
আমাদের সমাজে অসহনশীলতা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। কিছু লোক কোনোভাবেই যেন বুঝতেই চাইছে না যে, তারা সচেতনভাবে কিংবা অচেতনভাবে কীভাবে সমাজে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিচ্ছে। আবার অনেকে বুঝেও না বোঝার ভান করছে, অন্য ধর্ম ও সম্প্রদায়ের প্রতি সুকৌশলে ঘৃণা ছড়িয়ে দিচ্ছে। কেউ কেউ এতেই ক্ষান্ত হচ্ছে না, যুক্ত হয়ে যায় উন্মত্ত সহিংসতায়। এতে যেমন নিজেরা ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছে, অন্যেরও বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে। আর এভাবে ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকলে জাতীয় জীবনে নৈরাজ্য যে খুব বেশি দূরে না সেই আশঙ্কা বারে বারেই উঁকি দেয়।
ধর্মের নামে, বিশ্বাসের নামে, সম্প্রদায়ের নামে হিংসা, বিদ্বেষ, ঘৃণা ও সহিংসতা ছড়ানো যেন পাপের কিছুই নেই, এমন দৃষ্টিভঙ্গির কোনো অভাব নেই। আবার আলোচনায় যখন গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, তখন এর উদ্দেশ্যমূলক ব্যবহার তো খুবই প্রচলিত।
অনেকের কাছেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ তা নিজের ও নিজ সম্প্রদায়ের মতকে যৌক্তিক বা অযৌক্তিক উপায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রশ্ন আসে, কিন্তু ভিন্নমত ও ভিন্নপথের জনগোষ্ঠী যখন তাদের মত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে চায় তখন তাকে দমন করার জন্য নানা ধরনের উন্মাদনা তৈরি করা হয় মূলত সংখ্যাগরিষ্ঠের শক্তি ব্যবহার করে।
অনেকেই আছে, যারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে উগ্রতা, বিভক্তি ও ঘৃণা ছড়িয়ে দিচ্ছে নানা মাধ্যম ও উপায়ে। আমাদের দেশে বাঙালি পরিচয়ের বাইরে ধর্মীয় ও সম্প্রদায়ের বিভাজনের ভিত্তিতে একের পর এক নতুন পরিচয় তৈরির চেষ্টা করেন। আবার নিজেদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়ার জন্য অন্যের উগ্রবাদী আচরণের দোহাই দেওয়া হয়। অন্যের অন্যায় কোনোভাবেই নিজের অন্যায়কে বৈধতা দেয় না।
এরই জেরে গত কয়েক বছর ধরেই দুর্গাপূজার সময় হলেই যেন এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করে যে, কখন কোন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী আবার নানা কৌশলে পূজামণ্ডপে বা ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা চালাবে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করবে।
বিভিন্ন কৌশলে ও অপযুক্তির আলোকে নানা মাধ্যমে ঘৃণা ছড়ানো অব্যাহত রাখবে। এরা আবার সংগঠিত এবং ক্ষণে ক্ষণে নানা ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইস্যু নিয়ে প্রতিনিয়ত প্রকাশ্য পেশিশক্তি প্রদর্শনের হুমকি দেয়। সবকিছুতেই নিজেদের পছন্দ ও ইচ্ছা অনুযায়ী হওয়াই যেন এদের অন্যতম উদ্দেশ্য।
এ বছরই কিছুদিন আগে ঠাকুরগাঁওয়ে একযোগে বিভিন্ন মন্দিরে হামলা করা হয়েছে। এবার আবার পঞ্চগড়ে কাদিয়ানিদের সমাবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং এ সম্পর্কিত সহিংসতায় দুজন নিহত হয়েছে। সংবাদপত্রের তথ্যমতে, সেখানে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাড়ি চিহ্নিত করে আক্রমণ চালানো হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা একের পর এক ঘটেই চলছে নিয়মিত বিরতিতে।
ভারতীয় উপমহাদেশে ধর্মের বিভাজন ও উপনিবেশিক শক্তির কূটচাল দেশভাগের পটভূমি তৈরি করে গত শতাব্দীর মাঝামাঝি। পারস্পরিক অবিশ্বাস ও বিভাজন সেই দেশভাগকেই চূড়ান্ত পরিণতি দিয়েছে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরে বেশির ভাগ বাঙালির মধ্যে পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়ার জন্য যে সামাজিক ও রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়, স্বাধীনতার পরে নানা চক্রান্তে তা ধ্বংস হয়ে যেতেও বেশি সময় লাগেনি। ইতিমধ্যে যারা সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো তৈরিতে পাকিস্তান মডেলকে আদর্শ মনে করেন তারা যথেষ্ট প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন।
যদিও ধর্মের ওপর ভিত্তি করে সমাজ পরিচালনার পাকিস্তান মডেল ইতিমধ্যে ব্যর্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক এলিটরা সব সময় রিলিজিয়ার্স কার্ড প্লে করে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকতে চাইতেন।
আর এর ফলাফল পাকিস্তান এখন প্রায় নিঃস্ব একটি দেশ। কী অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা, কী সামাজিক অস্থিরতা সব ক্ষেত্রেই পাকিস্তান এখন চূড়ান্ত বিপর্যয়ের মুখে।
দেশভাগের পর পাকিস্তানেও এভাবে ভিন্নমতাবলম্বী সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীর ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছে এবং সময়ে সময়ে এখনো চালছে। এ ধরনের ধারাবাহিক আক্রমণের প্রবণতা শুধু পাকিস্তানের আর্থ-সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকেই নষ্ট করেনি, অধিকন্তু পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের ভিত্তিকে দুর্বল করে দিয়েছে।
রাষ্ট্রের গতি-প্রকৃতি যদি কতিপয় গোষ্ঠীর ইচ্ছা-অনিচ্ছায় পরিচালিত হয় তাহলে সে রাষ্ট্রের বৈচিত্র্যময়তা থাকবে না, সৃজনশীলতা নষ্ট হবে এবং ভিত্তি দুর্বল হবে সেটাই স্বাভাবিক।
বস্তুতপক্ষে আজ যে অসহিষ্ণু বাংলাদেশ দেখতে পাচ্ছি তা একটি স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের চেষ্টার ফসল। আমাদের জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ এখন আইডেন্টিটি পলিটিক্সে যুক্ত হয়ে সমাজকে বিভক্তির চূড়ান্ত সীমায় নিয়ে যাচ্ছে। অন্যের অজান্তেই তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার তোয়াক্কা না করে তার ওপর আইডেন্টিটি পলিটিক্স চাপিয়ে দিচ্ছে। আর এর মাধ্যমেই ধীরে ধীরে সহিংসতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে এবং প্রায় নির্বিঘেœ একের পর এক সহিংসতা, লুটপাট ও হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে।
এই প্রক্রিয়ায় সমাজে ইতিমধ্যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশকে আরও বেশি প্রান্তিক করে দেওয়া হচ্ছে। তবে এই ধরনের সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ধর্মের মূল চেতনা কতটুকু রক্ষা করা গেল তা নিয়ে প্রশ্ন করাই যায়। কেউ ভিন্ন বিশ্বাসের অনুগামী হলেই তাকে দমন করতে হবে এই ধারণার কোনো যুক্তি নেই।
মূলত বিভাজন একটি সংস্কৃতি, এই সংস্কৃতির মূল বিষয় হচ্ছে ক্রমাগত আইডেন্টিটি পলিটিক্সের মাধ্যমে নতুন নতুন বিভাজন তৈরি করা, যেটা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে শুধু ক্ষমতাহীনই করছে না, সামাজিক বন্ধনকেও হালকা করে দেয়।
অন্যদিকে বাংলাদেশে অতিসম্প্রতি ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণাকে নানাভাবে যেমন ইস্টিগমাটাইজড করা হয়, পাশাপাশি সমাজে ধর্মনিরপেক্ষতাকে একটি কাল্পনিক শত্রু হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতিপক্ষ হিসেবে তুলে ধরা হয়। গত কয়েক দশক ধরেই এই শত্রুভাবাপন্নতা ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলছে। কিছু মানুষ এর জন্য যারপরনাই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এর মাধ্যমে লাভবান হচ্ছে কে?
