
প্রখ্যাত কবি, লেখক ও সাংবাদিক সিকান্দার আবু জাফর ১৯১৯ সালের ১৯ মার্চ সাতক্ষীরা জেলার তেঁতুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম সৈয়দ আল্ হাশেমী আবু জাফর মুহম্মদ বখ্ত সিকান্দার। আবু জাফর সাতক্ষীরার তালা বি. দে. ইনস্টিটিউট থেকে প্রবেশিকা (১৯৩৬) এবং কলকাতার রিপন কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। কলকাতার মিলিটারি অ্যাকাউন্টস বিভাগে (১৯৩৯) তিনি পেশাগত জীবন শুরু করেন এবং পরে সিভিল সাপ্লাই অফিসে চাকরি করেন। সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদারের ‘গ্লোব নিউজ এজেন্সি’ নামক সংবাদ-সংস্থায়ও তিনি কিছুকাল কাজ করেন। আবু জাফর ১৯৫০ সালে কলকাতা থেকে ঢাকায় আসেন এবং বিভিন্ন সময়ে দৈনিক নবযুগ, ইত্তেফাক, সংবাদ ও মিল্লাত পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। তিনি মাসিক সমকাল পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক (১৯৫৭-১৯৭০) ছিলেন। ষাটের দশকে পূর্ব বাংলায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাঙালি সংস্কৃতিচর্চার যে ধারা গড়ে ওঠে, আবু জাফর ছিলেন তার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি স্বাধীনতা, দেশপ্রেম ও বিপ্লবের চেতনাসম্পন্ন অনেক গান রচনা করেন। তার রচিত ‘আমাদের সংগ্রাম চলবেই’ গানটি মুক্তিযুদ্ধের সময় জনগণকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ : উপন্যাস পূরবী, নতুন সকাল; ছোটগল্প মাটি আর অশ্রু; কবিতা প্রসন্ন শহর, তিমিরান্তিক, বৈরী বৃষ্টিতে, বৃশ্চিক-লগ্ন, বাংলা ছাড়ো; নাটক সিরাজ-উদ-দৌলা, মহাকবি আলাউল; সংগীত মালব কৌশিক। আবু জাফর অনুবাদক হিসেবেও খ্যাত ছিলেন। তার কয়েকটি অনূদিত গ্রন্থ : যাদুর কলস, সেন্ট লুইয়ের সেতু, রুবাইয়াৎ : ওমর খৈয়াম ইত্যাদি। তিনি নাটকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৬) এবং একুশে পদক (১৯৮৪, মরণোত্তর) লাভ করেন। তিনি ১৯৭৫ সালের ৫ আগস্ট ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয় ‘পাকিস্তান চলচ্চিত্র সংসদ’-এর হাত ধরে, ১৯৬৩ সালের ২৫ অক্টোবর। স্বাধীনতার পরে সংগঠনটি নাম বদলে হয় ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংসদ’। ১৯৭৩ সাল নাগাদ দেশে চলচ্চিত্র সংসদের সংখ্যা ছিল ডজনের ওপরে। সে বছর ২৪ অক্টোবর সক্রিয় চলচ্চিত্র সংসদগুলো একত্রিত হয়ে গঠন করে এই আন্দোলনের একটি ফেডারেটিভ বডি। নেতৃত্বে ছিলেন আলমগীর কবির।
তখনকার ‘বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ’-ই নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এখনকার ‘ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ’ হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ৬ দশকপূর্তির সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনের এই ফেডারেটিভ বডিরও পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হচ্ছে এ বছর।
এই দীর্ঘ যাত্রায় দেশের চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিয়েছে ফেডারেশন। আর এই আন্দোলন নেতৃত্ব দিয়েছে দেশের চলচ্চিত্র সংস্কৃতির উৎকর্ষে। এই আন্দোলনের সক্রিয় দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দেশে প্রতিষ্ঠিত হয় ফিল্ম আর্কাইভ ও চলচ্চিত্র ইনস্টিটিউট। প্রবর্তিত হয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। সুস্থ চলচ্চিত্র নির্মাণকে উৎসাহিত করতে সরকারি পৃষ্ঠপোষণা হিসেবে চালু হয় অনুদান। দেশের চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রকাশনার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে চলচ্চিত্র সংসদগুলো।
বিশেষ করে বলতে হয়, দেশের এ আন্দোলনের প্রাণপুরুষ মুহম্মদ খসরু ও তার পত্রিকা ‘ধ্রুপদী’র কথা। এছাড়াও ‘ক্যামেরা যখন রাইফেল’, ‘চলচ্চিত্রপত্র’, চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ৪০ বছরপূর্তিতে প্রকাশিত ‘তিমির হননের নান্দীপাঠ’ প্রভৃতির কথাও বলতে হয়।
চলচ্চিত্র শিক্ষা নিয়েও বরাবরই উচ্চকণ্ঠ চলচ্চিত্র সংসদগুলো। নিজেদের উদ্যোগে তারা আয়োজন করেছে অসংখ্য কর্মশালা। সেগুলো থেকে তৈরি হয়েছে অসংখ্য পরিচালক ও অন্যান্য শিল্পী-কুশলী। পাশাপাশি সরব থেকে চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যাপারেও। তারই ধারাবাহিকতায় এখন সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথক বিষয় হিসেবে পাঠদান হচ্ছে চলচ্চিত্র নিয়ে।
