
দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার নির্যাসে ভাববাদী গীতি ও চারণ কবিরা, সাধু সন্ন্যাসীরা যে বাণী ও বয়ান রেখে গিয়েছেন তা অনুভবের আয়নায় প্রতিফলনের সময় ফুরিয়ে যায় না। কেননা ‘দিন থাকতে দ্বীনের সাধনা’র কথা ভুলিয়ে দেওয়ার প্রথম প্রয়াস আদি মানব মানবীর জীবনে স্বর্গ থেকে বিদায়ের কারণ হিসেবেই এসেছিল, এখনো যা আছে অব্যাহত। শিক্ষা নেওয়ার জন্যই ইতিহাস অধ্যয়ন, সময়ের উত্থান পতনের পটভূমি বোঝাবার জন্য অতীত রোমন্থন, কিন্তু সেই ইতিহাস যদি প্রতিষ্ঠা ও নির্মাণের নামে চর্বিত চর্বনে বিকৃত বিকারগ্রস্ত করা হয় তাহলে অতীত অনুসরণের মৌল ভূমিকায় ঘটে বিপত্তি। যে অনুসরণ বারবার ভুলিয়ে দিয়ে যায় সময়ের প্রবহমানতাকে, অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়ার পরিবর্তে বর্তমানকে দায় দায়িত্বহীন করার প্রয়াস প্রচেষ্টায় ভবিষ্যতের জন্য শুধু অন্ধকার অপেক্ষা করে। মানব সভ্যতার উত্থান বিকাশ ও পতনের নাড়ি নক্ষত্র ঘাঁটলে এ সত্যটাই বেরিয়ে আসে যে, মানুষই সভ্যতা সমৃদ্ধির স্রষ্টা, আবার এই মানুষই তার ধ্বংসকারী। বলাবাহুল্য মানুষই মানুষের শত্রু, যে শত্রুতা আদি মানব-মানবীর প্রথম সন্তানেরা পোষণ করতে প্ররোচিত হয়েছিলেন অশুভ প্রবণতা প্রবৃত্তির দ্বারা। এ প্ররোচনা এখনো চলছে, চলছে বলেই স্বার্থান্ধ হয়ে অতীতের কাছে আশ্রয় মাঙতে গিয়ে বর্তমানকে উপেক্ষার উপলক্ষ মিলে যায় এবং ভবিষ্যৎ কেন কীভাবে অগ্রসরমান হবে সে বিবেচনার সুযোগ হয় হাতছাড়া। এ কথা মাথায় রাখতে হবে যে আজকের বর্তমানই একদিন অতীত হবে, বর্তমানকে সময়ের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে এবং ভবিষ্যতে এখনকার কর্মসাফল্য দিয়ে তখনকার জাত কুল মান রক্ষা করা কঠিন হবে।
আত্মশুদ্ধি আর খোদার নৈকট্য অর্জনের অসীম রহমত ও কল্যাণের সওগাত নিয়ে সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজান আমাদের মধ্যে সমুপস্থিত। আল কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মাহে রমজানে রোজা পালন বা সিয়াম সাধনাকে ‘পরহেজগারি অর্জনের জন্য’ ফরজ বা অবশ্য পালনীয় বলে বিধান দিয়েছেন। বলা হয়েছে ‘পূর্ববতী সম্প্রদায়ের জন্যও একই বিধান ছিল।’ অর্থাৎ রোজা পালন শুধু কোরআনের বিধান ঘোষিত হওয়ার পর থেকে প্রবর্তিত হয়নি। আত্মশুদ্ধি ও বিধাতার নৈকট্য লাভের জন্য কৃচ্ছ্র সাধনের এই এবাদত হিসেবে শুধু ইসলামেই নয়, স্থান কাল পাত্র ভেদে সব সম্প্রদায়ের মধ্যে আত্মিক নির্বাণ লাভের এ সাধনা বিদ্যমান।
সিয়াম সাধনায় আত্মশুদ্ধির চেতনা জাগ্রত হয়। কর্মফলের দ্বারা আল্লাহ্ প্রদত্ত নেয়ামতের স্থায়িত্বের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে, আল কোরআনের এ ঘোষণা উপলব্ধি থেকেই আত্ম তাগিদ অনুভূত হয়। ৮ সংখ্যক সুরা আনফাল-এর ৫৩ আয়াতে ঘোষিত হয়েছে ‘যদি কোনো সম্প্রদায় নিজের অবস্থার পরিবর্তন না করে তবে আল্লাহ এমন নন যে, তিনি তাদের যে সম্পদ দান করেন তিনি তা পরিবর্তন করবেন’। ১৩ সংখ্যক সুরা আর রা’দ-এর ১১ আয়াতে আরও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘মানুষের জন্য তার সম্মুখে ও পশ্চাতে একের পর এক প্রহরী থাকে; তারা আল্লার আদেশে তার রক্ষণাবেক্ষণ করে। এবং আল্লাহ কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজ অবস্থা নিজে পরিবর্তন করে।’
আল্লাহ্র নিয়ামত স্থায়িত্বের যে নিয়ম বা মূল নীতি তা হলো কোনো ব্যক্তি বা জাতিকে যে নেয়ামত দান করা হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তা ফিরিয়ে নেওয়া হয় না, যে পর্যন্ত না নিজের বা নিজেদের অবস্থা ও কার্যকলাপকে পরিবর্তিত করে আল্লার আজাবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সুতরাং নেয়ামত প্রাপ্তির পর তার জন্য শুকরিয়া আদায় করা, সচেতন দায়িত্ব পালনের দ্বারা এর মর্যাদা রক্ষা করা এবং নিজেদের মধ্যে সংশোধনীয় বিষয়গুলোর ব্যাপারে সচেতন হওয়া বাঞ্ছনীয়।
কোনো কোনো সময় আল্লাহ্ তায়ালা তার নিয়ামত এমন কোনো কোনো লোক বা সম্প্রদায়কে দান করেন, যে তার নিজের বা নিজেদের আমল বা কর্মের দ্বারা তার যোগ্য নয়, কিন্তু প্রদত্ত হওয়ার পর যদি সে নিজের আমল বা কর্মধারা সংশোধন করে কল্যাণের দিকে ফেরানোর পরিবর্তে মন্দ কাজের দিকে আরও বেশি উৎসাহী হয়ে পড়ে, তখন প্রদত্ত নিয়ামত তার বা তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
