
এখন সময়, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার। যেনতেনভাবে, অর্থ আয়ই মূল কথা। নিজেকে অর্থশালী করা, ক্ষমতাবান হওয়াই আসল। এখানে নীতি, নৈতিকতার কোনো স্থান নেই। ব্যক্তির এমন স্বার্থপরতায়, আচ্ছন্ন হচ্ছে সমাজ। ধীরে ধীরে গ্রাস করছে, নীতিহীনতা। এমন বোধশূন্যতায়, আক্রান্ত চারদিক। অর্থপিপাসু কিছু মানুষের ভয়াল থাবায়, নিস্তার নেই সাধারণ মানুষের। ব্যক্তির স্বার্থ যখন চূড়ান্ত আকার ধারণ করে, নিশ্চিতভাবেই তখন সমষ্টির ভাগ্যে নেমে আসে বিপর্যয়। বিষয়টা আরও মারাত্মক আকার ধারণ করে তখন, যখন প্রশাসন থাকে নির্বিকার।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরের শেষ পাতায় প্রকাশিত ‘মাছ রক্ষার নামে বালুর কারবার’ শীর্ষক সংবাদের মাধ্যমে, জানা যায় মাছের অভয়ারণ্য তৈরির অনুমতি নিয়ে হবিগঞ্জের গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে বালু ও মাটি তুলে বিক্রির চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে জেলা মৎস্যজীবী লীগের এক নেতার বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে হাওরটির বোরো ধান চাষের জমি নষ্ট করে বড় ড্রেজার ও পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। এতে করে ধান উৎপাদন ব্যাহতসহ হাওরের পরিবেশ-প্রতিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কায় সাধারণ কৃষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা। তারা বলছেন, হবিগঞ্জ জেলা মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলামসহ কয়েকজন বালু ও মাটির এই কারবারের সঙ্গে জড়িত। সংবাদে আরও জানা যায়, বাহুবল উপজেলায় নির্মাণাধীন কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নিচু জমি ভরাটের জন্য তাজুল ইসলাম ও তার লোকজন বালু-মাটি সরবরাহের দায়িত্ব নিয়েছেন। এজন্য হাওরের বোরো জমিতে বড় ড্রেজার মেশিন ও কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। মেশিন ও পাইপ স্থাপন করতে গিয়ে কয়েক একর জমির বোরো ধানের চারা মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, অভয়ারণ্য তৈরির নামে বালু ও মাটির কারবারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক (সদ্য বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার) তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাওরে মা-মাছ চাষ ও অভয়াশ্রম করতে জলাশয় খনন করার জন্য জেলা প্রশাসন আমাদের এক মাসের অনুমতি দিয়েছে। ওই সময় পর্যন্ত আমরা কাজ করব। প্রশাসন তদন্ত করে শর্তভঙ্গের যদি কোনো আলামত পায় তাহলে যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা মেনে নেব।’
এদিকে স্থানীয় কৃষক ও এলাকাবাসীর পক্ষে গত ১ মার্চ জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করেন অমৃতা গ্রামের মাওলানা গোলাম সারওয়ার। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে এক ইঞ্চি জমি যেখানে অনাবাদি না রাখার জন্য বলছেন, সেখানে ওই চক্রটি হাওরের কৃষিজমি ও পরিবেশের বারোটা বাজানোর পাঁয়তারা করছে। আশা করছি, জেলা প্রশাসক আমাদের সমস্যা বুঝে অনুমতির আদেশ বাতিল করবে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহুয়া শারমিন ফাতেমা বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। তার প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পাঠানো হবে।’
সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুহুল আমিন বলেন, ‘২ মার্চ সরেজমিনে হাওর পরিদর্শন করেছি। জেলা প্রশাসকের দেওয়া শর্ত তাজুল ইসলাম ভঙ্গ করেছেন। খননকাজ বন্ধ করার জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কাছেও প্রতিবেদন পাঠানো হবে।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘কৃষিজমি ধ্বংস করে পুকুর ও জলাশয় তৈরির নামে যে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে তা বেআইনি। কোটি কোটি ঘনফুট পানিমিশ্রিত বালুজমির নিচ থেকে তোলা হলে শুষ্ক মৌসুমে হাওরে পানি সংকট দেখা দেবে। জমি দেবে যাওয়া ছাড়াও বড় বড় ফাটল দেখা দেবে। জীববৈচিত্র্যে নেমে আসবে নানা বিপর্যয়।’
সমষ্টির স্বার্থ সংরক্ষণের দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের। কোনো ব্যক্তির অবৈধ স্বার্থ দেখা, প্রশাসনের দায়িত্ব নয়। কী করলে জনগণের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে, কী করলে সমস্যার সমাধান হবে প্রশাসনের সেদিকে নজর দেওয়া উচিত।
