
বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয় ‘পাকিস্তান চলচ্চিত্র সংসদ’-এর হাত ধরে, ১৯৬৩ সালের ২৫ অক্টোবর। স্বাধীনতার পরে সংগঠনটি নাম বদলে হয় ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংসদ’। ১৯৭৩ সাল নাগাদ দেশে চলচ্চিত্র সংসদের সংখ্যা ছিল ডজনের ওপরে। সে বছর ২৪ অক্টোবর সক্রিয় চলচ্চিত্র সংসদগুলো একত্রিত হয়ে গঠন করে এই আন্দোলনের একটি ফেডারেটিভ বডি। নেতৃত্বে ছিলেন আলমগীর কবির।
তখনকার ‘বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ’-ই নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এখনকার ‘ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ’ হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ৬ দশকপূর্তির সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনের এই ফেডারেটিভ বডিরও পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হচ্ছে এ বছর।
এই দীর্ঘ যাত্রায় দেশের চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিয়েছে ফেডারেশন। আর এই আন্দোলন নেতৃত্ব দিয়েছে দেশের চলচ্চিত্র সংস্কৃতির উৎকর্ষে। এই আন্দোলনের সক্রিয় দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দেশে প্রতিষ্ঠিত হয় ফিল্ম আর্কাইভ ও চলচ্চিত্র ইনস্টিটিউট। প্রবর্তিত হয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। সুস্থ চলচ্চিত্র নির্মাণকে উৎসাহিত করতে সরকারি পৃষ্ঠপোষণা হিসেবে চালু হয় অনুদান। দেশের চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রকাশনার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে চলচ্চিত্র সংসদগুলো।
বিশেষ করে বলতে হয়, দেশের এ আন্দোলনের প্রাণপুরুষ মুহম্মদ খসরু ও তার পত্রিকা ‘ধ্রুপদী’র কথা। এছাড়াও ‘ক্যামেরা যখন রাইফেল’, ‘চলচ্চিত্রপত্র’, চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ৪০ বছরপূর্তিতে প্রকাশিত ‘তিমির হননের নান্দীপাঠ’ প্রভৃতির কথাও বলতে হয়।
চলচ্চিত্র শিক্ষা নিয়েও বরাবরই উচ্চকণ্ঠ চলচ্চিত্র সংসদগুলো। নিজেদের উদ্যোগে তারা আয়োজন করেছে অসংখ্য কর্মশালা। সেগুলো থেকে তৈরি হয়েছে অসংখ্য পরিচালক ও অন্যান্য শিল্পী-কুশলী। পাশাপাশি সরব থেকে চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যাপারেও। তারই ধারাবাহিকতায় এখন সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথক বিষয় হিসেবে পাঠদান হচ্ছে চলচ্চিত্র নিয়ে।
এর বাইরে সুস্থ চলচ্চিত্র নির্মাণে উৎসাহ প্রদান ও সচেতন দর্শকশ্রেণি গড়ে তুলতে প্রচারণা ও বিভিন্ন উৎসব ও সেমিনার আয়োজন করছে ফেডারেশনের সদস্য সক্রিয় চলচ্চিত্র সংসদগুলো। এমনকি দেশের চলচ্চিত্রে অশ্লীলতাবিরোধী আন্দোলনেও সামনের সারিতে ছিল চলচ্চিত্র সংসদগুলো।
বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা সে আন্দোলনকে সফল করতে রেখেছিল বিশেষ ভূমিকা।
চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ৬০ বছর ও ফেডারেশনের ৫০ বছরপূর্তিএই দুই যুগল উপলক্ষ উদযাপন করতে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ হাতে নিয়েছে বছরব্যাপী কর্মসূচি। তার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে আজ ১৯ মার্চ রবিবার সন্ধ্যা ৬টায়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে সে আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মাননীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন প্রবীণ শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। আরও থাকবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকী। দেওয়া হবে ‘ছয় দশকের সেরা চলচ্চিত্র সংসদ সম্মাননা’। দেখানো হবে চলচ্চিত্র সংসদকর্মী নুরুল আলম আতিকের ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’।
বছরব্যাপী আয়োজনে আরও থাকবে- চলচ্চিত্র উৎসব, সেমিনার, কর্মশালা, স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ, প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও নৌভ্রমণ। আগামী ৮ থেকে ১৭ জুন হবে চলচ্চিত্র সংসদকর্মীদের নির্মিত চলচ্চিত্রের উৎসব। তার অংশ হিসেবে, দুটি সেমিনারও আয়োজন করা হবে। পরে পৃথক একটি সেমিনার আয়োজন করা হবে বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ওপর। তাতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন, এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও চলচ্চিত্র গবেষক লোটে হোয়েক।
আগামী ১৮ থেকে ২৮ অক্টোবর আয়োজন করা হবে, বাংলাদেশের ৫০ বছরের শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত চলচ্চিত্র উৎসব। তাতে কাহিনিচিত্র, প্রামাণ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রএই তিন বিভাগে সর্বোচ্চ ১০টি করে চলচ্চিত্র বাছাই করা হবে। প্রদান করা হবে ‘বাংলাদেশের ৫০ বছরের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র’ সম্মাননা। অনুষ্ঠিত হবে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে।
পাশাপাশি কর্মশালা আয়োজন করা হবে- ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, রংপুর, খুলনা, কুষ্টিয়া ও রাঙ্গামাটিতে। পরে দেশের সব জেলায় কর্মশালা আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। ফেডারেশনের নেতৃত্বে এই কর্মশালাগুলো আয়োজন করবে স্থানীয় সদস্য চলচ্চিত্র সংসদ।
