
দেশে মেডিকেল শিক্ষার মান যে সন্তোষজনক পর্যায়ে নেই, আর আমরা যে এ যাবৎকাল প্রতিষ্ঠিত মেডিকেল কলেজের গুরুভার সইতে পারছি না, সংগতকারণেই এর মান সংরক্ষণ করতে পারছি না তা স্পষ্ট। সম্প্রতি এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরাও বলছেন। সে জন্য নতুন মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা বন্ধ করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ মহল।
আমরা আন্ডারগ্র্যাজুয়েট মেডিকেল এডুকেশনের মান, মানে আমাদের ডাক্তার তৈরির মৌলিক ধাপের মান রক্ষা যখন হুমকির মুখে, তখন দেশে প্রকৃত চিকিৎসক গড়ে উঠছে কি না, এর যাচাই-বাছাই করার প্রয়োজন দেখা দেয়।
বিএমডিসির সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হাসান বলেন, ১৮ কোটি জনসংখ্যার দেশে মেডিকেল কলেজ ১১৫টি। জনসংখ্যার অনুপাতে এত মেডিকেল কলেজ আর পৃথিবীর কোনো দেশে নেই। সমান সংখ্যক মানুষের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে মেডিকেল কলেজ ৮৫টি। যুক্তরাজ্যে ৮০টি। ভারতে ৬৩টি। চীনে ১৭টি।
আমাদের অনেক মেডিকেল কলেজ মানহীন আর তাই সংশ্লিষ্ট মহলও অনুধাবন করছেন মেডিকেল শিক্ষায় মান সংরক্ষণ জরুরি আর এখানে মানুষের জীবন নিয়ে শিক্ষা, তাই এর গুণগতমানের সঙ্গে আপস করা কোনোক্রমেই সমীচীন নয়। পৃথিবীর কোনো দেশ, এমনকি উন্নত দেশও মান সঠিক রেখে এত মেডিকেল কলেজ করার সাহস করে না। দেশে মানহীন মেডিকেল কলেজের সংখ্যা বেশি। এমন কথা মহলবিশেষে আলোচিত আর তাই আরও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেওয়া আমাদের জন্য হবে অনুচিত কাজ।
কারও পক্ষেই এত মেডিকেল কলেজের জন্য এত দক্ষ শিক্ষক, এত সুসজ্জিত ল্যাবরেটরি সেটআপ, হাসপাতাল বেড, চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করা এক অসম্ভব ব্যাপার। এমন বাস্তবতা জেনেও তাই বর্তমানে অবস্থা পর্যালোচনা না করে মেডিকেল কলেজের সংখ্যা বাড়ানোর চিন্তা নীতিনির্ধারকরা না করলে তা মেডিকেল শিক্ষার মানের স্বার্থে শুভ হবে আর অবশ্যই জনকল্যাণমূলক হবে।
কেবল তাই নয়, বর্তমানে যে মেডিকেল কলেজ আছে তা দেশীয় আর আন্তর্জাতিকমানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, এর মূল্যায়ন করা উচিত এবং মান নিচে থাকলে তা বন্ধ করে দেওয়ার কথা বিবেচনা করা উচিত। একটি তিক্ত সত্য এই, যেগুলো নিয়ন্ত্রক কমিটির শর্তপূরণে ব্যর্থ হয়েছে, এদের তা পূরণ করার জন্য সময় দেওয়া হলেও পরে অনেকে পূরণ করেনি। আর এমন দেখা গেছে, পরিদর্শক কমিটি আসবে এমন সংবাদ পেলে কেউ কেউ কিছু শিক্ষক আর ওয়ার্ডে কিছু রোগী ভর্তি দেখিয়ে শর্তপূরণের বাহানা করেন আর পরে আবার সেসব শিক্ষক আর রোগী এবং প্রতিষ্ঠানে রাখার প্রয়োজন মনে করে না। আবার এও কেউ কেউ করেন, শর্তপূরণের জন্য বেশ কিছু শিক্ষক নিয়োগ দিলেন আর তা পূরণ হলে এদের ছাঁটাই করলেন। তবে সবাই এমন নয়, কেউ কেউ মান রক্ষার জন্য শর্ত আন্তরিকভাবেই পূরণ করেন। তাই সব মানহীন ঢালাওভাবে বলা না গেলেও কিন্তু মানহীন মেডিকেল কলেজ আছে এ কথা সত্য।
আমরা ব্যবসা করতে বসে এমন করি যে, চিকিৎসাসেবা আর শিক্ষা এর মধ্যে যে মানবিকতা আর বিবেকের দায় এবং জনগণের প্রতি অঙ্গীকারের প্রশ্ন আছে তা বেমালুম ভুলে যাই, তাই ব্যবসার মধ্যে কপট কৌশল প্রয়োগে কুণ্ঠিত হই না। সে জন্য এর মূল্যায়ন আর পুনঃপুন পরিদর্শন এবং তদারকি দরকার। প্রয়োজনে প্রবীণ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে, যারা অবসরে আর চিকিৎসা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নন, এমন ব্যক্তিদের নিয়ে একটি স্থায়ী কমিটি থাকতে পারে। এরা মূল্যায়নের প্রতিবেদন দিলে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
পৃথিবীর দেশে দেশে দেখা যায় এরাও শিক্ষা আর স্বাস্থ্য ব্যবসা করলেও একে সস্তা পণ্য করেননি এবং এসব ক্ষেত্রে মান সংরক্ষণে আপস করেন না। তাই হেলথ ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে এগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করলেও একে নিয়ে ব্যবসা করা বড় জটিল। এখানে ব্যবসার কূটকৌশল প্রয়োগ সম্ভব নয় আর একে মুনাফা করার উৎস হিসেবে গ্রহণের সুযোগ নেই। একে ব্রেক হিভেন বা নন প্রফিট ব্যবসা হিসেবে নেওয়ার তাগিদ আসে, যারা এই ব্যবসায় আসেন। সরকার মানসম্পন্ন কলেজের একটি তালিকা দিতেই পারে জনগণের অবগতির জন্য আর তাই ভর্তিচ্ছুরা দেখে বুঝে কলেজে ভর্তি হতেও পারবেন। অতি সম্প্রতি এক মানহীন মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা যে দুর্ভোগে পড়লেন, তাতে তেমন পরিস্থিতি হতো না।
