
অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি অমীমাংসিত ইস্যু। তখন ব্রিটিশ সময়। ১৯৩৭ সাল। খরাপীড়িত এলাকা উত্তরাঞ্চল। পরিকল্পনা নেওয়া হয়, তিস্তা ব্যারাজ নির্মাণের। কিন্তু মূল উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৯৫৩ সালে, পাকিস্তান আমলে। ১৯৫৭ সালে নির্মাণকাজের পরিকল্পনা থাকলেও, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে তা হয়নি। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর উদ্যোগে বাংলাদেশ-ভারত শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী গঠন করা হয় যৌথ নদী কমিশন। যার মূল কথা ছিল জলসম্পদ বণ্টন, সেচ, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় নিয়ন্ত্রণ।
এরপর ১৯৮৯ সালে শুরু হয় তিস্তা ব্যারাজ নির্মাণের কাজ। ১৯৯৬ সালে, একমাত্র গঙ্গা নদীর পানি বণ্টনের চুক্তি স্বাক্ষর হলেও, আলোচনায় থাকা বাকি ১১টি নদীর ভাগাভাগির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যদিও বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত, অভিন্ন নদী রয়েছে ৫৪টি। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, একতরফাভাবে ভারত তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। উত্তরের জীবনরেখায় এমনিতেই সেচ সংকটে। আবার এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে জলবিদ্যুৎ তৈরির প্রকল্প!
গতকাল মঙ্গলবার দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায় প্রকাশিত ‘তিস্তার পানির সুযোগ আরও কমছে’ শীর্ষক প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার তিস্তা লো ড্যাম প্রকল্প (টিএলডিপি) ১ ও ২-এর ওপর একটি বিশদ প্রকল্প প্রতিবেদন (ডিপিআর) তৈরির নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশটির বড় রঙ্গিত নদীর ওপর দুটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। যার মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৭১ মেগাওয়াট। এ ছাড়া বালাসন ও রংভাং নদীর ওপর ৩৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার অন্য একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
পরিকল্পিত তিনটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের মধ্যে দুটির কারণে তিস্তার পানিপ্রবাহ আরও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে ডিসেম্বর-এপ্রিল মাসে যখন বাংলাদেশে সেচের জন্য পানির চাহিদা বেশি থাকে তখন পানিপ্রবাহ অনেক কমে যেতে পারে বলে টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের নদী ও পানি বিশেষজ্ঞরাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, দুই দেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছার মাধ্যমে দীর্ঘদিনের ঝুলে থাকা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির সহজ সমাধান করা সম্ভব।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার তিস্তা লো ড্যাম প্রকল্প (টিএলডিপি) ১ ও ২-এর ওপর একটি বিশদ প্রকল্প প্রতিবেদন (ডিপিআর) তৈরির নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশটির বড় রঙ্গিত নদীর ওপর দুটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। যার মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৭১ মেগাওয়াট। এ ছাড়া বালাসন ও রংভাং নদীর ওপর ৩৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার অন্য একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
তিস্তার পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় উর্বর পলির প্রবাহও কমে গেছে। ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলে বিরাট এলাকার জমি উর্বরতা হারিয়ে চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি বর্ষা নদীভাঙনের কবলে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে সেখান বিশাল জনগোষ্ঠী। তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন করতে দেরি হওয়ায় ঢাকা কয়েক বছর ধরে একাধিকবার দিল্লিকে এসব সমস্যার কথা জানালেও দিল্লি ও কলকাতার সম্পর্কের টানাপড়েনের কারণে শেষ পর্যন্ত এ নিয়ে কোনোই অগ্রগতি হয়নি।
কোনো ধরনের উদ্যোগ ছাড়াই, সমস্যা জিইয়ে রেখে আলোচনা হলে সমাধান আসবে না। আর এই উদ্যোগটা নিতে হবে ভারতকেই। পরীক্ষিত মিত্র দেশ ভারত, ঠিক কোন ধরনের অর্থনৈতিক সুবিধার কথা চিন্তা করে এমনটি করছে তা সহজেই বোধগম্য। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকা জরুরি। তাতে দুই দেশই লাভবান হবে।
নির্বাচন যত এগোচ্ছে খুচরা দলগুলোর কদর-সমাদর তত বাড়ছে। বরাবর সব নির্বাচনে কম-বেশি এমনটি হয়। তবে এবার কিঞ্চিৎ রকমফের। নাম নামসর্বস্ব হলেও, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন না থাকলেও তাদের কাছে নিতে বেশ দাওয়াই ছড়ানো হচ্ছে। আর দাওয়াইতে এগিয়ে ক্ষমতাসীনরা। বিএনপি যেখানে জোট ভেঙে দৃশ্যত ছোটদের দূরে সরিয়ে অনেকটা একলা হাঁটছে, সেখানে সরকার মিতালি বাড়াচ্ছে। সেটাও আবার ডান বাঁকে। হেফাজতে ইসলামের মতো বিশাল একটি শক্তি হাতে থাকার পরও দক্ষিণপন্থি-ধর্মাশ্রয়ী ইসলামি দলগুলোর দিকে মোড় নেয়া আওয়ামী লীগের বাম মিত্রদের জন্য কষ্টের।
আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালের নির্বাচনে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসে মন্ত্রিসভায় মহাজোট ও ১৪ দল শরিকদের জায়গা না দিলেও হাত ছাড়া করেনি। কিছু সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বস মানিয়ে রাখছে। সরকারের পকেটে ঢুকে পড়া বামদের অভিমান করার জায়গাও নেই। মাঝেমধ্যে সরাসরি তাদের খোঁজ নেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। নিয়মিত ভালো-মন্দ দেখার বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্তও আছেন কয়েকজন। ভোটের অঙ্ক নয়, সুশীল সমাজ ও শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনকে হাতে রাখতে বামধারার দলগুলোকে কাজে লাগে। আর ভোটের মাঠে ফ্যাক্টর ডানরা। সামাজিক ও ধর্মীয় ময়দানে তাদের অবস্থান বেশ কড়কড়া। তাদের প্রতি ধর্মাশ্রয়ী সাধারণ মানুষের এক ধরনের আগ্রহ রয়েছে। সরকার তাদের এ শক্তিটি আয়ত্তে নিতে চায়। তবে চরমোনাইর পীরের ইসলামী আন্দোলনসহ দক্ষিণপন্থি কয়েকটি দলকে নিমিষে বাগে আনা যায় না। মসজিদ, মাদ্রাসা ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের বেশ গাঁথুনি রয়েছে। কিছু মুসলিম রাষ্ট্রের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ আছে তাদের। চাইলেই তাদের সরকারপন্থি করে নেয়া অসম্ভব। তাই তারা যেন বিএনপির দিকে একেবারে হেলে না যায়, তা নিশ্চিত করতে চায় সরকার।
এ লক্ষ্যে রয়েছে বিশেষ এজেন্ডা। পরিকল্পনা মতো সরকার কোনোটির ওপর চাপ বাড়াচ্ছে, কোনোটিকে লায় দেওয়ার প্যাকেজ নেওয়া হয়েছে। ইসলামি কিছু দলকে দিয়ে একটি জোট বা ফ্রন্ট করে দেওয়ার সরকারি আয়োজনও রয়েছে। ইসিতে নিবন্ধিত ৪০টি দলের মধ্যে ধর্মভিত্তিক ইসলামি দল ১০টি। এর মধ্যে ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও খেলাফত মজলিসসহ কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দল ৬টি। তারা নৈতিকভাবে জামায়াতবিরোধী। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কয়েক নেতা তাদের অভিভাবকের মতো। তাদের সঙ্গে খুচরা নামসর্বস্ব আরও কয়েকটিকে দিয়ে একটি ইসলামি মঞ্চ বা জোট মাঠে নামিয়ে দেওয়ার সরকারের লাভের অঙ্ক সাজিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের অতি উৎসাহে বিরক্ত সরকারের সহযোগী ১৪ দল। তারা চায়, জামায়াতের সঙ্গে সরকারের সামান্যতম সংশ্রবও না থাকুক। চরমোনাইর পীরের ইসলামী আন্দোলনের ব্যাপারে সরকারের মতিগতিকেও ভালোভাবে নিচ্ছে না তারা। এতে অদূর ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ বড় রকমের ক্ষতির শিকার হবে বলে মত বাম মিত্রদের। তাদের পরামর্শ, চরমোনাইর পীরের দলকে দিয়ে ধর্মভিত্তিক জোট তৈরি করে দেওয়া। এ চিকন বুদ্ধিটা এসেছে সরকারে সঙ্গে লেগে থাকা বাম ঘরানা থেকে। এ ঘরানার আরেকটি গ্রুপ মনে করে, সরকার ডানে বেশি হেলে বামপাড়াকে অগ্রাহ্য করছে। তাদের বেশি ভয় জামায়াতকে নিয়ে।
পরিস্থিতিটা ইসলামি দলগুলোর জন্য মন্দের ভালো। সামগ্রিক বিচারে তারা একে নিজেদের এক ধরনের জয় ভাবছে। ফ্যাশনের মতো হলেও দাড়ি রাখছে এ প্রজন্মের তরুণ-যুবকরা। বোরকা-হিজাবের প্রচলন বেড়েছে। কাউকে দাড়ি রাখা বা বোরকা পরাতে অনেক কষ্ট করতে হতো এসব দলের নেতাকর্মীদের। গত কয়েক বছরে কেবল ব্যাংক-বিমা নয়, সাবান-বিস্কুটে পর্যন্ত ইসলাম শব্দ ব্যবহার হচ্ছে। হালাল সাবান, হালাল বিস্কুট, হালাল মাংসসহ কত কী? ইসলামি বা শরিয়া ব্যাংকিং নিয়ে এখন কোনো প্রশ্ন নেই। প্রতিষ্ঠানের নামে সমানে ইসলামি বা আরবি শব্দ যোগ হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনীতির মাঠে বিচরণ। সেটাও উতরে যাওয়ার লক্ষণ দেখছে তারা। শোনা যাচ্ছে, জামায়াতের সঙ্গে কেবল জোটসঙ্গী বিএনপি নয়, সরকারের কোনো কোনো মহলের সঙ্গেও তাদের হিডেন কথাবার্তা হচ্ছে। বিএনপির সঙ্গে মেলামেশা না করলে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনসহ মার্কাও পাইয়ে দেয়ার আশ্বাস মিলছে। কিন্তু আপাতত তারা শুধু টিকে থাকতে চাইছে। উচ্চ আদালতে নিবন্ধন নিয়ে চলমান মামলা লড়ার প্রস্তুতিও আছে। সামনের তারিখে হাজির হওয়ার কসরত চলছে। আবার বিএনপিকেও ছাড়ছে না।
প্রকাশ্যে বিএনপির সঙ্গে তাদের জোট না থাকলেও ‘যুগপৎ আন্দোলন’ নামে জামায়াত দূরে দূরে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে পরকীয় স্টাইলে। বিএনপির চলমান আন্দোলন কর্মসূচি সঠিকভাবে হচ্ছে না মনে করলেও তারা সরবে কিছু বলে না। তবে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে অব দ্য রেকর্ডে বসে, কথা বলে। ভুল ভাঙানোর চেষ্টা করে। মনে করিয়ে দেয় চারদলীয় জোট সরকারের ক্ষমতার শেষ দিকে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন নিয়ে সহিংসতায় জামায়াত ও ছাত্রশিবিবের কয়েকজন নেতাকর্মী নিহতের কথা। এরপর যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসিতে দলের শীর্ষনেতাদের মৃত্যুদণ্ডের কথা মনে করিয়ে দেয়। ওই সময় বিএনপির ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে জামায়াতের মধ্যে। বিএনপির সঙ্গে না থাকলে এ নেতাদের মৃত্যুদণ্ড নাও হতে পারত বলে দাবি তাদের। নেতাদের বাঁচানোর আন্দোলনে বিএনপিকে তেমন পাশে পায়নি বলেও ভেতরে ভেতরে পীড়া ভোগ করছে তারা।
শুধু নেতাদের হারায়নি, দলের নিবন্ধনও হারিয়েছে জামায়াত। এতে জামায়াত তাদের ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীকে ভোটের যোগ্যতা হারায়। তা সয়েও বিএনপির পাশে থাকতে থাকতে একপর্যায়ে জোটে নেই বলে ভিডিও বার্তা দেয়া হয়। এর কয়েক দিন পর বিএনপিও ২০ দলীয় জোট ভেঙে গেছে বলে জানায়। এমন কঠিন অবস্থার মধ্যে দল তিন ভাগ হয়ে গেছে। এবি পার্টি-বিডিপি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। সরকারের সঙ্গে দল দুটির বিশেষ যোগাযোগের অভিযোগ নিয়ে জামায়াত নেতারা কিছু বলেন না। আবার দূর থেকে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করে বিএনপির সঙ্গে। যুগপৎ কর্মসূচির শুরুর দিকে গত ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিল পালনকালে রাজধানীর মৌচাকে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশ ও জামায়াতের কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। গ্রেপ্তার করা হয় দলটির কয়েকজন কর্মীকে। ওই ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি দেওয়া বা খোঁজখবর না নেওয়ায় জামায়াত মনঃক্ষণœœ। এরপর থেকে যুগপৎ কর্মসূচিতে দৃশ্যত নেই জামায়াত। একদিকে জেল-জুলুমসহ নানা নিপীড়নে কাহিল দলের আমির, সেক্রেটারি জেনারেল থেকে শুরু করে তৃণমূলের নিরীহ কর্মী পর্যন্ত, আবার মিত্রসঙ্গী বিএনপির কাছেও উপেক্ষিত জামায়াত। বিএনপির একটি অংশ তাদের স্পেস দিতে চায় না। তাচ্ছিল্যের শিকারও হচ্ছে কখনো কখনো। কঠিন এই বাস্তবতা মেনে নিয়ে জামায়াত নিজস্ব সক্ষমতা বাড়াচ্ছে বিভিন্ন উইংয়ে। সরকার তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে দিলেও এ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত না হওয়ার সিদ্ধান্তে চলে গেছে জামায়াত। জামায়াত জানে, সরকার চাইলেই তাদের রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করে দিতে পারে। কেন করে না, তাও জানে। সময় পাল্টালে পরিস্থিতি এমন থাকবে না, তা বিশ্বাসে রেখে কর্মীদের টিকে থাকার বার্তা দিচ্ছে। আর লক্ষণ হিসেবে দেখাচ্ছে, সরকারের ডানদিকে হেলে পড়া ও ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টাকে। এর মাঝে লংটাইমে দলের জন্য ভালো নমুনা দেখছে তারা।
লেখক: কলামিস্ট ও বার্তা সম্পাদক বাংলাভিশন
বাংলাদেশের প্রখ্যাত লেখক ও দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের জন্ম ১৯০০ সালের ১৭ ডিসেম্বর (১৩০৭ বঙ্গাব্দের ৩ পৌষ) বরিশালের লামছড়ি গ্রামের এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে। তার প্রকৃত নাম আরজ আলী। বাবার নাম এন্তাজ আলী মাতুব্বর। তিনি গ্রামের মক্তবে কিছুকাল পড়াশোনা করার পর স্বচেষ্টা ও সাধনায় বিজ্ঞান, ইতিহাস, ধর্ম, দর্শনসহ নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেন। পরে এক সহৃদয় ব্যক্তির সহায়তায় তিনি স্কুলের প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। নিজের জ্ঞানের পিপাসা মেটাতে তিনি বরিশাল লাইব্রেরির সব বাংলা বই একজন মনোযোগী ছাত্রের মতো পড়েন। দর্শন ছিল তার প্রিয় বিষয়। মূলত বস্তুবাদী দর্শনে তিনি বিশ্বাসী ছিলেন। অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে তিনি লেখালেখি করেছেন। তার রচনায় মুক্তচিন্তা ও যুক্তিবাদী দার্শনিক প্রজ্ঞার ছাপ রয়েছে। তার লিখিত বইয়ের মধ্যে ‘সত্যের সন্ধান’, ‘সৃষ্টি রহস্য’, ‘সীজের ফুল’, ‘শয়তানের জবানবন্দি’ অন্যতম। মানবকল্যাণ ও বিশ্বধর্ম আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রদের জন্য বৃত্তি প্রদান এবং রচনা প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করেন। মানবতার সেবায় তিনি নিজ দেহ ও চক্ষু দান করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্যপদ লাভ করেন। এ ছাড়া ১৯৭৮ সালে হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার এবং ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সম্মাননা লাভ করেন তিনি। আরজ আলী মাতুব্বর ১৯৮৫ সালের ১৫ মার্চ (১৩৯২ বঙ্গাব্দের ১ চৈত্র) মৃত্যুবরণ করেন।
এবার গ্রীষ্মকালের সূচনাতেই বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকা-ে দেশের মানুষ আতঙ্কিত হতে শুরু করেছে। বিস্ফোরণের সংবাদে মানুষ এখন এতই ভীত হয়ে গেছে যে, যেকোনো জায়গাতেই তারা একটা বিস্ফোরণ আঁচ করছে। এই আতঙ্ক অবশ্য একদিক থেকে ভালোই। যদি তার প্রতিকার করার জন্য মানুষ ভাবতে শুরু করে। বহু দিন ধরে জরাজীর্ণ ভবনে এখানে মানুষের বাস। বিল্ডিং পরিদর্শক নেই, সিটি করপোরেশনের কোনো দায় নেই। বিস্ফোরক বা নানা ধরনের দাহ্যপদার্থের জন্য নেই কোনো রাষ্ট্রের খবরদারি। এক অনিরাপদ অবস্থায় মানুষ থাকতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমন অনেক নবনির্মিত ভবনে গিয়েছি যেখানে কোনো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই। কোথাও হয়তো শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা আছে কিন্তু সূর্যালোক বা বাতাস ঢোকার কোনো ব্যবস্থা নেই।
পুরান ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায়, কংক্রিটের বা শতাব্দী প্রাচীন সুরকি ছাদের নিচে বাঁশের ঠেকা দিয়ে রাখা হয়েছে। সিঁড়িগুলো এতই সরু যে, কোনো দুর্ঘটনায় মানুষ নিচেও নামতে পারবে না। সিঁড়িতেই একজন আরেকজনের ঠেলাঠেলিতে ওখানেই একটা সমাধি হয়ে যেতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায়, বাড়িটির দখল রাখতে গিয়ে যেকোনোভাবে জীবনবাজি রেখে এ ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। কিন্তু সেখানেও সিটি করপোরেশনের ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। সরকারের খাজনাও দিতে হচ্ছে। তারপর আছে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইনের প্রাচীনব্যবস্থা। এ ব্যবস্থার মধ্য থেকে এমন একটি অভ্যাস রয়ে গেছে যে, মনে হতে থাকে এটাই সর্বশ্রেষ্ঠ বাঁচার উপায়। শুধু ঢাকায় নয় জেলা বা উপজেলা শহরে একই অবস্থা। কোথাও কেউ পরিকল্পনায় ধার ধারে না। কোথাও নগর-পরিকল্পনার লোকটি নেই। এ যেন একটা মেঠোপথ, তার দুধারে ইচ্ছামতো বাড়িঘর স্থাপনা গড়ে উঠছে। গ্রামের ধানের জমিতে ইচ্ছামতো বাড়িঘর উঠিয়ে দিগন্ত ঢেকে দিচ্ছে, তাতেও কোথাও কোনো আপত্তি বা নিষেধ নেই।
স্থানীয় সরকার বলে একটা ব্যবস্থা অনেক দিন ধরে চলে আসছে। সেখানে একসময় দলীয় পরিচয়ে নির্বাচন হতো না। এখন সেখানে দলীয় পরিচয় এসে গেছে। দলের নমিনেশন প্রয়োজন। বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে সেই নমিনেশন পেতে হয়। উন্নয়ন কর্মকান্ডে তাই বিপুল উৎসাহ তাদের। তারপর নির্বাচনের সময় ভোটারদের কোথাও কোথাও প্রয়োজন। তাই ভোট উন্নয়ন কর্মকা-কেও নিয়ন্ত্রণ করে। সব জায়গার মতোই দুর্নীতিই এখানে প্রধান বিষয়। লাখো কোটি টাকার নমিনেশনের টাকা তুলতে গিয়ে আর কী উপায়? কিন্তু তাতে কী লাভ হলো দেশের? প্রকারান্তরে দুর্নীতিকে ব্যাপকতা দিয়েই প্রাচীন এবং নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা।