গত ১৪ মার্চ মঙ্গলবার শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয় ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। উপস্থিত ছিলেন- চলচ্চিত্র সংসদকর্মী ও বরেণ্য নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম, প্রবীণ চলচ্চিত্র সংসদকর্মী ও লেখক কাইজার চৌধুরী, চলচ্চিত্র সংসদকর্মী ও নির্মাতা মসিহউদ্দীন শাকের, ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব মোস্তাফিজ, চলচ্চিত্র সংসদকর্মী ও নির্মাতা ফাখরুল আরেফিন, চলচ্চিত্র সংসদকর্মী কাজী জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশনের বর্তমান সভাপতি লায়লুন নাহার স্বেমি, সাধারণ সম্পাদক বেলায়াত হোসেন মামুন, যুগ্ম-সম্পাদক রিপন কুমার দাশ, অর্থ সম্পাদক মো. সাদেক হোসেন, দপ্তর সম্পাদক অদ্রি হৃদয়েশ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নাবীল আল জাহান ও কার্যকরী সদস্য রোদেলা নিরুপমা ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে এই আয়োজনের গুরুত্ব বর্ণনা করে তার সাফল্য কামনা করে বক্তব্য রাখেন বিপ্লব মোস্তাফিজ। বলেন, ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের যা কিছু ভালো অর্জন তার সবগুলোর পেছনেই আছে চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের অবদান। দেশের চলচ্চিত্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বাঁকবদল ঘটেছে এই আন্দোলনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে। তাই এই আন্দোলনের ষাট বছরপূর্তি ও ফেডারেশনের পঞ্চাশ বছরপূর্তি দুটোই বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মাইলফলক।’
লেখক : প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক
ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। মুজিব বাহিনীর সদস্য হিসেবে, মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান সভাপতিমন্ডলীর সদস্য। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন মুখোমুখি হয়েছিলেন দেশ রূপান্তরের। খোলামেলা কথা বলেছেন, সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন এবং রোগী-চিকিৎসক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন, সহকারী সম্পাদক- তাপস রায়হান।
দেশ রূপান্তর : আপনি তো রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছেন, ষাটের দশকেই?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : হ্যাঁ। আমি তখন জগন্নাথ কলেজের ছাত্র। ১৯৬৮ সালের কথা। তোফায়েল ভাই যখন ’৬৯ সালে ডাকসুর ভিপি, তখন আমি জগন্নাথ কলেজে ছাত্রলীগের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। তোফায়েল ভাইয়ের হাতেই আমার রাজনীতির হাতেখড়ি। কিন্তু এর নেপথ্য নায়ক ছিলেন শেখ কামাল ভাই।
সম্ভবত ১৯৬৫-৬৬ সালের দিকে, এক খেলার মাঠে পরিচয়। আমি তখন সেন্ট গ্রেগরী স্কুলের ছাত্র। এটা পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে। আর কামাল ভাই পড়তেন, শাহীন স্কুলে। ওটা হচ্ছে, নতুন ঢাকা। এইদিকে আমরা বাস্কেটবল ফাইনালে উঠে তাদের মুখোমুখি হতাম। কারণ কামাল ভাইরাও ঐদিকে ফাইনালে উঠতেন।
সেই খেলার মাঠ থেকেই কামাল ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয়। মূলত তার হাত ধরেই রাজনৈতিক অঙ্গনে পা রাখা। দেখতে দেখতে এলো একাত্তর। তখন আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র। মাত্র ১০/১২ দিন কাজ করেছি। এরপর আমি যুদ্ধে চলে যাই। ট্রেনিং নেই বিএলএফে। যেটা ‘মুজিব বাহিনী’ নামে পরিচিত।
দেশ রূপান্তর : সেখানে আপনাদের নেতৃত্বে কে কে ছিলেন?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : সেখানে আমাদের নেতা ছিলেন- মরহুম ফজলুল হক মণি, মরহুম আব্দুর রাজ্জাক, সিরাজুল আলম খান আর তোফায়েল আহমেদ। তাদের নির্দেশমতো সবাই কাজ করতেন। সেখানে গিয়ে দেখি কি, বাংলায় তাঁবুতে লেখা ‘ মুক্তি ক্যাম্প’। আমার মনে অন্যরকম একটা অনুভূতি হলো। এলাম ভারতে, এখানে বাংলা ভাষা কোত্থেকে এলো? উত্তর প্রদেশে সবাই তো হিন্দি ভাষায় কথা বলার কথা।
এখানে বাংলা কেন? এরপর আমি এ বিষয়ে, ৪ নেতাকেই জিজ্ঞাসা করলাম।
তো, একজন নেতা বললেন এখানেই তো জাতির পিতার ক্যারিশমা। আমাদের ট্রেনিং দেওয়া, পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, অস্ত্র দেওয়া সবই কিন্তু বঙ্গবন্ধু আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন।
সেই হিসাবেই কিন্তু আমরা ট্রেনিং নিয়েছি। সব ধরনের ট্রেনিংই নিয়েছি। আমি প্রথম ব্যাচে ট্রেনিং নিয়েছি। আমার সঙ্গে ছিলেন ঢাকার খসরু-মন্টু। এই মন্টু ভাইয়ের আন্ডারেই আমি ঢাকায় ইন করেছি।
দেশ রূপান্তর : ১৬ ডিসেম্বর, বিজয়ের দিনে আপনার একটা কষ্ট রয়েছে। বলবেন একটু বিষয়টা?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : দেশে আসার পর, মন্টু ভাইয়ের সঙ্গেই আমি থাকতাম। পুরান ঢাকায় তিনি বেশ জনপ্রিয়। তিনি রাতে থাকতেন নদীতে, নৌকার মধ্যে। প্রায় সময়ই, রাতে ঘুমাতাম নৌকায়। দুঃখটা হলো, ১৬ ডিসেম্বর ছিলাম কেরানীগঞ্জে। সন্ধ্যার পরপর সবাই নৌকায় হৈহৈ করে আসছিলাম। সামনের নৌকায় ছিল কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। ওরা অনেক আর্মস আর গোলাবারুদ নিয়ে আসছিল। হঠাৎ করে, নৌকাটা ডুবে যায়। কোমর আর হাতে ছিল ভারী অস্ত্র। ওদের আর বাঁচানো গেল না। তখন মনটা ভীষণ খারাপ হলো।
দেশ রূপান্তর : আপনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে ধাপে ধাপে, বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। এর বাইরে আবার বিএমএর সভাপতি। দুটো বিষয়কে সমন্বয় করতে সমস্যা হয় না?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : আমি তো স্বাধীনতার আগেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সদস্য। সেই ১৯৬৭ সালেই। এরপর শহরের দায়িত্বে। পরে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হলাম। এরপর হলাম যুগ্ম সম্পাদক। তারপর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। ১৯৭৮ সালে কাদের ভাই সভাপতি, আমি সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। ১৯৮১ সালে হলাম ছাত্রলীগের সভাপতি। পাশাপাপশি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের ৩ বার নির্বাচিত মহাসচিব।