দেশে অপশক্তির শাসন। হোদল রাজা আর বুদ্ধ রাজা মিলে ঠিক করলেন, এই অপশক্তিকে সরাতে হবে। তাই তাদের এক হতে হবে। এবার হোদল-বুদ্ধ এক হয়ে লড়াই করতে থাকে অপশক্তির বিরুদ্ধে। অপশক্তি পরাস্ত হয়। দূর হয় দেশ থেকে। কিন্তু এবার দেখা দিল নতুন সমস্যা। কে হবে রাজা? তারা দুজনই একমত হলেন, জনগণ যাকে বেছে নেবে সেই হবে রাজা। জনগণ বেছে নিল হোদলকে। কিন্তু বুদ্ধ কি তা মানতে পারে? কিছু দিন যেতে না যেতেই বুদ্ধ রাজসিংহাসন থেকে হোদলকে উৎখাত করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। সফল হয়। এবার রাষ্ট্রে বুদ্ধের শাসন। কিন্তু তা কি হোদলের পক্ষে মানা সম্ভব? হোদল চেষ্টা চালায় বুদ্ধকে উৎখাতের। সেও সফল হয়। আবার এলো হোদলের শাসন। কিন্তু না, এবারও শান্তি দিল না বুদ্ধ। আবার শুরু হয় দুজনের মধ্যে ঝগড়া ফ্যাসাদ। তাদের এই ঝগড়া ফ্যাসাদে দেশের জনগণের অবস্থা কাহিল। বিজ্ঞজনরা হোদল-বুদ্ধকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানায়। কিন্তু আলোচনায় বসলে কী হবে, দুজনই অনড় নিজ নিজ অবস্থানে। আর এ সুযোগে রাষ্ট্র চলে যায় আবার অপশক্তির হাতে। গল্পটা কাল্পনিক হলেও আমাদের দেশের রাজনীতির সঙ্গে কোথায় যেন মিলে যায়। দেশের প্রধান দুই দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিকে ঘিরে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রাজনীতির মাঠে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। রাজনীতির মাঠে সহনশীলতার অভাবে বরাবরই জনগণকে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দৈনিক দেশ রূপান্তরে প্রধান শিরোনাম ছিলে ‘উত্তপ্ত রাজনীতিতে সংলাপের হাওয়া’। খবরটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য আশাব্যঞ্জক। যদিও আমাদের দেশে রাজনৈতিক সংলাপের ইতিহাস মোটেই ইতিবাচক নয়। বিগত সময়ে বাংলাদেশের উত্তপ্ত রাজনীতিতে শান্তি ফেরাতে বেশ কয়েকটি সংলাপের আয়োজন হয়েছে। আর এসব আলোচনা নিজেদের অবস্থানে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা পরিস্থিতির কারণে ব্যর্থ হয়েছে। গত প্রায় ১৫ বছর ধরে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আছে। বলা হয় বিরোধী দলকে কোণঠাসা অবস্থায় রেখে রাষ্ট্র শাসন করছে সরকার। বিদেশি বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রগুলো বরাবরই গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের দুই কূটনীতিক। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তাগিদ ছিল তাদের। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ উপদেষ্টা ডেরেক শোলে বিরোধী দলকে রাজনীতির মাঠে সুযোগ দেওয়া ও সংলাপে বসে সমস্যা সমাধানের জন্য তাগিদ দিয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতিতে আবার গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়ে উঠেছে সংলাপ।
১৯৮৪ সালে এরশাদের শাসনামলে রাজনৈতিক সংকট সমাধানে দলগুলোর সঙ্গে জেনারেল এরশাদের সংলাপ হয়েছিল। সে সংলাপ তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। এরশাদের শাসনামলের পাতানো নির্বাচনে বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন আ স ম রব এবং তিনি এরশাদের পতনের সময় আত্মগোপনে ছিলেন।
পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে রাজনৈতিক দলগুলো বিএনপির কাছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সংলাপ আহ্বান করলেও সে সংলাপ খুব বেশি ফলপ্রসূ হয়নি। ২০০১ সালে জিমি কার্টারের মধ্যস্থতায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ হলেও সেটি আলোর মুখ দেখেনি। ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুল জলিল ও বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব প্রয়াত আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার দীর্ঘদিন ধরে চলা সংলাপেও সংকটের সুরাহা হয়নি। ২০১৩ সালে তারানকোর মধ্যস্থতায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলের সঙ্গে সংলাপের উদ্যোগ নেওয়া হলেও কোনো ফলপ্রসূ ফল আসেনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হলেও সংলাপসংক্রান্ত কোনো সমাধান আসেনি বিশেষ করে রাজনৈতিক মাঠে। কাজেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংলাপ নিয়ে জনগণসহ অন্য দায়িত্বশীল প্রতিনিধিদের মাঝে হতাশার চিত্রই পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।