একদা আমরা প্রবীণদের দেখেছি, ইউনিয়ন কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট হতে। কেউ কেউ আজীবন প্রেসিডেন্ট থাকতেন। সারাজীবনই তারা দেশের সেবা করতেন। পৌরসভার সদস্য এবং চেয়ারম্যানদের দুয়ার মানুষের জন্য খোলা থাকত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও কিছু কিছু জায়গায় জনহিতকর কাজে তাদের পাওয়া যেত। কিন্তু আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্রের পথ ধরে এ ব্যবস্থার যে অবক্ষয় শুরু হলো তা বহু বছর পর্যন্ত গণপ্রতিধিনিদের আনুগত্য, শুধু সরকারের প্রতিই রইল। ১৯৭৫ সালের পর সামরিক শাসনের আমলে জনগণের প্রতি জবাবদিহি একেবারেই নিঃশেষ হতে চলল। এ অবস্থায় একচেটিয়া রাজনৈতিক কর্তৃত্বে আর গণমুখী ব্যবস্থাটি থাকল না। নাগরিকদের কাছ থেকে প্রচুর ট্যাক্স আদায়, সরকারের বার্ষিক অনুমোদিত অর্থ পেয়েও জনকল্যাণের বিষয়টি আর গুরুত্বপূর্ণ থাকছে না। নাগরিকদের সুস্বাস্থ্যের তদারকি করার প্রয়োজনটিও গণপ্রতিনিধিদের কর্মপরিধির বিষয় নয়।
শহরগুলো বিশেষ করে ঢাকা শহরের দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিশাল বিশাল জনপদ গড়ে উঠেছে। অধিকাংশ স্থানে রাজউক বা অন্যান্য সংস্থা কোনো ধরনের অগ্রপশ্চাৎ চিন্তা না করেই দালান নির্মাণের অনুমোদন দিয়ে দিচ্ছে। ধরা যাক, পান্থপথ, এই রাজপথে কতগুলো হাসপাতাল, বিপণি, সরকারি-বেসরকারি অফিসের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে? যদি একটু চিন্তা করা যায়- প্রতিদিন কতগুলো গাড়ি, কত মানুষজন এই পথ দিয়ে যাতায়াত করবে, কোথায় তাদের গাড়ির পার্কিং, কত ধরনের গাড়ি চলাচল করবে তার একটা মোটা হিসাবও যদি ভাবা যেত, তাহলে কোনো বিবেচনাতেই এসব অনুমোদন পাওয়ার যোগ্যতা রাখত না। কিন্তু দুর্নীতির সহজ পথে অর্থের বা ক্ষমতার প্রভাবে এসব অনুমোদন পেয়ে গেছে।
নগরের প্রধান বয়স্ক সিটি করপোরেশনের কর্তৃপক্ষও বিষয়গুলো নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন বোধ করেনি। জনকল্যাণের মহত্তম পথই হচ্ছে স্বাধীনতা। এখানেই যুগে যুগে দেশে দেশে মানুষ স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছে। নিজেদের মতো করে একেবারেই স্থানিক বিবেচনায় স্বদেশকে গড়ে তোলার সংগ্রামটাই তো স্বাধীনতার সংগ্রাম। আমাদের দেশেও লাখ লাখ মানুষ স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছে, সংগ্রাম করেছে। কি দুঃসাহসকে স্বীকার করে লাখো কোটি মানুষ কত ত্যাগ স্বীকার করল! কিন্তু আমরা স্বাধীনতাকে, মুক্তিযুদ্ধকে সংহত করতে শিখলাম না। একসময় সেনাবাহিনী মনে করল, তারাই দেশের সর্বোচ্চ মঙ্গল করবে। সে এক অসম্ভব কল্পনা হয়ে দাঁড়াল। রাজনৈতিক দল ক্ষমতার লড়াই করছে কিন্তু সংসদটাকেও হাজির করতে পারেনি। জনপদকে নিরাপদ করার যে কাজটুকু নির্বিঘেœ করা যেত, তাতেও কাউকে মনোযোগী হতে দেখা গেল না।
দেশে অবকাঠামোগত একটা উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু সেই অবকাঠামোকে ব্যবহার করার কোনো সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় কত তাজা প্রাণ বলি হয়ে যাচ্ছে, তার খবর আমরা জানি! সড়ক পরিবহনে আমরা কোনো দায়িত্বশীলতা দেখতে পাই না। যাত্রীসাধারণ এক চরম অসহায় অবস্থায় যানবাহন ব্যবহার করে থাকেন। সেখানে যে নেতৃত্ব আছে, সে নেতৃত্বও দায়িত্বহীন। তারা বিনাপরীক্ষায় চালকদের গাড়ি চালানোর লাইসেন্স দিতে বলে। কোনো কঠোর আইন করতে গেলে ধর্মঘটের হুমকি দেয়। ভাড়া বাড়ানো হয় ইচ্ছামতো। সেখানেও এক বিশাল দানবীয় সংগঠিত শক্তির তৎপরতা লক্ষ করা যায়। রাজনৈতিক দলের সব কর্মকা- ক্ষমতায় থাকার এবং ক্ষমতায় যাওয়াকে কেন্দ্র করে। নাগরিকদের অন্য কোনো সমস্যা নিরসনে কোনো উদ্যোগ নেই।
’৭৫ থেকে ৯০ পর্যন্ত একটা দীর্ঘ সময় গেছে শুধু সেনাবাহিনীর মধ্যেই ক্ষমতার লড়াই নিয়ে। সে সময় মানুষ কিন্তু ক্ষমতার কেন্দ্রকে পরিবর্তন করার জন্য লড়াই করেছিল। ’৫২ বছর পর মার্চ মাসে দাঁড়িয়ে যদি আমাদের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের দিকে তাকাই তাহলে একটা ঝলমলে শপিংমলের মতো বাংলাদেশকে দেখতে পাই, যেখানে শিক্ষা-সংস্কৃতি উৎসারিত মূল্যবোধ হারিয়ে বসে আছি। তার বদলে পদে পদে দুর্নীতিগ্রস্ত একটা দেশ দেখতে পাই। হাজার বছর ধরে এই ভূখ-ের মানুষ যে সমাজটা নির্মাণ করেছিল তা ভেঙেচুরে অদ্ভুত একটা দেশ গড়ার চেষ্টা চলছে।
একদা বঙ্গবন্ধু উচ্চারণ করেছিলেন বাংলাদেশ একটি সাংস্কৃতিক রাষ্ট্র অর্থাৎ সংস্কৃতিই নির্দেশ করবে রাষ্ট্রের কানুন। অতীতের সবকিছুই যে ভালো ছিল তা বলা যাবে না, বিশেষ করে দারিদ্র্য। কিন্তু সেই দারিদ্র্যবিমোচনের জন্য আমরা জাতীয় কোনো পথ খুঁজে পাইনি, আমাদের দেশের শ্রমিকরা আয়ের উৎস হিসেবে খুঁজে নিয়েছে এক আদিম ব্যবস্থা। মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমিতে কিশোর শ্রমিকরা উঠের দৌড়ের সহিসের কাজ খুঁজে নিয়েছে। এ করেই পেটেভাতে, প্রবল অনিশ্চয়তায় চলছে সেই কাজ। বিদেশে কায়িক শ্রমের বিনিময়ে আসা বৈদেশিক মুদ্রায় আমাদের রিজার্ভ গড়ে ওঠে, সেই সঙ্গে তৈরি পোশাকশিল্পে নির্মম শ্রম শোষণ তো আছেই।
রাষ্ট্রটা তুলে দেওয়া হয়েছে দায়িত্বহীন ব্যবসায়ীদের হাতে, যারা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য এক লাফে বাড়িয়ে দেয়। রাষ্ট্রের কোনো নিয়ন্ত্রণ তারা মানে না। বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধ তাদের এ সুযোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