দেশ রূপান্তর : আবার ১৯৯৩ সালে আপনার হাতেই তৈরি হলো, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)। এর কোনো বাস্তব ভিত্তি ছিল?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : অবশ্যই। না হলে তো এই উদ্যোগ নিতাম না। বাস্তবতার কারণেই, এই উদ্যোগ নিতে হয়েছে।
দেশ রূপান্তর : বাস্তবতাটা কি চিকিৎসা সংক্রান্ত না রাজনৈতিক?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : সবক্ষেত্রেই আদর্শের একটা ছাপ থাকে। আমি যাই করি না কেন, আমার চিন্তাই কিন্তু আমাকে ধাবিত করবে। যখন আমরা দেখলাম, বাঙালি-বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ আদর্শে বিশ্বাসী সব যোগ্য চিকিৎসককে ঢাকার বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কাউকে পার্বত্য চট্টগ্রামে আবার কাউকে ভুরুঙ্গামারী। এটা তো মেনে নেওয়া যায় না। তখন আমি নেত্রীর সঙ্গে কথা বললাম। নেত্রী বললেন- পারবি তো? আমি বললাম পারব, দোয়া কইরেন।
দেশ রূপান্তর : একটু বর্তমানের দিকে দৃষ্টি দিই। খুলনা সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে যা হলো, সেখানে বিএমএর ভূমিকা কী ছিল? কেন্দ্রীয় বিএমএ নেতৃবৃন্দ এ বিষয়ে কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : আমরা কোনোভাবেই এটা চাইনি। প্রথমেই তাদের আমরা বলেছি, কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত না নেওয়ার জন্য। আমরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। যেহেতু অভিযুক্ত পুলিশের এএসআইকে ক্লোজ করা হয়েছে, এরপর ধর্মঘটের কোনো যুক্তি নেই।
দেশ রূপান্তর : কিন্তু আপনাদের কথামতো তো আন্দোলন চলেনি?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : এ বিষয়ে কেউ উসকানি দিল কি না, সেটা দেখা হচ্ছে।
দেশ রূপান্তর : আমরা জানি, চিকিৎসক জনগণের সেবক। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায়, কিছু হলেই বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকরা ধর্মঘটের ডাক দেন। বন্ধ করে দেন চিকিৎসা। দাবি আদায়ের জন্য, আন্দোলনের ভিন্ন কোনো পথ নেই?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : এ বিষয়ে বারবার চিকিৎসকদের সতর্ক করা হচ্ছে। কোনোভাবেই যেন চিকিৎসা ধর্মঘটে তারা না যায়। আমরা তো ডাক্তার হিসেবে ঢুকেছি, জনগণের সেবা করার জন্যই। আমাদের দাবি-দাওয়া থাকতেই পারে। আন্দোলনের তো অনেক পথ আছে। আমরা সেই পথ অবলম্বন করব।
দেশ রূপান্তর : কিন্তু আপনাদের কথা কি সবাই মানছেন? চিকিৎসকরা তো হুটহাট ধর্মঘটে যান?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। এসব বিষয় যাতে আর না হতে পারে, তার জন্য মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে একটা অনুরোধ করেছি। এটা অনেকবার বলেছি। জনগণ ও ডাক্তারদের জন্য একটা ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন’ করতে। সেই আইনে যদি কোনো শাস্তি থাকে, অবশ্যই সেটা হবে।
দেশ রূপান্তর : ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন’ কেন এখনো হচ্ছে না?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : তা তো বলতে পারব না। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।
দেশ রূপান্তর : আইন হলে, আপনাদের সমর্থন থাকবে?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : শতভাগ। এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। আমি মন্ত্রীকে ব্যক্তিগতভাবে বলেছি, আগামী সংসদে এটা পাস করিয়ে দেন। আইন হলে আমরাও বেঁচে যাই। ইতিমধ্যে এটা প্রস্তুত করা হয়েছে। এতে চিকিৎসকরাও ভালো থাকবেন।
জনগণের কল্যাণে যাতে ডাক্তাররা কাজ করতে পারেন, সেই সুযোগও আইনে থাকবে। এটা রোগী-চিকিৎসক, উভয় পক্ষের জন্যই মঙ্গলকর। এটা খুব তাড়াতাড়িই হয়ে যাবে।
আমাদের সমাজে অসহনশীলতা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। কিছু লোক কোনোভাবেই যেন বুঝতেই চাইছে না যে, তারা সচেতনভাবে কিংবা অচেতনভাবে কীভাবে সমাজে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিচ্ছে। আবার অনেকে বুঝেও না বোঝার ভান করছে, অন্য ধর্ম ও সম্প্রদায়ের প্রতি সুকৌশলে ঘৃণা ছড়িয়ে দিচ্ছে। কেউ কেউ এতেই ক্ষান্ত হচ্ছে না, যুক্ত হয়ে যায় উন্মত্ত সহিংসতায়। এতে যেমন নিজেরা ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছে, অন্যেরও বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে। আর এভাবে ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকলে জাতীয় জীবনে নৈরাজ্য যে খুব বেশি দূরে না সেই আশঙ্কা বারে বারেই উঁকি দেয়।
ধর্মের নামে, বিশ্বাসের নামে, সম্প্রদায়ের নামে হিংসা, বিদ্বেষ, ঘৃণা ও সহিংসতা ছড়ানো যেন পাপের কিছুই নেই, এমন দৃষ্টিভঙ্গির কোনো অভাব নেই। আবার আলোচনায় যখন গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, তখন এর উদ্দেশ্যমূলক ব্যবহার তো খুবই প্রচলিত।
অনেকের কাছেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ তা নিজের ও নিজ সম্প্রদায়ের মতকে যৌক্তিক বা অযৌক্তিক উপায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রশ্ন আসে, কিন্তু ভিন্নমত ও ভিন্নপথের জনগোষ্ঠী যখন তাদের মত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে চায় তখন তাকে দমন করার জন্য নানা ধরনের উন্মাদনা তৈরি করা হয় মূলত সংখ্যাগরিষ্ঠের শক্তি ব্যবহার করে।
