
এবার গ্রীষ্মকালের সূচনাতেই বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকা-ে দেশের মানুষ আতঙ্কিত হতে শুরু করেছে। বিস্ফোরণের সংবাদে মানুষ এখন এতই ভীত হয়ে গেছে যে, যেকোনো জায়গাতেই তারা একটা বিস্ফোরণ আঁচ করছে। এই আতঙ্ক অবশ্য একদিক থেকে ভালোই। যদি তার প্রতিকার করার জন্য মানুষ ভাবতে শুরু করে। বহু দিন ধরে জরাজীর্ণ ভবনে এখানে মানুষের বাস। বিল্ডিং পরিদর্শক নেই, সিটি করপোরেশনের কোনো দায় নেই। বিস্ফোরক বা নানা ধরনের দাহ্যপদার্থের জন্য নেই কোনো রাষ্ট্রের খবরদারি। এক অনিরাপদ অবস্থায় মানুষ থাকতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমন অনেক নবনির্মিত ভবনে গিয়েছি যেখানে কোনো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই। কোথাও হয়তো শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা আছে কিন্তু সূর্যালোক বা বাতাস ঢোকার কোনো ব্যবস্থা নেই।
পুরান ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায়, কংক্রিটের বা শতাব্দী প্রাচীন সুরকি ছাদের নিচে বাঁশের ঠেকা দিয়ে রাখা হয়েছে। সিঁড়িগুলো এতই সরু যে, কোনো দুর্ঘটনায় মানুষ নিচেও নামতে পারবে না। সিঁড়িতেই একজন আরেকজনের ঠেলাঠেলিতে ওখানেই একটা সমাধি হয়ে যেতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায়, বাড়িটির দখল রাখতে গিয়ে যেকোনোভাবে জীবনবাজি রেখে এ ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। কিন্তু সেখানেও সিটি করপোরেশনের ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। সরকারের খাজনাও দিতে হচ্ছে। তারপর আছে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইনের প্রাচীনব্যবস্থা। এ ব্যবস্থার মধ্য থেকে এমন একটি অভ্যাস রয়ে গেছে যে, মনে হতে থাকে এটাই সর্বশ্রেষ্ঠ বাঁচার উপায়। শুধু ঢাকায় নয় জেলা বা উপজেলা শহরে একই অবস্থা। কোথাও কেউ পরিকল্পনায় ধার ধারে না। কোথাও নগর-পরিকল্পনার লোকটি নেই। এ যেন একটা মেঠোপথ, তার দুধারে ইচ্ছামতো বাড়িঘর স্থাপনা গড়ে উঠছে। গ্রামের ধানের জমিতে ইচ্ছামতো বাড়িঘর উঠিয়ে দিগন্ত ঢেকে দিচ্ছে, তাতেও কোথাও কোনো আপত্তি বা নিষেধ নেই।
স্থানীয় সরকার বলে একটা ব্যবস্থা অনেক দিন ধরে চলে আসছে। সেখানে একসময় দলীয় পরিচয়ে নির্বাচন হতো না। এখন সেখানে দলীয় পরিচয় এসে গেছে। দলের নমিনেশন প্রয়োজন। বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে সেই নমিনেশন পেতে হয়। উন্নয়ন কর্মকান্ডে তাই বিপুল উৎসাহ তাদের। তারপর নির্বাচনের সময় ভোটারদের কোথাও কোথাও প্রয়োজন। তাই ভোট উন্নয়ন কর্মকা-কেও নিয়ন্ত্রণ করে। সব জায়গার মতোই দুর্নীতিই এখানে প্রধান বিষয়। লাখো কোটি টাকার নমিনেশনের টাকা তুলতে গিয়ে আর কী উপায়? কিন্তু তাতে কী লাভ হলো দেশের? প্রকারান্তরে দুর্নীতিকে ব্যাপকতা দিয়েই প্রাচীন এবং নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা।
একদা আমরা প্রবীণদের দেখেছি, ইউনিয়ন কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট হতে। কেউ কেউ আজীবন প্রেসিডেন্ট থাকতেন। সারাজীবনই তারা দেশের সেবা করতেন। পৌরসভার সদস্য এবং চেয়ারম্যানদের দুয়ার মানুষের জন্য খোলা থাকত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও কিছু কিছু জায়গায় জনহিতকর কাজে তাদের পাওয়া যেত। কিন্তু আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্রের পথ ধরে এ ব্যবস্থার যে অবক্ষয় শুরু হলো তা বহু বছর পর্যন্ত গণপ্রতিধিনিদের আনুগত্য, শুধু সরকারের প্রতিই রইল। ১৯৭৫ সালের পর সামরিক শাসনের আমলে জনগণের প্রতি জবাবদিহি একেবারেই নিঃশেষ হতে চলল। এ অবস্থায় একচেটিয়া রাজনৈতিক কর্তৃত্বে আর গণমুখী ব্যবস্থাটি থাকল না। নাগরিকদের কাছ থেকে প্রচুর ট্যাক্স আদায়, সরকারের বার্ষিক অনুমোদিত অর্থ পেয়েও জনকল্যাণের বিষয়টি আর গুরুত্বপূর্ণ থাকছে না। নাগরিকদের সুস্বাস্থ্যের তদারকি করার প্রয়োজনটিও গণপ্রতিনিধিদের কর্মপরিধির বিষয় নয়।
