
তারা দুজনই ছিলেন তুখোড় ছাত্রনেতা, সেই ষাটের দশকে। ছাত্ররাজনীতির রাজকীয় ফসল এবং পরবর্তীকালের জাতীয় নেতা বা নেত্রী। উচ্চকণ্ঠবক্তা, চিন্তক এবং ছিলেন বামপন্থার ধারক ও বাহক। রবীন্দ্রনাথ যেমনটি বলেছিলেন বেঙ্গল অন্তরেও দুই, বাইরেও দুই। এই দুই তরুণ যৌবনেও ছিলেন ক্ষমতাসীনদের মূর্তিমান প্রতিপক্ষ, বড্ড বেয়াড়া সমালোচক। পরবর্তীকালে দেখা গেল তারা রীতিমতো ভোল পাল্টিয়ে বাম থেকে ডানে এসে শামিল হয়েছেন। এদেরই একজন এই সেদিন সুন্দর স্বগতোক্তি করলেন, ‘আজকাল ক্ষমতার লোভে বামরাও ডানে’।
এত সুন্দর স্বগতোক্তিতে শেক্সপিয়রের কুশীলবরাও এত স্মার্ট ছিলেন না। রাজা না থাকলেও রাজনীতির পাড়ায় আশপাশের অনেককেই আজকাল সকালে এক কথা, বিকেলে আরেক কথা এবং পরের দিন ভোরে নিজের অবস্থান নিজেই অকপটে খ-ন করেন এবং এ ধরনের বর্ণচোরারা এমন সব মহাজন বাক্য আওড়ান যে, তাতে অন্যরা বুঝতেই পারে তার বা তাদের উপলব্ধির চত্বরের সাধারণ ঘাস এখন অসাধারণ অ্যাস্ট্রো টার্ফ হিসেবে চিকচিক করছে।
শেক্সপিয়রের বেদনাবিধুর রোমান্টিক নাট্যকাব্য ‘ওথেলো’র ইয়োগো যেমন বারবার নিজের কূটচাল প্রকাশ ও প্রয়োগ করতেন। আজকাল প্রতিপক্ষকে অপশক্তি বলে শনাক্ত করতে গিয়ে নিজেদের আসল চেহারা আড়ালের চেষ্টা চলে, অন্যকে স্বেচ্ছায় হেনস্তা করে শক্ত করতে চান নিজের অবস্থানকে। ফিয়োদর দস্তয়েভস্কির ‘ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট’ কিংবা টলস্টয়ের ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ এমনকি পার্ল এস বাকের ‘গুড আর্থ’-এর মতো কালজয়ী উপন্যাসের নায়ক-নায়িকাদের মধ্যে আত্মসমালোচনা ও শোচনার যেসব টেকনিক লক্ষ করা যায় অধুনা অনেকেরই, দেশে ও বিদেশে, ঘরে ও বাইরে হরহামেশা নিজেদের অন্তর্দ্বন্দ্ব বিনা প্ররোচনায় প্রকাশ পায়।
সবার নমস্য ঠাকুর পৈতায় হাত বুলাতে বুলাতে যেমন ভেবেছিলেন পুরোহিত আর প-িতগিরি একসঙ্গে চলে না। দেখা যায়, ‘কারও প্রতি রাগ কিংবা অনুরাগের বশবর্তী না হওয়া’র শপথ নিয়েও নিজের পাটাতনের মুখপাত্র সেজে প্রতিপক্ষকে যে কোনো ভাষা ও ভঙ্গিতে আক্রমণ চালাতে কসুর করেন না। সর্বজনীনতার আদর্শ পক্ষপাতিত্বের, কালোত্তীর্ণ বিষয় কালের মধ্যে, জাতীয় নেতা দলীয় নেতায়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। রাজনীতির নাট্যশালায় এমন ‘নাটক’ রচিত হয় যা মঞ্চস্থ করা পর্যন্ত অপেক্ষার প্রয়োজন পড়ে না। এটা যে চরম আত্মঘাতী প্রবণতা-কালেভদ্রে স্বগতোক্তিতে তা বাক্সময় হয়ে ওঠে। অন্যের মর্ম যাতনা নিজের মধ্যে আমদানির প্রয়োজন পড়ে না, এলসি না খুলেই তা শিপমেন্ট হয়ে যায়।
ধ্বনি ও ভাষাবিজ্ঞানী অধ্যাপক মুহম্মদ আবদুল হাই (১৯১৯-১৯৬৯) সাড়ে ছয় দশক আগে ১৩৬৪র ফাল্গুন-চৈত্র সংখ্যা ‘সমকাল’ পত্রিকায় ‘তোষামোদের ভাষা’ এবং একই পত্রিকার ১৩৬৫র জ্যৈষ্ঠ সংখ্যায় ‘রাজনীতির ভাষা’ শিরোনামে দুটি প্রবন্ধ লেখেন। প্রবন্ধ দুটি ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত তার ‘তোষামোদ ও রাজনীতির ভাষা’ গ্রন্থভুক্ত হয়। সেকাল এবং একালে রাজনীতির ভাষা ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তনের ধারা সন্ধান-শনাক্ত করতে তার এই লেখা।
প্রথমে সাধু স্বীকৃতি (ডিসক্লেমার) দিয়ে রাখা ভালো যে, রাজনীতি ও এর ভাষা প্রক্রিয়া প্রকরণ নিয়ে এ রচনা নিছক অ্যাকাডেমিক ও নির্মোহ নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে সংরচিত, এতে কোনো ব্যক্তি কিংবা কোনো কালের কোনো সংগঠনের প্রতি অনুরাগ কিংবা বিরাগ প্রকাশের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। কেননা অনেক সমাজে ‘রাজনীতি’ নিয়ে আলাপ-আলোচনার মধ্যেও রাজনীতির গন্ধ খোঁজার সংস্কৃতি আগেও যেমন ছিল বর্তমানেও তা আরও বড় করে বলবৎকরণের বড় বড় আইন বিদ্যমান আছে। সেসব দেশ ও সমাজে মুক্তবুদ্ধি চর্চা নানান ঘেরাটোপের মধ্যে আছে।
