
কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের জন্ম ভারতের বিহারে ১৯০৯ সালে। তার পরিবারের আদি নিবাস বাংলাদেশের বিক্রমপুরে। হাজারীবাগের সেইন্ট কলম্বাস কলেজের ছাত্র ছিলেন তিনি। অভাব-অনটনের জন্য পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে জীবিকার তাগিদে কর্মক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয় তাকে। কর্মজীবন শুরু করেন বিহারের আদিবাসী অঞ্চলে বাসের কন্ডাক্টর হিসেবে। পরে সার্কাসের ক্লাউন, মুম্বাই পৌরসভার চতুর্থ শ্রেণির কাজ, চায়ের ব্যবসা, বেকারির ব্যবসা, মালগুদামের স্টোরকিপার ইত্যাদি কাজে তিনি প্রথম জীবন ব্যয় করেন। বহু পথ ঘুরে ৩০ দশকের শেষে আনন্দবাজার পত্রিকার রবিবাসরীয় বিভাগে সহকারী হিসেবে চাকরি নেন। এক সময় বিশিষ্ট দার্শনিক ও গবেষক মহেশ ঘোষের লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করার সুযোগ পান। প্রতœতত্ত্ব, পুরাতত্ত্ব, এমনকি সামরিক বিদ্যায়ও তার যথেষ্ট দক্ষতা ছিল। তার লেখালেখির কালপর্ব ১৯৪০ থেকে ১৯৮০ সাল। তিনি একটু বেশি বয়সে সাহিত্যাঙ্গনে যোগদান করেও নিজস্ব মেধা, মনন আর লব্ধ অভিজ্ঞতার আলোকে তার রচনা সম্ভারের মাধ্যমে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হন। তার ‘অযান্ত্রিক’ এবং ‘ফসিল’ গল্প বাংলা সাহিত্যের যুগান্তকারী সৃষ্টি। ভাষার ওপর অনায়াস দক্ষতার প্রমাণ মেলে তার বিভিন্ন গল্পে। মহাভারতের গল্পগুলো বলার জন্য তিনি যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, তার সঙ্গে অযান্ত্রিক বা ফসিল গল্পে ব্যবহৃত ভাষার কোনো মিল নেই। শুধু গল্পকার হিসেবেই নন, উপন্যাস রচনায়ও ঋদ্ধতার প্রমাণ রেখেছেন। ‘তিলাঞ্জলি’ তার অন্যতম উপন্যাস। ১৯৪৪ সালে গড়া কংগ্রেস সাহিত্য সংঘের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। আনন্দ পুরস্কার, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগত্তারিণী পদকসহ নানা পুরস্কার লাভ করেছেন। ১৯৮০ সালের ১০ মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কারও কারও অধিকতর ধনী হওয়ার ক্ষেত্রে, এমনকি অনেক দেশ, সমাজ ও অঞ্চলকে টপকিয়ে, এই করোনা-উত্তরকালে ইউক্রেন-রাশিয়ার সমর সন্ধিক্ষণে, আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে যে আনন্দ তা সর্বনাশের, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার। ১৯৪৩-এর দুর্ভিক্ষের প্রাক্কালে যেসব প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়েছিল তার প্রচ্ছন্ন উপস্থিতি শুধু বাংলাদেশে নয়, অনেক অর্থনীতিতেও দেখা যাচ্ছে। ১৯৩০ সালের গ্রেট ডিপ্রেশন কিংবা এই নিকট অতীতে ১৯৯৭ সালের এশীয় ক্রাইসিস এবং ২০০৭-০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার কারণ ও প্রভাবের ভূত দেখা অব্যাহত আছে। দেশ সিঙ্গাপুর না শ্রীলঙ্কা হতে যাচ্ছে, সে প্রশ্নও উঠছে। দেশের টাকা লোপাট করে বিদেশের ধনীদের ক্লাবে নাম লেখানোর চেষ্টাও চলছে।
১৯৪৩ সালের দারুণ দুর্ভিক্ষের ওপর বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে সত্যজিৎ রায় রঙিন ‘অশনি সংকেত’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। দুর্ভিক্ষের ছবি সাদা-কালো না হয়ে রঙিন কেন এ প্রশ্ন উঠেছিল। ছবির প্রধান চরিত্র গঙ্গা প-িতের কাছে গ্রামের গোমূর্খদের আলাপ হচ্ছে ‘প-িত মশাই, জাপানিরা নাকি সিঙ্গাপুর দখল করেছে।’ একজন পয়েন্ট ব্লাঙ্ক প্রশ্ন করে বসল ‘সিঙ্গাপুর কি মেদিনীপুরের কাছে?’ স্বল্পবিদ্যার স্বঘোষিত প-িতের তো সিঙ্গাপুর ও মেদিনীপুরের দূরত্ব ও মাহাত্ম্য জানা নেই, কিছুক্ষণ চুপ থেকে তিনি উত্তর করলেন, ‘সিঙ্গাপুর মেদিনীপুরের একেবারে কাছেও না আবার দূরেও না।’ দেশের অর্থনীতির দুর্দশা ও সংকটকালকে অধিকতর ধনীদের সিন্ডিকেট সম্মোহিত দেশবাসীকে স্মার্টলি ‘জবাব’ দিয়ে যাচ্ছে। নেতিবাচকতার সুপ্রচুর উপাদান উপস্থিত রেখে ‘ইতিবাচক’ আশা-আকাক্সক্ষারা কীভাবে বিকশিত হবে?
