
২০১০ সালের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন বাংলাদেশের সাংবাদিক ও ভাষাসৈনিক কে জি মুস্তাফা। তার পুরো নাম খোন্দকার গোলাম মোস্তফা। তার জন্ম ১৯২৮ সালে সিরাজগঞ্জের কুড়িপাড়ায়। তার বাবা খোন্দকার ওয়াসিউজ্জামান ও মা তাহিয়াতুন্নেসা। তিনি ১৯৪৪ সালে সিরাজগঞ্জের বানোয়ারীলাল বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন এবং প্রথমে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ ও পরে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়েন। ইসলামিয়া কলেজে পড়াশোনার সূত্রে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে পরিচিত হন এবং ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। ১৯৫১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। এমএ পাঠকালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে যুক্ত হন এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ইসলামিয়া কলেজে পড়াকালে তিনি পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাকে গ্রহণ করেন এবং কলকাতার দৈনিক আজাদ পত্রিকায় যোগ দেন। পরবর্তীকালে তিনি দৈনিক ইনসাফ, দৈনিক ইত্তেফাক, বাংলাদেশ অবজারভার, দৈনিক পূর্বকোণ ও সংবাদ পত্রিকায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। দৈনিক মুক্তকণ্ঠের সম্পাদক হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। এ ছাড়া সাংবাদিকতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেন। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত লেবানন ও ইরাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দীর্ঘকাল কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
তিতাস বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের এক অনন্য সঙ্গী। আমাদের বহু স্মৃতিময় আখ্যান ও জল-রোমন্থন জড়িয়ে আছে তিতাসের সঙ্গে। তিতাসপাড়ের জেলেজীবন নিয়ে অদ্বৈত মল্লবর্মণ লেখেন ‘তিতাস একটি নদীর নাম’। পরবর্তীতে ঋত্বিক ঘটক নির্মাণ করেন যুগান্তকারী চলচ্চিত্র। তিতাস এক আন্তঃরাষ্ট্রিক নদ। উত্তর-পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড় থেকে জন্ম নিয়ে এই নদ ত্রিপুরায় ককবরক ভাষায় সাইদ্রা ও বাংলায় হাওড়া নামে প্রবাহিত। বাংলাদেশের ছয় ভাগের এক ভাগ হলো হাওর। সাতটি প্রশাসনিক জেলার ভেতর ব্রাহ্মণবাড়িয়াও হাওরাঞ্চল। এখানকার বিশাল অঞ্চলের কৃষিজমির বৈশিষ্ট্য হলো বর্ষাকালে বিস্তীর্ণ অঞ্চল তলিয়ে যাওয়া ও হেমন্তে আবার বিল ছাড়া বিশাল জমিন জেগে ওঠা। এখানকার কৃষিপ্রতিবেশের
কৃষিজমিগুলোর সঙ্গে প্রচুর খালের সংযোগ আছে। আর এসব খাল দিয়েই বর্ষাতে তিতাসে পানি প্রবাহিত হয়ে যায় এবং হেমন্তে খালের পানি কৃষিতে কাজে লাগে।
কিন্তু সবুজ বিপ্লব-পরবর্তী কৃষি উন্নয়ন তিতাস অববাহিকার এই কৃষিপ্রতিবেশ বৈশিষ্ট্যকে গুরুত্ব দেয়নি। বরং নানাভাবে উন্নয়ন অবকাঠামো ও নগরায়ণ সম্প্রসারণের নামে কৃষিজমির শৃঙ্খলা বিনষ্ট করা হয়েছে। বহু নালা, খাল, জলাভূমি ভরাট করা হয়েছে। পানিপ্রবাহের গতি ও ধারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। কৃষি বাস্তুতন্ত্র হয়েছে চুরমার। উন্নয়নের নামে এসব ঘটলেও সামগ্রিকভাবে এটি দেশের জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তাকে বারবার আঘাত করছে এবং প্রাণ-প্রতিবেশের ব্যাকরণকে বিশৃঙ্খল করে দিচ্ছে। বহুদিন ধরে তিতাস অববাহিকার নানা জায়গায় মাটি ভরাট করে বাঁধ দিয়ে প্রাকৃতিক পানিপ্রবাহ ও নিষ্কাশনব্যবস্থাকে বিনষ্ট করে কৃষিজমির ক্ষতি করা হচ্ছে। কৃষিজমি সুরক্ষায় আমরা জোরালো কোনো রাষ্ট্রীয় তৎপরতা দেখিনি। আশা করব, তিতাস অববাহিকার বিশেষ কৃষিপ্রতিবেশ সুরক্ষায় রাষ্ট্র তৎপর হবে। প্রভাবশালীদের বাঁধ বাহাদুরি বা এলোপাতাড়ি উন্নয়নের চাবুক থেকে রক্তাক্ত কৃষিজমির ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার মোগড়া ইউনিয়নের চরনারায়ণপুর মৌজায় প্রায় ৫০০ বিঘা জমিকে জবরদস্তি করে বিপন্ন করে তোলা হয়েছে। গণমাধ্যমসূত্র জানায়, মোগড়া ইউনিয়নের দরুইন গ্রামের মো. তাহের মিয়া ও মো. রাসেল মিয়া বছর পাঁচেক আগে এই বিলে কিছু জমি কেনেন। এরপর তারা একতরফাভাবে খালের পাশে এক বেড়িবাঁধ তৈরি করেন। যার ফলে হাওর থেকে তিতাস নদে পানিপ্রবাহের ধারাটি বন্ধ হয়ে যায়। প্রাকৃতিক পানিপ্রবাহ বন্ধ হওয়ায় বেলুয়া বিলের জমিগুলো বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধ ও হেমন্তে রুক্ষ পানিহীন হয়ে পড়ে। উভয় মৌসুমেই কৃষির উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকদের ভোগান্তি ও দুশ্চিন্তা বাড়ছে। দুই প্রভাবশালীর একতরফা এই বাহাদুরি সরাসরি জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তাকেও বিপদে ফেলছে।
