
সমরেশ বসু (১৯২৪-১৯৮৮) ছিলেন একজন প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি লেখক। তার জন্মনাম সুরথনাথ বসু; [১] কিন্তু সমরেশ বসু নামেই লেখক পরিচিতি সমধিক। তিনি কালকূট ও ভ্রমর ছদ্মনামে উল্লেখযোগ্য সাহিত্য রচনা করেছেন। তার রচনায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, শ্রমজীবী মানুষের জীবন এবং যৌনতাসহ বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সুনিপুণ বর্ণনা ফুটে উঠেছে। তিনি ১৯৮০ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। তখন কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বিচিত্র বিষয় এবং আঙ্গিকে নিত্য ও আমৃত্যু ক্রিয়াশীল লেখকের নাম সমরেশ বসু। দেবেশ রায় তার মৃত্যুতে লেখা রচনাটির শিরোনামই দিয়েছিলেন, ‘জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি লেখক এবং পেশাদার লেখক’ (প্র্রতিক্ষণ, ৫ম বর্ষ, ১৭ সংখ্যা, ২-১৬ এপ্রিল ১৯৮৮)। লিখেছিলেন, ‘তিনি আমাদের মতো অফিস-পালানো কেরানি লেখক ছিলেন না, যাদের সাহস নেই লেখাকে জীবিকা করার, অথচ ষোলোআনার ওপর আঠারোআনা শখ আছে লেখক হওয়ার।’ লেখক হিসেবে সমরেশ আমৃত্যু যে লড়াই করেছেন, তার কোনো তুলনা নেই। তার নিজের জীবনই, এক মহাকাব্যিক উপন্যাস। ‘চিরসখা’ নামের প্রায় ৫ লাখ শব্দের বিশাল উপন্যাসে সেই লড়াইকে স্মরণীয় করে রেখেছেন তারই পুত্র নবকুমার বসু। ছোটদের জন্য তার সৃষ্ট গোয়েন্দা গোগোল অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। গোগোলের দুটি কাহিনি গোয়েন্দা গোগোল ও গোগোলের কীর্তি নামে চলচ্চিত্রায়িতও হয়েছে। সমরেশ বসু প্রণীত উপন্যাসের সংখ্যা ১০০। তার প্রকাশিত ছোটগল্পের সংখ্যা ২০০। সমরেশ বসু ১৯৮৮ সালের ১২ মার্চ মারা যান।
অবাঙালিরা যে পূর্ব পাকিস্তানে অসুবিধায় আছে এ কথা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকার জনসভায় উল্লেখ করেছিলেন। ওই বিশাল সমাবেশে বাঙালিরা তো ছিলই, অবাঙালিরাও ছিল। উর্দু এবং কেবলমাত্র উর্দুই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে এই ঘোষণায় বাঙালিরা ভড়কে গেছে, কেউ কেউ ‘না না’ বলেছে; কিন্তু উর্দুভাষীরা সেদিন নিশ্চয়ই অত্যন্ত উৎফুল্লø হয়েছিল। হওয়ার কথা। তাদের পক্ষে এটাই ভাববার কথা যে, মাতৃভূমি ত্যাগ করে তারা পাকিস্তানে এসেছে বটে, তবে পাকিস্তানি রাষ্ট্র তাদের সঙ্গে মোটেই বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, বরং তারাই হবে এর প্রকৃত নাগরিক, তাদের তুলনায় বাঙালিরা থাকবে নিচের স্তরে, কেননা বাঙালিরা উর্দু ভাষা জানে না, উর্দু শেখার চেষ্টা করবে হয়তো, কিন্তু যতই চেষ্টা করুক উর্দু যাদের মাতৃভাষা তাদের স্তরে উঠতে পারবে না।
উর্দুভাষীরা এমনিতেই বাঙালিদের চেয়ে নিজেদের উঁচু জ্ঞান করত, যে মনোভাবের পেছনে তারা একাধিক ‘যুক্তি’ও দাঁড় করিয়ে রেখেছিল। প্রথমত, তারা মনে করত উর্দু হচ্ছে মুসলমানদের ভাষা আর বাংলা ভাষা হলো অমুসলমানদের ভাষা, সেদিক থেকে তারা তাই উচ্চতর মুসলমান। স্মরণীয় যে, ভাষার ব্যাপারে বাঙালিদের মধ্যেও কারও কারও মনে হীনম্মন্যতা বোধ ছিল, যে জন্য কেউ কেউ ঘরে উর্দু ব্যবহার করতে চাইত, নিজেদের মুসলমানত্ব ও আভিজাত্যের নির্ভরযোগ্য প্রমাণ হিসেবে। এটাও ভুললে চলবে না যে, অবিভক্ত বাংলার দুজন মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী উর্দুভাষী ছিলেন এবং এমনকি এ কে ফজলুল হকও বিয়ে করেছিলেন উর্দুভাষী গৃহে। পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু হবে এ ঘোষণা নাজিমুদ্দিন জোর গলাতেই দিয়েছিলেন; সোহরাওয়ার্দী অতটা জোরে না বললেও এমনকি বায়ান্ন সালের একুশে ফেব্রুয়ারির পরে করাচি থেকে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে পাকিস্তানি সরকারের ‘আহাম্মকি’র সমালোচনা করেছিলেন এ কথা বলে যে, সরকার শিক্ষার মধ্য দিয়ে উর্দুকে গ্রহণযোগ্য করে না তুলে জোর করে তাকে চাপাতে গিয়ে সংকটের সৃষ্টি করেছে।