এর মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর কি কোনো লাভ হচ্ছে? নাকি অল্প কিছু মানুষ এর মাধ্যমে লাভবান হচ্ছে? আইডেন্টিটি পলিটিক্সের মাধ্যমে আপাতদৃষ্টিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী মনস্তাত্ত্বিকভাবে লাভবান মনে করলেও, আদতে এই বিভক্তি এখানেই থামছে না। যার কিছু কিছু দৃষ্টান্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি, যেখানে শুদ্ধতার ভিন্ন ভিন্ন মাপকাঠির ভিত্তিতে নতুন নতুন বিভক্ত তৈরি হচ্ছে।
আমাদের দেশে সামনে নির্বাচন আসছে। এ সময়ে ধর্ম, বিশ্বাস ও সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে ক্ষমতা প্রদর্শনের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ফলে এসবের ভিত্তিতে সহিংসতার দৃষ্টান্তও বেড়ে যেতে পারে এবং একই সঙ্গে সমাজে বিভক্তি আরও বেড়ে যেতে পারে। তবে এ ধরনের প্রবণতাকে মোকাবিলা করার জন্য যথেষ্ট উদ্যোগ দেখা যায় না।
সরকার ও সামাজিক শক্তিগুলোও এ ক্ষেত্রে কেন যেন প্রয়োজনীয় আগ্রহ বোধ করে না। যদিও এই ধ্বংসাত্মক প্রবণতা থেকে রক্ষা পেতে অপেক্ষা করার মতো সময় আছে কিনা তা এখন মৌলিক প্রশ্ন। আজ আমাদের দেশে গণতন্ত্রের যে ভঙ্গুরতা দেখতে পাই তার পেছনে অন্যতম দায়ী এ ধরনের ধ্বংসাত্মক প্রবণতা।
একদিকে গণতন্ত্রের জন্য কান্না এবং অন্যদিকে ‘সংখ্যালঘুদের’ ওপর আক্রমণ, একটি আরেকটির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এখানেই মনোযোগ দেওয়ার জায়গা আমরা উন্নত গণতন্ত্রের চর্চা তখনই করতে পারব, যখন প্রত্যেকটা মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতার চর্চাকে সম্মান জানাতে পারব। আর সেটাই হোক ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের প্রত্যাশা।
লেখক: উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয় ‘পাকিস্তান চলচ্চিত্র সংসদ’-এর হাত ধরে, ১৯৬৩ সালের ২৫ অক্টোবর। স্বাধীনতার পরে সংগঠনটি নাম বদলে হয় ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংসদ’। ১৯৭৩ সাল নাগাদ দেশে চলচ্চিত্র সংসদের সংখ্যা ছিল ডজনের ওপরে। সে বছর ২৪ অক্টোবর সক্রিয় চলচ্চিত্র সংসদগুলো একত্রিত হয়ে গঠন করে এই আন্দোলনের একটি ফেডারেটিভ বডি। নেতৃত্বে ছিলেন আলমগীর কবির।
তখনকার ‘বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ’-ই নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এখনকার ‘ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ’ হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ৬ দশকপূর্তির সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনের এই ফেডারেটিভ বডিরও পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হচ্ছে এ বছর।
এই দীর্ঘ যাত্রায় দেশের চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিয়েছে ফেডারেশন। আর এই আন্দোলন নেতৃত্ব দিয়েছে দেশের চলচ্চিত্র সংস্কৃতির উৎকর্ষে। এই আন্দোলনের সক্রিয় দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দেশে প্রতিষ্ঠিত হয় ফিল্ম আর্কাইভ ও চলচ্চিত্র ইনস্টিটিউট। প্রবর্তিত হয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। সুস্থ চলচ্চিত্র নির্মাণকে উৎসাহিত করতে সরকারি পৃষ্ঠপোষণা হিসেবে চালু হয় অনুদান। দেশের চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রকাশনার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে চলচ্চিত্র সংসদগুলো।
বিশেষ করে বলতে হয়, দেশের এ আন্দোলনের প্রাণপুরুষ মুহম্মদ খসরু ও তার পত্রিকা ‘ধ্রুপদী’র কথা। এছাড়াও ‘ক্যামেরা যখন রাইফেল’, ‘চলচ্চিত্রপত্র’, চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ৪০ বছরপূর্তিতে প্রকাশিত ‘তিমির হননের নান্দীপাঠ’ প্রভৃতির কথাও বলতে হয়।
চলচ্চিত্র শিক্ষা নিয়েও বরাবরই উচ্চকণ্ঠ চলচ্চিত্র সংসদগুলো। নিজেদের উদ্যোগে তারা আয়োজন করেছে অসংখ্য কর্মশালা। সেগুলো থেকে তৈরি হয়েছে অসংখ্য পরিচালক ও অন্যান্য শিল্পী-কুশলী। পাশাপাশি সরব থেকে চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যাপারেও। তারই ধারাবাহিকতায় এখন সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথক বিষয় হিসেবে পাঠদান হচ্ছে চলচ্চিত্র নিয়ে।
এর বাইরে সুস্থ চলচ্চিত্র নির্মাণে উৎসাহ প্রদান ও সচেতন দর্শকশ্রেণি গড়ে তুলতে প্রচারণা ও বিভিন্ন উৎসব ও সেমিনার আয়োজন করছে ফেডারেশনের সদস্য সক্রিয় চলচ্চিত্র সংসদগুলো। এমনকি দেশের চলচ্চিত্রে অশ্লীলতাবিরোধী আন্দোলনেও সামনের সারিতে ছিল চলচ্চিত্র সংসদগুলো।
বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা সে আন্দোলনকে সফল করতে রেখেছিল বিশেষ ভূমিকা।
চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ৬০ বছর ও ফেডারেশনের ৫০ বছরপূর্তিএই দুই যুগল উপলক্ষ উদযাপন করতে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ হাতে নিয়েছে বছরব্যাপী কর্মসূচি। তার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে আজ ১৯ মার্চ রবিবার সন্ধ্যা ৬টায়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে সে আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মাননীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন প্রবীণ শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। আরও থাকবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকী। দেওয়া হবে ‘ছয় দশকের সেরা চলচ্চিত্র সংসদ সম্মাননা’। দেখানো হবে চলচ্চিত্র সংসদকর্মী নুরুল আলম আতিকের ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’।
বছরব্যাপী আয়োজনে আরও থাকবে- চলচ্চিত্র উৎসব, সেমিনার, কর্মশালা, স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ, প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও নৌভ্রমণ। আগামী ৮ থেকে ১৭ জুন হবে চলচ্চিত্র সংসদকর্মীদের নির্মিত চলচ্চিত্রের উৎসব। তার অংশ হিসেবে, দুটি সেমিনারও আয়োজন করা হবে। পরে পৃথক একটি সেমিনার আয়োজন করা হবে বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ওপর। তাতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন, এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও চলচ্চিত্র গবেষক লোটে হোয়েক।