বাঁধ সরিয়ে জমিগুলোকে বিপদমুক্ত করার জন্য ভুক্তভোগী কৃষকরা স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনকে বহুবার জানিয়েছে। কিন্তু কোনো ন্যায়বিচার নেই। যে দেশে প্রতিদিন এক শতাংশ হারে জমি কমছে আর পাল্লা দিয়ে মানুষের উৎপাদন বাড়ছে সেই দেশে খাদ্য উৎপাদন বিনষ্ট করার এমন বাহাদুরি কীসের ইঙ্গিত? প্রধানমন্ত্রী নিজে চাষ করে দেখাচ্ছেন, দেশের প্রতি ইঞ্চি জায়গা ফেলে না রাখার ঘোষণা দিচ্ছেন। কিন্তু বেলুয়া বিলে কেন প্রশ্নহীনভাবে ৫০০ বিঘা কৃষিজমি সংকটে আছে? এই
কৃষিজমি মুক্ত করার দায় ও দায়িত্ব কার? খাদ্য উৎপাদনে কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্ব কার? কৃষি বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় সরকার কিংবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কী করছেন? কেন ৫০০ বিঘা কৃষিজমির সুরক্ষায় দাঁড়াতে পারছেন না? বিশেষ করে মহামারী ও যুদ্ধ সংকটে প্রতিদিন নেতিয়ে পড়া এক মুমূর্ষু দুনিয়ায় যখন কৃষিজ খাদ্য উৎপাদন নানাভাবে রক্তাক্ত, সেখানে কয়েকজন প্রভাবশালীর কারণে দেশের জমি বিনষ্ট হবে তা কেন মেনে নেয়া হচ্ছে?
প্রতিকার না পেয়ে ভুক্তভোগী কৃষকরা গণমাধ্যমে বলছেন, বিষ দেন না হলে জমি থেকে পানি নিষ্কাশন করে দেন। করোনাকালে দেশ দুনিয়া লকডাউন হয়ে থাকলে
কৃষকসমাজ ছিল নির্ঘুম। মহামারী ও যুদ্ধের পাশাপাশি কৃষককে প্রতিদিন সামাল দিতে হয় করপোরেট কৃষিবাজারের নিয়ন্ত্রণ, কৃষিজমি হ্রাস, দুর্যোগ ও জলবায়ু সংকট। এর ওপর যদি আবার জলাবদ্ধ বা পানিহীনতায় বিঘার পর বিঘা জমি বিনষ্ট হয়, সেই ক্ষয়ক্ষতি কীভাবে সামাল দেয় গ্রামীণ কৃষক সমাজ?
বাঁধ দিয়ে কৃষিজমি বিপদাপন্নতার এই প্রসঙ্গটি নতুন নয়। ২০১৯ সালে ‘খালে অবৈধ বাঁধ’ শিরোনামে দৈনিক সমকালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় (১৫/৩/২০১৯)। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের শ্যামনগর খালের মুখে মাটি ভরাট করে বাঁধ দিয়ে প্রায় ৩০০ হেক্টর কৃষিজমি বিনষ্ট করা হয়। জানা যায়, আখাউড়া পৌর শহর লাগোয়া সদর উপজেলার বরিশল ও শ্যামনগর মৌজায় অবস্থিত বুয়ালিয়া বিলের পানি শ্যামনগর খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তিতাস নদে মিশে। কিন্তু শ্যামনগর গ্রামের মো. হুমায়ুন কবির ভুইয়া খাসজমি লিজ নিয়ে খালের মুখে মাটি ভরাট করে বাঁধ দেয়ায় বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা ও শুষ্ক মৌসুমে পানিহীনতা তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশে ত্রিশটি কৃষিপ্রতিবেশ অঞ্চলের ভেতর ‘আখাউড়া সোপান’ একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যময় কৃষিপ্রতিবেশ অঞ্চল। এমনকি এখানে হাওর প্রতিবেশগত বৈশিষ্ট্যও বিদ্যমান। প্রভাবশালীদের বাঁধ-বাহাদুরি বা উন্নয়নের নামে এভাবে একের পর এক কৃষিজমি বিপন্ন হলে তিতাস অববাহিকার এই বিশেষ কৃষিপ্রতিবেশ অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য ও রূপ অচিরেই বদলে যাবে। যার দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত, স্বাস্থ্যগত ও অর্থনৈতিক বিরূপ প্রভাব পড়বে জনপরিসরে।
রাষ্ট্রীয় পরিসংখ্যান বলছে, দেশে প্রতিবছর এক শতাংশ হারে কমছে কৃষিজমি। কিন্তু কৃষিজমি সুরক্ষায় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও তৎপরতা কতখানি? চরনারায়ণপুর মৌজার ৫০০ বিঘা কৃষিজমির নিরাপত্তা কেন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না? এ বিষয়ে নীতি, নথি ও কাঠামো আছে। তাহলে সমস্যা কোথায়? মনোজগতে নাকি রাজনৈতিক অঙ্গীকারে? নাকি দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহিতার অভাব? আমরা এখন কিছু আইন ও নীতি ঘেঁটে দেখব। দেশে একটি প্রস্তাবিত ‘কৃষিজমি সুরক্ষা আইন ২০২১’ আছে। আইনটি উল্লেখ করেছে, ‘বাংলাদেশের যে স্থানে কৃষিজমি রহিয়াছে, তাহা এই আইনের মাধ্যমে সুরক্ষা করিতে হইবে এবং কোনভাবেই তাহার ব্যবহারভিত্তিক শ্রেণি পরিবর্তন করা যাইবে না।’ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চরনারায়ণপুর মৌজার কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন করা হয়েছে, কারণ খালের মুখে মাটি ভরাট করে জমিতে প্রাকৃতিক পানিপ্রবাহ ও নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। এলাকাটির কৃষিজমির শ্রেণির রূপ এবং এই রূপ উন্নয়নের ফলে কীভাবে বদলে যায় বিষয়টি বোঝার জন্য আমরা ‘জাতীয় পানি নীতি’ পাঠ করতে পারি।
