
বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির সমৃদ্ধিশালী ইতিহাস এখন যেন অতীত। এ দেশের মুক্তিসংগ্রামে ছাত্ররাজনীতির ভূমিকা ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান ও স্বাধীনতা সংগ্রাম, এমনকি নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনে ছাত্ররাজনীতির ঐতিহাসিক ভূমিকা চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। ছাত্রদের পাশাপাশি বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের সব ধাপে গণমানুষের অংশগ্রহণ এ দেশের মানুষের সংগ্রামকে সাফল্যমণ্ডিত করেছে। সাধারণ জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ ও ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমেই ধাপে ধাপে মুক্তি অর্জিত হয়েছে ও হচ্ছে। আর গণমানুষকে রাজনীতি সচেতন ও রাজনীতিতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ছাত্রসমাজ ও ছাত্ররাজনীতির ভূমিকা সেই ঐতিহাসিককাল থেকেই ছিল অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ।
সেই ছাত্ররাজনীতির লক্ষ্য ছিল পশ্চাৎপদতা ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির আদর্শ, সমতা, সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ছাত্ররাজনীতির সেই ধারা যেন অমাবস্যার চাঁদে পরিণত হয়েছে। গত কয়েক দশকের বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির প্রধানতম যে ধারা, সেই ধারায় ক্ষমতাকেন্দ্রিকতার ধ্বজাবাহী হওয়া ছাড়া এখানে কোনো নতুনত্ব ও সৃজনশীলতার লেশমাত্র যেন নেই।
এই অবস্থায় ছাত্ররাজনীতির মানে মাসল পাওয়ার তৈরির মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা বা ক্ষমতাসীনদের সরিয়ে বিরোধী পক্ষের ক্ষমতার স্বাদ পাওয়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া অথবা জনতুষ্টিবাদিতার অনুসারী হয়ে মৌলবাদিতা প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হওয়া। এতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আদর্শের অস্তিত্ব থাকলেও এর সঙ্গে বঞ্চনা ও অধিকারহীনতাকে মোকাবিলার কোনো সম্পর্ক নেই। আর এভাবে ছাত্ররাজনীতি আজ নানাভাবে কলুষিত, অন্তত আমরা পত্রপত্রিকায় যে ধরনের খবর দেখতে পাই। বেশিদিন আগের কথা না, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির মূল বিষয় ছিল বিবদমান দলগুলোর মধ্যে হল দখল ও পাল্টাদখল। এখন আর দখল আর পাল্টাদখলের কিছু নেই, সবই ক্ষমতাসীনদের দখলে।
অনেক বছর ধরেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এক ধরনের ভয়ের সংস্কৃতি বিরাজ করছে, যেখানে দুর্বৃত্তদের মদদপুষ্ট কিছু শিক্ষার্থী, বলা বাহুল্য তারা যতটা শিক্ষার্থী তার থেকে অনেক বেশি পেশি শক্তির পূজারি। আর এই সূত্র ধরেই এ সময়ে সবচেয়ে বেশি খবরের শিরোনাম হচ্ছে ছাত্রলীগ, যেমনটা এর আগে হতো ছাত্রসমাজ, ছাত্রদল ও শিবির এবং এমনকি কিছু কিছু বামপন্থি ছাত্রসংগঠন। এদের থেকে ক্যাম্পাস, ছেলেদের হল, কিংবা মেয়েদের হল কোথাও সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিরাপদ নয়। মূলত এই প্রবণতা হচ্ছে পাওয়ার প্র্যাকটিস সিনড্রমের অংশ, যাতে তথাকথিত ছাত্রনেতারা সাধারণ ছাত্রদের ওপর বিভিন্ন ধরনের অত্যাচারের খড়্গ নিয়ে হাজির হয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কিছু কিছু ছাত্রনেতার এই আচরণের কারণ কী? বা সেই সুযোগই তারা কীভাবে পায়? বিশ্ববিদ্যালয় এসেই কি তারা এ ধরনের আচরণে অভ্যস্ত হয়েছে? নাকি ইতিমধ্যে হাত পাকিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করে মাত্র? ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এ রকম একটি ঘটনা সম্প্রতি বেশ চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। ছাত্রলীগ ও ছাত্রী হল এই দুয়ের মিশেল বলেই হয়তো কিছুটা আলোচনার খোরাক জোগাচ্ছে। এর সূত্র ধরেই এক ছাত্রী হলের পাঁচ ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই সময় হাইকোর্টের পক্ষ থেকে ছাত্ররাজনীতির নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাগিংয়ের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে।
