
আমাদের দেশে রাজনৈতিক দল মানে স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার। ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যুক্ত থাকা মানে ক্ষমতার স্বাদ পাওয়া। যে দল যখন ক্ষমতায় আসে সেই দলের এমনকি নিতান্ত নিচুতলার কর্মীরাও ক্ষমতার স্বাদ পায় এবং কুৎসিতভাবে সেই ক্ষমতার অপব্যবহার করে, এই ছবি আমাদের দেশে গত চার দশক ধরে প্রায় স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। এই গভীর সামাজিক অন্যায়, মূল্যবোধের এই ভয়ংকর পতনের পেছনে আমাদের ভূমিকাও একেবারে কম নয়। আমাদেরই ঘরের ছেলেমেয়েরা যখন বিপথে যায়, শৌখিন নির্বুদ্ধিতায়, ভয়ে কিংবা লোভে, আমরা তাদের বাধা দিই না। আমরা হয়তো ভাবি, এভাবেই হবে। সাফল্যের শর্টকাট পেলেই আর কোনো সমস্যা থাকবে না। আমাদের সুবিধাবাদিতা, পরোটা-কাবাবের লোভ আর গা-ভাসানোর নীরবতার নীতির ফল আজ দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর সংকীর্ণ স্বার্থপরতা, অসামাজিক কাজের সঙ্গে প্রকাশ্যে জড়িয়ে থাকা, সব রকম অপরাধ করেও রাজনীতির নামে আশ্রয় পাওয়া এই অবস্থাটার মধ্যে।
আমাদের মধ্যেও প্রচণ্ড সুবিধাবাদিতা। এক দলের কুশাসন দেখে আমরা মুখ ফিরিয়ে আরেক দলের মুখাপেক্ষী হয়েছি। তাদের অপশাসন আমাদের নির্বাক করে দিয়েছে। হতাশ, ব্যর্থ, প্রচলিত স্রোতে গা-ভাসানোর বিদ্যায় অভ্যস্ত আমরা সামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থা যতই দমবন্ধ হোক না কেন, আমাদের মতো মানুষরা অন্যায়ের কোনো প্রতিবাদ করার কথা ভাবিনি। অন্য কেউ কখনো প্রতিবাদ করে লাঞ্ছিত হলে প্রকাশ্যে তার পাশে গিয়ে দাঁড়াইনি। বরং নিজের নিজের ‘নিরাপত্তা’ রক্ষা করার চেষ্টায় দূরে সরে থেকেছি। ‘চোখ বুজে কোনো কোকিলের দিকে’ কান ফিরিয়ে রেখেছি।
আমাদের মধ্যে আবেগ মাঝে মধ্যে ভর করে বটে, তবে তা দ্রুতই মিলিয়ে যায়। আবেগ অবশ্যই মানুষের স্বাভাবিক বেঁচে থাকার জন্য একেবারে প্রাথমিক প্রয়োজন, কিন্তু তার সঙ্গে যদি সচেতন কোনো চিন্তা যুক্ত না থাকে তবে সেই আবেগ আমাদের বেশিদূর নিয়ে যেতে পারে না। সচেতন চিন্তা ছাড়া আবেগেরও দৃঢ়তা থাকে না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সময়েও অন্যায়ের মূল কারণটি বোঝার চেষ্টার বদলে, অন্যায়ের কাঠামোটিকে চিহ্নিত করার বদলে আমরা কেবল ভাবি, ওকে সরিয়ে দিলেই বুঝি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কার্যত তা কখনো হয় না। হওয়ার কথাও নয়।
গত প্রায় ৪০ বছর ধরে উন্নতি ও সাফল্যের যে সমাজ-বিচ্ছিন্ন ধারণা আমাদের সংস্কৃতিতে শেকড় গেড়েছে, তার বিপরীত চিন্তাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ফলে আমরা অনেকেই ভেবেছিলাম এই সমাজ, দেশ, বিশ্বের কোনো কিছু নিয়ে মাথা না ঘামিয়েও কোনো রকমে নিজেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করে ফেলা যাবে। বাস্তবে দেখা গেল, এই ভাবনার যা ফল হওয়ার ঠিক তাই হয়েছে। উত্তরপ্রজন্মও নিজের নিজের সাফল্যকে দেখেছে ঠিক যেভাবে দেখা স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অনেক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে, উজ্জ্বল সফল কিছু ছেলেমেয়ে বাড়ি থেকে বহুদূরে বসে প্রচুর অর্থ উপার্জন করছে। তারা ধীরে ধীরে এ দেশের এই সমাজেরই মধ্যে হয়ে গেছে এক ভিন্ন পৃথিবীর বাসিন্দা। একটি বড় অংশ নানান রাজনৈতিক দলে কর্মী হিসেবে চাকরি করে। সেসব দলের আদর্শের বিষয়ে তারা কিছু জানে না, জানানোর কোনো চেষ্টাও হয় না। তারা কেবল নিজের নিজের দলের ক্ষমতা বজায় রাখা এবং ভোটের আগে-পরে এলাকা দখলের কাজে ব্যবহৃত হয়। বদলে কিছু অর্থ ক্ষমতাশালী লোক তাদের দেবেন, বাকি তাদের আদায় করে নেওয়ায় কেউ বাধা দেবে না। কারও মনে হতে পারে অবস্থাটা যেন ‘মধ্যযুগের’ মতো, যখন রাজা-জমিদাররা সিপাহিদের নিজেদের যুদ্ধবিগ্রহের কাজে লাগাতেন, বাকি সময় তাদের ‘চরে খাওয়ার’ অধিকার থাকত। তাতে তারা প্রজার ঘরে আগুন লাগাক কী তার গোয়ালের গরু-বাছুর খুলে আনুক! তার বাইরে যে ‘উত্তরপ্রজন্ম’ তারা এই দুই ধাপের মাঝখানে হতাশা ও আত্মোন্নতির চেষ্টার দোলাচলে থেকেছে। তার ফলে দেশে ক্ষমতা পরিবর্তন হলেও ব্যবস্থাটা কিছু বদলাচ্ছে না।
দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বেকারত্ব, কর্মহীনতা। যে কোনো দেশের জনগোষ্ঠীর জীবিকা ও উপার্জন প্রধানত নির্ভর করে তার প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর। ভুললে চলবে না যে, জমির অনুপাতে বসবাসকারীর সংখ্যা পৃথিবীতে প্রতি বর্গকিমিতে ৪৬ হলেও আমাদের দেশের ক্ষেত্রে প্রায় ৩০০০। কোনো দান-খয়রাতি, দারিদ্র্যরেখা কিছু দিয়েই এই জনসংখ্যার মর্যাদাপূর্ণ জীবিকার ব্যবস্থা করা যে কোনো সরকারের পক্ষেই কঠিন।
অথচ, আশির দশক থেকে এ দেশের প্রাকৃতিক সম্পদগুলোকে বহুজাতিকদের স্বার্থে যথেচ্ছ অপচয় করা হচ্ছে। দেশের সর্বোচ্চ দায়িত্বে থাকা সরকার এ ক্ষেত্রে স্বদেশের স্বার্থ না দেখে মুষ্টিমেয়র আর্থিক স্বার্থ দেখতে চুক্তিবদ্ধ। একদিকে বাড়ছে ধর্মকেন্দ্রিকতা, আরেক দিকে বাড়ছে রাজনৈতিক যথেচ্ছাচার। ধর্মভিত্তিক জঙ্গিবাদী আতঙ্কের পাশাপাশি আরও অনেক বড় ও গভীর সংকটে দেশ নিমজ্জিত। একটা পোশাকি উন্নয়নের ঢোল বাজানো হচ্ছে এবং ‘উন্নয়ন’ তাকেই বলা হচ্ছে, যাকে উন্নয়নের এজেন্টরা ঠিক বলবেন। গণতন্ত্রের মহিমা এখানে একমুখী তালি বাজানো।
সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রাজনীতি ঢুকে পড়েছে, শিক্ষাকেন্দ্রগুলো হয়েছে রাজনীতির মহাআড়ত। অরাজকতাই স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবাদ, সমালোচনাকে টুঁটি টিপে ধরা হয়েছে। বিরোধী দল বিবৃতিসর্বস্ব। দেশে আইন, নীতি, কল্যাণমুখী পরিকল্পনা কোনো কিছুরই অস্তিত্ব নেই। ভালো ছাত্ররা জিওম্যাট-টোফেল দিয়ে বিমানে চড়ে পৃথিবীর সব উন্নত দেশে পাড়ি জমাচ্ছে। আমাদের শিক্ষাও সীমাহীন ক্ষয়ের দিকে এগিয়ে চলছে চোখ-কান বন্ধ করে।
আমাদের নেতারা ঠিক করেছেন, তারা কার চেয়ে কে খারাপ হবেন এই প্রতিযোগিতা করেই কাল পার করে দেবেন। তারা ঠিক করেছেন যে, মানুষের কাছে যাওয়ার দরকার নেই, আমিই হচ্ছি সম্রাট। আমিই জানি কোনটা ভালো জনতার জন্য। আমাদের সেসব টোটকা জানা আছে।
শাসকদের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গির কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে না। রাজনীতি এখন রাজনীতি থেকে নেমে গণনীতি, সমাজের সব সংস্থায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, স্কুল-কলেজে কলকাঠি নাড়ছে নেতা এবং পাতি-নেতারা। তাদের রাজনৈতিক দলের নেতা বলব না, তারা হলো স্রেফ ‘আমাগো লোক’। অরাজকতা বাংলার চিরকালের পাথেয়, এখন মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে তীব্রভাবে। কৃষ্টিতে, বাণিজ্যে, শিল্পতে, এমনকি শিল্পজগতেও। এর কোথায় শেষ? আবার নতুন করে দেশ গড়বে কে? সে মানুষেরা কোথায়?