এটা ঠিক যে, কোনো ভাষার নাম শুনলে সবার কাছে সে ভাষার একটি সামগ্রিক রূপ ফুটে ওঠে। সেই ভাষার গঠন-প্রকৃতি ও আঙ্গিক ইত্যাদির মধ্যে নিয়মশৃঙ্খলাজনিত যে নানা খুঁটিনাটি ভাগ আছে সেটা ধরা পড়ে সমাজের ভাষার ব্যবহার থেকে। অধ্যাপক হাইয়ের মতে, ‘সমাজ জীবন গড়ে তোলার জন্যই মানুষের ভাষার উদ্ভব বলে সমাজ জীবনে ভাষার ব্যবহারের বেলায় তার সত্যিকার স্বরূপটি ধরা পড়ে। ভাষার কাজ হলো পারস্পরিক সমঝোতা, তা কমপক্ষে দুজনের মধ্যেই হোক কিংবা বহুজনের মধ্যেই হোক দুটো মানুষ যখন কথা বলে তখন একসঙ্গে নির্দিষ্ট কতগুলো বিষয়েই তারা আলাপ-আলোচনা করে... তখন বিষয়োপযোগী ভাষাই সে ব্যবহার করে। সমাজজীবনের নির্দিষ্ট পরিপ্রেক্ষিতে ওই ক্ষেত্রোপযোগী যেসব শব্দের হার গাঁথা হয়, তা-ই ভাষাকে তার সামগ্রিক রূপ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নানা ভাগে ভাগ করে দেয়। এ কারণেই সমাজ জীবনের বিচিত্র পরিবেশে ভাষারও বিচিত্র প্রয়োগ লক্ষ করা যায়।
সে নিরিখেই সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের অন্যান্য বিষয়ের মতো রাজনীতির ভাষারও... বিভিন্ন দেশ ও রাষ্ট্রে বিভিন্ন রকমের প্রচলিত শাসনব্যবস্থার সুবিধার জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সমাজ নিজ নিজ ভাষায় উপযোগী শব্দ সৃষ্টি করে নেয়। এসব শব্দ একদিনে সৃষ্টি হয় না রাষ্ট্রের শাসনযন্ত্র যাদের হাতে থাকে, প্রয়োজনের তাগিদে তারা কিছু শব্দ এবং এর প্রকাশ প্রক্রিয়া বা ভঙ্গি সৃষ্টি করিয়ে নেন।’
চিন্তা থেকে যেমন কাজের উৎপত্তি, নিয়ত বা পরিকল্পনার ওপর নির্ভর করে যেমন কাজের গতি-প্রকৃতি, তেমনি রাজনীতির ভাষা খোদ রাজনীতির চরিত্র, নীতি ও প্রকৃতি অনুযায়ী উৎসারিত-উচ্চারিত হয়ে থাকে। রাজনীতির সংস্কৃতি-রুচি চাহিদা ও উদ্দেশ্য বিধেয় অনুযায়ী তোষামোদ ও রাজনীতির ভাষার রূপ পরিগ্রহ করে।
পরিবেশ অনুসারে ভাষার শব্দাবলির ব্যবহার থেকে মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা ও ভাবনাচিন্তার বাহন হিসেবে মানুষের চিন্তাধারার সঙ্গে সংগতভাবে সেই চিন্তার আধার তথা ভাষার গভীরতর রহস্য উদ্ঘাটিত হতে পারে।
সরকার বা রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য এক এক দেশে বহু রকম রাজনৈতিক চিন্তাধারার বিকাশ দেখতে পাওয়া যায়। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার জন্য তাবত দেশে দলমত নির্বিশেষে প্রত্যেকটি দলই দেশের অধিবাসীদের কাছে তাদের আদর্শ ও কর্মসূচি নিয়ে উপস্থিত হয় আর সাধারণকে তাদের মতে দীক্ষিত করার জন্য ভাষার সাহায্যেই জোর প্রচারণা চালায়।
অন্য কথায়, ভাষা রাজনীতিকদের হাতের পুতুল হয়ে ওঠে। সে ভাষা দিয়ে তারা নিজের বক্তব্য যেমন প্রচার করিয়ে নেন, তেমনি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য অপপ্রয়োগ করতেও কুণ্ঠিত হন না।
পশ্চিমের উদার মতাবলম্বী দেশ রাজনৈতিক মতামত প্রকাশে যে ব্যক্তিস্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে তা অবারিত নয়। সেখানে ব্যক্তিবিশেষ কি পার্টিবিশেষ যা খুশি বা যেমন খুশি তেমন করে ভাষা প্রয়োগ করতে পারে না। সেসব দেশে রাজনৈতিক মতামতের স্বাধীনতা আছে, কিন্তু সে স্বাধীনতা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্য নয় বা রাষ্ট্রের স্বার্থ বা অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে, এমন অন্তর্ঘাতী কোনো কিছু কাজ করার জন্য নয়।
রাষ্ট্রের মঙ্গলের জন্য বহুমুখী করে তোলাই এবং মতামতের পার্থক্য সত্ত্বেও নির্দিষ্ট কতগুলো কর্মসূচির ভিত্তিতে কাজ করে যাওয়ার জন্য তাদের একত্রিত করার এই ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রধান লক্ষ্য। পক্ষান্তরে উন্নয়নশীল অনেক দেশে স্বৈরতন্ত্র ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে তাদের তাড়াতে বেগতিক হয়ে ব্যক্তিস্বাধীনতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেরাই নিজেদের শত্রু বনে যায়।
দেশে মানবাধিকারের সংকট মোকাবিলা করতে না পেরে বিদেশের কাছে নালিশ দিতে বাধ্য হয়। বিদেশিরাও এই সুযোগে স্বৈরতন্ত্র বা ক্ষমতাসীনকে শক্তিশালী ক্ষমতা প্রয়োগের ব্যাপারে দর-কষাকষির মাধ্যমে গোটা দেশ ও সমাজকে রীতিমতো জিম্মি করে ফেলে।
আজ থেকে সাড়ে ছয় দশক আগে ঔপনিবেশিক পরিবেশে, অধ্যাপক আবদুল হাই যা দেখেছিলেন, আজ স্বাধীন-সার্বভৌম পরিবেশেও তার অবস্থানে তেমন হেরফের ঘটেনি বরং বিপর্যস্ততার মাত্রা ও গতি বেড়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। পরিশেষে এ ব্যাপারে অধ্যাপক হাইকে উদ্ধৃত করা যায় :