উর্দুভাষীদের উচ্চমন্যতার দ্বিতীয় কারণ ছিল তাদের এই বোধ যে, তারা স্থানীয় জনগণের চেয়ে যোগ্যতা, দক্ষতা ও শিক্ষায় অধিক অগ্রসর। কৃষিকার্য করত যে বিহারি, সে তো আর পূর্ব পাকিস্তানে আসেনি, যারা এসেছিল তারা নানা পেশা ও ব্যবসাতে জড়িত ছিল, তাদের অনেকের মধ্যে খবরের কাগজ পড়ার আগ্রহ ছিল। ঢাকা থেকে বিভিন্ন সময়ে উর্দু ভাষায় ছয়-ছয়টি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে, ঢাকা ও অন্যান্য শহর থেকে সাপ্তাহিক ও সান্ধ্য দৈনিক মিলিয়ে প্রকাশনার সংখ্যা ছিল বিশটি, শেষ দিকে ‘পাকিস্তান অবজারভার’ গোষ্ঠী থেকে উর্দু ভাষায় দৈনিক ‘ওয়াতান’ ও চলচ্চিত্র সাপ্তাহিক ‘চিত্রালী’র উর্দু সংস্করণও প্রকাশ করা শুরু হয়েছিল।
উচ্চমন্যতার এই বোধ উর্দুভাষীদের পক্ষে বাঙালির সঙ্গে একই রাজনৈতিক ধারায় মিশে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকের সৃষ্টি করেছে। এই সমস্যাটা পশ্চিম পাকিস্তানে বসবাসকারী মোহাজেরদের ক্ষেত্রে ততটা দেখা দেয়নি; রাজনৈতিকভাবে তারা মিশে যেতে চেষ্টা করেছে এবং মুসলিম লীগের জন্য কোনো ভোট ব্যাংক তৈরি করতে সম্মত হয়নি, পূর্ব পাকিস্তানে যেটা তারা করেছিল। কেবল তাই নয়, একাত্তরে তারা চিহ্নিত হয়েছিল চরম বাঙালি-বিদ্বেষী বলে। যুদ্ধের শুরুতে স্থানীয়ভাবে বিহারিরা ভয়ংকর বিপদের মধ্যে ছিল, লাঞ্ছনা ও প্রাণহানির মর্মান্তিক সব ঘটনা ঘটেছে, পরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী হয়ে তারা বাঙালি-নিধনে অংশ নিয়েছে এবং যুদ্ধশেষে নিক্ষিপ্ত হয়েছে বিপদের ভীষণ গহ্বরে।
যুদ্ধের পরে তারা নিজেদের মনে করেছে আটকে পড়া পাকিস্তানি। অনুরূপভাবে পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালিরা ছিল, যাদের বাংলাদেশ সরকার ফেরত নিয়ে এসেছে, কিন্তু বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ব্যাপারে পাকিস্তান সরকার তেমন কোনো আগ্রহ দেখায়নি, যার ফলে তাদের অধিকাংশকেই মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়েছে। পাকিস্তান তাদের দু-দুইবার শরণার্থী করল একবার সৃষ্টির সময়ে আরেকবার পতনের মুহূর্তে।
যুদ্ধের শুরু থেকেই উর্দুভাষীদের নাম হয়েছিল ‘মাউড়া’। সেটা ছিল বিদ্বেষ ও ধিক্কারের ধ্বনি। মাউড়া নামের উদ্ভব মাড়োয়ারি থেকে, যে মাড়োয়ারিরা ভারতের মাড়োয়ারের অধিবাসী। তাদের সঙ্গে বিহারিদের কোনো আত্মীয়তা থাকার কথা নয়, ছিলও না; কিন্তু ‘মাউড়া’ নাম তাদের পরিচয়চিহ্ন হিসেবে যুক্ত হয়ে গিয়েছিল। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের বিশেষ বিশেষ মহল থেকে বলা হতো মালাউন, পাকিস্তান ভাঙার পরে বিহারিরা ডাক নাম পেল মাউড়ার। ‘মালাউন’দের মনে করা হতো, পাকিস্তান-বিদ্বেষী, মাউড়াদের পরিচয় হলো তারা বাংলাদেশ-বিদ্বেষী। মানবিক বা নাগরিক পরিচয় ছাপিয়ে উঠতে চাইল পারস্পরিক-বিদ্বেষের নাগরিক স্মারকচিহ্ন। পাকিস্তানি রাষ্ট্রের কর্ণধাররা উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠায় উগ্রবাসনায় তাদের রাষ্ট্রের নয় শুধু পূর্ববঙ্গে বসবাসকারী উর্দুভাষীদেরও বিপদ ডেকে এনেছে। তখনকার মানুষদের তো বটেই, ভবিষ্যৎ বংশধরদেরও। তখন মনে হয়েছিল উপকার করছে, পরে বোঝা গেল উপকার দূরের কথা, স্থায়ী অপকার করে রেখে গেছে।
একাত্তরের আগে যেমন পরেও তেমনি বাংলাদেশে বসবাসকারী উর্দুভাষীরা নিজেদের পাকিস্তানিই ভেবেছে, অন্যকিছু না ভেবে। ব্যতিক্রম ছিল, কিন্তু অন্য ক্ষেত্রে যেমন এই ক্ষেত্রেও তেমনি ব্যতিক্রম নিয়মকেই উদ্ভাসিত করে তুলেছে। পাকিস্তানের নতুন কর্ণধাররা এদের নিজেদের রাষ্ট্রে ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে মোটেই আগ্রহ প্রকাশ করেনি। টালবাহানা করেছে। নানান চাপের মুখে কিছু সংখ্যক আটকে পড়া পাকিস্তানিকে তারা নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু অধিকাংশকেই নেয়নি। বিত্তবানদের কেউ কেউ অবশ্য যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে, যুদ্ধের সময়ে এবং এমনকি পরেও চলে যেতে সক্ষম হয়েছে; তাদের হাতে অস্ত্র ছিল অর্থের।