সুশাসন প্রতিষ্ঠায় শোচনীয় ব্যর্থ একটি দেশ বাংলাদেশ। বাঙালির মানসিক উৎকর্ষ অবিসংবাদিত, তার চেয়ে বড় পরিচয় হলো, বাঙালি অনেক বেশি তর্কশীল। সে শুধু শোরগোল তুলেই চলছে, চলবে। আসলে কিছুই চলছে না, চলবে না। এ দেশের সব আছে, কিন্তু আজ তার কিছুই দেওয়ার নেই, এক অন্তহীন নৈরাশ্য ছাড়া।
কৌটিল্যের দর্শনে বাস্তববোধ যতই থাকুক না কেন, সততার মূল্যবোধ কিন্তু ছিল প্রবল। এ অঞ্চলের দর্শনের শেকড় যে উপনিষদের মধ্যে নিহিত সেখানেও কিন্তু আছে রাজনৈতিক ও মানবিক বহুত্ববাদ। আকবরের দীন-ইলাহি থেকে অশোক চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের দেশশাসনে মানবতাবাদেও শেকড় ছিল। যতই ধর্মীয় রেষারেষি, যুদ্ধ ও হানাহানি হোক না কেন!
সমস্যা হচ্ছে, আজকের বাংলাদেশে এই পরমতসহিষ্ণুতার মানবধর্ম কোথায় যেন অবলুপ্ত হতে বসেছে। বাঙালির মানবধর্মের ঐতিহ্য সুপ্রাচীন, তাই আজ আমরা যতই পারস্পরিক বিদ্বেষের রাজনীতির অবক্ষয়ের শিকার, ততই স্তব্ধ হচ্ছে উন্নয়ন। বন্ধ্যা হচ্ছে অর্থনীতি-সংস্কৃতি-রাজনীতি। হারিয়ে গেল হিউম্যানিজম নামক তত্ত্বটি!
কান্ট বলেছিলেন, ন্যায়ের প্রশ্নে কোনো ছুটির দিন নেই (দেয়ার ইজ নো হলিডে ইন ভার্চু)। সে কথা আজও সত্য। কী পদ্ধতিতে মানুষের দুঃখ দূর হবে তা নিয়ে মতপার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু তার ভিত্তিতেই মতাদর্শগত পথ তৈরি হয়। একেকটি দল একেকটি মতাদর্শ অনুসরণ করে চলে। কিন্তু বাস্তবে মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে হবস কিংবা মেকিয়াভেলিকে গুরু মেনে আমরা যদি মনুষ্য বিরোধিতার জয়গান গাইতে যাই, তা হলে আর যা-ই হোক, সেটা কিন্তু আমাদের সংস্কৃতির ঐতিহ্য নয়।
আমাদের রাজনীতিটা এদল-ওদলে ভাগ করে ফেলা হয়েছে। এটা বিভেদের রাজনীতি। এটা বনামের রাজনীতি। এই রাজনীতি আমাদের বিক্ষত করে চলেছে। এই বনামের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে গোটা পরিস্থিতির মূল্যায়ন করার মানসিকতা আমরা কোথাও হারিয়ে ফেলছি। আর এই সমস্যাটা কিন্তু শুধু রাজনৈতিক সমস্যা নয়, এটা বোধহয় আমাদের মানবধর্মের সংকটও!
বিরোধী দল থেকে শাসক দল হওয়া এবং জনপ্রিয়তা অপসৃয়মাণ হলে শাসক ফের হয়ে যায় বিরোধী নেতা। এ তো ল অব নেচার, প্রকৃতির এই সূত্রকে হাসিনা-খালেদা কেউ আটকাতে পারবেন না। ব্যতিক্রম হবেন কী করে? কেউ চিরকাল ক্ষমতাসীন থাকবেন, সেটা অলীক চিন্তা। সমস্যা হচ্ছে, হাসিনা সরকার যত ‘অসফল’ই হোক না কেন, তাদের কোনো যোগ্য বিকল্প দৃশ্যমান নয়। ফলে ‘থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়’ চিন্তার বৃত্ত থেকে আমরাও বের হতে পারছি না।
লেখক: কলামিস্ট ও লেখক
অবাঙালিরা যে পূর্ব পাকিস্তানে অসুবিধায় আছে এ কথা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকার জনসভায় উল্লেখ করেছিলেন। ওই বিশাল সমাবেশে বাঙালিরা তো ছিলই, অবাঙালিরাও ছিল। উর্দু এবং কেবলমাত্র উর্দুই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে এই ঘোষণায় বাঙালিরা ভড়কে গেছে, কেউ কেউ ‘না না’ বলেছে; কিন্তু উর্দুভাষীরা সেদিন নিশ্চয়ই অত্যন্ত উৎফুল্লø হয়েছিল। হওয়ার কথা। তাদের পক্ষে এটাই ভাববার কথা যে, মাতৃভূমি ত্যাগ করে তারা পাকিস্তানে এসেছে বটে, তবে পাকিস্তানি রাষ্ট্র তাদের সঙ্গে মোটেই বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, বরং তারাই হবে এর প্রকৃত নাগরিক, তাদের তুলনায় বাঙালিরা থাকবে নিচের স্তরে, কেননা বাঙালিরা উর্দু ভাষা জানে না, উর্দু শেখার চেষ্টা করবে হয়তো, কিন্তু যতই চেষ্টা করুক উর্দু যাদের মাতৃভাষা তাদের স্তরে উঠতে পারবে না।
উর্দুভাষীরা এমনিতেই বাঙালিদের চেয়ে নিজেদের উঁচু জ্ঞান করত, যে মনোভাবের পেছনে তারা একাধিক ‘যুক্তি’ও দাঁড় করিয়ে রেখেছিল। প্রথমত, তারা মনে করত উর্দু হচ্ছে মুসলমানদের ভাষা আর বাংলা ভাষা হলো অমুসলমানদের ভাষা, সেদিক থেকে তারা তাই উচ্চতর মুসলমান। স্মরণীয় যে, ভাষার ব্যাপারে বাঙালিদের মধ্যেও কারও কারও মনে হীনম্মন্যতা বোধ ছিল, যে জন্য কেউ কেউ ঘরে উর্দু ব্যবহার করতে চাইত, নিজেদের মুসলমানত্ব ও আভিজাত্যের নির্ভরযোগ্য প্রমাণ হিসেবে। এটাও ভুললে চলবে না যে, অবিভক্ত বাংলার দুজন মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী উর্দুভাষী ছিলেন এবং এমনকি এ কে ফজলুল হকও বিয়ে করেছিলেন উর্দুভাষী গৃহে। পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু হবে এ ঘোষণা নাজিমুদ্দিন জোর গলাতেই দিয়েছিলেন; সোহরাওয়ার্দী অতটা জোরে না বললেও এমনকি বায়ান্ন সালের একুশে ফেব্রুয়ারির পরে করাচি থেকে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে পাকিস্তানি সরকারের ‘আহাম্মকি’র সমালোচনা করেছিলেন এ কথা বলে যে, সরকার শিক্ষার মধ্য দিয়ে উর্দুকে গ্রহণযোগ্য করে না তুলে জোর করে তাকে চাপাতে গিয়ে সংকটের সৃষ্টি করেছে।
উর্দুভাষীদের উচ্চমন্যতার দ্বিতীয় কারণ ছিল তাদের এই বোধ যে, তারা স্থানীয় জনগণের চেয়ে যোগ্যতা, দক্ষতা ও শিক্ষায় অধিক অগ্রসর। কৃষিকার্য করত যে বিহারি, সে তো আর পূর্ব পাকিস্তানে আসেনি, যারা এসেছিল তারা নানা পেশা ও ব্যবসাতে জড়িত ছিল, তাদের অনেকের মধ্যে খবরের কাগজ পড়ার আগ্রহ ছিল। ঢাকা থেকে বিভিন্ন সময়ে উর্দু ভাষায় ছয়-ছয়টি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে, ঢাকা ও অন্যান্য শহর থেকে সাপ্তাহিক ও সান্ধ্য দৈনিক মিলিয়ে প্রকাশনার সংখ্যা ছিল বিশটি, শেষ দিকে ‘পাকিস্তান অবজারভার’ গোষ্ঠী থেকে উর্দু ভাষায় দৈনিক ‘ওয়াতান’ ও চলচ্চিত্র সাপ্তাহিক ‘চিত্রালী’র উর্দু সংস্করণও প্রকাশ করা শুরু হয়েছিল।
