
২০১০ সালে ভোলার চর কুকরিমুকরি বনের ১৫ হাজার গাছের প্রাণভিক্ষা চেয়ে লিখেছিলাম। ‘১৫ হাজার গাছের প্রাণভিক্ষা চাই’ শিরোনামে দৈনিকে প্রকাশিত লেখাটি নিয়ে আলাপ ওঠেছিল তখন। চর কুকরিমুকরি বনের উত্তরাংশ বাবুগঞ্জ থেকে পাতিলার বুড়াগৌরাঙ্গ নদ পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২০ ফুট প্রশস্ত পাকা সড়ক নির্মাণের জন্য কুকরিমুকরি ইউনিয়ন পরিষদ বন বিভাগে আবেদন করে। ১৬ মে ২০১০ তারিখে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ন্যূনতম গাছ কাটার শর্তে সড়ক নির্মাণের অনুমতি দেয়। সড়কপথে দ্বীপচরে যাতায়াতের জন্য মাত্র ১৫ মিনিট সময় বাঁচাতে প্রাণদন্ড দেয়া হয়েছিল ১৫ হাজার গাছের। কেওড়া, সুন্দরী, বাইন, পশুরের মতো অবিস্মরণীয় সব ম্যানগ্রোভ বৃক্ষপ্রজাতি।
চর কুকরিমুকরির পর এবার ভোলার ঢালচরের উপকূল বন বিপদে পড়েছে। উপকূল বন নিশ্চিহ্ন করে ঘরবাড়ি, বাণিজ্যিক মাছের ঘের, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এ ছাড়া বনের গাছ কেটে ইটভাটায় বিক্রি হচ্ছে। গণমাধ্যমে প্রকাশ, ঢালচরের প্রায় একশ একর বনভূমি উজাড় হয়েছে এভাবেই। মূলত বসতি স্থাপন, বেদখল, মাছের ঘের ও মাছ-ঘাট, এবং ইটভাটার কারণে। ঢালচর ইউনিয়নের চর সত্যেন মৌজার মাঝের চরে প্রায় ৭১ একর অরণ্যভূমি উজাড় করা হয়েছে। পুরো অঞ্চলে নিথর হয়ে পড়ে আছে বহু নিহত গাছের গুঁড়ি। চারধারে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এই রক্তাক্ত লাশ খ-গুলোই জানান দিচ্ছে কী নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এক উপকূল বন। গণমাধ্যম জানায়, দ্রুত গাছ কাটার জন্য এখানে ভেকু মেশিন (যন্ত্রচালিত এক্সকাভেটর) ব্যবহার করা হয়। বন নিধনে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ জড়িত থাকলেও গণমাধ্যমের কাছে এ অভিযোগ অস্বীকার করে।
বন কেটে দখল নিয়ে যারা বসত গড়েছেন তাদের সবার ভাষ্য হলো, নদীভাঙনে বসতবাড়ি হারিয়ে এই বিরান হওয়া বনভূমিতে তারা আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, প্রাকৃতিকভাবে তো এই বন বিরান হয়নি, নিষ্ঠুরভাবে একে বিরান করা হয়েছে। ঢালচরসহ ভোলা ও উপকূল অঞ্চলে মূলত প্রাকৃতিকভাবেই বিশেষ ম্যানগ্রোভ বন গড়ে ওঠে। ঢালচর সংরক্ষিত বনের আওতায় প্রায় ১০ হাজার হেক্টর এলাকা আছে। স্থানীয় বন বিভাগের ভাষ্য, ১৯৭৬ সালে ঢালচরের মাঝেরচরে বৃক্ষরোপণ করা হয় এবং নদীভাঙনকবলিত মানুষের আশ্রয়ের নামে ইতিমধ্যে ৭৬ একর বন উজাড় হয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে বন উজাড়ের ঘটনায় বন বিভাগ ৩৫টি মামলা করেও বন বিনাশ রোধ করতে পারেনি। জোয়ার-ভাটা ও ভূমি ভাঙা-গড়ার ভেতর দিয়ে চরফ্যাশনের বাস্তুতন্ত্র প্রতিনিয়ত বিকশিত হচ্ছে।
ঢালচর, পূর্বেরচর, ভাসানচর, বয়ারচর, চর আলিম, আন্ডারচর, কলাগাছিয়াচর ও শিবচরের মতো ভূখ-গুলো প্রায় ৮ হাজার একর ভূমি নিয়ে নতুনভাবে জেগেছে। এসব ভূমিতেও জোয়ার-ভাটায় ভেসে আসা বীজ দিনে দিনে নতুন বন-প্রতিবেশ গড়ে তুলবে। ঢালচরসহ পুরো উপকূল অঞ্চলের প্রাকৃতিক দুর্যোগ-প্রহরী এই উপকূল বনগুলো। নিয়ত ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, তীব্র তাপপ্রবাহ সব আপদ নিজের জীবন দিয়ে সামলিয়ে উপকূলকে নিরাপদ রাখে বনের বৃক্ষকুল। আর উপকূল-প্রহরী এই গাছগুলোকে খুন করে আমরা উপকূলকে বারবার বিপদের দিকে ঠেলছি। বৃক্ষপ্রাচীর ও বন ছাড়া আপদন্ডবিপদ সামাল দেয়া সম্ভব নয়।