‘রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করার জন্য তাদের আদর্শ ও উদ্দেশ্য অনুসারে জনমত গড়তে গিয়ে দেশের ভাষাকে তাদের প্রচারমুখী আদর্শের বাহন করে তোলে। রাজনৈতিক দলের আদর্শ যদি উন্নত না হয়, লক্ষ্য যদি অভ্রান্ত না থাকে এবং দেশের বৃহত্তর কল্যাণের দিকে নজর না দিয়ে আদর্শগত ও আর্থিক ব্যবস্থাজনিত কর্মসূচি যদি তারা তৈরি না করে কিংবা রাজনৈতিক দর্শন অনুসারে দলের শিক্ষাব্যবস্থা কোনো রাজনৈতিক দলগুলো তাদের না থাকে, তাহলে যেনতেন প্রকারে ক্ষমতাসীন হওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো কলহ-কোন্দলে লিপ্ত হয় ফলে রাজনীতির ভাষা শালীনতা হারায়।
আদর্শগত সংগ্রাম বা নীতি প্রচারের বাহন না হয়ে ভাষা তখন কবিওয়ালাদের খেউড় গানের বাহনের মতো হয়ে ওঠে এবং ভাষার মানও অচিন্তনীয়ভাবে নিচে নেমে যায়। আমাদের অতীত রাজনৈতিক জীবনের দুর্গতির মধ্যে আমাদের নেতৃবৃন্দের ভাষা ব্যবহারের রূপ ও ধরনই আমাদের এ উক্তির সমর্থন করে।’
লেখক: উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক
আরবি শাবান মাসের শেষ শুক্রবার আজ। আগামী শুক্রবার পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়ে যাবে। এখন চলছে রোজার জন্য শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। রমজানের প্রস্তুতির অন্যতম একটি হলো- রমজানকে স্বাগত জানানো। এর অংশ হিসেবে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা রমজানের জন্য শাবানের চাঁদের হিসাব রাখো।’ -সহিহ মুসলিম
রমজান মাস দুনিয়াজুড়ে মুসলমানদের উৎসবের মাস হিসেবে পালিত হয়। এখন থেকেই দুনিয়াজুড়ে এই পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ মাস উপলক্ষে গোনাহ মাফের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। আধুনিক যুগের সুবিধার কারণে ইতিমধ্যেই অনলাইনে রোজার ক্যালেন্ডার প্রচারিত হচ্ছে। ইফতার, সাহরির সময় উল্লেখ করে মোবাইল ফোনে, পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন আদান-প্রদান শুরু হয়ে গেছে। খুবই ভালো উদ্যোগ। যেহেতু এ মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত বলা হয়েছে যে, যারা গোটা মাস আন্তরিকতার সঙ্গে, আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখে রোজাপালন করবে, তাদের সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। মাস শেষে ধরে নিতে হবে- যেন মায়ের পেট থেকে নিষ্পাপ শিশুর জন্মের সময়ের মতো সে নিষ্পাপ হয়ে গেছে।
মহান আল্লাহ আমাদের ভুলগুলো মাফ করে দিতে চান। শুধু আমাদের চাওয়ার অপেক্ষা। মহান আল্লাহর কাছে চাইলে আর শিরকমুক্ত থাকলে আমাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন।
এই রমজান মাসে একটি রাত আছে, যার মূল্য হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। সেটি হলো শবেকদরের রাত। এ মাসের শেষ দশ দিনের যেকোনো বিজোড় রাতে এই শবেকদর খুঁজতে বলা হয়েছে। যদিও আমাদের দেশে রমজানের ২৭ তারিখ রাতকে শবেকদরের রাত বলা হয়। কিন্তু আসল ঘটনা শেষ দশ দিনের প্রত্যেক বিজোড় রাতে শবেকদর খুঁজতে হবে। যেহেতু এক রাতের মূল্য হাজার মাসের চাইতে উত্তম, তার জন্য তো একটু মেহনত করাটাই যুক্তিসংগত।
রমজান মাসে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সহজ হয়ে যায়। শেষ রাতে সাহরি খাওয়ার জন্য উঠতে হয়। তাই সাহরির একটু আগে উঠে উত্তমরূপে অজু করে অতি মূল্যবান তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে নেওয়া যেতে পারে। তাহাজ্জুদ নামাজ দুই রাকাত করে ৮ রাকাত বা তার চেয়ে বেশি পড়া যায়। এর পর আপনমনে আল্লাহর কাছে দোয়া করা যায়।
মহান আল্লাহ রাতের শেষভাগে সপ্তম আকাশ থেকে নিম্ন আকাশে নেমে আসেন তার বান্দাদের কথা শোনার জন্য। তিনি আহ্বান করতে থাকেন তার বান্দাদের তোমরা কী চাও? সব দিয়ে দেব। গোনাহ মাফ চাও, ছেলে সন্তান চাও, রিজিক চাও, ভালো বিবাহ করতে চাও সব দিয়ে দেব। শুধু কায়মনে শিরকমুক্ত অবস্থায় আল্লাহর কাছে চাইতে হবে।
আল্লাহর নবী (সা.) আমাদের পুরুষদেরই শুধু এ সুযোগের কথা বলেননি। স্বামীদের বলা হয়েছে, তোমরা শেষ রাতে তাহাজ্জুদের জন্য ওঠো, তোমাদের স্ত্রীদেরও ওঠাও। এমনকি তারা গড়িমসি করতে চাইলে, তাদের মুখে পানি ছিটিয়ে তাদের তাহাজ্জুদের এই অপূর্ব নিয়ামত পাওয়ার সহযোগিতা করো।
রমজান মাসে বেশি বেশি দান-খয়রাত করতে হবে। কারণ এ মাসে অন্য মাসের চেয়ে সওয়াবের পরিমাণ আল্লাহতায়ালা বাড়িয়ে দেন। সুন্নতের দাম ফরজের সমান করে দেন, আবার ফরজের দাম ৭০ থেকে ৭০০ গুণ বাড়িয়ে দেন।