আগামী ১৮ থেকে ২৮ অক্টোবর আয়োজন করা হবে, বাংলাদেশের ৫০ বছরের শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত চলচ্চিত্র উৎসব। তাতে কাহিনিচিত্র, প্রামাণ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রএই তিন বিভাগে সর্বোচ্চ ১০টি করে চলচ্চিত্র বাছাই করা হবে। প্রদান করা হবে ‘বাংলাদেশের ৫০ বছরের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র’ সম্মাননা। অনুষ্ঠিত হবে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে।
পাশাপাশি কর্মশালা আয়োজন করা হবে- ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, রংপুর, খুলনা, কুষ্টিয়া ও রাঙ্গামাটিতে। পরে দেশের সব জেলায় কর্মশালা আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। ফেডারেশনের নেতৃত্বে এই কর্মশালাগুলো আয়োজন করবে স্থানীয় সদস্য চলচ্চিত্র সংসদ।
গত ১৪ মার্চ মঙ্গলবার শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয় ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। উপস্থিত ছিলেন- চলচ্চিত্র সংসদকর্মী ও বরেণ্য নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম, প্রবীণ চলচ্চিত্র সংসদকর্মী ও লেখক কাইজার চৌধুরী, চলচ্চিত্র সংসদকর্মী ও নির্মাতা মসিহউদ্দীন শাকের, ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব মোস্তাফিজ, চলচ্চিত্র সংসদকর্মী ও নির্মাতা ফাখরুল আরেফিন, চলচ্চিত্র সংসদকর্মী কাজী জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশনের বর্তমান সভাপতি লায়লুন নাহার স্বেমি, সাধারণ সম্পাদক বেলায়াত হোসেন মামুন, যুগ্ম-সম্পাদক রিপন কুমার দাশ, অর্থ সম্পাদক মো. সাদেক হোসেন, দপ্তর সম্পাদক অদ্রি হৃদয়েশ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নাবীল আল জাহান ও কার্যকরী সদস্য রোদেলা নিরুপমা ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে এই আয়োজনের গুরুত্ব বর্ণনা করে তার সাফল্য কামনা করে বক্তব্য রাখেন বিপ্লব মোস্তাফিজ। বলেন, ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের যা কিছু ভালো অর্জন তার সবগুলোর পেছনেই আছে চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের অবদান। দেশের চলচ্চিত্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বাঁকবদল ঘটেছে এই আন্দোলনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে। তাই এই আন্দোলনের ষাট বছরপূর্তি ও ফেডারেশনের পঞ্চাশ বছরপূর্তি দুটোই বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মাইলফলক।’
লেখক : প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক
ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। মুজিব বাহিনীর সদস্য হিসেবে, মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান সভাপতিমন্ডলীর সদস্য। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন মুখোমুখি হয়েছিলেন দেশ রূপান্তরের। খোলামেলা কথা বলেছেন, সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন এবং রোগী-চিকিৎসক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন, সহকারী সম্পাদক- তাপস রায়হান।
দেশ রূপান্তর : আপনি তো রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছেন, ষাটের দশকেই?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : হ্যাঁ। আমি তখন জগন্নাথ কলেজের ছাত্র। ১৯৬৮ সালের কথা। তোফায়েল ভাই যখন ’৬৯ সালে ডাকসুর ভিপি, তখন আমি জগন্নাথ কলেজে ছাত্রলীগের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। তোফায়েল ভাইয়ের হাতেই আমার রাজনীতির হাতেখড়ি। কিন্তু এর নেপথ্য নায়ক ছিলেন শেখ কামাল ভাই।
সম্ভবত ১৯৬৫-৬৬ সালের দিকে, এক খেলার মাঠে পরিচয়। আমি তখন সেন্ট গ্রেগরী স্কুলের ছাত্র। এটা পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে। আর কামাল ভাই পড়তেন, শাহীন স্কুলে। ওটা হচ্ছে, নতুন ঢাকা। এইদিকে আমরা বাস্কেটবল ফাইনালে উঠে তাদের মুখোমুখি হতাম। কারণ কামাল ভাইরাও ঐদিকে ফাইনালে উঠতেন।
সেই খেলার মাঠ থেকেই কামাল ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয়। মূলত তার হাত ধরেই রাজনৈতিক অঙ্গনে পা রাখা। দেখতে দেখতে এলো একাত্তর। তখন আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র। মাত্র ১০/১২ দিন কাজ করেছি। এরপর আমি যুদ্ধে চলে যাই। ট্রেনিং নেই বিএলএফে। যেটা ‘মুজিব বাহিনী’ নামে পরিচিত।
দেশ রূপান্তর : সেখানে আপনাদের নেতৃত্বে কে কে ছিলেন?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : সেখানে আমাদের নেতা ছিলেন- মরহুম ফজলুল হক মণি, মরহুম আব্দুর রাজ্জাক, সিরাজুল আলম খান আর তোফায়েল আহমেদ। তাদের নির্দেশমতো সবাই কাজ করতেন। সেখানে গিয়ে দেখি কি, বাংলায় তাঁবুতে লেখা ‘ মুক্তি ক্যাম্প’। আমার মনে অন্যরকম একটা অনুভূতি হলো। এলাম ভারতে, এখানে বাংলা ভাষা কোত্থেকে এলো? উত্তর প্রদেশে সবাই তো হিন্দি ভাষায় কথা বলার কথা।
এখানে বাংলা কেন? এরপর আমি এ বিষয়ে, ৪ নেতাকেই জিজ্ঞাসা করলাম।
তো, একজন নেতা বললেন এখানেই তো জাতির পিতার ক্যারিশমা। আমাদের ট্রেনিং দেওয়া, পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, অস্ত্র দেওয়া সবই কিন্তু বঙ্গবন্ধু আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন।
সেই হিসাবেই কিন্তু আমরা ট্রেনিং নিয়েছি। সব ধরনের ট্রেনিংই নিয়েছি। আমি প্রথম ব্যাচে ট্রেনিং নিয়েছি। আমার সঙ্গে ছিলেন ঢাকার খসরু-মন্টু। এই মন্টু ভাইয়ের আন্ডারেই আমি ঢাকায় ইন করেছি।
দেশ রূপান্তর : ১৬ ডিসেম্বর, বিজয়ের দিনে আপনার একটা কষ্ট রয়েছে। বলবেন একটু বিষয়টা?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : দেশে আসার পর, মন্টু ভাইয়ের সঙ্গেই আমি থাকতাম। পুরান ঢাকায় তিনি বেশ জনপ্রিয়। তিনি রাতে থাকতেন নদীতে, নৌকার মধ্যে। প্রায় সময়ই, রাতে ঘুমাতাম নৌকায়। দুঃখটা হলো, ১৬ ডিসেম্বর ছিলাম কেরানীগঞ্জে। সন্ধ্যার পরপর সবাই নৌকায় হৈহৈ করে আসছিলাম। সামনের নৌকায় ছিল কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। ওরা অনেক আর্মস আর গোলাবারুদ নিয়ে আসছিল। হঠাৎ করে, নৌকাটা ডুবে যায়। কোমর আর হাতে ছিল ভারী অস্ত্র। ওদের আর বাঁচানো গেল না। তখন মনটা ভীষণ খারাপ হলো।