ঠিক এ সময়ে সমাজে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ে স্বচ্ছতা আনয়নে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিদের দায়িত্ব পালনে অর্পিত ক্ষমতা প্রয়োগে প্রতিশ্রুত (commitment) ও দৃঢ়চিত্ততার প্রয়োজনীয়তার প্রসঙ্গটিও উঠে আসছে। নিজেদের অধিক্ষেত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে আদিষ্ট হয়ে, ইয়েস মিনিস্টার স্টাইলে যদি তাদের কর্মধারা পরিচালিত হয় সে ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠান কার্যকরভাবে জবাবদিহিমূলক ভূমিকা পালন করতে পারে না। এ ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচার ও স্বচ্ছতার অভাব আকীর্ণ হয়ে উঠতে পারে। স্বেচ্ছচারিতার অজুহাত যৌক্তিকতা এমনকি স্বজনপ্রীতির পরিবেশ বা ক্ষেত্র তৈরি হয়, যা সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এটি প্রধান প্রতিবন্ধকতা।
যারা নীতি প্রণয়ন করে, নীতি উপস্থাপন করে তাদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব দৃঢ়চিত্ততা এবং নীতি-নিয়ম পদ্ধতির প্রতি দায়িত্বশীল থাকা আবশ্যক। তাদের মাধ্যমে, তাদের থেকে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার নিশ্চয়তা না এলে কারও পক্ষে জবাবদিহির পরিবেশ সৃজন সম্ভব হয় না। সুশাসন, স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা প্রয়োজন সবার স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে। কারণ এটা পরস্পরের পরিপূরক। আরেকটি বিষয় নীতিনির্ধারকরা বা বায়নকারীদের দিয়ে, তাদের ভুল বা ব্যত্যয়ধর্মী নীতি বা সিদ্ধান্ত বা বাস্তবায়িত করিয়ে নিতে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি কিংবা প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির, ক্ষেত্র বিশেষে তাদের নানান সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দিয়ে প্রলুব্ধ করতে পারেন, তাদের স্বার্থ উদ্ধার করিয়ে নিয়ে আবার ক্ষেত্রবিশেষে ষড়যন্ত্রের টোপে ফেলে তাদের বিব্রতও করতে পারেন। কায়েমি স্বার্থ উদ্ধারের জন্য এ ধরনের ‘রাজনৈতিক’ উৎকোচ কিংবা নিপীড়নের প্রথা প্রাচীনকাল থেকে কমবেশি ছিল বা আছে, তবে মাত্রা অতিক্রমণের ফলে সেটি প্রকারান্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক পরিস্থিতির প্রতিবন্ধকতা হিসেবে প্রতিভাত হয়ে থাকে। যে কোনো সমাজে বা অর্থনীতিতে কতিপয়ের অস্বাভাবিক অর্থ প্রাপ্তির সুযোগ ও প্রযত্ন প্রদান বৈষম্য বৃদ্ধির অন্যতম উপসর্গ। আর এই বৈষম্য বৃদ্ধিতে নানান আত্মঘাতী প্রবণতার প্রবৃদ্ধি ঘটে।
নানান আঙ্গিকে পরীক্ষা-পর্যালোচনায় দেখা যায়, শিক্ষক-চিকিৎসক-আইনজীবী-ব্যবসায়ী এমনকি চাকরিজীবীদেরও বাঞ্ছিতভাবে জবাবদিহিতার আওতায় আনা সম্ভব হয় না। অতিমাত্রায় কোটারি, সিন্ডিকেট বা দলীয় বা রাজনীতিকীকরণের কারণে পেশাজীবী, সংস্থা, সংগঠন এবং এমনকি সুশীল সেবকরাও প্রজাতন্ত্রের হয়ে দল-নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকতে তাদের হিমশিম খেতে হয়, গলদঘর্ম হতে হয়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে এমন একটা পরিবেশ তৈরি হয়, যার ছত্রছায়ায় নানানভাবে অবৈধ অর্জন চলতে এর পথ সুগম হতে পারে। ‘প্রভু নয় বন্ধু’ সেজে গণপ্রজাতন্ত্রী সেবক যখন প্রভুতে পরিণত হতে স্মার্টনেস দেখাতে চায় তখন সম্পদ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহারের দ্বারা অর্জিত অর্থ দখলের লড়াইয়ে অর্থায়িত হয়ে এভাবে একটা ঘূর্ণায়মান দুষ্টচক্র বলয় হয়ে থাকে। অর্থাৎ সুশাসনের অভাবে স্বচ্ছতার অস্বচ্ছতায় ঘুরে-ফিরে পুরো প্রক্রিয়াকে বিষিয়ে তোলে। সুতরাং সবক্ষেত্রে সর্বাগ্রে উচিত স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। এটা প্রয়োজন গণতন্ত্র ও সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সুশাসন স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে কোনো উন্নয়নই টেকসই হবে না। এটা পরস্পরের পরিপূরক। স্বচ্ছতার অস্বচ্ছতায় যে উন্নয়ন হয় তাতে জনগণের সুফল নিশ্চিত হয় না। এ উন্নয়নের কোনো উপযোগিতা বা রিটার্ন নেই। এটা এক ধরনের আত্মঘাতী অবয়ব। ‘প্রভু নয় বন্ধু’র ডিকেড (১৯৫৮-১৯৬৮) অব ডেভেলপমেন্ট’ কিন্তু পরের বছর আসল চেহারায় ফুটে উঠেছিল, তার পরের বছর ও খতম তারাবি হয়ে সে স্বর্ণযুগ তামা হয়ে গিয়েছিল।
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো কাজ শেষ করার কথা এবং বরাদ্দ সেভাবেই দেয়া আছে। কিন্তু সেই কাজ শেষ করতে যদি বছরের পর বছর সময় লেগে যায়, দ্রব্যমূল্য ও নির্মঠু সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধিজনিত কারণে ও অজুহাতে যদি তিন-চার গুণ টাকা খরচ করতে হয় সেটা তো সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার দুর্বল পরিস্থিতিরই পরিচায়ক। আলোচ্য অর্থ দিয়ে একই সময়ে হয়তো আরও অতিরিক্ত দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যেত। সময়ানুগ না হওয়া এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে তিন প্রকল্পের অর্থ খরচ করে একটা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলো। বলাবাহুল্য অবকাঠামোটি যথাসময়ে নির্মিত হলে সংশ্লিষ্ট খাতে সক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে উপযোগিতা সৃষ্টি হয়ে জিডিপিতে অবদান রাখতে পারত।