রমজান মাসে খেয়াল রাখতে হবে, রোজাদাররা যেন দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করতে পারেন। সেই সঙ্গে ছেলেমেয়ে, স্ত্রীদেরও নামাজের ব্যাপারে উৎসাহিত করতে হবে। অফিস-আদালতে, চলার পথে, বাস, নদীপথে; এমনকি উড়োজাহাজেও উদ্যোগ নিয়ে জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ে নিতে হবে। আগেই বলেছি, মহান আল্লাহ যেহেতু সব কাজের মূল্য বাড়িয়ে দেবেন, তাই আমাদেরও এ সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। রমজান মাসে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করা, পাড়া-প্রতিবেশীদের নিয়ে ইফতার করা, ছোটদের স্নেহ করা, বড়দের শ্রদ্ধা করা থেকে শুরু করে সব ভালো কথা ও কাজ বেশি বেশি করতে হবে।
রোজার মাসে অনেকে জাকাত দিয়ে থাকেন বেশি সওয়াবের আশায়। ভালো উদ্যোগ। জাকাত ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম। ধনীদের অর্থের শতকরা আড়াই ভাগ সমাজের গরিব-মিসকিনসহ ৮ খাতে খরচ করা ফরজ। যেহেতু আল্লাহ রমজান মাসে সওয়াবের পরিমাণ বেহিসাবি ভাবে বাড়িয়ে দেন, তাই ধনীরা কিংবা যাদের ওপর জাকাত ফরজ হয়েছে, তারা হিসাব করে জাকাত দিয়ে দেবেন। এটা গরিবের হক। সঠিক পথে জাকাত আদায় ও ব্যয়ের সুযোগ পাওয়ায় দাতা-গ্রহীতা উপকৃত হয়। জাকাতের কাপড় দেওয়া বা ধনী ব্যক্তিদের বাড়ির সামনে লাইন ধরে জাকাত বিতরণের ব্যবস্থা মোটেও ভালো কাজ ও যুক্তিযুক্ত নয়। এ ব্যবস্থা পরিহার করা দরকার।
রমজান মাসে সমাজের পরিবেশ আল্লাহমুখী করার ব্যবস্থা নিতে হবে। দিনের বেলায় হোটেল-রেস্তোরাঁ ও খোলা জায়গায় পানাহার বন্ধ করতে হবে। বিশেষ প্রয়োজনে লোকচক্ষুর আড়ালে অসুস্থ ব্যক্তি, অমুসলিম কিংবা বেরোজদারদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা থাকতে পারে।
রমজান মাসে ঘরে-বাইরে লোকদের নারী-পুরুষ সবাইকে রোজা পালন সহজ করার লক্ষ্যে কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিতে হবে। এতে কাজ কম হবে বলে মনে হয় না, বরং আল্লাহতায়ালা বরকত বাড়িয়ে দেবেন।
বাংলাদেশসহ মুসলিম দেশগুলোয় রোজার সময় খাদ্যদ্রব্যের মূল্য সহনশীল রাখা ব্যবসায়ী ও সরকারের দায়িত্ব। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে রোজার সময় জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে দেয়। কিন্তু আমাদের দেশের কতিপয় ব্যবসায়ী রোজার জন্য জিনিসপত্রের মজুদ করেন দাম বাড়ানোর লক্ষ্যে। এটা খুবই খারাপ দৃষ্টান্ত। ব্যবসায়ী মহল ও সরকারের নির্দিষ্ট বিভাগের প্রতি আহ্বান, রোজাদারদের সুবিধার্থে কম লাভে জিনিসপত্র বিক্রয়ের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। এতে আল্লাহর রহমত ও বরকত পাওয়া যাবে। রোজাপালন সহজ হবে স্বল্পআয়ের মানুষের জন্য। আর এটা হতে পারে আমাদের জন্য গোনাহ মাফের অসিলা। মনে রাখতে হবে, এই মাসে গোনাহ মাফের অনেক উপলক্ষ রয়েছে। সেগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে গোনাহ থেকে মুক্ত না হতে পারাটা গোনাহগার বান্দার জন্য লজ্জাকর ও ক্ষতির কারণ। আল্লাহতায়ালা সবাইকে রমজানের বরকত অর্জন এবং রহমত লাভে ধন্য করুন। আমিন।
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক
প্রথমেই বলে নিই, আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নই। কোনো রাজনৈতিক অভিলাসও আমার নেই। কিন্তু আমি একজন রাজনীতি সচেতন মানুষ। ইতিহাস ও রাজনীতি আমার অন্যতম প্রিয় বিষয়ও। বাংলাদেশের রাজনীতি যেভাবে দু-তিন ভাগে বিভক্ত, যেভাবে দলীয় লোকেরা রাজনীতিকে দেখেন, তাদের সঙ্গে আমার ভাবনার মিল থাকবে সেটা তাই আশাও করি না। মহান এই নেতাকে আমি আমার মতো করেই বিবেচনা করি, আমার মতো করেই ব্যাখ্যা করি।
এ কথা কে না জানেন, ১৯৭৫ সালের পরপরই বাংলাদেশে এক শ্রেণির মানুষ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম মুছে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। একটা সময় এমন হয়েছে যে, ১৬ ডিসেম্বর ও ২৬ মার্চ উদযাপনের সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসও বিকৃত করা হয়েছে। তখনকার সরকারি মাধ্যমগুলো এমনভাবেই স্বাধীনতার ইতিহাস বয়ান করত যেন কোনো এক সন্ধ্যায় কোনো এক অপরিচিত মেজরের ঘোষণা শুনেই বাঙালি জাতি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গিয়েছিল!
