
১৯৩২ সালের ৯ মার্চ ফেনীতে জন্মগ্রহণ করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। বাবার বদলির চাকরির সুবাদে তিনি বাংলার অনেক অঞ্চলে ঘুরেছেন। ১৯৪৯ সালে ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯৪৯ সালে ঢাকার সরকারি আর্ট কলেজে ভর্তি হয়ে সেখানকার শিক্ষা সমাপন করেন ১৯৫৪ সালে। কলেজের প্রিন্সিপাল শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের স্নেহধন্য অন্তর্মুখী স্বভাবের কাইয়ুম চৌধুরী সহপাঠীদের সঙ্গে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন। কর্মজীবনের শুরুতেই কাইয়ুম চৌধুরী বিজ্ঞাপনী সংস্থা, বইয়ের প্রচ্ছদ ও সচিত্রকরণের কাজে মনোনিবেশ করেছেন। এ সময়ে কাইয়ুম চৌধুরী ‘ছায়াছবি’ নামে একটি চলচ্চিত্র সাময়িকী যুগ্মভাবে সম্পাদনা করেছিলেন। ১৯৫৭ সালে কাইয়ুম চৌধুরী ঢাকার আর্ট কলেজে শিক্ষকতায় যোগ দেন। ১৯৬০ সালে তাহেরা খানমের সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। তাহেরা ছিলেন আর্ট কলেজে ভর্তি হওয়া প্রথম চার ছাত্রীর একজন। প্রচ্ছদ-পোস্টার-নকশা-সচিত্রকরণের মতোই চিত্রকর কাইয়ুম চৌধুরীর শিল্পভাষা ছিল অত্যন্ত মনোগ্রাহী এবং স্বতন্ত্র ভাষা-বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর। তেলরং, জলরং, কালি-কলম, মোমরং, রেশম ছাপ ইত্যাদি নানা মাধ্যমে তিনি কাজ করেছেন। জ্যামিতিক আকৃতির অনুষঙ্গ যেমন তার চিত্রকলার একটি অনুষঙ্গ, তেমনি নকশাপ্রধান চিত্রপট তার চিত্রকলার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কাইয়ুম চৌধুরীর চিত্রাবলি বর্ণোজ্জ্বল; লাল, নীল, সবুজ এই তিনটি রং তিনি প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করেছেন। তার ক্যানভাস প্রায়শই বর্গাকার। তার চিত্রাবলিতে লোকশিল্পসুলভ পুতুল, পাখা, হাঁড়ি, শীতলপাটি, কাঁথা ইত্যাদির পৌনঃপুনিকভাবে এসেছে। শিল্পকলায় অনন্য অবদানের জন্য ১৯৮৬ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন তিনি। ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী।
রাজনীতিতে উত্তাপ বাড়ছে। উত্তাপ বাড়ছে নেতাদের বক্তৃতায়। বিরোধী দলসমূহের আন্দোলনের হুঙ্কার আর ক্ষমতাসীন দল কর্র্তৃক নির্বাচনের হাওয়া তোলার চেষ্টা, দুটোই চলছে রাজনীতিতে। প্রতি পাঁচ বছর পর নির্বাচন হবে, নির্বাচনের এই সময় সীমা মানলে আর রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ২০২৩ এর শেষে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা আছে। সে হিসেবে নির্বাচনের আগে আগামী ৮/৯ মাস রাজনীতিতে একটা চরম উত্তেজনার সময়। বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচনপ্রিয় বলে সবাই মানেন। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে এখন তৈরি হয়েছে সংশয় এবং অনাস্থা। আগামী নির্বাচনেও সকল দল কি অংশ নেবে, নির্বাচন কি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে? এই প্রশ্ন যেমন আছে অতীতের উদাহরণ দেখে সংশয় তেমনি আছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হয়ে গেলেও দেশের নির্বাচন নিয়ে যত বিতর্ক হয় তার বেশিরভাগ অংশ জুড়েই থাকে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে কি না এবং নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না।
প্রতিবার নির্বাচন আসে আর সরকারি দল এবং বিরোধী দলের মধ্যে মূল বিরোধ লেগে যায় নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কেমন হবে তা নিয়ে। ক্ষমতায় থেকেই নির্বাচন করতে চায় ক্ষমতাসীনরা এবার তেমনই চাইছে আওয়ামী লীগ। এবং তাদের চাওয়ার সপক্ষে যুক্তি ভারী করার জন্য সংবিধান ‘রক্ষার’ শপথ নেওয়া হচ্ছে। এমনও বলছেন যে সংবিধান থেকে একচুলও নড়বেন না তারা। অপর দিকে বিএনপি দাবি করছে প্রয়োজন হলে সংবিধান সংশোধন করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। অতীতের নির্বাচনের শিক্ষা থেকে তারা বলছেন, দলীয় সরকারের অধীনে কোনোভাবেই নির্বাচনে যাবে না আলোচনা এবং বিতর্কে প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে সংবিধান। বক্তব্য বিবৃতি আর উত্তেজনাপূর্ণ বক্তৃতা শুনে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, সংবিধানই এখন সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রধান আলোচ্য বিষয় বা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রধান বাধা।