স্বাধীনতার পর অর্ধশতাব্দী পার হয়ে গেছে। সময়টা খুব কম নয়। অনেক সময়ের আমরা অপচয় করে ফেলেছি। এর মধ্যে ভালো দৃষ্টান্ত যে নেই তা নয়। কিন্তু মূল্যবোধহীন উন্নয়ন আমাদের রাষ্ট্রটাকে আরও অমানবিক করে তুলতে পারে তার কথা কি আমরা ভাবছি?
১৯৭১ সালের মার্চ মাসের উত্তাল দিনগুলোর স্বপ্নের মধ্যে, কোন বাংলাদেশ অবস্থান করছিল?
লেখক: নাট্যকার, অভিনেতা ও কলামিস্ট
সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানোর স্বাধীনতা কোনোভাবেই বাকস্বাধীনতা নয়। জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক ২৫ জন বিশেষজ্ঞ এক যৌথ বিবৃতিতে এ কথা জানান। বিবৃতি দেওয়া জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আফ্রিকার বংশোদ্ভূত জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ, ব্যবসা, আন্তঃদেশীয় করপোরেশন এবং মানবাধিকারবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের সভাপতি ও সদস্যরাও রয়েছেন।
তারা বলেছেন, সম্প্রতি টুইটারে বর্ণবাদী শব্দের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়েছে। এর মাধ্যমে আফ্রিকার জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা রুটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নেটওয়ার্ক কনটেজিয়ন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের’ প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বিবৃতিতে বলেছে, ইলন মাস্ক টুইটার অধিগ্রহণের প্রথম দিনগুলোতে, বিশেষ করে অধিগ্রহণের প্রথম ১২ ঘণ্টায় ঘৃণ্য ও বর্ণবাদী একটি শব্দের ব্যবহার আগের চেয়ে প্রায় ৫০০ গুণ বেড়েছে। টুইটার ওই বিদ্বেষমূলক প্রচারণাকে উপহাস বলে আখ্যা দিয়ে বলেছিল, সেখানে বিদ্বেষের কোনো সুযোগ নেই।
বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের বিরোধিতা করেন এমন অনেকের দাবি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নীতির বিষয়ে অঙ্গীকার আর তা বাস্তবায়নে পার্থক্য আছে। বিশেষ করে ফেসবুকে নির্বাচনী বিভ্রান্তি, ষড়যন্ত্রর তত্ত্বের বিষয়ে আলোচনা ও উসকানিমূলক বিজ্ঞাপন অনুমোদনের ক্ষেত্রে এটি উল্লেখযোগ্য। গবেষণায় দেখা গেছে, মেটা নির্দিষ্ট কিছু বিজ্ঞাপন আটকাতে পারে না। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অনেক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মেটা ২০২০ সালে নজরদারি পর্ষদের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেয়। এর কার্যকারিতা দেখতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে।
এটি এখন বাস্তবতা যে, আমাদের দেশেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অতিমাত্রায় জনপ্রিয়তা পেয়েছে। একদিকে এর অত্যধিক ব্যবহারিক গুরুত্ব, অন্যদিকে অপব্যবহারের মাত্রা পুরো সমাজে খারাপ প্রভাব ফেলছে। মিথ্যা ভিত্তিহীন প্রচারণা, সাম্প্রদায়িকতা, কূপম-ূকতা, অসহিষ্ণুতা, সহিংসতা, বিরোধ, বিচ্ছেদ জীবনপ্রবাহের সাবলীল গতিময়তায় প্রচণ্ড অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। নেতিবাচক বক্তব্য পরিবেশন অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করছে।
২০১০ সালে বুকার পুরস্কার বিজয়ী খ্যাতিমান ব্রিটিশ লেখক হাওয়ার্ড জ্যাকবসন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘২০ বছরের মধ্যে শিশুদের মূর্খ বানাবে ফেসবুক-টুইটার। স্মার্টফোনের ব্যবহার এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নাটকীয়ভাবে তরুণ প্রজন্মের যোগাযোগের পদ্ধতি বদলে যাচ্ছে। আর এসবের কারণে তারা হারাচ্ছে বই পড়ার অভ্যাসও।’
অপরাধবিজ্ঞানী-বিশেষজ্ঞদের মতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইদানীং আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে। এ মাধ্যম আমাদের মানবিক গুণাবলিকে প্রভাবিত করছে। মানি লন্ডারিং, আক্রমণাত্মক গেম, ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে অনেকে। মানসিকভাবে অনেকেই আছে অস্থির অবস্থায়। এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে ক্রমেই রাগ-ক্রোধ-অবসাদ-বিষণ্নতা-একাকিত্ব-হতাশা-হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।
ইতিবাচক অবদান রাখার পাশাপাশি প্রবাসী ও অভিবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে অনেকেই দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এদের সরব উপস্থিতি ও দেশবিরোধী আপত্তিকর মন্তব্য-বক্তব্য প্রচারের কারণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তারা যেসব দেশে অবস্থান করছে, সেসব দেশের নানা আইনি জটিলতার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া অনেক সময় দুরূহ হয়ে পড়ে।
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, লিঙ্কডিন, স্কাইপে প্রভৃতি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সর্বাধিক জনপ্রিয় ফেসবুক। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৮০ শতাংশের রয়েছে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এবং এর একটি বিশাল অংশ কিশোর-কিশোরী।
ভারতে ২০২১ সালে প্রণীত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা মতে, ফেসবুক-টুইটার-হোয়াটসঅ্যাপ ও অন্যান্য যোগাযোগমাধ্যমের কর্র্তৃপক্ষকে ভারতীয় সরকার কোনো ব্যবহারকারীর পোস্ট মুছে দেওয়া এবং ব্যবহারকারীর নাম-পরিচয় প্রকাশের অনুরোধ করতে পারবে। ঘৃণ্য ও হিংসাত্মক বিষয়বস্তু প্রকাশের কারণে সংস্থাগুলোর বৈশ্বিক টার্নওভারের ১০ শতাংশ পর্যন্ত আর্থিক দণ্ড ও প্রযুক্তি নির্বাহীদের জন্য তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে অস্ট্রেলিয়ায় ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ আইন করা হয়।