জিডিপি প্রবৃদ্ধির মূল কথা হলো, যে অর্থই ব্যয় করা হোক না কেন, সেই আয়-ব্যয় বা ব্যবহারের দ্বারা অবশ্যই পণ্য ও সেবা উৎপাদিত হতে হবে। পণ্য ও সেবা উৎপাদনের লক্ষ্যে যে অর্থ আয় বা ব্যয় হবে সেটাই বৈধ। আর যে আয়-ব্যয় কোনো পণ্য ও সেবা উৎপাদন করে না সেটা অবৈধ, অপব্যয়, অপচয়। জিডিপিতে তার থাকে না কোনো ভূমিকা। আরও খোলাশা করে বলা যায় যে, আয় পণ্য ও সেবা উৎপাদনের মাধ্যমে অর্জিত হয় না এবং যে ব্যয়ের মাধ্যমে পণ্য ও সেবা উৎপাদিত হয় না সেই আয়-ব্যয় জিডিপিতে কোনো অবদান রাখে না। কোনো প্রকার শ্রম বা পুঁজি বিনিয়োগ ছাড়া মওকা যে আয় তা সম্পদ বণ্টন বৈষম্য সৃষ্টিই শুধু করে না, সেভাবে অর্জিত অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রেও সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ধার ধারা হয় না। ফলে তা সৃষ্টি করে আর্থিক বিচ্যুতি। এভাবে যে অর্থ আয় বা খরচ করা হয় তা প্রকারান্তরে অর্থনীতিকে স্মার্ট করে না, পঙ্গু করে দেয়।
সাম্প্রতিককালেরই আলোচ্য বিষয়, জাতীয় বাজেটে বিনা ব্যাখ্যায় স্বল্প করারোপে কালোটাকা সাদা করা, কিংবা বিদেশে পাচার করা টাকা দেশে আনার সুবিধা প্রদান। বিদেশে অর্থ পাচার বৃদ্ধির ব্যারোমিটার অধিকতর ধনী হওয়ার আনন্দ-বিষাদের প্যাথলজিক্যাল প্রতিবেদন দৃষ্টিসীমায় আসছে। সংগতকারণে এটা উঠে আসছে যে, দুর্নীতিবাজ কালোটাকা লালন থেকে সরে না এলে আয় ও সম্পদ বণ্টনের বৈষম্য বাড়তেই থাকবে। করোনা-উত্তরকালের এই সংকটে সম্মোহিত সময়ে দেশে দেশে জীবন ও জীবিকার সংগ্রাম সন্ধিক্ষণে আর্থ-সামাজিক পরিবেশ পরিস্থিতিতে যে উদগ্র উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে এবং আসন্ন মন্দায় মানবিক বিপর্যয়ের যে ইশারা বা লক্ষণ দেখা দিচ্ছে সে প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আয় বৈষম্যের উপসর্গটি বিষফোড়ায় যেন পরিণত না হয় সে প্রত্যাশা প্রবল হওয়াই স্বাভাবিক। প্রকৃতির প্রতিশোধ প্রতিক্রিয়ায় মানবভাগ্যে মহামারী বিপর্যয় আসে ঠিকই, তবে তা প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ নিরাময়ের নামে মনুষ্য সৃষ্ট রাজনৈতিক-অর্থনীতির সমস্যারা ঘৃতে অগ্নিসংযোগের শামিল হয়ে দাঁড়ায়।
লেখক: উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক
সাহাবি হজরত আনাস ইবনে মালেক রাজিয়াল্লাহু আনহু নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ইরশাদ করেন, ‘আমি নামাজ শুরু করি আর আমার ইচ্ছা থাকে তা দীর্ঘ করার। এ অবস্থায় যখন কোনো শিশুর কান্না শুনি, আমি নামাজ সংক্ষেপ করে ফেলি। কারণ আমি জানি, তার কান্নায় তার মায়ের কী কঠিন কষ্ট হয়।’সহিহ বোখারি : ৭১০
নামাজ অবস্থায় কোনো শিশুর কান্না শুনতে পেলে তার মায়ের কষ্ট হয় বিবেচনা করে নবী করিম (সা.) নামাজ সংক্ষেপ করে দিতেন। নামাজ ছিল নবী করিম (সা.)-এর সর্বাপেক্ষা প্রিয় কাজ। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘নামাজে আমার নয়ন জুড়ায়।’ নামাজ দ্বীনেরও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ রুকন। কোরআন মজিদে সবচেয়ে বেশি হুকুম নামাজ কায়েমেরই দেওয়া হয়েছে। সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও প্রিয় এ বিধান পালনে রত থাকা অবস্থায় শিশুর কান্না শুনে তা সংক্ষেপে শেষ করার দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যায় নবী করিম (সা.) অন্যের আবেগ-অনুভূতির কতটা মূল্য দিতেন এবং অন্যের কষ্ট-ক্লেশের প্রতি কেমন লক্ষ রাখতেন।
ভাবে নিজ আমল এবং ওই আমলের ব্যাখ্যা দ্বারা নবী করিম (সা.) উম্মতকে শিক্ষা দিচ্ছেন কীভাবে অন্যের আবেগ-অনুভূতি ও সুবিধা-অসুবিধার প্রতি লক্ষ রাখতে হয়। নিজ ইচ্ছাপূরণই বড় কথা নয়। এমনকি সেই ইচ্ছা যদি ইবাদত-বন্দেগি-সংক্রান্ত হয়, সে ক্ষেত্রেও অন্যের সুবিধা-অসুবিধার প্রতি লক্ষ রাখা জরুরি।