আমরা মেডিকেল কলেজের ন্যাশনাল র্যাঙ্কিংয়ের কথা ভাবতে পারি। আমাদের মেডিকেল কারিকুলাম যে সেকেলে আর তা যে তথ্যনির্ভর, হাতেকলমে শিক্ষা আর বিশেষ করে রোগী-ডাক্তার সম্পর্ক এবং কমিউনিকেশন স্কিল প্রায়োগিকভাবে যে শিক্ষা, যে পরিপূর্ণভাবে দেওয়া হয় না তা এখন সংশ্লিষ্ট মহল জানে। মানের ব্যাপারে কারিকুলাম অনেকটা সম্পর্কিত, সমসাময়িক বিশ্বে নানা দেশে মেডিকেল কলেজে যে কারিকুলাম আছে তা নিজ দেশের চাহিদার সঙ্গে সম্পর্কিত করে প্রণয়ন করা হয়নি। বর্তমানে সমন্বিত সেবা আর শিক্ষা কার্যক্রমের ধারা চলেছে ‘রোগীভিত্তিক, রোগভিত্তিক নয়।’ তথ্য-প্রমাণভিত্তিক মেডিসিন বা এভিডেন্স বেসড মেডিসিন হলো চলমান ধারা। আমরা এ থেকে অনেক দূরে। প্রিসিশন মেডিসিন তো দূরঅস্ত।
মেডিকেল শিক্ষা অন্যান্য শিক্ষার মতো নয়, তাই একে এত সরলীকরণ করা। আরও নতুন মেডিকেল কলেজ ঘোষণা দেওয়া অনুচিত কাজ মনে হয়। মেডিকেল শিক্ষা কেবল জ্ঞানভিত্তিক চর্চা নয়।
এই শিক্ষায় জ্ঞান, দক্ষতা আর দৃষ্টিভঙ্গি (knowledge, skill and attitude)এই তিনটি জিনিসের শিক্ষা প্রয়োজন। কেবল লেকচার ক্লাসে হাজির হয়ে বাসায় বসে বই পড়ে পরীক্ষা নয়। জ্ঞান অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে রোগীর কাছে বসে তাকে পরীক্ষা করে হাতেকলমে শেখা আর রোগীর অসুস্থতার ধারাবাহিকতা অনুসরণ করা। রোগ নির্ণয়ের জন্য ল্যাবরেটরি টেস্ট করা, এর নমুনা সংগ্রহ করা, শেখা আর এর মূল্যায়ন হাতেকলমে শেখা দরকার। ক্লিনিক্যাল ক্লাসে রোগী নিজেই বই; কারণ আজকাল রোগ কেবল নয়, রোগীবিশেষে একই রোগের হয় নানা প্রকাশ। তাই বেড সাইড টিচিং খুব জরুরি। আরও যা আছে তা হলো কমিউনিকেশন স্কিল শেখা। কীভাবে রোগীর সঙ্গে আলাপ করতে হয়, কীভাবে তাকে দুঃসংবাদ দিতে হয়, কীভাবে কোনো বড় রকমের চিকিৎসা বা সার্জারির আগে তাকে আর তার পরিবারের লোকদের বোঝাতে হয়, চিকিৎসা বিকল্পগুলো বুঝিয়ে ডাক্তার নিজের সিদ্ধান্ত বলবেন আর তা রোগী বুঝে রাজি কিনা তা জানবেন, একে বলে ‘ইনফরমড কনসেন্ট’।
এ ছাড়া আছে এথিকেল প্রশ্ন। ডাক্তারের পেশাগত অধিকার আর রোগীর অধিকার সংরক্ষণ, রোগীর গোপনীয়তা আইনানুগ চিকিৎসাসেবা এসব করা-শেখা জরুরি। এসব শিক্ষা দেওয়া আর নেওয়া জরুরি।
আমরা এসব শেখার জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক, চিকিৎসা সাজসরঞ্জাম পাচ্ছি?
তা না হলে আমরা কি এমন শিক্ষা পেয়ে তৃপ্ত?
জনগণের মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবা কি সেবার পর্যায়ে আছে?
এর দায় কার?
আমাদের আউটডোরে এত রোগী ভিড় করে আর এজন্য চিকিৎসক সংকট হয়, এ হলো আমাদের দুর্বল ব্যবস্থাপনার জন্য। আমরা যদি জিপি রেফারেল সিস্টেম করতাম অন্যান্য দেশের মতো, অঞ্চলভিত্তিক জিপি করতাম আর জটিল হলে কেবল বিশেষজ্ঞদের কাছে রেফারেল সিস্টেম করতাম তা হলে এমন দুরবস্থা হতো না।
আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ চিকিৎসার জন্য নিজের সহায়-সম্বল বিক্রি করে আমাদের বাজে ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা চিকিৎসা খাতে বাজেট কম দিলেও একে খরচ করার যোগ্যতা অর্জন করিনি, এও দুর্বল ব্যবস্থাপনার জন্য। আমরা কেন এখনো অন্যান্য দেশের মতো হেলথ ইন্স্যুরেন্স করতে পারি না? আমরা এখনো তরুণ চিকিৎসকদের কেরিয়ার প্লানিং করতে পারিনি। আমরা এদের নিয়োগে আর পদোন্নতিতে মেরিটোক্রেসি বা মেধা আর যোগ্যতাভিত্তিক বিচার করতে পারিনি, এসব হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণের দুর্বলতা।
আর চিকিৎসা শিক্ষার ক্ষেত্রে মান সংকট হওয়াতে আমাদের নানা সংকট হয়েছে। আমাদের গবেষণা এজন্য দুর্বল কারণ। আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় এ যাবত হাসপাতাল আর রোগী সেবা বিবেচনায় এসেছে মেডিকেল শিক্ষার মান এবং গবেষণা নিয়ে। এ নিয়ে কথা প্রথম বলেছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এর সমাধান তার পক্ষে সম্ভব। সে জন্য আমাদের মেডিকেল শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ জরুরি। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে, আপসহীন হতে হবে। আর সেকেল কারিকুলাম বদলে সমসাময়িক বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কারিকুলাম প্রণয়ন করতে হবে। পরিমাণ নয়, মেডিকেল শিক্ষায় অন্তত গুণগতমান রক্ষা জরুরি।
কভিড প্যান্ডেমিক মেডিকেল শিক্ষায় নতুন ধাত আর ধারা প্রবর্তনের তাগিদ এনেছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি আর প্রচলিত নির্দেশনা পদ্ধতি বা পেডাগগি সমন্বয়ের আন্তর্জাতিক ট্রেন্ড আসছে। ভার্চুয়াল লার্নিং এখনো দূরঅস্ত, কারণ চিকিৎসাবিজ্ঞানে রোগী দেখে পরীক্ষা করে শেখা বা authentic clinical experience-এর বিকল্প নেই। পরীক্ষা পদ্ধতি শেখার জন্য প্রচলিত সাইমুলেশন মডিউল বা ভার্চুয়াল অউগ মেন্টেড রিয়ালিটি একটি উপায় হলো রোগীর শয্যার পাশে ক্লিনিকেল অভিজ্ঞতা অর্জনের বিকল্প নেই। আর আমাদের পজিটিভ দিক হলো, সত্যিকার রোগী দেখে পরীক্ষা করে শেখার যে সুযোগ এ দেশে আছে, তা অন্য কোনো দেশে নেই, তাই উন্নত দেশ থেকে আন্ডার গ্রেড ছাত্রছাত্রী এ দেশে ক্লিনিকেল স্কিল শেখার জন্য আসে।
