
বাংলাদেশের থিয়েটার চর্চা ৫০ বছরের অধিক সময় ধরে সাফল্যের সঙ্গে চলছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে শহরকেন্দ্রিক নাট্যচর্চা নিয়মিত হতে শুরু করে। শুরু থেকে বাংলাদেশের থিয়েটারে নারীর অংশগ্রহণ সক্রিয়ভাবেই আছে। বলতে দ্বিধা নেই যে বাংলাদেশের থিয়েটারের সব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নারী ও পুরুষ প্রায় সমানভাবেই পালন করছে।
শুরু থেকেই অন্য সব প্রতিষ্ঠানের মতোই থিয়েটার অঙ্গনেও ক্ষমতার অধিকারী পুরুষরাই। অর্থাৎ মূল সিদ্ধান্তের হোতা আসলে পুরুষরাই। বাংলাদেশের গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাংগঠনিক গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে যদি দৃষ্টিপাত করা হয় তবে দেখা যাবে তাতে নারীদের তেমন কোনো নেতৃত্বের নজির নেই। গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের প্রতিষ্ঠা ১৯৮০ সালের ২৯ নভেম্বর। এই ৫০ বছরে সারা যাকের একবার চেয়ারম্যান ছিলেন।
রোকেয়া রফিক বেবী অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন। আর কোনো নারীর অবস্থান প্রায় নেই বললেই চলে! এমনকি বেশিরভাগ থিয়েটারের দলে দলপ্রধান হিসেবে এখনো কেন যেন পুরুষের আধিপত্যই চোখে পড়ে! তবে কি সামন্তীয় পরিবারতন্ত্র ও গোষ্ঠীবাদ ছেয়ে রেখেছে থিয়েটার অঙ্গনকে? জানা কথা যে প্রতিষ্ঠানের বিকাশের অন্তরায় এই পরিবারতন্ত্র ও গোষ্ঠীবাদ। প্রশ্নহীন কর্র্তৃত্বের দীর্ঘস্থায়িত্বের ফলে সদস্যদের বিকাশের সব পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। গণতান্ত্রিক চর্চার অভাবের ফলে থিয়েটারে নারীর অংশগ্রহণ যেন অতি ব্রাত্য! আর কর্র্তৃত্ব বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের অংশীদারত্ব যেন গণ্যই করা হয় না! ক্ষমতাধর পুরুষতন্ত্রের কাছে ক্ষমতাহীন পুরুষ নিজেও যেন এক গৌণ চরিত্র! প্রধান চরিত্র ওই প্রাতিষ্ঠানিক পুরুষতন্ত্রের কাছে যখন ক্ষমতাহীন ও দুর্বল পুরুষ যেখানে নিজেই নিরুপায়, সেখানে নারীর স্থান যেন আরও নিচে!
এত কিছুর পরেও সুখের কথা হলো বাংলাদেশের বর্তমান থিয়েটার চর্চায় লক্ষ করলে করলে দেখা যায় যে, নাটকের প্রায় সব ক্ষেত্রেই নারীর প্রতিভার ক্ষমতাশীল পদার্পণ রয়েছে। পেশাদারিত্বের ক্ষেত্রে অভিনয়, কোরিওগ্রাফি, নাট্য রচনা, পোশাক পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় নারীরা যথেষ্ট এগিয়ে। বাংলাদেশে যতগুলো একক অভিনয় এখনো নিয়মিত মঞ্চস্থ হয় তার প্রায় সবগুলো নারী অভিনীত। এই একক নাটকগুলোর বিষয় নির্বাচন লক্ষ করলে দেখা যাবে তাতে উঠে এসেছে নারীর জীবনের নানা সংগ্রাম ও না বলা কথা।
ইতিহাস নারীদের উপেক্ষার কথা, সমাজ, পরিবার, প্রতিষ্ঠান থেকে বঞ্চনার কথাই বলছে। উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলোÑ কোকিলারা, বিনোদিনী, সীতার অগ্নিপরীক্ষা, গহনযাত্রা, পঞ্চনারীর আখ্যান, নভেরা, কহে বীরাঙ্গনা, আমি বীরাঙ্গনা বলছি, পুতুলটিকে দেখে রেখো, শোণিতের হাত, হেলেন কেলার প্রভৃতি।
সত্যিকার অর্থে থিয়েটার দ্বারে প্রবেশ করার আগেই পরিবারের দ্বার থেকে প্রায় বহিষ্কৃত হয়ে যান নারীরা। কেননা জননী জায়া জ্ঞাত এই সমাজের দৃষ্টিতে ঘরোয়া জীবনে কেউ অশ্রদ্ধার, হিংসার, অবজ্ঞার পাত্রী নয়, কিন্তু এই নাটক করতে আসা নারীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টি যেন বেশি জটিল কুটিল আর ঘৃণার।
সময় বদলেছে, অনেক প্রগতিশীল পরিবার তাদের কন্যাসন্তানটির নাটকের মানুষ হওয়ার স্বপ্নপূরণে পাশে দাঁড়ান। কিন্তু তা অনেক ক্ষেত্রেই বিয়ের আগ পর্যন্তই থাকে। বিয়ের পরে নারীরা শুধু সংসার দেখবে! আর যদি কর্মজীবী নারী হয় তবে শুধু চাকরি আর সংসার দেখবে এর বেশি কিছু নয়!
