
বাংলাদেশের প্রখ্যাত লেখক ও দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের জন্ম ১৯০০ সালের ১৭ ডিসেম্বর (১৩০৭ বঙ্গাব্দের ৩ পৌষ) বরিশালের লামছড়ি গ্রামের এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে। তার প্রকৃত নাম আরজ আলী। বাবার নাম এন্তাজ আলী মাতুব্বর। তিনি গ্রামের মক্তবে কিছুকাল পড়াশোনা করার পর স্বচেষ্টা ও সাধনায় বিজ্ঞান, ইতিহাস, ধর্ম, দর্শনসহ নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেন। পরে এক সহৃদয় ব্যক্তির সহায়তায় তিনি স্কুলের প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। নিজের জ্ঞানের পিপাসা মেটাতে তিনি বরিশাল লাইব্রেরির সব বাংলা বই একজন মনোযোগী ছাত্রের মতো পড়েন। দর্শন ছিল তার প্রিয় বিষয়। মূলত বস্তুবাদী দর্শনে তিনি বিশ্বাসী ছিলেন। অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে তিনি লেখালেখি করেছেন। তার রচনায় মুক্তচিন্তা ও যুক্তিবাদী দার্শনিক প্রজ্ঞার ছাপ রয়েছে। তার লিখিত বইয়ের মধ্যে ‘সত্যের সন্ধান’, ‘সৃষ্টি রহস্য’, ‘সীজের ফুল’, ‘শয়তানের জবানবন্দি’ অন্যতম। মানবকল্যাণ ও বিশ্বধর্ম আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রদের জন্য বৃত্তি প্রদান এবং রচনা প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করেন। মানবতার সেবায় তিনি নিজ দেহ ও চক্ষু দান করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্যপদ লাভ করেন। এ ছাড়া ১৯৭৮ সালে হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার এবং ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সম্মাননা লাভ করেন তিনি। আরজ আলী মাতুব্বর ১৯৮৫ সালের ১৫ মার্চ (১৩৯২ বঙ্গাব্দের ১ চৈত্র) মৃত্যুবরণ করেন।
নির্বাচন যত এগোচ্ছে খুচরা দলগুলোর কদর-সমাদর তত বাড়ছে। বরাবর সব নির্বাচনে কম-বেশি এমনটি হয়। তবে এবার কিঞ্চিৎ রকমফের। নাম নামসর্বস্ব হলেও, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন না থাকলেও তাদের কাছে নিতে বেশ দাওয়াই ছড়ানো হচ্ছে। আর দাওয়াইতে এগিয়ে ক্ষমতাসীনরা। বিএনপি যেখানে জোট ভেঙে দৃশ্যত ছোটদের দূরে সরিয়ে অনেকটা একলা হাঁটছে, সেখানে সরকার মিতালি বাড়াচ্ছে। সেটাও আবার ডান বাঁকে। হেফাজতে ইসলামের মতো বিশাল একটি শক্তি হাতে থাকার পরও দক্ষিণপন্থি-ধর্মাশ্রয়ী ইসলামি দলগুলোর দিকে মোড় নেয়া আওয়ামী লীগের বাম মিত্রদের জন্য কষ্টের।
আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালের নির্বাচনে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসে মন্ত্রিসভায় মহাজোট ও ১৪ দল শরিকদের জায়গা না দিলেও হাত ছাড়া করেনি। কিছু সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বস মানিয়ে রাখছে। সরকারের পকেটে ঢুকে পড়া বামদের অভিমান করার জায়গাও নেই। মাঝেমধ্যে সরাসরি তাদের খোঁজ নেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। নিয়মিত ভালো-মন্দ দেখার বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্তও আছেন কয়েকজন। ভোটের অঙ্ক নয়, সুশীল সমাজ ও শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনকে হাতে রাখতে বামধারার দলগুলোকে কাজে লাগে। আর ভোটের মাঠে ফ্যাক্টর ডানরা। সামাজিক ও ধর্মীয় ময়দানে তাদের অবস্থান বেশ কড়কড়া। তাদের প্রতি ধর্মাশ্রয়ী সাধারণ মানুষের এক ধরনের আগ্রহ রয়েছে। সরকার তাদের এ শক্তিটি আয়ত্তে নিতে চায়। তবে চরমোনাইর পীরের ইসলামী আন্দোলনসহ দক্ষিণপন্থি কয়েকটি দলকে নিমিষে বাগে আনা যায় না। মসজিদ, মাদ্রাসা ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের বেশ গাঁথুনি রয়েছে। কিছু মুসলিম রাষ্ট্রের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ আছে তাদের। চাইলেই তাদের সরকারপন্থি করে নেয়া অসম্ভব। তাই তারা যেন বিএনপির দিকে একেবারে হেলে না যায়, তা নিশ্চিত করতে চায় সরকার।
