
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ড. সাদিক আহমেদ বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি নিয়ে গবেষণাধর্মী একটা বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেছেন। গুরুত্বপূর্ণভাবে, তিনি নির্বাচিত কিছু দেশের যারা মোটামুটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে বলা চলে, প্রচেষ্টার আলোকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে, বাংলাদেশের মুদ্রানীতির সীমাবদ্ধতা নিয়েও তার প্রাজ্ঞ প্রতিক্রিয়া পেশ করেছেন। তার এই পর্যবেক্ষণ নীতিনির্ধারক এমনকি সাধারণ পাঠকের নজরে থাকা উচিত বলে মনে করি।
২০২২ সালে বিশ্বে চলমান ‘মারমুখী মূল্যস্ফীতির’ কথা আমরা সবাই জানি। সম্ভবত ২০০৮ সালের পর এমন ঝরোগতিতে বড় অভিঘাত সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে নেই। চলমান মূল্যস্ফীতি কতটা মারমুখী, তা উপলব্ধি করার জন্য কিছু পরিসংখ্যান দিয়েছেন সাদিক আহমেদ যা উল্লেখ না করলেই নয়।
একমাত্র আমেরিকায় মূল্যস্ফীতির হার ২০২১ সালের ১.৪ শতাংশ থেকে ২০২২ সালের জুনে ৯.১ শতাংশে পৌঁছায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নে সেই হার এক বছরের মধ্যে ১.৯ শতাংশ থেকে ১০.৬ শতাংশ লাফিয়ে ওঠে। পার্শ্ববর্তী দেশ থাইল্যান্ডে ২০২২ সালের প্রথম সাত মাসে ৩.২ থেকে ৭.৯ শতাংশ, ভারতে এক বছরে দ্বিগুণ, বাংলাদেশে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ৫.৯ শতাংশ থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৯.৫ শতাংশে অবস্থান নেয় মূল্যস্ফীতির হার।
বিশেষত দেশগুলোর বিদ্যমান পরিবেশ ও নীতি কাঠামোর ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন মাসে ভিন্ন ভিন্ন গতিতে মূল্যস্ফীতি চূড়ায় ওঠা প্রত্যক্ষ করে। কিন্তু আমেরিকা থেকে বাংলাদেশ সব জায়গায় ভোগান্তি মোটামুটি একইরকম। তবে জনগণের অসন্তুষ্টির পরিপ্রেক্ষিতে মূল্যস্ফীতির মুখে নীতিগত প্রতিক্রিয়া অধিকতর দ্রুত এবং দৃঢ় ছিল ঐ সমস্ত দেশে যারা মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে সক্ষম হয়।
মূল্যস্ফীতি লাফিয়ে ওঠার মূলে আছে দুটো কারণ : (ক) কভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের যৌথ প্রভাবের জন্য জোগানে ঘাটতি ঘটে এবং (খ) আমেরিকা ও ইউরোপে চাহিদা চাঙ্গা করার লক্ষ্যে প্রদত্ত কভিডবিরোধী প্রণোদনা প্যাকেজ প্রবর্তন।
যদিও মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী তীক্ষèতার উৎস ছিল জোগানের ঘাটতি এবং সেইহেতু পণ্যের দামের উল্লম্ফন। বিশেষত জ্বালানি দ্রব্য, তারপর নীতিনির্ধারকরা চটজলদি অনুভাবন করতে পেরেছিলেন যে, সমন্বিত প্রচেষ্টার অভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা দুষ্কর।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মুদ্রা কর্র্তৃপক্ষ খুব দ্রুত সুদের হার বাড়িয়ে দিয়ে ঋণের প্রবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রেখে আগ্রাসী চাহিদা ব্যবস্থাপনা নীতি গ্রহণ করলেন (কত আগ্রাসী তার প্রমাণ সুদের হার ত্বরান্বিত হওয়ার কারণে আমেরিকার দুটো ব্যাংকে ধস নামা)। এই পদক্ষেপ পদে পদে এবং চাহিদার প্রকৃতি সংক্রান্ত তথ্যের সঙ্গে সমন্বয় করে করা হয়েছে বলে ধারণা করা যায়। থাইল্যান্ড, ভারত এবং ভিয়েতনামও মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে সুদের হার বৃদ্ধির মাধ্যমে চাহিদা সংকোচন নীতি আলিঙ্গন করেছে।
একমাত্র বাংলাদেশ ব্যতিক্রম যেখানে চাহিদা সংকোচন নীতি গ্রহণ করেইনি বরং চাহিদার চাপে ইন্ধন জুগিয়ে চলেছে ব্যক্তি খাতে ঋণ সম্প্রসারণ এবং রাজস্ব ঘাটতি বৃদ্ধি। যে দেশে কর-জিডিপির অনুপাত দশ শতাংশেরও কম সেই দেশে ব্যাংক থেকে টাকা ধার নেওয়া ছাড়া অর্থায়নের উৎস কোথায়?
বাংলাদেশের মুদ্রানীতি ব্যবস্থাপনার একটা উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য বহু বিতর্কিত ‘ছয়/নয়’ সুদের নীতির অব্যাহত উপস্থিতি। যেখানে গেল সাত মাসের গড় ৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতির বিপরীতে ল্যান্ডিং রেট ৯ শতাংশ। এই শূন্য অথবা ঋণাত্মক সুদের হার ব্যক্তি ঋণের প্রসার ঘটিয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। অপরদিকে, বর্ধিষ্ণু রাজস্ব ঘাটতি সরকারকে ব্যাংক থেকে গেল ১২ মাসে ২৮ শতাংশ হারে ঋণ নিতে বাধ্য করছে।
প্রশ্ন হলো, সুদের হার বৃদ্ধির মাধ্যমে চাহিদা সংকোচন নীতি কতটা ফলদায়ক অন্তত বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতার আলোকে? দেখা গেছে, মূল্যস্ফীতি হ্রাসে বিভিন্ন পদক্ষেপ থেকে সবচেয়ে বেশি কমেছে থাইল্যান্ডে (৫১ শতাংশ) তারপর আমেরিকা ৩৫ শতাংশ, ইইউ-তে ২০ শতাংশ, ভারতে আট শতাংশ। ভিয়েতনামে মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে বেশি নীতিগত গুরুত্ব পাওয়ার কারণে চাহিদা ব্যবস্থাপনায় সাফল্যস্বরূপ (যেমন সুদের হার বৃদ্ধি) বিশ্বে উঁচু মূল্যস্ফীতির মধ্যেও দেশটি ৫ শতাংশের নিচে মূল্যস্ফীতি ধরে রাখতে পেরেছে।
মূল্যস্ফীতি ব্যবস্থাপনায় এই ভালো ফলাফলের বিপরীতে বাংলাদেশের কৃতিত্ব যে তেমন উজ্জ্বল নয়, তা বলা বোধ করি বাহুল্য নয়। আগস্ট ২০২২ থেকে জানুয়ারি ২০২৩ মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে।
বস্তুত সরকারি পরিসংখ্যান তাই বলছে। তাও বৈশ্বিক স্তরে খাদ্যসহ পণ্যের দাম পড়ে যাওয়ার কারণে। মোটকথা, ২০২২ সালের আগস্ট মাসের মূল্যস্ফীতি চূড়া থেকে মাত্র ৭ শতাংশ নেমেছে সংকল্পবদ্ধভাবে স্থিতিশীল রাখার প্রাণান্ত প্রয়াস হিসেবে।
মূল্যস্ফীতি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা সহজেই অনুমেয় এবং কিছু দীক্ষা আমাদের চোখের সামনে উপস্থিত। প্রথমত, এই ধারণাই ভুল যে যেহেতু মূল্যস্ফীতির উৎপত্তি বাইরে থেকে সুতরাং কিছুই করা যাবে না এবং তা কিছুটা আত্মপ্রবঞ্চনাপূর্ণ। মূল্যস্ফীতিকে শক্তিশালী চাহিদা ব্যবস্থাপনা নীতির আওতায় পোষ মানাতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, সুদের হার বাড়িয়ে ব্যক্তি খাতের ঋণের প্রবাহ প্রয়োজন মাফিক রাখা এবং রাজস্ব ঘাটতি সংযত রাখা।