আমরা জানি, কোনো মানুষ একা এক ব্যক্তি মাত্র নয়। কোনো না কোনোভাবে অন্যের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছেই। একদম একা যখন সে নয়, তখন নিজ ইচ্ছা-অনিচ্ছাকেও একান্তই তার একার বিষয় ভাবার সুযোগ নেই। তার পরও অধিকাংশ লোক নিজ ইচ্ছাকে একান্তই নিজের বিষয় হিসেবে দেখে। যখনই তার মনে কোনো ইচ্ছা জাগে, তা পূরণে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। চিন্তা করে না তার ইচ্ছাপূরণের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি না? তার হয়তো ইচ্ছাপূরণ হয়ে যাবে। ইচ্ছাপূরণজনিত তৃপ্তিবোধ হবে। এর পাশাপাশি যাদের সঙ্গে সে কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ত, তাদের যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভোগ করতে হবে, তাতে তাদের জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে, অন্ততপক্ষে মানসিক কষ্ট স্বীকার করতে হবে তা ভাবার কোনো প্রয়োজনই বোধ করছে না। এভাবে অনেক অবিবেচক মানুষ দ্বারা সংশ্লিষ্টজনরা সমানে অন্যের ইচ্ছাপূরণের নির্যাতন ভোগ করছে। ঘরে-বাইরে এর দৃষ্টান্তের কোনো অভাব নেই।
ঘরে স্বামীর ইচ্ছা হলো মেহমান খাওয়াবে। ইচ্ছা যখন জেগেছে, তা অবশ্যই পূরণ করতে হবে। সুতরাং সে বন্ধুদের দাওয়াত করে ফেলল। খুব ভালো কথা। মেহমান খাওয়ানো সওয়াবের কাজ। কিন্তু বিষয়টা যেহেতু তার ও মেহমানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর আয়োজনে ঘরের অন্যদেরও সংশ্লিষ্টতা আছে, তাদের মানসিক ও কায়িক পরিশ্রমের বিষয় আছে, তখন তার উচিত ছিল ইচ্ছাপূরণে নেমে পড়ার আগে ঘরের লোকদের মতামত জানতে চাওয়া। কিন্তু সে তা জানতে চায়নি। এটা সাক্ষাৎ নির্যাতন।
উচ্চ আওয়াজে গান বাজানোর ইচ্ছা আজকালকার তরুণ-তরুণীরা নানা উপলক্ষে পূরণ করে থাকে। শান্তিকামী মানুষের পক্ষে তাকে অত্যাচার বললে বোধ হয় কমই বলা হবে। নিরীহ জনগণ সে অত্যাচার সহ্য করতে বাধ্য। এভাবে পরিবার, সমাজ ও অফিস-আদালত থেকে শুরু করে সর্বত্র মানুষ অন্যের ইচ্ছাপূরণের যন্ত্রণায় কাতর হচ্ছে। এগুলো সুস্থ মানসিকতার পরিচায়ক নয়। অন্যের স্বার্থের তোয়াক্কা না করে আপন ইচ্ছাপূরণে ব্যাপৃত হওয়া শুধু শান্তিই বিঘিœত করে না, এতে নবী করিম (সা.)-এর শিক্ষার মর্যাদাও ক্ষুণœ হয়। নবী করিম (সা.)-এর শিক্ষা তো এটাই যে, ‘নিজ ইচ্ছাপূরণের ক্ষেত্রে অন্যের সুবিধা-অসুবিধার মর্যাদা দাও। তা পার্থিব ইচ্ছাপূরণের বেলাতেই নয়, এমনকি ইবাদত-বন্দেগির ক্ষেত্রেও।’ তিনি তো শ্রেষ্ঠতম ইবাদত নামাজকেই এর দৃষ্টান্ত বানিয়েছেন।
বললে হয়তো অত্যুক্তি হবে না যে, সাধারণ মানুষের যত দুঃখ-কষ্ট তার সিংহভাগই সরকারি-বেসরকারি ক্ষমতাধরদের ইচ্ছাপূরণের খেসারত। যত দিন না তাদের ইচ্ছাপূরণের প্রতিযোগিতা কমবে, সাধারণ জনগণের তত দিন খেসারত দিয়েই যেতে হবে। আল্লাহর ভয় যাদের নেই, তাদের ইচ্ছাপূরণের দৌড়ঝাঁপ যে লাগামহীন হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দ্বীন ও ইসলামের সংশ্লিষ্টতা যেখানে আছে, সেখানে যদি একের ইচ্ছাপূরণ অন্যের পক্ষে অত্যাচারে রূপ নেয়, নিঃসন্দেহে তা আক্ষেপের বিষয়।
যে হাদিস সামনে রেখে আলোচনা শুরু করেছি তা যখন নামাজের মতো মহান ইবাদতে আপন ইচ্ছাকে নিয়ন্ত্রণের সবক দেয়, তখন অন্যসব দ্বীনি ক্ষেত্রেও যে ইচ্ছার প্রয়োগে সাবধানী হতে হবে তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু সেই সাবধানতা যে যথেষ্ট অবলম্বন করা হচ্ছে, তা কি শক্ত করে বলা যাবে?
ইচ্ছা হলো একটা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করব। অমনি নেমে পড়লাম। মনে চাইল একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করি। ব্যস কাজ শুরু করে দিলাম। চিন্তা করলাম না এখানে মসজিদ বা মাদ্রাসার আদৌ প্রয়োজন আছে কী নেই। কিংবা একটির বর্তমানে বিনা প্রয়োজনে আরেকটির প্রতিষ্ঠা এলাকার মানুষের ভেতর বিভক্তি সৃষ্টির কারণ হবে কি না? কোনো কিছুই ভাবা হয় না। ইচ্ছা যেহেতু জেগেছে তা পূরণ করতেই হবে।
যেকোনো ভালো কাজ সুচিন্তিতভাবে করাই বাঞ্ছনীয়। হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) চাইলেন সবটা সম্পদ দান করে দেওয়ার অসিয়ত করবেন। কিন্তু হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে ইচ্ছাপূরণ করতে দিলেন না। তিনি বললেন, তাহলে অর্ধেকের অসিয়ত করি? তাও নিষেধ করলেন। শেষে বললেন, তিন ভাগের একভাগ? হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তিন ভাগের একভাগ? তাও তো বেশিই। তবুও তিনি এটা অনুমোদন করলেন। সেই সঙ্গে বললেন, তোমার ওয়ারিসরা মানুষের কাছে হাত পেতে বেড়াবে, তার চেয়ে বরং তাদের জন্য কিছু সম্পদ রেখে যাওয়াই শ্রেয়। এ হাদিসও শিক্ষা দেয় দ্বীনি কাজও শুধু ইচ্ছাবশেই করতে যাওয়া সমীচীন নয়। তা করতে হবে সুচিন্তিতভাবে।লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩। বৃহস্পতিবার। অফিস থেকে বেরিয়েছিলাম রাত সোয়া ১০টার দিকে। অফিস বাংলামোটরে। পূর্বতন পাকিস্তান মোটরস। পেয়ারে পাকিস্তানকে বিদায় করে জায়গাটির নাম থেকেও ‘পাকিস্তান’কে বিদায় করা হয়েছে। ভালোই হয়েছে। তবে আমাদের মনমানসিকতা পাকিস্তান আমল থেকে পিছিয়ে প্রাগৈতিহাসিক কোনো যুগে ঘাঁটি গেড়েছে। মানুষ চাঁদে এখন কারও কারও মুখ দেখতে পায়। আমাদের বাস ভূতে, ভবিষ্যতে নয়। উন্নয়ন আমাদের সামনে নয়, পেছনে নিয়ে যাচ্ছে!