এর বাইরে সুস্থ চলচ্চিত্র নির্মাণে উৎসাহ প্রদান ও সচেতন দর্শকশ্রেণি গড়ে তুলতে প্রচারণা ও বিভিন্ন উৎসব ও সেমিনার আয়োজন করছে ফেডারেশনের সদস্য সক্রিয় চলচ্চিত্র সংসদগুলো। এমনকি দেশের চলচ্চিত্রে অশ্লীলতাবিরোধী আন্দোলনেও সামনের সারিতে ছিল চলচ্চিত্র সংসদগুলো।
বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা সে আন্দোলনকে সফল করতে রেখেছিল বিশেষ ভূমিকা।
চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ৬০ বছর ও ফেডারেশনের ৫০ বছরপূর্তিএই দুই যুগল উপলক্ষ উদযাপন করতে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ হাতে নিয়েছে বছরব্যাপী কর্মসূচি। তার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে আজ ১৯ মার্চ রবিবার সন্ধ্যা ৬টায়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে সে আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মাননীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন প্রবীণ শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। আরও থাকবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকী। দেওয়া হবে ‘ছয় দশকের সেরা চলচ্চিত্র সংসদ সম্মাননা’। দেখানো হবে চলচ্চিত্র সংসদকর্মী নুরুল আলম আতিকের ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’।
বছরব্যাপী আয়োজনে আরও থাকবে- চলচ্চিত্র উৎসব, সেমিনার, কর্মশালা, স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ, প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও নৌভ্রমণ। আগামী ৮ থেকে ১৭ জুন হবে চলচ্চিত্র সংসদকর্মীদের নির্মিত চলচ্চিত্রের উৎসব। তার অংশ হিসেবে, দুটি সেমিনারও আয়োজন করা হবে। পরে পৃথক একটি সেমিনার আয়োজন করা হবে বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ওপর। তাতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন, এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও চলচ্চিত্র গবেষক লোটে হোয়েক।
আগামী ১৮ থেকে ২৮ অক্টোবর আয়োজন করা হবে, বাংলাদেশের ৫০ বছরের শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত চলচ্চিত্র উৎসব। তাতে কাহিনিচিত্র, প্রামাণ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রএই তিন বিভাগে সর্বোচ্চ ১০টি করে চলচ্চিত্র বাছাই করা হবে। প্রদান করা হবে ‘বাংলাদেশের ৫০ বছরের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র’ সম্মাননা। অনুষ্ঠিত হবে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে।
পাশাপাশি কর্মশালা আয়োজন করা হবে- ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, রংপুর, খুলনা, কুষ্টিয়া ও রাঙ্গামাটিতে। পরে দেশের সব জেলায় কর্মশালা আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। ফেডারেশনের নেতৃত্বে এই কর্মশালাগুলো আয়োজন করবে স্থানীয় সদস্য চলচ্চিত্র সংসদ।
গত ১৪ মার্চ মঙ্গলবার শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয় ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। উপস্থিত ছিলেন- চলচ্চিত্র সংসদকর্মী ও বরেণ্য নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম, প্রবীণ চলচ্চিত্র সংসদকর্মী ও লেখক কাইজার চৌধুরী, চলচ্চিত্র সংসদকর্মী ও নির্মাতা মসিহউদ্দীন শাকের, ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব মোস্তাফিজ, চলচ্চিত্র সংসদকর্মী ও নির্মাতা ফাখরুল আরেফিন, চলচ্চিত্র সংসদকর্মী কাজী জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন ফেডারেশনের বর্তমান সভাপতি লায়লুন নাহার স্বেমি, সাধারণ সম্পাদক বেলায়াত হোসেন মামুন, যুগ্ম-সম্পাদক রিপন কুমার দাশ, অর্থ সম্পাদক মো. সাদেক হোসেন, দপ্তর সম্পাদক অদ্রি হৃদয়েশ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নাবীল আল জাহান ও কার্যকরী সদস্য রোদেলা নিরুপমা ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে এই আয়োজনের গুরুত্ব বর্ণনা করে তার সাফল্য কামনা করে বক্তব্য রাখেন বিপ্লব মোস্তাফিজ। বলেন, ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের যা কিছু ভালো অর্জন তার সবগুলোর পেছনেই আছে চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের অবদান। দেশের চলচ্চিত্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বাঁকবদল ঘটেছে এই আন্দোলনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে। তাই এই আন্দোলনের ষাট বছরপূর্তি ও ফেডারেশনের পঞ্চাশ বছরপূর্তি দুটোই বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মাইলফলক।’