একটু ভালো করে যদি বাংলাদেশের থিয়েটারের দলগুলোর দিকে তাকাই তাহলে দেখব থিয়েটারগুলোতে সামন্তীয় নানান লক্ষণ এখনো ক্ষতের মতন রয়ে গিয়েছে। এখনো পরিবারতন্ত্র ও গোষ্ঠী প্রাধান্যর মতো গুরুতর সমস্যাগুলোই দলগুলোর বিকাশে মূল বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। স্বামী হয়তো দলপ্রধান ও স্ত্রী দলের অভিনেত্রী। এসব কি এই সমাজব্যবস্থার কারণে হয়েছে কিনা তা নিয়ে একটা সামাজিক গবেষণা হতে পারে। পারিবারিক বন্ধনকেন্দ্রিক থিয়েটারের এই রূপের সুবিধা আছে, অসুবিধাও আছে। সুবিধা হলো মহড়ার শিডিউল সমস্যা নেই, পারিবারিক দিক দিয়ে বাধা আসে না আবার সামাজিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত।
অসুবিধা হলো যে, সব নারীর পিতা-ভ্রাতা-স্বামী বা কাছের কেউই থিয়েটারের সদস্য না তাদের জন্য। ক্ষমতার কেন্দ্র এবং নির্দেশক যেহেতু পৌনঃপুনিকভাবে পুরুষ, ফলে ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কেবল পুরুষতন্ত্রের চর্চাই হয়ে থাকে। এসব ক্ষেত্রে ক্ষমতাশীল পুরুষের সঙ্গে কোনো প্রকার সম্পর্কহীন নারীরা স্বাধীনভাবে প্রতিভা বিকাশের যথেষ্ট সুযোগ হারান। উপরন্তু তার জন্য থাকে পারিবারিক লড়াই, অর্থনৈতিক লড়াই, সামাজিক নিরাপত্তার লড়াই ও শিল্পীর নিজের অস্তিত্বের লড়াই। আর এত কিছুর পরে থিয়েটার থেকে তাদের স্বীকৃতি প্রদানেও যেন যথেষ্ট কার্পণ্য দেখা যায়। এ যেন নানা রূপে নারীকে তার কাজ করার ক্ষেত্রে সেই প্রবাদটিই সত্যি হয়ে দাঁড়ায়!
We must think like a man act like a lady look like a young girl and work like a horse.
ঠিক এভাবেই যেন নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে নারীরা থিয়েটার শিল্পতে।
লেখক : নাট্যকর্মী ও শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
(গতকালের পর)
সকাল ১০টায় রেডিও নতুন সামরিক আদেশের ঘোষণা দিল। যখনই কোনো সাংবাদিক সেনা কর্মকর্তাদের কাছে কোনো তথ্য জানতে চান, তাদের রূঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়। কূটনৈতিক মিশনে পৌঁছার সব চেষ্টা ব্যর্থ হলো। এক দল সাংবাদিক যখন সামনের দরজা দিয়ে একজন ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কথা বলতে বেরিয়ে এলেন, ক্যাপ্টেন ভয়ংকর ক্ষুব্ধ হলেন। তাদের ভেতরে ঢোকার হুকুম দিয়ে পেছন থেকে বললেন, ‘আপনাদের কীভাবে সামলাতে হবে আমি জানি। আমি আমার নিজের মানুষদের হত্যা করতে পারি। আমি আপনাদেরও হত্যা করতে পারব।’
অল্পক্ষণের মধ্যেই সামরিক সরকার হোটেলে হুকুম পাঠাল, সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটের মধ্যে হোটেল ত্যাগ করার জন্য সব বিদেশি সাংবাদিককে তৈরি থাকতে হবে। সাংবাদিকরা তাদের ব্যাগ গুছিয়ে নিলেন, বিল শোধ করলেন। প্রেসিডেন্টের ভাষণের ঠিক পর পর ৮টা ২০ মিনিটে সামনে-পেছনে সৈন্যবোঝাই পাঁচটি ট্রাকের প্রহরায় তারা এয়ারপোর্টের দিকে বেরিয়ে পড়লেন।
যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে একজন সাংবাদিক দায়িত্বপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেলকে জিজ্ঞেস করলেন, বিদেশি সাংবাদিকদের কেন চলে যেতে হবে?