আমরা জানি, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরাই শুধু রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়। এখানে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী প্রায় সবাই রাজনৈতিক দল এবং বেশিরভাগই ক্ষেত্রেই ক্ষমতাকেন্দ্রিকতার সঙ্গে যুক্ত। অনেক সময় দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থান্বেষীদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে ছাত্ররা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করার সুযোগ পায়। তবে সরকারি দলের সঙ্গে যারা আছেন শুধু তারাই শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করেন না, যারা ক্ষমতায় যেতে চায় তারাও শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে সিদ্ধহস্ত। নিঃসন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করাই শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক ও প্রধানতম কাজ, কিন্তু রাজনীতি সচেতন হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ না।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে, যারা ফুলটাইম রাজনীতিবিদ, পার্টটাইম শিক্ষার্থী এবং তাদের নজর ক্ষমতা ও অর্থ-সম্পদের দিকে, যেটা বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য একদম সহায়ক না। যার নমুনা দেখা যায় বর্তমান সময়ের কিছু কিছু ছাত্রনেতার লাইফস্টাইলে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হলে তারা যেভাবে বিলাসী জীবনযাপন করে, এমনকি এদের অনেকেই রাজনীতির জন্য ব্যক্তিগত গাড়ি পর্যন্ত ব্যবহার করে। ফলে বদনাম হয় পুরো ছাত্ররাজনীতির। নানা ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছাত্ররাজনীতিকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়, যাতে মনে হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব সমস্যার মূলে আছে ছাত্ররাজনীতির। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাজনীতি সচেতন হওয়া তো দূরের কথা, উল্টো সচেতনভাবেই রাজনীতিবিমুখ হতে থাকে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কারা ছাত্রদের অপরাজনীতির দিকে পরিচালিত করছে? তথাকথিত এই ছাত্রনেতাদের মোহটা কোথায়? কেনই বা তাদের একটা অংশ এ ধরনের আগ্রাসী আচরণে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে? কেনই বা তারা সেই কাঁচা বয়সেই অর্থ-বিত্তের মোহে বাঁধা পড়ছে। এ কথা স্বীকার করতে হবে, আজকে থেকে অর্ধশতাব্দী আগের ছাত্ররাজনীতি ও বর্তমান সময়ের ছাত্ররাজনীতি এক হবে না সেটাই স্বাভাবিক।
যে রাজনৈতিক বাস্তবতায় স্বাধীনতার পূর্বকালীন সময়ে বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির বিকাশ হয়েছিল সেই রাজনৈতিক বাস্তবতা যে নেই, সেটাই সত্যি। একদিকে ছাত্ররাজনীতি থেকে নীতি-আদর্শ হারিয়ে গেছে, অন্যদিকে ছাত্রদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের জন্য নেই প্রয়োজনীয় বুদ্ধিভিত্তিক ন্যারেটিভস, যা সময়ের চোখে আধুনিক এবং একই সঙ্গে প্রয়োজনীয়। এই ন্যারিটিভস হতে হবে ইতিবাচক, বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত, ভবিষ্যৎমুখী, প্রগতিবাদী যেমনটা ছিল স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময়কালে এবং একই সঙ্গে প্রযুক্তিকেন্দ্রিক ও দক্ষতানির্ভর। কিন্তু আমাদের ছাত্ররাজনীতি এখনো অতীতকেন্দ্রিক, হয়তো এ থেকে বের হতে পারছে না।
রাজনীতির উদ্দেশ্য হচ্ছে মুক্তি অর্জন, কিন্তু বর্তমান বিশ্বে মুক্তি শুধু রাজনৈতিক মুক্তি অর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এখানে মুক্তি অর্জনের বিষয়গুলো অন্যান্য আর্থ-সামাজিক ও প্রযুক্তিগত স্বাধীনতা অর্জনের বিষয়গুলোর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। যেখানে যে কোনো ধরনের বঞ্চনাকে মোকাবিলা করার পাশাপাশি ছাত্র ও যুব জনগোষ্ঠীর অধিকার, বিশ্ব নাগরিক হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করা ইত্যাদি বিষয় সরাসরি যুক্ত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই ইতিবাচক, ভবিষ্যৎমুখী ও প্রগতিবাদী রাজনীতি না থাকার কারণে এখনকার ছাত্ররাজনীতি সাধারণ জনগণকেও রাজনৈতিকভাবে সচেতন করতে পারছে না, উল্টো বিভিন্ন পর্যায়ের নেতিবাচক ও পশ্চাদমুখী রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে।
তাই এ সময়ে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা, গবেষণা ও ছাত্ররাজনীতি সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে কতটুকু প্রাসঙ্গিক। কতটুকুই বা সময়ের চাহিদা মেটাতে পারছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা দেখতে পাই, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাব্যবস্থা যেমন যুগোপযোগী নয়, একই সঙ্গে ছাত্ররাজনীতিও এই প্রজন্মের সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাহিদা মেটাতে পারছে না, ফলে শিক্ষার্থীরাও এতে আগ্রহী হয়ে উঠছে না। আর এই সামগ্রিক পশ্চাৎপদতার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজের যেমন দায় আছে, একই সঙ্গে দায়িত্ব আছে রাষ্ট্রের, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিগুলোর। তবে সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এ রকম নতুন কোনো রাজনীতির সন্ধান এখনো পাওয়া যাচ্ছে না, কবে আসবে সে ভবিষ্যদ্বাণীও করা যাচ্ছে না; তবে নাই মামার থেকে কানা মামা ভালো সে হিসেবে স্বার্থান্বেষীদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করার এখনো যথেষ্ট সুযোগ আছে।
