
বিশ্ব গণমাধ্যম সূচক ২০২২ অনুযায়ী, ১৮০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬২তম। ২০১৩ সালে বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতনের হার ১২.৫ শতাংশ থাকলেও, ২০১৪ সালেই হয়ে যায়- ৩৩.৬৯ শতাংশ। এরপর ক্রমান্বয়ে বাড়ছেই এই সংখ্যা।
চলতি বছরের আড়াই মাসের মধ্যেই দেশব্যাপী, ১৫টি সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া দেশ স্বাধীনের পর থেকে আজ পর্যন্ত অসংখ্য সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। আবার কেউ গুরুতর আহত হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন।
সেই ১৯৭২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত কত জন সাংবাদিক নিহত বা গুরুতর আহত হয়েছেন, সেই পরিসংখ্যান বিশাল। শুধু ২০২২ সালেই ৬৭ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, ২০২৩ সালের আড়াই মাসের মধ্যেই নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন ২৬৬ সাংবাদিক। একটি শ্রেণির কাছে সাংবাদিক হত্যা কিংবা নির্যাতন যদি স্বাভাবিক হয়ে ওঠে, তাহলে বুঝতে হবে আমাদের শাসনব্যবস্থার মধ্যে গুরুতর গলদ রয়ে গেছে। অথবা প্রশাসনের মধ্যেই, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে ঘাপটি মেরে আছে বকাঙ্গালি আদর্শ বিরোধী অপশক্তি। নৈতিক ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যম উজ্জ্বল ভূমিকা কীভাবে রাখবে? একইসঙ্গে বিষয়টি গভীর উদ্বেগের বিষয়। গতকাল সুপ্রিম কোর্টে পুলিশ সাংবাদিকদের ওপর যে তান্ডব চালিয়েছে, তা একটি সভ্য দেশে হতে পারে না।
গতকাল দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায় প্রকাশিত ‘পুলিশি তাণ্ডব সুপ্রিম কোর্টে’ শীর্ষক সংবাদ মাধ্যমে জানা যাচ্ছে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সুপ্রিম কোর্টে নিয়মিত সংবাদ সংগ্রহ করেন এমন কয়েকজন সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহ করতে ভোটকেন্দ্রে যান। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুলিশ তাদের বেধড়ক লাঠিপেটা ও অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করে। বুট দিয়ে লাথি মারে। পরিচয়পত্র দেখানোর পরও ক্ষান্ত হয়নি পুলিশ। এ সময় এটিএন নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাবেদ আক্তার, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জান্নাতুল ফেরদাউস তানভী, আজকের পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক এস এম নূর মোহাম্মদ, অনলাইন পোর্টাল জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ফজলুল হক মৃধা, মানবজমিনের মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার আবদুল্লাহ আল মারুফ, বৈশাখী টিভির ক্যামেরাপারসন ইব্রাহিম হোসেন, এটিএন বাংলার ক্যামেরাপারসন হুমায়ুন কবির, সময় টিভির ক্যামেরাপারসন সোলাইমান স্বপন, প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক শুভ্র কান্তি দাসকে বেধড়ক পেটায় পুলিশ। এর মধ্যে এটিএন নিউজের জাবেদ আক্তারকে স মেঝেতে ফেলে পেটানো হয়। এ ছাড়া বৈশাখী টিভির ক্যামেরাপারসন ইব্রাহিমকে লাঠিপেটাসহ গায়ের কাপড় ছিঁড়ে ফেলা হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় জাবেদ আক্তারকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে নিয়ে ভর্তি করা হয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সুপ্রিম কোর্টে সংবাদ সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা। ঘটনার পর প্রতিকার চেয়ে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আইন, আদালত ও মানবাধিকার-বিষয়ক সংগঠন ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের (এলআরএফ) সাবেক ও বর্তমান শীর্ষ নেতারা। তারা সাংবাদিক নিপীড়নের বিষয়টি লিখিতভাবে প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করেন। প্রধান বিচারপতি এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
বিষয়টা এখানেই। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের অবস্থা যদি এই হয় তাহলে গণমাধ্যম কর্মীদের ভিন্ন চিন্তা করে অগ্রসর হতে হবে। সেক্ষেত্রে কোনোভাবেই গণমাধ্যমে প্রকৃত সত্য প্রকাশিত হবে না- যা হবে, তা অনেকটা প্রেস রিলিজের মতোন। এতে প্রকারান্তরে সরকারই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি এ রকম ঘটনা চলতেই থাকলে, বিশে^ ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে সরকারের। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা দরকার। না হলে, সরকার যে সাংবাদিকবান্ধব তা শুধু কথার কথাই হয়ে থাকবে। এ বিষয়ে, দলীয় রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করা জরুরি।
তারা দুজনই ছিলেন তুখোড় ছাত্রনেতা, সেই ষাটের দশকে। ছাত্ররাজনীতির রাজকীয় ফসল এবং পরবর্তীকালের জাতীয় নেতা বা নেত্রী। উচ্চকণ্ঠবক্তা, চিন্তক এবং ছিলেন বামপন্থার ধারক ও বাহক। রবীন্দ্রনাথ যেমনটি বলেছিলেন বেঙ্গল অন্তরেও দুই, বাইরেও দুই। এই দুই তরুণ যৌবনেও ছিলেন ক্ষমতাসীনদের মূর্তিমান প্রতিপক্ষ, বড্ড বেয়াড়া সমালোচক। পরবর্তীকালে দেখা গেল তারা রীতিমতো ভোল পাল্টিয়ে বাম থেকে ডানে এসে শামিল হয়েছেন। এদেরই একজন এই সেদিন সুন্দর স্বগতোক্তি করলেন, ‘আজকাল ক্ষমতার লোভে বামরাও ডানে’।