উচ্চমন্যতার এই বোধ উর্দুভাষীদের পক্ষে বাঙালির সঙ্গে একই রাজনৈতিক ধারায় মিশে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকের সৃষ্টি করেছে। এই সমস্যাটা পশ্চিম পাকিস্তানে বসবাসকারী মোহাজেরদের ক্ষেত্রে ততটা দেখা দেয়নি; রাজনৈতিকভাবে তারা মিশে যেতে চেষ্টা করেছে এবং মুসলিম লীগের জন্য কোনো ভোট ব্যাংক তৈরি করতে সম্মত হয়নি, পূর্ব পাকিস্তানে যেটা তারা করেছিল। কেবল তাই নয়, একাত্তরে তারা চিহ্নিত হয়েছিল চরম বাঙালি-বিদ্বেষী বলে। যুদ্ধের শুরুতে স্থানীয়ভাবে বিহারিরা ভয়ংকর বিপদের মধ্যে ছিল, লাঞ্ছনা ও প্রাণহানির মর্মান্তিক সব ঘটনা ঘটেছে, পরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী হয়ে তারা বাঙালি-নিধনে অংশ নিয়েছে এবং যুদ্ধশেষে নিক্ষিপ্ত হয়েছে বিপদের ভীষণ গহ্বরে।
যুদ্ধের পরে তারা নিজেদের মনে করেছে আটকে পড়া পাকিস্তানি। অনুরূপভাবে পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালিরা ছিল, যাদের বাংলাদেশ সরকার ফেরত নিয়ে এসেছে, কিন্তু বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ব্যাপারে পাকিস্তান সরকার তেমন কোনো আগ্রহ দেখায়নি, যার ফলে তাদের অধিকাংশকেই মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়েছে। পাকিস্তান তাদের দু-দুইবার শরণার্থী করল একবার সৃষ্টির সময়ে আরেকবার পতনের মুহূর্তে।
যুদ্ধের শুরু থেকেই উর্দুভাষীদের নাম হয়েছিল ‘মাউড়া’। সেটা ছিল বিদ্বেষ ও ধিক্কারের ধ্বনি। মাউড়া নামের উদ্ভব মাড়োয়ারি থেকে, যে মাড়োয়ারিরা ভারতের মাড়োয়ারের অধিবাসী। তাদের সঙ্গে বিহারিদের কোনো আত্মীয়তা থাকার কথা নয়, ছিলও না; কিন্তু ‘মাউড়া’ নাম তাদের পরিচয়চিহ্ন হিসেবে যুক্ত হয়ে গিয়েছিল। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের বিশেষ বিশেষ মহল থেকে বলা হতো মালাউন, পাকিস্তান ভাঙার পরে বিহারিরা ডাক নাম পেল মাউড়ার। ‘মালাউন’দের মনে করা হতো, পাকিস্তান-বিদ্বেষী, মাউড়াদের পরিচয় হলো তারা বাংলাদেশ-বিদ্বেষী। মানবিক বা নাগরিক পরিচয় ছাপিয়ে উঠতে চাইল পারস্পরিক-বিদ্বেষের নাগরিক স্মারকচিহ্ন। পাকিস্তানি রাষ্ট্রের কর্ণধাররা উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠায় উগ্রবাসনায় তাদের রাষ্ট্রের নয় শুধু পূর্ববঙ্গে বসবাসকারী উর্দুভাষীদেরও বিপদ ডেকে এনেছে। তখনকার মানুষদের তো বটেই, ভবিষ্যৎ বংশধরদেরও। তখন মনে হয়েছিল উপকার করছে, পরে বোঝা গেল উপকার দূরের কথা, স্থায়ী অপকার করে রেখে গেছে।
একাত্তরের আগে যেমন পরেও তেমনি বাংলাদেশে বসবাসকারী উর্দুভাষীরা নিজেদের পাকিস্তানিই ভেবেছে, অন্যকিছু না ভেবে। ব্যতিক্রম ছিল, কিন্তু অন্য ক্ষেত্রে যেমন এই ক্ষেত্রেও তেমনি ব্যতিক্রম নিয়মকেই উদ্ভাসিত করে তুলেছে। পাকিস্তানের নতুন কর্ণধাররা এদের নিজেদের রাষ্ট্রে ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে মোটেই আগ্রহ প্রকাশ করেনি। টালবাহানা করেছে। নানান চাপের মুখে কিছু সংখ্যক আটকে পড়া পাকিস্তানিকে তারা নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু অধিকাংশকেই নেয়নি। বিত্তবানদের কেউ কেউ অবশ্য যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে, যুদ্ধের সময়ে এবং এমনকি পরেও চলে যেতে সক্ষম হয়েছে; তাদের হাতে অস্ত্র ছিল অর্থের।
বিত্তহীনরা পড়ে রয়েছে অসহায়, পরিত্যক্ত এবং অবাঞ্ছিত হিসেবে। ভারতের ভেতর দিয়ে রেলপথে তাদের পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ভারতের আপত্তি ছিল; আপত্তির ভিত্তিও ওই ভাষাই, কে জানে বিহারিরা মাঝপথে নেমে গিয়ে ভারতীয় জনস্রোতে মিশে যায় কি না, মিশে গেলে ভাষা দিয়ে তো আর তাদের আলাদা করা যাবে না। আটকে পড়া বাঙালিদের বেলায় ভারতের ভেতর দিয়ে রেলপথে আসার ব্যাপারে ভারত সরকার আপত্তি করেনি, কেননা সরকার নিশ্চিত ছিল যে, কেউ যদি ভারতের কোনো রেল স্টেশনে নেমে যেতেও চায় তবে অবিলম্বে ধরা পড়ে যাবে, তাদের মুখের বাংলা ভাষাই তাদের ধরিয়ে দেবে।
পাকিস্তানিরা যে উর্দুভাষী মোহাজেরদের তাদের দেশে নিয়ে যেতে উৎসাহী নয়, তার পেছনেও ভাষা একটা কারণ বটে। পাকিস্তানের কোনো অঞ্চলের মানুষের মাতৃভাষাই উর্দু নয়, ভারত থেকে আগত মানুষদের স্থানীয়রা চিহ্নিত করে হিন্দুস্থানি বলে। হিন্দুস্থানি অর্থ সাধারণভাবে উর্দুভাষী, সে জন্য আশঙ্কা ছিল যে, মোহাজেরদের যেখানেই পুনর্বাসিত করা হোক না কেন, স্থানীয় লোকরা তাদের বহিরাগত অতিরিক্ত ঝামেলা বলেই বিবেচনা করবে এবং মোটেই খুশি হবে না।
আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে পাকিস্তান সরকারের ধারণা ছিল, বিহারিদের নিয়ে গেলে পাকিস্তানের জনবিন্যাস হুমকির মুখে পড়তে পারে, যে জন্য ফেরত নেওয়ার আগে জনগণের ঐকমত্য প্রয়োজন হবে বলে ভাঁওতা দিয়েছিল। বলা বাহুল্য, ওই অবস্থান থেকে পাকিস্তান কখনো সরে আসেনি এবং বিহারিদেরও ফেরত নেয়নি। বিশেষ করে এ কারণে যে, পাকিস্তানে জাতিসত্তাগত বিভাজন ও বিরোধ ইতিমধ্যেই বেশ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, মোহাজেরদের বেশিরভাগ যেখানে বসবাস করে সেই সিন্ধু প্রদেশে স্থানীয়-অস্থানীয় সংঘর্ষের অবসান ঘটেনি, বরং বৃদ্ধি পাবে বলেই তারা আশঙ্কা করেছে।
বিহার থেকে আসা মুসলমানদের উচ্চমন্যতার কথা উল্লেখ করেছি, এখানে যোগ করা যেতে পারে যে, তারা যে কেবল উর্দুভাষী মুসলমান হিসেবে নিজেদের উঁচুস্তরের মানুষ ভাবত তা নয়, নিজেদের আঞ্চলিক ইতিহাস সম্পর্কেও অহংকার লালন করত। আজ বিহার অত্যন্ত অসুবিধায় আছে ঠিকই। সেখানে শিল্পকারখানা তেমন গড়ে ওঠেনি, বর্ণবিভাজনের জাঁতাকলে সাধারণ মানুষ এখনো নিগৃহীত, রাজনৈতিক নেতৃত্ব দুর্নীতিতে নিমজ্জিত এবং ওই দুর্নীতিগ্রস্তরাই রাজত্ব করছে। কিন্তু তাদের অতীত ছিল গৌরবোজ্জ্বল। বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক বুদ্ধদেব বিহারেরই লোক, জৈনধর্মের প্রবর্তক মহাবীরের জন্মভূমিও ওই বিহারই।