এ লক্ষ্যে রয়েছে বিশেষ এজেন্ডা। পরিকল্পনা মতো সরকার কোনোটির ওপর চাপ বাড়াচ্ছে, কোনোটিকে লায় দেওয়ার প্যাকেজ নেওয়া হয়েছে। ইসলামি কিছু দলকে দিয়ে একটি জোট বা ফ্রন্ট করে দেওয়ার সরকারি আয়োজনও রয়েছে। ইসিতে নিবন্ধিত ৪০টি দলের মধ্যে ধর্মভিত্তিক ইসলামি দল ১০টি। এর মধ্যে ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও খেলাফত মজলিসসহ কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দল ৬টি। তারা নৈতিকভাবে জামায়াতবিরোধী। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কয়েক নেতা তাদের অভিভাবকের মতো। তাদের সঙ্গে খুচরা নামসর্বস্ব আরও কয়েকটিকে দিয়ে একটি ইসলামি মঞ্চ বা জোট মাঠে নামিয়ে দেওয়ার সরকারের লাভের অঙ্ক সাজিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের অতি উৎসাহে বিরক্ত সরকারের সহযোগী ১৪ দল। তারা চায়, জামায়াতের সঙ্গে সরকারের সামান্যতম সংশ্রবও না থাকুক। চরমোনাইর পীরের ইসলামী আন্দোলনের ব্যাপারে সরকারের মতিগতিকেও ভালোভাবে নিচ্ছে না তারা। এতে অদূর ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ বড় রকমের ক্ষতির শিকার হবে বলে মত বাম মিত্রদের। তাদের পরামর্শ, চরমোনাইর পীরের দলকে দিয়ে ধর্মভিত্তিক জোট তৈরি করে দেওয়া। এ চিকন বুদ্ধিটা এসেছে সরকারে সঙ্গে লেগে থাকা বাম ঘরানা থেকে। এ ঘরানার আরেকটি গ্রুপ মনে করে, সরকার ডানে বেশি হেলে বামপাড়াকে অগ্রাহ্য করছে। তাদের বেশি ভয় জামায়াতকে নিয়ে।
পরিস্থিতিটা ইসলামি দলগুলোর জন্য মন্দের ভালো। সামগ্রিক বিচারে তারা একে নিজেদের এক ধরনের জয় ভাবছে। ফ্যাশনের মতো হলেও দাড়ি রাখছে এ প্রজন্মের তরুণ-যুবকরা। বোরকা-হিজাবের প্রচলন বেড়েছে। কাউকে দাড়ি রাখা বা বোরকা পরাতে অনেক কষ্ট করতে হতো এসব দলের নেতাকর্মীদের। গত কয়েক বছরে কেবল ব্যাংক-বিমা নয়, সাবান-বিস্কুটে পর্যন্ত ইসলাম শব্দ ব্যবহার হচ্ছে। হালাল সাবান, হালাল বিস্কুট, হালাল মাংসসহ কত কী? ইসলামি বা শরিয়া ব্যাংকিং নিয়ে এখন কোনো প্রশ্ন নেই। প্রতিষ্ঠানের নামে সমানে ইসলামি বা আরবি শব্দ যোগ হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনীতির মাঠে বিচরণ। সেটাও উতরে যাওয়ার লক্ষণ দেখছে তারা। শোনা যাচ্ছে, জামায়াতের সঙ্গে কেবল জোটসঙ্গী বিএনপি নয়, সরকারের কোনো কোনো মহলের সঙ্গেও তাদের হিডেন কথাবার্তা হচ্ছে। বিএনপির সঙ্গে মেলামেশা না করলে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনসহ মার্কাও পাইয়ে দেয়ার আশ্বাস মিলছে। কিন্তু আপাতত তারা শুধু টিকে থাকতে চাইছে। উচ্চ আদালতে নিবন্ধন নিয়ে চলমান মামলা লড়ার প্রস্তুতিও আছে। সামনের তারিখে হাজির হওয়ার কসরত চলছে। আবার বিএনপিকেও ছাড়ছে না।
প্রকাশ্যে বিএনপির সঙ্গে তাদের জোট না থাকলেও ‘যুগপৎ আন্দোলন’ নামে জামায়াত দূরে দূরে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে পরকীয় স্টাইলে। বিএনপির চলমান আন্দোলন কর্মসূচি সঠিকভাবে হচ্ছে না মনে করলেও তারা সরবে কিছু বলে না। তবে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে অব দ্য রেকর্ডে বসে, কথা বলে। ভুল ভাঙানোর চেষ্টা করে। মনে করিয়ে দেয় চারদলীয় জোট সরকারের ক্ষমতার শেষ দিকে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন নিয়ে সহিংসতায় জামায়াত ও ছাত্রশিবিবের কয়েকজন নেতাকর্মী নিহতের কথা। এরপর যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসিতে দলের শীর্ষনেতাদের মৃত্যুদণ্ডের কথা মনে করিয়ে দেয়। ওই সময় বিএনপির ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে জামায়াতের মধ্যে। বিএনপির সঙ্গে না থাকলে এ নেতাদের মৃত্যুদণ্ড নাও হতে পারত বলে দাবি তাদের। নেতাদের বাঁচানোর আন্দোলনে বিএনপিকে তেমন পাশে পায়নি বলেও ভেতরে ভেতরে পীড়া ভোগ করছে তারা।