‘আমরা চাচ্ছি আপনারা চলে যান, কারণ থাকাটা আপনাদের জন্য ভয়ংকর বিপজ্জনক হয়ে উঠবে।’
হোটেলের সব কর্মচারী এবং হোটেলে অবস্থানকারী অন্য বিদেশিরা বিশ্বাস করে, সাংবাদিকরা একবার চলে গেলেই শুরু হবে হত্যাযজ্ঞ।
হোটেলের একজন কর্মকর্তা বললেন, ‘এটা আর হোটেল থাকবে না, এটা হয়ে উঠবে রক্তাক্ত হাসপাতাল।’
এয়ারপোর্টে সাংবাদিকদের লাগেজ খুব কড়াভাবে চেক করা হচ্ছে, বাইরে গোলাগুলির শব্দ; কিছু টেলিভিশন ফিল্ম, বিশেষ করে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের ফিল্ম বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
পূর্ব পাকিস্তানে কামানের বিরুদ্ধে লাঠি ও বল্লম নয়াদিল্লি, ২৮ মার্চ (১৯৭১) : লাঠি-বল্লম ও স্থানীয়ভাবে তৈরি রাইফেল দিয়ে অস্ত্রসজ্জিত হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বোমারু বিমান, বোমা, ট্যাংক ও ভারী কামান সজ্জিত পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন জোরদার করে তুলছে।
গত ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে জিতে পূর্ব পাকিস্তানিরা সংখ্যাগরিষ্ঠের ক্ষমতা দাবি করলে, তা প্রতিহত করতে সেনাবাহিনী নামে। পূর্ব পাকিস্তান সামরিক আইন প্রশাসনের গণসংযোগ কর্মকর্তা মেজর সিদ্দিক সালিক অবাধ্য বেসামরিক জনগণকে সামাল দিতে সেনাবাহিনীর কী ভূমিকা হবে, সে সম্পর্কে বিদেশি সাংবাদিকদের ব্রিফিং দিচ্ছিলেন।
লম্বা পশ্চিম পাকিস্তনি এ অফিসার বলেন, ‘কখন সেনাবাহিনী তলব করা হয়? এটাই হচ্ছে শেষ ভরসা। হত্যা করার জন্যই সেনাবাহিনী গুলি করবে।’
তার মন্তব্য ছিল ভবিষ্যদ্বাণীর মতো। দুই সপ্তাহ পর গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকার রাস্তায় যে-ই বেরিয়েছে এমন যে কাউকে, জানালা দিয়ে যে প্রতিবাদী স্লোগান দিয়েছে এমন সবাইকে গুলি করে হত্যা করেছে। বাঙালিদের স্বশাসনের আন্দোলন গুঁড়িয়ে দিতে পূর্ব পাকিস্তানের বেসামরিক জনতার ওপর সেনাবাহিনী কামান, মেশিনগান, রিকয়েললেস রাইফেল ও রকেট হামলা চালিয়েছে।
এটা নিশ্চিত মনে হচ্ছে, হাজার হাজার বাঙালিকে খুন করা হবে। কিন্তু তাদের স্বশাসন আন্দোলন এবং তাদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি তাদের যে আনুগত্য ও আত্মত্যাগ, তাতে এক হাজার মাইল দূর থেকে এসে কার্যত কোনো বিদেশি সেনাবাহিনী অনির্দিষ্টকাল পূর্ব পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে কি না, এখন সে প্রশ্ন উঠে এসেছে।
সেনাবাহিনী এসেছে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে, বড় বড় সব ব্যবসাও সেখানে কেন্দ্রীভূত; সেখানে মাথাপিছু আয় বেশি আবার দ্রব্যমূল্য পূর্ব পাকিস্তানের চেয়ে কম। সাড়ে পাঁচ কোটি পশ্চিম পাকিস্তানির সবকিছুই সাড়ে সাত কোটি পূর্ব পাকিস্তানির চেয়ে উত্তম।
বর্তমান সংবাদদাতাসহ বিদেশি সাংবাদিকদের শনিবার পূর্ব পাকিস্তান থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের শরীর ও লাগেজ তল্লাশি করে ছবির ফিল্ম ও নোটবই বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
ঢাকায় রাজনৈতিক আলোচনায় কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছে। আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পরই সেনাবাহিনীর আকস্মিক আক্রমণ। কিন্তু যেসব টুকরো খবর আসছে, তাতে এটা স্পষ্ট, পাকিস্তানি ক্ষমতাশালীরা কখনই শেখ মুজিবকে পূর্ব পাকিস্তনের জন্য লক্ষণীয় পরিমাপের স্বায়ত্তশাসন প্রদান করবে না।
শেখ মুজিব ও তার আওয়ামী লীগ কার্যত জনগণের নিরঙ্কুশ সমর্থন নিয়ে অসহযোগিতার অহিংস আন্দোলন চালিয়ে সামরিক আইন প্রশাসনের কর্তৃত্বকে অস্বীকার করছেন। শেখ মুজিবের অনুসারীরা কতগুলো সরকারি দপ্তর দখল করে নিয়েছে, কতগুলো বন্ধ করে দিয়েছে, হুকুম অমান্য করছে- এর মধ্যে একটি হচ্ছে প্রতিরক্ষা দপ্তরের বেসামরিক ব্যক্তিদের কাজে যোগদান সংক্রান্ত: হয় কাজে যোগ দিন, নতুবা ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ভোগ করুন।