সত্তরের ঘূর্ণিঝড়, বিধ্বস্ত মনপুরা কিংবা সিডরের অভিজ্ঞতা কী বলে? সুন্দরবনসহ উপকূল বনভূমি ও বৃক্ষকুল প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি ও মাত্রা নিজের জীবন দিয়ে দুর্বল করেছে। উপকূলে বন না থাকলে সব আপদন্ডবিপদে আমাদের ক্ষয়ক্ষতি অসহনীয় হয়ে উঠত। কিন্তু আমরা আমাদের উপকূলের বৃক্ষকুল ও বনের কাছে একবিন্দু কৃতজ্ঞতাও জারি রাখিনি। বরং প্রতিদিন উপকূল বনকে ল-ভ- রক্তাক্ত করছি। ঢালচরের উপকূল বন সামগ্রিকভাবে সুরক্ষা করতে হবে। বৃক্ষ ও বন নিধনের সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইন ও বিচারের আওতায় আনতে হবে। ঢালচরসহ উপকূল বনের সামগ্রিক পরিস্থিতি এবং করণীয় বিষয়ে রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকার ও তৎপরতা স্পষ্ট করতে হবে।
আয়তনে ছোট্ট হলেও প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে বাংলাদেশ অনন্য। সমতল, অববাহিকা, বরেন্দ্র, গড়, টিলা, পাহাড়, চর এলাকার পাশাপাশি দেশের নোয়াখালী, ভোলা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সুন্দরবন অঞ্চলের উপকূল-চর ও দ্বীপগুলো দেশকে দিয়েছে বিশেষ আমেজ ও গতিময়তা। নোয়াখালীর নিঝুপ দ্বীপ, সুখচর, হাতিয়া, তমরুদ্দিন, নলচিরা, চান্দনন্দি, হারনি, চর কিং, বয়রারচর, চরপিয়া; ভোলার মনপুরা, চর মনিকা, চর সাকুচিয়া, চরনিজাম, ঢালচর, চর কুকরিমুকরি, গাজীপুর, ভেদরিয়া, সোনাচর, হাজিরহাট, চর নিউটন, চর পাতিলা, চর লক্ষ্মী, চর আইচা, নীলকমল, মদনপুর, মেদুয়া; চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ; কক্সবাজারের মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সেন্টমার্টিন বা নারিকেল জিঞ্জিরা, সোনাদিয়া, শাহপরীর দ্বীপ এবং সুন্দরবন অঞ্চলের আন্ডারচর, ডিমেরচর, দিয়ারচর, কালীরচর বা দুবলারচর দেশের গুরুত্বপূর্ণ উপকূল চর ও দ্বীপাঞ্চল। নদীপ্রবাহের বিস্তীর্ণ পলিমাটিতে গড়ে ওঠা এসব চর-দ্বীপ। মহেশখালী শৈল দ্বীপ আর সেন্টমার্টিন প্রবাল দ্বীপ। প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক নানা বিন্যাস গড়ে উঠেছে এসব অঞ্চলে। এসব দ্বীপে প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে নয়া ম্যানগ্রোভ বাস্তুসংস্থান। মাছ, পাখি, সরীসৃপ, কাছিমসহ জলজ ও স্থলজ প্রাণবৈচিত্র্যের এক অবিস্মরণীয় আখ্যান তৈরি হয়েছে দেশের দ্বীপগুলোতে।
জলোচ্ছ্বাস ও ঝড় থেকে দেশের ভূগোল বুক আগলে সুরক্ষা দিয়ে চলেছে এসব দ্বীপাঞ্চল। শত-সহস্র মাছের জোগান দিয়ে তরতাজা রাখছে রাষ্ট্রের অর্থনীতি। কিন্তু নিদারুণভাবে বাংলাদেশের উপকূল-চর ও দ্বীপগুলো এক ‘অচ্ছুত’ এবং বঞ্চিত ভূগোল। এখানকার প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশ নিরাপত্তা কোনো বিবেচনায় রাখা হয় না। এসব উপকূল চর ও দ্বীপগুলোর পরিবেশবিনাশ কিংবা সামাজিক সংঘাতের খবর খুব একটা প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েও আসে না। দেখা গেছে, একেবারেই স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী এখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ, বাণিজ্য ও বিনাশ করে। এমনকি বৃহৎ অবকাঠামো, খনন, বাণিজ্যিক পর্যটন, করপোরেট মনস্তত্ত্বও উপকূল বনের প্রাকৃতিক বিকাশের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশেষ করে উপকূল চরের বন বাস্তুতন্ত্র এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি নিপীড়িত। বসতি স্থাপন কিংবা বাসস্থান সম্প্রসারণের নামে সবচেয়ে প্রথম কোপ পড়ে উপকূল বনে। এভাবেই আমরা হারিয়েছি চর কুকরিমুকরি কিংবা ঢালচরের বিশাল অংশ।