সংবিধানকে বলা হয় কোনো দেশের সর্বোচ্চ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আইন। রাষ্ট্রে নানা ধরনের অনেক আইন থাকতে পারে। যেমন যে আইন পার্লামেন্টে প্রণীত হয় তাকে বলে অ্যাক্ট বা আইন। যেমন বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪, শ্রম আইন ২০০৬, তথ্য অধিকার আইন ২০১০। সাধারণত সংসদেই আইন পাস করা হয় তবে সংসদ না থাকলেও যদি আইনের প্রয়োজন হয় তাহলে সংসদের অবর্তমানে বা সংসদ অধিবেশনরত অবস্থায় না থাকলে রাষ্ট্রপতি যে আইন প্রণয়ন করতে পারেন তাকে বলা হয় অধ্যাদেশ বা ইংরেজিতে অর্ডিন্যান্স। তবে সংবিধানের অবস্থান অন্য যে কোনো আইনের চেয়ে উচ্চতর অবস্থানে, যে কারণে সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। সংবিধানকে রাষ্ট্রের আইনগত ভিত্তি বা রাষ্ট্র গঠনকারী দলিলও বলা হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে শাসন ক্ষমতায় যারা থাকেন তারা সবসময় সংবিধানকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার্য দলিল বলেই মনে করেন।
সামরিক শাসনবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যে প্রশ্নে সব আন্দোলনকারী রাজনৈতিক দল একমত হয়েছিলেন তা হলো নির্বাচনটা নিরপেক্ষ হতে হবে। নির্বাচিত দাবি করা সামরিক শাসক ক্ষমতা ছেড়ে দিলে শাসনতান্ত্রিক শূন্যতা তৈরি হবে এ কথা বলে ক্ষমতা ছাড়তে গড়িমসি করার কালে পথ বের করা হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার করার। সেই সরকারের অধীনে নির্বাচন হলো কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিতর্কের শেষ হলো না। সামরিক সরকার পরবর্তী বিএনপি সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এই আশঙ্কায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হলে বিএনপি প্রথমে সংবিধানের দোহাই দিয়ে সে দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছিল, এটি সংবিধানে নেই। ইতিহাসের পথ পরিক্রমায় এখন বিএনপির এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এখন আওয়ামী লীগ বলছে, এটি সংবিধানে নেই। তারা এটুকু বলেই কিন্তু ক্ষান্ত হচ্ছে না, বরং আগ বাড়িয়ে আরও বলছে যে সংবিধান থেকে একচুলও তারা নড়বে না। যারা ক্ষমতায় থাকে তাদের সংবিধান রক্ষা করার এই যে তাগিদ তার ফলে সাধারণ মানুষের মনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগতে পারে তারা কি আসলেই সংবিধান রক্ষা করতে চান নাকি ক্ষমতা রক্ষায় ঢাল হিসেবে সংবিধানকে ব্যবহার করতে চান? কারণ জনগণের সংবিধানসম্মত অধিকারের প্রশ্নে তারা তো এত সোচ্চার হয়ে উঠছেন না বা পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।
জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের ফলে বাংলাদেশের জন্ম। ৭০ এর নির্বাচন এক্ষেত্রে এক মাইলফলকের মতো কাজ করলেও স্বাধীনতার পর থেকেই সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে ক্ষমতাসীনরা বরাবরই অনাগ্রহ দেখিয়ে আসছে। মাগুরা উপনির্বাচনকে নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের পর আওয়ামী লীগ তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে। তারা আন্দোলন, নির্বাচন বর্জনের মধ্যদিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে বাধ্য করে। যেহেতু সংবিধানে ছিল না তাই সংবিধানের অসামঞ্জস্য দূরীকরণের লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ছিল একটি রাজনৈতিক সমঝোতার ফল। এর ফলে আশা করা হয়েছিল শুধু নির্বাচন সুষ্ঠু হবে তাই নয় সমস্ত রাজনৈতিক দল যেন নির্বাচনে অংশ নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী পরিবেশ গড়ে উঠবে।
কিন্তু আশা স্থায়ী হলো না। রাজনৈতিক সমঝোতার ওপর ধাক্কা এলো ২০০৪ সালে, বিএনপি সরকারের আমলে, সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী এলো। এর মাধ্যমে বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাড়িয়ে দেওয়া হলো, যা সন্দেহের উদ্রেগ করল রাজনৈতিক মহলে। দ্বিতীয় ধাক্কা আসে ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত কর্র্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে ভবিষ্যতের জন্য অসাংবিধানিক ঘোষণা করে প্রদত্ত রায়ের পর। আদেশে প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ‘প্রসপেকটেভলি’ বা ভবিষ্যতের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন, যদিও এর আগে হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চ ত্রয়োদশ সংশোধনীকে সংবিধানসম্মত বলে রায় দিয়েছিল।