গত আট মাস ধরে চলমান মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশ পৌঁছে কঠোর অভিঘাত হানছে দরিদ্র, নিম্ন আয় এবং মধ্যম আয়ের মানুষগুলোর ওপর এবং তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে তারা কী করছেন তাও জানা। পুষ্টির অভাব, শিক্ষা- স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হ্রাস, মানসিক অস্থিরতা ইত্যাদি। অতএব, কালবিলম্ব না করে অচিরেই এর মোকাবিলা করতে হবে। বিশেষত রাজনৈতিক বিবেচনাপ্রসূত উপদেশ হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এটা করতেই হবে।
মূল্যস্ফীতি নিজে নিজে তো যাবে না। বরং তা অনমনীয় হয়ে উঠতে পারে যদি ঋণ বৃদ্ধি আর ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে ঘাটতি মেটাতে হয়। ঠিক এই মুহূর্তে সব দেশে মূল্যস্ফীতি ব্যবস্থাপনা হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব চেয়ে বড় অগ্রাধিকার। মূল্যস্ফীতি ব্যবস্থাপনাকে বি-রাজনীতিকরণের লক্ষ্যে অনেক উন্নত দেশে স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক রয়েছে যারা সুদের হার নীতির মাধ্যমে ঋণের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে পরিচিত ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’ তেমন স্বাধীনতা ভোগ করে বলে বেয়াকুফও বিশ্বাস করে না। তারপরও বলতে হয় যে- (ক) বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত হবে জরুরি ভিত্তিতে ছয় /নয় সীমা তুলে দিয়ে নমনীয় সুদের হারে ঋণপ্রবাহ ঠিক রাখা, (খ) সুদের হারভিত্তিক মুদ্রানীতি ব্যবস্থাপনাকে সহজতর করার জন্য টি-বিলস বাজার উন্নয়ন করা এবং (গ) সরকারের উচিত হবে রাজস্ব ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে রেখে বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল্যস্ফীতি কৌশলকে সাহায্য করা, রাজস্ব ঘাটতি হ্রাসে কম সুদে বিদেশি ঋণ গ্রহণ এবং বড় বড় পুঁজি-নিবিড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা।
পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেক দেশে করোনার কারণে কৃত্রিম চাহিদা সংকোচন লক্ষ করা গেছে। ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল পড়ন্ত। কিন্তু যেই করোনার করাল গ্রাস থেকে ভোক্তা এবং বিনিয়োগকারী অব্যাহতি পেল, অমনি বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো আছড়ে পড়ল বাজারে। এমনিতে থাকা অপেক্ষাকৃত কম জোগান তার ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চাহিদা-জোগান ব্যবধান বাড়িয়ে দিয়ে মূল্যস্ফীতির আগুনে ঘি ঢালছে।
সুতরাং, বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি একদিকে ডিমান্ড পুল অন্যদিকে কস্ট পুস। অন্তত সুদের হার বৃদ্ধি করে চাহিদা সংকোচন নীতি গ্রহণ করতে পারলে আপাতত বাঁচোয়া।
ব্যবসায়ী কিংবা বিনিয়োগকারীদের ভাষ্য অন্যরকম। সুদের হার বাড়লে, ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ কমবে। যদি প্রশ্ন করা হয় যে, সুদের হার জোর করে নিচে রাখার ফলে গেল ক’বছর বিনিয়োগ বৃদ্ধি কতটুকু হয়েছে, এর উত্তর নিশ্চয় উল্লসিত হওয়ার মতো হবে না। আসলে, ‘বিনিয়োগ’ অনেক উপাদানের ওপর নির্ভর করে। এর মধ্যে সুদের হার অন্যতম, এমনকি প্রধান নিয়ামক।
লেখক: অর্থনীতিবিদ, সাবেক উপাচার্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
‘লিকি গাট’ এই শব্দ চিকিৎসা মহলে নয়। জনকথা হচ্ছে, আজকাল এটি মেডিকেল শব্দ নয়, কিন্তু এর অস্তিত্ব আছে। অন্ত্র ফুটো হয়ে চুয়ে চুয়ে পড়ছে অন্তর্গত জিনিস। অন্ত্রের এক প্রাচীর আছে, যা এত ভেদ্য নয়। অন্ত্রের শ্লেষ্মা ঝিল্লি আর এপিথেলিয়াল স্তর এই দেয়াল তৈরি করেছে এ এক সুরক্ষা দেয়াল।
মানব অন্ত্রের যে উপঝিল্লি কোষ বা এপিথেলিউয়াম তা ৪০০ বর্গমিটারজুড়ে রয়েছে। অন্ত্রের এই কোষগুলো পরস্পর আঁটসাঁট বাঁধনে আটকা। এ হলো প্রোটিন বাঁধন।
এই দুর্ভেদ্য দেয়াল আটকে রাখে অন্ত্রের ভেতরের সবকিছু, এমনকি জীবাণুও। খাদ্যের অবশিষ্ট। তাই কিছু বেরিয়ে আসতে পারে না রক্তস্রোতে।
কোষগুলোর মধ্যের এই বাঁধন হয় যদি আলগা, এমন যেন এর মধ্যের দরজা ভালো করে বন্ধ নয়, তখন এর ফুটো দিয়ে বেরিয়ে আসে ভেতরের জিনিস, এমনকি জীবাণুও। তখন উস্কে উঠে বিরূপ প্রতিক্রিয়া আর এর জন্য হতে পারে নানা রোগ।
আরেক রকমের লিকি গাট আছে। এটি দেয়ালের ফুটো দিয়ে না বেরিয়ে কিছু বিষাক্ত পদার্থ ধ্বংস করে অন্ত্রের দেয়াল আর বেরিয়ে আসে রক্তস্রোতে।
অন্ত্রের কোষগুলো থাকে পরস্পর দৃঢ় সংযুক্ত আর তা হলো হেলদি গাটে থাকে আর লিকি গাটে এই কোষগুলোর মধ্যে থাকে ফাঁক আর চুয়ে পড়ে বাহিরে-ভেতরের সব কিছু।
তবে একটি কথা, অন্ত্রের কোষগুলো পরস্পর দৃঢ় সংযুক্ত হলেও একেবারে অভেদ্য নয়, এর মধ্য দিয়ে যেতে পারে স্বাস্থ্যের জন্য তা, প্রয়োজনে এর মধ্য দিয়ে বেরিয়ে আসে পানি আর সোডিয়াম। হার্ভার্ডের মেডিসিন আর প্যাথলজির অধ্যাপক বলেন, এটুকু ভেদ্য না থাকলে হতে পারে অপুষ্টি।
লিকি গাটের সঙ্গে সম্পর্কিত নানা সমস্যা
ইনফ্লামেটারি বাওয়েল ডিজিজ (আইবিডি)
ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রম (আইবিএস)
টাইপ ১ টাইপ ২ ডায়াবেটিস
বিষন্নতা
অ্যালকহলিক লিভার ডিজিজ
নন অ্যালকহলিক স্টিয়াট হেপাটাইটিস (ন্যাশ)
লিভার সিরোসিস
অটিজম, সরিয়াসিস একজিমা পারকিন্স-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মনে হয়।
লিকি গাট ও আইবিএস
আরও ঘনিষ্ঠভাবে দেখা
হার্ভার্ডের অধ্যাপক জেরড টারনার বলেন, অন্ত্রের এই বেশি ভেদ্য বা সচ্ছিদ্র হওয়ার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে ক্রনস রোগ বা আইবিএসের।
তবে মাউন্ট সিনাইয়ের গবেষকরা দেখেন এই ভেদ্য একমাত্র কারণ নয় আইবিএসের। এর সঙ্গে যুক্ত থাকে ইম্মুন সিস্টেমের সক্রিয় কোনো পরিস্থিতি।
লিকি গাটের চিকিৎসা সম্ভব?