বিগত কয়েকটি সংলাপে দেখা গেছে, সরকার এবং বিরোধীদের ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা নীতির কারণে সংলাপ ব্যর্থ হয়েছে। সংলাপে অংশগ্রহণ করা মানে ধরে নিতে চাই চলমান সংকটের সমাধান হবে। কেননা রাষ্ট্র পরিচালনা নিয়ে এ সংলাপের আয়োজন, দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে নয়। তবু দেখা যায়, রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপে সফল হয় না।
এবারও যদি সংলাপ হয় তবে ধারণা করা যায়, এই সংলাপও ব্যর্থ হবে। কারণ রাজনীতির ময়দানে অন্যতম বৃহত্তর দল বিএনপি যেসব দাবি তুলে আন্দোলন করছে তার বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের পক্ষে মেনে নেওয়া অসম্ভব। সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহার করার মতো ইস্যুগুলোতে সরকার কখনোই সায় দেবে বলে মনে করি না। কিন্তু এগুলো বিএনপি খুব জোরেশোরে দাবি করবে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগও চাইবে বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন করতে। যেটা মানতে চাইবে না বিএনপি। ফলে সংলাপ এগোবে না।
আমরা জানি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে বাতিল হয়েছে। এ ব্যবস্থা আবার ফিরিয়ে আনতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। যদিও বর্তমান সরকারের পক্ষে এটা সম্ভব, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে করবে কেন? এই ব্যবস্থা নিয়ে আওয়ামী লীগের অভিজ্ঞতা তো কম না। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যখন আওয়ামী লীগের দাবি ছিল, তখন বিএনপি বলেছিল পাগলের প্রলাপ। আওয়ামী লীগ আন্দোলন করে এ ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে বিএনপি সরকারকে বাধ্য করেছিল। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতে এ ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলা হয়েছিল। যে কারণে আওয়ামী লীগের হাত ধরেই এ ব্যবস্থা বাতিল হয়েছে। এটা ভালো দিকই বলা যেতে পারে।
এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এক সময় ছিল না। নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনের মুখে এরশাদ সরকারের পতনের পর বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের অধীনে যে নির্বাচনের আয়োজন হয়েছিল সেটাতে সব দলের সায় ছিল। যদিও তা আমাদের সংবিধানের মধ্যে ছিল না। পরবর্তীতে তার বৈধতার ফর্মুলা দিয়েছিল আজকের প্রধান দুই দল। তাই সংলাপ কার্যকর করতে হলে, দুই দলকে নতুন কোনো ফর্মুলা দিতে হবে, যা দিয়ে রাজনৈতিক সংকট দূর হয় এবং দেশ একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ উপদেষ্টা ডেরেক শোলে বিরোধী দলকে রাজনীতির মাঠে সুযোগ দেওয়ার আহ্বানের পর হঠাৎই আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গত ১৯ ফেব্রুয়ারি নবনিযুক্ত সহকারী জজদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে বলেছেন খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে বাধা নেই। তবে নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। আইনমন্ত্রীর এই উক্তি রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যদিও খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরেই নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত। খালেদা জিয়া নিজেও এই মুহূর্তে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে পারছেন না। নিজের সুস্থতাকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। সেখানে আইনমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনীতির মাঠে আহ্বানের বিষয়টি ভিন্ন জন ভিন্নভাবে দেখছেন। কারও কারও মতে, খালেদা জিয়াকে রাজনীতির মাঠে আহ্বান আইনমন্ত্রী জেনে বুঝেই করেছেন। কারণ খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে তিনি ভালোই অবগত আছেন। তার এই আহ্বান অনেকটাই লোকদেখানো মনে হতে পারে। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী দলকে রাজনীতির মাঠে সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে, সেহেতু আইনমন্ত্রী অসুস্থ খালেদাকে রাজনীতির মাঠে আহ্বান করে দেখাতে চাইছে সরকার যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে। অথবা সরকার চাইছে, প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে রেহাই পেতে নির্বাচনের আগে বিএনপিকে চাঙা হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। যাতে বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।