অনেকেই আছে, যারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে উগ্রতা, বিভক্তি ও ঘৃণা ছড়িয়ে দিচ্ছে নানা মাধ্যম ও উপায়ে। আমাদের দেশে বাঙালি পরিচয়ের বাইরে ধর্মীয় ও সম্প্রদায়ের বিভাজনের ভিত্তিতে একের পর এক নতুন পরিচয় তৈরির চেষ্টা করেন। আবার নিজেদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়ার জন্য অন্যের উগ্রবাদী আচরণের দোহাই দেওয়া হয়। অন্যের অন্যায় কোনোভাবেই নিজের অন্যায়কে বৈধতা দেয় না।
এরই জেরে গত কয়েক বছর ধরেই দুর্গাপূজার সময় হলেই যেন এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করে যে, কখন কোন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী আবার নানা কৌশলে পূজামণ্ডপে বা ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা চালাবে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করবে।
বিভিন্ন কৌশলে ও অপযুক্তির আলোকে নানা মাধ্যমে ঘৃণা ছড়ানো অব্যাহত রাখবে। এরা আবার সংগঠিত এবং ক্ষণে ক্ষণে নানা ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইস্যু নিয়ে প্রতিনিয়ত প্রকাশ্য পেশিশক্তি প্রদর্শনের হুমকি দেয়। সবকিছুতেই নিজেদের পছন্দ ও ইচ্ছা অনুযায়ী হওয়াই যেন এদের অন্যতম উদ্দেশ্য।
এ বছরই কিছুদিন আগে ঠাকুরগাঁওয়ে একযোগে বিভিন্ন মন্দিরে হামলা করা হয়েছে। এবার আবার পঞ্চগড়ে কাদিয়ানিদের সমাবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং এ সম্পর্কিত সহিংসতায় দুজন নিহত হয়েছে। সংবাদপত্রের তথ্যমতে, সেখানে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাড়ি চিহ্নিত করে আক্রমণ চালানো হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা একের পর এক ঘটেই চলছে নিয়মিত বিরতিতে।
ভারতীয় উপমহাদেশে ধর্মের বিভাজন ও উপনিবেশিক শক্তির কূটচাল দেশভাগের পটভূমি তৈরি করে গত শতাব্দীর মাঝামাঝি। পারস্পরিক অবিশ্বাস ও বিভাজন সেই দেশভাগকেই চূড়ান্ত পরিণতি দিয়েছে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরে বেশির ভাগ বাঙালির মধ্যে পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়ার জন্য যে সামাজিক ও রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়, স্বাধীনতার পরে নানা চক্রান্তে তা ধ্বংস হয়ে যেতেও বেশি সময় লাগেনি। ইতিমধ্যে যারা সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো তৈরিতে পাকিস্তান মডেলকে আদর্শ মনে করেন তারা যথেষ্ট প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন।
যদিও ধর্মের ওপর ভিত্তি করে সমাজ পরিচালনার পাকিস্তান মডেল ইতিমধ্যে ব্যর্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক এলিটরা সব সময় রিলিজিয়ার্স কার্ড প্লে করে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকতে চাইতেন।
আর এর ফলাফল পাকিস্তান এখন প্রায় নিঃস্ব একটি দেশ। কী অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা, কী সামাজিক অস্থিরতা সব ক্ষেত্রেই পাকিস্তান এখন চূড়ান্ত বিপর্যয়ের মুখে।
দেশভাগের পর পাকিস্তানেও এভাবে ভিন্নমতাবলম্বী সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীর ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছে এবং সময়ে সময়ে এখনো চালছে। এ ধরনের ধারাবাহিক আক্রমণের প্রবণতা শুধু পাকিস্তানের আর্থ-সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকেই নষ্ট করেনি, অধিকন্তু পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের ভিত্তিকে দুর্বল করে দিয়েছে।
রাষ্ট্রের গতি-প্রকৃতি যদি কতিপয় গোষ্ঠীর ইচ্ছা-অনিচ্ছায় পরিচালিত হয় তাহলে সে রাষ্ট্রের বৈচিত্র্যময়তা থাকবে না, সৃজনশীলতা নষ্ট হবে এবং ভিত্তি দুর্বল হবে সেটাই স্বাভাবিক।
বস্তুতপক্ষে আজ যে অসহিষ্ণু বাংলাদেশ দেখতে পাচ্ছি তা একটি স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের চেষ্টার ফসল। আমাদের জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ এখন আইডেন্টিটি পলিটিক্সে যুক্ত হয়ে সমাজকে বিভক্তির চূড়ান্ত সীমায় নিয়ে যাচ্ছে। অন্যের অজান্তেই তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার তোয়াক্কা না করে তার ওপর আইডেন্টিটি পলিটিক্স চাপিয়ে দিচ্ছে। আর এর মাধ্যমেই ধীরে ধীরে সহিংসতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে এবং প্রায় নির্বিঘেœ একের পর এক সহিংসতা, লুটপাট ও হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে।
এই প্রক্রিয়ায় সমাজে ইতিমধ্যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশকে আরও বেশি প্রান্তিক করে দেওয়া হচ্ছে। তবে এই ধরনের সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ধর্মের মূল চেতনা কতটুকু রক্ষা করা গেল তা নিয়ে প্রশ্ন করাই যায়। কেউ ভিন্ন বিশ্বাসের অনুগামী হলেই তাকে দমন করতে হবে এই ধারণার কোনো যুক্তি নেই।
মূলত বিভাজন একটি সংস্কৃতি, এই সংস্কৃতির মূল বিষয় হচ্ছে ক্রমাগত আইডেন্টিটি পলিটিক্সের মাধ্যমে নতুন নতুন বিভাজন তৈরি করা, যেটা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে শুধু ক্ষমতাহীনই করছে না, সামাজিক বন্ধনকেও হালকা করে দেয়।
অন্যদিকে বাংলাদেশে অতিসম্প্রতি ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণাকে নানাভাবে যেমন ইস্টিগমাটাইজড করা হয়, পাশাপাশি সমাজে ধর্মনিরপেক্ষতাকে একটি কাল্পনিক শত্রু হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতিপক্ষ হিসেবে তুলে ধরা হয়। গত কয়েক দশক ধরেই এই শত্রুভাবাপন্নতা ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলছে। কিছু মানুষ এর জন্য যারপরনাই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এর মাধ্যমে লাভবান হচ্ছে কে?