বিত্তহীনরা পড়ে রয়েছে অসহায়, পরিত্যক্ত এবং অবাঞ্ছিত হিসেবে। ভারতের ভেতর দিয়ে রেলপথে তাদের পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ভারতের আপত্তি ছিল; আপত্তির ভিত্তিও ওই ভাষাই, কে জানে বিহারিরা মাঝপথে নেমে গিয়ে ভারতীয় জনস্রোতে মিশে যায় কি না, মিশে গেলে ভাষা দিয়ে তো আর তাদের আলাদা করা যাবে না। আটকে পড়া বাঙালিদের বেলায় ভারতের ভেতর দিয়ে রেলপথে আসার ব্যাপারে ভারত সরকার আপত্তি করেনি, কেননা সরকার নিশ্চিত ছিল যে, কেউ যদি ভারতের কোনো রেল স্টেশনে নেমে যেতেও চায় তবে অবিলম্বে ধরা পড়ে যাবে, তাদের মুখের বাংলা ভাষাই তাদের ধরিয়ে দেবে।
পাকিস্তানিরা যে উর্দুভাষী মোহাজেরদের তাদের দেশে নিয়ে যেতে উৎসাহী নয়, তার পেছনেও ভাষা একটা কারণ বটে। পাকিস্তানের কোনো অঞ্চলের মানুষের মাতৃভাষাই উর্দু নয়, ভারত থেকে আগত মানুষদের স্থানীয়রা চিহ্নিত করে হিন্দুস্থানি বলে। হিন্দুস্থানি অর্থ সাধারণভাবে উর্দুভাষী, সে জন্য আশঙ্কা ছিল যে, মোহাজেরদের যেখানেই পুনর্বাসিত করা হোক না কেন, স্থানীয় লোকরা তাদের বহিরাগত অতিরিক্ত ঝামেলা বলেই বিবেচনা করবে এবং মোটেই খুশি হবে না।
আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে পাকিস্তান সরকারের ধারণা ছিল, বিহারিদের নিয়ে গেলে পাকিস্তানের জনবিন্যাস হুমকির মুখে পড়তে পারে, যে জন্য ফেরত নেওয়ার আগে জনগণের ঐকমত্য প্রয়োজন হবে বলে ভাঁওতা দিয়েছিল। বলা বাহুল্য, ওই অবস্থান থেকে পাকিস্তান কখনো সরে আসেনি এবং বিহারিদেরও ফেরত নেয়নি। বিশেষ করে এ কারণে যে, পাকিস্তানে জাতিসত্তাগত বিভাজন ও বিরোধ ইতিমধ্যেই বেশ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, মোহাজেরদের বেশিরভাগ যেখানে বসবাস করে সেই সিন্ধু প্রদেশে স্থানীয়-অস্থানীয় সংঘর্ষের অবসান ঘটেনি, বরং বৃদ্ধি পাবে বলেই তারা আশঙ্কা করেছে।
বিহার থেকে আসা মুসলমানদের উচ্চমন্যতার কথা উল্লেখ করেছি, এখানে যোগ করা যেতে পারে যে, তারা যে কেবল উর্দুভাষী মুসলমান হিসেবে নিজেদের উঁচুস্তরের মানুষ ভাবত তা নয়, নিজেদের আঞ্চলিক ইতিহাস সম্পর্কেও অহংকার লালন করত। আজ বিহার অত্যন্ত অসুবিধায় আছে ঠিকই। সেখানে শিল্পকারখানা তেমন গড়ে ওঠেনি, বর্ণবিভাজনের জাঁতাকলে সাধারণ মানুষ এখনো নিগৃহীত, রাজনৈতিক নেতৃত্ব দুর্নীতিতে নিমজ্জিত এবং ওই দুর্নীতিগ্রস্তরাই রাজত্ব করছে। কিন্তু তাদের অতীত ছিল গৌরবোজ্জ্বল। বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক বুদ্ধদেব বিহারেরই লোক, জৈনধর্মের প্রবর্তক মহাবীরের জন্মভূমিও ওই বিহারই।
রামের স্ত্রী সীতাও বিহারি ছিলেন বলেই কথিত আছে। বিহারের নাম এক সময়ে ছিল মগধ। বিহারে সম্রাট অশোকের জন্ম হয়েছিল। বিহার নামের উদ্ভব বৌদ্ধবিহার থেকে। এক সময়ে বিহারের রাজধানী ছিল পাটলিপুত্র। যেখান থেকে পাটনা নামের উৎপত্তি। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল বিহারে অবস্থিত। শেরশাহের জন্ম বিহারে।
একদা বিহার বাংলার অংশ ছিল। নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন বাংলা বিহার উড়িষ্যার অধিপতি। যে মাগধী প্রাকৃত ভাষার সঙ্গে বাংলা ভাষার উদ্ভব জড়িত তার প্রচলনও ছিল ওই বিহার অঞ্চলেই। কিন্তু তাই বলে বিহারিরা যে বাঙালিদের সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করত তা নয়। বিরূপ মনোভাবটিই বরং ছিল প্রবল ও গভীর। বঙ্গভূমি চিরকালই প্রান্তবর্তী, এমনকি প্রতিবেশী বিহারিদের দৃষ্টিতেও। বাংলায় গমনের দরজা আছে একশটি, নির্গমনের দরজা নেই একটিও। সেখানকার মেয়েরা সবাই ভীষণ জাদুকরী, তাদের খপ্পরে একবার পড়লে রক্ষা নেই, তোমাকে মাছি বানিয়ে ছাড়বে এসব ধ্যান-ধারণা তারা সাংস্কৃতিকভাবেই লালন করেছে। ভাগ্যান্বেষণে তারা বাংলায় এসেছে, কলকাতা, মেদিনীপুর, বর্ধমানে বসত গড়েছে, রেল কর্মচারী হিসেবে ভারত বিভাগের আগেই পূর্ববঙ্গের সৈয়দপুর, পার্বতীপুরে তাদের আগমন ঘটে। কিন্তু স্থানীয় জনগণের সঙ্গে তারা এক হতে পারেনি।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নতুন কৌশল ব্যবহার করেছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি সরকারের ‘অন্যায় আচরণের শিকার’ এমন অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন বিশ্বের ৪০ বিশিষ্টি ব্যক্তি, যা গত মঙ্গলবার (৭ মার্চ) মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টে বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়। সেই বিজ্ঞাপনকে খবর আকারেও প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের কয়েকটি গণমাধ্যম। কিন্তু ড. ইউনূস কী ধরনের অন্যায় আচরণ কিংবা আক্রমণের শিকার, তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য ওই বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়নি।