আরেক দল বঙ্গবন্ধুকে এমনভাবে চিত্রিত করতে শুরু করল যেন বঙ্গবন্ধু কোনো মানুষ নন, তিনি কোনো ভুল করতে পারেন না, তিনি সাক্ষাৎ ফেরেশতা! যদিও এটা মানতেই হবে, তিনিও ছিলেন আমাদের মতোই রক্ত-মাংসের মানুষ।
আমাদের দেশের কোনো কোনো বুদ্ধিজীবী বঙ্গবন্ধুকে জড়িয়ে এমন ঘটনার কথাও লিখলেন যেসব ঘটনা ঘটেনি কস্মিনকালেও! যেমন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কোনো কোনো গ্রন্থে আপনারা পাবেন, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল বঙ্গবন্ধুর! যেমন, কোনো কোনো গ্রন্থে পাওয়া যাবে হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণ আন্দোলনেও যুক্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু! পাওয়া যাবে এমন বক্তব্যও যে, ১৯৩৮ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে এমই স্কুলে গিয়েছিলেন শেরে বাংলা একে ফজলুল হকও।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যেসব স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ রচিত হয়েছে, সেগুলোতেও বঙ্গবন্ধুর সঠিক চিত্র তেমন পাওয়া যায় না, পাওয়া যায় খ-িত এক চিত্র, যেখানে রচয়িতাকে দেখা যায় নিজেকেই বড় করে তুলতে, বঙ্গবন্ধুকে নয়। এমনকি ইতিহাসের গবেষকদের অনেকেই বঙ্গবন্ধুর তিনটি গ্রন্থ প্রকাশের পরেও নিজেদের গ্রন্থে লেখা ভুল তথ্যগুলো সংশোধনের উদ্যোগ নেননি।
বঙ্গবন্ধুর জীবন সম্পর্কে জানতে গেলে বঙ্গবন্ধুর তিনটি গ্রন্থই কেবল নয়, আমাদের পড়তে হবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সম্পাদিত ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব স্পেশাল ব্রাঞ্চ অন দি ফাদার অব দি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’-এর ১৪টি খ-। এরই মধ্যে এ বইটির ১১টি খ- প্রকাশিত হয়েছে। তাতে তৎকালীন পাকিস্তানের গোয়েন্দা পুলিশের বয়ানে বঙ্গবন্ধুর অনেক অজানা তথ্য যেমন জানা যাবে, তেমনি জানা যাবে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রের নানা দিক সম্পর্কেও।
আমরা অনেকেই জানি, বঙ্গবন্ধু ছিলেন দৃঢ়চিত্তের মানুষ। এও অনেকেই জানেন, ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিম্ন বেতনভুক কর্মচারীদের আন্দোলনে যুক্ত থাকার কারণে তার ছাত্রত্ব বাতিল হয়। ছাত্রত্ব বাতিল এড়াতে সে সময়ে সে আন্দোলনে যুক্ত সব ছাত্রনেতা মুচলেকা দিলেও বঙ্গবন্ধু তাতে স্বাক্ষর করেননি।
বঙ্গবন্ধু এ সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমি কোনো অন্যায় দাবি করি নাই, অত্যন্ত ন্যায়সংগত দাবি করেছি। মুচলেকা বা জরিমানা দেওয়ার অর্থ হলো দোষ স্বীকার করে নেওয়া, আমি তা করব না।’ মুচলেকা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তার জীবনে ঘটেছে আরও অন্তত ৬ বার। এটাও ঠিক কতজন জানেন, আমার জানা নেই। অন্তত আমি কোনো গ্রন্থে এখনো পাইনি।
‘সিক্রেট ডকুমেন্টস’-এর ৯টি খন্ড থেকে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে জেল থেকে মুক্তি দেওয়ার সময় তাকে মুচলেকায় স্বাক্ষর করতে বলা হয় এবং যথারীতি বঙ্গবন্ধু সেসব মুচলেকায় স্বাক্ষর করেননি। এ কারণে কারাগারে তার সাজার মেয়াদ তিনবার ৬ মাস করে এবং একবার ২ মাস বাড়ানো হয়। এর ফলে বঙ্গবন্ধুকে অতিরিক্ত ২০ মাস সময় কারাগারে কাটাতে হয়। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে গোয়েন্দা পুলিশ কী লিখেছে সে সময়ে, সেটা একটু পড়া যাক ‘হি ওয়াজ নট উইলিং টু এক্সিকিউট এনি বন্ড ফর রিলিজ ইভেন ইফ দি ডিটেনশন উড কজ হিম টু ফেস ডেথ। হিজ এটিচ্যুড ওয়াজ ভেরি স্টিফ।’
১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের সূচনাকাল থেকে বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের কর্মকা-ের দিকে তাকালেও আমরা বুঝতে পারব, কীভাবে পাকিস্তানের জেলজুলুম উপেক্ষা করে বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের প্রতিটি ধাপে তিনি যুক্ত ছিলেন, কীভাবে সেই স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনকে তিনি পরিণত করেছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে।
তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি আসলে বাঙালি জাতির জন্যই সংগ্রাম করেছেন। আর এই দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তিনি তার নির্ভীক ও দৃঢ়চেতা মনোভাবের পাশাপাশি বাঙালি জাতির প্রতি তার ভালোবাসার প্রমাণও রেখেছেন।
৫৫ বছরের জীবনকালে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর অবদান চাইলেই তাই মুছে ফেলা সম্ভব নয়। এমনকি স্বাধীনতার পর দেশ পুনর্গঠনেও রয়েছে তার ব্যাপক ভূমিকা। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তার সাফল্যও তো কম নয়। এ সময়ে তার কোনো কোনো পদক্ষেপ নিয়ে কেউ কেউ সমালোচনা করেছেন।
সেসব সমালোচনাকে গ্রাহ্য ধরে নিলেও ‘বাংলাদেশ’ নামে বাঙালি জাতির জন্য স্বতন্ত্র একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কারণেই যতদিন ‘বাংলাদেশ’ নামক রাষ্ট্র থাকবে, ঠিক ততদিনই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এমনকি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে আরও যেসব মানুষের অবদান আছে, তা যত সামান্যই হোক- তাও কারোর পক্ষে মুছে ফেলা সম্ভব নয়।
যদিও এটা দুঃখজনক যে, আমাদের দেশে বঙ্গবন্ধুর যেমন, তেমনি আরও অনেক নেতার অবদানকেও মুছে ফেলার এক মন্দ রাজনীতি শুরু হয়েছে। এর অবসান হওয়া দরকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবও কেবল আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন না। সত্তরের নির্বাচনের আগেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন সব স্বাধীনতাকামী বাঙালির নেতা।
সে কারণে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যারা লালন করেন, বঙ্গবন্ধু তাদেরও। তাকে, তার অবদানকে খ-িত করাও ইতিহাস বিকৃতিরই শামিল।