আইনমন্ত্রী ওই অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া মুক্তির আদেশে রাজনীতি করতে পারবেন না বলে কোনো শর্ত ছিল না। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) ৪০১ ধারায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সাজা স্থগিত করেছেন। তিনি একজন স্বাধীন ব্যক্তি, তাই তার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে কোনো বাধা নেই।’ আইনমন্ত্রী আরও বলেছেন, খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড হয়েছে। তাই সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। যদিও দেশের সব নাগরিকের রাজনীতি করার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। খালেদা জিয়া একজন রাজনীতিকই নন, তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন। আর শর্তসাপেক্ষে মুক্তিতে রাজনীতি করতে কোনো বাধা দেওয়া হয়নি। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে পারবেন। এটা বলার কিছু নেই। তাই বোঝাই যায়, সরকার বিএনপিকে রাজনীতির মাঠে সুযোগ দিচ্ছে জাহির করতেই হঠাৎ এই মন্তব্য করেছেন। তবে খালেদা জিয়া রাজনীতির মাঠে ফিরেও বিএনপির দাবি আদায়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারবেন কি না তা সন্দেহ আছে। অনেক দিন দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগহীনতা এবং মাঠ পর্যায়ে দলীয় অবস্থার পূর্ণাঙ্গ চিত্র নেই তার হাতে। নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার মতো শারীরিক সক্ষমতাও তার নেই। ফলে খালেদা জিয়ার রাজনীতির মাঠে আসা না আসা বিএনপির জন্য খুব একটা প্লাস পয়েন্ট হবে না। তবে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারার কারণে ভোটের মাঠে প্রভাব পড়তে পারে। আর এ কারণে বিএনপি সংলাপে বসলেও তাদের মূল দাবিগুলো জোরোলোভাবে ধরে রাখার চেষ্টা করবে।
তবে সংলাপ হোক এটা প্রত্যাশা করা যেতেই পারে। সংলাপ থেকে চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে নতুন কোনো ফর্মুলা আসতে পারে। পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং আগামী নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরির জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। কেননা, জাতি অধীর অপেক্ষায় আছে, একটা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের।
লেখক: সাংবাদিক
দেশে এমন কোনো দ্রব্য নেই, মূল্য বাড়ছে না। মূল্যবৃদ্ধির কাতারে শামিল হয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ সবকিছুর দাম বেড়েই চলেছে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ জনগণ দিশেহারা। মূল্যবৃদ্ধির কাতারে নতুন নাম লেখাল ‘কাগজ’। কাগজের দাম মনে হয়, এই প্রথম বাড়ল।
কাগজ কিন্তু আধুনিক যুগে শ্রেষ্ঠ উপকরণ। এবারের অমর একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বইমেলায় সাধারণ পাঠক-পাঠিকাদের প্রশ্ন একটাই, বইয়ের এত দাম বাড়ল কেন? বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধাররা বেশ হতাশ, কারণ কাগজের মূল্যবৃদ্ধির বইয়ের দামও বাড়ানো হয়েছে। বই ক্রেতারা কিন্তু এটা বুঝতে চায় না। তরপরও প্রকাশনা সংস্থার কর্তৃপক্ষরা যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়েছে পাঠকদের হাতে কম দামে বই তুলে দিতে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত সদ্য সমাপ্ত বইমেলায় প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বই স্টল ছিল। এতে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য-সদস্যাদের প্রকাশিত বই স্থান পেয়েছে। এতে আমারও সদ্য প্রকাশিত ‘ফিরে দেখা বড় বাড়ি’ ও ‘সমাজ সংস্কৃতি সভ্যতা’ শিরোনামের বইগুলো ছিল।
যে কথা বলছিলাম, সদস্য প্রকাশিত বইটি বাজেটের মধ্যে রাখতে পারিনি কাগজের মূল্যবৃদ্ধির কারণে। পূর্ণাঙ্গ বই ছাপিয়ে আনতে আনতে দুবার কাগজের মূল্যবৃদ্ধির কবলে পড়েছি। এবারের বইমেলায় আলোচিত ছিল ‘কাগজের মূল্য বৃদ্ধি’। এভাবে আর কত মূল্য বৃদ্ধির কবলে পড়বে সাধারণ মানুষ। কাগজের মূল্যবৃদ্ধি এখনো সক্রিয়। নীরবে-নিভৃতে কাগজের মূল্য বেড়েই চলেছে। কাগজ ব্যবহারকারীরাই যত বেকায়দায় আছে।