আমাদের আছে অনেক সম্ভাবনা আর সম্পদ। আমরা একে কাজে লাগালে আর ভাবলে অনেক কিছুই সম্ভব। উদ্ভাবনী চিন্তা করতে হবে, নিজের দেশের সব কিছুর মান উন্নতির জন্য চেষ্টা করতে হবে। আমাদের কি এক অচলায়তন আছে মনে? একে ভাঙা জরুরি।
লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ
বাজারে ক্রেতা এবং বিক্রেতা, উভয়ই দরকষাকষির মাধ্যমে নিজেদের উদ্বৃত্ত সবচেয়ে বেশি করার প্রচেষ্টা নেয়। বাজারে যদি কারসাজি না থাকে, উদ্বৃত্ত ভাগাভাগিতে উভয় পক্ষ তুষ্ট হয়ে বাড়ি ফেরে। মূল্যস্ফীতি ঘটলে, বিশেষত যাদের টানাটানির সংসার তাদের উদ্বৃত্ত হ্রাস পায় এবং উৎপাদকের বিশেষত দাম কারসাজিতে লিপ্ত সিন্ডিকেট সদস্যদের উদ্বৃত্ত ঊর্ধ্বমুখী হয়।
মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির সূত্রে ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং মানুষের অর্থনৈতিক অবনতি ঘটে এমন একটা ব্যাখ্যা নিতান্তই হালকা, সরলরৈখিক। বলা যেতে পারে, তা জলের ওপর ওড়াওড়ি কিš‘ জল স্পর্শ করা নয়। মূল্যস্ফীতির অগোচরে থাকা আসল প্রভাবটা আলোতে আসে যখন আমরা গরিবের পুষ্টির কথা ভাবি। বাংলাদেশে বর্তমানে চার সদস্যের একটা পরিবারে সুষম খাদ্য সরবরাহে প্রতি মাসে প্রয়োজন ১৯ প্রায় হাজার টাকা ‘একজন দিনমজুর, রিকশাচালক, চর্মকার কিংবা গৃহস্থালির কাজে নিযু ক্ত মানুষসহ যেকোনো নিম্ন আয়ের গরিব মানুষ এখন প্রতিদিন যে আয় করছে, তাতে এই পুষ্টি জোগানো প্রায় অসম্ভব।’ গরিবের কথা আপাতত বাদ দিলেও মুরগির বাজারের অস্থিরতা যে মধ্যবিত্তের পরিবারে পুষ্টির অভাব ঘটাবে তাতে সন্দেহ নেই। আজকের নিবেদন তাই ‘মূল্যস্ফীতি এবং মুরগি কাহিনি’।
দুই
সৈয়দ মুজতবা আলী খাবার-দাবার নিয়ে অনেক লিখেছেন। বিশেষত গোয়ালন্দঘাট থেকে ছাড়া রকেট স্টিমারে রান্না করা সুস্বাদু মুরগির তরকারি তার নজর এড়ায়নি। মুরগির তরকারি বাঙালির প্রিয় খাবার। অসুখ হলে মুরগির স্যুপ, বিয়ে বা মেহমানদারি হলে মুরগির রোস্ট আর এমনিতে প্রোটিন সমৃদ্ধ এই খাবারটির কদর তো আছেই।
মুরগিকে খুব বড় প্রাণী হিসেবে কেউ ভাবে না। ভীরু লোককে বলা হয়, চিকেন হার্টেড আর নিতান্তই সাদাসিধে বন্ধুদের বলা হয় ‘মুরগি’। সেই রাগে কিনা জানি না, বাজারে এখন মুরগি ক্ষেপে গিয়ে বেশি দাম হাঁকছে। তাও আবার রমজানের শুরুতেই। মাত্র এক দেড় মাস আগে যে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল দেড়শ টাকা কেজি, এখন তা দ্বিগুণ ২৮০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। কিডনি রোগী আমার গিন্নির জন্য ডাক্ত ার প্রস্তাবিত প্রোটিন মাত্রা খুব কম, কিন্ত ‘বাজার দাম শুনে তার হৃদকম্পন প্রতিফলিত হয় রাগে, ক্ষোভে এবং চেহারায়। তার ওপর এই রমজান মাসে মুরগির দাম কেজিপ্রতি ৩০০ টাকা পার হতে পারে এমন প্রেক্ষাপন শুনে তার মাথায় হাত।
অন্যদিকে, শিশু অথবা অল্পবয়সীরা চিকেন ফ্রাই খেতে ভালোবাসে কিন্ত ‘বাবা-মা দুর্মূল্যের বাজারে নিজেরাই যে চিকেন ফ্রায়েড! সুতরাং, অর্থনীতির ক্লাসে স্যার পড়ান, চিকেন আর বিফ (এমনকি মাটন) পারস্পরিক বিকল্প দ্রব্য একটির দাম বৃদ্ধি পেলে অন্যটির চাহিদা বৃদ্ধি পায়। কিš ‘সব ক্রেতার মুখে এক কথা: এমন বেশি দাম আমরা কল্পনাও করিনি। যারা মুরগির মর্যাদা রক্ষা করতে ব্যর্থ, তারা নিরুপায় হয়ে দুধের সাধ ঘোলে মেটাচ্ছেন অর্থাৎ, ১২০ টাকা কেজিতে মুরগির কলিজা, মাথা, গলা আর পা দুটো বাড়ি নিয়ে ফিরছেন।
জিনিসের দাম বাড়লে দুটো প্রভাব প্রত্যক্ষ করা যায়। অপেক্ষাকৃত কম গুণসম্পন্ন দ্রব্য কিনে বাড়ি ফেরা যেমন একটু আগে উল্লিখিত মুরগির বদলে মাথা, গলা, পা, কলিজা কিংবা বিকল্প দ্রব্যে ঝুঁকে পড়া যেমন মুরগির মাংসের জায়গায় বিফ বা মাটন চাহিদা করা। যখন ভোক্তা বিকল্পে ঢুকছে অতি চালাক বিফ এবং মাটন বিক্রেতা অমনি দাম চড়িয়ে দিচ্ছে কেজিপ্রতি ৫০-৭০ টাকা। যে গরুর মাংস মাত্র এক মাস আগে ছিল ৭০০ টাকা, তা এখন ৭৫০ টাকা। উপায় নেই গোলাম হোসেন বড় বড় একান্নবর্তী পরিবারে ৮টা মুরগি লাগলে বর্তমান দামে পড়বে ৫০০০ টাকার কিছু বেশি যে ব্যয় দিয়ে সাড়ে সাত কেজি বিফ কেনা যায় এবং কিনছেনও ক্রেতা। মাটনের দাম আরও বেশি চড়া। কৃষিমন্ত্রী নাকি বলেছেন, মাংসের দাম আগামী মাসগুলোতেও কমবার নয়।
তবে, পোলট্রি সমিতির সভাপতি বলছেন, সমস্ত আনুষঙ্গিক উৎপাদন ও বিতরণ খরচ সমেত খুচরা পর্যায়ে এক কেজি ব্রয়লার চিকেনের দাম ২২০ টাকার অধিক হওয়া উচিত নয়। তিনিই আবার সন্দেহ করছেন যে, মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণ করে একটা সিন্ডিকেট এই দাম-কারসাজির সঙ্গে সম্পৃক্ত। নিন্দুকেরা বলছেন, কাবাব মে হাড্ডি!