টারনার বলেন, অন্ত্রের এই পর্দা বা দেয়ালের ফুটো হওয়ার চিকিৎসা আসবে অচিরে।
অন্ত্রের এই দেয়াল বা আস্তরণের স্বাস্থ্য উন্নত করার আছে উপায়
১. যেসব ডায়েট অ্যালার্জি উস্কে দেয় এদের পরিহার করুন।
যাদের ফুড অ্যালার্জি এদের অন্ত্রের দেয়ালের সমস্যা থাকে।
২. খাবেন ফ্লাভানয়েডস আর সুশম খাদ্য।
ফ্লাভানয়েডস অন্ত্রের দেয়ালের কাজকর্ম উন্নত করে, এরা কোষগুলোর মধ্যে আঁটসাঁট সংযোগ ঠিক রাখতে সহায়ক।
সবজি, রেড ওয়াইন, চকলেট আর কফিতে, সবুজ ফল আর কালো চা, সেখানে আছে ফ্লাভানয়েডস।
ক্রানবেরি জুস
আর সুষম খাদ্য
ভিটামিন ডি আর এল গ্লুটামন অ্যাসিড মেরামত করে অন্ত্রের দেয়াল।
প্রিবায়টিক্স আর প্রবায়টিক্স : পুনঃস্থাপিত করে অন্ত্রের কাজকর্ম।
৩. প্রসেস খাবার আর সুগার পরিহার করুন
আধুনিক জগতে কৃত্রিম শিল্পজাত এডিটিভ হচ্ছে ব্যবহারের ফলে অন্ত্রের কাজকর্ম গোলমেলে হয়ে যাচ্ছে। হচ্ছে অটো ইম্মুন ডিজিজ।
কারবক্সি মিথাইল সেলুলোজ আর পলিসরবেট হলো দুটি কৃত্রিম এডিটিভ শিল্পে ব্যবহৃত হয়, আর এর ব্যবহারের অন্ত্রের দেয়ালে হয় ফুটো।
লেখক : সাবেক অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ
১৯৯৯ সালে আমি যখন সংবাদে কাজ করি, তখন ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে পরিচয়, ঘনিষ্ঠতা। সফেদ পাঞ্জাবি-পায়জামার সঙ্গে কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ, মৃদুভাষী স্নিগ্ধ মানুষটিকে দেখে বোঝা মুশকিল যে, তার অতীত এত বর্ণাঢ্য, তার জীবন এত কর্মচঞ্চল! তার সঙ্গে যত মিশেছি, কথা বলেছি, তত বিস্মিত ও চমৎকৃত হয়েছি। একটা মানুষ এমন অদম্য প্রাণশক্তির অধিকারী হন কীভাবে? সারা জীবন তিনি সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলা এবং বাঙালি সংস্কৃতি বিকাশের জন্য কাজ করেছেন। এ জন্য দেশব্যাপী ঘুরে বেড়িয়েছেন। সংগঠক তৈরি করেছেন। শিল্পী-আবৃত্তিকার-নাট্যকর্মী তৈরি করেছেন। দেশের কোন জেলায় কোন গ্রামে কে ভালো গান করে, নাটক করে, কে ভালো আবৃত্তি করে ওয়াহিদুল হকের তা ছিল মুখস্থ।
তিনি যে কত সংস্কৃতিকর্মীকে গোপনে আর্থিকভাবে সাহায্য করেছেন, তার সংখ্যা কেউ জানে না। তিনি নিজের পকেটের টাকা দিয়ে যেমন সাহায্য করেছেন, আবার শুভাকাক্সক্ষীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে তা বিলিয়ে দিয়েছেন। তার ঔদার্য আর মহত্ত্বের কোনো সীমা-পরিসীমা ছিল না। তিনি নিজে আর্থিকভাবে খুব একটা সচ্ছল ছিলেন না। যা আয় করতেন, তার পুরোটাই ঢেলে দিতেন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আয়োজনে। তার বাসাতেও সারাক্ষণ শিল্পী, নাট্যজন, সংস্কৃতিসেবীদের উপস্থিতিতে ‘চাঁদের হাট’ লেগে থাকত। তাদের আদর-আপ্যায়নেও ব্যয় কিছু কম হতো না।
ওয়াহিদুল হক ছিলেন এ দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব, সংগীত বিশেষজ্ঞ, লেখক-সাংবাদিক। সংস্কৃতিপ্রেম আর দেশ ও মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসায় তিনি ছিলেন অনন্য এক ব্যক্তিত্ব। তিনি বাঙালি সংস্কৃতি বিকাশে অতুলনীয় ভূমিকা পালন করেছেন। রবীন্দ্রসংগীত ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান। ১৯৪৭-এর দেশ বিভাগ আমাদের সাহিত্য, শিল্পকলা, বিজ্ঞানে বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে যে বিচ্ছিন্নতা দেখা দিয়েছিল, সেটিকে তিনি রবীন্দ্রনাথ ও তার চিন্তার সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জোড়া লাগাতে চেয়েছিলেন। দেশে রবীন্দ্রসংগীত ও রবীন্দ্র-গবেষণায় তিনি ছিলেন অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। পূর্ব বাংলায় চলচ্চিত্র আন্দোলনের শুরু তার হাত ধরে।
আবৃত্তি সংগঠনের জন্মদাতা ওয়াহিদুল হক। বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই ছিল তার সমান দক্ষতা। দুই ভাষাতেই তিনি অসাধারণ সব প্রবন্ধ লিখতেন। ঈর্ষা করার মতো পান্ডিত্য ছিল তার। বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশ ও রবীন্দ্রসংগীতকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন।
রাজনীতি, সংস্কৃতি, গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, ইতিহাস, চিত্রকলাসহ অনেক বিষয়ে তার উৎসাহ সমান ছিল। এ উৎসাহের মধ্য দিয়ে নিজেকে যেমন বিকশিত করতে চেয়েছিলেন, অন্যকেও করে গেছেন উদ্বুদ্ধ, অনুপ্রাণিত। তিনি ক্রীড়াজগতেও সংগঠক হিসেবে দারুণ ভূমিকা পালন করেছেন। ছোটবেলা থেকেই ছিল তার খেলাধুলার প্রতি দুর্বলতা। এক সময় নিয়মিত ফুটবল খেলতেন। ব্যাডমিন্টন, টেনিসেও ছিল তার আগ্রহ। পঞ্চাশ দশকের প্রথম দিকেই বন্ধুদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘আজাদ স্পোর্টিং ক্লাব’।
তিনি কর্মজীবন শুরু করেন স্পোর্টস রিপোর্টার হিসেবে, ইংরেজি দৈনিক পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায়। কয়েক মাস পরেই তিনি ‘পাকিস্তান অবজারভার’ ছেড়ে ‘ডেইলি মর্নিং নিউজ’ পত্রিকায় চলে যান। অবশ্য সেখানেও স্পোর্টস রিপোর্টার হিসেবেই। এরপর তিনি সাংবাদিকতার বিভিন্ন বিভাগে কাজ করেন।
সংস্কৃতিবান আধুনিক বাঙালির রোল মডেল ওয়াহিদুল হক ১৯৩৩ সালের ১৬ মার্চ কেরানীগঞ্জের তারানগর ইউনিয়নের ভাওয়াল মনোহরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আরমানিটোলা গভর্নমেন্ট হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ওয়াহিদুল হক স্কুলজীবন থেকেই কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