২০২১ সালের নভেম্বরে কার্যকর করা আইনে রাশিয়াকে জরুরি অবস্থায় বিশ্বব্যাপী ওয়েব সংযোগ বন্ধ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। রাশিয়ার ডেটা আইনে সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলো কেবল দেশের অভ্যন্তরীণ সার্ভারগুলোয় রাশিয়ানদের সম্পর্কে ডেটা সংরক্ষণ করতে পারবে। শিশু পর্নোগ্রাফি, হেট স্পিচ এবং বিনা সম্মতিতে কারও অন্তরঙ্গ ছবি প্রকাশ করাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে কানাডা সরকার কর্র্তৃক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ আইনে পুলিশ সোশ্যাল প্ল্যাটফরম এবং বক্তব্য পোস্টকারীর বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারবে।
চীন সাইবারস্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ওয়েবসাইট বন্ধ ও জুয়া খেলাসহ ক্ষতিকারক নানা মোবাইল অ্যাপ অপসারণ করে থাকে। দেশটিতে থাকা কয়েক হাজার সাইবার পুলিশের কাজ হচ্ছে সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফরম এবং সংবেদনশীল স্ক্রিন বার্তাগুলোকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা।
একটি বিষয় খুবই আলোচনা হচ্ছে। তা হচ্ছে, ইন্টারনেটে ক্ষতিকারক কনটেন্ট নিয়ে। ক্ষতিকারক বলতে পর্নোগ্রাফি, অসত্য ও মনগড়া তথ্যসংবলিত রিপোর্ট, সমাজের সঙ্গে সঙ্গতিহীন ছবি বা ভিডিও ক্লিপ, ব্যক্তিগত মুহূর্তের ভিডিও ক্লিপ ইত্যাদি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, যেমন ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার ইত্যাদিতে প্রচার করা হচ্ছে এসব ক্ষতিকারক কনটেন্ট। যার যা খুশি লিখে দিচ্ছে। যেমন খুশি ছবি বা ভিডিও আপলোড করছে। ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করে ছেড়ে দিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এসব ক্ষতিকারক কনটেন্ট আমাদের নতুন প্রজন্মকে বিপথে চালিত করছে। সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কর্র্তৃপক্ষের কৃপার ওপর নির্ভরশীল। তারা তাদের মতো করে কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড বানায়। সেটা আমাদের মেনে নিতে হয়।
সারা দুনিয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর ব্যাপক প্রসারে একদিকে যেমন মানুষ অনেক সুফল পাচ্ছে, তেমনি ক্ষতিকারক এই দিকটি নিয়ে উদ্বিগ্নও হচ্ছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের সব দেশই এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। সবাই যার যার মতো করে চেষ্টা করছে এই পরিস্থিতি মোকাবিলার। সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে এখন তোলপাড় চলছে সারা দুনিয়ায়।
আমাদের দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অশুভ ব্যবহারের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণ আরোপে আইন প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি। আসলে যা করা উচিত তা হলো, এ মাধ্যমে বিচরণের সময় সতর্কতার বিষয়টি মাথায় রাখা। মনে রাখতে হবে, বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়ানো বাকস্বাধীনতা নয়।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামে স্ত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় চাচাতো ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে পলাশ হোসেন (২৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
শনিবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত পলাশ হোসেন ওই গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, নিহত পলাশ হোসেনের চাচাতো ভাই সুমন প্রায়ই পলাশের স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করত। শনিবার সন্ধ্যায় আবারো উত্ত্যক্ত করে। পলাশ বাড়িতে এলে বিষয়টি তাকে জানায় তার স্ত্রী। এ ঘটনায় পলাশ তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে বিষয়টির প্রতিবাদ করতে গেলে উভয়ের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সুমন ছুরি দিয়ে পলাশকে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই পলাশ মারা যায়।
মহেশপুর থানার ওসি খন্দকার শামীম উদ্দিন বলেন, নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। নিহত পলাশ পেশায় ভ্যানচালক ছিলেন, সঙ্গে কৃষিকাজও করত।
মার্চে ঘরের মাঠে দুটি প্রীতি ম্যাচের পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেখা যায়নি আর্জেন্টিনাকে। তিন মাস পর আগামী মাসে তারা খেলবে আরও দুটি প্রীতি ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে সেই ম্যাচের জন্য ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করেছেন লিওনেল স্কালোনি। তবে ঘোষিত সেই দলে নেই লাউতারো মার্তিনেজ।
আর্জেন্টিনার ক্রীড়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস ও ওলে তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গোড়ালির চোটের কারণে মার্তিনেজ চিকিৎসাধীন আছেন। তাই তাকে জাতীয় দলের স্কোয়াডে রাখা হয়নি।
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ইন্টার মিলানের হয়ে গোল করেছিলেন। ফাইনালেও তাকে ইতালিয়ান ক্লাবটির হয়ে খেলতে দেখা যেতে পারে। তারপরই তিনি মাঠের বাইরে চলে যাবেন। ঐ সময়ে তিনি বিশ্রামে থাকবেন। আর তাই কোচ স্কালোনি তাকে দলে রাখবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের অন্যতম সদস্য মার্তিনেজ। তবে পুরো টুর্নামেন্টে তিনি ব্যাথানাশক ঔষধ খেয়ে খেলছিলেন।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ও ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা।
রেফারির বাঁশি বাজার তিন মিনিটের মধ্যেই রিয়াল মাদ্রিদের জালে জড়ায় বল। রাফা মিরের দুর্দান্ত এক গোলে লিড পায় সেভিয়া। তবে শেষ অবধি তারা ধরে রাখতে পারেনি সে হাসি। রদ্রিগোর জোড়া গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে রিয়াল।