লেখক: উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
তিতাস বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের এক অনন্য সঙ্গী। আমাদের বহু স্মৃতিময় আখ্যান ও জল-রোমন্থন জড়িয়ে আছে তিতাসের সঙ্গে। তিতাসপাড়ের জেলেজীবন নিয়ে অদ্বৈত মল্লবর্মণ লেখেন ‘তিতাস একটি নদীর নাম’। পরবর্তীতে ঋত্বিক ঘটক নির্মাণ করেন যুগান্তকারী চলচ্চিত্র। তিতাস এক আন্তঃরাষ্ট্রিক নদ। উত্তর-পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড় থেকে জন্ম নিয়ে এই নদ ত্রিপুরায় ককবরক ভাষায় সাইদ্রা ও বাংলায় হাওড়া নামে প্রবাহিত। বাংলাদেশের ছয় ভাগের এক ভাগ হলো হাওর। সাতটি প্রশাসনিক জেলার ভেতর ব্রাহ্মণবাড়িয়াও হাওরাঞ্চল। এখানকার বিশাল অঞ্চলের কৃষিজমির বৈশিষ্ট্য হলো বর্ষাকালে বিস্তীর্ণ অঞ্চল তলিয়ে যাওয়া ও হেমন্তে আবার বিল ছাড়া বিশাল জমিন জেগে ওঠা। এখানকার কৃষিপ্রতিবেশের
কৃষিজমিগুলোর সঙ্গে প্রচুর খালের সংযোগ আছে। আর এসব খাল দিয়েই বর্ষাতে তিতাসে পানি প্রবাহিত হয়ে যায় এবং হেমন্তে খালের পানি কৃষিতে কাজে লাগে।
কিন্তু সবুজ বিপ্লব-পরবর্তী কৃষি উন্নয়ন তিতাস অববাহিকার এই কৃষিপ্রতিবেশ বৈশিষ্ট্যকে গুরুত্ব দেয়নি। বরং নানাভাবে উন্নয়ন অবকাঠামো ও নগরায়ণ সম্প্রসারণের নামে কৃষিজমির শৃঙ্খলা বিনষ্ট করা হয়েছে। বহু নালা, খাল, জলাভূমি ভরাট করা হয়েছে। পানিপ্রবাহের গতি ও ধারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। কৃষি বাস্তুতন্ত্র হয়েছে চুরমার। উন্নয়নের নামে এসব ঘটলেও সামগ্রিকভাবে এটি দেশের জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তাকে বারবার আঘাত করছে এবং প্রাণ-প্রতিবেশের ব্যাকরণকে বিশৃঙ্খল করে দিচ্ছে। বহুদিন ধরে তিতাস অববাহিকার নানা জায়গায় মাটি ভরাট করে বাঁধ দিয়ে প্রাকৃতিক পানিপ্রবাহ ও নিষ্কাশনব্যবস্থাকে বিনষ্ট করে কৃষিজমির ক্ষতি করা হচ্ছে। কৃষিজমি সুরক্ষায় আমরা জোরালো কোনো রাষ্ট্রীয় তৎপরতা দেখিনি। আশা করব, তিতাস অববাহিকার বিশেষ কৃষিপ্রতিবেশ সুরক্ষায় রাষ্ট্র তৎপর হবে। প্রভাবশালীদের বাঁধ বাহাদুরি বা এলোপাতাড়ি উন্নয়নের চাবুক থেকে রক্তাক্ত কৃষিজমির ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার মোগড়া ইউনিয়নের চরনারায়ণপুর মৌজায় প্রায় ৫০০ বিঘা জমিকে জবরদস্তি করে বিপন্ন করে তোলা হয়েছে। গণমাধ্যমসূত্র জানায়, মোগড়া ইউনিয়নের দরুইন গ্রামের মো. তাহের মিয়া ও মো. রাসেল মিয়া বছর পাঁচেক আগে এই বিলে কিছু জমি কেনেন। এরপর তারা একতরফাভাবে খালের পাশে এক বেড়িবাঁধ তৈরি করেন। যার ফলে হাওর থেকে তিতাস নদে পানিপ্রবাহের ধারাটি বন্ধ হয়ে যায়। প্রাকৃতিক পানিপ্রবাহ বন্ধ হওয়ায় বেলুয়া বিলের জমিগুলো বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধ ও হেমন্তে রুক্ষ পানিহীন হয়ে পড়ে। উভয় মৌসুমেই কৃষির উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকদের ভোগান্তি ও দুশ্চিন্তা বাড়ছে। দুই প্রভাবশালীর একতরফা এই বাহাদুরি সরাসরি জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তাকেও বিপদে ফেলছে।
বাঁধ সরিয়ে জমিগুলোকে বিপদমুক্ত করার জন্য ভুক্তভোগী কৃষকরা স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনকে বহুবার জানিয়েছে। কিন্তু কোনো ন্যায়বিচার নেই। যে দেশে প্রতিদিন এক শতাংশ হারে জমি কমছে আর পাল্লা দিয়ে মানুষের উৎপাদন বাড়ছে সেই দেশে খাদ্য উৎপাদন বিনষ্ট করার এমন বাহাদুরি কীসের ইঙ্গিত? প্রধানমন্ত্রী নিজে চাষ করে দেখাচ্ছেন, দেশের প্রতি ইঞ্চি জায়গা ফেলে না রাখার ঘোষণা দিচ্ছেন। কিন্তু বেলুয়া বিলে কেন প্রশ্নহীনভাবে ৫০০ বিঘা কৃষিজমি সংকটে আছে? এই
কৃষিজমি মুক্ত করার দায় ও দায়িত্ব কার? খাদ্য উৎপাদনে কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্ব কার? কৃষি বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় সরকার কিংবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কী করছেন? কেন ৫০০ বিঘা কৃষিজমির সুরক্ষায় দাঁড়াতে পারছেন না? বিশেষ করে মহামারী ও যুদ্ধ সংকটে প্রতিদিন নেতিয়ে পড়া এক মুমূর্ষু দুনিয়ায় যখন কৃষিজ খাদ্য উৎপাদন নানাভাবে রক্তাক্ত, সেখানে কয়েকজন প্রভাবশালীর কারণে দেশের জমি বিনষ্ট হবে তা কেন মেনে নেয়া হচ্ছে?
প্রতিকার না পেয়ে ভুক্তভোগী কৃষকরা গণমাধ্যমে বলছেন, বিষ দেন না হলে জমি থেকে পানি নিষ্কাশন করে দেন। করোনাকালে দেশ দুনিয়া লকডাউন হয়ে থাকলে
কৃষকসমাজ ছিল নির্ঘুম। মহামারী ও যুদ্ধের পাশাপাশি কৃষককে প্রতিদিন সামাল দিতে হয় করপোরেট কৃষিবাজারের নিয়ন্ত্রণ, কৃষিজমি হ্রাস, দুর্যোগ ও জলবায়ু সংকট। এর ওপর যদি আবার জলাবদ্ধ বা পানিহীনতায় বিঘার পর বিঘা জমি বিনষ্ট হয়, সেই ক্ষয়ক্ষতি কীভাবে সামাল দেয় গ্রামীণ কৃষক সমাজ?