লেখক : প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক
ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। মুজিব বাহিনীর সদস্য হিসেবে, মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান সভাপতিমন্ডলীর সদস্য। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন মুখোমুখি হয়েছিলেন দেশ রূপান্তরের। খোলামেলা কথা বলেছেন, সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন এবং রোগী-চিকিৎসক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন, সহকারী সম্পাদক- তাপস রায়হান।
দেশ রূপান্তর : আপনি তো রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছেন, ষাটের দশকেই?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : হ্যাঁ। আমি তখন জগন্নাথ কলেজের ছাত্র। ১৯৬৮ সালের কথা। তোফায়েল ভাই যখন ’৬৯ সালে ডাকসুর ভিপি, তখন আমি জগন্নাথ কলেজে ছাত্রলীগের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। তোফায়েল ভাইয়ের হাতেই আমার রাজনীতির হাতেখড়ি। কিন্তু এর নেপথ্য নায়ক ছিলেন শেখ কামাল ভাই।
সম্ভবত ১৯৬৫-৬৬ সালের দিকে, এক খেলার মাঠে পরিচয়। আমি তখন সেন্ট গ্রেগরী স্কুলের ছাত্র। এটা পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে। আর কামাল ভাই পড়তেন, শাহীন স্কুলে। ওটা হচ্ছে, নতুন ঢাকা। এইদিকে আমরা বাস্কেটবল ফাইনালে উঠে তাদের মুখোমুখি হতাম। কারণ কামাল ভাইরাও ঐদিকে ফাইনালে উঠতেন।
সেই খেলার মাঠ থেকেই কামাল ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয়। মূলত তার হাত ধরেই রাজনৈতিক অঙ্গনে পা রাখা। দেখতে দেখতে এলো একাত্তর। তখন আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র। মাত্র ১০/১২ দিন কাজ করেছি। এরপর আমি যুদ্ধে চলে যাই। ট্রেনিং নেই বিএলএফে। যেটা ‘মুজিব বাহিনী’ নামে পরিচিত।
দেশ রূপান্তর : সেখানে আপনাদের নেতৃত্বে কে কে ছিলেন?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : সেখানে আমাদের নেতা ছিলেন- মরহুম ফজলুল হক মণি, মরহুম আব্দুর রাজ্জাক, সিরাজুল আলম খান আর তোফায়েল আহমেদ। তাদের নির্দেশমতো সবাই কাজ করতেন। সেখানে গিয়ে দেখি কি, বাংলায় তাঁবুতে লেখা ‘ মুক্তি ক্যাম্প’। আমার মনে অন্যরকম একটা অনুভূতি হলো। এলাম ভারতে, এখানে বাংলা ভাষা কোত্থেকে এলো? উত্তর প্রদেশে সবাই তো হিন্দি ভাষায় কথা বলার কথা।
এখানে বাংলা কেন? এরপর আমি এ বিষয়ে, ৪ নেতাকেই জিজ্ঞাসা করলাম।
তো, একজন নেতা বললেন এখানেই তো জাতির পিতার ক্যারিশমা। আমাদের ট্রেনিং দেওয়া, পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, অস্ত্র দেওয়া সবই কিন্তু বঙ্গবন্ধু আগেই ঠিক করে রেখেছিলেন।
সেই হিসাবেই কিন্তু আমরা ট্রেনিং নিয়েছি। সব ধরনের ট্রেনিংই নিয়েছি। আমি প্রথম ব্যাচে ট্রেনিং নিয়েছি। আমার সঙ্গে ছিলেন ঢাকার খসরু-মন্টু। এই মন্টু ভাইয়ের আন্ডারেই আমি ঢাকায় ইন করেছি।
দেশ রূপান্তর : ১৬ ডিসেম্বর, বিজয়ের দিনে আপনার একটা কষ্ট রয়েছে। বলবেন একটু বিষয়টা?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : দেশে আসার পর, মন্টু ভাইয়ের সঙ্গেই আমি থাকতাম। পুরান ঢাকায় তিনি বেশ জনপ্রিয়। তিনি রাতে থাকতেন নদীতে, নৌকার মধ্যে। প্রায় সময়ই, রাতে ঘুমাতাম নৌকায়। দুঃখটা হলো, ১৬ ডিসেম্বর ছিলাম কেরানীগঞ্জে। সন্ধ্যার পরপর সবাই নৌকায় হৈহৈ করে আসছিলাম। সামনের নৌকায় ছিল কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। ওরা অনেক আর্মস আর গোলাবারুদ নিয়ে আসছিল। হঠাৎ করে, নৌকাটা ডুবে যায়। কোমর আর হাতে ছিল ভারী অস্ত্র। ওদের আর বাঁচানো গেল না। তখন মনটা ভীষণ খারাপ হলো।