এত সুন্দর স্বগতোক্তিতে শেক্সপিয়রের কুশীলবরাও এত স্মার্ট ছিলেন না। রাজা না থাকলেও রাজনীতির পাড়ায় আশপাশের অনেককেই আজকাল সকালে এক কথা, বিকেলে আরেক কথা এবং পরের দিন ভোরে নিজের অবস্থান নিজেই অকপটে খ-ন করেন এবং এ ধরনের বর্ণচোরারা এমন সব মহাজন বাক্য আওড়ান যে, তাতে অন্যরা বুঝতেই পারে তার বা তাদের উপলব্ধির চত্বরের সাধারণ ঘাস এখন অসাধারণ অ্যাস্ট্রো টার্ফ হিসেবে চিকচিক করছে।
শেক্সপিয়রের বেদনাবিধুর রোমান্টিক নাট্যকাব্য ‘ওথেলো’র ইয়োগো যেমন বারবার নিজের কূটচাল প্রকাশ ও প্রয়োগ করতেন। আজকাল প্রতিপক্ষকে অপশক্তি বলে শনাক্ত করতে গিয়ে নিজেদের আসল চেহারা আড়ালের চেষ্টা চলে, অন্যকে স্বেচ্ছায় হেনস্তা করে শক্ত করতে চান নিজের অবস্থানকে। ফিয়োদর দস্তয়েভস্কির ‘ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট’ কিংবা টলস্টয়ের ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ এমনকি পার্ল এস বাকের ‘গুড আর্থ’-এর মতো কালজয়ী উপন্যাসের নায়ক-নায়িকাদের মধ্যে আত্মসমালোচনা ও শোচনার যেসব টেকনিক লক্ষ করা যায় অধুনা অনেকেরই, দেশে ও বিদেশে, ঘরে ও বাইরে হরহামেশা নিজেদের অন্তর্দ্বন্দ্ব বিনা প্ররোচনায় প্রকাশ পায়।
সবার নমস্য ঠাকুর পৈতায় হাত বুলাতে বুলাতে যেমন ভেবেছিলেন পুরোহিত আর প-িতগিরি একসঙ্গে চলে না। দেখা যায়, ‘কারও প্রতি রাগ কিংবা অনুরাগের বশবর্তী না হওয়া’র শপথ নিয়েও নিজের পাটাতনের মুখপাত্র সেজে প্রতিপক্ষকে যে কোনো ভাষা ও ভঙ্গিতে আক্রমণ চালাতে কসুর করেন না। সর্বজনীনতার আদর্শ পক্ষপাতিত্বের, কালোত্তীর্ণ বিষয় কালের মধ্যে, জাতীয় নেতা দলীয় নেতায়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। রাজনীতির নাট্যশালায় এমন ‘নাটক’ রচিত হয় যা মঞ্চস্থ করা পর্যন্ত অপেক্ষার প্রয়োজন পড়ে না। এটা যে চরম আত্মঘাতী প্রবণতা-কালেভদ্রে স্বগতোক্তিতে তা বাক্সময় হয়ে ওঠে। অন্যের মর্ম যাতনা নিজের মধ্যে আমদানির প্রয়োজন পড়ে না, এলসি না খুলেই তা শিপমেন্ট হয়ে যায়।
ধ্বনি ও ভাষাবিজ্ঞানী অধ্যাপক মুহম্মদ আবদুল হাই (১৯১৯-১৯৬৯) সাড়ে ছয় দশক আগে ১৩৬৪র ফাল্গুন-চৈত্র সংখ্যা ‘সমকাল’ পত্রিকায় ‘তোষামোদের ভাষা’ এবং একই পত্রিকার ১৩৬৫র জ্যৈষ্ঠ সংখ্যায় ‘রাজনীতির ভাষা’ শিরোনামে দুটি প্রবন্ধ লেখেন। প্রবন্ধ দুটি ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত তার ‘তোষামোদ ও রাজনীতির ভাষা’ গ্রন্থভুক্ত হয়। সেকাল এবং একালে রাজনীতির ভাষা ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তনের ধারা সন্ধান-শনাক্ত করতে তার এই লেখা।
প্রথমে সাধু স্বীকৃতি (ডিসক্লেমার) দিয়ে রাখা ভালো যে, রাজনীতি ও এর ভাষা প্রক্রিয়া প্রকরণ নিয়ে এ রচনা নিছক অ্যাকাডেমিক ও নির্মোহ নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে সংরচিত, এতে কোনো ব্যক্তি কিংবা কোনো কালের কোনো সংগঠনের প্রতি অনুরাগ কিংবা বিরাগ প্রকাশের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। কেননা অনেক সমাজে ‘রাজনীতি’ নিয়ে আলাপ-আলোচনার মধ্যেও রাজনীতির গন্ধ খোঁজার সংস্কৃতি আগেও যেমন ছিল বর্তমানেও তা আরও বড় করে বলবৎকরণের বড় বড় আইন বিদ্যমান আছে। সেসব দেশ ও সমাজে মুক্তবুদ্ধি চর্চা নানান ঘেরাটোপের মধ্যে আছে।
এটা ঠিক যে, কোনো ভাষার নাম শুনলে সবার কাছে সে ভাষার একটি সামগ্রিক রূপ ফুটে ওঠে। সেই ভাষার গঠন-প্রকৃতি ও আঙ্গিক ইত্যাদির মধ্যে নিয়মশৃঙ্খলাজনিত যে নানা খুঁটিনাটি ভাগ আছে সেটা ধরা পড়ে সমাজের ভাষার ব্যবহার থেকে। অধ্যাপক হাইয়ের মতে, ‘সমাজ জীবন গড়ে তোলার জন্যই মানুষের ভাষার উদ্ভব বলে সমাজ জীবনে ভাষার ব্যবহারের বেলায় তার সত্যিকার স্বরূপটি ধরা পড়ে। ভাষার কাজ হলো পারস্পরিক সমঝোতা, তা কমপক্ষে দুজনের মধ্যেই হোক কিংবা বহুজনের মধ্যেই হোক দুটো মানুষ যখন কথা বলে তখন একসঙ্গে নির্দিষ্ট কতগুলো বিষয়েই তারা আলাপ-আলোচনা করে... তখন বিষয়োপযোগী ভাষাই সে ব্যবহার করে। সমাজজীবনের নির্দিষ্ট পরিপ্রেক্ষিতে ওই ক্ষেত্রোপযোগী যেসব শব্দের হার গাঁথা হয়, তা-ই ভাষাকে তার সামগ্রিক রূপ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নানা ভাগে ভাগ করে দেয়। এ কারণেই সমাজ জীবনের বিচিত্র পরিবেশে ভাষারও বিচিত্র প্রয়োগ লক্ষ করা যায়।
সে নিরিখেই সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের অন্যান্য বিষয়ের মতো রাজনীতির ভাষারও... বিভিন্ন দেশ ও রাষ্ট্রে বিভিন্ন রকমের প্রচলিত শাসনব্যবস্থার সুবিধার জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সমাজ নিজ নিজ ভাষায় উপযোগী শব্দ সৃষ্টি করে নেয়। এসব শব্দ একদিনে সৃষ্টি হয় না রাষ্ট্রের শাসনযন্ত্র যাদের হাতে থাকে, প্রয়োজনের তাগিদে তারা কিছু শব্দ এবং এর প্রকাশ প্রক্রিয়া বা ভঙ্গি সৃষ্টি করিয়ে নেন।’
চিন্তা থেকে যেমন কাজের উৎপত্তি, নিয়ত বা পরিকল্পনার ওপর নির্ভর করে যেমন কাজের গতি-প্রকৃতি, তেমনি রাজনীতির ভাষা খোদ রাজনীতির চরিত্র, নীতি ও প্রকৃতি অনুযায়ী উৎসারিত-উচ্চারিত হয়ে থাকে। রাজনীতির সংস্কৃতি-রুচি চাহিদা ও উদ্দেশ্য বিধেয় অনুযায়ী তোষামোদ ও রাজনীতির ভাষার রূপ পরিগ্রহ করে।
পরিবেশ অনুসারে ভাষার শব্দাবলির ব্যবহার থেকে মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা ও ভাবনাচিন্তার বাহন হিসেবে মানুষের চিন্তাধারার সঙ্গে সংগতভাবে সেই চিন্তার আধার তথা ভাষার গভীরতর রহস্য উদ্ঘাটিত হতে পারে।
সরকার বা রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য এক এক দেশে বহু রকম রাজনৈতিক চিন্তাধারার বিকাশ দেখতে পাওয়া যায়। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার জন্য তাবত দেশে দলমত নির্বিশেষে প্রত্যেকটি দলই দেশের অধিবাসীদের কাছে তাদের আদর্শ ও কর্মসূচি নিয়ে উপস্থিত হয় আর সাধারণকে তাদের মতে দীক্ষিত করার জন্য ভাষার সাহায্যেই জোর প্রচারণা চালায়।