শুধু নেতাদের হারায়নি, দলের নিবন্ধনও হারিয়েছে জামায়াত। এতে জামায়াত তাদের ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীকে ভোটের যোগ্যতা হারায়। তা সয়েও বিএনপির পাশে থাকতে থাকতে একপর্যায়ে জোটে নেই বলে ভিডিও বার্তা দেয়া হয়। এর কয়েক দিন পর বিএনপিও ২০ দলীয় জোট ভেঙে গেছে বলে জানায়। এমন কঠিন অবস্থার মধ্যে দল তিন ভাগ হয়ে গেছে। এবি পার্টি-বিডিপি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। সরকারের সঙ্গে দল দুটির বিশেষ যোগাযোগের অভিযোগ নিয়ে জামায়াত নেতারা কিছু বলেন না। আবার দূর থেকে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করে বিএনপির সঙ্গে। যুগপৎ কর্মসূচির শুরুর দিকে গত ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিল পালনকালে রাজধানীর মৌচাকে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশ ও জামায়াতের কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। গ্রেপ্তার করা হয় দলটির কয়েকজন কর্মীকে। ওই ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি দেওয়া বা খোঁজখবর না নেওয়ায় জামায়াত মনঃক্ষণœœ। এরপর থেকে যুগপৎ কর্মসূচিতে দৃশ্যত নেই জামায়াত। একদিকে জেল-জুলুমসহ নানা নিপীড়নে কাহিল দলের আমির, সেক্রেটারি জেনারেল থেকে শুরু করে তৃণমূলের নিরীহ কর্মী পর্যন্ত, আবার মিত্রসঙ্গী বিএনপির কাছেও উপেক্ষিত জামায়াত। বিএনপির একটি অংশ তাদের স্পেস দিতে চায় না। তাচ্ছিল্যের শিকারও হচ্ছে কখনো কখনো। কঠিন এই বাস্তবতা মেনে নিয়ে জামায়াত নিজস্ব সক্ষমতা বাড়াচ্ছে বিভিন্ন উইংয়ে। সরকার তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে দিলেও এ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত না হওয়ার সিদ্ধান্তে চলে গেছে জামায়াত। জামায়াত জানে, সরকার চাইলেই তাদের রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করে দিতে পারে। কেন করে না, তাও জানে। সময় পাল্টালে পরিস্থিতি এমন থাকবে না, তা বিশ্বাসে রেখে কর্মীদের টিকে থাকার বার্তা দিচ্ছে। আর লক্ষণ হিসেবে দেখাচ্ছে, সরকারের ডানদিকে হেলে পড়া ও ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টাকে। এর মাঝে লংটাইমে দলের জন্য ভালো নমুনা দেখছে তারা।
লেখক: কলামিস্ট ও বার্তা সম্পাদক বাংলাভিশন
অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি অমীমাংসিত ইস্যু। তখন ব্রিটিশ সময়। ১৯৩৭ সাল। খরাপীড়িত এলাকা উত্তরাঞ্চল। পরিকল্পনা নেওয়া হয়, তিস্তা ব্যারাজ নির্মাণের। কিন্তু মূল উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৯৫৩ সালে, পাকিস্তান আমলে। ১৯৫৭ সালে নির্মাণকাজের পরিকল্পনা থাকলেও, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে তা হয়নি। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর উদ্যোগে বাংলাদেশ-ভারত শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী গঠন করা হয় যৌথ নদী কমিশন। যার মূল কথা ছিল জলসম্পদ বণ্টন, সেচ, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় নিয়ন্ত্রণ।
এরপর ১৯৮৯ সালে শুরু হয় তিস্তা ব্যারাজ নির্মাণের কাজ। ১৯৯৬ সালে, একমাত্র গঙ্গা নদীর পানি বণ্টনের চুক্তি স্বাক্ষর হলেও, আলোচনায় থাকা বাকি ১১টি নদীর ভাগাভাগির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যদিও বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত, অভিন্ন নদী রয়েছে ৫৪টি। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, একতরফাভাবে ভারত তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। উত্তরের জীবনরেখায় এমনিতেই সেচ সংকটে। আবার এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে জলবিদ্যুৎ তৈরির প্রকল্প!