‘বিবৃতিতে ব্যাপকভাবে তথ্য-ঘাটতি লক্ষণীয়। আমরা যদি খুব সাদামাটাভাবে প্রথম থেকে বিজ্ঞাপনটি দেখি, ড. ইউনূস সারা বিশ্বে যে মানবিক কার্যক্রম চালিয়েছেন বা দেশে যে কার্যক্রমগুলো চালাচ্ছেন, সেটি কোথায় ক্ষতিগ্রস্ত হলো কিংবা কোথায় কে বন্ধ করে দিল সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু নেই।
ড. ইউনূসের কি বিদেশ যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা আছে? তিনি দেশের বাইরে শত শত জায়গায় যাচ্ছেন, তাকে বাধা দেয়া হয়েছে? বিমানবন্দরে যেতে দেয়া হয়নি? আমরা তো এ রকম কিছু জানি না। তার কার্যক্রমের ওপর কোথায় বাধা এসেছে? এটি প্রথম অভিযোগ, যার কোনো ভিত্তি নেই।’
ড. ইউনূসের সঙ্গে সরকার এমন কোনো আচরণ করেনি যার জন্য খোলা চিঠি, তাও বিজ্ঞাপন দিয়ে ছাপাতে হবে। লাখ লাখ ডলার খরচ করে, ‘বিবৃতি বিজ্ঞাপন’ দিতে হলো। নিউজ আইটেম যখন বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার করতে হয়, তখন বুঝতে বাকি থাকে না, এর মধ্যে প্রচারিত তথ্য বানোয়াট।
তার সঙ্গে সরকার এমন কোনো আচরণ করেনি, যা এ ধরনের বিবৃতি দাবি করে। তবে ড. ইউনূস বাংলাদেশে কী ধরনের ক্ষতিকর কার্যক্রমে জড়িত, সে বিষয়ে এ দেশের সাধারণ মানুষ ভালোভাবেই অবগত।
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। এক যুগ আগে নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা সরানোর বিষয়ে একটি তথ্যচিত্র সম্প্রচার করা হয়। বর্তমানে ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকমের দুর্নীতির অনুসন্ধান চলছে, দুর্নীতি দমন কমিশনে।
প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে শ্রমিকদের অর্থ লোপাট, কল্যাণ তহবিলের অর্থ বিতরণ না করে ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ এবং দুই হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে সহযোগী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে এরই মধ্যে গ্রামীণ টেলিকমের এমডি নাজমুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক।
এ ছাড়া ১/১১ সেনাসমর্থিত সরকারের সময় প্রধান দুই দলের নেত্রীকে মাইনাস করে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে চেয়েছিলেন তিনি। সে সময় গ্রামীণ পার্টি নামে একটি দল করারও ঘোষণা দিয়েছিলেন। পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বাতিলের নেপথ্যে ঘুরেফিরে এসেছে ড. ইউনূসের নাম।
ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকমের দুর্নীতির অনুসন্ধান চলছে। এ অবস্থায় গত বছরের অক্টোবরে ইউনূসকে মহানায়ক বানানোর তৎপরতা শুরু করে পশ্চিমা লবি। গত ৬ অক্টোবর ইউনূসকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, সুইডেনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নেত্রনিউজ।
যুক্তরাষ্ট্রের ফান্ডে দেশটির একটি এনজিওর অর্থায়নে চলে অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি। প্রতিবেদনটি করেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া বিতর্কিত সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন ইউনূসের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে।
এর এক সপ্তাহ পর ১৩ অক্টোবর ২০২২, ইউনূসকে মহানায়ক বানিয়ে খবর প্রকাশ করে ব্রিটিশ পত্রিকা ‘দ্য ইকোনমিস্ট’। সেখানে বলা হয়, নোবেলজয়ী ইউনূসের বিরুদ্ধে নিপীড়ন বাড়িয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি প্রচার করা হয়, তাকে দুদকে উপস্থিত হতে হবে, আসতে পারে দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞাও। এই রিপোর্ট প্রচারের সময় গড়িয়েছে বহু। এ সময়ের মধ্যে ড. ইউনূসের বিপক্ষে কোনো পদক্ষেপই তো চোখে পড়েনি। তাহলে কেন এ ধরনের মিথ্যাচার!