জাতীয় পানি নীতি (১৯৯৯)-এর ৪.১৩ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, ‘... হাওর, বাঁওড় ও বিল জাতীয় জলাভূমিগুলো বাংলাদেশের আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যের ধারক এবং এক অনন্য প্রাকৃতিক সম্পদ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত দিক থেকে এগুলোর গুরুত্ব অসীম। হাওর এবং বাঁওড়গুলোতে শুষ্ক মৌসুমেও যথেষ্ট গভীরতায় পানি থাকে, তবে ছোট বিলগুলো সাধারণত চূড়ান্ত পর্যায়ে আর্দ্র ভূমিতে পরিণত হয়। এই বিলগুলো প্লাবনভূমির নিম্নতম অংশ।
এই জলাশয়গুলো আমাদের প্রাকৃতিক মৎস্য-সম্পদের সিংহভাগের উৎস এবং নানা ধরনের জলজ সবজি ও পাখির আবাসস্থল। তা ছাড়াও শীত মৌসুমে উত্তর গোলার্ধ থেকে আগত অতিথি পাখিদের নির্ভরযোগ্য আশ্রয়। হাওর এবং বিলগুলো খালের মাধ্যমে নদীর সঙ্গে সংযুক্ত। অতীতে প্রকৌশলগত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে অনেক বিলকে তাৎক্ষণিক ফসল লাভের জন্য নিষ্কাশিত আবাদী জমিতে পরিণত করা হয়েছে। কিন্তু কিছুদিন পরেই এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রকট আকার ধারণ করে। প্রথমেই মাছ এবং গ্রামীণ জনগণের খাদ্যের উৎস কচু, শাপলা, কলমি জাতীয় জলজ সবহির বিলুপ্তি ঘটে। বর্ষা মৌসুমে প্লাবনভূমির বর্জ্য প্রবাহমান খালের মাধ্যমে বাহিত ও শোধিত হয়ে নিষ্কাশিত হতো। কিন্তু নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় সেই প্রাকৃতিক শোধনক্রিয়া ব্যাহত হয়ে পরিবেশের মারাত্মক সংকট সৃষ্টি করেছে।’ চরনারায়ণপুর মৌজায় এটিই ঘটছে। বর্ষায় কৃষিজমি থেকে পানি সরতে পারছে না এবং শুষ্ক মৌসুমে জমিগুলো পানি পাচ্ছে না। কারণ জমি ও নদীর সঙ্গে সংযোগকারী খাল বন্ধ করে রাখা হয়েছে। আশা করব, রাষ্ট্র ভুক্তভোগী কৃষক ও কৃষিজমির আহাজারি শুনবে। স্থানীয় সরকার ও প্রশাসন খালের বাঁধ মুক্ত করে চরনারায়ণপুরসহ তিতাস অববাহিকার সব কৃষিজমির সুরক্ষা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে।
লেখক: গবেষক ও লেখক
বাংলাদেশে ভিখারিরাও দুর্নীতিগ্রস্ত কথাটা বলেছিলেন হুমায়ুন আজাদ। বিষয়টি অস্বীকারের উপায় নেই। বিশেষ করে, পাবলিক বাস এবং রাস্তায় বিনা পরিশ্রমে অর্থ আয়ের লাভজনক পেশা ভিক্ষাবৃত্তি। শুধু দৃষ্টিহীন, পঙ্গু এখন আর এই পেশায় নেই। অনেক সুস্থ মানুষও ব্যক্তিত্ব এবং কায়িক শ্রমের কথা বেমালুম ভুলে, এমন পথ বেছে নিয়েছে। তারা অভিনয়ের মাধ্যমে আদায় করে মানুষের সহানুভূতি। দিন দিন এসব দক্ষ অভিনেতার সংখ্যা বাড়ছে। এ ব্যাপারে তাদের কোনো অনুভূতিও নেই।
জরুরি কাজে যাচ্ছিলাম মিরপুর-১। গাড়িতে বসে বাদাম খাচ্ছি। কল্যাণপুর বাঙলা কলেজের গেট থেকে একজন তরুণ উঠলেন। পরনে সুন্দর পোশাক। সাদা হাফ শার্ট, কালো প্যান্ট। গলায় টাই বাঁধা। গায়ের রং শ্যামলা। দীর্ঘাঙ্গী, স্বাস্থ্যবান সেই তরুণকে দেখে ভালোই লাগল। চমকে উঠলাম, তার কথা শুনে। তরুণটি গাড়ির মানুষের কাছে ভিক্ষা চাইছিলেন। ঠিক ভিক্ষা না, অর্থ সাহায্য। তিনি ফর্ম ফিলাম করতে পারছেন না। পড়ছেন হিসাববিজ্ঞানে অনার্স। শুদ্ধ উচ্চারণে তিনি বলছেন আমি আর পারছি না। আমার কেউ নেই। ছোটবেলায় মা-বাবাকে হারিয়েছি। এতদূর এসেছি, আপনাদের সহযোগিতা নিয়ে। পড়াশোনা করেছি, কমার্স বিষয়ে। এভাবে এসএসসি, ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে ভর্তি হয়েছি বাঙলা কলেজে। পড়ছি হিসাববিজ্ঞানে। কিন্তু চূড়ান্ত বর্ষে এসে আটকে গেছি। পারছি না, ফর্ম ফিলাপের টাকা জোগাড় করতে। গাড়ির অনেক যাত্রী ছেলেটিকে দেখে আফসোস করলেন। প্রায় প্রত্যেকেই টাকা বের করলেন। খেয়াল করলাম, সর্বনিম্ন নোট ৫০। একজন দিলেন ৫০০ টাকা! এভাবে একটি গাড়ি থেকেই তরুণটি প্রায় ২০০০/২৫০০ টাকা পেলেন। কেন যেন কৌতূহল হলো। ছেলেটিকে কাছে আসতে ইশারা করলাম। বললাম, আপনার এ পর্যন্ত কত টাকা হয়েছে?