গতকাল মঙ্গলবার দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায় প্রকাশিত ‘তিস্তার পানির সুযোগ আরও কমছে’ শীর্ষক প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার তিস্তা লো ড্যাম প্রকল্প (টিএলডিপি) ১ ও ২-এর ওপর একটি বিশদ প্রকল্প প্রতিবেদন (ডিপিআর) তৈরির নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশটির বড় রঙ্গিত নদীর ওপর দুটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। যার মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৭১ মেগাওয়াট। এ ছাড়া বালাসন ও রংভাং নদীর ওপর ৩৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার অন্য একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
পরিকল্পিত তিনটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের মধ্যে দুটির কারণে তিস্তার পানিপ্রবাহ আরও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে ডিসেম্বর-এপ্রিল মাসে যখন বাংলাদেশে সেচের জন্য পানির চাহিদা বেশি থাকে তখন পানিপ্রবাহ অনেক কমে যেতে পারে বলে টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের নদী ও পানি বিশেষজ্ঞরাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, দুই দেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছার মাধ্যমে দীর্ঘদিনের ঝুলে থাকা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির সহজ সমাধান করা সম্ভব।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার তিস্তা লো ড্যাম প্রকল্প (টিএলডিপি) ১ ও ২-এর ওপর একটি বিশদ প্রকল্প প্রতিবেদন (ডিপিআর) তৈরির নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশটির বড় রঙ্গিত নদীর ওপর দুটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। যার মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৭১ মেগাওয়াট। এ ছাড়া বালাসন ও রংভাং নদীর ওপর ৩৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার অন্য একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
তিস্তার পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় উর্বর পলির প্রবাহও কমে গেছে। ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলে বিরাট এলাকার জমি উর্বরতা হারিয়ে চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি বর্ষা নদীভাঙনের কবলে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে সেখান বিশাল জনগোষ্ঠী। তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন করতে দেরি হওয়ায় ঢাকা কয়েক বছর ধরে একাধিকবার দিল্লিকে এসব সমস্যার কথা জানালেও দিল্লি ও কলকাতার সম্পর্কের টানাপড়েনের কারণে শেষ পর্যন্ত এ নিয়ে কোনোই অগ্রগতি হয়নি।
কোনো ধরনের উদ্যোগ ছাড়াই, সমস্যা জিইয়ে রেখে আলোচনা হলে সমাধান আসবে না। আর এই উদ্যোগটা নিতে হবে ভারতকেই। পরীক্ষিত মিত্র দেশ ভারত, ঠিক কোন ধরনের অর্থনৈতিক সুবিধার কথা চিন্তা করে এমনটি করছে তা সহজেই বোধগম্য। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকা জরুরি। তাতে দুই দেশই লাভবান হবে।
এবার গ্রীষ্মকালের সূচনাতেই বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকা-ে দেশের মানুষ আতঙ্কিত হতে শুরু করেছে। বিস্ফোরণের সংবাদে মানুষ এখন এতই ভীত হয়ে গেছে যে, যেকোনো জায়গাতেই তারা একটা বিস্ফোরণ আঁচ করছে। এই আতঙ্ক অবশ্য একদিক থেকে ভালোই। যদি তার প্রতিকার করার জন্য মানুষ ভাবতে শুরু করে। বহু দিন ধরে জরাজীর্ণ ভবনে এখানে মানুষের বাস। বিল্ডিং পরিদর্শক নেই, সিটি করপোরেশনের কোনো দায় নেই। বিস্ফোরক বা নানা ধরনের দাহ্যপদার্থের জন্য নেই কোনো রাষ্ট্রের খবরদারি। এক অনিরাপদ অবস্থায় মানুষ থাকতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমন অনেক নবনির্মিত ভবনে গিয়েছি যেখানে কোনো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই। কোথাও হয়তো শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা আছে কিন্তু সূর্যালোক বা বাতাস ঢোকার কোনো ব্যবস্থা নেই।
পুরান ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায়, কংক্রিটের বা শতাব্দী প্রাচীন সুরকি ছাদের নিচে বাঁশের ঠেকা দিয়ে রাখা হয়েছে। সিঁড়িগুলো এতই সরু যে, কোনো দুর্ঘটনায় মানুষ নিচেও নামতে পারবে না। সিঁড়িতেই একজন আরেকজনের ঠেলাঠেলিতে ওখানেই একটা সমাধি হয়ে যেতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায়, বাড়িটির দখল রাখতে গিয়ে যেকোনোভাবে জীবনবাজি রেখে এ ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। কিন্তু সেখানেও সিটি করপোরেশনের ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। সরকারের খাজনাও দিতে হচ্ছে। তারপর আছে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইনের প্রাচীনব্যবস্থা। এ ব্যবস্থার মধ্য থেকে এমন একটি অভ্যাস রয়ে গেছে যে, মনে হতে থাকে এটাই সর্বশ্রেষ্ঠ বাঁচার উপায়। শুধু ঢাকায় নয় জেলা বা উপজেলা শহরে একই অবস্থা। কোথাও কেউ পরিকল্পনায় ধার ধারে না। কোথাও নগর-পরিকল্পনার লোকটি নেই। এ যেন একটা মেঠোপথ, তার দুধারে ইচ্ছামতো বাড়িঘর স্থাপনা গড়ে উঠছে। গ্রামের ধানের জমিতে ইচ্ছামতো বাড়িঘর উঠিয়ে দিগন্ত ঢেকে দিচ্ছে, তাতেও কোথাও কোনো আপত্তি বা নিষেধ নেই।