রামের স্ত্রী সীতাও বিহারি ছিলেন বলেই কথিত আছে। বিহারের নাম এক সময়ে ছিল মগধ। বিহারে সম্রাট অশোকের জন্ম হয়েছিল। বিহার নামের উদ্ভব বৌদ্ধবিহার থেকে। এক সময়ে বিহারের রাজধানী ছিল পাটলিপুত্র। যেখান থেকে পাটনা নামের উৎপত্তি। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল বিহারে অবস্থিত। শেরশাহের জন্ম বিহারে।
একদা বিহার বাংলার অংশ ছিল। নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন বাংলা বিহার উড়িষ্যার অধিপতি। যে মাগধী প্রাকৃত ভাষার সঙ্গে বাংলা ভাষার উদ্ভব জড়িত তার প্রচলনও ছিল ওই বিহার অঞ্চলেই। কিন্তু তাই বলে বিহারিরা যে বাঙালিদের সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করত তা নয়। বিরূপ মনোভাবটিই বরং ছিল প্রবল ও গভীর। বঙ্গভূমি চিরকালই প্রান্তবর্তী, এমনকি প্রতিবেশী বিহারিদের দৃষ্টিতেও। বাংলায় গমনের দরজা আছে একশটি, নির্গমনের দরজা নেই একটিও। সেখানকার মেয়েরা সবাই ভীষণ জাদুকরী, তাদের খপ্পরে একবার পড়লে রক্ষা নেই, তোমাকে মাছি বানিয়ে ছাড়বে এসব ধ্যান-ধারণা তারা সাংস্কৃতিকভাবেই লালন করেছে। ভাগ্যান্বেষণে তারা বাংলায় এসেছে, কলকাতা, মেদিনীপুর, বর্ধমানে বসত গড়েছে, রেল কর্মচারী হিসেবে ভারত বিভাগের আগেই পূর্ববঙ্গের সৈয়দপুর, পার্বতীপুরে তাদের আগমন ঘটে। কিন্তু স্থানীয় জনগণের সঙ্গে তারা এক হতে পারেনি।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নতুন কৌশল ব্যবহার করেছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি সরকারের ‘অন্যায় আচরণের শিকার’ এমন অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন বিশ্বের ৪০ বিশিষ্টি ব্যক্তি, যা গত মঙ্গলবার (৭ মার্চ) মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টে বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়। সেই বিজ্ঞাপনকে খবর আকারেও প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের কয়েকটি গণমাধ্যম। কিন্তু ড. ইউনূস কী ধরনের অন্যায় আচরণ কিংবা আক্রমণের শিকার, তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য ওই বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়নি।
‘বিবৃতিতে ব্যাপকভাবে তথ্য-ঘাটতি লক্ষণীয়। আমরা যদি খুব সাদামাটাভাবে প্রথম থেকে বিজ্ঞাপনটি দেখি, ড. ইউনূস সারা বিশ্বে যে মানবিক কার্যক্রম চালিয়েছেন বা দেশে যে কার্যক্রমগুলো চালাচ্ছেন, সেটি কোথায় ক্ষতিগ্রস্ত হলো কিংবা কোথায় কে বন্ধ করে দিল সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু নেই।
ড. ইউনূসের কি বিদেশ যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা আছে? তিনি দেশের বাইরে শত শত জায়গায় যাচ্ছেন, তাকে বাধা দেয়া হয়েছে? বিমানবন্দরে যেতে দেয়া হয়নি? আমরা তো এ রকম কিছু জানি না। তার কার্যক্রমের ওপর কোথায় বাধা এসেছে? এটি প্রথম অভিযোগ, যার কোনো ভিত্তি নেই।’
ড. ইউনূসের সঙ্গে সরকার এমন কোনো আচরণ করেনি যার জন্য খোলা চিঠি, তাও বিজ্ঞাপন দিয়ে ছাপাতে হবে। লাখ লাখ ডলার খরচ করে, ‘বিবৃতি বিজ্ঞাপন’ দিতে হলো। নিউজ আইটেম যখন বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার করতে হয়, তখন বুঝতে বাকি থাকে না, এর মধ্যে প্রচারিত তথ্য বানোয়াট।
তার সঙ্গে সরকার এমন কোনো আচরণ করেনি, যা এ ধরনের বিবৃতি দাবি করে। তবে ড. ইউনূস বাংলাদেশে কী ধরনের ক্ষতিকর কার্যক্রমে জড়িত, সে বিষয়ে এ দেশের সাধারণ মানুষ ভালোভাবেই অবগত।
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। এক যুগ আগে নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা সরানোর বিষয়ে একটি তথ্যচিত্র সম্প্রচার করা হয়। বর্তমানে ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকমের দুর্নীতির অনুসন্ধান চলছে, দুর্নীতি দমন কমিশনে।
প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে শ্রমিকদের অর্থ লোপাট, কল্যাণ তহবিলের অর্থ বিতরণ না করে ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ এবং দুই হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে সহযোগী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে এরই মধ্যে গ্রামীণ টেলিকমের এমডি নাজমুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক।
এ ছাড়া ১/১১ সেনাসমর্থিত সরকারের সময় প্রধান দুই দলের নেত্রীকে মাইনাস করে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে চেয়েছিলেন তিনি। সে সময় গ্রামীণ পার্টি নামে একটি দল করারও ঘোষণা দিয়েছিলেন। পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বাতিলের নেপথ্যে ঘুরেফিরে এসেছে ড. ইউনূসের নাম।
ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকমের দুর্নীতির অনুসন্ধান চলছে। এ অবস্থায় গত বছরের অক্টোবরে ইউনূসকে মহানায়ক বানানোর তৎপরতা শুরু করে পশ্চিমা লবি। গত ৬ অক্টোবর ইউনূসকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, সুইডেনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নেত্রনিউজ।
যুক্তরাষ্ট্রের ফান্ডে দেশটির একটি এনজিওর অর্থায়নে চলে অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি। প্রতিবেদনটি করেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া বিতর্কিত সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন ইউনূসের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে।
এর এক সপ্তাহ পর ১৩ অক্টোবর ২০২২, ইউনূসকে মহানায়ক বানিয়ে খবর প্রকাশ করে ব্রিটিশ পত্রিকা ‘দ্য ইকোনমিস্ট’। সেখানে বলা হয়, নোবেলজয়ী ইউনূসের বিরুদ্ধে নিপীড়ন বাড়িয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি প্রচার করা হয়, তাকে দুদকে উপস্থিত হতে হবে, আসতে পারে দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞাও। এই রিপোর্ট প্রচারের সময় গড়িয়েছে বহু। এ সময়ের মধ্যে ড. ইউনূসের বিপক্ষে কোনো পদক্ষেপই তো চোখে পড়েনি। তাহলে কেন এ ধরনের মিথ্যাচার!