গুনি নাই। মনে অয়, ৪-৫ হাজার হইবো!
ফর্ম ফিলাপ করতে কত টাকা লাগবে? একটু থতমত খেয়ে ছেলেটি বলল- হ, প্রায় ১২-১৫ হাজার টাকা লাগব!
আপনার সাবসিডিয়ারি বিষয় কী ছিল?
সম্ভবত ছেলেটি এমন প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি ঢোক গিললেন। মুখ কালো করে বললেন উম, অ্যাঁ...!
বলছিলাম, আপনার সাবসিডিয়ারি বিষয় কী ছিল? পড়েছেন তো অ্যাকাউন্টিং অনার্স, নাকি?
হ! ছেলেটির ভাষা শুনে, সন্দেহ গাঢ় হলো। এবার জোর দিয়ে, একটু উচ্চৈঃস্বরে বললাম আপনি অনার্স ফাইন্যাল ইয়ারে পড়ছেন, সাবসিডিয়ারি বিষয় মনে নেই!
এবার ছেলেটি মুখ ফ্যাকাশে করে, রাগান্বিত চোখে বললেন টাকা দিলে দেবেন, অত কথা বলেন ক্যান?
আশ্চর্য, আপনাকে তো একটি প্রশ্নই বলেছি! এত কথা কোথায় বললাম!
এতক্ষণ খেয়াল করিনি, বাসের অধিকাংশ যাত্রী আমাদের কথোপকথন শুনছিলেন। এবার সবাই গর্জে উঠলেন বললেন, হারামজাদা টাকা ফেরত দে। ফাইজলামি করার জায়গা পাস না? এক যাত্রী প্রায় ছিনিয়ে নিলেন ১০০ টাকা। এভাবে সব যাত্রীই তাদের টাকা ফেরত নিলেন।
এবার ছেলেটি আমার দিকে ক্রুদ্ধ হয়ে তাকালেন। বললেন পাইতাম না! একা পাইয়া লই?
কী করবেন?
দেহা হইলে, একদম...!
মুচকি হাসলাম। বললাম আমার বাসা বাঙলা কলেজের উল্টো পাশে। ফোন নম্বরটা রাখেন। আমি চলে আসব। আমিই দেখা করব। আর আপনার ফোন নম্বরটা দেন?
ছেলেটি কথা না বাড়িয়ে হন হন করে চলে গেলেন। যাওয়ার সময় আমাকে ঠিকমতো দেখে নিলেন!
দুই.
তখন কাজ করি দৈনিক জনকণ্ঠে। সম্ভবত ২০০০ সাল। যাচ্ছিলাম বিটিভিতে। তালিকাভুক্ত সংবাদ পাঠক হিসেবে নিয়মিত নিউজ পড়তে হতো। প্রায় সময়ই ছিল লেট নাইট। রাত ১১.৩০ মিনিটে পড়তে হতো সংবাদ। কিন্তু সেদিন বুলেটিন ছিল বিকাল ৪টায়। ইস্কাটনের জনকণ্ঠ অফিস থেকে আড়াইটার দিকে, টেলিভিশনের উদ্দেশে যাত্রা। নোটিস করতে হতো, আধা ঘণ্টা আগে। এরপর মেকআপ বা পাফ। কিন্তু ৩-৩.১৫ মিনিটের দিকে পৌঁছে যাই রামপুরা। ফলে টেলিভিশন ভবনে ঢোকার আগে, ফুটপাত দিয়ে হাঁটছিলাম। এক জায়গায় দেখলাম বেশ জটলা। এগিয়ে যেতেই অপরিচিত একজন বললেন আমি টেলিভিশনে চাকরি করি। আপনে তো খবর পড়েন। চইলা যান, টিভির ভেতরে। মেকআপ নেন। সামনে যাওয়ার দরকার নাই। ঐটা টাউট, যাইয়েন না! কৌতূহল হলো। ভাবলাম, যাই। দেখি ঘটনা কী? ঘটনা জানার পর কৌতূহল আরও বেড়ে গেল। দাঁড়িয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। প্রায় ২০-২৫ জন মানুষের জটলা। কেউ হাসছে, আবার কারও মুখ গোমড়া। একজনকে বললাম ভাই, ঘটনা কী? তিনি ঠোঁট ভ্যাটকি দিলেন। বললেন আর বইলেন না, হালায় একটা টাউট! হুদাই কানতাছে!
