
একটি সমাজে সন্ত্রাস কখন হয়? কেন হয়? এমন প্রশ্নের বহুমাত্রিক উত্তর থাকে। সমাজে সন্ত্রাসী থাকবে, সন্ত্রাস থাকবে। কিন্তু তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখাই মূল চ্যালেঞ্জ। অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস দমনে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর অর্পিত দায়িত্বই আসল। মূলত এই বাহিনীই স্থিতিশীল রাখে একটি সমাজকে। ফলে দেশের মানুষের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক রাখতে হয়। ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’ সাধারণ মানুষের মধ্যে কথাটি আস্থায় নেওয়ার জন্য কিছু উদ্যোগ নিতে হয়। ইতিমধ্যে কিছু নেওয়াও হয়েছে। এটা সত্য, পুলিশের আচরণ এবং থানার পরিবেশে যথেষ্ট পরিবর্তন এসেছে। তারপরও সবকিছু যে বিতর্কের ঊর্ধ্বে, এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। যদিও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মতোই তাদের কাজ করতে হয়। তবু ‘রাজনৈতিক’ পরিচয়ের বিষয়টি, অনেকাংশেই পুলিশের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি করে এটা নির্জলা সত্য। এই ফাঁক দিয়েই মুক্ত হয়ে যায় একজন অপরাধী। সেখানে পুলিশ হয়তো অসহায়! কিন্তু এমন ঘটনা যে অনবরত ঘটেই যাচ্ছে তা নয়। ঠিক সেখানেই পুলিশের ব্যর্থতা প্রকট হয়ে ওঠে। না হলে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বাদ রেখে, একটি তালিকা কীভাবে প্রস্তুত করা হয়?
গতকাল শনিবার দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত ‘চিহ্নিতদের ছাড়াই সন্ত্রাসী তালিকা’ শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, আগামী সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনীতির মাঠ মাঝেমধ্যেই উত্তাপ ছড়াচ্ছে। হামলা-সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। নির্বাচন ঘিরে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা সক্রিয় উঠতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট মহল। কিন্তু চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরির ব্যাপারে এখনো অনেকটা গা-ছাড়া ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি)। এ ছাড়া ২০২১ সালের মার্চে সিএমপির সন্ত্রাসী তালিকা হালনাগাদ করা হয়নি। ৩২৩ জনের ওই তালিকায় চিহ্নিত অনেকের নাম নেই। আবার এই তালিকায় রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে। যে কারণে তালিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আ স ম মাহতাব উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অপরাধীর তালিকা তো প্রতিদিন হয়। অপরাধের ধরন অনুয়ায়ী অপরাধীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্রাইম ডেটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (সিডিএমএস) ঢুকে যায়। রাজনৈতিক বিবেচনায় সন্ত্রাসী তালিকা হয় না।’
এদিকে আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে সন্ত্রাসীরা সক্রিয় হচ্ছে, মাঠপর্যায় থেকে এমন তথ্য পেয়ে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটে বিশেষ বার্তা পাঠিয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে চট্টগ্রামে কর্মরত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, চট্টগ্রামের আন্ডারওয়ার্ল্ডের কিছু শীর্ষসন্ত্রাসী ভারত, মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছে। তাদের নির্দেশে দেশে অবস্থানকারী সহযোগীরা খুন, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছে। এমনকি হত্যাকা-ের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছে তারা। সন্ত্রাসীদের নতুন তালিকা তৈরির কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন র্যাব-৭-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মাহবুব আলম। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে আমরা সন্ত্রাসীদের তালিকা করছি। আগামী দুই মাসের মধ্যে ওই তালিকা তৈরির কাজ শেষ হবে।’
নগর পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য, অপরাধী শনাক্তের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা হলো সন্ত্রাসী তালিকা হালনাগাদ করা। আর তালিকা তৈরির সময় কোনো রাজনৈতিক নেতা বা প্রভাবশালীদের ছাড় দেওয়া হয় না। অন্যদিকে, সিএমপির উপকমিশনার (অপরাধ) নিষ্কৃতি চাকমা বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের তালিকা করে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। ২০২১ সালে করা তালিকাটি আমি দেখিনি। তবে সন্ত্রাসীর কোনো রাজনৈতিক পরিচয় থাকা উচিত নয়।’
কোন কর্তৃপক্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকা করে, সেটা জনগণের দেখার বিষয় নয়। শান্তিপ্রিয় জনগণ চান সন্ত্রাসীরা আইনের আওতায় আসুক। সুনির্দিষ্ট অপরাধের শাস্তি পাক। সেই অপরাধী কোন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী, সেই পরিচয় অপরাধের মাত্রার সঙ্গে যোগ করা ঠিক হবে না। পুলিশ কর্তৃপক্ষ যেন নির্বিঘেœ কোনো ধরনের অবৈধ নির্দেশ ছাড়াই আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে, সেই পথ উন্মুক্ত করা প্রয়োজন। আমাদের প্রত্যাশা থাকল, র্যাবের তৈরি সন্ত্রাসীদের তালিকা নিয়ে কোনো ধরনের প্রশ্ন উঠবে না। তালিকায় উঠে আসবে প্রকৃত অপরাধীর নাম।
অবাঙালিরা যে পূর্ব পাকিস্তানে অসুবিধায় আছে এ কথা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকার জনসভায় উল্লেখ করেছিলেন। ওই বিশাল সমাবেশে বাঙালিরা তো ছিলই, অবাঙালিরাও ছিল। উর্দু এবং কেবলমাত্র উর্দুই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে এই ঘোষণায় বাঙালিরা ভড়কে গেছে, কেউ কেউ ‘না না’ বলেছে; কিন্তু উর্দুভাষীরা সেদিন নিশ্চয়ই অত্যন্ত উৎফুল্লø হয়েছিল। হওয়ার কথা। তাদের পক্ষে এটাই ভাববার কথা যে, মাতৃভূমি ত্যাগ করে তারা পাকিস্তানে এসেছে বটে, তবে পাকিস্তানি রাষ্ট্র তাদের সঙ্গে মোটেই বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, বরং তারাই হবে এর প্রকৃত নাগরিক, তাদের তুলনায় বাঙালিরা থাকবে নিচের স্তরে, কেননা বাঙালিরা উর্দু ভাষা জানে না, উর্দু শেখার চেষ্টা করবে হয়তো, কিন্তু যতই চেষ্টা করুক উর্দু যাদের মাতৃভাষা তাদের স্তরে উঠতে পারবে না।