কিন্তু বাঙালিদের উচ্ছলতার দিন শিগগিরই ঘনিয়ে এল। প্রথম দিকে আলোচনায় কিছু অগ্রগতির খবর থাকলেও তা শ্লথ হয়ে এল এবং সেনা অভিযানের আশঙ্কা ও আতঙ্ক ছাপিয়ে উঠল।
প্রতিদিন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য আসছে। বাঙালিদের অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে, ইচ্ছে করে সমঝোতা আলোচনা দীর্ঘ করা হচ্ছে, যেন এর মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত সরকার পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক প্রস্তুতি ও সেনা মোতায়েন আরও জোরদার করতে পারে।
(উৎস : আন্দালিব রাশদীর বিদেশির চোখে ১৯৭১ ও একাত্তরের দশ বিদেশি সাংবাদিক)
(সমাপ্ত)
লেখক: অনুবাদক ও সাহিত্যিক
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুধু সে দেশে মানুষের জীবন ও সম্পদহানি করছে না, তা এখন পুরো বিশ্বকেই নানাভাবে প্রভাবিত করছে। বহু দেশে তেলসহ বহু ধরনের দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে। বহু দেশে সামরিক খাতে ব্যয় বেড়ে গেছে। বহু ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য ও জননিরাপত্তায়। কী কারণে রাশিয়ার এই আগ্রাসন তা নিয়ে বহু রকম ব্যাখ্যা আছে। ন্যাটোর ভূমিকা এবং বিশ্বে জ্বালানি নির্ভরতার ধরন দুটোই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে তেল, গ্যাস ও কয়লা সব ধরনের জ্বালানির দাম হঠাৎ বেড়ে গিয়েছে। ধীরে ধীরে দাম কমতে শুরু করলেও দাম যুদ্ধের আগের মাত্রায় ফেরেনি। তা ছাড়া অনিশ্চয়তাকে কেন্দ্র করে জ্বালানির বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে, তাতে যেকোনো সময় এই দাম আবারও বৃদ্ধি পেতে পারে। সাধারণত যেকোনো সংকট সামনে হাজির হলে আমরা পূর্ববর্তী সংকটগুলোর দিকে তাকাই।
বোঝার চেষ্টা করি, এর আগের সংকটগুলো কেন হয়েছে এবং তা মোকাবিলায় কোন দেশ কী করেছে এবং সংকট থেকে কারা ক্ষতিগ্রস্ত আর কারা লাভবান হয়েছে। তারপর প্রশ্ন জাগে আগের সংকটের সঙ্গে এখনকার সংকটের পার্থক্য কী। আগের যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপটের সঙ্গে বর্তমান যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপটের ভিন্নতা সংকটকে বুঝতে কী দিকনির্দেশনা দেয়। আর তখন যুদ্ধের পেছনের কারণ অনুসন্ধান করতে গেলে পেছনের ইতিহাস যেমন দেখা দরকার হয়, তেমনি দরকার হয় চলমান ঘটনার ধারাবাহিক বিশ্লেষণ।
যেমন : ৭০ দশকের সংকটের সঙ্গে বর্তমান সংকটের ভিন্নতা এবং গত কয়েক দশকে বৈশ্বিক পরিবর্তন ও রাশিয়া, ইউক্রেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে জ্বালানি সম্পর্কের নানান দিক উন্মোচন করে ইউক্রেন আগ্রাসনের পেছনে পরাশক্তিগুলোর স্বার্থের রাজনৈতিক অর্থনীতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়।
কীভাবে বর্তমান সময়ে জ্বালানিকে ভূরাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাশিয়া এই আগ্রাসনে লিপ্ত হয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের কী ভূমিকা ছিল। ৭০ দশকে সারা বিশ্বই জ্বালানি তেলের ওপর বেশি নির্ভর ছিল। গ্যাস ও কয়লার ওপর নির্ভরতা তখনো ছিল; কিন্তু তেলের ওপর নির্ভরতা সবচেয়ে বেশি ছিল। বাংলাদেশের কথাই যদি ধরি, বাংলাদেশে ৭০ দশকের শুরুতে তেল থেকেই অর্ধেক বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। তেল সংকটের সময় জ্বালানি তেলের দাম বেশি থাকায় গড়ে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৭০-৮০ শতাংশ চলে যেত তেল আমদানি করে, তা বিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবহন, শিল্প ও অন্যান্য খাতে ব্যবহার করতে। বেশির ভাগ তেল উৎপাদন হতো মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে।