আল্লাহমানুষকে বিবেক বুদ্ধি ও ভালো মন্দ জ্ঞানসহ সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। তার প্রিয় বান্দা বিপথগামী হয়ে তার অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হোক এটা তিনি চান না, তা সত্ত্বেও কেউ সঠিক ও কল্যাণের পরিবর্তে মন্দ ও অভিশপ্ত পথ নির্বাচন এবং সেখানে অনড় অবস্থান করলে; আল্লাহর নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও তার আনুগত্য ত্যাগ করে কুকর্ম, কুচরিত্র ও অবাধ্যতার পথ বেছে নিলে তার পরিণতি হয় দুঃখজনক। যে গজব নেমে আসে তা থেকে আত্মরক্ষার কোনো উপায় থাকে না। কোনো ব্যক্তি বা জাতির জীবনে কল্যাণকর পরিবর্তন ততক্ষণ পর্যন্ত সূচিত হয় না, যতক্ষণ এই কল্যাণকর পরিবর্তনের জন্য নিজেদের অবস্থা সংশোধন করে নিজেদের তার যোগ্য করে না তোলা হয়।
আল কোরআনের ২৫ সংখ্যক সুরা আল ফোরকানের ৬৩ থেকে ৭৭ নম্বর আয়াতসমূহে আত্মশুদ্ধি লাভের কয়েকটি গুণ ও দোষের লক্ষণ বর্ণিত হয়েছে। প্রথম ৬টি গুণাবলির মধ্যে আনুগত্যের মূলনীতি এবং পরবর্তী গুণাবলিসমূহ গোনাহ ও অবাধ্যতা থেকে পরিত্রাণ প্রত্যাশার/প্রচেষ্টার নীতিমালা বর্ণিত হয়েছে।
১) নিজের বিশ^াস, চিন্তাচেতনা, ইচ্ছা ও আকাক্সক্ষা, আচার-আচরণ ও স্থিরতাকে সৃষ্টিকর্তার আদেশ ও অভিপ্রায়ের অনুগামী রেখে তার আদেশ-নিষেধ পালনের জন্য সদা সচেষ্ট থাকা।
২) নম্রতা সহকারে চলাফেরা করা চলন-বলন আচার-আচরণে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা। যে পালনকর্তার ভরসা করে না এবং সবসময় দুনিয়ার লাভ-লোকসানের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন থাকে, সে সব সময় বিভ্রান্তিতে থাকে, দুঃখই ভোগ করে।
৩) কথাবার্তায় নিরাপত্তার সঙ্গে সব সময় সচেতন থাকা উচিত। সালামের জবাব দেওয়া, কারও মনে আঘাত লাগতে পারে, বিরূপ ভাব ও সংক্ষোভের উদ্রেক করতে পারে এমন সংলাপ পরিহার করা। সুবচন ও সুশীল আচরণ কখনই বিত-ার জন্ম দেয় না।
৪) ইবাদতে রাত্রি জাগরণ। যে সময় নিদ্রা ও বিশ্রামের সে সময়ে কষ্টকর হওয়া সত্ত্বেও নামাজে দাঁড়ানোর মতো উত্তম কিছুই নেই। এ ইবাদত লোক দেখানোর জন্য নয় এবং এখানে নাম-যশের আশঙ্কা নেই।
৫) দিবারাতে ইবাদতে মশগুল হয়েও নিশ্চিত হয়ে বসে না থাকা। আল্লাহকে ভয় করা, জীবিকা অন্বেষণ ও তার সাহায্য কামনা করা।
৬) ব্যয় করার সময় অপব্যয় না করা, আয়-ব্যয়ের মধ্যে সমতা বজায় রাখা। বৈধ ও অনুমোদিত কাজে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় করাও অন্যায় এবং অপব্যয়। রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন, ব্যয় করতে গিয়ে মধ্যবর্তী পথ অবলম্বন করা মানুষের বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। যে ব্যক্তি ব্যয়ের সময় মধ্যবর্তিতা ও সমতার ওপর কায়েম থাকে, সে কখনো ফকির ও অভাবগ্রস্ত হয় না।
৭) শিরক সর্ববৃহৎ গোনাহ। দুনিয়ার ভালোমন্দে কাউকে নিয়ন্ত্রক ভাবাও শিরক।
৮) কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা না করা এবং ব্যভিচারের নিকটবর্তী না হওয়া।
৯) তওবা করা। কঠোর অপরাধী যদি তওবা করে এবং বিশ্বাস স্থাপন করে সৎকর্ম করতে থাকে, তবে আল্লাহ তার মন্দ কর্মসমূহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন।
১০) মিথ্যা ও বাতিল মজলিশে যোগ না দেওয়া, মিথ্যা সাক্ষ্য না দেওয়া। যদি কেউ মিথ্যা ও বাতিল মজলিশের নিকটবর্তী হয়ে পড়ে তবে গাম্ভীর্য ও ভদ্রতা সহকারে তা এড়িয়ে বা পরিহার করে চলে যাওয়া উচিত।
১১) আল্লার আয়াত ও শরিয়তের বিধানাবলি শুধু পাঠ করা যথেষ্ট নয়, শ্রবণশক্তি ও অন্তদৃষ্টি-সম্পন্ন মানুষের উচিত এগুলো সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা।
১২) নিজ সন্তান-সন্ততি ও স্ত্রীর জন্য আল্লার কাছে দোয়া করা। তাদের আল্লাহর আনুগত্যে মশগুল দেখা।
কোনো কিছুর বাড়াবাড়ি থেকে বিরত থাকা উচিত। মাত্রা অতিক্রম করলে অনেক ভালো জিনিস মন্দ রূপ বা আকার ধারণ করতে পারে। যেমন মাত্রা অতিক্রম করলেই সাহস হঠকারিতায়, আত্মউৎসর্গ আত্মহত্যায়, প্রতিযোগিতা হিংসায়, ধর্মভীরুতা ধর্মান্ধতার পরিণত হতে পারে। অবস্থা বিশেষে সমালোচনা পরচর্চায়, প্রশংসা চাটুবাদে, তেজ ক্রোধে, দেশপ্রেম দেশদ্রোহিতার স্তরে নেমে আসতে পারে। সব দেশ সমাজ সংসারে, রাজনীতি সমাজনীতি অর্থনীতির অবকাঠামোয় এটি প্রায়শই লক্ষ করা যায়।