তিন
রমজানে ব্যবসায়ীদের কারসাজি এবং জিনিসপত্রের দামের ঊর্ধ্বগতি একেবারে নতুন কিছু নয়। যেমন নতুন নয়, বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার চোখের সামনে এদের কাজকারবার। অন্তত এই পবিত্র মাসে মানুষ যাতে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার মুখে দিতে পারে তার ব্যবস্থা করা জরুরি। এমনিতে মূল্যস্ফীতির মদদে ওষ্ঠাগত প্রাণ যাকে বলে মুরগির প্রাণ!
একটা বাংলা দৈনিকে ছাপানো খবর কিছুটা আশার আলো দেখায়। আর দেখাবে না কেন, কারণ বাংলাদেশে দুর্ঘটনা না হলে নাকি কারও টনক নড়ে না। সামান্য মুরগি তার আবার এত লম্ফঝম্ফ? হইচই আর শোরগোলের পর শুরু হয় তোড়জোড় এবং পরবর্তী সময়ে দাম কমল ২০ টাকা। বলা বাহুল্য, পোলট্রি খাতের শীর্ষস্থানীয় চার প্রতিষ্ঠান খামার পর্যায়ে ব্রয়লার মুরগির দাম ১৯০-১৯৫ টাকায় নির্ধারণের পর খুচরা বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে।
কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, এর মধ্যে নাকি গত ৫২ দিনে মুরগি ও বাচ্চার দাম বাড়িয়ে করপোরেট কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত হাতিয়ে নিয়েছে ৯৩৬ কোটি টাকা। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, এই অভিযোগ তুলেছেন স্বয়ং প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। তিনি বলতে চাইছেন, প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন ব্যয় যেখানে কেজিপ্রতি ১৬০-১৬৫ টাকা, সেখানে করপোরেট উৎপাদকের খরচ ১৩০-১৪০ টাকা এবং করপোরেট থেকে প্রতিদিন দুই হাজার টন বাজারে এসে থাকলে দিনে তাদের অতিরিক্ত মুনাফা দাঁড়ায় ১২ কোটি টাকা কিংবা ১২ী৫২=৬২৪ কোটি টাকা মোট মুনাফা। তার সঙ্গে আছে একদিনের মুরগির বাচ্চা বিক্রি বাবদ তাদের মোট মুনাফা ৩১২ কোটি টাকা। সংগঠনটির দাবি, দেশে কোম্পানিগুলো কর্র্তৃক প্রতিদিন, প্রতি বাচ্চায় খরচ ২৮-৩০ টাকা, মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হয় ২০ লাখ। প্রতি বাচ্চার দাম ৬২-৬৮ টাকায় দেওয়ার কথা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকায় এবং একটি মুরগির বাচ্চা থেকে অতিরিক্ত মুনাফা এসেছে ৩০ টাকা।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির দাবি, ‘সরকারি তদারকি না থাকায় হরিলুট করেছে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত ৫২ দিনে তারা মুরগি ও বাচ্চার দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত ৯৩৬ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে।
চার
এ দাবি আমাদেরও। মুক্তবাজার অর্থনীতি মানে এই নয় যে, বাজারে সরকারি তদারকি থাকবে না। বাজারের বেহাল অবস্থার জন্য দায়ী, হোক চাল-ডাল বা তরিতরকারি, মাংস। নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণ ও তদারকির অভাব এবং তার সঙ্গে অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা। অন্তত পবিত্র রোজার মাসে ভোক্তার উদ্বৃত্ত যাতে পকেটমার হয়ে উৎপাদকের ঘরে না যায় সেই কামনা সবার। একমাত্র রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিই পারে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে, সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে।
লেখক: অর্থনীতিবিদ। সাবেক উপাচার্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
বাতাসে কার্বন নির্গমন ক্রমশ বাড়তে থাকায় উত্তপ্ত হচ্ছে বায়ুমন্ডল। পাশাপাশি পৃথিবীতে গাছপালা, বৃক্ষরাজি কমে যাওয়ায় বায়ুম-লের আর্দ্রতা ও উত্তপ্ত অবস্থা লাঘব না হওয়ায় ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হচ্ছে। এর প্রভাবে বরফাচ্ছাদিত হিমালয় পর্বতসহ পৃথিবীর অপরাপর বরফাচ্ছাদিত হিমবাহ ও পর্বতের বরফও গলছে সমভাবে। পৃথিবীর বরফাচ্ছাদিত পর্বতসমূহের বরফ গলে সেই পানি সমুদ্রে পতিত হয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও নেদারল্যান্ডসের মতো দেশগুলো ঝুঁকিতে আছে। অতিসম্প্রতি এই ঝুঁকির তথ্য নিরাপত্তা পরিষদকে জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে নদীভাঙন, জলোচ্ছ্বাস বাড়ার কারণে প্রায় দুই কোটি মানুষ গৃহহীন ও আশ্রয়হীন হবে। এমন পূর্বাভাস পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের। তাদের মতে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে জলোচ্ছ্বাস বাড়লে সমুদ্রের পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে। এ অবস্থায় কৃষিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে, খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পাবে। একই সঙ্গে খাদ্য নিরাপত্তায় ঝুঁকিও বাড়বে সমহারে।
বিশ্বের প্রতি ১০ জনের একজন মানুষ এই মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবী সহনীয় পর্যায়ের চেয়েও বেশি উত্তপ্ত হচ্ছে। যার কারণে হিমবাহ ও বরফ গলে যাচ্ছে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার মতে, অ্যান্টার্কটিকায় প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৫০ বিলিয়ন টন বরফ গলে যাচ্ছে। গ্রিনল্যান্ড প্রতি বছর ২৭০ বিলিয়ন টন বরফ হারাচ্ছে। জাতিসংঘ প্রধান বলেন, গত শতাব্দীতে বিশ্বে মহাসাগর সবচেয়ে বেশি দ্রুত উষ্ণ হয়েছে। বিশ্ব ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণায়নের সীমা অতিক্রম করছে। এটি ২.৮ ডিগ্রির দিকে যাচ্ছে। এভাবে উষ্ণতা বৃদ্ধি, দুর্বল দেশগুলোর জন্য কার্যত ‘মৃত্যুদন্ড’।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, হিমালয়ের বরফ গলে এরই মধ্যে পাকিস্তানে বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। কিন্তু আগামী কয়েক দশকে হিমালয়ের হিমবাহ কমতে থাকায় সিন্ধু, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদীগুলো আরও সংকুচিত হবে। এমনকি নিচু দেশগুলো চিরতরে অদৃশ্য হয়েও যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পর্যাপ্ত অর্থ থাকতে হবে। ফলে জলবায়ু তহবিলের জন্য ১০০ বিলিয়ন অর্থ প্রদানের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে।