১৯৭৩ সালে তেল সংকট শুরুর সময় পৃথিবীর মোট তেলের ৪৯ শতাংশ উৎপাদিত হতো মধ্যপ্রাচ্যে। পৃথিবীর পরাশক্তিগুলো যখন সামরিক অস্ত্র ও পারমাণবিক অস্ত্রকে নিরাপত্তা রক্ষার অস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করে আসছিল, তখন আরব দেশগুলোর জন্য জ্বালানি তেল ছিল সবচেয়ে বড় অস্ত্র। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র নিজ দেশে জ্বালানি তেলের রিজার্ভ থাকা সত্ত্বেও মধ্যপ্রাচ্য থেকে সস্তায় তেল পাওয়ার জন্য নিজ দেশে উৎপাদন কমিয়ে ৭০ দশকের শুরুতে মধ্যপ্রাচ্যের তেলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে গিয়েছিল, তখন হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বিপাকে পড়লেও বর্ধিত দামে তেল বিক্রি করে তেল কোম্পানিগুলো সে সময় ব্যাপক মুনাফা করতে সক্ষম হয়।
প্রায় ৫০ বছর পর, ২০২২ সালের মার্চে এসে রাশিয়া যখন ইউক্রেন আক্রমণ করে, তখন রাশিয়া জ্বালানি তেলকে সামরিক অস্ত্রের বিকল্প একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার শুরু করেছে এবং এখনকার সঙ্গে সত্তরের দশকের পার্থক্য হলো এখন শুধু তেল নয়; গ্যাস, নিউক্লিয়ার ও কয়লার ওপরও নির্ভরতা বেড়েছে। এখন তেল রপ্তানিতে সৌদি আরবের পরই রাশিয়ার অবস্থান।
২০০৯ সালের পর থেকে রাশিয়ার তেল উৎপাদনের পরিমাণ ১০ বছরে ১০ গুণ বেড়েছে। শুধু তেল নয়, রাশিয়া গ্যাস ও কয়লা রপ্তানিতেও এগিয়ে গেছে। বিশ্বে বর্তমানে যেসব নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট রয়েছে বা নির্মাণাধীন বা পরিকল্পনার ধাপে রয়েছে, তার ৬০ শতাংশ রাশিয়ার প্রযুক্তির। জ্বালানিকে ভূরাজনীতির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের এই তরিকা রাশিয়া সুচিন্তিতভাবেই করে এসেছে এতদিন ধরে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন এবং কোল্ড ওয়ার-পরবর্তী বিশ্বে রাশিয়া একটি বৃহৎ শক্তি হিসেবে টিকে থাকার জন্য সারা বিশ্বে জ্বালানি বাণিজ্য বিস্তৃত করার মাধ্যমে একটি নির্ভরশীলতার সম্পর্ক রক্ষার কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করে। বিশেষ করে পুতিন ক্ষমতায় আসার পর রাশিয়ার ঐতিহাসিক আধিপত্য পুনর্নির্মাণের জন্য জ্বালানি নির্ভরতার সম্পর্ক পুনর্নির্মাণই পুতিনের কৌশলে পরিণত হয়। তবে এই কৌশল সমাজতান্ত্রিক আদর্শ দ্বারা পরিচালিত নয়, বরং পুঁজিবাদী বিশ্বে পুঁজির আধিপত্য রক্ষাই এই কৌশলের উদ্দেশ্য।
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের গ্যাস আমদানির ৪৫ শতাংশ এসেছে রাশিয়া থেকে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক-চতুর্থাংশের বেশি তেল আমদানি হয়েছে রাশিয়া থেকে। এ ছাড়া ইউরোপের কয়লার ৪৭ শতাংশ আসে রাশিয়া থেকে।
সারা পৃথিবীতে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য ব্যবহৃত ইউরেনিয়ামের ৩৫ শতাংশ রাশিয়া সরবরাহ করে থাকে। বুলগেরিয়া, চেক রিপাবলিক, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, ইউক্রেন ও বেলারুশের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রযুক্তি রাশিয়ার। কাজেই রাশিয়ার জ্বালানির আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ইউরোপের জন্য মোটেই সহজ নয়। যেকোনো একটি উদ্ভূত সংকট পরিস্থিতিতে নতুন বিকল্প জ্বালানি দিয়ে ব্যবহৃত হয়ে আসা পুরনো জ্বালানি প্রতিস্থাপন কোনো স্বল্পমেয়াদি বিষয় নয়।
৭০-এর সংকটের সময় তা যেমন ছিল না, তেমন ২০২২-এর সংকটেও খুব দ্রুত কোনো সমাধান নেই, যা পুরো জ্বালানি সরবরাহের চেহারা পাল্টে দিতে পারে। যেকোনো প্রযুক্তি নতুন করে ব্যবহার উপযোগী করতে সময় প্রয়োজন হয়। এদিক থেকে ৭০ দশকের বিকল্প আর এখনকার বিকল্পের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো এখন কিছু কিছু বিকল্প যেমন, সৌরশক্তি অপেক্ষাকৃত স্বল্প সময়ে উৎপাদনে যেতে পারে। এলএনজি অবকাঠামো প্রস্তুত থাকলে এলএনজি দিয়ে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। কিন্তু এ সংকটের বেলায় এলএনজি আশানুরূপ দ্রুতগতিতে গ্যাসকে প্রতিস্থাপন করতে পারছে না।