নাতিশীতোষ্ণ তাপমাত্রা যেমন সবার পছন্দ তেমনি সুরের মধ্যে পঞ্চম-স্বরই মিষ্ট এবং শ্রেষ্ঠ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বারবার বলেছেন তোমরা কোনো কিছুতেই সীমালঙ্ঘন কোরো না। আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীকে ভালোবাসেন না। লোকমান হাকিম তার ছেলেকে উপদেশের ছলে বলেছেন, ‘মাটিতে হাঁটবে মধ্যম মেজাজে আর তোমার স্বর হওয়া উচিত মোলায়েম, স্বরের মধ্যে গাধার স্বরই নিকৃষ্ট।’
করোনাকালে এ শিক্ষা সবাই পেয়েছে যে, স্বাস্থ্যবিধি মানা মানে খাওয়া-দাওয়া, চলাচলে, চাওয়া-পাওয়ায়, মেলামেশা, আগ্রহ-আকাক্সক্ষার ক্ষেত্রে একটা পরিমিত বোধ মেনে চলা। নিয়মনিষ্ঠা পালন ও সহনশীলতা প্রকাশ যে কোনো বিশৃঙ্খল পরিবেশে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে পারে। অধিক ভোজনেই অধিকাংশ রোগবালাইয়ের কারণ। মাত্রাতিরিক্ত চাহিদা সরবরাহে সমস্যা সৃষ্টি করে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। অধিক পরিশ্রমে মন ও শরীর ভেঙে পড়ে। অতি কথনে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়। অতিরিক্ত সব কিছু খারাপ। অতিভক্তি চোরের লক্ষণ এর চেয়ে সত্যবাক্য আর নেই।
লেখক: সাবেক সচিব ও এনবিআরের চেয়ারম্যান
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অপারেশন সার্চলাইটের নির্ধারিত লক্ষ্যস্থলগুলোর মধ্যে প্রধানতম ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ভয়াল রাতে তৎকালীন ইকবাল হল (বর্তমান শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল), জগন্নাথ হলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে আক্রমণ করে নির্বিচারে গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায় তারা। হানাদার বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার একমাত্র ছাত্রীনিবাস রোকেয়া হলের স্টাফ কোয়ার্টারেও গণহত্যা চালায়। অত্যন্ত নৃশংস এই আক্রমণে হলের ৭ জন কর্মচারী ও তাদের আত্মীয়স্বজনসহ মোট ৪৫ জন শহীদ হন। তবে হলের হাউজ টিউটরের সহযোগিতায় ওই রাতে হলে থাকা ৭ জন ছাত্রী ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান।
কালরাতে রোকেয়া হলে গণহত্যার শিকার হন তৎকালীন কিশোরী রওশন আরার পরিবার। ১৯৭১ সালে রওশন আরার বাবা নেওয়াজ আলী ছিলেন রোকেয়া হলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (পিয়ন)। ২৫ মার্চ রাতে বাবা নেওয়াজ আলী, মা ছামিরুন্নেসা, ভাই তোফায়েল আহম্মেদ ও সাদেক আলী এবং বড় বোন হাসিনা হাফিজের সঙ্গে হলের স্টাফ কোয়ার্টারের বাসায় ছিলেন কিশোরী রওশন আরা। রাত ১২টার দিকে স্টাফ কোয়ার্টারে ঘরের দরজা ভেঙে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ঘটনাস্থলেই শহীদ হন রওশন আরার মা এবং দুই ভাই। রওশন আরার শরীরের বিভিন্ন অংশে ১৩টি গুলি লাগে। শরীরে এত গুলি লাগার পরও অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে যান তিনি। তার বড় বোন হাসিনা এবং বাবা নেওয়াজ আলীও গুলিবিদ্ধ হন। তারা দুজনও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান।
স্বাধীনতার পর আহত রওশন আরার বিয়ে হয় নারায়ণঞ্জের বক্তাবলী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশীদের সঙ্গে। সেখানে তার ৩ ছেলে ও এক মেয়ে হয়। ২৫ মার্চ রাতে আহত বাবা নেওয়াজ আলী ও বড় বোন হাসিনা হাফিজ স্বাধীনতার অনেক পরে মারা যান, রওশন আরাও আর নেই। ২০১৯ সালের ২ জুলাই তিনি স্বামীর বাড়ি নারায়ণগঞ্জের বক্তাবলীতে মারা যান। রওশন আরার স্বামী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশীদ মারা যান ১৯৯৮ সালে। এরপর তার ছেলেমেয়েরা রওশন আরাকে দেখভাল করতেন। রওশন আরার মৃত্যুর আড়াই মাস আগে ১৯ এপ্রিল ২০১৯, নারাণগঞ্জের বক্তাবলীতে গিয়ে লেখক কর্তৃক তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দ্বারা শরীরে বিদ্ধ ১৩টি গুলির ক্ষতের প্রভাব তখনো এত তীব্র ছিল যে– এ নিয়ে তিনি কথা বলতে প্রথমে রাজি হননি। পরে লেখকের অনুরোধ এবং তার দুই ছেলের প্রচেষ্টায় স্মৃতিচারণ করেন রওশন আরা।