এর মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর কি কোনো লাভ হচ্ছে? নাকি অল্প কিছু মানুষ এর মাধ্যমে লাভবান হচ্ছে? আইডেন্টিটি পলিটিক্সের মাধ্যমে আপাতদৃষ্টিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী মনস্তাত্ত্বিকভাবে লাভবান মনে করলেও, আদতে এই বিভক্তি এখানেই থামছে না। যার কিছু কিছু দৃষ্টান্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি, যেখানে শুদ্ধতার ভিন্ন ভিন্ন মাপকাঠির ভিত্তিতে নতুন নতুন বিভক্ত তৈরি হচ্ছে।
আমাদের দেশে সামনে নির্বাচন আসছে। এ সময়ে ধর্ম, বিশ্বাস ও সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে ক্ষমতা প্রদর্শনের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ফলে এসবের ভিত্তিতে সহিংসতার দৃষ্টান্তও বেড়ে যেতে পারে এবং একই সঙ্গে সমাজে বিভক্তি আরও বেড়ে যেতে পারে। তবে এ ধরনের প্রবণতাকে মোকাবিলা করার জন্য যথেষ্ট উদ্যোগ দেখা যায় না।
সরকার ও সামাজিক শক্তিগুলোও এ ক্ষেত্রে কেন যেন প্রয়োজনীয় আগ্রহ বোধ করে না। যদিও এই ধ্বংসাত্মক প্রবণতা থেকে রক্ষা পেতে অপেক্ষা করার মতো সময় আছে কিনা তা এখন মৌলিক প্রশ্ন। আজ আমাদের দেশে গণতন্ত্রের যে ভঙ্গুরতা দেখতে পাই তার পেছনে অন্যতম দায়ী এ ধরনের ধ্বংসাত্মক প্রবণতা।
একদিকে গণতন্ত্রের জন্য কান্না এবং অন্যদিকে ‘সংখ্যালঘুদের’ ওপর আক্রমণ, একটি আরেকটির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এখানেই মনোযোগ দেওয়ার জায়গা আমরা উন্নত গণতন্ত্রের চর্চা তখনই করতে পারব, যখন প্রত্যেকটা মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতার চর্চাকে সম্মান জানাতে পারব। আর সেটাই হোক ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের প্রত্যাশা।
লেখক: উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
অপরাধের মাত্রা এবং ক্ষমতা কোন পর্যায়ে পৌঁছালে, একজন অপরাধী পুলিশ খুন করেও নির্বিঘেœ দেশ থেকে পালাতে পারেন? শুধু তাই নয়। তিনি ভারতে গিয়ে নাম পরিবর্তন করেছেন। সেখান থেকে দুবাই। অল্প সময়ের মধ্যে গড়ে তুলেছেন টাকার পাহাড়। কোটি কোটি টাকা খরচ করে উদ্বোধন করছেন সোনার দোকান- আরাভ জুয়েলার্স। সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই অতিথি হয়ে গেছেন জনপ্রিয় ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান। তার সঙ্গে আরও অনেক মডেল, সংগীতশিল্পীও রয়েছেন। যে কারণে, বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে, একজন খুনি-চোরাচালানির এত অর্থ-বিত্তের নেপথ্যে কোনো হস্তীসদৃশ, ক্ষমতাশালীর যোগসাজশ রয়েছে কি-না? এমন ঘটনায়, এতদিন পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন নড়েচড়ে বসলএটাই প্রশ্ন! কারণ, ২০১৮ সালে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খানকে খুন করা হয়েছে। এতদিন পর কেন এ বিষয়ে সব পক্ষ নড়েচড়ে বসল! এর মানে হচ্ছে, অপ্রকাশিত অসংখ্য অনৈতিক কাজ এবং অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে যা নিয়ে কোনো হইচই নেই!
গতকাল দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায় প্রকাশিত মডেল প্রভাবশালীরাও আরাভ ‘কানেকশনে’ সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়- আরাভের সোনার কারবারে জড়িয়ে পড়ার পেছনে আলোচিত এক মডেল ও চলচ্চিত্র প্রযোজক আছেন, যারা ২০২১ সালে মাদক কারবারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাদের যোগসাজশে সোনার কারবারে এসে দুবাইয়েও গড়ে তুলেছেন সোনার ব্যবসা। এ ছাড়া মামলা থেকে রেহাই পেতে নিজের নাম পরিবর্তন করে ছদ্মনাম ব্যবহার করেন, এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তারও আশকারা পেয়েছেন তিনি। পুলিশ, ব্যবসায়ী ও মডেলরা দুবাইয়ে গেলে তার সান্নিধ্য পান। সোনার দোকান উদ্বোধন হওয়ার পর ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান দেশে এলেও অন্য অতিথিরা রয়ে গেছেন দুবাইয়ে। ইতিমধ্যে আরাভের সহযোগীদের একটি তালিকা তৈরি করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।
পুলিশ সূত্র জানায়, অপরাধজগতের শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও জয় ছিল আরাভের অন্যতম সহযোগী। তাদের মাধ্যমে গুলশান ও বনানী এলাকার নামি মডেলদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পাশাপাশি দুই শীর্ষ ব্যবসায়ীর সঙ্গেও সখ্য গড়ে ওঠে। রিয়েল এস্টেট ব্যবসার পাশাপাশি সোনা চোরাচালানেও জড়িয়ে পড়েন। দুবাইয়ে গড়ে তোলেন আলিশান সোনার দোকান। ওই দোকানের ব্যবসায়িক পার্টনার পুলিশের দুই সাবেক কর্মকর্তা ও দুজন বড় ব্যবসায়ী। ওই ব্যবসায়ীরা গুলশান ও বনানী এলাকায় পরিচিত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গুলশান এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা হত্যার সঙ্গে আরাভসহ বেশ কয়েকজন রাঘববোয়াল জড়িত। আলোচিত সেই মডেল ও চলচ্চিত্র প্রযোজক ওই হত্যাকা-ের বিষয়ে অনেক কিছুই জানেন। তারা আরাভের সঙ্গে দেখা করতে নিয়মিত দুবাই যান। ওই চলচ্চিত্র প্রযোজক ও মডেল বর্তমানে দুবাই অবস্থান করছেন বলে তারা জানেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আরাভ ঠা-া মাথার অপরাধী। সোনা চোরাচালান করেই কয়েকশ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। দুবাইয়ে তার সোনার দোকান উদ্বোধন করতে সাকিবের যাওয়া ঠিক হয়নি। অর্থের প্রয়োজন সবারই আছে। তবে সাকিবের মতো তারকার টাকার পেছনে ছোটা খুবই দুঃখজনক। সাকিব ও হিরো আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
আরাভের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা এবং তার উপার্জিত অর্থের বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত দরকার। একইসঙ্গে বলা প্রয়োজন, তিনি যেহেতু ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে দুবাই গেছেন, সেহেতু নাগরিকত্বের বিষয়েও একটি জটিলতা দেখা দিতে পারে। ইন্টারপোলের সহযোগিতায়, অপরাধীকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসাই প্রধান কর্তব্য। সাকিব আল হাসানকে নিয়ে মাতামাতি করে, অপরাধীকে আড়াল করার অপচেষ্টা যেন বিফলে না যায়। সরকারের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে শান্তিপ্রিয় মানুষের এটুকুই চাওয়া।