দেশ রূপান্তর : আপনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে ধাপে ধাপে, বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। এর বাইরে আবার বিএমএর সভাপতি। দুটো বিষয়কে সমন্বয় করতে সমস্যা হয় না?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : আমি তো স্বাধীনতার আগেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সদস্য। সেই ১৯৬৭ সালেই। এরপর শহরের দায়িত্বে। পরে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হলাম। এরপর হলাম যুগ্ম সম্পাদক। তারপর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। ১৯৭৮ সালে কাদের ভাই সভাপতি, আমি সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। ১৯৮১ সালে হলাম ছাত্রলীগের সভাপতি। পাশাপাপশি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের ৩ বার নির্বাচিত মহাসচিব।
দেশ রূপান্তর : আবার ১৯৯৩ সালে আপনার হাতেই তৈরি হলো, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)। এর কোনো বাস্তব ভিত্তি ছিল?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : অবশ্যই। না হলে তো এই উদ্যোগ নিতাম না। বাস্তবতার কারণেই, এই উদ্যোগ নিতে হয়েছে।
দেশ রূপান্তর : বাস্তবতাটা কি চিকিৎসা সংক্রান্ত না রাজনৈতিক?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : সবক্ষেত্রেই আদর্শের একটা ছাপ থাকে। আমি যাই করি না কেন, আমার চিন্তাই কিন্তু আমাকে ধাবিত করবে। যখন আমরা দেখলাম, বাঙালি-বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ আদর্শে বিশ্বাসী সব যোগ্য চিকিৎসককে ঢাকার বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কাউকে পার্বত্য চট্টগ্রামে আবার কাউকে ভুরুঙ্গামারী। এটা তো মেনে নেওয়া যায় না। তখন আমি নেত্রীর সঙ্গে কথা বললাম। নেত্রী বললেন- পারবি তো? আমি বললাম পারব, দোয়া কইরেন।
দেশ রূপান্তর : একটু বর্তমানের দিকে দৃষ্টি দিই। খুলনা সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে যা হলো, সেখানে বিএমএর ভূমিকা কী ছিল? কেন্দ্রীয় বিএমএ নেতৃবৃন্দ এ বিষয়ে কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : আমরা কোনোভাবেই এটা চাইনি। প্রথমেই তাদের আমরা বলেছি, কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত না নেওয়ার জন্য। আমরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। যেহেতু অভিযুক্ত পুলিশের এএসআইকে ক্লোজ করা হয়েছে, এরপর ধর্মঘটের কোনো যুক্তি নেই।
দেশ রূপান্তর : কিন্তু আপনাদের কথামতো তো আন্দোলন চলেনি?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : এ বিষয়ে কেউ উসকানি দিল কি না, সেটা দেখা হচ্ছে।
দেশ রূপান্তর : আমরা জানি, চিকিৎসক জনগণের সেবক। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায়, কিছু হলেই বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকরা ধর্মঘটের ডাক দেন। বন্ধ করে দেন চিকিৎসা। দাবি আদায়ের জন্য, আন্দোলনের ভিন্ন কোনো পথ নেই?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : এ বিষয়ে বারবার চিকিৎসকদের সতর্ক করা হচ্ছে। কোনোভাবেই যেন চিকিৎসা ধর্মঘটে তারা না যায়। আমরা তো ডাক্তার হিসেবে ঢুকেছি, জনগণের সেবা করার জন্যই। আমাদের দাবি-দাওয়া থাকতেই পারে। আন্দোলনের তো অনেক পথ আছে। আমরা সেই পথ অবলম্বন করব।
দেশ রূপান্তর : কিন্তু আপনাদের কথা কি সবাই মানছেন? চিকিৎসকরা তো হুটহাট ধর্মঘটে যান?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। এসব বিষয় যাতে আর না হতে পারে, তার জন্য মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে একটা অনুরোধ করেছি। এটা অনেকবার বলেছি। জনগণ ও ডাক্তারদের জন্য একটা ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন’ করতে। সেই আইনে যদি কোনো শাস্তি থাকে, অবশ্যই সেটা হবে।
দেশ রূপান্তর : ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন’ কেন এখনো হচ্ছে না?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : তা তো বলতে পারব না। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।
দেশ রূপান্তর : আইন হলে, আপনাদের সমর্থন থাকবে?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : শতভাগ। এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। আমি মন্ত্রীকে ব্যক্তিগতভাবে বলেছি, আগামী সংসদে এটা পাস করিয়ে দেন। আইন হলে আমরাও বেঁচে যাই। ইতিমধ্যে এটা প্রস্তুত করা হয়েছে। এতে চিকিৎসকরাও ভালো থাকবেন।
জনগণের কল্যাণে যাতে ডাক্তাররা কাজ করতে পারেন, সেই সুযোগও আইনে থাকবে। এটা রোগী-চিকিৎসক, উভয় পক্ষের জন্যই মঙ্গলকর। এটা খুব তাড়াতাড়িই হয়ে যাবে।
অপরাধের মাত্রা এবং ক্ষমতা কোন পর্যায়ে পৌঁছালে, একজন অপরাধী পুলিশ খুন করেও নির্বিঘেœ দেশ থেকে পালাতে পারেন? শুধু তাই নয়। তিনি ভারতে গিয়ে নাম পরিবর্তন করেছেন। সেখান থেকে দুবাই। অল্প সময়ের মধ্যে গড়ে তুলেছেন টাকার পাহাড়। কোটি কোটি টাকা খরচ করে উদ্বোধন করছেন সোনার দোকান- আরাভ জুয়েলার্স। সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই অতিথি হয়ে গেছেন জনপ্রিয় ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান। তার সঙ্গে আরও অনেক মডেল, সংগীতশিল্পীও রয়েছেন। যে কারণে, বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে, একজন খুনি-চোরাচালানির এত অর্থ-বিত্তের নেপথ্যে কোনো হস্তীসদৃশ, ক্ষমতাশালীর যোগসাজশ রয়েছে কি-না? এমন ঘটনায়, এতদিন পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন নড়েচড়ে বসলএটাই প্রশ্ন! কারণ, ২০১৮ সালে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খানকে খুন করা হয়েছে। এতদিন পর কেন এ বিষয়ে সব পক্ষ নড়েচড়ে বসল! এর মানে হচ্ছে, অপ্রকাশিত অসংখ্য অনৈতিক কাজ এবং অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে যা নিয়ে কোনো হইচই নেই!