রাতে লা-লিগার ম্যাচে সেভিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। খেলার তৃতীয় মিনিটেই লিড পেয়েছিল সেভিয়া। তবে ২৯ মিনিটে রদ্রিগো সমতায় ফেরান রিয়ালকে। সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
বিরতির পর ফের বাড়ে আক্রমণের ধার। যার ফলে ৬৯ মিনিটে দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় রিয়াল। এবারও নায়ক রদ্রিগোই। এবারেরটি অবশ্য টনি ক্রুসের সহায়তায়। পরে আর কোনো গোল না হওয়ায় ২-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মাদ্রিদের ক্লাবটি।
তবে ম্যাচের ৮৩ মিনিটে লাল কার্ড দেখে আকুনা। হারের আগে সেভিয়ার আর্জেন্টাইন এই ডিফেন্ডারের ভুলে ১০ জনের দল নিয়ে খেলতে হয় রিয়ালকে।
শুরুতে গোল হজম করলেও ৬৭ শতাংশ সময় নিজেদের দখলে বল রেখেছিল রিয়াল। ছয়বার আক্রমণে গিয়েছিল তারা, যার মধ্যে তিনটি শট ছিল গোলবার লক্ষ্য করে।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
সংলাপে রাজনৈতিক সংকট দূর হওয়ার নজির তৈরি হয়নি এখনো। তবুও নানা সময়ে সংকট নিরসনে রাজনীতিতে সংলাপ করা নিয়ে আলোচনা হয়। সংলাপের আশ্রয় নিতেও দেখা গেছে দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভিন্ন মেরুতে অবস্থান থাকায় আবারও রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় আলোচনায় এসেছে ‘সংলাপ’। যদিও প্রধান দুই দলের নেতারা সংলাপে অনীহা প্রকাশ করে আসছেন। আবার আড়ালে আলাপে দুই দলের আগ্রহও দেখা গেছে।
অন্তরালের সংলাপ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার আড়ালে আলাপের মূল কারণ হলো বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বড় একটি অংশ বয়স্ক হয়ে গেছেন। তাদের অনেকের এবারের পরে নির্বাচন করার সক্ষমতা আর থাকবে না। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকতে গিয়ে সামাজিক মর্যাদা নষ্ট হয়েছে। এ সময় সংসদ সদস্য হয়ে মর্যাদা নিয়ে চলতে চান তারা। বিএনপির ওই অংশের সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতাও রয়েছেন যারা নির্বাচনে যেতে চান। ফলে নির্বাচনে যেতে আগ্রহী বিএনপির সেই সব নেতা আড়ালে আলাপে থাকতে রাজি আছেন। অন্যদিকে আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখতে চাওয়া বিদেশি শক্তিগুলোর সরকারের ওপর চাপ থাকায় বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে চায় আওয়ামী লীগ। ফলে প্রকাশ্যে সংলাপের আগ্রহ না দেখিয়ে আড়ালের আলাপে আগ্রহী দলটির নেতারা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে এক চুলও নড়বে না। অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে কোনোভাবেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যাবে না। দুই দলই নিজেদের এমন অনড় অবস্থান দেখাচ্ছে। দুই দলের পরস্পরবিরোধী অবস্থানে সৃষ্ট সংকট সমাধানে বিদেশি তৎপরতা বেশ আগে থেকেই শুরু হয়েছে। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসতে শুরু করেছে বিদেশি সেই তৎপরতায়ও গতি এসেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএনপি কাউকেই কাছাকাছি অবস্থানে, অর্থাৎ এক মেরুতে আনতে পারেনি এখনো। তবে বিদেশি প্রভাবশালী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা সংকট নিরসনে দুই দলকেই সংলাপে বসার জন্য বলছেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা সংলাপের মধ্য দিয়ে সমস্যা সমাধানের রাস্তা ঠিক করতে দুই দলকেই তাগিদ দিয়েছেন। বিদেশিদের অবস্থান হলো আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চান তারা। সে জন্য রাস্তা তৈরি করতে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই সংলাপে অনীহা দেখিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্যে অনীহার কথা জানিয়েছেন। বিএনপিও প্রায় প্রতিদিনই অনীহা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখছে।
তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও সংলাপে সমাধান আসেনি। এবারও সংলাপে সমাধান আসার সম্ভাবনা কম। যদি সংলাপের আগেই এজেন্ডা নির্ধারণ করে সংলাপে বসে, সেই সংলাপ সফল হওয়ার পথ থাকে না।
দুই দলের একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, প্রকাশ্যে সংলাপ না করে এবার আড়ালে সংলাপ হতে পারে। অনেকটা হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটে যেতে পারে-বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন দিয়ে বসতে পারেন।’ তিনি বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
নির্বাচন সামনে রেখে দেশে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকেরা সংকট নিরসনে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। ওই সব বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দুই দলেরই অবস্থান জানতে চেয়েছেন তারা। একই সঙ্গে দুই দলকে তারা এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন যে ভিন্নমত থাকলেও স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের স্বার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়া জরুরি। এ কারণে নির্বাচনের আগে দুই প্রধান দলের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার আবশ্যকতা রয়েছে। এই সমঝোতার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, কিংবা উভয় পন্থায় দুই দলের মধ্যে ‘আলাপ’ হওয়া দরকার, তা সেটা সংলাপ বা আলোচনা যে নামেই করা হোক না কেন। এদিকে কূটনীতিকদের কাছে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে, বিএনপি কোনো ধরনের সংলাপে আগ্রহী নয়। ২০১৪ সালের নির্বাচন কেন্দ্র করে বিএনপির আচরণ বিদেশিদের কাছে তুলে ধরে সংলাপে বিএনপির অনীহার কথা জানান।