১৯৭১-এ তিনি ‘স্বাধীন বাংলা শিল্পী সংস্থা’ গড়ে তোলার মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছিলেন ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে কলকাতায় গঠিত বাংলাদেশ বুদ্ধিজীবী মুক্তিসংগ্রাম পরিষদের অন্যতম উদ্যোক্তা।
১৯৭৩ সালে তিনি নিজের ব্যবহৃত গাড়ি বিক্রি করে ন্যাপের প্রার্থী হিসেবে কেরানীগঞ্জ থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। যদিও সেই নির্বাচনে তিনি জিততে পারেননি।
ওয়াহিদুল হক ছিলেন মেধাবী সাংবাদিক। ছাত্রাবস্থা থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৫৪ বছর সাংবাদিকতা পেশায় ছিলেন। ষাটের দশকে দি অবজারভারের শিফট ইনচার্জ ছিলেন। পরে মর্নিং নিউজ ও দ্য ডেইলি স্টারের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। এক সময় ছিলেন দ্য পিপলস্ পত্রিকার সম্পাদক। জীবনের শেষ দিকে ‘অভয় বাজে হৃদয় মাঝে’ ও ‘এখনও গেল না আঁধার’ শিরোনামে নিয়মিত কলাম লিখেছেন দৈনিক জনকণ্ঠ ও দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকায়। এমন কোনো বিষয় ছিল না, যে বিষয়ের ওপর তিনি লিখতে পারতেন না। শব্দের উৎপত্তি ও ব্যবহার তিনি অভিধান না দেখেই বলে দিতে পারতেন।
পেশাগতভাবে তিনি সাংবাদিক হলেও তার আসল কর্মক্ষেত্র ছিল সংস্কৃতি অঙ্গন। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, দেশের সব ধরনের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে ওয়াহিদুল হক ছিলেন এক নিরন্তর যোদ্ধা। তার সবচেয়ে বড় অবদান দেশে সুস্থধারার সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। বাঙালি হয়ে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার জন্য তিনি আজীবন মানুষ গড়েছেন, সংঘবদ্ধ করেছেন, পথ দেখিয়েছেন। তিনি আমাদের শিক্ষা- সংস্কৃতি আর মননের আজীবন সঙ্গী।
ষাটের দশকের গোড়াতে ছায়ানট আন্দোলন ও একে স্থায়ী প্রতিষ্ঠানে রূপদানকারী ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি অন্যতম। এ ছাড়াও আবৃত্তি প্রতিষ্ঠান ‘কণ্ঠশীলন’, মৃত্যুর কিছুদিন আগে গড়ে তোলা ‘নালন্দা’ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠা এবং এগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠা করা ওয়াহিদুল হকের সবচেয়ে বড় অবদান।
পাশাপাশি তিনি রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ গঠন করে সারা দেশে রবীন্দ্রসংগীত চর্চায় মানুষকে আগ্রহী করে তোলার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এ ছাড়াও তার অনুপ্রেরণায় গড়ে উঠেছে আনন্দধ্বনি, বাংলাদেশ ব্রতচারী সমিতি, বিজ্ঞান সংস্কৃতি পরিষদ, বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ, বাংলাদেশ আবৃত্তি ফেডারেশন, মুকুল ফৌজ কিশোর সংগঠন, সরোজ সংস্কৃতিবৃত্ত প্রভৃতি সংগঠন।
বিচিত্র বিষয়ে ছিল তার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশের সংস্কৃতির পথ নির্মাণের অগ্রপথিক ওয়াহিদুল হক বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে ১০ বছরেরও বেশি সময় খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবেও কাজ করেছেন।
সংস্কৃতিকে বিজ্ঞান, শিল্পকলা, সাহিত্যের একীভূতরূপে দেখেছেন। সংগীত ও শিল্পকলাকে বিশেষ বিষয় হিসেবে না দেখে শিক্ষাব্যবস্থায় অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে একই তালে মিলিয়ে দিতে চেয়েছেন। এবং ভেবেছিলেন এগুলো একীভূতভাবে সংযুক্ত করতে পারলেই শিক্ষা মানবিক হয়ে উঠবে। কেননা এ বিষয়গুলো মানবজাতির আদি বিকাশের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।
বিজ্ঞান বোধহীন সমাজে প্রযুক্তির সম্প্রসারণ কীভাবে মানুষকে নিষ্ক্রিয় করে দেয় সে বিষয়ে নিজে সজাগ ছিলেন, অন্যকে সতর্ক করে গেছেন। উপলব্ধি ছাড়া জ্ঞান কখনো কখনো বিপজ্জনক হতে পারে সে ব্যাপারেও তিনি ছিলেন সচেতন।
তিনি জীবনভর অশুভের বিরুদ্ধে উচ্চারণ করেছেন কল্যাণের কথা। মানবিক ও মুক্তসমাজ বিনির্মাণে রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। সংস্কৃতিকে সঙ্গী করে দীর্ঘ কাঁটা বিছানো পথ হেঁটেছেন সম্প্রীতির পথে। সুরকে হাতিয়ার করে লড়াই করছেন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। সম্প্রীতি ও প্রগতির দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন দেশের এ প্রান্ত থেকে সে প্রান্তে।
কখনো গান, কখনো আলোচনার মাধ্যমে তিনি শুনিয়েছেন মানবতার সেই মর্মবাণী : মানুষ অশুভ শক্তির দাস নয়, তারও কিছু করার আছে। তিনি অজস্র মানুষের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের মাধ্যমে মানুষেরই শক্তি আর ভালোবাসার কথা বলেছেন।
সব রকম প্রলোভন, সংকীর্ণতা, আরাম-আয়েশকে তুচ্ছ করে একাকী কাঁধে ছোট্ট একটা ঝোলা নিয়ে হেঁটেছেন স্বার্থপরতায় ঠাসা রাজধানীর কংক্রিটের রাস্তায়। কখনো গ্রামেগঞ্জে, মধ্যবিত্তবাড়ির উঠানে। ২০০৭ সালের ২৭ জানুয়ারি বিশুদ্ধ ও নির্মোহ মানবচর্চার শিল্পী ওয়াহিদুল হক প্রয়াত হয়েছেন। আমরা হারিয়েছি এক মানবদরদি মহান ব্যক্তিকে।
দেশ যখন মৌলবাদ, ধর্মবাদ, কূপম-ূকতা, স্বার্থপরতায় আচ্ছন্ন, সমাজ থেকে সুস্থ, মানবিক ও সংস্কৃতিচর্চা হারিয়ে যেতে বসেছে, একালের ‘রোল মডেল’রা কেবল টাকার মোহে আত্মগোপনকারী দুর্বৃত্তের সোনার দোকান উদ্বোধন করতে ছুটে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে, তখন ওয়াহিদুল হকের কথা খুব মনে পড়ে। সেই ওয়াহিদুল হক, যিনি আজন্ম নিজের কষ্টার্জিত টাকা জনস্বার্থে বিলিয়ে দিয়ে খুব সাদামাটা জীবন কাটিয়েছেন। উন্নততর সমাজ গঠনের জন্য জীবনের সব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়েছেন!