আমাদের দেশীয় প্রযুক্তিতে কাগজ তৈরি হলেও এ বিষয়ে কারও কোনো উচ্চবাক্য শোনা যাচ্ছে না। এমন একটা ঐতিহ্য, যা আমরা অনুভব করতে পারছি না। প্রাচীন যুগে তালপাতা, গাছের বাকল, পাথর, তামার পাত্রে লেখা হতো। এর প্রমাণ হিসেবে বলতে পারি প্রাচীনকালের বহু ‘প্রস্তরলিপি’। রামুর সীমা বিহারে তালপাতায় লেখা প্রস্তরলিপি ছিল, যা হিংসাত্মক অগ্নিকান্ডে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, এ খবর আমরা সবাই জ্ঞাত। এই অগ্নিকান্ডে ইতিহাস-ঐতিহ্যের অমূল্য সম্পদ চিরতরে ধ্বংস হয়ে গেল।
চীন দেশে খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে সর্বপ্রথম কাগজ দেখা যায়। আরব এবং আফ্রিকার অধিবাসীরা চীনাদের কাছ থেকে কাগজ তৈরির প্রক্রিয়া শিখে নেয়। চন্দ্রঘোনা কাগজকলে কাগজ তৈরির প্রক্রিয়াও দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে ভাষা প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী হিসেবে। আমরা প্রশিক্ষণার্থীরা কর্ণফুলী কাগজকল ভিজিটে যখন সেখানে পৌঁছি তখন কল কর্তৃপক্ষ কাগজ তৈরির সব ধাপ দেখিয়েছেন। নদী থেকে বাঁশ আনা, সে বাঁশ সর্বশেষ মন্ড হয়ে বের হওয়া পর্যন্ত ইত্যাদি প্রক্রিয়া আমরা দেখেছি। এশিয়ার বিখ্যাত এ কাগজকলের দিনকালও নাকি তেমন ভালো যাচ্ছে না।
১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে প্রথম কাগজ কল তৈরি হয়। সূত্রমতে, ফ্রনডিয়ার ও ডিকিনসন কাগজের কল তৈরির জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা চালায়। কাগজ তৈরির জন্য প্রথমে কাগজের মন্ড তৈরি করা হয়। বাঁশ, খড়, শুকনো পাতা, আখের ছোবড়া, ঘাস এবং ছিন্নবস্ত্র ইত্যাদি কাগজের মন্ড তৈরির প্রধান উপাদান। ঘাস, ছিন্নবস্ত্র ও গাছের পাতার সাহায্যে এক ধরনের কাগজ আমাদের দেশে তৈরি হতো। তুলট কাগজ বলা হতো একে। চামড়ার সাহায্যে যে কাগজ তৈরি হতো তাকে বলতো পার্চমেন্ট। এই পার্চমেন্ট কাগজ নাকি টাকা ছাপাতে ব্যবহার করা হয়।
কর্ণফুলী কাগজ কল পরিদর্শনে আরও জানা গেল, কাগজ তৈরির উপকরণ আগে চূর্ণ করে তাতে রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে মন্ড তৈরি করা হয়। এই মন্ড পানিতে মিশিয়ে ব্লিচিং পাউডারের সাহায্যে পরিশোধিত করার পর পাতলা মন্ড চীনা মাটির সঙ্গে মেশাতে হয়। এ পাতলা মন্ড স্তরকে শুকিয়ে কাগজ তৈরি করা হয়। কাগজের বিভিন্ন সাইজ রয়েছে। যেমন- ডিমাই, ডবল ডিমাই, রয়েল, ফুলস্কেপ, ক্রাউন, ডবল ক্রাউন ইত্যাদি। ব্যবহার, গঠন, পরিমাপ এবং প্রকারভেদে কাগজের নাম বহুবিধ। পূর্বে আমাদের দেশে কাগজের কল অনুন্নত ছিল, বর্তমানে কলকাখানার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে কাগজের কলেও পরিবর্তন এসেছে।
কাগজের ব্যবহার বহুবিধ। বই ছাপা, লেখা, সংবাদপত্র বের করা প্রতিটি কাজে কাগজের ব্যবহার অপরিহার্য। আমাদের এ দেশে চট্টগ্রামে চন্দ্রঘোনা, পাকসী ও খুলনায় কাগজ তৈরির কল রয়েছে। খুলনা কাগজ কলের কাগজ তথা নিউজপ্রিন্ট কাগজ বিদেশেও রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হচ্ছে। সবদিক দিয়ে আমাদের এ দেশের কাগজ কল ভালো অবস্থানে থাকলেও ব্যবহারকারীরা রয়েছে নানাবিধ সমস্যায়। লাগামহীন কাগজের দাম কোনোভাবে থামানো যাচ্ছে না। এতে করে নিরুৎসাহিত হচ্ছে প্রকাশনা সংস্থাসহ লেখকরা।
জ্ঞান বিস্তারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সবকিছুতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। গরিবের ছেলেমেয়েরা অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের মা- বাবা তথা অভিভাবকরা ঠিক সময়ে বইসহ লেখার কাগজ কিনে দিতে পারছে না। কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ায় অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে। বিজ্ঞমহলের অভিযোগ, এভাবে যদি কাগজের দাম বাড়তে থাকে তাহলে মেধা বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ বিষয়ে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে সুবিধাভোগীরা তৎপর হয়ে উঠবে। কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সব শ্রেণির মানুষ।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট এবং প্রাবন্ধিক।
সাধারণ অর্থে সব মানুষ ভোক্তাক্রেতা। বিক্রেতাও ক্রেতা, বিক্রেতাও ভোক্তা। সবাই ইউজার-কাস্টমার-কনজিউমার। ক্ষেত্রবিশেষে ভিন্ন অর্থ সেটা তো থাকছেই। তাদের নানা শ্রেণিও আছে বিশেষ পরিপ্রেক্ষিতে। সবাই সবকিছু খায় না, নেয় না, নিতে পারে না, বুঝতে পারে না; সরাসরি সবার সবকিছুর প্রয়োজনও নেই।