বাঁধ দিয়ে কৃষিজমি বিপদাপন্নতার এই প্রসঙ্গটি নতুন নয়। ২০১৯ সালে ‘খালে অবৈধ বাঁধ’ শিরোনামে দৈনিক সমকালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় (১৫/৩/২০১৯)। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের শ্যামনগর খালের মুখে মাটি ভরাট করে বাঁধ দিয়ে প্রায় ৩০০ হেক্টর কৃষিজমি বিনষ্ট করা হয়। জানা যায়, আখাউড়া পৌর শহর লাগোয়া সদর উপজেলার বরিশল ও শ্যামনগর মৌজায় অবস্থিত বুয়ালিয়া বিলের পানি শ্যামনগর খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তিতাস নদে মিশে। কিন্তু শ্যামনগর গ্রামের মো. হুমায়ুন কবির ভুইয়া খাসজমি লিজ নিয়ে খালের মুখে মাটি ভরাট করে বাঁধ দেয়ায় বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা ও শুষ্ক মৌসুমে পানিহীনতা তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশে ত্রিশটি কৃষিপ্রতিবেশ অঞ্চলের ভেতর ‘আখাউড়া সোপান’ একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যময় কৃষিপ্রতিবেশ অঞ্চল। এমনকি এখানে হাওর প্রতিবেশগত বৈশিষ্ট্যও বিদ্যমান। প্রভাবশালীদের বাঁধ-বাহাদুরি বা উন্নয়নের নামে এভাবে একের পর এক কৃষিজমি বিপন্ন হলে তিতাস অববাহিকার এই বিশেষ কৃষিপ্রতিবেশ অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য ও রূপ অচিরেই বদলে যাবে। যার দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত, স্বাস্থ্যগত ও অর্থনৈতিক বিরূপ প্রভাব পড়বে জনপরিসরে।
রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যান বলছে, দেশে প্রতিবছর এক শতাংশ হারে কমছে কৃষিজমি। কিন্তু কৃষিজমি সুরক্ষায় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও তৎপরতা কতখানি? চরনারায়ণপুর মৌজার ৫০০ বিঘা কৃষিজমির নিরাপত্তা কেন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না? এ বিষয়ে নীতি, নথি ও কাঠামো আছে। তাহলে সমস্যা কোথায়? মনোজগতে নাকি রাজনৈতিক অঙ্গীকারে? নাকি দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহিতার অভাব? আমরা এখন কিছু আইন ও নীতি ঘেঁটে দেখব। দেশে একটি প্রস্তাবিত ‘কৃষিজমি সুরক্ষা আইন ২০২১’ আছে। আইনটি উল্লেখ করেছে, ‘বাংলাদেশের যে স্থানে কৃষিজমি রহিয়াছে, তাহা এই আইনের মাধ্যমে সুরক্ষা করিতে হইবে এবং কোনভাবেই তাহার ব্যবহারভিত্তিক শ্রেণি পরিবর্তন করা যাইবে না।’ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চরনারায়ণপুর মৌজার কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন করা হয়েছে, কারণ খালের মুখে মাটি ভরাট করে জমিতে প্রাকৃতিক পানিপ্রবাহ ও নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। এলাকাটির কৃষিজমির শ্রেণির রূপ এবং এই রূপ উন্নয়নের ফলে কীভাবে বদলে যায় বিষয়টি বোঝার জন্য আমরা ‘জাতীয় পানি নীতি’ পাঠ করতে পারি।
জাতীয় পানি নীতি (১৯৯৯)-এর ৪.১৩ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, ‘... হাওর, বাঁওড় ও বিল জাতীয় জলাভূমিগুলো বাংলাদেশের আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যের ধারক এবং এক অনন্য প্রাকৃতিক সম্পদ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত দিক থেকে এগুলোর গুরুত্ব অসীম। হাওর এবং বাঁওড়গুলোতে শুষ্ক মৌসুমেও যথেষ্ট গভীরতায় পানি থাকে, তবে ছোট বিলগুলো সাধারণত চূড়ান্ত পর্যায়ে আর্দ্র ভূমিতে পরিণত হয়। এই বিলগুলো প্লাবনভূমির নিম্নতম অংশ।
এই জলাশয়গুলো আমাদের প্রাকৃতিক মৎস্য-সম্পদের সিংহভাগের উৎস এবং নানা ধরনের জলজ সবজি ও পাখির আবাসস্থল। তা ছাড়াও শীত মৌসুমে উত্তর গোলার্ধ থেকে আগত অতিথি পাখিদের নির্ভরযোগ্য আশ্রয়। হাওর এবং বিলগুলো খালের মাধ্যমে নদীর সঙ্গে সংযুক্ত। অতীতে প্রকৌশলগত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে অনেক বিলকে তাৎক্ষণিক ফসল লাভের জন্য নিষ্কাশিত আবাদী জমিতে পরিণত করা হয়েছে। কিন্তু কিছুদিন পরেই এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রকট আকার ধারণ করে। প্রথমেই মাছ এবং গ্রামীণ জনগণের খাদ্যের উৎস কচু, শাপলা, কলমি জাতীয় জলজ সবহির বিলুপ্তি ঘটে। বর্ষা মৌসুমে প্লাবনভূমির বর্জ্য প্রবাহমান খালের মাধ্যমে বাহিত ও শোধিত হয়ে নিষ্কাশিত হতো। কিন্তু নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় সেই প্রাকৃতিক শোধনক্রিয়া ব্যাহত হয়ে পরিবেশের মারাত্মক সংকট সৃষ্টি করেছে।’ চরনারায়ণপুর মৌজায় এটিই ঘটছে। বর্ষায় কৃষিজমি থেকে পানি সরতে পারছে না এবং শুষ্ক মৌসুমে জমিগুলো পানি পাচ্ছে না। কারণ জমি ও নদীর সঙ্গে সংযোগকারী খাল বন্ধ করে রাখা হয়েছে। আশা করব, রাষ্ট্র ভুক্তভোগী কৃষক ও কৃষিজমির আহাজারি শুনবে। স্থানীয় সরকার ও প্রশাসন খালের বাঁধ মুক্ত করে চরনারায়ণপুরসহ তিতাস অববাহিকার সব কৃষিজমির সুরক্ষা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে।
লেখক: গবেষক ও লেখক
বাংলাদেশে ভিখারিরাও দুর্নীতিগ্রস্ত কথাটা বলেছিলেন হুমায়ুন আজাদ। বিষয়টি অস্বীকারের উপায় নেই। বিশেষ করে, পাবলিক বাস এবং রাস্তায় বিনা পরিশ্রমে অর্থ আয়ের লাভজনক পেশা ভিক্ষাবৃত্তি। শুধু দৃষ্টিহীন, পঙ্গু এখন আর এই পেশায় নেই। অনেক সুস্থ মানুষও ব্যক্তিত্ব এবং কায়িক শ্রমের কথা বেমালুম ভুলে, এমন পথ বেছে নিয়েছে। তারা অভিনয়ের মাধ্যমে আদায় করে মানুষের সহানুভূতি। দিন দিন এসব দক্ষ অভিনেতার সংখ্যা বাড়ছে। এ ব্যাপারে তাদের কোনো অনুভূতিও নেই।
জরুরি কাজে যাচ্ছিলাম মিরপুর-১। গাড়িতে বসে বাদাম খাচ্ছি। কল্যাণপুর বাঙলা কলেজের গেট থেকে একজন তরুণ উঠলেন। পরনে সুন্দর পোশাক। সাদা হাফ শার্ট, কালো প্যান্ট। গলায় টাই বাঁধা। গায়ের রং শ্যামলা। দীর্ঘাঙ্গী, স্বাস্থ্যবান সেই তরুণকে দেখে ভালোই লাগল। চমকে উঠলাম, তার কথা শুনে। তরুণটি গাড়ির মানুষের কাছে ভিক্ষা চাইছিলেন। ঠিক ভিক্ষা না, অর্থ সাহায্য। তিনি ফর্ম ফিলাম করতে পারছেন না। পড়ছেন হিসাববিজ্ঞানে অনার্স। শুদ্ধ উচ্চারণে তিনি বলছেন আমি আর পারছি না। আমার কেউ নেই। ছোটবেলায় মা-বাবাকে হারিয়েছি। এতদূর এসেছি, আপনাদের সহযোগিতা নিয়ে। পড়াশোনা করেছি, কমার্স বিষয়ে। এভাবে এসএসসি, ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে ভর্তি হয়েছি বাঙলা কলেজে। পড়ছি হিসাববিজ্ঞানে। কিন্তু চূড়ান্ত বর্ষে এসে আটকে গেছি। পারছি না, ফর্ম ফিলাপের টাকা জোগাড় করতে। গাড়ির অনেক যাত্রী ছেলেটিকে দেখে আফসোস করলেন। প্রায় প্রত্যেকেই টাকা বের করলেন। খেয়াল করলাম, সর্বনিম্ন নোট ৫০। একজন দিলেন ৫০০ টাকা! এভাবে একটি গাড়ি থেকেই তরুণটি প্রায় ২০০০/২৫০০ টাকা পেলেন। কেন যেন কৌতূহল হলো। ছেলেটিকে কাছে আসতে ইশারা করলাম। বললাম, আপনার এ পর্যন্ত কত টাকা হয়েছে?
গুনি নাই। মনে অয়, ৪-৫ হাজার হইবো!
ফর্ম ফিলাপ করতে কত টাকা লাগবে? একটু থতমত খেয়ে ছেলেটি বলল- হ, প্রায় ১২-১৫ হাজার টাকা লাগব!
আপনার সাবসিডিয়ারি বিষয় কী ছিল?
সম্ভবত ছেলেটি এমন প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি ঢোক গিললেন। মুখ কালো করে বললেন উম, অ্যাঁ...!
বলছিলাম, আপনার সাবসিডিয়ারি বিষয় কী ছিল? পড়েছেন তো অ্যাকাউন্টিং অনার্স, নাকি?
হ! ছেলেটির ভাষা শুনে, সন্দেহ গাঢ় হলো। এবার জোর দিয়ে, একটু উচ্চৈঃস্বরে বললাম আপনি অনার্স ফাইন্যাল ইয়ারে পড়ছেন, সাবসিডিয়ারি বিষয় মনে নেই!
এবার ছেলেটি মুখ ফ্যাকাশে করে, রাগান্বিত চোখে বললেন টাকা দিলে দেবেন, অত কথা বলেন ক্যান?
আশ্চর্য, আপনাকে তো একটি প্রশ্নই বলেছি! এত কথা কোথায় বললাম!
এতক্ষণ খেয়াল করিনি, বাসের অধিকাংশ যাত্রী আমাদের কথোপকথন শুনছিলেন। এবার সবাই গর্জে উঠলেন বললেন, হারামজাদা টাকা ফেরত দে। ফাইজলামি করার জায়গা পাস না? এক যাত্রী প্রায় ছিনিয়ে নিলেন ১০০ টাকা। এভাবে সব যাত্রীই তাদের টাকা ফেরত নিলেন।
এবার ছেলেটি আমার দিকে ক্রুদ্ধ হয়ে তাকালেন। বললেন পাইতাম না! একা পাইয়া লই?
কী করবেন?
দেহা হইলে, একদম...!
মুচকি হাসলাম। বললাম আমার বাসা বাঙলা কলেজের উল্টো পাশে। ফোন নম্বরটা রাখেন। আমি চলে আসব। আমিই দেখা করব। আর আপনার ফোন নম্বরটা দেন?
ছেলেটি কথা না বাড়িয়ে হন হন করে চলে গেলেন। যাওয়ার সময় আমাকে ঠিকমতো দেখে নিলেন!