২৫ মার্চে রাতের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জিজ্ঞেস করলে রওশন আরা কিছুক্ষণ চুপ থাকেন। দুই/এক লাইন বলেন। আবার চুপ হন। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকান। চোখ ভিজে ওঠে তার। তারপর বড় নিঃশ্বাস ফেলেন। বলতে থাকেন, ভয়াবহ সেই অভিজ্ঞতার কথা। কাঁপা গলায় রওশন আরা বলেন, ‘১৯৭১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে নীলক্ষেত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণিতে পড়তাম। বড় বোন হাসিনা পড়ত দশম শ্রেণিতে। ২৫ মার্চ রাতে আমরা দুই বোন একসঙ্গে ঘুমাই। রাত ১২টার দিকে চারদিকে গুলির শব্দ, চিৎকার শুনি। আমরা ভয়ে ঘুম থেকে উঠে যাই। হঠাৎ আর্মি বাসার দরজা লাথি দিয়ে ভেঙে ফেলে। এরপর খালি গুলি আর গুলি। বাবা-মাকে ডাক দেওয়ারও সময় পাই নাই। শরীরে এমনভাবে গুলি পড়ল, মনে হয় ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছি। বাবার শরীরে দুইটা গুলি লাগে। বড় বোন হাসিনার দুইটা। মায়ের বুকে গুলি লেগে পেছন দিয়ে মাংস বেরিয়ে যায়। দুই ভাইয়েরও গুলি লাগে। পুরো বাসায় রক্ত আর রক্ত। আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। এরপর রাতে কী হয়েছে– কিছুই কইতে পারি না।’
জ্ঞান ফিরে কখন? জানতে চাইলে রওশন আরা আবার চুপ হন। এরপর চোখের জল গাল বেয়ে নামতে থাকে তার। প্রশ্নটি কয়েকবার করার পর বলেন, ‘জ্ঞান ফিরে পরের দিন শুক্রবার। চোখ খুলে খালি কই মা, পানি দাও। মা, পানি দাও। কিন্তু মা তো পানি দেয় না। দেখি কি– মা ও দুই ভাই শেষ। নড়েচড়ে না, মইরা গেছে। আমি তো পা নড়াইতে পারি না। পরে কে যেন এসে আমাকে পানি খাওয়ায়। আমাদের বাসার পেছন দিয়া পুকুর ছিল। বাবা কীভাবে যেন বের হয়ে পুকুরের পাড় দিয়ে হলের প্রভোস্ট আখতার ইমামের বাসায় যান। আমরা কোয়ার্টারের বাসায়ই পড়ে থাকি।’
২৭ মার্চ ১৯৭১ সকালে কয়েক ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করে হানাদার বাহিনী। কিছু মনে পড়ে? এই প্রশ্নের পর বলতে শুরু করেন আবার, ‘হ্যাঁ, এরপর কিছু লোক আসে। এসে বলে, ভেতরে কেউ বেঁচে আছেন, ভেতরে কেউ বেঁচে আছেন? বলে ডাকে। আমাকে ও হাসিনাকে বাঁশের মাচায় ওঠায় তারা। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে ভর্তি করে। এর আগে মা ও দুই ভাইয়ের লাশ আর্মিরা নিয়ে যাইতে দেখছি। আর কিছু জানি না।’
রোকেয়া হলে গণহত্যার শিকার ৪৫ নারী-পুরুষকে ২৬ মার্চ তৎকালীন হল অফিসের সামনে (বর্তমানে শামসুন্নাহার হলে গেটসংলগ্ন স্থান) মাটি চাপা দেয় হানাদার সেনারা। রওশন আরা ও তার বড় বোন হাসিনা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন অনেকদিন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যখন তার বাবা নেওয়াজ আলীকে চিঠি দেন যে, কাজে যোগ না দিলে চাকরি থাকবে না– তখন দুইবোনকে নারায়ণগঞ্জে খালার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন বাবা। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জেই ছিলেন মারাত্মকভাবে আহত রওশন আরা ও হাসিনা। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১, শেষ হয় যুদ্ধ। ত্রিশ লাখ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। কিন্তু রওশন আরার যুদ্ধ শেষ হয়নি। শরীরের ১৩টি গুলির ক্ষত ও এর প্রভাবে ২ জুলাই ২০১৯, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ব্যথা-যন্ত্রণা নিয়ে কাটত তার প্রতিদিন, প্রতি রাত। শরীরের সঙ্গে তিনি যুদ্ধ করেছেন ৪৮ বছর। গুলির তোপে ডান হাতের একটি আঙুল কোনো রকমে ঝুলে ছিল। বাকি আঙুলগুলোও ছিল বাঁকা। গুলির দাগ ছিল উরুতে, কোমর ও তলপেটে। মৃত্যুর আগের কয়েক বছর রওশন আরা একা একা চলাফেরা করতে পারতেন না। উঠে দাঁড়াতে-বসতে-শুতে অন্য কারও সাহায্য লাগত। সাক্ষাৎকার গ্রহণকালে একাত্তরের দুঃসহ নির্মমতার শিকার রওশন আরাকে যখন সবশেষ প্রশ্ন করা হয়, আপনার কোনো চাওয়া আছে? উত্তরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ‘না, কিছুর দরকার নাই।’
লেখক : সাংবাদিক ও গবেষক
পাশাপাশি দুই খবর। মৈত্রী পাইপলাইনে ভারত থেকে ডিজেল আমদানি উদ্বোধন এবং দুদেশের অভিন্ন নদী তিস্তার উজানে পশ্চিমবঙ্গে দুটি খাল খননের পরিকল্পনা। যা প্রকারান্তরে ভারত প্রশ্নে আশা-দুরাশার দ্বৈরথ। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের সংঘাত। বিষয়টা এমনও নয়, ভারত তিস্তায় তেষ্টা মেটানোর প্রতিদানে পাইপলাইনে গ্যাস দেবে। কিন্তু, কাছাকাছি সময়ে ঘটমান বর্তমান বলে কথা। কথার পিঠে আবার নানান কথা।