শহরগুলো বিশেষ করে ঢাকা শহরের দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিশাল বিশাল জনপদ গড়ে উঠেছে। অধিকাংশ স্থানে রাজউক বা অন্যান্য সংস্থা কোনো ধরনের অগ্রপশ্চাৎ চিন্তা না করেই দালান নির্মাণের অনুমোদন দিয়ে দিচ্ছে। ধরা যাক, পান্থপথ, এই রাজপথে কতগুলো হাসপাতাল, বিপণি, সরকারি-বেসরকারি অফিসের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে? যদি একটু চিন্তা করা যায়- প্রতিদিন কতগুলো গাড়ি, কত মানুষজন এই পথ দিয়ে যাতায়াত করবে, কোথায় তাদের গাড়ির পার্কিং, কত ধরনের গাড়ি চলাচল করবে তার একটা মোটা হিসাবও যদি ভাবা যেত, তাহলে কোনো বিবেচনাতেই এসব অনুমোদন পাওয়ার যোগ্যতা রাখত না। কিন্তু দুর্নীতির সহজ পথে অর্থের বা ক্ষমতার প্রভাবে এসব অনুমোদন পেয়ে গেছে।
নগরের প্রধান বয়স্ক সিটি করপোরেশনের কর্তৃপক্ষও বিষয়গুলো নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন বোধ করেনি। জনকল্যাণের মহত্তম পথই হচ্ছে স্বাধীনতা। এখানেই যুগে যুগে দেশে দেশে মানুষ স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছে। নিজেদের মতো করে একেবারেই স্থানিক বিবেচনায় স্বদেশকে গড়ে তোলার সংগ্রামটাই তো স্বাধীনতার সংগ্রাম। আমাদের দেশেও লাখ লাখ মানুষ স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছে, সংগ্রাম করেছে। কি দুঃসাহসকে স্বীকার করে লাখো কোটি মানুষ কত ত্যাগ স্বীকার করল! কিন্তু আমরা স্বাধীনতাকে, মুক্তিযুদ্ধকে সংহত করতে শিখলাম না। একসময় সেনাবাহিনী মনে করল, তারাই দেশের সর্বোচ্চ মঙ্গল করবে। সে এক অসম্ভব কল্পনা হয়ে দাঁড়াল। রাজনৈতিক দল ক্ষমতার লড়াই করছে কিন্তু সংসদটাকেও হাজির করতে পারেনি। জনপদকে নিরাপদ করার যে কাজটুকু নির্বিঘেœ করা যেত, তাতেও কাউকে মনোযোগী হতে দেখা গেল না।
দেশে অবকাঠামোগত একটা উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু সেই অবকাঠামোকে ব্যবহার করার কোনো সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় কত তাজা প্রাণ বলি হয়ে যাচ্ছে, তার খবর আমরা জানি! সড়ক পরিবহনে আমরা কোনো দায়িত্বশীলতা দেখতে পাই না। যাত্রীসাধারণ এক চরম অসহায় অবস্থায় যানবাহন ব্যবহার করে থাকেন। সেখানে যে নেতৃত্ব আছে, সে নেতৃত্বও দায়িত্বহীন। তারা বিনাপরীক্ষায় চালকদের গাড়ি চালানোর লাইসেন্স দিতে বলে। কোনো কঠোর আইন করতে গেলে ধর্মঘটের হুমকি দেয়। ভাড়া বাড়ানো হয় ইচ্ছামতো। সেখানেও এক বিশাল দানবীয় সংগঠিত শক্তির তৎপরতা লক্ষ করা যায়। রাজনৈতিক দলের সব কর্মকা- ক্ষমতায় থাকার এবং ক্ষমতায় যাওয়াকে কেন্দ্র করে। নাগরিকদের অন্য কোনো সমস্যা নিরসনে কোনো উদ্যোগ নেই।
’৭৫ থেকে ৯০ পর্যন্ত একটা দীর্ঘ সময় গেছে শুধু সেনাবাহিনীর মধ্যেই ক্ষমতার লড়াই নিয়ে। সে সময় মানুষ কিন্তু ক্ষমতার কেন্দ্রকে পরিবর্তন করার জন্য লড়াই করেছিল। ’৫২ বছর পর মার্চ মাসে দাঁড়িয়ে যদি আমাদের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের দিকে তাকাই তাহলে একটা ঝলমলে শপিংমলের মতো বাংলাদেশকে দেখতে পাই, যেখানে শিক্ষা-সংস্কৃতি উৎসারিত মূল্যবোধ হারিয়ে বসে আছি। তার বদলে পদে পদে দুর্নীতিগ্রস্ত একটা দেশ দেখতে পাই। হাজার বছর ধরে এই ভূখ-ের মানুষ যে সমাজটা নির্মাণ করেছিল তা ভেঙেচুরে অদ্ভুত একটা দেশ গড়ার চেষ্টা চলছে।
একদা বঙ্গবন্ধু উচ্চারণ করেছিলেন বাংলাদেশ একটি সাংস্কৃতিক রাষ্ট্র অর্থাৎ সংস্কৃতিই নির্দেশ করবে রাষ্ট্রের কানুন। অতীতের সবকিছুই যে ভালো ছিল তা বলা যাবে না, বিশেষ করে দারিদ্র্য। কিন্তু সেই দারিদ্র্যবিমোচনের জন্য আমরা জাতীয় কোনো পথ খুঁজে পাইনি, আমাদের দেশের শ্রমিকরা আয়ের উৎস হিসেবে খুঁজে নিয়েছে এক আদিম ব্যবস্থা। মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমিতে কিশোর শ্রমিকরা উঠের দৌড়ের সহিসের কাজ খুঁজে নিয়েছে। এ করেই পেটেভাতে, প্রবল অনিশ্চয়তায় চলছে সেই কাজ। বিদেশে কায়িক শ্রমের বিনিময়ে আসা বৈদেশিক মুদ্রায় আমাদের রিজার্ভ গড়ে ওঠে, সেই সঙ্গে তৈরি পোশাকশিল্পে নির্মম শ্রম শোষণ তো আছেই।