দুই.
তখন কাজ করি দৈনিক জনকণ্ঠে। সম্ভবত ২০০০ সাল। যাচ্ছিলাম বিটিভিতে। তালিকাভুক্ত সংবাদ পাঠক হিসেবে নিয়মিত নিউজ পড়তে হতো। প্রায় সময়ই ছিল লেট নাইট। রাত ১১.৩০ মিনিটে পড়তে হতো সংবাদ। কিন্তু সেদিন বুলেটিন ছিল বিকাল ৪টায়। ইস্কাটনের জনকণ্ঠ অফিস থেকে আড়াইটার দিকে, টেলিভিশনের উদ্দেশে যাত্রা। নোটিস করতে হতো, আধা ঘণ্টা আগে। এরপর মেকআপ বা পাফ। কিন্তু ৩-৩.১৫ মিনিটের দিকে পৌঁছে যাই রামপুরা। ফলে টেলিভিশন ভবনে ঢোকার আগে, ফুটপাত দিয়ে হাঁটছিলাম। এক জায়গায় দেখলাম বেশ জটলা। এগিয়ে যেতেই অপরিচিত একজন বললেন আমি টেলিভিশনে চাকরি করি। আপনে তো খবর পড়েন। চইলা যান, টিভির ভেতরে। মেকআপ নেন। সামনে যাওয়ার দরকার নাই। ঐটা টাউট, যাইয়েন না! কৌতূহল হলো। ভাবলাম, যাই। দেখি ঘটনা কী? ঘটনা জানার পর কৌতূহল আরও বেড়ে গেল। দাঁড়িয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। প্রায় ২০-২৫ জন মানুষের জটলা। কেউ হাসছে, আবার কারও মুখ গোমড়া। একজনকে বললাম ভাই, ঘটনা কী? তিনি ঠোঁট ভ্যাটকি দিলেন। বললেন আর বইলেন না, হালায় একটা টাউট! হুদাই কানতাছে!
কাঁদে ক্যান?
আরে, তার বলে বউ মরছে! অহন দাফন করার ট্যাহা নাই। ইশারা করে বললেন ঐ যে মরা বউ হুইত্তা রইছে? আসলে ঐডা মরা না। তাও কাপড় দিয়া ঢাইক্কা রাখছে! ভিত্রে জ্যাতা মানুষ! মাইনষেও ট্যাহা দিতাছে। এদিকে সময় হলো টিভি ভবনে ঢোকার। নিউজ পড়া শেষে মুখে মেকআপ নিয়ে আবার সেই লাশের (!) সামনে! দেখি, লোকটা টাকা গুনছে। ভালো টাকা হয়েছে। এবার তিনি আমার দিকে তাকালেন। চোখে জল এনে বললেন
আপনে দাঁড়াইয়া আছেন ক্যান! কিছু দেবেন?
কী দেব?
ট্যাকা!
কেন?
দেখতাছেন না? একটা মরা পইড়া আছে!
মরাটা কি ছেলে না মেয়ে?
মাইয়া। আমার বউ!
কাপড়টা তোলেন। মুখটা একটু দেখব! আপনার টাকা রেখে দেন। দাফনের সমস্ত খরচ আমি দেব। কাপড় তোলেন? এবার লোকটির মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। দ্রুতগতিতে হাত ধরে বললেন ভাই, সত্যি বলতাছি আর করুম না। ভিত্রে বউ আছে, এইডা সত্য। কিন্তু জ্যাতা। কী করুম! কেউ তো কাম দেয় না! এই কারণে দুজনে মিল্লা এই বুদ্ধি বাইর করছি।
আপনার বউ শ্বাস-প্রশ্বাস কীভাবে নিচ্ছেন! কষ্ট হচ্ছে না?
লোকটা দাঁত বের করে, হেসে হেসে বললেন আসলে এইডা আমার বউ না। ডেইলি ভাড়া খাটে। ৫০০ ট্যাহা দেই। বাকিডা আমার। অরা, এইডা পারে। পাক্কা অভিনয় করে। একদম মরা। ক্যামনে যে দম নেয়, প্যাটটাও ফুলে না!
প্রতিদিন কত টাকা হয়?
পাই, ৩-৪ হাজার। কিন্তু সব দিন একই জায়গায় থাহি না। ঘটনাও আলাদা।
এসব কেন করেন?
কইলাম তো? কেউ কাম দেয় না। কী করুম!
রিকশা চালাবেন। সবজি বিক্রি করবেন?
প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে লোকটি এবার যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেন।
মরা (!) কে বললেন ঐ, ওঠ। কেউ নাই। উইঠাই দৌড় দিবি। আর এই নে, তর ৫০০!
কাপড়ের ভেতর থেকে, জলজ্যান্ত একজন মহিলা টাকা হাতে দিলেন দৌড়!
লোকটি আমার দিকে আর তাকালেন না। বিড়বিড় করে, কী যেন বললেন! দেখলাম, একটি খাবার হোটেলে তিনি ঢুকছেন!