দেশ রূপান্তর : আপনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে ধাপে ধাপে, বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। এর বাইরে আবার বিএমএর সভাপতি। দুটো বিষয়কে সমন্বয় করতে সমস্যা হয় না?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : আমি তো স্বাধীনতার আগেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সদস্য। সেই ১৯৬৭ সালেই। এরপর শহরের দায়িত্বে। পরে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হলাম। এরপর হলাম যুগ্ম সম্পাদক। তারপর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। ১৯৭৮ সালে কাদের ভাই সভাপতি, আমি সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। ১৯৮১ সালে হলাম ছাত্রলীগের সভাপতি। পাশাপাপশি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের ৩ বার নির্বাচিত মহাসচিব।
দেশ রূপান্তর : আবার ১৯৯৩ সালে আপনার হাতেই তৈরি হলো, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)। এর কোনো বাস্তব ভিত্তি ছিল?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : অবশ্যই। না হলে তো এই উদ্যোগ নিতাম না। বাস্তবতার কারণেই, এই উদ্যোগ নিতে হয়েছে।
দেশ রূপান্তর : বাস্তবতাটা কি চিকিৎসা সংক্রান্ত না রাজনৈতিক?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : সবক্ষেত্রেই আদর্শের একটা ছাপ থাকে। আমি যাই করি না কেন, আমার চিন্তাই কিন্তু আমাকে ধাবিত করবে। যখন আমরা দেখলাম, বাঙালি-বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ আদর্শে বিশ্বাসী সব যোগ্য চিকিৎসককে ঢাকার বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কাউকে পার্বত্য চট্টগ্রামে আবার কাউকে ভুরুঙ্গামারী। এটা তো মেনে নেওয়া যায় না। তখন আমি নেত্রীর সঙ্গে কথা বললাম। নেত্রী বললেন- পারবি তো? আমি বললাম পারব, দোয়া কইরেন।
দেশ রূপান্তর : একটু বর্তমানের দিকে দৃষ্টি দিই। খুলনা সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে যা হলো, সেখানে বিএমএর ভূমিকা কী ছিল? কেন্দ্রীয় বিএমএ নেতৃবৃন্দ এ বিষয়ে কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : আমরা কোনোভাবেই এটা চাইনি। প্রথমেই তাদের আমরা বলেছি, কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত না নেওয়ার জন্য। আমরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। যেহেতু অভিযুক্ত পুলিশের এএসআইকে ক্লোজ করা হয়েছে, এরপর ধর্মঘটের কোনো যুক্তি নেই।
দেশ রূপান্তর : কিন্তু আপনাদের কথামতো তো আন্দোলন চলেনি?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : এ বিষয়ে কেউ উসকানি দিল কি না, সেটা দেখা হচ্ছে।
দেশ রূপান্তর : আমরা জানি, চিকিৎসক জনগণের সেবক। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায়, কিছু হলেই বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসকরা ধর্মঘটের ডাক দেন। বন্ধ করে দেন চিকিৎসা। দাবি আদায়ের জন্য, আন্দোলনের ভিন্ন কোনো পথ নেই?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : এ বিষয়ে বারবার চিকিৎসকদের সতর্ক করা হচ্ছে। কোনোভাবেই যেন চিকিৎসা ধর্মঘটে তারা না যায়। আমরা তো ডাক্তার হিসেবে ঢুকেছি, জনগণের সেবা করার জন্যই। আমাদের দাবি-দাওয়া থাকতেই পারে। আন্দোলনের তো অনেক পথ আছে। আমরা সেই পথ অবলম্বন করব।
দেশ রূপান্তর : কিন্তু আপনাদের কথা কি সবাই মানছেন? চিকিৎসকরা তো হুটহাট ধর্মঘটে যান?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। এসব বিষয় যাতে আর না হতে পারে, তার জন্য মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে একটা অনুরোধ করেছি। এটা অনেকবার বলেছি। জনগণ ও ডাক্তারদের জন্য একটা ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন’ করতে। সেই আইনে যদি কোনো শাস্তি থাকে, অবশ্যই সেটা হবে।
দেশ রূপান্তর : ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন’ কেন এখনো হচ্ছে না?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : তা তো বলতে পারব না। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।
দেশ রূপান্তর : আইন হলে, আপনাদের সমর্থন থাকবে?