কাঁদে ক্যান?
আরে, তার বলে বউ মরছে! অহন দাফন করার ট্যাহা নাই। ইশারা করে বললেন ঐ যে মরা বউ হুইত্তা রইছে? আসলে ঐডা মরা না। তাও কাপড় দিয়া ঢাইক্কা রাখছে! ভিত্রে জ্যাতা মানুষ! মাইনষেও ট্যাহা দিতাছে। এদিকে সময় হলো টিভি ভবনে ঢোকার। নিউজ পড়া শেষে মুখে মেকআপ নিয়ে আবার সেই লাশের (!) সামনে! দেখি, লোকটা টাকা গুনছে। ভালো টাকা হয়েছে। এবার তিনি আমার দিকে তাকালেন। চোখে জল এনে বললেন
আপনে দাঁড়াইয়া আছেন ক্যান! কিছু দেবেন?
কী দেব?
ট্যাকা!
কেন?
দেখতাছেন না? একটা মরা পইড়া আছে!
মরাটা কি ছেলে না মেয়ে?
মাইয়া। আমার বউ!
কাপড়টা তোলেন। মুখটা একটু দেখব! আপনার টাকা রেখে দেন। দাফনের সমস্ত খরচ আমি দেব। কাপড় তোলেন? এবার লোকটির মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। দ্রুতগতিতে হাত ধরে বললেন ভাই, সত্যি বলতাছি আর করুম না। ভিত্রে বউ আছে, এইডা সত্য। কিন্তু জ্যাতা। কী করুম! কেউ তো কাম দেয় না! এই কারণে দুজনে মিল্লা এই বুদ্ধি বাইর করছি।
আপনার বউ শ্বাস-প্রশ্বাস কীভাবে নিচ্ছেন! কষ্ট হচ্ছে না?
লোকটা দাঁত বের করে, হেসে হেসে বললেন আসলে এইডা আমার বউ না। ডেইলি ভাড়া খাটে। ৫০০ ট্যাহা দেই। বাকিডা আমার। অরা, এইডা পারে। পাক্কা অভিনয় করে। একদম মরা। ক্যামনে যে দম নেয়, প্যাটটাও ফুলে না!
প্রতিদিন কত টাকা হয়?
পাই, ৩-৪ হাজার। কিন্তু সব দিন একই জায়গায় থাহি না। ঘটনাও আলাদা।
এসব কেন করেন?
কইলাম তো? কেউ কাম দেয় না। কী করুম!
রিকশা চালাবেন। সবজি বিক্রি করবেন?
প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে লোকটি এবার যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেন।
মরা (!) কে বললেন ঐ, ওঠ। কেউ নাই। উইঠাই দৌড় দিবি। আর এই নে, তর ৫০০!
কাপড়ের ভেতর থেকে, জলজ্যান্ত একজন মহিলা টাকা হাতে দিলেন দৌড়!
লোকটি আমার দিকে আর তাকালেন না। বিড়বিড় করে, কী যেন বললেন! দেখলাম, একটি খাবার হোটেলে তিনি ঢুকছেন!
লেখক : সাংবাদিক
বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির সমৃদ্ধিশালী ইতিহাস এখন যেন অতীত। এ দেশের মুক্তিসংগ্রামে ছাত্ররাজনীতির ভূমিকা ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান ও স্বাধীনতা সংগ্রাম, এমনকি নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনে ছাত্ররাজনীতির ঐতিহাসিক ভূমিকা চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। ছাত্রদের পাশাপাশি বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের সব ধাপে গণমানুষের অংশগ্রহণ এ দেশের মানুষের সংগ্রামকে সাফল্যমণ্ডিত করেছে। সাধারণ জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ ও ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমেই ধাপে ধাপে মুক্তি অর্জিত হয়েছে ও হচ্ছে। আর গণমানুষকে রাজনীতি সচেতন ও রাজনীতিতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ছাত্রসমাজ ও ছাত্ররাজনীতির ভূমিকা সেই ঐতিহাসিককাল থেকেই ছিল অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ।
সেই ছাত্ররাজনীতির লক্ষ্য ছিল পশ্চাৎপদতা ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির আদর্শ, সমতা, সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ছাত্ররাজনীতির সেই ধারা যেন অমাবস্যার চাঁদে পরিণত হয়েছে। গত কয়েক দশকের বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির প্রধানতম যে ধারা, সেই ধারায় ক্ষমতাকেন্দ্রিকতার ধ্বজাবাহী হওয়া ছাড়া এখানে কোনো নতুনত্ব ও সৃজনশীলতার লেশমাত্র যেন নেই।
এই অবস্থায় ছাত্ররাজনীতির মানে মাসল পাওয়ার তৈরির মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা বা ক্ষমতাসীনদের সরিয়ে বিরোধী পক্ষের ক্ষমতার স্বাদ পাওয়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া অথবা জনতুষ্টিবাদিতার অনুসারী হয়ে মৌলবাদিতা প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হওয়া। এতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আদর্শের অস্তিত্ব থাকলেও এর সঙ্গে বঞ্চনা ও অধিকারহীনতাকে মোকাবিলার কোনো সম্পর্ক নেই। আর এভাবে ছাত্ররাজনীতি আজ নানাভাবে কলুষিত, অন্তত আমরা পত্রপত্রিকায় যে ধরনের খবর দেখতে পাই। বেশিদিন আগের কথা না, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির মূল বিষয় ছিল বিবদমান দলগুলোর মধ্যে হল দখল ও পাল্টাদখল। এখন আর দখল আর পাল্টাদখলের কিছু নেই, সবই ক্ষমতাসীনদের দখলে।