তবে এর আগেই ‘মেজরিটারিয়ান পদ্ধতিতে’ বা সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে, আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের প্রায় ১৫ মাস আগে, ২০১১ সালের ৩০ জুন তারিখে ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে যে বিধান ছিল তা বাতিল করা হয়। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী একতরফাভাবে পাসের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার এই কাজ করে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৯৬ সালের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা সৃষ্টির কারণে এবং পরবর্তী সময়ে সর্বস্তরে যে সর্বগ্রাসী দলীয়করণ হয়েছে, তার ফলে শুধু নির্বাচনীব্যবস্থা নয়, প্রশাসনব্যবস্থাও আস্থা হারিয়েছে। একথা উল্লেখ করতে হয় যে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করা হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা রাখার পক্ষে বিশেষ সংসদীয় কমিটির সর্বসম্মত সুপারিশ উপেক্ষা করে, আদালতের সংক্ষিপ্ত আদেশের একটি ব্যাখ্যার ভিত্তিতে (যে ব্যাখ্যা নিয়ে বিতর্ক এখনো চলছে) এবং আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের প্রায় ১৫ মাস আগে। এরপর অনুষ্ঠিত ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের দুটি সংসদ নির্বাচন দেশের রাজনীতিতে এক অমোচনীয় কালির দাগ রেখে গেছে।
এ রকম এক পরিস্থিতিতে যখন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কড়া নাড়ছে তখন দেশের নির্বাচন পদ্ধতি, নির্বাচনকালীন সরকার, প্রশাসন ও পুলিশের ভূমিকা এবং নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার সবকিছু নিয়েই সন্দেহ ও অবিশ্বাস দানা বেঁধে উঠেছে। ফলে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতাভিত্তিক নির্বাচন কি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতামত ধারণ করে? এই প্রশ্ন জোরেশোরে উঠছে। বিষয়টা একটু বিশ্লেষণ করে দেখা যাক। বাংলাদেশে এ যাবৎকালে অনুষ্ঠিত এগারটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে চারটি নির্বাচনকে আপাত গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়। সেই নির্বাচনগুলো যেমন ১৯৯১, ১৯৯৬ (জুন), ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় রাজনৈতিক দলের প্রাপ্ত ভোট, আসন এবং ক্ষমতায় যাওয়ার মধ্যে একটা বড় ধরনের অসামঞ্জস্য লক্ষ করা যায়। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে সরকার গঠনকারী দল বিএনপির প্রাপ্ত ভোট ৩০.৮১ শতাংশ এবং আসন সংখ্যা ১৪০ আর আওয়ামী লীগের প্রাপ্ত ভোট ৩০.০৮ শতাংশ আর আসন ছিল ৮৮। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ৪৮.৯০ শতাংশ ভোট পেয়ে ২৩০ আসন আর বিএনপি ৩৭.২০ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পায় ৩২। তাহলে দেখা যাচ্ছে এই পদ্ধতিতে ভোটের সংখ্যা ও ভোটের হার নয়, কতটা আসনে বিজয়ী হলো এটাই প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এক ভোটেও যদি কোনো প্রার্থী বিজয়ী হন তাহলে বিপক্ষ প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের কোনো মূল্যই থাকে না। সে কারণেই নির্দিষ্ট আসনে বিজয়ী হওয়ার জন্য প্রার্থীরা যে কোনো পথ অবলম্বন করতে দ্বিধা করেন না। ফলে দেশ শাসিত হয় সংখ্যালঘিষ্ঠ দ্বারা।
নির্বাচনী ব্যবস্থার এই দুর্বলতা সংশোধনের জন্য বামপন্থি দলসমূহ-সহ অনেক রাজনৈতিক দল সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা প্রপোরশোনাল রিপ্রেজেন্টেশন পদ্ধতির কথা বলছেন। এই পদ্ধতিতে নির্বাচনে প্রতিটি ভোট কাজে লাগে বা মূল্যায়িত হয়। বর্তমানে পৃথিবীর ৯২টি দেশে নানা পদ্ধতিতে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের নীতি অনুসরণ করে নির্বাচন পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে তিনটি পদ্ধতি চালু আছে যেমন মুক্ত তালিকা, বদ্ধ তালিকা এবং মিশ্র তালিকা। এর ফলে একক দলীয় আধিপত্য, অর্থ ও পেশিশক্তির প্রভাব হ্রাস পায় এবং সংখ্যাগুরুর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলেও সংখ্যালঘু উপেক্ষিত হয় না।
নির্বাচন আসছে এবং কীভাবে নির্বাচন হবে তা নিয়ে বিতর্কও বাড়ছে। আগামী দিনে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চর্চা কীভাবে হবে সে বিষয়ে ভাবতে হলে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে ভাবতেই হবে। কিন্তু নির্বাচনে যন্ত্রের ব্যবহার নিয়ে যত উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি নিয়ে তত ভাবনা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। অতীতে নির্বাচন হয়েছে কিন্তু গণতান্ত্রিক প্রথা এবং প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী হয়নি বরং দুর্বল হয়েছে, গণমানুষের আস্থা হারিয়েছে। আস্থা হারানো মানুষের আস্থা ফেরাতে এবং সংঘাত সহিংসতা এড়াতে নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার তাই জরুরি।
লেখক: রাজনৈতিক সংগঠক ও কলামিস্ট
প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল শিক্ষার অগ্রগতিতে এগিয়ে চলছে পৃথিবী। প্রযুক্তির মধ্যে নারী এবং অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠীকে যুক্ত করা গেলে লৈঙ্গিক সমতা অর্জন ও সামাজিক বৈষম্য কমানো সম্ভব। স্ন্যাপশট ২০২২ রিপোর্ট অনুসারে, ডিজিটাল বিশ্ব থেকে নারীদের বাদ দেওয়ায় গত এক দশকে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মোট দেশজ উৎপাদন থেকে এক ট্রিলিয়ন কম হয়েছে, যা ২০২৫ সাল নাগাদ ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে।