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন : শতভাগ। এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। আমি মন্ত্রীকে ব্যক্তিগতভাবে বলেছি, আগামী সংসদে এটা পাস করিয়ে দেন। আইন হলে আমরাও বেঁচে যাই। ইতিমধ্যে এটা প্রস্তুত করা হয়েছে। এতে চিকিৎসকরাও ভালো থাকবেন।
জনগণের কল্যাণে যাতে ডাক্তাররা কাজ করতে পারেন, সেই সুযোগও আইনে থাকবে। এটা রোগী-চিকিৎসক, উভয় পক্ষের জন্যই মঙ্গলকর। এটা খুব তাড়াতাড়িই হয়ে যাবে।
আমাদের সমাজে অসহনশীলতা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। কিছু লোক কোনোভাবেই যেন বুঝতেই চাইছে না যে, তারা সচেতনভাবে কিংবা অচেতনভাবে কীভাবে সমাজে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিচ্ছে। আবার অনেকে বুঝেও না বোঝার ভান করছে, অন্য ধর্ম ও সম্প্রদায়ের প্রতি সুকৌশলে ঘৃণা ছড়িয়ে দিচ্ছে। কেউ কেউ এতেই ক্ষান্ত হচ্ছে না, যুক্ত হয়ে যায় উন্মত্ত সহিংসতায়। এতে যেমন নিজেরা ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছে, অন্যেরও বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে। আর এভাবে ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকলে জাতীয় জীবনে নৈরাজ্য যে খুব বেশি দূরে না সেই আশঙ্কা বারে বারেই উঁকি দেয়।
ধর্মের নামে, বিশ্বাসের নামে, সম্প্রদায়ের নামে হিংসা, বিদ্বেষ, ঘৃণা ও সহিংসতা ছড়ানো যেন পাপের কিছুই নেই, এমন দৃষ্টিভঙ্গির কোনো অভাব নেই। আবার আলোচনায় যখন গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, তখন এর উদ্দেশ্যমূলক ব্যবহার তো খুবই প্রচলিত।
অনেকের কাছেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ তা নিজের ও নিজ সম্প্রদায়ের মতকে যৌক্তিক বা অযৌক্তিক উপায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রশ্ন আসে, কিন্তু ভিন্নমত ও ভিন্নপথের জনগোষ্ঠী যখন তাদের মত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে চায় তখন তাকে দমন করার জন্য নানা ধরনের উন্মাদনা তৈরি করা হয় মূলত সংখ্যাগরিষ্ঠের শক্তি ব্যবহার করে।
অনেকেই আছে, যারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে উগ্রতা, বিভক্তি ও ঘৃণা ছড়িয়ে দিচ্ছে নানা মাধ্যম ও উপায়ে। আমাদের দেশে বাঙালি পরিচয়ের বাইরে ধর্মীয় ও সম্প্রদায়ের বিভাজনের ভিত্তিতে একের পর এক নতুন পরিচয় তৈরির চেষ্টা করেন। আবার নিজেদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়ার জন্য অন্যের উগ্রবাদী আচরণের দোহাই দেওয়া হয়। অন্যের অন্যায় কোনোভাবেই নিজের অন্যায়কে বৈধতা দেয় না।
এরই জেরে গত কয়েক বছর ধরেই দুর্গাপূজার সময় হলেই যেন এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করে যে, কখন কোন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী আবার নানা কৌশলে পূজামণ্ডপে বা ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা চালাবে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করবে।
বিভিন্ন কৌশলে ও অপযুক্তির আলোকে নানা মাধ্যমে ঘৃণা ছড়ানো অব্যাহত রাখবে। এরা আবার সংগঠিত এবং ক্ষণে ক্ষণে নানা ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইস্যু নিয়ে প্রতিনিয়ত প্রকাশ্য পেশিশক্তি প্রদর্শনের হুমকি দেয়। সবকিছুতেই নিজেদের পছন্দ ও ইচ্ছা অনুযায়ী হওয়াই যেন এদের অন্যতম উদ্দেশ্য।
এ বছরই কিছুদিন আগে ঠাকুরগাঁওয়ে একযোগে বিভিন্ন মন্দিরে হামলা করা হয়েছে। এবার আবার পঞ্চগড়ে কাদিয়ানিদের সমাবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং এ সম্পর্কিত সহিংসতায় দুজন নিহত হয়েছে। সংবাদপত্রের তথ্যমতে, সেখানে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাড়ি চিহ্নিত করে আক্রমণ চালানো হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা একের পর এক ঘটেই চলছে নিয়মিত বিরতিতে।