অনেক বছর ধরেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এক ধরনের ভয়ের সংস্কৃতি বিরাজ করছে, যেখানে দুর্বৃত্তদের মদদপুষ্ট কিছু শিক্ষার্থী, বলা বাহুল্য তারা যতটা শিক্ষার্থী তার থেকে অনেক বেশি পেশি শক্তির পূজারি। আর এই সূত্র ধরেই এ সময়ে সবচেয়ে বেশি খবরের শিরোনাম হচ্ছে ছাত্রলীগ, যেমনটা এর আগে হতো ছাত্রসমাজ, ছাত্রদল ও শিবির এবং এমনকি কিছু কিছু বামপন্থি ছাত্রসংগঠন। এদের থেকে ক্যাম্পাস, ছেলেদের হল, কিংবা মেয়েদের হল কোথাও সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিরাপদ নয়। মূলত এই প্রবণতা হচ্ছে পাওয়ার প্র্যাকটিস সিনড্রমের অংশ, যাতে তথাকথিত ছাত্রনেতারা সাধারণ ছাত্রদের ওপর বিভিন্ন ধরনের অত্যাচারের খড়্গ নিয়ে হাজির হয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কিছু কিছু ছাত্রনেতার এই আচরণের কারণ কী? বা সেই সুযোগই তারা কীভাবে পায়? বিশ্ববিদ্যালয় এসেই কি তারা এ ধরনের আচরণে অভ্যস্ত হয়েছে? নাকি ইতিমধ্যে হাত পাকিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করে মাত্র? ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এ রকম একটি ঘটনা সম্প্রতি বেশ চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। ছাত্রলীগ ও ছাত্রী হল এই দুয়ের মিশেল বলেই হয়তো কিছুটা আলোচনার খোরাক জোগাচ্ছে। এর সূত্র ধরেই এক ছাত্রী হলের পাঁচ ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই সময় হাইকোর্টের পক্ষ থেকে ছাত্ররাজনীতির নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাগিংয়ের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে।
আমরা জানি, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরাই শুধু রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়। এখানে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী প্রায় সবাই রাজনৈতিক দল এবং বেশিরভাগই ক্ষেত্রেই ক্ষমতাকেন্দ্রিকতার সঙ্গে যুক্ত। অনেক সময় দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থান্বেষীদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে ছাত্ররা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করার সুযোগ পায়। তবে সরকারি দলের সঙ্গে যারা আছেন শুধু তারাই শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করেন না, যারা ক্ষমতায় যেতে চায় তারাও শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে সিদ্ধহস্ত। নিঃসন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করাই শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক ও প্রধানতম কাজ, কিন্তু রাজনীতি সচেতন হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ না।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে, যারা ফুলটাইম রাজনীতিবিদ, পার্টটাইম শিক্ষার্থী এবং তাদের নজর ক্ষমতা ও অর্থ-সম্পদের দিকে, যেটা বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য একদম সহায়ক না। যার নমুনা দেখা যায় বর্তমান সময়ের কিছু কিছু ছাত্রনেতার লাইফস্টাইলে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হলে তারা যেভাবে বিলাসী জীবনযাপন করে, এমনকি এদের অনেকেই রাজনীতির জন্য ব্যক্তিগত গাড়ি পর্যন্ত ব্যবহার করে। ফলে বদনাম হয় পুরো ছাত্ররাজনীতির। নানা ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছাত্ররাজনীতিকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়, যাতে মনে হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব সমস্যার মূলে আছে ছাত্ররাজনীতির। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাজনীতি সচেতন হওয়া তো দূরের কথা, উল্টো সচেতনভাবেই রাজনীতিবিমুখ হতে থাকে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কারা ছাত্রদের অপরাজনীতির দিকে পরিচালিত করছে? তথাকথিত এই ছাত্রনেতাদের মোহটা কোথায়? কেনই বা তাদের একটা অংশ এ ধরনের আগ্রাসী আচরণে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে? কেনই বা তারা সেই কাঁচা বয়সেই অর্থ-বিত্তের মোহে বাঁধা পড়ছে। এ কথা স্বীকার করতে হবে, আজকে থেকে অর্ধশতাব্দী আগের ছাত্ররাজনীতি ও বর্তমান সময়ের ছাত্ররাজনীতি এক হবে না সেটাই স্বাভাবিক।
যে রাজনৈতিক বাস্তবতায় স্বাধীনতার পূর্বকালীন সময়ে বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির বিকাশ হয়েছিল সেই রাজনৈতিক বাস্তবতা যে নেই, সেটাই সত্যি। একদিকে ছাত্ররাজনীতি থেকে নীতি-আদর্শ হারিয়ে গেছে, অন্যদিকে ছাত্রদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের জন্য নেই প্রয়োজনীয় বুদ্ধিভিত্তিক ন্যারেটিভস, যা সময়ের চোখে আধুনিক এবং একই সঙ্গে প্রয়োজনীয়। এই ন্যারিটিভস হতে হবে ইতিবাচক, বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত, ভবিষ্যৎমুখী, প্রগতিবাদী যেমনটা ছিল স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময়কালে এবং একই সঙ্গে প্রযুক্তিকেন্দ্রিক ও দক্ষতানির্ভর। কিন্তু আমাদের ছাত্ররাজনীতি এখনো অতীতকেন্দ্রিক, হয়তো এ থেকে বের হতে পারছে না।
রাজনীতির উদ্দেশ্য হচ্ছে মুক্তি অর্জন, কিন্তু বর্তমান বিশ্বে মুক্তি শুধু রাজনৈতিক মুক্তি অর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এখানে মুক্তি অর্জনের বিষয়গুলো অন্যান্য আর্থ-সামাজিক ও প্রযুক্তিগত স্বাধীনতা অর্জনের বিষয়গুলোর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। যেখানে যে কোনো ধরনের বঞ্চনাকে মোকাবিলা করার পাশাপাশি ছাত্র ও যুব জনগোষ্ঠীর অধিকার, বিশ্ব নাগরিক হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করা ইত্যাদি বিষয় সরাসরি যুক্ত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই ইতিবাচক, ভবিষ্যৎমুখী ও প্রগতিবাদী রাজনীতি না থাকার কারণে এখনকার ছাত্ররাজনীতি সাধারণ জনগণকেও রাজনৈতিকভাবে সচেতন করতে পারছে না, উল্টো বিভিন্ন পর্যায়ের নেতিবাচক ও পশ্চাদমুখী রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে।