আমাদের ছাত্রজীবনেও জায়গাটি ব্যস্তই ছিল। তবে সহনীয়। এখন উপরে মেট্রোরেলের লাইন। যদিও চালু হয়নি। নিচে রিকশা, মোটরসাইকেল বাস-ট্রাক, টেম্পো, সিএনজির যান্ত্রিক নরক। পুরো ঢাকা শহরটিই এমন শত শত যন্ত্রনরকে ভর্তি। কপাল ভালো থাকলে রাস্তা অতিক্রম করতে সক্ষম হবেন, না থাকলে পরপারে। আমার কপাল ভালোই বলতে হবে। অফিস সহকারীদের কেউ না কেউ আমাকে রাস্তা পার করে বাসে তুলে দেয়। বেশিরভাগ দিন যে থাকে তার নাম রবিউল। আজও সে আমাকে বাসে তুলে দেওয়ার জন্য এসেছিল। স্ট্রোকে কিছু শারীরিক অক্ষমতা তৈরি হয়েছে। গাড়ি চলতে থাকলে তাতে আমার ওঠা সম্ভব নয়। বাসকে দাঁড়িয়ে স্থির থাকতে হবে, তবেই ওঠা যাবে।
একটা বাসে ওঠার চেষ্টা করলাম। সেটা চলন্ত ছিল। পারলাম না। পড়েই যেতে গিয়েছিলাম। রবিউল নজর রাখছিল। তাই রক্ষা। দ্বিতীয়টিতে উঠলাম পড়তে পড়তে। যাক, পড়ে যে যাইনি সেটাই রক্ষা। মাঝেমাঝেই বাসে উঠতে গিয়ে ঝুঁকিতে পড়তে হয়। এত উন্নয়ন হচ্ছে, রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রকর্তাদের সম্মানে এটুকু ঝুঁকি তো নিতেই হয়। যাক, কথা কম বলাই ভালো। যদি শারীরিক সমস্যার কথা বলতে যাই বাসওয়ালারা করুণার ডিব্বা নিয়ে হাজির হবে। তাদের কষ্ট দিয়ে কী লাভ! বাড়িতে ফেরার পথটার দূরত্ব কম নয়। বাংলামোটর টু শ্যামলী। তারপর আবার রিকশা। কাছে-পিঠে হলে রিকশায় চড়ে বসতাম।
বাসে অনেক মানুষই উঠছে। বাসের গতি ইদানীং এমন থাকে যে, বাসের ভেতরেই লোকজন স্থির থাকতে পারে না। কেউ না কেউ কারও না কারও গায়ে ঢলে পড়ছে। তা নিয়ে কিঞ্চিৎ তপ্ত বাক্যালাপ হয়। কখনো কখনো দৃশ্য দর্শনীয় মাত্রায় থাকে না। এসব আচানক ঘটনা না দেখাই ভালো। চলুক যা খুশি। রাষ্ট্রকর্তারা বোধহয় মানুষকে এমন পরিস্থিতিতেই ঠেলে দিতে চান। পরিস্থিতিটা ৮৭-৮৮ সাল থেকেই দেখছি। এর মধ্যে কত কী হয়ে গেল! এরশাদ অর্থাৎ লে. জে. হু. মো এরশাদ গেল। শুধু ক্ষমতা থেকেই যাননি। অঘটনঘটনপটু লোকটি অনেক কিছু ঘটিয়ে একেবারে পরপারে চলে গেছেন। বাস-পরিস্থিতির উন্নয়ন না ঘটে আরও অবনয়ন ঘটল।
তারপর এলেন দেশনেত্রী, বিস্ময়কর বিজয়ে। বিআরটিসি লেইজেফেইরে করে দিলেন। বললেন, প্রাইভেটে গেলে গণপরিবহন আরও জনবান্ধব হবে। কিন্তু হলো না। বিআরটিসির সিট অ্যারেঞ্জমেন্ট ঠিক থাকল বটে, কিন্তু ম্যানেজমেন্ট ঠিক থাকল না। আর অন্যসব বাসে দুই সিটের মধ্যবর্তী ফাঁক কেন জানি সংকুচিত হতে থাকল। কিঞ্চিৎ লম্বা মানুষের হাঁটুমুড়ে সোজাসুজি সিটে বসার উপায় আর থাকল না। আড়াআড়ি হয়ে বসতে হতো। আর বাসের ইস্টিশনের হদিস ক্রমে লোপ পেতে থাকল। তবে থাকল। বাসস্ট্যান্ড তখনো ছিল।
এরপর এলেন জননেত্রী। বাসের দশার আরেকটু অবনয়ন ঘটল। মানুষের হাঁটু প্রসারণের ব্যবস্থা আর হলো না। ভাড়ার নৈরাজ্য আরেক দফা বাড়ল। বাসস্ট্যান্ড তার জায়গায় আর থাকতে চাইছে না। তারপর আবার দেশনেত্রী। প্রাইভেট বাস বাড়তে থাকল। প্রয়াত নাজমুল হুদা সিটি সার্ভিস নামে বাস নামালেন। একটু পা ছড়িয়ে বসার ব্যবস্থা হলো। তবে বাসভাড়া হঠাৎ চারগুণ হয়ে গেল। মানুষের আর্থিক উন্নয়ন হয়েছে বলা যায়! প্রকৃতপক্ষে সাধারণ বাসে চড়া মানুষের বাস্তবিক আয় কমে গেল। আর সাধারণ গণপরিবহনের অবস্থা এমন হলো যে, ‘লম্বু’দের বসার চেয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়াই ‘বুদ্ধিদীপ্ত’ মনে হতে থাকল। বাসের ভেতর মধ্যবর্তী হাঁটার স্থানের পাশে একটু বাঁকা হয়ে পা খানিকটা বাইরে বের করে আড়াআড়ি বসে যেতে হতো। তাতে যাত্রীদের সঙ্গে বাধাবাধি হতো। তা নিয়ে তপ্ত আলাপ হতে থাকল। তাতে কী! বাসে চড়তে গেলে এ রকম একটু-আধটু হয়ই! বাবা মুখ বুজে চলে যাও। বাসে যেসব যাত্রীকে খাড়া করে নিয়ে যাচ্ছে না, এই ঢের। এখন কোনো স্টেশনই নেই। যেখানে পার সেখানেই উঠে বা নেমে পড়।
বাসে একজন উঠল। পান্থপথের পুবপ্রান্থ থেকে। কতজনই ওঠে। বিশেষ করে রাতের এ সময়ে। তাই তৎক্ষণাৎ তার বিশেষত্ব আলাদা করে বোঝা গেল না। হুড়মুড়িয়েই উঠলেন তিনি। একজন, যার পান্থপথের পুব মাথাতেই নেমে যাওয়ার ছিল, তিনি আমাকে বসার জায়গা দিলেন। আমি তার আসনেই বসেছি।
যে লোকটি উঠলেন তিনি যে কথা বলতে পারেন না তা বোঝা গেল তার অদ্ভুত আওয়াজে। বোঝা গেল মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের দরকারি আওয়াজটুকু করতে পারেন। তিনি কার্যত মূক। আমার অঞ্চলের ভাষায় মূক লোকদের বলা হয় ‘আব্রা’। তিনি আউ আউ আওয়াজ করছেন। কিছু বোঝাতে চাইছেন। প্রথমে ঠিক বোঝা গেল না, কী বোঝাতে চাইছেন। এভাবে কিছু বোঝানো যায় নাকি! তিনিও হয়তো জানেন, এভাবে মানুষকে বোঝানো যায় না। কিছুক্ষণ পরই দেখলাম তার হাতে কিছু একটা আছে। প্যাকেটে মোড়া। তিনি প্যাকেটটি দেখাচ্ছেন আর আউ আউ শব্দ করছেন। তাতে লোকজনের দৃষ্টি তার দিকে আকৃষ্ট হলো। তার হাতে ছিল কুটনা কাটার কিছু যন্ত্র।
লোকটি একজন ভ্রাম্যমাণ সেলসম্যান। পাঞ্জাবি-পাজামা পরা, মাথায় টুপি। হুজুরালি বেশভূষা। এবার তিনি অদ্ভুত আওয়াজের সঙ্গে ইঙ্গিতপূর্ণ আচরণও করছেন। প্যাকেটে থাকা জিনিসে কী কাজ হয় তিনি তার ডেমনেস্ট্রেশন দিচ্ছেন। আমার একটু মালুম হলো, তিনি কী বলতে চান। লোকটি স্মার্টই বলতে হবে। ডেমনেস্ট্রেশনের দ্বিতীয় ধাপে তিনি আরও অদ্ভুতকাণ্ড করলেন। এবার তিনি হাতে একটি পঞ্চাশ টাকার নোট নিলেন। নোটটি এবং প্যাকেটটি একসঙ্গে ধরে আরেক হাতের আঙুলে ইঙ্গিত করে করে বোঝাতে চাইলেন প্যাকেটটির দাম ৫০ টাকা। তারপর আরেকটি প্যাকেট নিলেন। বোধহয় বাচ্চাদের রাবার-পেনসিল-কলমের প্যাকেট। কারণ তিনি আঙুলের ইশারায় বোঝালেন, প্যাকেটটির জিনিস দিয়ে লেখাপড়া করা যায়। তারপর তিনি বিশ টাকার একটি নোট নিলেন এবং ইঙ্গিতে বোঝাতে চাইলেন, প্যাকেটটির দাম ২০ টাকা।