প্রখ্যাত কবি, লেখক ও সাংবাদিক সিকান্দার আবু জাফর ১৯১৯ সালের ১৯ মার্চ সাতক্ষীরা জেলার তেঁতুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম সৈয়দ আল্ হাশেমী আবু জাফর মুহম্মদ বখ্ত সিকান্দার। আবু জাফর সাতক্ষীরার তালা বি. দে. ইনস্টিটিউট থেকে প্রবেশিকা (১৯৩৬) এবং কলকাতার রিপন কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। কলকাতার মিলিটারি অ্যাকাউন্টস বিভাগে (১৯৩৯) তিনি পেশাগত জীবন শুরু করেন এবং পরে সিভিল সাপ্লাই অফিসে চাকরি করেন। সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদারের ‘গ্লোব নিউজ এজেন্সি’ নামক সংবাদ-সংস্থায়ও তিনি কিছুকাল কাজ করেন। আবু জাফর ১৯৫০ সালে কলকাতা থেকে ঢাকায় আসেন এবং বিভিন্ন সময়ে দৈনিক নবযুগ, ইত্তেফাক, সংবাদ ও মিল্লাত পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। তিনি মাসিক সমকাল পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক (১৯৫৭-১৯৭০) ছিলেন। ষাটের দশকে পূর্ব বাংলায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাঙালি সংস্কৃতিচর্চার যে ধারা গড়ে ওঠে, আবু জাফর ছিলেন তার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি স্বাধীনতা, দেশপ্রেম ও বিপ্লবের চেতনাসম্পন্ন অনেক গান রচনা করেন। তার রচিত ‘আমাদের সংগ্রাম চলবেই’ গানটি মুক্তিযুদ্ধের সময় জনগণকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ : উপন্যাস পূরবী, নতুন সকাল; ছোটগল্প মাটি আর অশ্রু; কবিতা প্রসন্ন শহর, তিমিরান্তিক, বৈরী বৃষ্টিতে, বৃশ্চিক-লগ্ন, বাংলা ছাড়ো; নাটক সিরাজ-উদ-দৌলা, মহাকবি আলাউল; সংগীত মালব কৌশিক। আবু জাফর অনুবাদক হিসেবেও খ্যাত ছিলেন। তার কয়েকটি অনূদিত গ্রন্থ : যাদুর কলস, সেন্ট লুইয়ের সেতু, রুবাইয়াৎ : ওমর খৈয়াম ইত্যাদি। তিনি নাটকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৬) এবং একুশে পদক (১৯৮৪, মরণোত্তর) লাভ করেন। তিনি ১৯৭৫ সালের ৫ আগস্ট ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল সোমবার দুপুরে কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটে গত ২৫ মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়। ২০২০ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পর এবারই প্রথম কয়লা সংকটে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হলো।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের এই বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানটিকে কয়লা ক্রয়ে ঋণ দিয়ে আসছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল পর্যন্ত কয়লার ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিএমসি। পরে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হলে কয়লা আমদানির এলসি খোলার শর্ত দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান। গতকাল পর্যন্ত ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ মাসের শেষদিকে কয়লা দেশে আসার কথা রয়েছে।
কয়লার অভাবে দেশের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক মাসে লোকসান হবে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে জনদুর্ভোগ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে পুরো ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
এদিকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের বাইরে শুধু কয়লাবাবদ পিডিবির কাছে কেন্দ্রটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকা এ বকেয়ার টাকা পরিশোধের জন্য দফায় দফায় চিঠি দিয়েও তা পরিশোধ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলছে, বৈশি^ক মন্দার পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি কেন্দ্রভাড়া বাবদ প্রতি মাসে পিডিবিকে ২৪৭ কোটি টাকা দিতে হবে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও নির্ধারিত কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে পিডিবিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট করে প্রায় তিন কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল কেন্দ্রটি। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি ইউনিট। গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকার মতো।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার প্রকৃত জানা না গেলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানান, সব ধরনের ব্যয় বাদ দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে তাদের নিট মুনাফা হতো ৫ থেকে ৬ শতাংশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড়মূল্য সাড়ে ৫ টাকা এবং মুনাফা সাড়ে ৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক মাসে মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এ মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে বিসিপিসিএল। এদিকে কয়লা কেনার জন্য সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ছয় মাসের বেশি সময় কয়লার বিল বকেয়া থাকায় সুদের পরিমাণও বেড়ে যাবে। বাড়তি এ সুদের অর্থ বিসিপিসিএলকেই পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রতি ইউনিটের গড়মূল্য প্রায় ১১ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও পিডিবি এ বিদ্যুৎ লোকসান দিয়ে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়। পায়রা থেকে এক মাস বিদ্যুৎ কিনতে না পারলে পিডিবির লোকসান আরও বাড়বে।
সূত্রমতে, কয়লা দেশে পৌঁছানো এবং কেন্দ্র চালু করতে সব মিলে অন্তত এক মাসের মতো সময় লাগবে। কোনো কারণে যদি কয়লা আসতে আরও দেরি হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিশে^র সেরা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এক সুইচে চালু করার পর নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বৈশি^ক কারণে ডলার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তবে এ সময়ে আমরা বসে না থেকে কেন্দ্রের মেইনটেনেন্সের কাজটি করে ফেলব, যাতে দীর্ঘদিন আর মেইনটেনেন্স করা না লাগে।’
কেন্দ্রটি বন্ধের ফলে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে তা জানতে চাইলে প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘আমরা এমনিতেই বকেয়া বিল পাচ্ছি না। এটাই বড় ক্ষতি। অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি কেন্দ্রটি বন্ধের কারণে সাশ্রয়ী দামে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দিতে না পেরে কমফোর্ড ফিল করছি না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র ভাড়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি এবং কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলেও এ ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয়। আর লোডশেডিং না দিয়ে সরকার যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়, তাহলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই এই মুহূর্তে। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৪ টাকার ওপর লোকসান হবে।’ তিনি বলেন, ‘ডলার ছাড় ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আগেই ডলার ছাড় করা উচিত ছিল। এতে বিরাট ক্ষতি হলো। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয় হতে পারে। একটি হলো যারা ডলার ছাড় করছেন তারা বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না অথবা দেশের পরিস্থিতি আসলেই ভয়াবহ। তবে দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডলার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। আর বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে। এ ক্ষেত্রে খাতের গুরুত্ব বুঝে ডলার ছাড় করা হয়। তবে দেশের প্রয়োজনে ডলার ছাড় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের গাফিলতি নেই।’