বিভিন্ন সময়ে রাশিয়ার জ্বালানিকে ভূরাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা লক্ষ করে বহুদিন ধরেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিকল্প জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা করে আসছিল। এর মধ্যে রয়েছে স্টোরেজ নির্মাণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বাড়ানো, নতুন জ্বালানি যেমন : হাইড্রোজেন প্রযুক্তি ব্যবহারের সম্ভাব্যতা যাচাই, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ। অন্যদিকে বিকল্প উৎস থেকে জ্বালানি ব্যবহার ব্যয়বহুল বলে এই দেশগুলো রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল ও গ্যাস আমদানিও বন্ধ করতে পারেনি; বরং রাশিয়া থেকে বাল্টিক সাগরের মধ্য দিয়ে প্রথম নর্ড স্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইন চালুর পর দ্বিতীয় নর্ড স্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণেও সম্প্রতি বিনিয়োগ করেছে ইউরোপ।
৭০ দশকের জ্বালানি তেলকেন্দ্রিক নির্ভরতা আর এখনকার একাধিক জ্বালানিকেন্দ্রিক নির্ভরতা দুটি ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ৭০ দশকে তেল সংকটের পর যখন বিশ্ব বুঝতে পারে, মধ্যপ্রাচ্যের তেলের ওপর নির্ভর করে জ্বালানি নিরাপত্তা রক্ষা করা সম্ভব নয়, তখন দেশগুলো প্রাপ্যতাভেদে নিউক্লিয়ার, গ্যাস ও কয়লার দিকে ঝুঁকতে থাকে।
কিন্তু গত পঞ্চাশ বছরে বিশ্বব্যবস্থা এমনভাবে পুনর্বিন্যস্ত হয়েছে যে, জ্বালানির ওপর নির্ভরতার ধরন পরিবর্তন হয়েছে। চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন রকম নির্ভরশীলতার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় কয়লার ওপর নির্ভরতা কমানোর চাপ তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে নিউক্লিয়ার ক্লিন এনার্জি হিসেবে স্বীকৃত নয় বলে এবং এর দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি বেশি বলে ইউরোপের অনেক দেশ ধীরে ধীরে নিউক্লিয়ারের ওপর নির্ভরতা কমানোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এদিকে রাশিয়া যখন একে একে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে জ্বালানি সম্পর্ক তৈরি করেছে, তখন যুক্তরাষ্ট্র বসে ছিল না।
যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই ইউরোপের দেশগুলোকে রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ানোর জন্য সমালোচনা করে আসছিল। বিশেষ করে রাশিয়ার ক্রিমিয়া অধিগ্রহণ ও ইউক্রেন আক্রমণের পর যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর শুধু অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাই জারি করেনি, রাশিয়া থেকে জার্মানি পর্যন্ত নর্ড স্ট্রিম-২ পাইপলাইন যেন সম্পন্ন করা না যায়, সে জন্য পাইপলাইন নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত একটি সুইস কোম্পানির অপরিহার্য প্রযুক্তি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এতে জার্মানি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছিল। অবশ্য পরে জার্মানির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সুসম্পর্কের কারণে শর্তসাপেক্ষে যুক্তরাষ্ট্র এই নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে সম্মত হয়। নর্ড স্ট্রিম-২ পাইপলাইনটি নির্মাণ শেষ হলেও তা সার্টিফিকেশনের অপেক্ষায় ছিল। ইউক্রেন আক্রমণের পর জার্মানি ক্ষুব্ধ হয়ে নিজেই এই পাইপলাইনটি বন্ধের ঘোষণা দেয়। তবে জ্বালানি সংকট শুরুর কারণ নর্ড স্ট্রিম-২ বন্ধ করা নয়। ইউক্রেন আক্রমণের পর নতুন করে রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমানোর তাড়না, শীতকালে চাহিদা বৃদ্ধি, রাশিয়ান গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করার পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতার কারণে নতুন করে সরবরাহে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়া সব মিলিয়ে জ্বালানির যুদ্ধবিষয়ক অনিশ্চয়তা থেকে দাম বৃদ্ধি হওয়ার কারণে সংকট ঘনীভূত হয়েছে।