লেখক : সাংবাদিক
২০১০ সালের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন বাংলাদেশের সাংবাদিক ও ভাষাসৈনিক কে জি মুস্তাফা। তার পুরো নাম খোন্দকার গোলাম মোস্তফা। তার জন্ম ১৯২৮ সালে সিরাজগঞ্জের কুড়িপাড়ায়। তার বাবা খোন্দকার ওয়াসিউজ্জামান ও মা তাহিয়াতুন্নেসা। তিনি ১৯৪৪ সালে সিরাজগঞ্জের বানোয়ারীলাল বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন এবং প্রথমে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ ও পরে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়েন। ইসলামিয়া কলেজে পড়াশোনার সূত্রে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পরিচিত হন এবং ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। ১৯৫১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। এমএ পাঠকালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে যুক্ত হন এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ইসলামিয়া কলেজে পড়াকালে তিনি পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাকে গ্রহণ করেন এবং কলকাতার দৈনিক আজাদ পত্রিকায় যোগ দেন। পরবর্তীকালে তিনি দৈনিক ইনসাফ, দৈনিক ইত্তেফাক, বাংলাদেশ অবজারভার, দৈনিক পূর্বকোণ ও সংবাদ পত্রিকায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। দৈনিক মুক্তকণ্ঠের সম্পাদক হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। এ ছাড়া সাংবাদিকতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেন। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত লেবানন ও ইরাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দীর্ঘকাল কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যেই বড় ধরনের গলদ রয়েছে। ছোটবেলায়, এমনকি এসএসসি পরীক্ষাতেও রচনা শেখানো হয় অরস রহ ষরভব। শিক্ষক বলেন বলো তো, তোমার জীবনের লক্ষ্য কী? আর ছাত্রছাত্রী বলে স্যার, আমি ডাক্তার হবো। কেউ চায় প্রকৌশলী হতে। আবার কেউ হতে চায় সামরিক বাহিনীর অফিসার। বর্তমানে এর রং পাল্টেছে। ছাত্রছাত্রী স্কুল-কলেজে, শিক্ষকের সামনে যাই বলুক, শিক্ষা শেষে বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আর কিছু চায় না। শুধু চায়, অর্থ উপার্জন করতে। এটাই এখন অধিকাংশের জীবন লক্ষ্য হাউ টু আর্ন মানি! এমন অসৎ চাওয়া আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে তখন, একজন মানুষ যখন দেখেন শিক্ষার চেয়ে অর্থের মূল্য অনেক বেশি। ঠিক এমন অবস্থাতেই সক্রিয় হয়ে উঠে প্রতারক চক্র। বেকারত্বের জাঁতাকলে পিষ্ট শিক্ষিত তরুণ-তরুণী দিশেহারা হয়ে সরকারি চাকরির সন্ধান করেন। অন্ধের মতো বিশ্বাস করে প্রতারকের হাতে টাকা দেন। কারণ, তারা জীবনের নিরাপত্তা চান। যে কারণে বেসরকারির চেয়ে দিন দিন সরকারি চাকরির চাহিদা বেড়ে চলেছে। ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা।
গতকাল রবিবার দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায় প্রকাশিত ‘চাকরি সহজ হয় না সহজে’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে সরকারি হোক বা বেসরকারি, চাকরির বাজারে ঘোর মন্দা না হলেও মন্দা চলছে। চাকরির বাজার যত সংকুচিত হচ্ছে, ততই কদর বাড়ছে বাঁকা পথের খেলোয়াড়দের। নিয়োগের খেলা বুঝে নিয়ে তারা নিজেদের পকেট ভরছে দুই হাতে। অথচ কয়েক বছর আগেও তারা শুধু সাধারণ নয়, অতি সাধারণ ছিল। কেউ ছিল ছোট ব্যবসায়ী, কেউবা রোজগারহীন। নিয়োগ দুর্নীতির বদৌলতে তারাই এখন কোটি টাকার মালিক। এ ছা-পোষা, সাধারণ মানুষগুলো মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে বিলাসবহুল জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। তাদের মধ্যে কেউ দুর্নীতি করছেন, কেউ আবার দুর্নীতিবাজের হয়ে মধ্যস্থতাকারীর কাজ করে কোটি টাকা কামাচ্ছেন। দিন দিন স্ফীত হচ্ছে তাদের ব্যাংক স্থিতি আর অন্যান্য সম্পত্তি। আর যারা দুর্নীতিবাজ, তাদের বুদ্ধি কোনো হিসাবেই কুলায় না। তারা দেশের ব্যাংকে রেখে স্বস্তিও পায় না। পাচার করে দেয় বিদেশে, তাদের সেকেন্ড হোমে। ২০০৯ সালে দায়িত্ব নিয়েই সরকারপ্রধান চাকরির বাজারের দুর্দশা ঘোচানোর নির্দেশনা দেন সচিব সভায়। সভায় বলা হয়, সংবিধানে একাধিক পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) গঠনের সুযোগ আছে। আলাদা পিএসসি করে শূন্যপদ পূরণে গতি আনার নির্দেশনা পেলেন সচিবরা। কমিটির পর উপকমিটি হয় আর সময়ক্ষেপণ হয়। অনেক ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে একাধিক পিএসসি করার রাস্তা কৌশলে আটকে দেওয়া হয়।
সংবাদে আরও বলা হয়েছে, সরকারের একের পর এক উদ্যোগ আটকে দিলেও চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়া, চাকরি দিতে ব্যর্থ হয়ে টাকা ফেরত না দিয়ে পরিবারগুলোকে পথে বসিয়ে দেওয়া বা বেকারের আর্তনাদ বন্ধ করতে পারলেন না কর্তারা। চাকরি নিয়ে মানুষের দুর্ভোগ আগের মতোই রয়েছে। যত দিন যাচ্ছে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার টাকার অঙ্কও বাড়ছে। মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমেই নিয়োগ দুর্নীতির টাকা পৌঁছে যাচ্ছে প্রভাবশালীদের কাছে। জানা যাচ্ছে, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশের সরকারি ব্যয় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় অনেক কম। ভারতের এ ব্যয় জিডিপির তুলনায় ২৯ শতাংশ। অর্থাৎ আমাদের দেশে সরকারি ব্যয় দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম। সরকারি সেবাগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে গেলে মানবসম্পদে আরও ব্যয় বাড়াতে হবে।’
বেসরকারি যেমন তেমন, সরকারি চাকরির পথ ইচ্ছা করেই যে সহজ করা হচ্ছে না, তা পরিষ্কার। কারণ, অবৈধ অর্থে যারা ফুলে-ফেঁপে, সমাজে নিজেকে যে পরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, সেখান থেকে সহজে তিনি সরবেন না। আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়া কখনোই দুর্নীতি বন্ধ হবে না শুধু মুখের কথায়। কোনো সমাজে মেধার মূল্যায়ন না হলে, অগ্রসর হওয়া অসম্ভব। সেখানে কাঠামোগত উন্নয়ন যতই হোক, প্রকৃত শিক্ষা নিয়ে মানবিক মূল্যবোধের স্তর উন্নত না করতে পারলে সার্বিক উন্নয়ন অধরাই থেকে যাবে। স্বাভাবিকভাবেই দিন দিন তৈরি হবে প্রতারণার আধুনিক কৌশল।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