অন্য কথায়, ভাষা রাজনীতিকদের হাতের পুতুল হয়ে ওঠে। সে ভাষা দিয়ে তারা নিজের বক্তব্য যেমন প্রচার করিয়ে নেন, তেমনি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য অপপ্রয়োগ করতেও কুণ্ঠিত হন না।
পশ্চিমের উদার মতাবলম্বী দেশ রাজনৈতিক মতামত প্রকাশে যে ব্যক্তিস্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে তা অবারিত নয়। সেখানে ব্যক্তিবিশেষ কি পার্টিবিশেষ যা খুশি বা যেমন খুশি তেমন করে ভাষা প্রয়োগ করতে পারে না। সেসব দেশে রাজনৈতিক মতামতের স্বাধীনতা আছে, কিন্তু সে স্বাধীনতা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্য নয় বা রাষ্ট্রের স্বার্থ বা অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে, এমন অন্তর্ঘাতী কোনো কিছু কাজ করার জন্য নয়।
রাষ্ট্রের মঙ্গলের জন্য বহুমুখী করে তোলাই এবং মতামতের পার্থক্য সত্ত্বেও নির্দিষ্ট কতগুলো কর্মসূচির ভিত্তিতে কাজ করে যাওয়ার জন্য তাদের একত্রিত করার এই ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রধান লক্ষ্য। পক্ষান্তরে উন্নয়নশীল অনেক দেশে স্বৈরতন্ত্র ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে তাদের তাড়াতে বেগতিক হয়ে ব্যক্তিস্বাধীনতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেরাই নিজেদের শত্রু বনে যায়।
দেশে মানবাধিকারের সংকট মোকাবিলা করতে না পেরে বিদেশের কাছে নালিশ দিতে বাধ্য হয়। বিদেশিরাও এই সুযোগে স্বৈরতন্ত্র বা ক্ষমতাসীনকে শক্তিশালী ক্ষমতা প্রয়োগের ব্যাপারে দর-কষাকষির মাধ্যমে গোটা দেশ ও সমাজকে রীতিমতো জিম্মি করে ফেলে।
আজ থেকে সাড়ে ছয় দশক আগে ঔপনিবেশিক পরিবেশে, অধ্যাপক আবদুল হাই যা দেখেছিলেন, আজ স্বাধীন-সার্বভৌম পরিবেশেও তার অবস্থানে তেমন হেরফের ঘটেনি বরং বিপর্যস্ততার মাত্রা ও গতি বেড়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। পরিশেষে এ ব্যাপারে অধ্যাপক হাইকে উদ্ধৃত করা যায় :
‘রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করার জন্য তাদের আদর্শ ও উদ্দেশ্য অনুসারে জনমত গড়তে গিয়ে দেশের ভাষাকে তাদের প্রচারমুখী আদর্শের বাহন করে তোলে। রাজনৈতিক দলের আদর্শ যদি উন্নত না হয়, লক্ষ্য যদি অভ্রান্ত না থাকে এবং দেশের বৃহত্তর কল্যাণের দিকে নজর না দিয়ে আদর্শগত ও আর্থিক ব্যবস্থাজনিত কর্মসূচি যদি তারা তৈরি না করে কিংবা রাজনৈতিক দর্শন অনুসারে দলের শিক্ষাব্যবস্থা কোনো রাজনৈতিক দলগুলো তাদের না থাকে, তাহলে যেনতেন প্রকারে ক্ষমতাসীন হওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো কলহ-কোন্দলে লিপ্ত হয় ফলে রাজনীতির ভাষা শালীনতা হারায়।
আদর্শগত সংগ্রাম বা নীতি প্রচারের বাহন না হয়ে ভাষা তখন কবিওয়ালাদের খেউড় গানের বাহনের মতো হয়ে ওঠে এবং ভাষার মানও অচিন্তনীয়ভাবে নিচে নেমে যায়। আমাদের অতীত রাজনৈতিক জীবনের দুর্গতির মধ্যে আমাদের নেতৃবৃন্দের ভাষা ব্যবহারের রূপ ও ধরনই আমাদের এ উক্তির সমর্থন করে।’
লেখক: উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক
আরবি শাবান মাসের শেষ শুক্রবার আজ। আগামী শুক্রবার পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়ে যাবে। এখন চলছে রোজার জন্য শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। রমজানের প্রস্তুতির অন্যতম একটি হলো- রমজানকে স্বাগত জানানো। এর অংশ হিসেবে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা রমজানের জন্য শাবানের চাঁদের হিসাব রাখো।’ -সহিহ মুসলিম
রমজান মাস দুনিয়াজুড়ে মুসলমানদের উৎসবের মাস হিসেবে পালিত হয়। এখন থেকেই দুনিয়াজুড়ে এই পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ মাস উপলক্ষে গোনাহ মাফের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। আধুনিক যুগের সুবিধার কারণে ইতিমধ্যেই অনলাইনে রোজার ক্যালেন্ডার প্রচারিত হচ্ছে। ইফতার, সাহরির সময় উল্লেখ করে মোবাইল ফোনে, পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন আদান-প্রদান শুরু হয়ে গেছে। খুবই ভালো উদ্যোগ। যেহেতু এ মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত বলা হয়েছে যে, যারা গোটা মাস আন্তরিকতার সঙ্গে, আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখে রোজাপালন করবে, তাদের সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। মাস শেষে ধরে নিতে হবে- যেন মায়ের পেট থেকে নিষ্পাপ শিশুর জন্মের সময়ের মতো সে নিষ্পাপ হয়ে গেছে।
মহান আল্লাহ আমাদের ভুলগুলো মাফ করে দিতে চান। শুধু আমাদের চাওয়ার অপেক্ষা। মহান আল্লাহর কাছে চাইলে আর শিরকমুক্ত থাকলে আমাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন।
এই রমজান মাসে একটি রাত আছে, যার মূল্য হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। সেটি হলো শবেকদরের রাত। এ মাসের শেষ দশ দিনের যেকোনো বিজোড় রাতে এই শবেকদর খুঁজতে বলা হয়েছে। যদিও আমাদের দেশে রমজানের ২৭ তারিখ রাতকে শবেকদরের রাত বলা হয়। কিন্তু আসল ঘটনা শেষ দশ দিনের প্রত্যেক বিজোড় রাতে শবেকদর খুঁজতে হবে। যেহেতু এক রাতের মূল্য হাজার মাসের চাইতে উত্তম, তার জন্য তো একটু মেহনত করাটাই যুক্তিসংগত।