কাজেই একদিক থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা যেমন রাশিয়াকে কোণঠাসা করছে, তেমনি অন্য দেশগুলোও অস্থিতিশীল ও অনিশ্চিত অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যেমন, বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা রাশিয়ায় রপ্তানির জন্য এলসি খুলতে পারছেন না, যারা পণ্য সরবরাহ করেছিলেন তাদের অনেকের অর্থপ্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের কর্মীদের বেতন এবং সাপ্লাইয়ারদের দেনা পরিশোধের জন্য বিকল্প খুঁজতে হচ্ছে। কিন্তু এই বিকল্প পদ্ধতি কতদিন চালিয়ে নেওয়া যাবে, সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আসলে যুদ্ধ থামাতে কতটুকু কার্যকর এ নিয়ে নানা জনের নানা বিশ্লেষণ রয়েছে।
কোনো কোনো বিশ্লেষক বলছেন, রাশিয়া ২০১৪ সাল থেকেই নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞার মুখাপেক্ষী হয়ে আসছে এবং অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা রাশিয়াকে যতটা বিপদে ফেলেছে, অনেক ক্ষেত্রে তার চেয়ে বেশি বিপদে ফেলেছে অন্য দেশগুলোকে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাধারণ মানুষ, যারা কেউ-ই এই যুদ্ধের জন্য দায়ী নয়। এসব দিক বিবেচনা করলে ইউক্রেন আক্রমণকে কেন্দ্র করে ২০২২-এর সংকট বহুল বিস্তৃত, তীব্র এবং বহু পক্ষ-বিপক্ষ যুক্ত।
রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের পর এর পেছনের কারণ হিসেবে ইউক্রেনের ন্যাটোয় অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি যেভাবে আলোচিত হয়েছে, ততটা পরিষ্কারভাবে আলোচিত হয়নি জ্বালানির ওপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পরাশক্তিগুলোর মধ্যকার প্রতিযোগিতার বিষয়টি। ৭০ দশকের সঙ্গে বর্তমান সময়ের যুদ্ধের প্রেক্ষাপট, জ্বালানিনির্ভরতা, সংকটের ধরন, তীব্রতা ইত্যাদির পার্থক্য থাকলেও পরিবর্তিত বিশ্বে জ্বালানি নিরাপত্তার প্রশ্নটির পরিবর্তন হয়েছে মনে হলেও আসলে যে পরিবর্তন হয়নি, তা আরও স্পষ্ট হয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর। উন্নত বিশ্ব যখন বারবার সংকটে পড়ে স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করে, তখন দরিদ্র দেশগুলো খেলার দর্শকে পরিণত হয়। আর এটাই বোধহয় বৈশ্বিক সংকটের বাস্তবতা।
লেখক: গবেষক ও কলাম লেখক
মোবাইল টেলিফোনে, এক ধরনের বিপ্লব ঘটেছে। বছর ২৫ আগে, বিষয়টি সাধারণের কল্পনার বাইরে ছিল। বর্তমানে এমন কোনো পেশার লোক নেই, যাদের হাতে মোবাইল ফোন দেখা যায় না। এমনকি, যারা নিত্য ভিক্ষা তনু রক্ষায় ব্যস্ত- সেই ভিক্ষুক শ্রেণির অধিকাংশের হাতেও মোবাইল। কিন্তু ৯০ দশকের শেষের দিকে, এই মোবাইল ফোন ব্যবহার করা মোটেও সহজ ছিল না।
শুরুতে কলচার্জ ছিল মিনিটে ৮ টাকা। কলার আইডির জন্য আবার আলাদা টাকা। এরপর ইনকামিং-আউটগোয়িংয়ের জন্যও, মিনিট অনুযায়ী কাটা হতো টাকা। তখন সব ছিল, পোস্ট পেইড ফোন। এখনকার মতো, প্রিপেইড ফোন চালু ছিল না। এমন অবস্থার মধ্যে, একটু সাশ্রয়ী অফার নিয়ে আসে- টেলিটক।
এখন সময় পাল্টেছে। মোবাইলের মাধ্যমে সহজেই সম্পন্ন করা যাচ্ছে, বিরক্তিকর কাজ। সাশ্রয় হচ্ছে, জনগণের মূল্যবান সময়। অনেক কমেছে, ভোগান্তি। এই ধারাবাহিকতায় চাহিদা বেড়েছে, মোবাইল ইন্টারনেটের। কোম্পানিগুলোও, বাহারি অফার নিয়ে হাজির হচ্ছে গ্রাহকদের সামনে। টুজি, থ্রিজির পর এখন চলছে ফোরজির যুগ। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে, আবার কিছু এলাকায় শুরু হয়েছে- ফাইভজি। তবে দেশব্যাপী ফোরজি চালু করে, মোবাইল কোম্পানিগুলো ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করছে। কিন্তু গ্রাহক পাচ্ছেন থ্রিজি, টুজি! এই প্রতারণার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া দরকার।
গতকাল দেশ রূপান্তরের প্রথম পাতায় প্রকাশিত- ‘ফোরজির নামে পকেট কাটা’ শীর্ষক প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়- দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