গোড়া থেকে দেখলে ‘নিউজ’ শব্দটি প্লুরাল নাউন। ‘new-এর news। কিন্তু কালক্রমে এ বহুবচনের ‘নিউজ’ শব্দটি হয়ে উঠল এক বচন বিশেষ্য সিঙ্গুলার নন-কাউন্টেবল নাউন। সংবাদপত্র বিশেষজ্ঞরা আমাদের বুঝিয়ে দেন নিউজ হলো তা, যা হয়ে উঠে নোটওয়ার্দি, মানে যা কিছু উল্লেখযোগ্য বা লক্ষণীয় বা দ্রষ্টব্য, কিংবা ডিজিটাল এ যুগে বলা যায় যা কিছু শেয়ার করার যোগ্য তা নিউজ। মানে নিউজ তা-ই যা নিউজওয়ার্দি মানে সহজ বাংলায় গুরুত্বপূর্ণ নতুন খবর।
তবে আরেকটু গভীরভাবে দেখলে The word news means exactly that - things which are new. মানে সহজ কথায় নতুন গুরুত্বপূর্ণ কিছু হয়েছে, ঘটেছে, এসেছে, সমাজ বাস্তবতায় তা ‘নিউজ’। কিন্তু ‘সভ্য’ মানুষ ইতোমধ্যে খুব ‘চালাক’ হয়ে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ কিছু না ঘটলেও, নানা ছল-ছুতায় খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটেছে এমন সংবাদ রচনা করে তা সংবাদমাধ্যমে প্রচার করে। ইতিহাসের সেই ‘হলুদ বালক’ কিংবা ‘জার্নাল’ আর ‘নিউ ইয়র্ক ওয়ার্ল্ড’ দুর্দান্ত ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশের প্রতিযোগিতা থেকে অতঃপর যে ইতিহাস তৈরি হলো, তা বিস্ময়কর বটে। আমরা সে বয়ানে ঢুকব কিছুক্ষণ পরে। ছোট্ট কিংবা বিশাল, পৃথিবীতে ‘বাজে ইতিহাস’ থেকে ‘অসাধারণ ইতিহাস’ হয়ে যাওয়া থেমে নেই। প্রকৃতিতে বিষাক্ত প্রাণীটিও উপকার ও অপকার দুই-ই করে মারা যাচ্ছে। ক্ষতি যা করছে তা দেখা যাওয়া সত্ত্বেও তার কার্যক্রমে উপকার না অপকারের পাল্লা ভারী তা গবেষণা করে দেখার বিষয়। মানুষ জানতে পেরেছে বিষাক্তের বিষ থেকে হয় প্রাণ রক্ষার ওষুধ। তা ছাড়া মন্দকাজের দ্বারা ভালো কাজ করার দৃষ্টান্ত তো প্রায় প্রতিটি সমাজে আছে। প্রিয় সন্তানকে শাসনে রাখতে হয়, কখনো শাস্তি দিতে হয় তাকে মারাত্মক ক্ষতি থেকে বাঁচাতে।
মানুষ তো প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে কখনো মিথ্যা কথা বলেই ঘরে-বাইরে। মিথ্যা একটি ‘সত্য’ জগৎ বাস্তবতায়। মানুষ ঢং করতে মিথ্যা বলে। বিষয়বস্তুকে রঙিন করতে মিথ্যা বলে। কোনো একটা লক্ষ্যে পৌঁছাতে ‘কৌশল’ প্রয়োগ করতে মিথ্যা বলে। দেখা গেছে, মিথ্যা বলার পেছনে উদ্দেশ্য থাকে। মানুষ নাকি ‘ভালো কিছু’ করার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকে। মিথ্যাকে বলা হয় অন্ধকার, সত্যকে আলো। কিন্তু প্রশ্ন থাকে মিথ্যা যখন সত্য আকারে বাস্তবতায় থাকে, তখন সেটা কি আলো হয়? জটিল হিসাব বটে। হ্যাঁ, সংবাদপত্রের জগতে ‘সত্য’র জন্য মিথ্যা বলাকে The Ethics of deceptive journalism ট্যাগ করা হয়েছে। রাজনীতিতে মিথ্যা ‘অলংকার’ হিসেবে সমাদৃত। রাজনীতিকদের কাছে আছে ‘মার্জিত মিথ্যাচার’।
ওদিকে, কোনো চ্যালেঞ্জার এগিয়ে যাওয়ার পদ্ধতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ‘ইটিং দি বিগ ফিশ’ গ্রন্থের লেখক অ্যাডাম মরগ্যান মানবজাতিকে জানালেন নিউ ইয়র্ক পোস্টের একজন প্রাক্তন সম্পাদক এক তরুণ ছাত্রকে বলেছেন এভাবে আপনাকে কিছু বলি, শুনুন। পাঠকের গলা টিপে ধরতে হবে। সে ট্রেনে আছে। গরমকাল এখন। তার পাশের লোকটি দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ভিড় সেখানে। মাথা গরম হয়ে লোকটা কিছু করে বসতে পারে। আপনার সংবাদের শিরোনাম তাৎক্ষণিক লোকটাকে টেনে ধরতে পারে। ধরুন, কোনো পাঠক তার সেক্রেটারিকে আঘাত করার চেষ্টা করছে; কিংবা এক ভদ্রলোকের ওপর তার স্ত্রী ক্ষুব্ধ, উনি তাকে দিনে সময় দেন না একটুও। তার বাচ্চার ব্রেসিস দরকার; তার কাছে টাকা নেই। এমন পরিস্থিতিতে আপনি কী চান এই পাঠকদের কেউ আপনার প্রতিবেদনটা পড়ুক? তাহলে আপনি এটাকে আরও আকর্ষণীয়/মনোগ্রাহী, যা মন টেনে ধরবে, সেভাবে লিখে নেন।
মরগ্যান বোঝালেন, ‘আসলে চ্যালেঞ্জারদের তাদের সবকিছুতে সাহসী অবস্থান নিতে হবে’। তাই মনোগ্রাহী শিরোনামে মনোহর প্রতিবেদন দরকার। ভিত্তি আছে নাকি ভিত্তিহীন সেটা এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনায় নেওয়ার না। চ্যালেঞ্জার হলেন উচ্চাকাক্সক্ষী। সে শীর্ষে পৌঁছাতে চায়। অ্যাডাম মরগ্যান এটাও বললেন, ‘ভোক্তা এবং সংবাদপত্র প্রতিনিয়ত নতুনত্বের জন্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাচ্ছে। এই দুটির সমন্বয়ের মধ্যে উচ্চাকাক্সক্ষী চ্যালেঞ্জার ব্র্যান্ডগুলোর জন্য বিশাল সুযোগ রয়েছে’। সংবাদপত্র জগতে ‘হলুদ সাংবাদিকতা’র একটা ইতিহাস আছে। ইতিহাসটি বলা যায় জোসেফ পুলিৎজার নামের একজন চ্যালেঞ্জারের ইতিহাসের অংশবিশেষ; তার শীর্ষস্থানীয় ধনবান হয়ে ওঠার ইতিহাস; বিখ্যাত পুলিৎজার পুরস্কার প্রবর্তকের বেপরোয়া কর্মযজ্ঞের ইতিহাস।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকের কথা। দুই বিখ্যাত সাংবাদিক জোসেফ পুলিৎজার ও উইলিয়াম হার্স্ট এক অশুভ অন্যায্য প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন, যার ফসল ‘হলুদ সাংবাদিকতা’। আবার এই পথে এগিয়ে যেতে যেতে এসেছে বিখ্যাত কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, এসেছে পুলিৎজার পুরস্কার পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে।