রমজান মাসে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সহজ হয়ে যায়। শেষ রাতে সাহরি খাওয়ার জন্য উঠতে হয়। তাই সাহরির একটু আগে উঠে উত্তমরূপে অজু করে অতি মূল্যবান তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে নেওয়া যেতে পারে। তাহাজ্জুদ নামাজ দুই রাকাত করে ৮ রাকাত বা তার চেয়ে বেশি পড়া যায়। এর পর আপনমনে আল্লাহর কাছে দোয়া করা যায়।
মহান আল্লাহ রাতের শেষভাগে সপ্তম আকাশ থেকে নিম্ন আকাশে নেমে আসেন তার বান্দাদের কথা শোনার জন্য। তিনি আহ্বান করতে থাকেন তার বান্দাদের তোমরা কী চাও? সব দিয়ে দেব। গোনাহ মাফ চাও, ছেলে সন্তান চাও, রিজিক চাও, ভালো বিবাহ করতে চাও সব দিয়ে দেব। শুধু কায়মনে শিরকমুক্ত অবস্থায় আল্লাহর কাছে চাইতে হবে।
আল্লাহর নবী (সা.) আমাদের পুরুষদেরই শুধু এ সুযোগের কথা বলেননি। স্বামীদের বলা হয়েছে, তোমরা শেষ রাতে তাহাজ্জুদের জন্য ওঠো, তোমাদের স্ত্রীদেরও ওঠাও। এমনকি তারা গড়িমসি করতে চাইলে, তাদের মুখে পানি ছিটিয়ে তাদের তাহাজ্জুদের এই অপূর্ব নিয়ামত পাওয়ার সহযোগিতা করো।
রমজান মাসে বেশি বেশি দান-খয়রাত করতে হবে। কারণ এ মাসে অন্য মাসের চেয়ে সওয়াবের পরিমাণ আল্লাহতায়ালা বাড়িয়ে দেন। সুন্নতের দাম ফরজের সমান করে দেন, আবার ফরজের দাম ৭০ থেকে ৭০০ গুণ বাড়িয়ে দেন।
রমজান মাসে খেয়াল রাখতে হবে, রোজাদাররা যেন দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করতে পারেন। সেই সঙ্গে ছেলেমেয়ে, স্ত্রীদেরও নামাজের ব্যাপারে উৎসাহিত করতে হবে। অফিস-আদালতে, চলার পথে, বাস, নদীপথে; এমনকি উড়োজাহাজেও উদ্যোগ নিয়ে জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ে নিতে হবে। আগেই বলেছি, মহান আল্লাহ যেহেতু সব কাজের মূল্য বাড়িয়ে দেবেন, তাই আমাদেরও এ সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। রমজান মাসে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করা, পাড়া-প্রতিবেশীদের নিয়ে ইফতার করা, ছোটদের স্নেহ করা, বড়দের শ্রদ্ধা করা থেকে শুরু করে সব ভালো কথা ও কাজ বেশি বেশি করতে হবে।
রোজার মাসে অনেকে জাকাত দিয়ে থাকেন বেশি সওয়াবের আশায়। ভালো উদ্যোগ। জাকাত ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম। ধনীদের অর্থের শতকরা আড়াই ভাগ সমাজের গরিব-মিসকিনসহ ৮ খাতে খরচ করা ফরজ। যেহেতু আল্লাহ রমজান মাসে সওয়াবের পরিমাণ বেহিসাবি ভাবে বাড়িয়ে দেন, তাই ধনীরা কিংবা যাদের ওপর জাকাত ফরজ হয়েছে, তারা হিসাব করে জাকাত দিয়ে দেবেন। এটা গরিবের হক। সঠিক পথে জাকাত আদায় ও ব্যয়ের সুযোগ পাওয়ায় দাতা-গ্রহীতা উপকৃত হয়। জাকাতের কাপড় দেওয়া বা ধনী ব্যক্তিদের বাড়ির সামনে লাইন ধরে জাকাত বিতরণের ব্যবস্থা মোটেও ভালো কাজ ও যুক্তিযুক্ত নয়। এ ব্যবস্থা পরিহার করা দরকার।
রমজান মাসে সমাজের পরিবেশ আল্লাহমুখী করার ব্যবস্থা নিতে হবে। দিনের বেলায় হোটেল-রেস্তোরাঁ ও খোলা জায়গায় পানাহার বন্ধ করতে হবে। বিশেষ প্রয়োজনে লোকচক্ষুর আড়ালে অসুস্থ ব্যক্তি, অমুসলিম কিংবা বেরোজদারদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা থাকতে পারে।
রমজান মাসে ঘরে-বাইরে লোকদের নারী-পুরুষ সবাইকে রোজা পালন সহজ করার লক্ষ্যে কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিতে হবে। এতে কাজ কম হবে বলে মনে হয় না, বরং আল্লাহতায়ালা বরকত বাড়িয়ে দেবেন।
বাংলাদেশসহ মুসলিম দেশগুলোয় রোজার সময় খাদ্যদ্রব্যের মূল্য সহনশীল রাখা ব্যবসায়ী ও সরকারের দায়িত্ব। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে রোজার সময় জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে দেয়। কিন্তু আমাদের দেশের কতিপয় ব্যবসায়ী রোজার জন্য জিনিসপত্রের মজুদ করেন দাম বাড়ানোর লক্ষ্যে। এটা খুবই খারাপ দৃষ্টান্ত। ব্যবসায়ী মহল ও সরকারের নির্দিষ্ট বিভাগের প্রতি আহ্বান, রোজাদারদের সুবিধার্থে কম লাভে জিনিসপত্র বিক্রয়ের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। এতে আল্লাহর রহমত ও বরকত পাওয়া যাবে। রোজাপালন সহজ হবে স্বল্পআয়ের মানুষের জন্য। আর এটা হতে পারে আমাদের জন্য গোনাহ মাফের অসিলা। মনে রাখতে হবে, এই মাসে গোনাহ মাফের অনেক উপলক্ষ রয়েছে। সেগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে গোনাহ থেকে মুক্ত না হতে পারাটা গোনাহগার বান্দার জন্য লজ্জাকর ও ক্ষতির কারণ। আল্লাহতায়ালা সবাইকে রমজানের বরকত অর্জন এবং রহমত লাভে ধন্য করুন। আমিন।
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক
প্রথমেই বলে নিই, আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নই। কোনো রাজনৈতিক অভিলাসও আমার নেই। কিন্তু আমি একজন রাজনীতি সচেতন মানুষ। ইতিহাস ও রাজনীতি আমার অন্যতম প্রিয় বিষয়ও। বাংলাদেশের রাজনীতি যেভাবে দু-তিন ভাগে বিভক্ত, যেভাবে দলীয় লোকেরা রাজনীতিকে দেখেন, তাদের সঙ্গে আমার ভাবনার মিল থাকবে সেটা তাই আশাও করি না। মহান এই নেতাকে আমি আমার মতো করেই বিবেচনা করি, আমার মতো করেই ব্যাখ্যা করি।
এ কথা কে না জানেন, ১৯৭৫ সালের পরপরই বাংলাদেশে এক শ্রেণির মানুষ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম মুছে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। একটা সময় এমন হয়েছে যে, ১৬ ডিসেম্বর ও ২৬ মার্চ উদযাপনের সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসও বিকৃত করা হয়েছে। তখনকার সরকারি মাধ্যমগুলো এমনভাবেই স্বাধীনতার ইতিহাস বয়ান করত যেন কোনো এক সন্ধ্যায় কোনো এক অপরিচিত মেজরের ঘোষণা শুনেই বাঙালি জাতি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গিয়েছিল!