রাষ্ট্রটা তুলে দেওয়া হয়েছে দায়িত্বহীন ব্যবসায়ীদের হাতে, যারা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য এক লাফে বাড়িয়ে দেয়। রাষ্ট্রের কোনো নিয়ন্ত্রণ তারা মানে না। বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধ তাদের এ সুযোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
স্বাধীনতার পর অর্ধশতাব্দী পার হয়ে গেছে। সময়টা খুব কম নয়। অনেক সময়ের আমরা অপচয় করে ফেলেছি। এর মধ্যে ভালো দৃষ্টান্ত যে নেই তা নয়। কিন্তু মূল্যবোধহীন উন্নয়ন আমাদের রাষ্ট্রটাকে আরও অমানবিক করে তুলতে পারে তার কথা কি আমরা ভাবছি?
১৯৭১ সালের মার্চ মাসের উত্তাল দিনগুলোর স্বপ্নের মধ্যে, কোন বাংলাদেশ অবস্থান করছিল?
লেখক: নাট্যকার, অভিনেতা ও কলামিস্ট
নির্বাচন যত এগোচ্ছে খুচরা দলগুলোর কদর-সমাদর তত বাড়ছে। বরাবর সব নির্বাচনে কম-বেশি এমনটি হয়। তবে এবার কিঞ্চিৎ রকমফের। নাম নামসর্বস্ব হলেও, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন না থাকলেও তাদের কাছে নিতে বেশ দাওয়াই ছড়ানো হচ্ছে। আর দাওয়াইতে এগিয়ে ক্ষমতাসীনরা। বিএনপি যেখানে জোট ভেঙে দৃশ্যত ছোটদের দূরে সরিয়ে অনেকটা একলা হাঁটছে, সেখানে সরকার মিতালি বাড়াচ্ছে। সেটাও আবার ডান বাঁকে। হেফাজতে ইসলামের মতো বিশাল একটি শক্তি হাতে থাকার পরও দক্ষিণপন্থি-ধর্মাশ্রয়ী ইসলামি দলগুলোর দিকে মোড় নেয়া আওয়ামী লীগের বাম মিত্রদের জন্য কষ্টের।
আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালের নির্বাচনে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসে মন্ত্রিসভায় মহাজোট ও ১৪ দল শরিকদের জায়গা না দিলেও হাত ছাড়া করেনি। কিছু সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বস মানিয়ে রাখছে। সরকারের পকেটে ঢুকে পড়া বামদের অভিমান করার জায়গাও নেই। মাঝেমধ্যে সরাসরি তাদের খোঁজ নেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। নিয়মিত ভালো-মন্দ দেখার বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্তও আছেন কয়েকজন। ভোটের অঙ্ক নয়, সুশীল সমাজ ও শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনকে হাতে রাখতে বামধারার দলগুলোকে কাজে লাগে। আর ভোটের মাঠে ফ্যাক্টর ডানরা। সামাজিক ও ধর্মীয় ময়দানে তাদের অবস্থান বেশ কড়কড়া। তাদের প্রতি ধর্মাশ্রয়ী সাধারণ মানুষের এক ধরনের আগ্রহ রয়েছে। সরকার তাদের এ শক্তিটি আয়ত্তে নিতে চায়। তবে চরমোনাইর পীরের ইসলামী আন্দোলনসহ দক্ষিণপন্থি কয়েকটি দলকে নিমিষে বাগে আনা যায় না। মসজিদ, মাদ্রাসা ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের বেশ গাঁথুনি রয়েছে। কিছু মুসলিম রাষ্ট্রের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ আছে তাদের। চাইলেই তাদের সরকারপন্থি করে নেয়া অসম্ভব। তাই তারা যেন বিএনপির দিকে একেবারে হেলে না যায়, তা নিশ্চিত করতে চায় সরকার।
এ লক্ষ্যে রয়েছে বিশেষ এজেন্ডা। পরিকল্পনা মতো সরকার কোনোটির ওপর চাপ বাড়াচ্ছে, কোনোটিকে লায় দেওয়ার প্যাকেজ নেওয়া হয়েছে। ইসলামি কিছু দলকে দিয়ে একটি জোট বা ফ্রন্ট করে দেওয়ার সরকারি আয়োজনও রয়েছে। ইসিতে নিবন্ধিত ৪০টি দলের মধ্যে ধর্মভিত্তিক ইসলামি দল ১০টি। এর মধ্যে ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও খেলাফত মজলিসসহ কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দল ৬টি। তারা নৈতিকভাবে জামায়াতবিরোধী। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কয়েক নেতা তাদের অভিভাবকের মতো। তাদের সঙ্গে খুচরা নামসর্বস্ব আরও কয়েকটিকে দিয়ে একটি ইসলামি মঞ্চ বা জোট মাঠে নামিয়ে দেওয়ার সরকারের লাভের অঙ্ক সাজিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের অতি উৎসাহে বিরক্ত সরকারের সহযোগী ১৪ দল। তারা চায়, জামায়াতের সঙ্গে সরকারের সামান্যতম সংশ্রবও না থাকুক। চরমোনাইর পীরের ইসলামী আন্দোলনের ব্যাপারে সরকারের মতিগতিকেও ভালোভাবে নিচ্ছে না তারা। এতে অদূর ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ বড় রকমের ক্ষতির শিকার হবে বলে মত বাম মিত্রদের। তাদের পরামর্শ, চরমোনাইর পীরের দলকে দিয়ে ধর্মভিত্তিক জোট তৈরি করে দেওয়া। এ চিকন বুদ্ধিটা এসেছে সরকারে সঙ্গে লেগে থাকা বাম ঘরানা থেকে। এ ঘরানার আরেকটি গ্রুপ মনে করে, সরকার ডানে বেশি হেলে বামপাড়াকে অগ্রাহ্য করছে। তাদের বেশি ভয় জামায়াতকে নিয়ে।