ঢেউয়ে ভেসে আসা কেউরগুলা, ছুনে গুলা, শিউলি গুলা, গাকগুলা, কেয়াড়াগুলা, সুগুলা, উন্দুরাগুলা, চরিকগুলা, গুরুপ ফলগুলো মাছের জালে উঠে বা হাতেও ধরা যায়। নানান জাতের ইলিশ, পাতা মাছ, ব্যাঙ মাছ, আটগোড়া মাছ উপকূল চর-দ্বীপের অনন্য প্রাণসত্তা। উপকূলীয় অনেক চর-দ্বীপে বিকশিত হওয়া ম্যানগ্রোভ বাস্তুসংস্থানে শেয়াল, কাঠবিড়ালি, গুইসাপের পাশাপাশি হরিণেরও বংশবিস্তার ঘটছে। বিশ্বব্যাপী ঝুঁকিতে থাকা চামচঠুঁটো বাটান পাখির বিচরণস্থল ঢালচরসহ আশপাশের উপকূল চরভূমি। যদি ঢালচরের বন সুরক্ষিত না থাকে তবে বহু বন্যপ্রাণ অচিরেই তাদের বিচরণ অঞ্চল ও খাদ্য উৎস হারাবে। ধীরে ধীরে প্রকৃতি থেকে নিশ্চিহ্ন হতে বাধ্য হবে।
সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করবে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ নিরাপত্তা বিধান করবে। সংবিধানের অঙ্গীকার অনুযায়ী ঢালচরের বনভূমি ও প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। নদীভাঙা মানুষের আশ্রয়স্থল নিশ্চিত করা জরুরি, কিন্তু সেটি প্রাকৃতিক বন উজাড় করে নয়। ঢালচরের বন বিষয়ে রাষ্ট্রকে অঙ্গীকার করতে হবে। বন বিভাগ, স্থানীয় সরকার এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে ঢালচরের বন সুরক্ষায় তৎপর হতে হবে। স্থানীয় মানুষদের ঢালচরের বন ব্যবস্থাপনার সামগ্রিক কাজে যুক্ত করা যেতে পারে। কারণ এই বন সব আপদন্ডবিপদ থেকে চরবাসীকে সুরক্ষিত রাখছে। নির্দয়ভাবে বনের বিনাশ বন্ধ করে বনের প্রতি ঢালচরের প্রতিজন নাগরিককে সামাজিক ঢাল হিসেবে দাঁড়াতে হবে। ঢালচরের প্রাকৃতিক ঢাল উপকূল-বন আর বনের ঢাল ঢালচরের জনগণ। প্রাকৃতিক ও সামাজিক ঢালের এই সংহতি সক্রিয় হলেই বিকশিত হবে ঢালচরের বন বাস্তুতন্ত্র।
লেখক: গবেষক, প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ
আলফ্রেড হিচকক বলেছিলেন, ‘Happiness is a small house, with a big kitchen.’ সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা তার প্রকাশিত ‘দ্য লাইট উই ক্যারি’ বইতে একই কথা বলেছেন। এটি তার তৃতীয় বই। সিএনএন, গার্ডিয়ান এরই মধ্যে বইটির রিভিউ করেছে। কারণ বইতে অনেক অজানা ও মজার তথ্য উঠে এসেছে।
মিশেল ওবামা বইয়ে লিখেছেন, তাদের রান্নাঘরের টেবিল ভালো ছিল। সুন্দর ছিল। দিনে একবেলা হলেও পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে বসে খেতেন এবং নিজেদের সেদিনের কাজের ফিরিস্তি গল্পচ্ছলে তুলে ধরতেন। একজন অন্যজনের কাজের সমালোচনাও করতেন। এতে তাদের পরিমিত খাওয়া হতো, কিন্তু জরুরি ভাব-বিনিময়ও হতো। তিনি বলেন, জীবনের বড় চ্যালেঞ্জগুলোর কোনো পরিপাটি সমাধান বা মর্মস্পর্শী উত্তর অনেক সময় নাও থাকতে পারে। কিন্তু পরিবর্তনগুলোকে আরও ভালোভাবে নেভিগেট করতে এবং প্রবাহের মধ্যে স্থির থাকতে সাহায্য করার জন্য আমরা সবাই একটি সরঞ্জামের সেট খুঁজে পেতে ও তার ওপর নির্ভর করতে পারি। তাই দরকার সব রাজনীতিবিদের ঘরে একটা ‘রান্নাঘরের টেবিল’। এই টেবিলটি পারিবারিক ঘরেও থাকা জরুরি। এটি রাজনৈতিক সংলাপের জন্য জরুরি। এই টেবিল অনেকেই মেইনটেইন করতে পারেন না। তাই রাজনৈতিক দূরত্ব বাড়ে।
মিশেল ওবামা জানান, ডোনাল্ড ট্রাম্প যেদিন ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন সেদিন পাক্কা বিশ মিনিট কেঁদেছিলেন। এই ভেবে যে, তার তো রান্নাঘরের টেবিলে বসে কথা বলার অভ্যাসই নেই। এটি তিনি শুনেছিলেন ট্রাম্পের সাবেক বান্ধবী হেলসিয়ার কাছ থেকে। ট্রাম্প খাবারের টেবিলেও কোনো কথা বলেন না পারতপক্ষে। এক মনে ওয়াইন আর খাবার খান। পরিমিতিবোধ নেই। প্রচুর খান। এসবই হেলসিয়ার অভিজ্ঞতায় তিনি জানেন। এ ছাড়া কান্নার আরেকটি কারণ অবশ্য ছিল, একসঙ্গে ওবামা ও তিনি আটটি বছর হোয়াইট হাউসকে আগলে রেখেছিলেন।
রান্নাঘরের টেবিল বলতে আসলে একসঙ্গে বসে অন্তরঙ্গ মুহূর্ত কাটানোর কথাই তিনি বলতে চেয়েছেন।