লেখক: কবি, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক ও গবেষক সম্পাদক- ‘মুজিবপিডিয়া’
কল্পনা চাওলা একজন বিখ্যাত ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নভোচারী এবং নভোযান বিশেষজ্ঞ। কলম্বিয়া নভোযান বিপর্যয়ে যে সাতজন মহাকাশচারী এবং ক্রু মৃত্যুবরণ করেন তাদের মধ্যে তিনি একজন। পৃথিবীতে অবতরণ করতে গিয়ে বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে সংঘর্ষে এই নভোখেয়াযানটি বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল। কল্পনা চাওলা ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দের ১৭ মার্চ ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের কারনালে বসবাসকারী এক হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কল্পনা তার মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপন করেন ঠাকুর বালনিকেতন সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুল, কারনাল থেকে। এরপর ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে তিনি চণ্ডীগড়ের পাঞ্জাব প্রকৌশল কলেজ থেকে মহাকাশ প্রকৌশলের ওপর স্নাতকের পাঠ সম্পন্ন করেন। উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান এবং সেখানে ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন থেকে একই মহাকাশ প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতকোত্তর শিক্ষা সমাপ্ত করেন ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে। পরবর্তীতে কল্পনা ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো অ্যাট বউল্ডের থেকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রাপ্ত হন।
১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে কল্পনা নাসাতে তার কর্মজীবন শুরু করেন। তার প্রথম মহাকাশ যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দের ১৯ নভেম্বর। তিনিই প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জন করেন।
২০০৩ খ্রিস্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি মহাকাশ থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় কলম্বিয়া স্পেস সাটলটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় এক দুর্ঘটনার ফলে সাতজন ক্রুসহ বিধ্বস্ত হয় এবং কল্পনাসহ সবাই মারা যান।
বিশ্ব গণমাধ্যম সূচক ২০২২ অনুযায়ী, ১৮০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬২তম। ২০১৩ সালে বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতনের হার ১২.৫ শতাংশ থাকলেও, ২০১৪ সালেই হয়ে যায়- ৩৩.৬৯ শতাংশ। এরপর ক্রমান্বয়ে বাড়ছেই এই সংখ্যা।
চলতি বছরের আড়াই মাসের মধ্যেই দেশব্যাপী, ১৫টি সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া দেশ স্বাধীনের পর থেকে আজ পর্যন্ত অসংখ্য সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। আবার কেউ গুরুতর আহত হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন।
সেই ১৯৭২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত কত জন সাংবাদিক নিহত বা গুরুতর আহত হয়েছেন, সেই পরিসংখ্যান বিশাল। শুধু ২০২২ সালেই ৬৭ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, ২০২৩ সালের আড়াই মাসের মধ্যেই নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন ২৬৬ সাংবাদিক। একটি শ্রেণির কাছে সাংবাদিক হত্যা কিংবা নির্যাতন যদি স্বাভাবিক হয়ে ওঠে, তাহলে বুঝতে হবে আমাদের শাসনব্যবস্থার মধ্যে গুরুতর গলদ রয়ে গেছে। অথবা প্রশাসনের মধ্যেই, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে ঘাপটি মেরে আছে বকাঙ্গালি আদর্শ বিরোধী অপশক্তি। নৈতিক ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যম উজ্জ্বল ভূমিকা কীভাবে রাখবে? একইসঙ্গে বিষয়টি গভীর উদ্বেগের বিষয়। গতকাল সুপ্রিম কোর্টে পুলিশ সাংবাদিকদের ওপর যে তান্ডব চালিয়েছে, তা একটি সভ্য দেশে হতে পারে না।
গতকাল দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায় প্রকাশিত ‘পুলিশি তাণ্ডব সুপ্রিম কোর্টে’ শীর্ষক সংবাদ মাধ্যমে জানা যাচ্ছে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সুপ্রিম কোর্টে নিয়মিত সংবাদ সংগ্রহ করেন এমন কয়েকজন সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহ করতে ভোটকেন্দ্রে যান। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুলিশ তাদের বেধড়ক লাঠিপেটা ও অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করে। বুট দিয়ে লাথি মারে। পরিচয়পত্র দেখানোর পরও ক্ষান্ত হয়নি পুলিশ। এ সময় এটিএন নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাবেদ আক্তার, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জান্নাতুল ফেরদাউস তানভী, আজকের পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক এস এম নূর মোহাম্মদ, অনলাইন পোর্টাল জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ফজলুল হক মৃধা, মানবজমিনের মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার আবদুল্লাহ আল মারুফ, বৈশাখী টিভির ক্যামেরাপারসন ইব্রাহিম হোসেন, এটিএন বাংলার ক্যামেরাপারসন হুমায়ুন কবির, সময় টিভির ক্যামেরাপারসন সোলাইমান স্বপন, প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক শুভ্র কান্তি দাসকে বেধড়ক পেটায় পুলিশ। এর মধ্যে এটিএন নিউজের জাবেদ আক্তারকে স মেঝেতে ফেলে পেটানো হয়। এ ছাড়া বৈশাখী টিভির ক্যামেরাপারসন ইব্রাহিমকে লাঠিপেটাসহ গায়ের কাপড় ছিঁড়ে ফেলা হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় জাবেদ আক্তারকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে নিয়ে ভর্তি করা হয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সুপ্রিম কোর্টে সংবাদ সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা। ঘটনার পর প্রতিকার চেয়ে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আইন, আদালত ও মানবাধিকার-বিষয়ক সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের (এলআরএফ) সাবেক ও বর্তমান শীর্ষ নেতারা। তারা সাংবাদিক নিপীড়নের বিষয়টি লিখিতভাবে প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করেন। প্রধান বিচারপতি এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