এবার সেই ইতিহাস থেকে কিছুটা পাঠ করা যাক। ১৮৮৩ সালে ‘নিউ ইয়র্ক ওয়ার্ল্ড’ নামে একটি সংবাদপত্র কিনেছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক জোসেফ পুলিৎজার। সেই সংবাদপত্রের আগের মালিক ছিলেন জে গোল্ড। অন্যদিকে উইলিয়াম হার্স্ট ১৮৮২ সালে ‘দ্য জার্নাল’ নামে একটা পত্রিকা কিনে নিয়েছিলেন জোসেফ পুলিৎজারের ভাই অ্যালবার্ট পুলিৎজারের কাছ থেকে। কিন্তু জানা গেল পরিবারের সদস্যের পত্রিকা হার্স্টের হাতে চলে যাওয়া ব্যাপারটা সহজভাবে নিতে পারছিলেন না পুলিৎজার।
ফলে শুরু হল হার্স্টের সঙ্গে পুলিৎজারের স্নায়ুযুদ্ধ। পুলিৎজার ‘নিউ ইয়র্ক ওয়ার্ল্ড’ কিনেই কোমর বেঁধে লাগলেন চাঞ্চল্যকর খবর, চটকদারি সংবাদ ইত্যাদি প্রকাশ করা। একজন কার্টুনিস্ট রিচার্ড ফেন্টো আউটকল্ট নামে। তাকে চাকরি দিলেন তার পত্রিকায়। ওই কার্টুনিস্ট ‘ইয়েলো কিড’ বা ‘হলুদ বালক’ নামে প্রতিদিন ‘নিউ ইয়র্ক ওয়ার্ল্ড’-র প্রথম পাতায় একটি কার্টুন এঁকে দিতেন। তার মাধ্যমে সামাজিক অসংগতি থেকে শুরু করে এমন অনেক কিছু বলিয়ে নিতেন, যা ছিল পক্ষপাতদুষ্ট অনেকটাই। বস্তুনিষ্ঠতা থাকত না তাতে।
একসময় হার্স্ট পুলিৎজারের ‘নিউ ইয়র্ক ওয়ার্ল্ড’-র কার্টুনিস্ট ফেন্টোকে অধিক বেতনের প্রলোভন দিয়ে নিয়ে এলেন তার ‘জার্নাল’ পত্রিকাটিতে। হার্স্ট তাতেই ক্ষান্ত থাকেননি, মোটা বেতনের লোভ দেখিয়ে ‘নিউ ইয়র্ক ওয়ার্ল্ড-র ভালো সব সাংবাদিককেও টেনে নেন নিজের পত্রিকায়। পুলিৎজারের তো মাথা খারাপ অবস্থা। রেগেমেগে আগুন। তিনি অতঃপর পেয়ে যান জর্জ চি লুকস নামে আরেক কার্টুনিস্টকে।
জোসেফ পুলিৎজার জন্মেছিলেন ১৮৪৭ সালের ১০ এপ্রিল। অষ্টাদশ শতকের শেষার্ধ থেকে ঊনবিংশ শতকের সূচনালগ্ন পর্যন্ত তিনি ছিলেন একাধারে সফলতম লেখক ও সংবাদপত্র প্রকাশক। সাংবাদিকতা ও লেখালেখির মাধ্যমে তার আয় করা বিপুল অর্থ ও ধন-সম্পদ তিনি দান করে গেছেন কলম্বিয়া স্কুল অব জার্নালিজমে। এখন ওটা বিখ্যাত কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
পুলিৎজারের ইচ্ছে অনুযায়ী ১৯১১ সালের ২৯ অক্টোবর তার প্রয়াণের পর তার সম্মানার্থে পুলিৎজার পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়। সাংবাদিকতা ও আলোকচিত্রকলা, নাটক, কবিতা, ইতিহাস, পত্র, সংগীতের মতো ২১টি বিভাগে এ পুরস্কার সাংবার্ষিক আকারে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, হলুদ সাংবাদিকতার সঙ্গে তার নাম জড়িত থাকলেও ১৮৮০-এর দশকে পুলিৎজার নতুন সাংবাদিকতার কলা-কৌশল প্রবর্তন করে সংবাদপত্র পাঠকদের চমৎকৃত করেন। এ কারণে তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন।
আমেরিকান সাংবাদিক জোসেফ পুলিৎজার ১৮৪৭ সালের ১০ এপ্রিল যে দেশটিতে জন্মেছিলেন, সে-দেশটির নাম হাঙ্গেরি। ১৮৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয়ে আসা পুলিৎজার ১৮৬৭ সালে সে দেশের নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন। আমেরিকার গৃহযুদ্ধে ফার্স্ট নিউ ইয়র্ক ক্যাভার্লিতে সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি। একই বছর তিনি মিসৌরীর সেন্ট লুইসে অবস্থিত জার্মানভিত্তিক দৈনিক সংবাদপত্র ওয়েস্টলিসে পোস্টের প্রতিবেদক হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৮৭১ সালে তিনি সম্পাদকীয় পরিচালনার দায়িত্ব পান এবং দৈনিকটির একাংশের মালিকানা পেয়ে যান। ওখানে সাংবাদিকতার পাশাপাশি সেন্ট লুইসের রাজনীতিতেও জড়িয়ে পড়েন পুলিৎজার। আইনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনকারী পুলিৎজার, ১৮৭২ সালে লিবারেল রিপাবলিকান পার্টির পক্ষ থেকে হোরেস গ্রিলে থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেন। তিনি ‘নিউ ইয়র্ক সান’ পত্রিকার সংবাদদাতাও ছিলেন।