তার মানে ৪০ বিশিষ্ট নাগরিকের এই বিবৃতিও ধারাবাহিক প্রপাগান্ডার অংশ বলেই ধরে নেব।
লেখক : ফ্রিল্যান্সার, রাজনৈতিক কলামিস্ট
সমরেশ বসু (১৯২৪-১৯৮৮) ছিলেন একজন প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি লেখক। তার জন্মনাম সুরথনাথ বসু; [১] কিন্তু সমরেশ বসু নামেই লেখক পরিচিতি সমধিক। তিনি কালকূট ও ভ্রমর ছদ্মনামে উল্লেখযোগ্য সাহিত্য রচনা করেছেন। তার রচনায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, শ্রমজীবী মানুষের জীবন এবং যৌনতাসহ বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সুনিপুণ বর্ণনা ফুটে উঠেছে। তিনি ১৯৮০ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। তখন কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বিচিত্র বিষয় এবং আঙ্গিকে নিত্য ও আমৃত্যু ক্রিয়াশীল লেখকের নাম সমরেশ বসু। দেবেশ রায় তার মৃত্যুতে লেখা রচনাটির শিরোনামই দিয়েছিলেন, ‘জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি লেখক এবং পেশাদার লেখক’ (প্র্রতিক্ষণ, ৫ম বর্ষ, ১৭ সংখ্যা, ২-১৬ এপ্রিল ১৯৮৮)। লিখেছিলেন, ‘তিনি আমাদের মতো অফিস-পালানো কেরানি লেখক ছিলেন না, যাদের সাহস নেই লেখাকে জীবিকা করার, অথচ ষোলোআনার ওপর আঠারোআনা শখ আছে লেখক হওয়ার।’ লেখক হিসেবে সমরেশ আমৃত্যু যে লড়াই করেছেন, তার কোনো তুলনা নেই। তার নিজের জীবনই, এক মহাকাব্যিক উপন্যাস। ‘চিরসখা’ নামের প্রায় ৫ লাখ শব্দের বিশাল উপন্যাসে সেই লড়াইকে স্মরণীয় করে রেখেছেন তারই পুত্র নবকুমার বসু। ছোটদের জন্য তার সৃষ্ট গোয়েন্দা গোগোল অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। গোগোলের দুটি কাহিনি গোয়েন্দা গোগোল ও গোগোলের কীর্তি নামে চলচ্চিত্রায়িতও হয়েছে। সমরেশ বসু প্রণীত উপন্যাসের সংখ্যা ১০০। তার প্রকাশিত ছোটগল্পের সংখ্যা ২০০। সমরেশ বসু ১৯৮৮ সালের ১২ মার্চ মারা যান।
একটি সমাজে সন্ত্রাস কখন হয়? কেন হয়? এমন প্রশ্নের বহুমাত্রিক উত্তর থাকে। সমাজে সন্ত্রাসী থাকবে, সন্ত্রাস থাকবে। কিন্তু তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখাই মূল চ্যালেঞ্জ। অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস দমনে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর অর্পিত দায়িত্বই আসল। মূলত এই বাহিনীই স্থিতিশীল রাখে একটি সমাজকে। ফলে দেশের মানুষের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক রাখতে হয়। ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’ সাধারণ মানুষের মধ্যে কথাটি আস্থায় নেওয়ার জন্য কিছু উদ্যোগ নিতে হয়। ইতিমধ্যে কিছু নেওয়াও হয়েছে। এটা সত্য, পুলিশের আচরণ এবং থানার পরিবেশে যথেষ্ট পরিবর্তন এসেছে। তারপরও সবকিছু যে বিতর্কের ঊর্ধ্বে, এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। যদিও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মতোই তাদের কাজ করতে হয়। তবু ‘রাজনৈতিক’ পরিচয়ের বিষয়টি, অনেকাংশেই পুলিশের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি করে এটা নির্জলা সত্য। এই ফাঁক দিয়েই মুক্ত হয়ে যায় একজন অপরাধী। সেখানে পুলিশ হয়তো অসহায়! কিন্তু এমন ঘটনা যে অনবরত ঘটেই যাচ্ছে তা নয়। ঠিক সেখানেই পুলিশের ব্যর্থতা প্রকট হয়ে ওঠে। না হলে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বাদ রেখে, একটি তালিকা কীভাবে প্রস্তুত করা হয়?
গতকাল শনিবার দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত ‘চিহ্নিতদের ছাড়াই সন্ত্রাসী তালিকা’ শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনীতির মাঠ মাঝেমধ্যেই উত্তাপ ছড়াচ্ছে। হামলা-সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। নির্বাচন ঘিরে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা সক্রিয় উঠতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট মহল। কিন্তু চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরির ব্যাপারে এখনো অনেকটা গা-ছাড়া ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি)। এ ছাড়া ২০২১ সালের মার্চে সিএমপির সন্ত্রাসী তালিকা হালনাগাদ করা হয়নি। ৩২৩ জনের ওই তালিকায় চিহ্নিত অনেকের নাম নেই। আবার এই তালিকায় রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে। যে কারণে তালিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আ স ম মাহতাব উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অপরাধীর তালিকা তো প্রতিদিন হয়। অপরাধের ধরন অনুয়ায়ী অপরাধীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্রাইম ডেটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (সিডিএমএস) ঢুকে যায়। রাজনৈতিক বিবেচনায় সন্ত্রাসী তালিকা হয় না।’
এদিকে আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে সন্ত্রাসীরা সক্রিয় হচ্ছে, মাঠপর্যায় থেকে এমন তথ্য পেয়ে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটে বিশেষ বার্তা পাঠিয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে চট্টগ্রামে কর্মরত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, চট্টগ্রামের আন্ডারওয়ার্ল্ডের কিছু শীর্ষসন্ত্রাসী ভারত, মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছে। তাদের নির্দেশে দেশে অবস্থানকারী সহযোগীরা খুন, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছে। এমনকি হত্যাকা-ের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছে তারা। সন্ত্রাসীদের নতুন তালিকা তৈরির কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন র্যাব-৭-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মাহবুব আলম। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে আমরা সন্ত্রাসীদের তালিকা করছি। আগামী দুই মাসের মধ্যে ওই তালিকা তৈরির কাজ শেষ হবে।’
নগর পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য, অপরাধী শনাক্তের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা হলো সন্ত্রাসী তালিকা হালনাগাদ করা। আর তালিকা তৈরির সময় কোনো রাজনৈতিক নেতা বা প্রভাবশালীদের ছাড় দেওয়া হয় না। অন্যদিকে, সিএমপির উপকমিশনার (অপরাধ) নিষ্কৃতি চাকমা বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের তালিকা করে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। ২০২১ সালে করা তালিকাটি আমি দেখিনি। তবে সন্ত্রাসীর কোনো রাজনৈতিক পরিচয় থাকা উচিত নয়।’
কোন কর্তৃপক্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকা করে, সেটা জনগণের দেখার বিষয় নয়। শান্তিপ্রিয় জনগণ চান সন্ত্রাসীরা আইনের আওতায় আসুক। সুনির্দিষ্ট অপরাধের শাস্তি পাক। সেই অপরাধী কোন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী, সেই পরিচয় অপরাধের মাত্রার সঙ্গে যোগ করা ঠিক হবে না। পুলিশ কর্তৃপক্ষ যেন নির্বিঘেœ কোনো ধরনের অবৈধ নির্দেশ ছাড়াই আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে, সেই পথ উন্মুক্ত করা প্রয়োজন। আমাদের প্রত্যাশা থাকল, র্যাবের তৈরি সন্ত্রাসীদের তালিকা নিয়ে কোনো ধরনের প্রশ্ন উঠবে না। তালিকায় উঠে আসবে প্রকৃত অপরাধীর নাম।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন সুলতান মাহমুদ। ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে ধানমন্ডি এলাকায় ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন এ শিক্ষক। এখনো সেই ফ্ল্যাটের ঋণ পুরোপুরি পরিশোধ হয়নি। সুলতানের ব্যবহৃত ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা দুটি। একটি বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক আর অন্যটি প্রাইম ব্যাংকের।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা জানতে চাইলেন তিনি জানান, ফ্ল্যাটের কিস্তি পরিশোধ, সন্তানদের বেতন আর ফ্যামিলি খরচ পরিশোধ সব মিলিয়ে প্রায় প্রতি মাসের শেষেই আর্থিক সংকট তৈরি হয়। এ সংকট থেকে বাঁচতেই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন। তবে মাসের শুরুতে বেতন পেয়েই পরিশোধ করে দিচ্ছেন ক্রেডিট কার্ডের বিল। এতে অতিরিক্ত সুদও গুনতে হচ্ছে না তাকে।