উর্দুভাষীরা এমনিতেই বাঙালিদের চেয়ে নিজেদের উঁচু জ্ঞান করত, যে মনোভাবের পেছনে তারা একাধিক ‘যুক্তি’ও দাঁড় করিয়ে রেখেছিল। প্রথমত, তারা মনে করত উর্দু হচ্ছে মুসলমানদের ভাষা আর বাংলা ভাষা হলো অমুসলমানদের ভাষা, সেদিক থেকে তারা তাই উচ্চতর মুসলমান। স্মরণীয় যে, ভাষার ব্যাপারে বাঙালিদের মধ্যেও কারও কারও মনে হীনম্মন্যতা বোধ ছিল, যে জন্য কেউ কেউ ঘরে উর্দু ব্যবহার করতে চাইত, নিজেদের মুসলমানত্ব ও আভিজাত্যের নির্ভরযোগ্য প্রমাণ হিসেবে। এটাও ভুললে চলবে না যে, অবিভক্ত বাংলার দুজন মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী উর্দুভাষী ছিলেন এবং এমনকি এ কে ফজলুল হকও বিয়ে করেছিলেন উর্দুভাষী গৃহে। পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু হবে এ ঘোষণা নাজিমুদ্দিন জোর গলাতেই দিয়েছিলেন; সোহরাওয়ার্দী অতটা জোরে না বললেও এমনকি বায়ান্ন সালের একুশে ফেব্রুয়ারির পরে করাচি থেকে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে পাকিস্তানি সরকারের ‘আহাম্মকি’র সমালোচনা করেছিলেন এ কথা বলে যে, সরকার শিক্ষার মধ্য দিয়ে উর্দুকে গ্রহণযোগ্য করে না তুলে জোর করে তাকে চাপাতে গিয়ে সংকটের সৃষ্টি করেছে।
উর্দুভাষীদের উচ্চমন্যতার দ্বিতীয় কারণ ছিল তাদের এই বোধ যে, তারা স্থানীয় জনগণের চেয়ে যোগ্যতা, দক্ষতা ও শিক্ষায় অধিক অগ্রসর। কৃষিকার্য করত যে বিহারি, সে তো আর পূর্ব পাকিস্তানে আসেনি, যারা এসেছিল তারা নানা পেশা ও ব্যবসাতে জড়িত ছিল, তাদের অনেকের মধ্যে খবরের কাগজ পড়ার আগ্রহ ছিল। ঢাকা থেকে বিভিন্ন সময়ে উর্দু ভাষায় ছয়-ছয়টি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে, ঢাকা ও অন্যান্য শহর থেকে সাপ্তাহিক ও সান্ধ্য দৈনিক মিলিয়ে প্রকাশনার সংখ্যা ছিল বিশটি, শেষ দিকে ‘পাকিস্তান অবজারভার’ গোষ্ঠী থেকে উর্দু ভাষায় দৈনিক ‘ওয়াতান’ ও চলচ্চিত্র সাপ্তাহিক ‘চিত্রালী’র উর্দু সংস্করণও প্রকাশ করা শুরু হয়েছিল।
উচ্চমন্যতার এই বোধ উর্দুভাষীদের পক্ষে বাঙালির সঙ্গে একই রাজনৈতিক ধারায় মিশে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকের সৃষ্টি করেছে। এই সমস্যাটা পশ্চিম পাকিস্তানে বসবাসকারী মোহাজেরদের ক্ষেত্রে ততটা দেখা দেয়নি; রাজনৈতিকভাবে তারা মিশে যেতে চেষ্টা করেছে এবং মুসলিম লীগের জন্য কোনো ভোট ব্যাংক তৈরি করতে সম্মত হয়নি, পূর্ব পাকিস্তানে যেটা তারা করেছিল। কেবল তাই নয়, একাত্তরে তারা চিহ্নিত হয়েছিল চরম বাঙালি-বিদ্বেষী বলে। যুদ্ধের শুরুতে স্থানীয়ভাবে বিহারিরা ভয়ংকর বিপদের মধ্যে ছিল, লাঞ্ছনা ও প্রাণহানির মর্মান্তিক সব ঘটনা ঘটেছে, পরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী হয়ে তারা বাঙালি-নিধনে অংশ নিয়েছে এবং যুদ্ধশেষে নিক্ষিপ্ত হয়েছে বিপদের ভীষণ গহ্বরে।
যুদ্ধের পরে তারা নিজেদের মনে করেছে আটকে পড়া পাকিস্তানি। অনুরূপভাবে পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালিরা ছিল, যাদের বাংলাদেশ সরকার ফেরত নিয়ে এসেছে, কিন্তু বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ব্যাপারে পাকিস্তান সরকার তেমন কোনো আগ্রহ দেখায়নি, যার ফলে তাদের অধিকাংশকেই মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়েছে। পাকিস্তান তাদের দু-দুইবার শরণার্থী করল একবার সৃষ্টির সময়ে আরেকবার পতনের মুহূর্তে।
যুদ্ধের শুরু থেকেই উর্দুভাষীদের নাম হয়েছিল ‘মাউড়া’। সেটা ছিল বিদ্বেষ ও ধিক্কারের ধ্বনি। মাউড়া নামের উদ্ভব মাড়োয়ারি থেকে, যে মাড়োয়ারিরা ভারতের মাড়োয়ারের অধিবাসী। তাদের সঙ্গে বিহারিদের কোনো আত্মীয়তা থাকার কথা নয়, ছিলও না; কিন্তু ‘মাউড়া’ নাম তাদের পরিচয়চিহ্ন হিসেবে যুক্ত হয়ে গিয়েছিল। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের বিশেষ বিশেষ মহল থেকে বলা হতো মালাউন, পাকিস্তান ভাঙার পরে বিহারিরা ডাক নাম পেল মাউড়ার। ‘মালাউন’দের মনে করা হতো, পাকিস্তান-বিদ্বেষী, মাউড়াদের পরিচয় হলো তারা বাংলাদেশ-বিদ্বেষী। মানবিক বা নাগরিক পরিচয় ছাপিয়ে উঠতে চাইল পারস্পরিক-বিদ্বেষের নাগরিক স্মারকচিহ্ন। পাকিস্তানি রাষ্ট্রের কর্ণধাররা উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠায় উগ্রবাসনায় তাদের রাষ্ট্রের নয় শুধু পূর্ববঙ্গে বসবাসকারী উর্দুভাষীদেরও বিপদ ডেকে এনেছে। তখনকার মানুষদের তো বটেই, ভবিষ্যৎ বংশধরদেরও। তখন মনে হয়েছিল উপকার করছে, পরে বোঝা গেল উপকার দূরের কথা, স্থায়ী অপকার করে রেখে গেছে।
একাত্তরের আগে যেমন পরেও তেমনি বাংলাদেশে বসবাসকারী উর্দুভাষীরা নিজেদের পাকিস্তানিই ভেবেছে, অন্যকিছু না ভেবে। ব্যতিক্রম ছিল, কিন্তু অন্য ক্ষেত্রে যেমন এই ক্ষেত্রেও তেমনি ব্যতিক্রম নিয়মকেই উদ্ভাসিত করে তুলেছে। পাকিস্তানের নতুন কর্ণধাররা এদের নিজেদের রাষ্ট্রে ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে মোটেই আগ্রহ প্রকাশ করেনি। টালবাহানা করেছে। নানান চাপের মুখে কিছু সংখ্যক আটকে পড়া পাকিস্তানিকে তারা নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু অধিকাংশকেই নেয়নি। বিত্তবানদের কেউ কেউ অবশ্য যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে, যুদ্ধের সময়ে এবং এমনকি পরেও চলে যেতে সক্ষম হয়েছে; তাদের হাতে অস্ত্র ছিল অর্থের।
বিত্তহীনরা পড়ে রয়েছে অসহায়, পরিত্যক্ত এবং অবাঞ্ছিত হিসেবে। ভারতের ভেতর দিয়ে রেলপথে তাদের পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ভারতের আপত্তি ছিল; আপত্তির ভিত্তিও ওই ভাষাই, কে জানে বিহারিরা মাঝপথে নেমে গিয়ে ভারতীয় জনস্রোতে মিশে যায় কি না, মিশে গেলে ভাষা দিয়ে তো আর তাদের আলাদা করা যাবে না। আটকে পড়া বাঙালিদের বেলায় ভারতের ভেতর দিয়ে রেলপথে আসার ব্যাপারে ভারত সরকার আপত্তি করেনি, কেননা সরকার নিশ্চিত ছিল যে, কেউ যদি ভারতের কোনো রেল স্টেশনে নেমে যেতেও চায় তবে অবিলম্বে ধরা পড়ে যাবে, তাদের মুখের বাংলা ভাষাই তাদের ধরিয়ে দেবে।
পাকিস্তানিরা যে উর্দুভাষী মোহাজেরদের তাদের দেশে নিয়ে যেতে উৎসাহী নয়, তার পেছনেও ভাষা একটা কারণ বটে। পাকিস্তানের কোনো অঞ্চলের মানুষের মাতৃভাষাই উর্দু নয়, ভারত থেকে আগত মানুষদের স্থানীয়রা চিহ্নিত করে হিন্দুস্থানি বলে। হিন্দুস্থানি অর্থ সাধারণভাবে উর্দুভাষী, সে জন্য আশঙ্কা ছিল যে, মোহাজেরদের যেখানেই পুনর্বাসিত করা হোক না কেন, স্থানীয় লোকরা তাদের বহিরাগত অতিরিক্ত ঝামেলা বলেই বিবেচনা করবে এবং মোটেই খুশি হবে না।
আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে পাকিস্তান সরকারের ধারণা ছিল, বিহারিদের নিয়ে গেলে পাকিস্তানের জনবিন্যাস হুমকির মুখে পড়তে পারে, যে জন্য ফেরত নেওয়ার আগে জনগণের ঐকমত্য প্রয়োজন হবে বলে ভাঁওতা দিয়েছিল। বলা বাহুল্য, ওই অবস্থান থেকে পাকিস্তান কখনো সরে আসেনি এবং বিহারিদেরও ফেরত নেয়নি। বিশেষ করে এ কারণে যে, পাকিস্তানে জাতিসত্তাগত বিভাজন ও বিরোধ ইতিমধ্যেই বেশ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, মোহাজেরদের বেশিরভাগ যেখানে বসবাস করে সেই সিন্ধু প্রদেশে স্থানীয়-অস্থানীয় সংঘর্ষের অবসান ঘটেনি, বরং বৃদ্ধি পাবে বলেই তারা আশঙ্কা করেছে।