রান্নাঘরের টেবিল ছিল না বলেই এমন ছিলেন ইয়াহিয়া, দাবি ছিল বেনজির ভুট্টোর।
এই হুটহাট সিদ্ধান্তের একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। এখন মার্চ মাস চলছে। কিন্তু ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে কী হয়েছিল শেখ মুজিব-ইয়াহিয়া খানের বৈঠকে? বিবিসি ও ইত্তেফাকের সে সময়ে প্রতিবেদন থেকে জানা যায়
ঢাকা তখন শেখ মুজিবের নির্দেশে চলছে। অসহযোগ আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে। ক্ষোভে উত্তাল পুরো দেশ। ১৫ মার্চ ইয়াহিয়া খান ঢাকায় এলেন। ১৬ মার্চ প্রথম বৈঠক। পরপর চারটি বৈঠক হয়। বঙ্গবন্ধু সেই আলোচনায়, সংবিধান কেমন হবে সে বিষয়ে ৬ দফার ওপরই গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। তেইশ তারিখেই এ বিষয়ে একটি খসড়া হস্তান্তর করা হয় ইয়াহিয়ার উপদেষ্টাদের কাছে।
চব্বিশ তারিখে চূড়ান্ত বিবৃতি কী হবে সেটা আওয়ামী লীগ নেতা ড. কামাল হোসেনকে টেলিফোন করে জানানোর কথা ছিল পাকিস্তানি পক্ষের।
কিন্তু জানানো হয়নি। উল্টো ২৫ মার্চ রাত থেকে হামলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন ইয়াহিয়া খান। মজার ব্যাপার, সেই বৈঠকগুলোতে শেখ মুজিবের পক্ষ থেকে ভালো খাবারের আয়োজন ছিল। কিন্তু ইয়াহিয়া সেসব কিছুই খাননি বলা যায়, যা খেয়েছিলেন সেটা নিছক যেন দায়ে পড়ে। খেয়েছেন নিজের বয়ে নিয়ে আসা খাবার। এই যে খাবারের টেবিলেও অন্যের দেওয়া খাবারকে অসম্মান করা, এটা ইয়াহিয়ার বৈরী মনোভাবেরই প্রকাশ।
আমরা ওয়ান ইলেভেনের সময় জানি, দুই নেত্রী যখন জেলে তখন একটা খবর অনেক পত্রিকাতেই প্রকাশ পেয়েছিল শেখ হাসিনা নিজে রান্না করে খালেদা জিয়ার জন্য খাবার পাঠিয়েছিলেন এবং সেটা খালেদা জিয়া খেয়েছিলেন। মানে গভীর সংকটে নৈকট্য দরকার দুই নেত্রীই একটু হলেও বুঝেছিলেন। কিন্তু ওয়ান ইলেভেনের পর, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যখন সরকার গঠন হলো ও পরে একটি জাতীয় নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে সংলাপের জন্য গণভবনে নৈশভোজে দাওয়াত দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা, সেটা নিয়েও কথা আছে। এ সময় দুজনের যে আলাপ হয়েছিল সেসব বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, টিভিসহ ইউটিউবে এখনো খুঁজলে পাওয়া যাবে। সেই দাওয়াতে যাননি খালেদা জিয়া। পরে কোকোর মৃত্যুর পর শেখা হাসিনা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে তার বাসায় গেলেও, খালেদা জিয়া দেখা করেননি।
তবে রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে খালেদা জিয়া গিয়েছিলেন বঙ্গভবনে। সেটা ২০১৬ সালে। প্রথমে ফলের শরবত দেওয়া হয়। পরে কাজুবাদাম, চিকেন পেটিস, ফিশফিঙ্গার, চিকেন স্যান্ডউইচ, গুড়ের সন্দেশ, শেষে চা এবং কফি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। এ রকম শেখ হাসিনার দাওয়াতে যেতে পারতেন খালেদা জিয়া। কিন্তু না যাওয়ায় সংলাপের সম্ভাবনা বন্ধ হয়।
পরের ফলাফল সবাই জানেন।
আমরা শেখ হাসিনার নিজের রান্না করা, মাছ ধরা, খাওয়ানোর পারিবারিক ছবি মাঝেমধ্যেই দেখি। এ ছবিগুলো আমার ধারণা, তার বিরুদ্ধ শিবিরের সমর্থকরাও নিশ্চুপ পছন্দ করেন। যত সময় যাচ্ছে, দেশে জাতীয় নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসছে। আশা করছেন অনেকে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতা হোক। সংলাপ হোক খাবার টেবিলে।
সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির বাড়িতে শেখ হাসিনা গিয়েছিলেন। মেন্যু ছিল ১৯ পদের, যা নিয়ে ফেসবুকে অনেকে ট্রল করেছেন। দুপুরের খাবারের মেন্যুতে ছিল রুই মাছের দোপেঁয়াজা, কাতল মাছের দোপেঁয়াজা, চিতল মাছের দোপেঁয়াজা, আইড় মাছের দোপেঁয়াজা, পাবদা মাছের দোপেঁয়াজা, গোলসা টেংরা মাছ দোপেঁয়াজা ও কালবাউশ মাছের দোপেঁয়াজা।
এ ছাড়া ছিল শোল মাছ ভুনা, বাইম মাছ ভুনা, চিংড়ি মাছ ভুনা, বোয়াল মাছ ভুনা, গ্রাস কার্প ভুনা, বাচা মাছ ভুনা, রিঠা মাছের ঝোল, পাঙাশ মাছের ঝোল, মসুর ডাল, সালাদ এবং রসমালাই। কিন্তু এটা কেন ট্রল হলো বোঝা গেল না। এটা হচ্ছে বাঙালির আতিথেয়তা।
শেষ করি, একটা শহরের কথা বলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সান্টা ফে নামে এক প্রাচীন শহর রয়েছে। সেই শহরে রয়েছে একাধিক জাদুঘর। সেই একাধিক জাদুঘরে রয়েছে রান্নাঘরের জিনিসপত্রে ঠাসা। থালা, গ্লাস, কত কী? এগুলো ব্যবহার করত রেড ইন্ডিয়ানদের এক প্রজাতি নাভাহো ইন্ডিয়ানরা। এই রান্নাঘরের টেবিলেই বোনা হয় পরিবারের সব সদস্যের মধ্যে ভালোবাসার সুতা।
এই একই কথা বললেন ইরানের মেয়ে সামিন নোসরত। থাকেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সম্প্রতি একটি বই লিখেছেন। বইয়ের নাম ংধষঃ ভধঃ ধপরফ যবধঃ। বলেছেন, পশ্চিমা দুনিয়ায় এখন আর রান্নাঘর সামলানোর ব্যাপারটি শুধু নারীর মধ্যে নেই। এখন নারীও জব মার্কেটে, পুরুষও। ফলে রান্নাঘরেও পুরুষকে ভূমিকা রাখতে হয়। এটাই সভ্যতা। সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা হয় রান্নাঘর থেকেই। ভালোবাসা হয় রান্নাঘরের টেবিলে।
সামিন নোসরতও মিশেল ওবামার মতো মনে করেন, বিশ্বের সব রাজনীতিককেই রান্নাঘরের টেবিলকে রাজনৈতিক সমঝোতার নতুন ফেনোমেনা হিসেবে গুরুত্ব দিতে হবে।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
(প্রথম কিস্তি)
প্রেষণে দু-দফায় প্রায় ৭ বছর দুদকে (দুর্নীতি দমন কমিশন) কাজ করা হয় আমার। প্রথমবার আসি ২০০৯-এর ১ ডিসেম্বর, পরিচালক (প্রসিকিউশন) পদে। পদস্থ হওয়া যায়নি সঙ্গে সঙ্গে, বেতন নেই অ-পদস্থের দু-মাস ধরে; আইন মন্ত্রণালয়, সংস্থাপন (২ মে ২০১১ থেকে যা জনপ্রশাসন) মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং শেষে দুদকেও চক্কর ঘুরে ঘুরে (সে দুঃখের কাহিনি আপাতত থাক) অবশেষে পদস্থ হই ২০১০-এর ২৪ জানুয়ারি। দুদকে আসার আগে ছিলাম যশোরের অতিরিক্ত জেলা জজ। সে-দফায় দুদকে বছর তিনেক প্রেষণ খেটে জেলা জজে পদোন্নতি পেয়ে ফিরে যাই জজিয়তিতে। জেলা জজগিরি দুটো বছর পুরতে না পুরতে আবার প্রেষণে পড়ে যাই দুদকে, ২০১৫-এর মার্চের শেষে এসে বসি লিগ্যাল উইংয়ের মহাপরিচালক পদে। শেষ এ-দফায় দুদকে চারটা বছরে আমার জজিয়তি চাকরির শেষকালটুকুও ফুরিয়ে চলে আসি অবসরে। দু-দফার ওই স্বল্পকালে দুদককে দেখেছি ভেতরে থেকে, দেখছি এখন বাইরে থেকে।
দুদক সম্পর্কে খোদ চেয়ারম্যানেরই এক সময়ের (২০০৯ সালের শেষভাগের কিছু আগে) উক্তি (খেদোক্তি!) ছিল, ‘নখদন্তহীন বাঘ’! ‘শুধু চুনোপুঁটি ধরে, রাঘববোয়াল পারে না আটকাতে’ ইত্যাদি নানা কথা বলে লোকে দুদক সম্পর্কে। এসব গভীর ব্যাপারের কথায় যেতে হবে আরও গভীরে! আপাতত আসি যা দেখে এসেছি, যা দেখা যায় ওপরে ওপরে, সে-সব কথায়। যে-সব কথা বলেছি (কখনো লিখে, কখনো মুখে) সময়ে সময়ে দুদকে, যখন ছিলাম সেখানে; যে-সব কথা বলে এসেছি (লিখে) ২০১৯-এর মে মাসের শেষে দুদক থেকে আমার পাততাড়ি গুটিয়ে চলে আসার সময়ে। তখন হাতে ছিল দুদকের সদ্য প্রকাশিত ২০১৮ সালের বার্ষিক রিপোর্ট। চার বছর আগের সার্বিক চিত্র যা দেখা যায় সেই রিপোর্টে আর এখন যা উঠে আসে সংবাদমাধ্যমগুলোতে, তাতে অবস্থার খুব একটা কি উন্নতি হয়েছে দুদকে!