ডিজিটাল প্রযুক্তির অগ্রগতি উন্নয়ন এবং মানবিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য এবং ২০৩০ এজেন্ডার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রচুর সুযোগ প্রদান করে। দুর্ভাগ্যবশত, ডিজিটাল বিপ্লবের সুযোগগুলো লিঙ্গ বৈষম্যের বিদ্যমান নিদর্শনগুলোকে স্থায়ী করার ঝুঁকিও উপস্থাপন করে। ক্রমবর্ধমান বৈষম্য ডিজিটাল দক্ষতা এবং প্রযুক্তির অ্যাক্সেসের প্রেক্ষাপটে ক্রমবর্ধমানভাবে স্পষ্ট হয়ে উঠছে, লিঙ্গ বিভাজনের ফলে নারীরা পিছিয়ে পড়ছে।
এমনই প্রেক্ষাপটে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ডিজিটাল: লিঙ্গ সমতার জন্য উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি। নির্যাতন-নিষ্পেষণ বন্ধসহ নারীদের সব অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ১৯১১ সাল থেকে এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। পরিবর্তন এসেছে নারীর অবস্থা ও অবস্থানেও। বর্তমানে সমাজের প্রায় সব খাতেই নারীর অংশগ্রহণ দৃশ্যমান হচ্ছে। শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে মেয়েদের উপস্থিতি এখন শতভাগ। পোশাক শিল্পের কৃতিত্বের সিংহভাগই নারীর। কিন্তু বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশই যেখানে নারী, সেখানে অগ্রগতি দৃশ্যমান হচ্ছে খুব অল্পসংখ্যক নারীর মধ্যেই। নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন ছাড়া দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। সরকার নারীশিক্ষার বিস্তার ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কর্মক্ষেত্রে অবাধ প্রবেশ ও নীতি নির্ধারণে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। এরপরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ঘরে-বাইরে নারীর নিরাপত্তা। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন করতে হলে অবশ্যই এর ৫ এবং ১০ অভীষ্ট অর্জনে সাফল্য দেখাতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল একটি বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণ। বাংলাদেশের সংবিধানেও এর প্রতিফলন আছে। কিন্তু ৫০ বছরে কি আমরা বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণ করতে পেরেছি? সিডও সনদের শর্ত বাস্তবায়ন করতে হলেও নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করার কোনো বিকল্প নেই।
বিংশ শতাব্দীতে লিঙ্গসমতাভিত্তিক যে সমাজ গঠনের ডাক দিয়েছিলেন রোকেয়া, সে সমাজ গঠনের পথে আজ ৫০-উত্তীর্ণ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে দাঁড়িয়ে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে বিশ্বের নারীর ক্ষমতায়নে আজ বাংলাদেশ রোল মডেল। নারী ক্ষমতায়ন মূল্যায়নে যেসব অনুঘটক বা সূচক ব্যবহার করা হয় তার সবকটি সূচকে আজ বাংলাদেশ বিশ্বে এগিয়ে। দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, জাতীয় সংসদের স্পিকার নারী, বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী। নারী সমাজের উন্নয়নের জন্য এর চেয়ে বড় ইতিবাচক শর্ত আর কী হতে পারে? বাংলাদেশের সংবিধানসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিমালায় নারীর রাজনৈতিক-সামাজিক ক্ষমতায়ন ও অংশগ্রহণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে প্রযুক্তির উন্নয়ন ও ব্যবহার বিশ্ববাসীকে পরস্পরের কাছাকাছি এনে দিয়েছে। এর ফলে পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিক অগ্রগতিও সাধিত হয়েছে। তবে সব শ্রেণির মানুষের যেহেতু প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার সমান নয়, তাই এ অগ্রগতির সুফল সব মানুষের কাছে সমানভাবে পৌঁছেনি। বিদ্যমান প্রযুক্তি নারীবান্ধব কতটুকু সে প্রশ্ন সামনে আসছে। সেখানে প্রবেশাধিকার ও সুফল ভোগ করার ক্ষেত্রে নারীরা ব্যাপকভাবে পিছিয়ে রয়েছে প্রায় ৫৫ ভাগ নারী এখনো প্রযুক্তির বাইরে রয়েছে।
প্রযুক্তি মানবসমাজকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করেছে। এমনকি নারী সমাজের যে অংশের প্রযুক্তিতে অভিগম্যতা ছিল, তারাও এ সুবিধা পেয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহারে তারা সমান দক্ষতা দেখিয়েছে। বেকারত্ব, দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হতে প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোক্তাসহ বিভিন্ন কর্মসংস্থান বেছে নিয়েছে। প্রযুক্তির সহায়তায় শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে গেছে, প্রশিক্ষণ কর্মসূচিসহ সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে পেরেছে। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ঘরে বসেই পেশাগত কাজ চালিয়ে গেছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে ন্যায়বিচারপ্রাপ্তির সুযোগ গ্রহণ করেছে। প্রযুক্তির নানা নেতিবাচক ব্যবহার মোকাবিলা করেছে।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক
স্বাস্থ্য খাতে সাংবাদিকতা দীর্ঘদিনের। খুব কাছ থেকে দেখেছি এই খাতের ভেতর বাহির। অসংখ্য রিপোর্ট করেছি সংবাদপত্রে। কথা বলেছি টেলিভিশনে, বিভিন্ন পর্যায়ের সভা বৈঠকে। তারপরও প্রায় এক বছর ধরে নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করেছিলাম এই খাতের ভালো-মন্দ থেকে। প্রচ- এক কষ্টবোধ। কষ্টটি যেমন আমার ব্যক্তিগত, আমার পরিবারের, সর্বোপরি রাষ্ট্রের। সে কথায় আসি একটু পরে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর এক বক্তব্যে নিজের মধ্যে এক ধরনের ঘুরে দাঁড়ানোর তাগিদ অনুভব করলাম। প্রসঙ্গটি দেশের চিকিৎসকদের দায়িত্ববোধের। অন্য সব পেশার মতোই এই পেশায়ও যেমন ভালো মানুষ আছেন, তেমনি খারাপ মানুষও আছেন। ভালোরা জান-পরান দিয়ে মহান ব্রত মেনে মানুষের জীবন বাঁচিয়ে তোলেন। চিকিৎসক সমাজের মুখ উজ্জ্বল করেন। খারাপরা তাদের অনৈতিক ও বিবেকবর্জিত আচরণে নিজেদের পেশার পাশাপাশি সেই উজ্জ্বল নিবেদিত প্রাণ মানুষগুলোর সুনামকেও কলঙ্কিত করে তোলেন।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সূত্র মতে, গত ২ মার্চ সকালে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, বিজ্ঞানী, গবেষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ’, ‘এনএসটি ফেলোশিপ’ ও ‘বিশেষ গবেষণা অনুদান’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘ডাক্তারদের একটি মহল এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জনের পর চিকিৎসাচর্চা ও গবেষণা বাদ দিয়ে সরকারি চাকরি অথবা রাজনীতিতে চলে যান। আর এক শ্রেণি আছেন, তারা শুধু টাকা কামাতেই ব্যস্ত। একই সঙ্গে সরকারি চাকরি এবং প্রাইভেটে প্র্যাকটিসও করেন।’
কথাগুলো নতুন কিছু নয়। সাধারণ মানুষ এগুলো অনেক আগে থেকেই জানে ভুক্তভোগী হিসেবেই। বিশেষ করে টাকা কামাইয়ে ব্যস্ততার ব্যাপারটি হাড়ে হাড়ে টের পান ভুক্তভোগী রোগীরা। সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও একশ্রেণির চিকিৎসক কর্মস্থলের চেয়ে প্রাইভেট চেম্বারেই বেশি আন্তরিক। সেখানেও তারা রোগীর সেবা দিয়ে আয় করেন। তাতে বাধা নেই। আইনে নতুন কিছু না আসা পর্যন্ত বাংলাদেশের চিকিৎসকরা চাকরি আর প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যে ‘কামাই’ এর কথা বলেছেন প্রশ্নটা সেখানেই। মানে যেন তেন ভাবে কামাই। গণমাধ্যমে এগুলো নিয়মিতই আসে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী আগেও প্রকারান্তরে চিকিৎসকদের সম্পর্কে এমন মনোভাব প্রকাশ করেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রীও মাঝেমধ্যে বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর এবারের কথা বেশ সুস্পষ্ট ও জোরালো। চিকিৎসকদের মধ্যে এর প্রতিক্রিয়া কী তা এখনো সমষ্টিগতভাবে প্রকাশ পায়নি। ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বেশিরভাগই ইতিবাচক। তবে আমি নিশ্চিত সমষ্টিগতভাবে প্রধানমন্ত্রীর এই মনোভাবকে ভালোভাবে দেখছেন না চিকিৎসকরা। ভেতরে ভেতরে জ্বলছেন দল-মত নির্বিশেষে। রাজনৈতিক প্রশ্নে যার যার অবস্থান বজায় রাখেন সবাই। একে অন্যের সমালোচনা করেন। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের জায়গায়ও সমালোচনা আরও তীব্র। কেবল নিজেদের আয় উপার্জনের নৈতিক অনৈতিক বিষয় নিয়ে কোনো পর্যায়ে থেকে আলোচনা উঠলেই নাখোশ। ভিন্ন ভিন্ন প্লাটফর্মে থেকেও কথা বলেন একসুরে।
আমি বরাবরই বলে আসছি দেশের চিকিৎসা সেবায় অনৈতিক বাণিজ্যের মূলে একশ্রেণির চিকিৎসক। যাদের প্রশ্রয় দেয় চিকিৎসকদের সংগঠনগুলো ও নেতারা। অবশ্যই সবার কথা বলছি না। সবাইকে সমান পাল্লায় ফেলছি না।
প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বেশির ভাগের মালিকানা, ব্যবস্থাপনা কিংবা পরিচালনা চিকিৎসকদের হাতে। প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের ক্ষেত্রেও তাই। এটা যে খারাপ তা বলছি না। বরং ভালো। এই ভালো কিছুই খারাপ হয়ে যায় যখন সেবা খাতের এই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্য খাতের মতো বা তার চেয়েও বেশি মুনাফা আয়ে নেমে পড়ে। আর বহুলপ্রচলিত কমিশন বাণিজ্য তো নানা ফরম্যাটে আছেই। কয়েক বছর আগে আমি নিজেই একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছি। যার বিষয়বস্তু ছিল চিকিৎসকদের ‘দশহাতে’ কমিশন আদায়। অবস্থার এখনো পরিবর্তন হয়নি। এখনো আছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত টেস্ট করানো, অপ্রয়োজনীয় ওষুধ লেখার অভিযোগ। প্রয়োজনের বেশি সময়ে হাসপাতালে রেখে বিল বাড়ানোর অভিযোগও আছে। এসব দেখভালের জন্য সরকারি কর্র্তৃপক্ষ আছে। তারাও দেখে না দেখার ভান করেন। তারাও এক রকম জিম্মি। মালিক সিন্ডিকেট অনেক বেশি শক্তিশালী। এই শ্রেণির মানুষেরা আগে চিকিৎসক না আগে ব্যবসায়ী সেই প্রশ্ন আসতেই পারে।