বিহার থেকে আসা মুসলমানদের উচ্চমন্যতার কথা উল্লেখ করেছি, এখানে যোগ করা যেতে পারে যে, তারা যে কেবল উর্দুভাষী মুসলমান হিসেবে নিজেদের উঁচুস্তরের মানুষ ভাবত তা নয়, নিজেদের আঞ্চলিক ইতিহাস সম্পর্কেও অহংকার লালন করত। আজ বিহার অত্যন্ত অসুবিধায় আছে ঠিকই। সেখানে শিল্পকারখানা তেমন গড়ে ওঠেনি, বর্ণবিভাজনের জাঁতাকলে সাধারণ মানুষ এখনো নিগৃহীত, রাজনৈতিক নেতৃত্ব দুর্নীতিতে নিমজ্জিত এবং ওই দুর্নীতিগ্রস্তরাই রাজত্ব করছে। কিন্তু তাদের অতীত ছিল গৌরবোজ্জ্বল। বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক বুদ্ধদেব বিহারেরই লোক, জৈনধর্মের প্রবর্তক মহাবীরের জন্মভূমিও ওই বিহারই।
রামের স্ত্রী সীতাও বিহারি ছিলেন বলেই কথিত আছে। বিহারের নাম এক সময়ে ছিল মগধ। বিহারে সম্রাট অশোকের জন্ম হয়েছিল। বিহার নামের উদ্ভব বৌদ্ধবিহার থেকে। এক সময়ে বিহারের রাজধানী ছিল পাটলিপুত্র। যেখান থেকে পাটনা নামের উৎপত্তি। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল বিহারে অবস্থিত। শেরশাহের জন্ম বিহারে।
একদা বিহার বাংলার অংশ ছিল। নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন বাংলা বিহার উড়িষ্যার অধিপতি। যে মাগধী প্রাকৃত ভাষার সঙ্গে বাংলা ভাষার উদ্ভব জড়িত তার প্রচলনও ছিল ওই বিহার অঞ্চলেই। কিন্তু তাই বলে বিহারিরা যে বাঙালিদের সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করত তা নয়। বিরূপ মনোভাবটিই বরং ছিল প্রবল ও গভীর। বঙ্গভূমি চিরকালই প্রান্তবর্তী, এমনকি প্রতিবেশী বিহারিদের দৃষ্টিতেও। বাংলায় গমনের দরজা আছে একশটি, নির্গমনের দরজা নেই একটিও। সেখানকার মেয়েরা সবাই ভীষণ জাদুকরী, তাদের খপ্পরে একবার পড়লে রক্ষা নেই, তোমাকে মাছি বানিয়ে ছাড়বে এসব ধ্যান-ধারণা তারা সাংস্কৃতিকভাবেই লালন করেছে। ভাগ্যান্বেষণে তারা বাংলায় এসেছে, কলকাতা, মেদিনীপুর, বর্ধমানে বসত গড়েছে, রেল কর্মচারী হিসেবে ভারত বিভাগের আগেই পূর্ববঙ্গের সৈয়দপুর, পার্বতীপুরে তাদের আগমন ঘটে। কিন্তু স্থানীয় জনগণের সঙ্গে তারা এক হতে পারেনি।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নতুন কৌশল ব্যবহার করেছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি সরকারের ‘অন্যায় আচরণের শিকার’ এমন অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন বিশ্বের ৪০ বিশিষ্টি ব্যক্তি, যা গত মঙ্গলবার (৭ মার্চ) মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টে বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়। সেই বিজ্ঞাপনকে খবর আকারেও প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের কয়েকটি গণমাধ্যম। কিন্তু ড. ইউনূস কী ধরনের অন্যায় আচরণ কিংবা আক্রমণের শিকার, তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য ওই বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়নি।
‘বিবৃতিতে ব্যাপকভাবে তথ্য-ঘাটতি লক্ষণীয়। আমরা যদি খুব সাদামাটাভাবে প্রথম থেকে বিজ্ঞাপনটি দেখি, ড. ইউনূস সারা বিশ্বে যে মানবিক কার্যক্রম চালিয়েছেন বা দেশে যে কার্যক্রমগুলো চালাচ্ছেন, সেটি কোথায় ক্ষতিগ্রস্ত হলো কিংবা কোথায় কে বন্ধ করে দিল সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু নেই।
ড. ইউনূসের কি বিদেশ যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা আছে? তিনি দেশের বাইরে শত শত জায়গায় যাচ্ছেন, তাকে বাধা দেয়া হয়েছে? বিমানবন্দরে যেতে দেয়া হয়নি? আমরা তো এ রকম কিছু জানি না। তার কার্যক্রমের ওপর কোথায় বাধা এসেছে? এটি প্রথম অভিযোগ, যার কোনো ভিত্তি নেই।’
ড. ইউনূসের সঙ্গে সরকার এমন কোনো আচরণ করেনি যার জন্য খোলা চিঠি, তাও বিজ্ঞাপন দিয়ে ছাপাতে হবে। লাখ লাখ ডলার খরচ করে, ‘বিবৃতি বিজ্ঞাপন’ দিতে হলো। নিউজ আইটেম যখন বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার করতে হয়, তখন বুঝতে বাকি থাকে না, এর মধ্যে প্রচারিত তথ্য বানোয়াট।
তার সঙ্গে সরকার এমন কোনো আচরণ করেনি, যা এ ধরনের বিবৃতি দাবি করে। তবে ড. ইউনূস বাংলাদেশে কী ধরনের ক্ষতিকর কার্যক্রমে জড়িত, সে বিষয়ে এ দেশের সাধারণ মানুষ ভালোভাবেই অবগত।
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। এক যুগ আগে নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা সরানোর বিষয়ে একটি তথ্যচিত্র সম্প্রচার করা হয়। বর্তমানে ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকমের দুর্নীতির অনুসন্ধান চলছে, দুর্নীতি দমন কমিশনে।
প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে শ্রমিকদের অর্থ লোপাট, কল্যাণ তহবিলের অর্থ বিতরণ না করে ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ এবং দুই হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে সহযোগী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে এরই মধ্যে গ্রামীণ টেলিকমের এমডি নাজমুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক।
এ ছাড়া ১/১১ সেনাসমর্থিত সরকারের সময় প্রধান দুই দলের নেত্রীকে মাইনাস করে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে চেয়েছিলেন তিনি। সে সময় গ্রামীণ পার্টি নামে একটি দল করারও ঘোষণা দিয়েছিলেন। পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বাতিলের নেপথ্যে ঘুরেফিরে এসেছে ড. ইউনূসের নাম।
ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকমের দুর্নীতির অনুসন্ধান চলছে। এ অবস্থায় গত বছরের অক্টোবরে ইউনূসকে মহানায়ক বানানোর তৎপরতা শুরু করে পশ্চিমা লবি। গত ৬ অক্টোবর ইউনূসকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, সুইডেনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নেত্রনিউজ।
যুক্তরাষ্ট্রের ফান্ডে দেশটির একটি এনজিওর অর্থায়নে চলে অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি। প্রতিবেদনটি করেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া বিতর্কিত সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন ইউনূসের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে।
এর এক সপ্তাহ পর ১৩ অক্টোবর ২০২২, ইউনূসকে মহানায়ক বানিয়ে খবর প্রকাশ করে ব্রিটিশ পত্রিকা ‘দ্য ইকোনমিস্ট’। সেখানে বলা হয়, নোবেলজয়ী ইউনূসের বিরুদ্ধে নিপীড়ন বাড়িয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি প্রচার করা হয়, তাকে দুদকে উপস্থিত হতে হবে, আসতে পারে দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞাও। এই রিপোর্ট প্রচারের সময় গড়িয়েছে বহু। এ সময়ের মধ্যে ড. ইউনূসের বিপক্ষে কোনো পদক্ষেপই তো চোখে পড়েনি। তাহলে কেন এ ধরনের মিথ্যাচার!