পরিস্থিতিটা ইসলামি দলগুলোর জন্য মন্দের ভালো। সামগ্রিক বিচারে তারা একে নিজেদের এক ধরনের জয় ভাবছে। ফ্যাশনের মতো হলেও দাড়ি রাখছে এ প্রজন্মের তরুণ-যুবকরা। বোরকা-হিজাবের প্রচলন বেড়েছে। কাউকে দাড়ি রাখা বা বোরকা পরাতে অনেক কষ্ট করতে হতো এসব দলের নেতাকর্মীদের। গত কয়েক বছরে কেবল ব্যাংক-বিমা নয়, সাবান-বিস্কুটে পর্যন্ত ইসলাম শব্দ ব্যবহার হচ্ছে। হালাল সাবান, হালাল বিস্কুট, হালাল মাংসসহ কত কী? ইসলামি বা শরিয়া ব্যাংকিং নিয়ে এখন কোনো প্রশ্ন নেই। প্রতিষ্ঠানের নামে সমানে ইসলামি বা আরবি শব্দ যোগ হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনীতির মাঠে বিচরণ। সেটাও উতরে যাওয়ার লক্ষণ দেখছে তারা। শোনা যাচ্ছে, জামায়াতের সঙ্গে কেবল জোটসঙ্গী বিএনপি নয়, সরকারের কোনো কোনো মহলের সঙ্গেও তাদের হিডেন কথাবার্তা হচ্ছে। বিএনপির সঙ্গে মেলামেশা না করলে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনসহ মার্কাও পাইয়ে দেয়ার আশ্বাস মিলছে। কিন্তু আপাতত তারা শুধু টিকে থাকতে চাইছে। উচ্চ আদালতে নিবন্ধন নিয়ে চলমান মামলা লড়ার প্রস্তুতিও আছে। সামনের তারিখে হাজির হওয়ার কসরত চলছে। আবার বিএনপিকেও ছাড়ছে না।
প্রকাশ্যে বিএনপির সঙ্গে তাদের জোট না থাকলেও ‘যুগপৎ আন্দোলন’ নামে জামায়াত দূরে দূরে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে পরকীয় স্টাইলে। বিএনপির চলমান আন্দোলন কর্মসূচি সঠিকভাবে হচ্ছে না মনে করলেও তারা সরবে কিছু বলে না। তবে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে অব দ্য রেকর্ডে বসে, কথা বলে। ভুল ভাঙানোর চেষ্টা করে। মনে করিয়ে দেয় চারদলীয় জোট সরকারের ক্ষমতার শেষ দিকে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন নিয়ে সহিংসতায় জামায়াত ও ছাত্রশিবিবের কয়েকজন নেতাকর্মী নিহতের কথা। এরপর যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসিতে দলের শীর্ষনেতাদের মৃত্যুদণ্ডের কথা মনে করিয়ে দেয়। ওই সময় বিএনপির ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে জামায়াতের মধ্যে। বিএনপির সঙ্গে না থাকলে এ নেতাদের মৃত্যুদণ্ড নাও হতে পারত বলে দাবি তাদের। নেতাদের বাঁচানোর আন্দোলনে বিএনপিকে তেমন পাশে পায়নি বলেও ভেতরে ভেতরে পীড়া ভোগ করছে তারা।
শুধু নেতাদের হারায়নি, দলের নিবন্ধনও হারিয়েছে জামায়াত। এতে জামায়াত তাদের ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীকে ভোটের যোগ্যতা হারায়। তা সয়েও বিএনপির পাশে থাকতে থাকতে একপর্যায়ে জোটে নেই বলে ভিডিও বার্তা দেয়া হয়। এর কয়েক দিন পর বিএনপিও ২০ দলীয় জোট ভেঙে গেছে বলে জানায়। এমন কঠিন অবস্থার মধ্যে দল তিন ভাগ হয়ে গেছে। এবি পার্টি-বিডিপি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। সরকারের সঙ্গে দল দুটির বিশেষ যোগাযোগের অভিযোগ নিয়ে জামায়াত নেতারা কিছু বলেন না। আবার দূর থেকে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করে বিএনপির সঙ্গে। যুগপৎ কর্মসূচির শুরুর দিকে গত ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিল পালনকালে রাজধানীর মৌচাকে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশ ও জামায়াতের কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। গ্রেপ্তার করা হয় দলটির কয়েকজন কর্মীকে। ওই ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি দেওয়া বা খোঁজখবর না নেওয়ায় জামায়াত মনঃক্ষণœœ। এরপর থেকে যুগপৎ কর্মসূচিতে দৃশ্যত নেই জামায়াত। একদিকে জেল-জুলুমসহ নানা নিপীড়নে কাহিল দলের আমির, সেক্রেটারি জেনারেল থেকে শুরু করে তৃণমূলের নিরীহ কর্মী পর্যন্ত, আবার মিত্রসঙ্গী বিএনপির কাছেও উপেক্ষিত জামায়াত। বিএনপির একটি অংশ তাদের স্পেস দিতে