লেখক: কলামিস্ট ও লেখক
মূলত নব্বই দশকের শুরুতে, বাংলাদেশের অপরাধীরা বেছে নেন কলকাতা শহর। সেখানে অন্য নামে তারা বসবাস করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে নাগরিকত্ব পেয়ে যান ভারতের। সেখান থেকে আরও নিরাপদ থাকার জন্য চলে যান দুবাই। শুরু করেন নতুন ব্যবসা। শুধু বাংলাদেশের অপরাধী নন, ভারত ও অন্যান্য দেশের অপরাধীরাও দুবাই শহরে বসে নিয়ন্ত্রণ করেন নিজ দেশের অপরাধজগৎ। সেখানে চিহ্নিত খুনিরা চোরাকারবারির সঙ্গে গড়ে তোলেন সখ্য। জড়িয়ে পড়েন চোরাকারবারিতে। মূলত সোনা, অস্ত্র ও মাদক চোরাচালানির সঙ্গে জড়িয়ে যুক্ত হন আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে। যার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন বিভিন্ন দেশের শিল্পপতি বা সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা। এমনকি, কোনো কোনো দেশের এমপি-মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীও এর সঙ্গে জড়িত থাকেন। অবশ্য তারা থাকেন আড়ালে। বাইরে থেকে দেখে কোনোভাবেই আঁচ করা যাবে না, তাদের নূরানী চেহারার আড়ালে লুকিয়ে আছে ভয়ংকর অপরাধজগতের সংশ্লিষ্টতা। এই তারাই, মাফিয়া বা ডন। প্রকাশ্যে থাকেন চিহ্নিত অপরাধীরা। বর্তমানে তারা দুবাই শহরকে নিরাপদ মনে করে, কলকাতায় পাড়ি জমানো বন্ধ করে দিয়েছেন। সেখান থেকে তাদের ধরে এনে বিচার করা দুরূহ ব্যাপার। কারণ, বাংলাদেশের নাগরিক দুবাই যাচ্ছেন ভারতের নাগরিক হিসেবে। আবার ভারতের নাগরিক দুবাই যাচ্ছেন আরেক দেশের নাগরিক হিসেবে। ফলে ইন্টারপোলের সহযোগিতা নিলেও, আইনি জটিলতার কারণে বিষয়টি হয়ে যায় সময়সাপেক্ষ। আবার দুদেশের মধ্যে বন্দিবিনিময় চুক্তি না থাকলে, সন্ত্রাসীদের জন্য এটি আরও নিরাপদ। ঠিক এমনই সুযোগ নিচ্ছেন অনেক অপরাধী।
গতকাল দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায় প্রকাশিত ‘ভারত ছেড়ে দুবাইমুখী অপরাধীরা’ শীর্ষক সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, দেশের অপরাধজগতের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীরা অপরাধ করেই দুবাই চলে যাচ্ছেন। সেখানে বসেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কলকাঠি নাড়ছেন। এখন বিতর্কিত মডেল, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরাও দুবাইকে কেন্দ্র করে নানা কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। সেখানে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যও আছে। তাদের কেউ কেউ সোনার কারবারও করছেন। ওই দেশে ভারতের দুর্ধর্ষ অপরাধী দাউদ ইব্রাহিমের শিষ্যত্ব নেওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে।
সংবাদে আরও বলা হয়েছে পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালে তৎকালীন সরকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসী ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজন ধরা পড়েছেন। আবার কেউ ক্রসফায়ারে মারা গেছেন। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার তাড়া খেয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে আছেন কেউ কেউ। আত্মগোপনে থেকেই তারা অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই দুবাই রয়েছেন।
শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। এ নিয়ে পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তারা কয়েক দফায় বৈঠক করেছেন। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও আলাদাভাবে বৈঠক হয়েছে। ওইসব বৈঠকে বলা হয়েছে, ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করার পরও কেন তারা ধরা পড়ছেন না তা খতিয়ে দেখতে হবে। ২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাই চলে যান। সেখান থেকেও ঢাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে আছেন।
দুবাই শহর সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। শুধু ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হলেই সমস্যার সমাধান হবে না। এসব চিহ্নিত অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য, সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বিশেষ নির্দেশনা প্রয়োজন। প্রয়োজনে কূটনৈতিকভাবেও এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। এসব অপরাধীর দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়টিও, কূটনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হবে। এর জন্য দরকার সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ। না হলে, একের পর এক অপরাধী দুবাই শহরে গিয়ে নিরাপদ আস্তানা গাড়বেন। বহিরাবরণে থাকবে, স্বর্ণের লোভনীয় প্রলেপ। আর ভেতরে থাকবে বীভৎস অপরাধের গাঢ় অন্ধকারে ঢেকে যাওয়া কুৎসিত লোমহর্ষক ঘটনার করুণ পান্ডুলিপি।
উপমহাদেশের কিংবদন্তি সানাই বাদক ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান ১৯১৬ সালের ২১ মার্চ ভারতের বিহারে জন্মগ্রহণ করেন। এই মহান সাধক সানাইকে উচ্চাঙ্গ সংগীত জগতের যন্ত্র হিসেবে অধিষ্ঠিত করেন। তার বাবার নাম পয়গম্বর খান ও মা মিঠান। বিসমিল্লাহ খানের পূর্বপুরুষরা বিহারের ডুমরাও রাজ্যের রাজ সংগীতজ্ঞ ছিলেন। বিসমিল্লাহ খান যেমন ধর্মপরায়ণ মুসলমান ছিলেন তেমনি জ্ঞানের দেবী সরস্বতীরও আরাধনা করতেন। বিসমিল্লাহ খান তাই হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন আজও। বিসমিল্লাহ খানের গুরু ছিলেন বারানসির বিশ্বনাথ মন্দিরের সানাই বাদক আলী বকস বিলায়াতু। ১৯৩৭ সালে কলকাতায় অল ইন্ডিয়া মিউজিক কনফারেন্সে বাজিয়ে সানাইকে ভারতীয় সংগীতের মূল মঞ্চে নিয়ে আসেন তিনি। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি দিল্লির লাল কেল্লায় বিসমিল্লাহ খান ‘রাগ কাফি’ বাজিয়ে মুগ্ধ করেছিলেন ভারতবর্ষকে। ভারতের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে তার সানাই বাদন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গিয়েছিল। লাল কেল্লায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর পরই ভারতীয় দূরদর্শন সানাই গুরুর অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করত। পন্ডিত নেহরুর সময় থেকেই এই ঐতিহ্য চলছিল। বিসমিল্লাহ খান শুধু ভারতেই নয় আফগানিস্তান, ইউরোপ, ইরান, ইরাক, কানাডা, পশ্চিম আফ্রিকা, যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, জাপান, হংকং-সহ পৃথিবীর বহু রাজধানী শহরেই তার সংগীত প্রভা ছড়িয়েছেন। ভারতের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘ভারতরতœ’ পদকসহ তিনটি সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘পদ্মবিভূষণ’, ‘পদ্মভূষণ’, ও ‘পদ্মশ্রী’ পদকে ভূষিত করা হয়েছে তাকে। সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য বানারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও শান্তি নিকেতন তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট প্রদান করেছে। সানাইয়ের এই কালপুরুষ ২০০৬ সালের ২১ আগস্ট বারানসিতে ৯০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, সিরাজুল আলম খান স্বাধীনতার প্রাণ পুরুষ, নেপথ্যের নায়ক ও সফল স্বপ্ন দ্রষ্টা। বাঙালির জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে, যুব ছাত্রদের মনে স্বাধীনতার অগ্নিশিখা ছড়িয়ে দেওয়ার মন্ত্র এবং সকল সংগ্রাম আন্দোলনকে গণআন্দোলনে রূপান্তর করে স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনার অন্যতম কৌশল প্রণয়নকারী তিনি।
সিরাজুল আলম খান ১৯৬২ সালেই স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে নিউক্লিয়াস গঠন করেন। এই নিউক্লিয়াসই ছাত্র জনতার আন্দোলন, ৬ দফা ১১ দফা সহ প্রতিটি আন্দোলনকে স্বাধীনতার পক্ষে জনমত সৃষ্টির কাজে রূপ দিতে গুরু দায়িত্ব পালন করে। একাত্তরের পূর্বেই সম্ভাব্য সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধকে হিসেবে রেখে, বিএল এফ বা মুজিব বাহিনী গঠন করা হয়।