তার মানে ৪০ বিশিষ্ট নাগরিকের এই বিবৃতিও ধারাবাহিক প্রপাগান্ডার অংশ বলেই ধরে নেব।
লেখক : ফ্রিল্যান্সার, রাজনৈতিক কলামিস্ট
আমাদের দেশে রাজনৈতিক দল মানে স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার। ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যুক্ত থাকা মানে ক্ষমতার স্বাদ পাওয়া। যে দল যখন ক্ষমতায় আসে সেই দলের এমনকি নিতান্ত নিচুতলার কর্মীরাও ক্ষমতার স্বাদ পায় এবং কুৎসিতভাবে সেই ক্ষমতার অপব্যবহার করে, এই ছবি আমাদের দেশে গত চার দশক ধরে প্রায় স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। এই গভীর সামাজিক অন্যায়, মূল্যবোধের এই ভয়ংকর পতনের পেছনে আমাদের ভূমিকাও একেবারে কম নয়। আমাদেরই ঘরের ছেলেমেয়েরা যখন বিপথে যায়, শৌখিন নির্বুদ্ধিতায়, ভয়ে কিংবা লোভে, আমরা তাদের বাধা দিই না। আমরা হয়তো ভাবি, এভাবেই হবে। সাফল্যের শর্টকাট পেলেই আর কোনো সমস্যা থাকবে না। আমাদের সুবিধাবাদিতা, পরোটা-কাবাবের লোভ আর গা-ভাসানোর নীরবতার নীতির ফল আজ দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর সংকীর্ণ স্বার্থপরতা, অসামাজিক কাজের সঙ্গে প্রকাশ্যে জড়িয়ে থাকা, সব রকম অপরাধ করেও রাজনীতির নামে আশ্রয় পাওয়া এই অবস্থাটার মধ্যে।
আমাদের মধ্যেও প্রচণ্ড সুবিধাবাদিতা। এক দলের কুশাসন দেখে আমরা মুখ ফিরিয়ে আরেক দলের মুখাপেক্ষী হয়েছি। তাদের অপশাসন আমাদের নির্বাক করে দিয়েছে। হতাশ, ব্যর্থ, প্রচলিত স্রোতে গা-ভাসানোর বিদ্যায় অভ্যস্ত আমরা সামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থা যতই দমবন্ধ হোক না কেন, আমাদের মতো মানুষরা অন্যায়ের কোনো প্রতিবাদ করার কথা ভাবিনি। অন্য কেউ কখনো প্রতিবাদ করে লাঞ্ছিত হলে প্রকাশ্যে তার পাশে গিয়ে দাঁড়াইনি। বরং নিজের নিজের ‘নিরাপত্তা’ রক্ষা করার চেষ্টায় দূরে সরে থেকেছি। ‘চোখ বুজে কোনো কোকিলের দিকে’ কান ফিরিয়ে রেখেছি।
আমাদের মধ্যে আবেগ মাঝে মধ্যে ভর করে বটে, তবে তা দ্রুতই মিলিয়ে যায়। আবেগ অবশ্যই মানুষের স্বাভাবিক বেঁচে থাকার জন্য একেবারে প্রাথমিক প্রয়োজন, কিন্তু তার সঙ্গে যদি সচেতন কোনো চিন্তা যুক্ত না থাকে তবে সেই আবেগ আমাদের বেশিদূর নিয়ে যেতে পারে না। সচেতন চিন্তা ছাড়া আবেগেরও দৃঢ়তা থাকে না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সময়েও অন্যায়ের মূল কারণটি বোঝার চেষ্টার বদলে, অন্যায়ের কাঠামোটিকে চিহ্নিত করার বদলে আমরা কেবল ভাবি, ওকে সরিয়ে দিলেই বুঝি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কার্যত তা কখনো হয় না। হওয়ার কথাও নয়।
গত প্রায় ৪০ বছর ধরে উন্নতি ও সাফল্যের যে সমাজ-বিচ্ছিন্ন ধারণা আমাদের সংস্কৃতিতে শেকড় গেড়েছে, তার বিপরীত চিন্তাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ফলে আমরা অনেকেই ভেবেছিলাম এই সমাজ, দেশ, বিশ্বের কোনো কিছু নিয়ে মাথা না ঘামিয়েও কোনো রকমে নিজেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করে ফেলা যাবে। বাস্তবে দেখা গেল, এই ভাবনার যা ফল হওয়ার ঠিক তাই হয়েছে। উত্তরপ্রজন্মও নিজের নিজের সাফল্যকে দেখেছে ঠিক যেভাবে দেখা স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অনেক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে, উজ্জ্বল সফল কিছু ছেলেমেয়ে বাড়ি থেকে বহুদূরে বসে প্রচুর অর্থ উপার্জন করছে। তারা ধীরে ধীরে এ দেশের এই সমাজেরই মধ্যে হয়ে গেছে এক ভিন্ন পৃথিবীর বাসিন্দা। একটি বড় অংশ নানান রাজনৈতিক দলে কর্মী হিসেবে চাকরি করে। সেসব দলের আদর্শের বিষয়ে তারা কিছু জানে না, জানানোর কোনো চেষ্টাও হয় না। তারা কেবল নিজের নিজের দলের ক্ষমতা বজায় রাখা এবং ভোটের আগে-পরে এলাকা দখলের কাজে ব্যবহৃত হয়। বদলে কিছু অর্থ ক্ষমতাশালী লোক তাদের দেবেন, বাকি তাদের আদায় করে নেওয়ায় কেউ বাধা দেবে না। কারও মনে হতে পারে অবস্থাটা যেন ‘মধ্যযুগের’ মতো, যখন রাজা-জমিদাররা সিপাহিদের নিজেদের যুদ্ধবিগ্রহের কাজে লাগাতেন, বাকি সময় তাদের ‘চরে খাওয়ার’ অধিকার থাকত। তাতে তারা প্রজার ঘরে আগুন লাগাক কী তার গোয়ালের গরু-বাছুর খুলে আনুক! তার বাইরে যে ‘উত্তরপ্রজন্ম’ তারা এই দুই ধাপের মাঝখানে হতাশা ও আত্মোন্নতির চেষ্টার দোলাচলে থেকেছে। তার ফলে দেশে ক্ষমতা পরিবর্তন হলেও ব্যবস্থাটা কিছু বদলাচ্ছে না।
দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বেকারত্ব, কর্মহীনতা। যে কোনো দেশের জনগোষ্ঠীর জীবিকা ও উপার্জন প্রধানত নির্ভর করে তার প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর। ভুললে চলবে না যে, জমির অনুপাতে বসবাসকারীর সংখ্যা পৃথিবীতে প্রতি বর্গকিমিতে ৪৬ হলেও আমাদের দেশের ক্ষেত্রে প্রায় ৩০০০। কোনো দান-খয়রাতি, দারিদ্র্যরেখা কিছু দিয়েই এই জনসংখ্যার মর্যাদাপূর্ণ জীবিকার ব্যবস্থা করা যে কোনো সরকারের পক্ষেই কঠিন।
অথচ, আশির দশক থেকে এ দেশের প্রাকৃতিক সম্পদগুলোকে বহুজাতিকদের স্বার্থে যথেচ্ছ অপচয় করা হচ্ছে। দেশের সর্বোচ্চ দায়িত্বে থাকা সরকার এ ক্ষেত্রে স্বদেশের স্বার্থ না দেখে মুষ্টিমেয়র আর্থিক স্বার্থ দেখতে চুক্তিবদ্ধ। একদিকে বাড়ছে ধর্মকেন্দ্রিকতা, আরেক দিকে বাড়ছে রাজনৈতিক যথেচ্ছাচার। ধর্মভিত্তিক জঙ্গিবাদী আতঙ্কের পাশাপাশি আরও অনেক বড় ও গভীর সংকটে দেশ নিমজ্জিত। একটা পোশাকি উন্নয়নের ঢোল বাজানো হচ্ছে এবং ‘উন্নয়ন’ তাকেই বলা হচ্ছে, যাকে উন্নয়নের এজেন্টরা ঠিক বলবেন। গণতন্ত্রের মহিমা এখানে একমুখী তালি বাজানো।
সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রাজনীতি ঢুকে পড়েছে, শিক্ষাকেন্দ্রগুলো হয়েছে রাজনীতির মহাআড়ত। অরাজকতাই স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবাদ, সমালোচনাকে টুঁটি টিপে ধরা হয়েছে। বিরোধী দল বিবৃতিসর্বস্ব। দেশে আইন, নীতি, কল্যাণমুখী পরিকল্পনা কোনো কিছুরই অস্তিত্ব নেই। ভালো ছাত্ররা জিওম্যাট-টোফেল দিয়ে বিমানে চড়ে পৃথিবীর সব উন্নত দেশে পাড়ি জমাচ্ছে। আমাদের শিক্ষাও সীমাহীন ক্ষয়ের দিকে এগিয়ে চলছে চোখ-কান বন্ধ করে।
আমাদের নেতারা ঠিক করেছেন, তারা কার চেয়ে কে খারাপ হবেন এই প্রতিযোগিতা করেই কাল পার করে দেবেন। তারা ঠিক করেছেন যে, মানুষের কাছে যাওয়ার দরকার নেই, আমিই হচ্ছি সম্রাট। আমিই জানি কোনটা ভালো জনতার জন্য। আমাদের সেসব টোটকা জানা আছে।
শাসকদের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গির কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে না। রাজনীতি এখন রাজনীতি থেকে নেমে গণনীতি, সমাজের সব সংস্থায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, স্কুল-কলেজে কলকাঠি নাড়ছে নেতা এবং পাতি-নেতারা। তাদের রাজনৈতিক দলের নেতা বলব না, তারা হলো স্রেফ ‘আমাগো লোক’। অরাজকতা বাংলার চিরকালের পাথেয়, এখন মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে তীব্রভাবে। কৃষ্টিতে, বাণিজ্যে, শিল্পতে, এমনকি শিল্পজগতেও। এর কোথায় শেষ? আবার নতুন করে দেশ গড়বে কে? সে মানুষেরা কোথায়?
সুশাসন প্রতিষ্ঠায় শোচনীয় ব্যর্থ একটি দেশ বাংলাদেশ। বাঙালির মানসিক উৎকর্ষ অবিসংবাদিত, তার চেয়ে বড় পরিচয় হলো, বাঙালি অনেক বেশি তর্কশীল। সে শুধু শোরগোল তুলেই চলছে, চলবে। আসলে কিছুই চলছে না, চলবে না। এ দেশের সব আছে, কিন্তু আজ তার কিছুই দেওয়ার নেই, এক অন্তহীন নৈরাশ্য ছাড়া।
কৌটিল্যের দর্শনে বাস্তববোধ যতই থাকুক না কেন, সততার মূল্যবোধ কিন্তু ছিল প্রবল। এ অঞ্চলের দর্শনের শেকড় যে উপনিষদের মধ্যে নিহিত সেখানেও কিন্তু আছে রাজনৈতিক ও মানবিক বহুত্ববাদ। আকবরের দীন-ইলাহি থেকে অশোক চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের দেশশাসনে মানবতাবাদেও শেকড় ছিল। যতই ধর্মীয় রেষারেষি, যুদ্ধ ও হানাহানি হোক না কেন!