ভারত সম্পর্কে বাংলাদেশে বরাবরই একটি মিথস্ক্রিয়া। ভালো-মন্দের আপেক্ষিকতা। এর কারণ পুরোটাই ঐতিহাসিক। ভারত আমাদের অনেক দিয়েছে বলে প্রতিষ্ঠিত। আবার অনেক কিছু নিয়েছে তাও প্রমাণিত। এ বিতর্কের এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কথাচ্ছলে বলেছেন, ভারতকে যা দিয়েছি আজীবন মনে রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্য ছাড়াও নানা কারণে বাংলাদেশে ভারত বিষয়ক ক্রিয়া-বিক্রিয়া শেষ হওয়ার নয়। এর মাঝেই বন্ধুত্বের সেতুবন্ধ। এর মাঝেই মৈত্রী। পাইপলাইনে আন্তঃদেশীয় জ্বালানি সংযোগের অভিষেক। পাইপলাইনে আনা ডিজেলে কেবল উত্তরাঞ্চলের ষোল জেলার চাহিদা পূরণই হবে না খরচও আগের চেয়ে কমবে বলে আশা।
এমন এক সময়ে কাজটি হলো যখন গোটা বিশ্ব ধুঁকছে জ্বালানির জ্বালায়। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বের অনেক দেশের জ্বালানি সংকটে ভোগার সময়ে এ মৈত্রী পাইপলাইন আন্তর্জাতিক মানের খবর। আঞ্চলিক কূটনীতিও বটে। ভারত থেকে পাইপলাইনে প্রাথমিক অবস্থায় বছরে ২ লাখ টন জ্বালানি পাওয়া যাবে, পরে উন্নীত হবে ১০ লাখ টনে। পূর্ণক্ষমতায় গেলে পরিবহন ব্যয় বাবদ বছরে প্রায় শতকোটি টাকা সাশ্রয়ের আশা করছেন নীতিনির্ধারকরা। এ ধরনের পাইপলাইন ও তেল আমদানির বিষয়টিই বাংলাদেশের জন্য নতুন। এর বিস্তারিত জানাও সময় সাধ্য।
২০১৭ সালের ২৩ আগস্ট বাংলাদেশের মন্ত্রিসভার অর্থনৈতিক বিষয়ক কমিটির অনুমোদনের পর, এ বিষয়ে চুক্তি সই হয়। নথি অনুসারে, এই পাইপলাইনের মাধ্যমে, পেট্রোলিয়ামের পুরো চালান উত্তর-পূর্ব ভারতের আসামের গোলাঘাটে অবস্থিত নুমালিগড় শোধনাগার থেকে আসবে। আর, দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর পেট্রোলিয়াম জ্বালানি ডিপোতে এই চালান গ্রহণ করবে বাংলাদেশ। প্রস্তাবিত পাইপলাইনের বেশিরভাগ বাংলাদেশের অংশে হলেও ভারত সরকার বাংলাদেশ অংশ নির্মাণের জন্য লাইন অফ ক্রেডিট-এলওসির অধীনে প্রায় ৩০৩ কোটি রুপি ঋণ দিয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ তার অংশে পাইপলাইন পরিচালনা করবে এবং ভারত তার অংশে পাইপলাইন পরিচালনা করবে। বাংলাদেশ প্রথম তিন বছরে বার্ষিক দুই লাখ ৫০ হাজার টন, চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ বছরে বার্ষিক তিন লাখ টন, সপ্তম থেকে দশম বছরে বার্ষিক সাড়ে তিন লাখ টন এবং ১১তম থেকে ১৫তম বছর পর্যন্ত বার্ষিক চার লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করবে।
মূলত ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড-এনআরএল থেকে ডিজেল আনার পরিমাণ বাড়ানোই এই পাইপলাইনটি নির্মাণের উদ্দেশ্য। নুমালিগড় রিফাইনারি ও বিপিসির অধীনস্ত কোম্পানি মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। বাংলাদেশে ব্যবহৃত জ্বালানির পঁচাত্তর শতাংশই ডিজেল এবং দেশে ডিজেলের চাহিদা প্রায় ৪৬ লাখ টন। এর আশি ভাগই আমদানি করতে হয়। ২০১৭ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত প্রতি মাসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রেলওয়ের মাধ্যমে দুই হাজার দুশো টন ডিজেল আমদানি হয় বাংলাদেশে। এখন তা ১৩১ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার পাইপলাইনে আনায় সমস্যা হয়ে যাবে। রেল ওয়াগনে অপচয় হয়, প্রায়ই নানা দুর্ঘটনায় ক্ষতি হচ্ছে। সেই বিবেচনায় পাইপলাইন ‘বেস্ট স্মার্ট’ উপায়।
এ বিষয়ক বেশি বিতর্ক শোভন নয়। এরপরও তা হচ্ছে। সংশয়ও কম নয়। এ পাইপলাইন বাংলাদেশকে জ্বালানি ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় ভারত নির্ভর করে তুলতে পারে বলে ছড়ানো-ছিটানো কানাঘুষার ফয়সালাও এখনই সম্ভব নয়। এতে গ্যারান্টেড সাপ্লাইয়ের বিষয়টি কেমন তা বুঝতেও সময় লাগবে। আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে যখন তখন দাম বাড়িয়ে বাংলাদেশকে বিপাকে ফেলে কিনা- এ সংশয় কাটাও সময়সাপেক্ষ। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বা বিপিসি অবশ্য বলছে এতদিন যে পদ্ধতিতে ভারত থেকে ডিজেল আনা হচ্ছিল সেটি আদর্শ ছিল না, এখন একটা মানদণ্ডে আসবে। খরচ কমবে, যথাসময়ে জ্বালানি আসবে। সেই আশায় অপেক্ষা করাই আপাতত উত্তম। কিন্তু, তিস্তার পানির বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগমুক্ত থাকা যাচ্ছে না। তিস্তার পানি প্রত্যাহারে ভারতের নতুন করে খাল খনন বিষয়ে নোট ভারবাল দিয়ে জানতে চেয়েছে বাংলাদেশ। রবিবার বিকালে সাংবাদিকদের তা নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, যৌথ নদী কমিশনের মাধ্যমে ভারতের কাছে চিঠি পাঠিয়ে বিষয়টি জানতে চাওয়া হবে।