জয়বাংলা বাহিনী গঠন, জাতীয় পতাকা তৈরি ও উত্তোলন,জাতীয় সংগীত নির্ধারণ, বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করে স্বাধীনতার ইশতেহার প্রণয়ন, অসহযোগ আন্দোলন, ৭ই মার্চের ভাষণ সহ সকল আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর সাথে সমন্বয় সাধনে ঐতিহাসিক ও যুগান্তরকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করে অনন্য ইতিহাসের নায়ক তিনি।
সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামের পর 'বিপ্লবী জাতীয় সরকার' গঠন, স্বাধীনতা সংগ্রামের চেতনায় সংবিধান প্রণয়ন, জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর গঠন এবং সমবায় ভিত্তিক অর্থনীতিসহ ১৫ দফা করণীয় উত্থাপন করে রাষ্ট্র বিনির্মাণের
রূপরেখা প্রদান করেন। ১৯৭২ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল গঠন, ৭৫ এ সিপাহী জনতার গণ অভ্যুত্থানের পরিকল্পনাকারী ছিলেন সিরাজুল খান। বাঙালির জাতীয় ইতিহাসে অনেক অবিস্মরণীয় ঘটনার নেপথ্য নায়ক তিনি।
পরবর্তীতে ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার বিপরীতে বাংলাদেশের জনগণ কে শ্রমজীবী কর্মজীবী পেশাজীবী সামাজিক শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে ১৪ দফা সম্মিলিত সম্মিলিত রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক মডেলসহ রাজনৈতিক তত্ত্ব উদ্ভাবন করেন।
ব্যক্তিগত সম্পদ - স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি অর্জনের বাইরে অকৃতদার সিরাজুল আলম খান অনন্য সাধারণ বাঙালি। ইতিহাস তাকে বাঙালির দেদীপ্যমান 'বাতিঘর' হিসেবে ইতিহাসের ঐতিহাসিকতায় ধারণ করবে।
সিরাজুল আলম খান ছিলেন আমার রাজনৈতিক দার্শনিক শিক্ষক। তার মৃত্যুতে দেশ অন্যতম একজন শ্রেষ্ঠ সন্তানকে হারাল। সিরাজুল আলম খান বাঙালির অন্তরাত্মায় সদা সর্বদা সর্বাগ্রে জাগ্রত থাকবেন।
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের আলো ঝলমলে অডিটোরিয়ামে দেশি-বিদেশী মডেল ভাড়া করে এনে সাড়ম্বরে ঘোষণা করা হয়েছিল প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক নারী ফুটবল আসর ওমেন্স সুপার লিগের। সিনে জগতের তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে র্যাম্প করতে করতে প্রত্যাশার ঘুড়িটা দূর আকাশে উড়িয়েছিলেন সাবিনা-সানজিদারা। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন এখন তারা। ফুটবলপ্রেমীদের তাদের নিয়ে অসীম আগ্রহকে পুঁজি করে কে-স্পোর্টস আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করে ফায়দা লুটতে। তবে দিন যত গড়িয়েছে, মেয়েদের স্বপ্ন ধূসর হয়েছে। এখন তো তা মিলিয়ে গেছে বহুদূরে।
কে-স্পোর্টস-বাফুফের কর্তারা বুঝেছেন, তাদের লেখা চিত্রনাট্য আর বাস্তবতায় বড্ড ফাঁরাক। তাই তারা বারবার টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখ দিয়েও আলোচিত টুর্নামেন্টকে মাঠে নিয়ে যেতে পারেননি। সর্বশেষ ১০ জুন আসর শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সেটাও মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই হতাশা ছাঁপিয়ে নারী ফুটবলারদের মনে ভর করেছে রাজ্যের ক্ষোভ।
কে-স্পোর্টস আর বাফুফের কর্তারা ভেবেছিলেন এমন একটা টুর্নামেন্টের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হামলে পড়বে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর নেপালে সাফ শিরোপা জয়ের পর মেয়েদের নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই আসলে স্বপ্নবাজ করে তোলে সালাউদ্দিন-মাহফুজা আক্তার-ফাহাদ করিমদের। তবে হয়েছে উল্টো। সেটাই যে হওয়ার কথা! কে-স্পোর্টস কিংবা বাফুফে, দুটি প্রতিষ্ঠানই যে এখন ভীষণভাবে ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। এর মাঝে অগোচরে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যেটা কখনই প্রত্যাশিত ছিল না। কে-স্পোর্টস আর বাফুফের দেখানো স্বপ্নে বুদ হয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলাররা। এমন একটা টুর্নামেন্টে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন তারা। এমনিতে ঘরোয়া ফুটবল খেলে সেভাবে পারিশ্রমিক জুটে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হলে একটা আকর্ষণীয় পারিশ্রমিকের হাতছানি ছিল। তারচেয়েও বেশি ছিল নানা দেশের নামী-দামী ফুটবলারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুবর্ণ সুযোগ। দারুণ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুখ বুজে মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন দিনের পর দিন। এর মাঝেই তারা দেখেছেন বাবার মতো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের বিদায়। বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ন্যায্য দাবী পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার পরও তারা বাফুফের কঠোর অনুশাসন মেনে দুঃসহ গরমে সকাল-বিকাল ঘাম ঝড়িয়েছেন। এরপর যখন দেখলেন এই স্বপ্ন বারবার হোচট খাচ্ছে কে-স্পোর্টসের ব্যর্থতা আর বাফুফের অদূরদর্শীতায়, তখন আর মুখ বুজে থাকতে পারলেন না। হতাশার কথা জানাতে গিয়ে অগোচরে তাদের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এসেছে ক্ষোভের আগুন।
অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে বাফুফে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় পাঁচ দিনের ছুটি। বৃহস্পতিবার রাতে বাসে করে সাতক্ষীরাগামী সাফজয়ের অগ্রনায়ক সাবিনা খাতুন দেশ রূপান্তরকে মুঠোফোনে বলছিলেন, 'ওমেন্স সুপার লিগ স্রেফ আমাদের আবেগ নিয়ে খেললো।' একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'প্রথমত সাফের পর কোন খেলা নেই। তারপর এই লিগ মেয়েদের নিয়ে দুই দফা এত কিছু করলো, এত আশা দিলো, মেয়েরা খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। আর সব থেকে বড় ব্যাপার বিদেশী খেলোয়াড় যারা দক্ষিণ এশিয়ার, তাদের নিয়ে আমি নিজেও কাজ করছিলাম। তাদের কাছে এখন আমার সম্মান কই থাকলো! বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়েরা অনেক আশায় ছিল। কিন্তু... । এটা নিয়ে অবশ্য মেয়েরা অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আমিও কোন আশা দেখছি না।'
সতীর্থদের সংগে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে বাড়ির যেতে যেতে জাতীয় দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা বলছিলেন, 'আসলে কিছু বলার ভাষাই হারায় ফেলেছি। একটা টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আমরা কঠোর অনুশীলণ করছিলাম। আশা ছিল খেলবো। এখন সেটা হচ্ছে না বলে খুব কষ্ট লাগছে। যখন শুনলাম লিগটা হবে না, তখন মনের অবস্থা কেমন হতে পারে, বুঝতেই পারছেন।'
সাফের পর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সিনিয়র ফুটবলাররা। এ নিয়ে ভীষণ হতাশ সানজিদা বলেন, 'নয়টা মাস ধরে অপেক্ষায় আছি খেলার। প্রীতি ম্যাচ বলেন কিংবা কোন টুর্নামেন্ট, একটা ম্যাচও আমরা খেলতে পারিনি সাফের পর। অথচ আমাদের সঙ্গে যারা সাফে খেলেছে, তারা প্রায় সবাই পাঁচটা-ছয়টা করে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে এর মধ্যে।' মেয়েদের সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই খেলার কথা ছিল। অথচ বাফুফে অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে তাদের খেলতে পাঠায়নি। সানজিদা বললেন, 'আমরা আসলে হতাশ হতেও ভুলে গেছি। বারবার টুর্নামেন্টে খেলার কথা বলা হয়, আবার সেটা বাতিল হয়। এরকমটা হতে হতে আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি।'
হতাশা, বঞ্চনায় বাফুফের চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেছেন নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। প্রিয় কোচের জন্য কষ্ট পান সানজিদা, 'ছোটন স্যারের হাত ধরেই আমার এখানে আসা। তার কাছেই আমার ফুটবলার হয়ে গড়ে ওঠা। তিনি চলে গেছেন। এতে খুব কষ্ট পাই। তিনি আমাদের অনেক আদর-যত্ন করতেন। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয়, ঠিক তেমন সম্পর্ক ছিল।'