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার খুকনি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে আরকান্দি গ্রাম পর্যন্ত এক কিলোমিটার যমুনা নদীর ভাঙ্গণ এলাকার পাশ থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ কারণে ভাঙ্গণ এলাকায় হাজার হাজার বালুর বস্তা ডাম্পিং করেও ভাঙ্গণরোধ করা যাচ্ছে না। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা এ বাবদ খরচ হলেও কোনো কাজেই আসছে না বালুর বস্তা ডাম্পিং করে।
অপরদিকে অব্যাহত ভাঙ্গণের তাণ্ডবে প্রতিদিনই নদীগর্ভে বাড়িঘর বিলিন হয়ে যাওয়ায় এ এলাকার মানুষ গৃহহীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে বাস করছে ও মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণগ্রামের নাজমা খাতুন আব্দুল কাদের, ইয়াহিয়া, জহুরুল ইসলাম, এমদাদুল হক মিলন, আরকান্দি গ্রামের মেহেদী হাসান, হালিমা খাতুন ও রেমান সরকার বলেন, গত ২ সপ্তাহ ধরে এখানে ব্যাপক ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে। এই ভাঙ্গণের তাণ্ডবে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ও বহু গাছপালা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এ ভাঙ্গণের তাণ্ডবে গৃহহারা হয়ে শত শত মানুষ অন্যত্র চলে গেছে। অনেকে আবার খোলাস্থানে ছাপড়া তুলে বাস করছে ও মানবেতর জীবন যাপন করছে।
তারা আরও বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড এ ভাঙ্গণ এলাকায় বালুর বস্তা ফেলার কাজ শুরু করেছে। কিন্তু ঠিকাদারের লোকজন ধীরগতিতে কাজ করায় তা কোনো কাজেই আসছে না। যেসব স্থানে বস্তা ফেলা হচ্ছে দুই দিন না যেতেই সেখানে আবার ভাঙ্গণ দেখা দিচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ ভাঙ্গণ এলাকার ৫০ থেকে ১০০ গজ দূরে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে বস্তা ফেলার কয়েকদিন না যেতেই ওই এলাকায় আবারও ভাঙ্গণ দেখা দিচ্ছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট হলেও ভাঙ্গণ রোধ হচ্ছে না।
তারা আরও বলেন, শুষ্ক মৌসুমে বস্তা ফেলার কাজ না করে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়ে যখন ব্যাপক ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে, তখন ঠিকাদারের লোকজন ধীরগতিতে ২/৪ নৌকা বস্তা ফেলে চলে যায়। ২-৩ দিন না যেতেই তা আবার ভেঙ্গে যমুনায় বিলিন হয়ে যায়। ফলে এ বস্তা ফেলা কোনো কাজেই আসছে না। অপরদিকে ঠিকাদারকে বালু সরবরাহের নামে এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রতিদিন ১৫/২০ ট্রলারে করে বালু অন্যত্র বিক্রি করছে। ফলে এ ভাঙ্গণের তাণ্ডব আরও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।
এ বিষয়ে বালু সরবরাহকারী খোরশেদ আলম, জয়নাল সরকার ও ফজলু ব্যাপারী এলাকাবাসীর এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে অন্যত্র বিক্রি করা হচ্ছে না। ঠিকাদারের লোকজন বালু উত্তোলন করে তা বস্তায় ভরে ভাঙ্গণ স্থানে ফেলছে। আমরা শুধু তাদের কাজে সহযোগিতা করছি। একটি কুচক্রিমহল ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে আমাদের নামে মিথ্যা অপপ্রচার করছে।
এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদার আব্দুর রাজ্জাকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন বলেন, নদীভাঙ্গণ রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড বস্তা ফেলার কাজ শুরু করেছে। অচিরেই এ সমস্যা আর থাকবে না।
ভাঙ্গণ এলাকার অদূরে যমুনা নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে অন্যত্র বিক্রির বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমান বলেন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে খুকনি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েবকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানের মোবাইল ফোনে কল করা হলে ফোনটি বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিশ্বের প্রায় সব দেশই। অধিকাংশ দেশই তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কার নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির কথা প্রায় সবারই জানা, তারাও ইতিমধ্যে তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এসেছে। তবে ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার। ফলাফল ভোক্তা মূল্যসূচকে (সিপিআই) বা মূল্যস্ফীতিতে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড। মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সিপিআই ইনডেক্সে এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।
গত ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করে সরকার। এ বাজেটের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আগামী অর্থবছরে সরকার কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বাজেট প্রস্তাবে কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি পরাবাস্তব বাজেট। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা আসলে সম্ভব নয়। গত ১১ মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। সে হিসাবে মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো, আগের বছরের মে মাসে যে পণ্য গড়ে ১০০ টাকা কিনতে হয়েছে, এ বছরের মে মাসে তা কিনতে হচ্ছে গড়ে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সায়। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, ধরুন আগের বছরের একই সময়ে ৫০০ টাকার একটি নোটে কোনো ব্যক্তি পাঁচটি পণ্য কিনতে পেরেছিলেন। এ বছরের একই সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এখন একই টাকায় তিনটি পণ্য কিনতে পারছেন। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১ বছরে বেড়েছে ১১.৩২ শতাংশ : ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, অথচ এ বছরের মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ বছরের এপ্রিল মাসেও খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।
খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে এক বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ : বিবিএসের তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বা ৬৪ শতাংশ।