উজান থেকে পানি না আসায় এমনিতেই শুষ্ক মৌসুমে ধু ধু বালুচর জাগে তিস্তায়। মড়াকে মারার মতো এখন তিস্তার উজানে পশ্চিমবঙ্গে দুটি খাল খননের পরিকল্পনা ভারতের। এর মূল উদ্দেশ্য ভারতীয় অংশে সেচের সম্প্রসারণ করা। এই বাঁধ দিয়ে প্রথম পর্যায়েই প্রায় ১০ লাখ হেক্টর, অর্থাৎ ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় সেচ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। সে জন্য ২১০ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল করা হয়েছে। এসব খাল একদিকে গেছে পশ্চিম-দক্ষিণে অগ্রসর পশ্চিমবঙ্গের মালদহ এবং মুর্শিদাবাদ জেলা পর্যন্ত। অন্যদিকে পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার জেলা পর্যন্ত গেছে। এখন যে নতুন দুটি খাল খনন করা হচ্ছে, তা এই প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের বাস্তবায়নের অংশ।
ভারতের পানি উন্নয়ন পরিকল্পনায় গজলডোবা বাঁধের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এরইমধ্যে এই বাঁধ তিস্তা থেকে পানি পশ্চিম দিকে নাগর-টাঙ্গন, ডাউক এবং মহানন্দা নদীতে এবং পূর্ব দিকে জলঢাকা নদীতে প্রবাহিত করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। সে লক্ষ্যে মহানন্দা নদীর ওপর জলপাইগুড়ি জেলার ফুলবাড়ীতে এবং ডাউক নদীর ওপর উত্তর দিনাজপুরের চোপড়াতে দুটি পিকআপ ব্যারেজ নির্মিত হয়েছে। ভবিষ্যতে ব্রহ্মপুত্র এবং তার বিভিন্ন উপনদী যেমন মানস, সংকোশ থেকে পানি ভারতের পশ্চিমে এবং দক্ষিণে প্রবাহিত হওয়ার জন্য এই বাঁধ ব্যবহৃত হবে। এ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের অংশ হিসেবে মহানন্দা নদীর ওপর তিনটি খালের সংযোগস্থলে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ৬৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনেরও পরিকল্পনা রয়েছে। সব মিলিয়ে গজলডোবা বাঁধ বাংলাদেশের তিস্তা অববাহিকার জন্য একটি বড় হুমকি।
তিস্তার উজানে ভারতের আরও কয়েকটি বাঁধ আছে। ভবিষ্যতে এর উজানে এবং এর বিভিন্ন উপনদীর ওপর ভারতের আরও প্রায় ১৫টি বাঁধ বা ব্যারেজ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের জন্য তিস্তার শুষ্ক মৌসুমের কোনো প্রবাহ অবশিষ্ট থাকবে না। তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী। অংশীদার দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সম্মতি ভিন্ন এই আন্তর্জাতিক নদীর ওপর এ ধরনের হস্তক্ষেপ ভারত করতে পারে না। কিন্তু করছে। করেই চলছে। তা আর কত? ভারত তিস্তার পানি প্রশ্নে এমনটি করতেই থাকলে ভরসা হতে পারে বাংলাদেশের ভাটিতে তিস্তায় চীনের সহায়তায় ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ দ্রুত বাস্তবায়ন। এর অনুমিত বাজেট প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার (প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা)। সরকারের দিক থেকে এ বিষয়ক তথ্য দিতে বেশ কার্পণ্য। পারলে তথ্য লুকিয়েই রাখে। কিন্তু, চীনের পাওয়ার চায়না কোম্পানি ইউটিউবে ভিডিওর মাধ্যমে এই প্রকল্পকে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে চলছে। ভারতের টেলিগ্রাফও কিছু তথ্য দিয়েছে। তাদের প্রতিবেদন বলছে, আরও দুটি খাল খননের জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সেচ বিভাগ প্রায় এক হাজার একর পরিমাণ জমির মালিকানা পেয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন জমির মালিকানা হস্তান্তর করেছে। এতে জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার এলাকার আরও অনেক কৃষিজমি সেচের আওতায় আসার মধ্য দিয়ে বড় রকমের উপকার পাবে ভারত, পানি না পেয়ে ক্ষুব্ধ হবে বাংলাদেশ।