পরিবেশবিদদের মতে, ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলের ১৭ শতাংশেরও বেশি জমি পানির নিচে স্থায়ীভাবে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নদীভাঙন ও ঝড়ো জলোচ্ছ্বাসের কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ দেশের দুই কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য মূলত আমরাই দায়ী। পাশাপাশি অতিমাত্রায় ভোগবিলাসী জীবনযাপনই বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা রাখছে। তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে পানির আয়তনও বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া মরু অঞ্চল ও পর্বতচূড়ায় অবস্থিত বরফ গলে যাওয়ার ফলে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, তাপমাত্রা বৃদ্ধির বর্তমান হার অব্যাহত থাকলে ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১১ থেকে ৩৮ ইঞ্চি পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। গ্রিনল্যান্ড ও পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকায় বড়সড় কোনো ভাঙন দেখা দিলে এটা আরও ভয়াবহ রূপ নেবে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে সারা বিশ্বের নিম্নাঞ্চলের দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তন-বিষয়ক আন্তঃসরকার সংস্থা ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল ফর ক্লাইমেট চেঞ্জের (আইপিসিসি) একটা গবেষণা বলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার (৩৯.৩৭ ইঞ্চি) বাড়লে বাংলাদেশের ১৭-২০ শতাংশ স্থলভূমি পানিতে তলিয়ে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর প্রণীত বাংলাদেশের জাতীয় কৌশলনীতির তথ্যানুসারে দেশের আড়াই কোটি মানুষ জলবায়ু-উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে। নাসার সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে, আগামী ১০০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রাম সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশের বিপুল জনসংখ্যার ঘনত্ব ও সীমিত সম্পদের কারণে পরিবেশ-উদ্বাস্তুদের অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা কষ্টসাধ্য হবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ, যাদের সম্পদ সীমিত, তাদের পক্ষে এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা কষ্টকর হবে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে সারা বিশ্বের অর্থনীতির ওপর প্রতিকূল প্রভাব পড়বে। উপকূলীয় অবকাঠামো সমুদ্রবন্দর, রাস্তাঘাট ও রেলসংযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বন্দরসমূহের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ায় বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যাহত হবে। এর ফলে সমুদ্র উপকূলবর্তী শহর ও রাষ্ট্রসমূহের মানুষকে সেবা দেওয়ার সক্ষমতা হ্রাস পাবে, যা রাষ্ট্রসমূহকে ভঙ্গুর করে তুলবে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র, যেমন নিউ ইয়র্ক, সাংহাই, মুম্বাই এগুলো সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত। এই অর্থনৈতিক চালিকাশক্তিগুলো যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিংবা সাময়িকভাবেও যদি এদের স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত হয়, তাহলে বৈশ্বিক অর্থনীতি বড় ধরনের সংকটে পড়ে যাবে। উপকূলে অবস্থিত পর্যটনশিল্পের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হবে। বাংলাদেশে যে পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটছে, তা হয়তো অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া পুরোপুরি রোধ করা সম্ভব নয়। বরং বৃদ্ধির হার কতটা কমিয়ে রাখা যায়, সেটাই সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত। পাশাপাশি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে যেসব নিরাপত্তা ঝুঁকির সৃষ্টি হতে পারে, তা মোকাবিলার জন্য আন্তঃরাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের যৌথ পদক্ষেপ দরকার। একই সঙ্গে এ জন্য প্রয়োজন পরিকল্পনা তা বাস্তবায়নে স্থানীয় এবং বৈশ্বিক উদ্যোগ। তাহলেই পৃথিবীর মানুষকে, ভবিষ্যৎকে নিরাপদ রাখা সম্ভব হবে।
লেখক : সাংবাদিক, সাধারণ সম্পাদক-বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম
প্রায়ই কিছু সংসদ সদস্যকে নিয়ে বিতর্ক ওঠে। বিতর্কিতদের সতর্কও করা হয়। যেহেতু সরাসরি জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে কাজ করতে হয়, সেহেতু কিছু ভুলত্রুটি থাকতেই পারে। যারা কাজ করেন, ভুল তারাই করেন। অথর্ব-অলস-অকর্মণ্যদের কোনো ভুল হয় না। অবশ্য তারা অন্যের ভুল ভালোই ধরতে পারেন। কিন্তু ‘ভুল’ আর ‘অন্যায়’ তো এক কথা না। জামালপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য যা করছেন সেটা ভুল নয়, অন্যায়। কারণ অসচেতনভাবে তিনি এটা করছেন না করছেন অত্যন্ত সচেতনভাবে। নিশ্চয়ই মসজিদ নির্মাণের ধীরগতির পেছনে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে, যা আমাদের জানা নেই।
গতকাল দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত, ‘এক বছরের কাজ সাড়ে তিন বছরেও হয়নি’ শীর্ষক সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, ‘মোহাম্মদ ইউনুছ অ্যান্ড ব্রাদার্স’ নামের একটি লাইসেন্সে কাজটি করছেন জামালপুর-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মোজাফফর হোসেন। সংসদ সদস্যের স্থানীয় প্রতিনিধি মাহফুজুর রহমান কাজটির তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন। সরেজমিন দেখা যায়, মডেল মসজিদের তিনতলা ভবনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ২০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। তারা খুব ধীরগতিতে কাজ করছেন। মূল ভবনের বিভিন্ন স্থানের পলেস্তারা, নকশার কাজ, অজুখানা, টাইলস, শৌচাগারের কাজ শুরুই হয়নি। এ ছাড়া স্যানিটারির সব কাজ বাকি রয়েছে।
মুসল্লি ও স্থানীয়দের অভিযোগ, একজন সংসদ সদস্য মসজিদটির নির্মাণকাজ করছেন তার খেয়ালখুশিমতো। যখন তার মন চায় কাজ করেন, আবার বন্ধ রাখেন। জেলা গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মসজিদটির নির্মাণকাজের ব্যয় ধরা হয় ৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সাব-ঠিকাদার হিসেবে সংসদ সদস্য মোজাফফর হোসেন ২০১৯ সালের ২১ জুলাই মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করেন। এক বছর পর ২০২০ সালের ২২ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিন বছর আট মাস পার হতে চললেও এখনো প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে।
সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে জামালপুর গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোবারক হোসেন বলেন, ‘আটটি মসজিদের মধ্যে সাতটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ওই সাতটি উদ্বোধনও হয়েছে। শুধু দেওয়ানগঞ্জের মডেল মসজিদটির নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। কাগজপত্রে কাজটি পেয়েছে মোহাম্মদ ইউনুছ অ্যান্ড ব্রাদার্স। তবে কাজটি করছেন জামালপুর-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মোজাফফর হোসেন।