চায় না। তাচ্ছিল্যের শিকারও হচ্ছে কখনো কখনো। কঠিন এই বাস্তবতা মেনে নিয়ে জামায়াত নিজস্ব সক্ষমতা বাড়াচ্ছে বিভিন্ন উইংয়ে। সরকার তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে দিলেও এ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত না হওয়ার সিদ্ধান্তে চলে গেছে জামায়াত। জামায়াত জানে, সরকার চাইলেই তাদের রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করে দিতে পারে। কেন করে না, তাও জানে। সময় পাল্টালে পরিস্থিতি এমন থাকবে না, তা বিশ্বাসে রেখে কর্মীদের টিকে থাকার বার্তা দিচ্ছে। আর লক্ষণ হিসেবে দেখাচ্ছে, সরকারের ডানদিকে হেলে পড়া ও ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টাকে। এর মাঝে লংটাইমে দলের জন্য ভালো নমুনা দেখছে তারা।
লেখক: কলামিস্ট ও বার্তা সম্পাদক বাংলাভিশন
বাংলাদেশের প্রখ্যাত লেখক ও দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের জন্ম ১৯০০ সালের ১৭ ডিসেম্বর (১৩০৭ বঙ্গাব্দের ৩ পৌষ) বরিশালের লামছড়ি গ্রামের এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে। তার প্রকৃত নাম আরজ আলী। বাবার নাম এন্তাজ আলী মাতুব্বর। তিনি গ্রামের মক্তবে কিছুকাল পড়াশোনা করার পর স্বচেষ্টা ও সাধনায় বিজ্ঞান, ইতিহাস, ধর্ম, দর্শনসহ নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেন। পরে এক সহৃদয় ব্যক্তির সহায়তায় তিনি স্কুলের প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। নিজের জ্ঞানের পিপাসা মেটাতে তিনি বরিশাল লাইব্রেরির সব বাংলা বই একজন মনোযোগী ছাত্রের মতো পড়েন। দর্শন ছিল তার প্রিয় বিষয়। মূলত বস্তুবাদী দর্শনে তিনি বিশ্বাসী ছিলেন। অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে তিনি লেখালেখি করেছেন। তার রচনায় মুক্তচিন্তা ও যুক্তিবাদী দার্শনিক প্রজ্ঞার ছাপ রয়েছে। তার লিখিত বইয়ের মধ্যে ‘সত্যের সন্ধান’, ‘সৃষ্টি রহস্য’, ‘সীজের ফুল’, ‘শয়তানের জবানবন্দি’ অন্যতম। মানবকল্যাণ ও বিশ্বধর্ম আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রদের জন্য বৃত্তি প্রদান এবং রচনা প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করেন। মানবতার সেবায় তিনি নিজ দেহ ও চক্ষু দান করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্যপদ লাভ করেন। এ ছাড়া ১৯৭৮ সালে হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার এবং ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সম্মাননা লাভ করেন তিনি। আরজ আলী মাতুব্বর ১৯৮৫ সালের ১৫ মার্চ (১৩৯২ বঙ্গাব্দের ১ চৈত্র) মৃত্যুবরণ করেন।
অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি অমীমাংসিত ইস্যু। তখন ব্রিটিশ সময়। ১৯৩৭ সাল। খরাপীড়িত এলাকা উত্তরাঞ্চল। পরিকল্পনা নেওয়া হয়, তিস্তা ব্যারাজ নির্মাণের। কিন্তু মূল উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৯৫৩ সালে, পাকিস্তান আমলে। ১৯৫৭ সালে নির্মাণকাজের পরিকল্পনা থাকলেও, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে তা হয়নি। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর উদ্যোগে বাংলাদেশ-ভারত শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী গঠন করা হয় যৌথ নদী কমিশন। যার মূল কথা ছিল জলসম্পদ বণ্টন, সেচ, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় নিয়ন্ত্রণ।
এরপর ১৯৮৯ সালে শুরু হয় তিস্তা ব্যারাজ নির্মাণের কাজ। ১৯৯৬ সালে, একমাত্র গঙ্গা নদীর পানি বণ্টনের চুক্তি স্বাক্ষর হলেও, আলোচনায় থাকা বাকি ১১টি নদীর ভাগাভাগির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যদিও বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত, অভিন্ন নদী রয়েছে ৫৪টি। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, একতরফাভাবে ভারত তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। উত্তরের জীবনরেখায় এমনিতেই সেচ সংকটে। আবার এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে জলবিদ্যুৎ তৈরির প্রকল্প!