সমস্যা হচ্ছে, আজকের বাংলাদেশে এই পরমতসহিষ্ণুতার মানবধর্ম কোথায় যেন অবলুপ্ত হতে বসেছে। বাঙালির মানবধর্মের ঐতিহ্য সুপ্রাচীন, তাই আজ আমরা যতই পারস্পরিক বিদ্বেষের রাজনীতির অবক্ষয়ের শিকার, ততই স্তব্ধ হচ্ছে উন্নয়ন। বন্ধ্যা হচ্ছে অর্থনীতি-সংস্কৃতি-রাজনীতি। হারিয়ে গেল হিউম্যানিজম নামক তত্ত্বটি!
কান্ট বলেছিলেন, ন্যায়ের প্রশ্নে কোনো ছুটির দিন নেই (দেয়ার ইজ নো হলিডে ইন ভার্চু)। সে কথা আজও সত্য। কী পদ্ধতিতে মানুষের দুঃখ দূর হবে তা নিয়ে মতপার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু তার ভিত্তিতেই মতাদর্শগত পথ তৈরি হয়। একেকটি দল একেকটি মতাদর্শ অনুসরণ করে চলে। কিন্তু বাস্তবে মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে হবস কিংবা মেকিয়াভেলিকে গুরু মেনে আমরা যদি মনুষ্য বিরোধিতার জয়গান গাইতে যাই, তা হলে আর যা-ই হোক, সেটা কিন্তু আমাদের সংস্কৃতির ঐতিহ্য নয়।
আমাদের রাজনীতিটা এদল-ওদলে ভাগ করে ফেলা হয়েছে। এটা বিভেদের রাজনীতি। এটা বনামের রাজনীতি। এই রাজনীতি আমাদের বিক্ষত করে চলেছে। এই বনামের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে গোটা পরিস্থিতির মূল্যায়ন করার মানসিকতা আমরা কোথাও হারিয়ে ফেলছি। আর এই সমস্যাটা কিন্তু শুধু রাজনৈতিক সমস্যা নয়, এটা বোধহয় আমাদের মানবধর্মের সংকটও!
বিরোধী দল থেকে শাসক দল হওয়া এবং জনপ্রিয়তা অপসৃয়মাণ হলে শাসক ফের হয়ে যায় বিরোধী নেতা। এ তো ল অব নেচার, প্রকৃতির এই সূত্রকে হাসিনা-খালেদা কেউ আটকাতে পারবেন না। ব্যতিক্রম হবেন কী করে? কেউ চিরকাল ক্ষমতাসীন থাকবেন, সেটা অলীক চিন্তা। সমস্যা হচ্ছে, হাসিনা সরকার যত ‘অসফল’ই হোক না কেন, তাদের কোনো যোগ্য বিকল্প দৃশ্যমান নয়। ফলে ‘থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়’ চিন্তার বৃত্ত থেকে আমরাও বের হতে পারছি না।
লেখক: কলামিস্ট ও লেখক
সমরেশ বসু (১৯২৪-১৯৮৮) ছিলেন একজন প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি লেখক। তার জন্মনাম সুরথনাথ বসু; [১] কিন্তু সমরেশ বসু নামেই লেখক পরিচিতি সমধিক। তিনি কালকূট ও ভ্রমর ছদ্মনামে উল্লেখযোগ্য সাহিত্য রচনা করেছেন। তার রচনায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, শ্রমজীবী মানুষের জীবন এবং যৌনতাসহ বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সুনিপুণ বর্ণনা ফুটে উঠেছে। তিনি ১৯৮০ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। তখন কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বিচিত্র বিষয় এবং আঙ্গিকে নিত্য ও আমৃত্যু ক্রিয়াশীল লেখকের নাম সমরেশ বসু। দেবেশ রায় তার মৃত্যুতে লেখা রচনাটির শিরোনামই দিয়েছিলেন, ‘জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি লেখক এবং পেশাদার লেখক’ (প্র্রতিক্ষণ, ৫ম বর্ষ, ১৭ সংখ্যা, ২-১৬ এপ্রিল ১৯৮৮)। লিখেছিলেন, ‘তিনি আমাদের মতো অফিস-পালানো কেরানি লেখক ছিলেন না, যাদের সাহস নেই লেখাকে জীবিকা করার, অথচ ষোলোআনার ওপর আঠারোআনা শখ আছে লেখক হওয়ার।’ লেখক হিসেবে সমরেশ আমৃত্যু যে লড়াই করেছেন, তার কোনো তুলনা নেই। তার নিজের জীবনই, এক মহাকাব্যিক উপন্যাস। ‘চিরসখা’ নামের প্রায় ৫ লাখ শব্দের বিশাল উপন্যাসে সেই লড়াইকে স্মরণীয় করে রেখেছেন তারই পুত্র নবকুমার বসু। ছোটদের জন্য তার সৃষ্ট গোয়েন্দা গোগোল অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। গোগোলের দুটি কাহিনি গোয়েন্দা গোগোল ও গোগোলের কীর্তি নামে চলচ্চিত্রায়িতও হয়েছে। সমরেশ বসু প্রণীত উপন্যাসের সংখ্যা ১০০। তার প্রকাশিত ছোটগল্পের সংখ্যা ২০০। সমরেশ বসু ১৯৮৮ সালের ১২ মার্চ মারা যান।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করতে ঘুরেফিরে সংলাপের বিষয়টি আসছে। ক্ষমতাসীনদের তরফ থেকে প্রভাবশালী যেসব দেশ বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের বারবার সংলাপের রাস্তা বাতলেছেন। সেই রাস্তায় না চলে দফায় দফায় অনীহা দেখিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। হঠাৎ গত মঙ্গলবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের জনসভা থেকে বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমুর জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপে বসা সংক্রান্ত বক্তব্য ঘিরে আবার আলোচনায় এসেছে বিষয়টি। অবশ্য এ প্রস্তাব বিএনপির প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমুর মাধ্যমে আসা প্রস্তাবটি হাওয়া থেকে আসেনি। এটা যুক্তরাষ্ট্রকে এড়িয়ে তৃতীয়পক্ষকে সামনে এনে দায় এড়ানোর এক ধরনের কৌশল হতে পারে।
১৪ দলের জনসভায় আমু বলেছেন, প্রয়োজনে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হতে পারে। এ নিয়ে সরকারের তিনজন মন্ত্রী গতকাল কথা বলেছেন। দুজন বলেছেন, এমন কোনো সংকট হয়নি জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপ করতে হবে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সংকট সমাধানে আলোচনার বিকল্প নেই।
তবে বিএনপি আমুর এ প্রস্তাবকে আপাতত আমলে নিচ্ছে না। দলটির নেতারা বলেছেন, লিখিত প্রস্তাব দিলে ভেবে দেখবেন তারা।
প্রভাবশালী যেসব দেশ বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়, তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের বারবার সংলাপের রাস্তা বাতলেছেন। সেই রাস্তায় না চলে দফায় দফায় অনীহা দেখিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সংলাপে অনীহার কারণও উল্লেখ করেছে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দলটি। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও বিএনপির সঙ্গে সংলাপের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছিলেন। ফলে পথ হারিয়েছিল সংলাপ আলোচনা। তারা পরে গত মঙ্গলবার হঠাৎ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের জনসভা থেকে বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু সংলাপ বিষয়ে বক্তব্য দেন।
কূটনীতিতে দক্ষ কয়েকজন রাজনীতিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ কোনো সংস্থা নয় যে, কারও প্রস্তাবে মধ্যস্থতায় আসতে রাজি হয়ে যাবে। মধ্যস্থতা চেয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সহযোগিতা চাইলেই কেবল আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটি সাড়া দিতে পারে। সুতরাং সরকারেরও সায় রয়েছে এ প্রস্তাবে। তার আগে প্রতিক্রিয়া যাচাই করা রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া সুফল পাবে মনে করলে সরকার সে পথে যেতে পারে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের দুই সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, সংলাপের ব্যাপারে একেবার অনীহা থাকলে প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে এ ধরনের প্রস্তাব দেওয়ার মতো নেতা আমির হোসেন আমু নয়। সংলাপের ব্যাপারে সরকারের ভেতর-বাইরে অবস্থান যাই থাকুক, আমুর প্রস্তাবে সরকারের ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের ইশারা ছাড়া হয়নি।
এ প্রস্তাবের এক দিন পর গতকাল দলীয় একটি আলোচনা সভায় আমির হোসেন আমু বলেন, ‘এটা আওয়ামী লীগের বাড়ির দাওয়াত না যে, দাওয়াত করে এনে খাওয়াব। আলোচনার জন্য কাউকে বলা হয়নি, কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি।’ বর্ষীয়ান এ নেতা বলেন, ‘নির্বাচন হবে সংবিধানের ভিত্তিতে। সেই পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে বলা যায়। কিন্তু আলোচনার জন্য নয়।’ এর আগে মঙ্গলবার ১৪ দল আয়োজিত জনসভায় তিনি তার বক্তব্য প্রত্যাহার করেননি। কিছুটা কৌশলী বক্তব্য রেখেছেন গতকাল।
এ পর্যায়ে সংলাপের প্রস্তাব উদ্দেশ্যবিহীন মনে করে না ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতাও। তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ পর্যায়ে বিএনপিও কী প্রতিক্রিয়া দেখায় সেটাও দেখার আছে। প্রস্তাব গ্রহণ করলে এক ধরনের কৌশলে যাবে, প্রস্তাব নাকচ করলে দেশি ও বিদেশি মহলে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে এক ধরনের সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। সেই আশায়ও নতুন করে এ প্রস্তাব দিয়ে থাকতে পারেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ এ নেতা।