আরেক দল বঙ্গবন্ধুকে এমনভাবে চিত্রিত করতে শুরু করল যেন বঙ্গবন্ধু কোনো মানুষ নন, তিনি কোনো ভুল করতে পারেন না, তিনি সাক্ষাৎ ফেরেশতা! যদিও এটা মানতেই হবে, তিনিও ছিলেন আমাদের মতোই রক্ত-মাংসের মানুষ।
আমাদের দেশের কোনো কোনো বুদ্ধিজীবী বঙ্গবন্ধুকে জড়িয়ে এমন ঘটনার কথাও লিখলেন যেসব ঘটনা ঘটেনি কস্মিনকালেও! যেমন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কোনো কোনো গ্রন্থে আপনারা পাবেন, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল বঙ্গবন্ধুর! যেমন, কোনো কোনো গ্রন্থে পাওয়া যাবে হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণ আন্দোলনেও যুক্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু! পাওয়া যাবে এমন বক্তব্যও যে, ১৯৩৮ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে এমই স্কুলে গিয়েছিলেন শেরে বাংলা একে ফজলুল হকও।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যেসব স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ রচিত হয়েছে, সেগুলোতেও বঙ্গবন্ধুর সঠিক চিত্র তেমন পাওয়া যায় না, পাওয়া যায় খ-িত এক চিত্র, যেখানে রচয়িতাকে দেখা যায় নিজেকেই বড় করে তুলতে, বঙ্গবন্ধুকে নয়। এমনকি ইতিহাসের গবেষকদের অনেকেই বঙ্গবন্ধুর তিনটি গ্রন্থ প্রকাশের পরেও নিজেদের গ্রন্থে লেখা ভুল তথ্যগুলো সংশোধনের উদ্যোগ নেননি।
বঙ্গবন্ধুর জীবন সম্পর্কে জানতে গেলে বঙ্গবন্ধুর তিনটি গ্রন্থই কেবল নয়, আমাদের পড়তে হবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সম্পাদিত ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব স্পেশাল ব্রাঞ্চ অন দি ফাদার অব দি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’-এর ১৪টি খ-। এরই মধ্যে এ বইটির ১১টি খ- প্রকাশিত হয়েছে। তাতে তৎকালীন পাকিস্তানের গোয়েন্দা পুলিশের বয়ানে বঙ্গবন্ধুর অনেক অজানা তথ্য যেমন জানা যাবে, তেমনি জানা যাবে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রের নানা দিক সম্পর্কেও।
আমরা অনেকেই জানি, বঙ্গবন্ধু ছিলেন দৃঢ়চিত্তের মানুষ। এও অনেকেই জানেন, ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিম্ন বেতনভুক কর্মচারীদের আন্দোলনে যুক্ত থাকার কারণে তার ছাত্রত্ব বাতিল হয়। ছাত্রত্ব বাতিল এড়াতে সে সময়ে সে আন্দোলনে যুক্ত সব ছাত্রনেতা মুচলেকা দিলেও বঙ্গবন্ধু তাতে স্বাক্ষর করেননি।
বঙ্গবন্ধু এ সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমি কোনো অন্যায় দাবি করি নাই, অত্যন্ত ন্যায়সংগত দাবি করেছি। মুচলেকা বা জরিমানা দেওয়ার অর্থ হলো দোষ স্বীকার করে নেওয়া, আমি তা করব না।’ মুচলেকা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তার জীবনে ঘটেছে আরও অন্তত ৬ বার। এটাও ঠিক কতজন জানেন, আমার জানা নেই। অন্তত আমি কোনো গ্রন্থে এখনো পাইনি।
‘সিক্রেট ডকুমেন্টস’-এর ৯টি খন্ড থেকে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে জেল থেকে মুক্তি দেওয়ার সময় তাকে মুচলেকায় স্বাক্ষর করতে বলা হয় এবং যথারীতি বঙ্গবন্ধু সেসব মুচলেকায় স্বাক্ষর করেননি। এ কারণে কারাগারে তার সাজার মেয়াদ তিনবার ৬ মাস করে এবং একবার ২ মাস বাড়ানো হয়। এর ফলে বঙ্গবন্ধুকে অতিরিক্ত ২০ মাস সময় কারাগারে কাটাতে হয়। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে গোয়েন্দা পুলিশ কী লিখেছে সে সময়ে, সেটা একটু পড়া যাক ‘হি ওয়াজ নট উইলিং টু এক্সিকিউট এনি বন্ড ফর রিলিজ ইভেন ইফ দি ডিটেনশন উড কজ হিম টু ফেস ডেথ। হিজ এটিচ্যুড ওয়াজ ভেরি স্টিফ।’
১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের সূচনাকাল থেকে বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের কর্মকা-ের দিকে তাকালেও আমরা বুঝতে পারব, কীভাবে পাকিস্তানের জেলজুলুম উপেক্ষা করে বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের প্রতিটি ধাপে তিনি যুক্ত ছিলেন, কীভাবে সেই স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনকে তিনি পরিণত করেছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে।
তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি আসলে বাঙালি জাতির জন্যই সংগ্রাম করেছেন। আর এই দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তিনি তার নির্ভীক ও দৃঢ়চেতা মনোভাবের পাশাপাশি বাঙালি জাতির প্রতি তার ভালোবাসার প্রমাণও রেখেছেন।
৫৫ বছরের জীবনকালে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর অবদান চাইলেই তাই মুছে ফেলা সম্ভব নয়। এমনকি স্বাধীনতার পর দেশ পুনর্গঠনেও রয়েছে তার ব্যাপক ভূমিকা। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তার সাফল্যও তো কম নয়। এ সময়ে তার কোনো কোনো পদক্ষেপ নিয়ে কেউ কেউ সমালোচনা করেছেন।
সেসব সমালোচনাকে গ্রাহ্য ধরে নিলেও ‘বাংলাদেশ’ নামে বাঙালি জাতির জন্য স্বতন্ত্র একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কারণেই যতদিন ‘বাংলাদেশ’ নামক রাষ্ট্র থাকবে, ঠিক ততদিনই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এমনকি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে আরও যেসব মানুষের অবদান আছে, তা যত সামান্যই হোক- তাও কারোর পক্ষে মুছে ফেলা সম্ভব নয়।
যদিও এটা দুঃখজনক যে, আমাদের দেশে বঙ্গবন্ধুর যেমন, তেমনি আরও অনেক নেতার অবদানকেও মুছে ফেলার এক মন্দ রাজনীতি শুরু হয়েছে। এর অবসান হওয়া দরকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবও কেবল আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন না। সত্তরের নির্বাচনের আগেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন সব স্বাধীনতাকামী বাঙালির নেতা।
সে কারণে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যারা লালন করেন, বঙ্গবন্ধু তাদেরও। তাকে, তার অবদানকে খ-িত করাও ইতিহাস বিকৃতিরই শামিল।
লেখক: কবি, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক ও গবেষক সম্পাদক- ‘মুজিবপিডিয়া’
কল্পনা চাওলা একজন বিখ্যাত ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নভোচারী এবং নভোযান বিশেষজ্ঞ। কলম্বিয়া নভোযান বিপর্যয়ে যে সাতজন মহাকাশচারী এবং ক্রু মৃত্যুবরণ করেন তাদের মধ্যে তিনি একজন। পৃথিবীতে অবতরণ করতে গিয়ে বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে সংঘর্ষে এই নভোখেয়াযানটি বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল। কল্পনা চাওলা ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দের ১৭ মার্চ ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের কারনালে বসবাসকারী এক হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কল্পনা তার মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপন করেন ঠাকুর বালনিকেতন সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুল, কারনাল থেকে। এরপর ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে তিনি চণ্ডীগড়ের পাঞ্জাব প্রকৌশল কলেজ থেকে মহাকাশ প্রকৌশলের ওপর স্নাতকের পাঠ সম্পন্ন করেন। উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান এবং সেখানে ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন থেকে একই মহাকাশ প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতকোত্তর শিক্ষা সমাপ্ত করেন ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে। পরবর্তীতে কল্পনা ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো অ্যাট বউল্ডের থেকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রাপ্ত হন।