গতকাল মঙ্গলবার দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায় প্রকাশিত ‘তিস্তার পানির সুযোগ আরও কমছে’ শীর্ষক প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার তিস্তা লো ড্যাম প্রকল্প (টিএলডিপি) ১ ও ২-এর ওপর একটি বিশদ প্রকল্প প্রতিবেদন (ডিপিআর) তৈরির নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশটির বড় রঙ্গিত নদীর ওপর দুটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। যার মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৭১ মেগাওয়াট। এ ছাড়া বালাসন ও রংভাং নদীর ওপর ৩৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার অন্য একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
পরিকল্পিত তিনটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের মধ্যে দুটির কারণে তিস্তার পানিপ্রবাহ আরও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে ডিসেম্বর-এপ্রিল মাসে যখন বাংলাদেশে সেচের জন্য পানির চাহিদা বেশি থাকে তখন পানিপ্রবাহ অনেক কমে যেতে পারে বলে টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের নদী ও পানি বিশেষজ্ঞরাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, দুই দেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছার মাধ্যমে দীর্ঘদিনের ঝুলে থাকা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির সহজ সমাধান করা সম্ভব।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার তিস্তা লো ড্যাম প্রকল্প (টিএলডিপি) ১ ও ২-এর ওপর একটি বিশদ প্রকল্প প্রতিবেদন (ডিপিআর) তৈরির নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশটির বড় রঙ্গিত নদীর ওপর দুটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। যার মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৭১ মেগাওয়াট। এ ছাড়া বালাসন ও রংভাং নদীর ওপর ৩৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার অন্য একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
তিস্তার পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় উর্বর পলির প্রবাহও কমে গেছে। ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলে বিরাট এলাকার জমি উর্বরতা হারিয়ে চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি বর্ষা নদীভাঙনের কবলে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে সেখান বিশাল জনগোষ্ঠী। তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন করতে দেরি হওয়ায় ঢাকা কয়েক বছর ধরে একাধিকবার দিল্লিকে এসব সমস্যার কথা জানালেও দিল্লি ও কলকাতার সম্পর্কের টানাপড়েনের কারণে শেষ পর্যন্ত এ নিয়ে কোনোই অগ্রগতি হয়নি।
কোনো ধরনের উদ্যোগ ছাড়াই, সমস্যা জিইয়ে রেখে আলোচনা হলে সমাধান আসবে না। আর এই উদ্যোগটা নিতে হবে ভারতকেই। পরীক্ষিত মিত্র দেশ ভারত, ঠিক কোন ধরনের অর্থনৈতিক সুবিধার কথা চিন্তা করে এমনটি করছে তা সহজেই বোধগম্য। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকা জরুরি। তাতে দুই দেশই লাভবান হবে।
সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানোর স্বাধীনতা কোনোভাবেই বাকস্বাধীনতা নয়। জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক ২৫ জন বিশেষজ্ঞ এক যৌথ বিবৃতিতে এ কথা জানান। বিবৃতি দেওয়া জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আফ্রিকার বংশোদ্ভূত জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ, ব্যবসা, আন্তঃদেশীয় করপোরেশন এবং মানবাধিকারবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের সভাপতি ও সদস্যরাও রয়েছেন।
তারা বলেছেন, সম্প্রতি টুইটারে বর্ণবাদী শব্দের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়েছে। এর মাধ্যমে আফ্রিকার জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা রুটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নেটওয়ার্ক কনটেজিয়ন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের’ প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বিবৃতিতে বলেছে, ইলন মাস্ক টুইটার অধিগ্রহণের প্রথম দিনগুলোতে, বিশেষ করে অধিগ্রহণের প্রথম ১২ ঘণ্টায় ঘৃণ্য ও বর্ণবাদী একটি শব্দের ব্যবহার আগের চেয়ে প্রায় ৫০০ গুণ বেড়েছে। টুইটার ওই বিদ্বেষমূলক প্রচারণাকে উপহাস বলে আখ্যা দিয়ে বলেছিল, সেখানে বিদ্বেষের কোনো সুযোগ নেই।
বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের বিরোধিতা করেন এমন অনেকের দাবি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নীতির বিষয়ে অঙ্গীকার আর তা বাস্তবায়নে পার্থক্য আছে। বিশেষ করে ফেসবুকে নির্বাচনী বিভ্রান্তি, ষড়যন্ত্রর তত্ত্বের বিষয়ে আলোচনা ও উসকানিমূলক বিজ্ঞাপন অনুমোদনের ক্ষেত্রে এটি উল্লেখযোগ্য। গবেষণায় দেখা গেছে, মেটা নির্দিষ্ট কিছু বিজ্ঞাপন আটকাতে পারে না। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অনেক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মেটা ২০২০ সালে নজরদারি পর্ষদের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেয়। এর কার্যকারিতা দেখতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে।
এটি এখন বাস্তবতা যে, আমাদের দেশেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অতিমাত্রায় জনপ্রিয়তা পেয়েছে। একদিকে এর অত্যধিক ব্যবহারিক গুরুত্ব, অন্যদিকে অপব্যবহারের মাত্রা পুরো সমাজে খারাপ প্রভাব ফেলছে। মিথ্যা ভিত্তিহীন প্রচারণা, সাম্প্রদায়িকতা, কূপম-ূকতা, অসহিষ্ণুতা, সহিংসতা, বিরোধ, বিচ্ছেদ জীবনপ্রবাহের সাবলীল গতিময়তায় প্রচণ্ড অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। নেতিবাচক বক্তব্য পরিবেশন অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করছে।
২০১০ সালে বুকার পুরস্কার বিজয়ী খ্যাতিমান ব্রিটিশ লেখক হাওয়ার্ড জ্যাকবসন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘২০ বছরের মধ্যে শিশুদের মূর্খ বানাবে ফেসবুক-টুইটার। স্মার্টফোনের ব্যবহার এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নাটকীয়ভাবে তরুণ প্রজন্মের যোগাযোগের পদ্ধতি বদলে যাচ্ছে। আর এসবের কারণে তারা হারাচ্ছে বই পড়ার অভ্যাসও।’
অপরাধবিজ্ঞানী-বিশেষজ্ঞদের মতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইদানীং আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে। এ মাধ্যম আমাদের মানবিক গুণাবলিকে প্রভাবিত করছে। মানি লন্ডারিং, আক্রমণাত্মক গেম, ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে অনেকে। মানসিকভাবে অনেকেই আছে অস্থির অবস্থায়। এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে ক্রমেই রাগ-ক্রোধ-অবসাদ-বিষণ্নতা-একাকিত্ব-হতাশা-হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।
ইতিবাচক অবদান রাখার পাশাপাশি প্রবাসী ও অভিবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে অনেকেই দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এদের সরব উপস্থিতি ও দেশবিরোধী আপত্তিকর মন্তব্য-বক্তব্য প্রচারের কারণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তারা যেসব দেশে অবস্থান করছে, সেসব দেশের নানা আইনি জটিলতার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া অনেক সময় দুরূহ হয়ে পড়ে।
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, লিঙ্কডিন, স্কাইপে প্রভৃতি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সর্বাধিক জনপ্রিয় ফেসবুক। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৮০ শতাংশের রয়েছে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এবং এর একটি বিশাল অংশ কিশোর-কিশোরী।
ভারতে ২০২১ সালে প্রণীত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা মতে, ফেসবুক-টুইটার-হোয়াটসঅ্যাপ ও অন্যান্য যোগাযোগমাধ্যমের কর্র্তৃপক্ষকে ভারতীয় সরকার কোনো ব্যবহারকারীর পোস্ট মুছে দেওয়া এবং ব্যবহারকারীর নাম-পরিচয় প্রকাশের অনুরোধ করতে পারবে। ঘৃণ্য ও হিংসাত্মক বিষয়বস্তু প্রকাশের কারণে সংস্থাগুলোর বৈশ্বিক টার্নওভারের ১০ শতাংশ পর্যন্ত আর্থিক দণ্ড ও প্রযুক্তি নির্বাহীদের জন্য তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে অস্ট্রেলিয়ায় ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ আইন করা হয়।
২০২১ সালের নভেম্বরে কার্যকর করা আইনে রাশিয়াকে জরুরি অবস্থায় বিশ্বব্যাপী ওয়েব সংযোগ বন্ধ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। রাশিয়ার ডেটা আইনে সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলো কেবল দেশের অভ্যন্তরীণ সার্ভারগুলোয় রাশিয়ানদের সম্পর্কে ডেটা সংরক্ষণ করতে পারবে। শিশু পর্নোগ্রাফি, হেট স্পিচ এবং বিনা সম্মতিতে কারও অন্তরঙ্গ ছবি প্রকাশ করাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে কানাডা সরকার কর্র্তৃক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ আইনে পুলিশ সোশ্যাল প্ল্যাটফরম এবং বক্তব্য পোস্টকারীর বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারবে।