বিষয়টা এখানেই। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের অবস্থা যদি এই হয় তাহলে গণমাধ্যম কর্মীদের ভিন্ন চিন্তা করে অগ্রসর হতে হবে। সেক্ষেত্রে কোনোভাবেই গণমাধ্যমে প্রকৃত সত্য প্রকাশিত হবে না- যা হবে, তা অনেকটা প্রেস রিলিজের মতোন। এতে প্রকারান্তরে সরকারই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি এ রকম ঘটনা চলতেই থাকলে, বিশে^ ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে সরকারের। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা দরকার। না হলে, সরকার যে সাংবাদিকবান্ধব তা শুধু কথার কথাই হয়ে থাকবে। এ বিষয়ে, দলীয় রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করা জরুরি।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে ফরমায়েশি বলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য দেশের আইন ও আদালত অবমাননার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির মামলায় এর আগে বিএনপির দুই নেতাকে নিম্ন আদালতের দেওয়া সাজা বহাল রেখে দেশের উচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছে, সে সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিবের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দেশবাসীকে হতাশ করেছে।’
গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদে জানিয়ে এ বিবৃতি দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মনে করেন, মার্কিন নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করার পর বিএনপি তাদের বিদেশি প্রভুদের কাছ থেকে করুণা প্রাপ্তির আশায় সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। উচ্চ আদালতের রায়কে ফরমায়েশি বলা তাদের সেই চলমান ষড়যন্ত্রেরই অংশ। বিএনপির এ দুই নেতার আজকের পরিণতি তাদের ধারাবাহিক অপরাজনীতিরই ফসল বলে মন্তব্য করেন সেতুমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট শাসন আমলে হাওয়া ভবন খুলে তারা দুর্নীতি ও লুটপাটের মহোৎসবে মেতে উঠেছিল, যার পরিণতিতে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সে সময় হাওয়া ভবনের কর্ণধার জিয়াপুত্র তারেক রহমানের দুর্নীতির খতিয়ান বিশ^ গণমাধ্যম ও বিশ^খ্যাত গোপন নথি প্রকাশকারী সংস্থা উইকিলিকসে বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি দুই নেতার দুর্নীতির মামলার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কোনো যোগসূত্র নেই। ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে এবং তাদের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ার পর নিম্ন আদালত সাজা দিয়ে রায় দেয়। প্রায় ১৬ বছর বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ করে আদালত তাদের সাজা দিয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশের পবিত্র সংবিধান অনুযায়ী সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও আইন ও বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। এমনকি বিশ্বজিৎ হত্যাকা- এবং বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার হত্যা মামলায়ও ছাত্রলীগের নেতারা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ভোগ করছেন।’ তিনি বলেন, বিএনপি দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে তাদের দলীয় গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করেছে এবং দলের চিহ্নিত শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের সুরক্ষা দিয়েছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রসঙ্গ উঠলেই আলোচনায় আসেন সাবেক সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরণ। নগরীর লোকেরা বলে, তার মতো নগর পিতা দরকার। এবার আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত নগরবাসীকে কথা দিয়েছেন, হিরণের মতো করে নগরী গড়বেন তিনি। শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুর এক দশক পেরিয়ে গেছে, তবু তিনি আলোচনায়; শুধু বরিশালে নয়, সারা দেশে।
সংশ্লিষ্ট লোকজন বলে, হিরণের কর্মফলই তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। একসময় সব ক্ষেত্রে বরিশাল সিটির মানুষ অবহেলিত ছিল। সেসব অবহেলার কারণ ঘুচিয়ে এবং মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী নগরীকে আধুনিক করার অঙ্গীকার নিয়ে হাজির হন হিরণ। মেয়র নির্বাচিত হয়ে পাঁচ বছরের মধ্যে নগরীর রূপ পাল্টে দেন তিনি। বরিশালকে সাজান আধুনিক রূপে।
অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য আবদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিরণ ছিলেন আদর্শ নেতা। মানুষকে বোঝার চেষ্টা করতেন। দক্ষ ও বিচক্ষণ এবং সৃজনশীল মানুষ। তিনি নগরীর উন্নয়ন নিয়ে যেমন ভেবেছেন, ঠিক তেমনি মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন। তাই মানুষ ভুলতে পারে না তাকে।’
বিসিক শিল্পনগরীসংলগ্ন চায়ের দোকানদার মো. হালিম বলেন, ‘হিরণ সবসময় মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করতেন। সাধারণ পোশাকে চলতেন। দলমত নির্বিশেষ সবাইকে ভালোবাসতেন।’
নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সমির বলেন, ‘মেয়র হিরণ আমাদের জন্য রাস্তাঘাট, সড়কে বাতির ব্যবস্থাসহ অনেক কিছু করেছেন। তার কাজগুলোই কোনোমতে অনুসরণ করেছে অন্যরা। যে কাজ করে তাকেই তো মনে রাখব আমরা, তাই হিরণকে মনে রেখেছি।’