গতকাল দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায় প্রকাশিত মডেল প্রভাবশালীরাও আরাভ ‘কানেকশনে’ সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়- আরাভের সোনার কারবারে জড়িয়ে পড়ার পেছনে আলোচিত এক মডেল ও চলচ্চিত্র প্রযোজক আছেন, যারা ২০২১ সালে মাদক কারবারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাদের যোগসাজশে সোনার কারবারে এসে দুবাইয়েও গড়ে তুলেছেন সোনার ব্যবসা। এ ছাড়া মামলা থেকে রেহাই পেতে নিজের নাম পরিবর্তন করে ছদ্মনাম ব্যবহার করেন, এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তারও আশকারা পেয়েছেন তিনি। পুলিশ, ব্যবসায়ী ও মডেলরা দুবাইয়ে গেলে তার সান্নিধ্য পান। সোনার দোকান উদ্বোধন হওয়ার পর ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান দেশে এলেও অন্য অতিথিরা রয়ে গেছেন দুবাইয়ে। ইতিমধ্যে আরাভের সহযোগীদের একটি তালিকা তৈরি করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।
পুলিশ সূত্র জানায়, অপরাধজগতের শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও জয় ছিল আরাভের অন্যতম সহযোগী। তাদের মাধ্যমে গুলশান ও বনানী এলাকার নামি মডেলদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পাশাপাশি দুই শীর্ষ ব্যবসায়ীর সঙ্গেও সখ্য গড়ে ওঠে। রিয়েল এস্টেট ব্যবসার পাশাপাশি সোনা চোরাচালানেও জড়িয়ে পড়েন। দুবাইয়ে গড়ে তোলেন আলিশান সোনার দোকান। ওই দোকানের ব্যবসায়িক পার্টনার পুলিশের দুই সাবেক কর্মকর্তা ও দুজন বড় ব্যবসায়ী। ওই ব্যবসায়ীরা গুলশান ও বনানী এলাকায় পরিচিত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গুলশান এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা হত্যার সঙ্গে আরাভসহ বেশ কয়েকজন রাঘববোয়াল জড়িত। আলোচিত সেই মডেল ও চলচ্চিত্র প্রযোজক ওই হত্যাকা-ের বিষয়ে অনেক কিছুই জানেন। তারা আরাভের সঙ্গে দেখা করতে নিয়মিত দুবাই যান। ওই চলচ্চিত্র প্রযোজক ও মডেল বর্তমানে দুবাই অবস্থান করছেন বলে তারা জানেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আরাভ ঠা-া মাথার অপরাধী। সোনা চোরাচালান করেই কয়েকশ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। দুবাইয়ে তার সোনার দোকান উদ্বোধন করতে সাকিবের যাওয়া ঠিক হয়নি। অর্থের প্রয়োজন সবারই আছে। তবে সাকিবের মতো তারকার টাকার পেছনে ছোটা খুবই দুঃখজনক। সাকিব ও হিরো আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
আরাভের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা এবং তার উপার্জিত অর্থের বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত দরকার। একইসঙ্গে বলা প্রয়োজন, তিনি যেহেতু ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে দুবাই গেছেন, সেহেতু নাগরিকত্বের বিষয়েও একটি জটিলতা দেখা দিতে পারে। ইন্টারপোলের সহযোগিতায়, অপরাধীকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসাই প্রধান কর্তব্য। সাকিব আল হাসানকে নিয়ে মাতামাতি করে, অপরাধীকে আড়াল করার অপচেষ্টা যেন বিফলে না যায়। সরকারের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে শান্তিপ্রিয় মানুষের এটুকুই চাওয়া।
প্রখ্যাত কবি, লেখক ও সাংবাদিক সিকান্দার আবু জাফর ১৯১৯ সালের ১৯ মার্চ সাতক্ষীরা জেলার তেঁতুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম সৈয়দ আল্ হাশেমী আবু জাফর মুহম্মদ বখ্ত সিকান্দার। আবু জাফর সাতক্ষীরার তালা বি. দে. ইনস্টিটিউট থেকে প্রবেশিকা (১৯৩৬) এবং কলকাতার রিপন কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। কলকাতার মিলিটারি অ্যাকাউন্টস বিভাগে (১৯৩৯) তিনি পেশাগত জীবন শুরু করেন এবং পরে সিভিল সাপ্লাই অফিসে চাকরি করেন। সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদারের ‘গ্লোব নিউজ এজেন্সি’ নামক সংবাদ-সংস্থায়ও তিনি কিছুকাল কাজ করেন। আবু জাফর ১৯৫০ সালে কলকাতা থেকে ঢাকায় আসেন এবং বিভিন্ন সময়ে দৈনিক নবযুগ, ইত্তেফাক, সংবাদ ও মিল্লাত পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। তিনি মাসিক সমকাল পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক (১৯৫৭-১৯৭০) ছিলেন। ষাটের দশকে পূর্ব বাংলায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাঙালি সংস্কৃতিচর্চার যে ধারা গড়ে ওঠে, আবু জাফর ছিলেন তার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি স্বাধীনতা, দেশপ্রেম ও বিপ্লবের চেতনাসম্পন্ন অনেক গান রচনা করেন। তার রচিত ‘আমাদের সংগ্রাম চলবেই’ গানটি মুক্তিযুদ্ধের সময় জনগণকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ : উপন্যাস পূরবী, নতুন সকাল; ছোটগল্প মাটি আর অশ্রু; কবিতা প্রসন্ন শহর, তিমিরান্তিক, বৈরী বৃষ্টিতে, বৃশ্চিক-লগ্ন, বাংলা ছাড়ো; নাটক সিরাজ-উদ-দৌলা, মহাকবি আলাউল; সংগীত মালব কৌশিক। আবু জাফর অনুবাদক হিসেবেও খ্যাত ছিলেন। তার কয়েকটি অনূদিত গ্রন্থ : যাদুর কলস, সেন্ট লুইয়ের সেতু, রুবাইয়াৎ : ওমর খৈয়াম ইত্যাদি। তিনি নাটকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৬) এবং একুশে পদক (১৯৮৪, মরণোত্তর) লাভ করেন। তিনি ১৯৭৫ সালের ৫ আগস্ট ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এক বছরেরও কম। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচন হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করা দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো আন্দোলন করছে।
এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত বছরের মাঝামাঝি থেকে এই চাপ ক্রমশ বাড়ছে। বিদেশিদের মধ্যে এবার যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অনেক বেশি। এর আলামত দেখা যাচ্ছে কয়েক মাস ধরে। নির্বাচন ছাড়াও দেশটি মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীন প্রশ্নে অনেক সোচ্চার। ২০২১ সালের ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি।
সরকারের তরফ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য তারা বিদেশিদের উদ্যোগ নিতে বলছে। একই সঙ্গে সরকার যেকোনো চাপে নতি স্বীকার করবে না, সেটাও বলেছে।
কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৯০ সালে দেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি আসার পর থেকেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক আগ্রহ বাড়ছে। নির্বাচনের এক বছর আগে থেকেই প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নানা সবক দিতে থাকে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