মনে থাকার কথা, করোনার প্রথমদিকে রিজেন্ট হাসপাতাল আর জিকেজি গ্রুপ ধরা খাওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান জোরালো হয়েছিল। লাইসেন্সবিহীন বা বছরের পর বছর নবায়ন না করা এবং রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছিল। গুলশানের শাহাবুদ্দিন হাসপাতালে অভিযানের পর তা আর এগোতে পারেনি। অভিযান বন্ধ না হলে সব হাসপাতালে ধর্মঘট ডাকার হুমকি দেয় বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত চিকিৎসক নেতা। আর শাহাবুদ্দিন হাসপাতালের মালিক ছিলেন বিএনপির নেতা। তবুও হুমকির মুখে অভিযান বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তাই নয় যারা অভিযান চালায় তাদের প্রশ্নবিদ্ধ করা হয় নানা অজুহাতে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চেয়ারগুলোতে থাকা দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা সবাই কি দুর্নীতিবাজ! মোটেই না। অনেকেই আছেন চেষ্টা করেন নীতি নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে। শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা পারেন না। একটু এগিয়ে গেলেই থমকে যেতে হয়। ঘনিষ্ঠ কোনো কোনো কর্মকর্তা ব্যক্তিগত আলাপে মাঝেমধ্যে আক্ষেপ করেন। যন্ত্রণার কথা বলেন। তাদের কথার সারমর্মে পরিষ্কার কোনো না কোনো চিকিৎসক নেতার কারণেই তারা থেমে যান।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও মাঝে মধ্যে নড়েচড়ে উঠতে চাইলেও পারে না। কারণ তারাও ভয় পায় চিকিৎসক কমিউনিটিকে। রয়েছে ক্যাডারভিত্তিক সমস্যা। প্রকল্প, বদলি, নিয়োগ, পদোন্নতি, কেনাকাটা সামাল দিতেই হিমশিম অবস্থা তাদের। প্রায় এক যুগ হতে চলছে তারা এখন পর্যন্ত রোগী সুরক্ষা কিংবা বেসরকারি চিকিৎসা সেবা বিষয়ক আইনটিকে আলোর মুখ দেখাতে পারেননি। এর আড়ালেও নাকি ওই চিকিৎসকদের হাত আছে। ওই আইনে রোগীর সুরক্ষা আর চিকিৎসক ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষার ভারসাম্য নিয়ে প্রশ্ন আছে। প্রস্তাবিত ওই আইনের খসড়ায়ও রোগীর চেয়ে চিকিৎসক আর চিকিৎসা বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ বেশি। অর্থাৎ চিকিৎসকদের ‘কামাই’-এর পথ সুরক্ষিত রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা হয়েছে। এমনকি আইনের হাত যেন তাদের জন্য অন্যদের তুলনায় ছোট রাখা হয় প্রকারান্তরে সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব ওই আইনে প্রতিফলিত হবে নাকি উল্টো ঘটবে সেটাও দেখার সুযোগ আছে।
চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বা বিএমএ এখন সরকারি দল আওয়ামী লীগের সমর্থিত চিকিৎসকদের নেতৃত্বে চলছে। বিএনপির সময়ে ছিল বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকদের হাতে। প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পরে আওয়ামী লীগের সমর্থিত চিকিৎসকদের অবস্থা এখন জোঁকের মুখে চুন পড়লে যেমনটা হয় তেমন। আর বিএনপি বা অন্যান্য দলের সমর্থিত চিকিৎসকরা কী করেন তা দেখার অপেক্ষা করতে হবে। চিকিৎসকদের সংগঠনগুলো কি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ইতিবাচক ভাবে নিয়ে আত্মশুদ্ধির পথে হাঁটবে নাকি উল্টো কোনো পথ ধরবে সেটাই দেখার বিষয়।
এবার আসি শুরুর কথায়। কষ্টের কথায়। গত বছর ৪ ফেব্রুয়ারি আমার বড় ভাই মারা যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। তিনি ছিলেন বিচারপতি। হাইকোর্ট বিভাগ থেকে নিয়োগে পেয়েছিলেন আপিল বিভাগে। মারা যান আইসিইউতে। আগে ১৩ দিন ছিলেন কেবিনে। তার জন্য ৬ জন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপককে নিয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। এক মাস আগে তিনি করোনায় আক্রান্ত হলেও ওই হাসপাতালের ভর্তির আগেই তিনি করোনামুক্ত হন। ওই হাসপাতালের একাধিকবার টেস্ট রিপোর্টেও নেগেটিভ এসেছে। তবু ওই ১৩ দিনে বোর্ডের কোনো সদস্য কিংবা কোনো অধ্যাপক পর্যায়ের চিকিৎসক রোগীকে একটিবার দেখতে যাননি। উপাচার্য তাদের পাঠাতে ব্যর্থ হয়েছেন। আমি নিজেও কারও কারও কাছে গিয়েছি বারে বারে। তারা আসেননি। সময় করতে পারেননি। কেউ কেউ অজুহাত দিয়েছেন পরীক্ষার হলে ব্যস্ত থাকার। কেউ ছিলেন মিটিংয়ে। দুপুরের পর সবাই ছুটেছেন যার যার প্রাইভেট চেম্বারে। তাদের মতো বিশেষজ্ঞ সিনিয়র চিকিৎসকদের আসলেই সময় কই হাসপাতালে ভর্তি রোগীকে দেখতে যাওয়ার! সে দায়িত্ব না হয় সামাল দিক শুধুই অপেক্ষাকৃত জুনিয়র চিকিৎসকরা!