তার মানে ৪০ বিশিষ্ট নাগরিকের এই বিবৃতিও ধারাবাহিক প্রপাগান্ডার অংশ বলেই ধরে নেব।
লেখক : ফ্রিল্যান্সার, রাজনৈতিক কলামিস্ট
আমাদের দেশে রাজনৈতিক দল মানে স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার। ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যুক্ত থাকা মানে ক্ষমতার স্বাদ পাওয়া। যে দল যখন ক্ষমতায় আসে সেই দলের এমনকি নিতান্ত নিচুতলার কর্মীরাও ক্ষমতার স্বাদ পায় এবং কুৎসিতভাবে সেই ক্ষমতার অপব্যবহার করে, এই ছবি আমাদের দেশে গত চার দশক ধরে প্রায় স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। এই গভীর সামাজিক অন্যায়, মূল্যবোধের এই ভয়ংকর পতনের পেছনে আমাদের ভূমিকাও একেবারে কম নয়। আমাদেরই ঘরের ছেলেমেয়েরা যখন বিপথে যায়, শৌখিন নির্বুদ্ধিতায়, ভয়ে কিংবা লোভে, আমরা তাদের বাধা দিই না। আমরা হয়তো ভাবি, এভাবেই হবে। সাফল্যের শর্টকাট পেলেই আর কোনো সমস্যা থাকবে না। আমাদের সুবিধাবাদিতা, পরোটা-কাবাবের লোভ আর গা-ভাসানোর নীরবতার নীতির ফল আজ দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর সংকীর্ণ স্বার্থপরতা, অসামাজিক কাজের সঙ্গে প্রকাশ্যে জড়িয়ে থাকা, সব রকম অপরাধ করেও রাজনীতির নামে আশ্রয় পাওয়া এই অবস্থাটার মধ্যে।
আমাদের মধ্যেও প্রচণ্ড সুবিধাবাদিতা। এক দলের কুশাসন দেখে আমরা মুখ ফিরিয়ে আরেক দলের মুখাপেক্ষী হয়েছি। তাদের অপশাসন আমাদের নির্বাক করে দিয়েছে। হতাশ, ব্যর্থ, প্রচলিত স্রোতে গা-ভাসানোর বিদ্যায় অভ্যস্ত আমরা সামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থা যতই দমবন্ধ হোক না কেন, আমাদের মতো মানুষরা অন্যায়ের কোনো প্রতিবাদ করার কথা ভাবিনি। অন্য কেউ কখনো প্রতিবাদ করে লাঞ্ছিত হলে প্রকাশ্যে তার পাশে গিয়ে দাঁড়াইনি। বরং নিজের নিজের ‘নিরাপত্তা’ রক্ষা করার চেষ্টায় দূরে সরে থেকেছি। ‘চোখ বুজে কোনো কোকিলের দিকে’ কান ফিরিয়ে রেখেছি।
আমাদের মধ্যে আবেগ মাঝে মধ্যে ভর করে বটে, তবে তা দ্রুতই মিলিয়ে যায়। আবেগ অবশ্যই মানুষের স্বাভাবিক বেঁচে থাকার জন্য একেবারে প্রাথমিক প্রয়োজন, কিন্তু তার সঙ্গে যদি সচেতন কোনো চিন্তা যুক্ত না থাকে তবে সেই আবেগ আমাদের বেশিদূর নিয়ে যেতে পারে না। সচেতন চিন্তা ছাড়া আবেগেরও দৃঢ়তা থাকে না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সময়েও অন্যায়ের মূল কারণটি বোঝার চেষ্টার বদলে, অন্যায়ের কাঠামোটিকে চিহ্নিত করার বদলে আমরা কেবল ভাবি, ওকে সরিয়ে দিলেই বুঝি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কার্যত তা কখনো হয় না। হওয়ার কথাও নয়।
গত প্রায় ৪০ বছর ধরে উন্নতি ও সাফল্যের যে সমাজ-বিচ্ছিন্ন ধারণা আমাদের সংস্কৃতিতে শেকড় গেড়েছে, তার বিপরীত চিন্তাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ফলে আমরা অনেকেই ভেবেছিলাম এই সমাজ, দেশ, বিশ্বের কোনো কিছু নিয়ে মাথা না ঘামিয়েও কোনো রকমে নিজেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করে ফেলা যাবে। বাস্তবে দেখা গেল, এই ভাবনার যা ফল হওয়ার ঠিক তাই হয়েছে। উত্তরপ্রজন্মও নিজের নিজের সাফল্যকে দেখেছে ঠিক যেভাবে দেখা স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অনেক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে, উজ্জ্বল সফল কিছু ছেলেমেয়ে বাড়ি থেকে বহুদূরে বসে প্রচুর অর্থ উপার্জন করছে। তারা ধীরে ধীরে এ দেশের এই সমাজেরই মধ্যে হয়ে গেছে এক ভিন্ন পৃথিবীর বাসিন্দা। একটি বড় অংশ নানান রাজনৈতিক দলে কর্মী হিসেবে চাকরি করে। সেসব দলের আদর্শের বিষয়ে তারা কিছু জানে না, জানানোর কোনো চেষ্টাও হয় না। তারা কেবল নিজের নিজের দলের ক্ষমতা বজায় রাখা এবং ভোটের আগে-পরে এলাকা দখলের কাজে ব্যবহৃত হয়। বদলে কিছু অর্থ ক্ষমতাশালী লোক তাদের দেবেন, বাকি তাদের আদায় করে নেওয়ায় কেউ বাধা দেবে না। কারও মনে হতে পারে অবস্থাটা যেন ‘মধ্যযুগের’ মতো, যখন রাজা-জমিদাররা সিপাহিদের নিজেদের যুদ্ধবিগ্রহের কাজে লাগাতেন, বাকি সময় তাদের ‘চরে খাওয়ার’ অধিকার থাকত। তাতে তারা প্রজার ঘরে আগুন লাগাক কী তার গোয়ালের গরু-বাছুর খুলে আনুক! তার বাইরে যে ‘উত্তরপ্রজন্ম’ তারা এই দুই ধাপের মাঝখানে হতাশা ও আত্মোন্নতির চেষ্টার দোলাচলে থেকেছে। তার ফলে দেশে ক্ষমতা পরিবর্তন হলেও ব্যবস্থাটা কিছু বদলাচ্ছে না।
দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বেকারত্ব, কর্মহীনতা। যে কোনো দেশের জনগোষ্ঠীর জীবিকা ও উপার্জন প্রধানত নির্ভর করে তার প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর। ভুললে চলবে না যে, জমির অনুপাতে বসবাসকারীর সংখ্যা পৃথিবীতে প্রতি বর্গকিমিতে ৪৬ হলেও আমাদের দেশের ক্ষেত্রে প্রায় ৩০০০। কোনো দান-খয়রাতি, দারিদ্র্যরেখা কিছু দিয়েই এই জনসংখ্যার মর্যাদাপূর্ণ জীবিকার ব্যবস্থা করা যে কোনো সরকারের পক্ষেই কঠিন।
অথচ, আশির দশক থেকে এ দেশের প্রাকৃতিক সম্পদগুলোকে বহুজাতিকদের স্বার্থে যথেচ্ছ অপচয় করা হচ্ছে। দেশের সর্বোচ্চ দায়িত্বে থাকা সরকার এ ক্ষেত্রে স্বদেশের স্বার্থ না দেখে মুষ্টিমেয়র আর্থিক স্বার্থ দেখতে চুক্তিবদ্ধ। একদিকে বাড়ছে ধর্মকেন্দ্রিকতা, আরেক দিকে বাড়ছে রাজনৈতিক যথেচ্ছাচার। ধর্মভিত্তিক জঙ্গিবাদী আতঙ্কের পাশাপাশি আরও অনেক বড় ও গভীর সংকটে দেশ নিমজ্জিত। একটা পোশাকি উন্নয়নের ঢোল বাজানো হচ্ছে এবং ‘উন্নয়ন’ তাকেই বলা হচ্ছে, যাকে উন্নয়নের এজেন্টরা ঠিক বলবেন। গণতন্ত্রের মহিমা এখানে একমুখী তালি বাজানো।
সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রাজনীতি ঢুকে পড়েছে, শিক্ষাকেন্দ্রগুলো হয়েছে রাজনীতির মহাআড়ত। অরাজকতাই স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবাদ, সমালোচনাকে টুঁটি টিপে ধরা হয়েছে। বিরোধী দল বিবৃতিসর্বস্ব। দেশে আইন, নীতি, কল্যাণমুখী পরিকল্পনা কোনো কিছুরই অস্তিত্ব নেই। ভালো ছাত্ররা জিওম্যাট-টোফেল দিয়ে বিমানে চড়ে পৃথিবীর সব উন্নত দেশে পাড়ি জমাচ্ছে। আমাদের শিক্ষাও সীমাহীন ক্ষয়ের দিকে এগিয়ে চলছে চোখ-কান বন্ধ করে।
আমাদের নেতারা ঠিক করেছেন, তারা কার চেয়ে কে খারাপ হবেন এই প্রতিযোগিতা করেই কাল পার করে দেবেন। তারা ঠিক করেছেন যে, মানুষের কাছে যাওয়ার দরকার নেই, আমিই হচ্ছি সম্রাট। আমিই জানি কোনটা ভালো জনতার জন্য। আমাদের সেসব টোটকা জানা আছে।
শাসকদের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গির কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে না। রাজনীতি এখন রাজনীতি থেকে নেমে গণনীতি, সমাজের সব সংস্থায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, স্কুল-কলেজে কলকাঠি নাড়ছে নেতা এবং পাতি-নেতারা। তাদের রাজনৈতিক দলের নেতা বলব না, তারা হলো স্রেফ ‘আমাগো লোক’। অরাজকতা বাংলার চিরকালের পাথেয়, এখন মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে তীব্রভাবে। কৃষ্টিতে, বাণিজ্যে, শিল্পতে, এমনকি শিল্পজগতেও। এর কোথায় শেষ? আবার নতুন করে দেশ গড়বে কে? সে মানুষেরা কোথায়?
সুশাসন প্রতিষ্ঠায় শোচনীয় ব্যর্থ একটি দেশ বাংলাদেশ। বাঙালির মানসিক উৎকর্ষ অবিসংবাদিত, তার চেয়ে বড় পরিচয় হলো, বাঙালি অনেক বেশি তর্কশীল। সে শুধু শোরগোল তুলেই চলছে, চলবে। আসলে কিছুই চলছে না, চলবে না। এ দেশের সব আছে, কিন্তু আজ তার কিছুই দেওয়ার নেই, এক অন্তহীন নৈরাশ্য ছাড়া।
কৌটিল্যের দর্শনে বাস্তববোধ যতই থাকুক না কেন, সততার মূল্যবোধ কিন্তু ছিল প্রবল। এ অঞ্চলের দর্শনের শেকড় যে উপনিষদের মধ্যে নিহিত সেখানেও কিন্তু আছে রাজনৈতিক ও মানবিক বহুত্ববাদ। আকবরের দীন-ইলাহি থেকে অশোক চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের দেশশাসনে মানবতাবাদেও শেকড় ছিল। যতই ধর্মীয় রেষারেষি, যুদ্ধ ও হানাহানি হোক না কেন!