রিকশাচালক মো. হারুন বলেন, ‘এ নগরীর রাস্তাঘাট চলাচলের অযোগ্য ছিল। রাতে অন্ধকারে ডুবে থাকত। চুরি-ডাকাতি নিত্যখবর ছিল। কিন্তু হিরণ মেয়র হওয়ার পর রাতারাতি নগরী বদলে গেল। অনেক মানুষকে সিটি করপোরেশনে চাকরি দিয়েছেন তিনি। নগরীর গরিব মানুষকে এক টাকা করে হলেও সাহায্য করেছেন। সবার মন জয় করেছেন। আজ তার মতো একজন মানুষ থাকলে আমরা শান্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারতাম।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যাকে হারিয়েছি তাকে তো আর ফিরে পাব না। কিন্তু তার কর্ম, মানুষের প্রতি তার সম্মান এবং ভালোবাসা তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তিনি বিদ্যালয়ে এলে কখনো রাজনৈতিক আলাপ করতেন না। সবসময় শিক্ষার্থীদের আদর্শ মানুষ হওয়ার জন্য বলতেন, গল্প শোনাতেন।’
একজন ব্যবসায়ী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিরণ সাহেব থাকাকালে ব্যবসা করতে গিয়ে কখনো হেনস্তার শিকার হইনি। তিনি নিজেও ব্যবসায়ী ছিলেন। আমাদের ব্যবসায়ীদের কষ্ট তিনি বুঝতেন। কিন্তু নগরীর একদল মানুষ তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাকে নির্বাচনে হারিয়ে দিয়েছে। তারপর হিরণ সাহেব দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন।’
বিএম কলেজের সাবেক ভিপি ও শওকত হোসেন হিরণের ঘনিষ্ঠ মঈন তুষার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিরণ সাহেব প্রত্যেক নেতাকর্মীর নাম জানতেন। তিনি যার সাঙ্গে কথা বলতেন, সেই মানুষটিকে ভুলতেন না। এজন্য মানুষ তার প্রতি এত দুর্বল এবং আকৃষ্ট। নগরীর জন্য তিনি মাস্টারপ্ল্যান করে কাজ করেছেন। তার সঙ্গে মানুষ সরাসরি কথা বলতে পারত এবং দেখা করত। এখনো মানুষ তাকে ভালোবাসে এবং মনে রেখেছে।’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সোহেল রানা বলেন, ‘সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণ বরিশালকে আধুনিক নগরীতে রূপান্তরিত করে গেছেন। উন্নয়ন-আন্তরিকতা ও ব্যবস্থাপনার দক্ষতার সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি একজন আইকনিক সিটি মেয়র ছিলেন। আন্তরিকতাই একজন প্রশাসকের মূল সূচক। তাই তিনি সাধারণ মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছেন।’
মেয়র হিরণ ব্যক্তিগত জীবনে কেমন ছিলেন এ প্রশ্নের উত্তরে তার সহধর্মিণী ও সাবেক সংসদ সদস্য জেবুন্নেসা আফরোজ হিরণ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২৬ বছর আমি তাকে দেখেছি। তিনি কারও ভাই ছিলেন, একজন স্বামী ছিলেন এবং সন্তানদের বাবা ছিলেন। পরিবারভক্ত একজন মানুষ। মানবিক গুণাবলি ছিল। তার মা-ভক্তির খুব নাম আছে বরিশাল শহরে। স্বজন-সন্তান ও পরিবারের প্রতি যতœ নেওয়ায় কোনো কমতি ছিল না। স্ত্রী হিসেবে তাকে অসাধারণ কর্তব্যপরায়ণ একজন মানুষ হিসেবে দেখেছি আমি।’
তিনি বলেন, ‘উনি রাজনৈতিক মহলে অত্যন্ত বিচক্ষণ একজন ব্যক্তি ছিলেন। কর্মী ও সহযোদ্ধাদের প্রতি ভালোবাসা ছিল; নেতাদের প্রতি সম্মানে কোনো ঘাটতি ছিল না তার। ২০০১ সালের জামায়াত-বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসে, তখন কর্মীদের কীভাবে বুকে আগলে রাখতে হয় আমি তা পাশে থেকে দেখেছি। রাজনীতি এবং নগর উন্নয়নÑ দুই ক্ষেত্রেই তিনি সফল।’
প্রসঙ্গত, শওকত হোসেন হিরণ এলএলবি পাস করার পর জাসদ ছাত্রলীগে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন এবং ১৯৮৮ সালে ২২ বছর বয়সে বরিশাল সদর উপজেলা থেকে বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর আলোচনায় আসেন তিনি। ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। রাজনীতিতে আরেক দফা পরিবর্তন আসে ১৯৯৬ সালের পর। স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে ভালো সখ্য থাকায় আওয়ামী লীগে যোগ দেন হিরণ। তার রাজনৈতিক সক্রিয়তা ও সাংগঠনিক দক্ষতা বিবেচনা করে ২০০৩ সালে কেন্দ্রীয় কমিটি তাকে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মনোনীত করে। ২০০৮ সালের ৪ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন। বরিশাল মহানগরীকে আধুনিক সাজে সাজান। স্থানীয় মানুষ ও তার অনুসারীদের কাছে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। ২০১২ সালে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামালের কাছে পরাজিত হন। গুঞ্জন রয়েছে, তার দলীয় লোকেরাই তার পরাজয়ের কারণ। হিরণের মন ভাঙলেও তিনি থেমে যাননি। ২০১৪ সালে বরিশাল সদর আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই বছর ৯ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের মুখে থাকা কুড়িগ্রামের চর ভগপতিপুর সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকটি অবশেষে বিলীন হয়ে গেছে। ক্লিনিকটি সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চলের চর ভগপতিপুর এলাকায় ছিল।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে চর ভগপতিপুর সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকটি ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে বিলীন হয়। এর আগে ওই এলাকার একটি স্কুলও ভাঙনের শিকার হয়। এ ছাড়াও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে একটি মসজিদ ও আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দাদের। ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছে ব্রহ্মপুত্র নদসহ অন্যান্য নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গফুর বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের গাফিলতির কারণে ক্লিনিকটি নিলামে বিক্রি করা সম্ভব হয়নি।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, অনেক চেষ্টা করেও ক্লিনিকটি রক্ষা করা গেল না।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।