পরে কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেছেন বোর্ডে নাম থাকলেই রোগীর কাছে যেতে হবে এমন কোনো কথা নেই। যদি তাই হয় তবে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে অযথা বোর্ড করার মানে কী? তবে আমি শঙ্কিত হই যখন আমার সামনেই ওই হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেছেন- এই বিচারপতিই তো চিকিৎসকদের ধর্মঘটকে অনৈতিক বলে রুল দিয়েছিলেন! যদিও তাকে আর পরে জিজ্ঞেস করার সুযোগ পাইনি, রোগীদের জিম্মি করে ধর্মঘট না করতে বলার কারণেই কি সিনিয়র কোনো চিকিৎসক একজন রোগীর কাছে যাবেন না! আর কী কারণ থাকতে পারে এক ভবন থেকে আরেক ভবনে গিয়ে একজন রোগীকে দেখতে না পারার! এই একজন রোগী, একজন বিচারপতি কি শুধু আমার ভাই! তিনি তো রাষ্ট্রেরও একজন গুরুত্বপূর্ণ মানব সম্পদ ছিলেন। এই কষ্ট তো রাষ্ট্রেরও।
যদিও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তির আগে বেশ কিছুদিন একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ছিলেন আমার ভাই বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান মিজান। তখন প্রায় প্রতিদিন সিনিয়র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তাকে দেখেছেন সশরীরে। যিনি ওই বোর্ডের সদস্যদের চেয়েও বয়সে এবং পদে অনেক সিনিয়র। এমনকি রোগী তখন করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। এই চিকিৎসকের প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা। শ্রদ্ধা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিও। তিনি অনেক দেরিতে হলেও চিকিৎসকদের জন্য গুরুতর কিছু অপ্রিয় সত্য কথা বলেছেন। তবে শুধু কথায় নয়, এর বাস্তব প্রতিফলন ঘটাতে পারলে মানুষের বিশাল উপকার হবে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে রোগীদের হয়রানি কমবে, আস্থা বাড়বে। মানুষের চিকিৎসা ব্যয় কমবে। চিকিৎসকদের সম্মান মর্যাদা অক্ষুণœ থাকবে। এক কথায় চিকিৎসাপ্রার্থী লাখো কোটি মানুষের স্বস্তিদায়ক হয়ে উঠতে পারে প্রধানমন্ত্রীর ওই সত্যভাষণ।
লেখক: সাংবাদিক
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ- সেন্টমার্টিন। আয়তনে প্রায় ৮ বর্গ কিলোমিটার। নাফ নদীর মোহনায় যার অবস্থান। প্রচুর নারিকেল পাওয়া যায় বলে স্থানীয়ভাবে অনেকে এটার নাম করেছে- ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’। তবু এই দ্বীপ ঘিরেই শুরু হয়েছে, দখল উৎসব। ১৩ পরিবারের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে, প্রকৃতির এই নয়নাভিরাম ক্ষুদ্র দ্বীপ। যদিও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এটিকে সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা বলে ঘোষণা করেছে। সংরক্ষিত এলাকায় কীভাবে দখল উৎসব চলে? উত্তর জানা না থাকলেও বোঝা যায়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছেন অনেক রাঘব-বোয়াল। যারা নিয়মিতভাবে, অর্থগন্ধ পেয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় মানুষজন অসহায় হলেও, কিছুই বলার নেই। কারণ, সেই ১৩ পরিবার! তারাই, সেন্টমার্টিনের ভালো-মন্দের গডফাদার!
গত ৭ মার্চ, দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায় প্রকাশিত - ‘১৩ পরিবারের দখলে সেন্টমার্টিন’ শিরোনামের সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়- কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন সেন্টমার্টিন নিয়ন্ত্রণ করছে ১৩ পরিবার। জমি বিক্রি, রিসোর্ট তৈরি কিংবা সেখানে কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান করতে গেলে লাগবে তাদের সুদৃষ্টি। পরিবারগুলো খুশি থাকলে যে কেউ প্রাসাদও তৈরি করতে পারেন সেখানে। ৫০ বছর ধরে তারা বলতে গেলে এলাকাটি শাসন করছেন। তাদের পেছনে আছেন উপজেলার প্রভাবশালীরা।
এ ছাড়া হোটেল-রেস্তোরাঁ ও ছোট ছোট দোকানপাটের মধ্যে বেশির ভাগেরই মালিক ওই ১৩ পরিবারের সদস্যরা। এক চেটিয়াত্বের কারণে যে যার মতো পর্যটকদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। পর্যটকরা কারও কাছে প্রতিকার চাইতে পারছেন না।
সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে স্থানীয়দের কাছে নারিকেল জিঞ্জিরা নামে পরিচিত এ দ্বীপে প্রতিদিন কয়েক হাজার পর্যটক আসেন। এখানে স্থানীয়দের পাশাপাশি বাইরের প্রভাবশালীদেরও হোটেল ও রিসোর্ট আছে।