মিসিসিপির সম্পদশালী পরিবারের মেয়ে ক্যাথরিন কেট ডেভিসকে বিয়ে করেন পুলিৎজার ৩১ বছর বয়সে। ১৮৮৩ সালে সম্পদশালী ব্যক্তিরূপে পুলিৎজার ৩ লাখ ৪৬ হাজার ইউএস ডলারের বিনিময়ে জে গোল্ডের কাছ থেকে ‘নিউ ইয়র্ক ওয়ার্ল্ড’ কিনেছিলেন। তখন পত্রিকাটি প্রতি বছর গড়ে ৪০ হাজার ডলার লোকসান দিত। পত্রিকার প্রচার বাড়াতে পুলিৎজার কৌতূহলোদ্দীপক গল্প, রটনা এবং আবেগধর্মী বিষয়-সংবলিত আইটেম প্রকাশ শুরু করেন হার্স্টের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে। ফল দাঁড়াল তার নেতৃত্বে প্রচার সংখ্যা ১৫ হাজার থেকে গিয়ে পৌঁছাল ৬ লাখে। নাম বদনাম সুনাম ধনদৌলত আর অনন্য ইতিহাস সৃষ্টির সুযোগ সব পেয়ে যান একজন জোসেফ পুলিৎজার।
লেখক: কবি, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক
১৮৪০ সালের ১১ মার্চ কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন প্রখ্যাত বাঙালি কবি, দার্শনিক, গণিতজ্ঞ ও চিত্রশিল্পী দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মা সারদা দেবী। তার ছদ্মনাম ‘বঙ্গের রঙ্গ দর্শক’ ও ‘দেশের ব্যথার ব্যথী’। রবীন্দ্রনাথের বড় ভাই দ্বিজেন্দ্রনাথের বাল্যশিক্ষা স্বগৃহেই সম্পন্ন হয়। তিনি দুই বছর সেইন্ট পলস স্কুলে এবং কিছুদিন হিন্দু কলেজে অধ্যয়ন করেন। পরিবারে ‘বড়বাবু’ বলে তিনি খ্যাত ছিলেন। সংস্কৃত ভাষায় তার বিশেষ ব্যুৎপত্তি ছিল; মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি মেঘদূতের প্রথম বাংলা পদ্যানুবাদ করেন। ১৮৭৫ সালে তিনি স্বপ্নপ্রয়াণ নামে রূপক কাব্য রচনা করে বাংলা সাহিত্যে নিজস্ব স্থান করে নেন। বাংলা ভাষায় প্রথম গানের স্বরলিপি ও বাংলা শর্টহ্যান্ডবিষয়ক গ্রন্থ তিনিই রচনা করেন। বাংলা ব্যাকরণ নিয়েও তিনি চর্চা করেন। স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি ১৮৬৭ সালে কলকাতায় হিন্দু মেলার আয়োজন করেন এবং ১৮৭০-৭৩ পর্বে এর সম্পাদক ছিলেন। তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনের মূল সভাপতি এবং আদি ব্রাহ্মসমাজের সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। ১৮৭৭ সাল থেকে সাত বছর তিনি ভারতী এবং ১৮৮৪ সাল থেকে সুদীর্ঘ ২৫ বছর তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তিনি দীর্ঘকাল প্রাচীন ভারতীয় দর্শন ও সমাজতত্ত্ব চর্চায় মগ্ন ছিলেন। এসব বিষয়ে তার অনেক মূল্যবান রচনা আছে। দ্বিজেন্দ্রনাথ চিত্রাঙ্কনেও বিশেষ দক্ষ ছিলেন। গণিত, দর্শন, সাহিত্য প্রভৃতি বিষয়ে তার বেশ কয়েকটি গ্রন্থ আছে। ব্রহ্মসংগীত ও স্বদেশি গান রচনা করে তিনি প্রশংসিত হন। ১৯২৬ সালের ১৯ জানুয়ারি শান্তিনিকেতনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন গুজরাট লায়ন্স ও চারবারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ম্যাচ দিয়ে শুক্রবার মাঠে গড়াবে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ষোড়শ আসর।
আহমেদাবাদে আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়। দশ দলকে নিয়ে আট সপ্তাহে ১২টি ভেন্যুতে এবারের আসরের খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হবে। মোট ম্যাচের সংখ্যা ৭৪টি।
গেল বছর আইপিএলে নতুন দুটি দল যুক্ত হয়- গুজরাট ও লখনউ সুপার জায়ান্টস। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই দারুণ ক্রিকেট খেলে তারা। লিগ পর্ব শেষে টেবিলের শীর্ষে ছিল হার্ডিক পান্ডিয়ার নেতৃত্বাধীন গুজরাট। রাজস্থান রয়্যালসের সাথে পয়েন্ট সমান হলেও রান রেটে পিছিয়ে তৃতীয় হয় লখনউ।
কিন্তু টুর্নামেন্টের ফাইনালে ঠিকই জায়গা করে নেয় গুজরাট। ফাইনালে রাজস্থানকে হারিয়ে শিরোপা জিতে গুজরাট। এবারও শিরোপা ধরে রাখার মিশন গুজরাটের। যথারীতি দলকে নেতৃত্ব দিবেন পান্ডিয়া।
টুর্নামেন্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চারবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই। ধোনির নেতৃত্বেই রেকর্ড নয়বার ফাইনালে খেলেছে তারা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দুই বছর আগে অবসর নিলেও এখনও আইপিএল খেলছেন ৪১ বছর বয়সী ধোনি। চেন্নাই দলের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে ধোনির উপর। ধরনা করা হচ্ছে এবারের আইপিএল ধোনির ক্যারিয়ারের শেষ আইপিএল।
আইপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পাঁচবার শিরোপা জয়ের রেকর্ডের মালিক মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। গেল বছর টেবিলের তলানিতে থেকে আসর শেষ করে রোহিত শর্মার দল। দ্বিতীয় সফল দল চেন্নাইও ভালো করতে পারেনি। দশ দলের মধ্যে নবম ছিল চেন্নাই। মুম্বাই শেষ করেছিল সবার শেষে থেকে। এবার এই দুই দলের ওপরই আলাদা নজর থাকবে সবার।
আগামী ২৮ মে ফাইনাল দিয়ে পর্দা নামবে আইপিএলের এবারের আসরের।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।