সূত্র জানায়, আলোচনায় উঠে এসেছে সরকার বা আওয়ামী লীগ এক ধরনের চাপে পড়েছে। আর সেই চাপ সামলে নির্বাচন তুলে নিতে সংলাপের রাজনীতিকে কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। ‘ব্যাকফুটে’ খেলে চার বা ছক্কা হাঁকাতে চায় বলে সংলাপের আওয়াজ দিয়েছে মাঠে। আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থাকে মধ্যস্থতায় রেখে সংলাপের আলোচনা নতুন কোনো শক্তিকে আলোচনায় আনার কৌশলও হতে পারে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী নেতা ও ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের একাধিক নেতাও দেশ রূপান্তরকে বলেন, শীর্ষ পর্যায়ের ইশারা ছাড়া আমু এমন প্রস্তাব কোনোভাবেই দেননি। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপের পথ দেখিয়ে মূলত তৃতীয়পক্ষকে আনতে পারে, রাজনীতিতে সে আলোচনা তুলতে চেয়েছেন।
আওয়ামী লীগের মধ্যমসারির নেতাদের একটি অংশ যদিও দাবি করেন, তাদের দলের প্রভাবশালী এ নেতার বক্তব্য সম্পর্কে তাদের কাছে কোনো ধারণা নেই। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমির হোসেন আমু জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপের যে প্রস্তাব দিয়েছেন সে সম্পর্কে তাদের পর্যায়ের নেতাদের কোনো ধারণা থাকার কথা নয়।’ দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মি আহমেদ বলেন, ‘এ বক্তব্য সম্পর্কে তারও কোনো ধারণা নেই।’
অবশ্য নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, একেবারেই হাওয়া থেকে এমন প্রস্তাব আসেনি। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মাধ্যমের প্রত্যাশা তো আছেই।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সংলাপ হতে পারে। হয়তো হবেও। কিন্তু সেই সময় এখনো আসেনি।’
আওয়ামী লীগ সিনিয়র নেতারা মনে করেন, সংলাপ ও আলোচনায় সমস্যা সমাধানে কখনই আগ্রহী নয় বিএনপি। ফলে সংলাপের ডাক দিয়ে দায় থেকে মুক্ত হতে পারবে আওয়ামী লীগ। সেই কৌশলে সংলাপ আয়োজনে গেলে ক্ষতি কি? সেই পরিকল্পনা থেকে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে আমু সেই পথ দেখিয়েছেন। তাছাড়া হঠাৎ যে চাপে পড়েছে সরকার সেখান থেকে বেরিয়ে আসা যায় কি না, সেটাও দেখা যাবে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপের প্রস্তাবে।
তবে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল দলীয় একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে আমরা আলোচনা করব, এটা নিজেদের সমস্যা, নিজেরাই সমাধান করব। বিগত নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী সংলাপের আহ্বান করেছিলেন। যেখানে বিএনপি দুবার সংলাপে অংশ নিয়েছিল। আলোচনার জন্য জাতিসংঘ কেন মধ্যস্থতা করবে? আমাদের দেশে এমন কোনো রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়নি যে জাতিসংঘের এখানে হস্তক্ষেপ করতে হবে।’
একইদিন রাজধানীতে আরেকটি অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘রাজনৈতিক যেকোনো সমস্যা সমাধানে আলোচনা প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ দল হিসেবে সব দলকে নিয়ে আলোচনা করে সমাধানে বিশ্বাসী।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে জনগণের ক্ষমতায় চলতে হবে। আর জনগণের ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে হলে সবার সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তাই আলোচনার বিকল্প কিছু নেই।’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা বলছেন, লিখিত কোনো প্রস্তাব আসে সেটার জবাব কী দেওয়া যায় তা নিয়ে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে ওই প্রস্তাবে অবশ্যই ‘নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক’ যে নামেই ডাকা হোক, তা এজেন্ডায় থাকতে হবে।
ওই নেতা বলেন, গত মে মাসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপিকে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছিলেন। যদিও ৯ মে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপির অংশগ্রহণের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর থেকে দুই দলের আলোচনায় বসা না বসা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা রয়েছে।
গত সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে আলোচনার একপর্যায়ে এ প্রসঙ্গে এক নেতা জানান, হয়তোবা তাদের (ক্ষমতাসীনদের) কাছ থেকে প্রস্তাব (সংলাপ) আসতে পারে। কেননা সম্প্রতি তারা নরম সুরে কথা বলছে। তবে স্থায়ী কমিটির প্রায় সব সদস্যই এজেন্ডা ছাড়া সেই আলোচনায় যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে মত দেন।
সিনিয়র এক নেতা তার মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে বৈঠকে বলেন, ২০১৮ সালে শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করে আমরা তার সঙ্গে সংলাপে বসেছিলাম। সেই সংলাপে যেসব কথা তিনি দিয়েছিলেন, সেগুলোর একটাও তারা রক্ষা করেননি। আর ২০১৪ সালে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর মধ্যস্থতায় ৫ জানুয়ারি নিয়মরক্ষার নির্বাচন বলা হলেও ক্ষমতা এসে আর নির্বাচন দেয়নি আওয়ামী লীগ। তাই এবার বসতে হলে এজেন্ডা নিয়ে বসতে হবে। অপেক্ষাকৃত জুনিয়র এক নেতা বলেন, হঠাৎই আওয়ামী লীগ সংলাপের বিষয়ে কথা বলছে না। তারা বলতে বাধ্য হচ্ছে। আমাদের করণীয় ঠিক রেখেই তাদের সঙ্গে বসতে হবে। ওই এজেন্ডায় খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না। উনি (আমির হোসেন আমু) আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল স্পোকস ম্যান কি না এটা আমি জানি না। আমরা উনার বক্তব্যকে গুরুত্ব দেব কেন? আমি এর বেশি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না।’
জামালপুরের সরিষাবাড়ীর সোহরাব হাসান ও তার স্ত্রী হজে যাওয়ার জন্য চার দিন আগে ঢাকায় আসেন। আশকোনার একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন তারা। গত সোমবার তাদের ফ্লাইট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভিসা না হওয়ায় তারা এখনো যেতে পারেননি। তাদের এজেন্ট বলেছেন, তিন-চার দিনের মধ্যে ভিসা হয়ে যাবে এবং বিমানের একটি ফ্লাইটে জেদ্দায় যাবেন তারা।
সোহরাব হাসানদের মতো অন্তত ১৬ হাজার হজযাত্রীর ভিসা এখনো হয়নি। কবে হবে তা-ও কেউ স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না। তবে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হাব বলছে, আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যেই সবার ভিসা সম্পন্ন করা হবে।
মন্ত্রণালয় গতকাল বুধবারের মধ্যেই সবার ভিসার বিষয়টি শেষ করতে বলেছিল। তা না হলে এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছিল। অন্যদিকে সৌদি সরকার বাংলাদেশকে লাল তালিকাভুক্ত করার হুঁশিয়ারি দিয়ে সতর্কবার্তা পাঠায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ৮ হাজার হজযাত্রীর ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আরও তিন দিন সময় চেয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
গতকাল আশকোনায় হজক্যাম্পে সরেজমিনে কয়েকজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, এজেন্সিগুলোর খামখেয়ালিপনায় ভিসা পেতে দেরি হচ্ছে। যাদের ভিসা হচ্ছে না তারা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। মন্ত্রণালয় আশার বাণী শোনাচ্ছে। ভিসাসহ আরও কিছু অভিযোগে ৯০টি হজ এজেন্টকে শোকজ করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। জবাব সন্তোষজনক না হলে তাদের আইনের আওতায় আনারও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানায়।
অপরদিকে, হজযাত্রী সংকট থাকায় বিমানের শিডিউল কিছুটা এলোমেলো হওয়ার পাশাপাশি ফ্লাইট বাতিলও হয়েছে। এসব ফ্লাইট নতুন করে চূড়ান্ত করছে বিমান। তা ছাড়া ফ্লাইটের সøট পেতে সৌদি আরবে চিঠি পাঠিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ১৬ দিনে ২৮ হাজার ৬৩১ জন হজযাত্রীকে সৌদি আরবে নিয়ে গেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।