সুলতান মাহমুদ বলেন, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার না করলে হয়তো প্রতি মাসেই আমার বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধার করে চলতে হতো। এতে সম্মানহানিরও ঝুঁকি থাকে। কিন্তু এখন ব্যাংক থেকে স্বল্প সময়ের জন্য ধার নিয়ে তা আবার ফেরত দিচ্ছি। এতে কারও কাছে হাত পাততে হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, একসময় মানুষ ক্রেডিট কার্ডের প্রতি কম আগ্রহী হলেও বর্তমানে এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে দেশের ৩৯টি ব্যাংক কার্ড সেবা দিচ্ছে। গত মার্চ শেষে এসব ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ লাখ ৭৮ হাজারটি। ঠিক চার বছর আগে ২০১৯ সালে মার্চ শেষে এ কার্ডের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ৪৯ হাজারটি। অর্থাৎ মাত্র চার বছরের ক্রেডিট কার্ড বেড়েছে ৮ লাখ ২৮ হাজার বা ৬১ দশমিক ৪২ শতাংশ। এই একই সময়ে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। গত মার্চে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের মার্চে এ লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ চার বছরের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
শুধু সুলতানই নন, ব্যবসায়ী আমিরুল, সাংবাদিক আক্তার আর চাকরিজীবী তারিকুলও একই কারণে ব্যবহার করছেন দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ক্রেডিট কার্ড। তাদের মতে, ক্রেডিট কার্ডের কারণে সহজ হয়েছে তাদের জীবনযাত্রা। তবে উল্টো চিত্রও আছে। করোনা মহামারীর সময় চাকরি হারানো আজাদুল ইসলাম ক্রেডিট কার্ডে ধার নিয়ে এখন বিপাকে রয়েছেন। তিনি বলেন, করোনার সময় প্রথম দিকে আমাদের বেতন কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়। সে সময় সংসারের খরচ বহন করতে ক্রেডিট কার্ডের সহায়তা নিয়েছেন। যে ঋণ এখন পর্যন্ত টানতে হচ্ছে তাকে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ হবে বলে আশাবাদী এ গ্রাহক।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ক্রেডিট কার্ড জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে এর ‘ধার’ নেওয়ার পদ্ধতির জন্য। পাশাপাশি পণ্যের দামে ডিসকাউন্টের পাশাপাশি কিস্তিতে পরিশোধের পদ্ধতিও এ ব্যাপ্তি বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। যেটি গ্রাহককে এককালীন বেশি দামের পণ্য কিনতে সহায়তা করে। এবার জেনে নেওয়া যাক ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা-অসুবিধাগুলো।
পণ্য কিনতে কিস্তি সুবিধা : ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কিস্তিতে পণ্য কিনতে একসঙ্গে সব টাকা পরিশোধ করতে হবে না। বিনা সুদে বা নির্দিষ্ট পরিমাণ সুদে গ্রাহক কয়েক মাসের সমান কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। যদিও গ্রাহক তার ক্রেডিট লিমিটের চেয়ে বেশি দামি পণ্য কিনতে পারবেন না। আর কিস্তির টাকাও পরিশোধ করতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। এতে কারও কাছে টাকা ধার করার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে পরিশোধের ক্ষেত্রে সময়সীমা পার হয়ে গেলে জরিমানা গুনতে হতে পারে।
ঋণের সুবিধা : কিছু ক্রেডিট কার্ড, বিশেষ করে বিদেশে শূন্য শতাংশ সুদে ঋণ দেয়। এসব ক্ষেত্রে মাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ মূল্য পরিশোধ করতে হয়, যা বেশ সুবিধাজনক। আবার কোনো কোনো কার্ডে ঋণে সুদের হার অনেক থাকে। এ ক্ষেত্রেও একটা সুবিধা আছে। বোঝা এড়াতে দ্রুত ঋণ পরিশোধ করা হয়। নিজস্ব ঋণ থাকে না।
পরিবর্তনযোগ্য : এসব ক্ষেত্রে সঠিক কার্ডটি বেছে নিতে পারা জরুরি। একটি ভুল কার্ড দিনের পর দিন ব্যবহার করলে ঋণের বোঝা শুধু বাড়তেই থাকবে। তবে এটা বুঝতে ব্যাংকের পুরো শর্তাবলি মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। যদিও কার্ডের ধরন পরিবর্তন করা যায় খুব সহজে। কারণ প্রতিটি ব্যাংকে বিভিন্ন প্রকারের ক্রেডিট থাকে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী কার্ড যেমন নিতে পারবেন তেমনি পরবর্তী সময়ে সেটির ধরন পরিবর্তনও করতে পারবেন। আবার নির্দিষ্ট পরিমাণ লেনদেন করলে বাৎসরিক ফি এড়ানো যায়। যেমন অনেক ব্যাংকের কার্ডে অন্তত ১৮ বার কেনাকাটা করলে বাৎসরিক ফি দিতে হয় না। ব্যাংকভেদে এ নিয়মের ভিন্নতা রয়েছে। দেশের বাইরেও ব্যবহার করা যায় : ক্রেডিট কার্ড ইন্টারন্যাশনাল হলে সেটি ব্যবহার করা যাবে বিশ্বের অনেক দেশেই। টাকার পাশাপাশি ডলারও ধার করে ব্যবহার করা যায়। হোটেল বুকিং, বিমানভাড়া, রেস্টুরেন্ট ও কেনাকাটায় মেলে নানা ছাড় ও পয়েন্ট জেতার সুযোগ। বিদেশে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে যা খরচ করবেন, মাস শেষে আপনার সেই পরিমাণ বিল হিসেবে ইস্যু করবে ব্যাংক। তারপর সুদ বা জরিমানা এড়াতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই বিল পরিশোধ করতে হবে।
অফারের ছড়াছড়ি
বিভিন্ন সময়ে ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন অফার দেওয়া হয়। যেমন ‘ক্যাশ ব্যাক অফার’, ‘স্পেশাল ডিসকাউন্ট’। দেশের বাইরে বেড়াতে গেলে, হোটেলে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারে অনেক সময়ই মূল্যছাড় দেওয়া হয়। প্লেনের টিকিট কাটতেও অনেক সময় পাওয়া যায় বিশেষ মূল্যছাড়। আর অনলাইন কেনাকাটার জন্যও এখন ক্রেডিট কার্ড বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন সময়ে দেখা যায়, নামিদামি হোটেল ও রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়ায় ছাড় এবং অফার দিয়ে থাকে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আবাসিক হোটেলগুলোও ক্রেডিট কার্ডে বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে থাকে। একটি কিনলে একটি ফ্রি (বাই ওয়ান গেট ওয়ান) অফারও দেওয়া হয়। এ ছাড়া রয়েছে মূল্যছাড়সহ নানা অফার। অনেকেই পরিবার নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে ঘুরতে যান। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও হোটেলের নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হোটেল বুক করা যায়। এ ক্ষেত্রেও আপনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারেন। তবে বিদেশে হোটেল বুকিংয়ের টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রে ডুয়েল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড প্রয়োজন হবে।
অসুবিধা
ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনি অসুবিধাও কম নয়। এজন্য বেশ সতর্ক হতে হবে গ্রাহককে। একটু বেখেয়ালি হলেই পড়তে পারেন ঋণের ফাঁদে।
ঋণের ফাঁদ
ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার সবসময়ই একটি ঋণ নেওয়ার মাধ্যম। মনে রাখতে হবে অর্থ খরচের ৪৫ দিনের মধ্যে সেটি পরিশোধ করতেই হবে। অন্যথায় ঋণের ওপর সুদ শুরু হবে। যা ঋণের পরিমাণ প্রতিদিন বাড়িয়ে দেবে। তাই কিছুটা ঝুঁকি থেকেই যায়।
লুক্কায়িত ব্যয়
সুদের হার পরিশোধই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের একমাত্র ব্যয় নয়। সময়মতো মাসিক বিল পরিশোধ না করলে গ্রাহককে জরিমানা গুনতে হতে পারে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে নগদ অর্থ তুলতে এর জন্য নির্দিষ্ট হারে ফি দিতে হতে পারে। সরাসরি বুথ থেকে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে নগদ অর্থ উত্তোলন করতে গেলে বাড়তি ফি এবং ওইদিন থেকেই (এ ক্ষেত্রে ৪৫ দিন সময় দেওয়া হয় না) সুদ গণনা শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে চেক দিয়ে টাকা সঞ্চয় হিসেবে স্থানান্তর করে তারপর সেটি নগদায়ন করলে ৪৫ দিন সময় পাওয়া যাবে।
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলতে নেমে হিটস্ট্রোকে মাঠেই রিয়া আক্তার (১০) নামের এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার দুপুরে উপজেলার সহদেবপুর ইউনিয়নের দ্বীমুখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এদিকে মঙ্গলবারের (৩০ মে) খেলায় সদর উপজেলার এক ছাত্রী মাঠে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