স্থানীয় সরকার বলে একটা ব্যবস্থা অনেক দিন ধরে চলে আসছে। সেখানে একসময় দলীয় পরিচয়ে নির্বাচন হতো না। এখন সেখানে দলীয় পরিচয় এসে গেছে। দলের নমিনেশন প্রয়োজন। বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে সেই নমিনেশন পেতে হয়। উন্নয়ন কর্মকান্ডে তাই বিপুল উৎসাহ তাদের। তারপর নির্বাচনের সময় ভোটারদের কোথাও কোথাও প্রয়োজন। তাই ভোট উন্নয়ন কর্মকা-কেও নিয়ন্ত্রণ করে। সব জায়গার মতোই দুর্নীতিই এখানে প্রধান বিষয়। লাখো কোটি টাকার নমিনেশনের টাকা তুলতে গিয়ে আর কী উপায়? কিন্তু তাতে কী লাভ হলো দেশের? প্রকারান্তরে দুর্নীতিকে ব্যাপকতা দিয়েই প্রাচীন এবং নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা।
একদা আমরা প্রবীণদের দেখেছি, ইউনিয়ন কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট হতে। কেউ কেউ আজীবন প্রেসিডেন্ট থাকতেন। সারাজীবনই তারা দেশের সেবা করতেন। পৌরসভার সদস্য এবং চেয়ারম্যানদের দুয়ার মানুষের জন্য খোলা থাকত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও কিছু কিছু জায়গায় জনহিতকর কাজে তাদের পাওয়া যেত। কিন্তু আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্রের পথ ধরে এ ব্যবস্থার যে অবক্ষয় শুরু হলো তা বহু বছর পর্যন্ত গণপ্রতিধিনিদের আনুগত্য, শুধু সরকারের প্রতিই রইল। ১৯৭৫ সালের পর সামরিক শাসনের আমলে জনগণের প্রতি জবাবদিহি একেবারেই নিঃশেষ হতে চলল। এ অবস্থায় একচেটিয়া রাজনৈতিক কর্তৃত্বে আর গণমুখী ব্যবস্থাটি থাকল না। নাগরিকদের কাছ থেকে প্রচুর ট্যাক্স আদায়, সরকারের বার্ষিক অনুমোদিত অর্থ পেয়েও জনকল্যাণের বিষয়টি আর গুরুত্বপূর্ণ থাকছে না। নাগরিকদের সুস্বাস্থ্যের তদারকি করার প্রয়োজনটিও গণপ্রতিনিধিদের কর্মপরিধির বিষয় নয়।
শহরগুলো বিশেষ করে ঢাকা শহরের দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিশাল বিশাল জনপদ গড়ে উঠেছে। অধিকাংশ স্থানে রাজউক বা অন্যান্য সংস্থা কোনো ধরনের অগ্রপশ্চাৎ চিন্তা না করেই দালান নির্মাণের অনুমোদন দিয়ে দিচ্ছে। ধরা যাক, পান্থপথ, এই রাজপথে কতগুলো হাসপাতাল, বিপণি, সরকারি-বেসরকারি অফিসের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে? যদি একটু চিন্তা করা যায়- প্রতিদিন কতগুলো গাড়ি, কত মানুষজন এই পথ দিয়ে যাতায়াত করবে, কোথায় তাদের গাড়ির পার্কিং, কত ধরনের গাড়ি চলাচল করবে তার একটা মোটা হিসাবও যদি ভাবা যেত, তাহলে কোনো বিবেচনাতেই এসব অনুমোদন পাওয়ার যোগ্যতা রাখত না। কিন্তু দুর্নীতির সহজ পথে অর্থের বা ক্ষমতার প্রভাবে এসব অনুমোদন পেয়ে গেছে।
নগরের প্রধান বয়স্ক সিটি করপোরেশনের কর্তৃপক্ষও বিষয়গুলো নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন বোধ করেনি। জনকল্যাণের মহত্তম পথই হচ্ছে স্বাধীনতা। এখানেই যুগে যুগে দেশে দেশে মানুষ স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছে। নিজেদের মতো করে একেবারেই স্থানিক বিবেচনায় স্বদেশকে গড়ে তোলার সংগ্রামটাই তো স্বাধীনতার সংগ্রাম। আমাদের দেশেও লাখ লাখ মানুষ স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছে, সংগ্রাম করেছে। কি দুঃসাহসকে স্বীকার করে লাখো কোটি মানুষ কত ত্যাগ স্বীকার করল! কিন্তু আমরা স্বাধীনতাকে, মুক্তিযুদ্ধকে সংহত করতে শিখলাম না। একসময় সেনাবাহিনী মনে করল, তারাই দেশের সর্বোচ্চ মঙ্গল করবে। সে এক অসম্ভব কল্পনা হয়ে দাঁড়াল। রাজনৈতিক দল ক্ষমতার লড়াই করছে কিন্তু সংসদটাকেও হাজির করতে পারেনি। জনপদকে নিরাপদ করার যে কাজটুকু নির্বিঘেœ করা যেত, তাতেও কাউকে মনোযোগী হতে দেখা গেল না।
দেশে অবকাঠামোগত একটা উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু সেই অবকাঠামোকে ব্যবহার করার কোনো সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় কত তাজা প্রাণ বলি হয়ে যাচ্ছে, তার খবর আমরা জানি! সড়ক পরিবহনে আমরা কোনো দায়িত্বশীলতা দেখতে পাই না। যাত্রীসাধারণ এক চরম অসহায় অবস্থায় যানবাহন ব্যবহার করে থাকেন। সেখানে যে নেতৃত্ব আছে, সে নেতৃত্বও দায়িত্বহীন। তারা বিনাপরীক্ষায় চালকদের গাড়ি চালানোর লাইসেন্স দিতে বলে। কোনো কঠোর আইন করতে গেলে ধর্মঘটের হুমকি দেয়। ভাড়া বাড়ানো হয় ইচ্ছামতো। সেখানেও এক বিশাল দানবীয় সংগঠিত শক্তির তৎপরতা লক্ষ করা যায়। রাজনৈতিক দলের সব কর্মকা- ক্ষমতায় থাকার এবং ক্ষমতায় যাওয়াকে কেন্দ্র করে। নাগরিকদের অন্য কোনো সমস্যা নিরসনে কোনো উদ্যোগ নেই।