আশকোনা হজ অফিসের পরিচালক সাইফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আল্লাহর ঘরে যাওয়ার জন্য যারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন, সবাইকে ২২ জুনের মধ্যে সৌদি আরব পাঠানো হবে। এখনো যাদের ভিসা হয়নি, তাদের আমরা সব ধরনের সহায়তা করছি। আমরাও অভিযোগ পাচ্ছি। আবার তা সমাধানও করা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, যেসব এজেন্সি ঘাপলা করছে, তাদের নজরদারি করা হচ্ছে। এখনো সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া করেনি ১৬৯টি হজ এজেন্সি। তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা দ্রুত বাড়ি ভাড়া করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জানা গেছে, চলতি বছর ১ লাখ ২২ হাজার ২২১ বাংলাদেশি হজ পালন করার অনুমতি পেয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯০ জন হজযাত্রীর ভিসা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ১৬ হাজারের মতো হজযাত্রীর ভিসা হয়নি। মক্কা-মদিনা বাড়িভাড়া, মোয়াল্লেমসহ সৌদি আরবের দেওয়া বিভিন্ন শর্ত পূরণ করতে না পারায় ভিসা পেতে দেরি হচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছে। তা ছাড়া ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে হজ এজেন্সিগুলোকে সৌদি আরব আরও কিছু শর্ত দিয়েছে। এর মধ্যে ফ্লাইটের টিকিট, প্রবেশ ও বের হওয়ার রুট এবং আসা-যাওয়ার তারিখ নিশ্চিত করা অন্যতম। কিন্তু এজেন্সিগুলো শর্ত পূরণ না করায় হজযাত্রীদের ভিসা পেতে দেরি হওয়ায় হজ ফ্লাইট নিয়ে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। বিমানের প্রায় প্রতিটি হজ ফ্লাইটইকে খালি আসন নিয়ে ছেড়ে যেতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে যাত্রীর সংকট দেখা দেওয়ায় বাতিল হয়েছে বেশ কয়েকটি ফ্লাইট। সমস্যা সমাধানে সপ্তাহখানেক আগে সৌদি সরকারের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তওফিক আল-রাবিয়াহ চিঠি পাঠিয়েছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানকে। এরপর ধর্ম মন্ত্রণালয় বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে কয়েক দিন আগে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া অন্যতম।
সূত্র জানায়, গতকাল বুধবারের মধ্যে ৮০ শতাংশ ভিসা সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশকে কড়া সতর্কবার্তা দেয় সৌদি আরব। অন্যথায় বাংলাদেশকে সৌদি আরবের বিধিনিষেধে পড়তে হতে পারে। এমনকি সৌদি সরকারের এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা না মানলে বাংলাদেশকে লাল তালিকাভুক্তও করা হতে পারে। সৌদি সরকারের এই নির্দেশনার বিষয়টি জানিয়ে সেখানকার বাংলাদেশ হজ অফিস ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠি পাঠায়। এর পরই মন্ত্রণালয় হজ এজেন্সিগুলোকে জরুরিভিত্তিতে ভিসা কার্যক্রম শেষ করার তাগিদ দেয়।
বিমানের মার্কেটিং শাখার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা জটিলতা দেখা দিয়েছে মূলত হজ এজেন্সিগুলোর কম পয়সায় প্যাকেজ ঠিক রেখে অতিরিক্ত মুনাফা লোটার মানসিকতায়; বিশেষ করে মদিনায় এ বছর মসজিদের আশপাশের বাংলাদেশি-অধ্যুষিত এলাকার সস্তার হোটেলগুলো সব ভেঙে দেওয়ায় এখন হজযাত্রীদের জন্য দামি বাড়ি ভাড়া নিতে হচ্ছে। এই বাড়তি ব্যয় এড়াতে এজেন্সিগুলো লম্বা সময়ের প্যাকেজের পরিবর্তে স্বল্পমেয়াদি প্যাকেজ নেওয়ার কৌশল অবলম্বন করছে। ঢাকায় হজযাত্রীদের ভিসা আবেদনের সময় সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়ার রসিদ প্রদর্শন না করলে ভিসা দেওয়া হয় না। এতে বেকায়দায় পড়ে হজ এজেন্সিগুলো। তারা হজ ঘনিয়ে আসার আগের সাত দিন ও শেষ হওয়ার প্রথম সাত দিনের মধ্যে দেশে ফিরিয়ে আনার হিসাব মাথায় রেখে বাড়িভাড়া নেয়। এই একটা কারণেই ঢাকার হজ এজেন্সিগুলো এখন শেষ মুহূর্তে হজযাত্রীদের জন্য বাড়িভাড়া নিয়ে ভিসার আবেদন করার কৌশল নিয়েছে। এতে হজযাত্রী সংকটে বিমান ও সাউদিয়ার বেশ কটি ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। এজেন্সিগুলো চাইছে স্বল্প মেয়াদি প্যাকেজের মাধ্যমে প্রতি হজযাত্রীর কাছ থেকে ৪০-৫০ হাজার টাকা লাভ করতে চায়। তাদের এই মুনাফাকেন্দ্রিক কৌশলের দরুন এত দিন প্রায় অর্ধেক ভিসা সম্পন্ন করা হয়নি।
গতকাল আশকোনায় হজক্যাম্পে গিয়ে দেখা গেছে, তারা ভিসার বিষয়ে ক্যাম্পের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছেন। তবে কড়াকড়ি থাকায় অনেকে ভেতরে ঢুকতে পারছিলেন না। ফরিদপুরের আবদুর রহমান বলেন, এলাকার একটি এজেন্সিকে প্রায় ৮ লাখ টাকা দিয়েছেন। তারা সঠিক সময়ে ভিসা করতে পারেনি। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে ঝগড়াও হয়েছে। তারা জানিয়েছে, তারা জোর দিয়ে বলেছে যে তিন দিনের মধ্যে ভিসার ব্যবস্থা করবে। ওই এজেন্সির লোকজনকে হজক্যাম্পে তলবও করা হয়েছে। তাদের সামনেই বলেছেন, ভিসার ব্যবস্থা করতে না পারলে যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নেবেন তারা। এখন অপেক্ষায় আছেন বলে জানিয়েছেন রহমান।
এ বিষয়ে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি শাহাদাত হোসাইন তসলিম জানান, সৌদি আরব এমন কৌশল সব সময় নিয়ে থাকে। এ নিয়ে নানা ধরনের আতঙ্ক ছড়ায়। অথচ ৮০ ভাগ ভিসা বুধবার পর্যন্ত হয়ে গেছে। এই হিসাবে আর মাত্র সর্বোচ্চ ১৬ হাজার হজযাত্রী বাকি রয়েছে। এ নিয়ে অযথা কোনো দুশ্চিন্তা বা আশঙ্কা করার কিছু নেই; বরং এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় হজ ব্যবস্থাপনা আরও সুন্দর ও সফলতার সঙ্গেই শেষ করতে পারবেন তারা। তিনি বলেন, শেষ সময়ে এসে ভিসা জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। ভিসার জন্য সৌদি আরবের দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে প্রতিটিই পূরণ করতে হয় এজেন্সির মালিকদের। একটিও পূরণ করতে ব্যর্থ হলে তারা ভিসা দেয় না।
শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘আমরা তথ্য পাচ্ছি অনেক এজেন্সি এসব শর্ত পূরণ করতে পারেনি বলে তাদের ভিসা দিচ্ছে না। হাবের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।’
বিমানের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনো অনেক হজযাত্রীর ভিসা হয়নি তা সত্য। তবে এজেন্সিগুলো আগাম টিকিট বুকিং দিয়ে রেখেছে।’ তিনি জানান, ১৬ দিনে ২৮ হাজার ৬৩১ জন হজযাত্রীকে জেদ্দা ও মদিনায় পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে সোমবার পাঠানো হয়েছে ১ হাজার ৭০৫ জনকে। ২২ জুন শেষ ফ্লাইট।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসা আনাসহ নানা কারণে ৯০টি হজ এজেন্সিকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। ওই নোটিসে বলা হয়, হজ কার্যক্রম পরিচালনাকারী সব এজেন্সিকে তাদের নিজেদের সব হজযাত্রীর ভিসা সম্পন্ন করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত নিবন্ধিত হজযাত্রীদের ভিসা ইস্যু করেনি; যা সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় অসহযোগিতার শামিল। এ ধরনের অব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় বিঘœ সৃষ্টি করেছে এবং সরকারের হজ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট নির্দেশনা উপেক্ষিত হয়েছে, যা ‘হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২১’-এর পরিপন্থী। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের কারণ বিদ্যমান বলেও নোটিসে জানানো হয়। সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলো সঠিকভাবে দিতে না পারলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, সব হজযাত্রীকে পরিবহনে নতুন করে আরও পাঁচটি ফ্লাইটের সøট দিতে সৌদি সিভিল এভিয়েশনকে অনুরোধ জানাতে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করে চিঠি পাঠানো হয়েছে কিছুদিন আগে। হজ এজেন্সিগুলোর কারণে এ পর্যন্ত বিমানের কটি ফ্লাইট ধারণক্ষমতার কম যাত্রী নিয়ে পরিচালিত হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়েছে, তা জানাতে সংস্থাটির এমডিকে মঙ্গলবার চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
ফ্লাইটের সøটের বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু ফ্লাইট না যাওয়ায় ক্যাপাসিটি লস হয়েছে। ওই ফ্লাইটগুলোতে যতসংখ্যক যাত্রী যাওয়ার কথা ছিল তা কমে গেছে। এ জন্য কিছু ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।