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দাবি করছেন, রাজনীতিতে কোনো কিছু আদায় করতে হলে আন্দোলনের মাধ্যমে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ক্ষমতাসীনদের বাধ্য করতে হয়। কিন্তু সেটা বিএনপি পারছে না। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেছিল। সেখানে জনগণকে সম্পৃক্ত করে বিএনপিকে পদত্যাগে বাধ্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিএনপি এখন সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারবে বলে মনে করছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মাঠে আওয়ামী লীগের অবস্থান আছে। জনগণ সরকারের সঙ্গে আছে। আর তাদের সঙ্গে জনগণই নেই। তাই তো খালেদা জিয়াকে এখনো মুক্ত করতে পারেনি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘যেকোনো সমস্যার সমাধান সংলাপের মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব। সংলাপে বসলে হয়তো শতভাগ পাব না। তবে গিভ অ্যান্ড টেক তো কিছু হবেই। গণতন্ত্রে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই।’
তবে দলটির সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, ‘সংলাপ চলছে। মিডিয়ায়, টক শোতে, মাঠে মঞ্চে। এক দল আরেক দলকে উদ্দেশ্য করে যে বক্তব্য দিচ্ছে, তাও এক ধরনের সংলাপ। এসব অনেকেই সংলাপ বলে টের না পেলেও মূলত এটাও সংলাপ।’
আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, সংলাপের ব্যাপারে পশ্চিমা কূটনীতিকেরা তাদের তেমন কোনো পরামর্শ দেননি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘আমরা তাদের (কূটনীতিক) বলেছি সংলাপের উদ্যোগ আমরা নিয়ে কী করব? তাদের (বিএনপি) যদি কোনো দাবি থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলতে পারে। নির্বাচন কমিশন যদি সুপারিশ করে, সেটা অবশ্যই সরকারের কাছে আসবে। সরকার দেখবে তখন।’
সংলাপ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ভাবনা আমাদের নাই।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। আর আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচনকালীন এই সরকারই থাকবে এবং তাদের অধীনে নির্বাচনে হবে। নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ অবস্থায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সংকট সমাধানে কূটনীতিকদের দূতিয়ালি চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও ইতিবাচক বিএনপি। সাম্প্রতিক সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থার দূতসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। ওই বৈঠকগুলোতে কেন এই সরকারের অধীনে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতে চায় না তা ব্যাখ্যা করেছে দলটি। বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে যাবে না, সেটিও স্পষ্ট করেছে। একই সঙ্গে কূটনীতিকদের বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে সে বিষয়ে সংলাপের আহ্বান আসলে তাতে সাড়া দেবে বিএনপি। আর এই সংকট মোকাবিলায় কূটনীতিকদের ‘রোল প্লে’ (ভূমিকা রাখা) করার সুযোগ আছে বলে মনে করেন দলটির নেতারা। তাদের মতে, প্রকাশ্যে না হলেও পর্র্দার অন্তরালে সংলাপ হতে পারে। কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপের কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনেও গুঞ্জন রয়েছে ভেতর-ভেতর সংলাপ হচ্ছে।
সর্বশেষ ১৮ মে গুলশানের আমেরিকান ক্লাবে মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল চিফ ব্রান্ডন স্ক্যাট, পলিটিক্যাল অফিসার ম্যাথিউ বে, পলিটিক্যাল কনস্যুলার ডেনিয়েল শেরির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
জানতে চাইলে শামা ওবায়েদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকগুলোতে তারা আমাদের অবস্থান জানতে চান। আমরাও আমাদের অবস্থান তুলে ধরি। সর্বশেষ তারা জানতে চেয়েছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে আপনাদের অবস্থান কী। আমরা বলেছি, আন্দোলন চলছে, সেটা আমরা কন্টিনিউ (চালিয়ে যাব) করব। তারা অন্য পক্ষের (ক্ষমতাসীনদের) কথাও শুনছেন। এ অবস্থায় তারা কী করছে (দূতিয়ালি), নাকি অন্য কিছু হচ্ছে সেটা তাদের বিষয়। তবে আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আরেকটি গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত হোক, সে ব্যাপারে তাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকুক।’
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক সংলাপের ব্যাপারে কূটনীতিকেরা কোনো বৈঠকেই আমাদের কিছু বলেনি।’
তবে বৈঠকগুলোতে থাকা দলের আরেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা একাধিকবার সরকারের সঙ্গে সংলাপ করেছি। ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনের সংলাপে পর চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের তিন মাস পর নতুন নির্বাচন দেওয়ার কথা বলে তারা প্রতারণা করেছে। তাই এজেন্ডা ছাড়া কোনো সংলাপে আমরা যাচ্ছি না। কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে আমরা বলেছি, আনুষ্ঠানিক সংলাপের বিষয়ে আমরা ইতিবাচক। কিন্তু সেটি হতে হবে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে তা নিয়ে।’
ওই নেতার আরও বলেন, ‘সরকার এখন বিভিন্ন চাপে আছে। আন্তর্জাতিক চাপ তো আগে থেকেই আছে। এখন নতুন করে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ বেড়েছে। এসব চাপ সামাল দিতে তারা সংলাপের নামে নানা কথা বলবে। কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় সরকারের মনোভাবে কিছু হলেও আঁচ করা যায়। হয়তো কয়েক দিন পর সরকার আনুষ্ঠানিক সংলাপের জন্য আমন্ত্রণও জানাতে পারে।’
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।