১৩ জুন সাবিনা-সানজিদাদের ক্যাম্পে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাফুফে। বিকল্প নেই বলে তারা হয়তো ফিরবেন। তবে ফেরার সময় তাদের চোখে থাকবে না বড় কোন স্বপ্ন। সেটা দেখাই বারণ। কে-স্পোর্টস আর বাফুফে মিলে যে মেয়েদের সব স্বপ্ন গলা টিপে মেরে ফেলেছে।
বাংলাদেশের রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিত সিরাজুল আলম খান (দাদা ভাই) আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
আজ শুক্রবার (৯ জুন) বিকাল আড়াইটার দিকে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত ছিলেন।
তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট এবং ফুসফুসে সংক্রমণসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
গত ২০ মে সিরাজুল আলম খানকে বার্ধক্যজনিত কারণে ঢাকা মেডিকেলর নতুন ভবনের কেবিনে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। সবশেষ বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাত ৯টা ২০ মিনিটে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
এর আগে গত ৭ মে থেকে রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তার। ২০ মে তাকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২০২১ সালে অসুস্থ হয়ে কিছুদিন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
স্বাধীনতালগ্নে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এই ছাত্রনেতারা।
স্বাধীন হওয়ার পরপরই শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে সিরাজুল আলম খানের বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। সিরাজুল আলম খানের অনুসারী ছাত্রলীগ ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করে। তিনি কখনও মূল নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত। তাকে সবাই ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকেন।
সিরাজুল আলম খান কখনও জনসম্মুখে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান। তার দীর্ঘ ৫১ বছরের রাজনৈতিক জীবন বর্ণাঢ্যের।
আরও পড়ুন—
সিরাজুল আলম খানের বর্ণাঢ্য জীবন
আমার মৃত্যুর পর শোকসভা হবে না, শহীদ মিনারে ডিসপ্লে হবে না লাশ
বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাপালিক— সিরাজুল আলম খান
'সিরাজুল আলম খান: বাঙালির বাতিঘর'
যেভাবে রহস্য পুরুষ হলেন দাদাভাই
রাত করে হলে ফেরায় বহিষ্কৃত হন দাদাভাই
মায়ের শাড়ি মুড়িয়ে দাফন করা হবে দাদাভাইকেসিরাজুল আলম খান আর নেই
আজ থেকে ছেষট্টি বছর আগে ধ্বনি ও ভাষাবিজ্ঞানী অধ্যাপক মুহম্মদ আবদুল হাই (১৯১৯-১৯৬৯) ১৩৬৪’র ফাল্গুন-চৈত্র সংখ্যা ‘সমকাল’ পত্রিকায় ‘তোষামোদের ভাষা’ এবং একই পত্রিকার ১৩৬৫’র জ্যৈষ্ঠ সংখ্যায় ‘রাজনীতির ভাষা’ শিরোনামে দুটি প্রবন্ধ লেখেন। প্রবন্ধ দুটি ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত তার ‘তোষামোদ ও রাজনীতির ভাষা’ গ্রন্থভুক্ত হয়। সেকাল এবং একালে রাজনীতির ভাষা ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তনের ধারা সন্ধান শনাক্ত করতে এই লেখা। প্রথমে সাধু স্বীকৃতি (ডিসক্লেমার) দিয়ে রাখা ভালো যে রাজনীতি ও এর ভাষা প্রক্রিয়া প্রকরণ নিয়ে এ রচনা নিছক একাডেমিক ও নির্মোহ- নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে রচিত, এর সঙ্গে কলাম লেখকের নিজস্ব বোধ বিশ্বাস চিন্তা চেতনা কিংবা কোনো ব্যক্তি কিংবা কোনো কালের কোনো সংগঠনের প্রতি অনুরাগ কিংবা বিরাগের সংশ্লিষ্টতা নেই। কেননা অনেক দেশে রাজনীতি নিয়ে আলাপ-আলোচনার মধ্যেও রাজনীতির গন্ধ খোঁজার সংস্কৃতি আগেও যেমন ছিল বর্তমানেও তা আরও বড় করে বলবৎকরণের বড় বড় আইন বিদ্যমান আছে। সেসব দেশ ও সমাজে মুক্তবুদ্ধি চর্চা নানান ঘেরাটোপের মধ্যে আছে।
ভাষার গঠনপ্রকৃতি ও আঙ্গিক ইত্যাদির মধ্যে নিয়মশৃঙ্খলাজনিত যে নানা খুঁটিনাটি ভাগ আছে সেটা ধরা পড়ে সমাজের ভাষার ব্যবহার থেকে। অধ্যাপক হাইয়ের মতে, ‘সমাজ জীবন গড়ে তোলার জন্যই মানুষের ভাষার উদ্ভব বলে সমাজ জীবনে ভাষার ব্যবহারের বেলায় তার সত্যকার স্বরূপটি ধরা পড়ে। ভাষার কাজ হলো পারস্পরিক সমঝোতা তা কমপক্ষে দুজনের মধ্যেই হোক কিংবা বহুজনের মধ্যেই হোক দুটো মানুষ যখন কথা বলে তখন একসঙ্গে নির্দিষ্ট কতগুলো বিষয়েই তারা আলাপ-আলোচনা করে... তখন বিষয়োপযোগী ভাষাই সে ব্যবহার করে। সমাজ জীবনের নির্দিষ্ট পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত ক্ষেত্রোপযোগী যেসব শব্দের হার গাঁথা হয়, তা-ই ভাষাকে তার সামগ্রিক রূপ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নানা ভাগে ভাগ করে দেয়। এ কারণেই সমাজ জীবনের বিচিত্র পরিবেশে ভাষারও বিচিত্র প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। সে নিরিখেই সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের অন্যান্য বিষয়ের মতো রাজনীতির ভাষারও বিভিন্ন দেশ ও রাষ্ট্রে বিভিন্ন রকমের প্রচলিত শাসনব্যবস্থার সুবিধার জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সমাজ নিজ নিজ ভাষায় উপযোগী শব্দ সৃষ্টি করে নেয়। এসব শব্দ একদিনে সৃষ্টি হয় না রাষ্ট্রের শাসনযন্ত্র যাদের হাতে থাকে, প্রয়োজনের তাগিদে তারা কিছু শব্দ এবং এর প্রকাশ প্রক্রিয়া বা ভঙ্গি সৃষ্টি করিয়ে নেন।’
চিন্তা থেকে যেমন কাজের উৎপত্তি, নিয়ত বা পরিকল্পনার ওপর নির্ভর করে যেমন কাজের গতিপ্রকৃতি তেমনি রাজনীতির ভাষা খোদ রাজনীতির চরিত্র-নীতি ও প্রকৃতি অনুযায়ী উৎসারিত-উচ্চারিত হয়ে থাকে। রাজনীতির সংস্কৃতি-রুচি চাহিদা ও উদ্দেশ্য বিধেয় অনুযায়ী রাজনীতির ভাষার রূপ পরিগ্রহ করে।
খোদ ‘রাজনীতি’র ধারণার বিবর্তন ও ব্যবহারিক তাৎপর্যে পরিবর্তন-পর্যালোচনায় দেখা যায় কৌটিল্য (খ্রি.পূর্ব ৩৭৬-২৮৩) এর মতে রাজনীতি হচ্ছে নিজ সমাজ পোষণ তোষণ কিংবা শত্রু মোকাবিলায় রাজার ক্ষমতা ধরে রাখা বা প্রয়োগ করার কৌশল। কৌটিল্য বিশ্বাস করতেন রাজার দায়িত্ব বা লক্ষ্য হচ্ছে বহু বৈষয়িক সম্পদ অর্জন, ক্ষমতা বৃদ্ধিতে দাম্ভিক আনন্দলাভ ও বিলাস উপভোগ করা, আর এ জন্য রাজা যেকোনোভাবে সম্পদ ও প্রতিপত্তি অর্জনে সচেষ্ট হবে, সৈন্য পুষবে নিজের নিরাপত্তা বিধান এবং অন্য রাজ্য দখল করে সাম্রাজ্যের আকার বাড়ানোর কাজে। প্রজাকল্যাণ সাধন এবং নিজের ক্ষমতা সংরক্ষণে রাজাকে কূট-কৌশলী হতে হয়। কৌটিল্যের মতে রাজনীতি হচ্ছে একই সঙ্গে সেরা কৌশল বিজ্ঞান (সুপার সায়েন্স) ও সেরা কলা (সুপার আর্ট)। কৌটিল্যের অর্ধশতাব্দী পর প্লেটো (খ্রি.পূ ৪২৮-৩৪৮) মনে করতেন সমাজে চাওয়া পাওয়ার সব ধরনের প্রয়াস-প্রচেষ্টা, বাদ-বিসংবাদ, প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণ নিরসনে সমন্বয় সাধনই হচ্ছে রাজনীতি। এ ব্যাপারে ন্যায়নীতিনির্ভরতা, যৌক্তিতা, সুশাসন বা নিয়মশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারলে সব পক্ষ একটি ঐক্যবদ্ধ বা সমন্বিত শক্তি হিসেবে বিকাশ লাভ করবে। ঐকবদ্ধ করাই সৎ বা সফল রাজনীতি, কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে বিচ্ছিন্নতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি রাজনীতির উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়।
প্লেটোর শিষ্য অ্যারিস্টটল (খ্রি.পূর্ব ৩৮৪-৩২২) যদিও তার গুরুর অনুসারী ছিলেন তথাপি তার মতে রাজনীতি is highly critical of the ideal constitution set forth in Plato’s Republic on the grounds that it overvalues political unity, it embraces a system of communism that is impractical and inimical to human nature, and it neglects the happiness. সমসাময়িক আরেক পন্ডিত সক্রেটিসও (৪৭০-৩৯৯) ভাবতেন ভিন্নভাবে- the purpose of politics was not to capture power, nor it was an art hwo to remain in power. Political ethics make good and proper citizens. Both public and private persons must learn the art of political ethics. ম্যাকিয়াভেলি (১৪৫৯-১৫২৭) মনে করতেন for a ruler, it was better to be widely feared than to be greatly loved; a loved ruler retains authority by obligation, while a feared leader rules by fear of punishment.