সংবাদে আরও বলা হয়েছে, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাবনিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
কোনোভাবেই মোবাইল অপারেটরদের আনা যাচ্ছে না, জবাবদিহির মধ্যে। এক্ষেত্রে গ্রাহকদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব না। সরকারকেই পালন করতে হবে অগ্রণী ভূমিকা।
প্রথম মহাকাশচারী মানুষ হিসেবে জগদ্বিখ্যাত সোভিয়েত বৈমানিক ও নভোচারী ইউরি আলেক্সেইভিচ গ্যাগারিন ১৯৬৮ সালের এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন। ‘ভস্টক-১’ নভোযানে করে ১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল পৃথিবীর কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করে মানব ইতিহাসে এক অনন্য স্থান অর্জন করে নেন গ্যাগারিন। ১৯৩৪ সালের ৯ মার্চ বর্তমান রাশিয়ার মোলেনস্ক ওবলাস্টের কাছে ক্লুসিনো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। কৈশোরেই ইউরি মহাকাশ এবং গ্রহ সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং মহাকাশ যাত্রা নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করেন, যা এক দিন বাস্তবে পরিণত হয়। লুবার্টসিতে এক বছর একটি ভোকেশনাল কারিগরি স্কুলে পড়ার পর, গ্যাগারিন সারাতোভে একটি কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয়ে আরও পড়াশোনার জন্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৫ সালে, কারিগরি বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে তিনি ওরেনবার্গে পাইলটস স্কুলে যুদ্ধবিমান চালনা প্রশিক্ষণে ভর্তি হন। ইউরি ১৯৫৭ সালে সোভিয়েত বিমানবাহিনীতে লেফটেন্যান্ট পদ লাভ করেন। ১৯৬০ সালে ইউরি গ্যাগারিনসহ আরও ১৯ জন্য বৈমানিক সোভিয়েত মহাকাশ কর্মসূচির জন্য নির্বাচিত হন। দীর্ঘ বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘ভস্টক-১’ নভোযানের একমাত্র নভোচারী হিসেবে ইউরি গ্যাগারিন নির্বাচিত হন এবং ১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল নভোযানটি উৎক্ষেপণ করা হয়। গ্যাগারিন পরিণত হন পৃথিবীর প্রথম মানুষ যিনি প্রথম মহাকাশ ভ্রমণ করেন এবং একই সঙ্গে প্রথম মানুষ যিনি পৃথিবীর কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করেন। ১৯৬৮ সালে একটি মিগ-১৫ প্রশিক্ষণ বিমান চালনার সময় মাত্র চৌত্রিশ বছর বয়সে এক রহস্যময় বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন ইউরি গ্যাগারিন।
আগের ইনিংসের মতোই ব্যর্থ উসমান খাজা। পারেননি ডেভিড ওয়ার্নারও। প্রথম ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ানও ফিরে গেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ে তাই খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই অস্ট্রেলিয়া। তবুও তৃতীয় দিন শেষে এগিয়ে আছে তারা।
ওভালে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ২৯৬ রানে আটকে দেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট হারিয়ে ১২৩ রান করে অসিরা। এগিয়ে আছে ২৯৬ রানে।
দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিংয়ের শুরুটা ভালো করেছে ভারত। অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরেছে তারা।
দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজা ফেরেন ২৪ রানের মধ্যেই। মারনাস লাবুশান ও স্টিভেন স্মিথের ৬২ রানের জুটি ভাঙেন রবীন্দ্র জাদেজা, পরে ট্রাভিস হেডকেও ফেরান এই স্পিনার। টেস্ট ক্যারিয়ারে অষ্টমবারের মতো স্মিথকে আউট করেছেন জাদেজা।
তৃতীয় দিন শেষে মারনাস লাবুশানের সঙ্গে অপরাজিত আছেন ক্যামেরুন গ্রিন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: অস্ট্রেলিয়া: ৪৬৯ ও ৪৪ ওভারে ১২৩/৪ (লাবুশেন ৪১*, স্মিথ ৩৪; জাদেজা ২/২৫, উমেশ ১/২১)ভারত ১ম ইনিংস: ৬৯.৪ ওভারে ২৯৬ (রাহানে ৮৯, শার্দূল ৫১, জাদেজা ৪৮; কামিন্স ৩/৮৩, গ্রিন ২/৪৪, বোল্যান্ড ২/৫৯)।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।