লিওনেল মেসি ঘোষণা দিলেন, ‘আমি ইন্টার মিয়ামিতে যাচ্ছি।’
রাতে স্প্যানিশ গণমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে এ ঘোষণা দিয়েছেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক।
ডারিও স্পোর্টকে তিনি জানান, ‘আমার ইউরোপের আরেক ক্লাব থেকে প্রস্তাব ছিল। কিন্তু ওই প্রস্তাব দেখিওনি, কারণ আমি ইউরোপে খেললে বার্সেলোনায় খেলতে চেয়েছে। বিশ্বকাপ জেতার এবং বার্সাতে না যেতে পারায়, এখন সময় যুক্তরাষ্ট্র লিগে খেলার এবং ভিন্নাভাবে ফুটবলকে উপভোগ করার। তবে দায়িত্ব থাকবে একই এবং আকাঙ্খা থাকবে জেতার এবং অবশ্যই ভালো করার। তবে আরো শান্তিপূর্ণভাবে।’
মেসি জানান, ‘বুসকেটস আর জর্ডি আলবার সাথে যোগাযোগ ছিল, কখনো তাদের সাথে একই জায়গায় যাওয়ার ব্যাপারে কথা হয়নি। আমি আমার সিদ্ধান্ত নিজে নিয়েছি।’
শৈশবের ক্লাব বার্সেলোনা থেকে মনের কষ্ট নিয়েই ২০২১ সালে স্পেন ছেড়ে ফ্রান্সের পিএসজিতে যোগ দিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। দু'বছর পর আবার বার্সেলোনায় ফিরতে চেয়েছিলেন খুব করে। তার জন্য বাধা হয়ে দাড়ানো লা ফিনান্সিয়াল ফেয়ার প্লে'র অনুমোদনও দিয়েছিল লিগা কর্তৃপক্ষ। মেসি চাচ্ছিলেন আগের বার তাকে যেভাবে চলে যেতে হয়েছিল বার্সেলোনা ছেড়ে, সেটা যেন না হয় পরে।
দুদিন ধরে এ নিয়ে কথাবার্তা হলেও বার্সেলোনা সেই নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। মেসির কাছে ছিল দুটি অপশন- সৌদি ক্লাব আল-হিলালের দুবছরে প্রায় ১ বিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাব গ্রহণ করা নয়তো মেজর লিগ সকারের ক্লাব ইন্টার মিয়ামির প্রস্তাব গ্রহণ করা। আল হিলালকে এক বছরের জন্য অপেক্ষায় থাকবে বলেছিলেন মেসি দুদিন আগে। বাকি ইন্টার মিয়ার প্রস্তাব। সেটাই গ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্রে ক্লাব ফুটবল খেলতে যাচ্ছেন।
মেসির সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি হচ্ছে ইন্টার মায়ামির। প্রতিবছর শেষ মেসি ক্লাব ছেড়ে দিতে পারবেন, না দিলে সয়ংক্রিয় ভাবে তিনি পরের বছর খেলবেন। বছর প্রতি ৫৪ লাখ ডলার পারিশ্রমিক পাবেন তিনি।
এবার অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ।
বুধবার কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় ২০২২-২৩ হিসাববছরের নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে লভ্যাংশের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোম্পানির সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে ১ জুন কোম্পানিটি ২০২১-২২ হিসাববছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করে।
কোম্পানি সূত্র জানায়, চলতি ২০২২-২৩ হিসাববছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে পণ্য বিক্রি করে আয় হয়েছে ৭৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। উৎপাদন, পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয় সমন্বয়ের পর কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা।
এতে করে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় বা (ইপিএস) দাঁড়ায় ৮৭ পয়সার কিছুটা বেশি।
তবে এফআরসির বিধান অনুযায়ী, শেয়ার মানি ডিপোজিটের বিপরীতে নতুন ইস্যু করা শেয়ার বিবেচনায় নয় মাসে ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৫৮ পয়সা। এই আয় থেকেই শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ অন্তর্বর্তী নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রায় ছয় বছর বন্ধ থাকার পর জাপানি বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনায় ঘুরে দাঁড়ায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। জাপানি প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশের তত্ত্বাবধানে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে উৎপাদনে ফেরে মৃতপ্রায় এমারেল্ড। উৎপাদিত রাইস ব্র্যান অয়েল বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৪৫ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগ ও নতুন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এমারেল্ডে প্রাণ ফিরিয়ে আনে মিনোরি।
রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় কোম্পানিটির প্রধান উদ্যোক্তা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ায় ২০১৬ সালে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এমারেল্ড অয়েলের। এ কারণে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে টানা পাঁচ বছর শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি। মিনোরির তত্ত্বাবধানে এখন লভ্যাংশ দেওয়া শুরু করেছে কোম্পানিটি।
মিনোরির নতুন বিনিয়োগের বিপরীতে গত ১০ এপ্রিল এমারেল্ড অয়েলের আরও ৩ কোটি ১৫ লাখ ৫৮ হাজার নতুন শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন দিয়েছে এসইসি, যা মিনোরি বাংলাদেশের নামে ইস্যু করা হবে। এর আগে বাজার থেকে এমারেল্ড অয়েলের ৪৬ লাখ শেয়ার কেনে মিনোরি বাংলাদেশ। নতুন শেয়ার যুক্ত হলে এমারেল্ড অয়েলের পরিশোধিত মূলধন ৯১ কোটি ২৭ লাখ টাকায় উন্নীত হবে।
ভূমি নিয়ে বিরোধ মীমাংসায় ল্যান্ড সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনালের বিচারক হবেন জেলা জজরা। এ ছাড়া প্রয়োজনে সিনিয়র সহকারী জজ বা সহকারী জজদেরও ট্রাইব্যুনাল মামলা নিষ্পত্তির জন্য বিচারক নিয়োগ করতে পারবে। এমন বিধান যুক্ত করে ১৯৫০ সালের স্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড টেন্যান্সি অ্যাক্ট (রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন) সংশোধনে জাতীয় সংসদে বিল উত্থাপন করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার সংসদে ‘স্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড টেন্যান্সি (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০২৩’ নামে এ বিলটি উত্থাপন করেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। পরে বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। ওই বিলটি পাস হলে ভূমি জরিপসংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রিতা কাটবে বলে মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন।
বিদ্যমান আইনে আছে, ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালের বিচারক হবেন যুগ্ম জেলা জজ। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার বিচারক নিয়োগ দেবে। এ বিধানের সঙ্গে নতুন ধারা যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে বলা হয়, এভাবে বিচারক নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত সরকার যুগ্ম জেলা জজদের ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজের ক্ষমতা দিতে পারবে। এ ছাড়া ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনাল থেকে স্থানান্তর করা মামলা নিষ্পত্তির জন্য এক বা একাধিক সিনিয়র সহকারী জজ বা সহকারী জজকে ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে সরকার নিয়োগ দিতে পারবে।
বিদ্যমান আইনে বলা আছে, ভূমি জরিপ আপিল ট্রাইব্যুনালের বিচারক হবেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক অথবা সাবেক বিচারক। কিন্তু দীর্ঘদিনেও এ আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়নি।
এটুআই বিল সংসদে : সরকারি সেবা ডিজিটালে রূপান্তর এবং নাগরিকের জীবনমানে সৃষ্ট সেবা অধিকতর কার্যকর ও টেকসই করতে এজেন্সি টু ইনোভেট (এটুআই) নামে একটি নতুন সংস্থা করা হচ্ছে। এজন্য এজেন্সি টু ইনোভেট বিল-২০২৩ জাতীয় সংসদে তোলা হয়েছে।
গতকাল স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে বিলটি উত্থাপন করেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এর আগে বিরোধী দলের সদস্যদের আপত্তি কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠনো হয়। বিলটির বিরোধিতা করে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেছেন, ‘জুনাইদ আহমেদ পলক যে নতুন কোম্পানি খুলতে বিল আনছেন, এটা হচ্ছে ঠিক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো। সব ব্যবসা-বাণিজ্যকে নিজ হাতে নেওয়ার একটা পাঁয়তারা।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।