কিন্তু সংসদ সদস্যের স্থানীয় প্রতিনিধি ও মসজিদটির নির্মাণকাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘নির্মাণকাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। করোনা ও বন্যার কারণে কাজটি দেরি হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে মসজিদটি হস্তান্তর করা হবে।’
একজন সংসদ সদস্য, সরকারিভাবেই প্রচুর সুযোগ-সুবিধা পান। এরপরও এলাকার বিভিন্ন সেক্টরে তিনি যদি শুধু অর্থ সন্ধানের চেষ্টা করেন, তা লজ্জাকর। স্বাভাবিকভাবেই এরকম সংসদ সদস্যের কারণেই সরকারকে বিব্রত হতে হয়। এর আগেও কয়েকজন সংসদ সদস্যের কর্মকান্ডে সরকার সমালোচনার মুখে পড়েছে। সেসব বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হলে এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার সূত্রপাত হতো না। একজন জনপ্রতিনিধি যদি এই সামান্য অর্থ লাভের বিষয়েও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন, তাহলে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। একজন আইন প্রণেতার আচরণ নিয়ে কোনো ধরনের প্রশ্ন ওঠা অসম্মানজনক।
দেশ ও দেশের মানুষকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসলে প্রতিদান পাওয়া যায়। বিষয়টি সংসদ সদস্যকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। সামনে জাতীয় নির্বাচন। এ মুহূর্তে কোনো ঘটনায় সংসদ সদস্য জড়িত থেকে বিতর্ক সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ সংসদ সদস্যদের নিয়ে সামান্যতম বিতর্কও কেউ আশা করে না। একজন জনপ্রতিনিধি আইন প্রণয়নের পাশাপাশি, এলাকার উন্নয়নে নিজেকে সম্পৃক্ত করবেন এই প্রত্যাশা থাকল।
বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও রাজনীতিক সত্যেন সেন ১৯০৭ সালের ২৮ মার্চ বিক্রমপুরের (বর্তমান মুন্সীগঞ্জ) টঙ্গীবাড়ীর সোনারঙ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতৃব্য পণ্ডিত ক্ষিতিমোহন সেন ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতপূর্ব আচার্য। সত্যেন সেন সোনারঙ হাইস্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস (১৯২৪) করে কলকাতা যান এবং সেখানে এফএ ও বিএ পাস করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে এমএতে ভর্তি হন। যুগান্তর দলের সদস্য হিসেবে সন্ত্রাসবাদী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে তিনি ১৯৩১ সালে গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেন এবং জেলে থেকেই বাংলা সাহিত্যে এম এ পাস করেন। জেল থেকে মুক্তিলাভের (১৯৩৮) পর বিক্রমপুরে ফিরে তিনি কৃষক আন্দোলনে যোগ দেন এবং আমৃত্যু বামপন্থি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি কমিউনিস্ট পার্টির নেতা নির্বাচিত হন। সত্যেন সেন ১৯৪৯, ১৯৫৪, ১৯৫৮ ও ১৯৬৫ সালে রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তার হয়ে বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেন। ১৯৫৪ সালে দৈনিক সংবাদে সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে তার সাংবাদিক জীবন শুরু হয়। এ দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে সত্যেন সেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি প্রগতি লেখক ও শিল্পীসংঘের সংগঠক এবং ‘বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী’র প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ছিলেন রবীন্দ্রসংগীত ও গণসংগীতের সুকণ্ঠ গায়ক এবং গণসংগীত রচয়িতা। পরিণত বয়সে সাহিত্যচর্চা শুরু করা সুলেখক সত্যেন সেনের রচিত গ্রন্থ সংখ্যা প্রায় চল্লিশ। আজীবন প্রগতিশীল রাজনীতি ও শিল্প-সংস্কৃতির সংগঠক হিসেবে নিবেদিতপ্রাণ সত্যেন সেন চিরকুমার ছিলেন।
অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া এবং শরীরচর্চার অভাবের বেশির ভাগ মানুষেরই হার্ট খারাপ হচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে 'খারাপ' কোলেস্টেরল— এ সব মানুষের নিত্যসঙ্গী। তবে রক্তের বিভিন্ন উপাদানের মাত্রা যদি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে যায়, তা হলে ওষুধ তো খেতেই হবে। সঙ্গে পছন্দের প্রায় সব খাবারেই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে যাবে। তবে পুষ্টিবিদেরা বলছেন, রোজকার খাবারে কিছু পরিবর্তন আনলেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই হার্টের যাবতীয় সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
বিরিয়ানি হোক বা পোলাও সঙ্গে মাটনের কোনো পদ ছাড়া জমে না। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, এ ধরনের 'লাল' মাংস খেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তাই খাসির বদলে মুরগির মাংস খাওয়া তুলনায় স্বাস্থ্যকর।
অনেক চেষ্টা করেও ভাজাভুজি খাবারের লোভ সামলাতে পারছেন না। এই অভ্যাসের ফলেই কিন্তু অজান্তেই বেশির ভাগ মানুষের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে চলেছে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ভাজার বদলে যদি বেকড খাবার খাওয়ার অভ্যাস করা যায়, তবে এই সমস্যা অনেকটাই ঠেকিয়ে রাখা যেতে পারে।
সকালের নাশতায় পাউরুটি খান অনেকেই। কিন্তু পুষ্টিবিদেরা বলছেন, পাউরুটির ওপর মাখন দেওয়ার অভ্যাস ছাড়তে হবে। শুধু পাউরুটি খেতে যদি সমস্যা হয়, তবে ডিম ফেটিয়ে তার মধ্যে পাউরুটি ডুবিয়ে, তা বেক করে নিন। স্বাদ এবং স্বাস্থ্য দুই-ই থাকবে।
মন খারাপ হলে মাঝে মধ্যেই আইসক্রিম খেয়ে ফেলেন। তৎক্ষণাৎ মন ভালো করতে এই টোটকা সত্যিই কার্যকর। কিন্তু সমস্যা হলো আইসক্রিম খাওয়ার অভ্যাসে রক্তে বাড়তে থাকে কোলেস্টেরল। পরবর্তীতে যা হৃদরোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
গরমে তেষ্টা মেটাতে বার বার ঠাণ্ডা পানীয়তে চুমুক দিচ্ছেন। কিন্তু এ পানীয়ে থাকা কৃত্রিম শর্করা যে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করছে, টের পেয়েছেন কী? পুষ্টিবিদেরা বলছেন, এই তেষ্টা মেটাতে এবং স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে নরম পানীয় না খেয়ে ফল থেকে তৈরি রস খেতে পারেন।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