রাজনীতির ভাষায় শব্দ একটি বড় অনুষঙ্গ। সময়ের অবসরে সৃষ্ট ও বহুল উচ্চারিত বা ব্যবহৃত এসব শব্দের ব্যঞ্জনায় সমকালীন সমাজ ও রাজনীতির চিত্র ও চারিত্র ফুটে ওঠে। সরকার বা রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য এক এক দেশে বহু রকম রাজনৈতিক চিন্তাধারার বিকাশ দেখতে পাওয়া যায়। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার জন্য তাবৎ দেশে দল-মত নির্বিশেষে প্রত্যেকটি দলই দেশের অধিবাসীদের কাছে তাদের আদর্শ ও কর্মসূচি নিয়ে উপস্থিত হয় আর সাধারণকে তাদের মতে দীক্ষিত করার জন্য ভাষার সাহায্যেই জোর প্রচারণা চালায়। অন্যকথায়, ভাষা রাজনীতিকদের হাতের পুতুল হয়ে ওঠে। সে ভাষা দিয়ে তারা নিজের বক্তব্য যেমন প্রচার করিয়ে নেন, তেমনি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য অপপ্রয়োগ করতেও কুণ্ঠিত হন না।
আমাদের দেশে রাজনীতিকরা দলীয় প্রয়োজনে ভাষার যে ব্যবহার করেছেন, তা দেখানোর আগে দুনিয়ার কয়েকটি বড় বড় রাষ্ট্র রাজনৈতিক প্রয়োজনে ভাষার কী ব্যবহার করেছে তার দু একটি দৃষ্টান্ত অধ্যাপক আবদুল হাইয়ের রচনা থেকেই দেখা যাক ‘১৯৩৩ সালের অক্টোবর মাসে জার্মানিতে হিটলার ক্ষমতাসীন হওয়ার কয়েকমাস পরেই দেখা যায় গোয়েবলসের নেতৃত্বাধীনে ‘রাইখ সংস্কৃতি সংসদ’ গড়ে উঠছে। এ সংস্কৃতি সংসদের বিভাগ ছিল সাতটি-সাহিত্য, সংবাদপত্র, রেডিও, শিল্প, সংগীত, থিয়েটার এবং সিনেমা। সমগ্র জাতির চিন্তাধারা রাইখ নেতৃত্বের অনুগামী করে তোলার জন্য সাতটি বিভাগই একযোগে প্রচারণার কাজ করতে শুরু দিল। যারা এর কিছুদিন আগে জনমত প্রধানত রক্ষণশীল ও শ্রমিক দলকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে গেছে। একদল যখন ক্ষমতাসীন হয়, অন্যদল রাষ্ট্রের কল্যাণে তাদের গঠনমূলক সমালোচনা করে। সেজন্য সরকারি দলের অস্তিত্বের যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন সরকার সমর্থিত বিরোধী দলের। সমগ্র জাতিকে এ দুই দল আপনাপন মতে দীক্ষিত করে তুলবার জন্য খবরের কাগজ, সভা-সমিতি ও ভাষা ব্যবহারের অন্য পন্থাগুলোকে অবলম্বন করে জোর প্রচারণা চালায়। জনমত যাদের প্রচারণায় অধিক পরিমাণে সাড়া দেয়, তারাই শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে পায়।’
পশ্চিমের উদার মতাবলম্বী দেশ নিচয়ে রাজনৈতিক মতামত প্রকাশে যে ব্যক্তিস্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে তা অবারিত নয়। সেখানে ব্যক্তিবিশেষ কি পার্টিবিশেষ যা খুশি বা যেমন খুশি তেমন করে ভাষা প্রয়োগ করতে পারে না। সে সব দেশে রাজনৈতিক মতামতের স্বাধীনতা আছে কিন্তু সে স্বাধীনতা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্য নয় বা রাষ্ট্রের স্বার্থ বা অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে, এমন অন্তর্ঘাতী কোনো কাজ করার জন্য নয়। রাষ্ট্রের মঙ্গলের জন্য বহুমুখী করে তোলাই এবং মতামতের পার্থক্য সত্ত্বেও নির্দিষ্ট কতকগুলো কর্মসূচির ভিত্তিতে কাজ করে যাওয়ার জন্য তাদের একত্র করার এই ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রধান লক্ষ্য। পক্ষান্তরে উন্নয়নশীল অনেক দেশে স্বৈরতন্ত্রে ত্যক্তবিরক্ত ও বেগতিক হয়ে ব্যক্তিস্বাধীনতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেরাই নিজেদের শত্রু বনে যায়। দেশে মানবাধিকারের সংকট মোকাবিলা করতে না পেরে বিদেশের কাছে নালিশ দিতে বাধ্য হয়। বিদেশিরাও এই সুযোগে স্বৈরতন্ত্র বা ক্ষমতাসীনকে শক্তিশালী ক্ষমতা প্রয়োগের ব্যাপারে দরকষাকষির মাধ্যমে গোটা দেশ ও সমাজকে রীতিমতো জিম্মি করে ফেলে।
সাড়ে ছয় দশক আগে ঔপনিবেশিক পরিবেশে অধ্যাপক আবদুল হাই যা দেখেছিলেন, আজ স্বাধীন সার্বভৌম পরিবেশেও তার অবস্থানে তেমন হেরফের ঘটেনি বরং বিপর্যস্ততার মাত্রা ও গতি বেড়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। পরিশেষে এ ব্যাপারে অধ্যাপক হাইকে উদ্ধৃত করা যায় :
‘রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করবার জন্য তাদের আদর্শ ও উদ্দেশ্য অনুসারে জনমত গড়তে গিয়ে দেশের ভাষাকে তাদের প্রচারমুখী আদর্শের বাহন করে তোলে। রাজনৈতিক দলের আদর্শ যদি উন্নত না হয়, লক্ষ্য যদি অভ্রান্ত না থাকে এবং দেশের বৃহত্তর কল্যাণের দিকে নজর না দিয়ে আদর্শগত ও আর্থিক ব্যবস্থাজনিত কর্মসূচি যদি তারা তৈরি না করে কিংবা রাজনৈতিক দর্শন অনুসারে দলের শিক্ষাব্যবস্থার কোনো রাজনৈতিক দল তাদের না থাকে, তাহলে যেন-তেন প্রকারে ক্ষমতাসীন হওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো কলহ-কোন্দলে লিপ্ত হয় ফলে রাজনীতির ভাষা শালীনতা হারায়। আদর্শগত সংগ্রাম বা নীতি প্রচারের বাহন না হয়ে ভাষা তখন কবিয়ালদের খেউড় গানের বাহনের মতো হয়ে ওঠে এবং ভাষার মানও অচিন্তনীয়ভাবে নিচে নেমে যায়। আমাদের অতীত রাজনৈতিক জীবনের দুর্গতির মধ্যে আমাদের নেতাদের ভাষা ব্যবহারের রূপ ও ধরনই আমাদের এ উক্তির সমর্থন করে।’
লেখক: কলাম লেখক ও উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।