তাই এ সময়ে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা, গবেষণা ও ছাত্ররাজনীতি সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে কতটুকু প্রাসঙ্গিক। কতটুকুই বা সময়ের চাহিদা মেটাতে পারছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা দেখতে পাই, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাব্যবস্থা যেমন যুগোপযোগী নয়, একই সঙ্গে ছাত্ররাজনীতিও এই প্রজন্মের সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাহিদা মেটাতে পারছে না, ফলে শিক্ষার্থীরাও এতে আগ্রহী হয়ে উঠছে না। আর এই সামগ্রিক পশ্চাৎপদতার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজের যেমন দায় আছে, একই সঙ্গে দায়িত্ব আছে রাষ্ট্রের, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিগুলোর। তবে সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এ রকম নতুন কোনো রাজনীতির সন্ধান এখনো পাওয়া যাচ্ছে না, কবে আসবে সে ভবিষ্যদ্বাণীও করা যাচ্ছে না; তবে নাই মামার থেকে কানা মামা ভালো সে হিসেবে স্বার্থান্বেষীদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করার এখনো যথেষ্ট সুযোগ আছে।
লেখক: উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যেই বড় ধরনের গলদ রয়েছে। ছোটবেলায়, এমনকি এসএসসি পরীক্ষাতেও রচনা শেখানো হয় অরস রহ ষরভব। শিক্ষক বলেন বলো তো, তোমার জীবনের লক্ষ্য কী? আর ছাত্রছাত্রী বলে স্যার, আমি ডাক্তার হবো। কেউ চায় প্রকৌশলী হতে। আবার কেউ হতে চায় সামরিক বাহিনীর অফিসার। বর্তমানে এর রং পাল্টেছে। ছাত্রছাত্রী স্কুল-কলেজে, শিক্ষকের সামনে যাই বলুক, শিক্ষা শেষে বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আর কিছু চায় না। শুধু চায়, অর্থ উপার্জন করতে। এটাই এখন অধিকাংশের জীবন লক্ষ্য হাউ টু আর্ন মানি! এমন অসৎ চাওয়া আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে তখন, একজন মানুষ যখন দেখেন শিক্ষার চেয়ে অর্থের মূল্য অনেক বেশি। ঠিক এমন অবস্থাতেই সক্রিয় হয়ে উঠে প্রতারক চক্র। বেকারত্বের জাঁতাকলে পিষ্ট শিক্ষিত তরুণ-তরুণী দিশেহারা হয়ে সরকারি চাকরির সন্ধান করেন। অন্ধের মতো বিশ্বাস করে প্রতারকের হাতে টাকা দেন। কারণ, তারা জীবনের নিরাপত্তা চান। যে কারণে বেসরকারির চেয়ে দিন দিন সরকারি চাকরির চাহিদা বেড়ে চলেছে। ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা।
গতকাল রবিবার দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায় প্রকাশিত ‘চাকরি সহজ হয় না সহজে’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে সরকারি হোক বা বেসরকারি, চাকরির বাজারে ঘোর মন্দা না হলেও মন্দা চলছে। চাকরির বাজার যত সংকুচিত হচ্ছে, ততই কদর বাড়ছে বাঁকা পথের খেলোয়াড়দের। নিয়োগের খেলা বুঝে নিয়ে তারা নিজেদের পকেট ভরছে দুই হাতে। অথচ কয়েক বছর আগেও তারা শুধু সাধারণ নয়, অতি সাধারণ ছিল। কেউ ছিল ছোট ব্যবসায়ী, কেউবা রোজগারহীন। নিয়োগ দুর্নীতির বদৌলতে তারাই এখন কোটি টাকার মালিক। এ ছা-পোষা, সাধারণ মানুষগুলো মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে বিলাসবহুল জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। তাদের মধ্যে কেউ দুর্নীতি করছেন, কেউ আবার দুর্নীতিবাজের হয়ে মধ্যস্থতাকারীর কাজ করে কোটি টাকা কামাচ্ছেন। দিন দিন স্ফীত হচ্ছে তাদের ব্যাংক স্থিতি আর অন্যান্য সম্পত্তি। আর যারা দুর্নীতিবাজ, তাদের বুদ্ধি কোনো হিসাবেই কুলায় না। তারা দেশের ব্যাংকে রেখে স্বস্তিও পায় না। পাচার করে দেয় বিদেশে, তাদের সেকেন্ড হোমে। ২০০৯ সালে দায়িত্ব নিয়েই সরকারপ্রধান চাকরির বাজারের দুর্দশা ঘোচানোর নির্দেশনা দেন সচিব সভায়। সভায় বলা হয়, সংবিধানে একাধিক পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) গঠনের সুযোগ আছে। আলাদা পিএসসি করে শূন্যপদ পূরণে গতি আনার নির্দেশনা পেলেন সচিবরা। কমিটির পর উপকমিটি হয় আর সময়ক্ষেপণ হয়। অনেক ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে একাধিক পিএসসি করার রাস্তা কৌশলে আটকে দেওয়া হয়।
