাও যেন মনে করেন নির্বাচনটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ হয়েছে এমনটাই তারা চান। তিনি বলেছিলেন, শক্তিশালী সুশীল সমাজ, মুক্ত গণমাধ্যম এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক পরিবেশ চায় যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে নেতিবাচক প্রশ্ন উঠবে না। এই পরিবেশ তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও শোলে জানান।
ডেরেক শোলে চলে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, সরকারপক্ষ থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিকে বলা হয়েছে তারা অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। তারা সরকারের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত। তবে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও পূর্ববর্তী নির্বাচন নিয়ে তারা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। যখনই প্রয়োজন হবে, তারা সেটা জানাবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর সুযোগ নেই। এই সুযোগটা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোই করে দিয়ে আসছে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র একটি শক্তিশালী অবস্থান চায়। এ জন্যই তারা কথা বলছে।’
রমজানের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষায় সবার দায়িত্ব রয়েছে। কারও কোনো অবহেলা কিংবা গর্হিত কাজে রোজাদারের রোজা পালনে অসুবিধা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা। রমজানের পবিত্রতা রক্ষার পাশাপাশি মুসলমানরা যেন নির্বিঘেœ ইবাদত-বন্দেগি করতে পারে, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করা। মাহে রমজান ও রোজাদারের প্রতি সম্মান বজায় রাখা। সকল প্রকার গোনাহ পাপাচার এবং অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকা।
রোজাদারদের কষ্ট লাঘবে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করা। তারা যেন সুন্দরভাবে মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারে, সে জন্য মসজিদের আশপাশের রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করা। ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং সাহরি ও ইফতারে পচা-বাসি খাবার বিক্রি না করার বিষয়ে নজরদারি করা। মশার কামড় রোধে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া।
নানা কারণে অনেকে রোজা রাখতে পারেন না। এ কারণে ব্যক্তিভেদে মাসয়ালা প্রয়োগ হবে। কিন্তু রমজানের পবিত্রতা নষ্ট করা, রোজা ও রোজাদারের প্রতি সম্মান না দেখানো অনেক বড় ধৃষ্টতা। এগুলো থেকে বিরত থাকা চাই। প্রকাশ্যে ইসলামের কোনো বিধানের অমর্যাদা, রোজার মূল চেতনা ক্ষুণœ হয় এমন বিষয়ে লিপ্ত থাকা নাফরমানির অন্তর্ভুক্ত। জেনেবুঝে সংঘবদ্ধভাবে এমন নাফরমানি আল্লাহর ক্রোধ বাড়িয়ে দেয় এবং অনেক বড় দুর্গতি ডেকে আনে। আল্লাহর ওয়াস্তে রমজানের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষার স্বার্থে এসব গর্হিত আচরণ থেকে নিবৃত্ত থাকা চাই।
মনে রাখতে হবে, রমজান তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অর্জনের মাস। এ মাসে করণীয় হলো তাকওয়া অর্জনে এগিয়ে আসা। কিয়ামুল লাইলের (তারাবি ও তাহাজ্জুদের নামাজ) প্রতি যতœবান হওয়া। কোরআন নাজিলের মাস হিসেবে তেলাওয়াতে কোরআন, তাদাব্বুরে কোরআন (কোরআনের আয়াত ও হেদায়েত নিয়ে চিন্তাভাবনা) এবং আমল বিল কোরআনের (কোরআনের আমল) প্রতি মনোযোগী হওয়া। যাদের কোরআন তেলাওয়াত সহিহ নেই তেলাওয়াত সহিহ করা। বেশি বেশি নফল ইবাদত, দোয়া-দরুদ, তওবা-ইস্তিগফার, জিকির-আজকার ইত্যাদিতে সময় ব্যয় করা। সর্বাবস্থায় সহনশীলতা ও ভ্রাতৃত্ব চর্চায় মনোযোগী হওয়া। অধিক পরিমাণে দান-সদকা করা এবং সব ধরনের কল্যাণকর কাজে এগিয়ে আসা। সংযম বজায় রাখা। প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করা। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের আত্মিক উৎকর্ষের প্রতি মনোনিবেশ করা।
রমজানের বিশেষ বিশেষ মুহূর্তগুলোর ব্যাপারে যতœবান হওয়া। যেমন সাহরি, ইফতার, তারাবি, তাহাজ্জুদ, শবেকদর ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোর ব্যাপারে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা। এ মুহূর্তগুলোর যে বিশেষ আমল রয়েছে তাতে আত্মনিয়োগ করা। বাসাবাড়ি, অফিস-আদালতে ইবাদতের পরিবেশ গড়ে তোলা। মসজিদগুলো ইবাদতের মাধ্যমে আবাদ রাখা। মোদ্দা কথা, এই এক মাসে তাকওয়ার মেহনতের মাধ্যমে গোটা বছরের ইমানি, আমলি এবং রুহানি জিন্দেগির পাথেয় সংগ্রহ করা।