সেন্টমার্টিনে সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেন্টমার্টিন কারা নিয়ন্ত্রণ করেন। পর্যটন খাতসমৃদ্ধ হলেও যোগাযোগ, চিকিৎসা, শিক্ষা, নিরাপত্তাসহ মৌলিক অনেক সমস্যা রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম সমস্যা হচ্ছে যোগাযোগ। জরুরি কাজে টেকনাফ ও জেলা সদর কক্সবাজার আসা অনেক সময়ই সম্ভব হয় না। বর্তমানে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে বেশ কটি জাহাজে পর্যটকরা দ্বীপে আসা-যাওয়া করেন। টেকনাফ থেকে স্পিডবোট থাকলেও শুষ্ক মৌসুম ছাড়া চলাচল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকটি স্পিডবোটচালক জানান, প্রতি মাসে স্থানীয় নেতাদের চাঁদা দিতে হয়। ১৩ পরিবারের কেউ না কেউ চাঁদা তোলেন। তারা নিজেদের শ্রমিক লীগ নেতাকর্মী দাবি করেন। তবে চাঁদার বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয় না। চাঁদা দেওয়ার কারণে পর্যটকদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নিতে হচ্ছে।
কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘অদৃশ্য শক্তির’ ইশারায় ১৩ পরিবার সব অপকর্ম চালাচ্ছে। তাদের সঙ্গে একটি প্রভাবশালী মহলের ইন্ধন রয়েছে। জায়গা বিক্রি করতে হলে তাদের অনুমতি নিয়ে করতে হচ্ছে। তাদের আত্মীয়স্বজনরা দোকানপাট তৈরি করে ব্যবসা চালাচ্ছেন।
একটি দ্বীপ ইউনিয়ন যদি এইভাবে দখলে যায়, স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে- এর নেপথ্যে কারা আছেন? তারা কি এতই শক্তিশালী যে- প্রশাসনও কিছু করতে পারছে না! প্রশাসনের কেউ কেউ এ ব্যাপারে জড়িত থাকলেও, নিশ্চয়ই সমস্ত কর্মর্কতা দুর্নীতিগ্রস্ত নন। তাহলে কি ইচ্ছাকৃতভাবে, অর্থগন্ধে অচেতন রয়েছেন- সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ!
স্থানীয় মানুষের সার্বিক নিরাপত্তা এবং পর্যটনশিল্প বিকাশের জন্য, স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখা জরুরি। যদি পর্যটনশিল্পের বিকাশ চাই, যদি সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দিতে চাই- তাহলে এই দুষ্টচক্রের দখল উৎসব বন্ধ করা দরকার। একইসঙ্গে জনগণের মৌলিক সমস্যার সমাধান জরুরি। জনমানবশূন্য প্রবাল দ্বীপ যেমন পর্যটনের জন্য নিরাপদ নয়, তেমনি এই দ্বীপ নিয়ে দখল উৎসবও দুঃখজনক।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে প্রেম এরপর বিয়ে। দেড় বছরের দাম্পত্য জীবনে আট মাস ধরে চিত্রনায়িকা পরীমণি ও শরিফুল রাজের বনিবনা হচ্ছে না বলেই শোনা যাচ্ছে। চলছে টানাপোড়েন এবং সেই সংসার এখন ভাঙনের পথে। রাজের ফেসবুক থেকে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর রাজের সঙ্গে পরীমণির মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। সব ছাপিয়ে যা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রবিবার একটি গণমাধ্যমের ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে এসে শরিফুল রাজ জানান, আপাতত তারা সেপারেশনে আছেন এবং তাদের আর একসাথে হওয়ার কোন সুযোগ নেই। পরীকে তিনি শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে সবশেষে পরীমণির উদ্দেশ্যে রাজ বলেন, ‘বেবি, আই লাভ ইউ। যা-ই হোক না কেন, আনন্দে থেকো। আমরা আমাদের সন্তানকে ভালো রাখব।’
রাজের এমন মন্তব্যের উত্তর দিতে সোমবার রাতে গণমাধ্যমটির লাইভে এসে রাজের উদ্দেশ্যে পরীমণি বলেন, ‘গরু মেরে জুতা দান করার কোনো দরকার নেই। কেউ রেসপেক্ট করলে সেটা তার কার্যকলাপ দেখেই বোঝা যায়, মুখ ফুটে বলতে হয় না। আমাকে পাবলিকলি অপমান করে এরপর রেসপেক্ট দেখানোর কোনো দরকার নেই। আর আমার বাচ্চাকে নিয়ে এসব ইমোশনালি কোনো কথা শুনতে চাই না। এসব ইমোশনালি কথা মানুষকে গিলিয়ে লাভ নেই। মানুষ বুঝে।’
ফাঁস হওয়া ভিডিওগুলো পরী বলেন, ‘এত বছর ধরে তারা বন্ধু অথচ আমি জানতাম না। এসব সামনে আসার পর জানতে পারলাম। আর রাজ যতটা তার বন্ধুদের ইমেজ নিয়ে কনসার্ন তার পরিবার নিয়ে এতটাও কনসার্ন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমনিতে অনেক শান্তশিষ্ট। অনেকটা সাপের মতো, লেজে পাড়া না দিলে চুপচাপ থাকি কিন্তু আমার লেজে পাড়া দিলেই আমি ফুঁস করে উঠি আর তখন কামড় দিবই।’
সবশেষে পরী বলেন, ‘আমি চাই এসবের শেষ হোক। আমি আজকে এখানে এসে এসব বলতাম না। তুমিই (রাজ) আমাকে বাধ্য করেছ। এরকম অসুস্থ মানুষের সঙ্গে আমি আর থাকতে চাই না। আমি চাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ আমাকে ডিভোর্স দিক।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।