তিস্তা নিয়ে মূলত বাংলাদেশের নতুন করে ক্ষুব্ধ হওয়ার কিছু নেই। গত প্রায় পঁচিশ বছর ধরে নানা তদবির করেও শুষ্ক মৌসুমে আন্তর্জাতিক নদী তিস্তার পানি ভাগাভাগির ফয়সালা পায়নি বাংলাদেশ। ভারতের কেন্দ্রীয় ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের গড়িমসি ও হেঁয়ালিতে পরাজিত হয়েছে সব দ্বিপক্ষীয় প্রচেষ্টা ও আয়োজন। তাই সব বাদ দিয়ে এখন আশাবাদ চীন বা যে কারও সহযোগিতায় তিস্তার পুনরুজ্জীবন দেওয়া। চীনা প্রকল্পে গলা দিয়ে আর্থিক সংকটের বেড়াজালে পড়ে এবং চীনের সঙ্গে ভারতের ভূ-রাজনৈতিক সংকটের ক্রসফায়ারে পড়ার ঝুঁকিও কম নয়। তাই নিজ উদ্যোগে কিছু করার তাগিদ রয়েছে কারও কারও। তারা বলতে চান, নিজ প্রচেষ্টায় পদ্মা সেতুর মতো বিশাল প্রকল্পের সক্ষমতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। সেখানে তিস্তা ছাড়াও বাংলাদেশ অংশের ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, টিপাইমুখ ইত্যাদিকে ঘিরে ছোট ছোট প্রকল্প নেওয়াও বাংলাদেশের পক্ষে অসম্ভব নয়।
লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন
‘যক্ষ্মা’ শব্দটা এসেছে ‘রাজক্ষয়’ থেকে। কারণ, এতে রোগী খুব শীর্ণ হয়ে পড়েন। বিশ্বব্যাপী মোট যক্ষ্মা রোগীর ১২ শতাংশ শিশু। সঠিকভাবে ওষুধ সেবন করলে এই রোগ ৯৬ শতাংশ ক্ষেত্রে ভালো হয়ে যায়। কিন্তু শিশুদের যক্ষ্মা নির্ণয় সঠিকভাবে না হওয়ায়, রোগটি উপেক্ষিত থাকে।
এক প্রকার যক্ষ্মা রয়েছে- লিম্ফনোড টিবি। যা লসিকা গ্রন্থিকে প্রভাবিত করে। খুব বেশি খারাপ পর্যায়ে গেলে, যক্ষ্মা মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে শিশুর মানসিক বা শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। দেখা দিতে পারে, চোখ ও কানসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের সমস্যা। ফুসফুসের বাইরে যে যক্ষ্মাগুলো রয়েছে, সেগুলো শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। ফুসফুসের যক্ষ্মার তুলনায় যেগুলো শনাক্ত করা মুশকিল। যে কারণে, শিশুদের যক্ষ্মা শনাক্ত হতে দেরি হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণা, যক্ষ্মা রোগীদের মধ্যে প্রায় ১১ শতাংশই শিশু। কিন্তু বাংলাদেশে মাত্র ৪.২ শতাংশ শিশুর যক্ষ্মা শনাক্ত হয়, যা আসলে রোগ নির্ণয় বা শনাক্তের ঘাটতি নির্দেশ করে। সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় না হওয়ায়, শিশুদের যক্ষ্মা মোকাবিলা এখনো চ্যালেঞ্জিং।
গতকাল দেশ রূপান্তরের শেষ পাতায় প্রকাশিত- ‘শিশুদের যক্ষ¥া শনাক্তে এখনো পিছিয়ে দেশ’Ñ শীর্ষক প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়- শিশুদের যক্ষ্মা শনাক্তে এখনো পিছিয়ে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০২১ সালে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে ২২৭ জন। সে হিসাবে দেশে যক্ষ্মা শনাক্তের হার ৮০ শতাংশ। এর মধ্যে অন্তত ১০ শতাংশ বা ৩৭ হাজার ৫০০ শিশু যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু সরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ৪ শতাংশ বা দেড় হাজারের বেশি নয়। অর্থাৎ এখনো ৬ শতাংশ বা ২২ হাজার ৫০০ শিশু যক্ষ্মা রোগী শনাক্তের বাইরে রয়েছে। এর অর্থ যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও শনাক্ত না হওয়ায় এসব শিশু চিকিৎসা পাচ্ছে না। অবশ্য দেশে শিশু রোগীর সংখ্যার সঠিক কোনো তথ্য সরকারের কাছে নেই। গত এক বছরে কত শিশু যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে, সে তথ্যও নেই।
সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. মাহফুজার রহমান সরকার জানান- শিশুরা বলতে পারে না বা উপসর্গ বোঝে না, আবার অভিভাবকরাও সচেতন না। ফলে বেশিরভাগ শিশু শনাক্তের বাইরে থেকে যাচ্ছে। অথচ সার্বিক ক্ষেত্রে আমাদের যক্ষ্মা শনাক্ত হার বেশি। অনেক দেশের চেয়ে ভালো আছি।
২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, আমাদের মোট শনাক্তের হার ৮২ শতাংশ। তিনি বলেন, শিশুদেরও যে যক্ষ্মা হতে পারে, সে তথ্য দেশের বিভিন্ন জেলায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রচার করা হচ্ছে। আগে শিশুদের যক্ষ্মা শনাক্তের হার আরও কম ছিল। কিন্তু এখন আমরা যেভাবে কাজ করছি তাতে সামনের দুই-এক বছরের মধ্যে শনাক্তের হার আরও বাড়বে।