’৭৫ থেকে ৯০ পর্যন্ত একটা দীর্ঘ সময় গেছে শুধু সেনাবাহিনীর মধ্যেই ক্ষমতার লড়াই নিয়ে। সে সময় মানুষ কিন্তু ক্ষমতার কেন্দ্রকে পরিবর্তন করার জন্য লড়াই করেছিল। ’৫২ বছর পর মার্চ মাসে দাঁড়িয়ে যদি আমাদের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের দিকে তাকাই তাহলে একটা ঝলমলে শপিংমলের মতো বাংলাদেশকে দেখতে পাই, যেখানে শিক্ষা-সংস্কৃতি উৎসারিত মূল্যবোধ হারিয়ে বসে আছি। তার বদলে পদে পদে দুর্নীতিগ্রস্ত একটা দেশ দেখতে পাই। হাজার বছর ধরে এই ভূখ-ের মানুষ যে সমাজটা নির্মাণ করেছিল তা ভেঙেচুরে অদ্ভুত একটা দেশ গড়ার চেষ্টা চলছে।
একদা বঙ্গবন্ধু উচ্চারণ করেছিলেন বাংলাদেশ একটি সাংস্কৃতিক রাষ্ট্র অর্থাৎ সংস্কৃতিই নির্দেশ করবে রাষ্ট্রের কানুন। অতীতের সবকিছুই যে ভালো ছিল তা বলা যাবে না, বিশেষ করে দারিদ্র্য। কিন্তু সেই দারিদ্র্যবিমোচনের জন্য আমরা জাতীয় কোনো পথ খুঁজে পাইনি, আমাদের দেশের শ্রমিকরা আয়ের উৎস হিসেবে খুঁজে নিয়েছে এক আদিম ব্যবস্থা। মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমিতে কিশোর শ্রমিকরা উঠের দৌড়ের সহিসের কাজ খুঁজে নিয়েছে। এ করেই পেটেভাতে, প্রবল অনিশ্চয়তায় চলছে সেই কাজ। বিদেশে কায়িক শ্রমের বিনিময়ে আসা বৈদেশিক মুদ্রায় আমাদের রিজার্ভ গড়ে ওঠে, সেই সঙ্গে তৈরি পোশাকশিল্পে নির্মম শ্রম শোষণ তো আছেই।
রাষ্ট্রটা তুলে দেওয়া হয়েছে দায়িত্বহীন ব্যবসায়ীদের হাতে, যারা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য এক লাফে বাড়িয়ে দেয়। রাষ্ট্রের কোনো নিয়ন্ত্রণ তারা মানে না। বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধ তাদের এ সুযোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
স্বাধীনতার পর অর্ধশতাব্দী পার হয়ে গেছে। সময়টা খুব কম নয়। অনেক সময়ের আমরা অপচয় করে ফেলেছি। এর মধ্যে ভালো দৃষ্টান্ত যে নেই তা নয়। কিন্তু মূল্যবোধহীন উন্নয়ন আমাদের রাষ্ট্রটাকে আরও অমানবিক করে তুলতে পারে তার কথা কি আমরা ভাবছি?
১৯৭১ সালের মার্চ মাসের উত্তাল দিনগুলোর স্বপ্নের মধ্যে, কোন বাংলাদেশ অবস্থান করছিল?
লেখক: নাট্যকার, অভিনেতা ও কলামিস্ট
সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানোর স্বাধীনতা কোনোভাবেই বাকস্বাধীনতা নয়। জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক ২৫ জন বিশেষজ্ঞ এক যৌথ বিবৃতিতে এ কথা জানান। বিবৃতি দেওয়া জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আফ্রিকার বংশোদ্ভূত জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ, ব্যবসা, আন্তঃদেশীয় করপোরেশন এবং মানবাধিকারবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের সভাপতি ও সদস্যরাও রয়েছেন।
তারা বলেছেন, সম্প্রতি টুইটারে বর্ণবাদী শব্দের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়েছে। এর মাধ্যমে আফ্রিকার জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা রুটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নেটওয়ার্ক কনটেজিয়ন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের’ প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বিবৃতিতে বলেছে, ইলন মাস্ক টুইটার অধিগ্রহণের প্রথম দিনগুলোতে, বিশেষ করে অধিগ্রহণের প্রথম ১২ ঘণ্টায় ঘৃণ্য ও বর্ণবাদী একটি শব্দের ব্যবহার আগের চেয়ে প্রায় ৫০০ গুণ বেড়েছে। টুইটার ওই বিদ্বেষমূলক প্রচারণাকে উপহাস বলে আখ্যা দিয়ে বলেছিল, সেখানে বিদ্বেষের কোনো সুযোগ নেই।
বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের বিরোধিতা করেন এমন অনেকের দাবি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নীতির বিষয়ে অঙ্গীকার আর তা বাস্তবায়নে পার্থক্য আছে। বিশেষ করে ফেসবুকে নির্বাচনী বিভ্রান্তি, ষড়যন্ত্রর তত্ত্বের বিষয়ে আলোচনা ও উসকানিমূলক বিজ্ঞাপন অনুমোদনের ক্ষেত্রে এটি উল্লেখযোগ্য। গবেষণায় দেখা গেছে, মেটা নির্দিষ্ট কিছু বিজ্ঞাপন আটকাতে পারে না। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অনেক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মেটা ২০২০ সালে নজরদারি পর্ষদের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেয়। এর কার্যকারিতা দেখতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে।
এটি এখন বাস্তবতা যে, আমাদের দেশেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অতিমাত্রায় জনপ্রিয়তা পেয়েছে। একদিকে এর অত্যধিক ব্যবহারিক গুরুত্ব, অন্যদিকে অপব্যবহারের মাত্রা পুরো সমাজে খারাপ প্রভাব ফেলছে। মিথ্যা ভিত্তিহীন প্রচারণা, সাম্প্রদায়িকতা, কূপম-ূকতা, অসহিষ্ণুতা, সহিংসতা, বিরোধ, বিচ্ছেদ জীবনপ্রবাহের সাবলীল গতিময়তায় প্রচণ্ড অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। নেতিবাচক বক্তব্য পরিবেশন অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করছে।