গ্রামের চেয়ে শহরের মূল্যস্ফীতি বেশি : এক বছর আগেও শহরের মূল্যস্ফীতি গ্রামের চেয়ে কম ছিল। কারণ গ্রামের চেয়ে শহরে পণ্য মজুদের আধুনিক ব্যবস্থা আছে। তবে সরকারি উদ্যোগে শহরের মতো গ্রামেও কিছু স্থানে খাদ্যগুদামের ব্যবস্থা তৈরি হওয়ায় এখন শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি কমেছে। মে মাসে শহর এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, একই সময়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বিশ্বে কমেছে মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশে বাড়ছে : গত শনিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট-পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, থাইল্যান্ডে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, গত এপ্রিলে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ আগের তুলনায় দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে ৬৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। সেখান থেকে ৪৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গত অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, সেখান থেকে ৩৪ শতাংশ কমিয়ে ৭ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে ইইউ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়। তবে বাংলাদেশ এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় শুরুর দিকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো গত বছর আগস্টে এক ঘোষণাতেই জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই মাসেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশ দেরিতে হলেও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। বর্তমানে এ সুদহার ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে নীতি সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে আভাস দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দাবি করেছে, বিশে^র দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির যে হার, তা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য হুমকি। মূল্যস্ফীতির এই হার ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
২০০৯ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখনো মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর ছিল। পরে অবশ্য তা কমতে কমতে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঠিক এরকম এক সময়ে গত বছর ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এর পরপরই বাড়ানো হয় সব ধরনের পরিবহন ভাড়া। এ দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। ফলে পরের মাস আগস্টে মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে।
যদিও সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে থাকে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে আসে। জানুয়ারিতে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চ মাসে হয় ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এপ্রিলে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এসেছিল।
মজুরি সূচক বেড়েছে : বিবিএসের তথ্য বলছে, গত কয়েক মাস ধরেই মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। অক্টোবরে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩২ শতাংশে।
দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে হাইড্রোলিক পাওয়ার স্টেশনে তীব্র পানির সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। অনাবৃষ্টি এবং তীব্র তাপদাহে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে এই সংকট দেখা দিয়েছে। ৫টি ইউনিটের মধ্যে কোনরকমে মাত্র ১টি ইউনিট সচল রেখে সর্বনিম্ন ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৬ জুন) সকালে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আবদুজ্জাহের জানান, হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি জানান, পানির অভাবে কেন্দ্রের সব ক’টি ইউনিট সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে ঠেকেছে। তিনি আরও জানান, কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে ১ নম্বর ইউনিটটি চালু রাখা হয়েছে। এই ইউনিট হতে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। অথচ এই কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট সচল থাকলে প্রায় ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে পাঠানো হয়। সেখানে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট।
এটিএম আব্দুজ্জাহের বলেন, বছরের এই সময়ে কখনই পানি এতো নিচে থাকে না। এ বছর এখনো বৃষ্টিপাত শুরু না হওয়ায় খুবই বিপাকে পড়তে হয়েছে আমাদের। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মাত্র একটি ইউনিট চালু আছে। আমরাও বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি।
কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বরত প্রকৌশলী জানান, গত মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদের পানির পরিমাণ ৭৩ দশমিক ৬২ ফুট (মিন সি লেভেল) ছিল। রুলকার্ভ অনুযায়ী এসময় হ্রদে পানি থাকার কথা ৭৮ দশমিক ২০ ফুট এমএসএল (মিন সি লেভেল)। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচুর বৃষ্টিপাত না হলে এই সংকট হতে উত্তরণ সম্ভব নয় বলে জানান প্রকৌশলীরা।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানায়, অনাবৃষ্টি, বন উজার হওয়া, কাপ্তাই হ্রদে নাব্যতা সংকটের কারণে পানি তলানিতে চলে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে এমন বিপর্যয় ঘটেছে। সঙ্গতকারণে গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে পানি কমে যাওয়ার ফলে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে তা নয়, কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। হ্রদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি উপজেলার সাথে নৌপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে মানুষের দুর্ভোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কাপ্তাই হ্রদের পাশে বসবাসকারী নুরুল ইসলাম জানান, ভারী বৃষ্টিপাত না হলে হ্রদে পানি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। তাই দ্রুত সময়ে কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং করা প্রয়োজন। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদের গভীরতা যেমন বাড়বে তেমনি এই সমস্যা থেকে কিছুটা সমাধান পাওয়া যাবে।
বিলাইছড়ি বাজারের ব্যবসায়ী ইসমাঈল হোসেন জানান, বিলাইছড়িতে নৌপথ বন্ধ মানেই জীবন ও জীবিকার দুর্বিষহ অবস্থা। আমরা বিলাইছড়িবাসীই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি হ্রদের পানি কমে যাওয়ায়। বৃষ্টি হতে যত দেরি হবে আমাদের কষ্ট তত বেশি দীর্ঘায়িত হবে।
তিনি বলেন, হ্রদের পানি অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় বাজারের পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। বড় বোটতো আসতেই পারছে না, ছোট ছোট বোটে পণ্য পরিবহনে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে, পর্যাপ্ত পণ্যও আনা যাচ্ছে না। আবার অনেক দূর থেকে পণ্য বাজারে তুলতে শ্রমিকদের বাড়তি মজুরি দিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে সাপ্তাহিক বাজারও এখন ঠিকমতো জমছে না। কারণ দূর থেকে মানুষজন আসতে পারছে না। এখন বৃষ্টি হওয়া ছাড়া পানি বাড়ার তো আর কোনো সম্ভাবনা নেই।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।