চীন সাইবারস্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ওয়েবসাইট বন্ধ ও জুয়া খেলাসহ ক্ষতিকারক নানা মোবাইল অ্যাপ অপসারণ করে থাকে। দেশটিতে থাকা কয়েক হাজার সাইবার পুলিশের কাজ হচ্ছে সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফরম এবং সংবেদনশীল স্ক্রিন বার্তাগুলোকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা।
একটি বিষয় খুবই আলোচনা হচ্ছে। তা হচ্ছে, ইন্টারনেটে ক্ষতিকারক কনটেন্ট নিয়ে। ক্ষতিকারক বলতে পর্নোগ্রাফি, অসত্য ও মনগড়া তথ্যসংবলিত রিপোর্ট, সমাজের সঙ্গে সঙ্গতিহীন ছবি বা ভিডিও ক্লিপ, ব্যক্তিগত মুহূর্তের ভিডিও ক্লিপ ইত্যাদি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, যেমন ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার ইত্যাদিতে প্রচার করা হচ্ছে এসব ক্ষতিকারক কনটেন্ট। যার যা খুশি লিখে দিচ্ছে। যেমন খুশি ছবি বা ভিডিও আপলোড করছে। ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করে ছেড়ে দিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এসব ক্ষতিকারক কনটেন্ট আমাদের নতুন প্রজন্মকে বিপথে চালিত করছে। সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কর্র্তৃপক্ষের কৃপার ওপর নির্ভরশীল। তারা তাদের মতো করে কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড বানায়। সেটা আমাদের মেনে নিতে হয়।
সারা দুনিয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর ব্যাপক প্রসারে একদিকে যেমন মানুষ অনেক সুফল পাচ্ছে, তেমনি ক্ষতিকারক এই দিকটি নিয়ে উদ্বিগ্নও হচ্ছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের সব দেশই এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। সবাই যার যার মতো করে চেষ্টা করছে এই পরিস্থিতি মোকাবিলার। সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে এখন তোলপাড় চলছে সারা দুনিয়ায়।
আমাদের দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অশুভ ব্যবহারের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণ আরোপে আইন প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি। আসলে যা করা উচিত তা হলো, এ মাধ্যমে বিচরণের সময় সতর্কতার বিষয়টি মাথায় রাখা। মনে রাখতে হবে, বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়ানো বাকস্বাধীনতা নয়।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে প্রেম এরপর বিয়ে। দেড় বছরের দাম্পত্য জীবনে আট মাস ধরে চিত্রনায়িকা পরীমণি ও শরিফুল রাজের বনিবনা হচ্ছে না বলেই শোনা যাচ্ছে। চলছে টানাপোড়েন এবং সেই সংসার এখন ভাঙনের পথে। রাজের ফেসবুক থেকে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর রাজের সঙ্গে পরীমণির মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। সব ছাপিয়ে যা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রবিবার একটি গণমাধ্যমের ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে এসে শরিফুল রাজ জানান, আপাতত তারা সেপারেশনে আছেন এবং তাদের আর একসাথে হওয়ার কোন সুযোগ নেই। পরীকে তিনি শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে সবশেষে পরীমণির উদ্দেশ্যে রাজ বলেন, ‘বেবি, আই লাভ ইউ। যা-ই হোক না কেন, আনন্দে থেকো। আমরা আমাদের সন্তানকে ভালো রাখব।’
রাজের এমন মন্তব্যের উত্তর দিতে সোমবার রাতে গণমাধ্যমটির লাইভে এসে রাজের উদ্দেশ্যে পরীমণি বলেন, ‘গরু মেরে জুতা দান করার কোনো দরকার নেই। কেউ রেসপেক্ট করলে সেটা তার কার্যকলাপ দেখেই বোঝা যায়, মুখ ফুটে বলতে হয় না। আমাকে পাবলিকলি অপমান করে এরপর রেসপেক্ট দেখানোর কোনো দরকার নেই। আর আমার বাচ্চাকে নিয়ে এসব ইমোশনালি কোনো কথা শুনতে চাই না। এসব ইমোশনালি কথা মানুষকে গিলিয়ে লাভ নেই। মানুষ বুঝে।’
ফাঁস হওয়া ভিডিওগুলো পরী বলেন, ‘এত বছর ধরে তারা বন্ধু অথচ আমি জানতাম না। এসব সামনে আসার পর জানতে পারলাম। আর রাজ যতটা তার বন্ধুদের ইমেজ নিয়ে কনসার্ন তার পরিবার নিয়ে এতটাও কনসার্ন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমনিতে অনেক শান্তশিষ্ট। অনেকটা সাপের মতো, লেজে পাড়া না দিলে চুপচাপ থাকি কিন্তু আমার লেজে পাড়া দিলেই আমি ফুঁস করে উঠি আর তখন কামড় দিবই।’
সবশেষে পরী বলেন, ‘আমি চাই এসবের শেষ হোক। আমি আজকে এখানে এসে এসব বলতাম না। তুমিই (রাজ) আমাকে বাধ্য করেছ। এরকম অসুস্থ মানুষের সঙ্গে আমি আর থাকতে চাই না। আমি চাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ আমাকে ডিভোর্স দিক।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।