২০১০ সালে বুকার পুরস্কার বিজয়ী খ্যাতিমান ব্রিটিশ লেখক হাওয়ার্ড জ্যাকবসন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘২০ বছরের মধ্যে শিশুদের মূর্খ বানাবে ফেসবুক-টুইটার। স্মার্টফোনের ব্যবহার এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নাটকীয়ভাবে তরুণ প্রজন্মের যোগাযোগের পদ্ধতি বদলে যাচ্ছে। আর এসবের কারণে তারা হারাচ্ছে বই পড়ার অভ্যাসও।’
অপরাধবিজ্ঞানী-বিশেষজ্ঞদের মতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইদানীং আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে। এ মাধ্যম আমাদের মানবিক গুণাবলিকে প্রভাবিত করছে। মানি লন্ডারিং, আক্রমণাত্মক গেম, ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে অনেকে। মানসিকভাবে অনেকেই আছে অস্থির অবস্থায়। এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে ক্রমেই রাগ-ক্রোধ-অবসাদ-বিষণ্নতা-একাকিত্ব-হতাশা-হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।
ইতিবাচক অবদান রাখার পাশাপাশি প্রবাসী ও অভিবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে অনেকেই দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এদের সরব উপস্থিতি ও দেশবিরোধী আপত্তিকর মন্তব্য-বক্তব্য প্রচারের কারণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তারা যেসব দেশে অবস্থান করছে, সেসব দেশের নানা আইনি জটিলতার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া অনেক সময় দুরূহ হয়ে পড়ে।
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, লিঙ্কডিন, স্কাইপে প্রভৃতি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সর্বাধিক জনপ্রিয় ফেসবুক। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৮০ শতাংশের রয়েছে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এবং এর একটি বিশাল অংশ কিশোর-কিশোরী।
ভারতে ২০২১ সালে প্রণীত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা মতে, ফেসবুক-টুইটার-হোয়াটসঅ্যাপ ও অন্যান্য যোগাযোগমাধ্যমের কর্র্তৃপক্ষকে ভারতীয় সরকার কোনো ব্যবহারকারীর পোস্ট মুছে দেওয়া এবং ব্যবহারকারীর নাম-পরিচয় প্রকাশের অনুরোধ করতে পারবে। ঘৃণ্য ও হিংসাত্মক বিষয়বস্তু প্রকাশের কারণে সংস্থাগুলোর বৈশ্বিক টার্নওভারের ১০ শতাংশ পর্যন্ত আর্থিক দণ্ড ও প্রযুক্তি নির্বাহীদের জন্য তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে অস্ট্রেলিয়ায় ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ আইন করা হয়।
২০২১ সালের নভেম্বরে কার্যকর করা আইনে রাশিয়াকে জরুরি অবস্থায় বিশ্বব্যাপী ওয়েব সংযোগ বন্ধ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। রাশিয়ার ডেটা আইনে সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলো কেবল দেশের অভ্যন্তরীণ সার্ভারগুলোয় রাশিয়ানদের সম্পর্কে ডেটা সংরক্ষণ করতে পারবে। শিশু পর্নোগ্রাফি, হেট স্পিচ এবং বিনা সম্মতিতে কারও অন্তরঙ্গ ছবি প্রকাশ করাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে কানাডা সরকার কর্র্তৃক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ আইনে পুলিশ সোশ্যাল প্ল্যাটফরম এবং বক্তব্য পোস্টকারীর বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারবে।
চীন সাইবারস্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ওয়েবসাইট বন্ধ ও জুয়া খেলাসহ ক্ষতিকারক নানা মোবাইল অ্যাপ অপসারণ করে থাকে। দেশটিতে থাকা কয়েক হাজার সাইবার পুলিশের কাজ হচ্ছে সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফরম এবং সংবেদনশীল স্ক্রিন বার্তাগুলোকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা।
একটি বিষয় খুবই আলোচনা হচ্ছে। তা হচ্ছে, ইন্টারনেটে ক্ষতিকারক কনটেন্ট নিয়ে। ক্ষতিকারক বলতে পর্নোগ্রাফি, অসত্য ও মনগড়া তথ্যসংবলিত রিপোর্ট, সমাজের সঙ্গে সঙ্গতিহীন ছবি বা ভিডিও ক্লিপ, ব্যক্তিগত মুহূর্তের ভিডিও ক্লিপ ইত্যাদি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, যেমন ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার ইত্যাদিতে প্রচার করা হচ্ছে এসব ক্ষতিকারক কনটেন্ট। যার যা খুশি লিখে দিচ্ছে। যেমন খুশি ছবি বা ভিডিও আপলোড করছে। ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করে ছেড়ে দিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এসব ক্ষতিকারক কনটেন্ট আমাদের নতুন প্রজন্মকে বিপথে চালিত করছে। সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কর্র্তৃপক্ষের কৃপার ওপর নির্ভরশীল। তারা তাদের মতো করে কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড বানায়। সেটা আমাদের মেনে নিতে হয়।