অনুসন্ধান : দুদকের ২০১৮ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, সে-বছর আগের পেন্ডিং-এর সঙ্গে তার প্রায় ৫০% নতুন অনুসন্ধান এসে যোগ হয়; নিষ্পত্তি হয় মোটের ওপর মাত্র প্রায় ২৪%, যার প্রায় ৭৫% হয় পরিসমাপ্ত। সম্পদের অনুসন্ধানে আগের পেন্ডিং-এর সঙ্গে তার প্রায় ৩৫% নতুন এসে যোগ হয়; নিষ্পত্তি হয় মোটের ওপর মাত্র প্রায় ১৮%, যার প্রায় ৭০% হয় পরিসমাপ্ত। মানিলন্ডারিং-এর অনুসন্ধানে আগের পেন্ডিং-এর সঙ্গে তার প্রায় ৬৩% নতুন এসে যোগ হয়; নিষ্পত্তি হয় মোটের ওপর মাত্র প্রায় ১৭%, যার প্রায় ৫০% হয় পরিসমাপ্ত। [শতকরা হারের এ-হিসাবগুলো বের করতে হয়েছে রিপোর্টে দেওয়া সংখ্যাগুলোর হিসাব কষে কষে। আদালতের মামলা সংক্রান্তে লিগ্যাল উইংয়ের অংশে ছাড়া অন্য কোনো উইংয়ের তথ্যে শতকরার হিসাব দেখানো থাকে না দুদকের বার্ষিক রিপোর্টে।]
তদন্ত : তদন্তের ক্ষেত্রে ওই রিপোর্ট থেকে দেখা যায় আগের পেন্ডিং-এর সঙ্গে তার প্রায় ৪৭% নতুন এসে যোগ হয়; নিষ্পত্তি হয় মোটের ওপর মাত্র প্রায় ৩২%, যার মাত্র প্রায় ৪৮% চার্জশিট হয়। সম্পদের তদন্তে আগের পেন্ডিং-এর সঙ্গে তার প্রায় ২৩% নতুন এসে যোগ হয়; নিষ্পত্তি হয় মোটের ওপর মাত্র প্রায় ১৩%, যার প্রায় ৭৪% চার্জশিট হয়। মানিলন্ডারিং-এর তদন্তে আগের পেন্ডিং-এর সঙ্গে তার প্রায় ৩৪% নতুন এসে যোগ হয়; নিষ্পত্তি হয় মোটের ওপর মাত্র প্রায় ২৫% এবং তার সবগুলোতেই চার্জশিট হয়।
পর্যবেক্ষণ : আগের ও পরের বছরগুলোর চিত্রও পাওয়া যাবে প্রায় এরকমই। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, বছরে অনুসন্ধান-তদন্তে নিষ্পত্তির চেয়ে পেন্ডিং থাকে বেশি, ক্রমশ বোঝা বাড়ছে। নিষ্পত্তির ফলে প্রকাশ, বেশিরভাগ কাজই গেছে বিফলে। অর্থাৎ, দুদকের জনবলের আর কর্মদিবসের বেশিরভাগই যায় নিষ্ফল কাজে। ‘সিস্টেম লস’-এর হারই বেশি এখানে। কেন এ-অবস্থা হয়ে আসছে তা খতিয়ে দেখা জরুরি; কেননা, এ-অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় তো সন্ধান করতে হবে। কারণ আর করণীয় খুঁজে পেলেই জনবলের সদ্ব্যবহার ও সর্বোত্তম কাজ সম্পাদন নিশ্চিত করা যেতে পারে। মানুষের যে প্রত্যাশা তার অনেকখানিই পূরণ করা যায়। খুঁজে দেখা দরকার দুর্বলতাটা কোথায়? অভিযোগ অনুসন্ধানে নেওয়ার ক্ষেত্রে ভুল ছিল? নাকি অনুসন্ধানই সারা হয়েছে ত্রুটিপূর্ণভাবে? নাকি তদন্তে গাফিলতি হয়েছে?
অভিযোগ নিজে যাচাই-বাছাই করে নিয়ে অনুসন্ধান শেষ করে দুদক যে-মামলা করে তা তদন্তে প্রমাণ না হওয়ার দায় তো আর কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করার সুযোগ নেই দুদকের। সবটাই দুদক নিজে করে স্বাধীনভাবে (লোকে যাই বলুক, আমি তো জানি স্বাধীনতার কমতি নেই আইনে)। আমার অভিজ্ঞতা হলো, দুর্বলতা কম বেশি তিনটি ক্ষেত্রেই অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ে আছে, অনুসন্ধানে আছে, তদন্তেও আছে। সব ক্ষেত্রে কার্যকর তদারকির অভাব তো প্রকটভাবেই আছে। আদালত থেকে যে ৩০% থেকে ৪০% খালাস হয়, তার মাত্র ২৫% থেকে ৩০% আপিল করা যায়, বাকি ৭০%-এ আপিল করার কোনো পয়েন্ট-গ্রাউন্ডই পাওয়া যায়নি তদন্তে ত্রুটির কারণে।
কারণ ও করণীয় : (১) অভিযোগ অনুসন্ধানে নেওয়া বা না নেওয়া, অনুসন্ধান পরিসমাপ্তি বা মামলা দায়ের কোনোটাই হয় না কমিশনের অনুমতি ছাড়া; তদন্ত শেষে চার্জশিট বা চূড়ান্ত রিপোর্ট (এফআরটি) সবটাই হয় কমিশনের অনুমোদনে; তাহলে, ব্যর্থতার প্রথম দায়ভার তো খোদ কমিশনেরই (!); অনুমতি-অনুমোদনের কাজটি প্রশাসনিক নয় মোটেও, পুরাপুরি না হলেও আধা-বিচারিক (কোয়াসি-জুডিশিয়াল) তো বটেই (বিচার কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন কমিশনার রাখা হয় কি শুধু শুধুই!); কমিশন বিচার-বিচক্ষণতা দিয়ে প্রকৃত দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করবে এবং নিশ্চিত শাস্তির অকাট্য সাক্ষ্য-প্রমাণসহ তাদের বিচারে সোপর্দ করবে বলে মনে করেই তো আইন-বিধিতে কমিশনের এই অনুমতি-অনুমোদনের পূর্বশর্ত-বিধান যুক্ত করা হয়েছে; কিন্তু, বিচার-বিচক্ষণতা প্রয়োগের বদলে কাজগুলো প্রায়শ হয়ে থাকে ‘রুটিন-ওয়ার্ক’-এর মতো করে; কমিশনকে সেই বিচার-বিচক্ষণতা ঠিকভাবে প্রয়োগের ‘নখদন্ত’ কাজে লাগাতে হবে সবার আগে;