ভারতীয় উপমহাদেশে ধর্মের বিভাজন ও উপনিবেশিক শক্তির কূটচাল দেশভাগের পটভূমি তৈরি করে গত শতাব্দীর মাঝামাঝি। পারস্পরিক অবিশ্বাস ও বিভাজন সেই দেশভাগকেই চূড়ান্ত পরিণতি দিয়েছে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরে বেশির ভাগ বাঙালির মধ্যে পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়ার জন্য যে সামাজিক ও রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়, স্বাধীনতার পরে নানা চক্রান্তে তা ধ্বংস হয়ে যেতেও বেশি সময় লাগেনি। ইতিমধ্যে যারা সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো তৈরিতে পাকিস্তান মডেলকে আদর্শ মনে করেন তারা যথেষ্ট প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন।
যদিও ধর্মের ওপর ভিত্তি করে সমাজ পরিচালনার পাকিস্তান মডেল ইতিমধ্যে ব্যর্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক এলিটরা সব সময় রিলিজিয়ার্স কার্ড প্লে করে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকতে চাইতেন।
আর এর ফলাফল পাকিস্তান এখন প্রায় নিঃস্ব একটি দেশ। কী অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা, কী সামাজিক অস্থিরতা সব ক্ষেত্রেই পাকিস্তান এখন চূড়ান্ত বিপর্যয়ের মুখে।
দেশভাগের পর পাকিস্তানেও এভাবে ভিন্নমতাবলম্বী সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীর ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছে এবং সময়ে সময়ে এখনো চালছে। এ ধরনের ধারাবাহিক আক্রমণের প্রবণতা শুধু পাকিস্তানের আর্থ-সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকেই নষ্ট করেনি, অধিকন্তু পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের ভিত্তিকে দুর্বল করে দিয়েছে।
রাষ্ট্রের গতি-প্রকৃতি যদি কতিপয় গোষ্ঠীর ইচ্ছা-অনিচ্ছায় পরিচালিত হয় তাহলে সে রাষ্ট্রের বৈচিত্র্যময়তা থাকবে না, সৃজনশীলতা নষ্ট হবে এবং ভিত্তি দুর্বল হবে সেটাই স্বাভাবিক।
বস্তুতপক্ষে আজ যে অসহিষ্ণু বাংলাদেশ দেখতে পাচ্ছি তা একটি স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের চেষ্টার ফসল। আমাদের জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ এখন আইডেন্টিটি পলিটিক্সে যুক্ত হয়ে সমাজকে বিভক্তির চূড়ান্ত সীমায় নিয়ে যাচ্ছে। অন্যের অজান্তেই তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার তোয়াক্কা না করে তার ওপর আইডেন্টিটি পলিটিক্স চাপিয়ে দিচ্ছে। আর এর মাধ্যমেই ধীরে ধীরে সহিংসতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে এবং প্রায় নির্বিঘেœ একের পর এক সহিংসতা, লুটপাট ও হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে।
এই প্রক্রিয়ায় সমাজে ইতিমধ্যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশকে আরও বেশি প্রান্তিক করে দেওয়া হচ্ছে। তবে এই ধরনের সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ধর্মের মূল চেতনা কতটুকু রক্ষা করা গেল তা নিয়ে প্রশ্ন করাই যায়। কেউ ভিন্ন বিশ্বাসের অনুগামী হলেই তাকে দমন করতে হবে এই ধারণার কোনো যুক্তি নেই।
মূলত বিভাজন একটি সংস্কৃতি, এই সংস্কৃতির মূল বিষয় হচ্ছে ক্রমাগত আইডেন্টিটি পলিটিক্সের মাধ্যমে নতুন নতুন বিভাজন তৈরি করা, যেটা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে শুধু ক্ষমতাহীনই করছে না, সামাজিক বন্ধনকেও হালকা করে দেয়।
অন্যদিকে বাংলাদেশে অতিসম্প্রতি ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণাকে নানাভাবে যেমন ইস্টিগমাটাইজড করা হয়, পাশাপাশি সমাজে ধর্মনিরপেক্ষতাকে একটি কাল্পনিক শত্রু হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতিপক্ষ হিসেবে তুলে ধরা হয়। গত কয়েক দশক ধরেই এই শত্রুভাবাপন্নতা ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলছে। কিছু মানুষ এর জন্য যারপরনাই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এর মাধ্যমে লাভবান হচ্ছে কে?