পলিথিন বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, বিভিন্ন ধরনের পলিথিনজাত মিনিপ্যাকের উৎপাদন, ব্যবহার ও এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সবগুলোই সমস্যা। পলিথিন উৎপাদন ও এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে বাতাসে যেমন কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়, অন্যদিকে এর ব্যবহার প্রাণিকুল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। প্লাস্টিকের কণা এখন মানুষের রক্তে, মায়ের দুধে, সামুদ্রিক মাছে। শুধু ব্যবহার সম্পর্কিত সমস্যা না, পলিথিনের মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও বেশি সমস্যাসংকুল। কারণ এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, কৃষির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, শহরের নর্দমা বন্ধ করে দিচ্ছে তা আবার রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে এবং সবশেষে শহরকে বসবাসের অনুপযোগী করে দিচ্ছে।
এতসব সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না করা বা বন্ধ করতে না পারার সংকট কোথায় সেটা বুঝতে আমাদের সমস্যা হয়। পলিথিন বন্ধে আইন আছে, নানা ধরনের প্যাকেজিংয়ে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাও অনেক দিন হলো। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু তা সহসাই হচ্ছে না। ‘সোনালি ব্যাগ’ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পেটানো হয়েছে কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই সোনালি স্বপ্ন কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে আসছে এতদিনে।
পলিথিনের ব্যবহার শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি যার অনেকটাই অভ্যাসগত কারণে। শহরের মানুষের পলিথিনের ওপর অভ্যস্ততা যেমন বেশি, তেমনি তারা ভুক্তভোগীও বেশি। রাস্তাঘাট, ড্রেন নোংরা হয়ে তো থাকেই, বাড়তি পাওনা দুর্গন্ধ, তৈরি হয় জলজট ও ডেঙ্গুর মতো রোগবালাই। বাসাবাড়িতে পলিথিনের ব্যবহার তো আছেই, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, বেকারিজাত পণ্যের পলিথিনের ব্যবহার ও পলিথিনের মোড়ক যত্রতত্র নিক্ষেপই এই অবস্থার জন্য দায়ী। শুধু ঢাকা নয় অন্যান্য ছোট-বড় সব শহরে প্রায় একই অবস্থা। আর এগুলোই হচ্ছে পলিথিন নির্ভর অর্থনীতির অনুষঙ্গ কিন্তু এর অনর্থনীতি হচ্ছে পলিথিনের কারণে পরিবেশদূষণ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণভাবে পলিথিন ব্যবহারের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্যমান নির্ধারণ করা হয় না। তবে দূষণের মাত্রা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে পলিথিনের অর্থনীতির থেকে এর ক্ষয়ক্ষতির অর্থনীতি যে অনেক বড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আসছে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেট (২০২৩-২৪) বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ এর উল্লেখ করেছেন কিন্তু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে দৃশ্যমান কোনো রূপকল্প এবারের বাজেটে উল্লেখ করতে সমর্থ হননি। এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’। গত বছরের এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘একটাই পৃথিবী’। পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার আমাদের এই একমাত্র পৃথিবীকে দূষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আইন হয়েছে ২০০২-এ এবং আজ ২০২৩ সাল, এই দীর্ঘ ২১ বছরেও এই আইনের বাস্তবায়ন করা যায়নি। যদিও এবারের বাজেট বক্তৃতায় প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার এর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ধরেই নেওয়া যায় শুল্ক বৃদ্ধির এই হার কোনোভাবে পলিথিন নিরুৎসাহিত করার জায়গা থেকে না বরঞ্চ কিছুটা বাড়তি কর আদায়ের চিন্তা থেকে।
পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সস্তা পলিথিনের ব্যবহার টেকসই ভোগের ধারণার জন্যও কোনোভাবে সহায়ক না। বরঞ্চ এটা এমন এক ধরনের মনস্তত্ত্ব তৈরি করে যা শুধু পরিবেশকেই ধ্বংস করে। যদিও বিশ্বব্যাপী টেকসই ভোগের ধারণার ওপর ভিত্তি করে এখন ‘সার্কুলার অর্থনীতির’ ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সার্কুলার অর্থনীতি শুধু অপচয় কমায় না, প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা, দূষণরোধ, বর্জ্য থেকে তৈরি পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। তাই পরিবেশগত ঝুঁকি, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা এবং এ সংশ্লিষ্ট অভীষ্ট ২০৩০ সমূহ অর্জনে সার্কুলার অর্থনীতি অন্যতম হাতিয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে রাস্তায় কোনো পেট বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায় না। এর কারণ হচ্ছে এখন পেট বোতলের প্রায় শতভাগ রিসাইকেল করা হয় এবং পেট বোতল সংগ্রহের জন্য অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে হলেও একটি সংগ্রহ-লাইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু পলিথিনের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। তবে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার সার্কুলার ইকোনমির ধারণার সঙ্গেও একেবারে মানানসই না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রযুক্তিগতভাবে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন রিসাইকেল করা অসম্ভব না হলেও এটি একটি জটিল এবং অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল যে কারণে পেট বোতলের মতো রাস্তা থেকে পলিথিন সংগ্রহ করতে কাউকে দেখা যায় না উলটো রাস্তাঘাটে এখানে সেখানে পলিথিন পড়ে থাকে।
পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অনর্থনীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখন প্রথম দরকার এর ব্যবহার বন্ধ করা, এর ব্যবহারকে অনেক বেশি দামি করে ফেলতে হবে আর এর প্রতিফলন থাকতে হবে বাজেটে। দ্বিতীয়ত, সার্কুলার অর্থনৈতিক চর্চার উৎসাহিত করার জন্য পরিকল্পনা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগের মতো উদ্যোগগুলোকে সরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ ও বেসরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। সরকার প্রতি বছর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশ দিবস পালন করে কিন্তু দিবস পালন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই হবে না এর উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে তার ওপরও নজর দিতে হবে। তা নাহলে পলিথিনের অর্থনীতির নামে শুধু অনর্থনীতিকে বাড়িয়ে তোলা হবে, আর সেটা হবে টেকসই অর্থনীতি তৈরির সম্ভাবনার অপমৃত্যু।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। এমন অবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না কেউ। তাই বলে গরমের ভয়ে ঘরে বসে থাকলে তো আর জীবন চলবে না। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যেতে হবে। আর কর্মজীবীদের অফিস ও অন্যান্য কর্মস্থলে। অনেকেরই এই গরমেও কাজের প্রয়োজনে সারাদিন কেটে যায় বাইরে ঘুরে ঘুরেই। গরমকে মোকাবিলা করতে সঙ্গে এই প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো রাখলেই গরমের কাছে নিজেকে হার মানতে হবে না।