আলেমরা বলে থাকেন, রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে গেলে প্রয়োজনে বিশ্রাম করুন। কিন্তু অনর্থক গল্পে লিপ্ত হবেন না। কারণ কথায় কথা টানতে থাকে এবং আল্লাহ না করুন, বেশি কথা বললে তা ধীরে ধীরে মিথ্যা, গীবত-শেকায়েত ইত্যাদি বিভিন্ন দিকে ছুটতে থাকে।
রমজানে গোনাহের ধারা অব্যাহত রাখা খুবই খারাপ কথা। যেখানে ঘোষণা হতে থাকে নেকির কাজে অগ্রসর হতে, অনিষ্ট থেকে নিবৃত্ত হতে, সেখানে গোনাহের ধারা অব্যাহত রাখা অনেক বড় বঞ্চনার কারণ। বিশেষ করে অনাচার-পাপাচার ও অশ্লীলতা এবং এমন গোনাহ, যা আল্লাহর ক্রোধকে বাড়িয়ে দেয়, এমনসব বিষয় পুরোপুরি বর্জন করা। কারণ ফিরে আসার এটাই মোক্ষম সময়। কিন্তু ফিরে না এসে এর অনুভূতিও জাগ্রত না হওয়া বহুত বড় ক্ষতির বিষয়।
আজ রমজানের ৯ তারিখ। দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাচ্ছে রমজান মাস। এভাবে মানুষের জীবনও একদিন শেষ হয়ে যাবে। বুদ্ধিমান তো সে, যে আগ থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকে। কাজে লাগায় রমজানের বরকতময় প্রতিটি মুহূর্ত। সে অগ্রগামী হয় নেকি ও কল্যাণের পথে, তাকওয়া হাসিলের পথে এবং ব্রত হয় গোনাহ থেকে পাক-পবিত্র হয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার মেহনতে।
লেখক : খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
রাজধানীর পল্লবীতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীরা স্থানীয় যুবদলের নেতা। শুক্রবার ইফতারের আগে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য চলাকালে যুবদলের নেতাকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেন।
হামলায় বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির বিশেষ প্রতিনিধি ইমরুল আহসান জনি, চ্যানেল আইয়ের প্রতিবেদক আখতার হাবিবসহ বেশ কয়েকটি চ্যানেলের ক্যামেরাপারসন আহত হন। দুটি ক্যামেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জানা গেছে, ইফতার অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের বিপুল উপস্থিতিতে গণমাধ্যমকর্মীদের দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে দলের কিছু কর্মী কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর চড়াও হন।
উপস্থিত নেতাকর্মীরা জানান, যুবদল নেতাদের হামলা থামাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঞ্চ থেকে নেমে এলেও তাদের নিবৃত্ত করতে পারছিলেন না। পরে তিনি নেতাকর্মীদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ভিডিওতে দেখা যায় হামলায় অংশ নেন পল্লবী থানার ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, পল্লবী থানা যুবদলের পিয়াস, পল্লবী থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি রাজিব হোসেন পিন্টু, রূপনগর থানা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. আসিফ, পল্লবী থানা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. মাসুদ এবং পল্লবী থানা ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের মো. মনির।
নেতাকর্মীরা জানান, এসব নেতা যুবদল কেন্দ্রীয় সংসদের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের অনুসারী। তবে এ বিষয়ে জানতে মিল্টনের মোবাইলে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হকের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও সাড়া দেননি তিনি।
তবে ঘটনার পর সংবাদকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনার পর আমিনুল হক দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ক্ষমা চান। মিল্টন ও আমিনুল উভয়ই ঢাকা-১৬ আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী।
এ ঘটনায় সংবাদকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিএনপির প্রায় অনুষ্ঠানে সংবাদকর্মীদের হেনস্তা হতে হয়। ক্ষমতায় না আসতেই সাংবাদিকদের এ অবস্থা। ক্ষমতায় আসলে তো আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি নির্যাতন করবে। এমন কোনো প্রোগ্রাম নেই যে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়নি।