সমস্যা হচ্ছে, আজকের বাংলাদেশে এই পরমতসহিষ্ণুতার মানবধর্ম কোথায় যেন অবলুপ্ত হতে বসেছে। বাঙালির মানবধর্মের ঐতিহ্য সুপ্রাচীন, তাই আজ আমরা যতই পারস্পরিক বিদ্বেষের রাজনীতির অবক্ষয়ের শিকার, ততই স্তব্ধ হচ্ছে উন্নয়ন। বন্ধ্যা হচ্ছে অর্থনীতি-সংস্কৃতি-রাজনীতি। হারিয়ে গেল হিউম্যানিজম নামক তত্ত্বটি!
কান্ট বলেছিলেন, ন্যায়ের প্রশ্নে কোনো ছুটির দিন নেই (দেয়ার ইজ নো হলিডে ইন ভার্চু)। সে কথা আজও সত্য। কী পদ্ধতিতে মানুষের দুঃখ দূর হবে তা নিয়ে মতপার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু তার ভিত্তিতেই মতাদর্শগত পথ তৈরি হয়। একেকটি দল একেকটি মতাদর্শ অনুসরণ করে চলে। কিন্তু বাস্তবে মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে হবস কিংবা মেকিয়াভেলিকে গুরু মেনে আমরা যদি মনুষ্য বিরোধিতার জয়গান গাইতে যাই, তা হলে আর যা-ই হোক, সেটা কিন্তু আমাদের সংস্কৃতির ঐতিহ্য নয়।
আমাদের রাজনীতিটা এদল-ওদলে ভাগ করে ফেলা হয়েছে। এটা বিভেদের রাজনীতি। এটা বনামের রাজনীতি। এই রাজনীতি আমাদের বিক্ষত করে চলেছে। এই বনামের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে গোটা পরিস্থিতির মূল্যায়ন করার মানসিকতা আমরা কোথাও হারিয়ে ফেলছি। আর এই সমস্যাটা কিন্তু শুধু রাজনৈতিক সমস্যা নয়, এটা বোধহয় আমাদের মানবধর্মের সংকটও!
বিরোধী দল থেকে শাসক দল হওয়া এবং জনপ্রিয়তা অপসৃয়মাণ হলে শাসক ফের হয়ে যায় বিরোধী নেতা। এ তো ল অব নেচার, প্রকৃতির এই সূত্রকে হাসিনা-খালেদা কেউ আটকাতে পারবেন না। ব্যতিক্রম হবেন কী করে? কেউ চিরকাল ক্ষমতাসীন থাকবেন, সেটা অলীক চিন্তা। সমস্যা হচ্ছে, হাসিনা সরকার যত ‘অসফল’ই হোক না কেন, তাদের কোনো যোগ্য বিকল্প দৃশ্যমান নয়। ফলে ‘থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়’ চিন্তার বৃত্ত থেকে আমরাও বের হতে পারছি না।
লেখক: কলামিস্ট ও লেখক
একটি সমাজে সন্ত্রাস কখন হয়? কেন হয়? এমন প্রশ্নের বহুমাত্রিক উত্তর থাকে। সমাজে সন্ত্রাসী থাকবে, সন্ত্রাস থাকবে। কিন্তু তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখাই মূল চ্যালেঞ্জ। অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস দমনে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর অর্পিত দায়িত্বই আসল। মূলত এই বাহিনীই স্থিতিশীল রাখে একটি সমাজকে। ফলে দেশের মানুষের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক রাখতে হয়। ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’ সাধারণ মানুষের মধ্যে কথাটি আস্থায় নেওয়ার জন্য কিছু উদ্যোগ নিতে হয়। ইতিমধ্যে কিছু নেওয়াও হয়েছে। এটা সত্য, পুলিশের আচরণ এবং থানার পরিবেশে যথেষ্ট পরিবর্তন এসেছে। তারপরও সবকিছু যে বিতর্কের ঊর্ধ্বে, এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। যদিও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মতোই তাদের কাজ করতে হয়। তবু ‘রাজনৈতিক’ পরিচয়ের বিষয়টি, অনেকাংশেই পুলিশের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি করে এটা নির্জলা সত্য। এই ফাঁক দিয়েই মুক্ত হয়ে যায় একজন অপরাধী। সেখানে পুলিশ হয়তো অসহায়! কিন্তু এমন ঘটনা যে অনবরত ঘটেই যাচ্ছে তা নয়। ঠিক সেখানেই পুলিশের ব্যর্থতা প্রকট হয়ে ওঠে। না হলে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বাদ রেখে, একটি তালিকা কীভাবে প্রস্তুত করা হয়?