১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে কল্পনা নাসাতে তার কর্মজীবন শুরু করেন। তার প্রথম মহাকাশ যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দের ১৯ নভেম্বর। তিনিই প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জন করেন।
২০০৩ খ্রিস্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি মহাকাশ থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় কলম্বিয়া স্পেস সাটলটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় এক দুর্ঘটনার ফলে সাতজন ক্রুসহ বিধ্বস্ত হয় এবং কল্পনাসহ সবাই মারা যান।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামে স্ত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় চাচাতো ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে পলাশ হোসেন (২৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
শনিবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত পলাশ হোসেন ওই গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, নিহত পলাশ হোসেনের চাচাতো ভাই সুমন প্রায়ই পলাশের স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করত। শনিবার সন্ধ্যায় আবারো উত্ত্যক্ত করে। পলাশ বাড়িতে এলে বিষয়টি তাকে জানায় তার স্ত্রী। এ ঘটনায় পলাশ তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে বিষয়টির প্রতিবাদ করতে গেলে উভয়ের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সুমন ছুরি দিয়ে পলাশকে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই পলাশ মারা যায়।
মহেশপুর থানার ওসি খন্দকার শামীম উদ্দিন বলেন, নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। নিহত পলাশ পেশায় ভ্যানচালক ছিলেন, সঙ্গে কৃষিকাজও করত।
মার্চে ঘরের মাঠে দুটি প্রীতি ম্যাচের পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেখা যায়নি আর্জেন্টিনাকে। তিন মাস পর আগামী মাসে তারা খেলবে আরও দুটি প্রীতি ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে সেই ম্যাচের জন্য ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করেছেন লিওনেল স্কালোনি। তবে ঘোষিত সেই দলে নেই লাউতারো মার্তিনেজ।
আর্জেন্টিনার ক্রীড়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস ও ওলে তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গোড়ালির চোটের কারণে মার্তিনেজ চিকিৎসাধীন আছেন। তাই তাকে জাতীয় দলের স্কোয়াডে রাখা হয়নি।
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ইন্টার মিলানের হয়ে গোল করেছিলেন। ফাইনালেও তাকে ইতালিয়ান ক্লাবটির হয়ে খেলতে দেখা যেতে পারে। তারপরই তিনি মাঠের বাইরে চলে যাবেন। ঐ সময়ে তিনি বিশ্রামে থাকবেন। আর তাই কোচ স্কালোনি তাকে দলে রাখবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের অন্যতম সদস্য মার্তিনেজ। তবে পুরো টুর্নামেন্টে তিনি ব্যাথানাশক ঔষধ খেয়ে খেলছিলেন।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ও ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা।
দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে কৃষি খাতে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এ জন্য কৃষি খাতকে গুরুত্ব দিয়ে একাধিক পুনঃঅর্থায়ন তহবিল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর ব্যাংকগুলোর বার্ষিক কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রাও বাড়ানো হয়েছে। ১০ মাসেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে ফেলেছে ২৪ ব্যাংক। যদিও কোনো কোনো ব্যাংক এখনো ৪০ শতাংশের কম ঋণ বিতরণ করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ২৬ হাজার ৯৩০ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ ঋণ বিতরণ করতে পেরেছে ২৪ ব্যাংক। তবে অনেক ব্যাংক ঋণ বিতরণে ব্যর্থ হওয়ায় সার্বিক লক্ষ্যমাত্রার ৮৭ দশমিক ৪০ শতাংশ ঋণ বিতরণ হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। করোনা মহামারী ও বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কৃষির গুরুত্ব ব্যাপকহারে পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাই কৃষি খাতে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের মাধ্যমে সহায়তা করতে বাংলাদেশ ব্যাংক সচেষ্ট রয়েছে। এমতাবস্থায় ব্যাংকগুলো যদি এই খাতের প্রতি গুরুত্ব দেয় তবে আসন্ন খাদ্য বা অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা বাংলাদেশের জন্য সহজ হয়ে যাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে লক্ষ্যমাত্রার ৯২৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে বিদেশি খাতের হাবিব ব্যাংক। চলতি বছর ব্যাংকটিকে ৭ কোটি টাকা বিতরণ করার শর্ত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাংকটি বিতরণ করেছে ৬৫ কোটি টাকা। এর পরের অবস্থানে থাকা বিদেশি ব্যাংক আল ফালাহ বিতরণ করেছে লক্ষ্যমাত্রার ৩৫৯ দশমিক ২৯ শতাংশ। চলতি বছর ২৪ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করার কথা ছিল ব্যাংকটির। কিন্তু ১০ মাসে বিদেশি এই ব্যাংক বিতরণ করেছে ৮৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
২৩৮ শতাংশ ঋণ বিতরণ করে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বেসরকারি খাতের ঢাকা ব্যাংক। ব্যাংকটির ঋণ বিতরণের লক্ষ্য ছিল ৩৯০ কোটি টাকা। কিন্তু এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাংকটি ঋণ বিতরণ করেছে ৯২৮ কোটি টাকা। ২০০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করে
তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। চলতি বছর ব্যাংকটির শর্ত ছিল ১৪ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ। কিন্তু ১০ মাসেই বিতরণ করেছে ২৮ কোটি টাকা। শতভাগ ঋণ বিতরণের তালিকায় বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে উরি ব্যাংক, সিটি ব্যাংক এনএ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, এইচএসবিসি ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।
বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে বিডিবিএল, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। এছাড়া বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যাংক এশিয়া, এনসিসি, এনআরবি, সীমান্ত, এনআরবি কমার্শিয়াল, ওয়ান, প্রাইম, পূবালী, শাহাজালাল ইসলামী, সিটি, ট্রাস্ট, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল (ইউসিবি) এবং উত্তরা ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ২৮ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা ধরা হলেও ব্যাংকগুলো তার চেয়েও বেশি বিতরণ করেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ১০২ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা ৩০ হাজার ৯১১ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। যার মধ্যে অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসেই লক্ষ্যমাত্রার ৮৭ দশমিক ৪০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। আর চলতি বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ১১ হাজার ৭৫৮ কোটি এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ১৯ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম ১০ মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ১০ হাজার ৯৩৪ কোটি বা লক্ষ্যমাত্রার ৯৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং বিদেশি ও বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো ১৫ হাজার ৯৯৫ কোটি বা লক্ষ্যমাত্রার ৮৩ দশমিক ৫১ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে। গত ১০ মাসে
কৃষি ও পল্লীঋণ খাতে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে রাষ্ট্রের বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। ব্যাংকটি এই সময়ের মধ্যে ঋণ বিতরণ করেছে ৬ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ১০১ শতাংশের বেশি।
আলোচ্য ১০ মাসে শস্য খাতে বিতরণ করা হয়েছে ১২ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা, সেচ সরঞ্জাম কিনতে দেওয়া হয়েছে ২২৪ কোটি, কৃষি সরঞ্জাম কিনতে ১৮২ কোটি, গবাদি পশু এবং হাঁস-মুরগির খামারে ৫ হাজার ৭৫৯ কোটি, মৎস্য খাতে ৩ হাজার ৩১৭ কোটি, শস্য গুদামজাত এবং বিপণনে ১৩৫ কোটি, ব্যক্তিগত খাতে এক হাজার ৬৫১ কোটি এবং অন্যান্য খাতে ২ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ২৬ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকার ঋণ শোধ করেছেন কৃষকরা। গত বছরের একই সময়ে আদায় হয়েছিল ২২ হাজার ২৭ কোটি টাকা। সে হিসেবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আদায় বেড়েছে ৮ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যাংক খাতে কৃষিঋণের স্থিতি বা পরিমাণ ৫১ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা, যার মধ্যে এপ্রিল পর্যন্ত কৃষি খাতে খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ৮১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
সংলাপে রাজনৈতিক সংকট দূর হওয়ার নজির তৈরি হয়নি এখনো। তবুও নানা সময়ে সংকট নিরসনে রাজনীতিতে সংলাপ করা নিয়ে আলোচনা হয়। সংলাপের আশ্রয় নিতেও দেখা গেছে দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভিন্ন মেরুতে অবস্থান থাকায় আবারও রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় আলোচনায় এসেছে ‘সংলাপ’। যদিও প্রধান দুই দলের নেতারা সংলাপে অনীহা প্রকাশ করে আসছেন। আবার আড়ালে আলাপে দুই দলের আগ্রহও দেখা গেছে।
অন্তরালের সংলাপ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার আড়ালে আলাপের মূল কারণ হলো বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বড় একটি অংশ বয়স্ক হয়ে গেছেন। তাদের অনেকের এবারের পরে নির্বাচন করার সক্ষমতা আর থাকবে না। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকতে গিয়ে সামাজিক মর্যাদা নষ্ট হয়েছে। এ সময় সংসদ সদস্য হয়ে মর্যাদা নিয়ে চলতে চান তারা। বিএনপির ওই অংশের সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতাও রয়েছেন যারা নির্বাচনে যেতে চান। ফলে নির্বাচনে যেতে আগ্রহী বিএনপির সেই সব নেতা আড়ালে আলাপে থাকতে রাজি আছেন। অন্যদিকে আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখতে চাওয়া বিদেশি শক্তিগুলোর সরকারের ওপর চাপ থাকায় বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে চায় আওয়ামী লীগ। ফলে প্রকাশ্যে সংলাপের আগ্রহ না দেখিয়ে আড়ালের আলাপে আগ্রহী দলটির নেতারা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে এক চুলও নড়বে না। অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে কোনোভাবেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যাবে না। দুই দলই নিজেদের এমন অনড় অবস্থান দেখাচ্ছে। দুই দলের পরস্পরবিরোধী অবস্থানে সৃষ্ট সংকট সমাধানে বিদেশি তৎপরতা বেশ আগে থেকেই শুরু হয়েছে। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসতে শুরু করেছে বিদেশি সেই তৎপরতায়ও গতি এসেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএনপি কাউকেই কাছাকাছি অবস্থানে, অর্থাৎ এক মেরুতে আনতে পারেনি এখনো। তবে বিদেশি প্রভাবশালী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা সংকট নিরসনে দুই দলকেই সংলাপে বসার জন্য বলছেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা সংলাপের মধ্য দিয়ে সমস্যা সমাধানের রাস্তা ঠিক করতে দুই দলকেই তাগিদ দিয়েছেন। বিদেশিদের অবস্থান হলো আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চান তারা। সে জন্য রাস্তা তৈরি করতে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই সংলাপে অনীহা দেখিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্যে অনীহার কথা জানিয়েছেন। বিএনপিও প্রায় প্রতিদিনই অনীহা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখছে।
তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও সংলাপে সমাধান আসেনি। এবারও সংলাপে সমাধান আসার সম্ভাবনা কম। যদি সংলাপের আগেই এজেন্ডা নির্ধারণ করে সংলাপে বসে, সেই সংলাপ সফল হওয়ার পথ থাকে না।
দুই দলের একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, প্রকাশ্যে সংলাপ না করে এবার আড়ালে সংলাপ হতে পারে। অনেকটা হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটে যেতে পারে-বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন দিয়ে বসতে পারেন।’ তিনি বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