নিহত রিয়া আক্তার কালিহাতীর ছুনুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী এবং একই গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে।
ছুনুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের সঙ্গে দ্বীমুখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলা ছিল। রিয়া মাঠে খেলতে নেমে হঠাৎ মাটিতে পড়ে যায়। পরে তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোঘণা করেন।
প্রধান শিক্ষক বলেন, মরদেহ সোমবারই দাফন করা হয়েছে। আমরা রিয়ার বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা প্রকাশ করছি।
টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রচণ্ড গরমে খেলতে গিয়ে মেয়েটি মারা গেছে। মঙ্গলবারের খেলায় সদর উপজেলার একটি মেয়ে মাঠে বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বঙ্গমাতা টুর্নামেন্টটি আগামী ১২ জুনের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে।
প্রচণ্ড রোদে ছাত্রীদের খেলতে অসুবিধার বিষয়টি আমরা ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাকে অবগত করেছি।
রিয়া আক্তারকে খেলতে নামতে বাধ্য করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি অস্বীকার করেছেন।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সুজা উদ্দিন তালুকদার বলেন, এখনকার বাচ্চারা রোদের মধ্যে এ ধরনের খেলায় অভ্যস্ত নয়। প্রচণ্ড রোদে হঠাৎ করে মাঠে খেলতে নামলে তাদের জীবন ঝুঁকি থাকে। রোদের তাপে অতিরিক্ত ঘাম, ডিহাইড্রেশন এমনকি হিটস্ট্রোকে তাৎক্ষণিক মৃত্যু হতে পারে। তাই রোদের মধ্যে এভাবে বাচ্চাদের দিয়ে খেলানো উচিত নয়। বিষয়টি নীতি নির্ধারকদের বিবেচনা করা দরকার।
মহামারী করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বের প্রায় সব দেশই অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি থেকে জনসাধারণকে কিছুটা স্বস্তি দিতে ঋণের সুদের হার বাড়িয়ে দেওয়াসহ নীতিনির্ধারণী নানা ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। বাংলাদেশও এমন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। বিদেশি মুদ্রার সংকটসহ মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে শর্তসাপেক্ষে ধার নেওয়া ছাড়াও আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এখনো এর সুফল মেলেনি। এমন সংকটের মধ্যেই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ বাজেট উপস্থাপন হতে যাচ্ছে।
এবারের বাজেট সব দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে সামনে নির্বাচন, অন্যদিকে বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক চাপে চিড়েচেপ্টা দেশের অর্থনীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম, আইএমএফের শর্তের জাল নানান বাস্তবতার মধ্যে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বিশাল বাজেট প্রস্তাব পেশ করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য বরাদ্দ করা অর্থ পুরোপুরি খরচ করতে না পারার শঙ্কার মধ্যেই আরও বড় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বেশি। যদিও অর্থনীতিবিদরা এ বাজেটকে বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে মনে করছেন।
এবারের বাজেটের স্লোগান ‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’। এটি মুস্তফা কামালের দায়িত্বকালে পঞ্চম, আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম ও বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট। ১ জুন সংসদে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার কথা রয়েছে অর্থমন্ত্রীর। আজ বুধবার থেকে বাজেট অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে।
দেশের অর্থনীতি যখন চাপের মুখে, তখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে ঋণ চেয়েছিল বাংলাদেশ। নানান চড়াই-উতরাই শেষে গত ৩০ জানুয়ারি ৪৭ কোটি ডলার ছাড়ও করে ঋণদাতা সংস্থাটি। কিন্তু ঋণ দেওয়ার আগে নানান শর্ত জুড়ে দেয় তারা। এর মধ্যে ‘দুর্বল’ এনবিআরকে সবল করার বিশেষ শর্ত ছিল। জিডিপির তুলনায় বাংলাদেশের কর আদায়ের হার ৯ শতাংশের মধ্যে। ৩৮টি শর্তের মধ্যে কর আদায় বাড়ানোর অন্যতম শর্ত ছিল তাদের। এবারের বাজেটেও কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই কর আদায়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আদতে কতটুকু বাস্তবসম্মত তা নিয়েও সন্দিহান তারা।
বাজেটের আয়ের খাত বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাজস্ব থেকে আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদানসহ এর আকার দাঁড়াবে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। রাজস্ব বোর্ডের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা প্রতি বছরের মতো এবারও বাড়ছে। এবারের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআরবহির্র্ভূত কর ২০ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কর ব্যতীত অন্য আয় হবে ৫০ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদানের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাজেটের যে লক্ষ্যমাত্রার হিসাব ধারা হয়েছে তা বাস্তবসম্মত নয়। গত বছরের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল সেটি থেকে বাড়িয়ে তারা বাজেট ধরছে। তবে আমি মনে করি, বাজেটে পাস হওয়ার পর তা কতটুকু কার্যকর হয়েছে সেই হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা হওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রার কতটা আদায় হয়েছে তা বিবেচনা করে নতুন করে বেশি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা বাস্তবসম্মত নয়। সম্পদ আছে মনে করে যদি ব্যয় কাঠামো তৈরি করা হয়, তাহলে যে অর্থ নেই তাকে ব্যয় মনে করে দেখানো হবে। তার মানে হলো, সম্পদ না থাকলে ব্যয়ও হবে না।’
ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘এই মুহূর্তে লোক দেখানোর মতো একটা হিসাব দেখা যায়। আয়ও হবে না, ব্যয়ও হবে না। আমার ভাষায় এটি পরাবাস্তব বাজেট।’
ব্যয়ের খাত : অন্যান্য বারের মতো এবারও আয়ের তুলনায় ব্যয়ের খাত বেশি হচ্ছে। এবারের ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বাজেটে পরিচালন ব্যয় অর্থাৎ আবর্তক ব্যয়, মূলধন ব্যয়, অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ও বৈদেশিক ঋণের সুদসহ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। তাছাড়া এবারের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের (এডিপি) ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এডিপিবহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পগুলোর ব্যয় ৭ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হওয়ায় অনুদানসহ ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।
ঘাটতি মেটানো হবে যেভাবে : বাজেটের ঘাটতি মেটানো হবে মূলত অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে। এবারের বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা প্রথমবারের মতো ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বিদেশিক ঋণদাতাদের কাছ থেকে ঋণ আনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের ভরসা এবারও ব্যাংক খাত। বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকেই নেওয়া হবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার ঋণ। ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেবে ৮৬ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেবে ৪৫ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা।
তাছাড়া ব্যাংক থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলেও এবারের বাজেটে ব্যাংকবহির্ভূত ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে। এবারের ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে সরকার ঋণ নেবে ২৩ হাজার কোটি টাকা। গত বছরও এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা। এবারের সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নেবে ১৮ হাজার কোটি টাকা, আগের অর্থবছরে যা ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা।