গতকাল শনিবার দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত ‘চিহ্নিতদের ছাড়াই সন্ত্রাসী তালিকা’ শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনীতির মাঠ মাঝেমধ্যেই উত্তাপ ছড়াচ্ছে। হামলা-সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। নির্বাচন ঘিরে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা সক্রিয় উঠতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট মহল। কিন্তু চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরির ব্যাপারে এখনো অনেকটা গা-ছাড়া ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি)। এ ছাড়া ২০২১ সালের মার্চে সিএমপির সন্ত্রাসী তালিকা হালনাগাদ করা হয়নি। ৩২৩ জনের ওই তালিকায় চিহ্নিত অনেকের নাম নেই। আবার এই তালিকায় রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে। যে কারণে তালিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আ স ম মাহতাব উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অপরাধীর তালিকা তো প্রতিদিন হয়। অপরাধের ধরন অনুয়ায়ী অপরাধীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্রাইম ডেটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (সিডিএমএস) ঢুকে যায়। রাজনৈতিক বিবেচনায় সন্ত্রাসী তালিকা হয় না।’
এদিকে আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে সন্ত্রাসীরা সক্রিয় হচ্ছে, মাঠপর্যায় থেকে এমন তথ্য পেয়ে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটে বিশেষ বার্তা পাঠিয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে চট্টগ্রামে কর্মরত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, চট্টগ্রামের আন্ডারওয়ার্ল্ডের কিছু শীর্ষসন্ত্রাসী ভারত, মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছে। তাদের নির্দেশে দেশে অবস্থানকারী সহযোগীরা খুন, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছে। এমনকি হত্যাকা-ের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছে তারা। সন্ত্রাসীদের নতুন তালিকা তৈরির কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন র্যাব-৭-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মাহবুব আলম। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে আমরা সন্ত্রাসীদের তালিকা করছি। আগামী দুই মাসের মধ্যে ওই তালিকা তৈরির কাজ শেষ হবে।’
নগর পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য, অপরাধী শনাক্তের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা হলো সন্ত্রাসী তালিকা হালনাগাদ করা। আর তালিকা তৈরির সময় কোনো রাজনৈতিক নেতা বা প্রভাবশালীদের ছাড় দেওয়া হয় না। অন্যদিকে, সিএমপির উপকমিশনার (অপরাধ) নিষ্কৃতি চাকমা বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের তালিকা করে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। ২০২১ সালে করা তালিকাটি আমি দেখিনি। তবে সন্ত্রাসীর কোনো রাজনৈতিক পরিচয় থাকা উচিত নয়।’
কোন কর্তৃপক্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকা করে, সেটা জনগণের দেখার বিষয় নয়। শান্তিপ্রিয় জনগণ চান সন্ত্রাসীরা আইনের আওতায় আসুক। সুনির্দিষ্ট অপরাধের শাস্তি পাক। সেই অপরাধী কোন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী, সেই পরিচয় অপরাধের মাত্রার সঙ্গে যোগ করা ঠিক হবে না। পুলিশ কর্তৃপক্ষ যেন নির্বিঘেœ কোনো ধরনের অবৈধ নির্দেশ ছাড়াই আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে, সেই পথ উন্মুক্ত করা প্রয়োজন। আমাদের প্রত্যাশা থাকল, র্যাবের তৈরি সন্ত্রাসীদের তালিকা নিয়ে কোনো ধরনের প্রশ্ন উঠবে না। তালিকায় উঠে আসবে প্রকৃত অপরাধীর নাম।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
অপারেশন ছাড়াই সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় আব্দুল মোতালেব হোসেন (৩৫) নামের এক মানসিক রোগীর পেট থেকে ১৫টি কলম বের করেছেন চিকিৎসক।
এ কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। তাদের এই সাফল্যে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে নেট দুনিয়ায়।
এ বিষয়ে আব্দুল মোতালেবের মা লাইলী খাতুন বলেন, তার ছেলে মোতালেব খুব ভাল ছাত্র ছিল। ২টি লেটার মার্ক নিয়ে এসএসসি পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এরপর খারাপ সঙ্গদোষে সে আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর সময় কুড়িয়ে পাওয়া কলমগুলি খাদ্য মনে করে খেয়ে ফেলে। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। গত এক বছর ধরে তার শরীরে জ্বর ও পেটে ব্যথা শুরু হয়। অনেক চিকিৎসার পরও তা ভালো হচ্ছিল না। অবশেষে গত ১৬ মে তাকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। এখানে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার অসুখের কারণ ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসকরা তার পেটের ভিতর থেকে বিনা অপারেশনে কলমগুলো বের করে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মোতালেব হোসেন প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও পেটে কি সমস্যা সেটা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। ফলে রোগীটিকে আমার কাছে রেফার্ড করেন। এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে তার পেটের ভেতর ১৫টি কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই। এটা কীভাবে সম্ভব। পরে এন্ডোস্কপির মাধ্যমেই অপারেশন ছাড়াই আমরা কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নেই। তিনি আরও বলেন, কাজটি আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। কলমগুলো বের করতে আমাদের প্রথমে মাথায় চিন্তা ছিল যেন, কলমগুলোর কারণে কোনোভাবেই শ্বাসনালিতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের একটা চিন্তাও মাথায় ছিল। অতঃপর প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা কলমগুলো বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এন্ডোস্কপি করা ব্যক্তি মানসিক অসুস্থ হওয়ায় তার কলম খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এভাবে খেতে খেতে সে অনেক কলম খেয়ে ফেলে। কলমগুলো তার পেটের মধ্যে জমা হয়েছিল। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তার পেটের ভিতর ১৫টি কলম থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এবং অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেটের ভেতর থেকে একে একে ১৫টি আস্ত কলম বের করে আনি। বর্তমানে রোগীটি সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ আছেন।
তিনি আরও বলেন, এন্ডোস্কপির মাধ্যমে মানুষের পেট থেকে কলম বের করার মতো ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তাও আবার একটি-দু‘টি নয় ১৫টি কলম। এর আগে ঢাকা মেডিকেলে এক ব্যক্তির পেট থেকে এন্ডোসকপির মাধ্যমে একটি মোবাইল বের করেছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও এন্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষ ডাক্তার দ্বারা অপারেশন ছাড়াই শুধু এন্ডোস্কপির মাধ্যমে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে ১৫টি কলম বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি। শুধু এটাই নয়, আমরা বিনা অপারেশনে পেটের পাথর, কিডনিতে পাথর থেকে শুরু করে অনেক কিছুই অপারেশন ছাড়াই সেগুলো অপসারণের কাজ করে যাচ্ছি।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।