এর মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর কি কোনো লাভ হচ্ছে? নাকি অল্প কিছু মানুষ এর মাধ্যমে লাভবান হচ্ছে? আইডেন্টিটি পলিটিক্সের মাধ্যমে আপাতদৃষ্টিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী মনস্তাত্ত্বিকভাবে লাভবান মনে করলেও, আদতে এই বিভক্তি এখানেই থামছে না। যার কিছু কিছু দৃষ্টান্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি, যেখানে শুদ্ধতার ভিন্ন ভিন্ন মাপকাঠির ভিত্তিতে নতুন নতুন বিভক্ত তৈরি হচ্ছে।
আমাদের দেশে সামনে নির্বাচন আসছে। এ সময়ে ধর্ম, বিশ্বাস ও সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে ক্ষমতা প্রদর্শনের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ফলে এসবের ভিত্তিতে সহিংসতার দৃষ্টান্তও বেড়ে যেতে পারে এবং একই সঙ্গে সমাজে বিভক্তি আরও বেড়ে যেতে পারে। তবে এ ধরনের প্রবণতাকে মোকাবিলা করার জন্য যথেষ্ট উদ্যোগ দেখা যায় না।
সরকার ও সামাজিক শক্তিগুলোও এ ক্ষেত্রে কেন যেন প্রয়োজনীয় আগ্রহ বোধ করে না। যদিও এই ধ্বংসাত্মক প্রবণতা থেকে রক্ষা পেতে অপেক্ষা করার মতো সময় আছে কিনা তা এখন মৌলিক প্রশ্ন। আজ আমাদের দেশে গণতন্ত্রের যে ভঙ্গুরতা দেখতে পাই তার পেছনে অন্যতম দায়ী এ ধরনের ধ্বংসাত্মক প্রবণতা।
একদিকে গণতন্ত্রের জন্য কান্না এবং অন্যদিকে ‘সংখ্যালঘুদের’ ওপর আক্রমণ, একটি আরেকটির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এখানেই মনোযোগ দেওয়ার জায়গা আমরা উন্নত গণতন্ত্রের চর্চা তখনই করতে পারব, যখন প্রত্যেকটা মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতার চর্চাকে সম্মান জানাতে পারব। আর সেটাই হোক ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের প্রত্যাশা।
লেখক: উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
অপরাধের মাত্রা এবং ক্ষমতা কোন পর্যায়ে পৌঁছালে, একজন অপরাধী পুলিশ খুন করেও নির্বিঘেœ দেশ থেকে পালাতে পারেন? শুধু তাই নয়। তিনি ভারতে গিয়ে নাম পরিবর্তন করেছেন। সেখান থেকে দুবাই। অল্প সময়ের মধ্যে গড়ে তুলেছেন টাকার পাহাড়। কোটি কোটি টাকা খরচ করে উদ্বোধন করছেন সোনার দোকান- আরাভ জুয়েলার্স। সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই অতিথি হয়ে গেছেন জনপ্রিয় ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান। তার সঙ্গে আরও অনেক মডেল, সংগীতশিল্পীও রয়েছেন। যে কারণে, বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে, একজন খুনি-চোরাচালানির এত অর্থ-বিত্তের নেপথ্যে কোনো হস্তীসদৃশ, ক্ষমতাশালীর যোগসাজশ রয়েছে কি-না? এমন ঘটনায়, এতদিন পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন নড়েচড়ে বসলএটাই প্রশ্ন! কারণ, ২০১৮ সালে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খানকে খুন করা হয়েছে। এতদিন পর কেন এ বিষয়ে সব পক্ষ নড়েচড়ে বসল! এর মানে হচ্ছে, অপ্রকাশিত অসংখ্য অনৈতিক কাজ এবং অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে যা নিয়ে কোনো হইচই নেই!
গতকাল দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায় প্রকাশিত মডেল প্রভাবশালীরাও আরাভ ‘কানেকশনে’ সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়- আরাভের সোনার কারবারে জড়িয়ে পড়ার পেছনে আলোচিত এক মডেল ও চলচ্চিত্র প্রযোজক আছেন, যারা ২০২১ সালে মাদক কারবারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাদের যোগসাজশে সোনার কারবারে এসে দুবাইয়েও গড়ে তুলেছেন সোনার ব্যবসা। এ ছাড়া মামলা থেকে রেহাই পেতে নিজের নাম পরিবর্তন করে ছদ্মনাম ব্যবহার করেন, এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তারও আশকারা পেয়েছেন তিনি। পুলিশ, ব্যবসায়ী ও মডেলরা দুবাইয়ে গেলে তার সান্নিধ্য পান। সোনার দোকান উদ্বোধন হওয়ার পর ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান দেশে এলেও অন্য অতিথিরা রয়ে গেছেন দুবাইয়ে। ইতিমধ্যে আরাভের সহযোগীদের একটি তালিকা তৈরি করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।
পুলিশ সূত্র জানায়, অপরাধজগতের শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও জয় ছিল আরাভের অন্যতম সহযোগী। তাদের মাধ্যমে গুলশান ও বনানী এলাকার নামি মডেলদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পাশাপাশি দুই শীর্ষ ব্যবসায়ীর সঙ্গেও সখ্য গড়ে ওঠে। রিয়েল এস্টেট ব্যবসার পাশাপাশি সোনা চোরাচালানেও জড়িয়ে পড়েন। দুবাইয়ে গড়ে তোলেন আলিশান সোনার দোকান। ওই দোকানের ব্যবসায়িক পার্টনার পুলিশের দুই সাবেক কর্মকর্তা ও দুজন বড় ব্যবসায়ী। ওই ব্যবসায়ীরা গুলশান ও বনানী এলাকায় পরিচিত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গুলশান এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা হত্যার সঙ্গে আরাভসহ বেশ কয়েকজন রাঘববোয়াল জড়িত। আলোচিত সেই মডেল ও চলচ্চিত্র প্রযোজক ওই হত্যাকা-ের বিষয়ে অনেক কিছুই জানেন। তারা আরাভের সঙ্গে দেখা করতে নিয়মিত দুবাই যান। ওই চলচ্চিত্র প্রযোজক ও মডেল বর্তমানে দুবাই অবস্থান করছেন বলে তারা জানেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আরাভ ঠা-া মাথার অপরাধী। সোনা চোরাচালান করেই কয়েকশ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। দুবাইয়ে তার সোনার দোকান উদ্বোধন করতে সাকিবের যাওয়া ঠিক হয়নি। অর্থের প্রয়োজন সবারই আছে। তবে সাকিবের মতো তারকার টাকার পেছনে ছোটা খুবই দুঃখজনক। সাকিব ও হিরো আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