কুড়িগ্রাম সদরের বেলগাছা ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে সিমিত চন্দ্র (১২) নামের এক স্কুলছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বুধবার (৭ জুন) ভোরে ওই ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের বেলগাছা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত এক কিশোরকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে।
পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া সিমিত চন্দ্র বেলগাছা গ্রামের মানিক চন্দ্র ড্রাইভারের ছেলে। অভিযুক্ত কিশোর (১৬) একই গ্রামের প্রদীপ চন্দ্রের (দর্জি) ছেলে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম আর সাঈদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের গীতা সংঘ অনুষ্ঠান দেখতে যায় সিমিত ও তার বড় ভাই। সিমিতকে অনুষ্ঠানস্থলে রেখে বাড়িতে ফেরে তার বড় ভাই। পরে অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে সিমিতের সঙ্গে অভিযুক্ত কিশোরের কথা কাটাকাটি হয়। এ ঘটনায় সিমিতকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ওই কিশোর। পরে তাদের একটি পরিত্যক্ত বাড়ির পেছনের গর্তে সিমিতের মরদেহ পুতে রাখে। অনুষ্ঠান শেষে সিমিত বাড়িতে না ফিরলে স্বজনরা তার খোঁজে বের হয়। অভিযুক্ত কিশোরকে সিমিতের বিষয়ে জিজ্ঞাস করলে সে অসংলগ্ন আচরণ করে। পরে তার বাবা প্রদীপ চন্দ্র তাদের পরিত্যক্ত বাড়ির পেছনের একটি গর্তে সিমিতের মরদেহ দেখিয়ে দেন। বুধবার ভোরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
আটক কিশোরের স্বীকারোক্তিতে সদর থানার ওসি এম আর সাঈদ বলেন, অভিযুক্ত কিশোরের সঙ্গে একটি মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মেয়েটির অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে। এ নিয়ে সিমিতসহ অনেকেই ওই কিশোরকে খোঁচা দিত। গত রাতে সিমিত ওই কিশোরের সাথে এ নিয়ে আবারও খোঁচা দিলে সে সিমিতের গলা চেপে ধরে। এত শ্বাসরোধ হয়ে শিশুটি মারা যায়।
তিনি আরও বলেন, অভিযুক্ত কিশোর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনা স্বীকার করেছে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হচ্ছে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে খরচ বাড়ছে। কোনো যাত্রী আকাশপথে ভ্রমণ করলেই তাকে দিতে হবে ২০০ টাকার কর। একই সঙ্গে বিদেশগামী বিমানযাত্রীদের কর ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ (২০২৩-২৪ অর্থবছর) বাজেট উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এদিকে পর্যটন খাত ও বিমানবহর সম্প্রসারণ ও বিমানবন্দর উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।
পর্যটন খাত : অর্থমন্ত্রীর তার
বক্তৃতায় বলেন, ডলার সাশ্রয়ের জন্য অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ হ্রাস করা, কৃচ্ছ্রতার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং নতুন রাজস্ব আয়ের খাত তৈরি করতে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ কর ৬৭ শতাংশ বাড়িয়ে ২ হাজার, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যাওয়ার ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার এবং অন্যান্য দেশে ৫০ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার টাকা ভ্রমণ কর দিতে হবে।
পর্যটন খাত নিয়ে ব্যাপক পরিকল্পনা : অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় আরও বলেছেন, পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক মানের আবাসন ও বিনোদন সুবিধা নিয়ে কক্সবাজার জেলায় সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক এবং সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কভিড-১৯ মহামারীর সময় দেশের পর্যটনশিল্প মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে এ শিল্পকে সহায়তা করার জন্য সরকার ১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে। বাংলাদেশে পর্যটন সম্ভাবনাময় এলাকাগুলোতে উন্নয়নে সরকারি অর্থায়নে ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে একটি পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পর্যটনের উন্নয়ন ও বিকাশের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে ৩৬টি জেলার পর্যটন ব্র্যান্ডিং অনুসারে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার পর্যটন এলাকার ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত আকর্ষণীয় পর্যটন স্থানগুলো সংরক্ষণে এবং পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান বিষয়ে ডকুমেন্টারি ও টেলিভিশন কমার্শিয়াল প্রস্তুত করা হচ্ছে।
বিমানবহর সম্প্রসারণ ও বিমানবন্দর উন্নয়ন : অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, সরকার দেশে আন্তর্জাতিক মানের বিমান পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তুলতে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। আকাশপথে যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনায় চলতি বছরে মালদ্বীপ ও কানাডার টরন্টোতে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালু করা হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ ২০২৩ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বর্তমানে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই কাজ চলছে। কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার লক্ষ্যে রানওয়ে সম্প্রসারণ ও নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করে সেখানে একটি আঞ্চলিক হাব গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রকল্প প্রণয়ন করা হচ্ছে। তাছাড়া দেশের অন্যান্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অবকাঠামো, রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে, হ্যাঙ্গার ও আমদানি-রপ্তানি পণ্য সংরক্ষণের শেডগুলো সংস্কার ও উন্নয়নসাধনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।