সারা দুনিয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর ব্যাপক প্রসারে একদিকে যেমন মানুষ অনেক সুফল পাচ্ছে, তেমনি ক্ষতিকারক এই দিকটি নিয়ে উদ্বিগ্নও হচ্ছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের সব দেশই এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। সবাই যার যার মতো করে চেষ্টা করছে এই পরিস্থিতি মোকাবিলার। সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে এখন তোলপাড় চলছে সারা দুনিয়ায়।
আমাদের দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অশুভ ব্যবহারের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণ আরোপে আইন প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি। আসলে যা করা উচিত তা হলো, এ মাধ্যমে বিচরণের সময় সতর্কতার বিষয়টি মাথায় রাখা। মনে রাখতে হবে, বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়ানো বাকস্বাধীনতা নয়।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক
টেস্ট ক্রিকেটে সিলেটের পথচলা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। অভিজাত সংস্করণে যা ছিল দেশের অষ্টম ভেন্যু। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পা রাখে দেশের সবচেয়ে সুন্দর এই স্টেডিয়ামটি। তবে মাঠের অভিষেক ম্যাচেই হেরে যায় বাংলাদেশ। তারপর আর কোনো পাঁচ দিনের খেলা গড়ায়নি এই মাঠে। এ নিয়ে স্থানীয়দের আক্ষেপের শেষ নেই।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর ফুরাচ্ছে। পাঁচ বছর পর আবারও টেস্ট ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
ক্রিকবাজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, ‘আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে আমরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথম টেস্ট আয়োজন করতে পারব বলে আশা করছি। এটি আমাদের জন্য খুব একটি উপলক্ষ হবে। কারণ পাঁচ বছর পর সিলেটের মাঠে টেস্ট ক্রিকেট ফিরবে।’
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল সিলেট সফর করেছে। তারা সেখানকার মাঠসহ সব সুযোগ সুবিধা পরিদর্শন করেছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়ে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। সবকিছু দেখে তারা এখানে আরও বেশি ম্যাচ আয়োজনের জন্য উন্মুখ বলে জানিয়েছেন বিসিবির নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান নাদেল।
তিনি যোগ করেছেন, ‘নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল আমাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বেশ মুগ্ধ। তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছে আমরা তাদের সব প্রত্যাশা ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারব।’
এফটিপি সূচি অনুযায়ী চলতি বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্ট ম্যাচের সিরিজে খেলার কথা নিউজিল্যান্ডের। তবে সিরিজটি হবে দুই ভাগে। প্রথম ভাগে সেপ্টেম্বরের শেষভাগে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডে খেলবে কিউইরা। এই সিরিজ খেলেই বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাবে দুই দল।
বিশ্বকাপের পর হবে দুই দলের টেস্ট সিরিজ। নভেম্বরের শেষ দিকে আবারও বাংলাদেশে আসবে কিউইরা। বিসিবি প্রস্তাবিত সূচি অনুযায়ী ২১ নভেম্বর ঢাকায় পা রাখার কথা সফরকারীদের। এরপর একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে দলটি। ২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর হবে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের প্রথম টেস্ট।
প্রথম দুই সেটই গড়িয়েছে টাইব্রেকারে। প্রথমটি নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৫ মিনিটে। দ্বিতীয়টিও টাইব্রেকারে। সেটির নিষ্পত্তি ঘণ্টার ওপরে। দুটোতেই জয় নোভাক জকোভিচের। তারপরেরটিও জিতে যান এই সার্বিয়ান। ১৪তম ফ্রেঞ্চ ওপেনের খেলায় স্পেনের আলেজান্দ্রো ফোকিনার সঙ্গে ৩-০ সেটে জয়লাভ করেন তিনি। যে জয়ে মধুর প্রতিশোধ নিয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছেন তিনি।
৩৬ বছর বয়সী এই নাম্বার ওয়ান টেনিস তারকা প্রথম সেটে কিছুটা ছন্দহীন ছিলেন। তবে চ্যাম্পিয়নদের ঘুরে দাঁড়াতে তো সময় বেশি লাগে না। জকোভিচও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তারপর ফোকিনাকে কোনো সেট জিততে না দিয়েই ম্যাচ শেষ করেন তিনি।
প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী চলা এই ম্যাচটিতে এক পেশে জয় হলেও প্রতিটি সেটেই উত্তেজনার পারদ ছড়িয়েছেন দুজন। সমর্থকেরাও বারবার হয়েছেন রোমাঞ্চিত। তবে শেষ পর্যন্ত নোভাক জকোভিচের সমর্থকেরাই হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আগামী সোমবার জকোভিচ শেষ ষোলোর ম্যাচ খেলতে নামবেন। সেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে কার্লোস আলকারাজকে পেতে পারেন তিনি।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।