সংবাদে বলা হয়েছে- ফুসফুসে আক্রান্ত একজন যক্ষ্মা রোগীর সংস্পর্শে এলে শিশুর যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। তবে বড় শিশুদের তুলনায় এক মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুরাই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
এরকম শিশুরা তাদের সময়ের একটা বড় অংশ পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয় ও খেলার সাথীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সময় কাটায়। এ ছাড়া এমন বয়সী শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বড় শিশুদের তুলনায় কম। অপুষ্টিতে ভুগছে এমন শিশুদের যক্ষ্মার ঝুঁকি বেশি। কারণ অপুষ্টি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়।
এমন অবস্থায় গতকাল পালিত হলো, বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। শিশুদের এই ব্যাধি থেকে মুক্ত রাখতে, যক্ষ্মা নির্ণয় ও চিকিৎসাব্যবস্থা আরও সহজলভ্য করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে মা-বাাবাকে সচেতন করার জন্য, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া দরকার। উপযুক্ত শিক্ষা এবং সচেতনতাই পারে, এই রোগ থেকে শিশুদের রক্ষা করতে।
আজ এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন ফরাসি কবি ও সাহিত্যিক ফ্রেদেরিক মিস্ত্রাল। তার জন্ম ১৮৩০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ফ্রান্সের মাইয়ান গ্রামে। তার বাবা ফ্রান্সের রোন নদীর উপত্যকার সম্ভ্রান্ত কৃষক ছিলেন। তিনি পড়াশোনা করেন আভিনিয়োঁ কলেজে। কলেজ জীবনেই তিনি হোমার, ভার্জিলসহ বিভিন্ন লেখকের সাহিত্য পড়ে ফেলেন। কলেজের পাঠ শেষ করে তিনি আইন বিষয়ে উচ্চতর পড়াশোনা শুরু করেন। আইনশাস্ত্রে পড়লেও তার মধ্যে কাব্যচর্চার প্রেরণা সর্বদা জাগরূক ছিল। আইন পাস করার পর ১৮৫১ সালে তিনি পুরোদমে সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন। সাহিত্যচর্চায় সঙ্গী হয়েছিলেন তার বেশ কিছু বন্ধু। এই বন্ধুদের সঙ্গে মিলেই তিনি ফ্রান্সের বিখ্যাত প্রোভঁসাল সাহিত্যের পুনরুজ্জীবনের জন্য একসঙ্গে কাজ শুরু করেন। এ সময়ই তিনি তার বিখ্যাত মহাকাব্য ‘মিরেইও’ রচনা করেন। এর বিষয়বস্তু ছিল এক কিশোরীর প্রেমের আকুতি। এটি পাঠ করে ফরাসি কবি আলফোঁস দ্য লামার্তিন বলেছিলেন, ‘এক মহান কবির জন্ম হলো।’ তিনি ১৯০৪ সালে স্পেনীয় সাহিত্যিক হোসে এচেগারাইয়ের সঙ্গে যৌথভাবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তার অন্য বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘স্বর্ণদ্বীপপুঞ্জ’ প্রকাশিত হয় ১৮৫৭ সালে। বইটি প্রকাশের এক বছর পর ১৮৫৮ সালে তিনি দিজোঁ শহরের মেরি বিভিইরিকে বিয়ে করেন। তার জীবনের শেষ রচনায় বাল্যকালের স্মৃতিবিজড়িত রোন নদীর গতিপথের দুই পাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য বর্ণনা করেছেন। মিস্ত্রাল শেষ জীবনে ব্রংকাইটিস রোগে আক্রান্ত হন।
প্রথম সেট ২৫ মিনিট, দ্বিতীয়টি ২৮ মিনিটে জিতলেন কার্লোস আলকারাজ। মনে হচ্ছিল কোয়ালিফায়ার ফ্যাভিও কোবোলিকে বুঝি উড়িয়েই দিচ্ছেন শীর্ষ বাছাই।
না, তৃতীয় সেটতে প্রতিরোধ গড়লেন ইতালিয়ান। সময় গড়ালো ঘন্টায়। শেষপর্যন্ত জয় এসেছে ৬৬ মিনিটে। ৬-০, ৬-২, ৭-৫ গেমে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ জিতে রাফায়েল নাদালের উত্তরসুরি ক্লে কোর্টের সর্বোচ্চ আসর শুরু করলেন।
নাদালের চোটজনিত অনুপস্থিতিতে শীর্ষবাছাই আলকারাজ। ২০২১ এ তৃতীয় রাউন্ড, গতবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিলেন। এবার আরো এগোলে সেমিফাইনালে নোভাক জকোভিচের সংগে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা।
সে দেখা যাবে। আপাতত দ্বিতীয় রাউন্ডে আলকারাজকে টপকাতে হবে জাপানের টি. দানিয়লেকে।
আইপিএলের পঞ্চম শিরোপা জিততে চেন্নাই সুপার কিংসের চাই ১৫ ওভারে ১৭১ রান। আহমেদাবাদে রাত ১২.৪০ মিনিটে শুরু হবে খেলা। গুজরাট টাইট্যান্সের ২১৪ রানের জবাবে খেলতে নেমে ৩ বলে ৪ রান করার পর বৃ্স্টিতে বন্ধ হয় ফাইনাল। অর্থাৎ বাকি ১৪.৩ ওভারে আরো ১৬৭ রান চাই ধোনীর দলের।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।