পানি পান
গরমের সময় শরীর থেকে স্বাভাবিক ভাবে অনেক বেশি ঘাম বের হয়ে থাকে। যার ফলে দেখা দিতে পারে পানি শূন্যতা। শরীরের মধ্যে যদি পানির পরিমাণ কমে যায় তাহলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। পানি শূন্যতা দূর করতে হলে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খেতে হবে।
বিশুদ্ধ পানি খাওয়ার পাশাপাশি ফলের জুস কিংবা কচি ডাবের পানি খেতে পারেন। দেহের ত্বককে ভালো রাখতে পানি, শরবত বা জুস পানের বিকল্প নেই। গরমে সময় প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লিটার বিশুদ্ধ পানি খেলে ডিহাইড্রেশন এবং পানি শূণ্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
খাবার স্যালাইন
গরমের সময় ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণ বের হতে থাকে যার ফলে শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়। এ থেকে মুক্তি পেতে খাবার স্যালাইন খেতে পারেন। বিকেল বেলা খাবার স্যালাইন খেলে অতিরিক্ত গরমেও শরীরে সতেজতা ফিরে আসে। আবার অনেকেই স্বাদযুক্ত স্যালাইন খান যেমন, টেস্টি স্যালাইন। ভুল করেও এসব খাবেন না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হলো ওরস্যালাইন । তবে আপনাদের মধ্যে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা খাবার স্যালাইন খাওয়ার আগে ভালো কোনো ডাক্তারের মতামত নেওয়া উচিত।
রেড মিট পরিহার করুন
অতিরিক্ত গরমের সময় গরু-ছাগলের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ গরমের সময় বা অতিরিক্ত গরমের সময় গরুর মাংস খেলে শরীরের তাপমাত্রা অনেকাংশে বেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গরু-ছাগলের মাংস ছেড়ে মাছ খেতে পারেন। আর অতিরিক্ত গরমে অবশ্যই অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকুন।
সবুজ শাক সবজি
গরমের সময় শরীরকে সুস্থ রাখতে বেশি বেশি করে সবুজ শাক সবজি খেতে পারেন। সবুজ শাক সবজিতে অধিক পরিমাণে ভিটামিন মিনারেল এবং খনিজ উপাদান থাকে। এতে করে অতিরিক্ত গরমেও শরীর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।তাছাড়াও খেতে পারেন তরমুজ যা শরীরে এনার্জি দিতে পারে।
টক জাতীয় ফল
প্রচুর গরমে সুস্থ থাকার উপায় হিসেবে টক জাতীয় ফল খেতে পারেন। যেমন: কামরাঙ্গা, লেবু, তেতুল, আমরা ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে অতিরিক্ত টক ফল খাওয়া ঠিক নয়। যদি কারো এসিডিটির সমস্যা থেকে থাকে তবে টক জাতীয় ফল খাওয়া হতে বিরত থাকুন। টক জাতীয় ফল খালি পেটে খাওয়া যাবে না। এতে করে আরো বেশী অসুস্থ হয়ে পারতে পাবেন।
টক দই
অতিরিক্ত গরমে সুস্থ থাকতে হলে টক দই খেতে পারেন। যারা করা রোদে কাজ করেন বিশেষ করে তাদের জন্য অনেক উপকারী হলো টক দই। রোদের প্রচুর তাপ থেকে শরীরকে কিছুটা হলেও রক্ষা করবে টক দই। টক দই শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে অনেকাংশে সাহায্য করে।
প্রতিদিন গোসল করুন
গরমের সময় প্রতিদিন এক বার করে হলেও গোসল করতে হবে। যদি পারেন তবে দিনে ২ বার গোসল করতে পারেন। গোসল করার ক্ষেত্রে একটু সাবধান থাকতে হবে। বাহির থেকে এসে সাথে সাথে গোসল করতে যাবেন না। একটু বিশ্রাম নিয়ে তারপর গোসল করতে যাবেন। কারণ হঠাৎ করে গরম থেকে এসে গোসল করলে ঠাণ্ডা লাগতে পারে।
ঘরেই অবস্থান করুন
অতিরিক্ত গরমে বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বাহিরে যাবেন না । যদিও বিভিন্ন কারণে বাহিরে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে রোদ থেকে বাঁচতে প্রয়োজনে ছাতা ব্যবহার করতে পারেন। যতটুকু সম্ভব ছায়াযুক্ত স্থানে থাকার চেষ্টা করুন।
শারীরিক পরিশ্রম কম করুন
গরমের সময় অনেকেই আছে অতিরিক্ত ব্যায়াম করে থাকেন এমনটি করা যাবে না কারণ অতিরিক্ত গরমে শরীরের তাপমাত্রা একটু বেশি হয়ে থাকে।
পাতলা সুতি কাপড় পরিধান করা
গরমের সময় পাতলা সুতি কাপড় পরা দরকার। কারণ সাদা কাপড় তাপ শোষণ করতে পারে না বরং তাপের প্রতিফলন ঘটায় ও গরম কম লাগে।
পারফিউম ব্যবহারে সতর্ক থাকুন
অতিরিক্ত গরমে ঘামের গন্ধ থেকে বেচে থাকার জন্য অনেকেই সুগন্ধি ব্যবহার করে থাকে। তবে অতিরিক্ত গরমে পারফিউম ব্যবহার না করাটাই উত্তম কাজ। কারণ, পারফিউম গরম লাগা বৃদ্ধি করে দেয়।
যদিও ব্যবহার করতে হয় তাহলে হালকা গন্ধের সুগন্ধি ব্যবহার করতে পাবেন। বাজারে কিছু সুগন্ধি পাওয়া যায় যেগুলো ব্যবহার করলে ঠাণ্ডা লাগে। সেগুলো ব্যবহার করলে আরো ভালো হয়।
ধূমপান পরিত্যাগ করা
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা কিনা ধূমপান করে থাকি। ধূমপান করলে শরীরের তাপমাত্রা তুলনামূলক ভাবে বেড়ে যায়। তাই প্রচন্ত গরমে সুস্থ থাকতে হলে ধূমপান পরিত্যাগ করতে হবে। যদিও এই অভ্যাসটি সহজে পরিত্যাগ করা যায় না। তাই যতটুকু পারেন ধূমপান কম করার চেষ্টা করুন।
চা কফি পরিত্যাগ করুন
চা, কফি বা অ্যালকোহল খেলে শরীরের তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পায়। আর যদি অতিরিক্ত গরমে চা, কফি বা অ্যালকোহল খেয়ে থাকেন তাহলে শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পাবে যার ফলে হতে পারে হিটস্ট্রোক। তাই গরমের সময় চা কফি বা অ্যালকোহল খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।
শান্ত থাকুন
মন মেজাজ গরম থাকলে শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। রাগের কারণে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং অতিরিক্ত গরমের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় আর দুই তাপমাত্রা এক সঙ্গে হলে কি অবস্থা হতে পারে একবার হলেও সেটা ভেবে দেখবেন।
বিশেষজ্ঞরা অতিরিক্ত গরমে শান্ত থাকার জন্য মতামত দিয়ে থাকে। বিশেষ করে যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের জন্য শান্ত থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।