তাদের মতে, বরং নির্বাচন ঘিরে পরাশক্তিগুলোর প্রভাব লক্ষণীয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই প্রতিবেশী দেশ এবং বড় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সরকার নিয়ে সবচেয়ে বেশি আধিপত্য দেখিয়ে আসছিল ভারত। ১৯৯০ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পশ্চিমাদের প্রভাব। আর তিন দশক ধরে বিভিন্ন কূটনৈতিক জোট, আঞ্চলিক জোট এবং সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আগ্রহ বেড়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রভাবশালী দেশগুলোর নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ যতই থাক না কেন, এর মূল কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা। তারা মনে করছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সমাধান যদি নিজেরা না করতে পারি, তাহলে বাইরের প্রভাব বাড়তে থাকবে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালী উর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে তাদের প্রভাব বলয়ে রাখতে চায়। তাদের নিজেদের দেশেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। বর্তমান সরকারও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করছে। তাদের এই চাপ কাজে দেবে না।’ আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলের অভিমত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে এবং আঞ্চলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কারণও তাই। কূটনীতিকরা বলছেন, ভারত, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ থাকলেও এক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতা লক্ষণীয়। এ ক্ষেত্রে সরকারবিরোধী বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বারবার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি কিছুটা হলেও গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন পদ্ধতি এবং নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র অনেক বেশি সোচ্চার হলেও তাদের কূটনীতি সরকারবিরোধী দলগুলোর পক্ষে যাবে এমন ধারণা করার কোনো কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। এটা যেমন সত্য, তেমনি ইন্দো প্যাসিফিক এবং এ অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের বোঝাপড়াটা বেশি জরুরি। আর সে কারণেই বিএনপি যতই তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলুক যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে না। তাদের বক্তব্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং নির্বাচনে বিরোধীপক্ষের জন্য সুষ্ঠু ও অবাধ পরিবেশ তৈরি করা।
কূটনীতিক সূত্রগুলো বলছে, আগের কয়েক দফা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী থাকলেও ভারতের সঙ্গে একধরনের সমঝোতা করে বা আলোচনা করে তাদের মতামত দিয়েছে। কিন্তু ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন নিয়ে পরামর্শ এবং তাদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে বেশি সোচ্চার।
বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক চর্চার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগের বিষয়টি প্রথম প্রকাশ পায় ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে। এরপর থেকেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংলাপও হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল এবং প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করেছেন। তাদের সফরে আগামী নির্বাচন, বিরোধীপক্ষের প্রতি সরকারের আচরণ, মানবাধিকার ও সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সরকার, আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
গত ২১ মার্চ নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের উদ্ধৃত করে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে, নির্বাচনে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে এবং বিরোধীদলীয় পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানোসহ গুরুতর অনিয়ম রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত সম্মান ও অংশীদারিত্বের মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে মানবাধিকারের বিষয়গুলো উত্থাপন করে। এটা তারা চালিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এমন আগ্রহের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বলয় বাড়াতে চায় দেশটি। এরই মধ্যে দেশটি এশিয়ায় তাদের বন্ধু দেশগুলোকে নিয়ে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ (আইপিএস) পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এর আওতায় ইন্দো-প্যাসিফিক ফোরাম গঠন করা হয়েছে। একই কৌশলের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভারত সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে কোয়াড গঠন করেছে। এগুলোর লক্ষ্য হলো চীনের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলে একটি শক্তিশালী বলয় গঠন করা। ভারতের পাশাপাশি এ বলয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকেও চায়। বাংলাদেশ যেন কোনোভাবেই চীনের বলয়ে না যেতে পারে, সেই কৌশলের অংশ হিসেবেও আগামী নির্বাচন ঘিরে চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে দেশটি। যদিও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো জোটেই যায়নি। আবার ‘বার্মা অ্যাক্ট’ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রস্তাবে তারা বাংলাদেশকে পাশে চায়। এসব কারণে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ নানা ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ ঢাকায় সফররত দেশটির কর্মকর্তারা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্ক নিয়েও ইতিবাচক কথা বলেন। এ ছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বিভিন্ন বক্তব্যেও নির্বাচনের পরিবেশ ও স্বচ্ছতা নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে ঢাকা সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তারও বলেছিলেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে তারা সরকারকে এবং এই দেশকে সহযোগিতা করেব। তিনি সেই সময় দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাস ও ইউএসএইডের বাংলাদেশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব তুলে ধরেন।
গত বছরের অক্টোবরে ঢাকায় এসেই এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে চায়। এরপর থেকে তিনি নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রায় অভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আসছেন। পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো একটি দলকে সমর্থন করে না। তারা চান জনগণ তাদের পছন্দের সরকার নির্বাচন করবে।
এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসহ ১৪টি দেশের কূটনীতিকরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন নিয়ে তাদের মনোভাব তুলে ধরেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অভিনন্দন বার্তায়ও বাংলাদেশে সবার জন্য উন্মুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। দিবসটি উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শুভেচ্ছা বার্তায় অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে লেখা বাইডেনের এ বার্তায় বর্তমান সরকার ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসাও করা হয়েছে।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলে তার ঢাকা সফরে বলেছিলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, অর্থাৎ যারা পরাজিত হবেন, তারাও যেন মনে করেন নির্বাচনটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ হয়েছে এমনটাই তারা চান। তিনি বলেছিলেন, শক্তিশালী সুশীল সমাজ, মুক্ত গণমাধ্যম এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক পরিবেশ চায় যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে নেতিবাচক প্রশ্ন উঠবে না। এই পরিবেশ তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও শোলে জানান।
ডেরেক শোলে চলে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, সরকারপক্ষ থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিকে বলা হয়েছে তারা অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। তারা সরকারের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত। তবে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও পূর্ববর্তী নির্বাচন নিয়ে তারা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। যখনই প্রয়োজন হবে, তারা সেটা জানাবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর সুযোগ নেই। এই সুযোগটা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোই করে দিয়ে আসছে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র একটি শক্তিশালী অবস্থান চায়। এ জন্যই তারা কথা বলছে।’
রমজানের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষায় সবার দায়িত্ব রয়েছে। কারও কোনো অবহেলা কিংবা গর্হিত কাজে রোজাদারের রোজা পালনে অসুবিধা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা। রমজানের পবিত্রতা রক্ষার পাশাপাশি মুসলমানরা যেন নির্বিঘেœ ইবাদত-বন্দেগি করতে পারে, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করা। মাহে রমজান ও রোজাদারের প্রতি সম্মান বজায় রাখা। সকল প্রকার গোনাহ পাপাচার এবং অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকা।
রোজাদারদের কষ্ট লাঘবে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করা। তারা যেন সুন্দরভাবে মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারে, সে জন্য মসজিদের আশপাশের রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করা। ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং সাহরি ও ইফতারে পচা-বাসি খাবার বিক্রি না করার বিষয়ে নজরদারি করা। মশার কামড় রোধে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া।
নানা কারণে অনেকে রোজা রাখতে পারেন না। এ কারণে ব্যক্তিভেদে মাসয়ালা প্রয়োগ হবে। কিন্তু রমজানের পবিত্রতা নষ্ট করা, রোজা ও রোজাদারের প্রতি সম্মান না দেখানো অনেক বড় ধৃষ্টতা। এগুলো থেকে বিরত থাকা চাই। প্রকাশ্যে ইসলামের কোনো বিধানের অমর্যাদা, রোজার মূল চেতনা ক্ষুণœ হয় এমন বিষয়ে লিপ্ত থাকা নাফরমানির অন্তর্ভুক্ত। জেনেবুঝে সংঘবদ্ধভাবে এমন নাফরমানি আল্লাহর ক্রোধ বাড়িয়ে দেয় এবং অনেক বড় দুর্গতি ডেকে আনে। আল্লাহর ওয়াস্তে রমজানের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষার স্বার্থে এসব গর্হিত আচরণ থেকে নিবৃত্ত থাকা চাই।
মনে রাখতে হবে, রমজান তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অর্জনের মাস। এ মাসে করণীয় হলো তাকওয়া অর্জনে এগিয়ে আসা। কিয়ামুল লাইলের (তারাবি ও তাহাজ্জুদের নামাজ) প্রতি যতœবান হওয়া। কোরআন নাজিলের মাস হিসেবে তেলাওয়াতে কোরআন, তাদাব্বুরে কোরআন (কোরআনের আয়াত ও হেদায়েত নিয়ে চিন্তাভাবনা) এবং আমল বিল কোরআনের (কোরআনের আমল) প্রতি মনোযোগী হওয়া। যাদের কোরআন তেলাওয়াত সহিহ নেই তেলাওয়াত সহিহ করা। বেশি বেশি নফল ইবাদত, দোয়া-দরুদ, তওবা-ইস্তিগফার, জিকির-আজকার ইত্যাদিতে সময় ব্যয় করা। সর্বাবস্থায় সহনশীলতা ও ভ্রাতৃত্ব চর্চায় মনোযোগী হওয়া। অধিক পরিমাণে দান-সদকা করা এবং সব ধরনের কল্যাণকর কাজে এগিয়ে আসা। সংযম বজায় রাখা। প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করা। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের আত্মিক উৎকর্ষের প্রতি মনোনিবেশ করা।
রমজানের বিশেষ বিশেষ মুহূর্তগুলোর ব্যাপারে যতœবান হওয়া। যেমন সাহরি, ইফতার, তারাবি, তাহাজ্জুদ, শবেকদর ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোর ব্যাপারে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা। এ মুহূর্তগুলোর যে বিশেষ আমল রয়েছে তাতে আত্মনিয়োগ করা। বাসাবাড়ি, অফিস-আদালতে ইবাদতের পরিবেশ গড়ে তোলা। মসজিদগুলো ইবাদতের মাধ্যমে আবাদ রাখা। মোদ্দা কথা, এই এক মাসে তাকওয়ার মেহনতের মাধ্যমে গোটা বছরের ইমানি, আমলি এবং রুহানি জিন্দেগির পাথেয় সংগ্রহ করা।
আলেমরা বলে থাকেন, রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে গেলে প্রয়োজনে বিশ্রাম করুন। কিন্তু অনর্থক গল্পে লিপ্ত হবেন না। কারণ কথায় কথা টানতে থাকে এবং আল্লাহ না করুন, বেশি কথা বললে তা ধীরে ধীরে মিথ্যা, গীবত-শেকায়েত ইত্যাদি বিভিন্ন দিকে ছুটতে থাকে।
রমজানে গোনাহের ধারা অব্যাহত রাখা খুবই খারাপ কথা। যেখানে ঘোষণা হতে থাকে নেকির কাজে অগ্রসর হতে, অনিষ্ট থেকে নিবৃত্ত হতে, সেখানে গোনাহের ধারা অব্যাহত রাখা অনেক বড় বঞ্চনার কারণ। বিশেষ করে অনাচার-পাপাচার ও অশ্লীলতা এবং এমন গোনাহ, যা আল্লাহর ক্রোধকে বাড়িয়ে দেয়, এমনসব বিষয় পুরোপুরি বর্জন করা। কারণ ফিরে আসার এটাই মোক্ষম সময়। কিন্তু ফিরে না এসে এর অনুভূতিও জাগ্রত না হওয়া বহুত বড় ক্ষতির বিষয়।
আজ রমজানের ৯ তারিখ। দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাচ্ছে রমজান মাস। এভাবে মানুষের জীবনও একদিন শেষ হয়ে যাবে। বুদ্ধিমান তো সে, যে আগ থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকে। কাজে লাগায় রমজানের বরকতময় প্রতিটি মুহূর্ত। সে অগ্রগামী হয় নেকি ও কল্যাণের পথে, তাকওয়া হাসিলের পথে এবং ব্রত হয় গোনাহ থেকে পাক-পবিত্র হয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার মেহনতে।
লেখক : খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
রাজধানীর পল্লবীতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীরা স্থানীয় যুবদলের নেতা। শুক্রবার ইফতারের আগে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য চলাকালে যুবদলের নেতাকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেন।