আরাভের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা এবং তার উপার্জিত অর্থের বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত দরকার। একইসঙ্গে বলা প্রয়োজন, তিনি যেহেতু ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে দুবাই গেছেন, সেহেতু নাগরিকত্বের বিষয়েও একটি জটিলতা দেখা দিতে পারে। ইন্টারপোলের সহযোগিতায়, অপরাধীকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসাই প্রধান কর্তব্য। সাকিব আল হাসানকে নিয়ে মাতামাতি করে, অপরাধীকে আড়াল করার অপচেষ্টা যেন বিফলে না যায়। সরকারের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে শান্তিপ্রিয় মানুষের এটুকুই চাওয়া।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
অপারেশন ছাড়াই সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় আব্দুল মোতালেব হোসেন (৩৫) নামের এক মানসিক রোগীর পেট থেকে ১৫টি কলম বের করেছেন চিকিৎসক।
এ কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। তাদের এই সাফল্যে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে নেট দুনিয়ায়।
এ বিষয়ে আব্দুল মোতালেবের মা লাইলী খাতুন বলেন, তার ছেলে মোতালেব খুব ভাল ছাত্র ছিল। ২টি লেটার মার্ক নিয়ে এসএসসি পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এরপর খারাপ সঙ্গদোষে সে আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর সময় কুড়িয়ে পাওয়া কলমগুলি খাদ্য মনে করে খেয়ে ফেলে। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। গত এক বছর ধরে তার শরীরে জ্বর ও পেটে ব্যথা শুরু হয়। অনেক চিকিৎসার পরও তা ভালো হচ্ছিল না। অবশেষে গত ১৬ মে তাকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। এখানে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার অসুখের কারণ ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসকরা তার পেটের ভিতর থেকে বিনা অপারেশনে কলমগুলো বের করে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মোতালেব হোসেন প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও পেটে কি সমস্যা সেটা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। ফলে রোগীটিকে আমার কাছে রেফার্ড করেন। এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে তার পেটের ভেতর ১৫টি কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই। এটা কীভাবে সম্ভব। পরে এন্ডোস্কপির মাধ্যমেই অপারেশন ছাড়াই আমরা কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নেই। তিনি আরও বলেন, কাজটি আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। কলমগুলো বের করতে আমাদের প্রথমে মাথায় চিন্তা ছিল যেন, কলমগুলোর কারণে কোনোভাবেই শ্বাসনালিতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের একটা চিন্তাও মাথায় ছিল। অতঃপর প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা কলমগুলো বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এন্ডোস্কপি করা ব্যক্তি মানসিক অসুস্থ হওয়ায় তার কলম খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এভাবে খেতে খেতে সে অনেক কলম খেয়ে ফেলে। কলমগুলো তার পেটের মধ্যে জমা হয়েছিল। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তার পেটের ভিতর ১৫টি কলম থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এবং অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেটের ভেতর থেকে একে একে ১৫টি আস্ত কলম বের করে আনি। বর্তমানে রোগীটি সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ আছেন।
তিনি আরও বলেন, এন্ডোস্কপির মাধ্যমে মানুষের পেট থেকে কলম বের করার মতো ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তাও আবার একটি-দু‘টি নয় ১৫টি কলম। এর আগে ঢাকা মেডিকেলে এক ব্যক্তির পেট থেকে এন্ডোসকপির মাধ্যমে একটি মোবাইল বের করেছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও এন্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষ ডাক্তার দ্বারা অপারেশন ছাড়াই শুধু এন্ডোস্কপির মাধ্যমে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে ১৫টি কলম বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি। শুধু এটাই নয়, আমরা বিনা অপারেশনে পেটের পাথর, কিডনিতে পাথর থেকে শুরু করে অনেক কিছুই অপারেশন ছাড়াই সেগুলো অপসারণের কাজ করে যাচ্ছি।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।