তারা আরো বলেন, ‘এর আগে বিএনপির কর্মীরা মাই টিভির সাংবাদিক ইউসুফের ওপর হামলা করেছে। আজকের (শুক্রবার) ঘটনা যে ঘটিয়ে থাকুক, এর দায় উত্তরের শীর্ষ দুই নেতার। আপনারা নিজেরা নিজেরা মারামারি করেন, কিন্তু সাংবাদিকদের ওপর হাত তোলা বরদাশত করা যায় না। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিন, ব্যাখ্যা দিন, ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেন। একই সঙ্গে আর এমন হবে না, সেটি প্রকাশ্যে বলুন। মনে রাখবেন, এই সাংবাদিকরাই আপনাদের বছরের পর বছর সার্ভ করছে। তারা এভাবে মার খেলে আখেরে আপনারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সব হারাবেন’।
এ বিষয়ে বিএনপির মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির ভাই সাংবাদিকদের বলেন, ‘জনি ভাইসহ আহত সাংবাদিকদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বিএনপির মহাসচিব মহোদয়ের প্রতি তিনি নিজে গিয়ে জনি ভাইকে উদ্ধার করেছেন। তবে ফুটেজে দেখলাম হামলাকারীদের ছবি আছে। তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া উচিত। দলের না হলেও চিহ্নিত করে পরিষ্কার করা উচিত তারা কারা’।
জানা গেছে, শুক্রবার রাতে হামলায় আহত সাংবাদিকদের বাসায় গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হক।
এ ঘটনায় মির্জা ফখরুল এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘মনে হয় না তারা (নেতাকর্মীরা) দলকে ভালোবাসে। তারা অতিথিদের সম্মান রক্ষা করতে জানে না।’
এ সময় নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলার মধ্যে আসার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের দালালেরা অনুষ্ঠানে ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে।’
আয়োজকদের পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে এর সমাধান করা হয়েছে। সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমাও চাওয়া হয়েছে।’
এ বছর ভারতের মাটিতে বসবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসর। তবে পাকিস্তান নিজেদের ম্যাচগুলো ভারতে না খেলে বাংলাদেশে খেলতে চায় বলে খবর প্রকাশিত ছড়িয়েছিল। যে খবরকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) প্রধান নাজাম শেঠি।
এমন কোনো আলোচনাই হয়নি বলে দাবি করে শেঠি বলেন, ‘বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে কোনো পর্যায়ে আমি আইসিসির প্রসঙ্গ কিংবা অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় ২০২৩ বিশ্বকাপ নিয়ে কোনো মন্তব্য করিনি। এখন পর্যন্ত আইসিসির কোনো সম্মেলনে এই বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
বিশ্বকাপের আগে সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানে বসবে এশিয়া কাপ। কিন্তু এই টুর্নামেন্টে খেলতে প্রতিবেশী দেশে যেতে রাজি নয় ভারত। তাই তাদের ম্যাচগুলো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আয়োজনের কথা ভাবছে এসিসি। নাজাম জানিয়েছেন এখনো বিষয়টি আলোচনার টেবিলে আছে।
এদিকে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ ম্যাচ বাংলাদেশে হওয়ার খবর প্রসঙ্গে শুক্রবার মুখ খুলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে এ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। আসলে আমি এটা টিভিতে দেখেছি। আইসিসি বা পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড কেউ আমাদের কিছু বলেনি।’
রুতুরাজ গয়কোয়াডের দাপুটে ব্যাটিংয়ে চ্যালেঞ্জিং পুঁজি গড়ল চেন্নাই সুপার কিংস। যা তাড়া করতে নেমে শুভমন গিলের পর রাহুল তেওয়াতিয়া ও রশিদ খানের নৈপুণ্যে জয় তুলে নিল গুজরাট টাইটান্স।
আহমেদাবাদে শুক্রবার আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে ৫ উইকেটের জয় তুলে নেয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন গুজরাট। ১৭৯ রানের লক্ষ্য তারা ৪ বল হাতে রেখে ছুঁয়েছে।
গিল সর্বোচ্চ ৩৬ বলে ৬৩ রান করেছেন ৬ চার ও ৩ ছক্কায়। শেষ দিকে তেওয়াতিয়ার ১৪ বলে অপরাজিত ১৫ ও রশিদ খানের ৩ বলে অপরাজিত ১০ রান দলকে জয় এনে দেয়।
চেন্নাইয়ের পক্ষে রাজবর্ধন হাঙ্গার্গেকর ৩৬ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামা চেন্নাই নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৮ রান সংগ্রহ করে। রুতুরাজ সর্বোচ্চ ৯২ রান করেন। তার ৫০ বলের ইনিংসে ছিল ৪ চার ও ৯ ছক্কা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।