হামলায় বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির বিশেষ প্রতিনিধি ইমরুল আহসান জনি, চ্যানেল আইয়ের প্রতিবেদক আখতার হাবিবসহ বেশ কয়েকটি চ্যানেলের ক্যামেরাপারসন আহত হন। দুটি ক্যামেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জানা গেছে, ইফতার অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের বিপুল উপস্থিতিতে গণমাধ্যমকর্মীদের দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে দলের কিছু কর্মী কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর চড়াও হন।
উপস্থিত নেতাকর্মীরা জানান, যুবদল নেতাদের হামলা থামাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঞ্চ থেকে নেমে এলেও তাদের নিবৃত্ত করতে পারছিলেন না। পরে তিনি নেতাকর্মীদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ভিডিওতে দেখা যায় হামলায় অংশ নেন পল্লবী থানার ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, পল্লবী থানা যুবদলের পিয়াস, পল্লবী থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি রাজিব হোসেন পিন্টু, রূপনগর থানা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. আসিফ, পল্লবী থানা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. মাসুদ এবং পল্লবী থানা ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের মো. মনির।
নেতাকর্মীরা জানান, এসব নেতা যুবদল কেন্দ্রীয় সংসদের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের অনুসারী। তবে এ বিষয়ে জানতে মিল্টনের মোবাইলে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হকের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও সাড়া দেননি তিনি।
তবে ঘটনার পর সংবাদকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনার পর আমিনুল হক দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ক্ষমা চান। মিল্টন ও আমিনুল উভয়ই ঢাকা-১৬ আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী।
এ ঘটনায় সংবাদকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিএনপির প্রায় অনুষ্ঠানে সংবাদকর্মীদের হেনস্তা হতে হয়। ক্ষমতায় না আসতেই সাংবাদিকদের এ অবস্থা। ক্ষমতায় আসলে তো আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি নির্যাতন করবে। এমন কোনো প্রোগ্রাম নেই যে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়নি।
তারা আরো বলেন, ‘এর আগে বিএনপির কর্মীরা মাই টিভির সাংবাদিক ইউসুফের ওপর হামলা করেছে। আজকের (শুক্রবার) ঘটনা যে ঘটিয়ে থাকুক, এর দায় উত্তরের শীর্ষ দুই নেতার। আপনারা নিজেরা নিজেরা মারামারি করেন, কিন্তু সাংবাদিকদের ওপর হাত তোলা বরদাশত করা যায় না। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিন, ব্যাখ্যা দিন, ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেন। একই সঙ্গে আর এমন হবে না, সেটি প্রকাশ্যে বলুন। মনে রাখবেন, এই সাংবাদিকরাই আপনাদের বছরের পর বছর সার্ভ করছে। তারা এভাবে মার খেলে আখেরে আপনারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সব হারাবেন’।
এ বিষয়ে বিএনপির মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির ভাই সাংবাদিকদের বলেন, ‘জনি ভাইসহ আহত সাংবাদিকদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বিএনপির মহাসচিব মহোদয়ের প্রতি তিনি নিজে গিয়ে জনি ভাইকে উদ্ধার করেছেন। তবে ফুটেজে দেখলাম হামলাকারীদের ছবি আছে। তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া উচিত। দলের না হলেও চিহ্নিত করে পরিষ্কার করা উচিত তারা কারা’।
জানা গেছে, শুক্রবার রাতে হামলায় আহত সাংবাদিকদের বাসায় গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হক।
এ ঘটনায় মির্জা ফখরুল এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘মনে হয় না তারা (নেতাকর্মীরা) দলকে ভালোবাসে। তারা অতিথিদের সম্মান রক্ষা করতে জানে না।’
এ সময় নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলার মধ্যে আসার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের দালালেরা অনুষ্ঠানে ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে।’
আয়োজকদের পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে এর সমাধান করা হয়েছে। সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমাও চাওয়া হয়েছে।’
এ বছর ভারতের মাটিতে বসবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসর। তবে পাকিস্তান নিজেদের ম্যাচগুলো ভারতে না খেলে বাংলাদেশে খেলতে চায় বলে খবর প্রকাশিত ছড়িয়েছিল। যে খবরকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) প্রধান নাজাম শেঠি।
এমন কোনো আলোচনাই হয়নি বলে দাবি করে শেঠি বলেন, ‘বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে কোনো পর্যায়ে আমি আইসিসির প্রসঙ্গ কিংবা অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় ২০২৩ বিশ্বকাপ নিয়ে কোনো মন্তব্য করিনি। এখন পর্যন্ত আইসিসির কোনো সম্মেলনে এই বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
বিশ্বকাপের আগে সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানে বসবে এশিয়া কাপ। কিন্তু এই টুর্নামেন্টে খেলতে প্রতিবেশী দেশে যেতে রাজি নয় ভারত। তাই তাদের ম্যাচগুলো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আয়োজনের কথা ভাবছে এসিসি। নাজাম জানিয়েছেন এখনো বিষয়টি আলোচনার টেবিলে আছে।
এদিকে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ ম্যাচ বাংলাদেশে হওয়ার খবর প্রসঙ্গে শুক্রবার মুখ খুলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে এ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। আসলে আমি এটা টিভিতে দেখেছি। আইসিসি বা পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড কেউ আমাদের কিছু বলেনি।’
রুতুরাজ গয়কোয়াডের দাপুটে ব্যাটিংয়ে চ্যালেঞ্জিং পুঁজি গড়ল চেন্নাই সুপার কিংস। যা তাড়া করতে নেমে শুভমন গিলের পর রাহুল তেওয়াতিয়া ও রশিদ খানের নৈপুণ্যে জয় তুলে নিল গুজরাট টাইটান্স।
আহমেদাবাদে শুক্রবার আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে ৫ উইকেটের জয় তুলে নেয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন গুজরাট। ১৭৯ রানের লক্ষ্য তারা ৪ বল হাতে রেখে ছুঁয়েছে।
গিল সর্বোচ্চ ৩৬ বলে ৬৩ রান করেছেন ৬ চার ও ৩ ছক্কায়। শেষ দিকে তেওয়াতিয়ার ১৪ বলে অপরাজিত ১৫ ও রশিদ খানের ৩ বলে অপরাজিত ১০ রান দলকে জয় এনে দেয়।
চেন্নাইয়ের পক্ষে রাজবর্ধন হাঙ্গার্গেকর ৩৬ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামা চেন্নাই নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৮ রান সংগ্রহ করে। রুতুরাজ সর্বোচ্চ ৯২ রান করেন। তার ৫০ বলের ইনিংসে ছিল ৪ চার ও ৯ ছক্কা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।