সংবাদে আরও বলা হয়েছে, সরকারের একের পর এক উদ্যোগ আটকে দিলেও চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়া, চাকরি দিতে ব্যর্থ হয়ে টাকা ফেরত না দিয়ে পরিবারগুলোকে পথে বসিয়ে দেওয়া বা বেকারের আর্তনাদ বন্ধ করতে পারলেন না কর্তারা। চাকরি নিয়ে মানুষের দুর্ভোগ আগের মতোই রয়েছে। যত দিন যাচ্ছে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার টাকার অঙ্কও বাড়ছে। মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমেই নিয়োগ দুর্নীতির টাকা পৌঁছে যাচ্ছে প্রভাবশালীদের কাছে। জানা যাচ্ছে, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশের সরকারি ব্যয় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় অনেক কম। ভারতের এ ব্যয় জিডিপির তুলনায় ২৯ শতাংশ। অর্থাৎ আমাদের দেশে সরকারি ব্যয় দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম। সরকারি সেবাগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে গেলে মানবসম্পদে আরও ব্যয় বাড়াতে হবে।’
বেসরকারি যেমন তেমন, সরকারি চাকরির পথ ইচ্ছা করেই যে সহজ করা হচ্ছে না, তা পরিষ্কার। কারণ, অবৈধ অর্থে যারা ফুলে-ফেঁপে, সমাজে নিজেকে যে পরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, সেখান থেকে সহজে তিনি সরবেন না। আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়া কখনোই দুর্নীতি বন্ধ হবে না শুধু মুখের কথায়। কোনো সমাজে মেধার মূল্যায়ন না হলে, অগ্রসর হওয়া অসম্ভব। সেখানে কাঠামোগত উন্নয়ন যতই হোক, প্রকৃত শিক্ষা নিয়ে মানবিক মূল্যবোধের স্তর উন্নত না করতে পারলে সার্বিক উন্নয়ন অধরাই থেকে যাবে। স্বাভাবিকভাবেই দিন দিন তৈরি হবে প্রতারণার আধুনিক কৌশল।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
অপারেশন ছাড়াই সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় আব্দুল মোতালেব হোসেন (৩৫) নামের এক মানসিক রোগীর পেট থেকে ১৫টি কলম বের করেছেন চিকিৎসক।
এ কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। তাদের এই সাফল্যে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে নেট দুনিয়ায়।
এ বিষয়ে আব্দুল মোতালেবের মা লাইলী খাতুন বলেন, তার ছেলে মোতালেব খুব ভাল ছাত্র ছিল। ২টি লেটার মার্ক নিয়ে এসএসসি পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এরপর খারাপ সঙ্গদোষে সে আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর সময় কুড়িয়ে পাওয়া কলমগুলি খাদ্য মনে করে খেয়ে ফেলে। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। গত এক বছর ধরে তার শরীরে জ্বর ও পেটে ব্যথা শুরু হয়। অনেক চিকিৎসার পরও তা ভালো হচ্ছিল না। অবশেষে গত ১৬ মে তাকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। এখানে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার অসুখের কারণ ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসকরা তার পেটের ভিতর থেকে বিনা অপারেশনে কলমগুলো বের করে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মোতালেব হোসেন প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও পেটে কি সমস্যা সেটা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। ফলে রোগীটিকে আমার কাছে রেফার্ড করেন। এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে তার পেটের ভেতর ১৫টি কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই। এটা কীভাবে সম্ভব। পরে এন্ডোস্কপির মাধ্যমেই অপারেশন ছাড়াই আমরা কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নেই। তিনি আরও বলেন, কাজটি আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। কলমগুলো বের করতে আমাদের প্রথমে মাথায় চিন্তা ছিল যেন, কলমগুলোর কারণে কোনোভাবেই শ্বাসনালিতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের একটা চিন্তাও মাথায় ছিল। অতঃপর প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা কলমগুলো বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এন্ডোস্কপি করা ব্যক্তি মানসিক অসুস্থ হওয়ায় তার কলম খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এভাবে খেতে খেতে সে অনেক কলম খেয়ে ফেলে। কলমগুলো তার পেটের মধ্যে জমা হয়েছিল। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তার পেটের ভিতর ১৫টি কলম থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এবং অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেটের ভেতর থেকে একে একে ১৫টি আস্ত কলম বের করে আনি। বর্তমানে রোগীটি সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ আছেন।
তিনি আরও বলেন, এন্ডোস্কপির মাধ্যমে মানুষের পেট থেকে কলম বের করার মতো ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তাও আবার একটি-দু‘টি নয় ১৫টি কলম। এর আগে ঢাকা মেডিকেলে এক ব্যক্তির পেট থেকে এন্ডোসকপির মাধ্যমে একটি মোবাইল বের করেছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও এন্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষ ডাক্তার দ্বারা অপারেশন ছাড়াই শুধু এন্ডোস্কপির মাধ্যমে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে ১৫টি কলম বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি। শুধু এটাই নয়, আমরা বিনা অপারেশনে পেটের পাথর, কিডনিতে পাথর থেকে শুরু করে অনেক কিছুই অপারেশন ছাড়াই সেগুলো অপসারণের কাজ করে যাচ্ছি।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।