কৌশলটি কাজে লাগল মনে হলো। তিনি যা চান তা বোঝাতে পেরেছেন। তার হাতে ২০ টাকা ও ৫০ টাকার সামগ্রী আছে। কিছু লোক তাকে কাছে ডাকলেন। তারা জিনিসপত্র নিলেন। খুব বেশিক্ষণ লাগল না। ফার্মগেট আসতে আসতে দেড়-দুইশ টাকার বিক্রিবাটা করে ফেললেন। অন্য সময়ে যেখানে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট লাগে, রাতের গাড়ি বলে সেপথ ১০ মিনিটেই পাড়ি দেওয়া গেল। লোকটি আনন্দ সিনেমা হলের কাছে গাড়ি থামতেই নেমে গেলেন। আমি অবাক হয়ে রইলাম। এতটা অবাক কখনো হয়েছি বলে মনে পড়ে না। বিস্ময়ে বিমূঢ়।
লোকটির কর্মকাণ্ড এতটাই বিমোহিত করেছিল যে, আমি ফার্মগেট থেকে শ্যামলী যাওয়ার পুরো পথ আচ্ছন্ন ছিলাম। প্রায় নীরব কর্মকাণ্ডেরও একটা মাজেজা আছে। সেটা ভিন্নজাগতিক। অপার্থিব। ভয়ানক তার জোর। শ্যামলীতে যেখানে নামার কথা ছিল সেখানে নামতে ভুলে গেলাম। আচ্ছন্নতার কারণেই। মনে হচ্ছিল শ্যামলীতেই তো নামছি। হঠাৎ মৃদু শুনতে পেলাম, একজন বা কয়েকজন যাত্রী বলছে, এই থাম, থাম।
কোথায় থামবে! কলেজ গেটে নাকি শ্যামলীতে! বাস থামলে ওই লোকগুলোর সঙ্গে আমিও নামলাম। কিন্তু নেমে থ। কোথায় নামলাম! এ জায়গা আমি চিনি না। শ্যামলীতে যেখানে নামি সেখানে মাস পাঁচেক আগেও একটা ফুটওভার ব্রিজ ছিল। এখন ভেঙে ফেলা হয়েছে। পাঁচ মাস ধরে তার নির্মাণ চলছে। ভিত্তি নির্মিত হয়েছে মাত্র। কাক্সিক্ষত ফুটওভার ব্রিজ চালু হতে বোধহয় আরও ছয় মাস লেগে যাবে। নির্মীয়মাণ ব্রিজের নিশানা দেখছি না। তাহলে কি কল্যাণপুরেই নামলাম! সামনে তাকিয়ে কিছু ঠাহর করতে পারলাম না। আমাকে কি কানাওলায় ধরেছে? কিন্তু সে তো গ্রামেগঞ্জে হয়, এই শহরে কোত্থেকে কানাওলা আসবে?
জায়গাটা যদি কল্যাণপুর হয়ে থাকে তাহলে আসতেও পারে। ইন্টারমিডিয়েটে যখন পড়তাম তখন কল্যাণপুরের লোকজন বলত, ঢাকায় যাই। এমন গৈ-গেরামে কানাওলা ধরতেই পারে। তখন কল্যাণপুরে লঞ্চ ভিড়ত। যেখানে নেমেছি তার খুব কাছেই খালটি থাকার কথা। কী যে ভাবছি। হঠাৎ কৈশোরে ফিরে গেলাম নাকি! ভেবে দেখলাম কিছুক্ষণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা উচিত। বাপের শেখানো বুদ্ধি- কানাওলা ধরলে চলাফেরা করতে নেই। চোখ বন্ধ করে স্থির দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তারপর চোখ খুলে আশপাশ ঠিকমতো আন্দাজ করতে হয়। তারপর নিশানা ঠিক করে পা ফেলতে হয়। তা-ই করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু সুস্থিরভাবে করার উপায় আছে কি? ক্রমাগত গাড়ির হর্ন বেজে যাচ্ছে। কখন আবার চাপা পড়ি! পৈতৃক প্রাণটা খুইয়ে লাভ নেই। ফুটপাতে উঠলাম।
কিন্তু ফুটওভার ব্রিজ জাতীয় কিছু দেখলাম না। নির্মীয়মাণ ব্রিজের কী-ই বা দেখব! মনে হয়, শ্যামলীতেই নেমেছি। যাই হোক, কিছুক্ষণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে পেছন ঘুরে দাঁড়ালাম এবং একটা ফুটওভার ব্রিজ দেখতে পেলাম এবং আবার ধন্ধে পড়লাম। নির্মীয়মাণ ফুটওভার ব্রিজ তো দেখতে পাওয়ার কথা নয়। কোথায় নামলাম? এটা তো শ্যামলী নয়। টেকনিক্যালে চলে এসেছি নাকি! নিজেকে খুব অসহায় লাগল। এই অতি অতি আধুনিক যুগে হচ্ছেটা কী! আবার থমকে দাঁড়ালাম। মননে-মগজে স্থির হয়ে নেওয়া জরুরি।
ক্ষণেক পরে বাম দিকে তাকাতেই একটা ভবন চোখে পড়ল। মিজান সাহেবের ভবন মনে হলো। যেখানে কিছুদিন আগে ‘পরিবর্তন’ নামের একটা দৈনিক চালু হওয়ার কথা ছিল। সম্ভবত আমি কল্যাণপুর ফুটওভার ব্রিজের একটু উত্তরে দাঁড়িয়ে আছি। তাহলে আমার দক্ষিণ দিকে এগোনো উচিত। ঘোর এখনো কাটেনি। প্রচুর বাসের জটলা। সাবধানে পা বাড়ালাম। একটু এগোতেই ইবনে সিনা মেডিকেলের সাইনবোর্ড হাতের বাঁয়ে দেখতে পেলাম। এবার মনে হলো শ্যামলীর দিকেই এগোচ্ছি। খালের উত্তরপাড়ে আছি, যেখানে এক সময় লঞ্চ ভিড়ত।
এখন সেখানে দূরপাল্লার বাসের ডিপো। নগর পরিবহনের বাসও আছে। বাসে বাসাকার অবস্থা। ফাঁক গলে বেরুতে সমস্যা হচ্ছে। তবু সাবধানে এগোতে থাকলাম। এক সময় খালটি পার হলাম। মনে হলো নিজ গণ্ডির মধ্যে ঢুকেছি। সামনেই শ্যামলী। কানাওলা বোধহয় এখন আর নেই। যেহেতু চলাফেরা স্বাভাবিক হয়নি এখনো, তাই বেশ কষ্ট করেই শ্যামলী মোড়ে আসতে হলো। তারপর রাস্তা পেরোতে হলো। কখন আবার গাড়ি চাপা দেয়! পেরুলাম। মনে হলো বাড়ির পথে উঠলাম। টের পেলাম পাওয়ার অব সাইলেন্স কাকে বলে।
লেখক: সাংবাদিক
অস্বাভাবিক মৃত্যু, কামনা করে না কেউ। এ যেন আতঙ্ক আর বিভীষিকার মধ্যে বেঁচে থাকা। কখন, কীভাবে, কার মৃত্যু হয়- জানা নেই কারও! সড়ক পথে মৃত্যু হয়ে উঠেছে, নৈমিত্তিক ঘটনা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে , সড়ক দুর্ঘটনার কারণে প্রতি বছর বিশ্বে ১৩ লাখ মৃত্যু ঘটছে। এসব দুর্ঘটনায় বেশিরভাগ দেশের জিডিপির ৩ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে ৯৩ শতাংশ দুর্ঘটনাই ঘটছে স্বল্প ও মধ্য আয়ের দেশে, যেখানে রয়েছে বিশ্বের মোট সড়ক যানের ৬০ শতাংশ।
দুর্ঘটনার এলাকা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২২ সালে মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ২৭ দশমিক ৭০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৫২ দশমিক ০২ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১ দশমিক ৭১ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে, শূন্য দশমিক ৯৯ শতাংশ লেভেল ক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে।
চলতি বছরও পাল্লা দিয়ে ঘটছে, সড়ক দুর্ঘটনা। দিন দিন এমন মৃত্যু বেড়েই চলেছে। কর্র্তৃপক্ষের তেমন বিকার নেই। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে, সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হচ্ছে- বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, রাস্তাঘাটের নির্মাণ ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধে চলাচল, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চালকের বেপরোয়া মনোভাব, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো।
বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত, ‘মৃত্যুর ৪০% মোটরসাইকেলে’ শীর্ষক সংবাদে জানা যাচ্ছে- চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ৪৩৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৮৭ জন নিহত ও ৭১২ জন আহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৪০ শতাংশের বেশি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার। আর বাহনটির দুর্ঘটনার হার ৪১ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যান বিষয়ে তাদের প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৬৮টি (৩৮ দশমিক ২৬ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে ১৭৭ (৪০ দশমিক ৩১ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে ৬১ (১৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে ২৯ (৬ দশমিক ৬০ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৪টি (শূন্য দশমিক ৯১ শতাংশ) সংঘটিত হয়েছে। এছাড়া বলা হচ্ছে, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ-যুবাদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোসহ দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
অন্যদিকে, ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সড়কে গেল ১১ প্রাণ’ শীর্ষক সংবাদে জানা যাচ্ছে- সড়ক দুর্ঘটনায় গতকাল বুধবার ও তার আগের দিন মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। এর মধ্যে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে যাত্রীবাহী বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী স্কুলশিক্ষক ও দুই বাইসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। রাজশাহীতে ইজিবাইক ও ভ্যানের সংঘর্ষে প্রাণ গেছে দুইজনের। মুন্সীগঞ্জে প্রাইভেট কারের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে মোটরসাইকেল আরোহী কিশোর। দিনাজপুরে ট্রাকচাপায় প্রাণ গেছে স্নাতকের এক শিক্ষার্থীর। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ঠাকুরগাঁওয়ে পৃথক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে আরও তিনজন।
সড়কে এইভাবে মানুষের মৃত্যু নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চললে, কিছু প্রশ্ন সামনে আসবেই। সড়ক নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এত প্রতিষ্ঠানের কী দরকার? এরকম বিভৎস মৃত্যুই যদি হয় নিয়তি- তাহলে সেটি হবে লজ্জার। এই লজ্জা দেশের, সভ্যতার, মানবিকতার। মানুষের জীবনকে গুরুত্ব দিলে, সমস্ত অনিয়ম-অন্যায়-দুর্নীতির মূলোৎপাটন জরুরি।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ আর নির্বাচনী তাপের মধ্যেই আজ জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এটি। অনেক যোগ-বিয়োগ কষে বাজেট প্রণয়নের শেষ সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী চমক হিসেবে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করতে সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটেছেন। ভর্তুকি নাম দিয়ে বড় অঙ্কের ‘কর ছাড়’ দিয়েছেন। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে রাজস্ব জাল বিছিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে আটকে ফেললেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো প্রস্তাবিত বাজেট সারসংক্ষেপ, ভর্তুকির নামে ‘কর ছাড়’কে বৈশি^ক মন্দা মোকাবিলার ঢাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের পরোক্ষ প্রভাবে বাজারে পণ্যের দাম কমার গতিরোধ করবে বলেও সরকারপ্রধানকে জানিয়েছেন।
তবে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ছোটদের কর পরিশোধে চেপে ধরলেও কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের ঠিকই খুশি করলেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে এমন আশা করা কঠিন।
এনবিআরের সাবেক সদস্য কর-বিশ্লেষক ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ সুবিধা কমানোর চাপ আছে। এ শর্ত না মানলে ঋণের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করা হতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় বড় মাপের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চাপ আছে। বিভিন্নমুখী চাপে সরকার সব পক্ষকে খুশি করতেই আগামীতে কৌশলে কর ছাড় রাখছে ভর্তুকির নাম দিয়ে। অন্যদিকে সাধারণ আয়ের মানুষের ওপর কিন্তু ন্যূনতম কর ধার্য করার কথা শুনছি। অনেক মানুষকে রাজস্বের আওতায় আনার কথাও শুনেছি। এভাবে ছোটদের ওপর ঠিকই কর পরিশোধে চাপ বাড়াল।’
একই মত জানিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বড় মাপের ব্যবসায়ীদের অনেকে সরাসরি রাজনীতি করেন। অনেকে রাজনীতি না করলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেন। এরা সমাজের প্রভাবশালী। বাজেট প্রণয়নকালেই এরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে নিজেদের পক্ষে সুবিধামতো অনেক কিছু আদায় করে নেন। এবারও তাই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে আইএমএফের জেরার মুখে বলার সুযোগ থাকছে যে কর ছাড় ও ভর্তুকি দুই হিসাব এক করেছি।’
সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকে আশায় আছেন এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী হয়তো জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সূত্র কষবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো রক্ষাকবচ রাখলেন না। কৌশলী অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে দেওয়া কথা রেখেছেন। সাধারণ মানুষকে রাজস্ব জালে আটকে ফেলার ছক করেছেন। মূল বাজেটের আকার বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের আয়ের হিসাবও বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এখানে কর খাত থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে চলতিবারের তুলনায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করলেন। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে করবহির্ভূত খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। শেষ সময়ের হিসাবকষে শত সংকটের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করেছেন।