জিডিপি : আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের বাজেটে সংশোধিত জিডিপির চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপির আকার ৪৪ লাখ ৩৯ কোটি ২৭৩ কোটি টাকা। এবারের বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ আর ভোক্তা মূল্যসূচক বা মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমান পরিস্থিতিতে জিডিপি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
আগামী অর্থবছরের বাজেট সরকারের জন্য সব দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফের যে ৩৮টি শর্ত রয়েছে, অর্ধেকের বেশিই বাস্তবায়ন করতে হবে এ অর্থবছরে। সরকারকে বেঁধে দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রিজার্ভের যথাযথ গণনা পদ্ধতি প্রণয়ন, প্রতি তিন মাস অন্তর জিডিপির হার নির্ধারণ, সুদের হারে করিডোর পদ্ধতি তৈরি, মুদ্রা বিনিময় হারের একটি দর রাখাসহ কয়েকটি শর্ত পূরণের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কিত। এগুলোর কিছু বাস্তবায়নের ঘোষণা আসবে আগামী জুন মাসে মুদ্রানীতি ঘোষণার সময়, কিছু আসবে জুলাইয়ে। আইএমএফের চাওয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ।
আকাশযাত্রা নিরাপদ ও শান্তিময় করাই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কেবিন ক্রুদের একমাত্র ব্রত। ফ্লাইট ছাড়ার পর মধ্য আকাশে আপনার পাশে দাঁড়িয়ে যিনি স্মিত হেসে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলেন, স্যার আপনার সিট বেল্ট বাঁধতে হবে। এর কিছুক্ষণ পর আরেকজন এসে বলবেন, চা কফি, কিংবা অন্য কিছু? এরপর যারা খাবার দেবেন, আবার সুনিপুণভাবে সেগুলো গুছিয়ে নিয়ে যাবেন, আপনার ঘুম পাড়ানোর জন্য পরিবেশ নিশ্চিত করবেন, সেটাই কেবিন ক্রুদের পেশা।
তারাই কেবিন ক্রু। যারা উড্ডয়ন থেকে অবতরণ পর্যন্ত সময়টুকু সার্বক্ষণিক সেবা শুশ্রূষা নিশ্চিত করেন। ছোটখাটো অসুখ-বিসুখ করলে কিংবা ঘরে অসুস্থ স্বজন রেখে আসলেও আপনার সামনে হাসিমুখে দাঁড়াতে হয়। এটাই তাদের মূল দায়িত্ব। বিশ্বব্যাপী এটাকে বলা হয় ‘গ্লামার জব ইন দ্য স্কাই‘।
আজ ৩১ মে আন্তর্জাতিক কেবিন ক্রু দিবস। কানাডা ইউনিয়নের উদ্যোগে ২০১৫ সালে বিশ্বে প্রথম কেবিন ক্রু দিবস পালন করা হয়। প্রথম ৪৮০ জন কেবিন ক্রু নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দিবসটি উদযাপন করা হয়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স একমাত্র রাষ্ট্রীয় বিমান সেবা প্রতিষ্ঠান- যেখানে কাজ করছেন এক ঝাঁক অভিজ্ঞ ও নবীন কেবিন ক্রু। যারা পরিবার আত্মীস্বজনকে দূরে রেখে বিভিন্ন উৎসব, ছুটি ও বিশেষ দিনেও নিজেদের আনন্দকে বিসর্জন দিয়ে সাধারণ কর্মঘণ্টার বিপরীতে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই যাত্রীসেবা নিশ্চিত করে যাচ্ছেন।
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী উড়োজাহাজ নিয়ে দেশ বিদেশে বিভিন্ন গন্তব্যে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও সাহসিকতার স্বাক্ষর রাখছেন প্রতিনিয়ত। অতীতে বিমানের দেশে ও দেশের বাইরে জরুরি অবতরণে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ক্রুদের প্রচেষ্টায় সকল যাত্রীদের নিরাপদে রাখা সম্ভব হয়েছে।
সম্প্রতি বিমান ছিনতাই ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধেও বিমান কেবিন ক্রুরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়া অসুস্থ যাত্রীদের বিশেষ সেবা প্রদান, আকাশপথে প্রসূতি যাত্রীদের সন্তান প্রসবে সহযোগিতা ও গুরুতর আহত যাত্রীদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানসহ বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতার স্বাক্ষর তারা রেখেছেন। আকাশপথে কেবিন ক্রুদের নিবিড় সেবায় অসংখ্যা অসুস্থ যাত্রী সুস্থতার সঙ্গে তাদের গন্তব্যে অবতরণ করতে সক্ষম হয়েছে। এজন্য কেবিন ক্রু একটি অনন্য সাধারণ পেশা হিসেবে পরিচিত।
দিবসটি উপলক্ষে আজ সীমিত পরিসরে বিশেষ আয়োজন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কেবিন ক্রু অ্যাসোসিয়েন। এবার হজের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকায় তারা সীমিত করেছে সব কর্মসূচি। সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম দস্তগীর বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের সমস্ত কেবিন ক্রুকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, এ উপলক্ষে আজ বুধবার কেবিন ক্রু অ্যাসোসিয়েশন অফিসে একটি কেক কেটে সব সদস্যকে শুভ্চ্ছো জানানো হবে। দিবসটিতে তাৎপর্য নিয়ে মতবিনিময় ও সবার কুশলাদি বিনিময় করে করোনার মাঝেও এই কঠিন দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে সবাইকে ব্রতী হওয়ার আহ্বান জানানো হবে। পেশা আকর্ষণীয় ও সম্মানজনক হিসেবে বিবেচিত।
সুশিক্ষিত ও আলট্রা মডার্ন তরুণ-তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে থাকা এই পেশার প্রতি সাধারণ মানুষের কৌতূহলও লক্ষ্যণীয়। বিমানে কেবিন ক্রুদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে দস্তগীর বলেন, বিশ্বব্যাপী এটা অবশ্যই মর্যাদাসম্পন্ন পেশা। বিমান সেই মর্যাদা সমুন্নত রেখেছে। এখন আমাদের দাবি ২০১৮ সালের এডমিন অর্ডার অনুযায়ী আমাদের সকল সুযোগ-সুবিধা পুরোপুরি প্রদান করা হোক।
কেবিন ক্রুদের পেশাদারিত্ব ও দায়িত্ববোধ সম্পর্কে গোলাম দস্তগীর জানান, কেবিন ক্রুদের দুইভাবে চিহ্নিত করা যায়। প্রথমত ফেস অব দ্য এয়ারলাইন হিসেবে। কারণ কেবিন ক্রুদের আচরণ ও পেশাদারিত্বই এয়ারলাইনসগুলোর যাত্রী ধরে রাখা এবং নতুন যাত্রীদের আকৃষ্ট করা। দ্বিতীয়ত, লাস্ট লাইন অব দ্য ডিফেন্স হিসেবে। কারণ আকাশে উড্ডয়নের পরে যে কোনো জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য কেবিন ক্রু ছাড়া আর কোনো সিকিউরিটি পার্সোনাল থাকেন না। সমগ্র পৃথিবীতে ঝুঁকিপূর্ণ যেসব পেশা রয়েছে তন্মধ্যে কেবিন ক্রু অন্যতম। বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ক্রুরা বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪৩ হাজার ফুট উচ্চতায় স্বল্প সুবিধা সংবলিত পরিবেশে কেবিন ক্রুরা তাদের দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
একজন ভ্রমণকারীর ভ্রমণকে সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিরাপদ করে তোলাই কেবিন ক্রুদের মূল কর্তব্য। প্রতিটি সফল উড্ডয়ন ও অবতরণ একজন কেবিন ক্রুকে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে পৃথিবীতে ভ্রমণপিপাসু মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যবসায়িক ভ্রমণ, রাজনৈতিক ভ্রমণ, চিকিৎসার জন্য ভ্রমণ, আনন্দ ভ্রমণ ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে আকাশযাত্রা বেড়েই চলেছে। শিশু থেকে শুরু করে বয়োজ্যেষ্ঠ সবাই থাকেন কেবিন ক্রুদের ভ্রমণসঙ্গী। কেবিন ক্রুদের বলা হয়, ফার্স্ট রেসপনডার।
দস্তগীর বলেন, কেবিন ক্রুদের হার্টঅ্যাটাক, হাইপোক্সিয়া, হাইপারভেন্টিলেশন, হাইপোগ্লাসেমিয়া, হাইপারগ্লোসিমায়, চকিং, নোজ ব্লিডিং এবং প্রেগন্যান্ট ডেলিভারির দায়িত্বও পালন করতে হয় অনেক ক্ষেত্রে। পেশাদারিত্বের এই দক্ষতায় সত্যিকার অর্থেই আকাশ হয়ে উঠুক শান্তির নীড়। বিমান আকাশে ওড়ার একঘণ্টা আগে ক্যাপ্টেন কেবিন ক্রুদের আবহাওয়া ও অন্যান্য বিষয় সংক্রান্ত তথ্য জানিয়ে দেয়।
এছাড়া পরিচ্ছন্নতা, সি পকেট সংক্রান্ত তথ্য, খাবার-দাবারের সরঞ্জাম পৌঁছানো, জরুরি ইক্যুইপমেন্ট, ফার্স্ট এইড প্রভৃতি ঠিকঠাক আছে কিনা এসব কেবিন ক্রুদের দেখে নিতে হয়।
বিমানে ওঠার পর যাত্রীদের টিকিট মিলিয়ে দেখা, কেবিন লাগেজ সিটে পৌঁছাতে সহায়তা করা, যাত্রীদের সিট দেখিয়ে দেওয়া এবং বিমান আকাশে ওড়ার আগে যাত্রীদের সিট বেল্ট লাগাতে বলাও কেবিন ক্রুদের কাজের পর্যায়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, বিমান ওঠানামা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় পাইলটের হয় কেবিন ক্রুদের বলতে হয়। এই পেশার যে লাইফ স্টাইল এবং রোমাঞ্চকর অনুভূতি।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।