(২) অনুসন্ধানের সিংহভাগই নেওয়া হয় দায়ের হওয়া অভিযোগ থেকে; সেগুলোতে বড়সড় দুর্নীতির খবরের চেয়ে বেশি থাকে ব্যক্তিগত ভোগান্তির ছোটখাটো ঘটনা আর ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাবার বাসনা; বড় বড় দুর্নীতি (রাঘববোয়াল লোকে বলে যাকে) ধরতে হলে দুদকের নিজস্ব গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে নিশ্চিত তথ্য সংগ্রহে জোর দিতে হবে এবং নিজস্ব সূত্রে সংগৃহীত সেই তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান কাজ বাড়াতে হবে; তা না হলে মানসম্পন্ন ও গুরুত্বপূর্ণ কাজের পরিমাণ বাড়ানো যাবে না, চুনোপুঁটির গন্ধও যাবে না;
(৩) দায়ের হওয়া অভিযোগ ও অন্যান্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে যাচাই-বাছাই দরকার; সেগুলোতে দুর্নীতি সংঘটনের আপাত সত্যতা আছে কি না তা নির্ধারণই যাচাই-বাছাইয়ের মূল কাজ; সেই আপাত সত্যতা পাওয়া গেলেই কেবল অভিযোগ অনুসন্ধানে নিতে হবে; তা না হলে অনুসন্ধান কাজের চাপ কমানো এবং সফল অনুসন্ধানের হার বাড়ানো যাবে না;
(৪) অনুসন্ধান কাজ পাওয়ামাত্রই অভিযুক্ত ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নোটিস দিয়ে ডাকার ব্যুরো আমলের প্র্যাকটিস ও হাল আমলের ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ ট্যাক্টিক অবশ্যই পরিহার করে করতে হবে; তাতে কাজের কাজ হওয়ার চেয়ে ওই সব মানুষের হয়রানি আর মর্যাদাহানিটাই বেশি হয়; অনুসন্ধান পরিসমাপ্ত করে ছেড়ে দিলে তাদের খুশি হওয়ার চেয়ে ‘ক্লিন সার্টিফিকেট’ দেয় বলে দুদকের বদনামিটাই বেশি রটে; আবার, অনেক অভিযুক্ত নোটিস পেয়েই ছুট দেয় হাইকোর্টে, অনুসন্ধান কাজ স্থগিত করিয়ে ফেলে শুরুতেই; অনেক বছর পরে যখন রিটটি খারিজ হয় তখন আর অনুসন্ধানে পাওয়ার মতো তথ্য-প্রমাণ অবশিষ্ট থাকে না;
(৫) অভিযুক্তের বিরুদ্ধে উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করার আগেই তাকে ডাকা মোটেও অর্থবহ হয় না; তার অজ্ঞাতেই কিছু তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করার পরে তাকে নিয়ে বসলে তার জিজ্ঞাসাবাদ অর্থবহ হবে; উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ কিছু সংগ্রহ করা গেলে তবেই অভিযুক্তকে ডাকার নিয়ম চালু করতে হবে; ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র রাখার দরকার হলে তা চিহ্নিত করার মাপকাঠি ও বিবেচনার দিকগুলো সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে;
(৬) সবার আগে ডাকা দরকার (ডাকার কথাও) অভিযোগকারী-তথ্যদাতাকে: অভিযোগে উল্লিখিত ঘটনার বিস্তারিত বুঝে নেওয়ার জন্য, আরও কিছু তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার জন্য, আরও কিছু সূত্র পাওয়ার জন্য; বেশিরভাগ সময়ই তা করা হয় না, তার অভিযোগের ভিত্তিতে যে অনুসন্ধান চলছে সে-খবরও অভিযোগকারী-তথ্যদাতা পায় না, থাকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে। সফল অনুসন্ধানের জন্য অভিযোগকারী-তথ্যদাতাকেই (যেটাতে থাকে) সবার আগে ডাকতে হবে; অবশিষ্ট কারণ ও করণীয় পরবর্তী কিস্তিতে।
(চলবে)
লেখক: প্রবন্ধকার ও আইনগ্রন্থকার অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ ও দুদকের সাবেক মহাপরিচালক
১৮৩২ সালের ২২ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন বিশ্ববিখ্যাত জার্মান লেখক ও কবি ইয়োহান ভোলফগাং ফন গ্যোটে। গ্যোটে একাধারে কবিতা, নাটক, সাহিত্য, ধর্মতত্ত্ব, মানবতাবাদ ও বিজ্ঞানে অবদান রেখেছেন। তার জন্ম ২৮ আগস্ট, ১৭৪৯ সালে। বাবা ইয়োহান ক্যাস্পার গ্যোটে, মা এলিজাবেথ ক্যাথারিন। ১৭৬৫ থেকে ১৭৬৮ সাল পর্যন্ত গ্যোটে লাইপজিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। আইনশাস্ত্রের সনদ নিয়ে আইন পেশায় এসেছিলেন। একই সঙ্গে চলে তার সাহিত্য রচনা। ১৭৯০ সালে আট খণ্ডে গ্যোটে রচনাবলি প্রকাশিত হয়। এ সময় তিনি জ্যোতির্বিদ্যা, অস্থিবিদ্যা, আলোকবিদ্যা ও উদ্ভিদের রূপান্তরবিদ্যা গবেষণায় গভীরভাবে আত্মনিয়োগ করেন। ১৭৯৪ সালে জার্মানির আরেক বিখ্যাত কবি শিলারের সঙ্গে তার গভীর বন্ধুত্ব হয়। বলা হয়, পুরো বিশ্বের সাহিত্যে এ রকম বন্ধুত্বের দৃষ্টান্ত বিরল। গ্যোটের সেরা সাহিত্যকীর্তি হচ্ছে দুই খণ্ডের নাটক ‘ফাউস্ট’ যাকে বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম সেরা রতœ হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। ষোড়শ শতাব্দীর বিখ্যাত জার্মান উপকথা ফাউস্টের ওপর ভিত্তি করে এই নাটক লেখা হয়। ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে ‘ফাউস্ট’ প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়। ১৮২৩ সালের শুরুতে তিনি কঠিন রোগে আক্রান্ত হন। ১৮২৮ সালে ৪০ খণ্ডের রচনাবলি শেষবারের মতো তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়। ১৮৩২ সালের ১৪ মার্চ গ্যোটে গাড়ি করে ভ্রমণে বের হন। ১৬ তারিখ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ২২ মার্চ মারা যান। রাজকীয় শবাধারে করে তার লাশ প্রিয় কবিবন্ধু শিলারের পাশে সমাহিত করা হয়।
আমাদের দেশে আইন আছে। আইনের প্রয়োগ নেই। যে কেউ, ইচ্ছামতো উদ্ধার করেন নিজস্বার্থ। সেখানে কে বঞ্চিত হচ্ছেন, কে নিপীড়িত হচ্ছেন সময় নেই দেখার। নিজেকে অর্থ সুগন্ধিতে, ভোগবিলাসে সম্পূর্ণ করাই আসল উদ্দেশ্য। প্রশাসনের অধিকাংশ ক্ষেত্রে, টাকার দাপট আলাদা রকম। সেখানে নৈতিকতা, সততা, কর্মনিষ্ঠতা এবং ত্যাগের কোনো মূল্য নেই। টাকা থাকলেই সব হয়ে যায়। সব পাওয়া যায়। যে কারণে আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন নতুন কিছু না।
এখন ডিজিটাল সময়। মানুষ দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছেন। জটিলতা এড়িয়ে কোনো কাজকে সহজে নিষ্পত্তির চেষ্টা করছেন। যে কারণে সরকারও ডিজিটাল পদ্ধতি সর্বক্ষেত্রে ছড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু সেখানেও সেই টাকা! সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরাসরি শিক্ষক বদলি বন্ধ করা হয়েছে ৩ বছর আগেই। কিন্তু নিয়ম থাকলেও বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে না দিয়েই, গত ৩ মাসে অধিদপ্তর থেকে শতাধিক বদলি হয়েছে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, ২০২০ সাল থেকেই সরাসরি বদলি বন্ধ করা হয়েছে। তবু মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে সততার বাকবাকুম!
গতকাল দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায় প্রকাশিত ‘টাকা হলেই বদলি’ শীর্ষক প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়, ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে। যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’ সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এজন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
কিন্তু বাস্তবে হচ্ছেটা কী! এই দুর্নীতি-অনাচারের দায় কোন কর্তৃপক্ষের? অর্থপিপাসু-ঘুষখোর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চিহ্নিত করা জরুরি। একই সঙ্গে অপরাধীর কঠিন শাস্তি নিশ্চিত না হলে কখনো, কোনো পদ্ধতিই কাজে আসবে না। ডিজিটাল সময়ে অ্যানালগ দুর্নীতিবাজ এই চক্রকে দ্রুত চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা দরকার।
প্রথম সেট ২৫ মিনিট, দ্বিতীয়টি ২৮ মিনিটে জিতলেন কার্লোস আলকারাজ। মনে হচ্ছিল কোয়ালিফায়ার ফ্যাভিও কোবোলিকে বুঝি উড়িয়েই দিচ্ছেন শীর্ষ বাছাই।
না, তৃতীয় সেটতে প্রতিরোধ গড়লেন ইতালিয়ান। সময় গড়ালো ঘন্টায়। শেষপর্যন্ত জয় এসেছে ৬৬ মিনিটে। ৬-০, ৬-২, ৭-৫ গেমে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ জিতে রাফায়েল নাদালের উত্তরসুরি ক্লে কোর্টের সর্বোচ্চ আসর শুরু করলেন।
নাদালের চোটজনিত অনুপস্থিতিতে শীর্ষবাছাই আলকারাজ। ২০২১ এ তৃতীয় রাউন্ড, গতবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিলেন। এবার আরো এগোলে সেমিফাইনালে নোভাক জকোভিচের সংগে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা।
সে দেখা যাবে। আপাতত দ্বিতীয় রাউন্ডে আলকারাজকে টপকাতে হবে জাপানের টি. দানিয়লেকে।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।