আগামী বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী কর ছাড়সহ ২ লাখ ৮৯ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করবেন। জাতীয় বাজেটে নিয়মিত ভর্তুকি হিসাবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার কথা আছে। বাকিটা প্রত্যক্ষ কর ছাড় দিয়ে ভর্তুকি খাতে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেতনসহ অন্য খাতে ৭৭ হাজার ২১৮ কোটি বা মোট কর ছাড়ের ক্ষুদ্রঋণ খাতে ১২ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি, প্রবাসী আয় খাতে ৯ শতাংশ বা ১১ হাজার ২৮৭ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩৮০ কোটি, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক শিল্প খাতে ৪ শতাংশ বা ৪ হাজার ৬১২ কোটি, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ৩ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতে ২ শতাংশ বা ৩ হাজার ১২০ কোটি, আইটি এবং সফটওয়্যার খাতে ১ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৭৭ কোটি এবং পুঁজিবাজার খাতে ১ শতাংশ বা ৯৬৬ কোটি টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইস মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ যেন পুরনো বোতলে নতুন পানীয়। বড়দেরই বিভিন্ন কৌশলে সুবিধা দেওয়া হলো।’
অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের কৌশল হিসেবে বড় সুবিধা দিলেও ইটিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলে কঠোরতা এনেছেন। ইটিআইএন না নিলে ৪০ ধরনের সেবা এবং রিটার্ন দাখিলের সিøপ না নিলে ৩৮ ধরনের সেবা দেওয়া হবে না। এতদিন ইটিআইএন নিয়েও অনেকে করযোগ্য আয় না থাকলে শুধু রিটার্ন দাখিল করেছে, একটি টাকার কর দিতে হয়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ১ জুলাই থেকে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।
সাধারণ আয়ের অনেক করদাতা বলেছেন, খাবারের খরচ অনেক বেড়েছে। বাসা ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা সবকিছুই এখন বেশি। এর মধ্যে সাধারণ আয়ের ওপর কর পরিশোধে চাপ দেওয়া হলে ভোগান্তি বাড়বে। সাধারণ মানুষকে কর পরিশোধে বাধ্য করলেও সম্পদশালীদের রাজস্ব ফাঁকি কমাতে, বকেয়া আদায়ে এবং অর্থ পাচার রোধে জোরালো কিছু রাখা হয়নি। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতেও পুরনো পথেই হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী অর্থবছর থেকে রিটার্ন জমা দিতে দেরি হলে বেশি হারে জরিমানা দিতে হবে। বাজেটে আইন করে জরিমানার পরিমাণ প্রদেয় করের পরিমাণ দ্বিগুণ ৪ শতাংশ নির্ধারণে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বড়রা সুবিধা দিয়ে রাজস্ব আদায়ে চাপ বাড়ানোয় জীবনযাত্রার অনেক খাতেই খরচ বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কমাতেও বাজেটে রাখা হয়নি কিছু। আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কবে কমবে তা নিয়ে রয়েছে অশ্চিয়তা। তাই গত মাস ছয়েক থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চাল, ডাল, আট, ময়দা, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবারের দাম আপাতত কমছে না। চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও কমবে না। গত (নভেম্বর ২০২২-এপ্রিল ২০২৩) ছয় মাসের সাধারণ মূল্যস্ফীতির গড় হার ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বিশেষ কোনো চাপ নেই, অর্থনৈতিক উন্নয়ন গতিশীল রাখতে এবারের বাজেটে থাকছে ধারাবাহিকতা।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেলে ঘোষিত হতে যাওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে 'গরিববান্ধব' উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আরও বলেন, সবাইকে নিয়ে সবার জন্য বাজেট ঠিক করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তার আকার বড় হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে জাতীয় সংসদ ভবনে যাত্রার প্রাক্কালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাজেট সম্পর্কে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বিকেলে জাতীয় সংসদে সাত লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করবেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অর্জনের লক্ষ্য স্থির করেছে সরকার। সেখানে মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে মোট বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে, এমন আশা করছেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেটে ৫ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেট ঘাটতি হতে পারে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। রবিবার (৪ জুন) থেকে সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হবে।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
দেশের ৬০টি জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে দিনের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া দেশজুড়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ আরও দুই দিন থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, ঢাকা বিভাগের ১৩টি, খুলনার ১০টি, রাজশাহীর আটটি, বরিশালের ছয়, রংপুরের আটটি, সিলেটের চার ও ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলাসহ চট্টগ্রাম, সীতাকুণ্ড, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
আগামী দুই দিনে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে এবং বিদ্যমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।