নির্বাচন সামনে রেখে দেশে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকেরা সংকট নিরসনে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। ওই সব বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দুই দলেরই অবস্থান জানতে চেয়েছেন তারা। একই সঙ্গে দুই দলকে তারা এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন যে ভিন্নমত থাকলেও স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের স্বার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়া জরুরি। এ কারণে নির্বাচনের আগে দুই প্রধান দলের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার আবশ্যকতা রয়েছে। এই সমঝোতার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, কিংবা উভয় পন্থায় দুই দলের মধ্যে ‘আলাপ’ হওয়া দরকার, তা সেটা সংলাপ বা আলোচনা যে নামেই করা হোক না কেন। এদিকে কূটনীতিকদের কাছে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে, বিএনপি কোনো ধরনের সংলাপে আগ্রহী নয়। ২০১৪ সালের নির্বাচন কেন্দ্র করে বিএনপির আচরণ বিদেশিদের কাছে তুলে ধরে সংলাপে বিএনপির অনীহার কথা জানান।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দাবি করছেন, রাজনীতিতে কোনো কিছু আদায় করতে হলে আন্দোলনের মাধ্যমে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ক্ষমতাসীনদের বাধ্য করতে হয়। কিন্তু সেটা বিএনপি পারছে না। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেছিল। সেখানে জনগণকে সম্পৃক্ত করে বিএনপিকে পদত্যাগে বাধ্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিএনপি এখন সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারবে বলে মনে করছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মাঠে আওয়ামী লীগের অবস্থান আছে। জনগণ সরকারের সঙ্গে আছে। আর তাদের সঙ্গে জনগণই নেই। তাই তো খালেদা জিয়াকে এখনো মুক্ত করতে পারেনি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘যেকোনো সমস্যার সমাধান সংলাপের মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব। সংলাপে বসলে হয়তো শতভাগ পাব না। তবে গিভ অ্যান্ড টেক তো কিছু হবেই। গণতন্ত্রে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই।’
তবে দলটির সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, ‘সংলাপ চলছে। মিডিয়ায়, টক শোতে, মাঠে মঞ্চে। এক দল আরেক দলকে উদ্দেশ্য করে যে বক্তব্য দিচ্ছে, তাও এক ধরনের সংলাপ। এসব অনেকেই সংলাপ বলে টের না পেলেও মূলত এটাও সংলাপ।’
আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, সংলাপের ব্যাপারে পশ্চিমা কূটনীতিকেরা তাদের তেমন কোনো পরামর্শ দেননি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘আমরা তাদের (কূটনীতিক) বলেছি সংলাপের উদ্যোগ আমরা নিয়ে কী করব? তাদের (বিএনপি) যদি কোনো দাবি থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলতে পারে। নির্বাচন কমিশন যদি সুপারিশ করে, সেটা অবশ্যই সরকারের কাছে আসবে। সরকার দেখবে তখন।’
সংলাপ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ভাবনা আমাদের নাই।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। আর আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচনকালীন এই সরকারই থাকবে এবং তাদের অধীনে নির্বাচনে হবে। নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ অবস্থায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সংকট সমাধানে কূটনীতিকদের দূতিয়ালি চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও ইতিবাচক বিএনপি। সাম্প্রতিক সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থার দূতসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। ওই বৈঠকগুলোতে কেন এই সরকারের অধীনে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতে চায় না তা ব্যাখ্যা করেছে দলটি। বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে যাবে না, সেটিও স্পষ্ট করেছে। একই সঙ্গে কূটনীতিকদের বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে সে বিষয়ে সংলাপের আহ্বান আসলে তাতে সাড়া দেবে বিএনপি। আর এই সংকট মোকাবিলায় কূটনীতিকদের ‘রোল প্লে’ (ভূমিকা রাখা) করার সুযোগ আছে বলে মনে করেন দলটির নেতারা। তাদের মতে, প্রকাশ্যে না হলেও পর্র্দার অন্তরালে সংলাপ হতে পারে। কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপের কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনেও গুঞ্জন রয়েছে ভেতর-ভেতর সংলাপ হচ্ছে।
সর্বশেষ ১৮ মে গুলশানের আমেরিকান ক্লাবে মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল চিফ ব্রান্ডন স্ক্যাট, পলিটিক্যাল অফিসার ম্যাথিউ বে, পলিটিক্যাল কনস্যুলার ডেনিয়েল শেরির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
জানতে চাইলে শামা ওবায়েদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকগুলোতে তারা আমাদের অবস্থান জানতে চান। আমরাও আমাদের অবস্থান তুলে ধরি। সর্বশেষ তারা জানতে চেয়েছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে আপনাদের অবস্থান কী। আমরা বলেছি, আন্দোলন চলছে, সেটা আমরা কন্টিনিউ (চালিয়ে যাব) করব। তারা অন্য পক্ষের (ক্ষমতাসীনদের) কথাও শুনছেন। এ অবস্থায় তারা কী করছে (দূতিয়ালি), নাকি অন্য কিছু হচ্ছে সেটা তাদের বিষয়। তবে আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আরেকটি গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত হোক, সে ব্যাপারে তাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকুক।’
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক সংলাপের ব্যাপারে কূটনীতিকেরা কোনো বৈঠকেই আমাদের কিছু বলেনি।’
তবে বৈঠকগুলোতে থাকা দলের আরেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা একাধিকবার সরকারের সঙ্গে সংলাপ করেছি। ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনের সংলাপে পর চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের তিন মাস পর নতুন নির্বাচন দেওয়ার কথা বলে তারা প্রতারণা করেছে। তাই এজেন্ডা ছাড়া কোনো সংলাপে আমরা যাচ্ছি না। কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে আমরা বলেছি, আনুষ্ঠানিক সংলাপের বিষয়ে আমরা ইতিবাচক। কিন্তু সেটি হতে হবে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে তা নিয়ে।’
ওই নেতার আরও বলেন, ‘সরকার এখন বিভিন্ন চাপে আছে। আন্তর্জাতিক চাপ তো আগে থেকেই আছে। এখন নতুন করে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ বেড়েছে। এসব চাপ সামাল দিতে তারা সংলাপের নামে নানা কথা বলবে। কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় সরকারের মনোভাবে কিছু হলেও আঁচ করা যায়। হয়তো কয়েক দিন পর সরকার আনুষ্ঠানিক সংলাপের জন্য আমন্ত্রণও জানাতে পারে।’
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।